সুজন হোসাইন এর সকল পোস্ট

সুজন হোসাইন সম্পর্কে

জগতের সব কিছু নিয়ে ভাবি,আর ভেবে যা পাই তা লিখে রাখি মহা কালের পাতায়।

কবিতা

Kobita1

এক.
চিঠির বুকে ক্ষত করে জমিয়ে রাখো
তোমার সুখ দুঃখের কথা
অথচ, হলুদ খাম’ই জানে তারও আছে
হাজার খানেক দুঃখ ব্যথা।।
স্বীকারোক্তি,

দুই.
তোমার দেয়া পুরনো চিঠিগুলো আজ পুরনো কবর !
বুকের উপর জমে গেছে ধুলোর আস্তরণ।
আছে পোস্ট অফিস নেই দুস্তর লেফাফা
তবুও অপেক্ষায় থাকি কোনোদিন আসবে ডাক পিয়ন।
প্রতীক্ষা।

এখন অনেক রাত

IMG_202

আমি: জমছে ধুলো মনের আয়নায়
ঝাপসা চোখে যায় না কিছুই দেখা।
নেই রং নেই তুলি সাদা ক্যানভাসে
তবুও ছবি আঁকা।।

তুমি: একা রাত বাঁকা চাঁদ দিয়ে যায় জোছনা
এই ধরো হাত, এখন অনেক রাত –
তুমি আর আমি
কোথাও যাব না।

আমি: দুঃখ গুলো অনেক জেদি চায় না ছাড়তে আমায়
একা একা প্রতি রাতে মন বাক্সে চিঠির ডাক পাঠায়।
সুতো কাটা ঘুড়ি দু পায়ে বেড়ি কতদূর –
কতদূর তোমার ঠিকানা।

তুমি: ভুলে গেছি সব বাড়িয়েছি পা পেয়েছি তোমার ঠিকানা।
আমি: ছেঁড়া খাতা ভাঙা ঘড়ি – থমকে থাকা সময়
চলে যায়
আসবে আসবে বলে আসে নি সে তবুও কবিতা
লিখে যাই।

তুমি: এই দেখো চেয়ে কে আছে দাঁড়িয়ে সেই পথে
তোমার অপেক্ষায়।।
আমি: আসো তুমি আসো ভালো তুমি বাসো
বুকে জড়িয়ে আমায়।।

প্রত্নতাত্ত্বিক প্রেম ও তার গবেষণা

174859_n

আমাদের যেতে যেতে শেষ হলো পথ
শেষ হলো নিয়মের কুশল বিনিময়,
টুকরো কিছু অযাচিত কথা।
যে কথাটি বলার জন্যে এই পথ চলা,
যে কথাটি আজও হয়নি শোনা আমাদের,
ধর্মের নিয়ম ভেঙে পাশাপাশি বন্ধনের সুতোয় বাঁধা
দুজনের ভবঘুরে মন
অজান্তেই পৃথিবীর দেওয়াল জুড়ে স্বপ্নের নাকছাবি আঁকা।
অতঃপর,
সে কথাটি আজও বলা হয়ে ওঠেনি,
সে কথাটি আজও শোনা হয়ে ওঠেনি,
রয়ে গেছে শুধু ঝরা পাতার মর্মর সুর,
বিষণ্ন বিকেলের সব ধূসর স্মৃতি – যে পথ শেষ হয়ে গেছে সে পথে।

সময় কাঁটার পায়ে পায়ে আমরা আজ প্রত্নতাত্ত্বিক প্রাচীন প্রেম,
পাথুরে শিলালিপিতে খোদাই করা বিমূর্তি এক।
হাই- পাওয়ার গ্লাস নিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ে
দেশ-বিদেশের প্রত্নতাত্ত্বিক হাজারো চোখ,
কপালে কপালে বেড়ে যায় প্রাগৈতিহাসিক ভাঁজ।
ওরা দিন মাস বছর এক করে হলুদাভ শ্যাওলার আস্তরণ
খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বের করতে চায় আমাদের শুরুর ইতিবৃত্ত,
আমাদের সেই না বলা কথাগুলোর প্রেম।

