টিপু সুলতান এর সকল পোস্ট

টিপু সুলতান সম্পর্কে

টিপু সুলতান লেখক নামঃ আদি সানম ১২ অক্টোবর ১৯৮৬ কেশবপুর, যশোর। বাংলাদেশ। জীবন বৃত্তান্ত; লিকলিকে স্বচ্ছ ক্যানভাস নদীর শরীরে উপচে পড়া প্রেমালিকার ঢেউ, স্রোতস্বিনী কল্লোলঃ প্রথম বার্তা,সবুজ আফ্রোদি উদ্দ্যানে গানের বাঁশিতে সংগীত শোনায়- লেবুগাছ ঘ্রাণ-আলাজ শরবত আমার পূর্ণানন্দ, নক্ষত্র-পৃথিবীপৃষ্ঠ হৃদয়বীণা রোদে পোড়া সখিনার রক্ত,শাদা দুধের মা; কালোত্তীর্ণ সন্তান আমি তাঁর শেষ অনন্দটুকুর ছায়ানট- মানুষ হয়ে ওঠা প্রবাদ ও সংলাপ। ★ প্রথম কাব্যগ্রন্থঃ গৃহ কারাগার।২০১৭ ইং। নৃ প্রকাশন,ঢাকা। প্রচ্ছদঃ কাব্য কারিম। ★ যৌথ কাব্যগ্রন্থ থেকে জাতীয় ম্যাগাজিন,লিটল ম্যাগ, পোর্টাল, জাতীয় পত্রিকাসহ বিভিন্ন ব্লগে টুকিটাক লেখালেখি। প্রিয় বাক্যঃ আমি ভালো আছি, তুমি...

তোমার সোনার সিথানে

হাত বদলাতে চায় না-এই শিল্প
জড়িয়ে আছে তোমার সঙে
‘মারণ ব্যাধি’ সোনার সিথানে
বেড়ে ওঠা কাবিননামা ফুল-সব

হাতের কররেখায় নিকানো উঠান
কীর্তিনাশা নদীর মতো স্মৃতি-স্রোত;
যেকোনো দুপুরে অগাণিতিক রং
নৌকোর গহন ছেঁড়ে দ্রুত হারায়
পোষা সন্ধ্যার প্রদীপে-সিরিজ হাওয়া
অদূরে বাঁচা মরা দাঁড়িপাল্লা গাছ
ফের ডাকে-আসমানি পথের কাছে
লাগাম টেনে সাজিয়েছে পাখিজন্ম;
তোমাকে ভেবে শরীর হতে নুন খসে
পড়ে-এই নগরে, দেখা যায় থির ছায়া

সকাল হচ্ছে-ঘুম কেটে যাচ্ছে
এত দিন ছিলাম, এত দিন ছিলে
বুকে বেধে না বদলানো তলানিতে
সুমিশ্রণ ঘ্রাণ ছড়ায় শিল্প মায়া।

অথবা মনে করো

অথবা মনে করো, এই কলোনির ভোরে
আমি একদিন তেরোশত নদীর তীরে
দিগন্ত ছুঁয়ে অপরূপা উষ্ণীয় রোদ্দুরে
তোমার মুখ খুঁজিতে খুঁজিতে শাদা
সজনেফুলের কুয়াশা-শাদা বকের পালে
বট বিস্তর ডালে ক্লান্ত মুসাফির হাওয়া
বসন্তমেঘ ভেসে যাওয়া নভোনীল সমুদ্র
সাঁতরাইয়া ভিড়বো-অদূর আলপথ-ঘরে;

ঝুরঝুরে মৃত্তিকায়-উঠোনের বনবাসে
গৃহবধূর হলুদ ফুলের গালে-শস্যদানায়
চুমু খেতে দাঁড়াইয়া যাব-মজুরির ক্ষেত
ভুরভুর নদী সিথানের কাছে-তারপর
দাঁড়াইয়া যাব ঘাসের ডগায়-আকাশ
থামিয়ে গহীন বনজোড়া আসমানী ছায়া
আমাকে রেখে যাবে অলিখিত বর্ণ মাইল-
আমাকে গেঁথে যাব ধুলোকণার মড়কে
ভালবাসা সাঁটিয়ে গোলাপ গন্ধ-যতখানি
যাহার মুখ গলে পড়বে-অসমাপ্ত মিষ্ট ঘ্রাণ-

হাত খোলো মায়মুনা

তোমার মুখ গলে পড়ে সকল অনুবাদের চুমুক
আমি পান করি-ঘোর তেষ্টায়, ক্লান্ত অবসাদে-
আমি তো প্রেমিক হতে পারিনি,
বলতে পারিনি গোলাপের কথা
কেবল বেদনার বাগানে-জন্ম পাওয়া এক কৈশোরত্তীর্ণ যুবক
হাঁটুগেড়ে পৃথিবীর দিকে হামাগুড়ি দেয়-
অথচ তুমি তাহারে ভাবিয়াছ-বাসিফুল!

