রিয়া রিয়া এর সকল পোস্ট

প্রিয় মন

সে যে আছে মনের গহীনে
আত্মভোলা বেশ
ভালবাসার রেশ
শ্রীরাধিকা আমি গোপির বৃন্দাবনে।

সে যে আছে নীরবে ঘিরে
গভীর দু নয়ন
প্রেম ভরা মন
রাই আমি তারই যমুনা তীরে।

সে যে আছে ব্যাকুলে আকুলে
মনে প্রিয় সুর
কথা সুমধুর
গোপিনী আমি তারই গোকুলে।

সে যে আছে শ্রাবণে প্লাবনে
মন অন্তর অঞ্চলে
সাঁঝ সকাল চঞ্চলে
বিরহিনী আমি তারই প্রেমানলে।

আছি আমি তারই মায়ায়
ভীষণ গোপনে
শয়নে স্বপনে
দেখা দেন তিনি চেনা অচেনায়।

পৃথিবীর সবচেয়ে নির্মল সম্পর্কের নাম কি?

যদি জানতে চাওয়া হয়, পৃথিবীর সবচেয়ে নির্মল সম্পর্কের নাম কি? জানি, চোখ বন্ধ করে সবাই বলবে বন্ধুত্ব! আচ্ছা বন্ধুত্ব মানে কি? বন্ধু মানে আত্মার আত্মীয়, যে আত্মীয়তা কখনো কখনো রক্তের বন্ধনকেও ছাড়িয়ে যায়। “বন্ধুত্ব” হচ্ছে দুই অথবা তার অধিক কিছু মানুষের মধ্যে একটি সম্পর্ক যাদের একে অপরের প্রতি পারস্পরিক স্নেহ রয়েছে।” সত্যিই কি শুধু স্নেহ?

বন্ধুদের মধ্যে সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত? সেটা নিয়ে অবশ্য বিভিন্ন রকমের মতভেদ আছে। আছে বন্ধুত্বের রকমফেরও! নিশ্চয়ই ভাবছেন, বন্ধুর আবার রকমফের কি? বন্ধু তো বন্ধুই! একটু দাঁড়ান। আর খানিক সময় থমকে থেকে ভাবুন তো, আপনার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধুটির বন্ধু তালিকায় প্রথম নামটিই কি আপনার? সেও কি আপনাকে আপনার মতোই বন্ধু ভাবছে?

আসলে বন্ধুত্ব কোনো সূত্রের মাপকাঠিতে মাপা যায় বলে মনে হয় না l তবে বন্ধুত্ব হলো ভালবাসার একটি নির্যাস, যা দুটি মনের আত্মবিশ্বাস, সু-সময় কিংবা অসময়ের সঙ্গী। বন্ধু জীবনে অক্সিজেনের মতো। যে কথা কাউকে বলা যায় না, সেই গোপন কথার ঝাঁপি নিশ্চিন্তে খুলে দেয়া যায় বন্ধুর সামনে। বন্ধু কখনো শিক্ষক, কখনো সকল দুষ্টুমির একমাত্র সঙ্গী। বন্ধু মানে বাঁধ ভাঙা উচ্ছাস আর ছেলেমানুষী হুল্লোড়। সব ধরণের মানবিকতা বোধ ছাপিয়ে বন্ধুত্বের আন্তরিকতা জীবনের চলার পথে অন্যতম সম্পদ। বন্ধু হলে যাকে বিশ্বাস করা যায় চোখ বন্ধ করে, ভরসা করা যায় নিজের থেকেও বেশি, নির্ভর করা যায় সবচেয়ে বেশি, বন্ধু, যে কোনো দিন আপনার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করবে না, বন্ধু, যাকে মনের কথা নিশ্চিন্তে বলা যায়, বন্ধু, যে বিপদে আপদে আপনার পাশে থাকবে।

সামান্য ভুল বোঝাবুঝি থেকে সহসাই বন্ধুত্বের সম্পর্কে ফাটল ধরতে দেখা যায়! যে ব্যাপারটা সামান্য আলোচনার মাধ্যমেই মিটে যেতো, তাকে বছরের পর বছর মনের মধ্যে পুষে রেখে বন্ধুত্ব নষ্ট হবার দৃষ্টান্তও নিতান্ত স্বল্প নয়। আসুন জেনে নিই বন্ধুত্বকে সফল করার কিছু টিপসঃ

** ভালো শ্রোতা হোন। বন্ধুর সাথে আড্ডায় কেবল নিজের কথাগুলোকেই প্রাধান্য দেবেন না। অন্যকেও বলতে দিন। আলোচনায় উৎসাহিত করুন। বন্ধুর সমস্যাগুলো কে গুরুত্ব দিন। বন্ধুর কাছে গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয় নিয়ে ঠাট্টা করবেন না। বন্ধু মানেই কেবল আমার সবটুকু কথা তাকে বলে ফেলা নয়! বরং তার কথাগুলোকেও আপন করে নেয়া!

** বন্ধুত্বে বিশ্বাস রাখুন। তৃতীয় কোন পক্ষের বক্তব্যের জের ধরে সম্পর্কে ফাটল ধরাবেন না। মুখোমুখি আলোচনায় বসুন, সরাসরি জানতে চান। প্রয়োজনে তৃতীয় পক্ষকে সামনে রেখে তথ্যের সত্যতা যাচাই করুন। অকারণে দায়ী করবেন না। বন্ধুর কোন কিছু অপছন্দ হলে অন্যের কাছে সমালোচনা না করে সরাসরি বলুন। শুনতে তিক্ত হলেও ফলাফল মধুর হবে।

** বন্ধুত্বে সৎ থাকুন। মিথ্যা তথ্য কিংবা ধারণা দিয়ে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়বেন না। আপনি যা সেটাই প্রকাশ করুন। অযথা কৃত্রিমতা বর্জন করে নিজের ব্যাক্তিত্বকে প্রদর্শন করুন। বন্ধুর বিশ্বাস করে বলা গোপন কথাগুলো খুব সহজেই অন্যকে বলে ফেলবেন না। মনের মতো বন্ধু পেতে সততার কোন বিকল্প নেই। সততা এমনই একটা জিনিস যা, প্রিজারভেটিভ ছাড়াই সম্পর্কের বৃক্ষকে সতেজ রাখে।

** বন্ধুত্বকে টাকা-পয়সা, শ্রেণীভেদ, সম্পদ, ক্ষমতা, পদমর্যাদার নিক্তিতে পরিমাপ করবেন না। বন্ধুত্বে অর্থের লেনদেন কে এড়িয়ে চলুন। নিতান্তই অসম্ভব হলে পূর্ব নির্ধারিত প্রতিশ্রুতি রক্ষা করুন। বন্ধুর অভাব কিংবা সীমাবদ্ধতাকে তার দুর্বলতা ভাববেন না। সামান্য একটু করুণা সুদীর্ঘ বন্ধুত্বকে নষ্ট করে দিতে যথেষ্ট। বন্ধুকে করুণা নয়, সম্মান দিন বন্ধুকে।

