এইচ এম শরীফ এর সকল পোস্ট

এইচ এম শরীফ সম্পর্কে

হেরো আপন হৃদয়মাঝে বিশ্ব যেন তোমার স্বদেশ|| সৌহার্দ্য হোক বিশ্বজনীন অকৃত্রিম এক হৃদ্যতা' রেশ|| বিশ্বজনীন সৌহার্দ্য মোর অখিল বিশ্বব্যাপী। হৃদয়জুড়ে জেগে আছে হিতৈষী এক ছবি।

ফুলের সুবাস

“ফুলের সুবাস” মনের মাঝে
থাকবে না- সে কি হয়!
ফুল ফুটিয়ে মন মাধুরি
ছড়িয়ে কেন নয়!

মনের কালি’ মুছে দিয়ে
জোছনার আলো জ্বালি;
সুখটাকে আজ বিলিয়ে দিয়ে
সুখের দোলায় দুলি।

যেমন করে রাতের তারা
মিটি মিটি হাসে;
শিশির বিন্দু মুক্তার মত
জ্বালে আলো ঘাসে।

তেমনি করে মনের জোছনা
জ্বালিয়ে চলি এসো।
অন্যের সুখে সুখি হয়ে
মনটা ভরে হাসো।

হিংসা কেন মনের মাঝে
আগলে তুমি রাখ!
অহিংসা যে কত মধুর
ভালোবেসে দেখ।

যাকে তুমি হিংসে কর
ভালো তাহার দেখে;
হও না নিজে আরও ভালো
দ্বেষটা দূরে রেখে।

মন্দ’টা কে নিন্দা করে
এসো সবাই ঠেকাই;
সমাজটাকে সুন্দর করে
চলো সবাই দেখাই।

দিশারি

মনকলি! তুমি এক জ্বলন্ত নীহারিকা,
তোমার অগ্নিস্ফুলিঙ্গের আভায় সৃজে সহস্র কণিকা।
তুমি ঝলমলে ভাবের উন্মত্ত প্রতিমূর্তি;
তুমি দুর্দমনীয়! রুখতে পার মানবতার আর্তি।
মনোআকাশে তোমার উতকলিকা কে রুখিবে বলো!
স্বার্থোন্মত্ততার বর্জিত পথ ঘৃণাভরে মাড়িয়ে চলো।

তোমার রুদ্র কণ্ঠ কে আছে রোধবার!
তুমি সদা এক অজেয় চেতনায় অগ্ন্যুদ্-গার।
তুমি ঝড়, তুমি ঝঞ্ঝা, তুমি অনির্বাণ দীপালোক;
তুমি দুর্বার, নিপীড়িত-বঞ্চিত মানবতার নবালোক।
তুমি হতে পার চেতনায় অগ্নিকুণ্ড;
হতে পার না তুমি ওদের মতো ভণ্ড।

তোমার অগ্নিগর্ভে শুভচেতনারা উন্মাদ, তুমি অসুর;
দায়িত্ববোধে সততায় তুমি চির কাঁচা, চির কিশোর।
তুমি কবিতার অগ্নিঝড়া পঙ্ক্তির দর্পণ;
তুমি হতে পার নরপিশাচ-পাপিষ্ঠের চির শমন।
তোমার সুভচেতনার লেলিহানে ভস্ম হয় নরপিশাচের উন্মাদনা;
তুমি হতে পারো এক অভিযাচিত জাতির কাঙ্ক্ষিত প্রেরণা……।

হতে পার তুমি দীনেশ, লাঞ্ছিত-বঞ্চিত মানবতার কাণ্ডারি;
তুমি হতে পার বঞ্চিত জাতির দুঃসময়ে বিদিশার দিশারি।
শুনহে নবীন, শুন হে কাঁচা! তুমি চিরপ্রার্থিত নওজোয়ান!
স্বার্থান্বেষীর ঘৃণিত পথ মাড়িয়ে হও না এবার আগুয়াণ!