অথচ প্রকাশ্য দাপিয়ে বেড়ায়-সহসা হৃদয়-
মমতার সুগন্ধ আর মধুর পৌরুষ,
তোমার গতর বেড়ে ওঠা পাড়াজুড়ে, উঠানে-
হৈম হাওয়ার কালিগঞ্জ শহর থেকে মেঘ ভাঙা আকাশ-

বড় হও বালক, আহ!বড় হও; চোখে গভীর সমুদ্র-
যাহার খোঁজে জীবনের জাহাজ ভিড়াইয়াছ
মানবীর দ্বীপে-সে দ্বীপদেশ কি চিনিয়াছ?
এখনও শীতফেরত ঋতুর সোনালি রোদ কাঁথামুড়ি দিয়ে
পড়ে আছে-কুয়াশার পুঁজিবাদী বিছানায়-মোটেও নড়ে না,
ঘুমিয়ে কুয়াশাকাতর-এই বদঅভ্যেস আগত তার রক্ত থেকে;
আমি প্রবেশ করেছি, দেখেছি সব-উৎসব

আমার অশ্রু আমিই পান করি, ক্ষীয়মাণ দেহের দ্রাক্ষাজীবনে
চুমুক লাগিয়ে আর ইতিহাসের সুখীতম দর্শকে পরিণত হয়
ভবিতব্যতার জিভ আলগা-ভাষা, পৃথিবীর মুথাঘাসের মতো
জংলায় ওড়ে এলোমেলো নবারুণ বাতাস
সকল যতিচিহ্ন কাটা ফাগুনপরিচ্ছদ, হেমন্ত ঠোঁটে শিশির ফোঁটা
শ্যাওলায় জলমাংস-অথবা রৌদ্রছুটি, কারোর দুঃখ-ত্রাসে
লুটিয়ে পড়ে আমার অতি কাছে-আহতভঙ্গির মতো; কবিতা ও গান/

আর তুমি হাসো! দু হাতে আগুন, আমি ছাইভস্ম সরিয়ে
দুনিয়ার নাগিনী কাঁটা বিছানো পথে-আমার রক্ত রঙে রূপ খুঁজি-
আঙ্গুলে গেঁথে রাখি প্রতিশ্রুতির শিমুল-পলাশ, কোকিল ডাক;

এখন অনেক কিছু চিনেছি-আপেল কাটা ছুরি, তোমার ভেতরে
গোপন পোষা চরমপন্থীদল ওৎ পেতে বসে থাকা নিন্দুক সংসার
তবু আমার ঠোঁট গেয়েছে অলকা গান তুমি অসাধারণ!
অথচ ছুঁতে পারিনি নাভিকাটা দেহের দুইগোছা ফুল
স্পর্শকাতরে তরতর বেড়ে ওঠা নাতিদীর্ঘ প্রেম, অঙ্গে জড়ানো
স্মৃতির ছিন্নমূল-লজ্জাবতী ঘ্রাণ, আগামীর পরশকাতর-

নিজের গল্প নিজেরে খুঁচিয়ে মারে-তারপর
জাফরানের ক্ষেতে মিশে যাই দারুণ দারুণ কৈশিক কষ্টে,
মৃত্যুর আগে-নরম দেহের কাফন গুছিয়ে, নিদ্রার নিচে-
সুখীতম নীরবতা বুকে টেনে অশ্রুতম বসন্ত ওড়াই-

আমি মরতে গিয়ে তোমার দেখা পেয়েছি পলকের ভেতর
সটান হয়ে শুয়ে আছ, অল্পাংশ ভাবতে ভাবতে দীর্ঘ ভাবনায়
তীব্র হয়ে ওঠে, ত্বকের নিচে রক্তের ফোঁটা, নিজের দিকে তাকায়
শরীর হতে উড়ে যাচ্ছে গহীন রাত ও ভোরবেলা,
হলুদ রোদ্দুরে শাদা বক
তারপর আদিগন্ত পাখির ডানায়-ঝুলভর্তি আকাশ-
দেখো, তোমার পরিচিত মাংসাদি মুখ-নাচোড় সমুদ্রে ভাসে-বিকেল

