যাযাবর জীবন এর সকল পোস্ট

যদি মনে মন থাকে তবেই প্রেমসূত্র

যতদিন যৌবন শরীর আমার
যতদিন যৌবন শরীর তোমার
যতদিন যৌবন শরীরে প্রেম
তারপর দেখা যাবে, কে কার হলেম;

পুরুষগুলো বড্ড ছোঁকছোঁকে
যেখানে সেখানে শরীর শুঁকে,
ঘরে মহাপুরুষ সেজে থাকে
বাইরে এর ওর হাঁড়িতে শুঁকে
এক নারীতে সন্তুষ্ট কজন?
শুধুমাত্র মনে মন লাগিয়েছে যে জন;

মেয়েগুলো বড্ড ছটফটে
সেজেগুঁজে যেখানে সেখানে ছোটে
যতদিন ঘরের মানুষ যৌবনে টগবগ
ততদিনই স্বামীসুখে আহ্লাদে ডগমগ
স্বামীর যৌবন সবজি তো এখানে ওখানে ঘাটা
বোঝা যায় কার প্রেমেতে ছিলো কতটুকু আঠা;

যতদিন যৌবন
প্রেম আর প্রেম
তারপর দুজন কে কার হলেম?
যদি মনে মন থাকে তবেই প্রেমসূত্র
সকল প্রেমের উৎস
প্রেমে কামসূত্র।

ছবি: watercolor on paper by Mimo Sukh

শরীর সর্বস্ব জীবনের সমাপ্তিতে শব

একটা সময় শরীরটাই সব,
একটা সময় শরীরটা শব;

যতদিন শরীরে যৌবন
ততদিনই শরীর জুড়ে রিপুর আড়ত
শরীর সর্বস্ব জীবনে
শরীরটাই সব;

তারপর তো রোগ বালাই ব্যথা বেদনা
ডাক্তার ঔষধ চেয়ার বিছানা
অসহনীয় একাকীত্ব আর প্রহর গোনা
মাঝে মাঝে কিছু পুরনো স্মৃতির অনুভব;

একটা সময়, সময় থেমে যায়
একটা সময় চোখ অন্ধকার
তারপর এক সময় মাটির শরীর পড়ে থাকে
মাটিতে হয়ে শব;

শরীর সর্বস্ব জীবনের সমাপ্তিতে শব।

আমি অন্ধকারেও তোকে দেখি চোখ বন্ধ করে

দুর্বোধ্য রাত্রি তুই
আমি ঘুম চোখেও তোকে দেখি

রাতের পরতে পরতে অন্ধকার
আমি আঁধারে কালোর গল্প শুনি

রাতে কি আলো থাকে কোথাও?
কোন কোন রাতে চাঁদ ওঠে

আচ্ছা! জ্যোৎস্নার কি গল্প আছে কোনো
কবিতা কেন লিখা হয় চাঁদনিতে?

তুই আমার চোখে চোখ রেখেছিস
মন পড়িস নি

তুই আমার হাতে হাত রেখেছিস
স্পর্শে অনুভব চিনিস নি

তুই আমার বুকে হাত বুলিয়েছিস
ভালোবাসা বুঝিস নি

আমি যা বলতে চেয়েছি তুই তা শুনিস নি
তুই যা বলতে চেয়েছিস আমি তা বুঝি নি
তবুও একসময় চোখে চোখে চোখ চেয়েছিলাম
হাতে হাতে হাত রেখেছিলাম
আর অনুভবে অনুভব
ভালোবাসা বুঝতে গিয়ে চাঁদ হয়ে গিয়েছিল চাঁদনি
আর রাতের চোখে ঘুম,
আমি একটা স্বপ্ন লিখে দিয়ে এসেছিলাম তোর চোখে;

ভুলে গিয়েছিস?
তবে আজো কেন আমায় স্বপ্নে দেখিস?

ভালোবাসা কি ফুরোয় রে?
কোথাও না কোথাও তো অনুভব রয়েই যায় রে,
হয় সূর্যে নয় অন্ধকারে
কারো স্বপ্নে কারো ঘুম চোখে,
তুই চাঁদের টর্চ জ্বালিয়ে আমায় খুঁজিস আলোর মাঝে
আমি অন্ধকারেও তোকে দেখি চোখ বন্ধ করে।

মনুষ্যত্ব কোথায় বলো তো দেখি?

