সুজন হোসাইন এর সকল পোস্ট

সুজন হোসাইন সম্পর্কে

জগতের সব কিছু নিয়ে ভাবি,আর ভেবে যা পাই তা লিখে রাখি মহা কালের পাতায়।

নিস্তব্ধময় একা রাত্রি

244374

রাতে যখন একা একা অন্ধকারে
হাঁটতে থাকি – তখন এটাই মনে হয় যে
আমি জেগে আছি উদ্ভট এক স্বপ্নের দেশে।

অথচ, সারা রাত্রি জুড়ে নিস্তব্ধতা –
হাওয়ায় ঝড়ে পড়ে ক্ষয়ে যাওয়া পাতা, পাখির পালক।
এছাড়া আর কিছু নেই ।
আমি বেঁচে থাকার জন্য মরিয়া হয়ে
ছুটে যাই, পালিয়ে বেড়াই যেখানে – সেখানে।

তারপর অপলকে নেমে আসে নিস্তব্ধতা –
শিশির ভেজা দূর্বাঘাসের বুকে
ধূসর গোধূলি সন্ধ্যার মতন এক বুক অপেক্ষা নিয়ে।

অতঃপর সব আলো নিভে গেলে
পৃথিবীর নীরবতা আমার সাথে কথা বলে –
যখন আমি একা থাকি।

অপ্রত্যাশিত প্রত্যাবর্তন

24239

ভেবেছিলাম,
আমাকে যেতে হবে। আমি চলে যাচ্ছি।
আমি চলে যাবো।
দূর্ভাগ্যবশতঃ
কার উনো প্রেমের আহবানে
এই আমার অপ্রত্যাশিত প্রত্যাবর্তন। জানা নেই।

দূর্ভাগ্যবশতঃ,
কখনও কখনও শুরুর আগেই পুরনো কিছু সুখ
নিজের মত করে আগল বুকের দরজা বন্ধ করে।
আমাকে স্পর্শ করে গভীর নগ্ন রাতে, একা একা।

আশ্চর্য রকম ভাবে দূরের দূরত্ব কমে যাচ্ছে,
কাছের দূরত্ব বাড়ছে প্রতিমুহূর্তে।
কুয়াশাচ্ছন্ন একটি অবয়বে একটি প্রজাতির
দিগন্ত ছুঁয়ে দিনমান শুধু খেলা।

যেখানে সবুজ দিগন্ত আকাশ ছুঁয়ে
মিষ্টি বাতাসের আদর মাখে নীরবে নীরবে
সেখানেই শেষ হয়েছে আমার দীর্ঘ ছায়ার পথ।

ভেবেছিলাম,
স্বপ্ন গুলো আমার এখনো স্বপ্ন দেখছে
দিনের শেষে পথের বাঁকে বাঁকে
ঘাস ফুলেদের বুকে চকচকে মিষ্টি রৌদ্রুরে।
চিরস্থায়ী স্বপ্ন দেখছে।

অথচ আমার চলে যাবার কথা ছিলো এই ফাল্গুনে
শেষ প্রহরের আগেই।
দূরে কোথাও,দূর থেকে দূরে, আরও আরও দূরে
সাদা দেয়ালের ঔজ্জ্বল্য হারিয়ে আলোয় ভরা
স্বপ্ন গুলো যেখানে নেই। সেখানে।

দূর্ভাগ্যবশতঃ
কার উনো প্রেমের আহবানে
এই আমার অপ্রত্যাশিত প্রত্যাবর্তন। জানা নেই।

তুমি এবং আমি

24131

এই তুমি আমি বলছি কথা বসে
নদীর ধারে।
হাতটি রেখে হাতে,
চোখটি রেখে চোখে।

সারা’টি রাত কেটে গেলো দুজনার
জোছনা মেখে ।
জোনাকির আলপনায়
ঝিঁ-ঝিঁ-র গানে গানে।

চাঁদ ডুবে যা’য় পশ্চিমের আকাশে
রক্ত আবিরে।
পাখি ডাকা ঐ ভোরে
রাত্রি যায় দূরে সরে।

এই তুমি আমি বলছি কথা বসে
নদীর ধারে।
ঘুম-ঘুম ঐ চোখে
প্রেমের নেশা লাগে।

এই তুমি আমি-আমি তুমি দুজন
নিভৃতে একা।
গহিন বালু চরে
রব জনম ধরে।

আমাদের একদিন দেখা হোক

23891

তারপর একদিন আমাদের দেখা হোক,
বৃষ্টিতে ভিজতে থাকুক এই শহর,
নির্জন কোনো চায়ের টঙে একান্ত কিছু কথা হোক।