** সমালোচনা করুন, তবে কটুক্তি নয়। বন্ধুর সমালোচনা বন্ধুরা করবে নাতো করবে কে? তবে সমালোচনার ভাষা নির্ধারণে সচেতন হোন। একবার ভুল করলে তাকে ছুঁড়ে দেবেন না। শুধরে নিতে উৎসাহ দিন। প্রয়োজনে পাশে দাঁড়ান। বিনয়ী হোন।

** বিপরীত লিঙ্গের বন্ধুত্বকে নির্মল রাখুন। ছেলে মেয়েতে বন্ধুত্ব হয় না, কথাটি অনেকাংশেই ভুল। বন্ধু যদি বিপরীত লিঙ্গের হন, তার অনুভূতির প্রকাশভঙ্গীও কিছুটা আলাদা হবে, এই সত্যকে মেনে নিন, এবং বিষয়টিকে সম্মান করুন। অযথা অস্বস্তির সৃষ্টি করবেন না। দৃষ্টিশোভন দূরত্ব বজায় রাখুন। আপনার আচরণে যেন তাকে অকারণে বিব্রত হতে না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখুন।

** সরি বলুন। ছোট্ট একটা সরি বিশাল দূরত্বকে এক নিমেষেই দূর করতে পারে। বন্ধুত্বে ইগোকে দূরে সরিয়ে রাখুন। মনে রাখবেন, এই ইগোতে কেবল বন্ধুকেই হারাবেন না, নিজেও হেরে যাবেন।

** বন্ধুত্বকে সময় দিন। নতুন বন্ধুদের পাশাপাশি পুরোনো সম্পর্কগুলোকে ঝালাই করে নিন। দৈনন্দিন ব্যস্ততায় পুরোনো বন্ধুত্বকে হারিয়ে ফেলবেন না যেন! আপনার বন্ধু আর আপনার মাঝখানে কেবল এক মুঠোফোন দূরত্ব। বন্ধুকে মনে করুন, পুরোনো স্মৃতি রোমন্থন করুন।

** হাতখানা বাড়িয়ে দেখুন, বন্ধুরা সব পাশেই আছে। চুপিচুপি, লুকিয়ে। হয়তোবা সেই বন্ধু প্রতিনিয়ত অপেক্ষা করছে কখন আপনি তার বন্ধুত্বের গুরুত্ব ও মূল্য দেবেন।

শেষে বলি বন্ধু হল : “A clove of love – A pinch of concern – A speck of care – A sack of support – A ray of hope – A spoonful of trust – A drop of loyalty – A spread of friends – A circle of activities Mix them well, and with a bit of effort, Friendship is Formed.”

প্রশ্ন… হীনমন্যতা কী?

এই লক্ষণটিকে, পরনির্ভরশীল হওয়া, অপরাধবোধে ভোগা, অসহায় বোধ করা, পরিচয় সঙ্কটে ভোগা, নিরাপত্তাহীনতায় ভোগা, ও আত্মবিশ্বাসের অভাব বলে মনে করা হয়। আপনার কোন বন্ধু হয়তো মডেলদের মতো দেখতে অথবা আপনার কোন বান্ধবী দেখতে বেশ সুন্দরী। আপনি তাদের মতো সুন্দর নন। এরকম হাজারো অভিযোগ, হীনমন্যতা আছে অসংখ্য মানুষের। হীনমন্যতা আসা একদম অস্বাভাবিকও নয়। কে ই বা চায়, কারো চেয়ে পিছিয়ে থাকতে? কেউ চায় না। সবাই ভালো থাকতে চায়, সুন্দর থাকতে চায়, সুখী হতে চায়।

কিন্তু আপনি একবারও কি ভেবে দেখেছেন, আপনার শক্তির জায়গাটা কোথায়? আপনার সবাই কি দুর্বলতা? আপনি সারাক্ষণই ব্যস্ত থাকেন নিজের নানান দুর্বলতা নিয়ে। কিন্তু একবারও ভাবেন না, আপনার মধ্যেও হয়তো এমন কিছু আছে, যা আর কারো মাঝে নেই। সুন্দরভাবে বাঁচতে গেলে, সুখী হতে গেলে এসব চিন্তাভাবনা আপনাকে বাদ দিতে হবে।

১. নিজের আত্মমর্যাদা বাড়িয়ে তুলুন :
মনোবিজ্ঞানের ভাষায় আত্মসম্মান বলতে নিজের মর্যাদা সম্পর্কে একজন ব্যক্তির মনোভাব বোঝানো হয়। সাফল্য, হতাশা, অহংকার ও লজ্জার অনুভূতি এই মনোভাব গঠন করে। একজন ব্যক্তির আত্মসম্মান তার আত্মসচেতনতার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আত্মসম্মানের অভাব বা হীনমন্যতা একজন ব্যক্তির সম্পর্ক, পেশা ও শারীরিক অবস্থাসহ জীবনের প্রত্যেকটি অংশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তবে মেন্টাল হেলথ্ কাউন্সিলিং (mental health counseling) এর মাধ্যমে এই সমস্যা দূর করা সম্ভব।

২. কোন কোন বিষয়গুলো হীনমন্যতা হওয়ার প্রবণতা বাড়িয়ে দেয়?
শৈশবের শুরুতেই আত্মসম্মান গঠনের সূত্রপাত ঘটে। যেসব বিষয় হীনমন্যতা বা আত্মসম্মানকে প্রভাবিত করতে পারে সেগুলি হলোঃ
নিজের চিন্তা ও উপলব্ধি।
অন্য ব্যক্তিদের আচরণ।
বাড়ি, স্কুল, কর্মক্ষেত্র এবং সামাজিক ক্ষেত্রের অভিজ্ঞতা।
অসুস্থতা, অক্ষমতা ও আঘাত।
ধর্ম ও সংস্কৃতি।
সামাজিক অবস্থান ও ভূমিকা।
মিডিয়ার প্রভাব।

৩. অহেতুক তুলনা করা বা পার্থক্য করাঃ
একজন হয়তো খুব ভালো করে, গুছিয়ে কথা বলতে পারে। যেকোন আড্ডার আসরের মধ্যমণি সে। তাকে সবাই পছন্দ করে! আপনি হয়তো একটু মিশতে কম পারেন। গুছিয়ে কথা বলতে পারেন না। কিন্তু আপনারও ইচ্ছা হয়, সবাই যদি আপনাকে নিয়ে মাতামাতি করতো! আপনি যদি কোন আড্ডার মধ্যমণি হতে পারতেন! ভাবুন একটু, সবাই কি সবকিছু পারে, বলুন? আপনি হয়তো চমৎকার গান করেন, কেউ আবার অসাধারণ ছবি আঁকেন। আরেকজন হয়তো ভালো অভিনয় করে। ভালো বিতর্ক করতে পারে। নাচতে পারে ভালো। অথবা কেউ অনেক ভালো ক্রিকেট খেলে। একেকজন একেক দিকে পারদর্শী হয়। এখন আপনি যদি সব কিছু নিজের মধ্যে ধারণ করতে না পেরে হা-হুতাশ করেন, আপনি ভুল করবেন। বাবা-মা, ভাইবোন, বন্ধু, শিক্ষক ও অন্যান্য পরিচিত ব্যক্তিদের সাথে সম্পর্ক আপনার আত্মসম্মানকে প্রভাবিত করে। অন্য ব্যক্তিদের সাথে আপনার সম্পর্ক যদি ভালো থাকে, তাহলে নিজের সম্পর্কে আপনার ধারণা ইতিবাচক হবে এবং আপনার আত্মসম্মান বৃদ্ধি পাবে। আপনার সম্পর্কে যদি অন্য ব্যক্তিরা নেতিবাচক হয় তাহলে আপনি আত্মসম্মানের অভাবে ভুগতে পারেন; আপনার হীনমন্যতা হতে পারে।একটা কথাই বলবো,…
“নিজের শক্তির জায়গা খুঁজে বের করুন। এটা আপনাকেই করতে হবে।“

