যাযাবর জীবন এর সকল পোস্ট

কোথায় আছে প্রত্যাশা নামের মেয়েটি? কেমন আছে?

কিছু না কিছু প্রত্যাশা থাকে সবার কাছেই
কিছু প্রত্যাশা থাকে সবার মাঝেই,
আমার নেই কেন?

আকাশের কাছে প্রত্যাশা নীলের
কিছু প্রত্যাশা মেঘের
কিছু বৃষ্টির,
পাহাড়ের কাছে প্রত্যাশা ঝর্নার
কিছু প্রত্যাশা পাথরের
কিছু সবুজের,
সাগরের কাছে প্রত্যাশা ঢেউয়ের
কিছু প্রত্যাশা লবণের
কিছু নীলের,
সুরের প্রত্যাশা বাঁশির কাছে
হারমোনিয়ামের কাছে
ভায়োলিনের কাছে,
শিল্পীর কাছে প্রত্যাশা শুধুই গানের
চাঁদের কাছে জ্যোৎস্নার
দিনের কাছে সূর্যের
রাতের কাছে ঘুমের
প্রেমিকের কাছে প্রত্যাশা ভালোবাসার
তোর প্রত্যাশা আমার কাছে আসার,
আর মানুষের কাছে প্রত্যাশা শুধুই মানবতার;

জানিস!
অনেক অনেকদিন আগে প্রত্যাশা নামের একটা মেয়ে ছিলো,
আমাকে নাকি খুব ভালোবাসতো
তারপর অনেকদিন ধরে
ক্রমাগত পাথরের গায়ে ভালোবাসার প্রত্যাশা ঘষে ঘষে
প্রত্যাশার মন থেকে নাকি প্রত্যাশাই খসে গিয়েছিলো,
ভালোবাসার প্রত্যাশা;
কোথায় আছে প্রত্যাশা নামের মেয়েটি?
কেমন আছে?
কখনো জানা হয় নি
কখনো জানতে ইচ্ছে করে নি;

আমার কোন প্রত্যাশাই নেই
কারো কাছেই,
আমি বোধহয় মানুষ নই;

যত ভালোবাসার ছবিই আঁকিস না কেন
আর যত প্রত্যাশাই তোর মনে থাকুক না কেন!
কখনো ভালোবাসার প্রত্যাশা করিস না আমার কাছে
কিংবা মানবতার।

ছবি – Mimo Sukh

এই তো দেখছি চারিদিকে এখনকার চল

আজকালকার প্রেম মানেই বিছানায় যাওয়া
ভালোবাসা মানে মন ছোঁয়ার আগেই শরীর ছোঁয়া
চোখে চোখে ভালোলাগার ঈশারা হতে না হতেই বিছানায় শোওয়া,
বড্ড ভালগার হয়ে গেলো, তাই না?
কি করব বল?
এই তো দেখছি চারিদিকে এখনকার চল
ভালোবাসার ছল;

আমি তোকে ভালোবেসেছি মন ছুঁয়ে ছুঁয়ে
তুই আমায় মন দিয়ে ভালোবেসেছিস প্রেমে বিভোর হয়ে
আমাদের মাঝে শরীর কথা বলে নি
বিছানা ডাকে নি
তাই বলে কি ভালোবাসার কমতি আছে আমাদের মাঝে?
আমরা বড্ড সেকেলে, তাই না?
আমরা মনে মনেই প্রেম করি মন ছুঁয়ে ছুঁয়ে।

তোর তো মন খারাপ হয় না! বুঝবি কি করে?

তুই ঘর বানাস
দেয়াল তুলে তুলে
আমি দেয়াল ভাঙি
পৃথিবী দেখব বলে;

কিছু ফারাক তো আছেই আমাদের চিন্তা চেতনায়!
তোর জোড়া দেওয়ার
আমার ভাঙার;

তুই স্বপ্ন জোড়া দিয়ে দিয়ে ঘুমের দেশে
আমি রাত দেখব বলে নির্ঘুম চোখে
ঘুম বলতে তোর বিছানা
বিছানা বুঝতে চাদরের যতদূর তোর হাত যায়,
আমি বিছানা বুঝি সবুজের মাঝে শুয়ে থাকা
ধানের ক্ষেত
ঘাসের মাঠ
দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ প্রান্তর,
সবুজ তোর কাছে শুধুমাত্র একটি রঙ;
ফারাক তো কিছু আছেই, তোর আর আমার
আমাদের চিন্তা চেতনার;

