এইচ এম শরীফ এর সকল পোস্ট

এইচ এম শরীফ সম্পর্কে

হেরো আপন হৃদয়মাঝে বিশ্ব যেন তোমার স্বদেশ|| সৌহার্দ্য হোক বিশ্বজনীন অকৃত্রিম এক হৃদ্যতা' রেশ|| বিশ্বজনীন সৌহার্দ্য মোর অখিল বিশ্বব্যাপী। হৃদয়জুড়ে জেগে আছে হিতৈষী এক ছবি।

খুকি

ধরার বুকে রাত নেমেছে
আঁধারে ঘর কালো;
খুকি আমার জনম নিল
ঘর করিল আলো।

পাড়া পড়শি ভিড় করেছে
সবাই হাসি খুশি;
এ-নয়তো মোর ছোট্ট খুকি
উদয় হলো শশী।

মা-আমার নাতনী পেয়ে
হলেন মহা খুশি;
সুখ’ বন্যায় ভরে দিলেন
সকল মাসি পিসি।

খুকি আমার হচ্ছে বড়
মা-বাবার আদরে;
স্রষ্টা তোমার মহিমা গাই
সদা, চরাচরে।

আধো ভাষায় খুকি কভু
বাব্বা রবে ডাকে;
মাম্মা বলে ডেকে আবার
মাকে কভু হাকে।

কন্যা’ জনম শুনতে পেয়ে;
যে করে মুখ ভারি।
শুনুন এবার বিশ্ববাসী;
তার তরে মোর আড়ি।

আসুন এবার সবাই মিলে
শপথ করে বলি;
পুত্র-কন্যা সমান ভেবে
আনন্দে পথ চলি।

যোগ্য করে কন্যা সন্তান
যদি গড়ে তুলি;
সসম্মানে বাঁচব সবাই
দুঃখ সবই ভুলি।

## উৎসর্গঃ বিশ্বের ঐ সকল কন্যা সন্তানদের সম্মানে, যাদের জন্ম হবার খবরে তাদের মা-বাবা এবং নিকটাত্মীয়গণের মুখমন্ডল কালো হয়ে গিয়েছিল।

মা’র বাঁধন

আকাশের বুকে মেঘের ভেলা
পৃথিবীর বুক বিষাদে ভার
ধরার বুকে অশ্রু ফেলে
বর্ষা আনিল মধুময় আষাঢ় ।

সকাল সন্ধ্যা কাঁদছে বধু
নৌকায় যাবে বাপের বাড়ি;
আড়িয়াল বিলে হাসছে শাপলা
কাটে না দিন আর মা’কে ছাড়ি।

শালুক তুলিতে জলকেলিতে
কত না মধুর হারানো দিনগুলো;
বকুনি সহেছি মা’র কত না নীরবে
মজিতাম খেলায় উড়িয়ে ধুলো।

খুনসুটিতে ছোট ভাইকে কাঁদালে
মা এসে দিতো জোরে কান মলা;
ভোরে, নীরবে গিয়ে বকুল তলায়
কুড়িয়ে বকুল গাঁথা হয় না মালা।

বই-খাতা নিয়ে সাঁঝের বেলা
টেবিলে বসা ছিল কতো না তিক্ত;
সেই সব মধুর হারানো দিনের ব্যথায়
হয়ে গেছি আজ কত না রিক্ত!

লাল শাড়িতে এই অচেনা গাঁয়
কাটছে না দিন আর শ্বশুর বাড়ি;
চোখ’-কোনে মা’র চিকচিক অশ্রু
থাকতে দেয় না আর বাঁধন ছিঁড়ি।

পিছু দেখা

তোমার অমৃত আলোকরশ্মি যখন আমার বোধের
আতশি কাঁচে কেন্দ্রীভূত হলো, তখন ঝুম ঝুম রবে
বয়ে চলা প্রাণের ঝর্ণাধারা থমকে দাঁড়ালো; সেদিন
ইচ্ছে হলো, তোমার এ অমৃত আলোকচ্ছটার উত্তরীয়
জড়িয়ে জীবন চলার অনন্ত পথ পাড়ি দিই।

