ট্যাগ আর্কাইভঃ কুবিতা

করতলে স্বপ্নের পাখি

আসো করতল খুলে দেখি
কতটা সু-দূরে গেলে আঁখি থেকে
মুছে যায় গহীনের স্মৃতি।

আসো করতল খুলে দেখি
সাজানো সবুজ বনে হলুদের আগমনে
খেলাঘর থেকে কেন ভেসে যায় সুখ।

আসো করতল খুলে দেখি
মুছে দিয়ে গোধূলির সিঁদুর রঙ
কে গান গায় জীবনের পথে যেতে যেতে;
উল্লাসিত মিছিলের স্লোগানে
যেখানে স্রোতের সুরে
জমে থাকে কিছু বালু
আঁখির নদীতে।

আসো করতল খুলে দেখি
ফাগুনের আহব্বানে কে থাকে
দুয়ারে দাঁড়িয়ে ভিক্ষারি মন নিয়ে
নত জানু হয়ে।

আসো করতল খুলে দেখি
আমাদের মাঝে বে সুরের গান
কার কণ্ঠে জেগেছিলো প্রথম;
কে প্রথম ডালি ভরা স্বপ্ন গুলো
ধূলোর মত দু’হাতে উড়িয়েছি
দিগন্তের সীমানায়।

আসো করতল খুলে দেখি
ভাঙ্গনের পথে যেতে যেতে
দৃষ্টির আড়ালে কতটা নোনা জল
পড়েছিলো বুকের পাথুরে জমিনে।

আসো করতল খুলে দেখি
সময়ের স্রোতে
যে পাখি গেল উড়ে
সেই হিসাব আছে কিনা জমা
মুষ্টিবদ্ধ করতলে।

শেষ চিঠি (২য় পর্ব)

প্রিয়তমা,
নীলকণ্ঠে দৃশ্যপটে দেখি
হলুদ বিকেলের দীর্ঘ ছায়া
সময়ের ব্যাবধানে দীর্ঘতম রজনী,
অপেক্ষার আক্ষেপ নিয়ে চলে যাওয়া দিন
উপহার দিয়ছে যে গাঢ়তম নীল,
সেই বেদনাবোধ ধারণ করে কেউ তো নীলকণ্ঠ হয়ে যায়,
যার কোন কষ্টের অনুভূতি নেই; শুধু থাকে বিষপানের জন্য দৃশ্যের নামাবলী।

আমাদের মাঝে সেই প্রাচীর ছিলো সমাজের কম্পন,
যেখান থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছো এক চিমটি কাঁচা হলুদ রোদ্দুর গায়ে মাখবে বলে।
যাপিত জীবনের শীতলতম দিনে কথার মালাশবের মত পরে থাকে নিরব দেহ নিয়ে,
আমাদের আর উঠে দাঁড়াবার পথ নেই।

দৃষ্টি সীমা যে সবুজ পথের দিকে পরে আছে, অতলান্ত মন সেই দিকে ধায়।
হীরক রাজার গয়নাগাটি গায় জড়িয়ে নাচের পুতুল বউ অনেক উপলব্ধি ধারণ করে,
তোমাকে আর তোমাতে খুঁজে পাইনি।

সেই থেকে মহাশ্যূনে ফেল দিয়েছি হলি উৎসবের রঙের থালা,
কালো দীর্ঘশ্বাস গায়ে জড়িয়ে ভষ্ম নিয়ে দু’হাতে উড়াই সমস্ত প্রেমের বনানী জুড়ে,
বিহঙ্গের ডানায় কালো রঙ দিয়ে আকাশ জুড়ে আঁকি হৃদয় ক্ষয়ের ক্যানভাস,
সাগরের ঢেউ হয়ে মুছে দিয়েছি কত না বালুতে লেখা পদ্য,
গোলাপ গুলো গাছ থেকে তুলে ফুলদানিতে রেখে দিয়েছি মৃতরূপ দেখবো বলে।

ভালোবাসার সকল রঙ এক রকম হয় না
কেউ কেউ হলুদ দীর্ঘশ্বাস থেকে উঠে দাড়িয়ে
সফেদ জোৎসনায় পুড়ে হয়ে যায়কোমল নীলকণ্ঠ মানুুষ।

১৩/০৫/২০২০
খেয়ালীমন

** নীলকণ্ঠ তাকেই বলে যিনি কণ্ঠে বিষ ধারণ করেন।

শেষ চিঠি (১ম-পর্ব)

