
আপনার ঘরেই আছে ডেঙ্গুর প্রতিকার
ডেঙ্গু বাংলাদেশের ৬৪ জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে আক্রান্ত কয়েক হাজার, মৃত্যুর সংখ্যা এখনো ৫০ ছাড়ায়নি। তারপরেও কি আতংক? দেশ ছেড়ে মালয়েশিয়ায় পালিয়েছেন, এমনও নজির আছে। ডেঙ্গুর কারণে অকাল মৃত্যু হতে পারে, এই কারণেই কি এতো আতঙ্ক? ভেবে দেখেছেন? ফরমালিন, ভেজাল তেল, বায়ুদূষণ, ধুমপান, ফাস্টফুড, স্থুলতার জন্য প্রতিবছর কত লক্ষ মানুষের অকাল মৃত্যু হয়?
এমন না যে মশা কামড়ালেই ডেঙ্গু রোগ হবে বা ডেঙ্গু হলেই মৃত্যু। এমন না যে ডেঙ্গুর কোন চিকিৎসাই নাই এবং প্রতিরোধের কোন উপায় নাই। গুজব বা আতঙ্ক ছড়ানো, পরিস্থিতির অবনতিই ঘটায়। কোন উপকারে আসেনা। ডেঙ্গু মহামারী কে পরাজিত করার কিছু সহজ ও কার্যকর প্রাকৃতিক উপায় নিয়ে আলোচনা করবো।
প্রতিরোধঃ
ডেঙ্গু মশাবাহিত একটি রোগ। বাড়ির বাইরে মশা নিধন সরকার বা সিটি কর্পোরেশনের উপরে নির্ভর করে। তবে কিছু কৌশল অবলম্বন করলে মশা, আপনার ঘরে প্রবেশ করবেনা বা কামড়াবে না। মশার হাত থেকে বাঁচতে আমরা প্রতিরাতেই কয়েল, এরাসল, মশারী ব্যবহার করি। তবে অনেক ভেষজ, মশলার গন্ধ মশাসহ অনেক কীটপতঙ্গ সহ্য করতে পারেনা, ফলে পালিয়ে যায়। এদের Mosquito Repellent বলে। যেমনঃ
রসুনের নির্যাসঃ কাঁচা রসুনের গন্ধ মশা খুব অপছন্দ করে। রসুনের নির্যাস পানিতে গুলিয়ে ঘরের ভিতর স্প্রে করুন বা হাতে নিয়ে ছিটিয়ে দিন। দেখবেন মশার উপদ্রব প্রায় চলে গেছে। যে ঘরে সন্ধ্যার পর মশা ভনভন করতো, সেখানে মশা প্রায় প্রবেশই করবেনা। সন্ধ্যার সময় মশা সাধারণত ঘরে প্রবেশ করে। সন্ধ্যার ঠিক আগে কাঁচা রসুনের নির্যাস স্প্রে করে দিন। বিশেষত সোফা, টেবিল, খাটের উপরে-নিচে, আলনায় কাপড়ের ফাঁকে। মনে হতে পারে এটা করলে রসুনের গন্ধে ঘরে থাকা যাবেনা, আসলে এভাবে স্প্রে করলে বা ছিটিয়ে দিলেও রসুনের গন্ধ আপনি পাবেন না, কিন্তু মশা ঠিকই পালাবে। আমি নিজে এটা করে আশাতীত ফল পেয়েছি।
গ্রিনটিঃ ভেজা গ্রিনটির পাতি বা টিব্যাগ ঘরের মধ্যে রেখে দিলেও সে গন্ধে মশা আসেনা। তবে চিনি দেয়া পানিতে ডুবালে আর কাজ হবেনা। আমি এখনও প্রতিদিন কিছুটা গ্রিনটির পাতা পিরিচে নিয়ে সামান্য পানিতে ভিজিয়ে দেই। পাতাগুলো সম্পূর্ণ পানির নিচে ডুবে থাকে এমন না। একটা পিরিচে ১/৪ চামচ বা একটা টিব্যাগ ছিঁড়ে গ্রিন টি নিয়ে তাতে দ্বিগুণ পরিমাণ পানি। পানি পেয়ে কিছুক্ষণ পরে পাতাগুলো ফুলে কয়েকগুণ বড় হয়ে যাবে। এরপর রেখে দিন। অবাক কান্ড, ঘরে মশা প্রায় আসবেই না। প্রতিদিন বিকালে বা সন্ধ্যায় এটা করবেন। প্রতিদিন কিছুটা নতুন পাতা যোগ করবেন। তাহলে কার্যকারীতাটা বজায় থাকবে।
এছাড়াও নিমপাতা, নিমের তেল, দারুচিনি, ইউক্যালিপটাস পাতা, তুলসী পাতা মশা তাড়ায়। তবে আমার অভিজ্ঞতা বলে গ্রিন-টি সবচেয়ে কার্যকর, তারপরে রসুন। এগুলো আপনার রান্নাঘরেই পাবেন।
ঘরোয়া চিকিৎসাঃ
নিমঃ পেপে পাতা ডেঙ্গুর মহৌষধ এটা সবাই জানে। এছাড়াও আরও অনেক ভেষজ ডেঙ্গু রোগে অত্যন্ত কার্যকর। রক্তের প্লাটিলেট ও শ্বেতরক্তকণিকা কমে যাওয়া ডেঙ্গু সবচেয়ে মারাত্মক লক্ষণ। নিম রক্তে প্লাটিলেট ও শ্বেতরক্তকণিকা বৃদ্ধি করে। এছাড়া রক্ত পরিষ্কার, শরীর ও রক্ত থেকে দূষিত/বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয়, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। নিমের আছে বহুমুখী এন্টিবায়োটিক গুন। ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাকজনিত অসংখ্য রোগের জন্যও নিম উপকারী।
চিরতাঃ চিরতা বাংলাদেশে খুব পরিচিত, প্রচলিত এবং সহজলভ্য একটা ভেষজ। চিরতা রক্ত পরিষ্কার করে, অনেক ভাইরাস, ব্যাক্টেরিয়া ও ফাঙ্গাস জনিত রোগে কার্যকর। চিরতা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, রক্তের প্লাটিলেট বাড়ায়, ক্ষুধামান্দ্য ও জ্বরের চিকিৎসায় অত্যন্ত কার্যকর।
উপকারী খাবারঃ প্রচুর পরিমাণে পানি পান। পেঁপে পাতার মত পেপে এবং পেপে বীজ ডেঙ্গুর জন্য অত্যন্ত উপকারী। ডালিম/আনার/বেদানা, ডাবের পানি, মেথি, হলুদ+দুধ, ব্রকোলি (যদিও বিদেশী সবজী), পালংশাক (যদিও শীতের সবজী)
বর্জনীয় খাবারঃ তৈলাক্ত খাবার, অধিক মশলাযুক্ত খাবার, অত্যাধিক ক্যাফেইন যুক্ত খাবার বর্জন করতে হবে।