আমারও ঠোঁট ছিল, হলুদ, লাল, কমলা-
শরীর ফুঁড়ে বেরিয়ে এসেছে তোমার মতো মৌন মুখের তিল
ও চোখের কর্ণিয়ায় নড়াচড়া করে আসা উচ্চারণ-
ললিতকল বাতাসে জড়িয়ে যাচ্ছে বকুলমুখো জঙ্গলা গাছ
আমার লজ্জালু পৌরুষ সরব সৌধ অনুভূতি ধরে
অবলীলায় ঢুকে যাচ্ছে-
তোমার উন্মুখ বুকে দুই গোলাপ ফুটে থাকা বাগানে…

রাত্রে ঘুম নেই, পরশকাতর জাগে-সদ্য মনের শাসনে বহু বিরহ
বালক চোখের পরে-চাবুক মারি, নিজের শরীরে-
জখমের রক্তে ঝড় নামে নিলামের জানালায়;
তাকিয়ে দেখি-
আকাশে নাভিকাঁপা চাঁদ টুকরো টুকরো মেঘ পান করছে
আর ক্লান্ত মুসাফির বুকেপিঠে তুলে নিয়েছে তোমার শ্রীমুখ
আগুনাভ চাঁদের হাট পেরিয়ে চলেছে হৃদয় গোছানো দেশে
আমার টুটিচেপে অনাবৃত্ত কুসুমে জেগে দেখা-রূপের বাজারসদাই;

আমাকে খুন হতে বলেছ, হলুদ মালটা কাটা ছুরি দিয়ে-
সরিষা খেতের মতো পড়ে থাকা বৈকাল ডেকে যায়
নিশ্চুপ অভাগা আলপথে, ঘাসেরা কাতরায়-

তারপর ঘাসফড়িং সাঁতরায় চরমপন্থী নির্বোধ ভেবে-
কেবল আমারও তো মানুষ হবার ইচ্ছে ছিল, অবুঝ পাগল হতে
দীপন্বিত অনন্তের কাছে-ফাল্গুনের করিডোরে, রূপকথা পৃথিবী;
তোমার লজ্জানত কোমরে আধুনিক চাষের বিশ্বাস রচনা করেছি-
তুমি ভাবতে পারো-এ সব
কিছু মানুষের ধর্ম-বিচিত্র চাষ, জাগরকাটা অভ্যাস, ধরো, চেনা গন্ধ-

ঘর এঁকেছি, আমার মতো মানুষ দিয়ে-একদিন এসো,
দেখে যেয়ো-ইতিহাসের সুখীতম ব্যক্তি পরে আছে
বোধিবৃক্ষের ফাঁসি-তোমাকে জিতিয়ে দেবার শিল্প গুছিয়ে-
বহুদিনের স্মৃতি, আমি তো তোমাকে বুঝতে শুনতে
রূপালি ঢেউ পার করেছি-জীবনের শাস্ত্র ইতিহাসে যখন যৌবন তাথৈ

আমার বুক ফাটিয়ে বাহির করি সোহাগের নিদারুণ সংসার,
অদূরে দেখা হেরে যাওয়ার গল্প, নিষেধের বাণী-তুমি বিতর্কিত
আহা! মানুষও পেরেছে শিকার হতে পরম কপাল ভেঙে,
আমি তাকাতে পারিনি-খারাপের দিকে, মন হতে আলো টেনে ধরি
অমানবিক ধর্মে, নিষ্ঠুর কর্মে-অথচ তোমার ভেতরে পুষেছ অন্ধকার-

আলো চেয়েছিল, তোমার কালিগঞ্জ শহরে পৌঁছোবার-
পথের আঁচল ধরে-ধূলির বাকলে জমে ওঠা নিমতলী বাজার,
এখনও চোখ আমার বুর্জ অট্টালিকার মতো তাকায়-
খুব বেশী অদূরে নও, নাকের ডগায় যেমনটা মায়মুনা নিঃশ্বাস-