দিন যায় মাস যায় বছর যায়,
প্রত্নতাত্ত্বিক চোখ মলিন হয়ে ফিরে যায়,
হাওয়ারা আসে, সাথে নিয়ে আসে সুবাসিত ফুলের ঘ্রাণ,
সেই বিষণ্ণ বিকেলের প্রেমের ছোঁয়া।

ধীরে ধীরে শ্যাওলার আস্তরণ সবুজ হয়,
আহত প্রেমিক এসে রোজ রোজ চোখের জলে স্নান
করিয়ে যায়,
বিষণ্ণ কবি এসে রোজ বেদনার, না পাওয়ার
কবিতা শুনিয়ে যায়।
প্রত্নতাত্ত্বিক প্রাচীন পাথুরে শিলালিপির সেই না বলা কথাগুলো
নির্বিঘ্নে লিখে যায় এক পাগল কবি
নিরাশার মতো ধূসর রঙের খাতায়।

অথচ,
এসব এড়াতে পারেনি সেই হুমড়ি খাওয়া হাজার চোখ,
কপালের ভাঁজ কমিয়ে অভিবাদনের সুরে এসে বলেছে
বাহ্ কি চমৎকার মৃধা আপনার ! বাহ্ কবি বাহ্ !
আমাদের সাড়ে তিনশো বছরের গবেষণা আপনি
অনেক টায় সহজ করে দিয়েছেন।
হে কবি – আপনাকে ধন্যবাদ !!

কোথাও কেউ দুরত্ব বাড়ায়

এই শহরের কোথাও তুমি নেই —
নিখোঁজ বিজ্ঞাপনে ছেয়ে গেছে পুরো শহর।

এই সব ভীষণ একা থাকার দিনে
রৌদ্রুময়দুপুরে খুব বেশি অনুভব করি
পাশাপাশি এক হাত || মায়ায় ভরা দীঘল চোখ।

নিঝুম দুপুরের বিষন্ন ক্ষণে ইলেকট্রিসিটি চলে গেলে
হাত পাখায় না হোক একটু শীতল বাতাস দিবে।
এমন কেউ কাছে থাকুক।

অন্তত বাতাস না করুক —
পাশে বসে বলুক — বড্ড বেশি গরম || ঘেমে গেছো।
দেখি আঁচল দিয়ে মুছে দিই।

সঙ্গে না যাক,আঙুলে আঙুল রেখে না হাটুক
অন্তত কেউ বলুক–
বাইরে ভীষণ রোদ সঙ্গে ছাতা নিয়ে বের হইয়ো।

তবু যেন —
কোথাও কেউ দুরত্ব না বাড়ায়
দুরত্ব যে কেবল দুঃখ’ই জমায়।

টিপ এবং প্লাটফর্ম

আঙুলের তালুতে কালো টিপ —
হাতের স্পর্শে অবিকল ফুল হয়ে ফুটে কপালের ভাঁজে।
অতল চোখের শিখায় জ্বলে ছাই ট্রয় নগরী !
আঙুলে আঙুলে রুশের বিপ্লব।। কোথাও খুঁজে কালো টিপ।
ভোরের শিশির জলে লেখা হয় টুকিটাকি পৃথিবীর সব তত্ত্বকথা।

সব ব্যবধান ঘুচিয়ে নিঃশব্দে যে চোখে অশ্রু ঝরে
হাওয়া হয়ে যায় গান।। নির্ঝরে পাতা ঝরে ঘুমহারা জানালায়।
যে-ই হাত একদিন অনুরাগে ছোঁবে।। সে হাত হবে কপালে কালো টিপ।

অভিসারী নদী ফেলে রাখে স্বপ্নের ছায়া-
ঢেউয়ে ঢেউয়ে বাজে তার হাতের স্পর্শ।। চেনা তবুও অচেনা।

তবুও জানি —
বেড়ে যায় দূরত্ব।। চোখের আকাশে খসে পড়ে দূর নক্ষত্র।
প্লাটফর্মের ভিড়ে যত মুখ চেনা হয় সবই মুছে যায়।
দূরত্ব বাড়ে আঙুল এবং টিপের।। রংছুট জীবনে ম্লান আয়না।

