মুরুব্বী এর সকল পোস্ট

মুরুব্বী সম্পর্কে

আমি আজাদ কাশ্মীর জামান। আছি মুরুব্বী নামের অন্তরালে। কবিতা পড়ি, কবিতা লিখার চেষ্টা করি। ভেতরে আছে বাউল মন। খুঁজে ফিরি তাকে। জানা হয়নি এখনো। ঘুরতে ঘুরতে আজ পৃথিবীর স্বর্গে। এখানেই পরিচয় হয়েছিলো, কবিতা পাগল এক মানুষের সংগে। নাম জিয়া রায়হান। যার কিছু শব্দকথা, এ্যাতোদিন ভরেছে আমার পাতা। উথাল পাথাল হাওয়া, হৃদয়ে জাগালো দোলা পেলাম কিছু সমমনা মানুষের দ্যাখা। দিনভর আর রাতভর শুধু কবিতায় গেলো বেলা। সব ছেড়েছি- সব পেয়েছি- ভুলতে পারিনি শুধু কবিতার অশ্রুসজল চোখ। ভালো লাগা থেকেই দু’ একটা শব্দ সাজাবার চেষ্টা করি। মাতাল বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে মাটির কলসে, তবলার ধ্বণী তুলে গাইতে পারি বেসুরো গান- সুর নামের অন্তরালে। ভালোলাগে পোষা কবুতরের পালক ললাটে ছোঁয়াতে। ফুল থেকে রং নিয়ে, খেলি হোলিখেলা, হৃদয়ের উঠোনে। আজ তারি ধমকে এলাম স্বরূপে- স্বকথায় ভরাবো পাতা।   hits counter

শ্রী রবীন্দ্রনাথের ১৫২ তম জন্মবার্ষিকী এবং জীবনপঞ্জিকা ২


রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫২ তম জন্মবার্ষিকী এবং জীবনপঞ্জিকা’র প্রথম অংশ।

বিশ্বভ্রমণঃ মূল নিবন্ধ: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিশ্বভ্রমণ।

SUBHA  5 রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মোট বারো বার বিশ্বভ্রমণে বেড়িয়েছিলেন। ১৮৭৮ থেকে ১৯৩২ সালের মধ্যে তিনি পাঁচটি মহাদেশের ত্রিশটিরও বেশী দেশ ভ্রমণ করেন। প্রথম জীবনে দু-বার (১৮৭৮ ও ১৮৯০) তিনি ইংল্যান্ড ভ্রমণ করেছিলেন। ১৯১২ সালে তৃতীয়বার ইংল্যান্ডে গিয়ে ইয়েটস প্রমুখ ইংরেজ কবি ও বুদ্ধিজীবীদের কাছে সদ্যরচিত গীতাঞ্জলি কাব্যের ইংরেজি অনুবাদ পাঠ করে শোনান। এই পাঠ শুনে তাঁরাও কবির গুণমুগ্ধে পরিণত হন। ইয়েটস স্বয়ং উক্ত কাব্যের ইংরেজি অনুবাদের ভূমিকাটি লিখে দিয়েছিলেন। এই ভ্রমণের সময়েই “দীনবন্ধু” চার্লস ফ্রিয়ার অ্যান্ড্রুজের সঙ্গে তাঁর পরিচয় ঘটে। ১৯১৩ সালে সুইডিশ অ্যাকাডেমি তাঁকে নোবেল পুরস্কারে সম্মানিত করে। ১৯১৬-১৭ সালে জাপান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ সাম্রাজ্যবাদ ও উগ্র জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে কতকগুলি বক্তৃতা দেন। ১৯২০-২১ সাল নাগাদ আবার ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরে যান কবি। ১৯২৪ সালে রবীন্দ্রনাথ যান চীন সফরে। এরপর চীন থেকে জাপানে গিয়ে সেখানেও জাতীয়তাবাদ বিরোধী বক্তৃতা দেন কবি। ১৯২৪ সালের শেষের দিকে পেরু সরকারের আমন্ত্রণে সেদেশে যাওয়ার পথে আর্জেন্টিনায় অসুস্থ হয়ে কবি ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর আতিথ্যে তিন মাস কাটান। পরে পেরু ও মেক্সিকো ভ্রমণ করেন। উভয় দেশের সরকারই কবির ভ্রমণকে স্মরণীয় করে রাখতে বিশ্বভারতীকে ১,০০,০০০ মার্কিন ডলার অর্থসাহায্য প্রদান করেছিল। ১৯২৬ সালে বেনিতো মুসোলিনির আমন্ত্রণে ইতালি সফরে গিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। প্রথমে মুসোলিনির আতিথেয়তায় মুগ্ধ হলেও, পরে লোকমুখে তাঁর স্বৈরাচারের কথা জানতে পেরে, মুসোলিনির কাজকর্মের সমালোচনা করেন কবি। এর ফলে উভয়ের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে ছেদ পড়ে। এরপর রবীন্দ্রনাথ গ্রীস, তুরস্ক ও মিশর ভ্রমণ করে ভারতে ফিরে আসেন।

SUBHA 6 ১৯২৭ সালে সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় সহ চার সঙ্গীকে নিয়ে রবীন্দ্রনাথ গিয়েছিলেন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া সফরে। এই সময় তিনি ভ্রমণ করেন বালি, জাভা, কুয়ালালামপুর, মালাক্কা, পেনাং, সিয়াম ও সিঙ্গাপুর। ১৯৩০ সালে কবি শেষবার ইংল্যান্ডে যান অক্সফোর্ডে হিবার্ট বক্তৃতা দেওয়ার জন্য। এরপর তিনি ভ্রমণ করেন ফ্রান্স, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, সোভিয়েত রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ১৯৩২ সালে ইরাক ও পারস্য ভ্রমণে গিয়েছিলেন কবি। এরপর ১৯৩৪ সালে সিংহলে যান রবীন্দ্রনাথ। এটিই ছিল তাঁর সর্বশেষ বিদেশ সফর।

রবীন্দ্রনাথ যে সকল বইতে তাঁর বিদেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতাগুলি লিপিবদ্ধ করে রাখেন সেগুলি হল: য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র (১৮৮১), য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি (১৮৯১, ১৮৯৩), জাপান-যাত্রী (১৯১৯), যাত্রী (পশ্চিম-যাত্রীর ডায়েরী ও জাভা-যাত্রীর পত্র, ১৯২৯), রাশিয়ার চিঠি (১৯৩১), পারস্যে (১৯৩৬) ও পথের সঞ্চয় (১৯৩৯)। ব্যাপক বিশ্বভ্রমণের ফলে রবীন্দ্রনাথ অঁরি বের্গসঁ, আলবার্ট আইনস্টাইন, রবার্ট ফ্রস্ট, টমাস মান, জর্জ বার্নার্ড শ, এইচ জি ওয়েলস, রোম্যাঁ রোলাঁ প্রমুখ তাঁর সমসাময়িক বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পেয়েছিলেন। জীবনের একেবারে শেষপর্বে পারস্য, ইরাক ও সিংহল ভ্রমণের সময় মানুষের পারস্পরিক ভেদাভেদ ও জাতীয়তাবাদ সম্পর্কে তাঁর বিতৃষ্ণা আরও তীব্র হয়েছিল মাত্র। এবং বিশ্ব পরিক্রমার ফলে ভারতের বাইরে নিজের রচনাকে পরিচিত করে তোলার এবং বহির্বিশ্বের সঙ্গে রাজনৈতিক মতবিনিময়ের সুযোগও পেয়েছিলেন তিনি।

সৃষ্টিকর্মঃ এই বিষয়ে মূল নিবন্ধের জন্য দেখুন: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সৃষ্টিকর্ম।

428755_167793793385299_85034388_n রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন মূলত কবি। মাত্র আট বছর বয়সে তিনি কাব্যরচনা শুরু করেছিলেন। তাঁর রচিত কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা পঞ্চাশ। তবে বাঙালি সমাজে তাঁর জনপ্রিয়তা মূলত সংগীতস্রষ্টা হিসেবে। রবীন্দ্রনাথ দুই সহস্রাধিক গান লিখেছিলেন। কবিতা ও গান ছাড়াও তিনি ১৩টি উপন্যাস, শতাধিক গল্প-ছোটগল্প, দুই শতাধিক প্রবন্ধ, ত্রিশটিরও বেশি নাটক লিখেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সমগ্র রচনা রবীন্দ্র রচনাবলী বত্রিশ খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া তাঁর সামগ্রিক চিঠিপত্র উনিশ খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর বহু রচনা আজও অপ্রকাশিত। নৃত্য বিষয়েও রবীন্দ্রনাথের বিশেষ আগ্রহ ছিল। নৃত্যকলা নিয়ে নানান পরীক্ষানিরীক্ষা চালিয়ে তিনি একটি স্বতন্ত্র নৃত্যশৈলী উদ্ভব করেছিলেন। এই শৈলীটি “রবীন্দ্রনৃত্য” নামে পরিচিত।

SUBHA 7 কবিতাঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঊনবিংশ শতাব্দীর বিশিষ্ট কবি বিহারীলাল চক্রবর্তীর অনুকরণে কাব্যরচনা শুরু করেছিলেন। বিহারীলাল-অনুসারী কবি হিসেবে তিনি কবিকাহিনী, বনফুল ও ভগ্নহৃদয় কাব্য তিনটি রচনা করেন। সন্ধ্যাসংগীত কাব্যগ্রন্থ থেকে রবীন্দ্রনাথ নিজের বক্তব্য প্রকাশ করতে শুরু করেন। এই পর্বের সন্ধ্যাসংগীত, প্রভাতসংগীত, ছবি ও গান ও কড়ি ও কোমল কাব্যগ্রন্থের মূল বিষযবস্তু ছিল মানব হৃদয়ের বিষণ্ণতা, আনন্দ, মর্ত্যপ্রীতি ও মানবপ্রেম। ১৮৯০ সালে প্রকাশিত মানসী এবং তার পর প্রকাশিত সোনার তরী, চিত্রা, চৈতালি, কল্পনা ও ক্ষণিকা কাব্যগ্রন্থে ফুটে উঠেছে রবীন্দ্রনাথের প্রেম ও সৌন্দর্য সম্পর্কিত রোম্যান্টিক ভাবনা। ১৯০১ সালে ব্রহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠার পর রবীন্দ্রনাথের কবিতায় আধ্যাত্মিক চিন্তার প্রাধান্য লক্ষিত হয়। এই চিন্তা ধরা পড়েছে নৈবেদ্য, খেয়া, গীতাঞ্জলি, গীতিমাল্য ও গীতালি কাব্যগ্রন্থে। ১৯১৫ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সূচনা ঘটলে বলাকা কাব্যে রবীন্দ্রনাথের কবিতায় আধ্যাত্মিক চিন্তার পরিবর্তে আবার মর্ত্য জীবন সম্পর্কে আগ্রহ ফুটে ওঠে। পলাতকা কাব্যে গল্প-কবিতার আকারে তিনি নারী জীবনের সমসাময়িক সমস্যাগুলো তুলে ধরেন। পূরবী ও মহুয়া কাব্যগ্রন্থে রবীন্দ্রনাথ আবার প্রেমকে উপজীব্য করেন। এরপর পুনশ্চ, শেষ সপ্তক, পত্রপুট ও শ্যামলী নামে চারটি গদ্যকাব্য প্রকাশিত হয়। জীবনের শেষ দশকে কবিতার আঙ্গিক ও বিষযবস্তু নিয়ে কয়েকটি নতুন পরীক্ষানিরীক্ষা চালিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। এই সময়কার রোগশয্যায়, আরোগ্য, জন্মদিনে ও শেষ লেখা (মরণোত্তর প্রকাশিত) কাব্যে মৃত্যু ও মর্ত্যপ্রীতিকে একটি নতুন আঙ্গিকে পরিস্ফূট করেছিলেন তিনি। শেষ কবিতা “তোমার সৃষ্টির পথ” মৃত্যুর আট দিন আগে মৌখিকভাবে রচনা করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

মধ্যযুগীয় বৈষ্ণব পদাবলি, উপনিষদ্‌, কবীরের দোঁহাবলি, লালনের বাউল গান ও রামপ্রসাদ সেনের শাক্ত পদাবলি সাহিত্যের প্রভাব লক্ষিত হয়। তবে প্রাচীন সাহিত্যের দুরূহতার পরিবর্তে তিনি এক সহজ ও সরস কাব্যরচনার আঙ্গিক গ্রহণ করেছিলেন। আবার ১৯৩০-এর দশকে কিছু পরীক্ষামূলক লেখালিখির মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যে আধুনিকতা ও বাস্তবতাবোধের প্রাথমিক আবির্ভাব প্রসঙ্গে নিজ প্রতিক্রিয়াও ব্যক্ত করেছিলেন কবি। বহির্বিশ্বে তাঁর সর্বাপেক্ষা সুপরিচিত কাব্যগ্রন্থটি হলো গীতাঞ্জলি। এ বইটির জন্যই তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেছিলেন। নোবেল ফাউন্ডেশন তাঁর এই কাব্যগ্রন্থটিকে বর্ণনা করেছিল একটি “গভীরভাবে সংবেদনশীল, উজ্জ্বল ও সুন্দর কাব্যগ্রন্থ” রূপে।

ছোটগল্পঃ

SUBHA 8 রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যের একজন অগ্রণী ছোটগল্প রচয়িতা। মূলত হিতবাদী, সাধনা, ভারতী, সবুজ পত্র প্রভৃতি মাসিক পত্রিকাগুলির চাহিদা মেটাতে তিনি তাঁর ছোটগল্পগুলি রচনা করেছিলেন। এই গল্পগুলির উচ্চ সাহিত্যমূল্য-সম্পন্ন। রবীন্দ্রনাথের জীবনের “সাধনা” পর্বটি (১৮৯১–৯৫) ছিল সর্বাপেক্ষা সৃষ্টিশীল পর্যায়। তাঁর গল্পগুচ্ছ গল্পসংকলনের প্রথম তিন খণ্ডের চুরাশিটির গল্পের অর্ধেকই রচিত হয় এই সময়কালের মধ্যে। গল্পগুচ্ছ সংকলনের অন্য গল্পগুলির অনেকগুলিই রচিত হয়েছিল রবীন্দ্রজীবনের সবুজ পত্র পর্বে (১৯১৪–১৭; প্রমথ চৌধুরী সম্পাদিত পত্রিকার নামানুসারে) তাঁর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গল্প হল “কঙ্কাল”, “নিশীথে”, “মণিহারা”, “ক্ষুধিত পাষাণ”, “স্ত্রীর পত্র”, “নষ্টনীড়”, “কাবুলিওয়ালা”, “হৈমন্তী”, “দেনাপাওনা”, “মুসলমানীর গল্প” ইত্যাদি। শেষ জীবনী রবীন্দ্রনাথ লিপিকা, সে ও তিনসঙ্গী গল্পগ্রন্থে নতুন আঙ্গিকে গল্পরচনা করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ তাঁর গল্পে পারিপার্শ্বিক ঘটনাবলি বা আধুনিক ধ্যান ধারণা সম্পর্কে মতামত প্রকাশ করতেন। কখনও তিনি মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্বের বৌদ্ধিক বিশ্লেষণকেই গল্পে বেশি প্রাধান্য দিতে।

রবীন্দ্রনাথের একাধিক ছোটগল্প অবলম্বনে চলচ্চিত্র, নাটক ও টেলিভিশন অনুষ্ঠান নির্মিত হয়েছে। তাঁর গল্পের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রায়ণ হলো সত্যজিৎ রায় পরিচালিত তিন কন্যা (“মনিহারা”, “পোস্টমাস্টার” ও “সমাপ্তি” অবলম্বনে) ও চারুলতা (“নষ্টনীড়” অবলম্বনে), তপন সিংহ পরিচালিত কাবুলিওয়ালা ও ক্ষুধিত পাষাণ, পূর্ণেন্দু পত্রী পরিচালিত স্ত্রীর পত্র ইত্যাদি।

SUBHA 9 উপন্যাসঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মোট তেরোটি উপন্যাস রচনা করেছিলেন। এগুলি হলো: বৌ-ঠাকুরাণীর হাট (১৮৮৩), রাজর্ষি (১৮৮৭), চোখের বালি (১৯০৩), নৌকাডুবি (১৯০৬), প্রজাপতির নির্বন্ধ (১৯০৮), গোরা (১৯১০), ঘরে বাইরে (১৯১৬), চতুরঙ্গ (১৯১৬), যোগাযোগ (১৯২৯), শেষের কবিতা (১৯২৯), দুই বোন (১৯৩৩), মালঞ্চ (১৯৩৪) ও চার অধ্যায় (১৯৩৪)। বৌ-ঠাকুরাণীর হাট ও রাজর্ষি ঐতিহাসিক উপন্যাস। এ দুটি রবীন্দ্রনাথের প্রথম উপন্যাস রচনার প্রচেষ্টা। এরপর থেকে ছোটগল্পের মতো তাঁর উপন্যাসগুলিও মাসিকপত্রের চাহিদা অনুযায়ী নবপর্যায় বঙ্গদর্শন, প্রবাসী, সবুজ পত্র, বিচিত্রা প্রভৃতি পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়।

চোখের বালি উপন্যাসে দেখানো হয়েছে সম-সাময়িককালে বিধবাদের জীবনের নানা সমস্যা। নৌকাডুবি উপন্যাসটি আবার লেখা হয়েছে জটিল পারিবারিক সমস্যাগুলিকে কেন্দ্র করে। গোরা রবীন্দ্রনাথের শ্রেষ্ঠ উপন্যাস। এই উপন্যাসে দেখানো হয়েছে ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষার্ধের হিন্দু ও ব্রাহ্মসমাজের সংঘাত ও ভারতের তদনীন্তন সামাজিক ও রাজনৈতিক সমস্যাগুলি। ঘরে বাইরে উপন্যাসের বিষয়বস্তু ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে নারী ও পুরুষের সম্পর্কের জটিলতা। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের জটিলতা আরও সূক্ষ্মভাবে উঠে এসেছে তাঁর পরবর্তী যোগাযোগ উপন্যাসেও। চতুরঙ্গ উপন্যাসটি রবীন্দ্রনাথের “ছোটগল্পধর্মী উপন্যাস”। স্ত্রীর অসুস্থতার সুযোগে স্বামীর অন্য স্ত্রীলোকের প্রতি আসক্তি – এই বিষয়টিকে উপজীব্য করে রবীন্দ্রনাথ দুই বোন ও মালঞ্চ উপন্যাস দুটি লেখেন। এর মধ্যে প্রথম উপন্যাসটি মিলনান্তক ও দ্বিতীয়টি বিয়োগান্তক। রবীন্দ্রনাথের শেষ উপন্যাস চার অধ্যায় সমসাময়িক বিপ্লবী আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে একটি বিয়োগান্তক প্রেমের উপন্যাস।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপন্যাস অবলম্বনে কয়েকটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য সত্যজিৎ রায়ের ঘরে বাইরে ও ঋতুপর্ণ ঘোষের চোখের বালি।