৪. হীনমন্যতা আপনার আত্ম-উন্নয়নের অন্তরায়ঃ
আপনি যদি সারাক্ষণ হীনমন্যতায় ভোগেন, নেতিবাচক চিন্তায় আপনার মন আচ্ছন্ন থাকে, আপনি নিজেকে সময় দিতে পারবেন না। আপনি যদি ভেবে থাকেন, অন্যের সাথে ক্রমাগত নিজেকে তুলনা করে আপনি নিজেকে তার পর্যায়ে নিয়ে যাবেন, তাহলে আপনি অনেক বড় ভুল করবেন। এভাবে নিজেকে ক্রমাগত অন্যের সাথে তুলনা করে আপনি কখনো তার মতো হতে তো পারবেনই না, উপরন্তু তার মতো হতে না পেরে আপনি হতাশায় মুষড়ে পড়বেন। আপনাকে সময় দিতে হবে নিজেকে উন্নত করার জন্য। নিজের শক্তিশালী দিকগুলো খুঁজে বের করে সেগুলোকে আরো বেশি শক্তিশালী করার জন্য। আর নিজের দুর্বলতা, অক্ষমতাকে সক্ষমতায় পরিণত করার জন্য।

৫. আপনিই আপনার সাফল্যের পরিমাপকঃ
জীবনে আপনি কতটুকু সফল, সেটা পরিমাপ করার ক্ষমতা একমাত্র আপনারই আছে। আর কারো নেই। জীবন আপনার। জীবনের আয়নায় নিজের সাফল্য-ব্যর্থতা পর্যালোচনা করার দায়িত্ব, অধিকার সবই আপনার। সংসার জীবনে চরম সুখী রাখুন নিজেকে। আর নিজেকে নিজেই সুখী রাখতে পারলে, সন্তুষ্ট রাখতে পারলেই আপনি সফল। জীবনে সুখী হতে গেলে, সফল হতে গেলে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করতে হবে সবার আগে। “আমার সেইটা নেই” এই কথার পরিবর্তে বলতে হবে “আমার এইটা আছে।” কথাটা হয়তো খুব ছোট। কিন্তু অর্থ অনেক ব্যাপক। সাফল্যের পথে এটাই সবচেয়ে বড় শক্তি, বড় পাথেয়।

বৃষ্টি সখা

নিঝুম রাতে বৃষ্টি নেমে এলে ভাবি, কতোদিন পর বৃষ্টি হলো! কতোদিন! চেনা মুখ ভেসে ওঠে ! কতো স্মৃতি! কতো কবিতা! তুমুল বৃষ্টিতে বাড়ির উঠোনে কাগজের নৌকো ভাসিয়ে দেওয়া। বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে আর বেসুরো গলায় গান গাওয়া! অথবা তপ্ত খরার পর একটানা বৃষ্টির মধ্যে প্রিয় মানুষটির সঙ্গে কথা বলা!

বাইরে বৃষ্টির শব্দ। একসময় জানালায় গিয়ে দাঁড়াই। নিরবিচ্ছিন্ন বৃষ্টিতে ধুয়ে-মুছে যাচ্ছে চরাচর। এই শহরের সমস্ত ক্লান্তি, জঞ্জাল, পাপ, বেদনা, আর হাহাকার ধুয়ে মুছে যায় না কেন? কী তুমুল, অহংকারী, একরোখা, জেদী বৃষ্টি। বৃষ্টির কুচিকুচি কণা এসে ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। মন ভেসে যাচ্ছে কোন সুদূরে! বিড়বিড় করে আমি কেবল বলতে থাকি, হে ভালোবাসা -আমার বৃষ্টি সখা!

“তখন আমায় নাইবা মনে রাখলে,
তারার পানে চেয়ে চেয়ে
নাইবা আমায় ডাকলে… “

হেমন্তের শ্রাবণ

আজ অকাল বর্ষণ। বৃষ্টির এসে ভিজিয়ে দিলো আমায়। সেই ছোট্ট বেলা থেকেই বৃষ্টিতে ভিজতে ভালোবাসি আমি। আজকাল রোজ একটু একটু করে বদলে যাচ্ছি। হয়তো ইচ্ছে করেই, চিলতে চিলতে বদলাচ্ছি। এখন একটা একটা করে দিন আঁচলে গুটিয়ে রাখি। এক এক পা করে পিছু হাঁটি। ছেড়ে দেওয়া হাত, ছুঁয়ে থাকা আঙুলগুলো হাওয়ায় আঁকে নীল নদ। অভিশপ্ত জীবন নিয়ে নিজের স্বপ্নের শবাধারের পাশে হাঁটু গেড়ে বসি। অবকাশ, অবসর বৃষ্টি আনে চোখের পাড়ে। নিজেকে চিনে নিতে অবাধ্য হই। আজ এই রাস্তার মোড়ে, অগোছালো বৃষ্টিতে, ধোঁয়া ধোঁয়া গাড়ীদের আলোয় মনে হয় ফিরে যাই সেই ছোট্ট বেলার দিনগুলোতে।

অবহেলে মুছে যায় আলো ছবি, বৃষ্টিরা আকাশের চোখে তুলে নেয় অপেক্ষা। বৃষ্টি গন্ধে সোঁদা ছোঁয়া, কানে কানে ফিসফিস করে বলে যায়, “এই আজ কুমির ডাঙা খেলবি”। তারপর অনেকটা জল, হাওয়া আর আলোদের আঁকিবুকি, অনেকক্ষণ চুপ ছবি লেখা। কত ক্ষণ হয়ে গেল মেঘেরা ঘিরে ধরেছে আমায়, ফোঁটা ফোঁটা জল কুড়িয়ে নিচ্ছে আঁচল। আজও আমি বৃষ্টি কুড়োই। রাস্তার চেনা এক মোড়, পরিচিত গাছ, পরিচিত সময়। এই পথে আমি আসি রোজ, উড়ে যাওয়া হাওয়ায় থাকে আমি-আমি গন্ধ আর আমার দিক নিশান। এখন অনেকটা একা হয়ে গেছে, ছোটবেলার সেই কানামাছি খেলা।