চোখের বাঁক ঘুরে সে যায় হারিয়ে।। বেনামি নিশ্বাসে
জানি কোনদিন তাকে পারবো না পরাতে কালো টিপ।
কত মুখ কত চোখ।। কত গান কত হাওয়া
মিশে যায় বাতাসে।। কেউ আসে কেউ চলে যায়।
পড়ে থাকে টিপ – চলে যায় সে।। নির্জন প্লাটফর্ম – ধূ-ধূ শূন্য।
শুধু মুখোমুখি আমি আর শেষ ট্রেন।

১৮/০৫/২০২০

আপনি যেন কেমন অন্য রকম

এই যে শুনেন —
আপনাকে কিছু বলার ছিলো !
এই যে আপনার অমন নেশাতুর চোখ
রাজ্যের আফিম মাখা – তাকালেই মাতাল হয়ে যাই !
দ্বিধাদন্ড ভুলে প্রেমে পড়ে যাই ।

এই যে পাহাড় চূড়া জোড়া ঠোঁট
সীমান্ত ছুঁয়ে রঙিন গোধূলি বেলা – সন্ধ্যা নামে রোজ !
এই যে অমন কারুকাজে রেশমি চুলের বাগান,
সদ্য স্নানে সুগন্ধি ঝর্ণা ধারা – আমি বিমোহিত হই।

এই যে শুনেন–
এই আপনি ছাড়া আমার ভীষণ একা দিন
ভীষণ নিঃসঙ্গ কাটে রাত্রি গুলো।
ঠিক যেমন করে চাঁদের বুকের পূর্ণিমা উবে যায়
নেমে আসা ঘোর অমাবস্যায় – ঠিক তেমনই।

তখন কেমন হয় জানেন ?
তখন–
অভিমানের পারদ গলে গলে কলমের নিবে
কবিতা বেজে ওঠে অভিযোগের সুরে।

বলে—
আপনি যেন কেমন অন্য রকম মানুষ,
আপনার ভিতর বাহির অন্য রকম – কেমন একটা
অন্য রকম অন্য রকম ভাব – অন্য রকম ভালো লাগা –
আর অন্য রকম ভালোবাসা।

এই যে আপনি এমন অন্য রকম মানুষ
তাতেই আমার ভীষণ ভালো লাগে।

এই যে শুনেন–
এই আপনি কেমন যেন অন্য রকম মানুষকে ‘ই
আমার বলতে ইচ্ছে করে সময়ে-অসময়ে —

শুনেন — “আপনাকে ভালোবাসি” !

১৮/০৫/২০২০

ভালোবাসা একটি ফুলের নাম

বেলা ডুবে যায় পশ্চিম দিগন্তে
রক্ত আভা লালে
সফেদ গোধূলি বেলা রঙিন সাজে
প্রিয়ার দুটি গালে ।

পাখি ফিরে নীড়ে দিনের ব্যস্ততা
এক নিমিষে ভুলে
কেউ থাকে পথ চেয়ে নীরব সাঁঝে
নিবিড় আঁখি জলে ।

কেউ আসে ঘরে কেউ থাকে দূরে
অচিন কেউ হয়ে
কেউ বাজায় বাঁশি বুকের ভিতর
আগুন লাগা সুরে ।

কেউ ভালোবাসে কেউ করে ঘৃণা
বিচিত্র এ প্রেম ধারা
ভালোবেসে কেউ করে জয় সবর্ত্র
কেউ হয় সর্ব হারা ।

তবুও বলি সবাই, ভালোবাসি তোমায়
ভালোবাসা জগৎ ময়
ভালোবেসে আমরা করবো যে একদিন
এই পৃথিবী প্রেমময়

ভালোবাসা যে পাপ নয় লোকে বলে ভুল
ভালোবাসা যে খাঁটি হলে ফুটে তার ফুল ।
০৮/০৫/২০২০

তুমিহীন ভালোবাসা

বহুদিন দেখিনি,
থমকে যাওয়া চোখের পলক
উথাল-পাথাল রেশম কালো চুল
মাতাল করা ওই খুনি দু-ঠোঁট।
বহুদিন দেখিনি,
নিথর চোখের দুকূল ছাপিয়ে বর্ষার ঢল
ঘাসের ডগায় ভোরের শিশির,
রোদের শরীরে স্নিগ্ধ পায়ের দাগ।
দেখনি —
গোধূলির ঠোঁটে সুর্যাস্তের জীবন্ত কফিন।

