নাজমুন এর সকল পোস্ট

আমি এই অন্ধকারেই খুঁজছি চাবিটা

এই ঘরে কেউ থাকে না
অন্ধকার কালো ঘর
আমার একটা চাবি হারিয়েছে
আমি এই অন্ধকারেই খুঁজছি চাবিটা
আমার আসলে শুধু চাবি নয়
আমি একটা পাখিও হারিয়েছি
তাকেও খুঁজছি —

একটা কালো বেড়ালের সন্ধানে আছি কতকাল
আমার মনে হয় ঐ বিড়ালটাও সেখানে আছে
একটা উজ্জ্বল চাঁদ লাগিয়ে দেব ঐ অন্ধকার ঘুপচি ঘরের গলিতে
ফকফকা জোছনার বিভ্রমে কালো বিড়াল
অথবা আমার টুকটুকে পাখি
আর চাবি সব খুঁজে নেব !

05/08/13

ও ঝরা পাতারে

**
এরপর ঝরা পাতা
এরপর বৃষ্টি শেষে খোলা আকাশ
এরপর রোদ্দুরে ঘেমে নেয়ে আমাদের সন্ধ্যেবেলা-

এক ঝরা বিকেলে তোমার আকাশ ঘুমোয়
আমার চালায় এসে
আমি জলের বিছানায় শুয়ে আকাশ দেখি
রাত হলে দেখি ঝিম ধরা জোনাকির জ্বলে ওঠা
নিভে যাওয়া –
অতঃপর জানি সব ভুলে যেতে হয়-
**
আজিব আদমি
পোড় খাওয়া আফিমে
বোইরাগি আকাশ –
ঋতুকালীন সহবত
সব ভুলে গেছি-
ভুকা নাগা সন্যাসী
তোর পিছে আমি
অর্ধশতাধিক বছর
বোষ্টমী হয়ে আছি —
**
উত্তরে হাওয়াটা গলে গলে পড়ে গেল পিচ বসানো রাস্তায়, দমকা বাতাসের সাথে খানিকটা জল গড়িয়ে তোমার উঠোনে, তিনি একটা জবা গাছের ডালের সাথে আটকে দিলেন দীর্ঘস্থায়ী জটা।
আমি একটা উত্তুংগ বাতাসের ধারা। দীর্ঘপথের সাথে বন্ধন শেষ হয় না আমার। ধোঁয়াশার সাথে সাথে তুমি কতটা জল ঢেলে দিতে পারো। আজকাল বুকের ভেতর শুধুই হাহাকার।
জমে জমে যাই অথবা বদলে বদলে যাই। উত্তরের বাতাসের সাথে তোমার উঠোনে কুয়াশা জমে গেলে তোমার সাথে বাউলিনী হয়ে গান গাইবো বনসাই পথে।
**
রবীন্দ্র সরনীর সাথে সাথে নেমে এসেছে তোমার বহুকথিত দার্শনিকতা। আমি ভুলেই যাই তুমি শাস্ত্রের সাথে উড়ে যাওয়া নাবালক বিষাদ পাখি। তোমার পাখায় লেগে থাকে বিষণ্ন রঙের
জলপাই পাতা। তুমি চেননা জলরং এর সব ছবি। তুমি হালকা বায়বীয় বাতাসের ঝলকা – তবু ডিজে পার্টির বহু চেনা বালিকার হাসির সাথে এলিয়ে এলিয়ে পড়।
উড়ে যাও আমার নাবালক পাখির অচেনা চোখ। আমি বিষাদ ভুলে যেতে চাই –
**
কোথা থেকে একদল বখাটে বাতাস আমাকে উড়িয়ে নিয়ে ফেলে ঝিলের জলে।
উড়ে যাওয়া একদল বাতাসের সাথে আমি নিরীহ দুর্বাঘাস।
সুদুর তুমি এক বখে যাওয়া নিকোটিন।
ঘাড় কাত করে ঝুঁকে ঝুঁকে শলাকার সাথে এলোমেলো পায়ে বিক্ষিপ্ত পদে চলে যাও জারুল বৃক্ষের শাখায়।
তুমি সেই বখে যাওয়া এলো বাতাস। আমাকে উড়িয়ে নিয়ে আছড়ে আছড়ে বুকের ভেতর ক্ষত তৈরী করো।
তোমাকে চিনি নাই এখনো।
অচেনা তোমাকে একা ঝিলের জলে ছেড়ে এলে
পাহাড়ের আড়ালে ভাব জমিয়ে ফেলো বাবুই এর দলের সাথে।
আহা! অবিশ্বস্ত বাতাস তুমি তখন !!

ঠুমরি

তোমার আমার অপেক্ষায় বসে থাকে তিনকোণা মাঠ, চারকোণা আকাশ
লেকের বেঞ্চি – আর দেয়াল গুলো বড় বড় প্রাসাদের
আমিও অপেক্ষায় থাকি, অথচ তুমি মীরা বাইয়ের ঠুমরি শুনো –
বাঁকা হয়ে হেঁটে হেঁটে পার করো তোমার বাদামী খোলস – কখনো নক্ষত্রের দিকে চাও
কখনো রজনী পার করো আকণ্ঠ সুরার সাথে।
আজ তোমার ওখানে সুরার সাথে মীরা বাই নেমে এলে দেখে নিও বাইজী নৃত্য।
আমার বাদামি প্রেতাত্মা জানে তুমি এখন আর কেউ নও, নিখিলেশ সে মরেই গেছে
আমিও বেঁচে থাকি অথবা মরে যাই –
তোমার ঠুমরী শোনা কতদূর হল – ও আমার অনাকাঙ্খিত প্রেমিক ?

