নাজমুন এর সকল পোস্ট

কেন পিরীতি বাড়াইলা বন্ধু ছাইড়া যাইবা যদি

কেনো পিরীতি বাড়াইলারে বন্ধু ছেড়ে যাইবা যদি –
কেমনে রাখিব তোর মন
আমার আপন করে বাদীরে বন্ধু
ছেড়ে যাইবা যদি

পাগল আবদুল করিম কয় হলো একি ব্যাধি –
আসলেই তো এই ভালোবাসা একটা ব্যাধি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলতেন ব্যাধির চাইতে আধি বড়। ভালোবাসা হলো সেই আধি। দুমড়ে মুচড়ে আছরে দিয়ে যায়। মন এক পাললিক মাটি। সে মাটিতে যে কত অপরিমেয় বিষাদ আছড়ে আছড়ে পড়ে। শাহ আবদুল করিম বাউল সাধক। মনের ভেতর যে ব্যাকুলতা, যে বেদনা, সেই ব্যাকুলতাকে, বেদনাকে তিনি সুরে সুরে ছড়িয়ে দেন বাতাসে বাতাসে।

যে ভালোবাসা ছিলো না সে নাই থাকতো। কেন আমাকে ভাসিয়ে দিলো। ভুলিয়ে দিলো। এখন যে সে চলে গেলো এই যাতনা আমি কি করে সহ্য করি।
প্রেমিক তো দিশেহারা। সে বুঝতেও পারে না কি করে তার প্রেমিককে খুশী রাখবে। কি হলে সে তার কাছে ফিরে ফিরে আসবে ? সুরে সুরে সেই বিষাদ, আক্ষেপ তিনি কোটি হৃদয়ে ছড়িয়ে দিলেন –

মরন জ্বালা সইতে নারি
দিবা নিশা কাঁদিরে বন্ধু
ছেড়ে যাইবা যদি
কারে কি বলিব আমি
নিজে অপরাধী —

এই যে ছেড়ে যাওয়া সে মরনের চাইতে কম কিছু নয়। তবু তাকে বেঁধে রাখার শক্তি তাঁর ছিলো না। কিন্তু এর জন্য কাউকে দোষ দেবারও অবকাশ নেই। আজ সব অপরাধের দায় ভার তিনি নিজেই নিজের কাঁধে নিচ্ছেন। হারাবার এই বেদনা মর্মে মর্মে নিজেকেই অনুভব করতে হয়।

অসাধারণ এক বিচ্ছেদের গান কেন পিরীতি বাড়াইলারে বন্ধু,
এই গানের কথা/লিরিকসের পরতে পরতে যদি বেদনা থাকে সুরে তার কয়েক গুন বেদনা ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। সুরে সুরে আকাশে বাতাসে জমিনে ছড়িয়ে পড়ে বেদনা, বিষাদ অথচ কি এক আশ্চর্য সুন্দর হৃদয় হরণকারী গান। আহা কেন পিরীতে বাড়াইলারে বন্ধু – ছাইড়া যাইবা যদি —

দার্শনিক উপলদ্ধি –

**
ছেলেরা সবসময় চায় তাকে গুরুত্ব দেয়া হোক।
আসলে গুরুত্ব চাওয়ার নয়।নিজের গুরুত্ব নিজেকেই তৈরি করতে হয় —
**
অবদমিত বাসনাই মানুষকে অপরাধী বানায়
**
অল্প বয়সে ম্যাচুরিটি আসা ভালো। সমস্যা হলো একদিক একটিভ বেশি হলে অন্য দিকে ডিজেবল হয়
**
মাঝে মাঝে অন্যের দেয়া অপকার ও উপকার হয়ে দাঁড়ায়
**
মুক্তি অনেক রকম।সম্পর্কের বন্ধন থেকে মুক্তিও একধরনের মুক্তি।
**
একটা সময় যখন মনে হবে বেঁচে থাকা অর্থহীন – তখনো অর্থের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যায় না
**
ভেংগে যাবার প্রথম ধাক্কাটা সইতে পারলে এরপর আপনি টিকে যেতে পারেন।
**
পরাধীন দেশে জন্মগ্রহণ করার মতো যন্ত্রণা আর নাই
**
টাকার অভাবে থাকা যায় ,মনুষত্ব্যের অভাবে থাকা যায় না