নীল বলতে তুই আকাশ বুঝিস
একটি মাত্র একক,
আকাশ বলতে আমি অসীম বুঝি
যার মাঝে মেঘের ভেলা
কখনো সাদা কখনো মন খারাপে কালো
যেন এই বুঝি কেঁদে দিলো
কখনো হালকা কখনো ভারী বাতাসে মেঘগুলো কেমন এদিক ওদিক ছোটাছুটি করে চেয়ে দেখেছিস?
কিভাবে দেখবি বল? তুই তো আকাশ বলতেই নীল বুঝিস,
অথচ তোর নীল আকাশটাকে আমি ভোরের আলোয় ধুসর দেখি
আর এক এক সন্ধ্যায় এক এক রকম লাল,
আচ্ছা! বৃষ্টির ফাঁকে আকাশে সূর্যের উঁকি দেখেছিস?
বৃষ্টির ফোঁটায় রংধনু?
তুই তো শুধুই নীল আকাশ নিয়ে পড়ে আছিস, একটি মাত্র এককে,
আমি আকাশ দেখি ধুসর, নীল, লাল আর রংধনুর পরতে পরতে,
আচ্ছা! রংধনু পাহাড় দেখেছিস কখনো?
ফারাক বিস্তর তোর আর আমার
ফারাক রঙ চেনার
আর ফারাক আমাদের চিন্তা চেতনার;

রাত মানেই তোর চোখে ঘুম
রাত মানেই তোর কাছে কালো;
অথচ রাতকে আমি দেখি চাঁদে, দেখি তারার মেলায়
জোনাক দেখেছিস কখনো?
গাছে গাছে, ঘাসে ঘাসে! মাটিতে যেন সহস্র তারা ফুটে আছে
মেঘলা রাতের ধুসর রঙের সাথে তুলনা হয় শুধুমাত্র মনখারাপের
তোর তো মন খারাপ হয় না! বুঝবি কি করে?
চাঁদ দেখেছিস কখনো?
এক এক রাতে চাঁদের এক এক রকম সৌন্দর্য
আমি এক এক রাতে গায়ে মাখি এক এক রকম জ্যোৎস্নালো;
ফারাক তো কিছু আছেই! চিন্তা চেতনায়
তোর আর আমার মাঝে;

তুই ঘর সাজাস
দেয়ালগুলো রাঙিয়ে নানা রঙে
আমি সাদাকালো চোখে পৃথিবী দেখি
দেয়ালগুলো ভেঙে ভেঙে।

কেন যে ভুল করে ভালোবেসেছিলাম তোকে?

মেঘের হাসি
মেঘের কান্না
অনেকটা তোর মতন;

আকাশটা গুমরচ্ছে অনেকক্ষণ
কান্না জমাট বেঁধেছে মেঘের মাঝে
টুপ করে ঝরে পরলেই তো বৃষ্টি
ঠিক তোর চোখের মতন;
কত অশ্রুই না ধরে রাখিস চোখে!
কান্না হয়ে বয়ে যায় যতটুকু তারচেয়ে অনেক বেশী জমা থাকে চোখে
মেঘের মতন
আর বাতাসে কান্নার চিৎকারে মেঘের গর্জন
আকাশটা মাঝে মাঝে গুমরায়, তোর মতন;

অশ্রু কোথায়? সবই তো জল
আর মেঘের ভেতর কান্নার কোলাহল
সাদা মেঘে কি কান্না নেই?
আরে! জল জমেই তো মেঘ
সাদা মেঘেও কান্না লুকানো আছে
বুকে বেশী ব্যথা হলে সাদা থেকে ধুসর হয়ে কালো হয় মেঘ
তারপর টুপ করে ঝরে পরে বৃষ্টির আদলে,
ঠিক হাসতে হাসতে কান্নায় ভেঙে পড়িস তুই যেমন;