সময়ের কি খুব দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে?
খুব দ্রুত গতিতে আজকালকার সন্তানরা এগিয়ে যাচ্ছে
রকেটের বেগে,
চিন্তা চেতনায়
আচার ব্যবহারে
কিংবা মনুষ্যত্বে;

না কি আমরাই পিছিয়ে আছি? সেই আদিম যুগে;

বাবা নামক অদ্ভুত এক মেশিন আছে
টাকা ছাপায়
চাহিবা মাত্র দিতে বাধ্য?
কি আর বলব? টাকার গায়েই তো লিখা থাকে
“চাহিবা মাত্র ইহার বাহক’কে দিতে বাধ্য থাকিবে”
বাবার সাধ্য কি টাকা পকেটে রাখার?
বাহক তো সন্তান;

মা নামের অদ্ভুত এক দাসী আছে
চাহিবা মাত্র নিজেকে উজাড় করে দেবার
সে খাদ্য হোক
আসবাবপত্র
দামী গ্যাজেট
বাড়ির সবচেয়ে ভালো ঘর
কিংবা অন্য কিছু,
টাকা বাবার;

এ তো গেলো বাল্যকাল আর কৈশোরের কথা,
এক সময় সন্তান বড় হয়
যৌবনে পদার্পণ
এখন তো সঙ্গীর প্রয়োজন;
আজকাল আর বাবা-মা সন্তানের সঙ্গী কোথায় খোঁজে?
এক এক জনের সঙ্গী সঙ্গিনী তো যার যার কাছে,
বাবা মায়ের দায়িত্ব টাকার যোগার
দামী শাড়িটা
ডিজাইনার গহনাটা
সবচেয় প্রেষ্টিজিয়াস বিবাহ হলটা না হলে
কি আর বিয়ের আয়োজন সম্পূর্ণ হয়?
আয়োজন সবার
টাকা বাবার;

তারপর সন্তানের ঘরে সন্তান আসে
তিন রুম ফ্ল্যাটে কি আর সংস্থান হয়?
হাঁড়িকুঁড়ির নিত্য ঠোকাঠুকি হতেই হয়
আলাদা বাড়ি কিন্তু সন্তানের জন্য প্রযোজ্য নয়
বাপের ভিটা বলে কথা;

আরে বাপটাতো বুড়া
টেঁসে যাবে যে কোন সময়
না হয় অপেক্ষার আরেকটু সময়!
তারপর না হয় বুড়িটার সংস্থান করা যাবে
স্টোর রুমটায় চলবে না?
না হয় কাজের মেয়েটার সাথে!
আরে বুড়িটারও তো বয়স হয়েছে!
দেখাশোনার মানুষ লাগে
কাজের মেয়েটা না হয় রাতের বেলা দেখেশুনে রাখবে!
বেশী যন্ত্রণা হলে আজকাল কি আর বৃদ্ধাশ্রমের অভাব পড়েছে?

আচ্ছা! আমাদেরও তো সময় ছিলো
আমরাও তো সন্তান ছিলাম এক সময়!
কই এসব চিন্তা কি কখনো মাথায় এসেছে?

আজকালকার ধর্মীয় মূল্যবোধ,
সে আবার কি?
মোল্লাগুলো মসজিদে যায় দেখি,
আরে দোস্ত, জানিস আমার বাপটাও আজকাল বড্ড মোল্লা বনে গেছে
সারক্ষণ ধর্মের কথা জপে
নামাজের সময় হলে মাথাটা খারাপ করে দেয়
রোজার দিনগুলোতে তো বাসায় থাকাই দায়!
আর বুড়িটার কথা তো ছেড়েই দিলাম
না জায়নামাজ থেকে ওঠে
না হাত থেকে তসবীহ রাখে
যন্ত্রণার তোরা বুঝবি কি?

আজকালকার মনুষ্যত্ব?
ঐ যে কিশোর ছেলেটা
কি অবলীল ভাবেই না পিটিয়ে মেরে ফেলেছে মা টাকে
নিথর দেহটা রাস্তায় পড়ে ছিলো রক্তাক্ত
নিথর দেহেই যেন শরীরের সমস্ত ঝাল মেটানো,
আর বাকি সব সঙ্গী সাথীরা মাছ চোখে তাকিয়ে দেখেছে
কেও কেও ভিডিও করে ভার্চুয়ালে ছেড়েছে;
আর ঐ যে যুবকদল!
দা বটি হাতে রাস্তার মাঝে কুপিয়ে মেরে ফেলেছে ছেলেটাকে
প্রেমের বলি
আর বাকিরা কাপুরুষের মত ভিডিও করেছে;
এরাও তো কারো না কারো সন্তান
মনুষ্যত্ব কোথায় বলো তো দেখি?
সমাজের পচন দেখতে পাচ্ছ তোমরা?
আমরা কোথায় চলেছি?