এক গ্লাস দুধ

একদিন এক দরিদ্র বালক তার স্কুলে যাতায়াতের খরচ উপার্জন করার উদ্দেশ্যে বাড়ি বাড়ি ঘুরে পণ্যদ্রব্য বিক্রি করছিল। এতে সে মাত্র দশ সেন্ট উপার্জন করল। এবং সে খুব ক্ষুধা অনুভব করল। সে ভাবল, সামনের বাড়িতে গিয়ে তার নিজের খাদ্যের জন্য আবেদন করবে। যাই হোক, যখন অল্প বয়স্ক, আকর্ষণীয় একজন মহিলাকে দরজা খোলতে দেখল, তখন সে খাবারের কথা বলতে আর সাহস পেল না, এর পরিবর্তে সে পান করার জন্য পানি চাইল।

মহিলা বালকটিকে দেখে ভাবল, তাকে বেশ ক্ষুধার্ত ও দুর্বল দেখাচ্ছে,
তাই তিনি বড় এক গ্লাস ভরে দুধ এনে তাকে দিল।
সে ধীরে ধীরে তা পান করল। তারপর সে তাকে জিজ্ঞেস করলঃ
“আমি আপনার কাছে কত ঋণী হলাম?”
“এ জন্য আমার কাছে তুমি কোন ঋণী নও,” উত্তরে মহিলা বল্ল।
“মা বলেছেন, কারও প্রতি দয়া প্রদর্শন করে তার প্রতিদান হিসেবে
কখনও কোন কিছু নিতে নেই।”

“আমার অন্তর থেকে আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি,” বালক বল্ল।
হাওয়ার্ড কেলি যখন সেই বাড়ি ত্যাগ করল, তখন সে শুধু নিজেকে সুস্থতাবোধ মনে করছে না, সৃষ্টিকর্তার প্রতি ও মানুষের প্রতি তার বিশ্বাসও সুদৃঢ় হল।

অনেক বছর পর, সেই অল্পবয়স্ক মহিলাটি জটিলভাবে অসুস্থ হলেন।
এই অসুস্থ মহিলাকে নিয়ে স্থানীয় ডাক্তার বিপাকে পড়ে গেলেন। তারা রুগীকে বড় শহুরে ডাক্তারের নিকট স্থানান্তর করলেন। পরামর্শ করার জন্য ডাঃ হাওয়ার্ড কেলিকে ডাকা হলো।

রোগীকে যে শহর থেকে নিয়ে আসা হলো, সেই শহরের নাম শুনে অদ্ভুতভাবে তার চোখ চমকে গেলো। তৎক্ষণাৎ তিনি উঠে ডাঃ এর পোশাক পড়ে রোগীর কক্ষে তাকে দেখতে চলে গেলেন। তাকে দেখে তৎক্ষণাৎ ডাঃ তাকে চিনতে পারলেন। তিনি ডাঃ দের পরামর্শ কক্ষে চলে এলেন। এবং তিনি মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলেন, যেভাবেই হোক রোগীকে সুস্থ করে তুলতেই হবে। সে দিন থেকে তিনি বিশেষভাবে তার প্রতি মনোনিবেশ করলেন। দীর্ঘ দিন যুদ্ধ চালাবার পর, এ যুদ্ধে তিনি বিজয়ী হলেন।

অবশেষে হসপিটালের অফিস কক্ষে এই রোগীর বিলের জন্য ডাঃ কেলি আবেদন জানালেন। তিনি বিলের কাগজ দেখে কাগজের মারজিনে কিছু লিখে তা রোগীর নিকট পাঠিয়ে দিলেন। মহিলা বিলের পেপার চোখের সামনে খুললেন। বিলের অনেক বড় এমাউন্ট দেখে তিনি আঁতকে উঠলেন। তিনি নিশ্চিত হলেন যে, এই বিলের টাকা আদায় করতে হলে তার অবশিষ্ট জীবন শেষ হয়ে যাবে।

চূড়ান্তভাবে তিনি তা আবার দেখলেন, তার চোখ বিলের মার্জিনে গিয়ে আটকে গেল। যখন তিনি পড়লেন এই শব্দগুলোঃ “এক গ্লাস দুধের বিনিময়ে এই বিলের ফুল পেমেন্ট আদায় করা হলো।”

