যাযাবর জীবন এর সকল পোস্ট

কষ্ট রঙের কষ্ট

কষ্ট রঙের কষ্ট

কত রকম কষ্টই না দেখি চারিদিকে
কত রঙের, কত অনুভবের!

কারো অর্থের কষ্ট কারো স্বার্থের
কারো ভালোবাসার কারো ভালোবাসাহীনতার
কারো প্রেমের কারো বিরহের
কারো ঘরের কারো বাইরের
কারো সংসারের কারো ভাঙনের;

কত রঙের, কত অনুভবের কষ্টই না ছড়িয়ে আছে চারিদিকে!
আমার নিজেরও তো কিছু গোপন কষ্ট আছে
তবে সে কষ্টের রঙ নেই
আমি নাম দিয়েছি কষ্ট রঙের কষ্ট,
আমারও কিছু গোপন অনুভূতি আছে
তবে নেই অনুভূতির বড়াই
আমি নাম দিয়েছি একান্ত গোপনানুভুতি;

কষ্ট রঙের কষ্টগুলো দেখতে দেখতে আমি কেমন জানি রঙহারা
একদিন অনেক অনেক নীল দেখতে দেখতে আমি ঠিক আকাশ হয়ে যাব,
তারপর ঐ দূর আকাশের ওপারে, যেখানে পৌঁছতে হয় নীলঘুমে;

নানা কষ্টের অনুভূতিগুলো সইতে সইতে আমি অনুভূতিহীন
একদিন অনেক অনেক গোপনানুভুতি সইতে সইতে আমি ঠিক মাটি হব,
তারপর মাটির ঘরের অন্ধকারে, স্বপ্নহীন কালঘুমে।

একাকীত্ব

একাকীত্ব

একাকীত্বের সমস্যা কি জানিস?

একাকীত্ব তোকে বিবেকের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবে
বিবেক তোকে অতীত মনে করিয়ে দেবে
সাদা সুখের অতীত নয় কিন্তু!
ভয়ঙ্কর দুঃসহ কালো অতীতগুলো,
তারপর বিবেক তোর ভেতরের প্রত্যেকটা অন্ধকারের গল্প বলে তোকে কামড়াবে, খামচাবে
আর অসহায় তুই রক্তাক্ত হতে থাকবি নিজেতে নিজে;

আমার বড্ড ভয় হয় একা হতে
দিনে কিংবা রাতে
অমাবস্যা কিংবা পূর্ণিমাতে,
অথচ দেখ!
আমাকেই সামলাতে হয় একাকীত্ব
বড্ড একা হয়ে একলা হাতে;

আর চুপচাপ একাকীত্বের প্রতি মুহূর্তে রক্তাক্ত আমি,
নিজেতে নিজে।

কেও কথা রাখে না

কেও কথা রাখে না

সূর্য সবসময়ই দিনের
আমি রাত
তোর আর আমার মাঝে ভীষণ ফারাক

তবুও কাছে এসেছিলি
ভালো কি বেসেছিলি?
আকাশের সাথে সাগরের মিতালি শুধুই নীলে
সাগর কবে আকাশ ছুঁতে পেরেছিল রে?
তোর ঠোঁট ছুঁয়ে ছুঁয়েও আমি কি ছুঁতে পেরেছি তোকে?
বিচ্ছেদ কি বলে?

সেদিন আমি কি বলেছিলাম মনে আছে?
যেদিন শুয়েছিলি বুকের ওপর আলুথালু চুল মেলে;
বলেছিলাম,
একদিন খুব তাড়াতাড়ি
তুই হারিয়ে যাবি সূর্যের ওপারে;
যদি কখনো আমার কথা মনে হয়,
যদি সময় পাস,
একটি দুটি চিঠি লিখিস
জ্যোৎস্নার অবসরে;

ভ্রুকুটি হেনে বলেছিলি, হারাবি না;

সেও তো অনেক বছর পার হয়ে গেছে
তুই এখন কোথায় রে?

কেও কথা রাখে না
সে আমার খুব ভালো করেই জানা,
সেদিনের তোর ভ্রুকুটি ছিল আবেগের কথা
আবেগ দিয়ে জীবন চলে না;

তুই চাঁদনি
আমি অন্ধকার রাত
তোর আর আমার মাঝে বিস্তর ফারাক

এখনো কোন কোন চাঁদনি রাতে
মাঝে মাঝে মন শ্যাওলা হলে
খুব জানতে ইচ্ছে করে
কোথায় আছিস
কেমন আছিস রে!

