শাকিলা তুবা এর সকল পোস্ট

সন্ধ্যারাগ

এবার ভাঙার সময় এসেছে
এ ভাঙ্গন টুকরো হবার
নাকি জাগরণের?

আমার পাশে একটা নিবিড় সন্ধ্যা
অনেকক্ষণ বসে থেকে ভেঙে গেছে, গুঁড়িয়ে গেছে।

মন নামের দুর্বোধটাকে
নিয়েই ভাবনা শুধু
এসবই মায়া আমি জানি, তুমি জানো।

একদিন তোমার সন্ধ্যাও
গুঁড়িয়ে যাবেই, যাবে।
ক্লান্ত চোখে তোমারও কি আঁধার নামবে?

সেদিন মনে করো আমাকে
হাসি কান্নার স্পর্শবিহীন
এই বেঁচে থাকার মানে বুঝে যাবে সেদিনই।

বিষণ্ণ মন্দিরা

খুব একা একা লাগে, ভীষনই একা
নিজেকে কষ্ট দিতে ভালো লাগে
ভালো লাগে বখে যেতে, নষ্ট ভাবতে
উপচানো এশট্রেতে গোঁজা সিগারেট মাথা দেখতে
ভালো লাগে ভাবতে কতটা নির্ঘুম ছিলাম গতরাত্তির
আমার কষ্ট ছুঁয়ে দূরে বয়ে যায় এক না দেখা নদী।

এখানে সব ছিল; ছিল হাসি, আনন্দ, তামাশা
একদিন নারীর মতো মন ছিল একটা
জহরীর মতো যাচাই-বাছাইয়ের দক্ষতাও ছিল
ভরা নদী-জলে থৈ থৈ আনন্দের জল ছিল
একটা মরচে ধরা আকাশ ছিল একান্ত
মেঘ কিছু দিয়ে সেও চলে গেছে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।

একা থাকা জ্যোৎস্না আলোর ঘোরে
নষ্ট মনের গাছে কষ্টথোকা জোনাকীরা জ্বলে
অবিরাম বাইছি নৌকা নিজ গণ্ডি ঘিরে
দেখি কষ্টও কেমন নিরাকার ঢেউ হয়ে চারপাশে দোলে!

কবিতা

হুট করেই একটা কবিতা লিখলাম
কবিতার নাম পাখি
লেখা শেষ হওয়ার আগেই পাখিটা
বের হয়ে উড়তে লাগল

কবিতার বাইরেও সে বাবুই আবাস বুনল
বাতাস যখন সুখের দোলায়
তখন সে আবার উড়ল বনের দিকে
তালগাছে দোল খেতে গিয়ে
গায়ে কাঁটার খোঁচা খেলো

নদী দেখে থমকে দাঁড়াল
বকেদের সাথে ঝগড়া করে মাছ নিল
এবার সে সমুদ্রমুখী
সে উড়ছে অথচ সমুদ্র পিছলে পড়ছে
সমুদ্র আরো দূরে চলে যাচ্ছে
উড়তে উড়তে ক্লান্ত আর ভীরু

পাখিটা এবার আবার কবিতায়
বুঝলাম এরপরে আর কিছু নেই
আমি স্মিত হেসে কলম টেবিলে রাখলাম
ঘাত প্রতিঘাতে বিদ্ধ পাখিটি এখন আবার নিজের ডেরায় ফিরেছে
আমার স্বস্তি বা অস্বস্তি কিছুই আর নেই

পাখি তুমি যত দূরেই যাও
উড়বার ডানা দুটোই কেবল জেনো।

মনু’র সন্তান

অজ্ঞাতসারে একদা মিশেছিলাম নাগরিক ভবে
ইহাদের কোলাহলে, ভিড়ে
যেখানে সর্বত্র কেমন মানুষ, মানুষ গন্ধ
যেমন ধরো দেখলাম পাখি এক
তখনি জেনেছি পাখিরা মনুজের জন্য।

এই নদী ফুল ফল সাগর
সবেতেই নাকি মানবের অধিকার
এত পেয়েও দেখেছি তাদের সুখ নেই কোনো।

পদানত ঘাস তবু ভালো
ভালো লেগেছিল জমির ধান আর উর্বরা মাটি
মনুষ্য আমাকে দেয়নি শান্তি
কিছু বরং দিয়েছিল তাদের অধিকারভুক্ত
দূরের বাতাস আলো জল
তারো বেশী দিয়েছিল দুপুর
নরম কম্পিত যার রোদ
কিংবা অড়হরের একটিমাত্র কষ্টি ওঁচা দানা

আমাকে ডেকোনা আর মানুষের ভিড়ে
মানুষ আমার কক্ষণো ভালো লাগেনি।

জীবন

চোখ থেকে
যেন উড়ে গেল সে
পাতার মতোই ক্ষণস্থায়ী
চিরকাল থাকবেন যিনি তার আবাস আকাশে
এখানে মাটিতে মাটিমন নিয়ে
জলস্থল একাকার

ভালবাসার জন চিরদিন উচ্চেই থাকেন
চাইলেই কেউ পারবেনা তাকে
টেনে নামাতে
যদি না তিনি নিজে নামেন

প্রিয় থেকে প্রিয়তম হয়ে যান
অচিন পুরের শিখন্ডী এক।

সেইলফিন

আমার বিশ্বাস হয়না এতটা ভুল কেউ হতে পারে
হাতের ভেতর গোটা নদী পুরে দিলেও
কেউ ছুঁড়ে ফেলতে পারে এত এত মাছ।

আমি তার নীতির কিনারে গিয়ে দাঁড়াই
রেলিং ধরে উবু হয়ে মুখে রক্ত তুলি আর
লেখা হয়ে যেতে থাকি কারো দীনতার দলিলে।

এই যে ফুটে ওঠা শৃঙ্খলিত একমুঠো হাত
যাকে বাঘের থাবা ভেবে একদা আমিও ঘুমিয়েছিলাম
এখন কিনা দাঁড়িয়ে আছি কানকো বাঁধা তার দড়ির এককোণে।

হয়তো আমিও জাতিতে মাছ অথচ রেলিং ছেড়ে
উড়ে যাচ্ছি ঠিক যেন পাখি,
অবিশ্বাসী আমিও উড়তে পারছি সেই একই মাত্রায়!

সরভরা মেঘের বিচরন পথে
ক্রমাগত ছুঁড়ে দিতে পারছি নবীন সব পাখি অলক্ষ্যের মতো
আর দলিল লেখকের জাল ভরে উঠছে যৌথ সমাধির লাজে।

সর্পশাপ

774125

গাছগুলো ভিজে শেষ।
এমনদিনে সেও যেন একলা থাকে কোনোদিন
এই আকাশের সারিমেঘ
শীত শীত ব্যাকুল বাতাস আর
ভেজা মন নিয়ে
সেও যেন কাঁদে আরো কয়েকবার

যে হারায় সে হারায়
যে জানে সত্যিকারের ভাসান দিতে
সে ডাকেনা কাউকে আর
ফিরে ফিরে আসে হাহাকার
বুক ভরা অভিমান
দিকছাড়া ক্ষ্যাপাটে শোক

যাকে শোক দিয়েছে সে তারই মতন
সেও অবিশ্বাসী এক, সাজাপ্রাপ্ত
কষ্ট সাঁতরে সে যেন অবিরাম
ব্যথায় পরিশ্রান্ত, বারবার দিয়ে যায় ডাক
এই মেঘলা দিন, মৃদু বৃষ্টি আর ইষৎ জ্বালা
হে মহাযোগ, তাকেও দিও কষ্ট এমন!

