তোমার পয়মন্ত জমিন; ফসিলের কারখানা
ডুবে যায় দৃষ্টি, উপমা, আঙিনার নৃত্য ঘাস
ক্রমশ ডাকে অন্তরীণ ছায়াময়; বাঁশপাতা কাগুজে
শব্দ নৈঃশব্দ্যের চুমু বসিয়ে পেরিয়ে যাও
কেবল রঙ করা এক বৃত্তাংশ দেওয়ালের ভেতর;
বিদীর্ণ দীর্ঘ ছায়া পেরুতেই কার্পাস শরীর
হেলে পড়ে হৃদপিণ্ড শিহরণ উৎসবে, তুমি তো সে!
টিপু সুলতান এর সকল পোস্ট
হরফ গাথার শব্দ
পাঁজর নিচে, বৃক্ষপাতার জঙ্ঘাস্থি নগরে
একটা ক্ষতস্থান ভরে মেলতে দেখা যায়
বর্ষার ভেতরে হরফ গাথার শব্দ
খুরধ্বণি পা’য় ছুটে বেড়ায়
ভাড়াটে হাওয়া, ঘন নিঃশ্বাস ও নেবুলাইজার।
ফিসফাস ক্ষুরের শব্দ
সব পথ থেমে গেলে-দাঁড়াইয়া দেখি
ধানমাঠ বৃষ্টিতে কাঁথামুড়ি দিচ্ছে
চিড়েভেঁজার মতো; দুগ্ধবতী আলপথ-
শর্করা মাখানো শরীর-বাহু টাঙানো
তরুণরোদের উঠোন-থির হাওয়াদের
বাড়ি বধুয়াঝির হরিণ চোখ, এত ভাবি
বাদ যায় না আগত অনাগত মুখ
বয়ে নিচ্ছে পৃথিবীর সুস্থ কলোনি
মিলিয়ে যায় আগামী, কিছু বিসর্জন
এই সব খবর পৌছোয় ঘাসের কাছে
জেগে আছে পালের বৃক্ষ, ছায়াসম;
মহিষের ঘাড়ে পাখির হাঁটাফাটা দাগ
ফিসফাস ভেসে যাচ্ছে ক্ষুরের শব্দ
বিষণ্ণ সন্ধ্যার আগে-আমাদের সব
সীমিতকরণ কাজ ঘরে উঠছে
বাঁধাহীন লোকালয়ে, বৃষ্টির কয়েন
জেগে আছে শব্দ নীরবতায় ভিজে ভিজে-
আসমানে জ্যোৎস্না ওড়ে
শহরের কোন কলোনিতে থাকো তুমি
তোমার অ্যাপার্টমেন্ট কি দোতালার
সেখানে বারান্দা রয়েছে কিংবা রাস্তা?
যদি কখনো যাই, ঠাঁই-যদি এক ডাক দিই
তোমাকে দেখবার-ওলট পালট নাম ধরে
বেরিয়ে আসবে তো-বই হাতে, হাঁপিয়ে-
ম্লান আলোয়-চিতই পিঠায়-সন্ধ্যার দিকে
নগরে কাক রাত নামলে-গোপনতা ফেরে
পায়ের তলায় জমা হয় দীর্ঘপথ
বেঁচে ওঠে স্বপ্ন, অদূরে রেস্তোরা
অট্টালিকা হতে নেমে আসে অন্তরীণ গান
আমাদের ভাগ্য টস করে, কপালের ভেতর;
আমি মদ পান করি না, সিগারেটে নই
মাংসপ্রাচীর ফাঁটিয়ে দেখো-উম্মুল রক্ত
আসমানে জ্যোৎস্না ওড়ায়-বোধিবৃক্ষ তল
মৌনের বুক ফুঁড়ে বেরোয় নতুন বাজার-
গোলাপের পসরা সাজিয়ে রাখে চিন্ময় দা।
ইকোনো মুখের নৈঃশব্দ্য
বহুদিন পরে নির্লিপ্ত নীরবতা ভেঙে
জিরাফের মতো দাঁড়ানো
চিরায়ত হরিণ ঋতুর ধূসর জাগানো
ব্রক্ষ্মপুত্র মন…
তরঙ্গ শুনেছ? কিংবা রু রু সুর
ডিগবাজি মালটা রোদের কোলাজ
ক্রমশ চলে, গহীন স্পর্শের ভেতর;
কয়েক পর্ব শেষে
একটা ইকোনো মুখের নৈঃশব্দ্য
দেখা যায়
দূর ট্রেন হাওয়া কেটে কেটে
অদৃশ্য ধারাপতনে একটা আষাঢ়
ভাগ করে বনবিহারী গাছ
সাঁতার কেটে চলেছে আউশের সুবাস
