আসিফ আহমেদ এর সকল পোস্ট

আসিফ আহমেদ সম্পর্কে

ক্ষুদ্র পাঠক।

বিপথে গিয়েছে যে, আম ছালা তার সবই যাবে

জন বল্টন, আমেরিকান যুদ্ধবাজ কূটনীতিবিদ এবং সামরিক উপদেষ্টা। সামরিক ভাবে দূর্বল দেশগুলোতে সামরিক হামলা, গৃহযুদ্ধ লাগানো, গণহত্যা, নাশকতা, নিষেধাজ্ঞা আরোপ, অন্যের খনিজ সম্পদ লুট। আরো কত কূটবুদ্ধি, অসুস্থ চিন্তা, কাপুরোষচিত পরিকল্পনা তার মাথায় আসতো তার বর্ণনা একমাত্র সেই দিতে পারবে। কিন্তু শেষ ভালো হলো না, বরখাস্ত হয়ে নিজেই ফানি ক্যারেকটার বা উপহাসের পাত্র হয়ে গেলো।

তার জন্য একটা কথা বলি, “বিপথে গিয়েছে যে, আম ছালা তার সবই যাবে।”

পাশে আছি কোলকাতা

পাশে আছি কোলকাতা

কিছুক্ষণ আগে (০৪.০৯.১৮) কোলকাতায় একটা ফ্লাইওভার ধ্বসে পড়েছে। আশংকা করা হচ্ছে, নিচে চাপা পড়ে নিহত হয়েছেন অনেক মানুষ। এমন শিরোনাম দেখে আমরা বাংলাদেশীরাও গভীর ভাবে মর্মাহত হয়েছি। আমরা নিহত, তাঁদের পরিবার এবং কোলকাতারবাসীর প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই। এই সংকট উত্তরণে সৃষ্টিকর্তা তাঁদের পাশে থাকুন।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের ছাত্রসমাজের উপর কুখ্যাত হেলমেট বাহিনী ও পুলিশের বর্বর হামলার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছিল কোলকাতার ছাত্রভাইয়েরাও। স্লোগান দিয়েছিলঃ “চলুক গুলি টিয়ারশেল, পাশে আছি বাংলাদেশ”

দুর্নীতি, লুটপাট, অনিয়ম ছাড়া ফ্লাইওভার ভেঙে পড়ার অন্য কোন কারণ থাকতে পারেনা। এসবের ভুক্তভোগী শুধু কলকাতা নয়, ঢাকাও। এখন থেকে দুই বাংলার ছাত্রসমাজ একসাথে লড়বে সন্ত্রাস, অরাজকতা, দুর্নীতি, লুটপাট অনিয়মের বিরুদ্ধে।

আজ আমরা বাংলাদেশীরাও বলছি, “পাশে আছি কোলকাতা”।

আসিফ আহমেদ
৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

আপনার ঘরেই আছে ডেঙ্গুর প্রতিকার

আপনার ঘরেই আছে ডেঙ্গুর প্রতিকার

ডেঙ্গু বাংলাদেশের ৬৪ জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে আক্রান্ত কয়েক হাজার, মৃত্যুর সংখ্যা এখনো ৫০ ছাড়ায়নি। তারপরেও কি আতংক? দেশ ছেড়ে মালয়েশিয়ায় পালিয়েছেন, এমনও নজির আছে। ডেঙ্গুর কারণে অকাল মৃত্যু হতে পারে, এই কারণেই কি এতো আতঙ্ক? ভেবে দেখেছেন? ফরমালিন, ভেজাল তেল, বায়ুদূষণ, ধুমপান, ফাস্টফুড, স্থুলতার জন্য প্রতিবছর কত লক্ষ মানুষের অকাল মৃত্যু হয়?

এমন না যে মশা কামড়ালেই ডেঙ্গু রোগ হবে বা ডেঙ্গু হলেই মৃত্যু। এমন না যে ডেঙ্গুর কোন চিকিৎসাই নাই এবং প্রতিরোধের কোন উপায় নাই। গুজব বা আতঙ্ক ছড়ানো, পরিস্থিতির অবনতিই ঘটায়। কোন উপকারে আসেনা। ডেঙ্গু মহামারী কে পরাজিত করার কিছু সহজ ও কার্যকর প্রাকৃতিক উপায় নিয়ে আলোচনা করবো।

প্রতিরোধঃ

ডেঙ্গু মশাবাহিত একটি রোগ। বাড়ির বাইরে মশা নিধন সরকার বা সিটি কর্পোরেশনের উপরে নির্ভর করে। তবে কিছু কৌশল অবলম্বন করলে মশা, আপনার ঘরে প্রবেশ করবেনা বা কামড়াবে না। মশার হাত থেকে বাঁচতে আমরা প্রতিরাতেই কয়েল, এরাসল, মশারী ব্যবহার করি। তবে অনেক ভেষজ, মশলার গন্ধ মশাসহ অনেক কীটপতঙ্গ সহ্য করতে পারেনা, ফলে পালিয়ে যায়। এদের Mosquito Repellent বলে। যেমনঃ