সাঁওতাল মেয়ে

একটা বৈশাখ এলে আমি তার মুগ্ধ কালো মুখ দেখি, চুলের মধ্য দেখি একটা সাদা সাপ, আমি বলছিলাম সর্প, অথবা কাঁদো কাঁদো মুখের একটা যুগল ছবি। তোমার ভেতরে তখনো ইকারুসের ছবি, আমি বললাম রাখো রাখো, দূরে সরাও তোমার দুঃখবাদী ইকারুস। তুমি একটা সবুজ চনমনে বৃক্ষ গায়ে এঁকে আমাকে বলো তুমি কোথায় নবনীতা ? আমি তখন একটা খাল পার হই।

ধীরে ধীরে এখানের সুন্দরী সাঁওতাল মেয়েটাকে দেখি, কালো মুখের মধ্যে জলপাইগুরির চা বাগান এঁকে রাখা সে কাছে এসে বলে মাইজী ফুল নিবি ?

_____
ঈশপের গল্পের সাথে হেঁটে এসেছে রাত, আমি আলেকজান্দ্রিয়া পাড়ি দেই, একটা ঈগল মমির গায়ে হাত রেখে দেখি তার ওষ্ঠাগত প্রাণের উল্কাপাত। পথিক এসেছিলো পেছন দিক থেকে, তার হাতে হাত রেখে বলি, তুমি থামো এখানে – আধখানা চাঁদের হাত ধরে আমি অনেকটা দূর যেতে চাই – আমি পথিক হবো —

সুন্দরী বিলকিস এবং পাগলা জায়েদ -(অনুগল্প)

তারপর পাগলা জায়েদ যখন পুরো গ্রামে লাফালাফি ঝাঁপাঝাঁপি করে এলো এবং সবাইকে বলে বেড়ালো সে এই গ্রামের সবচাইতে সুন্দরী বিলকিসকে বিয়ে করবে সবাই হাসলো। বাচ্চারা তার দিকে ঢিল ছুঁড়তে লাগলো।
শুধু বিলকিস লজ্জায় ঘর থেকে বের হতে পারলো না। গ্রামের সবাই এসে বলতে লাগলো বিলকিসকে ঘটনাটা। এতে যে বিলকিস লজ্জা পেতে পারে অপমানিত বোধ করতে পারে এটা কেউ কেউ বুঝলেও বেশীরভাগই বুঝলো না। যারা বুঝলো তারা বিলকিসকে লজ্জা দেয়ার জন্য আরো বেশী করে রসিয়ে রসিয়ে বলতে লাগলো –
এমনিতে বিলকিস অসামান্যা সুন্দরী বলে এলাকার অন্য মেয়েরা ঈর্ষায় ভোগে। বিলকিসের এই নাজেহাল অবস্থায় তারা একধরনের পৈশাচিক আনন্দে আমোদিত হবার সুযোগ পেলো –

পাগলা জায়েদ ঘরে এলো। তার বয়স ৪৫ এর চাইতে কিছু বেশী। কাঁচাপাকা দাড়ি আর ভাংগাচোরা চেহারার কারণে তার বয়স আরো বেশী মনে হয়। জায়েদের বউ বললো শোনেন আফনে যে পাগল না সেইটা সবাই না বুঝলেও আমি বুঝি। আফনে বিয়াইতা মানুষ, বিলকিসের লাইগা পাগল অইছেন কেরে ? জায়েদ ঘরের মধ্যে দুইটা বড় করে লাফ দিল। এরপর বউয়ের কাছে এসে এভাবে সেভাবে হাত ঘুরালো, নাচানাচি করলো যাতে তাকে আরো বেশী পাগল মনে হয়।
তার বউ রাগে ফোঁস ফোঁস করতে লাগলো। তার ছেলেটা মাকে জিজ্ঞেস করলো – মা বাপজান কি হাছাই পাগল হইছে না শয়তানি করে ?
জায়েদ তার বউ কে বললো বউ ক্ষিধা পাইছে। ভাত দেও।
তার বউ রাগ করে ভাত না দিলে সে নিজেই ভাত খেয়ে নিলো।
মনে মনে ভাবতে লাগলো আচ্ছা এত সুন্দরী বিলকিসকে সে কি আসলেই বিয়ে করতে পারবে ? যদি না করতে পার তাহলে তার এত পরিশ্রম সব বৃথা। এই যে পাগল হয়ে থাকা এটা কম কষ্টের না। তার উপর পোলাপাইন গুলোন এত্ত শয়তান। যেদিন থেকে পাগলের অভিনয় শুরু করেছে এরপর থেকে বাহির হইলেই ইটা মারা শুরু করে। এ গুলানের জ্বালায় একটু শান্তিতে থাকা যায় না।

বিলকিসের বাবা স্থানীয় হাই স্কুলের হেডমাস্টার। তার স্কুলের দপ্তরী এই জায়েদ। এত্ত বড় সাহস তার, ভাবতে কষ্ট লাগছে। এলাকায় মুখ দেখানো কষ্ট হয়ে পড়ছে। ঘর থেকে বের হতেই লজ্জা লাগে। তার এত ছাত্র, অভিভাবক, গ্রামের মানুষ।

ঘরে এসে স্ত্রীর সাথে আলাপ করলেন কি করা যায়। বিলকিসের মা বললেন “কই কি ওরে আপনে ওর খালার বাড়িতে দিয়া আসেন। সে আপাতত ওইখানে থাকুক। জায়েইদ্দা হারামজাদারে ভালা কইরা একটা মাইর দেয়ার ব্যবস্থা করেন। মাইরের উফরে ওশুধ নাই।”

পরের দিন রাতের অন্ধকারে বিলকিসকে চুপিচুপি তার খালার বাড়িতে রেখে আসা হলো। জায়েদ কে শায়েস্তা করার জন্য এলাকার বড় ছেলেরা এক হলো। এর মধ্যে বিলকিসের প্রেমিক রুমিও ছিলো। সে জায়েদের এই বেয়াদবি সহ্য করতে পারছিল না।

জায়েদের মন আজ বড়ই বিষণ্ন। বিলকিসকে নাকি পার করে দেওয়া হইছে। তারে যেখানে পার করা হইছে খোঁজ করতে হবে। এরপর আবার সেখানে যাইয়া কাজে নামতে হবে। বিলকিসকে প্রথম যেদিন দেখেছে সে বিশ্বাস করতে পারে নাই মানুষ এত সুন্দর হইতে পারে।