(সাইন)
ডাঃ হাওয়ার্ড কেলি

আনন্দ আর কৃতজ্ঞতার অশ্রুতে তার দু’চোখ চিকচিক করে ভিজে উঠলো।
তখন তার আনন্দ ভরা মনে সৃষ্টিকর্তার নিকট প্রার্থনা জানালেনঃ
“ধন্যবাদ এবং সমস্ত প্রশংসা তোমার জন্য হে সৃষ্টিকর্তা! তোমার ভালোবাসা ছড়িয়ে পড়েছে মানবজাতির অন্তরসমূহে এবং তাদের হাতে।।

*********
অনূদিত

অপু ও একটি আহত পাখি

একদিন বিকেলে ঘনকালো আকাশ।
চার দিকে ভীষণ ভাবে অন্ধকার হয়ে আলোকিত দিনটাকে যেন গিলে ফেলছে কোন এক অশুভ শক্তি। দিকে দিকে সবাই এক অজানা আশংকায় ভীত !

কালবৈশাখী ঝড় হলো। অপুদের বাড়িতে অনেকগুলো আম গাছ। ঝড়ে গাছের নিচে ঝরা পাতা আর ছোট বড় কাঁচা আমে একাকার হয়ে আছে আমতলা। গাঁয়ের শিশু কিশোর সবাই আম কোড়ানো নিয়ে ব্যস্ত। ছোট ছোট গর্তে বৃষ্টির ঘোলা পানি জমে আছে। ঐসব পানি ভরা গর্তের কিনারে গেঁ-গোঁ গেঁ-গোঁ করে গাল ফুলিয়ে ছোট বড় ব্যাঙ ডাকছে। কোথাও ঝি ঝি পোকা গান ধরেছে। কি এক চমৎকার কলরব শোনা যাচ্ছে চতুর দিকে!