রসুনের নির্যাসঃ কাঁচা রসুনের গন্ধ মশা খুব অপছন্দ করে। রসুনের নির্যাস পানিতে গুলিয়ে ঘরের ভিতর স্প্রে করুন বা হাতে নিয়ে ছিটিয়ে দিন। দেখবেন মশার উপদ্রব প্রায় চলে গেছে। যে ঘরে সন্ধ্যার পর মশা ভনভন করতো, সেখানে মশা প্রায় প্রবেশই করবেনা। সন্ধ্যার সময় মশা সাধারণত ঘরে প্রবেশ করে। সন্ধ্যার ঠিক আগে কাঁচা রসুনের নির্যাস স্প্রে করে দিন। বিশেষত সোফা, টেবিল, খাটের উপরে-নিচে, আলনায় কাপড়ের ফাঁকে। মনে হতে পারে এটা করলে রসুনের গন্ধে ঘরে থাকা যাবেনা, আসলে এভাবে স্প্রে করলে বা ছিটিয়ে দিলেও রসুনের গন্ধ আপনি পাবেন না, কিন্তু মশা ঠিকই পালাবে। আমি নিজে এটা করে আশাতীত ফল পেয়েছি।

গ্রিনটিঃ ভেজা গ্রিনটির পাতি বা টিব্যাগ ঘরের মধ্যে রেখে দিলেও সে গন্ধে মশা আসেনা। তবে চিনি দেয়া পানিতে ডুবালে আর কাজ হবেনা। আমি এখনও প্রতিদিন কিছুটা গ্রিনটির পাতা পিরিচে নিয়ে সামান্য পানিতে ভিজিয়ে দেই। পাতাগুলো সম্পূর্ণ পানির নিচে ডুবে থাকে এমন না। একটা পিরিচে ১/৪ চামচ বা একটা টিব্যাগ ছিঁড়ে গ্রিন টি নিয়ে তাতে দ্বিগুণ পরিমাণ পানি। পানি পেয়ে কিছুক্ষণ পরে পাতাগুলো ফুলে কয়েকগুণ বড় হয়ে যাবে। এরপর রেখে দিন। অবাক কান্ড, ঘরে মশা প্রায় আসবেই না। প্রতিদিন বিকালে বা সন্ধ্যায় এটা করবেন। প্রতিদিন কিছুটা নতুন পাতা যোগ করবেন। তাহলে কার্যকারীতাটা বজায় থাকবে।

এছাড়াও নিমপাতা, নিমের তেল, দারুচিনি, ইউক্যালিপটাস পাতা, তুলসী পাতা মশা তাড়ায়। তবে আমার অভিজ্ঞতা বলে গ্রিন-টি সবচেয়ে কার্যকর, তারপরে রসুন। এগুলো আপনার রান্নাঘরেই পাবেন।

ঘরোয়া চিকিৎসাঃ

নিমঃ পেপে পাতা ডেঙ্গুর মহৌষধ এটা সবাই জানে। এছাড়াও আরও অনেক ভেষজ ডেঙ্গু রোগে অত্যন্ত কার্যকর। রক্তের প্লাটিলেট ও শ্বেতরক্তকণিকা কমে যাওয়া ডেঙ্গু সবচেয়ে মারাত্মক লক্ষণ। নিম রক্তে প্লাটিলেট ও শ্বেতরক্তকণিকা বৃদ্ধি করে। এছাড়া রক্ত পরিষ্কার, শরীর ও রক্ত থেকে দূষিত/বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয়, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। নিমের আছে বহুমুখী এন্টিবায়োটিক গুন। ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাকজনিত অসংখ্য রোগের জন্যও নিম উপকারী।

চিরতাঃ চিরতা বাংলাদেশে খুব পরিচিত, প্রচলিত এবং সহজলভ্য একটা ভেষজ। চিরতা রক্ত পরিষ্কার করে, অনেক ভাইরাস, ব্যাক্টেরিয়া ও ফাঙ্গাস জনিত রোগে কার্যকর। চিরতা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, রক্তের প্লাটিলেট বাড়ায়, ক্ষুধামান্দ্য ও জ্বরের চিকিৎসায় অত্যন্ত কার্যকর।

উপকারী খাবারঃ প্রচুর পরিমাণে পানি পান। পেঁপে পাতার মত পেপে এবং পেপে বীজ ডেঙ্গুর জন্য অত্যন্ত উপকারী। ডালিম/আনার/বেদানা, ডাবের পানি, মেথি, হলুদ+দুধ, ব্রকোলি (যদিও বিদেশী সবজী), পালংশাক (যদিও শীতের সবজী)

বর্জনীয় খাবারঃ তৈলাক্ত খাবার, অধিক মশলাযুক্ত খাবার, অত্যাধিক ক্যাফেইন যুক্ত খাবার বর্জন করতে হবে।