ঘুমোয়নি বন্ধ্যাবাসে আদিত্য শেকড়।
ফণাতোলা সঙ্গম শিস
মনের ভেতর একটা গভীর জঙ্গল আছে
সবুজ দ্যুতি রং; অদূর হীরক বাতাস
নাচমুদ্রা শরীর ছুঁয়ে মাফিয়া গহীনে
সহসা নুনশুদ্ধ রোদ ছোঁয়াচে ঝরে পড়ে
তারপর! একটা ফুল নাচছিল, একা-
মাথাভাঙা বৃক্ষ ও পাখিটা হাসছিল
ফণাতোলা সঙ্গম শিসে, যত্নহীন-শেষবেলা।
জড়োহাঁস
ত্রস্ত পৃথিবীর হৈম হাওয়ায় উঁকি দিচ্ছে
কদিন পর পর ঢেঁড়সছানা ক্ষেতের মতো
জরায়ুভাঙা আঙুল, দূর ভূগোলে কামার্ত রূপ
এ যেনো, ভোর ধানে শাদা ভাতের অক্ত,
তিনবেলা জড়ানো অঘ্রাণের কুয়াশাকাতর ফুল,
পরিযায়ী রোদে প্রিয়তমার বেদুঈন মুখ;
চুপচাপ দেখছি-ছোট্ট নিঃশব্দ জড়োহাঁস
আলস্য উঠানে মুঠো মুঠো রজঃস্বলা পালক ছড়ায়…
এক রক্তপাখির ডানা
বাবার সঙে আমার কোনো ছবি নেই
অথচ পঁয়ত্রিশ মাইল হেঁটেছি
সপ্তর্ষি শিল্প স্কোয়াড ধরে
তাকিয়ে থাকি, পাশাপাশি;
স্রাবঘামে নুন খসে পড়ে
বৃক্ষের মতো, টলমল কাঁধে
হাওয়ার বিচিত্রবীর্য নেবুফুল ঘ্রাণ
সাপবাঁকা গামছায় তুলে রাখে
গৌর মুখো নিবিড় রং, লাঙল দাগ
কখনো ম্লানমুখ দেখিনি,কেবল
অনূদিত গল্প কলোনিতে দেখি
জঠর ঠাসা বিনয়ী উচ্চারণ-
ছায়াসম পাহাড়ে কৃষ্ণচূড়া আকাশ
অথবা পেনশনমতো লাইনে দাঁড়ানো
এক রক্তপাখির ডানা ঝাঁপটানো চোখ।
কৌতুহল
তোমরা প্রেমে পড়লে কোথায় দেখা করো
পুরোনো বাড়ির চিলেকোঠায়
নাকি আগুন চোখের নিচে…
চোরাই হাওয়ার বনে নাকি
শেকড় গোঁজা ঊরু বোনা-ঘাসে
মেঘের বাড়ি যাও নাকি
অন্য কোথাও কিংবা বনফুলের কাছে?
জর্জ ফ্লয়েড
শাদা ভল্লুক তুমি কী শুনিয়াছ
কালো কোকিলের বিনির্মাণ ডাক?
কিংবা দেখেছ নিঃশ্বাস-অরণ্যের উত্থান?
রংচটা শ্লোকব্যথা
এই বিচ্ছিন্ন বছর আলস্য উঠানে
পৃথিবীর পাড়াজুড়ে যা কিছু স্মৃতি
এখানকার কবি অনেক কিছু জানে
ঘাই খাওয়া শরীর বিছায়ে যায়
কনকলতা হাওয়ার কাছে
দিন শেষে কালোজাম সন্ধ্যা নামে
অবক্ষয় আনাগোনা নগর শোনায়-
সোনালি রোদের আভায়
কে কখন অচল হয়
কার নাম নাচে, পড়ে আছে
মাটি ও ঘাসের জাজিম
নাগরিক-পাখি অরণ্য প্রভা
কোথায় বিপ্লব ঘটে
অচেনা এক ব্যথার পাশে
রাতের জ্যোৎস্না রুটি হয়ে আছে
অভুক্ত ভিক্ষুক ফুটপাতে
মাইকে বাজে আযানু সুর
সেসব সংবাদ জাগিয়ে রাখে
নীরব পাথরে চোখ পোড়া ঘ্রাণ
কত তাপ, কত জ্বর বয়ে নিচ্ছে
আরও কোথায় কে ঘুমানো
শাদা সুতোয় জড়িয়ে যাচ্ছে
টের পায় ফুসফুস হৃদ শ্বাসপ্রশ্বাস
কিভাবে ব্যথা হয়ে ওঠে-শরীর
এই বিচিত্র রং দেয়ালজুড়ে
রাজধানী বনাঞ্চল হাসপাতাল!