হঠাৎই আমাদের একদিন দেখা হোক
প্রচন্ড ভিড়ের ভিতর, ঘামে ছুপছুপে শরীরে।
তোমার বাড়ি ফেরার তাড়া থাকুক।
তবু আমার পথে তোমার আঁচল মায়াবী আগল দিক।

আমাদের একদিন দেখা হোক।।

স্টিম ট্রেন

238587

রোদের ছায়া ঢালাই প্লামে সাদা-কালো ধোঁয়া ছেড়ে
দূরে যায় স্টিম ট্রেন স্টিলের সমান্তরাল
ট্রেইলের উপর দিয়ে।
আহত রোগীর মত ঘন নিশ্বাস দীর্ঘশ্বাস
হয়ে বাজে পাফিং কাপিং শব্দে।

ধোঁয়ারা সব বাতাসে মিশে হারিয়ে যায় দূরে।
মেঘ হয়ে ভাসে আকাশে – জমিয়ে রাখে জল।

তারপর বুকের ভেতর হাওয়া আসে বৃষ্টি নিয়ে
ঘাসফুল আর পাহাড় নদী ভাসিয়ে।
কোথাও ছায়া নামে, কেউ কাছে ডাকে
মোহন বাঁশির সুরে, কেউ দূরে যায় বিবাগী বিরহে।
কেউ জানলায় হাত রাখে, কেউ আড় চোখে তাকাই
ইশারায় ডাকে ভালোবেসে, নগ্ন হাত বৃষ্টিতে ভিজে, আবার ডাকে, ফের চলে যায়।

তখন মনে হয় সেই এক জোড়া চোখ
হ্যাঁ – সেই চোখের চাহনি যেন চলে যাচ্ছে দূরে।

কতকাল কতরাত কত দিবস যামিনী ছিলাম
যার অপেক্ষায় সে আজ অতীতের খাতায়।
হিসেবে ব্যাপক গড়মিল হিসাব। যার যোগফল শূন্য।

এতদিন যে বুকে জমানো ছিল নিখাদ ভালোবাসা
আজ তাই হল নিঃশেষ, বিলীন হল বর্ণহীন প্রেম।
দুঃখ গুলো আজ পাহাড় হল – ঠিকানা বিহীন
স্টিম ট্টেনের ধোঁয়া আজ জল হল – মেঘ বিহীন
চলে যাওয়া পথ চেয়ে মন আজ পাথর হল
তোমাকে কাছে না পেয়ে।

তারপরও
এই যে কত্ত স্টিম ট্রেন চলে যাচ্ছে ঘাসেদের শরীর ঘেঁষে
শহর বন্দর, নদী পাহাড় পেরিয়ে আঁকাবাঁকা পথে।
অথচ,
সেই পথে এখনো চেয়ে থাকে ঐ এক জোড়া চোখ
হ্যাঁ সেই এক জোড়া চোখ – চেয়ে থাকে চোখের চাহনি।

স্বপ্ন এবং রূপকথার গল্প

23558_n

সুদূর অতীতে আমি রাত জেগে জেগে রূপকথার গল্প,
স্বপ্ন দেখেছি। রাত্রির আকাশ ভরা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে।

বছরের পর বছর ধরে দেখেছি আমি
মৃত্যুর বিরুদ্ধে আলোর ক্রোধ, সে এক মহাক্রোধ।
আমি দেখেছি বৃদ্ধাশ্রম দিনের মত নেতিয়ে পড়া
কিছু মানুষের মুখে দীর্ঘতর অশ্রুপাত।
দেখেছি তাদের জ্বলজ্বলে চোখ,
আমি দেখেছি তাদের কথায় কোনো দ্রুতি ছিলো না,
তারা জেনে গিয়েছিল
তাদের শেষ ভরসা নিগূঢ় অন্ধকার।

তারা সব ভঙ্গুর মানুষ গুলো প্রত্যেকে চোখের উপসাগরে শেষ ঢেউ তুলে দু হাত মেলে বলতো –
“হে রাত্রি তুমি মৃদু হয়ে যাও!”