অন্ধকার হয়ে আসছে।
জায়েদ বিষণ্ন মনে হাঁটতে লাগল গাঙ এর পাড় দিয়ে – সন্ধ্যার আধো আলো আধো অন্ধকারে এই গাঙকে লাগছে চিকন ফিতার মতো – সে ভাবলো তার সাথে যদি বিলকিসের প্রেম হয় তবে ভরা বর্ষায় সে আর বিলকিস এখানে বসে গল্প করবে – বিলকিসের হাতের উপর তার হাত – এটা কল্পনায় আসতেই সে পুলক অনুভব করলো – কিন্তু
হঠাৎই আক্রমন —
একদল মানুষ তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো – জায়েদ দৌড় দেবারও সময় পেলো না।

তোমার ঐ অপলক রোদ ছুঁয়ে যাওয়া

**
তুমি না এলে বৃক্ষের পাতার ক্রন্দনে আমার বুক ভারী হয়ে আসে।
অতএব হে আমার প্রাণদায়ী সখা ফিরে এসো এই নিঃস্ব শহরে।
তোমার জন্য সুরা রাহমানের শানে নুযুল পড়ে রেখেছি।
স্রষ্টার মত বলে দিতে পারি –
আমি তোমার আর কোন কোন অবহেলা সইতে পারি ?
**
তোমার এই অপলক রোদ ছুঁয়ে আসা
তোমার এই অপলক রোদ ছুঁয়ে যাওয়া
মরা রোদের আনচান চাওয়া
বিষণ্ন নদীর জল কেঁদে কেঁদে মেঘবতী হওয়া
সকলই আমার সাথে লীন লীন হওয়া
হে অবাধ্য যুবক তোমার সাথে
বোকা বোকা অপঘাতে
মরে যেতে চাওয়া

সমকালীন

যে অবক্ষয়ের নিউজ সামনে আসে তা একাংশ মাত্র। যদি শতভাগ নিউজ সামনে আসতো তবে আঁতকে উঠতো মানুষ। এতো অন্ধকার এই সমাজ ?

সমস্যা হলো এই যে যৌনতা জনিত শিশু ধর্ষনের যে অপরাধ এতে কারা জড়িত এই বিষয়টা এনালাইসিস করলে দেখা যাবে সমাজের নিম্নশ্রেণীর মানুষগুলোই জড়িত এতে। এদের শিক্ষা নেই, থাকার উপযুক্ত ঘর নেই,পুষ্টিকর খাবার নেই , গল্প করার বিষয় নেই ,- তবে একটা জিনিস আছে। সেটা হলো হাতে হাতে মোবাইল ফোন আর অল্প বয়েসীদের হাতে আছে এভাবে সেভাবে ম্যানেজ করে ফেলা এন্ড্রয়েড ফোন। এই এন্ড্রয়েড ফোনে আছে যৌনতার অবাধ প্রবাহ। যেমন অস্ত্রের কল্যান অকল্যান দুটি দিকের মধ্যে অকল্যাণের দিকটাই বেছে নেয়ার মতো।

সমাজের এই পশ্চাদ্গামী যে শ্রেণী সে আগেও ছিলো এখনো আছে। তাদের শুদ্র শ্রেণী বলে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হতো। মানবিকতার চরম বিপর্যয় সেটা।

শিক্ষার অবাধ প্রবাহ প্রয়োজন। শিক্ষাই পারে এই চরম বিপর্যয় থেকে রক্ষা করতে – জিপিএ ৫ পাবার সাধনাতেই এই বাচ্চাদের সময় কাটে সেখানে থেকে তুলে এনে প্রয়োজন মানবিক শিক্ষা, নিজেকে চেনার শিক্ষা। শুধু ভোগবাদই জীবনের সর্বস্ব নয় – এই বোধটা জাগানো প্রয়োজন।

আরো প্রয়োজন পাড়াতে পাড়াতে সংস্কৃতি চর্চা। যেমন প্রতি মাসে বা ছয় মাসে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হওয়া যেখানে গান, নাচ অভিনয় ইত্যাদি থাকবে। সরকারের তত্বাবধানে ফ্রী কালচারাল একাডেমী হওয়া উচিত যাতে অলস সময় গুলোতে যৌনতার কথা না ভেবে তাদের ভেতরের সুপ্ত প্রতিভার লালন করতে পারে চর্চা করতে পারে। তবে মস্তিষ্ক থেকে এসব যে বাজে চিন্তা সরতে পারবে।

**
ধর্ম নিয়ে মানুষের বিভেদ ভাল লাগেনা। মানুষের জন্য ধর্ম, ধর্মের জন্য যে মানুষ না এটা সবার মনে রাখা উচিত। যদি ধর্মের ভিত্তিতে মানুষের ভাগাভাগিই হতো তবে আজকে সারা বিশ্বে সব ধর্মের মানুষ ছড়িয়ে পড়তে পারতো না। খ্রীষ্টানের দেশে খ্রীষ্টান, মুসলমানের দেশে মুসলমান, বৌদ্ধদের দেশে বৌদ্ধরা থাকতো। উন্নত দেশগুলোতে আমাদের দেশের মানুষ ছাড়াও বিভিন্ন দেশের মানুষ যখন যাচ্ছে সেখানে যদি ধর্ম প্রথম প্রায়োরিটি হতো তবে আজকের বাংলাদেশ এতো রেমিটেন্সে সমৃদ্ধ হতে পারতো না। আমাদের দেশের মেধাবী ছেলেমেয়েরা সেখানে নিজেদের জায়গা করে নিতে পারতো না । দেশের বেকার সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করতো । দেশে অপরাধ বাড়তো । পরিবারগুলো স্বচ্ছল হতে পারতো না । অনেক পরিবার আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল হয়েছে তাদের ছেলেমেয়েরা দেশের বাইরে যাবার সুযোগ পেয়েছে , সেখানে নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণের সুযোগ পেয়েছে । যখন
কোন অরগেনাইজেশনে লোক নিয়োগ হয় তখন তার ধর্ম দেখা হয় না, দেখা হয় তার দক্ষতা, তার পড়াশোনা ইত্যাদি। সারা বিশ্বেও তেমনি। আমাদের দেশে যে উন্নত প্রযুক্তি চলে এসেছে সেই প্রযুক্তি সব মুসলমান তৈরী করেছে তা তো না। বেঁচে থাকার জন্য বিভিন্ন ভাষাভাষীর কাছে যেতে হবে, প্রয়োজনে আমাদের সবাইকে দেশ থেকে দেশান্তরে ছুটতে হবে। সেখানে ধর্মের চাইতে টিকে থাকাটাই গুরুত্বপূর্ণ।