আচ্ছা, এভাবে তুমি চেতনায় আমাকে না জড়ালেও
তো পারতে, কেন তুমি সেদিন ভালোলাগার শাণিত
ছুরির আঘাতে আমার বোধের মানচিত্র ক্ষতবিক্ষত
করলে! সেই ক্ষত থেকে আজও প্রবাহিত আরক্ত খুন
আমার নব নব অঙ্কুরিত চেতনাকে ভাসিয়ে দিচ্ছে।
আজও আমি রণক্ষেত্রে যুদ্ধাহত এক উন্মাদন সৈনিক;
যার দুর্দমনীয় চেতনার অশ্বের লাগাম তোমার হাতে।

এভাবে কষ্টের আরশিতে কতদিন আর আমাকে
স্বেচ্ছায় বন্দিত্বকে বরণ করে চলতে হবে!

আমার গাঁ

সবুজ আঁচলে ঘোমটা জড়ানো,
মায়াবী গাঁ’র কথা;
শুনিবে যদি এসো হে বন্ধু,
থাকি মোরা সেথা।

ছোট্ট এক সবুজ গাঁয়ে,
আমার বসবাস;
কুলকুল রবে নদী চলে,
তারই এক পাশ।

পাল উড়িয়ে চলে নৌকা,
জলে ভাসে হাস;
মাছ ধরেই জেলে ভাইদের,
চলে বার মাস।

গাঁয়ের মাঝে পাঠশালা এক,
জ্ঞানের আলো ছড়ায়;
এমন রূপটি কোথাও খোঁজে,
পাবে নাকো ধরায়।

ভোর হলেই লাঙ্গল কাঁধে,
ছোটে কৃষাণ দল;
পাঠশালাতে শিশু-কিশোর,
করে কোলাহল।

প্রাণের সাথে প্রান মিলিয়ে,
সেথা সবে থাকি;
সুখ-দুখের যত্ত কথা,
আল্পনাতে আঁকি।

ধুলো উড়ানো মেঠো পথে,
গোরুর গাড়ি ছোটে;
ক্ষুধায় চোখে অশ্রু ঝরে,
ভারি বোঝা পিঠে।

আছে সেথায় বড় দীঘি,
শাপলা ফুলের মেলা;
নাইতে গিয়ে দুষ্ট ছেলে,
জলে করে খেলা।

নানা জাতের সবুজ বৃক্ষ,
ফুলে ফলে ভরা;
আকাশ জুড়ে আলো ছড়ায়,
আঁধার রাতের তারা।

মাঠ জুড়ে শস্য ফলান,
মোদের কৃষাণ দল;
সরলতায় জীবন গড়া,
বুঝে না কোন ছল।

পৌষ পার্বণে কৃষাণ’ মুখে,
ফুটে সরল হাসি;
এসব কিছু মিলিয়ে গাঁ,
পরম ভালোবাসি।

বন্ধু

যে বিড়ালটা তোমায় দেখে মীও ডাকে
তোমার ভয়ে আড়াল খুঁজে লুকিয়ে থাকে;
আবার কভু তোমায় দেখে লেজটি নাড়ে
বন্ধু ভেবে তোমায় সে যে আসে ধারে।

দূরে গেলে তোমায় পেতে ব্যাকুল সে যে
মনের টানে প্রতীক্ষাতে তোমায় খুঁজে;
চোখের ভাষায় বন্ধু বলে ভালোবেসে
মীও ডাকে তোমার রুমের দ্বারে এসে।

কেন তাকে হঠাত করে আঘাত করো
পশু বলে! দেখো না ভেবে! দুঃখ তারও;
ক্ষিধে পেলে তারও মাথা ঝিম ঝিম করে
তোমার পিছু নিয়ে হাটে যদিও ডরে।

যে শিশুটি ক্ষুধার জ্বালায় চেয়ে থাকে
জীর্ণ শরীর, বাঁচার ইচ্ছে ছোট্ট বুকে;
অভাব তাকে শিক্ষা থেকে দূরে রাখে
ক্ষুধার রাজ্যে যুদ্ধ তাহার চলতেই থাকে।

তীব্র শীতের ভোর বেলাতে কাঁপতে দেখে
যে কাপড়টা ঘরের কোনে পড়ে থাকে;
মা’কে বলে একটা কাপড় দেও না ওকে!
সুহৃদ বন্ধুর হাত বাড়িয়ে বাঁচাও তাকে।