হাস্নাহেনার গন্ধ

হাস্নাহেনার গন্ধ

একদিন সাদা শাড়ি পরেছিলি
স্বচ্ছ সাদা
আমরা আকাশ ভ্রমণে গিয়েছিলাম
স্বপ্ন ভেলায়;

মেঘের গাড়িটা আমাদের নিয়ে গিয়েছিল ঐ দূরে
মেঘের ওপারে,
সারাদিন সূর্য ভ্রমণ শেষে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসতেই
এত্ত বড় একটা চাঁদ আলো করে ছিল আমাদের
আর ঝুম জ্যোৎস্না বৃষ্টি ভিজিয়ে দিল তোকে
ভেজা শাড়িতে তুই বড্ড লজ্জা পেয়েছিলি সেদিন,
তোর লজ্জায় মেঘ গাড়ি আমাদের নামিয়ে আনলো মেঘের দেশে;

ও কি!
এখানে তো বৃষ্টি বিলাস
ভিজে চুপচুপ তুই
ভিজে চুপচুপ আমি
আর লজ্জায় আনত তোর চোখ,
আমি চোখ চুমে তোকে জড়িয়ে ধরতেই তুই এলিয়ে গেলি আমার বুকে
কোথা থেকে যেন হাস্নাহেনার ঘ্রাণ ভেসে আসছে শাড়ির প্যাঁচ খোলার সাথে সাথে
তারপর ডুব সাঁতার প্রেম বিলাসে;

হঠাৎ করেই ঘুম ভেঙে যেতেই স্বপ্ন মিলিয়ে গেলো অন্ধকারে
কোথায় সাদা শাড়ি? চোখজুড়ে কালো রাত,
শুধু হাস্নাহেনার গন্ধ জড়িয়ে আছে সারা মন জুড়ে;

পাশের বাড়ির টবে ঝাঁপিয়ে হাস্নাহেনা ফুটেছে।

কাঁচের হৃদয়

কাঁচের হৃদয়

কাঁচ দিয়ে তৈরি নয় হৃদয়
তবুও ভাঙে যখন তখন,
ভাঙনের শব্দ নেই কোন
শুধুই ক্ষরণ;

ব্যথা দেয় খুব আপনজনেরা
জেনে ও না জেনে
বুঝে কিংবা না বুঝে
কখনো ইচ্ছাকৃত কখনো ভুল করে,
আমার ঠোঁট হাসতে থাকে, ব্যথা গিলে;

কোথায় যেন কে কাঁদছে,
ডুকরে,
বুকের খুব গভীরে;
শুনতে পাচ্ছ?

যে ভালোবাসে সেই অনুভূতির সাথে খেলে;

আপনজনেরা?
প্রতিনিয়ত অনুভূতির সাথে খেলা তো ওদের অধিকার!
আমার ঠোঁট হাসে, হো হো করে;

হৃদয়?
আরে, ও তো মাংসের দলা
ভেঙে গেলে তবেই না কান্না!

কি?
শব্দ শুনতে পাও নি?
বুকে কান পাততে পারে কজনা?

বার্তা চিঠি

বার্তা চিঠি

একদিন অনেকগুলো গল্প হয়েছিল
একরাতে অনেক কবিতা
চায়ের কাপে অনেক চুমু
ঠোঁট ঠোঁটে অনেক ভালোবাসা,
তারপর অনেকগুলো দিন কাটলো
অনেকগুলো রাত
কথা ছিল অনেক জ্যোৎস্নায়
হাতে রাখবি হাত;

সে কত দিন আগেকার কথা!
মনে আছে?
আচ্ছা! সময়ের ডানা আছে রে?
কত কত জ্যোৎস্না পার হয়ে গেছে!
চোখের নিমিষে,
এখন আর হিসেব কষি না;

একসময় মাঝে মধ্যে চিঠি লিখতি
নীল রঙের খামে
ইনিয়ে বিনিয়ে তোর নতুন জীবনের কথা নতুন গানে,
তারপর যুগের বদলে চিঠি ছোট হতে হতে
মোবাইলে এস এম এস
তারপর?
কত দিন হয়ে গেলো!
মোবাইলটাও নিস্তব্ধ হয়ে গেছে;

আমি কয়েকবার চেষ্টা করেছিলাম
তোকে ফোন করতে
অসহায় রাতগুলোতে,
ওপাশ থেকে উত্তর এসেছিল
– এ নাম্বারটি আর ব্যবহৃত হচ্ছে না,