হে পুত্র
হে কন্যা
তোমরা সন্তান হয়েছ,
মানুষ হয়েছ কি?

ব্যর্থতা আমাদেরই।

মন তো বরফ, গরম একটু ছুঁয়ে দিতেই গলে যায়

ছোঁয়াছুঁয়ি খেলায় আমি সব সময়ই এগিয়ে, তোর থেকে;

এই যেমন ধর – তুই আমায় শরীর ছুঁয়ে দেয়ার অনেক অনেক আগেই আমি তোর মন ছুঁয়ে দিয়েছি; বুঝলি না?

তবে বলি শোন – – ভেবে দেখ তো, তোর চোখে জল আসে কেন?
আমার কথা মনে পড়লেই তো! তাই না?

আচ্ছা! আমার কথা মনে পড়ে কেন তোর?
– খুব ভালোবাসিস আমায়, তাই না?

কেন ভালোবাসিস? কখনো ভেবেছিস?
– আরে বোকা! তুই কোন কিছু বোঝার অনেক আগেই আমি তোর মন ছুঁয়ে দিয়েছি;

মন তো বরফ, গরম একটু ছুঁয়ে দিতেই গলে যায়, কেন অশ্রু গলছে তোর চোখে?
– তোর মন আমি ছুঁয়ে দিয়েছি বলে;

বুঝলি না? – ভালোবাসা কি আগুন না?
তাহলে পুড়ছিস কেন রে?
তোর গাল বেয়ে কান্না গলা অশ্রু নামছে কেন রে?
– এটা আসলে ভালোবাসা
– তোর অজান্তেই তোকে ছুঁয়ে দিয়েছে বলে রে;

আচ্ছা বল তো!
– কিছু দিন চিঠি না পেলে এত উতলা হোস কেন?
আমার কথাগুলো তোকে খুব ছুঁয়ে যায় তাই না?
কই? তুই তো কখনোই চিঠি লিখিস না আমায়,
তারমানে শব্দ-খেলায় তুই ছুঁতে পারিস নি আমায়?

আমি রোদ হয়ে তোকে ছুঁয়ে দিলে তুই ঘেমে অস্থির
বৃষ্টি হয়ে তোকে ছুঁয়ে দিলে তুই ভিজে একাকার
আদর মেখে তোকে ছুঁয়ে দিলেই তোর আকাশে চাঁদ
কোন কারণে আমার মনখারাপে তোকে না ছুঁলেই তোর অমাবস্যা;
ছোঁয়াছুঁয়ি খেলায় আমার কি এগিয়ে থাকা হলো না?

একবার তোর সাথে শেষবার অন্যরকম এক ছোঁয়াছুঁয়ি খেলতে ইচ্ছে করে,
সেটা কি জানিস?
– কে কার আগে মৃত্যুকে ছুঁয়ে দিতে পারে!
যে হেরে যাবে, সেই শুধু জানবে
– জিতলো কে।

আমরা ভালো থাকার ভান করে কাটিয়ে দেই

কেমন আছি?
কাওকে বলতে পারি না
বললেও কেও বোঝে না,
মানুষ তার নিজেরটা বোঝে
নিজের মত করে বোঝে
অথচ কেও কারোটা বোঝে না;
এই যে বুকের ভেতর মন খারাপের ছলাৎ ছল
অথচ মানুষ বাইরেটা দেখেই বলে, বাহ কি দারুণ!
তাই না রে? বল;

ভান ধরে থাকায় আমাদের জুড়ি মেলা ভার
মনে মনখারাপের পাহাড় নিয়ে আমরা ভালো থাকার ভান ধরে থাকি
মানুষের সাথে হাসি, খেলি
মানুষের তালে নাচি;
বড্ড অদ্ভুত মনে হচ্ছে, তাই না?
আসলে কি অদ্ভুত?
আয়নার দিকে তাকিয়ে উত্তর দেও তো দেখি!

আমি ভালো নেই,
কথাটা কাওকে বিশ্বাস করাতে পারি না
মনের সাগর যে চোখে ভাসে না!
অথচ রক্তে লবণ বয়ে যায় প্রতিক্ষণ
আর আমরা ভালো থাকার ভান করে কাটিয়ে দেই
এক আশ্চর্য দ্বৈত জীবন!