প্রিয়তম,
তোমার জমিয়ে রাখা গোপন দুঃখ গুলো কখনো
ছুঁতে না পারার কষ্ট আমাকে স্বপ্নবিহীন জাগিয়ে রাখে রাতের পর রাত।

ভাবনার বাক্সবন্দী স্মৃতিকথা খোলা হয়নি কোনদিনই যা তোমাকে দেখাবো ভেবে জমিয়ে রেখেছিলাম বসন্তের দিনে।
আজো সেই গোপন ভারমুক্ত হলো না;
দিগন্তরেখার কাছাকাছি শেষ বিকেলের হলুদ সূর্য জানিয়ে দিচ্ছে তার বিদায়ের বারতা ;

আমিও রকিং চেয়ারে বসে দুলে যাচ্ছি; ফুটপাথের চালচুলোহীন নেশাগ্রস্থ ভিখারির মত।

উঠে দাঁড়াবার উপায় আছে ঠিকই কিন্তু ইচ্ছের কাছে পরাজিত নির্লিপ্ত মন সময়ের কালক্ষেপণে বেশী প্রাধান্য দিয়ে ঝুলে আছে এক নিকষকালো গহ্বরে।

কি হবে এই বেলা শেষের আলোয় পৌরাণিক গল্পের ঝুলি খুলে, সেই তো রাত, সেই তো অন্ধকারের হাহাকার, সেইতো প্রদীপের তেল ফুরিয়ে যাবার যৌক্তিক বাহানা।

তাই বার বার ফিরে যাই নিদ্রাহীন স্বপ্নবিহীন রেলগাড়িতে পাড়ি দেয়া জীবনের পথে। এতে করেও একটা অপূর্ণ ইচ্ছের সুখ খুঁজে পাওয়া যায়, যাতে কিনা হারানোর ভয় নেই, স্বপ্নক্ষয়ের জ্বালা নেই, বিষাদময়তা নেই, ক্লান্তি নেই,দুঃখ নেই, আবেগ নেই,রোষানল নেই, চোখেরজল নেই, কষ্টের হা হুতাশ নেই, এই নেই, সেই নেই, আমি নেই এমন কি তুমিও নেই।

তবু যা থাকে তা গলে গলে জ্বলে ক্ষয়ে যাওয়া মোমের তলানি, সময় বেঁচে থাকার শেষে ক্ষণে নতুন শক্তি নিয়ে পুনরায় স্মৃতিপটের সাথে বসে দুলে দুলে খুলে দেয়া বাক্সবন্দী প্রজাপতির ইচ্ছের রোদ্দুর।

চাইলেই সেই রোদ্দুর প্রজাপ্রতির ডানায় তোমাকে নাচতে দেখতে পারি, শুনতে পারি তোমার কণ্ঠের টুংটাং জলতরঙ্গ। ছুঁয়ে দেখতে পারি প্রজাপতির বালুচরি রঙের নক্সা,এর সাথে সৌখিন মেজাজে আলী আকবর শুনতে শুনতে দু’এক পেগ মেরে দিতেও দ্বিধা নেই, এতে করে কোন পাপ বোধ জাগবে না !

আমি জানি, সময়ের মানদণ্ডে আমরা কেউ আগে পরে নেই; আমাদের যাত্রা সমতালে গন্তব্যের শেষ স্টপইজ, যদিও পথ ও রথ ভিন্ন হতে পারে।

তার পরও পিছন ফিরে না তাকাবার মত ইচ্ছেরা আমাদের মত মৃত হবে না কোন দিন, আর বাক্সের সেখানেই জমে থাকে, থাকবে তোমার, আমার আমাদের না ছুঁয়ে যাওয়া গোপন দুঃখগুলো।

১২/০৫/২০২০
====
✍️ খেয়ালীমন

দুটি কুবিতা

দ্বিধাগ্রস্থ শিথানের পর্দা

চাঁদ একা জেগে থাকে নির্ঘুম রাতে
তারা গুলো ও জাগে দূরে আরো দূরে;
জেগে জেগে দেখে যায় যৌবনের শহর, শহরের রাস্থা,
নিয়ন আলো, গলির ভাঙ্গাচুরা পথ, পরিপাটি ড্রইং রুম।
মাঝে মাঝে শিথানের জানালার ফাঁক গলে
ঢুকে পরে সৌখিন বেডরুমে। শরীর ভেঙ্গেপরা নগ্নতার
কারুকাজ আর প্রেমার্দ্র বুকে ভালোবাসাহীন উত্তাপের চুমু;
দ্বিধাগ্রস্থ জানালায় পর্দা পরে।

