শাকিলা তুবা এর সকল পোস্ট

অশ্বত্থের ছায়া

জলীয় সুতোর কারুশিল্পের সাথে
ছড়িয়ে আছে জল, মাছের শিকার
এ অদেখা এক জাল, মৎসচাষে সাধু বক
দুলে ওঠা নিয়ে সংশয় নেই হয়তো
জলভাসা মৃদু গোলাপী অহংকার
ডুবিয়ে রাখছে তোমাকে,
ডুবিয়ে রাখছে আমাকে।

পুতুল ছিলাম কোনোদিন হয়তো
যদিও উপাধিতে মারমেড অথবা রাজকুমারী
মূলতঃ ছিলাম সুঁই
ফোঁড় দিয়ে অন্যের জীবনপ্রণালী গেঁথে দেয়া।
সূঁচের উপরেই নাচগানের নকশী
নাচো পুতুল, নাচো
বার্বির উঁচু বুক সাজাবে মিহিন সুতো।

অতঃপর বাম স্তন কেটে নিয়ে সুখের মহড়া
সাইক্লোনের মূল লেজুড়ের খোঁজে
ছটফটিয়ে আরো বুনো হওয়া
আরো উড়িয়ে নেয়া বিজনের ঘর।
উপরে উঠে গেছে পরিধি
যাকে তুমি কুঞ্জবন ভেবেছিলে
সে আসলে হাওয়ার খেলা।

ভরকেন্দ্র

sha

সেই লম্বা ছায়া ততক্ষণে বুক সমান
পাশের ঘরটা ফিসফিস করে উঠল
কিছু আলো কিছু ছায়া
ত্রিরৈখিক

এক যুবক মধ্যমার যুবতীকে দেখে
চোখ ওঠে, চোখ নামে
নারীকণ্ঠ মৃদু লয়ে ঝরে,
‘জানো আমার ভীষণ জ্বর
প্রেমে তাপে পুড়ছিলাম অনর্গল
এখন শরীর বইছে না।’

ছেলেটা নিজের মমতা দুইহাতে মেখে নেয়
কিছুটা ছুঁড়ে দেয় প্রেয়সীর বুকে
ঠোঁট কামড়ে সব জ্বর খেয়ে নেবে, বলে সে
যদিও ছেলেটি নিজেই জ্বরাক্রান্ত!
নারী কেঁদে ওঠে, ‘যদি কোভিড হয়ে থাকে? যদি মরে যাই দুজনে?’
প্রেমিক তখন নরম একস্বর। উদাস হয়ে বলে, ‘মরে যাব।’
ব্যস অনেকক্ষনের নীরবতা। তারপর স্বগতোক্তি। বলে,

‘শোনো মরতে চায়না এলিট শ্রেনীর লোকজন। তুমি আর আমি সাধারণ। আমরা মরে যাব নির্ভয়ে কেমন!’

নারী মানে না। ওরা সাধারণ? প্রেম সাধারন হয়?
যারা ভালবাসে তারা কক্ষনোই সাধারণ নয়, হতে পারে না।

আজকাল পদ্মাসেতুর কারণে কারা যেন ফানুস উড়িয়ে রেখেছে আকাশে
আজকাল জ্বর প্রেমকে আরও অর্থবহ মাত্রায় উন্নীত করে

তিনি পঁয়তাল্লিশ, নারীটি মধ্যমা
অনেক অমিল তবু মিল
দুই আকাশ নীচে নেমে আসছে ক্রমশ:
লম্বুবিন্দু থেকে জ্বর ত্রিভুজাকৃতির ক্রমশঃ
এবং নিয়তি অমোঘ।

আকাশ ছোঁয়াও মেঘের ওপার থেকে

1-12

পুষ্প চয়নকালে ওভাবে কেন মেলে দিলে
পাঁপড়ি; সুনয়ন, সুলোচনা?
দৃষ্টি থেকে বয়ে গেল জোর বাতাস
তপ্ত কেমন, কেমন আধবোজা
অমন ঠোঁটের কাছে জীবন নির্বাস দেয়া যাক
নাকি ওই চোখের সামনে পৃথিবীও তুচ্ছ!