প্রবন্ধ ও পত্রসাহিত্যঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় বহু প্রবন্ধ ও প্রবন্ধ গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। এই সব প্রবন্ধে তিনি সমাজ, রাষ্ট্রনীতি, ধর্ম, সাহিত্যতত্ত্ব, ইতিহাস, ভাষাতত্ত্ব, ছন্দ, সংগীত ইত্যাদি নানা বিষয়ে নিজস্ব মতামত প্রকাশ করেছেন। রবীন্দ্রনাথের সমাজ চিন্তামূলক প্রবন্ধগুলি সমাজ (১৯০৮) সংকলনে সংকলিত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের বিভিন্ন সময়ে লেখা রাজনীতি-সংক্রান্ত প্রবন্ধগুলি সংকলিত হয়েছে কালান্তর (১৯৩৭) সংকলনে। রবীন্দ্রনাথের ধর্মভাবনা ও আধ্যাত্মিক অভিভাষণগুলি সংকলিত হয়েছে ধর্ম (১৯০৯) ও শান্তিনিকেতন (১৯০৯-১৬) অভিভাষণ মালায়। রবীন্দ্রনাথের ইতিহাস-সংক্রান্ত প্রবন্ধগুলি স্থান পেয়েছে ভারতবর্ষ (১৯০৬), ইতিহাস (১৯৫৫) ইত্যাদি গ্রন্থে। সাহিত্য (১৯০৭), সাহিত্যের পথে (১৯৩৬) ও সাহিত্যের স্বরূপ (১৯৪৩) গ্রন্থে রবীন্দ্রনাথ সাহিত্যতত্ত্ব আলোচনা করেছেন। রবীন্দ্রনাথ ধ্রুপদি ভারতীয় সাহিত্য ও আধুনিক সাহিত্যের সমালোচনা করেছেন যথাক্রমে প্রাচীন সাহিত্য (১৯০৭) ও আধুনিক সাহিত্য (১৯০৭) গ্রন্থদুটিতে। লোকসাহিত্য (১৯০৭) প্রবন্ধমালায় তিনি আলোচনা করেছেন বাংলা লোকসাহিত্যের প্রকৃতি। ভাষাতত্ত্ব নিয়ে রবীন্দ্রনাথের চিন্তাভাবনা লিপিবদ্ধ রয়েছে শব্দতত্ত্ব (১৯০৯), বাংলা ভাষা পরিচয় (১৯৩৮) ইত্যাদি গ্রন্থে। ছন্দ ও সংগীত নিয়ে তিনি আলোচনা করেছেন যথাক্রমে ছন্দ (১৯৩৬) ও সংগীতচিন্তা (১৯৬৬) গ্রন্থে। বিশ্বভারতীর প্রতিষ্ঠাতা রবীন্দ্রনাথ তাঁর শিক্ষা-সংক্রান্ত ভাবনাচিন্তার কথা প্রকাশ করেছেন শিক্ষা (১৯০৮) প্রবন্ধমালায়। ন্যাশনালিজম (ইংরেজি: Nationalism, ১৯১৭) গ্রন্থে রবীন্দ্রনাথ উগ্র জাতীয়তাবাদের বিশ্লেষণ করে তার বিরোধিতা করেছেন। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি দর্শন বিষয়ে যে বিখ্যাত বক্তৃতাগুলি দিয়েছিলেন সেগুলি রিলিজিয়ন অফ ম্যান (ইংরেজি: Religion of Man, ১৯৩০; বাংলা অনুবাদ মানুষের ধর্ম, ১৯৩৩) নামে সংকলিত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে লেখা জন্মদিনের অভিভাষণ সভ্যতার সংকট (১৯৪১) তাঁর সর্বশেষ প্রবন্ধগ্রন্থ। জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়ে রবীন্দ্রনাথ বিশ্বপরিচয় (১৯৩৭) নামে একটি তথ্যমূলক প্রবন্ধগ্রন্থ রচনা করেছিলেন। জীবনস্মৃতি (১৯১২), ছেলেবেলা (১৯৪০) ও আত্মপরিচয় (১৯৪৩) তাঁর আত্মকথামূলক গ্রন্থ।

রবীন্দ্রনাথের সামগ্রিক পত্রসাহিত্য আজ পর্যন্ত উনিশটি খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া ছিন্নপত্র ও ছিন্নপত্রাবলী (ভ্রাতুষ্পুত্রী ইন্দিরা দেবী চৌধুরাণীকে লেখা), ভানুসিংহের পত্রাবলী (রানু অধিকারীকে (মুখোপাধ্যায়) লেখা) ও পথে ও পথের প্রান্তে (নির্মলকুমারী মহলানবিশকে লেখা) বই তিনটি রবীন্দ্রনাথের তিনটি উল্লেখযোগ্য পত্র সংকলন।

SUBHA 10 নাট্যসাহিত্যঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন নাট্যকার ও নাট্যাভিনেতা। জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির পারিবারিক নাট্যমঞ্চে মাত্র ষোলো বছর বয়সে অগ্রজ জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত হঠাৎ নবাব নাটকে (মলিয়ের লা বুর্জোয়া জাঁতিরোম অবলম্বনে রচিত) ও পরে জ্যোতিরিন্দ্রনাথেরই অলীকবাবু নাটকে নামভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। ১৮৮১ সালে তাঁর প্রথম গীতিনাট্য বাল্মীকি-প্রতিভা মঞ্চস্থ হয়। এই নাটকে তিনি ঋষি বাল্মীকির ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। ১৮৮২ সালে রবীন্দ্রনাথ রামায়ণের উপাখ্যান অবলম্বনে কালমৃগয়া নামে আরও একটি গীতিনাট্য রচনা করেছিলেন। এই নাটক মঞ্চায়নের সময় তিনি অন্ধমুনির ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন।

গীতিনাট্য রচনার পর রবীন্দ্রনাথ কয়েকটি কাব্যনাট্য রচনা করেন। শেক্সপিয়রীয় পঞ্চাঙ্ক রীতিতে রচিত তাঁর রাজা ও রাণী (১৮৮৯) ও বিসর্জন (১৮৯০) বহুবার সাধারণ রঙ্গমঞ্চে অভিনীত হয় এবং তিনি নিজে এই নাটকগুলিতে অভিনয়ও করেন। ১৮৮৯ সালে রাজা ও রাণী নাটকে বিক্রমদেবের ভূমিকায় করেন রবীন্দ্রনাথ। বিসর্জন নাটকটি দুটি ভিন্ন সময়ে মঞ্চায়িত করেছিলেন তিনি। ১৮৯০ সালের মঞ্চায়নের সময় যুবক রবীন্দ্রনাথ বৃদ্ধ রঘুপতির ভূমিকায় এবং ১৯২৩ সালের মঞ্চায়নের সময় বৃদ্ধ রবীন্দ্রনাথ যুবক জয়সিংহের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। কাব্যনাট্য পর্বে রবীন্দ্রনাথের আরও দুটি উল্লেখযোগ্য নাটক হল চিত্রাঙ্গদা (১৮৯২) ও মালিনী (১৮৯৬)।

কাব্যনাট্যের পর রবীন্দ্রনাথ প্রহসন রচনায় মনোনিবেশ করেন। এই পর্বে প্রকাশিত হয় গোড়ায় গলদ (১৮৯২), বৈকুণ্ঠের খাতা (১৮৯৭), হাস্যকৌতুক (১৯০৭) ও ব্যঙ্গকৌতুক (১৯০৭)। বৈকুণ্ঠের খাতা নাটকে রবীন্দ্রনাথ কেদারের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। ১৯২৬ সালে তিনি প্রজাপতির নির্বন্ধ উপন্যাসটিকেও চিরকুমার সভা নামে একটি প্রহসনমূলক নাটকের রূপ দেন।

SUBHA 11 ১৯০৮ সাল থেকে রবীন্দ্রনাথ রূপক- সাংকেতিক তত্ত্বধর্মী নাট্যরচনা শুরু করেন। ইতিপূর্বে প্রকৃতির প্রতিশোধ (১৮৮৪) নাটকে তিনি কিছুটা রূপক-সাংকেতিক আঙ্গিক ব্যবহার করেছিলেন। কিন্তু ১৯০৮ সালের পর থেকে একের পর এক নাটক তিনি এই আঙ্গিকে লিখতে শুরু করেন। এই নাটকগুলি হল: শারদোৎসব (১৯০৮), রাজা (১৯১০), ডাকঘর (১৯১২), অচলায়তন (১৯১২), ফাল্গুনী (১৯১৬), মুক্তধারা (১৯২২), রক্তকরবী (১৯২৬), তাসের দেশ (১৯৩৩), কালের যাত্রা (১৯৩২) ইত্যাদি। এই সময় রবীন্দ্রনাথ প্রধানত শান্তিনিকেতনে মঞ্চ তৈরি করে ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে অভিনয়ের দল গড়ে মঞ্চস্থ করতেন। কখনও কখনও কলকাতায় গিয়েও ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে নাটক মঞ্চস্থ করতেন তিনি। এই সব নাটকেও একাধিক চরিত্রে অভিনয় করেন রবীন্দ্রনাথ। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য: ১৯১১ সালে শারদোৎসব নাটকে সন্ন্যাসী এবং রাজা নাটকে রাজা ও ঠাকুরদাদার যুগ্ম ভূমিকায় অভিনয়; ১৯১৪ সালে অচলায়তন নাটকে অদীনপুণ্যের ভূমিকায় অভিনয়; ১৯১৫ সালে ফাল্গুনী নাটকে অন্ধ বাউলের ভূমিকায় অভিনয়; ১৯১৭ সালে ডাকঘর নাটকে ঠাকুরদা, প্রহরী ও বাউলের ভূমিকায় অভিনয়। নাট্যরচনার পাশাপাশি এই পর্বে ছাত্রছাত্রীদের অভিনয়ের প্রয়োজনে রবীন্দ্রনাথ পুরনো নাটকগুলি সংক্ষিপ্ত সংস্করণ করে নতুন নামে প্রকাশ করেন। শারদোৎসব নাটকটি হয় ঋণশোধ (১৯২১), রাজা হয় অরূপরতন (১৯২০), অচলায়তন হয় গুরু (১৯১৮), গোড়ায় গলদ হয় শেষরক্ষা (১৯২৮), রাজা ও রাণী হয়তপতী (১৯২৯) এবং প্রায়শ্চিত্ত হয় পরিত্রাণ (১৯২৯)।

১৯২৬ সালে নটীর পূজা নাটকে অভিনয়ের সঙ্গে সঙ্গে নাচ ও গানের প্রয়োগ ঘটিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। এই ধারাটিই তাঁর জীবনের শেষ পর্বে “নৃত্যনাট্য” নামে পূর্ণ বিকাশ লাভ করে। নটীর পূজা নৃত্যনাট্যের পর রবীন্দ্রনাথ একে একে রচনা করেন শাপমোচন (১৯৩১), তাসের দেশ (১৯৩৩), নৃত্যনাট্য চিত্রাঙ্গদা (১৯৩৬), নৃত্যনাট্য চণ্ডালিকা (১৯৩৮) ওশ্যামা (১৯৩৯)। এগুলিও শান্তিনিকেতনের ছাত্রছাত্রীরাই প্রথম মঞ্চস্থ করেছিলেন।

সংগীত ও নৃত্যকলাঃ মূল নিবন্ধ: রবীন্দ্রসংগীত।

SUBHA 12 রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রায় ২,২০০ গান রচনা করেছিলেন। ধ্রুপদি ভারতীয় সংগীত, বাংলা লোকসংগীত ও ইউরোপীয় সংগীতের ধারা তিনটিকে আত্মস্থ করে তিনি একটি স্বকীয় সুরশৈলীর জন্ম দেন। তাঁর রচিত সকল গান সংকলিত হয়েছে গীতবিতান গ্রন্থে। এই গ্রন্থের “পূজা”, “প্রেম”, “প্রকৃতি”, “স্বদেশ”, “আনুষ্ঠানিক” ও “বিচিত্র” পর্যায়ে মোট দেড় হাজার গান সংকলিত হয়। পরে গীতিনাট্য, নৃত্যনাট্য, নাটক, কাব্যগ্রন্থ ও অন্যান্য সংকলন গ্রন্থ থেকে বহু গান এই বইতে সংকলিত হয়েছিল। ইউরোপীয় অপেরার আদর্শে বাল্মীকি-প্রতিভা, কালমৃগয়া গীতিনাট্য এবং চিত্রাঙ্গদা, চণ্ডালিকা, ও শ্যামা সম্পূর্ণ গানের আকারে লেখা।

রবীন্দ্রনাথের সময় বাংলার শিক্ষিত পরিবারে নৃত্যের চর্চা নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ বিশ্বভারতীর পাঠক্রমে সংগীত ও চিত্রকলার সঙ্গে সঙ্গে নৃত্যকেও অন্তর্ভুক্ত করেন। ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের লোকনৃত্য ও ধ্রুপদি নৃত্যশৈলীগুলির সংমিশ্রণে তিনি এক নতুন শৈলীর প্রবর্তন করেন। এই শৈলীটি “রবীন্দ্রনৃত্য” নামে পরিচিত। রবীন্দ্রনাথের গীতিনাট্য ও নৃত্যনাট্যগুলিতে গানের পাশাপাশি নাচও অপরিহার্য। বিশিষ্ট নৃত্যশিল্পী উদয় শংকর যে আধুনিক ভারতীয় নৃত্যধারার প্রবর্তন করেছিলেন, তার পিছনেও রবীন্দ্রনাথের প্রেরণা ছিল।

চিত্রকলাঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিয়মিত ছবি আঁকা শুরু করেন প্রায় সত্তর বছর বয়সে। চিত্রাঙ্কনে কোনো প্রথাগত শিক্ষা তাঁর ছিল না। প্রথম দিকে তিনি লেখার হিজিবিজি কাটাকুটিগুলিকে একটি চেহারা দেওয়ার চেষ্টা করতেন। এই প্রচেষ্টা থেকেই তাঁর ছবি আঁকার সূত্রপাত ঘটে। ১৯২৮ থেকে ১৯৩৯ কালপরিধিতে অঙ্কিত তাঁর স্কেচ ও ছবির সংখ্যা আড়াই হাজারের ওপর, যার ১৫৭৪টি শান্তিনিকেতনের রবীন্দ্রভবনে সংরক্ষিত আছে। দক্ষিণ ফ্রান্সের শিল্পীদের উৎসাহে ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে তাঁর প্রথম চিত্র প্রদর্শনী হয় প্যারিসের পিগাল আর্ট গ্যালারিতে। এরপর সমগ্র ইউরোপেই কবির একাধিক চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। ছবিতে রং ও রেখার সাহায্যে রবীন্দ্রনাথ সংকেতের ব্যবহার করতেন। রবীন্দ্রনাথ প্রাচ্য চিত্রকলার পুনরুত্থানে আগ্রহী হলেও, তাঁর নিজের ছবিতে আধুনিক বিমূর্তধর্মিতাই বেশি প্রস্ফুটিত হয়েছে। মূলত কালিকলমে আঁকা স্কেচ, জলরং ও দেশজ রঙের ব্যবহার করে তিনি ছবি আঁকতেন। তাঁর ছবিতে দেখা যায় মানুষের মুখের স্কেচ, অনির্ণেয় প্রাণীর আদল, নিসর্গদৃশ্য, ফুল, পাখি ইত্যাদি। তিনি নিজের প্রতিকৃতিও এঁকেছেন। নন্দনতাত্ত্বিক ও বর্ণ পরিকল্পনার দিক থেকে তাঁর চিত্রকলা বেশ অদ্ভুত ধরনেরই বলে মনে হয়। তবে তিনি একাধিক অঙ্কনশৈলী রপ্ত করেছিলেন। তন্মধ্যে, এর কয়েকটি শৈলী হলো – নিউ আয়ারল্যান্ডের হস্তশিল্প, কানাডার (ব্রিটিশ কলম্বিয়া প্রদেশ) পশ্চিম উপকূলের “হাইদা” খোদাইশিল্প ও ম্যাক্স পেকস্টাইনের কাঠখোদাই শিল্প।

রাজনৈতিক মতাদর্শঃ মূল নিবন্ধ: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রাজনৈতিক মতাদর্শ।

SUBHA  13 রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রাজনৈতিক দর্শন অত্যন্ত জটিল। তিনি সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা ও ভারতীয় জাতীয়তাবাদীদের সমর্থন করতেন। ১৮৯০ সালে প্রকাশিত মানসী কাব্যগ্রন্থের কয়েকটি কবিতায় রবীন্দ্রনাথের প্রথম জীবনের রাজনৈতিক ও সামাজিক চিন্তাভাবনার পরিচয় পাওয়া যায়। হিন্দু-জার্মান ষড়যন্ত্র মামলার তথ্যপ্রমাণ এবং পরবর্তীকালে প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা যায়, রবীন্দ্রনাথ গদর ষড়যন্ত্রের কথা শুধু জানতেনই না, বরং উক্ত ষড়যন্ত্রে জাপানি প্রধানমন্ত্রী তেরাউচি মাসাতাকি ও প্রাক্তন প্রিমিয়ার ওকুমা শিগেনোবুর সাহায্যও প্রার্থনা করেছিলেন। আবার ১৯২৫ সালে প্রকাশিত একটি প্রবন্ধে স্বদেশী আন্দোলনকে “চরকা-সংস্কৃতি” বলে বিদ্রুপ করে রবীন্দ্রনাথ কঠোর ভাষায় তার বিরোধিতা করেন। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ তাঁর চোখে ছিল “আমাদের সামাজিক সমস্যাগুলির রাজনৈতিক উপসর্গ”। তাই বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে বৃহত্তর জনসাধারণের স্বনির্ভরতা ও বৌদ্ধিক উন্নতির উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি। ভারতবাসীকে অন্ধ বিপ্লবের পন্থা ত্যাগ করে দৃঢ় ও প্রগতিশীল শিক্ষার পন্থাটিকে গ্রহণ করার আহ্বান জানান রবীন্দ্রনাথ।

