মুরুব্বী এর সকল পোস্ট

মুরুব্বী সম্পর্কে

আমি আজাদ কাশ্মীর জামান। আছি মুরুব্বী নামের অন্তরালে। কবিতা পড়ি, কবিতা লিখার চেষ্টা করি। ভেতরে আছে বাউল মন। খুঁজে ফিরি তাকে। জানা হয়নি এখনো। ঘুরতে ঘুরতে আজ পৃথিবীর স্বর্গে। এখানেই পরিচয় হয়েছিলো, কবিতা পাগল এক মানুষের সংগে। নাম জিয়া রায়হান। যার কিছু শব্দকথা, এ্যাতোদিন ভরেছে আমার পাতা। উথাল পাথাল হাওয়া, হৃদয়ে জাগালো দোলা পেলাম কিছু সমমনা মানুষের দ্যাখা। দিনভর আর রাতভর শুধু কবিতায় গেলো বেলা। সব ছেড়েছি- সব পেয়েছি- ভুলতে পারিনি শুধু কবিতার অশ্রুসজল চোখ। ভালো লাগা থেকেই দু’ একটা শব্দ সাজাবার চেষ্টা করি। মাতাল বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে মাটির কলসে, তবলার ধ্বণী তুলে গাইতে পারি বেসুরো গান- সুর নামের অন্তরালে। ভালোলাগে পোষা কবুতরের পালক ললাটে ছোঁয়াতে। ফুল থেকে রং নিয়ে, খেলি হোলিখেলা, হৃদয়ের উঠোনে। আজ তারি ধমকে এলাম স্বরূপে- স্বকথায় ভরাবো পাতা।   hits counter

মুক্তিযুদ্ধের কাণ্ডারির নাম কোথায়?

১৯৫০ সাল।
তখন রাজধানী ঢাকার ১৫০ নাম্বার পুরোনো মোগলটুলি ছিল শহীদ সোহরাওয়ার্দী গ্রুপের কেন্দ্র বিন্দু। সেখানে সবার মধ্যে সততায়, সত্যবাদিতায়, স্বকীয়তায় তাজউদ্দিন ছিলেন সবার শ্রদ্ধাভাজন, আস্থাভাজন। চিন্তায়, কর্মে এবং দৃঢ়তায় তাজউদ্দিন সব সময়ই ছিলেন, কোনো স্বার্থ বুদ্ধি, কোনো অসৎ চিন্তা অথবা তার মধ্যে কোনো অবসাদ ছিলো না।

সত্তরের নির্বাচনের সময়ই হোক, কি দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবেই হোক অথবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মন্ত্রীসভার অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দিন দেশ সেবায় সব সময় একই রকম তাঁর ভূমিকা রেখেছেন।

১৯৫৪ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগের শক্তিশালী সাধারণ সম্পাদক ফকির আব্দুল মান্নানের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেন তাজউদ্দিন। জয়লাভ করলেন। সেই তাঁর জয়যাত্রা। সেই থেকে গণআন্দোলনের পুরো ভাগে তিনি শেখ মুজিবের দক্ষিণ হস্ত। শেখ মুজিব এবং তাজউদ্দিনের মিলনে আওয়ামী লীগ অত্যন্ত শক্তিশালী দলে পরিণত হয়। শেখ মুজিবের কারিশমা এবং তাজউদ্দিনের বুদ্ধিমত্তা আওয়ামী লীগকে পূর্ব পাকিস্তানের জনগনের আশা আকাঙ্খার বাহনে রূপান্তরিত করলো। গণআন্দোলনের মুখে আইউব খান ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ালেন। ইয়াহিয়া নির্বাচন দিতে বাধ্য হলেন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলো। ক্ষমতা হস্তান্তরের বদলে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা নৃশংস ভাবে মানুষ হত্যা শুরু করলে অত্যাচার, হত্যা, লুণ্ঠনে মানুষ দিশাহারা, ঘরবাড়ি ছাড়া হয়। জাতি বুঝতে পারছিল ধ্বংসের এখানেই শেষ নয়, আরো ধ্বংস বাকী আছে। সেই দিনগুলোতে তাজউদ্দিন শক্ত হাতে দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন।

বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামকে, বাঙালীর মুক্তি সংগ্রামকে, বাংলার চেতনাকে উদ্দীপ্ত রাখার জন্য শপথ গ্রহণ করলেন। অসীম সাহসিকতায়, ধৈর্য্য- শক্তি ও ত্যাগ নিয়ে তিনি মুক্তিযুদ্ধকে সংগঠিত এবং একটি স্বাধীন সার্বভৌম সরকার গঠন করতে পেরেছিলেন।

এক কোটি শরণার্থীর আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেছিলেন। বাংলার এই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ভারতের সাহায্য সহযোগিতা আদায় করেছিলেন তাজউদ্দিন। তাজউদ্দিনের আশেপাশে বহু সদস্য, নেতা কর্মী ছিলেন কিন্তু স্বাধীনতার জন্য তাজউদ্দিনের একনিষ্ঠতা, একাগ্রতা এক অনন্য সাধারণ ঘটনা।

১৯৭৪ এর ২৬শে অক্টোবর তাজউদ্দিন অর্থমন্ত্রীর পদ ছাড়লেন। ডঃ কামাল হোসেন তখন পররাষ্ট্র মন্ত্রী। আসলে শেখ মুজিব বনাম তাজউদ্দিনের যে সংঘাত, সেই সংঘাতে তাজউদ্দিনের কিছুই করার ছিল না। তাজউদ্দিন কারো কাছে কোন দিন নালিশও করেননি, কারো কাছে কোনো দিন আফসোসও করেননি। কিন্তু তারপরও তাঁকে জীবন দিতে হলো? তাজউদ্দিন কারাগারে নিহত হলেন। ৩রা নভেম্বর ১৯৭৫ এ।

তাজউদ্দীনের হাতে গড়া বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ গত একচল্লিশ বছরে একে একে কত কিছু হলো! সরকারের অদল- বদল, সরকার টিকিয়ে রাখবার কলা, কৌশলে চরিত্র হনন করা হলো। বাংলাদেশের যে মূল্যবোধ ছিলো তা একেবারেই জলাঞ্জলি দেয়া হলো। সেই মূল্যবোধ চরিত্র কোথা থেকে আসবে? এর ক্ষতিপূরণ কে দেবে?
ভাষা আন্দোলনের কথাও বিকৃতির হাত থেকে রেহাই পায়নি। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস হলো হাইজ্যাক। যদি সম্ভব হতো তাজউদ্দিনকে সুযোগ দিলে আবার সে দৃঢ় হাতে, স্থির বুদ্ধিতে পারতেন আমাদেরকে কলংকের হাত থেকে রক্ষা করে মহিমান্বিত করে তুলতে। কিন্তু হায়! সেই মুক্তিযুদ্ধের নাম কোথায়? যোগ্য সন্মান, প্রাপ্তি, আমরা দিয়েছি কি তাকে?

কিন্তু ধন্য তাজউদ্দিন, সে তো জাতির পতাকা দিয়ে গেল। এখন যারা জাতির নেতৃত্বে আছেন, ক্ষমতায় আসীন তারা সেই পতাকাকে সমুন্নত রাখুন। বাংলাদেশকে সোনার বাংলায় পরিণত করুন, কোটি মানুষের মুখে হাসি ফোটান। তবুও তো তাজউদ্দিনের প্রতি দেশের ঋণ কিছু শোধ হবে।

আবাহন

abahon 258

রাত্রির বিষণ্ণ নীরবতা ভেঙ্গে যখন স্বপ্নীল চৈতন্য
নিয়ে ফোটে রোদের মঞ্জরি-
জীবনের মাঠে; রূপোলি বীজের ঘ্রাণ ভেসে আসে দূর
বনভূমি থেকে; বিরামহীন দ্রুতলয়ে ফুটতে থাকে ভোর-

আলোক মণ্ডিত পৃথিবী থেকে দ্রুত অন্ধকার সরে যায়,
জাগতিক বৃক্ষের বুক থেকে বিদায় নেয় রাত্রি, তখন আমি সৃষ্টির
দর্পণে রাখি হাত; পরিবর্তনশীল বিশাল ব্রহ্মাণ্ড তাতে দেখতে পাই আমি-
কেউ যেন নিঃশব্দে আর্তনাদ করে ওঠে, যেন তাকে নির্মমভাবে
শুষে নিয়ে আমসত্ত্ব বানাচ্ছে কোন প্রিটোরিয়া সরকার, তুমি শোননি?

তবে ভয় পাচ্ছো কেন মিছে? সে শোষিতকে তুমি চেনো, চেনো তার
মিহিদানা কণ্ঠস্বর; তার ভাঙাচোরা তোবড়ানো শরীরের ইতিহাস তোমার
জানা। তিল ফুলের মতো ছোট্ট স্বপ্নের কথা।
সে তোমাকে বলেছিলো।

চেয়েছিল।
জামরুল ফলের মতো সবুজ স্বাধীনতার চারাগাছ, আর
নাগরিক অধিকার বন-বাদাড়ে ঘুরবার। অথচ সেই অমিয় স্বপ্ন যার
লুণ্ঠিত হয়েছে বিষাক্ত- বিভায়, সে আর কেউ নয়,

মজদুর সে তোমার- আমার, আমাদের আত্মজ, কেন করো তবে
বাহুল্য লৌকিকতা? কেন এ বিবমিষা তোমার? বিপ্লবে বিশ্বাস আনো,
বুনি দু’হাতে বিপ্লবের বীজ কঠিন মাটিতে, বিশ্ব সংসারে সুখদিন আনি।

abahon2089 01

মাষ্টার দা সূর্যসেন চিরজীবি হোন

সূর্যসেন, মাষ্টার দা। ব্রিটিশ ভারতের প্রখ্যাত বিপ্লবী। চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনসহ বহুবিধ বিপ্লবের অধিনায়ক। এঁর পুরো নাম সূর্য কুমার সেন। সংক্ষেপে সূর্যসেন নামে অধিক পরিচিত। তবে মাষ্টার দা নামে সহযোদ্ধাদের কাছে পরিচিত ছিলেন। সূর্য সেন (জন্ম: ২২ মার্চ, ১৮৯৪ – মৃত্যু: ১২ জানুয়ারি, ১৯৩৪) (ইংরেজি: Surya Sen) বা সূর্যকুমার সেন, ডাকনাম কালু, যিনি মাস্টারদা নামে সমধিক পরিচিত। ভারত উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম নেতা হিসেবে পরিচিত ব্যক্তিত্ব। পূর্ববঙ্গে জন্ম নেয়া এই বাঙালি বিপ্লবী তৎকালীন ব্রিটিশ বিরোধী সশস্ত্র আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন এবং নিজ জীবন বলিদান করেন।

কলকাতা মেট্রো সূর্য সেনের স্মরণে বাঁশদ্রোণী মেট্রো স্টেশনটির নামকরণ করেছে “মাস্টারদা সূর্য সেন মেট্রো স্টেশন”। এছাড়া তাঁর সম্মানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি করে আবাসিক হলের নামকরণ করা হয়।

জন্ম ও শৈশব:
সূর্য সেন ১৮৯৪ সালের ২২ মার্চ চট্টগ্রামের রাউজান থানার নোয়াপাড়ায় অর্থনৈতিক ভাবে অস্বচ্ছল পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম রাজমনি সেন এবং মাতার নাম শশী বালা সেন। রাজমনি সেনের দুই ছেলে আর চার মেয়ে। সূর্য সেন তাঁদের পরিবারের চতুর্থ সন্তান। দুই ছেলের নাম সূর্য ও কমল। চার মেয়ের নাম বরদা সুন্দরী, সাবিত্রী, ভানুমতি ও প্রমিলা। শৈশবে পিতা মাতাকে হারানো সূর্য সেন কাকা গৌরমণি সেনের কাছে মানুষ হয়েছেন। সূর্য সেন ছেলেবেলা থেকেই খুব মনোযোগী ছাত্র এবং ধর্ম ভাবাপন্ন গম্ভীর প্রকৃতির ছিলেন।