জানিস!
যখনই ঠোঁটের সাথে সাথে তোর চোখ হাসে না
তখনই এক মেঘের ছায়া দেখি তোর চোখে
আর পুঞ্জীভূত বেদনার ঘনঘটা তোর হাসির আড়ালে,
তারপর একসময় কালো মেঘ ঘনিয়ে আসে তোর চোখেমুখে
আর টুপ করে কান্না হয়ে নেমে আসে তোর চোখ বেয়ে
বৃষ্টির মতন,
আচ্ছা! তোর মন কি মেঘ?
না কি ভুল দেখি আমি, ক্ষণে ক্ষণে
আর ভুল চোখে ভুল ভাবি আপনমনে;

ধ্যাত!
কেন যে ভুল করে ভালোবেসেছিলাম তোকে?
দেখ! কেমন মেঘ ধরে আছে বুকে।

আবার জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লড়াই

থেমে থাকে না কিছুই
থেমে থাকে না কেওই;

এই যে খুব হুট করে চলে যাওয়া,
– অনুভূতি
– সম্পর্ক
– ভালোবাসা
– কিংবা একটা গোটা মানুষ,
খুব কি যায় আসে?
সময় কি থেমে থাকে?

হয়তো সাময়িক মন খারাপ
হয়তো সাময়িক হাহাকার
তারপর আবার পুরোদমে
– হাসি কান্না
– সুখ দুঃখ
– প্রেম ভালোবাসা
– জীবন,
জীবনটা আসলে এমনই
থেমে থাকে না
থেমে থাকার উপায় নেই;

এই যে আমি তোর জীবনে আমি নেই
এই যে আমার জীবনে তুই নেই
এই যে আমাদের এত এত ভালোবাসা ছিলো
আর এখন তোর আর আমার অনুভূতিহীন মন
কোথাও কি থমকেছে আমাদের জীবন?

এই যে এক একটা জ্যান্ত মানুষ চলে যায় জীবন থেকে
কেও সম্পর্ক ত্যাগ করে
কেও বা চিরঘুমে চিরতরে
খুব কাছের মানুষ
কারো বাবা মা
কারো ভাই বোন
কারো বা সন্তান
কষ্ট তো লাগেই
অনুভূতিতে তো দাগ ফেলেই,
তারপর আবার জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লড়াই
পৃথিবী ঘুরছে অক্ষের ওপর
আর আমাদের জীবনের দৌড়
এর ওর তার আমার তোর;

থেমে থাকে না কেওই
থেমে থাকে না কিছুই
থামার জন্য নয় জীবন
চলার নামই জীবন;

মানুষের থেমে যাওয়া মানেই চিরঘুম,
তারপর পৃথিবীর কি হলো
পরিজনের কি হলো
কি এসে যায়?
আমি তো মাটির ঘরে
চিরঘুমে
ঘুম শয্যায়।

কাল থাকবো তো আমি? তোমাদের মাঝে !!

এই তো ছিলো
কালও তো সে ছিলো
আমাদের মধ্যেই ছিলো
কি সুন্দর! হাসিখুশি সবার সাথে মিলেমিশে;
কাল সন্ধ্যায় চায়ের কাপে সে আমাদের ছোট্টবেলার টুকরো গল্পগুলোর স্মৃতিচারণ করছিল
খুব সাধারণ গল্প
আমাদের ছেলেবেলার ছোট ছোট চাহিদা আর বিশাল আনন্দ বেদনার গল্প
আমরা বাকি সবাই মিলে আনন্দের স্মৃতিতে কখনো হেসে কুটিকুটি হচ্ছিলাম
কখনো বা কোন দুঃখের স্মৃতিতে মন বিষণ্ণতায় ভরে উঠছিল;
আসলে আমাদের ছোট্টবেলা ছিলো কি ভীষণ অন্যরকম
চাইলেই কি আর সব কিছু পেতাম তখন?
আমি মাঝে মধ্য আশ্চর্য হয়ে ভাবি
– আজকালকার বাচ্চারা কি সৌভাগ্য নিয়েই না জন্মেছে!
শুধু চাইতে দেরী, বাবা মা চেষ্টার ত্রুটি রাখে না আবদার মেটাতে;
আর আমাদের সময়!
বাবা মায়ের হয়তো ক্ষমতা ছিলো দেবার
তবে আমাদের সাহস ছিলো না অতি চাহিদার,
বড়জোর দুই ঈদে নতুন জামা
কিংবা বছরে ছমাসে বাইরে একদিন কোথাও চিনে রেস্টুরেন্টে খাওয়া;
খেলার জন্য একটি আস্ত বল?
নিজের ক্রিকেট ব্যাট?
উঁহু! এত সাহস ছিলো না বাবা,
খুব বড়জোর পাঁচ টাকা দশ টাকা চাঁদা তোলা
তারপর সবাই মিলে একটি নতুন ফুটবল
ক্ষুদ্র চাহিদার কি অসীম পরিতৃপ্তিই না ছিলো আমাদের মাঝে!
আর আজকাল?
তৃপ্তি কথাটা যেন ডিকশনারির শোভা
আর ছেলেপেলের অসীম চাহিদা;