ঝড়ের পরে গা শির-শির করা শীতল বাতাসে অপু হাটছে আর এসব দেখছে। এসব দেখে সে খুব মজা পাচ্ছে। ওদের বাঁশঝাড়ের পাশ দিয়ে হেটে যেতেই ওখানে গাছের নিচে ঝরে পড়া অনেক পাতার স্তুপের সাথে চুপ করে একটি অসহায়ের মতো ঘুঘু পাখি বসে আছে। পাখিটা দেখে সে কৌতূহলী হয়ে এগিয়ে গেলো। কাছে গিয়ে ধরতে গেলো। না, এটা উড়াল দেয়ার কোন চেষ্টাই করল না । অতি অসহায়ের মতো এটার চোখ দু’টু এদিক ওদিক ঘোরাচ্ছে। অপু পাখিটাকে আলতো হাতে ধরে হাতে উঠালো। পাখিটার ছোট্ট শরীরটার কুসুম গরম তাপ তার হাতে অনুভূত হলো। ছোট্ট বুকটার ভিতর কি যেন একটা ধোক ধোক, ধোক ধোক করে তার হাতে স্পর্শ করছে বারবার। ছোট্ট অপুর বুঝার বাকি রইলো না। এটা পাখিটার হৃদপিন্ড। ঝড়ে আহত হয়ে প্রাণ ভয়ে এটার হৃদপিন্ডটা এখন এভাবে ধোক ধোক করে কাঁপছে। এই অসহায় পাখিটার জন্য তার খুব মায়া হলো । সে এটাকে আলতো করে হাতের অঞ্জলিতে বসিয়ে বাড়ি নিয়ে এলো।
সে ভাবলো, এটা হয়তো বা তার সাথিটার জন্যই কাঁদছে। সাথিটা কী বেঁচে আছে, না মড়ে গেছে কে জানে! এখন আমাকে পাখিটাকে যত্ন করে বাঁচাতে হবে। পাখিটাকে ফিস ফিস করে সে বললো- তুই এভাবে বুক ধুক ধুক করে কাঁপছিস কেন! শোন! তোর কোন ভয় নেই। আমি আছি না!
আমি তোর বন্ধু। তোর কোন ক্ষতি হতে দেবো না কী আমি? দেখিস, তুই ঠিকই একদিন ভালো হয়ে উঠবি। আবার পাখা ঝাপটিয়ে আগের মতো উড়াল দিতে পারবি। কক্ষনো তোকে আমি খাঁচায় বন্দি করে রাখবো না।
অপু দেখলো, বাতাসের ঝাপ্টায় পাখিটার ডানায় একটু রক্ত জমে আছে। হয় তো বা এটার ব্যাথায় পাখিটা অস্থির হয়ে আছে। সে এটাকে একটি খাঁচায় পুড়ে ঘরের এক কোনে যত্ন করে রাখলো। একটি বাটিতে খাবার ও অন্য একটি বাটিতে পানি ভরে খাঁচার ভিতর রেখে দিলো। পাখিটা খাচ্ছে না। আবার একটু পরে দেখলো; না, এবার একটু একটু ঠোকরিয়ে খাচ্ছে। অপুর মনে খুব ভালো লাগছে। এক দু’দিন এভাবে রাখার পর, দেখলো পাখিটা কেমন যেনো প্রাণবন্ত ও চঞ্চল হয়ে উঠছে। সে খাঁচার কাছে যায়, পাখিটা কেমন যেনো দুচোখে কৃতজ্ঞতা ভরে বন্ধুসুলভ দৃষ্টিতে তার দিকে তাকাচ্ছে। এসব দেখে অপুর মন এক নিটোল আনন্দে ভরে উঠল।
পাখিটা এখন সুস্থ হয়ে উঠছে। এটা আর খায় রাখা ঠিক হবে না। ওকে খাঁচা থেকে বের করে আনলো। দেখলো এটা উড়াল দিয়ে যেতে পারে কী না। না, আর কোন ভয় নেই। এটা এখন সম্পুর্ণ সুস্থ। পাখিটাকে আকাশের দিকে ছুড়ে দিয়ে মৃদুস্বরে অপু বললো, যা বন্ধু! তুই এখন সুস্থ। তোর কোন ভয় নেই এখন আর। তুই এখন তোর সাথিকে গিয়ে খুঁজে বের কর। পাখিটি আনন্দে পাখা ঝাপটিয়ে আকাশে উড়াল দিয়ে চলে যাচ্ছে। অপু এখন সবচেয়ে বেশি আনন্দ পাচ্ছে মনে। অপু পাখিটিকে ডেকে বললো- এই শুন……ভালো থাকিস বন্ধু!, আমাকে ভুলে যাসনে যেন ………!

মা’ এর জন্য ভালোবাসা

ফুলের দোকানের সামনে এসে একজন ভদ্রলোক তার গাড়ি থামালেন।
উদ্দেশ্য তার মা’য়ের জন্য কিছু ফুল কিনবেন। যিনি এখান থেকে প্রায় দু’শ মাইল দূরে বাস করেন। গাড়ি থেকে বের হওয়ার সময়, তিনি লক্ষ্য করলেন, দোকানের পাশে, পায়ে হাঁটার পাকা রাস্তার কিনারে মনখারাপ করে একটি ছোট্ট বালিকা বসে আছে।

ভদ্রলোক তাকে জিজ্ঞেস করলেন, “কি গো, তুমি এভাবে মন খারাপ করে বসে আছো কেনো?”

বালিকা বললো, “আমার মা’য়ের জন্য একটি ফুল কিনতে চেয়েছিলাম, কিন্তু আমার কাছে শুধু ৭৫ সেন্ট আছে; এবং একটি ফুলের দাম দুই ডলার।”
লোকটি মুচকি হেসে বললেন, “এসো আমার সাথে দোকানে। আমি তোমাকে একটি ফুল কিনে দেব।”

তিনি ছোট্ট বালিকাটির জন্য একটি ফুল কিনলেন। এবং নিজের মা’য়ের জন্যও ফুল দেয়ার অর্ডার করলেন। যখন দেখলেন, বালিকাটি চলে যাচ্ছে, তিনি
বালিকাকে বললেন, “চলো, তোমাকে তোমাদের বাড়ি পৌঁছে দেই।”
“হ্যা, দয়া করে আমার মা’য়ের কাছে আমাকে পৌঁছে দিন।” বালিকা বললো।
সে তাকে রাস্তা দেখিয়ে একটি কবরস্থানের দিকে নিয়ে গেলো। নতুন একটি কবরের উপর সে ফুলটি রাখলো।
মানুষটি ফুলের দোকানে আবার ফিরে এলেন, একটি ফুলের তোড়া উঠালেন
এবং দু’শ মাইল দূরে ড্রাইভ করে তার মা’য়ের বাড়ি চলে এলেন।