শহরের নিয়ন আলোর রাস্থা গুলো হেঁটে হেঁটে চলে যায়
কুপি জ্বলা গ্রামে। যদিওবা কেরোসিন শেষ বিন্দু জ্বলে গেছে
বহুক্ষণ আগে তবুও ম্লান আলোয় আটপৌড়ে আলুথালু বধূটির
পাশে নিদ্রামগ্ন, দ্বিধাগ্রস্থ ভালোবাসা জেগে থাকে।

সব ভালোবাসা শব হয় একদিন যদি
তবু কেহ জেগে থাকে বিরান ঘরের দুয়ার খুলে;
কেহ করে অপেক্ষা সবুজ স্বপ্নের ফসলের মাঠ দেখবে বলে।
দ্বিধায় জড়ানো লাজুক পাতার ফাঁক দিয়ে
চাঁদ ঠিকই ফিরে যায় অমাবশ্যার কাছে;
তারা গুলো দূরে আরো দূর থেকে ভালোবেসে যায় ।

IMG_3227

শিরোনাম হীন

দুঃস্বপ্নও কখনো স্বপ্ন হয়ে যায়
বাস্তবতার হাতে গড়ে উঠে জীবনের সৌখিন বিন্যাস,
সময়ের ফুল অসময় সবুজ বৃক্ষ;
আমাদের ভালোবাসা এর থেকে বাইরে বেরতে পারে না।
আগুন রঙের মেঘ, রং বে রং এর চুড়ি কিংবা
বেনীমাধবের পাঠশালা এখন আর আমায় ভাবায় না।
রাজা রানির দিন শেষ, মানুষ এখন মন্ত্রী নিয়ে ভাবে,
আর হৃৎপিণ্ড জুড়ে কালো কাপরের জ্বর।
গঙ্গাজলে গঙ্গা পূজা চলে অবিরত, পূজার ঘর পেরিয়ে গঙ্গাজল
বারান্দায়, ড্রইং রুমে অতঃপর শোবার ঘরে, তারপর বন্যা হয়ে ভাসায়
বিছানার চাদর, হাতের রুমাল, চৌকাঠ, ঝুলবারান্দা, ঘরের আসবাব;
বন্যায় ভেসে যায় দুঃস্বপ্ন’র থেকেও আরো বেশী কিছু, আর জমানো
দুঃস্বপ্নকে আজ স্বপ্ন মনে হয়। দুই মেঘের বিরোধে তৈরী আগুনে
পুরে যায় সবুজ বৃক্ষ। আমি কোথাও আমার চালককে খুঁজে পাইনা
যার ছোট বাগানের ছোট গাছগুলো নিয়ে অনেক ছোট ছোট ইচ্ছে ছিলো
সেই ছোট বাগানে গাছটি এখন ভেসে চলছে গঙ্গাজলের বন্যায়।
অনেক গাছই অধিক পানি সইতে পারে না, কিছু শুকনো মাটি চায়
বেঁচে থাকার জন্য…….।

উৎসর্গঃ একজন গাড়ীচালকের সন্তানের জন্য।
.
.
নোটঃ এই দুটো আমার লেখা অনেক আগের কুবিতা, নেট খুঁজে পেয়ে গেলাম ভাবলাম জমিয়ে রাখি তাই পোষ্ট করলাম।

অমীমাংসিত লেফাফা ২

পরজীবি গাছের চিন্তায় একটি সময়ের গোল টেবিলে
আমারা কজন বসেছিলাম মুখোমুখি, যৌক্তিক কথার
ফাঁকফোকর গলিয়ে সন্ধ্যা নামে, তারপর কথার জালে
আঁটকে পরে বিরক্তিকর আঁধার, কিছুটা ছায়া দেখা গেলেও
আমারা একে অপরের দিকে অন্ধকার ছুঁড়ে মারতে শুরু করি,
যেখানে যবনিকাপাত হবার কথা ছিলো, সেখান থেকেই
নতুন শুরু হয় রঙ্গমঞ্চের পটাবরণ। বাড়ন্ত নোলা দিয়ে
আলো চেটে অন্ধকারে কেটেছে চল্লিশ বছর, আর কতো
নখ, দাড়ি, গোঁফ সাজিয়ে রাখতে চাও ঝুলন্ত পাঞ্জাবীর পকেটে!

