আসলে আমার সবাই চিঠি লেখা ভুলতে বসেছি। তাই আমি ঠিক করেছি আমরা যারা ব্লগে আসি তারা যদি একজন অন্যজনকে চিঠি লিখি তবে তা কেমন হয় !! মানে যে কেউ যদি আমার কাছে চিঠি লেখে (তা হোক কবিতা কিংবা গল্প অথবা সাধারণ বাজারের লিষ্ট বা টাকা চাহিয়া পুত্রের পত্র) আমি তার প্রতি উত্তর দেবো।
যেমন দেয়া হয়েছে। আপনারা যারা চিঠি লিখবেন তারা একটা ধারাবাহিকতা বজায় রাখবেন যেমন, চিঠি -১, চিঠি -২ এই ভাবে। আর আমি উত্তর দেবো পত্র-১, পত্র-২ এই ভাবে। সুন্দর হোক ব্লগিং।
আপনাদের ভালোবাসা নিয়ে শুরু করছি চিঠির পত্র এর ১০ম পর্ব। এবারের চিঠি নিয়েছি – দাউদুল ইসলাম এর লেখা “আজকের এই বিকেল… এই সন্ধ্যা… উৎসর্গ করলাম তোমার জন্য … ” থেকে এবং আমি তার উত্তর দিতে চেষ্টা করছি।
চিঠি
প্রিয়তমা……
আমার প্রতিটি বিকেলের মত আজো পশ্চিমা আকাশ লালিমায় ছেয়ে আছে, খরস্রোতা নদীটি হা করে আছে অস্তমিত সূর্যকে গিলে নিতে, আয়েশি ভঙ্গিতে পাখিদের নীড়ে ফেরার আয়োজন কিংবা বাতাসে কুয়াশার ধূম্র মিলেমিশে প্রকৃতিতে ফেলছে শান্ত অবয়ব…এই সবই ঠিক আছে, কেবল একটাই ব্যতিক্রম আজ আমার বুকের অন্দর মহলে চলছে অসম তাণ্ডব লীলা।
হৃদপিণ্ডের দপ দপ বেড়েই চলেছে; আমি জানি এসব ক্ষয় অবক্ষয়ের গল্পে তোমার মন বিচলিত হবে, অস্থির হবে, জানি শিকল বাঁধা হরিণীর মতন তুমি ছটফট করবে। তবু তোমাকে জানাতে হবে … সহস্র মন খারাপ রাত্রির নিঃসঙ্গ দহন সয়ে সয়ে আমি দিব্যি কাটিয়ে দিচ্ছিলাম জীবন। কারণ দহন তাপে তোমার উষ্ণতা খুঁজে পাই;
বিনিদ্র যন্ত্রণায় আমি সয়ে গেছি কারণ যন্ত্রণার অভ্যন্তরে তোমার সহিষ্ণু প্রেম অনুভব করি। পোড়া মাটির গন্ধে আমার অভিযোগ নাই; কারণ মাটি পুড়ে আমি নির্মাণ করি তোমারই প্রতিমা……তুমি জানতে আমি যেই ভাবেই হোক বেঁচে রবো, যেমনই হোক হার না মানার মানুষ আমি।
তুমি জানতে আঘাতের ভয়ে আমি পেছনে তাকাবো না, কটাক্ষের মুখে আমি বিব্রত হবো না! আর জানতে যে প্রলয়ের তাণ্ডবে সুনামির সাথে যদি তলিয়েও যাই তবে যেমন করেই হোক আমি উঠে দাঁড়াবো………
পাবোনা জেনেও
ছোঁবোনা জেনেও
আমি বার বার হাত বাড়াবো তোমারই পাণে…
আর-
এসব জানতেই বলেই তুমি মুক্ত বিহঙ্গীর মতো উড়ে বেড়ানোর নেশায় বুদ হয়ে গেলে। বৃক্ষ হতে বৃক্ষে, প্রান্ত হতে প্রান্তরে উড়ে বেড়ানোর নেশায় ডুবে রইলে…
শুধু জানতে না যে নেশায় ডুবছো তার থেকে উঠে আসার কোন রাস্তা নাই, ফেরার কোন পথ নাই।
অথচ আমি নিজেকে সাজাতেই ধরেছিলাম তোমার হাত। অসহায় ডানা ভাঙ্গা পাখির মতো তোমার চোখে চোখ রেখেছিলাম সুন্দর দিক নির্দেশনার আশায়। সহস্র শব্দের আশ্রম ভেবে নিজের সমস্ত কবিতা বুকের আগল থেকে তুলে তোমার হাতে দিয়েছিলাম…।
অথচ মানুষ হবো বলে সে দিন আমি কবি হতে চাইনি, আমি চাইনি যে বহুদূর উড়ে এসে প্রজাপতিরা আমার আঙ্গুলের ডগায় আশ্রয় নিক, তুমিই আমাকে কবিত্ব দিলে, প্রজাপতির আশ্রমের ডাল বানালে!
তোমার প্রতি আমার কোন অভিযোগ নাই।
যে দিন ঝর্না স্নানে সিক্ত হতে হতে নিজের বুকের কপাট উন্মুক্ত করে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ আলিঙ্গনে আমাকে নিবিষ্ট করেছিলে, আমি সে দিনই পরিপূর্ণ জীবন পেলাম। বসন্তের স্ফুটিত তাবৎ পুষ্প গুলোয় বিলিয়ে দিয়েছিলাম আজন্ম ভালোবাসা। তোমার অমর্ত্য চুম্বনে পেয়েছিলাম পরিতৃপ্ত জীবনের স্বাদ, দুনিয়ার মায়া মমতা, কোমলতা …আর পেয়েছিলাম এক অনবদ্য স্পন্দন !