কেমন আছিস রে?
মাঝে মাঝে খুব জানতে ইচ্ছে করে;

শরীর কেমন রে তোর?
মন?
চিঠি পাইনা অনেকদিন
মন উচাটন;

জ্যোৎস্নার ডানায় উড়ছে চাঁদ
নিদ্রা কোথায়?
পুরছে রাত;

মন কেমন রে তোর?
শরীর?
চিঠি পাইনা অনেকদিন
মন স্থবির;

আমি কিন্তু বাসার ঠিকানা বদলাই নি রে,
যদি কখনো ডাকপিয়ন নীল খামের চিঠি হাতে ফিরে যায়!
মোবাইল নাম্বারটাও আগেরটাই রেখে দিয়েছি
এস এম এস এর একটি ছোট্ট বার্তার অপেক্ষায়।

প্রথম দেখা

প্রথম দেখা

সেদিনটার কথা মনে আছে তোর?
ঐ যে, যেদিন আমাদের প্রথম দেখা!

আমি তোর অপেক্ষায়
ক্ষণে ক্ষণে পথের দিকে চোখ যায়
দ্বিধাহ্নিত অপেক্ষার প্রহর কি আর সহজে কাটে?
দুপুর গড়িয়ে বিকেল প্রায় হলো
আমি তখনো ঠায় দাঁড়িয়ে, রাস্তার ধারে
আমাদের পূর্ব নির্ধারিত জায়গায়;
আজকালকার মত মোবাইলের প্রচলন আর কোথায় ছিল তখন?
যোগাযোগ বলতে তো লাল রঙের এনালগ টেলিফোন
সেও কত লুকোচুরি সাবধানে!

অনেকক্ষণ অপেক্ষার বাদে একটা রিক্সা এসে থামলো
রিক্সার হুড তোলা,
রিক্সা থামতেই আমি দুরু দুরু বুকে এগিয়ে গেলাম
ধবল পায়ে লাল টুকটুকে ফিতা বাঁধা একপাটি হাই হিল জুতো মাটিতে নামলো
তারপর আরেক পা, নূপুর পড়া
তারপর লাল চাদরে ঢাকা পুরো অবয়ব
বুকের মধ্যে কোথায় জানি একটা কষ্ট কষ্ট অনুভব!

কোথায় জানি জলতরঙ্গ বাজলও, এই যে মিস্টার হ্যালো!
কি হলো?

তোর ঠোঁট নড়ছিল, আমার চোখ কমলার কোয়ায়
তোর কাজল চোখ, আমার দীঘির জলে শ্যাওলা সাঁতার
তোর ভ্রু নাচানি, আমি রংধনু দেখছি
তারপর তুই ফিক করে হেসে দিতেই আমি ডুবে গেলাম তোর টোলে;
সেই যে ডুবলাম! আর ভাসতে পারলাম কোথায়?

বড্ড অদ্ভুত ছিল রে সে দিনটা
আমাদের প্রথম দেখা
আর সেই সেদিন থেকেই মন কবিতার খাতা;

আমি কখনো কবিতা লিখি নি
খাতার পাতায় পাতায় শুধু তোকেই এঁকেছি,
ভোরে ও সকালে
দুপুর কিংবা বিকেলে
সন্ধ্যা আর রাতে
ঘুম ও স্বপ্নে
সূর্য আর চাঁদে
দিন রাত্রির প্রতিটা প্রহরে
যখন যেভাবে তোকে দেখেছি;

কবিতা সামনে রেখে কেও কি আর কবিতা লিখে?
আমি লিখি তোকে।

ভালোবাসার হিবিজিবি

বিরহ তো অন্ধকার
আমার চোখেতে তাপ
ভালোবাসায় তোর চোখে কেন?
বাষ্প বাষ্প ভাপ

চাঁদ জানে না চাঁদনি কেমন
আলো বিলিয়ে যায়
তুই ছাড়া আমি অমাবস্যা
মন অন্ধকারে ছায়

জল জানে না জলের মর্ম
বয়ে চলা সারাক্ষণ
‘তুই’ নদীতে আমার ভেসে চলা
তোতেই আমার মন

শূন্য চোখ তাকিয়ে থাকে
শূন্যতার দিকে চেয়ে
তোকে ছাড়া আমি শূন্য
ভালোবাসতে গিয়ে

এই যে এত এত ভালোবাসা!
কবিতা আর গান গেয়ে
একবার মনব্যাথা সারিয়ে দিয়ে যাস
আদর চুমু খেয়ে