এইবার গাত্র তোল ফাঁসির মঞ্চে তোর ডাক পরেছে,
বারান্তর বারুদ এখন আর মানুষ ভয় পায় না।
দাত, নখ বা লাল চক্ষু এখন আমরা ভয় পাই না,
ফতোয়ার বুনো পারাং এর প্রতিবাদ করার ক্ষমাত
ধীরে ধীরে বুঝে নিয়েছে মানুষের দল। বৃত্তাকার সওদাগরির
চক্র ভেঙ্গে বেরিয়ে এসেছে যোদ্ধা বুহিতাল। প্রয়োজনে আবারো
তারা গান বাঁধবে, কবিতা লিখবে, করবে পথনাটক;
মানুষের মানবাত জাগিয়ে দিতে, তবু তোকে কেউ
আলোতে আনবে না। যতই চিৎকার করো
গোল টেবিলে আলোর মিছিলে দাঁড়িয়ে থাকা ভীতু
মানুষগুলোও বুঝে গেছে, ছুড়ে দেয়া অন্ধকার
আলোর কাছে কোন দিন মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি আর
কোন দিন পারবেও না।

* এইটা কোন কবিতা না এটা কুবিতা, কবিতা ভেবে পড়লে সেই দায় আমার না।
ছবি নেট থেকে কপি পেষ্ট এবং ছবিটি রশীদ তালুকদারের তোলা।

অমীমাংসিত লেফাফা ১

ছবি নেট থেকে কপি পেষ্ট

সময়ের চড়াই-উতরাইর ভাঁজে ভাঁজে নিজেকে সাজাতে সাজাতে
সময়ের গা বেয়ে উঠে আসে সর্বনাশা সময়। যতটা হলে ঠিক মানায়,
সেই গোল টেবিলে ততটা খাদ্য ভরা পাত্র রেখেও হাতে লাঠি নিয়ে
চলে লোপাট জীবন, পায়ের উপরে এখন আর সবটুকু ভরসা
করা যায় না। যদৃচ্ছায় হেঁটে বেড়ানোর স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে
ফুট মেপে কিনে দেয়া বিচিত্র বিলাসী ইট। এখন বেশ বুঝতে পারি

বয়সি বিরহ ভালোবাসার নয় নির্ভরতার, আমার বিরচিত
রামায়ণে রাম আছে, সীতা আছে, লক্ষন আছে, রাবন ও আছে
তবে তা কিনা সময় ভেদে। একদা রাম, যিনি ছিলেন
তিনিই এখন রাবন, আর সীতা হয় সূর্পনাখা। কিছুটা
ছায়াছবিতে দেখা এক নায়কের দুইটি অভিনয়ের মতো।
তবু আমরা সংসার বিয়োজন করতে পারি না, বর্তমানের
গা বেয়ে উঠা সর্বনাশা শীতল, সময়ের সাপের জন্য।
স্মৃতির হৃদয়ে বিরাজ করা চিন্তার কোষগুলো ফাঁসুরে ডাকাত হয়ে
আমার সামনে হেঁটে বেড়ায়, আমি তাকে বলতে পারিনা
দেখ এই আমি একদিন তোকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন বুনছিলাম,
স্বপ্নের গাছে পানি দিয়েছি, সার দিয়েছি, নিজের সময় নষ্ট করে
তোকে স্বপ্ন দেখা শিখিয়েছি, তোর স্বপ্ন পূরণের জন্য
নিজের স্বপ্ন বিক্রি করেছি জলের দামে ।
আসলে আমি কিছুই বলতে পারি না।
কিছু বলার মত অবস্থান আমার আর নেই
কারন আমার সরকারী পেনশনে পাওয়া অর্থগুলোর সবটুকু
স্বপ্নের হাতে তুলে দিয়েছি তাকে স্বপ্ন দেখাবো বলে আর নিজে
কিছু বয়সি স্বপ্ন বুনবো বলে। আসলেই জীবনের সাথে কড়ির সম্পর্ক
নাড়ি ছেড়া মাতৃ সর্ম্পকের থেকেও বোধকরি বেশী ।
মাঝে মাঝে নিজেকে বেশ পরজীবি কোন গুল্ম বলে ভুল করি।
কিছু পরজীবি গাছও তো ফুল ফোটায় কিন্তু আমি তো তাও পারলাম না।

___________________________________________

* আমি আমার এক বন্ধুর বাবাকে সম্মান জানানোর জন্য এই লেখাটা লিখেছি যদিও সেই বন্ধুর সাথে আমার কোন যোগাযোগ নেই বা করিনা আর যার জন্য লেখা তিনিও কোন দিন ব্লগ পড়ে না তবুও লেখাটা লিখতে গিয়ে আমার বুকে একটা পাথরের চাপ অনুভব করেছি কারন আমিও এক জন পিতা।