বুকের মাঝে কান পেতে নেই কেও
কেও পড়ে না চোখের ভাষা
অথচ বাহ্যিক পোশাকি জীবন দেখে মেপে নেয়
ভালো থাকা আর খারাপ থাকা
তাই না?

সোনালী চিল রুপালি আকাশে ওড়ে
মন খারাপ, মন আকাশে
আর আমরা হাসিমুখে পৃথিবীর বুকে
তোমরা আমার ভালো থাকা দেখ
দূর থেকে, চেহারা মেপে;

আমি ভালো আছি
খুব ভালো আছি
তোমাদের চোখে,

মন খারাপ তুমি কই?
মনের ভেতর
খুব গভীরে।

তোকে ঢেকে দেব না হয় মেঘের চাদরে

প্রেমের সূর্যোদয়ে তুই ছিলি
ছিলি ভালোবাসার সূর্যাস্তেও;

সূর্যটা ধ্রুব ছিলো
ধ্রুব ছিলো প্রেমটাও
শুধু আলাদা হয়ে গিয়েছিলাম তুই আর আমি
তুচ্ছ ভুল বুঝাবুঝিতে;

এখন আমরা রাত কাটাই চাঁদে
রাত কাটাই অন্ধকারে
রাত কাটাই রাতে
ভালোবাসাটা এখনো ধ্রুব আছে
ধ্রুব আছে অনুভব অনুভূতি
শুধু হারিয়ে ফেলেছি অনেকটুকু সময়
জীবন থেকে;

এখন কেও ভালোবাসার কথা বললে
জোর ঢেউ ওঠে বুকের ভেতরের শ্যাওলা পুকুরে
আর ডুব সাঁতারে ভেসে উঠিস তুই,
আচ্ছা! তোরও কি এমন লাগে?

এখন কেও প্রেমের কথা বললে
খুব জোরে বাতাস বয় বুকের ভেতরের অন্ধকার আকাশে
আর বৃষ্টি হয়ে নেমে আসিস তুই,
আচ্ছা! তোরও কি এমন লাগে?

আচ্ছা! অভিমানের কখনো সূর্যাস্ত হয় না?
দেখে নিস, যেদিন তোর অভিমানে গ্রহণ লাগবে
আমি ঠিক চাঁদ হয়ে উঠে আসবো তোর আকাশে
সেদিন চাঁদনিতে লজ্জা পেলে
তোকে ঢেকে দেব না হয় মেঘের চাদরে;
ভালোবাসার মানুষের কাছে লজ্জার কি আছে?

অর্থ নিশ্চয়ই ভালোবাসার চেয়ে অনেক অনেক দামী

একটা চারাগাছ ছিলো তোর বাগানে
তুই আগাছা ভেবেছিলি
একদিন কেটে ফেলে দিতে চাইতেই আমি বললাম
চারাগাছটা আমায় দিয়ে দে,
কি ভেবে তুই আগাছা না কেটে চারাটা আমায় দিয়ে দিয়েছিলি
তবে শর্ত জুড়ে দিয়ে
একদিন ফেরত নিতেও পারিস সুদে আসলে;

আমি চারাটাকে যত্ন করলাম
পানি দিলাম
সার দিলাম
ভালোবাসা দিলাম,
ধীরে ধীরে চারাগাছ বড় হলো
এক সময় ভালোবাসার প্রতিদানে আমায়
ফুল দিলো
ফল দিলো
ছায়া দিলো;

অনেক অনেকদিন পর একদিন তুই আমার বাগানে ঘুরতে এলি
ফলবান গাছটার নিচে দাঁড়ালি
গাছটা তোকেও ছায়া দিলো
গাছটার ডালে ডালে থোকায় থোকায় ফল ঝুলে আছে
তুই গাছটা দিকে চেয়ে বললি
বাহ!
বেশ ফলবান বৃক্ষ তো!