স্পর্ধা

যতক্ষণ পাশে তুই ততক্ষণ ভরসা
আছে, কেও একজন আছে পাশে,
দিনের বেলায়
রাত বিরাতে
সুখে দুঃখে
ঘুমে জাগরণে
অসুখে বিসুখে আছে পাশে;

মাঝে মাঝে বড্ড বেশি আশাহত হয়ে যাই
মাঝে মাঝে মনে হয় ফুরিয়ে এলো সময়
মাঝে মাঝে ঘুমের মধ্যে দমবন্ধ লাগে
অপ্রতুল হয়ে ওঠে বাতাস
শ্বাস নিতে খুব কষ্ট হয়
মনে হয় এই বুঝি শেষ হলো সময়,
তখন, ঠিক তখনই একটি স্পর্শ মাথার ওপর
একটি হাত বুকের ওপর হাত বুলায়
অসম্ভব মায়ায়;
নিমিষেই আবার ফিরে আসি আমি
জলের গভীর থেকে
অচেনা পৃথিবী থেকে আমার পৃথিবীতে;

এই স্পর্শকে কি বলে?
শুধুই মায়া!
শুধু ভালোবাসা!
উঁহু,
মৃত্যুর গহীন কুয়ো থেকে যে স্পর্শ আমায় ফিরিয়ে আনে
তাকে পৃথিবীর কোন অনুভূতিতে ফেলব আমি?
আমার স্পর্ধা কোথায় তার বিনিময় দেবার?
তার থেকে এই ভালো,
তুই আমার “তুই” হয়ে থাক
শরীর ও মনের মাখামাখি স্পর্শে
আদরে, ভালোবাসায়, জীবন ভর,
আমাতে আর আমাতে মাখামাখি হয়ে।

খারাপ অভ্যেস

খারাপ অভ্যেস

চোখ আলো চেনে, চেনে অন্ধকার
মন তো দিন আর রাত চেনে না রে
মন চেনে তোকে,
মনের যখনই ইচ্ছে হয় তখনই মন তুই
যখন তখন মনে এসে বসাটা বড্ড খারাপ অভ্যেস তোর;

দিনের অভ্যেস আলো
রাতের অভ্যাস কালো,
পূর্ণিমা?
সে তো মাসে একবার
ঠিক তোর মত,
উঁহু!
তুই তো আরও এক কাঠি সরেস
ভালোবেসে কাছে আসিস বছরে এক আধবার
আর বাকি সময় আমার তারা গোনা,
তুই আমার বড্ড খারাপ অভ্যেস, ভালোবাসায় বোনা;

ভালোবাসার খুব বেশী কাছে আসতে নেই
আমিও দূরত্ব বজায় রাখি অনেকটাই,
খুব বেশী কাছে আসলে একসময় ভালোবাসার পরত খোলা শুরু হয়
তারপর পেঁয়াজের খোসার মত খুলতে খুলতে এক সময় ভালোবাসাটাই নাই হয়ে যায়;
অনুভূতিহীন শুধু তোকে দিয়ে কি করব রে আমি?
কিংবা ভালোবাসাহীন আমাকে নিয়েই বা কি করবি তুই?
তার থেকে এই বেশ আছি!
অনুভূতির পরতে পরতে ভালোবাসা জড়ানো
আর মনের পরতে পরতে তুই
বছরে দু একবার দেখা!
তাতেই সই!
একটু চোখের দেখা, একটু গালের ছোঁয়া, একটা দুটো চুমু
তারপর আবার ভালোবাসার বিরহ,
বছরে বারোটি চাঁদ গুনব প্রতি জ্যোৎস্নায়
একটি দুটি কবিতা লিখব যখন মন চায়
আর বাকি রাতগুলোতে ভালোবাসার তারা গুনব একটা দুটো করে
এখানে নির্ঘুম চোখে আমি, ওখানে ভালোবেসে তুই;

জানিস! মাঝে মাঝে বড় অসহায় লাগে
যখন তুই হুট হাট চাঁদ হয়ে আসিস মধ্য দুপুরে
সূর্য থেকে জ্যোৎস্না ছাঁকার আমার কি সাধ্য আছে বল?
ভালোবাসিস?
বড্ড বেশী?
তবে একবার চিৎকার করে বল!
তারপর ভরা জ্যোৎস্নায় দুজন অন্ধকার হই চল।