**** এটি একটি কুবিতা
কেউ কবিতা ভেবে পরলে সেই দায় পাঠকের।

আমি জুড়েই তুমি

IMG_4350

কালে কিংবা অকালে
ভোরে নয়তো বিকালে
সৃষ্টি বা বিনাশে
নিরাশার আশাতে
চোখ ছুঁয়ে যায় তোমাকে।

গল্প কিংবা ধাঁধাতে
আলো নয়তো আঁধারে
দৌড়ে বা সাঁতারে
নিরবতার উল্লাসে
মন ছুঁয়ে যায় তোমাকে।

নিরাকার কিংবা আকারে
কাণ্ড নয়তো শাখাতে
কোড়া বা আঁকাতে
গাঢ় নীলের সাদাতে
অনুভূতি ছুঁয়ে যায় তোমাকে।

তোর জন্য পুড়ি
তোর জন্য উড়ি
তোর জন্য বাতাস ভাসা
সূঁতো ছেড়া ঘুড়ি।

ভুলের পাণ্ডুলিপি

আমি মানুষ, তাই ভুল করি …
জীবন চলার মুদ্রাতে ভুল করি,
ভুল করি ভালবাসাতে,
ভুল হয় সংসার যাপন,
ভুল হয় কল্পনার ছবি আঁকায়,
আমি জানি উড়াল ঘোড়ার পিঠে
কোন রাজপুত্র স্বপ্নতে চাই, তাও ভুল করা।

আমার মনের জীর্ণ ঘরে মাথা তুলে
দাঁড়াবার জন্য ভুল করেও কেউ বসে থাকে না,
তাই ভুলে যেতে যেতে যেতে
ভুল করে আবার পিছু ফিরে তাকাই…
কারো ভুল দেখার অপেক্ষা…
তারপর,
ভুল কষ্ট নীল হতে হতে চোখের কোনে নীল রেখার অবক্ষয় জমে যায় খু্ব।

**********
কুবিতা

ফিরে দেখা পথ

ফিরে দেখা পথ

তোমার পদচিহ্ন ধরে হেঁটে যাই সময়ের পথে
পৃথিবীর চারপাশ ঘুরে ফিরে আসি পুনরায় পরিচিত শস্যক্ষেতে;
তোমাকে আর পাওয়া হয়না, ক্লান্ত শরীর স্মৃতি গুলো নিয়ে পরে থাকে;
সমাধানের পথ গুলো সমাপ্ত হয় না তবু, বার বার ফিরে যায়
দিগন্তের ধূসর স্মৃতির পথে।
কল্পনার ছবি গুলো বেশ জীবন্ত হয়ে হেঁটে বেড়ায় আমার চারপাশে
সেই চরিত্র গুলো খুব উপভোগ করি;
তোমার শাসন,তোমার বকুনি
তোমার অভিমান,তোমার বেদনা
তোমার অশ্রু,তোমার অভিযোগ
তোমার ভালোবাসা, তোমার ফিরে চাওয়া
তোমার শূন্যতা, তোমার পূর্ণতা
তোমার শাড়ির আচল, তোমার কপালের টিপ
তোমার শব – তোমার সব কিছু চলমান চরিত্র হয়ে ফিরে আসে
তবু তোমার শেষ দিনের দান আমাকে একাকী করে চলে যায়
অচেনা গন্তব্যের পথে।
হে পথ তোমাকে খুঁজেছি বহুবার, হে পথ তোমাকে রচেছি বহুবার
হে পথ তোমাতে হেঁটেছি বহুদিন, হে পথ তোমার কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়েছি অবিরত
তবুও খুঁজে পাইনি তোমায়, তবুও ফিরে পাইনি তোমায়
তবুও জানতে পারিনি তোমায়, তবুও বুঝতে পারিনি তোমায়
তবুও পারিনি ছেড়ে যেতে ,তবু পারিনি ফিরে যেতে

আজো চোখ মেলে তাকালে দেখতে পাই ধূলো উড়া গেরুয়া পথে
জোনাক জ্বলা শাড়ির আঁচল।
সব কল্পনার শক্তি স্বপ্নকে পিছে ফেলে হেঁটে যায় বহুদূর
যেখানে সুখের সরোদ বাজে করুণ বিলাপে।