মাঝে মাঝে পা-এ টান পড়ে, হোক না অবাধ্য কিছু চলা। কালশিটে যন্ত্রণা হয়ে নীলকণ্ঠে অমৃত মন্থন। কখনওবা গ্রীষ্ম রোদে সুমেরীয় তুষারের ঝড়। কখনও বা হেমন্তে শ্রাবণ। তরল হোক সবটুকু জমাটবাঁধা বিষ। হেমলক অমৃতের মতোই আমার সঞ্জীবনী সুধা। বড় বেশি তৃপ্তি সে ঘুমে, অ-বিশ্রামে শহুরে জীবন। সমানুপাত আজও শিখিনি, মানদণ্ডে জমে উঠল ভার। আরো একটু নিজেকে খোঁজা দৃষ্টি। বৃষ্টি কেন হয় না যে রোজ! ফোঁটা ফোঁটা মাটির গন্ধ আনুক, আর আমি অনায়াসেই লুকোতে পারি আমার চোখে শ্রাবণ।

মনের কুলুঙ্গীতে একটা মাত্র চিঠি। খামের কোনে নীল হয়ে আছে আমার নাম। ঠিকানা জোলো বাতাসে ভেজা। বৃষ্টি! ডাক টিকিটে তুই বোলে দিস ফেরা।

মিথ্যে আমি মিথ্যে তুমি, মিথ্যে দিয়ে যায় চেনা …

কারণে অকারণে অনেকেই মিথ্যা কথা বলে থাকেন। কেউ অনেক বেশি পরিমাণে বলে থাকে কেউ প্রয়োজনে খুব কম বলে থাকেন। মিথ্যা কথা বলাকে ধর্মীয়ভাবে আমরা পাপ বলে থাকি। কিন্তু এই মিথ্যা বলারও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা করেছেন বিজ্ঞানীরা।

মিথ্যা বলা বৈজ্ঞানিক কারণ :
গবেষকরা জানিয়েছেন, মিথ্যা কথা বলার বৈজ্ঞানিক কারণ হল মনের ইচ্ছা ও আকাঙ্খা। কেননা তারা বলেন, মিথ্যা বলার সঙ্গে মনের সম্পর্ক রয়েছে। Massachusetts university র গবেষক রবার্ট ফেল্ডম্যান জানিয়েছেন, শতকরা ৬০ ভাগ মানুষই কথা বলার সময় প্রতি ১০ মিনিটে অন্তত একটি মিথ্যা কথা বলেন।’ তবে, গবেষকরা আরো জানিয়েছেন, ‘মিথ্যা বলা কিন্তু ততোটা সহজ কাজ নয়। সত্যি বলার চেয়ে এতে ৩০ ভাগ বেশি সময় লাগে। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, এখন সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং ও ই-মেইলে মিথ্যা বলা হয় সবচেয়ে বেশি।

কিছু আলোচনা …
অনেক সময়ে আমাদের সম্পর্কগুলো মিথ্যের উপরেই দাঁড়িয়ে থাকে।কারো সাথে সম্পর্কে জড়াতে গেলে আপনাকে গুছিয়ে মিথ্যে কথা বলা শিখতেই হবে। এ যেনো ট্রাডিশান হয়ে গেছে।

মিথ্যে কথা বলা হয় আবার আয়োজন করে। বলছি তবে শুনুন, এই ফেসবুকের কল্যাণে প্রেম, ভালবাসা তো মুড়ি মুড়কি হয়েই দাঁড়িয়েছে। যেমন ধরুন গভীর রাতে বা দিনে, আপনি কারো জন্য অপেক্ষা করছেন, অনেক অপেক্ষার পরে আপনাকে ধন্য করতে তিনি এলেন। দুটো কথা হল, তারপর দীর্ঘ বিরতি। আপনি ভাবলেন ঘুমিয়ে পড়েছে হয়তো। কিন্তু না, আপনাকে মিথ্যে বলে, আপনার সেই মানুষ কিন্তু অনলাইনে আছেন। তবে আপনার ইনবক্সে নয়। অন্য কারো। আসলে মাত্র সাতটা দিন, আর সাতদিনের সাত জনকে সময় দেওয়া! ভীষণ কঠিন ব্যপার। এই ধরনের চরিত্র আমরা সবাই কম বেশি দেখে থাকি। এতো গেলো ইনবক্সে মিথ্যে প্রেম।

আবার ধরুন, ফোনের অপর পাশের মানুষটাকে নিয়ে খুব সুন্দর সুন্দর মিথ্যা স্বপ্ন বানাবেন… যেমন, আমাদের ছোট্ট একটি বাড়ি থাকবে, প্রেমিক অফিস থেকে আসবো, প্রেমিকা রান্নাঘরে গিয়ে দু’কাপ চা বানিয়ে আনবে, দখিনা বারান্দায় প্রচুর বাতাস হবে, চা খাবো, গল্প করবো, আর তুমি খিল খিল করে হাসবে, আর আমি মুগ্ধ মুগ্ধ দৃষ্টিতে দেখবো” ওই ‘বাগবান’ টাইপের আর কি। এটা হলো অধিক স্বপ্ন দেখা প্রেম।

মিথ্যে আশ্বাস, মিথ্যে স্বপ্ন। আপনি জানেন না আপনার একটা ছোট্ট বাড়ি হবে কি না, আপনি কোন চাকরী পাবেন কিনা। গাড়ি কেনার মতো টাকা আপনার পকেটে থাকবে কি না। জানেন না আপনি। তবুও আপনি এসব বলবেন, এইসব আপনাদের কথার রাতগুলো, দিনগুলো ভালো কাটবে। যখন কাউকে বলবেন ‘ভালোবাসি’ যদি সেটা মন থেকে বিশ্বাস করতে পারেন তবেই বলবেন। মিথ্যে আশ্বাস দেবেন না। কারণ বার বার ‘ভালোবাসি’ কথাটা বলার পরে, আপনি যতোগুলো কথা বলেছেন সেগুলোও মিথ্যেই থেকে যাবে। আপনি মিথ্যে হয়ে যাবেন।

সম্পর্ক কিন্তু নিশ্চয়তা পছন্দ করে। যেমন, আপনি ভবিষ্যতে একসাথে থাকবেন কিনা, এর সাথে যদি কয়েকটা “সত্যিকার অনিশ্চয়তা” জুড়ে দেন তাহলে সম্পর্কগুলো আস্তে আস্তে পানসে হয়ে যাবে যতোই ভালোবাসা জিনিসটা থাকুক না কেন। কিন্তু যদি মিথ্যে নিশ্চয়তা দিয়ে বলেন, “আমার ঈশ্বরের নামে শপথ করে বলছি আমি কোনভাবেই তোমার হাত ছাড়বো না”। আর তারপর যদি আপনি হাত ছেড়ে দেন তাহলে সম্পর্ক কখনো পানসে হবে না?