সহিষ্ণু

Ratar

কে আর বলো ভাবাবে এমন
যখন এখানে তুমি নেই
কে আর এমন কাঁদবে বলো
অবেলায় উড়ে গেছে
যত শামুক চিলের ডানায়
কে জানে তার নাম?
কে জানে ব্যথা!
এখানে তবু অনেক মানুষ
রঙতুলি নিয়ে ঘুরে বেড়ায়
বিষণ্ন বিকেলের পাশে
এক লেকের স্থির জলে
তুমি তবু না থেকেই রয়ে যাও।
ভুল আর ভালোর বাসরে
সমাহিত হয়ে আছে চেনা পানির ঘ্রাণ
আমাকে রেখে তুমি কতদূর যে চাও
ফিরে আসো বারবার ফিরে ফিরে যাও।

সদানন্দ কাঁপিছে আনন্দে

7909427

দুএকদিন সকালে
আমাদের ঘুম ভাঙ্গে প্রবল হরষে
দোলনায় দুলে দুলে।

আহা কত মধুর সে প্রভাত
জানালার কাঁচে সুর ওঠে ঝনঝন
জগে পানি দোল খায় রিমঝিম
বন্ধ ফ্যান হেসে ওঠে নড়ে নড়ে বনবন
দরজার কড়াটাও শিল্পিত সুর তোলে রুমঝুম

একেকটা দুপুর বিকাল সন্ধ্যা
আমরা সবাই খিলখিল হাসি নিয়ে
ছুটে যাই রাস্তায়
পিকনিকের আমেজে একে তাকে শুধাই
‘ভাই কিছু জানেন? কিংবা
মাত্রা ছিল কত? অথবা
জানেন কি উৎপত্তিস্থল কই?’

মুহুর্তগুলো প্রবর্ধন হয় আনন্দে
রাস্তায় দাঁড়িয়ে অসভ্যের মতো হাসি
দমকে কাঁপি, হেসে হেসে কেঁপে কেঁপে উঠি
তারপর খেলা শেষ হলে
ফিরে যেতে থাকি ঘরে

ফিরে গিয়েও রেহাই নেই
সেই দিনের স্মৃতিতে হাসি ক্ষণেক, ক্ষণেক কাঁদি
আহা মধুক্ষণ কেন ফিরে চলে যায়!
দুই চোখ ভাসে, ডোবে জলে
সাথী হয়ে আছে চোখের তারায়
সেই দিন, সেই ক্ষণ
সেই দুলে ওঠা উল্লসিত দিন স্মরণে
দুই চোখ থেকে মন অব্দি ভরে থাকে অদ্ভুত এক ভয়

একেকটা দিন
প্রতিটা দিন শুরুই হয় ভয় নিয়ে
ভয়ে ভয়ে আনন্দিত চিতে।

শিশমহল

index

রোনিতার শোবার ভঙ্গীটা এমনই, যেন কুন্ডলি পাকানো সাপ। আমার বুকের একদম মাঝখানে কেমন জমে থেকে শোয় মেয়েটা। মুঠো পাকানো হাতের ভেতর কে জানে কতগুলো দীর্ঘশ্বাস সে পুরে রাখে! আমি বরং ওর এই সর্পিল ভঙ্গি নিয়েই বেশ আয়েশী চিন্তায় ডুবে যেতে পারি যে কোন সময়। ঠিক ‘দ’ নয় বরং বলা যায় আস্ত একটা ডিমের মতই ইষৎ গোল ভঙ্গি। আচ্ছা ভরা দিনের সাপের ডিম ভাঙ্গলে কি সাপের বাচ্চাটাও হাতে ছোবল বসাবে? আমি আনমনে বিছানা ছেড়ে উঠে আসি জানালার কাছে। যারা লেখেন তারা এমন রাত নিয়ে লিখতে গেলে বলবেন, বাইরে নিকষ কাল অন্ধকার। অথচ আমি দেখছি উল্টোটাই। রাতের রাস্তায় স্ট্রীট লাইটের আলো আর ক’একটা গাড়ীর সশব্দ চলে যাওয়া। অবাক লাগে। এই শহরটা দিনে-রাতে সমান জমজমাট। এই শহরটা যতই সমস্যার শহর হোক না কেন প্রাণ যেন সারাদিন এর গা থেকে টুপটাপ ঝরে পড়ে। অথচ কত সাজানো শহরই তো দেখেছি, দেশে-বিদেশে সব শহর এমন প্রানবন্ত নয়।

সিগারেটের শেষ অংশটা এশট্রে তে গুঁজে রাখতেই দেখি রোনিতা উঠে বসেছে বিছানায়। আর বিছানার চাদরটা কুঁচকে কেমন ভাঁজে ভাঁজে ঢেউয়ের তীর্যক ছবি হয়ে ফুটে আছে।
রোনিতা হাই তুলতে তুলতে একটু এলানো গলায় বলল, উঠে গেলে যে বড়!
ও দুই হাঁটু ভাঁজ করে থুতনীটা ঠেকিয়ে রেখেছে সেখানে। পদ্মফুল বিছানায় ফুটলে আমি নির্ঘাৎ বলে দেব ঐ ফুলটার নামই রোনিতা।
বললাম, এক কাপ চা খাওয়াবে সুইটি?
বিছানা থেকে নেমে যাওয়ার আগে ও আমার দিকে তাকিয়ে একটা কপট রাগী হাসি ছুঁড়ে দিয়ে গেল। আমি দেখলাম শুভ্র বসনা এক পরী যেন উড়তে উড়তে কিচেনের দিকে যাচ্ছে।
লিখতে হবে, আমাকে কিছু লিখতে হবে। অনেকদিন লিখি না। একজন কবি যখন লিখতে ভুলে যায় তখন আর সে নিজের থাকে না। আমিও এখন আর নিজের নেই। রোনিতার সাথে এই হঠাৎ পরিচয়, তারপরই বিয়ে আর বিয়ের পর পরই কিছু গোলযোগ সব মিলিয়ে লেখার উৎসাহ পাচ্ছিলাম না কিছুতেই। এখন আর কোনো সমস্যা নেই। ঐ তো রোনিতা, সাদা নাইটির আড়ালে ছোট্ট একটা মেয়ে; কৃশকায়, চা বানাচ্ছে অনভ্যস্ত হাতে। আমার ভাল লাগে। ভাল লাগে বেঁচে থাকা, এই বেঁচে থাকাটা অনেক বেশী আনন্দের।