কাল সন্ধ্যায়
গতকাল সন্ধ্যাতেই ঘরোয়া আড্ডায় একসাথে ছিলাম আমরা
হাসি আনন্দে,
আর আজ!
কোথায় সে?
দুপুর না গড়াতেই তাকে রেখে এলাম ছোট্ট মাটির ঘরে
কি ভীষণ ফারাক কাল আর আজকের মাঝে;

জীবনটা বড্ড অদ্ভুত
তার থেকেও অদ্ভুত মরে যাওয়া,
কাল ছিলো আজ নেই
এই আছি এই নেই
বড্ড কেমন, তাই না!
একটা রক্ত মাংসের গোটা মানুষ
হঠাৎ করেই মৃত বনে যায়,
বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়
অথচ এর থেকে সত্যি তো আর কিছু নেই,
তাই না?
কেমন আছে সে?
কি করছে ওখানে?
একাকী ছোট্ট ঐ ঘরে;

আছি আর নেই এর কথা ভাবলেই বড্ড মন কেমন করে,
আচ্ছা!
কি সব হাবিজাবি লিখছি মনখারাপের রাতে?
কাল থাকবো তো আমি? তোমাদের মাঝে, তোমাদের সাথে;
কে জানে!!

সময়ের ভাঁজে শুধু শুধুই সময় ক্ষেপণ

মাঝে মধ্যে অলস রাত বড্ড অন্যরকম
মাঝে মধ্যে সময়ের ভাঁজে শুধু শুধুই সময় ক্ষেপণ;

আমি রাতের ভাঁজ দেখি ঘুম ঘুম চোখে
রাতের ভাঁজে অন্ধকার থাকে
অন্ধকারের ভাঁজে কালো
অথচ চাঁদটা উঠতেই অন্ধকারের ভাঁজ খুলে যায়
জ্যোৎস্না দেয় আলো,
আচ্ছা! চাঁদটা কোথায় লুকিয়ে থাকে?
প্রতিরাতে কেন জ্যোৎস্না পাই না ছুঁতে?

সবারই মনের ভাঁজে কোথাও না কোথাও লুকিয়ে থাকে অন্ধকার
কেও কেও হঠাৎ হঠাৎ চাঁদ খুঁজে পায়
কেও অন্ধকার ভালোবেসে অমাবস্যায় ঘুমায়,
আমি রাত ক্ষেপণ করি নির্ঘুম তাকিয়ে
কাওকে তো অন্ধকারের সঙ্গী হতে হবে!

দেখ, দেখ!
কেমন অন্ধকার নেমেছে ঝাঁপিয়ে
তোর ঘুম ঘুম চোখ ছাপিয়ে,
আয় না জেগে থাকি আরেকটি নির্ঘুম রাত
তুই
আমি
আর ঘুমন্ত কালো চাঁদ।

দেখতে ইচ্ছে করে রংধনু সাজে

সাজিস না কেন রে তুই?
রঙিন সাজে;

বাগান দেখিস না? ফুলের সাজে,
পুরোটা বাগান কেমন হেসে হেসে ওঠে সেজে!
আমার জন্য, তুই সাজবি কবে?

আকাশ দেখেছিস কখনো? বৃষ্টির সাজে,
মেঘগুলো দেখেছিস কেমন সাদাকালো হয় সেজে!
আমার জন্য, তুই সাজবি কবে?

সন্ধ্যা দেখেছিস কখনো? লালের সাজে;
আকাশ কত রঙেই না সাজে, সন্ধ্যাকে লাল করে;
আমার জন্য, তুই সাজবি কবে?