—————-

পাখিহৃদয়

আমি তিন পা এগিয়ে এলাম তোমার দিকে,
চার পায়ে ফিরে দেখছি ছায়ার দিকে
সবুজ আলো বেয়ে যে হাত দিয়ে জন্ম হলো আমার
হাড়ের ভাংচুড়ে নগদে দিয়ে এলাম জমিজিরাত সব ।
এরপরেও আস্থার প্রশ্ন এলে
বলেছি ‘দেবী এথেনা সাক্ষী –
সুরায় যে বানী পাঠ করেছি
বৃক্ষের গায়ে রেখে এসেছি যে জল
এবং যে রেল রাত্রিতে যায় ঝম ঝম করে
তাদের কসম
আমি কাঁদলে আজো পাহাড় গলে জল হয়
আমার চিরদাসী রাক্ষুসী রূপে
আমার বুকে শানিত ছুড়ি নিয়ে এগিয়ে আসে
এবার তুমি বলো হে আগামীর সন্তান-
‘কেন আমার সমুদয় আত্মা পাখির কথা বলে’ !!

(মন্তব্য আজো করা যাচ্ছে না।বিষয়টা সহজ করা উচিত)

ও বয়েস তুমি বইছো কেন

Bankstown এ এক বৃদ্ধার সাথে দেখা। সাথে দুজন ৬/৭ বছরের ছেলে। একজন চাইনিজ টাইপ চেহারা আর একজন অস্ট্রেলিয়ানদের মতই। জিজ্ঞেস করলাম কে হয় বাচ্চারা ? উনি বললেন একজন তার নিজের নাতি আর একজন নাতির বন্ধু। ওদের ছুটি চলছে। তাই ওদের নিয়ে উনি বেড়াতে যাচ্ছেন।
জিজ্ঞেস করলাম একাই থাকেন নাকি কারো সাথে থাকেন। উনি বললেন ছেলে ছেলের বউ এর সাথে থাকেন। বার বার বলছিলেন ওনার ছেলের বউ ওনাকে খুব পছন্দ করে। বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে আমরা যেমন করে বলি আমার শ্বাশুড়ি আমাকে খুব পছন্দ করেন। আসলে পছন্দ করার কথা না কিন্তু করেন। বিষয়টা যেনো তেমনি।


আমি বৃদ্ধ বৃদ্ধা দেখলে কথা বলতে আগ বাড়িয়ে যাই। ওনারা বেশীর ভাগই একা থাকেন। একদিন বিরাশি বছরের এক বৃদ্ধা আমার সাথে হাঁটছিলেন। জিজ্ঞেস করলাম একাই থাকেন কিনা ? বললেন যে হ্যাঁ একাই থাকেন। কিন্তু ওনার প্রতিবেশী ওনার খেয়াল রাখেন। বললাম খারাপ লাগে তোমার এই একাকী থাকা ? উনি বললেন না খারাপ লাগে না। ওনার অভ্যেস হয়ে গেছে।

এক চাইনিজ বৃদ্ধাকে স্টেশনে দেখলাম। উনি এটা সেটা বলার পরে বললেন বৃদ্ধ হওয়া খুব কষ্টের। বৃদ্ধ হইও না।

এক বৃদ্ধা প্রায় ৮৩/৮৪ বছর হবে। স্টেশনে নেমেই চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করলেন। আই এম লস্ট – আই এম লস্ট। এরপর তাকে জিজ্ঞেস করা হলো কই যেতে চান কোথায় যেতে চান। উনি ওনার হাতের লাঠি ফ্লোরে বাড়ি দিয়ে বলছিলেন – খুব উন্নত দেশ অস্ট্রেলিয়া। ছেলে মেয়ে সব স্টুপিড। দেশ স্টুপিড, মানুষ স্টুপিড। উন্নত দেশ মানবিকতা শেখায় নাই কাউকে।
আমার ফেইস সম্ভবত একটু সহজ সরল। কণ্ঠস্বর ও নরম। উনি আমাকে খুব পছন্দ করলেন। নাম জিজ্ঞেস করলেন। দেশ জিজ্ঞেস করলেন। এরপর বললেন তুমি খুব ভালো মেয়ে। বাংলাদেশের মেয়ে খুব ভালো। কথা বার্তায় বোঝা গেলো একসময় ভালো চাকরী করতেন।
অস্ট্রেলিয়ায় বুড়িদের একটু সাহায্য করতে এগিয়ে আসলে ওরা খুব মাইন্ড করে। না সে পারবে। তার কারো হেল্প লাগবে না। উনি সিঁড়ি দিয়ে খুব কষ্ট করে নামছিলেন। কিন্তু কারো সাহায্য নেয়া ওনার জন্য অপমান সূচক মনে হয়েছে। বুঝলাম আসলে আত্মমর্যাদা বা সেলফরেসপেক্ট তাদের রক্তেই রয়েছে।