“আজকের যুগে তাই ধর্মের ভিত্তিতে নয় – মানুষের জন্য মানুষ” এই ভাবনাতেই বিভেদ থেকে দূরে থাকা উচিত। আপনি আমি কেউ একা বাঁচতে পারবো না।

গালাগালি করে বিদ্বেষ তৈরী হয়। আর কিছু না। দুর্বলই গালি গালাজ করে। যিনি দায়িত্ববান তিনি জানেন তাকে কি করতে হবে তাকে কোথায় যেতে হবে। তিনি চুপচাপ কাজ করেন। তিনি গলাবাজী করেন না।
মানুষ মানুষের জন্য – ধর্ম নয় , মানুষই বড়।

সিজোফ্রেনিয়াক (অনুগল্প )

২৭/০৩/১৪

হাসিটা ঝুলে আছে লিজার ঠোঁটে।
ওরা আমাদের পাশের ফ্ল্যাটেই থাকে।
কাল লিজার হইচই চিৎকারে আমার ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছিলো।

কি হয়েছিল লিজা এমন হইচই করছিলে যে ?
জানতে চাইলাম –
ওর ঠোঁটের হাসিটা মুছে গেল –
এখন সে অনেকটা বরফ শীতল –
সে মাত্র বার বছর বয়েসী শ্যামলা ক্ষীণা কিশোরী । যেহেতু তার এখনো আঠারো হয়নি তাকে শিশুই বলা চলে। কিন্তু শিশু হলেও ওকে স্কুল থেকে এসে ঘরের সব কাজ করতে হয় এমনকি তরকারী কেটে রান্না বসাতে হয়।
ওর মা দুর্দান্ত সুন্দরী। লম্বা, ফরসা, স্মার্ট মহিলা। শাড়ি পড়লে শাড়ি ওনার পায়ের গোড়ালি থেকে কিঞ্চিৎ উপরে থাকে ওনার হাইটের কারণে – কিন্তু —
উনি হাতের কড়ে ১ থেকে ৪০ পর্যন্ত গুনেন। আজ ও গুনছেন ইতিমধ্যে দু’বার গুণতে গেছেন – ভুল হয়ে গেছে
আবার গুণবেন – এবার ঠিক না হলে আবার গুণতে হবে –
ওনার এত কাজ আর মেয়েটা বোঝে না –
চিৎকার চেঁচামেচি করে – এমন জ্বালায় না মেয়েটা !!
লিজা তরকারি কাটতে বসে – তাকে রান্না বসাতে হবে –
ভাইয়া আর আব্বু আসলে খেতে দিতে হবে –
ওর মা গুনতে শুরু করেছেন –
এবার ভুল হওয়া চলবে না – সাবধানে – ১, ২, ৩, ৪, ৫–

সিলভিয়া প্লাথের কলোসাস এবং অন্যান্য কবিতার প্রসংগ

কলোসাস সিলভিয়া প্লাথের জীবদ্দশায় একমাত্র প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ। ইংল্যান্ডে ১৯৬০ সালে এবং ইউ এস এ তে ১৯৬২ সালে কলোসাস প্রকাশিত হয়। কলোসাসে পাওয়া যায় একজন প্রতিশ্রুতিশীল কবিকে। মৃত্যু, প্রকৃতি, সমুদ্র, জল, বাৎসল্য রস, সম্পর্কের ভাঙচুর নিয়ে পাঠকের মুখোমুখি কবি।

কলোসাসের কিছু কবিতা আমেরিকার যে এডিশনটিতে প্রকাশিত হয়েছিল সেটি থেকে কিছু কবিতা বাদ দেয়া হয়েছিলো। কিছু কবিতার সাথে Theodore Roethke এর কিছু কবিতার সাথে সাদৃশ্য থাকার কারণে লিগ্যাল সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে এই আশংকা ছিলো সম্ভবত। যখন প্লাথ নিজেই Reothke দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন। তবু ঐ সময় কবিতাগুলো শুধুমাত্র প্লাথের মৌলিকতা এবং নিজস্বতা ছিলো এই ব্যপারে কোনো সন্দেহ ছিলো না। মাঝে মাঝে কোনো কোনো সমালোচক প্লাথের কবিতার অসামান্যতাকে খাটো করে উপস্থাপন করেছিলেন। এবং তার স্বামী টেড হিউজের লেখার প্রতি বেশী মনোযোগ আকর্ষণ করে সে ক্ষেত্রে সিলভিয়া প্লাথের অর্জনকে একটু খাটো করে দেখার প্রয়াস ছিলো। মৃত্যুকে প্লাথের কবিতায় বিভিন্ন দিক থেকে দেখার প্রয়াস লক্ষ্য করা যায়।

কলোসাসের প্রথম দুটি কবিতায় প্লাথ দুটি মৃত শরীরকে নিয়ে ভাবেন। “Two views of cadavar এ দুই অচেনা মানব শরীর অথচ বর্তমানে মৃত তাদের সাথে দুজন জীবিত প্রেমিক প্রেমিকার বোঝার অবকাশের প্রয়াস এবং কবিতাটি শেষ হয় কিছুটা আশাবাদ দিয়ে। যেমন নিশ্চিত মৃত্যুর আগেও কিছুটা জীবন থাকে, মমীকৃত শরীর মিউজিয়ামে – সকল মৃতই সাহসী Bleaker -এ Acknowledging that being e alive emplies eventual deathe.“ কবি মনে করেন মানুষ আসলে মৃত্যুর বন্ড নিয়েই পৃথিবীতে আসে এবং অন্য কবিতাগুলোতে মৃত্যু যেন জীবনের মুক্তি, জীবনের কোলাহল, কষ্ট যাতনা থেকে মুক্তির পথ। বই এর মাঝামাঝি অংশে তিনটি কবিতায় মৃত্যুর আইডিয়াকে উপস্থাপন করেন মৃত প্রাণীর মধ্য দিয়ে।