রাত্রি দেখেছিস কখনো? জ্যোৎস্নার সাজে;
কালো রাত্রিগুলোও হাসে, জ্যোৎস্না যখন সাজে;
আমার জন্য, তুই সাজবি কবে?

বাগান সাজুক, ফুলের জন্য
সকাল সাজুক, ভোরের জন্য
সন্ধ্যা সাজুক, রাত্রির জন্য
রাত্রি সাজুক, জ্যোৎস্নার জন্য
আকাশ সাজুক, মেঘের জন্য
বৃষ্টি সাজুক, রংধনুর জন্য;

তুই না হয় একবার সাজ
আমার জন্য,
রঙিন শাড়িতে তোকে মুড়িয়ে
রেশমি চুড়িতে হাত ছড়িয়ে
কালো কাজলে দুচোখ এঁকে
চুড়ির রঙে, রঙ মেলানো টিপে
ঠোঁটটা রাঙিয়ে টকটকে লাল লিপস্টিকে,
শুধু একবার,
আমার জন্য;

তোকে একবার বড্ড দেখতে ইচ্ছে করে
রংধনু সাজে।
💕💕💕

অভাবী আমরা, প্রাচূর্যতার মাঝে ডুবে থেকে

বড্ড অভাবী আমরা
মানসিক ভাবে,
অভাবী আমরা, স্বভাবে;
অভাব আমাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে
কোষে কোষে
অভাবী আমরা, প্রাচূর্যতার মাঝে ডুবে থেকে;

অভাব নেই কার ঘরে?

কারো খাদ্যের অভাব
কারো বস্রের
কারো টাকার অভাব
কারো মাথা গোঁজার ঠাঁই এর
কারো সুখের অভাব কারো দুঃখের
কারো ভালোবাসার কারো ভালোবাসার মানুষের,
আর কারো কারো তো অঢেল প্রাচূর্যতার মাঝে ডুবে থেকেও অভাব মনুষ্যত্বের;

আমি নিজেকে বলি অভাব-বিলাসী,
মনে রংবেরঙের ইচ্ছে অভাব তৈরি করি
আর অভাবের বিলাসিতায় হাসি;

মানুষের প্রয়োজন কতটুকু?
সাড়ে তিন হাত মাটি।

হয়তো এখনো ভালো করে খোঁজাই হয় নি

খুঁজিস কাকে?
অস্থির হয়ে;

আমরা অস্থির হই খুঁজে ফিরে
অস্থির হই ভুল সময়ে খুঁজে
অস্থির হই ভুল জায়গায় খুঁজে,
আছে,
কেও না কেও তো আছেই
প্রত্যেকটা মানুষের জন্য কেও না কেও নির্দিষ্ট হয়ে;

হয়তো এখনো দেখা মেলেনি
হয়তো এখনো ভালো করে খোঁজাই হয় নি
তাই হয়তো তাকে খুঁজে পাস নি,
তবে আছে,
কেও তো একজন আছেই,
মাঝে মাঝে কিন্তু খুঁজতে হয় মনের ভাঁজে
ওখানে দেখেছিস ভালো করে উল্টেপাল্টে?

দেখিস!
একদিন নিশ্চয়ই খুঁজে পাবি তাকে;

সেদিন খুব বৃষ্টি হবে সারাদিন
উথাল-পাথাল জ্যোৎস্না হবে সারারাত,
সেদিন তুই ভিজবি
সাথে সে,
বৃষ্টি
জ্যোৎস্না
আর ভালোবাসার কান্না-বিলাসে।

আমি এত রঙের কথা কেন বলছি জানিস?

দেখ না কেমন বৃষ্টি নেমেছে আজ!
কোথায় তোর জারুল বকুল সাঁজ?