প্রথম ঢেউটা গর্জে উঠেছিল ওর ভেতর থেকেই। বিয়ের পর পরই হানিমুনে গিয়েছিলাম কক্সবাজারে। সেখান থেকে ফেরত এসেই এই মেয়ে দুম করে জানিয়ে দিল আমার ভেতরে সে পুরুষের ছায়া দেখে না। আচ্ছা পুরুষ মানেই কি তার একটা ধারালো অস্ত্র থাকতে হবে? ও বলেছিল, চিকিৎসা করাও। এমন অপমান কি নেয়া যায়? ধুমধাম কষে কয়েক চড় বসিয়ে দিয়েছিলাম ওর নোনা ফলের মত মসৃন গালে। ওর চোখ দু’টো প্রজাপতির মত উড়ন্ত। সেখান থেকে সেই যে জলের ধারা বেরুলো যেন ঝর্ণার জল। কি তার বেগ! তোড়ে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল সব কুল। আমি অসহায়ের মত ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরেছিলাম ওর দুই হাত, বলেছিলাম, রোনিতা আমি ডাক্তার দেখাব। ঠিক হব।
সে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বেরিয়ে যেতে যেতে বলেছিল, তুমি যতই ঠিক হও না কেন, এই যে আজ আমাকে মারলে এই অভ্যাস তোমার কখনো ঠিক হবে না। তুমি সব দিক থেকেই বিশ্রী। আমি তোমাকে চাই না।

চলে গিয়েছিল রোনিতা।

তারপর কত ডাক্তার, কত বদ্যি—চিকিৎসা করিয়ে একেবারে রোনিতার মনমত স্বামী হয়ে ফিরেছি। যখন ওর কাছে গেলাম ও কিনতু ঠিকই হাসছিল খুশীতে। আমাকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদেছিল। ও তো জানতই আমি ফের যাব ওর কাছে আর আমিও জানতাম ও ফিরবেই।

ফিরে এসে এই একগলা ঘরদোর দেখে ওর সে কি রাগ! নিজে হাতে সব কিছু পরিপাটি করেছে। আর গজগজ করেছে। আমি ওর কোমর জড়িয়ে ধরে বলেছিলাম, এসব পরে হবে বেব, চলো আমরা কেবল ক’টা দিন স্রেফ আমাদের হয়ে থাকি।

এখন আমি আর রোনিতা এই হল আমাদের জগত। ওকে কেউ ডাকলেও সে কোথাও যায় না। ছোট্ট খুকিটা সারাদিন আদুরে বেড়াল হয়ে পায়ে পায়ে ঘোরে। আমারো এখন রাজ্যের অবসর। লেখালেখি সব বন্ধ। শুধু অফিস আর বাড়ী, বাড়ী আর অফিস।

দুই কাপ চা নিয়ে এসে রোনিতা বসেছে আমার মুখোমুখি চেয়ারে। হাসতে হাসতে বলল, ইস লেখকের বউ হওয়া যে কি ঝামেলার! রাত বিরাতে উঠে চা বানাও, তার মন ভাল কি না এসব দেখ—
আমিও হাসছি, বললাম, ইস সুন্দরী বউ ঘরে থাকার যে কি লাভ সারাদিন বউটাকে কেবল জ্বালাতেই ইচ্ছে করে।
এই এখন কি দিন? সারাদিন নয় জনাব বলেন সারারাত
ওর চোখেমুখে দুষ্টুমির হাসি।

ভোর হয়ে আসছে। তারপরও রোনিতার মুখে পরিশ্রমের চিহ্ন ফোটে না। এতক্ষন ধরে সে ঘর গোছাল। সকালে কি নাশতা চাই তা’ও জেনে নিয়েছে আমার কাছ থেকে। এখন থেকেই শুরু করে দিয়েছে তোড়জোর। আহা সুজির হালুয়া দিয়ে নরম ফুলকো লুচি ভাজবে আমার কোমল কোমল বউটা। গরম গরম নাশতার আমেজই আলাদা।
ও রান্না ঘর থেকেই চীৎকার করে বলল, এই যে সাহেব আমি এত খাটছি, পারিশ্রমিকও তো চাই
বললাম, ওরে আমার মিষ্টি বউটা, কি যে দিই তোমাকে!
বলল, একটা অসাধারন কবিতা—

এই না হলে কবির বউ! আমি লিখছি। আজ রাতেই জীবনের সেরা লেখাটা লিখে ফেলতে হবে। আমার বউ চেয়েছে। রোনিতা নামের নরম একটি মেয়ে আমার বউ। কি না করতে পারি আমি ওর জন্যে! ও যা চেয়েছে আমি তো তা-ই। আর ও যা চাইবে আমি তা’ও।

ঠোঁট থেকে সিগারেট ন্যুজ্ব হয়ে আসতেই
ঠেলেঠুলে বেরিয়ে আসে নিকষিত দাঁত
আদিম গুহার টানে বিছানায় ভেজে পা
মথুরা আর কৃষ্ণ দুইই তখন পরমান্ন
দাঁত বসাব মেলে ধরা পাপড়িতে।

পোড়া আত্মার একাংশ হাতে নিতেই উড়ে গেল ছাই
অথচ মধ্যমা ভিজে উঠছে রক্ত পরাগে
প্রবুদ্ধ বলেছে, অবদমন মানে ক্রোধ
মমতা উড়তে দেখছি, ক্রোধ নেই যেন কোথাও
আর আছে ব্যাঙ্গাচি হয়ে ঢুকে যাবার তাড়া।

বক্সের সবগুলো সুখটান ফুরিয়ে গেছে
যে যাবার সে চলেই যাবে,
তবু কে যেন ফিরে ফিরে আসে
তর্জনী আর মধ্যমার মাঝে শুরু থেকে পোড়ে সিগারেট
পুষ্পমালা বিছানা আদিম দাঁতে চার পা কামড়ে ধরে।

লেখা শেষ হতেই আমি রোনিতাকে ডাকি। কবিতা পড়ে ওর গাল বেয়ে সেদিনের মত শ্রাবনের কিছু ধারা গড়িয়ে যায়, বলে, ইস রায়হান তুমি লিখছ! তুমি আবারো লিখছ! আমি আর তোমাকে ছেড়ে যাব না সোনা। আর কক্ষনো যাব না।

এখনো সকাল হতে আরো অনেকটা সময় বাকী। আমাদের কাছে রাত আর সকাল সবই তো এক। নাশতার টেবিলে ও আমার হাত থেকে কেড়ে নেয় লুচি। একটু একটু করে ছিঁড়ে সুজি মাখিয়ে পুরে দিচ্ছে মুখে। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকি ওর দিকে। আচ্ছা সবার বউই কি এত ভাল? ইস কি মিষ্টি এই বউটা!
কি দেখছ?
তোমাকে
বাহ রে আগে দেখোনি বুঝি?
দেখেছি, তবু প্রতিদিন যেন তুমি আরো নতুন হয়ে ওঠো রোনিতা
আমার ছিঁচকাঁদুনে বউটার চোখ থেকে আবারো সুক্ষ্ণ একটা ফোয়ারা উথলে ওঠে। নিজেকে সামলে নিয়ে বলে, শোনো সারাটা রাত এমন জেগে কাটালেই হবে? এখন নাশতা সেরে একটু ঘুমিয়ে নেবে কেমন! সকালে তোমার অফিস আছে না?
ইস পৃথিবীটা কি সুন্দর!

