যাযাবর জীবন এর সকল পোস্ট

কত রকম মানুষই না হেঁটে যায় মাটি পাড়িয়ে!

একদিন হঠাৎ মাথা ঘুরে পড়ে যেতেই হাতের ভর মাটিতে,
সেই প্রথমবার
তারপর আবার
তারপর আবার
তারপর থেকে মাটিতেই,
খুব খেয়াল করে দেখেনি কেও
– মাটির মৃত্যু হচ্ছে মাটিতে;

তোমরা দেখেছ মাটি থেকে অঙ্কুরোদ্গম
মাটি থেকে গাছ
মাটিতে ফসল
আর মাটিতেই ঘাস,
বড্ড সার পাচ্ছে যে মাটি, আমার বুকে;

একদিন আমার বুকের ওপর ঘাসের গালিচা হবে
বিশাল বিশাল সব গাছে ছেয়ে যাবে
পাতা ঝরার দিনগুলোতে সবুজ ঘাসে হলদেটে পাতাগুলো পড়ে থাকবে
কি অদ্ভুত সুন্দরই না লাগে সবুজ গালিচায় হলুদ-লালের মিশ্রণে ঝরা পাতাগুলো!

একদিন হয়তো তোরা আমার বুকের ওপর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বলবি,
– বাহ! কি অদ্ভুত সুন্দর দূর্বাঘাস,
একদিন হয়তো তোরা আমার বুকে ঝুম বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে বলবি
– বাহ! কি অদ্ভুত সুন্দর মাটির সোঁদা গন্ধ,
তোদের কথাগুলো হয়তো আমি শুনবো
কিংবা শুনবো না,
মাটিতে শুয়ে
মাটি হয়ে,
কত রকম মানুষই না হেঁটে যায় মাটি পাড়িয়ে!
কে আর ভাবে?
– মাটির মৃত্যু হয় মাটিতে।

শূন্য হয়ে যাওয়ার অনুভব ছুঁয়ে যায় আমায়!

ছোঁয়াছুঁয়ি খেলায় কখনো জিততে পারি নি আমি;

এই যে ঝুমঝুম বৃষ্টি!
ছুঁয়ে দেয় আমায়
ভেজায়, কাঁদায়
– সে তো এক তরফা?
আমি ছুঁতে পারি না বৃষ্টি’কে, না পারি ভেজাতে;

অনেক অনেক আগে একদিন প্রেম ছুঁয়ে দিয়েছিলো আমায়
সেই থেকে মনকে বড্ড ভয় পাই
যদি নিজেতে নিজেই ডুবে যাই!
ভালোবাসায় ডুবে গেলে টেনে তুলবে কে?
তুই তো নিজেই ডুবে আছিস আমার প্রেমে
– সেও এক তরফা;

শরীর ছুঁয়ে দিলেই কি মন ছোঁয়া হয় রে?
কই, আমি তো মন ছুঁতে পারি নি কারোরই;
আচ্ছা! বল তো, তুই আমায় ছুঁয়েছিস কতবার?
– এক তরফা, শরীর কিংবা মনে?
ছোঁয়াছুঁয়ি খেলায় বারবার হার আমারই;

এই যে হঠাৎ হঠাৎ মাথা শূন্য হয়ে যাওয়ার অনুভব ছুঁয়ে যায় আমায়!
আর বিছানাটা জড়িয়ে নেয় আদর করে
আমি হারিয়ে যাই অন্ধকারে
– সে কি এক তরফা নয়?
একে কি ঘুম বলে?

একদিন হঠাৎ মৃত্যু এসে আমায় ছুঁয়ে দিয়ে বলবে,
চল!
সেও তো বড্ড এক তরফা, তাই না?

ভালো তো তোকে আমি বেসেছিলাম সত্যিই খাঁটি

তোর গায়ের গন্ধ নেই নি অনেক দিন হয়ে গেছে
এখন কি জুঁই কি ফুটেছে?
জানিস! আমি এখন আর নাকে কোন গন্ধ পাই না রে,
কেও কি তোর গায়ে নাক ঘষে?