রাস্তায় রাস্তায় লাল কৃষ্ণচূড়া ফুটে আছে
লালের ফাঁকে ফাঁকে হলুদ সোনালু
জারুলগুলো দেখেছিস? বেগুনীর যে কত রঙবাহার হতে পারে!
একদম তোর মনের মতন;

আমি এত রঙের কথা কেন বলছি জানিস?
বাইরে চেয়ে দেখ,
ঝুম বৃষ্টি নেমেছে;
বৃষ্টিতে জ্যোৎস্নার রঙ বসে না
তাই বলে কি চাঁদে রঙ লাগে না?
আমি তুইহীনা মনের রঙ গুলোচ্ছি ফুলের রঙের সাথে
দেখ, দেখ!
অশ্রুর রঙ লাল হয়ে গেছে;

আচ্ছা!
রাতে বৃষ্টির রঙ দেখতে কেমন?

রাতে কি রঙ দেখা যায়?
নিকষ কালো রাতে!
রাতের সাথে লাল মিশালে দেখতে কেমন লাগে?
হলুদ কিংবা বেগুনী?
কোনো রঙ বোঝা যাচ্ছে কি?

অথচ দেখ!
রাতের সাথে চাঁদ মিলতেই কেমন জ্যোৎস্না রঙ!
তুই মিলে থাকিস আমার সাথে ঠিক যখন,

তুইহীনা?
বড্ড অন্ধকার,
দিন কিংবা রাত।

সূর্যোদয়ের কিংবা সূর্যাস্তের শব্দ শুনেছিস কখনো?

আলোর একটা শব্দ থাকে
দ্রিম দ্রিম দ্রিম দ্রিম মাদলের ঢাক,
বুকের ভেতর বাজে;
আলোর একটা শব্দ থাকে
কান ফাটানো নৈঃশব্দ্যের চিৎকার,
মনের ভেতর লাগে;

সূর্যোদয়ের কিংবা সূর্যাস্তের শব্দ শুনেছিস কখনো?
ছেড়া কষ্টের হাহাকার
ভালোবাসার চিৎকার
একটানা বেজেই চলে
আলো কিংবা অন্ধকার হওয়া পর্যন্ত;

ধ্যাত, তুই কিভাবে শুনবি বল?
ভালো তো বাসিস নি কখনো;
একবার যদি তোকে সূর্যোদয় দেখাতে পারতাম!
অথবা একবার যদি তোকে সূর্যাস্তের গান শোনাতে পারতাম!
তারপর আমি মাদল হতাম কিংবা নিস্তব্ধ;

কষ্ট চাপিয়ে দিলে নাকি কষ্ট কমে যায়,
আমি ভালোবাসা চাপিয়ে শুনতে চাই তোর ভালোবাসার চিৎকার।

ভালোবাসায় কি হিসেবনিকেশ চলে?

ভালোবাসায় কি হিসেবনিকেশ চলে?
অথচ তুই বুঝে নিতে চাস কড়ায়গণ্ডায়;

ভালোবাসায় আমাদের শুধুই চাইই চাই
দেবার বেলায় আমি নাই,
নিজেরটা বুঝে নিতে চাই ষোলো আনা,
অন্যের অধিকার বুঝিয়ে দিয়েছি কি এক আনা?
অথচ শুনেছি ‘ভালোবাসা নাকি বিলিয়ে দেয়া’
আরে বাবা,
স্লোকে জীবন চলে না;

যেদিন আমাদের প্রেম হয়েছিল
সেদিনই আমার প্রথম সূর্যোদয়ের সকাল
ভালোই চলছিল সূর্যে সূর্যে দিনগুলো,
যেদিন থেকে অধিকার ফলানো শুরু করলি
সেদিন থেকেই মনে বিকেলের ঢলা সূর্য,
তবুও খারাপ চলছিলো না
নিত্য খুনসুটি আর মাঝে মধ্যে টোকাটুকি
কখনো বিকেলের বিষণ্ণ গোলাপ আর কখনো অস্তগামী চায়ের কাপে সূর্য;
যখনই ভালোবাসার প্রতিদান হিসেব কষতে শুরু করলি
তখনই সূর্যাস্ত,
তারপর আর কখনো সূর্য দেখিনি আমি;
আরে বাবা, হিসেব কষে কি আর ভালোবাসা হয়?
নাকি ভালোবাসায় হিসেব কষতে হয়?

চোখের ভাষা পড়েছিস কখনো?
ভালো করে চোখ চেয়ে দেখ
ওখানে ষোলো আনাই তোর,
তখনও
এখনো,
অথচ হিসেব কষতে কষতে সূর্য নামিয়ে দিলি রাতের কোলে,
অন্ধকারে হিসাব কষবি কি করে?