শিক্ষা জীবন:
তাঁর প্রথম স্কুল ছিল দয়াময়ী উচ্চ প্রাথমিক বিদ্যালয়। পরে তিনি নোয়াপাড়া উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ে ৮ম শ্রেনী পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। এরপর তিনি ন্যাশনাল হাই স্কুলে ভর্তি হন। সূর্য সেন ১৯১২ সালে চট্টগ্রামের নন্দনকাননে অবস্থিত হরিশদত্তের ন্যাশনাল স্কুল থেকে এন্ট্রান্স পাশ করে চট্টগ্রাম কলেজে এফ. এ.-তে ভর্তি হন। সে সময় আই.এ বা বর্তমানের এইচএসসি পরীক্ষার পরিবর্তে ফার্স্ট আর্টস বা এফ. এ. পরীক্ষার নিয়ম ছিল। চট্টগ্রাম কলেজ থেকে এফ. এ. পরীক্ষায় সাফল্যের সাথে পাশ করে তিনি একই কলেজে বিএ-তে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু তৃতীয় বর্ষের কোন এক সাময়িক পরীক্ষায় ভুলক্রমে টেবিলে পাঠ্যবই রাখার কারণে তিনি চট্টগ্রাম কলেজ থেকে বিতাড়িত হন। ফলে, তাঁকে বহররমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজে বিএ পড়তে যেতে হয়। ১৯১৮ সালে তিনি বহররমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন এবং চট্টগ্রামে ফিরে এসে ব্রাহ্ম সমাজের প্রধান আচার্য্য হরিশ দত্তের জাতীয় স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন। অসহযোগ আন্দোলনের সময় বিদ্যালয়টি বন্ধ হয়ে গেলে তিনি দেওয়ানবাজারের বিশিষ্ট উকিল অন্নদা চৌধুরী প্রতিষ্ঠিত অধুনালুপ্ত ‘উমাতারা উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ে’ অংকের শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। এসময় বিপ্লবী দলের সাথে তাঁর সম্পর্ক গভীরতর হয়ে ওঠে এবং শিক্ষকতা করার কারণে তিনি ‘মাস্টারদা’ হিসেবে পরিচিত হন।

বিবাহ:
বিপ্লবী ভাব ধারায় দীক্ষিত সূর্য সেন দেশের স্বাধীনতার জন্য আত্মত্যাগকে একমাত্র তপস্যা হিসেবে নিয়েছিলেন। তাই তিনি বিবাহ-বিরোধী ছিলেন। কিন্তু বিএ পাশ করে চট্টগ্রামে আসার পর থেকেই তাঁর বিবাহের কথাবার্তা অভিভাবকরা তোলেন। অবশেষে তাঁর বড় ভাই শিক্ষক চন্দ্রনাথ সেন (সহোদর নয়) ও অন্যান্য আত্মীয়দের বিশেষ অনুরোধে ১৯১৯ সালে তিনি চট্টগ্রামের কানুনগো পাড়ার নগেন্দ্রনাথ দত্তের ষোল বছরের কন্যা পুষ্প দত্তকে বিয়ে করেন। আত্মীয়-স্বজনের চাপে বিয়ে করলেও মাস্টারদার মনে এ ধারণা বলবৎ ছিল যে, বিবাহিত জীবন তাকে কর্তব্য ভ্রষ্ট করবে, আদর্শচ্যুত করবে। তার ফলে স্ত্রীর সংগে একদিন তিনি কথা পর্যন্ত বলেন নি। বিবাহের তৃতীয় দিনে হিন্দুদের মধ্যে যে ফুলশয্যায় প্রথা প্রচলিত আছে, সেদিন তিনি তাঁর বৌদিকে বলেন, তিনি স্বপ্নে দেখেছেন স্ত্রীর সংগে সহবাসে তাঁর মৃত্যু অনিবার্য। তাই তিনি সেদিনই গ্রামের বাড়ি ছেড়ে শহরে চলে আসেন এবং তারপর স্ত্রীর সাথে আর কোনদিন দেখা করেন নি।

১৯২০ খ্রিষ্টাব্দে গান্ধীজী স্বরাজ এনে দেওয়ার জন্য বিপ্লবীদের কাছ থেকে এক বৎসরের সময় চেয়ে নেন। তৎকালীন বিপ্লবীরা অহিংস নীতিতে বিশ্বাসী না হলেও গান্ধীজির কথায় অনেকেই সহযোগিতা করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত অহিংস আন্দোলন এক বৎসরের ভিতর ভারতের স্বরাজ আনতে ব্যর্থ হলে বিপ্লবীরা আবার সশস্ত্র বিপ্লবের পথ বেছে নেন। অসহযোগ আন্দোলনের সময় স্থানীয় জনগণের সহযোগিতায় তিনি জাতীয় বিদ্যালয় গড়ে তোলেন। এবং বিদ্যালয়ে তিনি শিক্ষকতার কাজ শুরু করেন। এভাবেই তিনি খ্যাত হন মাস্টারদা নামে। এই বিদ্যালয়টিই পরে তাঁর বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল।

১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ই ডিসেম্বর চট্টগ্রাম শহরে একপ্রান্তে বাটালি পাহাড় এলাকায় সরকারি রেলের টাকা লুণ্ঠন করে। এই লুণ্ঠনে অংশগ্রহণ করেন অনন্ত সিং, দেবেন দে ও নির্মল সেন। অম্বিকা চক্রবর্তী ও দলিলুর রহমান রেল ডাকাতির সতের হাজার টাকা নিয়ে অস্ত্র কেনার জন্য কলকাতায় চলে যান। সে সময় সুলুক বাহার এলাকায় ছিল বিপ্লবীদের সদর দপ্তর। ২৪শে ডিসেম্বর এই দফতরে পুলিশ হানা দেয়। এখান থেকে তাঁরা পালিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশের সাথে সংঘর্ষ হলেও এঁরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। এঁরা প্রথমে নগরকানা পাহাড়ে আশ্রয় নেন। পুলিশের হাতে ধরা পড়া প্রায় নিশ্চিত হয়ে গেলে মাস্টারদা, অম্বিকা চক্রবর্তী ও রাজেন দাস তাঁদের পকেটে রাখা পটাশিয়াম সায়ানাইড খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালান। অন্যান্যরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেই মৃতপ্রায় মাস্টারদা ও অম্বিকা চক্রবর্তী পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। উল্লেখ্য এঁরা পটাশিয়াম সায়ানাইড খেয়েছিলেন, কিন্তু ভালো থাকার সময় সীমা পেরিয়ে যাওয়ার কারণে কার্যকারিতা হারিয়েছিল। ফলে এই তীব্র বিষে খেয়ে বেঁচে গিয়েছিলেন। পরে পুলিশ হাসপাতালে তাঁদের চিকিৎসার পর তাঁরা সুস্থ হয়ে ওঠেন। এঁদের বিরুদ্ধে পুলিশ ডাকাতির মামলা রুজু করেছিল হয়েছিল। যতীন্দ্র মোহন এই মামলা পরিচালিত করেন এবং প্রায় ৯ মাস কারাবন্দী থাকার পর মামলা থেকে তাঁরা খালাস পান।

১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দের ৫ই সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের নোয়াপাড়ায় একটি অস্ত্রলুটের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় মাস্টারদার নাম শোনা যায়। এই কারণে ১ নং বেঙ্গল অর্ডিনেন্স ঘোষণা করে সারা বাংলায় বিপ্লবীদের ব্যাপকহারে গ্রেফতার করা হয়। শুধু এক ২৫ অক্টোবর তারিখেই বাংলার বিভিন্ন জেলা থেকে প্রায় ২০০ বিপ্লবী কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। এই সময় গ্রেফতার হন নেতাজী সুভাষ, অনিলবরণ রায় প্রমুখ নেতারাও। চট্টগ্রামের বিপ্লবীরা পুলিশের চোখ ফাঁকি দিতে মাস্টারদা কলকাতা শোভাবাজার আশ্রয় নেন। ওই সময় তাঁরা কলকাতার দক্ষিণেশ্বরে বোমা তৈরীর প্রশিক্ষণ নিতেন। ১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দের ১০ই নভেম্বর সেখানে পুলিশ হানা দেয়। সূর্যসেন গায়ের জামা খুলে খালি গায়ে একটা অপরিষ্কার ময়লা গামছা কাঁধে ফেলে চায়ের কেতলি হাতে ধীরে ধীরে সিঁড়ি বেয়ে নীচে নেমে আসেন। পুলিশ তাঁকে দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি সাদাসিধেভাবে বলেন, বাবু লোকদের জন্য চা আনতে যাচ্ছেন। পুলিশের দারোগা কিছুক্ষণ জেরা করার পর সন্দেহ করার মতো কোনো কিছু না পেয়ে তাঁকে ছেড়ে দেন। এর প্রায় একবছর পর ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দের ৮ অক্টোবর কলকাতার আমহার্স্ট স্ট্রিটের এক মেস থেকে পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে। তাঁদের বিরুদ্ধে দায়ের করা হয় ‘মুরারিপুকুর ষড়যন্ত্র মামলা’। এ মামলায় ১৯২৮ সাল পর্যন্ত দুইবছর তাঁকে মেদিনীপুর প্রেসিডেন্সি জেল, পুনার রায়েরোড়া জেল ও বম্বের রত্নগিরি জেলে কারাবাস করতে হয়।

১৯২৮ সালের শেষের দিকে তাঁর স্ত্রী পুষ্প কুন্তলার অসুস্থতার খবর পেয়ে সূর্যসেন তাকে দেখতে আসার অনুমতি প্রার্থনা করেন। এই আবেদন মঞ্জুর করা হলে তিনি জেল থেকে তিনি ছাড়া পান। কিন্তু তাঁকে নজরবন্দী রাখা হয়। বাড়ি পৌঁছার দিনে তাঁর স্ত্রী পুষ্প কুন্তলা মৃত্যুবরণ করেন। এরপর তিনি টাইফয়েডে আক্রান্ত হলেন। তিন মাস শয্যাশায়ী থাকলেন। এই সময় একজন ইংরেজ ম্যাজিস্ট্রেট রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য পরামর্শ দেন এবং এর বিনিময়ে সংসারের খরচ ব্রিটিশ সরকার চালাবে বলে জানানো হয়। সূর্যসেন এর কোনো উত্তর দেন নি। সূর্যসেনের দাদা চন্দ্রনাথ সেন বিষয়টি বিবেচনা করার জন্য ম্যাজিস্ট্রেটের কাছ থেকে সময় চেয়ে নেন। এরপর একদিন পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে যান এবং কিছুদিন আত্মগোপন করে থাকেন।

এরপর থেকে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের জন্য পরিকল্পনা করতে থাকেন। এর চূড়ান্ত রূপ লাভ করে ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ই এপ্রিলে। মোট ৬৫ জন যোদ্ধা নিয়ে প্রায় রাত দশটার দিকে আক্রমণ করে চট্টগ্রাম পুলিশ লাইনে অবস্থিত অস্ত্রাগার দখল করেন। এই সময় তাঁদের পরনে ছিল সেনাবাহিনীর পোষাক। তাঁরা ব্যবহার করেছিলেন কয়েকটি রিভলবার এবং সাধারণ বন্দুক। অস্ত্রাগার ভেঙে তাঁরা মাস্কেট্রি রাইফেল, রিভলবার এবং কার্তুজ লাভ করেন। এই আক্রমণের শুরুতেই তাঁরা টেলিফোন লাইন কেটে দিয়েছিলেন। ফলে আক্রমণের সময়, ব্রিটিশ পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা শহরের অন্য প্রান্তের সৈন্যদের কাছে এই আক্রমণের যথার্থ সংবাদ পাঠাতে ব্যর্থ হয়। এইউ সময় বিপ্লবীরা এত দ্রুত আক্রমণ করে দখল করে নেয় যে, সার্জেন্ট ব্লাকবার্ন, কলোন, সার্জেন্ট মেজর ফেরেল-সহ অনেক অফিসার প্রতিরোধ করার আগেই মৃত্যুবরণ করেন। এই মামলায় ইন্ডিয়ান পেনাল কোড ১২১/১২১এ ধারা অনুযায়ী স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল ১৪ আগষ্ট ১৯৩৩ সালে মামলার রায় ঘোষনা করে। এবং ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দের ১২ জানুয়ারিতে তাঁর ফাঁসি কার্যকর করা হয়। অস্তমিত হয় এক ইতিহাস।

মাষ্টার দা সূর্যসেন চিরজীবী হোন।
মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগে তিনি সহযোদ্ধাদের উদ্দেশ্যে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন।

আমার শেষ বাণী – আদর্শ ও একতা। ফাঁসির রজ্জু আমার মাথার উপর ঝুলছে। মৃত্যু আমার দরজায় করাঘাত করছে। মন আমার অসীমের পানে ছুটে চলছে। এই তো আমার সাধনার সময়। এই তো আমার বন্ধু রূপে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার সময়, হারানো দিনগুলোকে নতুন করে স্মরণ করার এই তো সময়।

কত মধুর তোমাদের সকলের স্মৃতি। তোমরা আমরা ভাই-বোনেরা তোমাদের মধুর স্মৃতি বৈচিত্র্যহীন আমার এই জীবনের একঘেয়েমিকে ভেঙে দেয়। উৎসাহ দেয় আমাকে। এই সুন্দর পরম মুহূর্তে আমি তোমাদের জন্য দিয়ে গেলাম স্বাধীন ভারতের স্বপ্ন। আমার জীবনের এক শুভ মুহূর্তে এই স্বপ্ন আমাকে অনুপ্রাণিত করেছিল। জীবনভর উৎসাহভরে ও অক্লান্তভাবে পাগলের মতো সেই স্বপ্নের পেছনে আমি ছুটেছি। জানি না কোথায় আজ আমাকে থেমে যেতে হচ্ছে। লক্ষ্যে পৌঁছানোর আগে মৃত্যুর হিমশীতল হাত আমার মতো তোমাদের স্পর্শ করলে তোমরাও তোমাদের অনুগামীদের হাতে এই ভার তুলে দেবে, আজ যেমন আমি তোমাদের হাতে তুলে দিয়ে যাচ্ছি। আমরা বন্ধুরা – এগিয়ে চল, এগিয়ে চল – কখনো পিছিয়ে যেও না। পরাধীনতার অন্ধকার দূরে সরে যাচ্ছে। ঐ দেখা যাচ্ছে স্বাধীনতার নবারুণ। কখনো হতাশ হয়ো না। সাফল্য আমাদের হবেই। ভগবান তোমাদের আশীর্বাদ করুন।