তুমি ফিরও বা না ফিরো
আজকের এই বিকেল এই সন্ধ্যা তোমার জন্য উৎসর্গ করলাম!
আর অনন্তের আক্ষেপে ছুঁড়ে দিলাম জ্বলন্ত দিয়াশলাই……
ভালো থেকো।
ইতি
– তোমারই আমি।
_______________
আমার উত্তরঃ
শুধুমাত্র ছোট একটা জ্বলন্ত দিয়াশলাই কাঠি দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়া যায় তাবত পৃথিবী সুখে গড়া সংসার; জীবনের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ক্ষয় অবক্ষয়ের মাঝে হৃদয় পোড়ার ঘ্রাণ ক’জনেই বা খোঁজে।
গাঢ় চৈত্রের দুপুরে ঝিঁঝিঁ পোকার ঝিম ধরা ডাকে ক্লান্ত ভাতঘুম চোখে দরজার কলিং বাজলো এই সময়টায় সাধারণত কেউ আসে না, ইচ্ছা অনিচ্ছার দোলাচলে দরজা খুলে দাঁড়াতেই ডাকপিয়ন ধরিয়ে দিলো খামে ভরা তোমার চিঠি। এক অজানা শিহরণে ছুঁয়ে গেলো কিছু ভালোলাগা ভালোবাসা। অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলাম অদ্ভুত সুন্দর তোমার গোটাগোটা হাতে লেখা আমার ঠিকানাটার দিকে।
খাম খুলে তাড়াহুড়া করে সবাই যে ভাবে সব চিঠি পরে আমি তেমন করে কোন দিন তোমার চিঠি পরিনি, আজো পরবো না; হয়তো কোন দিনই পড়বো না, এটা নিয়ে তোমার লেখা দশটি চিঠি হলো, প্রথম চিঠিটা বাদে আর কোন চিঠি কোন দিন খুলে পরিনি মানে পড়া হয়নি। নিশ্চয়ই তোমার প্রশ্ন জাগছে কেন- কি কারন ! সত্যি করে বলি আমি তোমার চিঠি পরলে নিজেকে গুছিয়ে গুটিয়ে রাখতে পারতাম না, কেউ না জানুক আমি জানি কি অসাধারন তোমার চিঠির উপস্থাপন, কি মায়াবী করে তুমি লিখতে পারো।
আমি জানি আমার প্রতি তুমি কোনদিন কোন অভিযোগের অঙ্গুল তুলবে না, তুলবে না কারন তুমি আমাকে ভালোবাসো, আর তুলেই বা কি হবে আমি তো ফিরে যেতে পারবো না সেই অমর্ত্য মৃত চুম্বনে; যেখানে সব স্বপ্নের সমাধি পেরিয়ে সব শব গুলো বসে থাকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ আলিঙ্গনে নিজেকে নিবিষ্ট করতে।
জীবনের জলপ্রপাতে যে স্ফটিক জল দেখতে পাই ভুল করে সেই কবিতার ব্যাখ্যা নিজের দিকে দাঁড় করিয়ে কবিকে ভালোবাসা যায় কিন্তু পাখির নীড় ঝড় বাতাসের বিপরিতে কতটা অসহায় তা যুগল পাখি মাত্রই জানে। আমার প্রজাপতির জীবনে কারো হাতের তালুতে ঝুলেও বা কতদিন বাঁচতে পারি।
আমি জানি শত বিপদ মোকাবেলা করেও তুমি তোমার লক্ষ্যে অবিচল থাকবে, আমাকে পেতে তোমার এই বিনিদ্র যন্ত্রণায় অভ্যন্তরে সহিষ্ণু প্রেম আমি গভীর ভাবে অনুভব করি অথচ চোখ মেলে তাকাতে পারি না, হাতকে প্রসারিত করতে পারি না, মুখে হাসি নিয়ে তোমার দিকে ছুটে যেতে পারি না।
প্রিয়তম আমার; যে ভালোবাসার ছোঁয়ায় তুমি আমাকে রাঙিয়ে দিয়েছিলে, যে ভালোবাসার আলিঙ্গনে শীতল হিমালয় থেকে জলধারা বয়েছিলো, যে উষ্ণ চুম্বনে জীবনের পরিপূর্ণ স্বাধ নিয়ে আমি দূর থেকে দূরে হারিয়ে যাচ্ছি, সেই ধরা ছোঁয়ার বাইরের ভালোবাসায় তোমাকে যা দিকে পেরেছি তা কোন দিন আর কাউকে দেয়া হবে না।
তুমি অপেক্ষার প্রহর গুলো দীর্ঘ করোনা
তুমি আশার করতলে চোখে জল এনো না
তুমি নীরব ভাষার আহবানে খুঁজো না আমায়
যে পথ চলেছে তোমার সন্ধ্যা তারার পথে
সেখানে নিরব বিষণ্নতায় আমি প্রহর গুনি
অনাহুতা জীবনের।
ভালো থেকো নিজের মত করে
এক জীবনে যতটা ভালো থাকা যায়।
আমি তোমারি ?
খেয়ালী।
________