স্বপ্নের জ্বরে আমার মেরুদণ্ড কাঁপায়, শরীর কাঁপায়-
গোপন ভাষাগুলোও জানে-ওষ্ঠঠোঁটের নিচে অনন্ত
নভোনীল আমাকে ডাকে, তুমি এসো পিছু পিছু, সহজ করে
এসে দেখো-মিথ্যে আমিও নই, আমার আঁতুড়ঘরে
প্রকাশ্য তুমি-গোপন তুমি, তোমার উন্মুল জমিনে
আমার নির্মিত চোখ চাষাবাদ জানে-চাঁদ কাঁধে যুবক হেঁটে যাচ্ছে-

এই ভোরে-এই নিশিতসলিলে কি চাইব! কাফন দিও।
পরিহাসের অনুভূতি, অভিমানের কোনায় কোনায়
তোমার যাদুকরী অবহেলা জমে ওঠে, আমার হেরে যাওয়া-ইতিকথা
স্বপ্ন গোছানো বিস্তর পরিমাপ, নিদারুণ ক্ষত-অসমাপ্ত কাঠামো,
চোখ যেন রাতের তারা হয়ে যায়, দিন তো ভাঙনের অট্টহাসি-
আমি বড় হতে চাই, তোমার আঁচল ওড়ানো-অবশিষ্ট সমাজে,
রূপরেখা সংসার-অঙ্গপারে, হাত খোলো নিপুণ জমিনের ধুলোক্ণা।

একুশের কবিতা

মুখের ভাষা আঁকতে গিয়ে
এঁকেছি শহিদ মিনার,
শহিদ মিনার আঁকতে গিয়ে
এঁকেছি মুখের ভাষা-

আমার মতো এমন জাতি
আমার চোখে তরুণ একুশ
হিমালয় ও ভোরের ঊষা-
এই বুকেতে ছোটে হরিণ
এই বুকেতে পলিমাটি-
এই বুকেতে ওড়ে পাখি
এই বুকেতে প্রেম দিওয়ানা
আহ! এই মুখেতে মা ডাকি

কোন ভাষাতে মধু মাখা
কাহার আছে গো এমন রাগ-
এই ভাষাতে শিমুলগাছ
এই ভাষাতেই রক্ত ফুল
কোকিল ঠোঁটে বর্ণমালা ডাক-

দুরবিনে দিকরেখা পাখি

জীবনভর ধরাছোঁয়ার নাগালে থেকো-
বুড়ো ধমনির রক্তস্রোত, উজ্জীবিত মহাকাল
-যাবতীয় অভিমান লুকোচুরি খেলা
আহ! বিধুর চৈতি খাঁ-খাঁ কমলা রোদ;

আর্তির চোখে-গরম হাওয়া, সরব সটানে
বৃক্ষডাল, ঋতু-রাঙা মুখ, দুধ ভেজা মাঠ-
আমার দুরবিনে, দিকরেখা পাখি-থ্রু পৃথিবী;
সবকিছু মজুদ হয়ে ওঠা-বোধিবৃক্ষ তল-

তোমার স্নিগ্ধ সংগীতে সন্ধ্যার টলমল সুর
তীব্র নীরবতায় কাঁপন তোলে-মৌন নক্ষত্র
শেষ আলোকের বলিরেখায়-নাচো চন্দ্রমল্লিকা-
তোমার ব্যস্ত-পরিচয়; পাঠ করি, ধ্রুব দূর বহুদূর।

নগরে শুক্রবার

খবর পেলাম
একপশলা রসিকতা নিয়ে
দাঁড়াইয়া আছ

এই বসন্তে, এসো-খুন করো-
গাছকাঠে শিমুলের মতো;
নগরে ফেলে যাও-ঘৃণাজলোচ্ছ্বাস-

তোমার বাসন্তী ফুলে,

আজ বসন্তের পয়লা দিন-
দুয়ারে নেমেছে নতুন সাজ
আহ! হলুদ পাখিদের আনাগোনা
চুলের বেণি খুলে ওড়া ভাব

নগরে আজ আমার ছুটি
এই উপহার হোক-
তোমারও, সরব সবে শুক্রবার।

______________________
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ মিরপুর, ঢাকা
১ ফাল্গুন ১৪২৬, এই তো দেখা…

দিচ্ছে সাড়া

নগরে লেগেছে আগুন/বৃক্ষ ডালে-
এই দুপুরে, এই দুয়ারে-বসন্ত কালে
গরম হাওয়া দিচ্ছে সাড়া,
গাঁদা ফুল ও কৃষ্ণচূড়া-ছুট খেয়ালে

এই শহরে, মন ওড়ানো-নয়নতারায়
কাটছে একা ধড়ফড়ায়ে ভীষণ রকম
বনের কাছে-রং বদলে, আলো অধ্যায়!