আমি ঘুরে ঘুরে তোকে বাগান দেখালাম
তুই হঠাৎ জিজ্ঞাসা করলি
আমার বাগান থেকে একটা আগাছা দিয়েছিলাম তোমায়
মনে আছে?
আমি হেসে বললাম
হ্যাঁ, আছে
তবে ওটা এখন মহীরুহ হয়ে গেছে
ফুলে ফলে আমায় ভরিয়ে দিয়েছে,
তুই জিজ্ঞাসা করলি
কোথায় সেটা
আমি বললাম
ওপরে তাকা
তুই দাঁড়িয়ে আছিস তোর আগাছার ছায়ার তলে;

তুই আশ্চর্য হয়ে বললি
ধ্যাত! মিথ্যে কথা
আমি তো তোমায় আগাছা দিয়েছিলাম
এটা তো ফলবান বৃক্ষ,
আমি হেসে বললাম
তুই গাছ চিনতে ভুল করেছিলি
যা তুই উপড়ে ফেলতে চেয়েছিলি আমি তা গ্রহণ করেছিলাম ভালোবেসে
তোর আগাছা আজ আমার মহীরুহ হয়ে গেছে;

তুই কিছুক্ষণ ভেবে বললি
সেদিন কি বলেছিলাম মনে আছে?
এখন আমার বস্তু ফিরিয়ে দেও সুদে আসলে,
আমি হেসে বললাম
ঠিক আছে
তবে আমায় নিয়ে যাও,
তুই বিরক্ত হয়ে বললি
আমি আগাছা নেই না,
আমি পুরো বাগানটা তোকে দিয়ে আমি রিক্ত চলে এলাম;

তুই আবারও কি ভুল করলি?
তুই ভাবলি সুদে আসলে লাভের কথা
আর আমি ভালোবাসার মানুষকে কিছু দিতে পেরে সুখী হলাম,
আসলে কি রিক্ত হলাম?

আমি তোকে আমায় দিতে চেয়েছিলাম
তুই বিনিময়ে বাগান নিলি,
অর্থ নিশ্চয়ই ভালোবাসার চেয়ে অনেক অনেক দামী;
ধ্যাত!
ভালোবাসার কিই বা বুঝি আমি?

আমার নিজের জীবনের কোনো গল্প নেই

দুপুরটা পুড়ছে
সাথে রোদ,
ধুলো উড়ছে
ঘাম ঝরছে
আর কিছু কান্না কান্না চোখ;

আমি মানুষ দেখি
দেখি মানুষের চোখ,
গল্প কিন্তু মানুষের চোখেই থাকে
মুখ ফুটে কেও কেও বলতে পারে
বেশীর ভাগই পারে না,
আমার কেন জানি চোখ পড়তে বড্ড ভালো লাগে
এক একটি নির্মম গল্প এক একটি চোখে;

আমার কোন কাজ নেই
রোদ পোড়া দুপুর বড্ড অলস কাটে
মাঝে মাঝে ঝাঁ ঝাঁ রোদে আমি রাস্তা হাঁটি
আশেপাশের মানুষগুলোকে দেখি
তাদের চোখ পড়ার চেষ্টা করি
চোখ পড়ে তাদের দুঃখ কষ্ট গুলো ঘাটি
ইচ্ছে রঙ লাগাই
ইচ্ছে রঙে সাজাই
তারপর সাদা কাগজে নানা রঙের কলমে আঁকি,
ঐ লোকে যাকে গল্প বলে;

যারা পড়ে
তারা বেশীরভাগ আমার নিজের গল্প বলে ভেবে নেয়
আমি তাদের চোখ পড়তে পারি না
কাগজও তাদের ভুল ভাঙায় না;

অথচ আমার নিজের জীবনের কোনো গল্প নেই
সাদা কাগজের নিজস্ব গল্প থাকতে নেই।

আমি আমার ভালোবাসার কথা কাওকে বলি নি

ঐ চোখে কতবার যে হারিয়েছি!
জানি না,
অনেকবারই তুই
করেছিলি মানা,
আরে বোকা, মানা দিয়ে কি চোখ ফিরিয়ে রাখা যায়?
না মন শোনে ভালোবাসার মানা;

আমার চোখ আমারই
তোকে চেয়ে দেখার সুখ একার আমারই
না হয় দূর থেকেই একা একা
তোর পানে চেয়ে থাকা
আর নিস্তব্ধ অসহনীয় সময়;

আমার মন আমারই
আর তোকে ভালোবাসা, আমার একার অনুভব
একা একা আনমনে
শুধু তোকে ভেবে ভেবে
বয়ে গেছে কত কত স্তব্ধ সময়;

কজন হারিয়ে যেতে পারে চোখে?
কজনার চোখেই বা হারানো যায় রে?
এই যে মনের ভেতর
ছলাৎ ছলাৎ ঢেউ
তোরই যে চোখ চেয়ে
জানবে না রে কেও;

আমি আমার ভালোবাসার কথা কাওকে বলি নি
শুধু তোর চোখ এঁকেছি কবিতার খাতায়
তবুও সবাই তোকে চিনলো কি করে?

