মোঃ সফি উদ্দীন এর সকল পোস্ট

ভালোবাসার কাব্য – চল্লিশ

আমারে দিয়েছিলে বেদনা অপার-
আমার ব্যথিত বিষন্ন চোখে
আজো তোমার ছায়া, ১৯৯৯।
পৃথিবী কতবার ঘুরে গেল
সূর্যকে নিতান্ত সাক্ষী রেখে –
ঢ়ের সময় চলে যায়,
অনটারিও লেকে দূর জাহাজের
মাস্তুলে লাগে লবণাক্ত হাওয়া;
সমুদ্র চিলের চিৎকার ভাঙে
ওয়াটার ফ্রন্টের একান্ত নীরবতা।
তবু ১৯৯৯, তুমি আছো
এই জল-সমুদ্র চিলের জর্নালে।

/ড. মোঃ সফি উদ্দীন

ভালোবাসার কাব্য – ঊনচল্লিশ

মরণে নাহি কোন ভয়,
দিতে পারি সাধের এ জীবন,
যদি বলো ‘ভালোবাসি’।
মনে নাহি কোন সংশয়,
জানি হৃদয়ে বন্ধ হবে রক্তক্ষরণ,
যদি বলো ‘ভালোবাসি’।

/ড. মোঃ সফিউদ্দীন

ভালোবাসার কাব্য – আটত্রিশ

পুড়াইলে তোমার নশ্বর দেহ,
কোথায় পাইবে সাধের গেহ?
ঘিরিলে তোমায় কবরের কালো,
কেমনে দেখিবে চান্দের আলো?
জানেন কি তাহা লালন সাঁই!
জানেন কি তাহা মুর্শিদ ভাই!

চক্ষু বুজিলে আঁধারের শেষে,
কেমনে দেখিবে সূর্য আকাশে?
দেহ ডুবিলে দরিয়ার জলে,
কেমনে বাঁচিবে নক্ষত্র তলে?
জানেন কি তাহা লালন সাঁই!
জানেন কি তাহা মুর্শিদ ভাই!

আত্মা ছাড়িলে দেহ আহা রে,
কেমনে পাইবে আবার তাহারে?
হৃদয় মরিলে চিতার আগুনে,
কেমনে বাসিবে ভালো ফাগুনে?
জানেন কি তাহা লালন সাঁই!
জানেন কি তাহা মুর্শিদ ভাই!

/ড. মোঃ সফিউদ্দীন

ভালোবাসার কাব্য – সাঁইত্রিশ

যখন তুমি হাঁটো,
তোমার পায়ে থেমে যায় নদী;
যখন তুমি কাঁদো,
তোমার চোখে মেঘগুলো হয় বন্দী।
যখন তুমি নাচো,
তোমার হাতে স্বর্গ পড়ে ঢলে;
যখন তুমি ডাকো,
তোমার কণ্ঠে আকাশটা যায় গলে।
যখন তুমি হাসো,
তোমার ঠোঁটে জোনাক ছড়ায় আলো;
যখন তুমি বাসো,
তোমার বুকে পার্বতীর ব্রহ্মজ্যোতি জ্বালো।

/ড. মোঃ সফি উদ্দীন

অক্ষমের স্বীকারোক্তি

নিজের ভিতরে
নিতান্ত অক্ষম এই আমি
বলিষ্ঠ সংগমে
জন্ম দিতে পারি না
বলিষ্ঠ ভবিষ্যৎ,
শৃঙ্খলিত দু’হাতে
খান খান করতে পারিনা
ভয়াবহ বর্তমান:
নীরবে লালন করি শুধু রাজাকারের গল্প –
দেখি ভেঙ্গে পড়ে শহীদ মিনার-স্মৃতিসৌধ,
ঝরে পড়ে বর্ণমালার বর্ণসম্ভার
আরো কোন এক পঁচিশে মার্চে –
আর আমি কিছু্ই করতে পারি না
শুধু অক্ষম বসে থাকি মর্মর সিংহাসনে।

/ মো: সফি উদ্দীন

ভালোবাসার কাব্য – ছত্রিশ

আঠারো বছর কেটে গেছে…
অনেক রূপান্তরে প্রিয় শহর,
তুমি আর তোমার জীবন
বদলে গেছে এই আঠারো বছর –
তবু আমি আজো তোমাকে খুঁজি
রাজপথে চটপটি ফুচকার ঝালে,
রেস্তোরাঁয় গরম কফির মগে,
আকাশের নীলে নক্ষত্র জালে।