রাস্তায় আসার সময় একটা ছেলের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন, কিন্তু তার হাত ধরে বলবেন “তোমাকে ছাড়া অন্য কোন ছেলের দিকে আমি সেভাবে তাকাই না, ভালো লাগে না”। প্রেমিকা সেজেগুজে এসেছে, আপনাকে জিজ্ঞেস করলো কেমন লাগছে আমাকে?? আপনার ভালো লাগছে না। তবুও মুগ্ধ গলায় বলছেন, “কি আশ্চর্য! তোমাকে এতো সুন্দর লাগছে কেন??” কালকে পরীক্ষা, পড়াশোনা ছাড়া আপনার মাথায় কিছু নেই, সে সময় তার ফোন এলো, জিজ্ঞেস করলো আপনাকে;
-তুমি কি আমার কথা ভাবছিলে???
-তোমার কথা ছাড়া আর কার কথা ভাববো বলো??
সে খুশি, আপনিও খুশি।

কিন্তু যদি সত্যিগুলো বলে দিতেন, বলে দিতেন রাস্তায় অন্য একটা ছেলেকে দেখে মুগ্ধ হয়েছেন, তাকে দেখতে আপনার সুন্দর লাগছে না, অথবা আপনি তার কথা ভাবছিলেন না, তাহলে সম্পর্কটা “মিথ্যে” বলার কারণে যতোটা সুন্দর হয়েছে সেরকম কখনোই হবে না। তাইনা? কিন্তু মিথ্যে বলে ভালোবাসবেন না। এতে আপনার চরিত্র প্রকাশ পেয়ে যাবে।

সবাই আয়োজন করে মিথ্যে কথা বলে সম্পর্কটাকে সুন্দর করার জন্য। কিংবা নিজের ভাবমূর্তি ঠিক রাখার জন্য। সত্যি কথায় সম্পর্ক সুন্দর হয় না? ভালো মুহুর্তও কাটানো যায় না? চোখ বন্ধ করে চিন্তা করে দেখুন তো আপনি/আপনারা ক্রমাগত আপনার সম্পর্কের মানুষটার সঙ্গে মিথ্যে বলে চলেছেন। আপনার হয়তো ইচ্ছে করেই, কত সহজেই আপনার ‘কাছের মানুষটিকে’ ঠকিয়ে যাচ্ছেন। যে কিনা আপনার উপর অন্ধের মত বিশ্বাস রেখেছে, আপনার উপর নির্ভর করছে।

একটার পর একটা,ছোটখাট সব বিষয় নিয়ে তাকে মিথ্যে আশ্বাস দিয়ে কিংবা মুগ্ধ করার জন্য সাজিয়ে গুছিয়ে মিথ্যা বলেই যাচ্ছেন। আপনি হয়ত বার বার সেই মানুষটাকে বোকা বানাতে পেরে নিজে খুব আনন্দিত হচ্ছেন। অথবা আপনার চালাকি সে ধরতে পারছেনা বলে ভাবছেন মানুষটা আসলেই কত বোকা। কিংবা ধরতে পেরেও চুপচাপ থাকছে, সে অত্যন্ত ভদ্র বলে।

জেনে রাখুন সেই মানুষটি আপনাকে ভরসা করেছিল, যে মানুষটি আপনাকে বিশ্বাস করেছিল, যার যোগ্য আপনি ছিলেন না জেনেও, আপনাকে ভালোবেসেছে। তাকে নিয়ে খেলতে গিয়ে আপনি আপনার পরিবারের পরিচয় দিয়ে দিচ্ছেন না তো?

নারী

বসন্তের আলোয় ঝলমল করে
উঠছে পাহাড়ি নদী।
চুপচাপ গাছের আড়ালে ফিসফাস শব্দ,
আলব্রাট্রাসরা তাদের আস্তানা ছেড়ে
উড়ে গিয়েছিল সুদুর দক্ষিনে,
একটু উষ্ণতার খোঁজে।
ব্যাস্ত তারা নিজ নিজ ঘরে ফেরার জন্য।

সারাদিন হাড়ভাঙা খাটুনির পরে
রাতে ঘরে ফেরে শিশুটির মা,
অবসন্ন তার শরীর।
উনুনে ফুটছে ভাত আর আলু সেদ্ধ,
রাতের বিছানায় জোর করে
প্রেমের উষ্ণতায় ভেঙে পড়ছে শরীর।

এই ভূতগ্রস্ত জীবনের অন্ধকার
কতদূর পর্যন্ত বিস্তৃত তা –
অঙ্কের কোন সংখ্যা দিয়েই বিচার করা যাবেনা।
সকালে শিশুটি দুহাত মেলে দেয় মায়ের দিকে,
অস্ফুট শব্দে ডাগর চোখে মাকে দেখে
আজ সে কিছুতেই যেন ছাড়বেনা, তবুও
নিবিড় আলিঙ্গন থেকে ছেলেকে নামিয়ে
চলে যায় তার কাজে।

রাতে ফেরার পথে পথ আটকায় চারজন পুরুষ,
জোর করে বিবস্ত্রা করে তাকে লুঠ করে তার অবশিষ্ট লজ্জা।
পথের ধারে পরে রইলো নিথর দেহ
প্রাণ ছেড়ে গেছে বিষাদলোক।

আচ্ছা কবরের আড়ালে
কফিনে গিয়ে পৌঁছোবে তো
বসন্তের এইসব আলো!

রক্ত মৃত্যু রসায়ন

অব্যক্ত ঘৃণার স্ট্রাটোস্ফিয়ারে
বিধ্বস্ত তুলতুলে হৃদয়।
গামা রশ্মির শিকারে আহত
আত্মরক্ষায় অপটু মন।
পথের প্রান্তে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা
আগাছার দুঃস্বপ্নে দিন কাটে
কখন কি হয়।

মাউনাকিয়ায় চুপটি করে বসে থাকা
দূরবীন ও জানে না,
নত্রাদামের ধুসর পাথরের কথা।
যুগের পর যুগ বরফের আস্তরনে
ডুবে থাকা দিন রাত ও ভয়
পায় লাভা উদগীরণের।
পৃথিবীর শূন্য থেকে যাত্রা
শূন্যতেই বুঝি শেষ।

চিন্তায় টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়া,
স্থান, কাল ও বন্য সমাজকে
ডিঙিয়ে যেতে গিয়ে,
ক্ষত বিক্ষত বিষাক্ত কাঁটায়।
নিত্য অনিত্যের ভিড়ে, পুরাণের
কাহিনী ও মিথ্যে হয়ে যায়।

ক্ষত স্থান থেকে চুইয়ে পড়া
রক্তের স্বাদে শুদ্ধ হয়েছে ক্যাকটাস।
শুকনো রুটির টুকরোর সাথে
মৃত্যু মিলেমিশে একাকার।
স্থবির জীবনকে আয়োনোস্ফিয়ার
গ্রাস করতে চেয়েছে বারবার।

ভুলে থাকা মন … ২২ (চিঠি)

প্রিয়মন,
মেঘ নদীতে হাওয়ায় পানসি বেয়ে অবশেষে আমার কাছে এলো তোর চিঠি। চিঠি খুলতেই একরাশ রজনীগন্ধার সুবাস ছুঁয়ে গেলো আমায়। খুঁজে পেলাম তোকে। ঝলমলিয়ে উঠলাম আমি।