দুটো মৃত আঁচিল, সেখানে আছে fury, war এবং battle shouts – তারা জীবনের সাথে যুদ্ধ করে এবং এখন পাথরের মতই ধ্রুব তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করা হয়েছে। অনেকটা পারিবারিক অবস্থানের যে আবশ্যিক ধ্রুবতা জীবনের জন্য। jharrz medallion – এ কবি একটি মৃত সাপের কথা বলেন। যে হাসে, লাফায়, উদ্বেলিত হয় আনন্দে এবং উল্লেখ্য যে সাপটি আগুনের মত সুন্দর। তিনি অবশ্য সাপটিকে খাঁটি এবং মার্জিত বলেন। কাব্যগ্রন্থের শেষের দিকে mussel Hunterat Rock Harbor এ এই কবিতায় কাঁকড়ার মৃতদেহের কথাও উল্লেখ করা হয়। যদিও কাঁকড়ার শরীরের ভেতরের অংশ পরিষ্কারের কথা আছে তেমনি এর শরীরের বাইরের শক্ত খোলসকে ব্লিচ এবং পলিশ করা হয় এবং সাদা রঙ দ্বারা একে শুভ্র করা হয়। সাদা হলো খাঁটি এবং ধ্রুবতার প্রতীক। পানি এবং সাগরের কথা প্লাথের কবিতায় বার বার অনুরণিত হয়েছে। প্রথম কবিতা Lorelei তে জার্মান মিথোলজি ব্যবহার করা হয়েছে। এবং এমন যে এটি মৃত্যুকে মিমোলাইজ বা প্রতীকি করতে পারবে। এবং মৃত্যুর মধ্যমে শীতলতা আসতে পারে।

My sing of a world more full and clear than can be —
অন্য একটি কবিতায় একটি ডিমের খোসাকে মৃত্যুর সাথে তুলনা করা হয়েছে। এখানেও মৃত্যুর সেই দুঃসহ সৌন্দর্যের কথা সৌকর্যের কথা বার বার এসেছে।
কলোসাস একটি শক্তিশালী এবং জটিল কবিতা। এখানে তার জনকের কথা বলেন। তার পিতা তার আট বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। তার বাবাকে তিনি এখানে একটি শক্তিশালী খোদাই করা প্রতিমূর্তি হিসেবে ভাবেন। তাকে ইচ্ছে করলেই বাকশক্তি দিতে পারেন এবং এমন যে প্রতিমূর্তি তার সাথে কথা বলতে পারবে। তিনি তার কানে রাতে থাকবেন যেন বাতাস থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারেন এবং স্মরণ করান যে তার জন্য আজ আর কোনো শিপ আসবে না – কিন্তু এই দুঃসহ স্মৃতির সাথে তিনি চিরকাল থাকবেন।

Daddy প্লাথের সাহসী এবং সহিংস কবিতা যেখানে তার বাবার কথা সরাসরি বলেছেন। এর স্তবক অনেকটা ছড়ার মত এখানে তার বাবাকে তুলনা করেন ভয়ংকর পিতৃতান্ত্রিক ভ্যাম্পায়ারের সাথে, নাজি, শয়তানের সাথেও। এবং নিজেকে তুলনা করেন কনসান্ট্রেশন ক্যাম্পের ইহুদীর সাথে এবং শেষে ডিটেইলসে যেয়ে দেখান কিভাবে তার বাবাকে পেতে চান। পরোক্ষভাবে উল্লেখ করেন তার বাবার জায়গায় এখন তিনি তার স্বামীকে উপন্যস্ত করেন। কিন্তু তার স্বামীও তার বাবার মতই অহংকারী এবং সিদ্ধান্ত নেন যে তার বাবা এবং তার স্বামী দুজনের মৃত্যুই তার হাতে হবে।

মানসিক ভাবে এবং নৈতিকতার দিক থেকে Ariel অনেকটা অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে। এগুলো তার স্বামী টেড হিউজ প্লাথের মৃত্যুর পর আবিষ্কার করেন।
এবং তিনি এগুলোকে ১৯৬৫ সালে একত্রীকরণ করেন। এর অনেকগুলো কবিতাই লেখা হয়েছিল হেমন্তের ১৯৬২ সালে। এবং টেড হিউজের সাথে ছাড়াছাড়ি হবার পরে ১৯৬৩ সালের জানুয়ারীতে প্রধান প্রধান কবিতাগুলো প্রকাশিত হয়। Ariel এর কাহিনী শুরু হয় এক রমনীর ঘোড়ায় করে গ্রামাঞ্চলে পরিভ্রমনের বৃত্তান্তের মধ্যে দিয়ে। একজন নারীকে উপস্থাপন করা হয়েছে যিনি এক ভোর সকালে পূর্ণ শক্তি এবং সাহস নিয়ে একটি ঘোড়া নিয়ে গ্রামের দিকে যান।

সম্পূর্ণ নিশ্চল অন্ধকার হতে কবিতাটি শুরু যেখানে চালক ঘোড়ায় বসে অপেক্ষা করে। পাহাড় থেকে অদৃশ্য নীল আলো ক্রমশ স্পষ্ট হয়। এবং চালক এখানে ঈশ্বরের সিংহী’। তার অশ্বের জানুসন্ধি থেকে ,দ্রুতগামী খুড় থেকে নিজের ভেতর শক্তি অনুভব করা এবং চষা জমিতে সে অশ্ব নিয়ে নিজেকে বিলীয়মান করা মাটিতে এবং অদৃশ্য অবস্থা থেকে ক্রমশঃ তার বাদামী যুদ্ধাশ্বের সাথে বিলীন হওয়া এবং অধরা থেকে যাওয়া এই কবিতাকে ভিন্ন মাত্রা দান করে। এখানে রমনী নিজেকে একটি ঘোড়ার সাথে মেলান যেভাবে নিজে জ্বলন্ত সূর্যের সাথে উড়ে যান। হতে পারে এটি কবির কবিস্বত্তার আত্তাহুতির একটা লক্ষণ অথবা হতে পারে তার নিজের আত্মহত্যার পূর্বসংকেত।