বিছানায় ঘুমাতে এসে দেখি কখন, কোন ফাঁকে সে পরিপাটি করে রেখে গেছে আমার শোবার ঘর। বাহ বিছানার পাশে টেবিল ল্যাম্পটার সাথে সে ঠিক ঠিক একটা ফ্লাওয়ার ভ্যাস সাজিয়ে রেখেছে। আর সেখান থেকে দুই ডানাওয়ালা অনেকগুলো দোলনচাঁপা হাসিমুখে ছড়িয়ে যাচ্ছে সৌরভ। আমি মাতালের মত টানতে লাগলাম ওর দুই বাহু। রোনিতা তখন হাসছে।

আবার ঘুমটা ভেঙে গেল। রাতটা বেশ লম্বা আসলে। ঠিক তেমনি করে রোনিতা শুয়ে আছে যেন কুন্ডলী পাকানো একটা সাপ আমার বুকের মাঝখানে জমে আছে। আমি উঠতে চাইতেই টান পড়ল ওর চুলে। কেমন জবাফুলের মত ঘুঙুর ঘুঙুর চুলগুলো আমার বুকে থোকা থোকা লেগেছিল। চুলে টান পড়ায় আবারো জেগে উঠল সে। একটু হেসে জানতে চাইল, কি হয়েছে সোনা? চা খাবে?

আবারো রোনিতা চা বানাচ্ছে নরম হাতে। আমি দেখছি মায়াবী আলোর ভেতর থেকে ফুটে ওঠা একটা তামার ভাষ্কর্য। ছোটখাট রোনিতার চিবুক বেয়ে নেমে আসা এক টুকরো আলো পিছলে পড়েছে মেঝেতে। আমি মেঝে থেকে আঙুল দিয়ে খুঁটে খুঁটে তুলে নিচ্ছি সব আলো। এতটুকু আলো নীচে পরা চলবে না। এটা আমার বউয়ের মুখ থেকে পরা আলো, রোনিতার আলো।

ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই মনে হল বিয়ের ঠিক পরেই আমি লিখেছিলাম একটা কবিতা—
বধুকরণ

মধুর মরশুম, চন্দন চন্দন!

সেফটিপিন বেঁধে রেখেছে কিছু দৃশ্য
উদ্দাম ঝাউবন, মনিকাবিথী
আর পাহাড়িয়া খাঁজের নিটোল রূপকথা।

ঝর্ণা গড়িয়ে যাচ্ছে পাথুরে শ্যাওলায়
এই বনে এবার দাবানল দেখা দেবে
পাখির ছানা মায়ের ঠোঁট থেকে তুলে নেবে মুক্তো।

গোটা বন জুড়ে সবগুলো গাছ শ্বেতচন্দন!

রোনিতা আসলেই একটা কবিতা। আস্ত এমন একটা কবিতা কি করে আমার কাছে এল? আমার ঘরে এমন তোলপাড়! আমি আবার রোনিতার পিঠে মুখ গুঁজে শুয়ে পড়ি। আর রোনিতা ঘুরে গিয়ে ঠিক তেমনি করে ডিমের মত গোল হয়ে শোয়। আমার বুকের কাছে কুন্ডলী পাকানো একটা সাপ। সাপের গায়ে এত কারুকাজ যে আমি মুগ্ধ হয়ে ওর ঘুমন্ত শরীর দেখি। দেখি ঝুমকোলতা হয়ে উপরের দিকে বেয়ে ওঠা থোকা থোকা চুল। খুব নরম হাতে আমি ছুঁয়ে থাকি রোনিতা অস্তিত্ব। আর সারাঘরে দোলনচাঁপার মিষ্টি সুবাস। সব, সব শুয়ে থাকে আমার পাশে, আমারই মত একটু ঘুমের আশায়। অথচ রোনিতা শোয়ামাত্রই ঘুম। ভালই হয়েছে ওর এই ঘুমই একদিন আমাকে দিয়ে আঁকিয়ে নেবে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ একখানা কবিতা। আমি আরো আশাবাদী হই আর ওকে জড়িয়ে ধরতে গেলেই টের পাই সাপের মতই ঠান্ডা হয়ে শুয়ে আছে আমার বুকে, আমারই বউ রোনিতা। মিষ্টি একটা প্রজাপতির নাম দিলাম আমি রোনিতা।

সকালের রোদ আমার ঘরে ঢোকে না। সবগুলো পর্দা রোনিতা এমনভাবে টেনে রাখে যেন আমার ঘুমের এতটুকু ব্যাঘাত না ঘটে। অথচ আজ রোদের তাপে চৌচির হয়ে গেল ঘুমটা। আমি পাশ ফিরতেই শব্দ পাই কলিং বেলের। বাজছে তো বাজছেই, একটানা বেজে যাচ্ছে কলিং বেল। আরে রোনিতা কই? ও তো এমন কক্ষনো হতে দেবে না! আমার ঘুম নষ্ট করে কেউ পার পাবে? রোনিতা দরজাটা খুলছে না কেন?

বিছানায় উঠে বসবার আগেই রোনিতার গলা শুনি, এই তুমি কি উঠেছ? একটু যাও না প্লীজ, দেখো কে এল!

আমি তাকিয়ে দেখি বাথরুমের দরজায় দাঁড়ানো রোনিতার দিকে। গোলাপী বাথরোবে ওকে যেন ঠিক ঠিক সেই পরীটাই মনে হচ্ছে। আমি ওর দিকে এগিয়ে যেতেই ও হাসতে হাসতে দরজা বন্ধ করে দিল। আমিও হেসে ফেলেছি।

দরজা খুলতেই দেখি আমার পুরনো কলিগ সাহাবুদ্দিন। আমাকে দেখেই সে যেন এক পা পিছিয়ে যায়। ভয়ে ভয়ে বলে, এ কি অবস্থা আপনার রায়হান ভাই? চেহারার কি হাল বানিয়েছেন?

আরে আমার চেহারার আবার কি হল? হাসতে হাসতে বলি, আর বলবেন না আপনার ভাবীটা যে কি! সারারাত কেবল আমাকে দিয়ে কবিতা লিখিয়ে নেয়। লুচি আর সুজি রান্না হয়েছে, চলুন একসাথে নাশতা সারি।

সাহাবুদ্দিন বিড়বিড় করে, ভাবী! তারপরই গলা চড়িয়ে বলে, ভাবী তো চলে গেছে তাও ছয় মাস হয়ে এল। আপনি এসব কি বলছেন?