১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ই এপ্রিলের চট্টগ্রাম ইস্টার বিদ্রোহের কথা কোনো দিনই ভুলে যেও না। জালালাবাদ, জুলখা, চন্দননগর ও ধলঘাটের সংগ্রামের কথা সব সময় মনে রেখো। ভারতের স্বাধীনতার বেদিমূলে যেসব দেশপ্রেমিক জীবন উৎসর্গ করেছেন, তাঁদের নাম রক্তাক্ষরে অন্তরের অন্তরতম প্রদেশে লিখে রেখো।

আমাদের সংগঠনে বিভেদ না আসে– এই আমার একান্ত আবেদন। যারা কারাগারের ভেতরে ও বাইরে রয়েছে, তাদের সকলকে জানাই আমার আশীর্বাদ। বিদায় নিলাম তোমাদের কাছ থেকে।

বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক বন্দেমাতরম্।
চট্টগ্রাম কারাগার, ১১ জানুয়ারি ১৯৩৪ সকাল ৭টা।
তথ্যসূত্র: অন্তর্জাল।

যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে … স্বাধীনতার পতাকা হাতে সাম্য মুক্তির জন্য যাঁরা লড়ছেন কাজ করছেন – তাঁদের চেতনায় মাস্টারদা সূর্যসেন অমর হোন চিরজীবী থাকুন। জন্ম বার্ষিকীর এই দিনে জানাই শ্রদ্ধাঞ্জলি।

অশ্রুজলে সিক্ত যে সুর বাণী

ধন ধান্য পুষ্পে ভরা, আমাদের এই বসুন্ধরা
তাহার মাঝে আছে দেশ এক সকল দেশের সেরা
ও সে স্বপ্ন দিয়ে তৈরী সে দেশ স্মৃতি দিয়ে ঘেরা।

এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি,
সকল দেশের রানী সে যে আমার জন্মভূমি,
সে যে আমার জন্মভূমি, সে যে আমার জন্মভূমি।।

চন্দ্র সূর্য গ্রহ তারা, কোথায় এমন উজল ধারা,
কোথায় এমন খেলে তড়িৎ, এমন কালো মেঘে
তারা পাখির ডাকে ঘুমিয়ে পড়ে, পাখির ডাকে জাগে।।

এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি,
সকল দেশের রানী সে যে আমার জন্মভূমি,
সে যে আমার জন্মভূমি, সে যে আমার জন্মভূমি।।

পুষ্পে পুষ্পে ভরা শাখি, কুঞ্জে কুঞ্জে গাহে পাখি
গুঞ্জরিয়া আসে অলি পুঞ্জে পুঞ্জে ধেয়ে।
তারা ফুলের উপর ঘুমিয়ে পড়ে ফুলের মধু খেয়ে।

এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি,
সকল দেশের রানী সে যে আমার জন্মভূমি,
সে যে আমার জন্মভূমি, সে যে আমার জন্মভূমি।।

ভায়ের মায়ের এত স্নেহ, কোথায় গেলে পাবে কেহ
ও মা তোমার চরণ দুটি বক্ষে আমার ধরি,
আমার এই দেশেতে জন্ম যেন এই দেশেতে মরি।

এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি,
সকল দেশের রানী সে যে আমার জন্মভূমি,
সে যে আমার জন্মভূমি, সে যে আমার জন্মভূমি।।

—- দ্বিজেন্দ্রলাল রায়।

httpv://youtu.be/aH__jf36sl0

কেন সমাজতন্ত্র ?

সমাজতন্ত্রের পক্ষে বিশ্বখ্যাত প্রগতিশীল বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইনের লেখা … অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিষয়ে অদক্ষ কারো কি সমাজতন্ত্র বিষয়ে ধারণার প্রকাশ করা উচিত? অনেকগুলি কারণে আমি মনে করি করা উচিত।

প্রথমত, প্রশ্নটিকে বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা যাক। এটা মনে হতেই পারে যে, জ্যোতির্বিদ্যা এবং অর্থনীতির মধ্যে পদ্ধতিগত কোনো পার্থক্য নেইঃ উভয় বিষয়ের বিজ্ঞানীরা সাধারণভাবে নির্দিষ্ট কিছু ঘটনার ব্যাখ্যার্থে গ্রহণযোগ্য কতগুলি সুত্র আবিষ্কারের চেষ্টা করেন, যাতে এই সব ঘটনাগুলির পারস্পরিক সম্বন্ধের ব্যাপারগুলি বোঝা যায়। কিন্তু আসলে এদের মধ্যে পদ্ধতিগত অনেক পার্থক্য বিদ্যমান। অর্থনীতির ক্ষেত্রে সাধারণ সুত্র আবিষ্কার অনেক কঠিন কারণ অর্থনৈতিক ঘটনাসমূহ প্রায়শই এত বেশি নিয়ামক দ্বারা প্রভাবিত হয় যে তাদেরকে আলাদাভাবে পরিমাপ করা যায় না। তাছাড়া মানব ইতিহাসের তথাকথিত সভ্যপর্যায়ের শুরু হতে আজ পর্যন্ত যে অভিজ্ঞতা সঞ্চিত হয়েছে, তা এমন কিছু নিয়ামকের দ্বারা নির্ধারিত ও প্রভাবিত যেগুলি কোনোভাবেই স্রেফ অর্থনৈতিক নয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ইতিহাসের বেশিরভাগ জাতি তার অস্তিত্বের জন্য যুদ্ধজয়ের উপর ঋণী। বিজয়ী জনগোষ্ঠী আইনগত এবং অর্থনৈতিকভাবে বিজিত দেশের সুবিধা ভোগকারী অবস্থানে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে। নিজেদের জন্য সৃষ্টি করেছে ভূ-সম্পত্তির উপর একচেটিয়া অধিকার এবং স্ব-শ্রেণী হতে যাজক সম্প্রদায়কে নিয়োগ করেছে। এই যাজক সম্প্রদায় শিক্ষাব্যবস্থাকে কব্জা করার মাধ্যমে সামাজিক শ্রেণীভাগকে একটি স্থায়ী প্রতিষ্ঠানের রূপ দিয়েছে এবং এমন এক মূল্যবোধের প্রতিষ্ঠা করেছে যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অসচেতনভাবেই মানুষের সামাজিক আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করেছে।

কিন্তু ঐতিহাসিক ভাবে আমরা বিগতকালের কথাই বলি, আমরা কোনোভাবেই মানব প্রবৃত্তির উন্নয়নের সেই স্তর থেকে বের হয়ে আসতে পারিনি যাকে থোর্স্টেইন ভেব্লেন “the predatory phase” বলে আখ্যায়িত করেছেন। যত ধরণের অর্থনৈতিক ঘটনাসমূহ প্রত্যক্ষ হয় সবই এই কালের এবং এর থেকে প্রাপ্ত সুত্র সমূহ কালান্তরে গ্রহণযোগ্য নয়। যেহেতু সমাজতন্ত্রের আসল উদ্দেশ্য হলো মানব উন্নয়নের এই predatory phase কে সম্পূর্ণভাবে অতিক্রম করে এগিয়ে যাওয়া, তাই বর্তমানের অর্থনৈতিক বিজ্ঞান ভবিষ্যতের সমাজতান্ত্রিক সমাজকে খুব বেশি স্পষ্ট করতে পারে না।

দ্বিতীয়ত, সমাজতন্ত্র মূলত সামাজিক-নৈতিক একটি পরিণতির দিকে উদ্দিষ্ট। বিজ্ঞান কোনোভাবেই কোনো পরিণতির সৃষ্টি করে না, এমনকি ধীরে ধীরে সঞ্চারিতও করতে পারেনা, বড়জোড় পরিণতিতে পৌছানোর জন্য উপাদানের যোগান দিতে পারে। কিন্তু এই পরিণতিসমূহ কল্পিত হয় সুউচ্চ নৈতিক আদর্শের কিছু ব্যাক্তির দ্বারা। আর যদি এসব অপরিহার্য ও প্রচন্ড পরিণতিগুলি ইতোমধ্যে অর্জিত না হয়ে থাকে তবে,কিছু মানুষ এগুলোকে আত্মস্থ করে এবং সামনের দিকে নিয়ে যায়। এসব মানুষেরাই সমাজের সুস্থির বিবর্তনকে অর্ধসচেতন ভাবে নিয়ন্ত্রণ করে।

এসব কারণেই আমাদেরকে খেয়াল রাখতে হবে যতে মানবিক সমস্যার ক্ষেত্রে বিজ্ঞান ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিসমূহকে অতিশায়িত করা না হয় এবং এটা মনে করা উচিত নয় যে শুধু মাত্র সুদক্ষ লোকেরাই সামাজিক প্রতিষ্ঠানকে প্রভাবিতকারী বিষয়াদি নিয়ে বক্তব্য দেয়ার আধিকার রাখে।

অনেকদিন ধরেই অসংখ্য মানুষ এই দাবি করে আসছেন যে সমাজ একটা সংকটের মধ্যে দিয়ে পার হচ্ছে, সমাজের স্থিরতা বা ভারসাম্য প্রচণ্ডভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে গেছে। এটা এমন এক সময়ের বৈশিষ্ট যেখানে প্রত্যেক মানুষ তার সম্প্রদায় বা সংগঠনের প্রতি উদাসীন এবং ক্ষেত্র বিশেষে বৈরী হয়ে উঠে। আমার কথাকে বোঝানোর জন্য আমার ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতার উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। সম্প্রতি আমি একজন বুদ্ধিমান ও বিদ্বান মানুষের সাথে আরেকটা যুদ্ধের সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলছিলাম। আমার মত ছিলো যে, আরেকটা যুদ্ধ মানুষের অস্তিত্বকে মহাসংকটে ফেলে দেবে এবং এই মন্তব্য করেছিলাম যে শুধুমাত্র কোনো আন্তর্জাতিক মহাসংস্থাই পারে এই মহাবিপদ থেকে সুরক্ষা দিতে। তখন ঐ ব্যাক্তি বলে উঠলেন, “মানবজাতির পরিণতি ধ্বংস, এটা থেকে আপনি এত বিপরীতে কেন?”।

আমি নিশ্চিত যে মাত্র এক শতাব্দী বা তারও কম সময় আগে কেউ এ ধরণের কোনো মন্তব্যই করতে পারতো না। যারা নিজের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে ব্যর্থ এবং সফল হবার কোনো আশাই রাখেন না তারাই এ ধরণের মন্তব্য করেন। এর উৎস এমন এক ধরণের বিষাদ পূর্ণ একাকীত্ব ও বিচ্ছিন্নতা যাতে এ সময়ের বেশির ভাগ মানুষই ভুগছে। এর কারণ কি? এর থেকে মুক্তির কোনো উপায় কি আছে?