আমি দেখেছি,
মৃত্যুর নিকটবর্তী কবরের মানুষ যারা
অন্ধকারাচ্ছন্ন দৃষ্টিতে চেয়ে দেখে –
নিগূঢ় অন্ধকার, শুধু অন্ধকার – এবং শেষ অন্ধকার।

তারা দেখে —
ক্রোধের মহাপ্রলয়ে তাদের চোখ উল্কার মত
জ্বলতে পারে। পুড়িয়ে দিতে পারে ধ্বংসস্তূপ।

যা কি না এক মহাক্রোধ,
মৃত্যুর বিরুদ্ধে আলোর ক্রোধ, সমগ্র জীবনের ক্রোধ।

তারপর বহু বছর পরে আবার,
আমি স্বপ্ন দেখেছি,
ছিন্নভিন্ন দেশ, ক্ষত বিক্ষত শোকবার্তা, মর্মান্তিক সংবাদ,
ছিন্নভিন্ন মানুষ এবং তাদের সত্তা।

তখন সমগ্র জীবন থেকে পালিয়ে আমি
নিজেই নিজের হাতে মুখ ঢেকে
ব্যর্থতার অশ্রুবিন্দু দিয়ে অবিরল ভাষাহীন কথায়
আমার রূপকথার গল্প নিজেই লিখেছি।

.
ছবি ক্রেডিট – Manish Khashnabish ভাইয়া ❤️

কবিতা

15961_n

মাঝে মাঝে মনে হয় আমার
মানুষ হিসেবে বুঝি আমার কোনো অস্তিত্ব নেই।

দিনের আলোর কাছে যেমন চাঁদের
আলোর অস্তিত্ব নেই
রাত ছাড়া যেমন চাঁদের কোনো অস্তিত্ব নেই
পাহাড় ছাড়া যেমন ঝর্ণার কোনো অস্তিত্ব নেই
সাগর ছাড়া যেমন নদীর অস্তিত্ব নেই

তেমনই
তুমি ছাড়া যেন আমার কোনো অস্তিত্ব নেই।

মানুষ তো একজন্মেই হাজার খানেক চাওয়া চায়
পরের জন্ম তো অনন্তকালের –
সেখানে চাওয়া পাওয়ার হিসাব নেই।

এ জন্মে যে যার কাছের, যে যার দূরের।
এ জন্মে ভালোবাসা না দিলে, কাছের কেউ না হলে
তাতে কোনো ক্ষতি নেই – শুধু অনুরোধ রইলো যে
অবহেলা, ঘৃণায় এই আমাকে আর পাঁচটা মানুষের
চোখে অস্তিত্বহীন করে তুলো না।

মানুষ দুঃখ, কষ্ট সয়ে বাঁচতে পারে
কিন্তু, তার যদি সেই বেঁচে থাকার অস্তিত্বই না থাকে
তাহলে সে কি নিয়ে, কি করে বাঁচবে ?

অধিকার

2188131_n

আমার একটা মাঠ আছে, ভুবন ডাঙার মাঠ
আমার একটা মেঠোপথ আছে
পথের দুই পাশে রংবেরঙের ফুল আছে।
আমার একটা ছোট্ট ঘর আছে,
ঘর জুড়ে সীমাহীন ভালোবাসা আছে
ঘর জুড়ে উঠোন আছে, উঠোন জুড়ে হলুদ রোদ আছে,
বর্ষার মেঘ বৃষ্টি আছে।

আমার দুই চোখে একটা পুকুর আছে
পুকুর ঘিরে হিজল গাছ আছে
গাছ ভরে ফুল আছে, শুধু মালা গাঁথবার মানুষ নেই।

এই আপনার এত্ত কিছু রয়েছে।
তবুও কেন মনে হচ্ছে ও বুক নিঃস্ব কাঙালের
মত শূন্য হয়ে আছে।
চৈত্রের দাবদাহে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে
আবাদযোগ্য ভূমি।

প্রিয় নীলাদ্রি, নিবে তুমি ? আমার যা কিছু আছে।
এই ধরো, এই নীল আকাশ, হলুদ জোছনা, গাছপালা, পাখি, বন, নদী, সাগর, ঝর্ণা, ভুবন ডাঙার মাঠ, উঠোন, রঙিন গোধূলি এই সব কিছু নিয়ে নাও তুমি।
বিনিময়ে শুধু তোমার তুমি কে দাও আমায়! তোমার মনের অধিকার দাও আমায়। আমি যেন বলতে পারি
তোমার মনের ভিতর আমি রয়েছি। দেবে কি নীলাদ্রি ?