স্নানের পর টপটপে ভেজা চুলে তোকে দেখি নি অনেক অনেক দিন
আচ্ছা! এবার আষাঢ়ে কি অনেক বৃষ্টি হয়েছে?
ডাক্তার এখন ঠাণ্ডা জলে গোসল করতে একদম বারণ করে দিয়েছে,
তুই কি এখনো ছাদে ছুটে যাস বৃষ্টি হলে?

ঐ যে আধো আলো আধো আঁধারে কামিনী গাছ তলায় প্রথমবার চুমু খেয়েছিলাম!
তুই ইয়াক, ইয়াক করছিলি, থুতু লেগে গিয়েছিল বলে
আমার কাছেও প্রথমবার ঠোঁটের স্বাদ বড্ড বাজে লেগেছিল,
কামিনী গাছটা এখনো বেঁচে আছে?

একবার আমরা ফ্যামিলি ট্যুরে গ্যাংটক গিয়েছিলাম?
বরফের পাহাড়ে উঠে বরফের ভেতর লুকিয়েছিলাম সবার থেকে আলাদা হতে
তারপর বরফ গলানোর চেষ্টা করেছিলাম শরীরের উত্তাপে, মনে পড়ে?
লোকমুখে শুনি তুই নাকি থাকিস এখন বরফের দেশে,
বরফ গলাস কার সাথে?

অনেক দিন তোর দীঘল কালো চুলে হারানো হয় না রে?
এখনো কি তোর চুলে মেঘ ধরে?
আমি কিন্তু চুল হারিয়েছি অনেক দিন হয়ে গেছে?
তোর চুলে কি পাক ধরেছে?
বয়স কাওকে ছাড় দেয় না রে? ছাড় দেয় না সময়;

ইদানীং আয়নায় তাকিয়ে যৌবনের কথা মনে হলে বড্ড হাসি পায়
মাঝে মাঝে একটু কি মন খারাপ হয়?
বার্ধক্য তো সময়ের পরিচয়,
তোর ছেলেমেয়ে কয়টা রে?
নাতি নাতনি হয়েছে?

এই যে বার্ধক্য এসেও সময় অসময়ে তোর কথা মনে হয়
এটা কি প্রেম নয়?
আচ্ছা তোরও কি এখনো আমার কথা মনে হয়?
জানা হবে না কখনো;

তোর জীবনে আমি কোথায় ছিলাম
কোথায় আছি
জানি না,
তুই কিন্তু ঠিকই রয়ে গিয়েছিস আমার কলমের ডগায়
প্রাত্যহিক স্মৃতিচারণে
এখন মনে মনে যৌবনের প্রেমের জাবর কাটি
আর মাঝে মাঝে ঘুমঘোরে সাদা খাতায় আঁচড় কাটি
কি হয় কে জানে? কবিতা না মাটি
তবে ভালো তো তোকে আমি বেসেছিলাম সত্যিই খাঁটি,
আচ্ছা! তুই কি ভালোবেসেছিলি আমায়?

আচ্ছা!
ধর, হুট করে এখন যদি দেখা হয়ে যায়,
আমি চিনতে পারব তোকে?
তুই চিনতে পারবি আমায়?

একদিন না হয় দূরত্বে থেকেই আবার কাছে আসবো

দূরে আছি
দূরেই ভালো,
দূর থেকে অভিমান
দূর থেকে ঝগড়া
কাঁদা হাসা
আর দূর থেকে ভালোবাসা,
দূরত্বে থেকেই বড্ড ভালো;

কাছে আসলেই তো মুখোশ
কাছে আসলেই লুকোনোর অনুভব,
কত কিছুই না আমরা লুকাতে চাই প্রিয়জনের কাছ থেকে!
দুঃখ, কষ্টগুলো লুকিয়ে রাখি আয়নার আড়ালে
আর কান্নাগুলো রাতের আঁধারে,
এই যে হাসি মুখটা দেখিস! মুখোশ চিনিস না?
তুই বড্ড বোকা,
তোর কাছ থেকে মন লুকোতে লুকোতে
নিজের ভেতর পুরোটাই লুকিয়ে ফেলেছি নিজেকে;