এমনি করে হবে একা যে দিনগুলোতে
ডেকো ঝড়, উতল তুফান
অযথা যুদ্ধে হয়ো পরাজিত
সবশেষে ক্লান্ত পৃথিবীতে
প্রোথিত হবে শান্তির ব্রজবীজ
হোক সেটা প্রেম অথবা প্রেমহীনতার।

র্নি‌+বাসি+অন

শব্দের পর শব্দ পেরিয়ে
যে গাছটির কাছে এসে দাঁড়িয়েছো
তার পাতাগুলো ঝরে গেছে আগেই
তুমি স্রোত খোঁজো
অথচ তোমার নদী লুকিয়েছে পাথরের খাঁজে

মানুষ অতীতে বাঁচেনা
তবু কত নির্ভয়ে অতীত বসে থাকে
ঘিরে থাকে চারপাশ
ঘাসের উপর বসে থাকা ফড়িং
তুমি দেখলেই না

ওই উঁচু প্রজাপতি সুখ দিয়ে যাক
তন্দ্রা নামুক চোখে
এর বেশী তুমি নিজেই চাওনি তো
অথচ চাইলে তিনটে বর দিত দেবী
অথচ এখন আমরা সবাই নির্বাসনে।

শেষ সুযোগ

একটা সুযোগ তুমি চাও শেষবারের মত
পেতে দাও হাত ক্ষুধিত ভিক্ষুক হয়ে
আমি আরেকবার পৃথিবীর সেরা দাতা হই,
তোমায় পরিত্রাণ দিই নরক যন্ত্রনা থেকে।

কত পথ ঘুরে পাইনি তোমার দেখা
ক্লান্ত পায়ের পাতায় আর ঘুম নামেনি তেমন
অভিমান কখনো ক্রোধ হয়ে যায় সবে জানলাম
অবাধ্য মন অপেক্ষার জানালায় তবু রয় দাঁড়িয়ে।

ক্ষমা করতে হলে ভুলবার মত মনোবল চাই
গোধুলির ঐ বারান্দা কখন ভুলেছি কে জানে
এখন শুধু নির্ভেজাল অপেক্ষারা কথা বলে একটানা
কি করে আরো নমনীয় হতে হয়, দীক্ষা নিই।

তুমি এসো, আমি পৃথিবীর সেরা দাতা হই,
তুমি এসো, তোমায় পরিত্রাণ দিই নরক যন্ত্রনা থেকে।

অস্থির

images

যতবার কাছে আসো
বুক উঁচু হয় প্রলম্বিত শ্বাসে
এক চুমুতে মুখামৃতও টেনে নাও
ফিরে আসে প্রাণ দেহে
ফেরে মন নিজ বলয়ে

চলে যাও যতবার
অবাক হয়ে রই
খুঁজে ফিরি আরো কত ছিল ভুল
উপোস্য জীবনে থাকব আরও অভুক্ত?
আরো নতমুখী?

সমর্পণ জানেনা বি-জাতের ভাষা
দুঃখ নয়, ক্লান্তি নয়, বিষাদ নয়
চুল থেকে নাভিমূল পর্যন্ত
প্রেম কোনো ভাষারই শিক্ষা দেয়
কাম নিয়ে তাই বুক খুঁড়ি যতবার
উথলে ওঠে নদীজল ঘোলাই বারংবার।

নয় ভাবনার ছয় কথা

নয় ভাবনার ছয় কথা


কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে নিজেকে নিরপরাধ প্রমান করবার ব্যার্থ চেষ্টা নিয়েও দেখি কোথাও যেন জেগে উঠছে নতুন চর। চরের দখলদারিত্ব নেবার সৎ সাহস নেই বলেই এড়িয়ে যাচ্ছি এই শোকবার্তা। আমরা মানবিক নই। এখনও ভয় পাই সামনে এগিয়ে যেতে। একজন ঋষি অনেক আগেই বলেছিলেন, ‘পেছনে তাকিয়ো না। যারা তাকায় তারা পাথর হয়ে যায়।‘ হয়তো তাই নিজের পাথুরে অবস্থান নিয়ে গর্বিত হয়েও কাঠাগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকি ঠাঁয়। সদা হাস্যময় আছি বলে কেউ জানেনা আসলে আমি কতটা স্থবির!