শব্দ ভাঙার শব্দ

শব্দ ভাঙার শব্দ

তুমি আসবে …
কথাটা জানাজানি হবার পর
এক ঝাঁক পাখির ব্যস্ততা বেরে গেছে কয়েকগুণ
শুকিয়ে যাওয়া নদীটিতে ফিরে আসে স্রোতপ্রবাহ
শীতের সকালে কুয়াশার চাদর আরো একটু বেশী সময় স্থায়ী হয়

এই আমি খুব সকালে হাটতে বের হই,
উচ্ছাসের রাজ্যজয় করে এক কাপ গরম চায়ে
মুখ পুড়িয়ে ফেলি প্রায়।
আগে কখনোই গরম চায়ে অভ্যাস ছিলো না।

তোমার কথা ভেবে শীতের ভোরে
হাঁটু জলে দাঁড়িয়ে আছে ধ্যানরত সাদা বক,
শীতের বাতাসে শরীরের পালক হয়তো খসে পরে,
উড়ে যায় দূরে, ডানার শক্তি হারায় ক্রমশ
ঘাস ফড়িং এর দল ছোট ছোট লাফ দিয়ে ক্রমশ দূরে চলে যায়
অপেক্ষার প্রহর অনাদিকাল ডেকে আনে মস্তিষ্কের শিহরণে।

অপেক্ষায় অপেক্ষা করি উষ্ণতায়
অপেক্ষা শিহরণের, অপেক্ষা স্রোতে ভেসে যাবার আর
আক্ষেপ সময়ের হারিয়ে যাবার সৌখিন বিলাস।

বুকের মাঝে গলার কাছে কিছু একটা আটকে আছে,
ঠোঁটের কাছে জমে আছে একরাশ শব্দ।
শব্দের আকুতি নীড় খুঁজে পায় না।

তবুও জেগে আছি অপেক্ষার শব্দ ভাঙার শব্দের আশায়
কুয়াশার অাবরনে, তবুও আশায় থাকি কাদাজলে হেঁটে যাবার,
তবুও হেঁটে যাই পোড়া মাটির গন্ধো নিয়ে আগুনের উনুনের কাছে।
সেই অাগুন থেকে আর ফিরে আসা হয় না বাস্তবিক জীবনে।

তুমিও আসবে আর আমিও পুড়তে থাকি একরোখা কাঠের উনুনে।

জীবন তেপান্তর

জীবন একা, একলা তেপান্তর।
অনিচ্ছাতেও ইচ্ছে সাজাই
একা জীবন ভর।
পাশের কাছের তারা গুলো
গুনতে গিয়ে গুলিয়ে ফেলি
তবুও আমি তারা গুনি
একা জীবন ভর
জীবন একা, একলা তেপান্তর।

রূপকথার রাজকন্য ঘুমিয়ে আছে
হৃদয় কাছে, ইচ্ছে পুরন কাঠি হারাই
ইচ্ছে করে ফুলকে এড়াই
একলা থাকার সহজ পথে
একাই আমি হাতটি বারাই;
জীবন একা, একলা তেপান্তর।

প্রথম প্রেমের শিউলি, বকুল
হারাই আমি একুল ওকুল;
বিকেল থেকে রাত নেমে যায়
সকাল বেলা ঘুম ভেঙ্গে হায়,
পাশের বালিশ কাঁদছে একা
একা ভোরের সূর্য দেখা
তার বুকের লালছে আগুন
আমার মাঝে ভর,
জীবন একা, একলা তেপান্তর।

প্র্রহর গুলো কেবল হলুদ
নীরব বিষাদ সুর বহুদূর
কঠিন ঋণে বদ্ধো জীবন
কেউতো আমার হয় না আপন
স্মৃতী গুলোর হই ক্রীতদাস;
দিকবধূরা হয় উপহাস
ভালোবেসেই একলা হলাম
স্বরবৃত্তের ঘর,
জীবন একা, একলা তেপান্তর।

রাস্থা জুড়ে হাজার মানুষ
ভিন্ন ভিন্ন পথকে সাজায়,
নগ্ন শরীর সূতোয় ঢেকে
সুঠাম নারী যায় যে হেঁটে
হাতের মাঝে ফুলের তোরা
খুনসুটি স্বপ্ন মোড়া,
পাহার ভাঙ্গে অবলীলায়
অজন্ম সে স্বপ্ন বিলায়
আমিই শুধু অপেক্ষাতে
কিংবা কোন পক্ষাঘাতে
বিরান মাঠে সাতার কাটি
হাওয়ায় করে ভর।
জীবন একা, একলা তেপান্তর ।