শিল্পিত খোয়াবনামা
প্রতিদিন চক্রনাভি ছিঁড়ে বেরিয়ে আসি
-বিদগ্ধ নগরে,রাজহংস ছাই কালো
ধূসর পালক হাওয়া জুড়ে ছোটে অরণ্য
আমাকে ফেলে কবিতার কাছে ফিরি
হরিণ ক্ষুরো লম্ফঝাঁপ পা বেড়ে ওঠা
ফড়িং অথবা ফুলের রেণুমাখা বীজ-
এই সাঁতারু বৃক্ষ বটগাছের নিচে-
তরুণ শব্দের শিল্পিত খোয়াবনামা পৃষ্ঠা
ঊর্ধ্বমুখি ছায়া আঁকি, ডিম কুসুমের মতো;
আমার মতো
আমাকে আঁকড়ে ধরে বীষ পান করি
শরীর ছটফট করে, তারপাশে শিরবাঁকা আযান-
বকসারি লতাগুল্ম বৃক্ষ, কমলা লেবু রোদ
শীতল হচ্ছে সকল বেদনার তাপ; তৃপ্ত ভেতরে সন্ধ্যা-
জীবন মানে হারমোনিয়াম, আঙুলের হামাগুড়িতে
কিংবা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে শামুকভাঙ্গা সমুদ্রের দিকে
মুখ করে ফেরানো-চোখ, ডুবতে ডুবতে ভেসে ওঠে
-নিজেল রং, সুর তুলে খুঁটে খায় অনাগত মুখ-
হরেকরকম শিল্পায়ন, সব ফিকে রং আমার মতো;
আমাদের সমুদ্রপাড়ে বাটারফ্লাই মানুষ
সমুদ্র উড়তে শিখলে অরণ্য ন্যাড়া হতে থাকে
পাতাগুলোও বেড়াল বসা বালুর মতো
ওড়বার গল্প শেখে, রাজহাঁস-মাঠ চিরে ঘাস খায়
কেবল মহিষের ক্ষুর দাগ কাটে-ত্রিকোণ ঘর,
আমাদের সমুদ্রপাড়ে বাটারফ্লাই মানুষ
স্বপ্ন আঁকতে আঁকতে বন আঁকে, পথ আঁকে-
তারপর নগর, জড়ো হয় একে একে পেরেক গাঁথা
পৃথিবীর মুখমণ্ডল; চালাকি আকাশে তাকিয়ে-
ঝিঙেফুল রঙের অপরাহ্ন রোদ, দেখে-ছায়া কঙ্কাল
পুরাতন হাওয়া এসে কাঁপায়-সন্ধ্যা, গহিন রাত…
তারপর
সব রাত পুড়ে আলোরা অনুবাদ করে
স্নিগ্ধ প্রতিমার নরম শরীর
লোমবাসে শেষ ভোরে ভিড় জমায়
টলমল লাবণ্য ছুঁয়ে আমি রোজ
নেমে আসি কয়েকটা সিঁড়িধাপ ভেঙে
অথবা সেই তুমি, তোমার নাভিতে
জড়াইয়ে যৌবন নিয়ে ভাগি-
দিগন্তের মধ্যে; সব আয়োজন-রং
আরও ভাগ করে পালক জেগে ওঠা
বনভাঙা হাওয়া পাখি, ডুব দেয়-
প্রণয় হয়ে উড়ে যায়-পাহাড়ের গায়ে,
নগরীর কাছাকাছি-আমি সেদিন
উড়তে শিখলাম, বয়সের মাত্রাবোধ
ছিঁড়েফুঁড়ে-বুক ঠাসা জ্যান্ত স্পর্শিনীর গর্ভজলে।