ভালোবাসার গন্ধ বোধহয় দূর দূর ছড়ায়।

আমি চিনতে পারি না নিজেকে নিজে

শরীরটাই সকল সমস্যার মূল;

শরীরে ক্ষুধা আসে
মানুষ খাদ্য খোঁজে
শরীরে কাম আসে
মানুষ শরীর খোঁজে

ক্ষুধা শরীরে সবচেয়ে বড় শত্রু
পেটের ক্ষুধা কিংবা শরীরের,
তারপর একে একে রিপুগুলো ভর করে শরীরে
মানুষ রিপুর দাসত্ব করে,
অমানুষের সৃষ্টি হয় মানুষই মাঝে,
তোমরা অমানুষ দেখেছ?
আমাকে দেখ;

পেটের ক্ষুধা মিটে গেলেই রিপুগুলো প্রায়শই আমাকে অমানুষ বনিয়ে ফেলে
আমি চিনতে পারি না নিজেকে নিজে;

কাম থেকে শুরু
ক্রোধ ভর করে যে কোন অপ্রাপ্তিতে
লোভ লালসা তো মানুষেরই রন্ধ্রে রন্ধ্রে
মোহের হাতছানি উপেক্ষা করতে পেরেছে কে কবে?
মদ তো অনেক পুরাতন হয়ে গেছে, আজকাল হাতছানি নতুন নতুন নেশার
মাৎসর্য কিংবা পরশ্রীকাতরতা আমাদের রক্তে থাকে মিশে;

আমি জানি রিপুগুলো তোমাদের মাঝে নেই,
আছে কি?
আয়না কি কিছু বলে?
বলে না?
তবে আমায় দেখ,
মানুষের অবয়বে রিপুতে ডুবে থাকা অমানুষ।

হিপোক্রেসি খেয়ে ফেলছে নতুন পুরনো সব সম্পর্কগুলো

হিপোক্রেসি আজ প্রেমের রন্ধ্রে রন্ধ্রে,
ছলনা!
নারী পুরুষ সবার মাঝে;

আজকাল এক পুরুষে নারীর আর চলে কই?
কিংবা এক নারীতে পুরুষের মন ভরে কই?
আর প্রেম?
আজকালকার প্রেম মানেই তো বিছানা
চোখে চোখে কথা হতে হতেই শরীর লেপ্টে যায় শরীরের সাথে
আর প্রেমের গভীরতা মাপা হয় শরীর যখন খাটে;

দুপুরটা প্রেমিকার সাথে কাটিয়েই সন্ধ্যায় অন্য নারী
আরে বাবা! বান্ধবী
তোমরা খালি ভুল বোঝো
গল্পের ছলে একটু শরীর ছানাছানি হলে তোমাদের এত গায়ে লাগে কেন?
এখনো আদিকালে পড়ে আছ
কি? এটাকে হিপোক্রেসি বলছ?
মনটাকে একটু বড় কর;

বিকালটা প্রেমিকের বাহুবন্ধনে কাটিয়ে রাতে অন্য পুরুষ
আরে ধ্যুর ছাই!
ভুল বুঝ না তো! ও আমার বন্ধু,
বন্ধু না হয় একটু চুমুই খেয়েছে, তাতে তোমাদের সমস্যা কোথায়?
আদিকালের ধারণায় কি জীবন চলে?
কি বলছ? এটা হিপোক্রেসি?
ধ্যাত! আমরা অনেক ব্রড মাইন্ডের;

একদিকে রমণ শেষে স্ত্রীর ভেতর থেকে ডুব দিয়ে উঠেই প্রেমিকার সাথে ভার্চুয়াল প্রেম চ্যাটে
অন্যদিকে স্বামীকে রমণে ঘুম পাড়িয়ে প্রেমিকের সাথে সারারাত ভার্চুয়াল চ্যাটে
প্রেমটা বড্ড বেশী হিপোক্রেটিক হয়ে গেলো না?
পরকীয়া তো প্রেমই তাই না?