বাঙালের সাধ

বাঙালের সাধ

সন্ধ্যা থেকে অবিরাম বৃষ্টি হচ্ছে, জানালা দিয়ে বৃষ্টির শব্দ আসছে সামান্য। ইচ্ছা করছে প্রত্যন্ত কোন গ্রামে গিয়ে মাটির ঘরে বসে টিনের চালে বৃষ্টির শব্দ শুনি। আদা-লেবুর চা খেতে খেতে গালে হাত দিয়ে কল্পনা করতে থাকি আবোলতাবোল। আমার উচ্চাভিলাষের সীমা এই পর্যন্তই, বৈষয়িক ভাবে এর বেশি আমি চাইতে পারিনা। চেষ্টা যে করিনি তা না, কিছু শুভাকাঙ্ক্ষী আমাকে খুব বকাঝকা করেন। কিন্তু মানুষের প্রকৃতি বদলায় না।

সুইস ব্যাংকের শত কোটি টাকা সাথে অকেজো লিভার, কিডনি, হার্টের চেয়ে মন্দ কি বৃষ্টি বিলাস, বাঙালীয়ানা?

আসিফ আহমেদ
০৬.১১.২০১৬

বৃষ্টি বিলাস

জোরে, বেশ জোরে বৃষ্টি পড়ছে। বৃষ্টির শব্দ শুনছি। বৃষ্টি মানুষ কে অন্যমনস্ক উদাস করে দেয়। আমিও অন্যমনস্ক হয়ে যাচ্ছি। মন কখনো অতীত, কখনো বর্তমান, কখনো ভবিষ্যৎ এ চলে যাচ্ছে। বৃষ্টির শব্দ মস্তিষ্কে মাদকতা সৃষ্টি করছে। মাথায় আসছে হাজারো লেখার প্লট। আমি বৃষ্টি দেখবো বলে সম্মোহিতের মত বারান্দায় চলে আসলাম।

শিশির কণার মত খুব ছোট বিন্দু বিন্দু পানির কণা, ঠাণ্ডা বাতাসের সাথে আমার শরীরে পড়ছে। আত্মাকে স্পর্শ করে, পবিত্র করে দিচ্ছে। আমি প্রকৃতির সাথে আরো একাত্ম হতে মনোযোগ দিচ্ছি।

প্রচণ্ড শক্তি নিয়ে বজ্রপাত আঘাত করছে পৃথিবীটাকে। মনে হচ্ছে, কোন ক্ষুব্ধ মনের প্রচণ্ড ক্রোধ এভাবে প্রকাশ পাচ্ছে। অন্ধকারে শিকড়ের মত শাখাপ্রশাখা নিয়ে আবির্ভূত হচ্ছে সাদা আলোর রেখা। মুহূর্তেই দিগন্তরেখা পর্যন্ত সাদা আলোয় প্লাবিত করে করে আবার অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছে। এতো অল্পসময়ের জন্য আলোকিত হয়ে উঠছে, গাছের পাতা সবুজ বুঝতে পারার আগেই অন্ধকারে মিলিয়ে যাচ্ছে। যেন অন্ধকারে ভেসে উঠছে অনেক বেশি ব্রাইটনেস দিয়ে এডিট করা একটা সাদাকালো ছবি।

আমার পা ভিজে গেছে ছিটকে আসা পানিতে, ঠান্ডা বাতাসে শরীরে কাঁপুনি অনুভব করছি। তারপরেও সম্মোহিতের মত বড় বড় চোখ করে বৃষ্টি দেখছি।

বৃষ্টির শব্দটা কেমন যেন, মনেই হয়না এটা পানি পড়ার শব্দ। যেন অনেক মানুষ চাপা, গম্ভীর স্বরে কথা বলছে। কিছুটা দূর থেকে হাটের শব্দ যেমন শোনায়, অনেকটা তেমন। নিরব প্রকৃতি জেগে ওঠার শব্দ এটা। বৃষ্টির মধ্যে কিছু রহস্যময়, অতিপ্রাকৃত ব্যাপার আছে। বৃষ্টি বা মেঘের গর্জনের শব্দে ঘুমের কোন ব্যাঘাত ঘটেনা, বরং মানুষ আরো গভীর ঘুমে তলিয়ে যায়। রহস্যময় বৃষ্টি এবার শুষ্ক, মৃত জমি কে করবে সুফলা। মৃত নদী কে আবার জীবন ফিরিয়ে দিবে বা ধূসর গাছে ঘনসবুজ পাতা, ফুলে ছেয়ে দিবে। রুক্ষ লু হাওয়া কে, শরীর জুড়ানো সরেস, শীতল করে দিবে। এই জন্যই হয় তো সব ধর্ম এবং প্রাচীন লোককথায় বৃষ্টি কে কল্যাণের প্রতীক হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

এই জন্যই বৃষ্টির শব্দে, মেরুদণ্ডে একটা আনন্দের ঢেউ খেলে যায়।

# কাল্পনিক

সর্বহারার প্রার্থনা

যে মেয়েটা একবার বিক্রি হয়ে যায়, সে যেন হঠাৎ জ্বলন্ত কয়লায় ডুবে যায়। চাপিয়ে দেয়া ধর্মকর্মও নরক মনে হয়, আর এটা তো জোর করে মহাপাপে ডুবিয়ে রাখা, সারাক্ষণ। এখানকার মাসী, দালাল, খদ্দের সবাই নির্দয়, লোভী। সবাই চেষ্টা করে যত ঠকানো যায়, যত কম দিয়ে যত বেশি লুটে নেয়া যায়।