মনের কছে চুল ওড়ানো ঘ্রাণ ভাসে
আহা রে সবুজ পাতায় মুখ মোছানো
বসন্ত প্রাণ-এইখানে সব হৃদয় হাসে-
এই নগরে লেগেছে আগুন/উচ্ছ্বাসে-

নগরে/গাছকাঠে শিমুল

আমি তোমাকে সহজ করে চিনতে পারি
তুমি হারানোর কেউ নও, ধরা পড়ো-মে-
আমার বসন্ত ঠাসা-নগর, শিশিরে-
গাছপাতায় বুঁদ হওয়া নরম হাওয়ায়;
আসমানের রোদ-তারপর গাছকাঠে শিমুল,
যেনো রক্তগ্রাম, সবুজ গ্রাম-অনন্ত অনুবাদ-
যুবকের আস্তর গড়ে তুমি হয়ে ওঠো-দিগন্ত;
কুসুম বলিরেখায় পরে বেড়াও-যাযাবর পায়চারি-
দিকে দিকে অরণ্য দাঁড় করে ফেরাও-পাখিশরীর-
তোমাকে লিখি-আকাশের ভেতর, শহরে-মৌনব্রত;

আমার তো সব ছিল

আমাকে স্পর্শ দিও। ভাঙনের মৌন উৎসব-

তোমার তুলোধোনা বাতাসের ক্লান্ত শরীর
আছড়ে পড়া সন্ধ্যার আগে-যেদিক ছায়া
স্রোতে অরণ্য ঘোড়া ছোটে-জলনদী ফের
ধুলোক্ণা মেশানো ঘাসের চাটাই নোয়ানো-
যেখানে পাল পাল দিগন্তরেখা থেমে গেছে

আমার তো সব ছিল, আসবাবে সাজানো
বহুদিনের ঘর-সংসার, তর তরে বাড়ন্ত
ছেলেমেয়ে, লতাপল্লব গন্ধ রং-সিঁড়ির মতো;
নভোনীল আকাশে শঙ্খচিলের রোদ
নগর-দেয়ালে কথা গজানো নতুন করিডোর
ওহ! এইসবে অনূদিত অনন্ত কর্ণিয়ার ভেতর
ঠাসাঠাসি একগুচ্ছ উচ্চারণ, চেনা বকুলগাছ-

আমি শুধু খুঁজি, বাসনা আর আলো-বহুদিন
যারা আমাকে দিয়েছিল ব্রক্ষ্মপুত্র নদী-
ধূসর ঘাসে বাতাস-শ্যামলী গান, কুয়াশা গ্রাম
তারপর যারা অভিমানে ফিরে গেছে-অন্তরীণ-

সহজ মৃত্যুর আগে

আমার দৃষ্টি ফেলেছি, পৃথিবীর সব পথে পথে
কোথায় মানুষগুলো যেন সাঁতরিয়ে যায়
শ্বাসের গন্ধে গলা চড়িয়ে দিচ্ছে চিৎকার-
সব পথ থেমে থেমে ডাকে-বনভূমি, আপনার

গাছগুলো নিরীহ প্রাণীর মতো দাঁড়িয়ে
আদিম পাতারা শঙ্খচিলের ডানায়-ওড়ে
নিথর শরীরে রোদের গন্ধ শুঁকে পোড়ে
চারপাশে কোলাহল, রোগী; নার্স-ট্রলি হাতে

ঊষর চোখ মেলে তাকায়-দিগন্ত, হাসপাতাল-
সহজ নগরে-মৃত্যুর আগে-এসো-দূরস্থ
এমন সংবেদন অঙ্গীকার-হলুদ স্পর্শ জ্বেলে
হাত বাড়ায়-খোলা আকাশের আলোক

রং ও শব্দ মেশানো জিজ্ঞাসা

যে কথাগুলো এখনো উঁকি দেয়-এখানে-
-বসে আছি, মাথার খুলি পাশে-মুখোমুখি
বহুদিন আগে, এই শহরে-আধখোলা চোখ

-পড়েছিল, শার্টের আলনায় মাকড়শাজাল;
স্নায়ুর ভেতরে জমে থাকা-অলেখিত হৈম দুপুর
ফসলের আলে-নিকানো উঠান-দিগন্তফুল
যতখানি প্রশ্ন মাঝারি উত্তর-বংশলতিকার মতো;