রবীন্দ্রনাথের এই ধরনের মতাদর্শ অনেককেই বিক্ষুব্ধ করে তোলে। ১৯১৬ সালের শেষ দিকে সানফ্রান্সিসকোয় একটি হোটেলে অবস্থানকালে একদল চরমপন্থী বিপ্লবী রবীন্দ্রনাথকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিল। কিন্তু নিজেদের মধ্যে মতবিরোধ উপস্থিত হওয়ায় তাঁদের পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছিল। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে রবীন্দ্রনাথের গান ও কবিতার ভূমিকা অনস্বীকার্য। ১৯১৯ সালে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে তিনি নাইটহুড বর্জন করেন। নাইটহুড প্রত্যাখ্যান-পত্রে লর্ড চেমসফোর্ডকে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, “আমার এই প্রতিবাদ আমার আতঙ্কিত দেশবাসীর মৌনযন্ত্রণার অভিব্যক্তি।” রবীন্দ্রনাথের “চিত্ত যেথা ভয়শূন্য” ও “একলা চলো রে” রাজনৈতিক রচনা হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। “একলা চলো রে” গানটি গান্ধীজির বিশেষ প্রিয় ছিল। যদিও মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের সম্পর্ক ছিল অম্লমধুর। হিন্দু নিম্নবর্ণীয় জন্য পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থাকে কেন্দ্র করে গান্ধীজি ও আম্বেডকরের যে মতবিরোধের সূত্রপাত হয়, তা নিরসনেও রবীন্দ্রনাথ বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। ফলে গান্ধীজিও তাঁর অনশন কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন।

রবীন্দ্রনাথ তাঁর “তোতা-কাহিনী” গল্পে বিদ্যালয়ের মুখস্ত-সর্বস্ব শিক্ষাকে প্রতি তীব্রভাবে আক্রমণ করেন। এই গল্পে রবীন্দ্রনাথ দেখিয়েছিলেন, দেশের ছাত্রসমাজকে খাঁচাবদ্ধ পাখিটির মতো শুকনো বিদ্যা গিলিয়ে কিভাবে তাদের বৌদ্ধিক মৃত্যুর পথে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। ১৯১৭ সালের ১১ অক্টোবর ক্যালিফোর্নিয়ার সান্টা বারবারা ভ্রমণের সময় রবীন্দ্রনাথ শিক্ষা সম্পর্কে প্রথাবিরুদ্ধ চিন্তাভাবনা শুরু করেন। শান্তিনিকেতন আশ্রমকে দেশ ও ভূগোলের গণ্ডীর বাইরে বের করে ভারত ও বিশ্বকে একসূত্রে বেঁধে একটি বিশ্ব শিক্ষাকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনাও এই সময়েই গ্রহণ করেছিলেন কবি। ১৯১৮ সালের ২২ অক্টোবর বিশ্বভারতী নামাঙ্কিত তাঁর এই বিদ্যালয়ের শিলান্যাস করা হয়েছিল। এরপর ১৯২২ সালের ২২ ডিসেম্বর উদ্বোধন হয়েছিল এই বিদ্যালয়ের। বিশ্বভারতীতে কবি সনাতন ভারতীয় শিক্ষাব্যবস্থার ব্রহ্মচর্য ও গুরুপ্রথার পুনর্প্রবর্তন করেছিলেন। এই বিদ্যালয়ের জন্য অর্থসংগ্রহ করতে কঠোর পরিশ্রম করেছিলেন তিনি। নোবেল পুরস্কারের অর্থমূল্য হিসেবে প্রাপ্ত সম্পূর্ণ অর্থ তিনি ঢেলে দিয়েছিলেন এই বিদ্যালয়ের পরিচালন খাতে। নিজেও শান্তিনিকেতনের অধ্যক্ষ ও শিক্ষক হিসেবেও অত্যন্ত ব্যস্ত থাকতেন তিনি। সকালে ছাত্রদের ক্লাস নিতেন এবং বিকেল ও সন্ধ্যায় তাদের জন্য পাঠ্যপুস্তক রচনা করতেন। ১৯১৯ সাল থেকে ১৯২১ সালের মধ্যে বিদ্যালয়ের জন্য অর্থ সংগ্রহ করতে তিনি একাধিকবার ইউরোপ ও আমেরিকা ভ্রমণ করেন।

SUBHA 14 প্রভাবঃ বিংশ শতাব্দীর বাঙালি সংস্কৃতিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রভাব অত্যন্ত ব্যাপক। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ তথা দার্শনিক অমর্ত্য সেন রবীন্দ্রনাথকে এক “হিমালয়প্রতিম ব্যক্তিত্ব” ও “গভীরভাবে প্রাসঙ্গিক ও বহুমাত্রিক সমসাময়িক দার্শনিক” হিসেবে বর্ণনা করেছেন। বত্রিশ খণ্ডে প্রকাশিত রবীন্দ্র রচনাবলী বাংলা সাহিত্যের একটি বিশেষ সম্পদ হিসেবে পরিগণিত হয়। রবীন্দ্রনাথকে “ভারতের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ কবি” হিসেবেও বর্ণনা করা হয়ে থাকে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মবার্ষিকী “পঁচিশে বৈশাখ” ও প্রয়াণবার্ষিকী “বাইশে শ্রাবণ” আজও বাঙালি সমাজে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে পালিত হয়ে থাকে। এই উপলক্ষ্যেজোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি, শান্তিনিকেতন আশ্রম ও শিলাইদহ কুঠিবাড়িতে প্রচুর জনসমাগম হয়। শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে রবীন্দ্রনাথ-প্রবর্তিত ধর্মীয় ও ঋতু উৎসবগুলির মাধ্যমেও তাঁকে শ্রদ্ধা নিবেদনের রীতি অক্ষুন্ন আছে। এছাড়াও বিভিন্ন উৎসবে ও অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রসংগীত গাওয়া বা রবীন্দ্ররচনা পাঠের রেওয়াজও দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। এগুলি ছাড়াও কবির সম্মানে আরও কতকগুলি বিশেষ ও অভিনব অনুষ্ঠান পালন করা হয়। যেমন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় রাজ্যের আরবানাতে আয়োজিত বার্ষিক “রবীন্দ্র উৎসব”, কলকাতা-শান্তিনিকেতন তীর্থ-পদযাত্রা “রবীন্দ্র পথপরিক্রমা” ইত্যাদি।

SUBHA 15 জীবদ্দশাতেই ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা ও পূর্ব এশিয়ায় প্রভূত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। ইংল্যান্ডে ডার্টিংটন হল স্কুল নামে একটি প্রগতিশীল সহশিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠান স্থাপনে মুখ্য ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন তিনি। অনেজ জাপানি সাহিত্যিককে তিনি প্রভাবিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এঁদের মধ্যে ইয়াসুনারি কাওয়াবাতার নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। রবীন্দ্রনাথের গ্রন্থাবলী অনূদিত হয় ইংরেজি, ওলন্দাজ, জার্মান, স্প্যানিশ সহ বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায়। চেক ভারততত্ত্ববিদ ভিনসেন্স লেনসি সহ একাধিক ইউরোপীয় ভাষায় তাঁর গ্রন্থ অনুবাদ করেন। ফরাসি নোবেলজয়ী সাহিত্যিক আন্দ্রে জিদ্, রাশিয়ান কবি আনা আখমাতোভা , প্রাক্তন তুর্কি প্রধানমন্ত্রী বুলেন্ত একেভিত, মার্কিন ঔপন্যাসিক জোনা গেইল সহ অনেকেই অনুপ্রেরণা লাভ করেন রবীন্দ্রনাথের রচনা থেকে। ১৯১৬-১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রে দেওয়া তাঁর ভাষণগুলি বিশেষ জনপ্রিয়তা ও প্রশংসা পায়। তবে কয়েকটি বিতর্ককে কেন্দ্র করে ১৯২০-এর দশকের শেষদিকে জাপান ও উত্তর আমেরিকায় তাঁর জনপ্রিয়তা হ্রাস পায়। কালক্রমে বাংলার বাইরে রবীন্দ্রনাথ “প্রায় অস্তমিত” হয়ে পড়েছিলেন।

চিলিয়ান সাহিত্যিক পাবলো নেরুদা ও গ্যাব্রিয়েলা মিস্ত্রাল, মেক্সিকান লেখক অক্টাভিও পাজ ও স্প্যানিশ লেখক হোসে অরতেগা ওয়াই গ্যাসেৎ, থেনোবিয়া কামপ্রুবি আইমার, ও হুয়ান রামোন হিমেনেথ প্রমুখ স্প্যানিশ-ভাষী সাহিত্যিকদেরও অনুবাদের সূত্রে অনুপ্রাণিত করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। ১৯১৪ থেকে ১৯২২ সালের মধ্যে হিমেনেথ-কামপ্রুবি দম্পতি রবীন্দ্রনাথের বাইশটি বই ইংরেজি থেকে স্প্যানিশে অনুবাদ করেছিলেন। দ্য ক্রেসেন্ট মুন (শিশু ভোলানাথ) সহ রবীন্দ্রনাথের বেশ কিছু রচনার বিস্তারিত পর্যালোচনা ও স্প্যানিশ সংস্করণ প্রকাশও করেছিলেন তাঁরা। এই সময়েই হিমেনেথ “নগ্ন কবিতা” (স্প্যানিশ: poesia desnuda) নামে এক বিশেষ সাহিত্যশৈলীর উদ্ভাবন ঘটান।

রবীন্দ্রনাথের মূল বাংলা কবিতা পড়েননি এমন বহু পাশ্চাত্য সাহিত্যিক ও সাহিত্য সমালোচক রবীন্দ্রনাথের গুরুত্ব অস্বীকারও করেছিলেন। গ্রাহাম গ্রিন সন্দিগ্ধচিত্তে মন্তব্য করেছিলেন, “ইয়েটস সাহেব ছাড়া আর কেউই রবীন্দ্রনাথের লেখাকে গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করেন না।” রবীন্দ্রনাথের সম্মানের কিছু পুরনো লাতিন আমেরিকান খণ্ডাংশ সম্প্রতি আবিষ্কৃত হয়েছে। নিকারাগুয়া ভ্রমণের সময় সালমান রুশদি এই জাতীয় কিছু উদাহরণ দেখে অবাক হন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নামাঙ্কিত স্মারক ও দ্রষ্টব্যস্থলঃ
■ রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতা — রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামাঙ্কিত বিশ্ববিদ্যালয়। জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষাপ্রাঙ্গন।
■ রবীন্দ্র পুরস্কার — রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামাঙ্কিত পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ সাহিত্য পুরস্কার।
■ রবীন্দ্রসদন — রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামাঙ্কিত কলকাতার একটি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাগৃহ ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রধান কার্যালয়।
■ রবীন্দ্র সেতু — রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামাঙ্কিত হাওড়া ও কলকাতা শহরের মধ্যে সংযোগরক্ষাকারী সেতু।
■ রবীন্দ্র সরোবর, কলকাতা — রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামাঙ্কিত ভারতের একটি জাতীয় হ্রদ। এটি কলকাতার বৃহত্তম হ্রদ।
অতিরিক্ত ধন্যবাদ জ্ঞাপন এবং কৃতজ্ঞতা : সুব্রত হোতা।

79596_n

httpv://youtu.be/vD8GeZ7jnEo
আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে এ জীবন পূণ্য করো দহন- দানে।

ফেসবুক লিঙ্ক : আজাদ কাশ্মীর জামান।

কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনপঞ্জিকা …

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন অগ্রণী বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, সঙ্গীতস্রষ্টা, নাট্যকার, চিত্রকর, ছোটগল্পকার, প্রাবন্ধিক, অভিনেতা, কণ্ঠশিল্পী ও দার্শনিক। তাঁকে বাংলা ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক মনে করা হয়। তাঁকে বাংলা ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক মনে করা হয়। রবীন্দ্রনাথকে গুরুদেব, কবিগুরু ও বিশ্বকবি অভিধায় ভূষিত করা হয়। রবীন্দ্রনাথের ৫২টি কাব্যগ্রন্থ, ৩৮টি নাটক, ১৩টি উপন্যাস ও ৩৬টি প্রবন্ধ ও অন্যান্য গদ্য সংকলন তাঁর জীবদ্দশায় বা মৃত্যুর অব্যবহিত পরে প্রকাশিত হয়। তাঁর সর্বমোট ৯৫টি ছোটগল্প ও ১৯১৫টি গান যথাক্রমে গল্পগুচ্ছ ও গীতবিতান সংকলনের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের যাবতীয় প্রকাশিত ও গ্রন্থাকারে অপ্রকাশিত রচনা ৩২ খণ্ডে রবীন্দ্র রচনাবলী নামে প্রকাশিত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের যাবতীয় পত্রসাহিত্য উনিশ খণ্ডে চিঠিপত্র ও চারটি পৃথক গ্রন্থে প্রকাশিত। এছাড়া তিনি প্রায় দুই হাজার ছবি এঁকেছিলেন। রবীন্দ্রনাথের রচনা বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় অনুদিত হয়েছে। ১৯১৩ সালে গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদের জন্য তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন

রবীন্দ্রনাথ কলকাতার এক ধনাঢ্য ও সংস্কৃতিবান ব্রাহ্ম পিরালী ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাল্যকালে প্রথাগত বিদ্যালয়-শিক্ষা তিনি গ্রহণ করেননি; গৃহশিক্ষক রেখে বাড়িতেই তাঁর শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৭৪ সালে তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা-এ তাঁর “অভিলাষ” কবিতাটি প্রকাশিত হয়। এটিই ছিল তাঁর প্রথম প্রকাশিত রচনা। ১৮৭৮ সালে মাত্র সতেরো বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথ প্রথমবার ইংল্যান্ডে যান। ১৮৮৩ সালে মৃণালিনী দেবীর সঙ্গে তাঁর বিবাহ হয়। ১৮৯০ সাল থেকে রবীন্দ্রনাথ পূর্ববঙ্গের শিলাইদহের জমিদারি এস্টেটে বসবাস শুরু করেন। ১৯০১ সালে তিনি শান্তিনিকেতনে ব্রহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন এবং সেখানেই পাকাপাকিভাবে বসবাস শুরু করেন। ১৯০২ সালে তাঁর পত্নীবিয়োগ হয়। ১৯০৫ সালে তিনি বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯১৫ সালে ব্রিটিশ সরকার তাঁকে নাইট উপাধিতে ভূষিত করেন। কিন্তু ১৯১৯ সালে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে তিনি সেই উপাধি ত্যাগ করেন। ১৯২১ সালে গ্রামোন্নয়নের জন্য তিনি শ্রীনিকেতন নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠিত হয়। দীর্ঘ জীবনে তিনি বহুবার বিদেশ ভ্রমণ করেন এবং সমগ্র বিশ্বে বিশ্বভ্রাতৃত্বের বাণী প্রচার করেন। ১৯৪১ সালে দীর্ঘ রোগভোগের পর কলকাতার পৈত্রিক বাসভবনেই তাঁর মৃত্যু হয়।

রবীন্দ্রনাথের কাব্য সাহিত্যের বৈশিষ্ট্য ভাবগভীরতা, গীতিধর্মিতা চিত্ররূপময়তা, অধ্যাত্মচেতনা, ঐতিহ্যপ্রীতি, প্রকৃতিপ্রেম, মানবপ্রেম, স্বদেশপ্রেম, বিশ্বপ্রেম, রোম্যান্টিক সৌন্দর্যচেতনা, ভাব, ভাষা, ছন্দ ও আঙ্গিকের বৈচিত্র্য, বাস্তবচেতনা ও প্রগতিচেতনা। রবীন্দ্রনাথের গদ্যভাষাও কাব্যিক। ভারতের ধ্রুপদি ও লৌকিক সংস্কৃতি এবং পাশ্চাত্য বিজ্ঞানচেতনা ও শিল্পদর্শন তাঁর রচনায় গভীর প্রভাব বিস্তার করেছিল। কথাসাহিত্য ও প্রবন্ধের মাধ্যমে তিনি সমাজ, রাজনীতি ও রাষ্ট্র নীতি সম্পর্কে নিজ মতামত প্রকাশ করেছিলেন। সমাজকল্যাণের উপায় হিসেবে তিনি গ্রামোন্নয়ন ও গ্রামের দরিদ্র জনসাধারনকে শিক্ষিত করে তোলার পক্ষে মতপ্রকাশ করেন। এর পাশাপাশি সামাজিক ভেদাভেদ, অস্পৃশ্যতা, ধর্মীয় গোঁড়ামি ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধেও তিনি তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথের দর্শন চেতনায় ঈশ্বরের মূল হিসেবে মানব সংসারকেই নির্দিষ্ট করা হয়েছে; রবীন্দ্রনাথ দেব বিগ্রহের পরিবর্তে কর্মী অর্থাৎ মানুষ ঈশ্বরের পূজার কথা বলেছিলেন। সংগীত ও নৃত্যকে তিনি শিক্ষার অপরিহার্য অঙ্গ মনে করতেন। রবীন্দ্রনাথে গান তাঁর অন্যতম শ্রেষ্ঠ কীর্তি। তাঁর রচিত আমার সোনার বাংলা ও জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে গান দুটি যথাক্রমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ ও ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের জাতীয় সংগীত।

জীবনঃ মূল নিবন্ধ: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবন (১৮৬১–১৯০১)