আমি ওর দিকে তাকিয়ে থাকি হতভম্ব হয়ে। নিজেকে একটা পংখীরাজ ঘোড়ার মত মনে হয়। মনে হয় একটু সুযোগ পেলেই এই ঘর ছেড়ে আমি উড়াল দেব। এই ছেলে এসব বলছেটা কি! আমার এমন রাগ লাগে! আমি দড়াম করে সাহাবুদ্দিনের মুখের উপর দরজাটা লাগিয়ে দিলাম। আর ও একমনে কলিং বেল টিপেই যাচ্ছে।

ঘরে ঢুকেই আমার মেজাজ চড়তে শুরু করল। ঘরটা এত এলোমেলো কে করলো। উফ! আর ভাল্লাগে না। আমি গলা চড়িয়ে ডাকি, রোনিতা, রোনিতা—

রোনিতা দৌঁড়ে চলে আসে ড্রইংরুমে, কি হয়েছেগো? এমন চীৎকার করছ কেন?
দ্যাখো না কালই তুমি এত সুন্দর করে সাজালে ড্রইংরুমটা আর আজ দ্যাখো কি হাল হয়েছে এর?
রোনিতা অবাক হয়ে চারপাশে তাকায়, কোথায় কি হয়েছে? এই তো সব ঠিকঠাক
আমিও অবাক হয়ে দেখি, আর তাই তো! একটু লজ্জা পেয়ে বলি, কি জানি কেন এমন মনে হলো!
ও একটু অস্বস্তি নিয়ে জিগ্যেস করে, তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন? কে এসেছিল?
এতক্ষনে আমি ধাতস্থ হই, বলি, সাহাবুদ্দিন এসেছিল
রোনিতা চোখ কুঁচকে একটু গলা চড়ায়, কে?
আরে ঐ যে ছেলেটা, সাহাবুদ্দিন আমার কলিগ, আর দু’টো বাড়ী পরেই তো ও থাকে। তুমি তো চেনোই ওকে। আমাদের বিয়ের পর পর কত আড্ডা দিয়ে গেল একদিন!
তা তো চিনি। কিনতু তুমি কি ভুলে গেছ, আমরা কক্সবাজারে থাকতেই ও রোড এক্সিডেন্টে মারা গিয়েছিল?
আমারো সঙ্গে সঙ্গেই মনে পড়ে তাই তো, সাহাবুদ্দিন তো সেই কবেই মরে গেছে। নিজেকে একেবারে সংকুচিত লাগতে থাকে নিজের কাছেই।
রোনিতার প্রজাপতি চোখ থেকে আবারো পিছলে পিছলে যায় জলপ্রপাতের মত এক টুকরো আলো, ও আমার কপালে হাত রেখে বলে, কি হয়েছে সোনা? তোমার শরীরটা কি খারাপ লাগছে?
আমি আর কিচ্ছু বলি না। ওকে জড়িয়ে ধরে জানালার বাইরে তাকিয়ে থাকি। কি আশ্চর্য এখনো ভোরের আলো ফোটেনি আকাশে! অথচ তখন মনে হয়েছিল যেন ভোর হয়েই গেছে। বাইরের রাস্তাটা আবছা আলোয় কেমন সাপের মত শীতল শুয়ে আছে লম্বা হয়ে। আমার কেবলি মনে হতে থাকল সাপটা আমার ঘরেই একটু পর এসে ঢুকবে নয়তো আমি নেমে যাব ওর বুকে। এটা মনে হতেই মনে পড়ল, আরে আমাকে তো অফিসে যেতে হবে!

রোনিতাকে নিয়ে বেডরুমে এলাম। ওর শরীর থেকে সদ্যস্নানের ঠান্ডা পরশ আর ধোঁয়ার মত মিষ্টি এক টুকরো গন্ধ ভেসে এল নাকে। রোনিতা আমার বউ, কি মিষ্টি একটা বউ আছে আমার— ভাবতেই সবকিছু আবারো হেসে উঠল সবখানে। সাজানো-গোছানো ঘরের চারপাশে চোখ বুলিয়ে আমি রোনিতাকে জড়িয়ে ধরে বললাম, হুম সাহাবুদ্দিনের মৃত্যুর পরই তো তুমিও আমাকে ছেড়ে চলে গেলে লন্ডন।

টয়লেটের বাতিটা একটু নিষ্প্রভ হয়ে জ্বলে। ঐ আলোতেই আমাকে দাড়ি কাটতে হবে। আমি শেভিং রেজারটা হাতে নিয়ে আয়নার দিকে তাকালাম। আশ্চর্য আয়নায় কেউ নেই। আয়নায় প্রতিফলিত ছায়াটা যেন একটুকরো আলো কিংবা সরু একটা সাপ কেমন তরল হয়ে গলে গলে পড়ে যাচ্ছে ভেতরের দিকে অথবা আয়নাটাই অমন জলের ঢেউ যার বাইরে দুটো প্রজাপতি উড়ছে জলপ্রপাতের মতো, রোনিতার চোখের মতো। আমি আর ওদিকে তাকালাম না।

ছুঁয়ে দেখো শূন্য

ছুঁয়ে দেখো শূন্য

ফিসফিস করে কথা বলছিলাম
ওর সাথে একা একা; ও একটা বনপরী
যদিও কেউ দেখেনি ওকে
ওর জীবনে প্রেম, গান, শিশুমুখ
কতটুকু মানে রাখে জানতে চাইলে
ও বলেছিল, ‘তোমার মতন
আমিও একটা বার্বি
আমিও একটা মিথ
তুমি প্রকৃতির উপহার
আমি তোমার তৈরী’
ওর বাকচাতুর্য আমাকে বিভ্রান্ত করল
আমি শব্দের পর শব্দ পেরিয়ে
পৌঁছে গেলাম বিপন্ন স্মৃতিগ্রস্ত সীমানায়
যাকে তুমি অতীত বলো
দেখলাম; বনপরী বলো, মানুষ বলো
এমনকি প্রকৃতি সবাই একা
আমার মতন, তোমার মতন
শুধু বৃষ্টিই একা নয়, সে নেমে আসে সদলবলে
বনপরী আমার সাথে কথা বলে বৃষ্টিমুখর
আমার আর তার জীবন এমন কি
তোমার জীবনও একই রকম, নেশাগ্রস্ত।

দিলে দিলে মসকরা

254617_n

দিল আমার ক্যারাব্যারা খায়া পইড়া আছে
জল্লার পাড়ে; হালার পুতেগো লেইগ্যা
সাসভি লিবার পারি না
হাতের মেন্ধি দেইখাভি কয়,
তুমি বহুত খুপসুরত আছ, তোমারেই চাই।

আমি কই, উষ্টা খা আপনা কপালে
ঐ বেল্লিক তোগো মা-বইন নাইক্কা?
আমার দিল লিয়া খেলবি আবর তো ছাইড়াও যাবিগা
হুমন্দির পোলা, কুন আজাবে খৎনা দিছিল তরে?
সবতের (ছেড়ি) বুকেই ফাল পাড়বার চাস!

এলা আয়া খাড়ায়া থাকি চান্দের লাহান, একলা…
আমার বুকের ভিৎরে চুঁয়া লৌড়ায়
আয় হায় মা, বুকের কাঁপন সিজিল অহে না
কারে য্যান চাইছিলাম, কেউগা জানি আহে নাইক্যা
খাংকির পোলাগো জ্বালায় তারে কইবার ভি পারি নাইক্কা।

সুনসান হইলে মহল্লা আইজ পরথমেই যামু,
পিরীতি সোহাগে তারে জিগামু,
হারা জীবন তুমিই আছিলা দিলের মানু
তুমি কেলা পাউছাইয়া থাকো? দেহো না
কেমুন বান্দরের লৌড় লাগছে আমার পিছে!