বিকেল বেলায় লনের দোলনাটা নড়ে উঠলো। বসে আছি রোদ্দুরহীন এক জনপদে। এখানে পাহাড় নেই, পাহারা আছে। পাহাড় ঠেললেও সরে না, পাহারাও ঠেলে সরাতে পারছি না। সামনের আমগাছের ডালটাকে একমনে চিরে যাচ্ছে বোকা কাঠঠোকরা। প্রজাপতির নামে হুলিয়া জারি হয়েছে। মৃত্যুর পরোয়ানা নিয়েও তাই বাতাসের সাথে যুদ্ধে নেমেছে। আমি একহাত দূরে বসে নামতা মুখস্থ করে যাচ্ছি অনর্গল—দুই একে দুই, দুই দুগুণে ছয়।

(দুই একে দুই, দুই দুগুণে ছয়
হিসাব মেলেনি তো?
বলবে দুই, দুই চার? কিনতু—
তুমি-আমি এক হলেই সংসার
দু’টো ফুটফুটে শিশু
এখনো বলবে দুই দুগুণে ছয় নয়?)


ভুল করিনি, ভুল আমার হয় না। নির্বাচনে কারচুপি না হলে আমলাতন্ত্র নিয়ে কথা বলা যেত। রাত নামলে কিছু তারা চিনিয়ে দেব। যেসব তারারা এক সময় সারারাত ঝগড়া করতো আজ ওরাও কেমন নিষ্প্রভ হয়ে আসছে। আসলে মনের মত মন না হলে বিবাদেও মন ভরে না।

তোমরা কি ভাবো আমার শরীরের এই কাঠামোর ভেতর নির্জিব কোনো প্রেত বসত করে? আমার তো মনে হয় এটা শ্মশ্বান ঘাট।


এখন লিপস্টিক বিষয়ক উপাখ্যান লিখতে বসিনি যে রক্ত আর রঙের ফারাক বুঝব না। আমার তো মনে হয় সবটাই চোরাবালি। ডুবে ডুবে জল খাওয়া আর লুকিয়ে চুমু খাওয়া খুব মিষ্টি। অনশন ভেঙ্গে জল খাওয়া যায় বৈ কি! চুমু খেলেই কেউ কেউ চোখ ঠেরে চায়, যেন এসবে কত্তো অপরাধ। ঠোঁট তো মাটির ঘড়া নয় যে ভেঙ্গে যাবে। ঠোঁট হলো অথৈ সাগর। অনশন ভাঙতে চাইলে এর চেয়ে মিষ্টি আর কি আছে, বলো!


এবারের বৈশাখীতে নাগরদোলায় চড়া হলো না, হয়নি গত ক’য়েকটি বছরও। বয়স বাড়ছে না কমছে এ নিয়ে যেমন বিতর্ক আছে তেমনি সামনে আর কতগুলো জ্যৈষ্ঠি স্মৃতিময় বাহারী রঙ্গে উল্লসিত হবে এ নিয়েও কম দ্বিধা নেই। চলন্ত ট্রেনের পেছনের সিটে বসে চলে যাচ্ছে সময়। আয়নায় শোকগাঁথা লিখে রাখছি। আজ থেকে পাঁচবছর আগেও এত কুঞ্চন পড়েনি ত্বকে। ঠিক এইমূহুর্তেও যেমন ঝরে গেল ত্বকের আরেকটি কোষ। পাঁচবছর পর হয়তো আবার টের পাব এই দিনে কেমন করে তার মৃত্যু হয়েছিল। আজকের দিনের জন্যে এটিই ছিল সর্বশেষ শোক সংবাদ।