নিজের উপরে এতো নির্মমতা, কঠোরতা কার সহ্য হয় মন থেকে? শুধু আদর মমতার লোভই না, বাবা-মা ভাই-বোনের জন্যও মায়া লাগে। সে বাড়ি ফিরে যেতে চায়। তবে স্বাভাবিক বাড়ি ফিরে যাওয়া, সমাজের মেনে নেয়াটা একেবারে অসম্ভব। ফিরতে পারলে দেখতো, এখনো কিছুটা মান বাঁচানোর জন্য বাবা কিভাবে গরুর ডান্ডা বা চাবুক দিয়ে পিটিয়ে চৌকাঠ থেকে নামিয়ে দেয়।

সে তো ইচ্ছা করে বিক্রি হয় নি, যে বিক্রি করে দিয়েছে সে তার মালিকও নয়। কিন্তু তারপরেও এই সমাজ আর তাকে মেনে নিবেনা। তাই সে প্রার্থনা করে, “সবার মেয়েই একবার করে বিক্রি হয়ে যাক, তখন সমাজ ঠিকই গ্রহণ করবে।”

যে ছেলে সমাজবিরোধী কাজে চিহ্নিত হয়েছে বা মাদকের ছোবলে সমাজে নিজের সন্মান খুইয়েছে। সেও জানে এই মানুষ বা সমাজ একবার খারাপ পেলেই মুখ ঘুরিয়ে নিবে। নিজের খুব কাছের আত্মীয় মামা-চাচা, ঘনিষ্ঠ বন্ধু, এমনকি বন্ধুর ছোটভাইও। যে আগে শ্রদ্ধা ও ভয়ে নিচু হয়ে থাকতো, সেও এড়িয়ে চলে যাবে, দূরে সরিয়ে দিবে।

একটা দরিদ্র ছাত্রকেও রাস্তায় দেখা হলে বন্ধুর মা বলে, “বাসায় এসো কিন্তু।” একটা কেরানী বা পিওনকেও মানুষ বিশ্বাস করে, খবর নেয়াটাও একটা ভালো কাজ মনে করে।

কিন্তু সমাজ বর্জিত সর্বহারাদের দেখেও, “দেখিনি ভাই” ভান করে। কেউকেউ সোজা বলে দেয়, “বেরিয়ে যাও”। এতো অসম্মান, প্রতিকূলতা নিয়ে এই সমাজে চলা খুব কঠিন। তখন সেও চায় সবার ছেলেই একবার করে অপরাধে জড়াক, মাদকের নেশায় বন্ধুর বাসা থেকে ক্যালকুলেটর চুরি করে পালাক। তাহলে সমাজে সে আবার “সাধারণ” হিসাবে প্রমোশন পাবে।

এরা তখন এরা প্রচার করে, “সবাই এইসব পারেনা, সাহস থাকা লাগে। পুরুষ হওয়া লাগে, ভদ্র ছেলেরা তো হাফলেডিস। এতো পড়া লেখা করে কি হবে বোকার দল? চাকরী করে একমাসে যে টাকা উপার্জন করে, বুদ্ধি আর সাহস থাকলে, একদিনেই সেটা করা যায়। একঢোক মদ খেলেই এদের হুঁস থাকবেনা, আমার তো এক বোতলও কিছু হয় না। ফিটনেস, পুরুষালী বিষয়, বুঝতে হবে।”

সর্বহারা ছেলেমেয়েদের সংখ্যা আজ কম না। এরা সংঘটিত হয়ে, সর্বনাশে ঝাঁপ দেবার আহবান করছে সব গলি থেকেই। “সবার সর্বনাশ হোক” চাইছে সাংকেতিক ভাষায়।

মুগ্ধ চোখে দেখি আমার ঢাকা

ঢাকা মানেই চরম মাত্রার নগরায়ন। শুধু বাংলাদেশ না, পৃথিবীর হাতে গোনা কয়েকটি মেগাসিটির (জনসংখ্যা যেখানে কোটির উপরে) একটি। হতে পারে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল শহর এই মুহুর্তে ঢাকা। দিগন্তজোড়া কনক্রিটের স্থাপনার মাঝেও বেশ কিছু গাছগাছালী আছে, কোন কোন রাস্তার পাশে সামান্য মাটিতে কি চমৎকার সবুজ সতেজ ঘাস হয় এখানে। বোঝা যায় জায়গাটা এখনো খুবই উর্বর সুফলা। এমন সবুজ সতেজ এলাকা আমার খুবই ভাল লাগে।

আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা উত্তরবঙ্গতে। সেখানেও এইরকম সবুজ কিছু কিছু এলাকা আছে, যেমন নাটোরের বনপাড়া। কিন্তু সেটা খুবই কম। রাজশাহী চাঁপাইনবাবগঞ্জ জুরে চলছে মরুকরণ প্রকৃয়া। প্রায় সব সময় নদী পুকুর শুকিয়ে থাকে, টিউবয়েলে পানি উঠেনা। শীত ও খরায় অসহ্য ধুলা, রাস্তার পাশের গাছের পাতাগুলো সবুজ রঙ দেখাই যায়না পুরু ধুলার স্তুপের কারনে। খেলার মাঠে খরের মত ধুসর দুর্বাঘাস, গাছেপালাগুলোও কেমন প্রাণহীন রুক্ষ। শীতে হাড় কাঁপানো ঠাণ্ডা, গরম কালে অসহ্য গরম। হ্যাঁ বর্ষায় অনেক বৃষ্টি হয়, তবে ঢাকার বর্ষা ভোলার মত না।

একবার সাভার যেতে যেতে গাবতলি বা আমিন বাজারের জলাভূমির উপরে দেখেছিলাম কি ঘনকালো মেঘ উঠেছে। নিচে জলাভূমি দূরে টিনের ঘরবাড়ি কিছু গাছপালা, ঝিরঝির বৃষ্টিতে সব ভিজে চিকচিক করছে। সেই সন্মোহনী সৌন্দর্যের বর্ণনা দেবার ক্ষমতা আমার নেই। নিরাশাবাদী আমার শুধু মনে হয়েছিল, একদিন দৃষ্টিও ঝাপসা হয়ে যাবে, এমন দৃশ্য সারাজীবন দেখতে পাবো না। মাস চারেক আগে আশুলিয়া থেকে উত্তরায় আসছিলাম বাসে করে। আবারো রাস্তার দুইপাশে বহু কিলোমিটার জুড়ে জলাভূমির উপরে মেঘ, তখন মনে হয়েছিল জীবনটা কত সুন্দর! আজ ভাবি দৃষ্টি ঝাপসা হোক স্মৃতিতে ঠিকই থাকবে ঢাকার সৌন্দর্য।

বছর দশেক আগে এক বড় ভাইয়ের কাছে একটা ঘটনা শুনেছিলাম। কোন একটা এলাকার পানি ভাল, লোকজন স্বচ্ছল, ফসল হয় খুব ভাল। জনশ্রুতি আছে কোন একজন ধর্মপ্রচারক সুফি মুগ্ধ হয়ে প্রার্থনা করেছিলেন সেই এলাকার জন্য। নারায়ণগঞ্জেও কোন এক এলাকায় একজন অলিকে নিয়ে এমন জনশ্রুতি শুনেছিলাম, এলাকায় নাকি কোন গরীব লোকই নাই। ঢাকা নিয়ে আমি এমন কোন জনশ্রুতি শুনিনি, তবে মাঝেমাঝে মনে হয় কোন সাধু হয়তো মুগ্ধ হয়ে বারবার প্রার্থনা করেছিলেন “এই জনপদই যেন কেন্দ্র হয় দেশটার”।

আসিফ আহমেদ
৩০ ডিসেম্বর, ২০১৬

নিঃস্ব ধনকুবের

জীবন আমাকে যত সুখ দিচ্ছে ততই সুখ অনুভব করার ক্ষমতা কেড়ে নিচ্ছে। যত প্রভাব দিচ্ছে তত অসহায়বোধ বাড়ছে। যত জনপ্রিয়তা দিচ্ছে তত নিঃসঙ্গতা বাড়ছে। যত দামী গাড়ি দিচ্ছে তত বসে থাকার ক্ষমতা কেড়ে নিচ্ছে।

একজন অপারেশনের রুগীকে যে পরিমাণ বেদনানাশক দেয়া হয় তার বহুগুণ Crystal Ice (মাদক) আমাকে নিতে হয় “স্বাভাবিক থাকতে”। আমি যে পরিমাণ মাদক নিয়ে স্বাভাবিক হই সেটা কোন সাধারণ মানুষ কে দেয়া হলে সে নির্ঘাত মারা যাবে। যে পরিমান মাদক একবারে নিলে একজন মানুষের মৃত্যু ডেকে আনবে সেই Lethal Dose এর চেয়েও অনেক বেশি মাদক নিতে হয় প্রতিবার, দিনে একাধিকবার।

আমার শরীরের সব অঙ্গ ধীরে ধীরে অনুভূতিহীন অকার্যকর হয়ে যাচ্ছে। ব্রেন সেলগুলো মরে যাচ্ছে, ফুসফুসে পানি জমে গেছে, হার্ট অকেজোর শেষ ধাপে। পাকস্থলী, লিভার, কিডনি কোনটাই ৪০% এর বেশি কার্যকর নাই। আরো আগেই মারা যাবার কথা আমার, এখনো বেঁচে আছি এটাই বিস্ময়। তবে দুই-এক মাসের বেশি সময় বাঁচার কোনই সম্ভাবনা নাই সেটা পরিষ্কার। আমি সেটা চাইও না, জীবন এখনই বিভিষীকা হয়ে উঠেছে আমার কাছে। মাথায় যন্ত্রণা, শ্বাসকষ্ট, খিঁচুনি, রক্তবমি, কিডনির মারাত্মক ব্যাথায় সত্যিই দুঃস্বপ্ন হয়ে গেছে জীবনটা। এর সাথে আছে হেলুসিনেশন। কখন নিজেকে অজেয় দেখি, মাঝেমাঝে দেখি নরকে। দ্বিধা-দন্দে পড়ে যাই, ঠিক দেখছিতো না হেলুসিনেশনে আছি।