/ড. মোঃ সফিউদ্দীন

ভালোবাসার কাব্য – পঁয়ত্রিশ

আঠারো বছর কেটে গেছে…
অনেক সূর্যোদয়, অনেক সূর্যাস্ত
দেখেছে এই প্রিয় শহর;
অনেক পলাশ, অনেক কৃষ্ণচূড়া,
অনেক শিমূল ফুটেছে এই আঠারো বছরঃ
আমি আজো তোমার সাথে
ক্লান্তিহীন বসে থাকি মধুর ক্যানটিনে,
টিএসসি চত্ত্বরে, অপরাজেয় বাংলায়,
রমনা পার্কে, আশুলিয়ায় বটের ছায়ায়।
আঠারো বছর কেটে গেছে…
অনেক কেঁদেছে প্রিয় শহর
এই আঠারো বছরঃ
আমি আজো তোমার সাথে
হুডতোলা রিক্সায় ঘুরে বেড়াই
এই শহরের অলিগলি –
কখনো রোদে, কখনো বৃষ্টিতে,
কখনোবা অশনির প্রচণ্ড উদ্ভাসে
তোমার শরীরের উত্তাপ ভালোবেসে।
আঠারো বছর কেটে গেছে…
কুহকী সময়ে শুধু তুমি নেই।

/ড. মোঃ সফি উদ্দীন

ভালোবাসার কাব্য – চৌত্রিশ

তুমি চলতে চলতে খুঁজো যাকে
প্রতিদিন শহরের আনাচে কানাচে,
বলে দাও-বলে দাও ‘খুঁজো’ তাকে
কোন এক সন্ধ্যায় পেলে কাছে।।

১। দেখ প্রজাপতি মেলেছে পাখা
ফুলের গহীন গোপন স্বাদে,
শোন ফড়িঙের হৃদয়ের আকাংখা
ঘাসের প্রাণে শিশিরে কাঁদে।

২। দেখ মেঘেরা বলছে কথা
সুদূরে ঐ আকাশের নীলে
শোন বৃষ্টির গোপন ব্যথা
নদীর মোহনায় বিলাপে মিলে

৩। তুমি আনমনে ভাবো যাকে
প্রতিদিন জীবনেরই ধারাপাতে,
বলে দাও-বলে দাও ‘ভাবো’ তাকে
কোন এক জ্যোৎস্না রাতে।

/ড. মোঃ সফি উদ্দীন

ভালোবাসার কাব্য – তেত্রিশ

। স্বপ্ন দেখার দিনে তুমি ছিলে ।

স্বপ্ন দেখার দিনে তুমি ছিলে,
স্বপ্ন শেষের দিনেও তুমি ছিলে,
তুমি ছিলে সবসময় সবদিনে
আলো আর অন্ধকারে।

সুখ শান্তির দিনে তুমি ছিলে,
ব্যথা আর বেদনার দিনেও তুমি ছিলে,
তুমি ছিলে কাজে-অকাজে সবক্ষণে
অন্তরে আর বাহিরে।

/ড. মোঃ সফি উদ্দীন

ভালোবাসার কাব্য – বত্রিশ

। কোন বেদনা আমায় আর ।

কোন বেদনা আমায় আর
কখনো কাঁদাতে পারে না।
কোন দুঃখ আমায় আর
কখনো ছুঁতে পারে না।

শুয়ে আছি একা এই কবরে
ঢেকে দেহ সবুজ ঘাসের চাদরে।
তোমার হাতের ছোঁয়ায় জেগে উঠি-
দেখি সবুজ চাদরে ফুলের লুটোপুটি;
আকাশে ছড়ানো ঐ নীল জ্যোৎস্না
দিয়েছে তোমায় আমার সমাধির ঠিকানা।

কোন বেদনা আমায় আর
কখনো কাঁদাতে পারে না।

তোমায় ভালোবেসেছিলাম বড় আদরে,
তুমি বুঝনি তখন অবহেলাভরে;
বুঝেছ যখন আমি নেই কাছে,
পেয়েছি ঠাঁই অচেনা গাঁয়ের পাশে।
অবশেষে তোমার পায়ের করুণ আল্পনা
পেয়েছে খুঁজে আমার সমাধি-সীমানা।

কোন বেদনা আমায় আর
কখনো কাঁদাতে পারে না।

কোন দুঃখ আমায় আর
কখনো ছুঁতে পারে না।
কোন বেদনা আমায় আর
কখনো কাঁদাতে পারে না।

/ড. মোঃ সফিউদ্দীন

বাংলাদেশ – নয়

। আমার মন ভেসে যায়রে।

দূরে আরো বহুদূরে
আমার মন ভেসে যায়রে।।
যেথায় আকাশ মিশে নদীর সনে
বৈঠা হাতে মাঝি ভাটিয়ালি গায়রে,
যেথায় ফড়িঙ নাচে বনে বনে
মৌমাছিরা ফুলের মধু খায়রে,
আমার মন ভেসে যায়রে।
দূরে আরো বহুদূরে
আমার মন ভেসে যায়রে।।