এখানে ৫০ বছরের উপরে পুরুষগুলোর স্ত্রী প্রায় ছেড়ে যায় তাদের। এটাই দেখেছি। আজ এক ইটালীয়ান মেয়ের সাথে কথা বলার পরে সেও বললো আশ্চর্য এই একটা ব্যাপার। অলমোস্ট সব বয়স্ক পুরুষের বউ তাদের ছেড়ে চলে যায়। ব্যপারটা যেনো কেমন –

নাভিটাসে আমাদের ইংলিশ শিক্ষক -ভেলোরা প্রায় ৬০ বছর বয়স্কা। উনি ছেলেদের প্রসঙ্গ আসলেই বিরক্ত হন। বলেন যে ছেলেরা খুব অকাজের। কিচেন নোংরা করে। নিজের কাজ নিজে করতে চায় না। ওদের ভার বহন করা দূরহ ব্যপার। উনি ওনার স্বামীর কাছ থেকে বিচ্ছেদ নিয়েছেন।

যদিও এই পুরুষদের স্ত্রীরা তাদের ছেড়ে গেছেন কিন্তু তারা তাদের মেয়ে নাতির সাথে থাকেন। আমার এক সুপারভাইজার ওনার বয়েস ৬০ হবে। উনি বললেন ছেলে তাকে দেখে না। তাতে কি ? তিনি কেয়ার করেন না।

বাংলাদেশের প্রেক্ষিতেও আজকাল ছেলেমেয়েরা যে মা বাবাকে দেখাশোনা করে তাও খুব না। মা বাবার উচিত সব টাকা পয়সা ছেলেমেয়ের পেছনে খরচ না করে নিজেদের ভবিষ্যতের জন্য রাখা। যাতে ছেলেমেয়েরা না দেখলেও তাদের যেনো সমস্যা না হয়।


(কারো লেখায় কমেন্ট করতে পারছি না এমনকি নিজের লেখায় মন্তব্যের উত্তর করতে পারছিনা। বিষয়টা দেখার জন্য অনুরোধ করছি )

সোনাবন্ধু ভুইলো না আমারে

তুমি বিনে আকুল পরান
থাকতে চায় না ঘরে রে
সোনা বন্ধু ভুইলো না আমারে –

এত আকুতি শাহ আবদুল করিমের গানের প্রতিটি লাইনে লাইনে পাওয়া যায়।
এই পরান আকুল, এই পরাণ ব্যাকুল, এই পরাণ ঘরে রয় না –
এখন সেই বন্ধু, সোনা বন্ধু যেন তারে না ভুলে যায় —
আহারে কি আকুতি !! প্রতিটি শব্দে প্রতি ইঞ্চি ইঞ্চি সুরে এই হৃদয়ের যে আকুলতা সে আকুলতার ব্যথা কষ্ট সেই বুঝে যে এই ভ্রমে পড়ে যায়। ভ্রম কেন ? ভ্রম এই জন্য যে এটা আসলেই একটা যন্ত্রনা। না কাজে মন বসে না ঘরে মন বসে, উড়ে যেতে ইচ্ছে করে এই চিত্ত। আহা কেন এমন ?

সাগরে ভাসাইয়া কুলমান
তোমারে সঁপিয়া দিলাম দেহ মনো প্রাণ

প্রেমের এমনি আকুলতা, এই প্রসংগে আমাদের এক আত্বীয় মেয়ের কথা মনে পড়ছে। রুমা( অন্য নাম তার ) যখন ঘর ছেড়ে বের হয়ে গেলো তাও এমন এক ছেলের সাথে তার জন্য তার শুধু পরিবার না তার পুরো আত্মীয় স্বজন এমনকি গ্রাম ও ছাড়তে হলো। তার মা একা একা চোখের জলে ভাসেন কিন্তু সমাজ এর বাইরে চলে যেতে হবে তাকে যদি মেয়ের সাথে সম্পর্ক রাখেন। রুমাও জানে এই পরিণতি। কিন্তু কি উপায়, এই হৃদয় তো কিছু বুঝে না।
সাগরে কুল মান সব যাক, কিন্তু তারে ছাড়া তো চলে না –

আমারে ছাড়িয়া যদি যাও
প্রতিজ্ঞা করিয়া বলো আমার মাথা খাও –

আহা কি কথা !! আমারে ছাড়িয়া যদি যাও প্রতিজ্ঞা করিয়া বলো আমার মাথা খাও —
আমার মাথা খাও, গ্রাম বাংলার এই প্রচলিত কথাকে সুরে সুরে কি অসাধারণ আকুলতায় পর্যবসিত করা যায় সে এই কবিই জানেন।
বাউল কবি অথচ বুঝতে পারেন যার জন্য এই মন পাগল হয়, দিল পাগল হয় তখন মন কোনো যুক্তি বুঝে না।