জানিস, কাল রাতে বৃষ্টি এসেছিল, ঝড়কে সাথে নিয়ে। তুই তো জানিস এই রাতের বৃষ্টি আমার কত্তো প্রিয়। যখন ঝড় হচ্ছিলো, দৌড়ে গেলাম ছাঁদে। বুক ভরে নিঃশ্বাস নিলাম। প্রশান্ত মহাসাগরের কোন এক অজানা দ্বীপের গন্ধ এসে লাগলো আমার নাকে। সেই দ্বীপকে বুকের মধ্যে লুকিয়ে নিয়ে নীচে নেমে এলাম। আর বৃষ্টি, ঝড়কে নিয়ে আমার শহর ঘুরে ঘুরে আমায় খুঁজে ফেরে… আমার ঘরের জানলাটা খোলা ছিল। তাই ওরা আসার সাথে সাথেও পর্দায় বাঁধা পিতলের ছোট্ট ঘুঙুরগুলোয় সুর তুলল “টুংটাং”।

আর জানিস, পড়ার টেবিলে যত্নমাখা বইগুলোকে পরম আদরে ছুঁয়ে দিলো বৃষ্টি, আর ঝড় রাখলো তার অগোছালো ছাপ। আয়নায় ছুঁয়ে দেখলো আমার প্রতিচ্ছবি …তারপর এঘর থেকে ওঘর গেল ..ওঘর থেকে সেঘর …থমকে দাঁড়াল বারান্দায়… সেই যেখানে আমি দাঁড়িয়ে থাকি রোজ, তোর কথা ভাবি। আর রেলিংয়ে হাত রেখে তোর প্রিয় গানগুলো গুনগুনিয়ে উঠি; জানিস, ঠিক সেখানে, একেবারে সেখানেই বৃষ্টি হাত রেখে গুনগুনিয়ে নিলো বুঝি। ভীষণ হিংসে হচ্ছিল তখন আমার। তোর আর আমার গন্ধমাখা বারান্দা থেকে গন্ধ নিল মেখে…তারপর ভেসে গেল হাওয়ায়… আর ঠিক তখনই খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো আয়নায় আমার প্রতিচ্ছবি… বৃষ্টি এল ঝমঝমিয়ে।

প্রতিদিনের চোখের জলে অনেকটা ধুয়ে গেছে মন। জানি তুই ভুলে গেছিস। জানি এখন আমি তোর কাছে গুরুত্বহীন। তাইতো ভীষণ অচেনা জানা আমি আজ তোর কাছে। আর আমি তোকে সেই কিছুদিন আগের মতোই ভেবে নিয়ে আবদার করে বসি। জানিস কখনো কারো কাছে আবদার করিনি। তোর কাছেই করতাম। আর কোন আবদার করবো না কথা দিয়েছি তোকে। আসলে আমি ভীষণ বোকা তাই বারবার বোকার মতো ফিরে পেতে চাই পুরনো তোকে। আর তুই বারবার শব্দের তীর এক্কেবারে আমার বুকে বিঁধে দিস। কালও দিয়েছিস। রক্তাক্ত হয়েছি কাল ভীষণ। চোখে নেমেছে লবন জলের স্রোত। হয়তো ভুলে গেছিস তুই, বলেছিলাম তোকে যে আমি হারাবার ভয় পাই। বলেছিলাম তোকে জানিস আমার যা ভাগ্য, এত সুখ আমার সইলে হয়। এখন বুঝলি তো, যে আমার ভাগ্যে সুখ নেই।

জানি অনেক লেখার মতন এ লেখাও পাবে না তোর ছোঁয়া। তবু আজ মন বড় টলটলে দীঘি। তোর নতুন খেলার সাথীর সাথেই খেলায় মাতিস রোজ। আমি এখন পুরোনো,অচল। এখন এই সব দিনে একা। তুই আর আসিস না ছাদের সে কার্ণীশ বেয়ে, যেখানে কল্পনায় তোকে পেতাম। মেঘেরা তবু রোজ একবার করে এ শহরের শার্সীর আর্শীতে আর্জি জানিয়ে যায় আমাকে ভেজাতে চেয়ে। ভিজে যায় মন-চোখ।

তাইতো কাল গুঁড়ো গুঁড়ো বৃষ্টিরা এসেছিলো নিয়ে যেতে, বাধা পেয়ে চোখে জলের সাথে সুর তুলেছে। তোর কাছে এতটুকু আকাশ চাইতে গিয়ে অপমানিত হয়ে গুটিয়ে গিয়েছি নিজের কোলের ভিতরে। রাতের পর রাত নিজের কোলে কোল পেতে নিজেকে ঘুম পাড়াই আমি। আস্তে আস্তে বড় হয় দীর্ঘশ্বাস। তোর এখন, তোর প্রিয়ার সাথে নীল রঙা রাতভোর। আর আমি শিশির ভেজা কুয়াশার গন্ধের মতন একটু একটু করে মুছে যাই তোর মন থেকে।মুছে দিচ্ছিস তুই একটু একটু করে। কেউ বোঝেনা জানিস। কেউ না। তুইও না। না, তুইও আমাকে বুঝিস নি।বুঝতে চাস নি। হেঁয়ালির মতো উচ্ছিষ্ট হয়ে যাই আমি। উপাচারে যেমন অসম্মানিত ঈশ্বর, অবহেলায় তেমনি আমার বিসর্জন।

আজ আর আমি কোথাও নেই। আমি নেই জানিস তুই? মরে গেছি আমার আমি। এখানে, ওখানে, সেখানে, কোনখানেই আমি নেই। কোত্থাও নেই …

ভালো থাকিস রে মন। আকাশের তারাদের মতো ঝলমলিয়ে, খুব ভোরের রোদের মতোই সতেজ থাকিস। জানবি তুই ভালো থাকা মানেই আমার ভালো থাকা।

… ইতি,
আমার হারানো মন…
______________

মেঘ বিলাস

তপ্ত শহর, দগ্ধ হাওয়ার উত্তাপে আজ পুড়ছে
মেঘলাবেলার সন্তাপে হায় আমার মনও উড়ছে।

পুবের আকাশ, বৃষ্টি চমক, মেঘের বাড়ি ঘেঁষে,
কালবোশেখী ক্লান্তি ভোলায় তরঙ্গ উন্মেষে।

একটা ফোঁটা, দুটো ফোঁটা, ভিজছি আমি নিজে
গুনতে গুনতে শার্সিখানাও কখন গেল ভিজে।

শার্সি ভিজল, হাত ভিজল, ভিজলো পায়ের পাতা,
মনের কোনের আর্শিখানার ভেজার আকুলতা!