ভালোবাসার খুব কাছাকাছি আসতে নেই
কিংবা ভালোবাসার মানুষের,
কাছে আসলেই অভিযোগ
কাছে আসলেই অভিমান
কাছে আসলেই ক্ষরণ
আর ভালোবাসার অপমান,
কিছুটা দূরত্ব না থাকলে ভালোবাসা ফিকে হয়ে যায় রে!
যেমন হয়েছিলো তোর;
জানিস!
সেদিন খুব বেশী কাছে এসে পড়েছিলাম বলেই
আজ আমাদের মাঝে দূরত্বের দিন রাত
দূর থেকে ক্ষরণ, আর ভালোবাসার উত্তাপ;

কোন একদিন না হয় দূরত্বে থেকেই আবার কাছে আসবো,
মুখোশ খুলে
আয়না ফেলে;
সেদিন চিনতে পারবি আমায়?

পরগাছা সম্পর্ক

সম্পর্কগুলো বাইরে থেকে খুব সুন্দর
স্বর্ণলতার মত
অথচ পরগাছার মত লতানো
আর জীবন গাছে লতায় পাতায় জড়ানো,
এখানে একটার পর একটা সম্পর্কের শাখা গজায়
সোনালুর মত
এরা আষ্টেপৃষ্ঠে পেঁচিয়ে ধরে জীবন গাছটাকে,
গাছটা কখনো ধুঁকে ধুঁকে শ্বাস নেয়
কখনো মরে যায়
পরগাছার চাপে;

কিছু সম্পর্ক অর্থের
বেশীরভাগ স্বার্থের
অল্প কিছু বন্ধুত্বের,
আত্মীয়স্বজন নামক অনেকগুলো সম্পর্কের পরগাছা,
ভাই বোন চাচা মামা খালা ফুপু ইত্যাদি
বাবা মা থেকে উৎপত্তি;
যতদিন বাবা মা যতদিন স্বার্থ
ততদিনই এরা
তারপর নামেই শুধু সম্পর্ক
পরগাছা হয়ে বেঁচে থাকে জীবন গাছে
কালেভদ্রে কেও কেও ফণা তোকে ওঠে ফুঁসে
ছোবল মারতে চায় কিংবা মারে
কারো বিষদাঁত কেও ঢোঁড়া সাপ
স্বার্থে টোকা লাগলেই ছোবল মারে
আর নয়তো স্বর্ণলতা হয়ে জড়িয়ে থাকে সম্পর্কের গাছে,
এদের এড়ানোও যায় না
ঝেড়ে ফেলাও যায় না
লতানো পরগাছা জড়িয়ে থাকে জীবন গাছে;

আমি খুব সাধারণ একটা গাছ ছিলাম
হয় হিজল না হয় তমাল
কিংবা না হয় ছিলামই একটা কাঁটা গাছ,
অযাচিত সম্পর্কের স্বর্ণলতাগুলো পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে
মেরে ফেলেছিল আমায়;

তোমরা এখন কঙ্কাল চেনো।

কাল না হয় আবার নতুন স্বপ্ন দেখা যাবে!

ওমের ডানায় প্রেমের নাক ঘষতে গিয়ে
বাঁধা পড়ে গিয়েছিলি তুই ভালোবাসার ওমে
তারপর থেকে বর্ষা হেমন্ত, ঠাণ্ডা গরমে
দুজন দুজনার দমে দমে;
ভালোবাসাটাই বড্ড অদ্ভুত
তার চেয়েও কিছু অদ্ভুত অনুভূতির বাস মনে
কখন কোথায় যে হারায় হারায় এ মন!
কার তরে কে জানে!