ছোট কুবিতা ১২৩

ছোট কুবিতা -১
জীবন একেবারে তাবিজ কবজের গল্প হয়ে
কৌটার ভিতরে মৃত্যুবান;
তরতাজা মগজের কোষে
অবারিত ভাবনাগুলো তারিত করে ।
আটপৌড়ে শাড়ির আঁচলে জরানো শুধুই সামাজিক বুনন;
উচ্চ বিলাসি যন্ত্রনা চেটেপুটে খায় সময়ের ক্ষার।
আমিও ভেসে চলি পারভাঙ্গা নদীর স্রোতে
জোয়ার কিংবা ভাটায়।

ছোট কুবিতা -২
অনন্ত প্রহর সময়ের ভাঁজে বন্ধী
অপেক্ষার আক্ষেপ বসন্ত দিন পযর্ন্ত
ঘোলা চোখে তাকিয়ে থাকে।
অব্যক্ত ভাষায় শুধুই নিস্পলক আকুতি;
প্রজাপতির পাখায় ফাগুনের রং কবে আসবে
প্রতিক্ষায় থেকে থেকে আমিও হয়ে যাই
আদিম বাসনা।

ছোট কুবিতা-৩
সেই ছেলে বেলা
সেই মারবেল খেলা, সেই ঘুড়ির সুতো
সেই চাঁদের বুড়ি, সেই ডুব সাঁতার
সেই মায়ের আচার, সেই বোনের আদর
সেই ঘোরে… সেই ঘোর
আর কাটে না।
আপনি তুমি তুই
সেই এক আকাশের নীচে
ভিন্ন জগত ছুঁই।

সময়ের সাথে সাথে পালটায় রং
পাল্টায় জীবনধারা,
প্রথাগত জীবনের আটপৌরে স্বাধীনতা
বুকের জমিন, চোখের কাজল
তবু থেকে যায়..সেই প্রথম থেকে শুরু
আপনি তুমি তুই….

বেদস্তুর সত্যি


অনেক সত্যি আমায় কাঁদায়
সকাল, বিকাল, সাঝে
নিরম্ভর সব সত্যি গুলো
ছবি হয়ে সাজে

কিছু সত্যি পায়না প্রকাশ
ভয়ের তারনায়
সত্যি কিছু যায় ভেসে যায়
সময় ভাবনায়

পরকিয়ার সত্যি গুলো
পরের ঘরে রয়
সেই সত্যি প্রকাশ করা
কেমনে বলো হয়

সত্যি অর্থ সত্যি পথে
ছড়ায় বলো কে
আনাসক্তি হতে সত্যি
বিক্রি করে যে

রংধনু রং সত্যি গুলো
ধূলোর ঝড়ে ঢাকা
ঝড়ের পরে আকাশ নীলে
রং গুলো তার ফাঁকা

কিছু সত্যি সময় ঘোরে
লাগায় চোখে ধাঁ ধাঁ
আদালতে সত্যি লোকের
চোখ দুটো যে বাঁধা

ক্ষুধার রাজ্যে মনের সত্যি
বিকৃত হয় রোজ
ক্রয় শর্তের সাথে থাকে
রঙ্গিন পানি আর ভোজ

সত্যি নিয়ে দ্বন্দ চলে
বউ শাশুরীর মাঝে
সত্যি নিয়ে কোথায় যাবে
ছেলে ভাবে পাছে

বাবা সত্যি বৃদ্ধ তিনি
সত্তর বছরে ঠেকেছে
দনুজ পুত্র দ্বায় মিটাতে
বাজার দত্ত করেছে

সীতার সত্যি রাম বোঝেনি
রামের সত্যি সীতা
সকল সত্যি হয় কি পালন
কোরান কিংবা গীতা

সত্যি কথা অনেক ব্যাথা
বুকের মাঝে গুজে
সত্যি ঘুমের ভান করে রোজ
থাকি যে চোখ বুঝে

**********
কুবিতায়
সত্যি বলে সত্যি কিছু নেই………….

খুঁজে পাবে নাকো তুমি

এখনো ডোবেনি বেলা
ঘাটের নোঙ্গর খুলে যদি ফেলো এই অবেলায়
নতুন বন্দরের খোঁজ পাবে নাকো তুমি,
শুধুই সাঁতারে সাঁতারে চলে যাবে মাঝ নদী বরাবর।
হাওয়ায় ভেসে সারাটা জীবন কাঁটে না কোন পাখির,
গাছের ডালে ফিরতেই হয়। পরিপ্রেক্ষিত প্রেমে শিহরণ জাগা,
থিরি থিরি কাঁপনে রোমাঞ্চিত হওয়া, স্থির রসাতলে জীবন বিন্যাস,
কথায় কথায় ভাঙ্গনের উড়ো হাওয়া সব কিছুই তোমার
শিরার সাথে জরিয়ে কৌশলে কেড়ে নেবে সঠিক ইষ্টিশান।
বন্দরের খোঁজ তুমি পাবে না জোয়ার আসেনি বলে।