Metaphorer এ কবি তার অন্তঃস্বত্তা অবস্থার মুখোমুখি। মেটাফোরিক্যাল ভাষায় এই সময়ের যুগপৎ আকর্ষন এবং বিতৃষ্ণার মনোভাব কবিতাকে হৃদয়গ্রাহী করে তোলে। প্রথমেই জ্ঞাপন করেন নিজেকে নয়টি সিলেবলের গুপ্ত রহস্যের (কবিতাটিও নয় লাইনের ) আধার হিসেবে। এরপর নিজেকে ভাবেন একটি হাতি অথবা একটি বড় বাড়ি হিসেবে। অথবা হতে পারেন একটা তরমুজ যার দুটি ছোট পায়ে পদচারনা এবং নিজের উদরকে মনে হয়েছে লাল ফলের মতন, যার পা দুটো সুন্দর কাঠের। অথবা নিজেকে পাউরুটির ইস্টের সাথেও মেলান, অথবা ভাবেন নিজেকে একটা নতুন টাকাসহ পার্সের মতন –

মেটাফোর ছোট কবিতা, একজন অন্তস্বত্তা নারীর শারীরিক অবয়ব আলংকারিক ভাষায় বর্ণনা করা হয়েছে। ভারী এবং বড় শরীর নিয়ে নারী এই সময়টায় অস্বস্তিপূর্ণ অবস্থায় থাকে। তখন নারী নিজেকে একটা হাতি অথবা একটা তরমুজ অথবা একটা লতানো লতার মতো ভাবে। যদিও সে জানে এই সময়টা তার শরীর চেহারা অসুন্দর এবং একটা গরুর ভেতরে বাছুরের মতো। সে জানে না সে এই সময়টায় কি করতে পারে।

Edge প্লাথের একদম শেষের কবিতা যেখানে এক মৃত নারীকে সত্যিকারের নিখুঁত নারী হিসেবে চিত্রায়ন করা হয়েছে। এখানে সে নারী খুশী যে অবশেষে একটা ক্লান্তিকর দীর্ঘ ভ্রমন শেষে তার রয়েছে দুটো মৃত ছেলে মেয়ে যারা তাকে পেচিয়ে আছে তার ভেতরে। এই কবিতায় অত্যন্ত নগ্ন ভাবে তার আত্মহত্যার ইচ্ছের বিষয়টি উঠে এসেছে।

সিলভিয়া প্লাথের কলোসাস, এরিয়েল, ড্যাডি সহ অন্য কবিতাগুলোতে মহত্ত্বের ঘনীভূত হবার ব্যপারটি প্লাথ জানতেন। প্লাথ অবশ্য সচেতন ছিলেন নিজের ভেতর অনুভব বিচ্ছুরিত হওয়া এবং তাকে মহত্তম অনুভুতি দিয়ে সার্বজনীন করার ব্যপারে। তাঁর কবিতাগুলোর ভেতরে শক্তির ব্যপারে নিশ্চিত ছিলেন। তার মা এর কাছে লিখেছিলেন এই বলে যে এই কবিতাগুলো হলো তেমনি কবিতা যেগুলোর দ্বারা মানুষ আমাকে মনে রাখবে। Larkin প্লাথের কবিতা সম্পর্কে বলেছেন – তার কবিতাগুলো বেশী প্রসারিত এবং উচ্চ তীক্ষণ স্বরবিশিষ্ট যেটা সাহিত্যে আরো বেশী উচ্চকিত হবার দাবী রাখে। তিনি আশ্চর্য ছিলেন প্লাথের এই প্রতিভা নিয়ে যেটি সমাচ্ছন্ন এবং আবিষ্ট রাখে পাঠককে তার লেখার প্রতি।

চতুর্দশ প্রজন্ম

চতুর্দশ প্রজন্ম

মার্চের এক বিকেলে আপনি হারিকিরির উপত্যকায় বসে ভাবলেন – এই অচূর্ণ বিয়োগ ব্যথায় উপশমের মলম লাগালেও ব্যথা যাবে না। অতএব হে ভগিনী এবং ভাই সকল আসুন পতাকা তলে সমবেত হই – কাঁচা মাংস ভক্ষণ করে সংহতি প্রকাশ করি। পাখির ডানায় লুকিয়ে রাখি নারী পতিতাদের। পুরুষ সকল তাদের চতুর্থ স্তন নিয়ে বন্দনা করুক ‘আরো বন্দনা করুক পৃথিবীর বাসে চড়ে যে নারী ইজ্জত হারায় তার নিতম্বের’। যে খোলা কমলা ফেরিওয়ালার কাঁধে চড়ে পৃথিবীর ওজন মণ্ডলে ভাসছে তারা আজ বলুক – নারী পুরুষ মিলিত হয়ে জন্ম নেবে নতুন এলিয়েন – ওরা আমাদের চতুর্দশ প্রজন্ম — —
**

রিও

রিওয়ান রাওয়ান থেকে একদম ছোট শব্দ রন হলে রাওয়ান বলেন – সবচাইতে ভালো হয় আমাকে রিও বলে ডাকলে। আসলে সে একজন বিজ্ঞ রিকসাওয়ালা। প্রতিদিন হাঁটে – অথবা রিকসায় যায় অথবা দৌড়ায় অথবা লনের সামনে হাঁটে। হাঁটার সাথে সাথে তার চেহারা বদলে যায় একদম তেল চর্বির সাথে একাকার –
একটা মার্সিডিজ হলে বেশ মানাতো। এটা সে প্রায়ই ভাবে যদিও রিকসাটা তার তিন চাকার এবং অবহেলার জন্য তার স্ত্রী আর নাতিপুতি মানান সই। কিনতু সাথে দিয়ে যখন যায় একটা ডালপালায় ঘেরা শতবর্ষী বট গাছ তখন সে একটু আকা বাঁকা হয়ে দেখে। এখানের পুকুরটা বেশ দেখতে সে ভাবে আর বলে আসলে সে বলে না ভেতর থেকে তাকে নবী ডাকে – এটা সে ভাবে অথচ তাকে কেউ ডাকে না। ডাকটা কি আকস্মিক নাকি সজনে ডাঁটার মত শুধু সিজনাল ?