চাইলেই কি ওড়া যায়?
আমি সময়ের ডানায় উড়তে চেয়েছিলাম
তুই প্রেমের
অথচ আমরা কেও পাখি নই,
তবুও আমরা উড়েছিলাম
– প্রেমে;

চাইলেই ভাসা যায় না, যায় না ডোবা;
আমি বেশ ভেসে চলেছিলাম সময়ের স্রোতে
তুই ডুবে ছিলি আমাতে
অথচ আমরা কেও নদী নই,
তবুও আমরা ভেসেছিলাম, ডুবেছিলাম
– প্রেমে;

সারা দিনমান মনের ভেতর কত রকম স্বপ্নই না ঘোরে!
জীবনের স্বপ্ন
জীবিকার স্বপ্ন
আরেকটু ভালোভাবে বেঁচে থাকার স্বপ্ন
কিছু উচ্চাকাঙ্ক্ষার
কিছু বা শুধুই অলীক,
আর নানা রঙের অনুভূতিগুলো ঘোরে স্বপ্নগুলো ঘিরে ঘিরে;

অথচ দেখ!
রাত হলেই থিতু
রাত মানেই কালো
রঙিন স্বপ্নে কি আর জীবন চলে?
রাত গভীর হতেই হাত চলে যায় বিছানায়
পাশে কাওকে তো লাগে!
একদম আপন কেও
একান্ত নিজের
আদরে, ভালোবাসায়
স্পর্শে,
স্বপ্নে নয়, বাস্তবতায়;

আমার কাছে রাত মানেই তুই
বুকের পাঁজরে হেলান দিয়ে
আর সারারাত তোকে জড়িয়ে নিশ্চিন্ত ঘুম
প্রেমের ডানায় ওম নিয়ে;

কাল না হয় আবার নতুন স্বপ্ন দেখা যাবে!

মন খারাপের সাথে বিষণ্ণতা মিশে থাকলে যেমন হয় আর কি!

সবাই বলে ভর দুপুর
বিকালকে ঢলা বলে কেন?
আমি তোর মাঝে শুধুই সকাল দেখি,
স্নিগ্ধ সকাল
দিন রাত্রির অষ্টপ্রহর;

সন্ধ্যাটা আজ কেমন যেন ম্যাড়মেড়ে হয়ে আছে
মন খারাপের সাথে বিষণ্ণতা মিশে থাকলে যেমন হয় আর কি!
রাতটা বোধহয় লম্বা যাবে আজ
তোর যে ভীষণ মন খারাপ;

আমি দূর থেকেই তোর মনের গন্ধ পাই,
ভালো থাকলেও পাই
খারাপ থাকলেও পাই;
কিভাবে?
আমার মত ভালোবাসলে জিজ্ঞাসা করতি না;

তুই সব সময়ই চায়ের সাথে একটু কফি মিলিয়ে নিস
মনের সাথে রঙ মেলাতে তোর জুড়ি মেলা ভার
আমার হয় সবুজ চা কিংবা কালো কফি
মিশ্রণে বড্ড এলার্জি আমার,
তাই বলে কি চুমু খাই নি আমরা?
তুই সবুজ চায়ের কাপে
আমি তোর ঠোঁটে;

ধ্যাৎ!
এভাবে দূর থেকে ভালোবাসা হয় না;
আয় জড়িয়ে ধর রাত হয়ে,
তারপর ঘুমাই দুজন ঠোঁটে ঠোঁটে,
অনেকদিন চুমু খাই নি ঠোঁট ডুবিয়ে, তোকে।

দূরত্বের সিঁড়ি ভেঙে যদি আবার হঠাৎ দেখা হয়ে যায়!

কে বলেছে রোদে গরম কাটে?
তুষারে কাটে শীত?
আমি বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে অশ্রু কাটাতে চেয়েছি
ঝুম বৃষ্টির সাথে,
তুই ভালোবাসা কাটাতে পেরেছিস কি?
কই! আমি তো মায়া কাটাতে পারলাম না হৃদয় থেকে;

একদিন খুব ভাবাবেগে তুই ভালোবাসার কথা বলেছিলি
আমি হেসে বলেছিলাম মোহ
তুই বলেছিলি প্রেম
তবুও কেন জানি না সেদিন আমি তোর হলেম,
ভুল হয়েছিল কি?