মন জুড়ানো, প্রাণ জুড়ানো বৃষ্টি তখন পড়ে
মন মেতেছে ভীষণ তখন কালবোশেখী ঝড়ে

বাদলা বাতাস, জলসা আকাশ ফিসফিসানি সুর,
সুর তুলেছে বৃষ্টি জলে, পথ যে সমুদ্দুর।

চোখ যে তখন মেঘের সাথে বৃষ্টি ধোয়ার ছলে,
হাওয়ার সাথে ছুটতে ছুটতে রঙিন কথা বলে।

এক যে আছে মিঠে আলো, এক যে শাওন দস্যি,
খিলখিলিয়ে বলতে থাকে, বৃষ্টি- ভেজা-নস্যি।

বাঁধন বাঁধা, পাখির ডানা, গভীর চোখের মুক্তি
স্বপ্নগুলো জমছে যেন, ঝিনুক বুকে শুক্তি।

.
(‘প্রেমিকের নাম আগুন ‘ বই থেকে একটি কবিতা)

বর্ষা বিলাস – ২

বর্ষা বিলাস

রাতের হাজার তারাদের বুকে লুকিয়ে সারারাত বৃষ্টি রিমঝিম। খুব ভোরে ঘুম ভেঙে শুনি তখনও বৃষ্টির টুপটাপ। বিছানায় শুয়েই তাকিয়ে আছি জানলার বাইরে। ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টিতে ভিজতে চাইছি তোর সাথে। কাপাসিয়া মেঘের চোখে কাজলের ঘনঘটা। ঠিক তক্ষুনি শহরে দক্ষিণের হাওয়ায় গেয়ে উঠলো “আষাঢ় কোথা থেকে পেলি আজ ছাড়া”, গাইছেন দেবব্রত বিশ্বাস। ঠিক তক্ষুনি বেয়াক্কেলের মতো বেজে উঠলো এলার্ম। আর আমি সব ভুলে বন্ধ করে দিলাম ঘড়ির ঘন্টা।

এমন বৃষ্টি স্নাত স্নিগ্ধ সকালেও অস্থির লাগে কারো? উঠে পরলাম চটপট। মনে হয় যেন কতকিছু করার ছিলো, করা হয়নি কখনো, অনেক স্বপ্ন ছিলো যা অধরাই রয়ে গেছে, অনেক চাওয়া ছিলো যেগুলো অর্জনের জন্য প্রচেষ্টাও করতে পারা যায়নি! আয়নায় তাকিয়ে সদ্য ঘুম থেকে ওঠা মুখ দেখে আবিষ্কার করলাম গালের তিলটা একটু বেশি কালো মনে হচ্ছে। কি জানি কেন? মেক আপ তো ব্যবহার করিনা, তাহলে? ভোরের আলো সুন্দর, যেমনই তাতে আছে নতুন করে আশায় বুক বাঁধার স্বস্তি, তেমনি আছে অস্থির এক ভালোলাগা। পৃথিবীর এমন ভোরগুলো ভীষণ সুন্দর। এক অদ্ভুত সুন্দর, স্নিগ্ধ।

দুপুর নেমে আসে পাহাড়ে ঘোরানো পাকদণ্ডি বেয়ে বেয়ে। আমের-আচার, ডালের বড়ি, আলু পোস্ত, আর মাছের ঝোলে। পোস্ত আমার চিরকালের পছন্দের জিনিস। তারপর! তারপর কল্পনায় সেই গ্রাম আর মাটি লেপা দাওয়া থেকে অত্যন্ত ভালোলাগা মাটির গন্ধ। আর ঠিক তখনই এক ঝলকে তুলে নেবো চোখ ভর্তি আলো। অগোছালো কপালে সমুদ্র পরিয়ে দেবে চিকচিকে টিপ। সন্ধ্যের শুকতারা থেকে ঝিনুকের কোলে ঝরে পড়বে এক ফোঁটা মুক্তো। আর অনেক দূরের থেকে তুই তখন এক ঝটকায় ফিরিয়ে দিবি আমার উথাল পাথাল গান। আর ঠিক তখনই পাড়ের সাথে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে যেতে যেতে খিলখিলিয়ে হেসে উঠবে কোনো পাহাড়ি নদী। তুলসিতলায় জ্বলে উঠবে সাঁঝের প্রদীপ। হাওয়ায় হাওয়ায় জোনাকিরা সাজাবে আলপথ। বৃষ্টির ঝিম ধরা আলো ঘিরে নেবে উড়ে উড়ে ঘুরতে থাকা বাদল পোকারা। আর আমি তখন চুপচাপ বাতাস থেকে উপচে নেবো তোর মেহেক। মাঠে আনাচে কানাচে ঘাসেরা সব বিছিয়ে নেবে বৃষ্টি ধোয়া সবুজ গালিচা। আমি তখন রাত ঘুমে।

পরেরদিন আবার ভোরে জেগে ওঠা। পাখিরা ডানায় বয়ে আনবে এক পশমিনা সকাল। সূর্য্যের অফুরান আলো নিয়ে নিঃশ্বাসে, ঝরে পড়বে একটা একটা পাতা। স্নান সেরে সূর্যের দিকে তাকিয়ে বলে উঠবো – ওঁ জবাকুসুম শঙ্কাশং। তখন ভোরের স্বপ্নে সত্যি করব তোকে। আর তুই তখন এক এক ফুঁয়ে উড়িয়ে দিবি ইচ্ছে-বেলুন। কুয়াশারা হাত ধরাধরি করে মুছে দেবে পাহাড়ি নদীর উপরের সাঁকো। মোতির দানার মতো টিপটিপ করে পাতায় পাতায় ঝরে পড়বে বারিষ। জানলা খুলে দেব আমি। বুকে ভরে নেবো ভিজে বৃষ্টিমাখা সুখ।

একা একা কতকি যে ভাবি, এমন অনেক অর্থহীন লেখা, দিনলিপি, রোজনামচা, বিচ্ছিন্ন আবেগের টুকরো কথা, কত্তো কি!

___________
রিয়া চক্রবর্তী।

চিঠি: আমার ভুলে থাকা মন (২৩ পর্ব)

অনেক দিন পর আবার আমি আর আমার মন মুখোমুখি। গ্রীষ্মের প্রচন্ড গরমে মনের সাথে আমার নিশিযাপন। হঠাৎ আয়না আমার চোখে চোখ রেখে প্রশ্ন করলো এই প্রচন্ড দাবদাহে তোর দুচোখ কেন শ্রাবণের দুঃখ নদী? কি করে বলি তাকে, মন দুচোখ ভরা সাগর নিয়েও জীবন নদীতে আমার সাঁতার শেখা হল না। দু নৌকোয় পা রেখে চলতে শিখিনি আজও, জানিনা রে মন কখন আমার সলিল সমাধি হবে। গঙ্গা? নাকি যমুনা? যদিও এতোবার মরেছি তাই এখন আর মৃত্যুকে ভয় পাইনা। তবে জলে আমার বড্ড ভয় করে রে মন। বুঝেছি রে আমার এই শ্রাবণ নদীতেই সুখ। হৃদয়ে বিরাট মেঘের পাহাড়, শিরায় শিরায় লবণ জলের স্রোত। জানিস মন একবার শেষ বোঝাপড়া করবো নিজের সাথে। অনু, অনু জুড়ে যে আকাশ তৈরী! সেই আকাশে আমার বিচরণ বড্ডো বেমানান মনে হয়। সুখ আর বিষণ্নতাকে ভাগাভাগি করে, সুখকে অনুর ঝুলিতে দিয়ে যাবো। ফিরিয়ে দেবো অনুর আকাশ। আর বিষণ্নতা না হয় আমারই থাক। আমরা কেউ কাউকে ছাড়া থাকতেই পারিনা যে। কিছুটা তোর স্বপ্ন, আমার করে পাওয়া পুরোটা তোকে আমার বুকের সবথেকে সুন্দর জায়গায় লুকিয়ে নিয়ে চলে যাবো। ওপারে, পৃথিবীর ওপারে। আচ্ছা মন কবিরা কি মানুষের মনের কথা বুঝতে পারে? তাহলে কি করে কবি লিখলেন “অতোটুকু চায়নি বালিকা” সত্যিই চাইনি রে। খুব কম চাওয়া ছিলো আমার। একটা ভালোবাসাময় মন আর দুটো আশ্রয়ের হাত প্রশ্রয়ের সাথে। জীবন নদীতে যখন দেখা মিলল, তখন অনুর পরমাণু, আকাশ জুড়ে দীপ।