উঁহু! তোমরাই সব হিপোক্রেট
আমরা প্রেম করি,
এই যে তুমি!
রাতে বৌ এর সাথে ঘুমাও আর মনে মনে পাশের বাসার সুন্দরীর স্বপ্ন দেখ;
শোনো, তোমাকেই বলছি!
মনের ভেতর অন্য পুরুষ নিয়ে শুয়ে থাকো স্বামীর বুকে;
এটা তোমাদের হিপোক্রেসি হলো না?
আমাদের দেখ!
আমরা বৌ এর চাহিদা মিটিয়ে প্রেমিকাকে সময় দেই
আমরা স্বামীর কর্তব্য শেষ করে সারারাত প্রেমিকের সাথে কষ্ট করে জেগে থাকি
এটা আমাদের স্বাধীনতা,
তোমাদের কাছে হয়তো হিপোক্রেসি;
ও হে আদিকালের মানুষ! তোমরা প্রেমের বোঝো কি?

তোমাদের যতসব আদিকালের বস্তাপচা চিন্তাভাবনা;
আজকালকার প্রেম বোঝো?
আরে বাবা! প্রেমের কাছে শরীর বড্ড তুচ্ছ
প্রেম মানেই মন
প্রেম মানেই কবিতা
প্রেম আছে বলেই উপন্যাস
শরীর?
সে তো প্রেমেরই অংশ
ধুয়ে নিলেই পুত: পবিত্র;

আর হিপোক্রেসি?
ভাষণ দিও না,
তুমি
আমি
আমরা সবাই হিপোক্রেট
কম আর বেশী;

বাহ! ভালো যুক্তি তো!
এদিকে যে হিপোক্রেসি খেয়ে ফেলছে নতুন পুরনো সব সম্পর্কগুলো,
দেখছ কি?

ধ্যাত! বড্ড বোকা তোমরা,
আর সম্পর্ক?
সে আবার কি?
শরীর থাকলেই নিত্য নতুন গড়ে নেয়া যায়
সম্পর্কের আবার নতুন আর পুরানো কি?

আমি কি আর উঠতে পেরেছি নদী থেকে?

নদী পাড়ে তার বাস অথচ সে নাকি নদী দেখেনি,
এক অঝোর বৃষ্টির দিনে আমি তাকে নদী দেখাতে নিয়ে গেলাম;

প্রথমে সে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলো
তারপর উচ্ছ্বাস!
এটা কি সমুদ্র?
আমি বললাম, না রে
এটা একটা ছোট নদী মাত্র
সমুদ্র অনেক বড়;

ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নেমেছিল সেদিন
বাচ্চা মেয়ের মত ছোটাছুটি করছিলো সে নদী পাড় ধরে
দৃষ্টিভ্রম কি না জানি না,
তবে আমি তার নদী হওয়া দেখছিলাম
তারপর বয়ে গেলাম;

আমি তো তাকে সেদিন নদী দেখাতে নিয়ে গিয়েছিলাম
অথচ সে আমায় প্রেমে ডুবিয়ে দিলো,
যতটা জল সে ছুঁয়েছিল সেদিন, তার থেকে বেশী আমায় ছুঁয়ে দিলো
আমি ভাসলাম, ডুবলাম, নদীতে;

সে বহু বহুদিন আগেকার কথা;

নদী কি আর স্থির থাকে?
সে তো ক্রমাগত বয়ে যায়
কে তাতে ভাসলো
কে ডুবলো
তার কি এসে যায়?

আর এদিকে ঝুম বৃষ্টি হলে আজো মন বড্ড নদী হয়ে যায়
আমি কি আর উঠতে পেরেছি নদী থেকে?
ভালোবাসা বড্ড ডোবায়
নদী কিংবা নারী’তে;

নারী তো নদীই,
তাই না?

ভালোবাসায় সাঁতার কেটেছ কখনো?
ডুব সাঁতার;
তাইলে আর নারী চিনবে কি করে?

মানুষের চেয়ে বড় অভিনেতা আর কে আছে?

আমরা সবাই ক্রমাগত অভিনয় করে যাই
নিজের সাথে,
দ্বৈত মানুষ হয়ে;
একদিকে পোশাকি সামাজিক জীবন
আরেকদিকে সত্যিকারে ভেতরের মানুষটার ক্ষরণ
কয়জন মানুষ আছে, মন যা চায় সেভাবেই দিন কাটায়?
আমি তো নইই,
কতবার হেরে গিয়েছি জীবনের কাছে, পরিবেশের কাছে, পরিস্থিতির কাছে!
আচ্ছা! যেভাবে নিজেকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছ আদতে তুমি কি তাই?