কি তাড়াতাড়িই না অদ্ভুত সময়গুলো কেটে গেছে জীবন থেকে
কখনো চড়াই কখনো উৎরাই পেরিয়ে
যতগুলো ভালো সময় আমরা পার করেছি
জীবনে তারচেয়ে অনেক বেশী খারাপ সময় পারি দিয়েছি,
এর মধ্যে অনেকগুলো ভুল বোঝাবুঝি
তোর প্রেম কমেছে কি?
মোহ কাটে নি?
জানিস! তোর জন্য এখনো আমার বড্ড মন কেমন করে
একে কি মায়া বলে?
ভালোবাসা আমি কখনো বুঝিই নি রে;

একদিন দেখিস ঠিক তোর মোহ কেটে যাবে
মায়া কাটবে কি?
ভালোবাসা?
দূরত্ব কখনো কখনো বাধা হয়ে যায় ভালোবাসার কাছে;

আজ তুই আর আমি যোজন দূরত্বে,
দূরত্ব অবস্থানের
দূরত্ব সময়ের
দূরত্ব মনের,
দূরত্বের সিঁড়ি ভেঙে কোন একদিন যদি আবার হঠাৎ দেখা হয়ে যায়!
মোহ সামনে এসে দাঁড়াবে কি?

তারচেয়ে চল না একবারেই মায়া কাটিয়ে ফেলি,
আরেকবার ভালোবেসে।

গ্লাস কি আর কানায় কানায় ভরে দেওয়া যায় রে?

পিপাসার্ত ছিলি তুই
আমি এক গ্লাস পানি দিলাম ভরে
তোর তিরস্কার
গ্লাসের অল্প একটু অংশ খালি ছিল বলে;

পিপাসার্তের পিপাসা মেটাতে
গ্লাস কি আর কানায় কানায় ভরে দেওয়া যায় রে?

বুঝের ফারাক কোথাও না কোথাও তো থাকেই
কিংবা দৃষ্টিভঙ্গির
দেবার ও নেবার মাঝে পার্থক্য ভীষণ
পার্থক্য দান ও গ্রহণের মাঝে
পার্থক্য বোঝার
পার্থক্য মানসিকতার
এপার থেকে ভরা গ্লাস কেও কেও খালি দেখে ওপার থেকে
বেশীর ভাগ পিপাসার্ত তৃষ্ণা মেটায় শোকর মনে পানির গ্লাসে;

পিপাসার্ত তৃষ্ণা মেটায় জল চুমুকে
গ্লাসের কতটুকু খালি আর কতটুকু ভরা তাতে তার কি এসে যায়;

একদিন তুইও গ্লাসটা নিজেই ভরে নিবি
হাত বাড়ানোর কাওকে না পেলে
গ্লাসটা কতটুকু খালি আর কতটুকু ভরা, দেখবি না সেদিন
ছাতি ফাটা তৃষ্ণায় জল না পেলে;

আয়নায় কেন যে নিজেকে দেখি না আমরা!
সময় সময় বাতি জ্বালিয়ে,
আর অন্ধকারে বোকার মত ছায়া খুঁজি
নিজের ভেতর অন্ধ হয়ে।

অবুও আমি ওপরে আকাশ দেখছিলাম নিচে মাটি

আকাশ তো সব সময়ই দেখি ওপরের দিকে চেয়ে
মাটিতে থেকে
আজ আকাশটাকে দেখলাম আকাশ থেকে;

তখন আকাশে চাঁদ ছিলো না
ছিলো না সূর্যও
তবুও কেমন যেন এক মায়াবী নীল আলো,
কই আমার তো ডানা নেই!
অবুও আমি ওপরে আকাশ দেখছিলাম নিচে মাটি,
মাটি থেকে আকাশে তো উড়াল দিলাম
তবু্ও কি আকাশটাকে ধরতে পারলাম!
আচ্ছা, আকাশের উচ্চতা কত?
মাটির মানুষ আকাশ ধরতে যায়, সখ কত!