বিরলে তুমি সখা একফালি চাঁদ

রাতে নাকি তোমার মেটাবলিজম ভালো হয় না।
গ্রীন টি এর সাথে কতকটা স্বেদবিন্দু নিয়ে দেখো চোখের জলেরও কিছু বলার ছিলো –
পুবপাড়ার রেস্তোরায় এক দঙ্গল মাছির মধ্যে আমার পায়ের গোড়ালিতে ছিলো ইডিপাসের মর্মান্তিক ফাঁসের রজ্জু।
তুমি বললে চারটা আকাশ একসাথে করলেও ক্ষরণের জ্বালার তীব্রতা কমে না – খুনী হতে হয় –

বধির হতে চেয়েছিলাম – বার বার কালীদহের কাছে প্রশ্ন – তুমি এমন কেন হে ?
পাহাড়ের কোলে তোমার বুকের এক একটা গাঁথুনি খুলে দিতে গেলে নির্জনতা ভেদ করে স্বরায়ন —
বোঝে না চশমার আস্তিনে ঢাকা হিমালয় পাহাড় –
আক্ষেপ করো ক্যাকটাসের মতন – তুমি তো সমভুমি নও সখি !!

ভালোবসে যদি সুখ নাহি

ইফা প্রজাতি সংখ্যায় বেশী ছিল এবং যেটা হয়না তা হলো ইফাদের দু হাতে পাঁচটি আঙ্গুল –
আপনি সেই ইফা প্রজাতির পঞ্চদশ পুরুষ –
বৈশাখী ঝড়ে লণ্ডভণ্ড জমিনে দাঁড়িয়ে থাকা তালগাছের সবচাইতে দুর্বল পাতায় আপনার এক পা।
যেমন আমি ধরতে পারি সফেদ পাঞ্জাবীতে আপনাকে ভালো লাগে দেখতে কালোতে আপনি পুরোই মেহেদী পাতা।
এবং হাসির রং হলুদ।
বেশ বুঝতে পারি যখন বলেন প্রথম পর্বে আমি তাকে নিয়ে বইমেলায় এক কোটি আলোক বর্ষ পার হয়েছি –
ভ্যালেন্টাইন দিবস মানি না – ৩৬৮ দিন আমি ভালোবাসি –
এবং সেদিন ভালোবাসার রঙ ছিলো মধ্যাকর্ষণ ভেদ করা দুঃসাহসী রকেট।
আপনি থেতলে দেন তার চিবুক, ঘন বাতাসের গায়ে আঠালো রম্ভা
চতুর্মাত্রিক কিছু চৈনিক হরফ এবং লালে মুঠোফোনের কিছু রিং টোন –
রাবিন্দ্রিক গানের কথায় বলে যান – ভালোবসে যদি সুখ নাহি –
তবে কেনো মিছে ভালোবাসা

মেঘদুপুর

তবু তামাদি কালি ঝুলি গুলো মুছে যায় না একেবারে ,
তুই বলেছিলি চল স্নান ঘরে – নিষেধ করিনি
আনচানে সময় , মধ্যদুপুরের ঘুঘুর ডাক –
বলতো এত বড় বাড়ি গুলো কেন আকাশের চুড়া ভেদ করেছে ,
সন্ধ্যা হলেই চাঁদ হাঁটতে থাকে –
লোকালয়ের এক কোটি মানুষকে আমার পোকা মনে হয়
তুই একটা আলেয়া বাতাস –
চলছি মহাসমরের তিনতলা ঘরের সব চাইতে কোনার ঘুলঘুলিতে
আমার মায়া পড়ে থাকে –
হ্যাঁচকা টান দিলে পড়ে যাই –
তুই সবটা প্রেমিক আবার কিছুটা সামন্ত –
আমার হাত ধরে বলিস ব্যথা কইরে বাসন্তী ?
তোর বুকে বেশী !
এতো বেশী মায়া কেন তোর চোখ ?
অবেলার আকাশ ভীষন মেঘলা –
বাসন্তী বাতাসে আমার ঘুম পায় !!

আমার মুক্তি আলোয় আলোয়

সেদিন ছিলো ঝকঝকে দিন। সকালে ঘুম থেকে উঠেই মন ভালো হয়ে গেল। আমার মন এমনিতেই ফুরফুরে থাকে। অকারণেই আমি হাসি খুশী থাকি। আজ ও হাসিখুশি থাকার দিন। কিন্তু নিজের মনের কাছে আতংকে আছি। আজকাল আতংকে থাকি প্রায়ই। স এর যন্ত্রনায় পাগল হবার মতো অবস্থা আমার। রু এটা করো না, রু ওটা করো না। এটুকুতে সীমাবদ্ধ থাকলে সমস্যা ছিলো না। স মারামারি শুরু করে। যেমন সেদিন দরজা খুলতে এক মিনিট দেরী হলো। সে ঘরে ঢুকে আগুন চোখে আমার দিকে তাকালো। আমি হাসলাম। স্যরি বললাম। ভয়ে ভয়ে তাকালাম তার দিকে। কেনো দেরী হলো দরজা খুলতে বলো, স রেগে আমার কাছে জানতে চাইলো।

আমি কি বলতে চাইলাম জানি না। সে ধুম করে চড় মারলো আমাকে। বোকার মতো কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলাম। রাগে আমারো মাথা নষ্ট – আমি বললাম বের হও তুমি ঘর থেকে। সে বের হয়ে গেলো।
পরদিন আমার একই কাণ্ড।
আর একদিন ওর এসব কাণ্ডকারখানা জানানোর জন্য ওর এক বন্ধুকে ফোন করেছিলাম। স জালিবেতের মতো একটা মোটা বেত লুকিয়ে রাখে। ওর মনমতো কিছু না হলেই সে এলোমেলোভাবে পেটাতে থাকে।