কখনো ভালোবাসার মানুষ ছেড়ে গেলে এত দুঃখিত হই কেন আমরা?
ভালোবাসা কি ছেড়ে গিয়েছে?
উঁহু! ভালো করে তাকাতে হয় নিজের ভেতরে
দুঃখিত হতে হয় তখনই যখন ভালোবাসাটাই আমায় ছেড়ে চলে যায়
ভালোবাসার মানুষ!
সে তো সময় সময় অভিমানে দূরে সরে যেতেই পারে,
তবে দুটি মন থেকেই যদি ভালোবাসা ছেড়ে চলে যায় তবে আর দুজন এক হয়ে থেকেই বা লাভ কি?
শুধু পুরাতন অসহনীয় কিছু ভালোবাসার স্মৃতি;

ভালোবাসার মানুষের খুব কাছাকাছি যেতে নেই, একদম ভেতরে
অথচ ভালোবাসাটা জড়িয়ে রাখতে হয় মনের ভেতর খুব যতনে, ওমে ভরে;
ভালোবাসার মানুষের খুব কাছে এলে মনে হয় যাকে ভালোবেসেছিলাম আসলে এ সে নয়
ধীরে ধীরে দুটি মানুষের তুলনা নিজের দ্বৈত মনের সাথে
ফলশ্রুতিতে কারো কারো কাছে ভালোবাসাটা আস্তে আস্তে ফিকে হতে থাকে,
বেশীরভাগ মানুষ নিজেকে মানিয়ে নেয় পরিস্থিতির সাথে
মানুষটা যেমনই তেমন করে গ্রহণ করে
আর কেও কেও ভালোবাসার মানুষের কাছে থেকেও দূরে সরে যায় ভালোবাসার কাছ থেকে
দ্বৈত ভাবনায় জীবন তো চলে যায়, আদতে সুখ কোথায়?
অভিনয়ে জীবন কাটায়;

মানুষের চেয়ে বড় অভিনেতা আর কে আছে?
নিজের কষ্ট বুকে চাপা দিয়ে মানুষেরই কাছে দাঁত বের করে থাকে;
আমরা এক একজন মুখোশ মানুষ, সকলে
মুখোশের আড়ালে কান্না লুকাই, খুব সযতনে।

জীবনটা হয়তো তাদের কাছে খুব সুখের

যারা সোনার চামচ মুখে করে জন্মেছে
জীবনটা হয়তো তাদের কাছে খুব সুখের
আমি গতর খেটে উপার্জন করি
হাত দিয়ে ভাত খাই
স্বপ্ন বলতে পেটে দুবেলা দুমুঠো ভাত
আমার স্বপ্নে সোনার চামচ আসবে কোত্থেকে?

কেও কেও স্বপ্নে সাজায় স্বপ্নের বাসর
কারো কারো জীবন স্বপ্নগুলো খুব ভয়ংকর;

তোমারা ঔষধ খেয়ে ঘুমানোর চেষ্টায় রত
আমার কঠোর পরিশ্রম পেটের টানে যত
তোমাদের কাছে ঘুম সুখের স্বপ্ন দেখবে বলে
আমার স্বপ্নহীন একঘুমে রাত পার, সকালে উঠতে হবে বলে;

মাঝে মাঝে আমি হতবাক হয়ে
তোমাদের অপব্যয় দেখি
অপচয় দেখি
আমার কাছে যেন বড্ড স্বপ্ন স্বপ্ন মনে হয়
টাকায় কি না হয়?

আচ্ছা টাকায় তোমরা কি সুখ কিনতে পার?
স্বস্তি?
শান্তি?
ঘুম?
আমি কিন্তু বিছানায় পড়া মাত্র ঘুম,
স্বপ্নহীন নির্ভেজাল ঘুম;

আচ্ছা!
আদতে স্বপ্ন কি?
ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে আমরা যা দেখি?
কেও কেও তো জেগেও স্বপ্ন দেখে
– টাকার
– খ্যাতির
– যশের
– উজ্জ্বল ভবিষ্যতের
আবার কেও কেও স্বপ্ন দেখে দু মুঠো খাবারের,
কারো কারো চোখে কোন স্বপ্ন খেলে না
কাওকে কাওকে আবার স্বপ্ন ঘুমাতে দেয় না
কেও কেও ঘুম কিনতে চায় টাকার বিনিময়ে
কেও কেও আবার টাকার স্বপ্ন দেখে ঘুমের বিনিময়ে;

একদিন আমারও খুব স্বপ্ন দেখতে ইচ্ছে করে
সোনার চামচ মুখে দিয়ে;

অলীক স্বপ্ন আর কি!