এ ধরণের প্রশ্ন উত্থাপন করা সহজ হলেও কোনো প্রকার নিশ্চয়তার সাথে এর উত্তর দেয়া কঠিন। যদিও আমি এটা সম্বন্ধে অবগত যে আমাদের চিন্তা ও চেষ্টাগুলো প্রায়শই অসংগতিপূর্ণ এবং অস্পষ্ট, তাদেরকে সহজ ও সাধারণ সুত্রের সাহায্যে প্রকাশ করা যায় না তবুও আমি আমার যথাসাধ্য চেষ্টা করবো।

মানুষ হলো একই সাথে বিচ্ছিন্ন ও সামাজিক। বিচ্ছিন্নভাবে সে নিজের ও তার আশেপাশের সবার অস্তিত্বকে রক্ষা করার চেষ্টা করে, নিজের ব্যক্তিগত ইচ্ছাগুলোকে পূরণ করার চেষ্টা করে, তার সহজাত সামর্থ্যের উন্নয়ন করে। আর সামাজিকভাবে সে তার আশেপাশের মানুষের স্বীকৃতি ও সম্প্রীতি লাভের চেষ্টা করে, তাদের সাথে আনন্দকে ভাগ করার চেষ্টা করে, তাদের দুঃখ লাঘবের চেষ্টা করে এবং তাদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের চেষ্টা করে। শুধুমাত্র এসব বিবিধ পারস্পরিক বিরোধপূর্ণ প্রচেষ্টার মধ্য দিয়েই মানুষের বিশেষ চরিত্র গড়ে উঠে। আর এসবের বিশেষ সন্নিবেশ নির্ধারিত করে একজন মানুষ তার অভ্যন্তরের ভারসাম্য কি মাত্রায় অর্জন করতে পারবে, সমাজের কল্যাণে কতটুকু অবদান রাখতে পারবে। এটা খুবই সম্ভব যে এই দুই পৃথক প্রচেষ্টার আপেক্ষিক শক্তি জন্মসূত্রে নির্ধারিত হতে পারে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যে ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটে তা বহুলাংশে তৈরী হয় মানুষ যে পরিবেশে বেড়ে উঠে তার দ্বারা, সে যে সমাজে বেড়ে উঠে তার কাঠামোর দ্বারা, ঐতিহ্যের দ্বারা, এবং কিছু নির্দিষ্ট বিষয়ের মূল্যায়নের মাধ্যমে। “সমাজ”এর বিমূর্ত ধারণাটি একজন ব্যক্তির কাছে তার সমসাময়িক ও পূর্বতন সবকিছুর সাথে তার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সম্পর্কের সমষ্টি। ব্যক্তি নিজে নিজে চিন্তা-চেষ্টা-অনুভব করতে পারে ও কাজ করতে পারে কিন্তু তার শারীরিক, বৌদ্ধিক ও আবেগিক অস্তিত্বের জন্য সমাজের উপর এত বেশি নির্ভর করে যে, সামাজিক কাঠামোর বাইরে তাকে চিন্তা করা বা বোঝা সম্ভব নয়। সমাজই তাকে সারা জীবন ধরে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, যন্ত্রপাতি, ভাষা, চিন্তার পদ্ধতি ও চিন্তার বিষয়ের যোগান দেয়; তার জীবন ধারণ সম্ভব হয় অতীত ও বর্তমানের নিযুত-লক্ষের শ্রমের দ্বারা যারা এই “সমাজ” নামের ছোট শব্দের পেছনে উহ্য।

ফলে এটা নিশ্চিত যে, সমাজের উপর নির্ভরতা প্রকৃতিতে পিঁপড়া ও মৌমাছির জন্য যেমন সত্য ও অলঙ্ঘ্য, তেমনি মানুষের ক্ষেত্রেও। পিঁপড়া ও মৌমাছির ক্ষেত্রে তাদের সমগ্র জীবন প্রক্রিয়াকে সুক্ষ্ণতম ভাগ পর্যন্ত বিশ্লেষণ করা যায় কিছু নির্দিষ্ট, জন্মসূত্রে প্রাপ্ত সহজাত প্রবৃত্তির মাধ্যমে আর মানুষের ক্ষেত্রে সামাজিক বিন্যাস আর পারস্পরিক সম্পর্কগুলি নির্দিষ্ট নয় এবং পরিবর্তনশীল। নতুন নতুন কল্পনার সৃষ্টিকারী মানুষের মস্তিষ্ক, ভাষিক যোগাযোগের আশীর্বাদের ফলে এমন উন্নয়নের সম্ভব হয়েছে যা জৈবিক প্রয়োজনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এই উন্নয়ন সুচিত হয় ঐতিহ্য, প্রতিষ্ঠান, সম্প্রদায়, ভাষা, বৈজ্ঞানিক ও প্রকৌশল অর্জনসমূহ এবং শিল্পকর্ম সমূহের দ্বারা। এভাবে বোঝা যাচ্ছে মানুষ কিভাবে তার জীবনকে নিজের কর্মের দ্বারা প্রভাবিত করে এবং এই প্রক্রিয়ায় সচেতন চিন্তা-চাহিদার ভূমিকা রয়েছে।

মানুষ জন্মের সময় উত্তরাধিকারসূত্রে যে শরীরতন্ত্র লাভ করে আমরা একে অবশ্যই অপরিবর্তনীয় ধরে নেবো এমনকি বিভিন্ন জৈবিক তাড়নাসমূহ যা মনুষ্য প্রজাতির বৈশিষ্ট্য। সেই সাথে তার জীবদ্দশায় সে লাভ করে মননতন্ত্র, যা সে আয়ত্ত করে সমাজের সাথে তার যোগাযোগ ও অন্য ধরণের প্রভাবের মাধ্যমে। এই মননই সময়ের সাথে পরিবর্তিত হয় এবং অনেকাংশে সমাজের সাথে ব্যক্তির সম্পর্ককে নির্ধারণ করে। আদিম রীতি-পদ্ধতি সমূহের তুলনামূলক অনুসন্ধানের মাধ্যমে আধুনিক নৃবিদ্যা আমাদের জানিয়েছে যে, মানুষের সামাজিক আচরণ বিভিন্ন রকম হতে পারে, এবং এটা নির্ভর করে সমাজে আধিপত্যকারী সংগঠনের উপর এবং বিরাজমান সাংস্কৃতিক মননের উপর। এর ফলে যারা মানবজাতির বৃহৎ অংশের উন্নতির জন্য কাজ করে যাচ্ছেন তাদেরকে আমি আশাবাদী হতে বলবো কারণ মানব অস্তিত্বকে বাতিল ঘোষণা করা যায় না, নিজের শারীরিক অস্তিত্বের জন্য হলেও নিজেরা একে অপরকে হত্যা করবে না অথবা নিজেকে ধ্বংস করার মত নির্মম পরিস্থিতির সৃষ্টি করবে না।

যদি আমরা নিজেদের প্রশ্ন করি যে, জীবনকে আরামদায়ক করার জন্য এই সামাজিক কাঠামো এবং মানুষের সাংস্কৃতিক আচরণ কিভাবে পরিবর্তিত হবে, আমাদের সবসময় কিছু বিষয় সম্বন্ধে সচেতন থাকতে হবে কারণ কিছু কিছু নিয়ামক আমরা কখনোই বদলাতে পারি না। আগেই বলা হয়েছে যে জৈবিক গঠনতন্ত্রের কোন কিছুই কোন ব্যবহারিক কারণেই পরিবর্তন করা যায় না। উপরন্তু বিগত কয়েক শতাব্দী ধরে সংগঠিত প্রযুক্তি ও জনসংখ্যায় যে পরিবর্তনের ফলেও যে অবস্থার তৈরী হয়েছে তা টিকে থাকবে। তুলনামূলকভাবে ঘনবসতিপূর্ণ স্থানে কোন জনগোষ্ঠীকে যদি অপরিহার্য দ্রব্য সামগ্রী নিয়ে তাদের অস্তিত্ব রক্ষা করতে হয় তাহলে এক ধরণের উৎপাদন যন্ত্র কেন্দ্রিক শ্রমবিভাগ আবশ্যক। সে অলস সময়ের অবসান ঘটেছে যখন ছোট গোষ্ঠীগুলোও নিজেরা স্বয়ংসম্পূর্ণ ছিলো। এটা খুব বেশি বাড়িয়ে বলা হবে না যে, মানবজাতির আজ তৈরী হয়েছে সমগ্র গ্রহজুড়ে উৎপাদক শ্রেণী ও ভোক্তাশ্রেণী।

এ পর্যায়ে আমি এখন সংক্ষেপে বলতে পারি এই সংকটের মূল ব্যাপারটা আমার কাছে কি মনে হয়? এ সংকট ব্যক্তির সাথে সমাজের সম্পর্কের সাথে জড়িত। ব্যক্তি অন্য যেকোন সময়ের তুলনায় সমাজের উপর তার নির্ভরশীলতার ব্যাপারে অনেক বেশি সচেতন। কিন্তু সে এই নির্ভরশীলতাকে অস্তিবাচক সম্পদ হিসেবে দেখে না, জৈবিক বন্ধন ভাবে না, রক্ষাকারী শক্তি মনে হয় না বরং তার স্বাভাবিক অধিকার ও অর্থনৈতিক অস্তিত্বের প্রতি হুমকি মনে করে। সমাজে তার এমন অবস্থান তৈরী হয় যে, তার ইগোকেন্দ্রিক আকাঙ্ক্ষাগুলো সবসময় তুঙ্গে থাকে আর তার সামাজিক তাড়নাগুলি স্বাভাবিকভাবেই থাকে দুর্বল আর আস্তে আস্তে কমতে থাকে। মানুষ সমাজের যে স্তরেই থাকুক না কেন দিনে দিনে এই ক্রমহ্রাসমান প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। নিজের ইগোর জালে অনিচ্ছাকৃতভাবে বন্দী হয়ে মানুষ নিরাপত্তাহীনতা অনুভব করে, একাকীত্ব লাভ করে আর জীবনের সহজ, স্বাভাবিক ও সাবলীল আনন্দলাভ থেকে বঞ্চিত হয়। মানুষ শুধুমাত্র সমাজের প্রতি আত্মনিবেদনের মাধ্যমেই ক্ষুদ্র ও ঝঞ্ঝাপূর্ণ জীবনের মানে খুঁজে বের করতে পারে।

আমার মতে সকল প্রকার অশুভের উৎস হলো আজকের পুঁজিবাদী সমাজে বিদ্যমান অর্থনৈতিক বৈষম্য। আমরা আমাদের সামনে দেখতে পাই এক বিশাল উৎপাদক শ্রেণী যারা তাদের যৌথ শ্রমের ফল থেকে পরস্পরকে বঞ্চিত করতে অবিরাম চেষ্টা করছে, শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে নয়, বরং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠিত আইনের মাধ্যমে। এ প্রসঙ্গে এটা বোঝা গুরুত্বপূর্ণ যে, উৎপাদনের উপায় তথা ভোক্তাপণ্য উৎপাদনের জন্য যে সামগ্রিক উৎপাদক যন্ত্র ও মূলধন জাতীয় দ্রব্যের প্রয়োজন তা আইনিভাবে অধিকাংশেই মানুষের ব্যক্তিগত সম্পত্তি।

আলোচনার সুবিধার্থে এখন থেকে আমি যাদের উৎপাদনের উপায়ের উপর মালিকানা নেই তাদেরকে “শ্রমিকশ্রেণী” বলে আখ্যায়িত করব, যদিও এই শব্দটির যথার্থ প্রায়োগিক জায়গা নয়। উৎপাদনের উপায়ের উপর যার মালিকানা থাকে সে শ্রমিকের শ্রমকে কিনে নেয়ার মত অবস্থানে থাকে। উৎপাদনযন্ত্রে শ্রমিক নতুন দ্রব্য তৈরী করে যা পুঁজিবাদীর সম্পত্তিতে পরিণত হয়। এখানে ধর্তব্য হলো শ্রমিকের উৎপন্ন দ্রব্য ও তার মজুরির মধ্যে প্রকৃত মূল্যে নির্ণায়িত সম্পর্কের ব্যাপারটি। যেহেতু শ্রমচুক্তির ব্যাপারটি “বিনামূল্যে” নির্ধারিত হয়, তাই শ্রমিক যা গ্রহণ করে তা প্রকৃত মূল্যে নির্ণায়িত নয় বরং তার ন্যূনতম প্রয়োজন এবং পুঁজিপতির প্রয়োজন এবং শ্রমের যোগানের উপর নির্ভর করে। আমাদের অবশ্যই এটা বোঝা দরকার যে, শ্রমিকের মজুরি তার উৎপাদিত দ্রব্যের মূল্য অনুযায়ী নির্ধারিত নয়।

ব্যক্তিগত সম্পত্তি অল্প কিছু ব্যক্তির কুক্ষিগত হতে থাকে। এর কারণ অংশত পুঁজির প্রতিযোগিতা ও প্রযুক্তিগত উন্নয়ন। ক্রমবর্ধিষ্ণু শ্রমবিভাগের ফলে ছোট ছোট উৎপাদন ইউনিটের জায়গায় বড় বড় ইউনিট গড়ে উঠে। এর ফলে তৈরী হয় এমন এক ব্যবস্থা যেখানে মূলধন জড়ো হতে থাকে সীমিত কিছু ব্যক্তির কাছে এবং এই শক্তিকে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সমাজের দ্বারা আর নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। এটা অত্যন্ত স্পষ্ট কারণ নিজেদের প্রয়োজনেই পুঁজিপতিরা নির্বাহী বিভাগকে নির্বাচনের দ্বারা আলাদা রেখে, রাজনৈতিক দলগুলিকে আর্থিক ভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করে, প্রভাবিত করে এবং এদের মধ্যে থেকেই আবার বিভিন্ন নির্বাহী প্রতিনিধি নিয়োগ করে। এর পরিণতি হলো সমাজের এই সব প্রতিনিধিরা সুবিধাবঞ্চিত শ্রেণীর স্বার্থ যথেষ্ট পরিমাণে রক্ষা করতে পারেনা। আর এ অবস্থায় এই সব পুঁজিপতিরাই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সকল প্রকার প্রধান সংবাদ মাধ্যমকে, তথ্য উৎসকে নিয়ন্ত্রণ করে যেমন প্রেস, রেডিও, শিক্ষা। এর ফলে একজন ব্যক্তির পক্ষে নৈর্ব্যক্তিক উপসংহারে উপনীত হওয়া বা তার রাজনৈতিক অধিকার সমূহের সঠিক ব্যবহার দুষ্কর এবং কিছু ক্ষেত্রে অসম্ভব হয়ে পড়ে।