আমার গাড়িটা এই মুহূর্তে বনানীর জ্যামে আটকে আছে, কবরস্থানের কাছে। এই রাস্তাটা সব সময়ই জ্যামে আটকা থাকে মহাখালী পর্যন্ত। আমি প্রায়ই রাস্তার আশেপাশের মানুষগুলোকে দেখি। জ্যামের মধ্যে অনেকে নিরুপায় হয়ে, ফুটপাতের উপর দিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে যায়। কেউ কেউ অতিষ্ঠ হয়ে বাস থেকে নেমে হাঁটা দেয়। রাস্তার পাশের নোংরা চা স্টলে বসে চা-সিগারেট খায় কত মানুষ।

মধ্যবিত্ত, দরিদ্র, টোকাই কি অবিশ্বাস্য জীবনীশক্তি এদের। খেয়ে না-খেয়ে সারাদিন রোদবৃষ্টি মাথায় করে কাজ করতে পারে এরা। অসহ্য গরম, ভিড়ের মধ্যেও গাদাগাদি করে নোংরা বাসে আসা-যাওয়া করতে পারে সারাবছর। এরপরেও কদাচিৎ অসুস্থ হয়, অসুস্থতা নিয়েও অফিস বা ভারি কাজ করতে পারে মানুষগুলো। নামমাত্র চিকিৎসায় বা চিকিৎসা ছাড়াই সুস্থ হয়ে আবার ফিরে আসে।

এরা কোন কিছুর সাহায্য ছাড়াই আনন্দিত হয়, ভালবাসে, ভালবাসা অনুভব করে। এদের মধ্যে এমন লোকও আছে সিগেরেট এমনকি চা পর্যন্ত খায়না অথচ কি তীক্ষ্ণ স্মৃতি, অনুভুতি। বহুবছর আগের শতশত পরিচিত, বন্ধু, আত্মীয়ের সব ঘটনা, সব কথা মনে রাখে। মানুষের চেহারা, কথাবলা, হাঁটার ধরন দেখেই অনেক কিছু বুঝে নিতে পারে। কি আশ্চর্য ক্ষমতা এদের।

একসময় ডাক্তার আমাকে ছাড়তে বলতো এসব। বলতো কয়েক সপ্তাহ চিকিৎসায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবো। এখন আর বলেনা, মানেটা আমি বুঝি। এই শেষ বেলায় মৃত্যুর দিকে দ্রুত এগিয়ে যাবার জন্য যে স্বপ্নবিলাসে ডুবে থাকি সেটা মোটেই ধনী বা সফল হবার কোন স্বপ্ন না। কল্পনা করি সাধারণ মানুষে “উত্থান” ঘটেছে আমার। রিকশাওয়ালা, সুইপার, বাসের হেল্পার, কুলি মজুর যেকোন একটা জীবন। অনেক ভাল, অনেক সুন্দর, অনেক সন্মানের সেটা।

জীবনের বিনিময়ে আমি উপলব্ধি করেছি শৈশবের সেই প্রথম শিক্ষা, শরীর বা “স্বাস্থ্যই সম্পদ”। কোন পণ্ডিত বা সাধু জীবনের শেষ বেলায় কথাটক মনে হয় লিখেছিলেন। একটা শক্তিশালী পরিশ্রমক্ষম সুস্থ শরীরের বিনিময়ে আমি সব সম্পদ দিতে রাজি। বিনিময়ে নিপীড়িত কৃতদাস বা শ্রমিক জীবন পেলেও আমার স্বপ্ন, পরম মনোবাসনা পুর্ন হবে।

আসিফ আহমেদ
২৮ জানুয়ারি, ২০১৭

জীবন নামের মঞ্চনাটকে

একটা পার্কে বসলে, এক পলকে, সারাটা জীবন দেখে ফেলা যায়। এই যে, ডায়াবেটিসের রোগীর হাঁটা, হার্টের রোগীর হাঁটা, কৌতূহলী কিশোরী চঞ্চল হাঁটা।

একদিন এই কিশোরীও হাঁটতে আসবে ডায়াবেটিক বা হার্টের রোগের জন্য। তার আগে হয়তো সে কিছুদিনের জন্য কড়া লিপস্টিক ও গোলাপি শাড়ি পড়ে কোন পুরুষের সাথে হেঁটে যাবে পার্কটায়। কিছুদিন পরপর নতুন নতুন চরিত্রে অভিনয়ও করে যাবে। তারপর একদিন বেঞ্চ, গাছ, রাস্তাটা ঠিকই থাকবে। দেখা যাবে না অনেক আগের একটা দিনে প্রথম হাঁটতে আসা সেই কিশোরীকে। বহু বছরের নিয়মিত সেই কিশোরী অতীত হয়ে যাবে।