SUBHA  2 শৈশব ও কৈশোর (১৮৬১ – ১৮৭৮) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর পিতা ছিলেন ব্রাহ্ম ধর্মগুরু দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮১৭–১৯০৫) এবং মা ছিলেন সারদাসুন্দরী দেবী (১৮২৬–১৮৭৫)। রবীন্দ্রনাথ ছিলেন পিতামাতার চতুর্দশ সন্তান। জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবার ছিল ব্রাহ্ম আদিধর্ম মতবাদের প্রবক্তা। ১৮৭৫ সালে মাত্র চোদ্দ বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথের মাতৃবিয়োগ ঘটে। পিতা দেবেন্দ্রনাথ দেশভ্রমণের নেশায় বছরের অধিকাংশ সময় কলকাতার বাইরে অতিবাহিত করতেন। তাই ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান হয়েও রবীন্দ্রনাথের ছেলেবেলা কেটেছিল ভৃত্যদের অনুশাসনে। শৈশবে রবীন্দ্রনাথ কলকাতার ওরিয়েন্টাল সেমিনারি, নর্ম্যাল স্কুল, বেঙ্গল অ্যাকাডেমি এবং সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজিয়েট স্কুলে কিছুদিন করে পড়াশোনা করেছিলেন। কিন্তু বিদ্যালয়-শিক্ষায় তাঁর মন না বসায় বাড়িতেই গৃহশিক্ষক রেখে তাঁর শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ছেলেবেলায় জোড়াসাঁকোর বাড়িতে অথবা বোলপুর ও পানিহাটির বাগানবাড়িতে প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে ঘুরে বেড়াতে বেশি স্বাচ্ছন্দ বোধ করতেন রবীন্দ্রনাথ।

১৮৭৩ সালে এগারো বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথের উপনয়ন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এরপর তিনি কয়েক মাসের জন্য পিতার সঙ্গে দেশভ্রমণে বের হন। প্রথমে তাঁরা আসেন শান্তিনিকেতনে। এরপর পাঞ্জাবের অমৃতসরে কিছুকাল কাটিয়ে শিখদের উপাসনা পদ্ধতি দেখেন। শেষে পুত্রকে নিয়ে দেবেন্দ্রনাথ যান পাঞ্জাবেরই (অধুনা ভারতের হিমাচল প্রদেশ রাজ্যে অবস্থিত) ডালহৌসি শৈলশহরের নিকট বক্রোটায়। এখানকার বক্রোটা বাংলোয় বসে রবীন্দ্রনাথ পিতার কাছ থেকে সংস্কৃত ব্যাকরণ, ইংরেজি, জ্যোতির্বিজ্ঞান, সাধারণ বিজ্ঞান ও ইতিহাসের নিয়মিত পাঠ নিতে শুরু করেন। দেবেন্দ্রনাথ তাঁকে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের জীবনী, কালিদাস রচিত ধ্রুপদি সংস্কৃত কাব্য ও নাটক এবং উপনিষদ পাঠেও উৎসাহিত করতেন। ১৮৭৭ সালে ভারতী পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রচনা প্রকাশিত হয়। এই রচনাগুলো হলো মাইকেল মধুসূদনের ‘মেঘনাদবধ কাব্যের সমালোচনা’, ‘ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী’ এবং ‘ভিখারিণী’ ও করুণা নামে দুটি গল্প। এগুলির মধ্যে ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এই কবিতাগুলি রাধা-কৃষ্ণ বিষয়ক পদাবলির অনুকরণে “ভানুসিংহ” ভণিতায় রচিত। রবীন্দনাথের ‘ভিখারিণী’ গল্পটি (১৮৭৭) বাংলা সাহিত্যের প্রথম ছোটগল্প। ১৮৭৮ সালে প্রকাশিত হয় রবীন্দ্রনাথের প্রথক কাব্যগ্রন্থ তথা প্রথম মুদ্রিত গ্রন্থ কবিকাহিনী। এই পর্বে তিনি রচনা করেছিলেন সন্ধ্যাসংগীত (১৮৮২) কাব্যগ্রন্থটি। বিখ্যাত কবিতা ‘নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ এই কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত।

SUBHA  3a যৌবন (১৮৭৮-১৯০১) ১৮৭৮ সালে ব্যারিস্টারি পড়ার উদ্দেশ্যে ইংল্যান্ডে যান রবীন্দ্রনাথ। প্রথমে তিনি ব্রাইটনের একটি পাবলিক স্কুলে ভর্তি হয়েছিলেন। ১৮৭৯ সালে ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনে আইন বিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। কিন্তু সাহিত্যচর্চার আকর্ষণে সেই পড়াশোনা তিনি সমাপ্ত করতে পারেননি। ইংল্যান্ডে থাকাকালীন শেক্সপিয়ার ও অন্যান্য ইংরেজ সাহিত্যিকদের রচনার সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের পরিচয় ঘটে। এই সময় তিনি বিশেষ মনোযোগ সহকারে পাঠ করেন রিলিজিও মেদিচি, কোরিওলেনাস এবং অ্যান্টনি অ্যান্ড ক্লিওপেট্রা। এই সময় তাঁর ইংল্যান্ড বাসের অভিজ্ঞতার কথা ভারতী পত্রিকায় পত্রাকারে পাঠাতেন রবীন্দ্রনাথ। পত্রিকায় এই লেখাগুলি জ্যেষ্ঠভ্রাতা দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সমালোচনাসহ প্রকাশিত হত য়ুরোপযাত্রী কোনো বঙ্গীয় যুবকের পত্রধারা নামে। ১৮৮১ সালে সেই পত্রাবলি য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র নামে গ্রন্থাকারে ছাপা হয়। এটিই ছিল রবীন্দ্রনাথের প্রথম গদ্যগ্রন্থ তথা প্রথম চলিত ভাষায় লেখা গ্রন্থ। শেষে ১৮৮০ সালে প্রায় দেড় বছর ইংল্যান্ডে কাটিয়ে কোনো ডিগ্রি না নিয়ে এবং ব্যারিস্টারি পড়া শুরু না করেই তিনি দেশে ফিরে আসেন।

১৮৮৩ সালের ৯ ডিসেম্বর (২৪ অগ্রহায়ণ, ১২৯০ বঙ্গাব্দ) ঠাকুরবাড়ির অধস্তন কর্মচারী বেণীমাধব রায়চৌধুরীর কন্যা ভবতারিণীর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের বিবাহ সম্পন্ন হয়। বিবাহিত জীবনে ভবতারিণীর নামকরণ হয়েছিল মৃণালিনী দেবী (১৮৭৩–১৯০২ )। রবীন্দ্রনাথ ও মৃণালিনীর পাঁচটি সন্তান হয়েছিল: মাধুরীলতা (১৮৮৬–১৯১৮), রথীন্দ্রনাথ (১৮৮৮–১৯৬১), রেণুকা (১৮৯১–১৯০৩), মীরা (১৮৯৪–১৯৬৯) ও শমীন্দ্রনাথ (১৮৯৬–১৯০৭)। এঁদের মধ্যে অতি অল্প বয়সেই রেণুকা ও শমীন্দ্রনাথের মৃত্যু ঘটে।

robi2 ১৮৯১ সাল থেকে পিতার আদেশে নদিয়া (নদিয়ার উক্ত অংশটি অধুনা বাংলাদেশের কুষ্টিয়া জেলা), পাবনা ও রাজশাহী জেলা এবং উড়িষ্যার জমিদারির তদারকি শুরু করেন রবীন্দ্রনাথ। কুষ্টিয়ার শিলাইদহের কুঠিবাড়িতে রবীন্দ্রনাথ দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করেছিলেন। জমিদার রবীন্দ্রনাথ শিলাইদহে “পদ্মা” নামে একটি বিলাসবহুল পারিবারিক বজরায় চড়ে প্রজাবর্গের কাছে খাজনা আদায় ও আশীর্বাদ প্রার্থনা করতে যেতেন। গ্রামবাসীরাও তাঁর সম্মানে ভোজসভার আয়োজন করতো।

১৮৯০ সালে রবীন্দ্রনাথের অপর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ মানসী প্রকাশিত হয়। কুড়ি থেকে ত্রিশ বছর বয়সের মধ্যে তাঁর আরও কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ ও গীতিসংকলন প্রকাশিত হয়েছিল। এগুলি হল প্রভাতসংগীত, শৈশবসঙ্গীত, রবিচ্ছায়া, কড়ি ও কোমল ইত্যাদি। ১৮৯১ থেকে ১৮৯৫ সাল পর্যন্ত নিজের সম্পাদিত সাধনা পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথের বেশ কিছু উৎকৃষ্ট রচনা প্রকাশিত হয়। তাঁর সাহিত্যজীবনের এই পর্যায়টি তাই “সাধনা পর্যায়” নামে পরিচিত। রবীন্দ্রনাথের গল্পগুচ্ছ গ্রন্থের প্রথম চুরাশিটি গল্পের অর্ধেকই এই পর্যায়ের রচনা। এই ছোটগল্প গুলিতে তিনি বাংলার গ্রামীণ জনজীবনের এক আবেগময় ও শ্লেষাত্মক ছবি এঁকেছিলেন।

মধ্য জীবনঃ মূল নিবন্ধ: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবন (১৯০১–১৯৩২)

১৯০১ সালে রবীন্দ্রনাথ সপরিবারে শিলাইদহ ছেড়ে চলে আসেন বীরভূম জেলার বোলপুর শহরের উপকণ্ঠে শান্তিনিকেতনে। এখানে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৮৮ সালে একটি আশ্রম ও ১৮৯১ সালে একটি ব্রহ্মমন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আশ্রমের আম্রকুঞ্জ উদ্যানে একটি গ্রন্থাগার নিয়ে রবীন্দ্রনাথ চালু করলেন ‘ব্রহ্মবিদ্যালয়’ বা ‘ব্রহ্মচর্যাশ্রম’ নামে একটি পরীক্ষামূলক স্কুল। ১৯০২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর মাত্র ত্রিশ বছর বয়সে কবিপত্নী মৃণালিনী দেবী মারা যান। ১৯০৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর কন্যা রেণুকা, ১৯০৫ সালের ১৯ জানুয়ারি পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও ১৯০৭ সালের ২৩ নভেম্বর কনিষ্ঠ পুত্র শমীন্দ্রনাথের মৃত্যু হয়।

এসবের মধ্যেই ১৯০৫ সালে রবীন্দ্রনাথ বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী স্বদেশী আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন। ১৯০৬ সালে রবীন্দ্রনাথ তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্র রথীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রেরণ করেন আধুনিক কৃষি ও গোপালন বিদ্যা শেখার জন্য। ১৯০৭ সালে কনিষ্ঠা জামাতা নগেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়কেও কৃষিবিজ্ঞান শেখার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রেরণ করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ।

এই সময় শান্তিনিকেতনের ব্রহ্মবিদ্যালয়ে অর্থসংকট তীব্র হয়ে ওঠে। পাশাপাশি পুত্র ও জামাতার বিদেশে পড়াশোনার ব্যয়ভারও রবীন্দ্রনাথকে বহন করতেন। এমতাবস্থায় রবীন্দ্রনাথ স্ত্রীর গয়না ও পুরীর বসতবাড়িটি বিক্রি করতে বাধ্য হন।

ইতিমধ্যেই অবশ্য বাংলা ও বহির্বঙ্গে রবীন্দ্রনাথের কবিখ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল। ১৯০১ সালে নৈবেদ্য ও ১৯০৬ সালে খেয়া কাব্যগ্রন্থের পর ১৯১০ সালে তাঁর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ গীতাঞ্জলি প্রকাশিত হয়। ১৯১৩ সালে গীতাঞ্জলি (ইংরেজি অনুবাদ, ১৯১২) কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদের জন্য সুইডিশ অ্যাকাডেমি রবীন্দ্রনাথকে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারে প্রদান করে। ১৯১৫ সালে ব্রিটিশ সরকার তাঁকে “স্যার” উপাধি (নাইটহুড) দেয়।

১৯২১ সালে শান্তিনিকেতনের অদূরে সুরুল গ্রামে মার্কিন কৃষি-অর্থনীতিবিদ লেনার্ড নাইট এলমহার্স্ট, রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং শান্তিনিকেতনের আরও কয়েকজন শিক্ষক ও ছাত্রের সহায়তায় রবীন্দ্রনাথ “পল্লী সংগঠন কেন্দ্র” নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। এই সংস্থার উদ্দেশ্য ছিল কৃষির উন্নতিসাধন, ম্যালেরিয়া ইত্যাদি রোগ নিবারণ, সমবায় প্রথায় ধর্মগোলা স্থাপন, চিকিৎসার সুব্যবস্থা এবং সাধারণ গ্রামবাসীদের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি করা। ১৯২৩ সালে রবীন্দ্রনাথ এই সংস্থার নাম পরিবর্তন করে রাখেন “শ্রীনিকেতন”। শ্রীনিকেতন ছিল মহাত্মা গান্ধীর প্রতীক ও প্রতিবাদ সর্বস্ব স্বরাজ আন্দোলনের একটি বিকল্প ব্যবস্থা। উল্লেখ্য, রবীন্দ্রনাথ গান্ধীর আন্দোলনের পন্থাটির বিরোধী ছিলেন। পরবর্তীকালে দেশ ও বিদেশের একাধিক বিশেষজ্ঞ, দাতা ও অন্যান্য পদাধিকারীরা শ্রীনিকেতনের জন্য আর্থিক ও অন্যান্য সাহায্য পাঠিয়েছিলেন।

১৯৩০-এর দশকের প্রথম ভাগে একাধিক বক্তৃতা, গান ও কবিতায় রবীন্দ্রনাথ ভারতীয় সমাজের বর্ণাশ্রম প্রথা ও অস্পৃশ্যতার তীব্র সমালোচনা করেছিলেন।

শেষ জীবনঃ মূল নিবন্ধ: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবন (১৯৩২–১৯৪১)

জীবনের শেষ দশকে ১৯৩২ থেকে ১৯৪১ রবীন্দ্রনাথের মোট পঞ্চাশটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। তাঁর এই সময়কার কাব্যগ্রন্থ গুলির মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য পুনশ্চ (১৯৩২), শেষ সপ্তক (১৯৩৫), শ্যামলী ও পত্রপুট (১৯৩৬) – এই গদ্যকবিতা সংকলন তিনটি। জীবনের এই পর্বে সাহিত্যের নানা শাখায় পরীক্ষা নিরীক্ষা চালিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। তাঁর এই পরীক্ষা নিরীক্ষার ফসল হল তাঁর একাধিক গদ্যগীতিকা ও নৃত্যনাট্য চিত্রাঙ্গদা (১৯৩৬; চিত্রাঙ্গদা (১৮৯২) কাব্যনাট্যের নৃত্যাভিনয়-উপযোগী রূপ), শ্যামা (১৯৩৯) ও চণ্ডালিকা (১৯৩৯) নৃত্যনাট্যত্রয়ী। এছাড়া রবীন্দ্রনাথ তাঁর শেষ তিনটি উপন্যাসও দুই বোন (১৯৩৩), মালঞ্চ (১৯৩৪) ও চার অধ্যায় (১৯৩৪) এই পর্বে রচনা করেছিলেন। তাঁর অধিকাংশ ছবি জীবনের এই পর্বেই আঁকা। সঙ্গে সঙ্গে জীবনের শেষ বছরগুলিতে বিজ্ঞান বিষয়ে আগ্রহী হয়ে উঠেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। ১৯৩৭ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর বিজ্ঞানবিষয়ক প্রবন্ধ সংকলন বিশ্বপরিচয়। এই গ্রন্থে তিনি জ্যোতির্বিজ্ঞানের আধুনিকতম সিদ্ধান্তগুলো সরল বাংলা গদ্যে লিপিবদ্ধ করেছিলেন। পদার্থবিদ্যা ও জ্যোতির্বিজ্ঞান সম্পর্কে তাঁর অর্জিত জ্ঞানের প্রভাব পরিলক্ষিত হয় তাঁর কাব্যেও। সে (১৯৩৭), তিন সঙ্গী (১৯৪০) ও গল্পসল্প (১৯৪১) গল্পসংকলন তিনটিতে তাঁর বিজ্ঞানী চরিত্র-কেন্দ্রিক একাধিক গল্প সংকলিত হয়েছে। পরবর্তীতে ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা পায় এবং সমাদৃত হয়।

জীবনের এই পর্বে ধর্মীয় গোঁড়ামি ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে তীব্রতম প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। ১৯৩৪ সালে ব্রিটিশ বিহার প্রদেশে ভূমিকম্পে শতাধিক মানুষের মৃত্যুকে গান্ধীজি “ঈশ্বরের রোষ” বলে অভিহিত করলে, রবীন্দ্রনাথ গান্ধীজির এহেন বক্তব্যকে অবৈজ্ঞানিক বলে চিহ্নিত করেন এবং প্রকাশ্যে তাঁর সমালোচনা করেন। কলকাতার সাধারণ মানুষের আর্থিক দুরবস্থা ও ব্রিটিশ বাংলা প্রদেশের দ্রুত আর্থসামাজিক অবক্ষয় তাঁকে বিশেষভাবে বিচলিত করে তুলেছিল। গদ্যছন্দে রচিত একটি শত-পঙক্তির কবিতায় তিনি এই ঘটনা চিত্রায়িতও করেছিলেন।

জীবনের শেষ চার বছর ছিল তাঁর ধারাবাহিক শারীরিক অসুস্থতার সময়। এই সময়ের মধ্যে দুই বার অত্যন্ত অসুস্থ অবস্থায় শয্যাশায়ী থাকতে হয়েছিল তাঁকে। ১৯৩৭ সালে একবার অচৈতন্য হয়ে গিয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থা হয়েছিল কবির। সেবার সেরে উঠলেও ১৯৪০ সালে অসুস্থ হওয়ার পর আর তিনি সেরে উঠতে পারেননি। এই সময়পর্বে রচিত রবীন্দ্রনাথের কবিতাগুলি ছিল মৃত্যু চেতনাকে কেন্দ্র করে সৃজিত কিছু অবিস্মরণীয় পংক্তিমালা। মৃত্যুর সাত দিন আগে পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথ সৃষ্টিশীল ছিলেন। দীর্ঘ রোগভোগের পর ১৯৪১ সালে জোড়াসাঁকোর বাসভবনেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

httpv://youtu.be/vD8GeZ7jnEo
আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে এ জীবন পূণ্য করো দহন- দানে।
বিশেষ ধন্যবাদ জ্ঞাপন : সুব্রত হোতা।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫২ তম জন্মবার্ষিকী এবং জীবনপঞ্জিকা শেষ অংশ।

ফেসবুক লিঙ্ক : আজাদ কাশ্মীর জামান।

এক জীবন

jeevaaannna

এক জীবন ভাঙ্গতে গিয়ে অন্য জীবন গড়তে থাকি
এক জীবনের শূন্যতাকে অন্য জীবন ভরিয়ে তোলে,
এক জীবন জবুথবু, অন্য জীবন হাওয়ায় দোলে –
এক জীবন যেমন-তেমন, ভিন্ন জীবন সাজিয়ে রাখি।