কুল মান গেলে ক্ষতি নাই আমার
তুমি বিনে প্রাণ বাঁচে না কি করিব আর

আসলেও তো কুল মান দিয়ে কি হবে ? যদি প্রাণই তো না বাঁচে –
তোমারেই চাই রে সোনাবন্ধু
সোনাবন্ধু ভুইলো না আমারে —

যুগ যুগ জিও সোনাবন্ধু —
শাহ আবদুল করিমের মত কবি, গীতিকার সুরকার কতদিন পরে পরে আসেন
এই পৃথিবীতে ?

শ্রদ্ধা প্রিয় কবি সুরকার গীতিকার শাহ আবদুল করিমের প্রতি। তিনি না থাকলে এই আকুল করা গান পেতাম না।

মৃত্যুপুরীতে

আমি দেখো কেমন মৃত্যুপুরীতে ঘুরি
এই কবর সেই কবরে ঘুরতে ঘুরতে
সেলফোনে তোমাকে বলি
আর কত জাগো তুমি
জাগতে জাগতে
তোমার গহনরাত সকাল হয় –

আমি মৃত্যুপুরীতে ঘুরি
ঘুরতেই থাকি
দুটো বর্ডার পার হই
তিনটা চারটা অথবা অসংখ্য
একসময় মধ্যাহ্নের পরে সংকেত আসে
চলে এসো হে
অনেক হলো —

চাঁপা ফুলের গন্ধে ম ম করছে আকাশ
কটেজের বারান্দায় সুন্দরী রীমা
সিগার ধরিয়ে ফিসফিস করে
ঘুমিয়ে থাকা প্রেমিকের সাথে –
ওর সাদা মুখ আর ভ্রুযুগলের ওঠানামা
দেখতে দেখতে মৃত্যুপুরীতে তোমাকে নক করি
সেলফোনে তোমাকে খুঁজি
হা-হা-কা-র কন্ঠে জিজ্ঞেস করি
বলো তো হে আমাদের মৃত্যু কত দেরী !!!

বঙ্গবন্ধুর প্রতি

আপনি এতোটা ক্ষমা না করলেও পারতেন
যেমন ধরুন ক্ষমা করে না সাপ তার শিকারকে
কেমন হা করে গিলে খায় –
অথচ আপনি সিংহের মতোন হেলেদুলে
নির্লিপ্ত চোখে তাদের ক্ষমা করে দেন –
তারা মুখে বিষ নিয়ে ফোঁস ফোঁস করছিলো
সুযোগ পেতেই পেখম ছড়িয়ে ফনা মেলে –
একুশ বছর এদেশের মানুষের রন্ধ্রে রন্ধ্রে
ঢুকিয়ে দিলো পরাধীনতার মন্ত্র
তাই আপনি পৃথিবী থেকে প্রয়াণ হলে
আপনার উত্তরসূরিদের সাথে আমরাও কাঁদতে কাঁদতে
হাজির হলাম হে মহান সূর্য সৈনিক –

দোযখ হা দোযখ – উপচে পড়ছিলো মদের গিলাফ
রসালো মিথ্যার মহুয়ার বন
অথচ পালাচ্ছিলো পাখির দল
ঘোমটা দিয়ে নেচেছে কসবী
আমরা উঁকি ঝুঁকি দিয়ে দেখি
ভাংগা পা নিয়ে বসে আছেন আচার্য
অতএব হে মহান ছুড়ি-কাঁচি দিয়ে কেটে দিয়েছি
পুঁজ ভরা দগদগে ঘা –
এখনো মার্চ পাস্ট করে চলছি
অস্ত্র জমা দিয়েছি ট্রেনিং তো জমা দেই নাই’

ক্রমশ নরকে

বৈষম্যহীন সমাজ কি গড়ে ওঠা সম্ভব বাংলাদেশে ? সম্ভব না। প্রকট একটা ভেদাভেদ এই দেশের মানুষের মধ্যে। এক দলের এতো বেশী অর্থসম্পদ আর এক দলের কিছুই নাই। এর মধ্যে উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্তের নীচেও যে শ্রেণী সেই দল বঞ্চিতশ্রেণী। তাদের শোষণ করার কি আছে ? তারা বেড়েই ওঠে কুকুর বিড়ালের মতো। বাংলাদেশে কুকুর বেড়াল বেড়ে ওঠে এর তার ঝুটা, উচ্ছিষ্ট খেয়ে। বাংলাদেশের সবচাইতে নীচের যে শ্রেণী সে শ্রেণী কি এই ভাবে বেড়ে উঠছে না ?