…….. পুনঃ প্রকাশিত

রোমাঞ্চিত প্রাণ


শীত যাবে তার আপন ঘরে
হিমেল চাদর নিয়ে;
রাঙা শিমুল সাজবে যখন
নাচবে তখন টিয়ে।

গাছে গাছে আমের মুকুল
খোশবু ছড়াবে;
ঝড়ো হাওয়ার মাথা’ তখন
পাগলামোতে পাবে।

লাল শাড়ীতে কৃষ্ণচূড়া
রাঙ্গাবে প্রকৃতি;
সুরভি মাখা ফুল্ গুলো সব
ছড়াবে আপন জ্যোতি।

পাখপাখালী আপন মনে
গাইবে তাদের গান;
ধরার বুকে ফিরে পাবে
রোমাঞ্চিত প্রাণ।

কবিতা হোক স্নেহ বন্ধন

– এইচ এম শরীফ

কবিতা হোক স্নেহ বন্ধন
তোমার আমার মাঝে,
কবিতা হোক কথোপকথন
প্রিয় সন্ধ্যা সাঁঝে।

কবিতা হোক প্রণয় কানন
প্রিয়ার সঙ্গ নেয়া,
কবিতা হোক সোহাগ নদে
ভালোবাসার খেয়া।

কবিতা হোক কোকিল কণ্ঠে
ভালোবাসার গান,
কবিতা হোক সুখে-দুখে
মান-অভিমান।

কবিতা হোক কিশোর বেলা
হারিয়ে যাওয়া দিন,
কবিতা হোক সুখের কথায়
ফিরিয়ে দেওয়া ঋণ।

কবিতা হোক হাস্নাহেনা
সুরভী মাখা হাওয়া,
কবিতা হোক তোমার-আমার
সুখের ক্ষণ পাওয়া।

কবিতা হোক মনোকাননে
সুরভী মাখা ফুল,
কবিতা হোক তোমার-আমার
ভেঙ্গে দেওয়া ভুল।

কবিতা হোক শ্রাবণ রাতে
অঝর ধারায় বৃষ্টি,
কবিতা হোক একটি জাতি
সুখে থাকার কৃষ্টি।

কবিতাটি পুনঃপ্রকাশিত

ঝরা বকুল

– এইচ এম শরীফ
বকুল তলায় ঝরছে বকুল দেখে যাও,
মণিবন্ধে বাঁধব রাখি হাত বাড়াও।

শীত সকালে বকুল তলায় শীতল হাওয়া,
সৌরভে মন কিসের নেশায় মাতাল পাওয়া।

আসবে বলে অনন্ত সুখ জাগে মনে,
সোহাগ-ডোরে বাঁধব তোমায় প্রাণের সনে।

পুষ্প পেলব নিটোল দেহের ওমের ঝর,
মিষ্টি রোদে আঁকবে চোমু সুখ-বিভোর।

তারুন্য ঝর বইছে সদা শরীর পর,
নিত্য দিনই প্রাণের চাওয়া,সয় না তর।

ঝরা বকুলে গাঁথব মালা রোমান্টিক,
আসবে তুমি কোন একদিন ঠিক ঠিক!

কবিতাটি পুনঃপ্রাকাশিত (শব্দনীড়ে আমার সমস্ত লেখা মুছে গেছে)

রিক্ততা

খুঁজে খুঁজে অনেক ঘুরলে
নিঃসঙ্গতায় কাটছে দিন
দুঃখের পাতায় জমছে ঋণ

স্বপন ভাঙ্গে ফিকে রঙে
শুকনো পাতার মড়মড়ে
সুখ বুঝি ঐ যায় দূরে

অনুরাগের পুষ্পদলে
খুশবো ছড়ায় স্নিগ্ধতা
তাতেও বাড়ে রিক্ততা।

রিক্ততা

খুঁজে খুঁজে অনেক ঘুরলে
নিঃসঙ্গতায় কাটছে দিন
দুঃখের পাতায় জমছে ঋণ

স্বপন ভাঙ্গে ফিকে রঙে
শুকনো পাতার মড়মড়ে
সুখ বুঝি ঐ যায় দূরে

অনুরাগের পুষ্পদলে
খুশবো ছড়ায় স্নিগ্ধতা
তাতেও বাড়ে রিক্ততা।