আমার দিলের মানু সরমায়া কইব,
আমি তো জানছিলামই কুত্তার বাচ্চাগুলারে সাইড মাইরা
তুমি আমার কাছেই আইবা—
আয় হায়, এরবাদে চুম্মা চাট্টি, এরবাদে ঘর সংসার; সাদি
এরবাদে সব হউরের পো থাউক লৌড়ের উপর।

দিলের মানু আমার দিলেই ফালাক, অরে ছাড়া
কাউরে কই নাই আহো, কাউরে কই ভি নাই যাওগা
খালি সবতেরে কই, রাস্তা মাপো
এই রোড এহন ভিআইপি
রসিক ছাড়া এইহানে আর কেউর বেইল নাইক্কা, সব ফকফকা।

একটা ফড়িং চোখের পাতায়

বড় আড়ম্বরে দুঃখ সাজিয়েছিল তঞ্চক
হারজিত বুঝিনি; মৃণালজলে ভাসিয়ে অভিমান
উড়ছি দিগন্তব্যাপী।

এই রইল দুটো হাত, ছুঁয়ে থাকো বিশ্বাস
তুমি আসবে বলেই বিদায় নিয়েছে রাত্রিকাল
সূর্যরশ্মি ছাড়া কোনো শিরাই জীবন্ত থাকেনি বেশীদিন।

পুড়ে যাওয়া আধখানা চিঠি
ক্ষত রেখেছিল এইখানে
সকাল কিরণ ধুয়ে নিয়েছে জটিলতা
সবই ফিরবে ফের অভিমান ভেঙে।

আমিও ফিরেছি দেখো, এসো কাছে
হাতে হাতে ছুঁয়ে রাখি তোমার জ্বর
দুঃখকালে রেখে যাওয়া যে স্বাক্ষর এখনো বইছ মনে।

তুমি আর আমি মানেই আমরা; ভুলোনা কস্মিনকালে।

স্মৃতিচারণ – ২ মেয়েবেলার মেয়েরা

খুব ছোট্টবেলা থেকেই আমি একটা গাছ খুঁজতাম, নিজস্ব গাছ। আমাদের পুরনো ঢাকার বাসাটাতে তখন এমন কোনো গাছ নেই যে ছিল না। আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, পেয়ারা এমন কি কলা গাছ পর্যন্ত। কলা গাছের ঊর্ধ্বমুখি বিস্তার আর সজীব রঙ আমাকে বেশ লোভাতুর করত ওকে আপন করে নেবার জন্যে। কিনতু দেখতাম ফল দেবার পর ওকে বেশীদিন আপন করে রাখা যায় না, একেবারেই মিইয়ে যায়। আমি কাউকে বলিনি আমার এ বাসনার কথা, এমনকি ভাই হাসানকেও নয়। একা একা ঘুরতাম আমাদের বাগানে। দিনের বেলা যাকে খুঁজে পাইনি এক রাত্তিরে তাকেও পেয়ে গেলাম অকস্মাৎ।

সন্ধ্যার পর তখন প্রায়ই কারেন্ট চলে যেত। আমাদের জন্যে বরাদ্দ ছিল রাত ন’টা থেকে দশটা পর্যন্ত বিটিভি দেখা। ওটুকু সময়ের মধ্যেই আমরা খাওয়া দাওয়া শেষ করে নিতাম, কেননা টিভিতে তখন চলত আমার প্রাণের ওয়াইল্ড ওয়াইল্ড ওয়েস্ট, সিক্স মিলিয়ন ডলার ম্যান, বায়োনিক উয়োম্যান, ম্যাকগাইভার, দ্য এ টিম এইসব সিরিজ। আমরা তখন এইসব হলিউডি নায়ক নায়িকার জীবন যাপন করতাম স্বপ্নে। তো এমনি এক রাতে আমাদেরকে হতাশ করে দিয়ে কারেন্ট চলে গেল রাত ন’টায়। মনে প্রবল কষ্ট নিয়ে আমরা তখন বারান্দার সিঁড়িতে বসে ভাইবোনেরা সব গল্প করার ছলে কারেন্টের ফিরে আসবার অপেক্ষায় আছি। উঠোনে আমার আয়া মা’র পাতা চৌকি। আয়া মা’ও গরমে হাসফাঁস করছে চৌকিতে শুয়ে। আমি তার পাশে গিয়ে শুয়ে পড়লাম আর কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি টেরও পাইনি। হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল তীব্র সুন্দর এক ঘ্রাণে। চোখ মেলে দেখলাম, একরঙা জ্যোৎস্নার চাদর ছড়িয়ে আছে আমার গায়ে, আশেপাশে। শুধু ক’টা গাছের নীচে ছোপছোপ উদাস জ্যোৎস্না আমার চারপাশটাকে কেমন অপার্থিব করে রেখেছে। কেন জানিনা ঐ মূহুর্তে সব শব্দ, সব কোলাহল কোথায় গিয়ে লুকিয়েছিল! সেই সময় বাদামওয়ালার হাঁকডাক ছিল না, পাশের বাড়ীর শিরিন, মুক্তিদের চীৎকার করে নামতা মুখস্তের মহড়া ছিল না, ছিল শুধু নৈঃশব্দ। আর ছিল সেই তীব্র সুন্দর গন্ধ। আমি পাগলের মত চৌকিতে উঠে বসলাম। পাশ থেকে আয়া মা আমার হাত চেপে ধরে বলল, ‘ডররাও কিও, আমি আছি ন!’ আমি জিগ্যেস করলাম, মা ও মা, এটা কিসের গন্ধ? এত সুন্দর!’ মা হেসে বল, ‘ইতানের নাম ছাতিম ফুল রে মাইয়া।‘

সেই থেকে আমার নিজের গাছ হয়ে গেল ছাতিম গাছটা। ওটা এত্ত বড় ছিল যে ওকে কখনো আমি জড়িয়ে ধরতে পারিনি সম্পূর্নভাবে। তারপরও ওর গায়ে আমি হাত বুলাতাম সময়-অসময়ে। এরপর থেকে আমাদের আড্ডার স্থান হয়ে গেল ছাতিম তলা।