ওদের বেড়ে ওঠা রেলস্টেশনে, বস্তিতে, কানাগলিতে, ঘুপচিতে। ঘর নাই, থাকার জায়গা নাই, খাবারের সংস্থান নাই। এক বেলা আছে তো আর এক বেলা খাবার নাই। দিনে আনে দিনে খায়। কখনো দিনেও খাবার থাকে না। তাদের খাবার যোগার করতে হয় কঠিন পরিশ্রম করে। কঠিন পরিশ্রম করতে না চাইলে সহজ উপায় চুরি করা। আরো রিস্কিতে যেতে চাইলে হাইজ্যাক করা, ছিনতাই করা, ডাকাতি করা। ভিক্ষা করাও একটা পেশা হিসেবে নেয় কেউ।

তাদের ছেলেমেয়ে বেড়ে ওঠে বঞ্চনায়, তুচ্ছতায়, মায়ামমতাহীন এক প্রতিবেশে। এর ফলে যে জেনারেশন গড়ে ওঠে সে জেনারেশন হয় হিংসুক, চোর, ডাকাত, বিদ্বেষ-পরায়ণ, প্রতিশোধ-পরায়ণ। কাউকে শ্রদ্ধা করতে শেখে না, ভালোবাসতে শেখে না, যা থাকে তা হলো ঘৃণা ,অবদমন,বিদ্বেষ। উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নিন্মবিত্ত শিক্ষিত সমাজের প্রতি ঘৃণা অবদমন নিয়ে তারা বড় হয়। এর ফলে আমরা পাই কালা জাহাঙ্গীর, অমুক মুরগী মিলন বা এসব ছেলেপেলেদের।

এই যে ক্লাস গড়ে উঠছে তাতে কি আমার আপনার কিছু যায় আসে না ? (সবাই যে খারাপ হচ্ছে তা নয় )

যায় আসে। যখন ছিনতাই বাড়ে, হাইজ্যাকিং বাড়ে, চুরি ডাকাতি বাড়ে, রেপিস্ট বাড়ে তখন আমরা গেলো গেলো বলে রব করি। কিন্তু এই যে একটা সমাজ বেড়ে উঠছে এর প্রভাবে সবাই কিন্তু ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। সমাজ অস্থিতিশীল হচ্ছে। আজকে এক নারী রাস্তায় গণপিটুনিতে নিহত হন। রেপিস্ট বাড়ছে। সন্ত্রাস বাড়ছে। আজকে কেউই নিরাপদ না এই দেশে।

যখন এক নারীকে অথবা সমাজের কাউকে গণপিটুনিতে মেরে ফেলা হয় তখন খেয়াল করলে দেখবেন সমাজের এই শ্রেণীর মানুষগুলোই অংশগ্রহণ করছে। তাদের ভেতর থাকে ঘৃণার লেলিহান শিখা। ফাঁক পেলেই সে বেরিয়ে আসে। আমার আপনার ছেলে, স্বামী কিংবা ভাই এতে অংশগ্রহণ করছে না। সাধারণ মধ্যবিত্ত শ্রেনীর মানুষগুলো হিংস্র হয় না। কেনো না তার জীবন যাপনের জন্য অমানুষের মতো কঠিন পরিশ্রম করতে হয় না। খাবার অভাবে থাকতে হয় না। ঘুমের জায়গার জন্য শীত গ্রীষ্মকে পরোয়া করতে হয় না। অথচ তাদের করতে হয়েছে প্রতিদিন। করতে হয় প্রতিদিন। ঘুমের জন্যও পরিশ্রম। খাবার যোগাড়ের জন্য সংগ্রাম। সেই শিশুটি থাকতেই। ওদের কাছে আমরা আপনারা কি আশা করবো। যাদের দায়িত্ব আমরা কখনোই নেই নাই।

দেশের এক দল মানুষ যখন সবার টাকা নিজেরাই কুক্ষিগত করে তখন এক দল বঞ্চিত হবেই। দুর্নীতি না থাকলে হয়তো এমন চরম বৈষম্য সমাজে থাকতো না। অন্তত সমাজের এই শ্রেণীর অস্তিত্ব থাকতো না। এর সুদূর প্রসারী প্রভাবে সমাজের সবাই ক্ষতিগ্রস্থ হবে। হতে বাধ্য –