নদীর জলে হাত রেখেছি, নদী আমায় ক্ষমা করে;
নারীর দেহে হাত রেখেছি, নারী আমায় ক্ষমা করে –
জলের স্পর্শে, নারীর স্পর্শে দুই জীবন পুণ্যে ভরে,
এক জীবন নিদ্রাহারা, অন্য জীবন ঘুমের ঘোরে।

এক জীবন এলোমেলো, অন্য জীবন গুছিয়ে রাখি;
ওই যে জীবন বহির্মুখী, এই জীবনে ঘরের টান –
ফুলের শান্ত বন্দিশালায় সারা জীবন ভ্রাম্যমান,
এক জীবন ভাঙ্গতে গিয়ে অন্য জীবন গড়ছি নাকি !!

jeevonlkiuy

ফেসবুক লিঙ্ক : আজাদ কাশ্মীর জামান।

শুভ জন্মদিন : মেঘ অদিতি

birthday_casd

অন্তরনগরের কবিতাগুচছ

আলো নিভিয়ে এসো
আজ রাতের আকাশ দেখি,
একক নীল নক্ষত্রের রাত।
সান্ধ্যশহর অতিক্রম করা
ডানাগুলি খুলে এখন
তাকে তুলে নেবো মুঠোর ভেতর;
নির্ঘুম রাত ধরা দেবে বাজপাখি নখে।
birthday_124-2-1
12209230_ueXDs_1367610071

136761351577155 বোবা ইশতেহার

ক্ষয়িষ্ণু রাত দুলছে মায়াবী পর্দায়
হা ঈশ্বর এইবেলা চোখ তোলো
অন্তত একবার দেখো
লঘুচালে বলা কথাগুলো –
কেমন সত্যি হয়ে উঠেছে
দেওয়ালে সেঁটে থাকা পোস্টারে তোমার মুখ
দেখো ইশতেহারে কার নাম লেখা
আর আমার কাছে একটা শব্দও নেই
যা দিয়ে কবিতা লিখতে পারি
জ্যোৎস্নার মধ্যে ঢুকে পড়ছে ভিখিরি এক মেঘ
আর শহরের সিঁড়ি বেয়ে বেনোজল।

394870_556754317687660_292152450_n 9d32a5ab2d56cc01327563b3caa44e96 কে থাকে, কি থাকে! কেউ না, কিছুই না। অদৃশ্য এক আততায়ী ছায়ার সাথে আমরা পথ চলি। সাথে সাথে নিয়ে ঘুরি অথচ ভুলে যাই তার অস্তিত্ব, ভুলে যাই সেই অমোঘ নিয়তির কথা। সে ভোলে না কিছু, দূর থেকে ক্রমে কাছে এগিয়ে আসে নিঃশব্দে। মুক্তি নেই, তার কাছ থেকে কিছুতেই মুক্তি নেই। স্তব্ধতার মাঝে ক্ষয়ে যেতে যেতে টের পাই সেই অদৃশ্য স্পর্শ যা আর কোনদিন আমার হাত দুটোতে উষ্ণতা এনে দেবে না। এখানে পড়ে আছে কেবল শেষ স্মৃতিচিহ্ন যা কেবল পোড়াবে আমৃত্যু, যা কেবল ভাসাবে নোনা জলে বাকী পথটুকু । সে আমাদের প্রিয় ব্লগার মেঘ অদিতি। আজ তাঁর শুভ জন্মদিন।

happybirthdayblueflash
raa

birthday cake ity
special cake
zia4
zia6
zia8
zia9zia9zia9zia9zia9zia9zia9zia9zia9
101010101010101010101010101010

জীবনের কর্মে এবং সাফল্যে থাকুন বেঁচে। আমাদের সকলের শুভেচ্ছা ভালোবাসা সর্বোপরি শুভকামনা সব সময়ে থাকবে আপনার জন্য। শুভ ব্লগিং।

ফেসবুক লিঙ্ক : আজাদ কাশ্মীর জামান।

শুভ জন্মদিন : সুমন আহমেদ

cake

জীবন

জীবনকে একবার চুম্বন করে দেখতে চেয়েছি
একবার ভেবেছি মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে
শিখে নেবো মন্ত্রপাঠ; মোহনীয় সঙ্গীত!

একবার তোমাকে ছুঁয়ে, জীবনকে ছুঁয়ে
দেখতে চেয়েছি!

একবার দেয়ালের লাল পোস্টারে সেঁটে হৃৎপিণ্ড
দেখতে চেয়েছি কতোটা ক্ষত-বিক্ষত হতে পারি!
নগরের বিষাক্ত বাতাসে কতোটা মৃত্যুর ঘ্রাণ
ছড়িয়ে কতোটা উল্লাসে মেতে উঠতে পারে,
নাগরিক সম্প্রদায়! বিনীত ভদ্র মহোদয়গণ!
birthday_124-2-1
10793948_Cgprirm_1366832582

136683150448471 পরষ্পর -০১

অতঃপর-
আলিঙ্গনাবদ্ধ চুম্বনে একটি শিশু আত্মার জন্ম হোল
আমরা একটি অভিমুখে ধাবিত হতে থাকলাম!
একটি আলিঙ্গনের রাতে, একটি চুম্বনের শব্দে,
একটি উষ্ণতর মুহূর্তে পরষ্পর
পরস্পরে গলে যেতে থাকলাম;

বাতাস গর্জে উঠলো; আকাশ বৈরি হলো
আমরা মিশে যেতে থাকলাম;

রাতগুলো-
আরো ঘনিষ্ট শব্দে, ক্রমশ: গভীর হতে থাকলো!

822e5 উচ্চারণগুলো লিখে দাও জলের ভেতর তুমুল শব্দ তুলে! ফাগুন আগুন হলে; শিমুলের বন হোক আরো লাল! উত্তপ্ত পুকুর জুড়ে হোক উষ্ণ আয়োজন! শুভ্র দেহখানি দেহতে ভাসাও! ঠোঁট যদি নেমে আসে ঠোঁটের নিকট, এস তবে শিখি আজ দৈহিক পাঠ! ত্বকের ভেতর ত্বক, এস রেখে আজ, ভাঁজের শস্য বুনি, ডাকে ফসলের মাঠ! কবিতা একদিন ভীষণ আহত ছিল; যেন গভীর কোন জঙ্গলে ডানা ভাঙ্গা আহত পাখিটির মতো; শাদা বকটির মতো! যেন সমুদ্রের পাড়ে পড়ে থাকা আহত মাছটির মতো! প্রবল বর্ষণে উদ্ভ্রান্ত পাখির মতো; তার নীড়ের মতো! সে আমাদের প্রিয় ব্লগার সুমন আহমেদ। আজ তাঁর শুভ জন্মদিন।

happybirthdayblueflash
raa

special cake
happ866
zia6
zia8
zia9zia9zia9zia9zia9zia9zia9zia9zia9
101010101010101010101010101010

জীবনের কর্মে এবং সাফল্যে থাকুন বেঁচে। আমাদের সকলের শুভেচ্ছা ভালোবাসা সর্বোপরি শুভকামনা সব সময়ে থাকবে আপনার জন্য। শুভ ব্লগিং।

শেষের কবিতা … রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর লেখনীতে বাঙালির জীবন যাপন, সংস্কৃতিকে যেমন তুলে ধরেছেন, তেমনি বাঙালির চিরদিনের হাসিকান্না, আনন্দ-বেদনারও রূপকার তিনি। জগতের সকল বিষয়কে তিনি তাঁর লেখায় ধারণ করেছেন। মানুষের এমন কোনো মানবিক অনুভূতি নেই যা রবীন্দ্রনাথের লেখায় পাওয়া যায় না। তাঁর সম্পর্কে কবি দীনেশ দাশ বলেছেন, ‘তোমার পায়ের পাতা সবখানে পাতা’। সভ্যতার সকল সংকটে রবীন্দ্রনাথ এক বিশাল সমাধান।

reading

কালের যাত্রার ধ্বনি শুনিতে কি পাও।
তারি রথ নিত্যই উধাও
জাগাইছে অন্তরীক্ষে হৃদয়স্পন্দন,
চক্রে-পিষ্ট আঁধারের বক্ষফাটা তারার ক্রন্দন।

ওগো বন্ধু,
সেই ধাবমান কাল
জড়ায়ে ধরিল মোরে ফেলি তার জাল–
তুলে নিল দ্রুতরথে
দুঃসাহসী ভ্রমণের পথে
তোমা হতে বহু দূরে।
মনে হয়, অজস্র মৃত্যুরে
পার হয়ে আসিলাম
আজি নবপ্রভাতের শিখরচূড়ায়–
রথের চঞ্চল বেগ হাওয়ায় উড়ায়
আমার পুরানো নাম।
ফিরিবার পথ নাহি;
দূর হতে যদি দেখ চাহি
পারিবে না চিনিতে আমায়।
হে বন্ধু, বিদায়।

কোনোদিন কর্মহীন পূর্ণ অবকাশে
বসন্তবাতাসে
অতীতের তীর হতে যে রাত্রে বহিবে দীর্ঘশ্বাস,
ঝরা বকুলের কান্না ব্যথিবে আকাশ,
সেই ক্ষণে খুঁজে দেখো– কিছু মোর পিছে রহিল সে
তোমার প্রাণের প্রান্তে; বিস্মৃতিপ্রদোষে
হয়তো দিবে সে জ্যোতি,
হয়তো ধরিবে কভু নাম-হারা স্বপ্নের মুরতি।
তবু সে তো স্বপ্ন নয়,
সব-চেয়ে সত্য মোর, সেই মৃত্যুঞ্জয়,
সে আমার প্রেম।
তারে আমি রাখিয়া এলেম
অপরিবর্তন অর্ঘ্য তোমার উদ্দেশে।
পরিবর্তনের স্রোতে আমি যাই ভেসে
কালের যাত্রায়।

হে বন্ধু, বিদায়।
তোমার হয় নি কোনো ক্ষতি।
মর্তের মৃত্তিকা মোর, তাই দিয়ে অমৃতমুরতি
যদি সৃষ্টি করে থাক, তাহারি আরতি
হোক তব সন্ধ্যাবেলা,
পূজার সে খেলা
ব্যাঘাত পাবে না মোর প্রত্যহের ম্লান স্পর্শ লেগে;
তৃষার্ত আবেগ-বেগে
ভ্রষ্ট নাহি হবে তার কোনো ফুল নৈবেদ্যের থালে।
তোমার মানস-ভোজে সযত্নে সাজালে
যে ভাবরসের পাত্র বাণীর তৃষায়,
তার সাথে দিব না মিশায়ে
যা মোর ধূলির ধন, যা মোর চক্ষের জলে ভিজে।

আজো তুমি নিজে
হয়তো-বা করিবে রচন
মোর স্মৃতিটুকু দিয়ে স্বপ্নাবিষ্ট তোমার বচন।
ভার তার না রহিবে, না রহিবে দায়।
হে বন্ধু, বিদায়।

মোর লাগি করিয়ো না শোক,
আমার রয়েছে কর্ম, আমার রয়েছে বিশ্বলোক।
মোর পাত্র রিক্ত হয় নাই–
শূন্যেরে করিব পূর্ণ, এই ব্রত বহিব সদাই।
উৎকণ্ঠ আমার লাগি কেহ যদি প্রতীক্ষিয়া থাকে
সেই ধন্য করিবে আমাকে।
শুক্লপক্ষ হতে আনি
রজনীগন্ধার বৃন্তখানি
যে পারে সাজাতে
অর্ঘ্যথালা কৃষ্ণপক্ষ রাতে,

যে আমারে দেখিবারে পায়
অসীম ক্ষমায়
ভালো মন্দ মিলায়ে সকলি,
এবার পূজায় তারি আপনারে দিতে চাই বলি।
তোমারে যা দিয়েছিনু তার
পেয়েছ নিঃশেষ অধিকার।
হেথা মোর তিলে তিলে দান,
করুণ মুহূর্তগুলি গণ্ডূষ ভরিয়া করে পান
হৃদয়-অঞ্জলি হতে মম।

ওগো তুমি নিরুপম,
হে ঐশ্বর্যবান,
তোমারে যা দিয়েছিনু সে তোমারি দান–
গ্রহণ করেছ যত ঋণী তত করেছ আমায়।
হে বন্ধু, বিদায়।

httpv://www.youtube.com/watch?v=jvi6buFohaI
আবৃতিঃ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যয়।

শুভ জন্মদিন :: ফরিদুল আলম সুমন

cake

বৈশাখে তোমার শহরে যাবো

এ বছর বৈশাখে যদি তোমার শহরে যাই
মুঠোভরে নিয়ে যাবো বসন্তের জমানো পরাগ।
রোদেপোড়া রাজপথে বিছিয়ে দিয়ে আসবো
আমাদের প্রণয়ের মতন সজীব দূর্বাঘাস।
দাপুটে ঝড়ের জৈষ্ঠ্য মাসটা তুমি মনে হয়
বাইরে কাটাবে। দূরের কোনো শান্ত শহরে।
যদিও সারাটি বছর এই পাহাড়ি নদীর কাছে
পাথুরে সিঁড়ি ভেঙ্গে ভেঙ্গে আমি
অনায়াস বেঁচে থাকি চূড়ান্ত সুখের ভেতর।
তবুও সম্ভাব্য ভিড়, ধুলোবালিছাই পেরিয়ে
তোমার শহরে যাবো একবার।
উড়ে যাওয়া ধূসর মেঘের আঁচলে
রেখে দিয়ে আসবো পরাগরেণু।
birthday_124-2-1
9392731_Pwribi_

136608209039027 জীবন তোমাকে অভিবাদন

বেঁচে আছি বলেই বেঁচে আছে জীবনের
যাবতীয় ক্ষোভ। প্রতিবেশীর ঝুলবারান্দার
পোষা পাখির চোখে ছুঁড়ে দিতে পারি
নিজেরই পাখিহীন বিকেলের অভিমান।
কণ্ঠ আছে বলে রাত শেষে জেগে ওঠে
পিপাসার ভোর। একান্ত মাঠের কিনারা ঘেঁষে
একটি টলটলে সরোবর হলোনা ভেবে
বুক ঠেলে উড়ে গেছে চাপা শ্বাস, কতবার!
মৃতেরা কি ফুঁসেছে কখনো ক্ষোভে?
মৃতদের পাঁজর কখনো পুড়েছে কি কামনায়?
বেঁচে আছি বলেই বেঁচে আছে কামনার রঙ,
ভাতঘুম, সিগারেট, গ্রীন চা, কোজাগরী ঘ্রাণ।
চারপাশে এতো এতো মরনের ভিড়ে আমাকে
আজও বাঁচিয়ে রেখেছো বলে হে জীবন
তোমাকে জানাই হাজারো অভিবাদন!

199202 আমি লিখতে বসলে তুমি আর ওভাবে পেছনে এসে দাঁড়িয়োনা। নিঃসঙ্গ পিঠের ওপর ছড়িয়ে দিওনা সান্নিধ্যের কাঙ্ক্ষিত মায়ারোদ। এই আঁচটুকু পেলেই ইচ্ছে হয় খাতা ফেলে দিয়ে ক্যানভাস খুঁজি। তোমার পাঁপড়ির গায়ে সন্তর্পণ আঁচড়ে এঁকে দেই গোলাপের লাল। দুপুরের নির্জন ঘরের ওপাশে থরেথরে ফুটে আছে বিলাসী বাগান। চোখ না তুলেই টের পাই চন্দন সুগন্ধী বুকের সর্বগ্রাসী মোহ। আমি লিখতে বসলে তুমি আর ওভাবে চুপিচুপি কাছে এসোনা। তুমি এসে দাঁড়ালেই কবিতার ব্রত ভুলে আচমকা পুরুষ হয়ে যাই। সে আমাদের প্রিয় ব্লগার ফরিদুল আলম সুমন। আজ শুভ জন্মদিন।

happybirthdayblueflash
raa

special cake
zia4
zia6
zia8
zia9zia9zia9zia9zia9zia9zia9zia9zia9
101010101010101010101010101010

জীবনের কর্মে এবং সাফল্যে থাকুন বেঁচে। আমাদের সকলের শুভেচ্ছা ভালোবাসা সর্বোপরি শুভকামনা সব সময়ে থাকবে আপনার জন্য। শুভ ব্লগিং।

একটি গান … একটি ইতিহাস …

asdaa

হেনরী রাইডার হ্যাগার্ড এর লিখা। সেবা প্রকাশনীর অনুবাদ সাহিত্য থেকে।
খৃষ্টপূর্ব তিন হাজার বছর পূর্বে প্যাপিরাসে লিখে যাওয়া আলেকজান্দ্রিয়া তথা মিশরের রাণী ক্লিওপেট্রার গাওয়া মিশরের আদিবাসী রাজ্যহারা ফারাও বংশধর হারমাচিস এর উদ্দেশে একটি গান

clio-pepiras01

মনে করো কোন এক সাগরে ভাসছি আমরা রাতে
হৃদয় ছিঁড়ে বেরুতে চায় অতুলনীয় এক সুর যাতে
ফিসফিস করে কথা বলতে পারি আমি তোমার সাথে।
মেঘ ভেবে ভুল করে ঠাঁই নেয় বাতাস আমার চুলে;
তুমি ঠাঁই নাও আমার বুকে, জানিনা সজ্ঞানে কি ভুলে,
হায়! যদি থেমে যেত রাতটা, যদি চড়াত সময়কে কেউ শূলে!

তারা গুলোতে প্রতিধ্বনিত হয় কার গানের সুর?
তোমার হৃদয়ের আবেগ আর আমার ভালোবাসায় বিমূঢ়
ভাগ্যকে ভুলে আমরা কি পারি না যেতে বহুদূর?

তাকাও প্রিয়, চিনে নাও আমাদের গন্তব্যের ওই তারকারাজি,
নাকি দু’হাত পেতে চাও চাঁদের প্রাচীন আলোর কারসাজি?
নিশ্চুপ থেকো না, সব সূর্যের দোহাই, আমার জানতে হবে আজই।
পায়ের নীচে এই সাগর রোষে ধেয়ে চলে তীরের পানে,
আর আমি দেখি তোমার হৃদয় নতজানু হয়ে সসম্মানে
কুর্ণিশ করে আমায়। বলে, আমার হৃদয় কি মিথ্যে জানে?