স্কুলগুলোতে তখন গ্রীষ্মকালীন ছুটি চলছে। পুরো মহল্লা জুড়ে আমাদের হৈ হল্লা। গরম এলে কিছু কিছু মানুষ নাকি পাগল হয়ে যায়। আমাদের ঐ সময়কার অবস্থা ছিল তেমনই। আমরা সব যেন পাগল হয়ে যেতাম। আমি তখন ঠিক কোন ক্লাসে পড়ি মনে নেই। শুধু মনে আছে নূর আসিয়া তখন দশ/এগার বছরের বালিকা। আমাদের মেয়ে গ্রুপের সব চেয়ে ছোট সদস্য নূর আসিয়া, ওর চেয়ে আমি কয়েক মাসের বড়। বাকীরা আমাদের চেয়ে কেউ এক, কেউ দুই, এমন কি তিন চার বছরের বড়রাও আছে এবং বড়রা অনেকেই তখন স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। আসলে তখন পুরনো ঢাকার মেয়েরা পড়াশোনায় একটু পিছিয়েই ছিল। পুরো মহল্লায় শিক্ষিত পরিবার ছিল মাত্র দু’টো। একটা জুয়েলাদের বাসা আর অন্যটা আমাদের। তো দেখা যেত ছুটির দিনগুলোতেও জুয়েলা পড়ছে কিনতু আমি ছিলাম রাজ্যের ফাঁকিবাজ। আমি কোনো রকমে সকালের পড়া শেষ করে বেলা ১০ টার মধ্যে বেরিয়ে পড়তাম পাড়া বেড়াতে। আমার ভাই হাসান আর অন্য ছেলেরা আমাকে নিয়ে চলে যেত বলিয়াদি বাড়ী। বলিয়াদি বাড়ীটা ছিল বিশাল, প্রায় তিন চার বিঘা জুড়ে। আমাদের এই দিকে পাকিস্থান মাঠ আর ভেতরের দিকে বংশাল হয়ে মাহুতটুলি। বলিয়াদি বাড়ীর পেছনের অংশ ছিল পাকিস্থান মাঠের দিকে, সামনেটা মাহুতটুলি। ওদের বাড়ী যেতে হলে অনেক রাস্তা পেরিয়ে মাহুতটুলি হয়ে তবেই ও বাড়ীতে ঢোকা যায়। কিনতু আমরা এই পেছন দিক দিয়েই দিব্যি পাঁচিল গলে ঢুকে যেতাম ওদের বাড়ীতে। এই পেছন দিকটায় নেই এমন কোনো গাছ ওদের ছিল না। আম, জাম, পেরায়া, কাঁঠাল এসব তো ছিলই তবে কি না ওসব গাছ আমাদেরও ঘরে ঘরেই ছিল। ছিল না যে ফল সেটা হল তুঁত ফল। অনেকটাই দেখতে রাশিয়ান ব্ল্যাক বেরির মত, আর স্বাদেও তেমনি টক-মিষ্টি। বড়রা বলত, ওসব খেলে পাগল হয়ে যায়। আমরা তাই কাউকে না জানিয়ে ও বাড়ীতে ঢুকতাম। আর সুবিধার বিষয় ছিল বলিয়াদি বাড়ীতে কেউ থাকত না, পুরোই পোড়ো বাড়ীর মতন প্রানবান প্রানহীনতায় বসবাস করা এক প্রাসাদবাড়ী। কিনতু অসুবিধার বিষয় ছিল ও বাড়ীতে একটাই লোক থাকত, ওদের বুড়ো পাহারাদার। ওহ সেই এক লোক ছিল। যেমন কর্কশ ওর গলা, তেমনি বিশ্রী তার ব্যাবহার। যদি কোনোদিন ও তোমাকে ধরতে পারল তো বোঝো, সারাদিন ঐ জঙ্গলে বেঁধে তো রাখবেই আবার বাপ মাকে ডেকে বাপের মারটুকুও ভালভাবে খাইয়ে নিয়ে প্রতিজ্ঞা করাবে যেন এ জীবনে আর কখনো ওমুখো না হও আর সত্যিই একবার যে ওর মার খেত সে আর দ্বিতীয়বার ও বাড়ীতে ঢোকেনি তাই আমরা ও বাড়ীতে ঢুকতাম লিস্টেড কিছু বন্ধু বান্ধব নিয়ে। এমন কি আমার ভাই হাসান আমাকেও কখনো ঐ জঙ্গলে নামতে দেয়নি। ছেলেবেলায় পোলিও হয়ে আমার একটা পা এমনিতেই কমজোর। কে জানে ঠিক সময়ে দৌঁড়ুতে না পারলে তো ধরা। সে কারনেই আমি থাকতাম পাঁচিলের উপর বসে পাহারায়। ওরা ভেতরে গিয়ে ছিঁড়ে আনত সেই মিষ্টি মধুর রসে মাখা ফল। হাসান তখন পকেট ভরে ওগুলো এনে আমার কোঁচড়ে ঢেলে দিয়ে যেত আরো আনতে। আমাদের দুই ভাইবোনের চেহারা ঐ মূহুর্তে যদি কেউ দেখে থাকে তো সে জানে সুখ স্বর্গে নয় এই মাটির পৃথিবীতেই আছে। আমরা বড় হবার আগেই ঐ গাছ ওরা কেটে ফেলেছিল। আজো আমি আর হাসান মনে মনে ঐ ফলগুলোকে খুঁজি।

পেটভরে তুঁতফল খেয়ে ভাইরা চলে যেত সিনেমা হলের দিকে বেলা ১২টা থেকে মর্নিং শো দেখবে বলে আর আমি চলে যেতাম মেয়েমহলের দিকে। ছুটির সকাল তখন কেবল শুরুর দিকে।

তেমনই এক ঝকঝকে সকালে সূর্য্যিটা সবে এঁকেবেঁকে মাথার উপরে গিয়ে বসবার জন্যে একটা যুতসই জায়গা খুঁজতে খুঁজতে আরো পশ্চিমের দিকে ঢলে যাচ্ছে। আর আমাদের কচি চামড়া ফুঁড়ে ঘামের রোঁয়া বেশ চিকন ধারায় অলরেডি ফুটে বেরুতে শুরু করেছে। এমন মধুর এক দুপুর লাগা সকালে দেখলাম নূর আসিয়া ছুটে আসছে। ওর পরনে কমলা রঙের কুঁচি দেয়া ইজের আর গায়ে একটা ভেজা গামছা এক হাতের নীচ দিয়ে বেরিয়ে অন্য কাঁধের উপরে ফেলে দেয়া। গরম এলেই নূর আসিয়ার এই বেশ। গরমে নাকি ওর অনেক কষ্ট হয় তাই ও তার গামছাটা ঘন্টায় ঘন্টায় ভিজিয়ে গায়ে মেলে দিয়ে রাখে। ও এসেই কলকল করে হাসতে হাসতে বলল, ‘অই তরা হোন, আইজকা রাইতে আমার বিয়া, আমি যামুগা, তগো লগে আর আহুম না।‘ শুনে সবাই হৈ হৈ করে উঠলাম, কছ কি! সেদিন সারাদিন আমরা নূর আসিয়াকে স্পেশাল ট্রিট দিলাম মানে গাছের কষ্টি পেয়ারাগুলোর মধ্যে যেটা একটু কম কষ্টি সেটা ওকে দিলাম, পুতুলের যে মালাটা ও পছন্দ করেছিল সেটা আমি ওকে অম্লান বদনে দিয়ে দিলাম। আমাদের মধ্যে প্রথম কারো বিয়ে হচ্ছে তা’ও দলের সব চেয়ে ছোট মেয়েটির। আমরা বিচ্ছেদ বেদনায় অস্থির আবার খুশীও। ‘বিয়ে’ শব্দটা শুনলেই তো কেমন খুশী খুশী লাগে, তাই না!