বহুদিন দেখিনি,
বুকের ভিতর খাঁ – খাঁ গ্রীষ্মকাল,
শো – শো চৈত্রের দখিন বাতাস,
কারোর অপেক্ষায় জমা তৃষ্ণার জল।
দেখিনি —
গুমোট সন্ধ্যায় শ্রাবণ মেঘের আঁচল
কারোর বিরহে বুকের পাড়ে ভাঙনের ক্ষত,
ওলট-পালট ঝড়ের রাত্রি দিন।
বহুদিন দেখিনি,
জল, মেঘ, বৃষ্টি, চাঁদ, তারা,
ফুল পাখি ধূ- ধূ মরুভূমি সাহারা।
জাগেনি বুকে প্রেমের ফোয়ারা।

অতঃপর —
বহুদিন বলিনি,
ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভালোবাসি,
আমি শুধু তোমাকেই ভালোবাসি।
বহুদিন বলিনি,
আমার বুকের ভিতর লুকিয়ে লুকিয়ে
তোমাকেই পরম যত্নে পুষি,
তুমিহীন ভালোবাসায় মগ্ন থাকি।

২০/০৪/২০২০

এখন কেমন আছো তুমি

এখন কেমন আছো তুমি ছন্নছাড়া
এ নগরজীবনে,
এখন কেমন সময় কাটে বিষণ্ণ এসব রাতে দিনে।

এখন তুমি কেমন স্বপ্ন দেখো,
ভুল স্বপ্নে কি রোজ কাঁদো ?
এখন কেমন তুমি কার ছবি আঁকো
কাব্যকলা ভুলে কাকে তুমি বুকে বাঁধো ।

এখন কেমন করে ঝরাও জলের ধারা
নিভৃত ওই বুকের খাঁজে ।
এখন কেমন করে ভাঙে চোখের পাড়
যুগল ভুরুর হ্রদ মাঝে ।

এখন কেমন করে তোমার দুপুর কাটে
বিকেল কাটে শূন্য এ অরণ্যে ।
এখন কেমন করে সজীব হয়
কবিতার প্রিয় সে পঙ্কতিগুলো,কার সে বর্ষণে ।

এখন কেমন করে বৃষ্টি নামাও, রৌদ্র তাড়াও,
নিঃশব্দ মনের গহীন তলে
এখন কেমন করে হৃদয় সাজাও, ছায়া নামাও,
জুঁই চাপা আর শিমুল ফুলে ।

এখন কেমন আছো,
কেমন আছে তোমার ভোরের আকাশ,
কেমন আছে রাতের আঁধার, ডাহুক, পেঁচা ।
কেমন আছে খুনি দু-ঠোঁট,চিরল দু-চোখ,
সংকুচিত ম্লান হাসি – ওই হাসির ফোয়ারা ।

এখনো কি নিয়ম করে স্নান করো,
উদয় ভোরের রক্তিম লালে,
পূজা করো তুলসী তলে, ।

কিংবা — নিয়ম করে সাজাও ফুল আর সাঁঝদ্বীপ
নিয়ম করে করো কি সন্ধ্যা আরতি !

এখন কি রোজ রাতে লিখো আমায় নিয়ে —
সেই প্রিয় চার অক্ষর,
একটি যার শব্দ,ডট দিয়ে তিনটি লাইন-
. ভালোবাসি…
. ভালোবাসি…
. ভালোবাসি….

লিখো আমাকে —
বিন্দু,
আমিও ভালোবাসি তোমাকে…
আমিও ভালোবাসি তোমাকে…
তোমাকে তোমাকে তোমাকে…
জানো —
এতটা দিনপর এসব আমার জানতে ইচ্ছে করছে ।
খুব জানতে ইচ্ছে করছে ।

২৩/০৪/২০২০ইং

বিপরীত

আমাদের এক আকাশ – অযুত কোটি তারা,
আমাদের এক পৃথিবী, সীমাহীন প্রান্তর,
তবুও কেন —
আমরা অনন্ত কাল
একই পথে দুই জনের বিপরীতে একা যাত্রী…।