হিসেবের খাতা থেকে বের হয়ে দেখ
তবেই না জ্যোৎস্না দেখবি,
চাঁদ ডুবে যাওয়ার পরেই তো সূর্যোদয়
যদি ভালোবাসা থাকে হৃদয়ে;

আয়, আরেকবার চাঁদ ডুবিয়ে দেই
ভালোবাসার সূর্যে;
হিসেব না কষে।

আজকাল কেই বা মনে রাখে পুরনো কথা?

একটা সময় ছিলো কানের
একটা সময় ছিলো আমার শোনার,
একটা সময় ছিলো ঠোঁটের
একটা সময় ছিলো তোর কথার
একটা সময় ছিলো ফোনের
আমাদের দুজনার;

তোর ঠোঁট আমার কান
গরম হতো ফোন
মাঝে মাঝে রেগে গিয়ে হ্যাং হয়ে যেত
কখনো মোবাইলের ব্যালেন্স ফুঁড়িয়ে যেত
তোর কথা কি ফুরোতো?

মনে আছে সে দিনগুলোর কথা?
আজকাল কেই বা মনে রাখে পুরনো কথা?

মনে আছে তোর চলে যাওয়া?
বাঁধা দেই নি সেদিন
কেন চলে গিয়েছিলি জিজ্ঞাসা করি নি একবারও,
আমি এমনই,
তবুও কেও কেও চলে যায় কারণ ছাড়াই;
আমার মন খারাপ হয় কি না?
ধ্যাত!
গাছের আবার মন থাকে নাকি?

আজ অনেকদিন পর আবার নতুন করে তুই,
কোন বাঁধা নেই আজও
কেন ফিরে আসলি জিজ্ঞাসা করি নি একবারও
আমি এমনই,
কেও কেও ফিরে আসে কারণ ছাড়াই;
কি বললি? আমি খুশি হয়েছি কি না?
ধ্যাত!
গাছের আবার মন থাকে নাকি?

পাখি আসে
পাখি বসে
পাখি উড়ে চলে যায়,
গাছ দাঁড়িয়ে থাকে ঠায়।

গাছেরও মন আছে,
গাছ হাসে
গাছ কাঁদে;

গাছের হাসি দেখেছ তোমরা?
কান্না?
গাছ সবুজ হয় হাসতে হাসতে,
পাতা ঝরায় কাঁদতে কাঁদতে;
কেও বোঝে না।

তোকে না চাওয়ার এগুলো কি হতে পারে কারণ?

সুন্দর তো সবাই দেখে
আমি দেখি তোকে,
সুন্দর সবাই চায়
আমি চাই তোকে;

কপালে পড়ে থাকা তোর এলোমেলো চুল
ঘর্মাক্ত নাক
টোল বিহীন মসৃণ গাল
অনুভূতিহীন চোখ
বাঁকানো ঠোঁট
গলার ওপরের ছোট্ট তিলটা
সব
সবকিছুই আমার চাই;
আর তোর রাগ!
অভিমান!
আর সকল বোকামি আচরণ!
আরে, তোকে না চাওয়ার এগুলো কি হতে পারে কারণ?

আমি তোর গায়ের রঙ দেখি না
দেখি তোকে
আমি সৌন্দর্য বুঝি না
বুঝি তোকে,
তুই সেজে থাকলি না আটপৌরে
তাতে আমার কি যায় আসে?
আমি চাই তোকে
শুধুই তোকে;

বাইরে চেয়ে দেখ! কেমন এলোমেলো রৌদ্দুর
আয় ছাতার তলে গরম মাখি দুজনে;

দেখ, দেখ! ঐ যে অস্তগামী বিষণ্ণ লাল সূর্য
আয় বিষণ্ণতায় ডুবে যাই ঠোঁটে ঠোঁটে;

চেয়ে দেখ! কেমন উথাল পাথাল জ্যোৎস্নার ঢেউ
চল না একবার, জ্যোৎস্নাস্নানে;

ঐ দেখ! ঝুমঝুমান্তি বৃষ্টি নেমেছে
আয় ভিজি দুজনে;

আমি ভালোবাসা বুঝি না রে,
বুঝি তোকে।