অন্ধকারের চাঁদ

অন্ধকারের চাঁদ

জ্যোৎস্না রাতে কি আছে রে?
ঘুম কোথায় দু-চোখে?
মন খারাপের বৃষ্টি ঢল
কষ্ট কষ্ট বুকে

কেও তো আছে, চাঁদনি রাতে
আমার জন্য কাঁদে
খুঁজতে গেলেই পালিয়ে যায়
আকাশ হারায় চাঁদে

কে আছে রে তোর ভেতরে?
আমার জন্য কাঁদে
কখন তোকে ফেলেছি আমি?
ভালোবাসার ফাঁদে

কি আছে রে তোর ভেতরে?
মনটা আমার কাঁদে
অমাবস্যায় চাঁদনি খুঁজি
অন্ধকারের চাঁদে।

কিছু বলা, কিছু না বলা কথা

কিছু বলা, কিছু না বলা কথা

কত মানুষের সাথে কত কথাই না বলা হয়!
কত কথা রয়ে যায় মনের ভেতর;
কত কত কথা মনে আসে, বলা হয় না মুখ ফুটে
কিছু কিছু কথা খুব হঠাৎই বের হয়ে আসে মুখ ফস্কে
কথায় কথায় নিছক কথার পিঠে
যেগুলো আসলে মনের কথা না
তবুও মুখ ফস্কে হঠাৎ বের হয়ে আসা কথার কথায় সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায় মুহূর্তেই
অথচ মনের ভেতরের কথাগুলো কেও শোনে না, কেও বোঝে না;

তোর সাথে, তার সাথে, ওর সাথে কত কথাই না হয়েছে আমার, কথায় কথায়;
তোর সাথে, তার সাথে, ওর সাথে কত কথাই না রয়ে গিয়েছে মনের খাঁচায়!
ওরা ওরা তারা মুখ ফস্কে আসা কথা ধরে নি কখনো
কিংবা কখনো জিহ্ব পিছলে আসা কোন কথায় আঘাত পেলে সাথে সাথে বলে দিয়েছে
আমি সাথে সাথে ব্যাখ্যা দিতে পেরেছি, কেন বলেছি,
ভুল হলে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছি, সাথে সাথেই;

অথচ তুই?
মুখ ফস্কেছে তো রক্ষা নেই
কার সাধ্য আছে তোকে বোঝানোর?
কোন কবে কি এক কথা বলেছিলাম তা নিয়ে হাজার ইতং বিতং
কবে কখন কিভাবে কার দিকে তাকিয়েছিলাম তা নিয়ে কত শত রঙ ঢং!
মনে আছে?

আমি এর ওর সোজা কথাই বুঝি না মাঝে মাঝে
তোর এত বাঁকা কথা বুঝব কিভাবে রে?
অত বুদ্ধি কি আমার মাথায় ধরে?

অথচ দেখ!
আজ কোথায় তুই? কোথায় আমি?
কোথায় আমাদের সম্পর্ক?
আর কোথায় মনের অনুভবগুলো?
শুধুমাত্র কোন এক সময়ের জিহ্ব পিছলে আসা কথায় কথায়
ভুল করে মুখ ফস্কে বলে ফেলা কোন এক কথার পিঠে কথায়,
আজ দূরত্ব আমাদের মাঝে দূর, সুদূর;

আচ্ছা এত এত যে কথা বলেছি তোর সাথে!
কথায় কথায় একটা ছোট্ট কথা বলতে কিন্তু ভুলে গেছি
ভালোবাসি,
তোকে বড্ড ভালোবাসি
বড্ড বড্ড বেশী।

ভালোবাসার শেকল

ভালোবাসার শেকল

ভালোবাসা কারো জন্য ঘর
কারো জন্য শেকল;

তবুও মন চায় কেও ভালোবাসুক
কেও তো থাকুক জীবনে যার জন্য বেঁচে থাকা মধুর,
যাকে নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে ইচ্ছে করে
যাকে নিয়ে রোদে পুড়তে ইচ্ছে করে
যাকে নিয়ে জ্যোৎস্নাস্নান
যার কথাগুলোই মধুর গান;

আমি ভালোবাসতে জানি না
তবে ভালোবাসা বুঝতে পারি,
বুঝেই বা লাভ কি?
সবাই কি আর ভালোবাসা গ্রহণ করতে পারে?
আমার বড্ড এলার্জি ভালোবাসা ভাইরাসে
বড্ড শরীর কেমন করে
মনে রাত ধরে;

বিনিময় দিতে না পারলে কিছু গ্রহন করতে আমার বড্ড অস্বস্তি,
আর আর তোর ভালোবাসা?
বড্ড তীব্র রে
খুব যন্ত্রণা দেয় আমায়
কেন এত ভালোবাসিস বলতে পারিস?