ফেরিওয়ালা

হাঁটুর গিঁটে গিঁটে ক্ষুরে খায় কটকটে ব্যথা
লাল রক্ত পচে হয়ে গেছে কালো,
তবুও হাঁটতে হয় কাঁধে করে তুমুল স্বপ্নের ফেরি নিয়ে।

কাঁধের উপর বসে গেছে কালো কালো দাগ
টানতে হয় যে সে এক বিশাল সংসার নামক ঘানি,
যুতসই হালের গরু, চাবুকে চাবুকে আহাজারি। 

পায়ে পায়ে ফেরি করে রোজ চোখের কোণে  হাজার স্বপ্ন, বুকে সীমাহীন আশা যেন স্বপ্নের ফেরিওয়ালা।

সে-ই ফেরিওয়ালা আমার বাবা,
যার চোখে রক্ত ঝরে অশ্রু হয়ে, নির্ঝরের মত
মিশে যায় ঘামে ঘামে পথের ধুলোই খড় কুটোই।

সে-ই ফেরিওয়ালা আমার বাবা,
যার কাঁধে বেড়ে ওঠে আমার স্বপ্ন, আমার ভবিষ্যৎ,
যার পায়ে পায়ে দেখি এই স্বপ্নীল পৃথিবী,
সে একজন কৃষক,
সে একজন দিনমজুর,
সে একজন রিকশা চালক,হোক সে যা’ই যত
কিংবা পথের বাঁকে ধুলোই পড়ে থাকা পথিক
অথচ আমি গর্ব করে বলি সে-ই আমার বাবা,
তোমার যা-ই যে বলো না কেন
আমার বাবা যে একজন নিখুঁত স্বপ্ন ফেরিওয়ালা।।

২৭/০১/২০২০

একদিন ইতিহাস লেখা হবে

একদিন ইতিহাস লেখা হবে আউল-বাউল
ছিন্ন কথায়—
মেঘেদের কার্নিশ ছুঁয়ে নামা বৃষ্টির ফোঁটায় ফোঁটায়
মাটির শরীরে।
একদিন ইতিহাস লেখা হবে ফুলেদের বিরুদ্ধে
মামলা মোকদ্দমা হবে শহরের অলিতে গলিতে–
পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায় করা হবে ফরমান জারি,
পাখিরা সব উড়ে যাবে দূরে কোথাও এই সব
নিষিদ্ধ প্রাচীর ডিঙিয়ে
বর্ষার উত্তল ঢেউয়ে ঢেউয়ে।

একদিন ইতিহাস লেখা হবে,
এই সব বন্ধ দিনের, লেখা হবে—
লক ডাউন ঘরবন্দী জীবনের খেরোখাতা গল্প।
লেখা হবে এই করোনা মহামারি থেকে
বাঁচবার ইতিহাস পাহাড়ি ঝর্ণার ওষ্ঠে বেড়ে
ওঠা সবুজ বৃক্ষের বুকের চাঁদে বিষণ্ণ মালায়।

একদিন ইতিহাস লেখা হবে — রহিমা বানুর নামেও,
কোনো ত্রাণ না পেয়ে, কোনো খাবার না পেয়ে,
করোনার চেয়েও বড় মহামারি ক্ষুধার জ্বালায় মারা
গেছে তার তিন ছেলে মেয়ে ! এটাও বাদ পড়বে না !

নেতারা সব সমবেদনা জানাবে,
মিডিয়া কিছুদিন দৌড় ঝাঁপ করবে–
তারপর, দুঃখীর সজল আঁখিতে লেখা হবে ইতিহাস।
লেখা হবে ধুলোর পাতায়–
অশ্রু অক্ষরে কোনো এক উদ্ভিন্ন মানুষ পরিচয়ে।

একদিন ইতিহাস লেখা হবে,
কবিদের নিয়ে,কবিতা নিয়ে,তাদের ব্যথিত শ্লোকে
স্বপ্নের খাতায়
ব্যস্তময় জীবনপঞ্জিতে।

একদিন ইতিহাস লেখা হবে —
আমি, তুমি, আপনি, এবং আমাদেরকে নিয়ে,
নদীর ঢেউয়ে ঢেউয়ে, পথের ধুলোয়,
ঝরা বকুলের মলিন মালায়।
কিংবা, কারোর রেখে যাওয়া পদচিহ্নে।