শিক্ষাঃ জীবন খুব ছোট। যিনি তোমাকে ভালোবাসেন এবং যত্ন নেন, তার জন্য যতটুকু সময় দেয়া তোমার পক্ষে সম্ভব, তার সাথেই সময়টা কাটিয়ে দাও।
—————–
অনূদিত

… তৃষ্ণা

ভালোবাসার তৃষ্ণা কী
মিটে কভু সই?
যতো দিবে আরও নিতে
হাত পেতে রই।

সুখে ডুবি তুমি এলে
প্রাণস্পর্শ পাই;
কবোষ্ণ ওমে ডুবে
নিজেকে হারাই।

খুঁজি তোমায় সুরভিত
পাপড়ি ফুটা ফুল;
বকুলমাল্য গুঁজে দেব
কালো খোঁপা চুল’।

বাতায়নে পুষ্প থোকা
সুরভিত মন;
প্রেমাঞ্জলি দিতে তোমায়
খুঁজি আসার ক্ষণ।

পাইতে জীবন তোমায় নিয়ে
হাজার বছর কাল;
সময়ের নাও ছাড়তে চাহি
উড়িয়ে হৃদয় পাল।

গাঁয়ের টানে….

একবার যেতে ইচ্ছে করে
আমার ছোট্ট গাঁয়;
শিশির ভেজা দুর্বা ঘাসে
হাটব নাঙা পায়।

শীতল হবে মনটি আমার
দেখে গাঁয়ের মুখ;
মমতাময়ী মাকে দেখে
জোড়াবে মোর চোখ।

সবুজ গাছের শ্যামল কুঞ্জে
পাখির কলতান;
নির্মল হাওয়া বইবে সেথা
জোড়াবে মোর প্রাণ।

মেঠোপথের বাঁকে বাঁকে
ছোট্ট কোড়ে’ ঘর;
হাত ছানিতে ডাকে আমায়
হইতে দেয় না পর।

শান্ত দুপুর, পদ্ম পুকুর
কুকিল’ মায়া ডাক;
গাছে গাছে নানান পাখি
ডাকে আরো কাক।

দুখী মায়ের নিটোল মায়া
থাকতে দেয় না দূর;
আমার যেতে ইচ্ছে করে
শ্যামল মধুপুর।

বৈশাখী শপথ

স্মৃতির ভাজে অতীত হলো
সুখ বেদনার দিন;
নতুন বছর দিলো আবার
একটি ভোরের ঋণ।

এসো সবাই সব ভুলে যাই;
অতীত দুঃখ গুলো;
নতুন আশায় জাগি আবার-
দৃপ্ত পদে চলো।

ফুলগুলো আজ হেসে উঠছে
সুরভি মাখা ভোর;
যেতে হবে তোমায় আমায়
বন্ধু! অনেক দূর।

নতুন দিনের স্বপ্নগুলো
প্রতীক্ষিত আজ;
অলস সময় বসে আর নয়
করতে হবে কাজ।

সুখ-বিলাস আর মানিক-রতন
কঠিন কিছু নয়;
জীবন যুদ্ধে জিত্তে হবে
করতে হবে জয়।

এসো করি সবে মিলে
দুর্জন কে বর্জন;
পুজি হবে সৎ-নিষ্ঠা
সৎ পথেই অর্জন।

বিজয়ী মোদের হতেই হবে
এ-ই আমাদের পণ;
হেসে খেলে কাজের সময়
করব না কাল ক্ষেপন।

বৈশাখী এই প্রথম দিনে
প্রতিজ্ঞা করে বলি;
জাতিগত বৈষম্য ভুলে
বন্ধু হয়ে চলি।

বাসবো ভালো মাতা-পিতা সকল প্রতিবেশী;
থাকব সবে মিলেমিশে
নির্মল হাসিখুশী।

সৌহার্দ্য

এপার-ওপার দুই বাংলা
একই মায়ের স্বপন;
সুখ পাখিটা ঘুরে উড়ে
করে মিতালী বপন।

স্বপন রাঙা একই আকাশ
অভিন্ন রঙধেনো;
কাব্য কথায় আঁকি আলেখ্য
মোরা পর নই জেনো!