.
পুনশ্চঃ – অনেক দিন থেকে নতুন কবিতা লিখতে পারছি না। 😔😔😔

বৃষ্টি কথা

27014_n

বৃষ্টি মানেই অলস সময়
অবাক চেয়ে থাকা
বৃষ্টি মানেই মনের মাঝে
স্মৃতির ছবি আঁকা।

বৃষ্টি মানেই সকাল বিকেল
আকাশ মেঘে ঢাকা
বৃষ্টি মানেই উঠোন জুড়ে
স্বপ্ন ছড়িয়ে রাখা।

বৃষ্টি মানেই রেলিং ঘেঁষে
চুপটি মেরে বসা
বৃষ্টি মানেই নৌকো ছাড়া
জলের স্রোতে ভাসা।

বৃষ্টি মানেই ঘরের কোণে
নিভৃতে জড়োসরো
বৃষ্টি মানেই মেঘ বালিকা
কষ্ট জমানো আরো।

বৃষ্টি মানেই ভীষণ রকম
মন খারাপের দিন
বৃষ্টি মানেই চায়ের কাপে
মৃদ উষ্ণ আলিঙ্গন।

বৃষ্টি মানেই অচিন কারো
লুকিয়ে রাখা মুখ
বৃষ্টি মানেই বুকের মাঝে
কুড়িয়ে পাওয়া সুখ।

স্বীকারোক্তি

এই যে শহর ভর্তি মানুষ
তবুও মনে হয় সে বড় একা, আমার মত একা ।
এই যে শূন্য আকাশ,
এ-ই যে রাত্রি জুড়ে চাঁদ, তারা,
তবু মনে হয় এসবই ভালোবাসার মত নিঃসঙ্গ ।
এ-ই ব্যস্ততম পথে প্রতিদিন কত মানুষ হেঁটে চলে,
কথা বলে, পাশে না থাকার অভিমানে দূরে যায়,
অনুরাগ বাড়িয়ে বর্ষার জল ফুরালেই ফিরে আসে ।
যে বুকে জমিয়ে রাখে ভোরের ঝরে পড়া শেষ শিশিরবিন্দু ।

অথচ, আমার এমন কেউ নেই
মৃত নক্ষত্রের মতন সূর্য অস্ত যাবার আগে ফিরে আসবে ।
শুধুই মনে হয় তখন – এই শহরে আমার কেউ নেই !
কোনোদিনই যে কেউ ছিলো না আমার ।

এ-ই যে এমন ঢল বর্ষা শহর জুড়ে,
সমস্ত প্রেমিকার বুকে জলের কবিতা অবগাহনের
সুরে উচ্চারিত হয়, এ যে মেঘঋতু ধন্য ধন্য বলে ।
তবুও মনে হয়, সবার বুকে এত এত সুখ,
সবাই এত সুখে মত্ত – তবে কেন ?
আমার বুকে বাজে বিরহের গান,
জলে ভিজিয়ে দেয় চোখের উঠোন,
তাতে ভেসে যায় প্রেম কদমের ছড়ানো পাতায় ।

এই শহরের প্রতি রাত জানে সে কতটা একা
শুধু শহর’ই জানে আমি তার মতো বড় একা ।

১৪/০৩/২১

একুশ বন্দনা

-07.33.06-1

একুশ আমার একুশ
তুমি এসো বারেবার
তোমার বুকে জন্ম নিবো
আমি শতবার।

একুশ আমার রক্তে কিনা
রক্ত মাখা ফুল,
একুশ আমার বুকের ঘরে
পোষা বুলবুল।

একুশ আমার আত্মঅহমিকা
হাজার সুরের গান
একুশ আমার এই হৃদয় মাঝে
হারানো এক প্রাণ।

একুশ আমার বায়ান্ন প্রভাত
রক্ত স্রোতধার।
একুশ আমার একুশ
তুমি এসো বারেবার
তোমার বুকে জন্ম নিবো
আমি শতবার।

একুশ আমার শিমুল পলাশ
কৃঞ্চচূড়া লাল,
একুশ আমার রফিক সালাম
রইবে চিরকাল।

একুশ আমার শীতল ছায়া
শীতল দীঘির জল
একুশ আমার মায়ের চোখে
অশ্রু কণায় টলমল।

একুশ আমার ভাইদের কথা
বলে বারেবার।
.
০৩/০২/১৮

অসুখ

এই যে আমার কেমন কেমন লাগে
ভীষণ রকম একা একা।
এই যে আপনি ছাড়া এক আকাশ বিষাদ বুকের ভিতর।
বিষণ্ন অনুভব, ভালো লাগে না কিছুই।
জানেন তো —
ভালোবাসা শিখিয়ে ভালোবাসি না বলাটায়
একরকম অহংকারত্ববোধ থাকে।
আর ভালো থাকতে চেয়ে ভালো না থাকাটায়
একরকম অসহায়ত্ববোধ থাকে।
মাঝে মাঝে মনে হয় কি জানেন -?
আপনাকে ছাড়া
ভালো না থাকা, ভালো না লাগাও একটা অসুখ !