নিষ্ঠুর মরণের কিনারায় আমাদের অসহায় বসবাস,
একবার নিয়তি, আরেকবার লোকলজ্জা ছাড়ে বিষ নিঃশ্বাস;
কি লাভ সংযমে? চলো, বুক ভরে নেই যৌবনের নিষিদ্ধ সুবাস।

জানিনা কোন ধাতুতে গড়া তোমার আবেগহীন ওই মন,
অথচ প্রেমের বিষ শুষে নিয়ে আমার আত্মা সর্বদা করে টনটন;
নিষ্ঠুর, কাছে এসে আঁকো আমার ঠোঁটে অনন্ত চুম্বন।

গান না গাও অনন্ত করো গুনগুন, আমি আসি তোমার কাছে
কিসের ভয় তোমার? তাকিয়ে দেখো আর কেউ কি আছে?

শুনবে না কেউ, জানবেনা; অপবাদ দেবে না পাছে।
মাংসল দেহকে একদিন খাবে সময়, কিন্তু জীবন হবে না শেষ,
অনন্তের পানে যাত্রা শুরুর আগে একবার করো মনোনিবেশ
নিজের সত্তায়। কামনা জাগায় কি সেখানে এই গানের আবেশ?

asddf

আসুন। ভালো মন্দ যেটাই হোক লাইক চর্চ্চা অব্যহত রাখি।

বাংলা নববর্ষের ইতিকথা, স্বাগত ১৪২০

kheya বাঙালি জীবনের অসাম্প্রদায়িক, সার্বজনীন একটি উৎসব হল পহেলা বৈশাখ, বর্ষবরণের দিন, শুভ নববর্ষ। এদিনটি প্রতিটি বাঙালির জীবনে নিয়ে আসে উৎসব আমেজ আর ফুরফুরে বাতাসের দিন বসন্ত। আলপনা আঁকা শাড়ি আর পাঞ্জাবি ছাড়া যেন এদিনটিকে আর পালন করাই যায় না। সাথে লাল সবুজ আর সাদার মিশেলে হাতে, গালে ফুলকি আঁকা এখন হাল ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতি বছরই ক্রমশ বাড়ছে বর্ষবরণের আমেজ। স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেলের সরাসরি সম্প্রচারের কল্যাণে এখন রমনার বটমূল থেকে পুরো ঢাকা হয়ে প্রতিটি বিভাগীয় শহর, জেলা শহর, উপজেলা, ইউনিয়ন, গ্রাম পর্যন্ত ছড়িয়ে গেছে ঘটা করে নববর্ষ পালনের সংস্কৃতি। শুধু গ্রাম নয় শহর উপশহর রাজধানীর ঢাকারও বিভিন্ন অলিগলিতে বসে বৈশাখি মেলা। পান্তা- ইলিশ, বাঁশি, ঢাক -ঢোলের বাজনায় আর মঙ্গল শোভাযাত্রায় পূর্ণতা পাচ্ছে বাঙালির এ উৎসব মুখরতা। কিন্তু যদি বলি এই নববর্ষের ইতিহাস কত দিনের ? হয়ত অনেকে বলবেন সেই অনেক বছর আগের ইতিহাস থেকে চলে আসছে বর্ষবরণ। আবার অনেকে হয়ত জানেন এর প্রকৃত ঠিকুজি কুষ্ঠি (ইতিহাস)। তারপরেও একটু ফিরে দেখা বাংলা নববর্ষের পথচলার ইতিহাসের দিকে।

বাংলা নববর্ষের ইতিহাসঃ
হিন্দু সৌর পঞ্জিমতে, বাংলায় বারোটি মাস অনেক আগে থেকেই পালন হয়ে আসছে। কিন্তু গ্রেগরীয় পঞ্জিকায় দেখা যায়, এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময় এই সৌর বছর গণনা শুরু হত। ইতিহাস ঘেটে দেখা যায়, ভারত বর্ষে মোঘল সাম্রাজ্য শুরুর পর থেকে আরবী বছর হিজরী পঞ্জিকা আনুযায়ী তারা কৃষিপণ্যের খাজনা আদায় করত। কিন্তু হিজরী সাল চাঁদের ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় কৃষি ফলনের সাথে এর কোন মিল পাওয়া যেত না। আর তখনই সম্রাট আকবর এর সুষ্ঠু সমাধানের জন্য বাংলায় বর্ষপঞ্জি সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহন করেন। সম্রাটের আদেশ আনুযায়ী সে সময়কার বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও চিন্তাবিদ আমীর ফতেহ উল্লাহ সিরাজী সৌর বছর ও আরবী হিজরী সালেরও ওপর ভিত্তি করে নতুন বাংলা সনের নিয়ম তৈরীর কাজ শুরু করেন। বাংলা বছর নির্ধারন নিয়ে লেখা বিভিন্ন বইয়ের প্রাপ্ত তথ্যমতে, ১৫৮৪ খ্রিষ্টাব্দের ১০ ই মার্চ বা ১১ ই মার্চ থেকে বাংলা সন গণনা শুরু হয়। তবে পরীক্ষামূলক এই গননা পদ্ধতিকে কার্যকর ধরা হয় ১৫৫৬ সালের ৫ নভেম্বর তারিখ থেকে অর্থাৎ সম্রাট আকবরের সিংহাসন আরোহনের তারিখ থেকে। প্রথমে ফসলি সন বলা হলেও পরে বঙ্গাব্দ বা বাংলা বর্ষ নামে পরিচিতি পেতে শুরু করে।

বাংলা মাসের নামকরণঃ
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলা মাসের নামগুলো বিভিন্ন তারকারাজির নাম থেকে নেয়া হয়েছে। যেমনঃ বিশাখা থেকে বৈশাখ, জেষ্ঠ্যা থেকে জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ়া থেকে আষাঢ়, শ্রবণা থেকে শ্রাবণ, ভাদ্রপদ থেকে ভাদ্র, কৃত্তিকা থেকে কার্তিক, অগ্রইহনী থেকে অগ্রহায়ণ, পূষ্যা থেকে পৌষ, মঘা থেকে মাঘ, ফল্গুনি থেকে ফাল্গুন এবং চিত্রা থেকে চৈত্র। আগেকার দিনে অগ্রহায়ণ মাসে ধান কাটা শুরু হত বলে এই মাসকে বছরের প্রথম মাস ধরা হত। তাই এ মাসের নামই রাখা হয় অগ্রহায়ণ। অগ্র অর্থ প্রথম আর হায়ন অর্থ বর্ষ বা ধান। সম্রাট আকবরের সময়ে একটি বিষয় ছিল অত্যন্ত কষ্ট সাধ্য, তা হল মাসের প্রত্যেকটি দিনের জন্য আলাদা আলাদা নাম ছিল। যা কিনা প্রজা সাধারণের মনে রাখা খুবই কষ্ট হত। তাই সম্রাট শাহজাহান ৭ দিনে সপ্তাহ ভিত্তিক বাংলায় দিনের নামকরণের কাজ শুরু করেন। ইংরেজী বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় ইংরেজি ৭ দিনের নামের কিছুটা আদলে বাংলায় ৭ দিনের নামকরণ করা হয়। যেমন : সানডে- রবিবার। সান অর্থ রবি বা সূর্য আর ডে অর্থ দিন। এভাবে বর্ষ গণনার রীতিকে বাংলায় প্রবর্তনের সংস্কার শুরু হয় মোঘল আমলে।

বর্ষ বরণের প্রবর্তিত রুপঃ
তখনকার দিনে শুধু কৃষিকাজ করার তাৎপর্যকে ধারণ করেই বাংলায় বছর গণনার রীতি চালু হয়। কিন্তু বহির্বিশ্বের সাথে বাঙালিদের যোগাযোগ নিরবিচ্ছিন্ন রাখার সুবিধার্থে বাংলাদেশের সব জায়গাতেই খ্রিষ্টীয় সন ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশে প্রতিবছর ১৪ ই এপ্রিল নববর্ষ পালিত হয়। বাংলা একাডেমী কর্তৃক নির্ধারিত পঞ্জিকা অনুসারে এ দিনটিকে নির্দিষ্ট করা হয়েছে। বাংলা দিনপঞ্জির সাথে হিজরী ও খ্রিষ্টীয় সনের মৌলিক কিছু পার্থক্য রয়েছে। তা হলো হিজরী সাল চলে চাঁদের সাথে আর খ্রিষ্টীয় সাল চলে ঘড়ির সাথে। একারণে হিজরী সনের নতুন তারিখ শুরু হয় সন্ধ্যায় নতুন চাঁদের আগমনের মধ্য দিয়ে, ইংরেজি দিন শুরু হয় মধ্যরাতে আর বাংলা সনের শুরু হয় ভোরের সূর্য ওঠার সাথে সাথে।

l.phpa নতুন বছর বরণে বাঙালি আয়োজনঃ
বাংলাদেশে বর্ষবরণের মূল আয়োজন মূলত ঢাকার রমনা পার্কের বটমূলকে (অনেকে বলেন অশ্মথ মূল) ঘিরেই। সেই আনন্দ আয়োজন আর পান্তা ইলিশের বাঙালিয়ানায় পুরো জাতি নিজেকে খুঁজে ফিরে ফেলে আসা গত দিনগুলোর স্মৃতি রোমন্থন আর নতুন অনাগত সময়কে বরণের ব্যস্ততায়। পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি জাতিই নিজেদের ইতিহাস সংস্কৃতিকে বরণের জন্য বিশেষ বিশেষ দিনকে স্মরণীয় করে রাখে।

যেমন প্রাচীন আরবীয়রা ‘ওকাজের মেলা’, ইরানী’রা ‘নওরোজ উৎসব’ ও প্রাচীন ভারতীয়রা ‘দোলপূর্ণিমায়’ নববর্ষ উদযাপন করে থাকত। ( উল্লেখ্য, ইরানী’রা এখনো অনেক ঘটা করেই নওরোজ উৎসব পালন করে থাকে)। এখানে বলে রাখা ভাল, পূর্বপাকিস্তান সব সময়ই বাঙালি সংস্কৃতিকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করত। রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও গান প্রকাশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারীর প্রতিবাদে ১৯৬৫ সাল ( ১৩৭৫ বঙ্গাব্দে) ছায়ানট নামের একটি সংগঠন রমনা পার্কে পহেলা বৈশাখ বর্ষবরণ উৎসব পালনের আয়োজন করে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এসো হে বৈশাখ……এসো, এসো….গানের মাধ্যমে তারা স্বাগত জানাতে শুরু করে নতুন বছরকে। বর্ষবরণ এগিয়ে যায় আরো এক ধাপ। বিস্তৃত হতে শুরু করে ছায়ানট নামের সংগঠনটির। যা এখন বাংলাদেশের সংস্কৃতির ক্ষেত্রে একটি মহীরুহে পরিণত হয়েছে। ১৯৭২ সালের পর থেকে রমনা বটমূলে বর্ষবরণ জাতীয় উৎসবের স্বীকৃতি পায়। ১৯৮০ সালে বৈশাখী মঙ্গল শোভাযাত্রার মাধ্যমে এক ধাপ বাড়তি ছোঁয়া পায় বাংলা নববর্ষ বরণের অনুষ্ঠান। ছড়িয়ে পড়ে সবার অন্তরে অন্তরে। প্রতি বছরই কোটি বাঙালির অপেক্ষা থাকে কবে আসবে বাংলা নববর্ষ।

আধুনিকতার ছোঁয়ায় বর্ষবরণের অনুষ্ঠান মালা :
বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর কল্যাণে এখন ভোরে রমনা বটমূলে শুরু হওয়া বর্ষ বরণের অনুষ্ঠান উপভোগ করে কয়েক কোটি বাঙ্গালি। ছায়ানটের শিল্পীদের পরিবেশনায় বৈশাখকে বরণের সব প্রস্তুতি করা হয় আগে ভাগে। পহেলা বৈশাখের দিন ভোরেই শুরু হয় বিভিন্ন স্থানে উম্মুক্ত কনসার্ট, বাউল, লালন, জারী-সারি, মুর্শেদী গানের আসর। আর শহুরে অ্যামিউজমেন্ট পার্কের স্বাদ থাকলেও এই দিন অন্তত নাগর দোলায় চড়তে চায় অনেক শিশুই।

পান্তা ইলিশ:

বর্ষবরণের অন্যতম অনুষঙ্গ হল পান্তা-ইলিশ। যেন এই পান্তা-ইলিশ না হলে আর পহেলা বৈশাখের কোন আমেজই থাকে না। বেশ তো এই সুযোগে রমনার লেকের পাড়েই অনেকে বসে পড়েন ইলিশ পান্তা খেতে। সাথে থাকে কাঁচা মরিচ। মানে সম্পূর্ণ ভাবেই বাঙালিয়ানার পরিচয় দিতে যেন ব্যস্ত সবাই।

মঙ্গল শোভা যাত্রাঃ
বর্ষবরণের অনুষ্ঠান মালায় ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে মঙ্গল শোভাযাত্রা। ১৯৮৯ সালে এই শোভাযাত্রার প্রচলন শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থীরা। পহেলা বৈশাখের দিন সকাল গড়িয়ে যখন রমনা টি.এস.সি শাহবাগে মানুষের উপচে পরা ভিড় থাকে, তখন শুরু হয় মঙ্গলশোভা যাত্রা।
বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে শোভাযাত্রা বের হয়ে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এখানে পশু পাখির মুখাকৃতির ছবিসহ গ্রামীণ ঐতিহ্যের নানা অনুসঙ্গকে ফুটিয়ে তোলা হয় নানা রং বেরং-এর মুখোশ ও আলপনার মাধ্যমে। ছেলে বুড়ো সবাই তখন মেতে ওঠে বর্ষবরণের মঙ্গলশোভা যাত্রার আনন্দে।

মেলা:
বৈশাখ মাস বলতে তো মেলার মাসকেই বোঝায়। একসময় শুধু গ্রাম গঞ্জে মেলা হলেও এখন এর পরিধি বিছিয়েছে শহরের বড়সর এপার্টমেন্ট ও হাই-সোসাইটিতেও। তবে পার্থক্য থাকে গ্রামের আর শহুরে মেলার। বাঁশের বেতের তৈজস আর নানা জাতের খেলার সামগ্রী, নারকেল মুড়কিসহ আরো কত কি থাকে এসব মেলায়- তার ইয়ত্তা নেই। মেলার সময়ে নৌকাবাইচ, লাঠি খেলা, কুস্তির আসর বসে এখনও।

বাংলাদেশের চট্টগ্রামে লালদীঘির ময়দানে অনুষ্ঠিত হয় জব্বারের বলি খেলা। আর বর্ষবরণের এই মেলা প্রবাসীদের জন্য হয় মিলন মেলা। দীর্ঘ ব্যস্ততার অবসরে বৈশাখী মেলা প্রবাসী বাঙালিদের দেয় অফুরন্ত আনন্দ। জাপানে প্রতি বছরই অনেক ঘটা করে বিশাল পরিসরে আয়োজন করা হয় বৈশাখী মেলা। জাপান প্রবাসীদের এ মিলন মেলার রেশটা থাকে সারা বছর জুড়ে। এছাড়া নিউইয়র্ক, লন্ডনসহ বিশ্বের অন্যান্য বড় বড় শহরগুলোতে বসে বৈশাখী মেলার আয়োজন।

booshakh হালখাতাঃ

প্রাচীন বর্ষবরণের রীতির সাথে অঙ্গাঅঙ্গি ভাবেই জড়িত একটি বিষয় হল হালখাতা। তখন প্রত্যেকে চাষাবাদ বাবদ চৈত্র মাসের শেষ দিনের মধ্যে সকল খাজনা, মাশুল ও শুল্ক পরিশোধ করে দিত। এরপর দিন অর্থাৎ পহেলা বৈশাখ ভূমির মালিকরা তাদের প্রজা সাধারণের জন্য মিষ্টান্ন দিয়ে আপ্যায়নের ব্যবস্থা রাখতেন। যা পরবর্তীতে ব্যবসায়িক পরিমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়ে। দোকানিরা সারা বছরের বাকীর খাতা সমাপ্ত করার জন্য পহেলা বৈশাখের দিনে নতুন সাজে বসে দোকানে। গ্রাহকদের মিষ্টিমুখ করিয়ে শুরু করেন নতুন বছরের ব্যবসার সূচনা। এ উৎসব গুলো সামাজিক রীতির অংশ হিসেবে পরিণত হয়েছে প্রতিটি বাঙালির ঘরে। এখনো গ্রাম গঞ্জে নববর্ষে হালখাতার হিড়িক পড়ে।

আধুনিক নববর্ষের সূচনাঃ
আধুনিক নববর্ষ পালনের তত্ত্ব তালাশ করতে গিয়ে জানা গেল ১৯১৭ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশদের বিজয় কামনা করে সে বছর পহেলা বৈশাখে হোম কীর্ত্তন ও পূজার আয়োজন করা হয়েছিল। এরপরে ১৯৮৩ সালে একই ভাবে ভাল কিছু উদ্যোগ নেয়া হয় নববর্ষ পালনের জন্য। মোদ্দা কথা ১৯৬৭ সালের আগে ঘটা করে পহেলা বৈশাখ পালন করা হয়নি। এরপর থেকে প্রতিবছরই বাড়তে থাকে পহেলা বৈশাখ বরণের সাড়ম্বরতা।

বৈশাখ এলেই এর সাথে আসে কালবৈশাখীর তাণ্ডবের কথা। প্রলয়ংকরী ঝড়ে লন্ডভন্ড করে বসত ভিটা, জমি জিরেত, তারপরেও আবারো ফিরে দাঁড়ায় ঝড়ঝঞ্ঝার সাথে লড়াই করা প্রতিটি বাঙালি। নতুন করে বাঁচার স্বপ্নে শুরু হয় ঘর বাঁধা। এসব দুঃখ-দূর্যোগকে ভুলে পুরো জাতিই মেতে ওঠে পহেলা বৈশাখের নববর্ষ পালনের আনন্দে। জাতীয় এই উৎসবটি এখন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অসাম্প্রদায়িক উৎসবে পরিণত হয়েছে। এদিনে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই বাংলা বছরের প্রথম দিনকে বরণের আনন্দে থাকে মাতোয়ারা। উৎসব প্রিয় বাঙালিরা জাতীয় উন্নয়নে এসব পার্বন থেকে নতুন সঞ্জিবনী শক্তি নিয়ে দেশের জন্য কাজ করলেই আর পিছিয়ে থাকবেনা আমার প্রিয় স্বদেশ, বাংলাদেশ। স্বাগতম বাংলা নববর্ষ ১৪২০ বঙ্গাব্দ। সকল অশুভ শক্তিকে পেছনে ফেলে নতুনের দিনের শুভ সূচনা হোক, জাতি খুঁজে নিবে নতুন মুক্তির দিশারী।
সূত্র : নেট । অতিরিক্ত কৃতজ্ঞতা : শূণ্য।