আল্পনাতে এপার-ওপার
ভাষা মোদের খেয়া;
সৌহার্দ্য হোক দুই বাংলার
মা’য়ের স্নেহে দেয়া।

জ্যোৎস্না ছড়ায় চাঁদমামা ঐ
রাতে হাজার তারা;
দু’বাংলা থাক একই মঞ্চে
“সৌহার্দ্য” হোক সাড়া।

কাঁটাতারে ভিন্ন ভূমি
অভিন্ন ভাষা’ দেহ;
জড়িয়ে রাখে দুই বাংলা
অকৃত্রিম এক স্নেহ।

ছিলেনা তুমি তাই….

তুমি ছিলে না তাই আকাশে চাঁদ উঁকি দিয়েও আমার মনোরণ্য
জ্যোৎস্নার আভায় আপ্লুত করেনি।
তুমি ছিলে না তাই উর্মিমালারা আমার বেলাভূমিতে আঘাত হেনেও
জাগাতে পারেনি আমায়।
তুমি ছিলে না তাই আমার রাতের
আকাশে তারার মেলা জমলেও
আলোকিত করেনি আমার মানস মন্দির।
তুমি এলেনা তাই আমার কথার মালারা নীরব নিস্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল।
তুমি এলেনা তাই আমার একুশের
বর্ণ মালারা ভাষাহীন হয়ে মূক হয়ে গিয়েছিল।
তুমি এলেনা তাই আমার পুষ্পোদ্যানে ফুল ফোটাতে আসেনি
ফুল পরীরা।
তুমি এলে না তাই আমার কাব্যে
রঙ ছড়াতে ভুলে গিয়েছিলো কাব্য কথারা।
তুমি এলেনা তাই আমার কবি মন
গতিহীন নিথর দাঁড়িয়ে সাঁঝের দীপ জ্বালাতে পারেনি এতটা দিন…।
তুমি এলেনা তাই বৃষ্টির নৃত্যের ঝংকারেও জেগে উঠেনি এ প্রাণ..।
***—

অনুভবে-“চন্দ্রাবতী”

সুখানুভূতি তোমায় খুঁজে
একলা নীরব নীরালায়;
প্রিয় তোমার বদন-কান্তি
পেরাডাইজ এর সুখ ছড়ায়।

বলি তোমায়-“চন্দ্রাবতী!
অপেক্ষাটা তোমারি জন্য;
না এলে তুমি কেন বল
মন যে আমার হয় শূন্য!”

চন্দ্র মল্লিকা ডালিয়া ফুল
ভুলাতে পারেনা বিরহী ক্ষণ;
অনুভবে তোমার আবেশ’
হারায় কেন বলো এ-মন!

হাস্নাহেনা, রজনী গন্ধা
মাতাল করা সুরভি ফুল;
বলে আমায়-“মন খারাপ নয়,
খুলরে এবার আঁখি খোল!”

দোল খেলে যায় দোলন-চাঁপা
প্রতীক্ষাতে তোমারি রই;
মানস-আকাশ মেঘে ঢাকা,
–“আমি কি সই তোমার নই!”

মধু রাত

বলছি তোমায়- “চলে এসো
আজই সাঁঝের আগে;
তোমারি পথ চেয়ে আছি
বাঁধব অনুরাগে।”

উষ্ণ হৃদয় তৃষিত মন
আসবে বল, রাজি!
প্রেম-বাঁধনে অবরুদ্ধ
করব তোমায় আজি।

সুরভিত রজনিগন্ধা
ছড়াচ্ছে মধুর ঘ্রাণ;
নিদ আসছেনা তুমি হীনা
জেগে তৃষিত প্রাণ।

বসন্ত দিন যাচ্ছে চলে
যাচ্ছে মধুর রাত;
আবার বুঝি আসবে আবার
তুমি হীনা প্রভাত!….