______________
Phuket, Thailand.

সম্পর্কগুলোতে নিশ্চুপ কলরব থাকে, থাকে বিষণ্ণ কোলাহল

জনঅরণ্যে নির্জনতা কোথায়?
ঘুম কি চাইলেই পাওয়া যায়?

আমি ঘুম খুঁজি রাতের ভাঁজে
তুই সূর্যের ভেতর খুঁজিস চাঁদ
ভুল জায়গায় আমাদের কালক্ষেপণ ভুল জিনিসের খোঁজে
আর সম্পর্কগুলোতে, সম্পর্কচ্ছেদের ফাঁদ;

কত কিছুই তো ভেঙে যায়, কাঁচের মত
ক্রমাগত,
সবচেয়ে বেশী কি ভাঙে জানিস?
সম্পর্ক;
ভাঙায় আপনজনের থেকে পারদর্শী আর কে আছে বল?
ভাঙতে ভাংতেই না হয় দুজনে আরো একটু সম্পর্কের পথ হাঁটি চল;

এই যে এত এত ভাঙচুর!
মূল কোথায় জানিস?
অর্থ তো ঠিকই চিনিস
স্বার্থ তো আরও বেশী
না পাওয়ায় যত অতৃপ্তি, প্রাপ্তির নাম খুশি;

আমার প্রাপ্তি কি জানিস?
অনেকগুলো ভাঙাচোরা সম্পর্ক,
দিন থেকে রাত পর্যন্ত আর সূর্য থেকে চাঁদ
এখন আর মাথার ওপর নেই কোন সম্পর্কের ছাঁদ;

এই যে সম্পর্কের ভাঙা গড়ার অদ্ভুত অনুভূতি
কেমন যেন এক অন্যরকম খালি খালি বোধ জাগে
অথচ সম্পর্কগুলোতে নিশ্চুপ কলরব থাকে, থাকে বিষণ্ণ কোলাহল
তবুও জানিস!
কখনো কখনো না, একদম একা হতেও পাশে একজন মানুষ লাগে;

জানিস! আমিও খুব ভাঙার চেষ্টায় আছি নিজেকে;
উঁহু!
ফুঁড়িয়ে যাওয়ার জন্য নয়
একটু নতুন করে গড়ব বলে;
তোর মত নয়
তার মত নয়
ওর মত নয়,
এবার একটু মানুষের মত গড়তে চাই নিজেকে
পুরনো সব সম্পর্কগুলো ভেঙ্গেচুরে;

এবার একদম একা হব;

পাশে থাকবি তুই?

জীবন আর মৃত্যুর মাঝে ব্যবধান কতদূর?

জীবন আর মৃত্যুর মাঝে ব্যবধান কতদূর?
একটি মাত্রই তো নিঃশ্বাস!
তবে কেন এত অহংকার?

ঘুমঘোরে যখন তলিয়ে যাচ্ছিলাম অতলে
দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছিলো গভীর জলে
কে যেন টেনে তুলেছিল খুব হঠাৎ করে
আমি তাকে দেখি নি
শুধু টানটা বুঝেছি
ভীষণ জোরে হাত ধরে টান,
হ্যাঁ, বেঁচে আছি তো!
এখনো ধুকপুক ধুকপুক নিঃশ্বাস চলে;

জীবন আর মৃত্যুর ফারাক আমি দেখেছি
জীবন দেখেছি সকলের মাঝে
মৃত্যু দেখেছি আয়নার মাঝে
ফারাক বুঝেছি নিজেতে নিজে,
বেঁচে থাকাটাই খুব অদ্ভুত,
তাই না?

কোন একদিন ঘুমঘোরে ডুবে যেতে যেতে
তলিয়ে যাব অতলে,
কারো কি কিছু এসে যাবে?
হয়তো খুব আপন দু চারজনের মন খারাপ হবে
তাও খুব অল্প সময়ের জন্য
একদিন
দুদিন
কিংবা বড়জোর মাস
তারপর পৃথিবীর অক্ষগতি
আর জীবনের এগিয়ে যাওয়ায় প্রয়াস;

একদিন
কোন একদিন, ঘুম থেকে জাগব না
দেখব না পৃথিবীর রূপ রস সুধা,
সেদিনও গাছে গাছে সবুজ থাকবে
সাগর আর আকাশে থাকবে নীল
আকাশে ভাসবে একটি দুটি গাংচিল
শুধু আমিই থাকব না;
যতক্ষণ তাকিয়ে আছি ততক্ষণই জীবন
তারপর কি হলো বা হবে
তাতে আমার কি এসে যাবে!