আমরা মুখহাত ধুয়ে পড়তে বসেছি। আশেপাশের বাড়ীতে কোরাস করে অন্যরাও পড়ছে।

শিরিনের বিয়েটা হল আমাদের গ্রুপের সবচেয়ে ম্যাচুউরড অবস্থায়, সতের বছর বয়সে। আমি তখন ক্লাস নাইনের ছাত্রী, দলের মধ্যে সবচেয়ে শিক্ষিতা। কাজে কাজেই সবার কাছে আমার দামটা একটু অন্য ধরনের। বৌভাতের পর শিরিন নাইওর এসেছে। আর আমরা সবাই ওকে ঘিরে বসে আছি বাসরঘরের মিঠে স্মৃতিকথা শুনব বলে। শিরিন ফিসফিস করে তখন বলছে, ‘এরপর সবতে বাইর হইয়া গেছে ঘর থিকা আর হেয় ঘরের দরজা দিয়া আয়াই আমার পাও ধইরা দিল একটা টান। আমি ডরে কাঁইপা উঠছি আর ওই করল কি পকেট থিকা একজোড়া সোনার বিছা আমার পাওয়ে বাইন্ধা দিয়া কইল, এমুন সুন্দর পাও জমিনে ফেলবা না। আমি সরমায়া গিয়া আস্তে কইরা কইলাম, তয় কই ফেলমু? ওই হাইসা দিয়া কইল, কেলা আমার বুকে ফেলবা, ফেইলা লৌরাইবা, ফালাইবা, যা মন তাই করবা আর তুমারে এমতে কইরা সোহাগ দিমু। কইয়াই হেয় আমার পায়ে একটা চুমা দিল আর আমার মেন্দি দেওয়া পাও ঘুরায়া ঘুরায়া দেখতে লাগল। তুবা তো আমার পাওয়ে নেলপলিস দিয়ে আট কইরা দিছে, সবই হেয় ভালা কইরা দ্যাখতাছে আর এই দিকে আমার মাথার ভিতর তখন কেমুন জানি করতাছে, সইল ঝিমঝিম করতাছে। আমি ঐ সুময় বহুত খুসী হইছি, কেলা কি তরা তো দেখছস তগো দুলাভাইরে। ক’ অক্করে ইলিয়াস কাঞ্চনের মতন লাগে না অরে দ্যাখতে?’ আমরা ‘হুঁ হাঁ’ করে উত্তর দিচ্ছি। আমাদের মধ্যে সবাই তখন বিবাহিতা, কেউ কেউ বাচ্চার মা। নূর আসিয়ার মেয়েই তো তখন আমাদের আঙ্গুল ধরে হাঁটে। শুধু আমারই তখনো বিয়ে হয়নি। আমি শিরিনের বাসরঘরের সিন্দুক খুলে অজানা জড়োয়াগুলো তখন লোভীর মত গিলছি, আহা বিয়ে না জানি কি জিনিষ! বাসায় ফিরেই তাই সোজা মার কাছে গেলাম। ঘরে তখন অন্য ভাইবোনেরা আড্ডা দিচ্ছিল। আমি মাকে গিয়ে বললাম, ‘আচ্ছা মা আমার যে বয়েস হচ্ছে তা তো দেখছ। কই আমার বিয়ের জন্যে তো তেমন কিছু করছ না, ছেলে দেখছ না! দেরী হয়ে গেলে ভাল ছেলে আর কি করে পাবে?’ মা তো মা, ভাইবোনেরা পর্যন্ত অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। হাল ধরার ব্যাপারে মা’র জুড়ি নেই, মা মুখ টিপে একটু হেসে বলল, ‘আরে তোর মনমত বর না পেলে বিয়ে দেই কি করে বল!’

বিয়ে পাগল মেয়ে ছিলাম বলেই কি না আমার বিয়েও হয়ে গেল ইন্টারমিডিয়েটের পর পর। আমার উপর দিয়েও অনেক জল গড়াল। এরই মধ্যে শুনতাম, শিরিনের সোনার দোকানী বরের আরো অনেকগুলো দোকান হয়েছে তাঁতীবাজারে তবু পর পর তিনটে মেয়ের জন্মদানের কারনে সে নিজেই কুন্ঠিত হয়ে আছে শ্বশুরবাড়ীতে। ওদের বাড়ীর উঠোনটা বিক্রি করে দিতে হয়েছিল ওর যৌতুকের যোগান দিতে। নিজের মেয়ে তিনটের কথা ভেবেই বোধকরি শিরিন পরবর্তীতে দারুন হিসেবী হয়ে উঠেছিল। সে কারনেই বড় হয়ে ওর দেখা কদাচিৎ পেয়েছি। তার তুলনায় বরং নুর আসিয়ার সাথে দেখা হত বেশ। ও তখন এক মেয়ে নিয়ে চলে এসেছে বাপের বাড়ী কারন ওর স্বামী ড্রাগ এডিক্টেড হয়ে পড়েছিল শেষের দিকে। এবং এক সময়ে মারাও গেছে। মুক্তি, শিরিন, রানী ওরা আমাকে পরবর্তীতে দেখলে যেমন জড়োসরো হয়ে পড়ত নুর আসিয়া তাদের তুলনায় ছিল স্মার্ট। আমাকে দেখলেই এক গাল হেসে দাঁড়িয়ে পড়ত আর হড়বড় করে অনেক কথা বলত। আমি আড়চোখে নুর আসিয়ার মেয়েটাকে দেখতাম, আহা কলা গাছের মত মেয়ে, বাড়ছে তো বাড়ছেই। আমি বলতাম, ‘নুর আসিয়া একে যেন অত তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে দিস না!’ শুনে নুর আসিয়াও শিউরে উঠে বলত, ‘ না না বইন দোয়া কইরো, আমি য্যান অরে তোমগো মতন শিক্ষিত করতে পারি।‘

পেরেছিল নুর আসিয়া, মেয়েকে কলেজ অব্দি পড়াতে। আরো হয়তো পারতো কিনতু মাত্র ৩৪ বছর বয়সে সুন্দর এক সকালে নুর আসিয়া হার্ট এটাক করে পাড়ি জমালো মৃত্যুর দেশে। পরবর্তীতে ওর মেয়েটির কি হয়েছিল জানিনা। জানতে খুব ইচ্ছে করে। হয়তো একদিন জানতেও পারবো তখন না হয় বাকী গল্পটুকু শেষ করবো। আজ এটুকুই থাক, কি বলো!

আজকের আশ্বিন

images

কালো কালো মেঘ;
মেঘের ভেতর থেকে
উঁকি দিল একটা কুকুর
পাশে ইতস্ততঃ ছড়ানো ঝিলিকে
খেঁকশেয়ালও একটা
মাথায় তাদের বজ্রমুকুট
মেঘের রং ছাই কালো
অথচ কিছুটা আলো
চমকে ছুটছে কই

হঠাৎ নেমে এলো মেঘ মাটিতে
ছিটকে উঠল জল, কাদা
পুকুরের পানি উপচে উঠছে
কাক, কুকুর, শিয়াল সমাহারে
অযাচিত বৃষ্টিমুখর দিনে

আকাশের জীবরাজ্য
পানিতে জলকেলি করে শরত দুপুরে।