মূলধনের উপর ব্যক্তিগত মালিকানার ধারণা কেন্দ্রিক এই অর্থনীতির বিরাজমান অবস্থাকে দুটি মূল নীতির দ্বারা সুচিত করা যায়ঃ প্রথমত উৎপাদনের উপায় (মূলধন) ব্যক্তিগত মালিকানায়, মালিকেরা নিজের ইচ্ছামতো এর বিনিময় করে এবং দ্বিতীয়ত বিনামূল্যের শ্রমচুক্তি। অবশ্য এর ফলে প্রকৃতপক্ষে বিশুদ্ধ পুঁজিবাদী সমাজ বলতে কোন কিছু নেই। এটা বোঝা উচিত যে, শ্রমিকশ্রেণীকে তিক্ত রাজনৈতিক সঙ্ঘাতের মধ্য দিয়ে কিছু শ্রেণীর শ্রমিকের জন্য “বিনামূল্যের শ্রমচুক্তির” চেয়ে ভালো কোনো অবস্থায় পৌছে গেছে। তবে মোটের উপর এই অবস্থা “বিশুদ্ধ” পুঁজিবাদ থেকে খুব বেশি পৃথক নয়।

উৎপাদন করা হয় মুনাফার জন্য, চাহিদা অনুযায়ী নয়। এমন কোনো ব্যবস্থা নেই যে সমর্থ ও ইচ্ছুক ব্যক্তিদের জন্য সব সময় কর্মসংস্থানের সযোগ রয়েছে, একটা বিশাল “বেকার জনতা” সব সময়ই পাওয়া যায়। একজন শ্রমিক সব সময় তার কাজ হারানোর ভয়ে থাকে। যেহেতু বেকার এবং নিম্ন আয়ের শ্রমিকেরা মুনাফা জনক বাজারের তৈরী করে না তাই ভোক্তা দ্রব্যের উৎপাদন সীমিত আকারে ঘটে যার ফলাফল বিপুল দুর্ভোগ। প্রযুক্তিগত উন্নয়ন প্রায়শই সকলের শ্রমের বোঝা কমানোর চেয়ে বেশি করে বেকারত্বের সৃষ্টি করে। মূলধনের বন্টন ও সুষ্ঠ ব্যবহার না হবার ফলে যে ক্রমবর্ধমান হতাশার উদ্রেক হচ্ছে তার জন্য দায়ী হলো মুনাফাকেন্দ্রিক চিন্তা আর সেই সাথে পুঁজিপতিদের মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতা। এই অসীম প্রতিযোগিতার ফলে ঘটে শ্রমের বিরাট অপচয় ও সামাজিক সচেতনতার প্রতি ব্যক্তির অনীহা যা আমি আগেই উল্লেখ করেছি।

ব্যক্তিমানুষের এই অনীহাকে আমি পুঁজিবাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা মনে করি। সম্পূর্ণ শিক্ষাব্যবস্থা এই সমস্যা ভোগ করে। এক ধরণের অতিশায়িত প্রতিযোগিতামূলক ভীতি একজন ছাত্রের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়া হয়, তাকে ভবিষ্যত জীবনের জন্য অর্জিত সাফল্যের সাধনার শিক্ষা দেয়া হয়।

আমি মনে করি এই সব ভয়াবহ সমস্যার দূর করা সম্ভব সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির প্রতিষ্ঠা ও একই সাথে এমন এক শিক্ষা ব্যবস্থার বিকাশ যার উদ্দিষ্ট হবে সামাজিক লক্ষ্যসমূহ অর্জনের দিকে। এ ধরণের ব্যবস্থায় উৎপাদনের উপায় সমূহের মালিকানা থাকবে সমাজের হাতে এবং উপযোগের ব্যবহার ঘটবে সুষ্ঠু। একটি পরিকল্পিত অর্থনীতি যা উৎপাদনের সাথে সমাজের চাহিদার সমন্বয় সাধন করে, সকল কর্মক্ষম মানুষের মধ্যে সঠিকভাবে কাজের বন্টন করবে এবং প্রত্যেক নর নারী ও শিশুর জীবন নির্বাহ নিশ্চিত করবে। প্রত্যেক ব্যক্তির শিক্ষা তার সহজাত প্রবৃত্তির উন্নয়নের পাশাপাশি সমাজে ক্ষমতা ও সাফল্যের জায়গায় এক ধরণের দায়িত্ব বোধ তৈরী করবে।

এটা খেয়াল রাখতে হবে যে পরিকল্পিত অর্থনীতির মানেই সমাজতন্ত্র নয়। পরিকল্পিত অর্থনীতি ব্যক্তির দাসত্বের মধ্য দিয়েও অর্জিত হতে পারে। সমাজতন্ত্রে উত্তরণের জন্য কয়েকটি দুরূহ সমাজ-রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান করতে হবে: কিভাবে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতার কেন্দ্রীয়করণ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে, আমলাতন্ত্রের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হওয়া ও অনিয়ন্ত্রিত অবস্থা ঠেকানো যাবে? ব্যক্তির স্বার্থ রক্ষা করে বিপরীতে কিভাবে গণতান্ত্রিক আমলাতন্ত্রের ক্ষমতা নিশ্চিত করা যায়?

সমাজতন্ত্রের লক্ষ্য ও সমস্যা সম্বন্ধে স্পষ্টতা আমাদের এই পরিবর্তনের যুগে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। যেহেতু বর্তমানে এই সমস্যা গুলি নিয়ে মুক্ত ও অবাধ আলোচনার খুব বেশি সুযোগ নেই আমি মনে করি জনকল্যাণে এই পত্রিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

মূলঃ আলবার্ট আইনস্টাইন।
লেখাটি প্রথম ১৯৪৯ সালে Monthly Review তে ছাপা হয়।
তথ্য সংগ্রাহক: প্রিয় বন্ধু অজন্তা ইলোরা।

einstain যত সুন্দর করেই আমাকে বোঝানো হোক না কেনো … সমাজতন্ত্র আমার মাথায় সঠিক মাপের যোগে ফিট খায় না। ১৯৮৯ পরবর্তী সমাজতন্ত্রের দেয়াল সচক্ষে যেভাবে ধ্বসে যেতে দেখেছি তাতে এই তন্ত্রে বিশ্বাস এবং অবিশ্বাস আমার কাছে দুটোই সমান। প্রিয় পাঠক এতক্ষণে নিশ্চয়ই বিরক্ত হয়েছেন পণ্যবাহী সর্পিল ট্রেনের মতো আমার এই পোস্ট দেখে। পড়া না হয় সামান্য দূরেই বসিয়ে রাখলাম। আমাকে ক্ষমা করবেন। কেন সমাজতন্ত্র’র এই নিবন্ধের চৌষট্টি বছর পর যদি আপনাকে এই সমাজতন্ত্র নিয়েই আপনার মতামত জানতে চাওয়া হয় আপনি কি বলবেন !!

সংবিধিবদ্ধ আশ্বাসবাণী:
মন্তব্য না করলেও ক্ষতি নেই। শুধু একটা লাইক অথবা রেটিং করলেই চলবে।

এক আকাশ অন্ধকার …

একটি মানুষের মধ্যে আমি
এক আকাশ অন্ধকার দেখেছিলাম।

কতজনের সঙ্গেই ত মিশি,
ভালবাসি, ঘৃণা করি, থাকি উদাসীন।
তারা সব টুকরো টুকরো আলো
উজ্জ্বল কি স্তিমিত।

তাদের চেনা যায়, পড়া যায়
মানেও পাওয়া যায় ছাড়াছাড়া।
তাদের সঙ্গে পরিচয় দিয়েই
জীবনের প্রাঞ্জল পুঁথি প্রতিদিন লেখা।
কিন্তু মন নিজের অগোচরে
খোঁজে সেই অনাদি আশ্চর্য অন্ধকার
সব অভিধান যেখানে অচল, সব নামতা নিরর্থক।

সেই এক আকাশ অন্ধকার
আমি পেয়েছিলাম একবার
পথে যেতে কোন এক স্টেশনের প্লাটফর্মে
দুপুর রোদে গাড়ির জন্য দাঁড়িয়ে
দুটি অতল চোখের মধ্যে।

সে পুরুষ কি নারী
কেউ যেন জানতে না চায়,
জানতে না চায় কী তার বয়স।
সে সময়ের অতীত, যৌনতার উর্দ্ধে।
তার অন্ধকার ত না-এর শূন্যতা নয়,
নীহারিকা-গর্ভ এক রহস্য-নিবিড়তা।

সত্তার গহনে এই অন্ধকার যদি লুপ্ত হয়,
আমাদের সাজানো শহর
আর সফল জীবন ত শুধু
পরিসংখ্যানের অঙ্ক।

এত খণ্ড খণ্ড আলোর জটলায়,
এত মাপজোকের দুনিয়ায়
সেই অন্ধকার বয়ে বেড়াবার মানুষ
কি সব ফুরিয়ে গেল!

একটি মানুষের মধ্যে আমি
এক আকাশ অন্ধকার দেখেছিলাম।


প্রেমেন্দ্র মিত্র স্মরণে।

Web Counter

শতবর্ষ পেরিয়ে নারীদিবস এবং আজকের নারী: রণদীপম বসু

এক.
মানবসভ্যতার সেই লজ্জাকর মুহূর্তে নারী যখন সর্বগ্রাসী ধর্মীয় মৌলবাদী পুরুষতন্ত্রের হাতে এক ব্যবহারযোগ্য ভোগ্যপণ্য হিসেবে শৃঙ্খলিত হলো, সেই থেকে নারীসত্তা তার শৃঙ্খল ভাঙার অবদমিত ইচ্ছাকে লালন করে আসছে হাজার হাজার বছর ধরে। পুরুষতন্ত্রের সেই আদিম ও আরোপিত ফাঁস থেকে নারীর আজো বেরিয়ে আসা সম্ভব হয়নি। তাকে বেরিয়ে আসতে দেয়া হয়নি। কেননা প্রচলিত সভ্যতা ও সংস্কৃতির গোটা প্রক্রিয়া ও কাঠামোটাই এই মৌলবাদী পুরুষতন্ত্র এক প্রতারণামূলক ধর্মতাত্ত্বিক বিটুমিন দিয়ে নিজের অনুকূলে ঢালাই করে নিয়েছে সুকৌশলে। প্রতিনিয়ত অসভ্য প্রহরায় রাখা সেই ঢালাই ভাঙা তো চাট্টিখানি কথা নয়।

পুরুষ নামের প্রাণীরা নিজেদেরকে মানুষ ভাবলেও ঘরে ঘরে যাদের সাথে সংসার করে আসছে শত শত বছর ধরে, সেই নারীও যে তার মতোই মানুষ এবং মানবিক অস্তিত্ব হিসেবে মানবসভ্যতায় সমসঙ্গি পুরুষের সমান সুযোগ ও মর্যাদা পাওয়ার অধিকার ধারণ করে, তা বোঝাতে এবং পাওয়ার দাবীতে এই নারীকে ঘর ছেড়ে এক অনিশ্চিত আন্দোলনের রাস্তায় নামতে হয়। এটাই মানবেতিহাসের বহমান এক লজ্জার গাথা। মায়ের অভিন্ন গর্ভে একই পিতার ঔরসে জন্মানো ছেলেটির মতোই যে মেয়েটিরও জন্ম হলো, ছেলেটি পুরুষ হয়ে ওঠে আর সেই মেয়েটিকে বানানো হয় নারী। নারীবাদী লেখিকা সিমোন দ্য বোভোয়া তার ‘দ্বিতীয় লিঙ্গ’ গ্রন্থে তাই বলেন – ‘নারী হয়ে কেউ জন্ম নেয় না, নারী হয়ে ওঠে।’ পুরুষশাসিত এই সভ্যতায় পুরুষরা স্বঘোষিত মানুষই হয়। কিন্তু নারীকে সাংস্কৃতিকভাবে এমন এক অদ্ভুত অস্তিত্ব বানিয়ে তৈরি করা হয়, শুধু সম্মানের সাথে ভোগ করার বেলায় পুরুষ তাকে আদর করে মানুষ বলে ডাকে। কিন্তু অধিকার ও মর্যাদার প্রশ্নে পুরুষ নারীকে তার সমকক্ষ হিসেবে স্বীকার তো করেই না, উপরন্তু শারীরিক, মানসিক, আধ্যাত্মিক ও বস্তুগত বৈষম্যের দৃশ্যমান ও অদৃশ্য দেয়াল তুলে তাকে বুঝিয়ে দিতেও কসুর করে না যে নারী একটি দ্বিতীয় শ্রেণীর ভোগ্যপণ্য বস্তু বা প্রাণীবাচক অস্তিত্ব কেবল। তার নিজস্ব কোন স্বপ্ন, কল্পনা, চাওয়া থাকতে পারে না। তার নিয়ন্ত্রণকারী হচ্ছে পুরুষ এবং পুরুষের চাওয়াই তার চাওয়া। কিন্তু পুরুষের পাওয়া তার পাওয়া নয়। সেভাবেই পুরুষ সৃষ্টি করেছে সংসার, সমাজ, রাষ্ট্র, ধর্ম ও যাবতীয় তত্ত্ব। এর স্বত্ব ও বৈধতাও পুরুষ রেখেছে নিজের অধিকারেই। এই স্বয়ম্ভু স্বার্থপর পুরুষ সত্ত্বা আসলে কোনো মানবিক পুরুষ সত্ত্বা নয়, এক সর্বগ্রাসী দানবিক পুরুষতন্ত্র তা।