এখনো আমি নদী জমিয়ে রাখি বুকে। মেঘেদের কানে কানে বলি নদীকে ডেকো বৃষ্টি। চুপি চুপি আনমনে নদী খুঁজি। কি জানি বিসর্জনের সময় এসেছে বোধহয়। এ জন্মে ছিলো আমার অকাল বোধন। জানিস মন আজকাল পাঁজরের খাঁচার একটা একটা করে আগল ভেঙে ফেলছি রোজ। নিজের যন্ত্রণাগুলোকে ভাসিয়ে দিচ্ছি নোনা জলে। মেঘের সামনে নতজানু হয়ে ভিখারির মতো বলি নদী দে আর একটা নদী। হয়তোবা ভিখারিই আমি। তোর কাছেই নতজানু হতে চাই বারবার। আমার অহংকার, আমার অভিমান তোর ভালবাসার থেকে বেশী নয়। জানি মন একমাত্র তুইই আমাকে দুহাত দিয়ে আগলে রেখেছিস। আর কেউ নেই কোথাও নেই আমাকে আগলে রাখার তোর মতো করে। বড় বেশি নিঃসঙ্কোচে নিঃসঙ্গ রে আজ মন। কাঁচা সুতোর বন্ধন ছিঁড়েই গেছে কবে। আর যতটুকু করুণার বন্ধন ছিলো তাও টুপটাপ করে ঝরে পড়েছে আঙুলের ফাঁক থেকে। হাতের মুঠি আলগাই রেখেছি। বালির মতো ঝরে গেছে সব সম্পর্কগুলো। মন তুইও কি একদিন চলে যাবি এক পা এক পা করে? নতুন করে স্বপ্ন সাগরে ডুবিয়ে তারপর প্রখর মরুভূমির উত্তাপের মধ্যে আমাকে ছেড়ে দিয়ে?

আজ অনেকক্ষণ একা একা দাঁড়িয়ে ছিলাম বারান্দায়। মনের ভেতর উথাল পাথাল। জানি তুইতো আছিস। সেই চেনার মুহূর্ত থেকে দাদুর মতো আমায় আগলে। মাঝে মাঝে তুই চলে যাস কেন আমায় ছেড়ে মন? জানিস তখন তোকে কত খুঁজি। চাঁদ রঙের প্রতিটা রাতে, মনের প্রতিটা আলপথে, উঠোনের আনাচে, গলির কানাচে, দুচোখের ছলছলে আর্শীতে, মেঘেদের শার্শীতে অপলক চেয়ে থেকেছি যদি একবার তোর দেখা পাই! যে সব শব্দরা তোকে খুঁজে আনতে গেছিলো তারাও আজ আকাশের মাঝে হারিয়ে গেছে। আজ বড় বেশি বেয়াব্রু আমি। হাঁটু দুটো বুকের কাছে এনে মাথাটা রেখে পরম আদরে জড়িয়ে নিয়েছি নিজেকে। ফোঁটা ফোঁটা লবনাক্ত সময়ে অস্ফুটে স্বীকারোক্তি, কেউ হতেই পারেনা তোর মতো রে মন। আমাকে তোর মতো কেউ বোঝে না। জানে না কেউ। কঠিন বর্মে নিজেকে ঢেকেছি আমি। কোন আঘাতেই আর হৃদয়ের রক্ত চুঁইয়ে পড়তে দেবো না। তোর থেকে নিজের আলাদা করার মানে পাঁজর থেকে হৃৎপিণ্ড উপড়ে ফেলা। আর ঠিক তখনই আমার মৃত্যু।

আগুন নদী

সময়ের আলিঙ্গনে
মহুর্মুহু শিহরিত
আমিই ভরা বর্ষায়
অভিমানে ছলকে ওঠা নদী
হাতের মুঠোয় নেচে ওঠে
আমার নগ্ন কৃপাণ
আলোও নই, অন্ধকারও নই
আমি সেই আগুন নদী
ছুঁয়ে এসেছি সূদুর দক্ষিণে
আরোরা অস্ট্রালিস

ছড়াক্কা (৪)

থাকুক বিষাদ এসো এখন জীবন কথা বলি।
দিনের আভাস রাতের শেষে
আঁধার যখন আলোয় মেশে
আবছা হওয়া স্বপ্ন গুলো
মেলছে দু’চোখ উড়িয়ে ধুলো
আলতো করে সাজিয়ে রাখি প্রেমের পদাবলী।

পুজার অপেক্ষায়

থমকে আছি প্রাণের শহরে মনের অপেক্ষায়,
ঠিক যেমন ভোরের আগে পৃথিবীকে দেখায়,
যেমন থাকে কুয়াশায় ঢাকা নিশ্চুপ সকাল-
প্রহর শেষে নীল রঙে মেশে লাজুক গভীর লাল।
চোখে আমার ঘোর লেগেছে উদাসী বাতাসে
ভোরের আকাশ, ফাগের চমক, তরঙ্গ উন্মেষে,
ভীষণ আবেগ এক নিমেষে ক্লান্তি নিল শুষে,
মনে খুশির বাণ ডেকেছে দারুন উল্লাসে।

কংক্রিটের এই শহরটায় একাকিনী এই চোখ;
শীতল পাষাণ গলিয়ে দিয়ে একটু তরল হোক
অপেক্ষাতেই আছি আমি, সকাল-দুপুর-সাঁঝ,
মিষ্টি মেদুর আমেজ তবে জড়িয়ে থাকুক আজ।
হিমেল বাতাস ,মেঘলা আকাশ, ছায়া ঘেরা দুপুর-
চোখে যে আজ ঘোর লেগেছে বাজছে খুশির নূপুর;
মনের মাঝে উঠছে বেজে আনন্দের এক সুর
মনটাকে আজ বাঁধিসনে সে উড়ুক অচিনপুর।

অবুঝ মনটি শিশির মেখে ভোরের সাথে খেলে,
উতাল হাওয়া ফিসফিসিয়ে রঙিন বার্তা দিলে,
পশ্চিমে ওই সোনা ঝরা মিঠে আলোর সাথে
প্রাণের শহরে একা পূজারিণী রয়েছে অপেক্ষাতে।