.
কাব্যগন্থ – ফেরিওয়ালা।

একজন মাতাল ও তার পিছনের গল্প

মায়ের ঔষধ কেনার টাকা দিয়ে আমি
মাদক কিনে নেশা করি।
নেশা ঠিক না ফুর্তি করি।
মগজে একবার নেশার সুতোয় টান পড়লে
ভুলে যাই
কে মা, কে বউ আর কে বাজারের পতিতা।
তখন আমার শুধু টাকা চাই,মাদক কেনার টাকা চাই।
আমার তখন নেশা করতে হবে এটাই জরুরি।

এই বাজারের সব অলি গলি আমার চেনা
কোথায় কি হয়, কি আছে সবই আমার জানা।
আমায় ঠেকায় কোন শালা।
এই বাজারের মতিন মাস্তানের আমিই বড় চ্যালা।

সাতদিন হল বাড়ি যাই না,
মা চোখে দেখতে পায় না,
চলতেও পারে না ঠিকঠাক – বয়স হয়েছে ঢেড়।
কদিন আগেই কোন এক বড়বাবু দয়া করে এই টাকাটা
দিয়েছিল ঔষধ কেনার জন্যে।
এতকিছু ভাবনার সময় নেই আমার হাতে
মগজে যে নেশা ধুন্ধুমার, এক নাগাড়ে চাপাতি মারে।

মদ, গাঁজা, আফিম, বাবা এসব না হলে
আমার একটা দিনও চলে না।
এসবের গন্ধ পেলে ভুলে যাই আঁতুড় ঘরের গন্ধ
ভুলে যাই ক্যাকর ক্যাকর বাঁশের চাটায়ের ঝুলনা
মায়ের হাতে বেড়ে ওঠা সেই শৈশব।

আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে থাকা মায়ের আঁচল
ভুলে যাই আমি।
ভুলে যাই শৈশবের মুতের গন্ধমাখা মায়ের
ভিজানো কাপড়।
ভুলে যাই উঠানে ছড়ানো কাঁচা ধানের গন্ধ
চাঁলনে ভাজা ধানের খই মুড়ি।
ভুলে যাই ধাপর ধাপর ঢেঁকিঘর, আর তার শব্দ।
যার প্রতিটি শব্দে লুকিয়ে রাখা তন্দ্রাচ্ছন্ন চোখে
রাতের ঘুম।

অথচ, এসব আমার এখন ভালো লাগে না,
আমার শুধু ভালো লাগে মাদক, কারণ আমি মাতাল
মাতালদের এতকিছু ভাবলে চলে না।
মগজে একবার নেশার সুতোয় টান পড়লেই
আমি সবকিছু ভুলে যাই
ভুলে যাই সবকিছু।

কত দিন রাত্রি

image_380x

কত দিন রাত্রি কেটে গেছে
মেঠো চাঁদ, শীতল কুয়াশা ছুঁয়ে।
হঠাৎ,
মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেলে –
মলিন চোখে তোমাকে খুঁজি
পৃথিবীর মানুষের ভিড়ে।

কার্তিক কিংবা মাঘের রাত্রে,
ঝরে পড়া নির্জন পাতার মতন
রাত্রির ঢেউয়ে ভেসে যাবো
ধুলো মাটি কাঁকরে মিশে
ঐ দূর নক্ষত্রের পারে।

তারপর একদিন …
হয়তো খুঁজে পাবো তোমায়
পৃথিবীর পথ হেঁটে হেঁটে নক্ষত্রের তলে।

সেইদিন দেখবে তুমি
নিথর দুটি হাত ছুঁয়ে
যে শরীর ঝরে গেছে
যখন পায়ের শব্দ থেমে যায়
নিশ্চুপ সোনালি হরিণের মতো।

সেইদিন এ হৃদয় ভরে যাবে
আকাশের তারার মতন
আলো অন্ধকারে
সমুদ্রের জলে।