যেথায় বাতাস নাচে সরষে ক্ষেতে
বটের ছায়ায় রাখাল বাঁশি বাজায়রে,
যেথায় গৃহস্থ-বউ উড়ায় ধান আঙিনাতে
সজনে পাতা ঝিরিঝিরি ভেসে বেড়ায়রে,
আমার মন ভেসে যায়রে।
দূরে আরো বহুদূরে
আমার মন ভেসে যায়রে।।

যেথায় কোকিল ডাকে কুহুতানে
বাবুই বুনে কী দারুণ বাসারে,
যেথায় বাউল ঘুরে পথের টানে
একতারায় আজো লালন বাজায়রে,
আমার মন ভেসে যায়রে।
দূরে আরো বহুদূরে
আমার মন ভেসে যায়রে।।

যেথায় ঘুঘু ডাকে ভর দুপুরে
শ্যাওলা জলে হংসমিথুন ভাসেরে,
যেথায় শালিখ খেলে উঠোন জুড়ে
ডালিম গাছে বুলবুলিরা নাচেরে,
আমার মন ভেসে যায়রে।
দূরে আরো বহুদূরে
আমার মন ভেসে যায়রে।।

/ ড. মোঃ সফিউদ্দীন

বাংলাদেশ – আট

। চলো যাই ।

যত দূর চোখ যায়
দেখি শুধু সবুজের মেলা,
মাঝখানে বইছে একটি নদী
বুকে তার ভাসছে ভেলা।
চলো যাই, ছুটে যাই
আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়।।

ধান ক্ষেত পাশে নিয়ে
মেঠো পথ জানায় আমন্ত্রণ,
পথে সারি সারি বৃক্ষরাজি
শাখা দুলিয়ে জানায় সম্ভাষণ।
চলো যাই, ছুটে যাই
আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়।।

হমলি বেড়ার উনুন ঘরে
গৃহস্থ-বউ বসতে দিবে পিঁড়ে;
শিউলি ফুলের সুবাস নিয়ে
কুয়াশা রাখবে তোমায় ঘিরে।
চলো যাই, ছুটে যাই
আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়।।

জ্যোৎস্না ধোঁয়া মাঠের মাঝে
খড়ের পালায় ঘুমালে তুমি
নকশিকাঁথার আকাশ এসে
দিবে তোমার চক্ষু চুমি।
চলো যাই, ছুটে যাই
আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়।।

/ ড. মোঃ সফি উদ্দীন

বাংলাদেশ – সাত

তুমি কী জানো।

ষোল কোটি বাঙালির
প্রিয় স্বদেশ, বাংলাদেশ,
তুমি কী জানো
কত কোটি মানবিক?
কত কোটি প্রেমিক?
কত কোটি ধর্মবিশ্বাসী?
আর কত কোটি ধর্মসন্ত্রাসী?

/ ড. মোঃ সফি উদ্দীন

ডাকে আমায় সোনার বাংলা

কুয়ালালামপুর কিম্বা সিংগাপুর
যেখানেই যাই যতদূর
ডাকে আমায় সোনার বাংলা।

দুবাই কিম্বা মুম্বাই
যেখানেই ঘুরে বেড়াই
ডাকে আমায় জয় বাংলা।

হামিলটন কিম্বা বার্লিংটন
যেখানেই কাটাই যতক্ষণ
ডাকে আমায় রূপসী বাংলা।

ডাবলিন কিম্বা ব্রুকলিন
যেখানেই হই উদাসীন
ডাকে আমায় চিত্ররূপময় বাংলা।

উইন্ডসর কিম্বা অমৃতসর
যেখানেই বসাই আসর
ডাকে আমায় শ্যামলী বাংলা।

ফ্লোরিডা কিম্বা উগান্ডা
যেখানেই দেই আড্ডা
ডাকে আমায় মেঘবতী বাংলা।

/ ড. মোঃ সফি উদ্দীন

ভালোবাসার কাব্য – দশ

ধর্ম মানি না, ঈশ্বর মানি না,
শুধু তোমারেই মানি;
সকল বাঁধা দু’পায়ে ভেঙে তাই
তোমারে কাছে টানিয়া আনি।
এ পৃথিবী হারায় হারাক,
শুধু তুমি থেকো;
প্রলয়ের মাঝে মুমূর্ষু আমারে
বুকের গভীরে জড়ায়ে রেখো।