শুভ জন্মদিন :: ডা. তৈয়বা

cake

মেঘের পরে আলোর ভীড়ে

বুঝতে দাওনি কেনো আমাকে
সাজিয়েছো যা হৃদয়ে,
ছায়া হয়ে ছিলে পাশে
বলো কি করে যাবো তোমায় রেখে
মেঘের পরে আলোর ভীড়ে।
তুমি-ই প্রথম চেয়েছিলে
বুঝিনি আমি তোমাকে দেখে
রেখেছো যে কতো মায়াতে।।
birthday_124-2-1
103664

7487615_lUlAx_ বুঝিনি এতোটুকু তোমাকে
হারিয়েছিলাম স্বপ্নের ঘোরে,
কতোটা পথ ঘুরে এসেছি
তুমি বন্ধু আমার ছিলে পাশে
মেঘের পরে আলোর ভীড়ে।
তুমি-ই প্রথম চেয়েছিলে
বুঝিনি আমি তোমাকে দেখে
রেখেছো যে কতো মায়াতে।।

toiyeba ভালোবাসার কথাটা এত কেন বলো তুমি? আমি মাঝে মাঝে ভুল করি – অবচেতন মনে বিশ্বাস করেই ফেলি – তুমি বোধ হয় সত্যিই – ভালোবাসো আমায় …।। সে আমাদের প্রিয় ব্লগার ডাঃ তৈয়বা। আজ শুভ জন্মদিন।

happybirthdayblueflash
raa

special cake
zia4
zia6
zia8
zia9zia9zia9zia9zia9zia9zia9zia9zia9
101010101010101010101010101010

জীবনের কর্মে এবং সাফল্যে থাকুন বেঁচে। আমাদের সকলের শুভেচ্ছা ভালোবাসা সর্বোপরি শুভকামনা সব সময়ে থাকবে আপনার জন্য। শুভ ব্লগিং।

আমরা করবো জয় … যে গান বিশ্বের …

We shall overcome
We shall overcome
We shall overcome some day.
Oh, deep in my heart
I do believe
We shall overcome some day

উপরের গানটি সারা বিশ্বের মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষার গান। এই গানের মালিক সারা বিশ্বের মানুষ। এই গানের মালিক সারা বিশ্বের নিগৃহীত মানুষ, এই গানের মালিক সকল সৎ প্রতিবাদী মানুষ, এই গানের মালিক সারা পৃথিবীর আশাবাদী মানুষ। এ গান মানবতার সবচে আপন গান। জাতীয় সঙ্গীতের পরপরই এই গান সব জাতীয় মানুষকে উদ্দীপ্ত করে। সারা পৃথিবীর প্রায় সব প্রধান ভাষাতেই এই গান অনুবাদ করা হয়েছে এবং গেয়েছেন পৃথিবীর সকল ভাষার মানুষ।

ইতিহাসে এই গানের দেখা মেলে ১৮৭৪ সালে সিসিলিয়ান নাবিকদের প্রার্থনা সঙ্গীতে। তখন এই গানের লাইন গুলো এরকম ছিলো না, আর শুরুর লাইনটি ছিলো I shall over come some day.. সে সময়কার সুরটিও ছিলো একেবারেই আলাদা। ১৯০০ সালে যাজক এ্যালবার্ট টিন্ডলে রচিত শকলাই গ্রন্থে এই গানের লিখিত রূপ পাওয়া যায়। তবে তার সুরটিও আজকের চেয়ে আলাদা ছিলো। ১৯৪৫ সালে এই গানের মধ্যে কিছু নতুন সুর ও শব্দ যোগ হয়। গানের অবশিষ্ট কথা গুলো লিখেছেন অস্ট্রিন টুইগ আর নতুন সুর তৈরী করেন কেনেথ মরিস।

কিভাবে “আই শ্যাল ওভার কাম” থেকে “উই শ্যাল ওভার কাম”-এ রূপান্তরিত হয় এ সমন্ধে একটা গল্প প্রচলিত আছে। গল্পের সাথে জড়িয়ে আছেন আমেরিকার টেনেসি অঙ্গরাজ্যের হাইল্যান্ডার ফোক স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা মি. হর্টন এর স্ত্রী জিলফিয়া হর্টন এর নাম। সে সময় ফিলডেলফিয়া অঙ্গরাজ্যে শ্রমিক ধর্মঘট চলছিলো। কেউ কেউ বলেন এ ধর্মঘটে শ্রমিকরা যখন এই গান গাইছিলো তখন জিলফিয়া সেই গান শিখে ফেলেন। আবার কারো কারো মতে দুজন ধর্মঘটি শ্রমিকের কাছ থেকে তিনি এই গান শিখে নেন। পরে তিনি এই গানকে সমবেত সঙ্গীতে পরিণত করেন। তারপর তিনি সেই গান শেখান কিংবদন্তী গণ সঙ্গীত শিল্পী পিট সিগারকে। আরেক গণ সঙ্গীত শিল্পী ফ্রাঙ্ক হ্যামিল্টন এই গানটি জনপ্রিয় করে তুলেন। একই সময়ে শ্বেতাঙ্গ শিল্পী “কারাভান” যে সমস্ত কৃষ্ণাঙ্গ ছাত্র “শুধু মাত্র শ্বেতাঙ্গদের জন্য” লেখা রেস্তোরাঁর সামনে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করেছিলো তাদের এই গান গেয়ে শোনান। জো গ্লেজার এবং এলম সিটি দল গানটির প্রথম রেকর্ড ১৯৫০ সালে। ১৯৬০ সালে গানটির চারজন গীতিকারই গানটিকে নিগ্রোদের স্বাধীকার আন্দোলনের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করেন। গানটির জনপ্রিয় অংশের স্বত্ব রয়েছে যে চারজনের নামে তারা হলেন জিলফিয়া হর্টন, পিট সিগার, ফ্রাঙ্ক হ্যামিল্টন ও কারভান এর নামে।

পূর্ণ লিরিক:

We shall overcome
We shall overcome
We shall overcome some day.
Oh, deep in my heart
I do believe
We shall overcome some day.

We’ll walk hand in hand
We’ll walk hand in hand
We’ll walk hand in hand some day.

We shall all be free
We shall all be free
We shall all be free some day.

We are not afraid
We are not afraid
We are not afraid some day.

We are not alone
We are not alone
We are not alone some day.

The whole wide world around
The whole wide world around
The whole wide world around some day.

We shall overcome
We shall overcome
We shall overcome some day.

পিট সিগারের কণ্ঠে এই গানটির লাইভ ভার্সন শোনার জন্য
লিঙ্কে ক্লিক করুন … We shall overcome some day
অধিক তথ্যের ঋণ স্বীকার : জবরুল আলম সুমন।

ব্রডব্যান্ডের ন্যূনতম গতি ১ এমবিপিএস হচ্ছে

ব্রডব্যান্ড গ্রাহকদের কমপক্ষে ১ এমবিপিএস ব্যান্ডউইডথ দিতে ইন্টারনেট সেবাদানকারীদের নির্দেশনা দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি।

গত সোমবার ১লা এপ্রিল জারি করা নতুন নির্দেশনায় গ্রাহকদের পরিচয় নিশ্চিত করে ডাটা বা ইন্টারনেট সংযোগ দেয়ার কথাও বলা হয়েছে।

বিটিআরসির সিস্টেম এন্ড সার্ভিসেস-এর পরিচালক লে. কর্নেল মো. রকিবুল হাসান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে অপারেটরদের মোট পাচটি নির্দেশনা দেয়া হয়।

জাতীয় ব্রডব্যান্ড নীতিমালা ২০০৯ এর অনুচ্ছেদ ২-এ উল্লেখিত ব্রডব্যান্ডের সংজ্ঞা পরিবর্তন করে বলা হয়েছে, “ইন্টারনেটে প্রচলিত গতির চাইতে বেশী গতিকে ব্রডব্যান্ড হিসেবে অভিহিত করা হবে। এর ন্যূনতম ব্যান্ডউইথ হবে ১ এমবিপিএস। গ্রাহকের জন্য ১ এমবিপিএস ব্যান্ডউইথ নিশ্চিত করতে হবে এবং এর চেয়ে কম ব্যান্ডউইথকে ‘ন্যারোব্যান্ড’ বলা হবে।”

ব্রডব্যান্ডের নতুন সংজ্ঞা গত ১৫ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হিসেবে ধরে নিতে আইএসপি ও বিডব্লিউএ অপারেটরদের নির্দেশনা দেয়া হয়। লাইসেন্সধারী ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি) ও ব্রডব্যান্ড ওয়্যারলেস অ্যাক্সেস (বিডব্লিউএ) অপারেটরদের এপ্রিলের ৩০ তারিখের মধ্যে এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে নির্দেশনায়।

বর্তমানে চালু বিভিন্ন প্যাকেজ, অফার ও মূল্যতালিকা নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী নতুন করে সাজাতেও বলা হয়েছে অপারেটরদের। নির্দেশনায় বলা হয়, বিটিআরসি প্রবর্তিত ‘গ্রাহক নিবন্ধন ফর্ম’ ব্যবহার করে গ্রাহকের পরিচয় নিশ্চিত করার পর ডাটা বা ইন্টারনেট সংযোগ চালু করতে হবে।

গ্রাহক নিবন্ধনে কোনো ধরনের ভুল/অসত্য/ত্রুটিযুক্ত তথ্য থাকার পরও ডাটা বা ইন্টারনেট সংযোগ চালু করলে তার সম্পূর্ণ দায়ভার অপারেটরদের বহন করতে হবে বলেও নির্দেশনায় জানানো হয়।

পহেলা এপ্রিল থেকে নতুন সংজ্ঞা অনুসারে নতুন করে সাজানো প্যাকেজ/অফার/ট্যারিফ এর মাধ্যমে ডাটা/ইন্টারনেট সার্ভিস ব্যবহার বা ক্রয় করার জন্য ব্যবহারকারীদের অনুরোধ করা হয়েছে।

ব্রডব্যান্ড সংযোগের স্থলে ‘ন্যারোব্যান্ড’ ব্যবহার/ক্রয়/পেমেন্ট না করার জন্যও গ্রাহকদের অনুরোধ করা হয়।

সংবাদ : বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।
Published: Updated: 02-04-2013 06:00:33.0

আসুন আড্ডা দেই … একটু গপসপ করি

72768_470711786317070_771655806_n

এই মুহূর্তে ব্লগে আছি প্রায় ২৭ জন নিবন্ধিত আর ২৮৫ জন অতিথি। এমনিতেই চারিদিকে আকাশ বাতাস গরম। কোন দিক থেকে কি হয়ে যায় বলা যায় না। ভয়ে ভয়ে আছি।

ভাবলাম শরীর মন একটু চাঙ্গা করি। প্রশ্ন যদি করেন কিভাবে !! উত্তর আমার কাছে তৈরীই আছে। ফিজিক্যাল ওয়ার্মআপ আর কি। কোন এজেন্ডা নেই। স্রেফ এক ঘরে বসে সবার সাথে সবার কুশলাদি বিনিময় আর কি। আসুন বসুন আলোচনার ভাব ভাবনা ঠিক করুন। প্রয়োজনে সেভাবে আড্ডা চালিয়ে নিয়ে যাই। যারা ঠাসি খেয়ে বসে আছেন তারা বসে থাকুন। যারা কথা বলতে চান কোন দ্বিধা রাখার প্রয়োজন নেই পোস্টে এসে কথা বলুন।

মাঝে মধ্যে চা নাস্তার ব্যবস্থা করা হবে। যার যত ইচ্ছে খাবেন দাবেন প্রয়োজনে নিয়ে যাবেন। কোন বাঁধা নেই।

আসুন শুরু করা যাক।
ছোট ছোট গপসপ।

‘স্যাটানিক ভার্সেস’ বনাম সালমান রুশদি

a

স্যার সালমান রুশদি
পেশা- ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক
জাতীয়তা- যুক্তরাজ্য
লেখার ধরন- জাদুকরী, বাস্তবতা
বিষয়সমূহ- সমালোচনা, ভ্রমণ কাহিনী
প্রভাবিত হয়েছেন- গুন্টার গ্রাস, Gabriel García Márquez, ভ্লাদিমির নবোকভ, জেমস জয়েস, জর্জ লুই বোর্গস, টমাস পিঞ্চন।

স্যার আহমেদ সালমান রুশদি ( দেবনগরী ভাষা: अहमद सलमान रश्दी ) ( জন্ম: ১৯শে জুন, ১৯৪৭) একজন ভারতীয়-বৃটিশ ঔপন্যাসিক ও প্রাবন্ধিক। তিনি ১৯৮১ সালে প্রকাশিত তাঁর দ্বিতীয় উপন্যাস ‘দ্য মিডনাইটস চিলড্রেন’-এর মাধ্যমে খ্যাতি অর্জন করনে। এই উপন্যাসটি বুকার পুরস্কার অর্জন করেছিল। তাঁর প্রথম দিককার উপন্যাসের অধিকাংশেরই কাহিনী বা পটভূমি রচিত হয়েছিল ভারতীয় উপমহাদেশকে ঘিরে। তাঁর লেখার ধরণকে “জাদুকরী বাস্তবতা” হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়। তিনি “স্যাটানিক ভার্সেস” রচনার মাধ্যমে ধর্মানুরাগী জনতার সাথে বির্তকে জড়িয়ে পড়েন।

এ প্রসঙ্গে অন্যত্র সালমান রুশদি বলেছেন যে, “স্যাটানিক ভার্সেস” নিয়ে বিরূপ সমালোচনা বা হইচই হওয়াতে ভালো-মন্দ দুটোই হয়েছে। এতে অনেক মানুষ আকৃষ্ট হয়েছে বইটি পড়ার জন্য, কিন্তু এই হইচই বড় রকমের বাঁধা এই উপন্যাসের শিল্পমূল্য বোঝার জন্য। “স্যাটানিক ভার্সেস” বুকার পুরস্কারের জন্য চূড়ান্ত তালিকায় অর্ন্তভুক্ত হলেও পুরস্কার পায় নি, যদিও বছরের সেরা উপন্যাস হিসেবে ‘হোয়াইটব্রেড এওয়ার্ড’ পেয়েছিল এবং পশ্চিমা সমালোচকদের বানানো শতাব্দীর সেরা একশটি বইয়ের তালিকায় উঠে এসেছে কয়েকবার।

The Satanic Verses Affair1
The Satanic Verses (1988)

দ্য স্যাটানিক ভার্সেস (ইংরেজি ভাষায়: The Satanic Verses) সালমান রুশদির চতুর্থ উপন্যাস যা ১৯৮৮ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়। এর কিছুটা ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক মুহাম্মাদ এর জীবনী থেকে অনুপ্রাণিত। তার পূর্বের বইয়ের মত এতেও রুশদি জাদু বাস্তবতা ব্যবহার করেছেন এবং সমসাময়িক ঘটনা ও মানুষের সাহায্যে তার চরিত্রগুলো তৈরি করেছেন। বইয়ের নামটি তথাকথিত স্যাটানিক ভার্স বা শয়তানের বাণী-কে নির্দেশ করে। কারও কারও দাবী মতে কোরআনের কিছু আয়াত শয়তান কর্তৃক অনুপ্রাণিত হওয়ায় দৈনিক প্রার্থনার সময় তৎকালীন মক্কার পেগান দেবতা, লাত, উজ্জাহ এবং মানাত এর পূজা হয়ে গিয়েছিল। এই আয়াতগুলোকেই শয়তানের বাণী বলা হয়। উপন্যাসটির যে অংশে শয়তানের বাণী সম্পর্কিত বিষয় আছে সে অংশটুকু প্রথম সহস্রাব্দের ইসলামী পণ্ডিত আল-ওয়াকিদি এবং আল-তাবরিরি-র সূত্র অনুসরণে লেখা।

যুক্তরাজ্যে বইটি প্রশংসা কুড়িয়েছে। ১৯৮৮ সালে এটি বুকার প্রাইজ এর চূড়ান্ত তালিকায় ছিল যদিও পিটার ক্যারির অস্কার অ্যান্ড লুসিন্ডা-র কাছে হেরে যায়। একই বছর উপন্যাসটি হুইটব্রেড অ্যাওয়ার্ড লাভ করে। দ্য স্যাটানিক ভার্সেস একটি বিশাল বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল যখন রক্ষণশীল মুসলিমরা বইটিকে ব্লাসফেমি এবং তাদের বিশ্বাসের প্রতি ব্যঙ্গাত্মক হিসেবে আখ্যায়িত করে। কিছু মুসলিমের প্রতিক্রিয়ার সূত্র ধরেই ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনী ১৯৮৯ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারি সালমান রুশদির মৃত্যুদণ্ডের ফতোয়া জারি করেছিলেন।

১৯৮৯ সালে ইরানের ফতোয়া জারির পর থেকে অনেক ঘটনা ঘটেছে।
বিশ্বব্যাপী মুসলিম দেশগুলো যেমন নিষিদ্ধ করেছে স্যাটানিক ভার্সেস, নিন্দা জানিয়েছে সালমান রুশদির বিরূদ্ধে, তেমনি লেখক, বুদ্ধিজীবী সহ নানা ধরনের মুক্তচিন্তার মানুষেরা এই ফতোয়ার বিরূদ্ধে কথা বলেছেন, লেখকের স্বাধীনতার পক্ষে সোচ্চার হয়েছেন। এই ফতোয়ার জন্য সালমান রুশদি শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না হলেও অনেকেই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। হিতোশি ইগারাশি, যিনি স্যাটানিক ভার্সেস উপন্যাসটি জাপানিজ ভাষায় অনুবাদ করেন তাঁকে ছুরিকাঘাতে মেরে ফেলা হয় ১৯৯১ সালে। ইতালরি অনুবাদক ইতোরে ক্যাপ্রিওলোকে একই মাসে ছুরিকাঘাত করা হয়, যদিও তিনি প্রাণে বেঁচে যান। নরওয়ের প্রকাশক উইলিয়াম নাইগার্ড অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান আততায়ীর গুলি থেকে। ১৯৮৯ সালে বৃটেনে যে ট্রেন-বোমা ফাটানো হয়, তা ছিল সালমান রুশদিকে উদ্দেশ্য করে হিজবুল্লাহ’র আক্রমণ। যদিও ১৯৯৮ সালে ইরানের পক্ষ থেকে মোহাম্মদ খাতামী জনসমক্ষে প্রতিশ্রুতি দেন যে তারা যেমন ‘রুশদিকে হত্যার ফতোয়া সর্মথন করেন না তেমনি এটি রহিতও করেন না’, সুতরাং এটি আজও বহাল আছে। সালমান রুশদি ঈষৎ মুচকি হাসি হেসে বলেন যে, এখনও অনেকটা ‘ভ্যালন্টোইন’স ডে’র মতো ফেব্রুয়ারী মাসের ১৪ তারিখে তাঁর কাছে বেনামে র্কাড আসে যাতে লেখা থাকে ‘আমরা এখনও ভুলি নি’। তিনি আরও বলেন এটা এখন সত্যিকারের ভয়-দেখানোর চেয়ে অনেকটা ‘রেটরিকের’ মতো হয়ে গেছে। তবে এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে এই ‘মৃত্যুদণ্ড’ দেয়ার চেয়ে এটাকে অবজ্ঞা প্রর্দশন করলেই বরং সবার জন্য মঙ্গল হতো। মানুষের বিশ্বাস কেন এতো সহজে আহত হবে, ঠুনকো কাঁচের মতো ঝুরঝুরে হবে- যে ভিন্নমতকে খতমই করতে হবে, আমি আমার নিজের ভাষায় এভাবে বলি যে, ‘কারো যেমন ধর্মানুভূতিতে আঘাত লাগতে পারে, তেমনি কারো তো নাস্তিকানুভূতিতে আঘাত লাগতে পারে, অনুভূতি তো সবারই সমান!’

