আলস্য ভোগ করতে হলে আপনাকে একটি বিশেষ শ্রেণীর লোক হতে হবে, অথবা আপনার পর্যাপ্ত অর্থ-সম্পদ থাকতে হবে। তা যদি না হন বা না থাকে তাহলে আপনার আলস্যের সুযোগটা ঘেচাং করে কেটে নেয়া হবে।
ধরুন একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক শ্রমিক দুনিয়ার যত পিন দরকার তা প্রস্তুত করছে। ধরুন তারা দিনে ৮ ঘণ্টা কাজ করে। এবার আমাদের প্রযুক্তির কল্যাণে এমন একটি উপায় পাওয়া গেল যার মাধ্যমে প্রতিটি লোক দ্বিগুণ পিন উৎপন্ন করতে পারবে সেই একই পরিমাণ সময়ে।
কিন্তু দুনিয়াতে দ্বিগুণ পিনের প্রয়োজন নেই, এবং পিনের দাম এত সস্তা যে এর দাম কমালেও বাড়তি পিন কেউ কিনবে না। এখন সমস্যা হচ্ছে – পিন শ্রমিকরা যদি দিনে ৮ ঘণ্টাই কাজ করে তবে প্রয়োজনের দ্বিগুণ পিন তৈরি হবে। ফলে অর্ধেক পিন তৈরি কারখানার মালিক হবে দেউলিয়া।
এখানে এই সমস্যার যে সমাধানটা করা হয় তা হচ্ছে – অর্ধেক শ্রমিক ছাটাই।
এই ছাটাইয়ের ফলে অর্ধেক শ্রমিক হচ্ছে বেকার আর কর্মরত বাকি অর্ধেক হচ্ছে অতিকর্ম ভারে ভারাক্রান্ত।
এই সমস্যার সবচেয়ে সহজ সমাধান ছিল পিন প্রস্তুত কাজে নিয়োজিত লোকগুলি এখন থেকে ৮ ঘনটার পরিবর্তে ৪ ঘণ্টা কাজ করবে এবং বাকি সব কিছুই আগের মত চলতে থাকবে। এর ফলে সমস্ত শ্রমিকরাই পেতো তাদের বহু আকাঙ্ক্ষিত আলস্যের স্বাদ। কিন্তু তা হয় না……
আসল ব্যাপার হল দরিদ্র লোকেরা আলস্য ভোগ করুক তা ধনীরা কখনই চায় নি। শ্রমিকদের এই আলস্য ভোগের ভাবনাই তাদের সর্বদা আহত করতো।
উনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে একজন শ্রমিক দিনে প্রায় ১৫ ঘণ্টা কাজ করতো, শিশুদেরও প্রায় তাই করতে হতো। কমসে কম ১২ ঘণ্টা কাজতো করতেই হতো। অন্যের ব্যাপারে নাকগলানো যাদের অভ্যাস (মানবাধিকার কর্মী) তারা যখন খোঁচাতে শুরু করলো এতো দীর্ঘ সময় কাজ করার বিষয়টি নিয়ে, তখন তাদের বলা হল যে- “কাজ বয়স্কদের সুরাপান থেকে বিরত রাখে, আর শিশুদের বিরত রাখে অপকর্ম থেকে।”
আপনার কি মত এই যুক্তি সম্পর্কে?
“বার্ট্রান্ড রাসেল”-এর “আলস্যের জয়গান” নামক বই এর প্রথম অধ্যায়ের কিছু অংশবিশেষ আমার মত করে উপস্থাপন করলাম।