একটা মানচিত্র এঁকে দেবে? এতে থাকবে লোনা জল, সতেজ চা-গাছ আর কিছু জ্যামিতিক বিন্যাস। এই ধরো ত্রিভূজ, বৃত্ত আরো কি সব। একটা বন্য শুকরও দিতে চাও? দাও তো! কিছুই ফেলে দেব না। ভয়াবহ কিছু চিত্র ছাড়া একটা দ্বীপ পরিপূর্ণ হয় না। এসো তবে দ্বীপ বিষয়ে ভাবতে বসি। কথা ছিল এখানে শুধুই আমাদের বসবাস হবে—তুমি আর আমি। সমুদ্রের নীচ থেকে পম্পেইয়ের ধ্বংসাবশেষ উঠে আসলে আমরাও হিসাব দিয়ে দেব কতটা পেয়েছি বা পাইনি। পরিপূর্ন মানচিত্রে কেবল দু’টো পুতুল এঁকে দিও বেশ আয়েশে। তাহলে হিসাব হবে বরাবর।

কবিতা

তোমার পায়ের পাতা মুছে নেয়া এই ঢেউ
আর কক্ষনো ফিরবে না
ভাঙা ভাঙা বুদবুদ্ আর উদ্বেল হবেনা

ওই দূরে গাঙচিল পাখা ছুঁয়ে
দুএক টুকরো বাতাস তবু ছুটে আসে
এমনই এলোমেলো চুলে বারবার

পায়ের চাপে ফুটেছ যে বালুচিহ্ন
তার নাম গোলাপ সাগর হতে পারে
হতে পারে বুনো ঝাউয়ের ঝাঁঝালো দুর্নাম

এতকিছুর পরেও তুমি
সমুদ্র হতে পারলেনা রাশি রাশি
রয়ে গেল এখানে অদ্ভুত উপসাগর এক।

মালভূমি

maia

ভালবাসাহীন এক নদী পুড়িয়েছে বুক,
নারীর কাছে ঋণ রাখতে নেই জেনেও
টইটুম্বর দ্রাক্ষারস ক্ষরণের
সাক্ষ্য হতে চেয়েছে বালক
দাঁতেরা ক্রমশঃ বিপ্লবী হয়েছে
সুরা কামড়ে খাওয়া যায়না
চল্লিশ মোমের ক্যান্ডিলিয়ান থেকে
পান করা যায় আলো, শুধুই আলো
বোঝেনি পুরুষ, ভালবাসা কত ক্ষমাহীন!

ক্রিস্টালবলে দেখতে চেয়েছে সামনের দিনগুলো
যাদুঘোর এক নারীকে আলেয়া করেছে
ধাবমান স্বচ্ছতার দরজা অতিক্রমকারিনী
ভাষা রাখেনি কোথাও, যা সবার শোনার যোগ্য
ঘাসের কোমল আলপনায় এঁকে রেখেছিল চিহ্ন কিছু
সমুদ্রের গায়ে লেগে থাকা চাঁদের আহলাদে
যে নারী কেবলই পর হয়ে যায়
বালক ছুটেছিল নিজ বৃদ্ধকাল নিয়ে
সূর্যতেজে চোখ লুকায় হরিনী গাছের কোটরে।

অবরোহনরত পাহাড়ের কোনো ক্ষমতা নেই
অতীন্দ্রিয় মোক্ষপ্রাপ্তি আছে,
অবিনশ্বর নয় এই যাত্রা তবু
মোহাচ্ছন্ন দুষ্মন্ত যখন খুশী ছুটে যেতে পারে
ভীত বনবালাও বুঝি তখন সিংহী অথবা সংহারী!
ভালবাসা পোড়ায় যে চোখ তাকে রোধ করা যায় না
যেমন যায়না মরা নদীতে হঠাৎ নামা কল্পনার জোয়ার
শরীরী জেল্লায় নারীটি ক্রমাগত গিরগিটি হয়
সবজেটে রঙ ফিকে বাদামীতে রূপান্তর হতে থাকে।

প্রেম অধিষ্ঠাত্রি কবে করেছিল চুম্বন বালকের চোখ!
অন্ধ প্রেমে বেদীর উপর রেখেছিল নিজস্ব লেজ
দেবী! প্রেম শিখিয়ে এভাবে ছিনিয়ে নিতে নেই
সংগৃহীত শক্তি অপচয়ের হিসেব তবে এই?
তুমি হয়ে যাচ্ছ মরুভূমি
একফোঁটা জলও নিলে শুষে
এটুকুই ছিল যে দাতার সম্বল!
বালক ক্রিস্টাল বলে ফের খুঁজে পায় নদীটার মানচিত্র
যে দাঁতেরা সঙ্গ ছেড়েছিল তারাও কামড়ে ধরে রক্তাম্বরী আপেল।