এখনো শুকায়নি ফুল গুলো গাছের ডালে,
মাটির উঠান শুধু ভিজে আছে শেষ হেমন্তের শিশিরে ;
রোদ ওঠেনি বলে, জেগে যদি ওঠো ত্প্ত দুপুরে
ফুলের সুভাস পাবে নাকো তুমি,
শুধুই ঝুড়ি ভর্তি ঢলে পরা অলস দিন তোমার
আঙ্গিনায় গড়াগড়ি খাবে।প্রকাশের কোন ভাষা
খুঁজে পাবে নাকো তুমি।

চাঁদ তার আলুথালূ লুটিয়ে পরা কাপড়
গুটিয়ে চলে গেলে তুমি স্বপ্নহীন, ঘুমহীন জেগে রবে,
যেমন জেগে থাকে বিরহী চৈত্রের বাতাস;
কৃষ্ণচূড়া ছায়া ফেলা পথের বাঁকে, তবু
নতুন বন্দরের খোঁজ পাবে নাকো তুমি।

অমীমাংসিত লেফাফা ২

খেলাঘর ভেঙ্গে গেছে বহুবার তারপরও
বেঁধেছি ঘর, কুড়িয়েছি স্বপ্ন, মেলেছি ডানা দিগন্তের হাতছানিতে;
সমান্তরাল জীবনের বাঁধ ভেঙ্গে হঠাত জেগে ওঠা বেলোয়ারী ঝাড়বাতি
দিনের আলোয় চমক দিতে পারেনি কোন দিন। পুরানো স্মৃতির ধূলো সরিয়ে
সঞ্চিত যা কিছু অর্জন ছুঁয়ে যায় হৃদয় তার সবটুকু কেড়ে নিয়েছে যান্ত্রিক বিবেকবোধ;
তুমি, আমি বা আমাদের মাঝে ধীরে ধীরে দেয়াল তুলে দিচ্ছে মাকড়সার জাল
তাই বন্যদশা থেকে মুক্তির মুক্তা সাগরের গভীরে।

মস্তিস্কে স্নায়ুর চাপ বাড়ে ক্রমশ,
ব্যস্ততাহীন ব্যস্ততা গড়িয়ে চলে ধুলোর স্রোতের মত
তারপর বাতাসে বাতাসে উড়ে যায় দৃষ্টি সীমার বাইরে।
তবু জীবনের ধুলো ভরা বাঁশি খুঁজতে গিয়ে হাতে তুলে নেই
রাতের তারা, জোনাকির জীবদ্দশা, বড়জোর পঞ্চমী চাঁদের আলো।
আমি জানি আমার উড়াল ঘোড়ার পিঠে কোন রাজকন্যা
স্বপ্নতে বসতে চাইতে পারে, তাও ভুল করে,বাস্তবতা বড়ই বেরসিক।

আমার মনের জীর্ণ ঘরে মাথা তুলে দাঁড়াবার জন্য কেউ বাস্তবতা নিয়ে ঘুরে দাঁড়াবে না।
অলস বিকেল গল্প বলার আয়োজনে কেউ বসে থাকবে না আমার জন্য,
আর কেন এমন দন্যদশা, এর উত্তর আমার কাছে অমিমাংসিত কারন
আমিও বুঝেছি নৈর্ব্যক্তিক ভালোবাসার থেকে অনেক বেশী প্রয়োজন নৈবেদ্য পূজার থালায়।

তবু আজো আমি একাকি ভিজে চলি এক ছন্নছাড়া চাঁদের আলোয়,
গলিত জোৎস্না আমাকে দগ্ধ করে, মাকড়সার জালের মায়া বাঁধন
আমাকে ঠেলে নিয়ে যায় সময়ের শেষ প্রান্তে আর
ঘরগেরস্ত চাঞ্চল্যে আজও তুমি বাগান সাজাও নিজ হাতে।