যার মুখ দেখে ঘুম ভাঙত, সে শিল্পীর হাতে
সালতামামী-সবুজ ঘাসে ঝুটোখোলা শিশির
ধূলোর শিথানে ফুরফুরে চড়ুইয়ের পালক
-রং ও শব্দ মেশানো গোল গোল জিজ্ঞাসা-

যে সুখ মনে রাখার মতো, প্রায় খড়কুটোর চাল-
চিন্তারও বাইরে, ভাঙাচোরা দিন শেষে সন্ধ্যা
একা ভাবি-আসে নবান্ন! তারপরও বিষণ্ণ কবিতা।

একা, সে ফেরে না

শ্মশানে পোড়া ছাই, প্রথিত প্রেমিকার, তার আত্মহত্যা-
কালো মেঘ হয়ে শৈত্য বাতাসে ওড়ে, ডিম কুসুমের মতো
হলুদ ঘাসগুলো পাতাশূন্য ভ্রুক দিয়ে দোলে-আলপথও-

একা, শুনি-অদৃশ্য পাতার বাঁশি-কুয়োভরাটে খুনো-নৈপুণ্যে
বারান্দা হতে পা-জুতা নড়ে-অথচ বাইরে নুহিতা অন্ধকার-
আহ! এক ঘড়ি পূর্ণিমাচাঁদ কে যেন ছিঁড়ে নিয়ে গেছে
এই ম্লানাভ হাটে, আঙ্গুল গুনে দিন যায়, সে ফেরে না-হাহাকার

পালানো মানুষ

আজ আমার বিষাদের দিন। যে কথা হয়নি বলা …
কবিতায় যে তমালতরু মুখ, নবান্নে ধানতারা ফুল-
যে কবিতার চোখ জমা রেখেছে-নির্ঝরা নৈঃশব্দ্যে
যে কবিতার নাক-খুঁজি, ঘাস-শৈত্য শিশিরে-পলকে
সে ছিল-কুয়াশা, কালিগঞ্জের মিনা, হৈম হাওয়া-
সে এক ব্যাধি, পালানো মানুষ-নভোমণি, ওহ! প্রার্থনা-

এখন বুকের বাঁপশে ব্যথা নিয়ে আছি

তুমি বলেছিলে আজ স্কুল দ্রুত ছুটি হবে
তুমি বলেছিলে বাড়ির গেটের শব্দ শুনতে পেয়েছ?
তুমি বলেছিলে এখন বাদাম বুট চিপ্স খাচ্ছি, খাবে?
তুমি বলেছিলে কালিগঞ্জ শহরে যাব
তুমি বলেছিলে বাবার জ্বর-বাজারসদাই করতে হবে
তুমি বলেছিলে মায়ের অবস্থা বেশী ভালো নয়
তুমি বলেছিলে রাস্তাঘাটে কোনো যানবাহন নেই
তুমি বলেছিলে ছোট ছোট পায়ে হেঁটে কথা বলছি
তুমি বলেছিলে আজ একটা মুখের ক্রিম কিনতে হবে-
তুমি বলেছিলে কালিগঞ্জ শহর হতে স্ট্যান্ডের দিকে যাচ্ছি
তুমি বলেছিলে আজ সন্ধ্যা হয়ে গেল
তুমি বলেছিলে সমস্যা নেই, তুমি আছো না!
তুমি বলেছিলে এইতো বাড়িরি দিকে হেঁটে হেঁটে যাচ্ছি
তুমি বলেছিলে সোনা-মধু এখন তুমি একটা হাসি দাও
তুমি বলেছিলে রাতে কথা হবে-ভালবাসা নিও

আহ! কোথায় থাকো এখন-চোখের ভেতর স্বপ্নগুলো বিষণ্ণতার
তুমি কি জানো-তোমার এপিটাফ ছবিগুলো আঁকছি
নিঃসঙ্গতায়-একা পলিমাটির গায়ে-
তারপর আজকালে দারুণভাবে শত্রু হই, তোমার বন্ধুহীন বেঈমানে-

ভালো থাকি কি করে? রাতবিরতে রক্ত আমার উত্তেজিত অজগর!

নাকফুল

যতবার তোমার কাছে পৌছতে চাই
ততবার পৃথিবীর আয়তন বেড়ে যায়
নাকি তুমি দূরে সরে যাচ্ছ-আহারে
কেউ একজন বলে দিয়ো-ধ্রুব সত্য-
ধরে আছি বাবলা নাকফুল-বসন্ত প্রহরে