ভালবাসাহীন এক নদী পুড়িয়েছে বুক জেনেও বালক
নারীর কাছেই ফিরে আসে বারবার ঋণী হতে
বিশ্বাস খুঁজতে ভ্যান গগের শহর থেকে
ছুটে আসে শত শত চিত্রশৈলী
উচ্চাভিলাষী সুতাগুলো বাঁধা পড়ে যায়
এক পুরুষ নারীর চোখের রেলিং টপকে খাদে নামে
খাদ তো আসলে নিরেট বোঝাবাহক
নারী-পুরুষের প্রেম সে দিব্যি গিলে ফেলে
ভালবাসা বুঝি ঝলমলে কোনো এক সন্ধ্যার
শুধুই ক্রন্দনরত একটি লহমার নাম মাত্র!

জলবাষ্প

540a

জলবাষ্প

যদিও জানি অবহেলা
ফুলকেও করে জড়
জীবনকে দেয় দুইমুখ
সাপের আদল
কিছু ঋণ রয়ে গেছে,
কিছু দায় যদিও
মনমেঘ সরালে চাদর
তোমার কাছেই যাব।

পথ, যা দিয়েছিলাম ফেলে
সে যেন গিয়ে মিশেছিল
তোমার নীরবতার পারে,
কিছু ভুল এখনো
পড়ে আছে ঐখানে
অবাক জোনাকীর ভিড়ে
তুমি ছিলে জানি তবে
বাঁশী যেন বাজে এইখানে আজো।

তোমার কাছে যাব বৃষ্টি এলে বা না এলেও।


অসুখ
আমি মৌয়ালি- আমি চাক ভাংবো,
তোমার ভূগোল থেকে পৌঁছে যাব আমি,
পৌঁছে যাব অন্য কোথাও

জেগে ওঠো প্রেম

আসো গন্ধম বৃক্ষের নিচে সংসার পাতি।

কবিতা

d92aa

দিনশেষে তুমি এক ডানাকাটা বিষণ্নতা
অপার্থিব জীবনের হাতছানি
বেলাশেষে তুমি কেউ নও
জানে রোদ জানে জল
শুধু জানলে না তুমি
শূন্যের ভেতর হেঁটে যায়
রক্তমাংসহীন মানবী এক
সামনে শুধুই ধুঁ ধুঁ
ভালবাসো চাই না বাসো
খোলা মাঠই গন্তব্য
শূন্য এবং শূন্য
ওটাই ডেস্টিনি

দিনশেষে তুমি পদার্থের সংজ্ঞা ভুলে যেও
ভুলে যেও ভর
কেননা সবটাই অলীক
তুমিও যেমন…..

বিমূর্ত তেলচিত্র

KK_Obo

চোখের সামনে যে পেইন্টিংগুলো ঝুলিয়েছ
তোমাকে সে জন্যে ধন্যবাদ
এই যে নদী-ফুল-পাখি-সমুদ্র; অবোধ্য কিচিরমিচির
ভারী চমৎকার চিত্রক্ষমতা তোমার।

মানুষ; মানুষগুলোর কান, মাথা, নিতম্ব
কি বিচিত্র! কি অপূর্ব বিভ্রম!
শব্দশীল সব ধাতবের ঊর্ধে এর গন্তব্য
অদেখা মনের ছবি তুমি এঁকেছ এতটাই নিখুঁত।

আবারও বলি, ভারী চমৎকার চিত্রদক্ষতা তোমার
লোকে কত নামে ডাকে তোমাকে
আমি বলি, প্রভু হে; আমার আল্লাহ!