সময়ের সাথে কে পেড়েছে দৌড়ে ছুটে?

জীবনের দৌড় পেটের ক্ষুধায়
সময়ের দৌড় সময়ের সাথে
আমার দৌড় সময় ছুঁতে
সময়ের সাথে কে পেড়েছে দৌড়ে ছুটে?

আমি এক পা এগোই, আমার সাথে এক পা এগোয় সময়
কোথায় এগুচ্ছি?
জীবনের দিকে?
তাই কি?
একটু আয়নায় পেছনের রাস্তাটা দেখি!
ওহ!
কি বিশাল এক সময়ের পথ পাড়ি দিয়ে এসেছি
তবুও এগিয়েই চলেছি, সময়ের সাথে সাথে;

কোথায় যাচ্ছি?

ঐ তো সামনে মৃত্যুর পদধ্বনি

শুনছি ঠিকই, মন বন্ধ করে রেখেছি।

তোমরা সবাই চেনো নদীটাকে, নদীটার নাম ছিলো নারী

একটা নদী ছিলো
উচ্ছল পাহাড়ি
কলকল ছলছল বয়ে যেত;

একটা নদী ছিলো
মন অভিমানী
যখন তখন অভিমান
অভিমানে ভাটা আর অভিমানে জোয়ার;

একটা নদী ছিলো
খুব, খুব রাগী
যখন তখন রাগে দুকুল ছাপিয়ে বন্যা
পাড়ের মানুষগুলোর কি হবে, কখনো ভাবে না;

একটা নদী ছিলো
বড্ড অবুঝ
তোমরা পাড় ভাঙা দেখেছ
নদী পাড়ের লোক;

নদীর ভালোবাসা দেখেছ কখনো?
সেও কিন্তু দুকুল ছাপানো
ভাসানো, ডোবানো;

আমি নদীর সৃষ্টি দেখেছি পাহাড় থেকে
বেড়ে ওঠা দেখেছি ঝর্ণা হয়ে নেমে গেছে
কৈশোর থেকে যৌবন দেখেছি কলকল ছলছল বয়ে যেতে
নদীর ভালোবাসা দেখেছি, জমিতে উর্বর পলি দিতে
অভিমান দেখেছি জোয়ার ভাটায়
রাগ দেখেছি পাড় ভেঙে দেয়ায়
নদীর নিজের ভেঙে যাওয়া দেখেছি কান্নায়, কত কত শাখা হয়ে
আমি নদীর মরে যাওয়া দেখেছি, রাগ-দুঃখ-অভিমানে;

তোমরা সবাই চেনো নদীটাকে,

নদীটার নাম ছিলো নারী।

___________________
Ban Mai Khao, Thailand.

ওপরতলার মানুষের মনে কি মেঘ জমে না?

ওখানে রাজার প্রাসাদ
ওখানে তোর বাস
ওখানে সবাই যায় না
ওখানে সবাই যেতে পারে না,
এখানে মেঘ উড়ে
এখানে মন পুড়ে
এখানে সবাই রাজা
এখানে কারো আসতে নেই মানা;

আমি ওখানে যাই নি কখনো
এখানে এসেছিলি তুই
কিছু কি দিয়েছিলি?
মন তো ঠিকই নিয়েছিলি,
জানিস! তারপর থেকে এখানে অবিরত বৃষ্টি
চোখে মেঘ জমলে বৃষ্টি তো হবেই!

আচ্ছা!
ওপরতলার মানুষের মনে কি মেঘ জমে না?
কোনদিনও জানা হবে না।
___________________________

ছবি : Phuket FantaSea ภูเก็ตแฟนตาซี