আপনি যিনি সমাজের উপর তলায় বসে আছেন সে আপনিও ক্ষতিগ্রস্থ হবেন। আপনার নাভিশ্বাস উঠবে। আহা এই দেশে থাকা যায় না। মোটেই যায় না। অথচ এই দেশকে নরক বানানোর জন্য আপনারাই দায়ী।

দুঃখ উদযাপন

সব গোপনীয়তা ঝেড়ে চলো
বাক্সভর্তি দুঃখ নিয়ে সমুদ্রে যাই
জলকেলি করি
সুখ উদযাপন করি
দেখো এই শীত শীত মন্থনে আমি কেমন কুঁকড়ে গেছি
ভোর দুপুরে একটা সাদা পাখি আমার মতো একা
যে ওড়ার কথা সে এই জুনের শীতে খালি গায়ে হাঁটে
আমি বালিতে মুখ গুজে সুখ খুঁজে বেড়াই
অতএব চলো আমরা সমুদ্রে দু;খ উদযাপন করি
তুমি ওড়ার জন্য পাখা লাগিয়ে ফু দেবে বলে
জ্বীন খোঁজ
তোমার ওখানে ভর গরমে জ্বীনেরা
আমার মত দুঃখ শীতে
নদী খোজে

তোমার নারী সুখে মন্থনের কথা বলে
আর আমি দুঃখ উদযাপনে
বাক্স পেটরা নিয়ে সমুদ্র যাই

মা

লেংচাতে লেংচাতে এল ধানি বুড়ি। বুড়ির সবগুলো চুল চলে গেছে, শরীর শিথিল। আজ দুপুরেও বউটা তাকে খেতে দেয় নাই। রাতে ছেলে আসলে তারে বিচার দিতে হবে।

আজকাল আর এরকম দুঃখে কষ্টে চোখে পানি আসে না। প্রথম প্রথম আসতো। ছেলে যখন বউ নিয়ে আসলো ঘরে। কি যে খুশী তার মন তখন। ছেলেতো একটাই। বস্তিতে দুই রুমের ঘর নিয়েছিল। এক রুমে ছেলে থাকবে বউ নিয়া আর এক রুমে সে। বউ এসে প্রথম প্রথম ভালোই ছিলো। কিন্তু একমাস পরেই তার আসলে চেহারা বের হলো। প্রথম প্রথম ছোটখাট বিষয় নিয়ে লাগলো। এরপর প্রায় রান্না বান্না করে নিজেদের রুমে নিয়ে জামাই বউ খেতে লাগল। বুড়ির মন খারাপ হতো।

বউ বলে যে নিজে লইয়া খান। আমি দিতাম ফারতাম না। এরপর এমন হয়েছে তার জন্য রান্নাও করে না। তাদের দুই জনের পরিমান রান্না করে। ছেলের কাছে বিচার দিলে প্রথম প্রথম বউকে বকতো। অমনি বউ না খেয়ে দেয়ে থাকতো। মুখ ঝামটা রাগ ইত্যাদি দেখাতো। এতেই ছেলে কাইত।

মা’কে বকা দেয়া বরং সহজ। মা তুমি দুইডা রাইনধা খাও না কেরে ? হের লগে ঝগড়া কর কেরে ? সে বৃদ্ধা, তার রান্না করতে ইচ্ছে করে না। এটা ছেলেকে বলতে যেয়েও বললো না। কিন্তু পেটের জ্বালা বড় জ্বালা। অতএব সে কষ্ট করে রান্না করতে গেলো। এভাবে কয়েকদিন যাবার পর দেখা গেল ভাত রান্না করার জন্য বউ চালও দেয় না। সেদিন চালের কথা বলাতে গেলে বউ তেড়ে আসলো। বুড়ি ভয়ই পেয়ে গেছিল।

আজ এসেছে পাশের ৪ তালা বাড়ির বাড়িওয়ালীর কাছে। বুড়ি ভাবতে লাগলো সে কিভাবে বলবে – মাগো ভাত খাই নাই। ভাত খাওয়ান চাইরটা।

না এভাবে না – সে চোখে পানি নিয়ে এসে বলবে – মাগো ভাত দেন চাইরটা। সারাদিন ভাত খাই নাই। ক্ষিধায় পেট জ্বলতাছে। আবার এভাবেও বলা যায় – আজ বউ এ ভাত দেয় নাই। চাইরটা ভাত খাওয়ান।

সে দরজায় নক করলো কিন্তু তার বুক ঢিপ ঢিপ করতে লাগলো।
কিভাবে বলবে সে – আবার তার কথা বিশ্বাস করবে কি না –
চিন্তায় পড়ে গেলো সে।