সেদিন ও সে ঘরে খুব হাসিখুশি মুড নিয়ে ঢুকলো। কিন্তু আমি আতংকে আছি। আতংকে ওর দিকে তাকাতে পারছিনা। ভয়ে আমার গা হাত পা ভেতরে ভেতরে কাঁপছে। সে ঘরে ঢুকে বললো ভাত দাও। আমি সুন্দর করে গুছিয়ে ভাত দিলাম। সে হাসলো।
জানো রু আজ কি হয়েছে ?
এরপর ওর কাজের জায়গায় ওর বন্ধু কি কি কাণ্ডকারখানা করেছে তাতে কি কি হাসির খোরাক হলো সে বলতে লাগলো। তার কথাবার্তার ধরন সুন্দর। যে কেউ মুগ্ধ হয়। সম্ভবত আল্লাহ প্রদত্ত ক্ষমতা আছে। মানুষকে মুগ্ধ করার অবিশ্বাস্য ক্ষমতা নিয়ে সে জন্মেছে। কিন্তু আমি ভেতরে ভেতরে ভয়ে কাঁপছি। জানি না সে কি করে আজ !!
আমি কিছু শুনলাম কিছু শুনলাম না। ওকে খুব হাসিখুশী দেখলেও আমার ভয় লাগে। এরপর হয়তো কোনো ভয়াবহ কাণ্ড ঘটানোর জন্য সে অপেক্ষা করছে। স ভাত খেয়ে নীরবে হাত ধুলো। রু গুছিয়ে রাখো।
বলে সে বিছানায় গিয়ে বসলো।
আচ্ছা রু শুনো –
কাছে এসো।
আমি কাছে গেলাম। স আগুন চোখে আমার দিলে তাকালো।
কাকে ফোন করেছো তুমি ?
আমি ভয়ে ভয়ে বললাম কাউকে করিনি।
তুমি সকালকে ফোন দাও নি ?
আমি বললাম না।
তোমার মোবাইল আনো।
আমি আনলাম। সে খুঁজেও নাম্বার পেলো না। কারণ আমি ডিলিট করে ফেলেছি। রু তুমি ফোন নাম্বার ডিলিট করেছ কেন ? বলেই সে আমার চুল টানলো শক্ত করে –
আমি বললাম তুমি দেখলে রাগ করবে তাই।
তুমি ডিলিট করেছো তাতে আমি আরো বেশী রাগ করেছি।
স এর চোখে আগুন মুখে হাসি।
সে তার লুকোনো জায়গা থেকে বেত নিয়ে এলো।
আমি আতংকিত হয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম।
স এর রাগের স্থায়িত্ব কাল বেশী। ঘন্টাখানেক থাকে। সে আমার চুল ধরে টেনে এমন পেটাতে লাগলো – আমি জ্ঞান হারালাম –

স এর সাথে প্রথম দেখা হয় এক ছবির প্রদর্শনীতে। স এর গভীর চোখ, মদির হাসি, গভীর আবেগ মথিত উচ্চারণ – আমি প্রেমে পড়ে গেলাম। আমাদের প্রথম দিককার সময় গুলো স্বপ্নের মতো কেটেছে – সারাদিন ঘুরে বেড়ানো, কবিতা পড়া, গান শুনতে যাওয়া, থিয়েটারে যাওয়া – আহ ! কি সময় !

প্রতিদিন ভাবি স কে ছেড়ে যাবো। কিন্তু স যখন সামনে এসে ক্ষমা চায়, আমাকে বলে দেখো তুমি আমার কথামতো চলো না বলেই আমি তোমাকে মারি। আমি ওকে বলি আমি শুনি তো। কিন্তু সব কথা কি শোনা যায় বলো স ? তুমি যা বলো সব লজিকেল না।
না, সব লজিকেল। তোমাকে শুনতেই হবে।
আমি কিছু বললাম না। একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম।
মনে মনে বললাম – আহা এতো ভালোবাসি – কেনো ভয়ে থাকো !!

একদিন খুব সকালে ঘুম থেকে উঠলাম। স গভীর ঘুমে। এতো ইনোসেন্ট লাগছে ওকে – মানুষ ঘুমালেই সবচাইতে নিরীহ – আহা !
ওর মুখে ঠোঁটে হাত বুলিয়ে দিলাম – কি যে ভীষন ভালোবাসি – চোখে জল আমার –
দরজা খুলে বের হলাম। এতো সুন্দর হয় ভোর – কতদিন আমি দেখি না –

ঘরে ফিরবো না – আর ফিরবো না ঘরে আমি –
নিজেকে বললাম ফিসফিস করে –

কিন্তু কোথায় যাবো আমি ? তন্ন তন্ন করে কোথাও যাবার মতো জায়গা খুঁজে পেলাম না – তবু তবু আমাকে যেতে হবে –

আচ্ছা মানুষ তো অমৃতের সন্তান – সে হারতে জানে না –
দৃঢ় পদক্ষেপে আমি হাঁটতে লাগলাম –
উফফ ! আজকের দিনটা এতো সুন্দর কেন !!

বালিহাঁস

আমি এক ভাষিক শহরে বালিহাঁস হয়ে নামি
দ্রৌপদী শহর আমার
তোমার গায়ে লেগে থাকে গুচ্ছ গুচ্ছ মেঘ
উন্মুক্ত করো তোমার বক্ষ,ঠোঁট আলজিভ
চোখ মেলে তৃষ্ণা জানাও —

এই শহরে তুষার নেই
মঙ্গলবারতা পড়ে যে নারী
সে অধিক সুখী আমি জানি
আমার বালিহাঁস শরীর টুকরো টুকরো
শিলাবৃষ্টি হয়ে নামে
তোমার গায়ের শাদা পালক
খসে খসে খরখরে রোদ্দুর হয়ে ওড়ে —