তাই সম-অধিকারের প্রশ্নে নারীর যে আন্দোলন সংগ্রাম, তা পুরুষের বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ নারীর বিদ্রোহ নয়, বরং এক অবৈধ পৈশাচিক পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে বঞ্চিত নির্যাতিত মানবতার দীর্ঘ অসম যুদ্ধ। আর তাই অনিবার্য এ যুদ্ধে অনায়াসে সামিল হয়ে যান নারী পুরুষ নির্বিশেষে মানবতাবাদী মানবহিতৈষী সকল মানুষ।

দুই.
০৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। ২০১৩ সালের এই তারিখে এসে নারী অধিকার আদায়ের সংগ্রামের বয়স আনুষ্ঠানিকভাবে একশ’ বছর এর বেশী পূর্ণ হলেও সংঘটিত আন্দোলনের অনানুষ্ঠানিক বয়স সম্ভবত দেড়শ’ বছরেরও বেশি। অথচ অবাক হয়ে ভাবতে হয়, পৃথিবীতে আর কোনো মানবিক আন্দোলনকে কি এমন দীর্ঘমেয়াদী ও চূড়ান্ত ফলাফল হীন অবস্থায় এভাবে অনিশ্চিত দূরগামী সক্রিয়তায় যুক্ত থাকতে হয়েছে ? নারী আন্দোলনের ইতিহাস এই প্রশ্নটাকে বিস্ময়ের সাথে এক অনিশ্চিত গন্তব্য নিয়ে ঝুলিয়ে রেখেছে আজো।

আন্দোলন যতো তাত্ত্বিক বা আধ্যাত্মিক পর্যায়েরই হোক না কেন, তার সূত্রপাত ঘটে প্রথমত বস্তুগত বঞ্চনার পুঞ্জিভূত ক্ষোভ থেকেই। নারীর অধিকার আদায়ের সংগ্রামও এর ব্যতিক্রম নয়।

আজ থেকে দেড়শ’ বছরেরও আগের কথা। আমাদের এই উপমহাদেশে তৎকালীন ব্রিটিশরাজের অধীনস্থ সিপাহী, আমাদের বিক্ষুব্ধ পূর্বপুরুষ, মঙ্গল পাণ্ডে ১৮৫৭ সালে শৃঙ্খল ভাঙার যে ঐতিহাসিক বিদ্রোহের সূচনা করেছিলেন, সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ রাজশক্তি এটাকে সিপাহী বিদ্রোহ বলে প্রচারণা চালালেও মূলত তা-ই ছিলো ভারত উপনিবেশে আমাদের জেগে ওঠা স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রথম অগ্নিস্ফুলিঙ্গ।

নিপীড়িত নির্যাতিত মানুষের যন্ত্রণা যে আসলেই একটা অভিন্ন আন্তর্জাতিক ভাষা, তার প্রমাণ পাই ঠিক সেই সময়কালেই অর্থাৎ ১৮৫৭ সালেই পৃথিবীর অন্যপ্রান্তে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে একটি সুঁই কারখানায় যখন নারী শ্রমিকরা দৈনিক ১২ ঘণ্টা বা তারও বেশি কর্মঘণ্টা পরিশ্রম, নিম্ন-মজুরি তথা মজুরি বৈষম্য, অমানুষিক নির্যাতন ও খাদ্যের অভাবের বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে ওঠেন। ফলশ্রুতিতে তাদের উপর নেমে আসে দমন পীড়নের প্রথাগত নির্যাতন। ৮ই মার্চের সেই ঘটনাকে বিশ্বের দেশে দেশে নিপীড়িত নারীরা কখনো ভুলে যায়নি। ভুলে যাওয়া সম্ভবও ছিলো না।

১৮৬০ সালে এই নারী শ্রমিকরাই নিজেদের দাবি আদায়ের প্ল্যাটফরম হিসেবে নিজস্ব ইউনিয়ন গঠন করেন। আর তাই অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত ভাবেই ১৮৬৮ সালে শ্রমিক শ্রেণীর সেই প্রথম আন্তর্জাতিক মঞ্চ থেকে মহামতি কার্ল মার্কস শ্রমিক শ্রেণীর সংগ্রামের সঙ্গে নারী অধিকার ও নারী মুক্তির বিষয়টিও তুলে ধরেন। তাদের প্রচেষ্টায় এর পর থেকেই নারী শ্রমিকদেরও ট্রেড ইউনিয়নের সদস্য করা শুরু হয়। ফলে ১৮৭১ সালে ফ্রান্সে প্যারি কমিউনের বিপ্লবী সংগ্রামে প্রবল সাহসিকতা নিয়ে শ্রমজীবী নারীরা অংশগ্রহণ করে দেখিয়ে দেয় সমকক্ষতায় পুরুষের চেয়ে কোন অংশেই এরা কম নয়। এভাবে এসব আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে নারীদের একটি বড় অংশের মধ্যে সমাজতান্ত্রিক ধ্যানধারণা বিস্তৃতি লাভ করতে থাকে এবং ক্রমান্বয়ে রাজনৈতিক আন্দোলন দানা বাঁধতে থাকে।

উল্লেখযোগ্য ঘটনাটি ঘটে ১৮৮৯ সালে। প্যারিসে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক মঞ্চ থেকে কমিউনিস্ট নেত্রী ক্লারা জেটকিন সর্বপ্রথম রাষ্ট্র ও সমাজজীবনের সর্বক্ষেত্রে পুরুষদের সাথে নারীর সমানাধিকারের দাবি তোলেন। আন্দোলন সংগ্রামের এই ধারাবাহিকতায় ১৯০৭ সালে জার্মানীর স্টুটগার্টে এই ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বেই প্রথম আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

১৯০৯ সালে ৮ই মার্চ নিউইয়র্কের দর্জি শ্রমিক নারীরা প্রথম নারীর ভোটাধিকারের ঐতিহাসিক দাবি তুলে ধরেন। ১৯১০ সালে কোপেনহেগেনে ১৭টি দেশের ১০০ প্রতিনিধি নিয়ে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এবং এ সম্মেলনের গৃহিত সিদ্ধান্ত আনুযায়ী ১৯১১ সাল থেকে প্রথমবারের মতো নারীদের সমানাধিকার দিবস হিসেবে ৮ই মার্চ পালিত হওয়া শুরু হয়। এ ধারা অব্যহত থাকে এবং দেশে দেশে তা ছড়িয়ে পড়তে থাকে। যতটুকু জানা যায় অবিভক্ত ভারতে ১৯৪৩ সালে বোম্বেতে প্রথম ৮ই মার্চ পালিত হয়। আর বাংলাদেশে ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ কর্তৃক প্রথম ৮মার্চ পালিত হয়।

নারী অধিকারের এই যৌক্তিক দাবিগুলোকে মাথায় রেখে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর প্রেক্ষাপটে ১৯৪৫ সালে সানফ্রান্সিসকোতে জাতিসংঘ মানুষের মৌলিক অধিকার হিসেবে জেন্ডার ইকুয়ালিটি নামের একটি আন্তর্জাতিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। সেই থেকে সদস্য দেশগুলো তা পালন করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়। আর বিশ্বব্যাপি পালিত হয়ে আসা ৮ মার্চের দিনটির গুরুত্ব অনুধাবন করে ১৯৭৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে একটি বিল উত্থাপিত হয়। নিজ নিজ দেশের ঐতিহাসিক জাতীয় ঐতিহ্য ও প্রথার আলোকে মহিলাদের অধিকার ও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জাতিসংঘ এই দিনটিকে দিবস হিসেবে পালনের জন্য রাষ্ট্রসমূহের প্রতি আহ্বান জানায়। আর এরই ফসল হিসেবে ১৯৮৪ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের গৃহিত প্রস্তাব আনুযায়ী ৮ই মার্চ-কে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হয়।

আজ ৮ মার্চের নারী দিবসের দাবি শুধু মজুরি বৈষম্য বিলোপ ও ভোটাধিকারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। ইতোমধ্যে তা ব্যাপ্তি লাভ করেছে নারীর অর্থনৈতিক সামাজিক রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে। সেই ১৮৫৭ থেকে আজতক এই যে দেড়শ’ বছরের নারী মুক্তি আন্দোলনের পরিক্রমা, এতো দীর্ঘকালব্যাপী পৃথিবীতে আর কোনো আন্দোলনকেই বোধ হয় এমন অনিশ্চিত অভিযাত্রায় ঘুরপাক খেতে হয় নি। এটাই বোধ করি মানবেতিহাসে মানব সভ্যতার এক চরম পরিহাস! এখানেই প্রশ্ন আসে, সভ্যতার জারিজুরি মাখা আমাদের এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজটা কি আদৌ বন্যতার আদিম সাম্য সমাজটাকেও অতিক্রম করতে পেরেছে? নইলে মানুষ পদ বাচ্যে থেকে পুরুষের সমকক্ষ হয়েও একজন নারীকে কেন আজো পুরুষের সমানাধিকার প্রাপ্তির জন্য দাবি আদায়ের আন্দোলন করে যেতে হবে?

তিন.
১৯১১ সালে প্রথমবারের মতো নারীদের সমানাধিকার দিবস হিসেবে ৮ই মার্চ পালিত হওয়া থেকে ০৮ মার্চ ২০১০ এর ব্যবধান একশ’ বছর। এই সময়কালে সারা বিশ্বে একেকবার একেকটি করে বহু থিম নিয়ে নারী দিবস পালিত হয়েছে। কিন্তু অবস্থার কতোটা উন্নতি হয়েছে তা ধারণা করা যায় এবারের নারী দিবসের শ্লোগান থেকেই। ‘সম-অধিকারের মাধ্যমে সবার অগ্রগতি’। অর্থাৎ নারী-পুরুষের সম-অধিকারের বিষয়টি এখনো প্রশ্নের পর্যায়েই রয়ে গেছে। কী সেই প্রশ্ন ?

প্রথমত অধিকার বলতে আমরা কী বুঝি ? মৌলিকভাবে এখানে দুটো বিষয়কেই প্রাধান্য দেয়া হয়। সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার অধিকার এবং ক্ষমতা-বলয়ে অংশগ্রহণের অধিকার। অর্থাৎ একজন পুরুষ স্বাভাবিকভাবে যে সুযোগ-সুবিধা পেতে পারেন, সে তুলনায় একজন নারী কতটুকু সুযোগ-সুবিধা পান। একইভাবে ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে পুরুষের তুলনায় নারীরা সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক জীবনে সক্রিয়ভাবে কতটুকু অংশগ্রহণের সুযোগ পান। এই দু’পর্যায়ের অধিকারে নারী-পুরুষের তুলনামূলক প্রাপ্তি বা বঞ্চিত হওয়ার হার নির্ণয়ের মাধ্যমেই নারীর আপেক্ষিক অবস্থানকে চিহ্ণিত করা হয়ে থাকে। এটাই সারা বিশ্বে জেন্ডার সূচক হিসেবে স্বীকৃত। একটি জেন্ডার উন্নয়ন সূচক, অন্যটি জেন্ডার ক্ষমতায়ন সূচক। মূলত এই দুটো সূচক চিহ্নিত করে জাতিসংঘ। জাতিসংঘের এই সূচক দুটোর মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে নারী-পুরুষের অবস্থান দেখানো হয় এবং সূচক আনুযায়ী বিভিন্ন দেশের অবস্থানও দেখানো হয়।

জেন্ডার উন্নয়ন সূচকে নারী-পুরুষের মধ্যকার অসমতা প্রতিফলিত হয়ে থাকে। জাতিসংঘের মানব উন্নয়ন রিপোর্ট-২০০৯ আনুযায়ী বাংলাদেশের জেন্ডার উন্নয়ন সূচক দেখানো হয়েছে ০.৫৩৬। এই সূচকের অর্থ হচ্ছে পুরুষের তুলনায় নারীর সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তির হার প্রায় অর্ধেক। ভিন্নভাবে বললে নারীরা পুরুষের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণভাবে বঞ্চিত হচ্ছে। ওই রিপোর্টে ১৫৫ টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১২৩তম।

অন্যদিকে জেন্ডার ক্ষমতায়ন সূচকের মাধ্যমে দেখানো হয় নারীরা অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক জীবনে সক্রিয়ভাবে কতটুকু অংশগ্রহণ করতে পারছে। এক্ষেত্রে যেসব বিষয়কে তথ্য-উপাত্ত হিসেবে বিবেচনা করে সূচক নির্ণয় করা হয় তা হলো, জাতীয় সংসদে পুরুষের তুলনায় শতকরা কতজন নারীর আসন রয়েছে, কতজন নারী মন্ত্রী রয়েছেন, উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও প্রশাসনিক পর্যায়ে কতভাগ নারী রয়েছে, বিভিন্ন পেশাগত এবং কারিগরি কাজে নারীর অংশগ্রহণের হার কত এবং তাদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ও আয়বৈষম্য কীরকম। মোটকথা এখানে কিছু নির্ধারিত ক্ষেত্রে সুযোগের বৈষম্য তুলে ধরা হয়। এইসব তথ্য-উপাত্তের মাধ্যমে নির্ণীত জেন্ডার ক্ষমতায়ন সূচকে বর্তমানে ১০৯ টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৮। খুবই হতাশাজনক অবস্থান বলা যায়। আর বাংলাদেশের জন্য এই সূচকটি হচ্ছে ০.২৬৪। অর্থাৎ এক্ষেত্রে নারী-পুরুষের বৈষম্য আরো ব্যাপক।

নারী-পুরুষ বৈষম্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সূচকে যে হতাশাব্যঞ্জক চিত্র প্রতিফলিত হচ্ছে, রাষ্ট্র ও সরকার আন্তরিক হলে এর একটা সন্তোষজনক উন্নতি হয়তো সম্ভব। বিশেষ করে সামাজিক নিরাপত্তাসহ শিক্ষাগ্রহণের ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ যত বাড়ানো যাবে ততই অর্থনৈতিক জীবনে নারীর অংশগ্রহণ আশাব্যঞ্জক হয়ে ওঠবে। কিন্তু শিক্ষার সুযোগ অবারিত ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে গেলেই যে রাষ্ট্রিক অর্থনৈতিক স্থিতি ও দেশপ্রেম সুলভ উদার মানসিকতার প্রয়োজন, সেই ভিত্তি টুকুর দিকে আমরা কি কখনো দৃষ্টি নিক্ষেপ করেছি বা করি ? রবার্ট ফ্রস্ট-এর সেই বিখ্যাত কবিতাংশটি মনে পড়ে যায়-
‘আই হ্যাভ মাইলস টু গো !’