বৃটিশ লেখক সালমান রুশদি (১৯শে জুন, ১৯৪৭) হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত তাঁর নিজের বাড়িতে ফিরে আসার স্বপ্ন দেখতে পারেন। একযুগ আগে ভারত সরকার তাঁর এই বাড়িটি দখল করে নিয়েছিল। তবে ফেরার আগে এই বাড়ি বসবাস করার জন্য ব্যাপক সংস্কার করতে হবে। তাঁর উকিল বিজয় শংকর দাস গত ১৯৯৭ এর নভেম্বরে এই রেষ্ট হাউজের পজেশন নেয়ার জন্য সোলানে গিয়েছিলেন। সোলান হিমাচল প্রদেশে অবস্থিত একটি পার্বত্য এলাকা। সিমলা থেকে এর দূরত্ব তেমন বেশী নয়। মি. দাশ ইতিমধ্যেই টেলিফোন সংযোগ এবং বাসগৃহ সংস্কারের জন্য উদ্যোগ নিয়েছেন।
ভারতের সম্পত্তি নিয়ে মামলা মোকদ্দমা সহজে শেষ হয় না। তাই সিজ করা সম্পত্তি ফিরে পাওয়ার আশায় রুশদি বেশ আনন্দ বোধ করছেন। তার প্রয়াত পিতার নামে এই ”আনিস” ভিলা দীর্ঘ দুই যুগেরও বেশী সময় ধরে অব্যবহৃত ছিলো। লেখালিখির জন্য রুশদি এটি ব্যবহার করতে পারবেন। তিনি এখানেও না থাকলেও কিভাবে বাড়িটি রাখবেন তার প্ল্যান করেছেন।

”স্যাটানিক ভার্সেস” লিখার অপরাধে ১৯৮৯ সালে ইরানের প্রেসিডেন্ট আয়াতুল্লা খোমেনি তার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড জারি করে ফতোয়া দেন। সেই সময় থেকেই রুশদি ভারতে আসতে পারেন নি। তখন মুসলিমদের বিক্ষোভ ও দাঙ্গার পর ভারতে তার উপন্যাস নিষিদ্ধ করা হয়।
এখনও ভারতে তার আগমনে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নষ্ট হবার আশংকা রয়েছে। তবুও গত ১৭ বছর ধরে তিনি স্বদেশে ফিরে আসার জন্য লড়াই করে চলেছেন। ছয় বেডরুম বিশিষ্ট বাড়িটি বর্তমানে হিমাচল প্রদেশের সরকারের অধীনে রয়েছে। একটি স্থানীয় সরকারি অফিস হিসাবে এর ব্যবহার হচ্ছে। এই বাড়িটি আবার রুশদি পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেবার জন্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দরকার হয়েছিলো।
৬০ হাজার জনসংখ্যা অধ্যুষিত সোলান শহরের অদূরে পাইন গাছের বনে ঢাকা ”আনিস” ভিলার সামনে রয়েছে পঁচিশ’শো গজের এক সুদীর্ঘ লন। ক্ষয়িষ্ণু পাথরের দালানের উপর ঢেউটিনের ছাদ, যা একসময়ে লাল রং করা হয়েছিলো। ছাদে রয়েছে চারটে ছোট গম্বুজ। সামনে এক প্রশস্ত বারান্দা। ভ্যালির বুকে এ এক সুন্দর ল্যান্ডমার্ক।

সোলানের ডিস্ট্রিক্ট কালেক্টর এবং ”আনিস” ভিলার প্রতিবেশী বি,এস নায়ান্ত বলেন- যদি রুশদি এখানে থাকতে চান তাহলে তারা খুশি হবেন। তিনি যদি শেষ পর্যন্ত আসার সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে আমরা তাঁর সবধরণের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেবো। তার মতে ভিলার বর্তমান দাম তিন থেকে চার মিলিয়ন রূপী হবে।

রাজ্য কর্মকর্তারা ১৯৯০ সালে ”আনিস” ভিলার দখল নিয়েছিলেন। তাদের মতে ১৯৪৭ সালে দেশ পার্টিশনের সময় রুশদি পরিবার পাকিস্তানে চলে গেলে এই ভিলা পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিলো। কিন্তু মি. দাসের মতে- বৃটেনে স্থায়ী হবার আগে এই পরিবার ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত বর্তমান মুম্বাইতে বসবাস করে। তখন লোকাল এডুকেশন অথরিটির কাছে বার্ষিক ২০০০ রুপির বিনিময়ে আনিস রুশদি বাড়িটি ভাড়া দেন। তিনি ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত আমৃত্যু এই সম্পত্তির দেখাশোনা করেন। ১৯৬৯ সালে এই সম্পত্তি তিনি তার সন্তানকে লিখে দেন।
যদিও আদালত ১৯৯৭ এর জুলাই মাসে রুশদির অধিকারের স্বীকৃতি দিয়েছেন কিন্তু নানা টানাপোড়নের কারণে এর দখল পেতে দেরী হয়েছে। কর্তৃপক্ষ বকেয়া ভাড়া দাবি করছেন। আর রাজ্য সরকার প্লাম্বিং এর জন্য খরচ করা প্রায় ১,৫০,০০০ হাজার রুপি শোধ দেয়ার কথা বলেছেন। মি. দাস বলেন- রুশদি এখন তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য এখানে উদ্যোগ নিতে বলেছেন।

satanicc

* ভালো অথবা মন্দ যেমন হোক … রেটিং চর্চা অব্যহত রাখুন। ধন্যবাদ।

শহীদ রুমী স্কোয়াড :: আমরা আপনাদের পাশে

নিষ্প্রাণ এই সর্বংসহা রাজ্যে
অন্তর্ঘাতী আমাদের এই গান।
শহীদ রুমী স্কোয়াড এর জামাত-শিবির নিষিদ্ধের দাবীতে আমরণ অনশনের ৬৯ ঘন্টা জামাত-শিবিরকে নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবীতে ২৬ মার্চ রাত ১০ টা ৩০ মিনিটে জাতীয় জাদুঘরের সামনে শহীদ রুমী স্কোয়াডের ডাকে শুরু হওয়া আমরণ অনশন কর্মসূচি পার করলো এর ৬৯ তম ঘন্টা। গণজাগরণ মঞ্চের ২১ ফেব্রুয়ারির মহাসমাবেশ থেকে যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবে জামাত-শিবিরের নিষিদ্ধের আইনি প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য ২৬ মার্চ পর্যন্ত যে আল্টিমেটাম দেয়া হয়েছিলো। সরকার সেটি না মানায় এবং এখনো পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোন কার্যকরী পদক্ষেপ না নেওয়ায়, শহীদ রুমী স্কোয়াডের সাত তরুণ এই অনশন কর্মসূচীর সূচনা করেন। ২৭ মার্চ সকাল থেকে এখন পর্যন্ত স্বতপ্রণোদিত হয়ে এই অনশনে যোগ দিয়েছেন আরো ১২ জন; অনড় এই দাবীতে অনশনে যোগদানকারীর সংখ্যা এখন মোট ১৯ জন। এদের মধ্যে আলিফ প্রধান এবং মানিক সূত্রধরের শারিরীক অবস্থার অবনতি ঘটলে ডাক্তাররা তাদেরকে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করেন। দুঃখের বিষয় মানিক সূত্রধরের অবস্থা আরো খারাপ হওয়ায় তাকে ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হসপিটালের জরুরী বিভাগে ভর্তি করা হয়; তিনি এখন সেখানে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন।

রাত আটটায় অনশনকারীদের সঙ্গে সপরিবারে সংহতি প্রকাশ করতে আসেন জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিক এবং দেশবরেণ্য শিক্ষাবিদ ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল। অনশনকারীদের সঙ্গে বেশ কিছু সময় কাটান তিনি; আজ শহীদ শাফী ইমাম রুমীর ৬২ তম জন্মদিন উপলক্ষে স্কোয়াডের আয়োজনে ৬২ টি মোমবাতি প্রজ্বলন এবং তার স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন কর্মসূচিতে অংশ নেন তিনি। সেখানে তিনি বলেন, ‘আজ দুপুরে সিলেট থেকে না খেয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছি আমি। ঢাকা কলেজে পড়ার সময় শহীদ রুমী আমার সহপাঠী ছিলো; তার স্মরণে আজকের তরুণরা তাদের দেশকে ভালোবেসে এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এদের প্রাণের মূল্য অনেক বেশী; দেশ থেকে জামাত শিবির নামের আবর্জনা দূর করতে হবে; সেই পরিষ্কার দেশের মাটিতে দেশপ্রেমের ফুলগাছ লাগাবে এরাই। আর তাই এদেরকে যেকোন মূল্যে বাঁচাতে হবে।’
এর আগে সন্ধ্যা সাতটায় অনশনকারীদের স্বাস্থ্যের খোঁজ নিতে আসেন গণজাগরণ মঞ্চের প্রধান সমন্বয়ক এবং প্রগতিশীল ছাত্রজোট এর নেতৃবৃন্দ। তারা প্রজন্ম ৭১ এবং মৃত্যুঞ্জয় স্কোয়াডের পক্ষ থেকে অনশনকারীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন।

এসময় তিনি অনশনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় চলমান পরিস্থিতি নিয়ে যেকোন ধরণের বিভ্রান্তি এবং ভুল বোঝাবুঝি দূর করার আহ্বান জানান তিনি। তিনি আরো বলেন, যেহেতু সবাই একই উদ্দেশ্যে কাজ করছে, তাই কোনরকম ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হলে তিনি শহীদ রুমী স্কোয়াডের কাছে ‘ওপেন সরি’।

শহীদ রুমি স্কোয়াডের পক্ষ থেকে সংহতি সমাবেশের আহবানে পাওয়া গেছে বিপুল সাড়া, সাংগঠনিক পর্যায় থেকে সারা দেশ থেকে ১১৬ টি সংগঠন তাদের সংহতির কথা প্রকাশ করেছেন আমাদের সাথে। যার মধ্যে ছাত্র সংগঠন থেকে শুরু করে আছে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। এছাড়া ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে দেশ বিদেশের অসংখ্য মানুষ সংহতি প্রকাশ করেছেন আমাদের সঙ্গে, যার একটি বড় অংশ যার যার অবস্থান থেকে এই কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে অংশ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন।

২৮ মার্চ বিকেল পাঁচটায় স্কোয়াডের ডাকা সর্বাত্মক সংহতি সমাবেশে অনশনকারীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি এবং বিক্ষুব্ধ নারী সমাজ-এর বিশিষ্ট নেতৃবৃন্দ। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং দেশের বিভিন্ন অঙ্গনের সাংস্কৃতিক কর্মীরা। ঐ রাতে অনশনকারীদের সঙ্গে দেখা করতে আসেন ভাষাসৈনিক আব্দুল মতীন এবং জাতীয় পতাকার নকশা কারী শিবনারায়ণ দাস। তারা অনশনকারীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন এবং সর্বাত্মক সহযোগিতার কথা ব্যাক্ত করেন।

২৯ মার্চ সকালে সংহতি প্রকাশ করতে আসেন মঞ্জুরুল আহসান খান। দুপুরে সংহতি জানাতে আসেন গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা বিচ্ছু জালাল, মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ শহীদুল হক মামা এবং আক্কু চৌধুরী।

২৬ মার্চ রাতে এই কর্মসূচির সঙ্গে তাৎক্ষণিকভাবে সংহতি প্রকাশ করেন শহীদ জননী জাহানারা ইমাম স্কোয়াড, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা অধিকার মঞ্চ এবং সাংস্কৃতিক সংগঠন বোধন, পরবর্তীতে আরও সংহতি প্রকাশ করেন বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, ডক্টরস ফর হেল্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট, সামহোয়্যার ইন ব্লগ, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস পাঠচক্র, জাগরুক গণ পাঠাগার, বঙ্গবন্ধু চেতনা পরিষদ, বিপ্লবীদের কথা, সেক্টর ১৩, ফাঁসির মঞ্চ, তারুণ্য তের, রাস্তা, জেনারেশন এফ, দেশ মৃত্তিকা, সমগীত সংস্কৃতি প্রাঙ্গন, গণসংহতি আন্দোলন, রাগমা, আমরা, মাতৃভূমি সামাজিক সংগঠন, হৃদয়ে সীতাকুণ্ডু, বটতলা নাট্যদল, ব্ল্যাক স্কোয়াড, প্রজন্মে দায়ভার, শব্দনীড়, ব্লগারস ফোরাম, স্বাধীন বাংলা ব্লগার ব্রিগেড। এছাড়াও এসএমএসের মাধ্যমে সিলেট গণজাগরন মঞ্চ থেকে জানানো হয়েছে সংহতির কথা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীদের পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে সংহতির কথা।

কর্মসূচী:
শহীদ রুমি স্কোয়াডের আমরণ অনশনের কর্মসূচী চলবেই এছাড়াও শহীদ রুমি স্কোয়াড আজ ২৯ মার্চ, ২০১৩ থেকে সারাদেশ ব্যাপী এই দাবীর স্বপক্ষে গণ অনশন শুরু করার আহবান জানিয়েছে। এই গণ অনশনে দেশের সকল মুক্তিযোদ্ধা, বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী, সকল ছাত্র ছাত্রী এবং সকল মানুষকে – যারা মনে করেন যুদ্ধপরাধীদের সংগঠন জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করা প্রয়োজন, প্রতিরোধ করা প্রয়োজন তাদের যোগ দেবার আহবান করা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় ৩০ মার্চ, শনিবার দেশের সকল স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের এই কর্মসূচির সাথে একাত্মতা জানিয়ে কালো ব্যাজ ধারণ করে এক ঘন্টার জন্য প্রতীকী অনশনের আহ্বান জানানো হচ্ছে। যারা এই প্রতীকী অনশনে অংশ নেবেন তাদের সবাইকে অনশনের ছবি শহীদ রুমী স্কোয়াডের এর ফেইসবুক পেইজে পোস্ট করার আহ্বান জানানো হচ্ছে।

গণজাগরণ মঞ্চ থেকে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি – ৩১ মার্চ ২০১৩ এ- সকল যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি এবং জামাত-শিবির নিষিদ্ধের দাবীতে গত ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে সংগৃহীত গণস্বাক্ষর জাতীয় সংসদের মাননীয় স্পিকারের কাছে পেশের উদ্দেশ্যে বিক্ষোভ মিছিল-এ সকল স্তরের ছাত্র-ছাত্রীদের যোগ দেয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছে শহীদ রুমী স্কোয়াড।
স্কোয়াডের পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবে জানানো হচ্ছে, গণজাগরণ মঞ্চের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা এবং সমর্থন দলটির আছে। আর তাই, আমরণ অনশনের যে কর্মসূচি দলটির পক্ষ থেকে পালন করা হচ্ছে, সেটি যে গণজাগরণ মঞ্চের কর্মসূচিগুলোর সম্পূরক, সেটিও জানানো হচ্ছে স্পষ্টভাবে। কোনভাবেই তাই এই কর্মসূচি বা এই সংগঠনটিকে গণজাগরণ মঞ্চের থেকে আলাদা কোন প্ল্যাটফর্ম হিসেবে না দেখার জন্য স্পষ্টভাবে জানানো হচ্ছে।

যুদ্ধাপরাধী সংগঠন এবং তাদের সহযোগী হিসেবে জামাত-শিবিরের রাজনীতি স্বাধীন বাংলাদেশ থেকে চিরতরে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। আমরা জানি, সরকারের সদিচ্ছা থাকলে সেটি যে কোন মুহূর্তে, যে কোন উপায়েই সম্ভব। আর তাই আমাদের এই প্রাণের দাবীর পক্ষে আমাদের অবস্থান অনড়, এবং এরই পরিপ্রেক্ষিতে অহিংস উপায়ে সর্বোচ্চ পর্যায়ের কঠোর প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে আমরা বেছে নিয়েছি আমরণ অনশনকেই। আমাদের আশা এতে সবার সমর্থন আমরা পাবোই।

আন্দোলনের এই পর্যায়ে এসে তাই আমরা আজ বলতে চাই, বিজয়, নাহলে মৃত্যু- একমাত্র এই এই পথেই চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জন সম্ভব। আর তাই অহিংস উপায়েই দাবী আদায়ের সর্বোচ্চ কঠোর অবস্থান নিয়ে আজ আমরা রাজপথে; আশা আছে বিজয়ের, তবে মৃত্যুর ভয়ে এখন আর ভীত নই আমরা কেউ।




সর্বশেষ তথ্য জানতে : ফেসবুক পেজ – শহীদ রুমী স্কোয়াড।