তবে সেই একই ভূমিকা গুলোতে অভিনয় করতে আসবে নতুন নতুন কুশীলবরা, জীবনটা এমনই। ড্যাফোডিল ফুল, হাস্নাহেনা বা T20 ম্যাচের মতই। দ্রুত কয়েকবার রঙ বদলিয়েই, নতুন কুশীলবদের অভিনয় করার সুযোগ করতে দিতে, পুরাতন শিল্পী বা খেলোয়ারের অবসর ঘোষণা।

সেই পুরাতন, চিরন্তন, বৈচিত্র্যহীন একই স্ক্রিপ্টের নতুন মঞ্চায়ন। তবে প্রতিবারই নতুন শিল্পীটা অসীম উচ্ছ্বাস আর কৌতূহল নিয়ে অভিনয় করে যায় এখানে।

মানুষের আদিম সহজাত প্রবৃত্তি

দেশপ্রেম এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করাটা, মানুষের আদিম এবং মৌলিক প্রবৃত্তিগুলোর একটি। প্রতিটি মানুষের মধ্যেই এটা সুস্পষ্ট। দেশের জন্য অথবা অরাজকতার বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য, কোন দল বা নেতার সম্মতির দরকার হয়না এবং মানুষ কারো হুকুমের জন্য অপেক্ষাও করে না।

দেশপ্রেম বা অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর স্বভাবটা কোন দল বা নেতার কাছে বন্ধকও রাখা হয়নি। গর্জে উঠো বাংলাদেশ, রুখে দাঁড়াও বাঙালী আরো একবার।

সহযোদ্ধা

সে যখন বিপদটা আঁচ করতে পেরেছিল,
ইঙ্গিতটা আমাদের দিয়েছিল সাথেসাথেই।
আমি যখন আহত হয়ে পড়ে ছিলাম, আমাকে
রিকশায় করে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল সে।
সে যখন আঘাতে অচেতন হয়ে পড়েছিল,
যন্ত্রনায় ছটফট করেছিলাম আমি।
আমার আঙুল থেঁতলে নীল হয়ে গেল যখন,
চিৎকার করে কেঁদেছিল সে।

তার অর্থকষ্ট নিয়ে দুশ্চিন্তা করতাম আমি,
আমার নিরাপদে বাসায় ফেরা নিয়ে সে।
আমার খাবার তারসাথে ভাগাভাগি করেছি,
সেও তার রক্ত আমাকে দিয়েছে, আহত হবার পর।
তাড়া খেয়ে পালিয়েছিলাম এক সাথেই,
ধরা পরা, জেল এমনকি মুক্তিও একই সাথে।

বিজয়ের খবরে যখন আমি উল্লাস করেছিলাম,
আনন্দে আত্মহারা হয়ে গিয়েছিল সে।
যখন আমাকে সুখী জীবনে দেখলো, তৃপ্তির হাসি হাসলো সে।
একই আত্মা, একই মন কিন্তু শরীর আমাদের অনেকগুলো।
এইতো সহযোদ্ধা।

১৫-১১-২০১৮

স্বপ্নভঙ্গের নিঃশব্দ আর্তনাদ

আমি ছোট একটা শহরের রাস্তায়, একটা পাগলী কে কয়েকবার দেখেছিলাম। একটা ভ্যানিটিব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে, সম্ভব সুন্দর ভাবে সালোয়ার কামিজ পড়ে, যতটা সম্ভব সেজেগুজে রাস্তায় ঘুরে বেড়াতো। খুব ছোট মেয়েরা যেমন ঠোঁটে লিপস্টিক দেয়, শাড়ি পড়তে চায়, বড়দের মত আচরণের অভিনয় করে। সেই প্রবৃত্তিই হয়তো তাকে এভাবে তাড়িত করতো। খুব ছোটবেলায় সে যখন দেখতো, মেয়েরা কত সুন্দরভাবে সেজেগুজে কলেজ, ভার্সিটি বা অফিস যায়। তখন তারও হয়তো ইচ্ছা হতো তেমনি সেজেগুজে রাস্তা দিয়ে হাঁটার, এই সমাজে তেমনই সুন্দর অভিজাত ভাবে নিজেকে উপস্থাপন করার।

বাস্তবতা যখন সেই দুর্নিবার ইচ্ছাকে ছাড়খার করে দিলো, তখনো সে হয়তো অভিনয় বা কল্পনায় ইচ্ছাপূরণ করার চেষ্টা করে গেছে। ইচ্ছা বা স্বপ্ন ছাড়া মানুষ বাঁচে না, বা যেভাবে বাঁচে তাকে বাঁচা বলেনা। তখন অনেকে ইচ্ছামৃত্যু বেছে নেয়, অনেকে অনুভূতিহীন উদাস হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে, কেউ কেউ আমার মত ঐশ্বরিক সাহায্যের জন্য প্রার্থনা করতে থাকে। মার্টিল লুথার কিং এর “আই হ্যাড এ ড্রিম”ই শুধু নয়। পৃথিবী সব মানুষই একেকজন মার্টিন লুথার কিং।

কেউটে সাপের, ঢোড়া সাপ ভীতি

কেউটে সাপ বলছে,

“ঢোড়া সাপ এই অঞ্চলের জন্য ভয়ংকর হুমকি স্বরূপ। এদের এলাকা ছাড়া করতে না পারলে সব কিছুই ধ্বংস করে ফেলবে। ঢোড়া সাপের বিষ যে কত সাংঘাতিক, সেটা আমাদের মত সাপ জাতের চেয়ে ভালো কে বুঝবে?