চার.
কী করিলে কী হইবে- বিশেষজ্ঞদের বাঁধানো পথে অর্থতত্ত্বের জটিল পরিক্রমায় হয়তো অনেক কিছুরই সমীকরণ মিলে যেতে পারে। কেউ কেউ মিলিয়ে দেবেনও হয়তো। এভাবে একদিন জেন্ডার সূচকে উন্নতির বিরাট প্রাপ্তিও অর্জিত হতে পারে। কিন্তু ‘সম-অধিকারের মাধ্যমে সবার অগ্রগতি’-এর প্রতিপাদ্য ধরে জেন্ডার সূচকে নারী-পুরুষের অধিকারের সমতা নিশ্চিত করতে হলে যে তাবিজটিকে উন্মুক্ত করা একদিন অবশ্যই জরুরি হয়ে ওঠবে, তার কথা জোরালোভাবে কাউকেই বলতে শুনি না আজো। যা না হলে সবকিছুই শেষপর্যন্ত ফাঁকা বুলি বা প্রতারণা ময় ফাঁকি হিসেবেই চিহ্নিত হয়ে থাকবে সেটা হলো- ধর্মীয় গোঁড়ামি, অন্ধতা ও কূপমণ্ডূকতা থেকে দৈহিক ও মানসিক মুক্তি। এতদঞ্চলে যতকাল এই বিষবৃক্ষের উৎপাটন না হবে, ততকাল বাকি সব অসার বকবকানিই রয়ে যাবে।

প্রচলিত ধর্মীয় ব্যবস্থা যেখানে নারীকে পুরুষের সমকক্ষ হিসেবে কখনোই বিবেচনা করে না, সেখানে একইসাথে বৃত্তাবদ্ধ ধার্মিক ও প্রগতিশীল হওয়ার দাবী কি আদতে কাঁঠালের আমসত্ত্ব হওয়া নয় ? সমাজের ক্ষুদ্রতম প্রতিটা এককে আমরা যে মা, বোন, স্ত্রী, কন্যা নিয়ে পরম আয়েশে দিনযাপন করছি, একবারও কি ভেবে দেখেছি, নারীর সত্ত্বার মানবিক অধিকার না দিয়ে মা’কে শ্রদ্ধা, বোন’কে মমতা, স্ত্রী’কে সোহাগ বা কন্যা’কে যে বাৎসল্য দেখাচ্ছি আমরা, আসলে তা কী দেখাচ্ছি? এটা কি মর্মস্পর্শী ভণ্ডামীরই নামান্তর নয়?
প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় আজ আমরা যখন এই বিপুল মহাবিশ্বের অলিগলির খোঁজে ছড়িয়ে যেতে পারছি নিমেষেই, সেখানে পাশের একান্ত নারী-সঙ্গীটিকে চিনে নিতে সামান্য নিজের ভেতরে ডুব দিতে বারবার ব্যর্থ হচ্ছি কেন আমরা? কোথায় তার সমস্যা? আদৌ কি ডুব দিতে চাচ্ছি আমরা, না কি পুরুষত্বের আদিম চামড়াটা ছিঁড়ে এখনো সত্যি সত্যি মানুষই হতে পারিনি? বাকি সবকিছুর আগে এর উত্তর পাওয়া জরুরি বৈ কি। নারী দিবসের শতবর্ষে এই চাওয়াটা বোধ করি খুব অযৌক্তিক হবে না।

ক্রমবর্ধমান পচনের উৎসটিকে রোধ না করে ধর্মতাত্ত্বিক সুগন্ধী মাখিয়ে মানবিক পচনশীলতাকে আর কতোকাল ঠেকিয়ে রাখা যাবে?


লেখক – রণদীপম বসু।
h-o-r-o-p-p-a-হ-র-প্পা।

দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী’র মৃত্যুদণ্ড এবং ফেসবুক বন্ধ !!

সকাল এ ফেসবুক এ ঢুকতে সমস্যা হয়েছিলো।
কয়েকটা প্রশ্ন করলো: আমি কোন বিখ্যাত কে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট করেছি কিনা।
করে থাকলে তাহলে ক্যানসেল করো … ইত্যাদি বিষয়ক নাকে খত।

পরিশেষে না না টিক বক্সে চেক মার্ক আনচেক করে ঢুকেছি।
এখন আর ফেসবুক পাচ্ছি না।

দেখুন তো আপনাদেরও কি একই সমস্যা হচ্ছে নাকি কেবল আমারই।

এই মাত্র সংবাদ পেলাম যারা মোবাইল থেকে ফেসবুকে লগিন করে আছেন তারা ফেসবুক দেখতে পাচ্ছেন। বিভিন্ন জায়গায় ডিস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।

নেট গতি নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।
আবার কি আমরা কোন অন্ধকার যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছি !!

আপনারা যারা মজিলা ফায়ারফক্স ব্যবহার করছেন –
তাঁরা এই এড অন্স ব্যবহার করে ফেসবুক দেখতে পারেন। এখানে ক্লিক করুন।

addon টি আপনার ব্রাউজারে ইনস্টল করে নিন। এড্রেস বারের হাতের ডানে একটি এ্যারো দেখতে পারবেন। মাউস কার্সার দিয়ে এনাবল করে দিন।

ব্রেকিং নিউজ
মানবতা বিরোধী অপরাধের দায়ে – দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী’কে
মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল -১
২০টি অভিযোগের মধ্যে ৮ টি অপরাধ প্রমাণিত।

ফকির আবদুল মালেক এর ‘আপন সত্তার গৃহস্থালি’র মোড়ক উন্মোচন করলেন … কবি মহাদেব সাহা … ছবি ব্লগ

ব্লগারস ফোরাম প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত কবিতার বই আপন সত্তার গৃহস্থালি। কবি ফকির আবদুল মালেক এর চার ডজন কবিতা নিয়ে বইটির প্রচ্ছদ করেছেন কবি নিজেই। আনুষ্ঠানিক মোড়ক উন্মোচন করলেন কবি মহাদেব সাহা।

আপন সত্তার গৃহস্থালি
ফকির আবদুল মালেক
কাব্যগ্রন্থ
প্রকাশক: ব্লগারস ফোরাম

পাওয়া যাচ্ছে যথারীতি আপনার পরিচিত ঠিকানায় –

শব্দতরী
ব্লগারস ফোরাম
স্টল নং ৩২
লিটিল ম্যাগ কর্ণার
রোকেয়া চত্বর
একুশে বইমেলা ২০১৩।

বেশী বেশী বই পড়ুন।
অন্যকেও বই পড়তে কিংবা কিনতে উৎসাহিত করুন।
সকল লেখক পাঠকদের জন্য রইলো মহান একুশের শুভেচ্ছা।

ব্লগারস ফোরাম প্রকাশনায় আরো বেশ কিছু বইয়ের সন্ধান পাবেন এখানে –
ব্লগারস ফোরাম প্রকাশনা: আজ ‘আপন সত্তার গৃহস্থালি’ এবং ‘তোমাকে’ … মোড়ক উন্মোচন করবেন কবি মহাদেব সাহা।
এবং একুশে বইমেলা ২০১৩: শব্দতরী স্টলে আপনি আমন্ত্রিত।

grh01

grh02

grh03

grh04

grh05

grh06

grh07

grh08

grh09

ব্লগারস ফোরাম প্রকাশনা সকলের একাগ্র মমতা এবং আন্তরিক ভালোবাসায় এগিয়ে যাক। আগামীতে দেখা হবে আরো নতুন প্রকাশনা নিয়ে। ধন্যবাদ।

ব্লগারস ফোরাম প্রকাশনা: আজ ‘আপন সত্তার গৃহস্থালি’ এবং ‘তোমাকে’ … মোড়ক উন্মোচন করবেন কবি মহাদেব সাহা

apon-sottargrehosthali

ব্লগারস ফোরাম প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত কবিতার বই আপন সত্তার গৃহস্থালি। কবি ফকির আব্দুল মালেক এর চার ডজন কবিতা নিয়ে বইটির প্রচ্ছদ করেছেন কবি নিজেই। প্রচ্ছদ দেখে বোঝা যায় ভিতরের উপাদান যথেষ্ট ভারীই হবে। হালকা চালের না। ভিতরের প্রবেশ করেও নিরাশ হতে হবে না পাঠককে। বইটি উৎসর্গ করা হয়েছে মার্কিন কবি ওয়াল্ট হুইটম্যানকে। ভূমিকায় কবি লিখেছেন কাব্য চর্চায় তিনি হুইটম্যানের শিষ্যত্ব গ্রহন করেছেন। প্রতিটি লিখায় তিনি হু্ইটম্যান থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে লিখেছেন। কখনো করেছেন অনুসরন কখনো বা অনুকরণ। হুইটম্যানকে অনুসরন অনুকরণ কিম্বা অনুপ্রাণিত হওয়া নতুন না কবিদের জন্য। আমাদের নজরুলও তার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। তার অগ্রপথিক তো সরাসরি হুইটম্যানের অনুবাদ বলেই সমালোচকরা দাবী করেছিলেন।

হুইটম্যানের –
From Nebraska, from Arkansas,
Central inland race are we, from Missouri with
the continental blood interven’d,
All the hands of comrades clasping, all the
Southern, all the Northern,
Pioneers! O pioneers!

আর কবি নজরুলের –
আয়ারল্যান্ড, আরব, মিসর, কোরিয়া, চীন,
নরওয়ে, স্পেন, রাশিয়া_ সবার ধারি গো ঋণ।
সবার রক্তে মোদের লোহুর আভাস পাই,
এক বেদনার ‘কমরেড’ ভাই মোরা সবাই।
সকল দেশের মোরা সকল।
রে চির-যাত্রী পথিক দল,
জোর্ কদম্ চল্ রে চল।

এমন কি নজরুলের ‘বিদ্রোহী’কে ওয়াল্ট হুইটম্যানের ‘সং অব মাইসেলফ’ কবিতার সাথে সমালোচকরা মিলিয়ে ফেলেছিলেন। যদিও এসব অনুবাদ অনুকরণ অনুসরন নিয়ে বিস্তর বির্তক আছে তাই আমরা বরং সরল স্বীকারোক্তি কারী ফকির আব্দুল মালেক এর আপন সত্তার গৃহস্থালী’র কাছেই ফিরে যায়। আপন সত্তার গৃহস্থালী শুরু হয়েছে বিস্ময়ের এমনি অবয়ব কবিতা দিয়ে।

“বিস্ময়ের এমনই অবয়ব! এমনি দৃশ্যায়ন, এমনি শব্দরাজী!
এমনি অন্তহীন সংযোগ, প্রত্যেকে পরের সাথে যুক্ত
প্রত্যেকে সকল প্রশ্নের উত্তর নিয়ে হাজির,
প্রত্যেকে পৃথিবীকে ভাগ করে নেয়ং সকলের সাথে।”

আপন সত্তার গৃহস্থালি
ফকির আব্দুল মালেক
কাব্যগ্রন্থ
প্রকাশক: ব্লগারস ফোরাম

apon-sottargrehosthali 02

কবি সেলিমা রহমান এর কবিতা নিয়ে অসাধাণ মানের একটি কাব্যগ্রন্থ। পাঠক মাত্রই ভালো লাগবে। বইটি প্রকাশ করেছে ব্লগারস ফোরাম। দৃষ্টি নন্দন প্রচ্ছদ এঁকেছেন প্রতিভাবান প্রচ্ছদ শিল্পী সুমন আহমেদ