ভালোবাসার শেকলে আমার বড্ড ভয়
তোর ভালোবাসায় খুব অস্বস্তি হয়;
আমার ধু ধু প্রান্তর, খোলা আকাশ
হু হু ঝড়, পাগলা বাতাস
গহীন বন, খাড়া পাহাড়
নীল সাগর, মন সাঁতার
ভালোবাসায় কে বাঁধবে আমায়?
সাধ্য আছে কার?

তবুও তুই বসে থাকিস আমার জন্য
ঠায় অপেক্ষায়,
আমার উড়াল ডানা একা একা দূর অজানায়।

মন ছুঁয়ে মন

মন ছুঁয়ে মন

ঐ যে বাতিগুলো দেখছিস!
ঐ যে অনেক দূরে;
অন্ধকার থেকে কি চমৎকারই না লাগে!
অথচ কাছে গেলেই মন হতাশ
বিজলি বাতির কি আর এমন বিশেষত্ব আছে বল?
প্রতিদিনই দেখছি ঘরে বাইরে;
ভালোবাসাটাও অনেকটা দূর থেকে দেখা ঐ সুন্দর বাতিগুলোর মত,
কাছে থেকে খুব ম্যাড়ম্যাড়ে, একঘেয়ে
তাই না রে?

হ্যাঁ বললি কি?
তবে কেন ভালোবাসিস?
বড্ড দুঃখ পেলাম রে,
আমি ভেবেছিলাম না বলবি;
কই আমার কাছে তো তুই প্রতিদিনই চকচকে নতুন
একেবারে আনকোরা
আমি প্রতিদিন তোকে দেখি মোড়ক খুলে খুলে, মনের আয়না জুড়ে
ভালোবাসা কখনো পুরনো হয় না রে;

এই যে ছুঁয়ে ছুঁয়ে থাকি তোকে, মন ছুঁয়ে;
বুঝতে পারিস?
পারিস না?

ধ্যাত!
তবে তো তুই ভালোবাসাই বুঝিস না,
তবে কেন ভালোবাসি বলে শুধু শুধুই মুখে ফ্যানা তুলিস?
ভালোবাসা মুখের বুলি না রে
ভেতরের,
অনেক অনেক ভেতরের অনুভব
তুই বুঝবি না;

আমি তোকে খুব ভালোই বুঝতে পারি
তুই শরীর ছুঁতে চাস, ভালোবাসি বলে
আমি ভালোবাসি মন ছুঁয়ে ছুঁয়ে
তুই আমায় বুঝিসই না,
শরীর ফুঁড়িয়ে যায় দুজন আলাদা হওয়া মাত্র
অনুভব? সে অনেক ভেতরে রে;
যেদিন মন ছুঁয়ে দেবে মন, সেদিনই ভালোবাসা হবে
আর নয়তো কাগজের আঁকিবুঁকি, নিছক কবিতা;

এই যে ছুঁয়ে ছুঁয়ে থাকি তোকে,
মন ছুঁয়ে;
যদি কখনো হারিয়ে যাই
সামলাতে পারবি নিজেকে?

সময়

সময়

সময়কে ধরতে পেরেছে কে?
ধরার আগেই সময় বয়ে গেছে, কালের বাঁকে;

আনন্দের মুহুর্তগুলো চোখের নিমিষেই উধাও
বেদনার সময়গুলো খুব ধীরে কাটে, তবে বয়ে যায়
শুধুমাত্র স্মৃতিগুলো রয়ে যায়,
সুখ, দুঃখ, আনন্দ, বেদনার সব স্মৃতিগুলো
মনের খাতায়,
মানুষের সাধ্য কি সময়কে ধরার?

তুই সময় ধরতে গিয়ে কান্না ধরেছিস
আমি অন্ধকার ধরতে গিয়ে রাত
ভালোবাসার কমতি ছিলো না কারো মনেই
তবুও কেও কারো ধরতে পারি নি হাত;

দেখিস! একদিন ঠিক আমরা সময় ধরব দুজনে
আর হারিয়ে যাব, কালের স্মৃতি হয়ে;
মাটির দুটি ঘরে দুজন গভীর ঘুমে
ওখানে নিশ্চয়ই সময় স্থির হয়ে রবে।