মনে নাই ইতিহাসের সেই সত্য ঘটনাটা? এক দেশে ছিল এক রাজা। সেই দেশের শতকোটি মানুষ কে ছোবল দিয়ে একরাতে মেরে ফেললো ঢোড়া সাপ? এরা গরীর চাষির ঘরে ঢুকে হাঁস-মুরুগীর ডিম খেয়ে ফেলে, পুকুরের মাছ খেয়ে ফেলে। মানুষ কে বিষাক্ত ছোবল দিয়ে মেরে ফেলে।

এখানে ঢোড়া সাপে গিজগিজ করছে। সবখানে ওৎ পেতে আছে অসংখ্য ঢোড়া সাপ। আমরা এই এলাকায় কোন ঢোড়া সাপকেই থাকতে দিবো না। এই অঞ্চলের কল্যাণই আমাদের একমাত্র উদ্দেশ্য। আমাদের অন্য কোন স্বার্থ নাই। যে কেউটে শিরোমণি কালনাগিনীর বিরোধিতা করবে, তাকেই ছোবল দিয়ে শেষ করে দেয়া হবে।”

সৃষ্টির আদিকাল থেকেই কেউটে সাপরা এই বলে প্রত্যেকটি এলাকায় কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে আসছে। তবে সব সময়ই খুব অল্প প্রবীণ বাসিন্দারা কৌশলটা ধরতে পারে। তবে তাদের এই উপলব্ধি বাস্তবতার উপর কোনই প্রভাব ফেলেনা।

মৌন মিছিলের দেশে

একজন ছাত্র ক্ষোভে দুঃখে বলেছিলেন, “ঢাকা ভার্সিটি অনশনের ভার্সিটি হয়ে গেছে। প্রতিদিন অনশন।”

যারা প্রতিদিন অনশন বা রাজু ভাস্কর্য করে তারাও জানে রোজরোজ একই কাজ করলে মানুষের আগ্রহ কমে যায়। কিন্তু বালিশ কাণ্ড, ওসি মোয়াজ্জেম, দেশে ধানের কেজি ৮টাকা কিন্তু ভারত থেকে অবাধে চলছে চাল আমদানি, প্রশ্নপত্র ফাঁস, দুদক পরিচালক কে ডিআইজি মিজানের ৪০ লক্ষ টাকা ঘুষ প্রদান। এসব খবর প্রতিদিন আসতেই থাকে। এদের জায়গায় আমি হলো 24×7 রাজুতে থাকতাম হয় তো। কি করার আছে ভাই, আমরা তো আছিই বারোমাসি মৌন মিছিলের দেশে।

ফ্রাঙ্কফুর্টের বনলতা সেন

শেষ বিকেলের আলোয় যখন তাকে দেখলাম, তখন পৃথিবীর পথে হাঁটছিলাম ক্লান্ত অবসন্ন আমি। খুব চেনা কিছু বৈশিষ্ট্যে দৃষ্টি আটকে গেলো।

নতুন হেয়ার স্টাইলে চুল হয়তো মেঘ কালো নেই আর, কিন্তু পাখির নীড়ের মত চোখ এখনো আছে। সাথে যুক্ত হয়েছে স্নিগ্ধ সম্মোহনী হাসি। তার চোখে দেখলাম আমারই মত কৌতূহল। আছে আত্মবিশ্বাস, বুদ্ধিমত্তা, কর্মদক্ষতার ঝিলিক আর আধুনিক শিক্ষার কিঞ্চিত অহম।

হাঁটছিলামই, সব মিলিয়ে ৪ সেকেন্ড হবে। এর মধ্যেই এতো চিন্তা চলে আসলো মনে। রসিকতা করা স্বভাব আমার, এলোমেলো ধাপগুলোকে একটু নিয়মে নিয়ে আসলাম। ভাবখানা এমন করলাম, যেন স্যালুট ঠুকব। তাই প্যারেড করে এগুচ্ছি। সেও তড়িৎ মাথা ঝুঁকিয়ে দিলো, যেন স্যালুটের জবাবটা দিয়ে দিলো।

বাঙালী রমণীটিকে অতিক্রম করে চলে এসেছি। সে নিশ্চয় পিছন থেকে দেখছে আমাকে। কি দেখছে? কুঁচকানো ছাইরঙা শার্ট, ডান কাঁধে ঝুলছে একটা ব্যাগ। নীল জিন্সের প্যান্ট পড়া লম্বা এক বাঙালী যুবক এগিয়ে যাচ্ছে সামনের দিকে। আমার অগোছালো, আত্মভোলা প্রকৃতি তারও নজর এড়াবে না।

মুহূর্তেই সব ক্লান্তি দূর হয়ে গেলো। পিছনে না ফিরেই ভাবছি নামতো জিজ্ঞেস করিনি, জায়গাটা যেন কি? মনে পড়লো, ফ্রাঙ্কফুর্ট।