একদিন ইতিহাস লেখা হবে,
এই সব লক ডাউন, ঘরবন্দী জীবন উঠে যাবে,
উঠে যাবে কারফিউ, মুক্ত হবে প্রকৃতি, চারদিকে
পড়বে খুশির রোল,পৃথিবী হবে স্বর্গ ময়।

তখন লেখা হবে—
বসন্তের গান
জীবন ফিরে পাবে নতুন প্রাণ।

১০/০৪/২০২০

১০ টাকায় ১ কেজি চাল

তিন দিন হলো চুলা জ্বলে না রহিমা বানুর।
ঘরে এক মুঠো চাল নেই। দুই মেয়ে আর এক ছেলে ক্ষুধার জ্বালায় কাঁদছে।

মহামারি করোনা ভাইরাস এর জন্য সরকার সব কিছু লক ডাউন করছে। মানুষের বাসায় কাজ করে চলতো সংসার। এখন সেটাও বন্ধ।

এর ভিতর কোথা থেকে শুনছে ১০ টাকা কেজি চাল দিচ্ছে। টাকা বলতে হাতে মাত্র ৫৫ টাকা।
তবুও এক বুক আশা নিয়ে গেলো চাল নিতে।

কাদের মোল্লা জানালো সব চাল শেষ। অনেক অনুয় বিনয় করেও রহিমা বানু এক মুঠোও চাল পেলো না।

ভেজা চোখে যখন হেঁটে আসছিলো তখন কিছু ছেলে রাস্তায় স্লোগান লিখছিলো
” শেখ হাসিনার বাংলাদেশ ক্ষুধা হবে নিরুদ্দেশ । “

অন্ধকার

অন্ধকার ঘেঁষে শুয়ে থাকি রোজ আমি
বুকের ললাটে নিশ্চুপ রক্ত ক্ষরণ
শুষে খায় জেগে থাকা ডাহুকী —
জেগে থাকে পেঁচার নীল চোখ
আমাকেও জাগিয়ে রাগে অবিরত অনন্ত কালরাত্রি।

দূর আকাশের তারা, হলুদ চাঁদ, আলো ছায়া,
হরিণের সোনালী চোখ,
ফাগুনের রাত্রে পুড়ে খাগ কৃঞ্চচূড়ার মরা ডাল।

বহুমুখী জীবনের সবগুলো পথ বন্ধ আজ
তবুও কোথাও কোথাও খুঁজে আলোর দিশা।

রমণীরা ডেকে যায় দূরে — দূর থেকে দূরে
অজানা কোনো মেঠোপথের বাঁকে
কিংবা নাম না জানা দিগন্ত সবুজ দ্বীপে।

ভালোবাসা আগুন হয়ে জ্বলে চোখে।

দাঁড়ানো ল্যান্ডপোস্ট শুধু সাক্ষী হয়ে রয় অনন্তকাল।

কোথাও কুকুর, কোথাও বিড়াল,
কোথাও অন্য কিছু, নাম না জানা কোনো জানোয়ার
কিংবা গভীর রাত্রের জ্বীন, ভূত।

পাশ ফিরে তাকালে দেখা যায় তৈলাক্ত দেয়াল
বাঁশের ভাঙা আলনা,
দুটো রংচটা জিন্স প্যান্ট, একটা গামছা, তিনটা শার্ট।

মাঝে মাঝে মাঝ রাতে ঘুম ভেঙে গেলে
নিভু নিভু মোমবাতির আলোয় জীর্ণ ঘরটি নেহাৎ
এক টুকরো ঝলমলে পূর্ণিমার চাঁদ।

১৫/০৩/২০২০

অবসান

অপেক্ষায় থেকে যে দুটি আঁখি
সতত ঝরায় অশ্রু জল
সেও জানে দিনের পর রাত আসে,রাতের পর দিন ।

যে চলে যায় সে চলেই যায় সব রেখে
যে ফিরে আসে সে কোনো বাঁধাকেই উপেক্ষা করে না।

তুমিও ঠিকই ফিরে আসবে একদিন
সেদিন এই চোখের হয়ে যাবে চির অবসান ।।

অবসান,
২৯/০১/২০২০