তোমাকে
সেলিমা রহমান
কাব্যগ্রন্থ
প্রচ্ছদ: সুমন আহমেদ
প্রকাশক: ব্লগারস ফোরাম
দাম -১৫০ টাকা।

মোড়ক উন্মোচন করবেন কবি মহাদেব সাহা।
আজ বিকেল ৫টায়।

Line_zpsb0385eef

উন্মোচনের পরপরই পাওয়া যাবে যথারীতি আপনার পরিচিত ঠিকানায় –

শব্দতরী
ব্লগারস ফোরাম
স্টল নং ৩২
লিটিল ম্যাগ কর্ণার
রোকেয়া চত্বর
একুশে বইমেলা ২০১৩।

বেশী বেশী বই পড়ুন।
অন্যকেও বই পড়তে কিংবা কিনতে উৎসাহিত করুন।
সকল লেখক পাঠকদের জন্য রইলো মহান একুশের শুভেচ্ছা।

ব্লগারস ফোরাম প্রকাশনায় আরো বেশ কিছু বইয়ের সন্ধান পাবেন এখানে –
ক্লিক করুন লিঙ্কে – একুশে বইমেলা ২০১৩: শব্দতরী স্টলে আপনি আমন্ত্রিত।

আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি …

21.02.13

আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি
আমি কি ভুলিতে পারি
ছেলেহারা শত মায়ের অশ্রু গড়ায়ে ফেব্রুয়ারি
আমি কি ভুলিতে পারি
আমার সোনার দেশের রক্তে রাঙানো ফেব্রুয়ারি
আমি কি ভুলিতে পারি।।

জাগো নাগিনীরা জাগো নাগিনীরা জাগো কালবোশেখীরা
শিশু হত্যার বিক্ষোভে আজ কাঁপুক বসুন্ধরা,
দেশের সোনার ছেলে খুন করে রোখে মানুষের দাবী
দিন বদলের ক্রান্তিলগ্নে তবু তোরা পার পাবি?
না, না, না, না খুন রাঙা ইতিহাসে শেষ রায় দেওয়া তারই
একুশে ফেব্রুয়ারি একুশে ফেব্রুয়ারি।

সেদিনও এমনি নীল গগনের বসনে শীতের শেষে
রাত জাগা চাঁদ চুমো খেয়েছিল হেসে;
পথে পথে ফোটে রজনীগন্ধা অলকনন্দা যেন,
এমন সময় ঝড় এলো এক ঝড় এলো খ্যাপা বুনো।।

সেই আঁধারের পশুদের মুখ চেনা,
তাহাদের তরে মায়ের, বোনের, ভায়ের চরম ঘৃণা
ওরা গুলি ছোঁড়ে এদেশের প্রাণে দেশের দাবীকে রোখে
ওদের ঘৃণ্য পদাঘাত এই সারা বাংলার বুকে
ওরা এদেশের নয়,
দেশের ভাগ্য ওরা করে বিক্রয়
ওরা মানুষের অন্ন, বস্ত্র, শান্তি নিয়েছে কাড়ি
একুশে ফেব্রুয়ারি একুশে ফেব্রুয়ারি।।

তুমি আজ জাগো তুমি আজ জাগো একুশে ফেব্রুয়ারি
আজো জালিমের কারাগারে মরে বীর ছেলে বীর নারী
আমার শহীদ ভায়ের আত্মা ডাকে
জাগো মানুষের সুপ্ত শক্তি হাটে মাঠে ঘাটে বাটে
দারুণ ক্রোধের আগুনে আবার জ্বালবো ফেব্রুয়ারি
একুশে ফেব্রুয়ারি একুশে ফেব্রুয়ারি।।
=====================

গীতিকার – আবদুল গাফফার চৌধুরী।
সুরকার – আব্দুল লতিফ, আলতাফ মাহমুদ।
মুক্তি – ১৯৫৪।

21.02.13a

নিষিদ্ধ সম্পাদকীয় – হেলাল হাফিজ

30048a

এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়
এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়
মিছিলের সব হাত
কণ্ঠ
পা এক নয়।
সেখানে সংসারী থাকে, সংসার বিরাগী থাকে,
কেউ আসে রাজপথে সাজাতে সংসার।
কেউ আসে জ্বালিয়ে বা জ্বালাতে সংসার
শাশ্বত শান্তির যারা তারাও যুদ্ধে আসে
অবশ্য আসতে হয় মাঝে মধ্যে
অস্তিত্বের প্রগাঢ় আহ্বানে,
কেউ আবার যুদ্ধবাজ হয়ে যায় মোহরের প্রিয় প্রলোভনে
কোনো কোনো প্রেম আছে প্রেমিককে খুনী হতে হয়।

যদি কেউ ভালোবেসে খুনী হতে চান
তাই হয়ে যান
উৎকৃষ্ট সময় কিন্তু আজ বয়ে যায়।

এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়
এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়।

21 february2013

ব্লগারস ফোরাম প্রকাশনায় সেলিমা রহমান এর ‘তোমাকে’

tomake

কবি সেলিমা রহমান এর কবিতা নিয়ে অসাধাণ মানের একটি কাব্যগ্রন্থ। পাঠক মাত্রই ভালো লাগবে। বইটি প্রকাশ করেছে ব্লগারস ফোরাম। দৃষ্টি নন্দন প্রচ্ছদ এঁকেছেন প্রতিভাবান প্রচ্ছদ শিল্পী সুমন আহমেদ। যার একের পর এক প্রচ্ছদ ইতিমধ্যেই সৃষ্টিশীল পাঠক তথা লিখক সমাজে ভিন্নধর্মী স্বকীয় মর্যাদায় স্থান করে নিয়েছে। মুগ্ধতায় ছেঁয়ে যায় মন। সৃষ্টি শিল্পে তাঁর রং তুলি কথা বলুক অবিরাম।

আসুন প্রাণের মেলায় ব্লগারস ফোরাম এর “শব্দতরী” স্টলে। পরিচিত হন নতুন বই এর সাথে। বিকাল থেকে সন্ধ্যা রাত্রি চলুক সহ ব্লগারদের সাথে পরিচিতি এবং জম্পেস আড্ডা। খোলামেলা আলাপে জমে উঠুক ব্লগ কিংবা ব্লগিং থেকে শুরু করে ব্যক্তিজীবন। সামান্য বিশ্রাম। হাতে থাক ধূমায়িত চা অথবা কফি।

তোমাকে
সেলিমা রহমান
কাব্যগ্রন্থ
প্রচ্ছদ: সুমন আহমেদ
প্রকাশক: ব্লগারস ফোরাম
দাম -১৫০ টাকা।

পাওয়া যাবে যথারীতি আপনার পরিচিত ঠিকানায় –

শব্দতরী
ব্লগারস ফোরাম
স্টল নং ৩২
লিটিল ম্যাগ কর্ণার
রোকেয়া চত্বর
একুশে বইমেলা ২০১৩।

বেশী বেশী বই পড়ুন।
অন্যকেও বই পড়তে কিংবা কিনতে উৎসাহিত করুন।
সকল লেখক পাঠকদের জন্য রইলো মহান একুশের শুভেচ্ছা।

ব্লগারস ফোরাম প্রকাশনায় আরো বেশ কিছু বইয়ের সন্ধান পাবেন এখানে –
ক্লিক করুন লিঙ্কে – একুশে বইমেলা ২০১৩: শব্দতরী স্টলে আপনি আমন্ত্রিত।

tomake01a

স্বাধীনতা, এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো

gun

একটি কবিতা লেখা হবে তার জন্য অপেক্ষার উত্তেজনা নিয়ে
লক্ষ লক্ষ উন্মত্ত অধীর ব্যাকুল বিদ্রোহী শ্রোতা বসে আছে
ভোর থেকে জনসমুদ্রের উদ্যান সৈকতে: ‘কখন আসবে কবি?’

এই শিশু পার্ক সেদিন ছিল না,
এই বৃক্ষে ফুলে শোভিত উদ্যান সেদিন ছিল না,
এই তন্দ্রাচ্ছন্ন বিবর্ণ বিকেল সেদিন ছিল না৷
তা হলে কেমন ছিল সেদিনের সেই বিকেল বেলাটি?
তা হলে কেমন ছিল শিশু পার্কে, বেঞ্চে, বৃক্ষে, ফুলের বাগানে
ঢেকে দেয়া এই ঢাকার হৃদয় মাঠখানি?

জানি, সেদিনের সব স্মৃতি ,মুছে দিতে হয়েছে উদ্যত
কালো হাত৷ তাই দেখি কবিহীন এই বিমুখ প্রান্তরে আজ
কবির বিরুদ্ধে কবি,
মাঠের বিরুদ্ধে মাঠ,
বিকেলের বিরুদ্ধে বিকেল,
উদ্যানের বিরুদ্ধে উদ্যান,
মার্চের বিরুদ্ধে মার্চ … ।

হে অনাগত শিশু, হে আগামী দিনের কবি,
শিশু পার্কের রঙিন দোলনায় দোল খেতে খেতে তুমি
একদিন সব জানতে পারবে; আমি তোমাদের কথা ভেবে
লিখে রেখে যাচ্ছি সেই শ্রেষ্ঠ বিকেলের গল্প।
সেই উদ্যানের রূপ ছিল ভিন্নতর।
না পার্ক না ফুলের বাগান, — এসবের কিছুই ছিল না,
শুধু একখণ্ড অখণ্ড আকাশ যেরকম, সেরকম দিগন্ত প্লাবিত
ধু ধু মাঠ ছিল দূর্বাদলে ঢাকা, সবুজে সবুজময়।
আমাদের স্বাধীনতা প্রিয় প্রাণের সবুজ এসে মিশেছিল
এই ধু ধু মাঠের সবুজে।

কপালে কব্জিতে লালসালু বেঁধে
এই মাঠে ছুটে এসেছিল কারখানা থেকে লোহার শ্রমিক,
লাঙল জোয়াল কাঁধে এসেছিল ঝাঁক বেঁধে উলঙ্গ কৃষক,
পুলিশের অস্ত্র কেড়ে নিয়ে এসেছিল প্রদীপ্ত যুবক।
হাতের মুঠোয় মৃত্যু, চোখে স্বপ্ন নিয়ে এসেছিল মধ্যবিত্ত,
নিম্ন মধ্যবিত্ত, করুণ কেরানী, নারী, বৃদ্ধ, বেশ্যা, ভবঘুরে
আর তোমাদের মত শিশু পাতা-কুড়ানীরা দল বেঁধে।
একটি কবিতা পড়া হবে, তার জন্যে কী ব্যাকুল
প্রতীক্ষা মানুষের: “কখন আসবে কবি?’ “কখন আসবে কবি?’

শত বছরের শত সংগ্রাম শেষে,
রবীন্দ্রনাথের মতো দৃপ্ত পায়ে হেঁটে
অত:পর কবি এসে জনতার মঞ্চে দাঁড়ালেন।
তখন পলকে দারুণ ঝলকে তরীতে উঠিল জল,
হৃদয়ে লাগিল দোলা, জনসমুদ্রে জাগিল জোয়ার
সকল দুয়ার খোলা। কে রোধে তাঁহার বজ্রকণ্ঠ বাণী?
গণসূর্যের মঞ্চ কাঁপিয়ে কবি শোনালেন তাঁর অমর-কবিতাখানি:
‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম,
এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’

সেই থেকে স্বাধীনতা শব্দটি আমাদের।

5385_n

স্বাধীনতা, এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো
– নির্মলেন্দু গুণ।

ভাগ্য ভালো থাকলে কবি কণ্ঠে আবৃতি শোনা যেতে পারে নিচের লিঙ্কে।
স্বাধীনতা, এই শব্দটি কিভাবে আমাদের হলো।

তবে কেন নিজেরে দিয়েছিলে যোদ্ধা বলে পরিচয় ?

জামাতি ফেসবুক পেজগুলো কিছুদিন নীরব ছিল কিন্তু রাজিব হত্যার পর থেকে ওদের শক্তি দেখি অনেক গুন বেড়ে গেছে।
রাজিবকে ওরা মৃত্যুর পরেও শান্তি দিচ্ছেনা। নাস্তিক বলে গালাগালি করে যাচ্ছে। নানা অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।
নব উদ্যম নিয়ে ওরা আবার সাইবার মাঠে নেমেছে। ঠিক যেন বিজয় উল্লাস।
কিন্তু পরিতাপের বিষয় আমাদের সাইবার যোদ্ধাদের ঠিক এই সময়ে পাওয়া যাচ্ছেনা।
শাহবাগ নিয়ে ২০ টার উপরে পেজ ছিল একটারও কোন খবর নাই। কারণটা কি ?
শিবিরের ভয়? যদি তাই হয় তবে বলি,
মরনে যদি পাও এতো ভয়,
তবে কেন নিজেরে দিয়েছিলে
যোদ্ধা বলে পরিচয় ?