তারার হাটে ঝলমলে এক
নীরব স্বপ্ন জ্বলে;
মধু রাত এই পূর্ণতা পাবে
প্রিয় তুমি এলে।

নীরব ব্যথা

বনফুল আর আশালতা
পাখপাখালির গুঞ্জন সেথা;
খাঁচার পাখি কয় না কথা
শুনব তাদের মনের ব্যথা।

ছড়ার বুকে আঁকব আজি
সবার বুকের দুঃখরাজি;
কষ্টের মাঝে জীবন যাদের
দুঃখই জীবন সঙ্গী তাদের।

গাছের দুঃখ, মাছের দুঃখ
পদ্মা নদীর শুকনো বক্ষ;
পদ্মার বুকের আহারাজি
মাতৃ ভূমির জীবন বাজি।

বাবা্র দুঃখ, মায়ের দুঃখ
বৃদ্ধাশ্রম আজ বাঁচার কক্ষ!
খাবার নিয়ে যুদ্ধ যাদের
যুদ্ধই জীবন, দুঃখ তাদের।

থাকার দুঃখ, খাওয়ার দুঃখ
জীবন নদীর নেই যে লক্ষ্য;
পথের ধারে আশ্রয় যাদের
মানুষ কী সে ভাবছ তাদের!

আশ্রয়হীনদের কষ্টের পাহাড়
দুঃখ তাদের নেই যে আহার;
ওরা মানুষ ভাগ্য যাদের
বঞ্চনা দিলো দৈব তাদের।

দীপ জ্বালিয়ে আশার আলো
জ্যোতি করো না ঘরটা কালো;
সবে মিলে প্রাণপণে চেষ্টা’
এসো না গড়ি মায়ের দেশ’টা।

… মধুর ক্ষণ


হারিয়ে যাওয়া মধুর ক্ষণ
ছেলে বেলার দিন;
দুষ্ট মনটা কষ্ট খুঁজে
বাড়িয়ে দেয় ঋণ।

খুঁজি আজও ও-ই সময়টা
লুকিয়ে করা দেখা;
মনটা আজও আনচান করে
পাইতে তোমার লেখা।

খুঁজতাম তোমায় প্রাণের সখী
আপন করে একান্তে;
আজও খুঁজি ঐ সময়টা
যদি তুমিও জানতে!

তোমায় তখন পেতাম যদি
মধুময় ওই দিনে;
আদর সোহাগ সবই দিতাম
বাঁধতাম প্রাণের সনে।

হারিয়ে যাওয়া দুরন্ত দিন
গেলো কোথায় বলো!
আমি তোমার প্রাণেই থাকি
খোল আঁখি খোল।

হারিয়ে যাওয়া মধুর ক্ষণ
দিবে কী ফিরিয়ে;
যাব আবার মধু বনে
সখী তোমায় নিয়ে।

ফাগুনের ছড়া

মাঘের শেষে ফাগুন এসে
করছে এ কী খেলা;
প্রকৃতিতে বসিয়েছে
বিচিত্র সব মেলা।

ফাগুন হাওয়া বাণে পাওয়া
ছোট্ট কুঁড়েঘর;
গাছ-গাছালি ভেংগে-চূরে
ভয়ে থর থর।

ধনী-গরিব সবে মিলে
একই গাঁয়ে থাকি;
নবান্নের সব পিঠা-পোলাও
মহানন্দে চাখি।

পাখ-পাখালি’ কলকাকলি
বৃক্ষ-শাখে হাওয়া;
আম শাখাতে মুকুলে’ ঘ্রাণ
মধুর ক্ষণ পাওয়া।

বন-বাদারে ফুলের মেলা
হাওয়ায় মধুর ঘ্রাণ
প্রকৃতির এই চিত্র মেলায়
প্রফুল্ল হয় প্রাণ।

বিশ্ব-স্রষ্টার শ্রেষ্ঠ দান
ষড়-ঋতুর দেশ;
সুখে-দুখে মিলে-মিশে
আছি ভালো বেশ।