আহারে দুনিয়াটা এত কঠিন কেন ? চাইর টা ভাত খাইতে এত কষ্ট ! অভিমানে চোখে জল এল তার – কার উপর অভিমান কেন অভিমান সেটা সে বুঝলো না – চোখ মুছলো শাড়ির খুঁট দিয়ে।

অশ্রুস্নান

অশ্রুস্নান

পালাতে পালাতে পোতাশ্রয় খুজছিলাম –
যুদ্ধজাহাজের তলদেশে যে নাবিক শুয়ে ছিলো পাটাতনে –
ইচ্ছে হলো গলাটিপে ধরি – গলায় চাপ দিয়ে নীল রগ টেনে বের করি –
কিন্তু পেছনে একটা মাইনর ঢেউ
আর তার পেছনে একদল সাদা জুব্বাধারী –
এরা কি নরকের ফেরেশতা ?
ওদের তো অপরাধ করা বরাদ্দে নেই –
কেন ছুটে আসছিলো ভেজালী নিয়ে ?
সামনের বারান্দার বাড়িতে ওরা তিন বোন আর মা –
ডেকে নিয়ে দেখিয়ে দিলো সেখানে আর কোন উচু নীচু ঢেউ নেই
অথচ ভেজালী নিয়ে দাঁড়ানো ফেরেশতা আমার চুল টেনে ধরে – পা ভিজিয়ে দেয় –
একটা আচিল ছিলো গোপন কুঠুরীতে – হাত রেখেছি তার ভেজা গায়ে –
সেই অসহনীয় দেবতাদের বলেছি আমার স্নানের সময় হোল –
চোখের জলে কতবার স্নান করা যায় দেবতাসকল ?
04/06/2016

মারিয়াম

ওহে মারিয়াম ,তোমাকে বলা হয় নাই পিতার কথা ,
নবান্ন চলে গেলে কাশবনের একাকী বাতাসে নৃত্যে দোলার কথা
এবং যে হারিয়ে যায় বিষাদ নগরীতে তার কথা ।
বলেছি একাকী হারিয়ে গেলে নগরে
সেই অঙ্কুরীত জোছনা কি করে জোনাকীর সাথে অবিরাম বৌচি খেলে –
আমি জানি তুমি একাকী দাঁড়িয়ে থাকা মিনার ।
প্রেম নেই , ভালোবাসা নেই তুমি শুধুই একাকী মীনার হয়ে থাকো বছরের পর বছর –
তুমি বলো বিষাদ নগরীতে কবে তুমি রানী ক্লিউপেট্রা হয়েছিলে ?
একটু একটু করে বিষ পান করো – করতেই থাকো – আমি তোমার নীল চোখ দেখি
চোখে কি তোমার অনন্তকাল একটা হলুদ গ্রাম থাকে ?

মৃত্যু এবং আমি

সুফি সকল হাত উঁচু করো এবং বেহালা্র সুরে সুরে সাধনা অথবা মৃত্যুর গান করো। তোমাদের জিভের তালুতে ভুল মুদ্রা – পেছন থেকে টেনে ধরেছে খেতের নাড়া সকল।
রিকশা – পাহাড় তোমার চোখে চোখ রেখে বেরুণীর কথা বলেছিলো কাল।
হেঁটে যাওয়া সেই পথটায় কিশোর এবং তিনজন –
একজনকে সমুদ্র নাম দিয়েছো —
চোখের কথা বললেই বলেছো অভয়মিত্রের ঘাটে যাবে –
অথচ একটা খাদক বাসে উঠেই গন্তব্য এবং তুমি মাঝখানে আড়াআড়ি শুয়ে থাকো। দেখো দূরে শুয়ে আছে সন্ন্যাাসিনী – একটা সাপ তার পা বেয়ে হেঁটে যায় মৃত্যুকে আলিংগন করে –
আমারই মৃত্যুকে দেখা হলো না –

পাখি জীবন

পথ পার হতে গিয়ে শুয়ে গেছি রাস্তার জেব্রা ক্রসিং এ।
তিনটা গাড়ি আমার উপর উবু হয়ে দেখে হার্টের ভেতর পাখি বসে আছে।
অতএব তারা ইতিবৃত্ত জানতে গিয়ে জেনে গেলো আমার জীবন ছিলো পাখি জীবন –
মেঘের ভেতর পুড়ে পুড়ে আকাশের গায়ে হেলান দিয়ে দেখেছি তোমার গড়িয়ে যাওয়া জীবন।
আঁকাবাঁকা ট্রেনের সাথে তুমি দৌড়ে সীমানা পার হতে গিয়ে আটকে আছো মাঝনদীতে।

বুকের ভেতর থেকে পাখিটা উড়ে গেলে দৌড়ে ধরেছি তার পালক।
তুমি কেন হে কাঁদ দাঁড় করায়ে পথিক সব !!