প্রণয়ে সন্ন্যাস

তোমার আমার অদ্ভুত দাম্পত্য
তাল লয়ে গড়িয়ে যায় যাদু হয়ে,
যাদুর রাতে
আলাপে বিস্তারে
ওরা বল্লো, নেটবার্তা!
কিনতু তোমার আমার জীবন প্রবাহ যেন
প্রাণপণ বেঁচে থাকা লড়াই

তুমি বলো, ‘সিঁড়ি থেকে পড়লে?
আহা চোট পেয়েছো?’
আমি জলে ভিজে জুবজুবে
চোখ থেকে হৃদয়ে
মনে মনে বলি, পড়েছি আরও আগেই
হৃদয়ের কালশিটে এখনও তাজা

তুমি বলো, ‘স্বামী সন্তানের মুখে আজ কি তুলে দিলে?’
তুমি জানোইনা কতকাল আছি অভুক্ত
তুমি বলো, ‘দেখতে আসব।’
কাকে দেখবে?
হাড় পাঁজরের গিঁট ভাঙ্গা
শরীরের সব বাঁক মুছে যাওয়া
এ কোন সুচিত্রা সেন!
অন্তরীণ, অন্তরীণ….
বলো কাকে দেখবে তুমি, কাকে দেখতে চাও?

একেক রাত্তিরে আমাদের কথাগুলো
নেট প্রবাহে এভাবেই গড়িয়ে যায়
রাত থেকে ভোর
অদ্ভুত দাম্পত্য কোলাহল তোলে
রক্তে শুধুই

অথচ এখানে তুমি নেই, আমি নেই
সবটাই ফাঁকি যেন
অথবা সবটাই যেন বেঁচে থাকা!

সেরাপিস অনুলিপি

হস্তরেখার চিহ্ন ধরে জ্যোতিষী খুঁজে দেখলেন
পাবলিক বুথ। আমাদের করমচা ডালের আগায়
অস্ত যাওয়া ফড়িং
তখনো বিদায়ের লালরবি গায়ে মেখে
ক্রিং ক্রিং বেজে যাচ্ছে অনেকদূর।

অত্যাচারের স্পষ্ট রঙ বালুঘড়ি ছিটকে ছুটে এল
ফড়িং এর গালে, চিকচিকে পানিতে
এরপর নাকে চোখে মুখে
তিনি কিনা এ সময়েই খুলে ফেললেন
আলেকজেন্দ্রিয়ার জ্বলন্ত কিছু অংশ!
কপালের আধপোড়া গ্রন্থ খুলে তিনি পড়েও ফেললেন
প্রাচীন সব পূর্ণিমার চাঁদ আর আধা জোছনার গল্প।

ফড়িং উড়ে গেছে করতলের চিহ্ন ছেড়ে
টেমপ্লেট মাপছে জ্যোতিষীর চাষযোগ্য বিজ্ঞাপন,
‘এখানে হস্তরেখা গণনা করা হয়’!
না জানি পৃথিবী কতকাল ধরে
এমন উল্টো ঘুরছে, টেরও পাইনি।

কোন এক অদেখা রাজকুমারকে

নদীর এত কাছে কেন দ্বিপ্রহরের মাঠ?
জল নেবে আজন্ম তৃষ্ণার?
তোমার জুতোগুলো অতিথি পাখির ডানা
আমাকে গ্রহন করো
আমিই টলটলে নদীজল,
তৃষ্ণা জাগাতে বা মেটাতে জুড়ি নেই।

অনেক ঝড় ছেড়ে গেলে ত্রিসীমানা
দেখো, একবার নজর করে দেখো
জলের ভেতর স্বচ্ছ ফটিক
বরফগুলো যেভাবে উড়ে এসেছে এত পথ পাড়ি দিয়ে
দেখো, উড়ে যেতে যেতে নদী
তোমার পায়ে শাপলামালা জড়িয়ে দিয়েছে।

কোন গ্রীষ্মসন্ধ্যায় আমরা বসে থাকব পাশাপাশি
চলে যাবার কথা ভাববার আগেই
টুপ করে জলে নেমে আসা সূর্য অতল
তোমাকে কেড়ে নিতে চাইলে পর
আমি নিজেকে ছড়িয়ে দেব অনুপম নীলে
তুমি শুধু গ্রহন করো এই সমর্পণ।