মায়া মরীচিকা

কাটা কাটা চেহারার মেয়েটাকে দেখেই আমার মন খারাপ হলো। এত সুন্দর হয় মানুষ ?
মেয়েটার পা মোমের মতন – সাদা পাথর দেয়া একটা সেন্ডেল পড়েছে যেটা তার পায়ের রঙ এর সাথে মিলে গিয়ে একধরণের আলো ছড়িয়ে দিয়েছে –
আমি মন খারাপ করে মেয়েটার পিছু পিছু কিছুক্ষণ ঘুরলাম – আসলে এই শপিং মলে আসার যোগ্যতাও আমার নেই – আমার পকেট শুন্য প্রায় –
তবু এই গরমে ঢুকে গিয়েছি একটু এসির বাতাসে ভালো লাগবে বলে –
মেয়েটা আড়চোখে আমাকে দেখে একটু হাসি দিলো কি ?
আমি জানি সে আমার জন্য নয় –
সরে গিয়ে একটা র‌্যাকে সারি সারি বিদেশী পারফিউম দেখছি –
ছুঁয়ে দেখার ও সাহস নেই আমার –
কি লাগবে স্যার ?
কোনটা দেব ?
না না দেখছি ” ভাবছি কোনটা নেব ? বললাম খুব স্মার্ট কেতাদুরস্ত ছেলেটাকে –
মলের নিজস্ব ড্রেস আছে – ড্রেস পড়া ছেলেটা এখানের চাকুরে হবে –
লম্বা সুন্দর ছেলেটাকে নিশ্চয় নায়ক হলে বেশ লাগবে –
ভাবলাম –
দেয়ালে আয়নায় চোখ পড়লো আমার –
নিজের প্রতিবিম্ব দেখতে বেশ লাগে – লালচে চুল খোঁচা খোঁচা দাড়ি, চোখে কালো ফ্রেমের চশমা নিজেকে খুব ইন্টেলেকচুয়াল মনে হয় – আসলে কি তাই??
আচ্ছা এই শপিং মলে আমার একটা চাকুরী হলে তো বেশ হয় –
সেটা ভাবনা পর্যন্তই থাকে —
ইতস্তত করে বের হয়ে আসলাম –
সুন্দরী মেয়েটাও আমার পেছনে –
এক ঝলক আলো তার চোখে —
একটা অদ্ভুত সুন্দর গন্ধ — ম ম –
আমি আচ্ছন্ন —
হুস করে একটা গাড়ি এসে থামলো মেয়েটার সামনে —
একজন প্রৌঢ় নেমে এসে মেয়েটার কোমড়ে হাত দিল –
মেয়েটার আনত মুখে একটু আরক্তিম ছায়া –
আমার দিকে ফের চোখ তুলে তাকালো –
আমি তেমনি দাঁড়িয়ে –
মেয়েটার পায়ে নুপুর হলে আরো বেশ লাগতো –
ভাবছিলাম –
গাড়িটা ধুলো উড়িয়ে হাওয়া হয়ে গেলো চোখের সামনে থেকে –
আমার চোখে দুপুরের ঝাঁ ঝাঁ রোদ্দুর ——-

নদীর দিকে হাঁটছি

এরপর যখন পৃথিবী ওলট পালট হবে
ইস্রাফিল সিংগায় ফুক দেবে
আকাশ ধোয়ায় আচ্ছন্ন হবে
মানুষগুলো দৌড়াবে
মানুষহুলো বলবে
এই পৃথিবীর কি হলো ?
এলোমেলো বিক্ষিপ্ত চরনে
আমি তোমার কবরের কাছে বসবো
খুঁজে খুঁজে তোমার বুক থেকে আত্মা
বের করে
অবয়ব দেবো পুরাতন তোমার
চোখ নাক এবং বাঁ হাতের তালুতে ওষ্ঠ স্থাপন করে বলবো
আবার তুমি – তুমি হও
তখনো মানুষগুলো বলবে পৃথিবীর কি হয়েছে ?
কেনো পাহাড় ধুলো হচ্ছে!
সূর্য কেনো মাথার কাছাকাছি চলে এসেছে!
আমি তখন তোমার হাত ধরে শান্ত পায়ে
নদীর দিকে হাঁটছি
পৃথিবীর মানুষরা বিচ্ছিন্ন পায়ে দৌড়াচ্ছে
আহা এই পৃথিবীর হচ্ছেটা কি!!