বিভাগের আর্কাইভঃ শ্রেফ মজা

ঈদ শপিং

নিউ মার্কেট আর গাউসিয়াতে চলছে কেনা কাটা
দেশটি জুরে কোথাও আর নেই যে কোন ফাকা।
এখান থেকে ওখানেতে চলছে ছোটাছুটি
কোন বাজারে পাবে পোশাক হবে মোটামুটি।

দামে কম লাগবে ভাল দেখতে হবে খাসা
পড়শিরা সব বলবে ভাল এইতো এখন আশা।
চমকে দেব নতুন কাপড় নতুন ডিজাইন
হাল ফ্যাশনের ছড়াছড়ি কোনটা হবে ফাইন।

এখানে নয় ওখানে চল গিন্নী ধরে বায়না
হাটা হাটি ঘোরা ঘুরি আর যে দেহে সয় না।
ভিউ প্যালেসে এসে বধূ শাড়ি নিয়ে হাতে
দাম শুধাল দোকানীরে আমায় নিয়ে সাথে।

ষাট হাজারে দিতে পারি, প্যাকেট করব নাকি
এটাই আসল বেনারসি আর যে সকল মেকি।
দামটি শুনে আঁতকে উঠি, একি হলো হায়
পকেট কখন উবে গেছে প্রাণটা বুঝি যায়!

গিন্নী আমার অতি ভাল সাহস করে বলি তারে
চটপটি আর ফুচকা খেয়ে এবার চল ঘরে।
কালকে তোমায় শাড়ি দেব, আর যা আছে কিছু
কেন তুমি মিছে আমায় মন ভুলিয়ে আনলে পিছু?

কেমন করে বলি তাকে পকেট আমার ফাঁকা
কোথা থেকে পাব এখন এত গুলি টাকা?
চুপটি করে বসে আছি মাথায় দিয়ে হাত
বুঝতে তিনি চায়না মোটে কোন অজুহাত।

চারিদিকে লাল নীল জ্বলছে বাতির বাহার
এবার বুঝি ভাঙবে আমার এত দিনের সংসার।

বিঃদ্রঃ দয়া করিয়া আপা এবং ভাবী সাহেবরা মনে কোন সংশয় রাখিবেননা কিংবা কাওকে এমন করে কষ্টে ফেলিবেননা ইহা কেবল মাত্র হাসির ইন্ধন হিসেবেই মনে করিবেন। ক্ষমা প্রার্থী!

ব্রেকিং: শোক সংবাদ

ফেসবুক সেলেব্রেটির হার্ট আট্যাকে মৃত্যুঃ দায়ী ফেসবুক!
|নিজস্ব সংবাদদাতা|

বিশিষ্ট ফেসবুক সেলেব্রেটি, অনলাইন একটিভিস্ট ও ব্লগ কিংবদন্তী ম. গা. চৌধুরী আজ রাত ৯:৪৫ মিনিটে হার্ট আট্যাকে মৃত্যুবরন করেছেন। তুমুল জনপ্রিয় এই ফেসবুক সেলেব্রেটি মৃত্যুকালে স্ত্রী, ফ্রেন্ড লিস্টে ৫০০০ ফ্রেন্ড, লক্ষাধিক ফলোয়ার এবং কয়েকশো ব্লগ পোস্ট আর কয়েক হাজার স্ট্যাটাস রেখে গেছেন।

বিশ্বস্ত সূত্র জানায় তিনি প্রতিদিনের মত আজ সন্ধ্যায় ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস শেয়ার করেন। উল্লেখ্য, আপলোডের সাথে সাথে তার অতি দীর্ঘ পোস্টেও লাইকের সংখ্যা ৩৮৮টা ছাড়িয়ে যেত। প্রথম দশ মিনিটে লাইকের সংখ্যা ১০,০০০ হাজারের সীমা অতিক্রম করত। কিন্তু আজকের পোস্টে প্রথম বিশ মিনিটে কোনো লাইক না দেখে তিনি তীব্র মানসিক আঘাতে ভারসাম্য হারালে অচেতন অবস্থায় স্থানীয় ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়।

ভক্তরা অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে ক্ষোভের সাথে জানান আজ সন্ধ্যায় তারা অপেক্ষায় থাকলেও ফেসবুকে ম. গা. চৌধুরীর নতুন পোস্ট দেখতে পান নাই। এর পিছনে গভীর ষড়যন্ত্র আছে। ভক্তরা ফেসবুককে দায়ী করে জুকারবার্গের পদত্যাগ ও তাকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের দাবীতে ফেসবুকেই শতাধিক ইভেন্ট খুলেছে এবং জার্মানীর দূতাবাস ঘেরাওয়ের কর্মসূচী ঘোষণা করেছে।

অপরদিকে ম. গা. চৌধুরীর ছোটো ভাই বলেন, “আজ সকালে ভাবী রাগ করে বাপের বাড়ি চলে যান। ভাইয়া জাতির স্বার্থে খালি বাসায় পুরানো বান্ধবীকে নিয়ে জীববিজ্ঞান ও সহজিয়া দেহতত্ব নিয়ে গভীর গবেষণায় লিপ্ত হন। সন্ধ্যায় ‘ডারউনের উপর লালনের প্রভাব’ বিষয়ে একটি জ্ঞানগর্ভ স্ট্যাটাস শেয়ার করেন। কিন্তু দিনভর গবেষণা কাজের ক্লান্তি আর রাতেই ভাবীর ফিরে আসার ফোন পেয়ে ভাইয়া প্রাইভেসি সেটিংসের ‘অনলি মি (only me) কে ‘পাবলিক (public) না করেই স্ট্যাটাস পোস্ট করেছিলেন। ফলে তিনি ছাড়া অন্য কেউ পোস্ট দেখতে পায় নাই। ভাইয়া নিজের পোস্টে বিশ মিনিটে লাইক না দেখে এতটাই উত্তেজিত হয়ে পরেন যে প্রাইভেসি সেটিংসের ব্যাপারটা তার চোখ এড়িয়ে যায়। তিনি তিন চারবার “ছাগু জুকারবার্গ, লেঞ্জা ইজ এ ভেরি ডিফিকাল্ট থিং টু হাইড”- বলে জ্ঞান হারান। রাত ৯:৪৫ মিনিটে চিকিতসকেরা তাকে মৃত ঘোষনা করেন।

তার মৃত্যুতে ফেসবুক আর ব্লগ জুড়ে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তাকে কেন্দ্র করে পোস্টে পোস্টে ভরে উঠছে ব্লগ আর ফেসবুক। আগামীকাল সকাল ১০টায় ফেসবুকের জানাজা গ্রুপে তার ভার্চুয়াল জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। নিখিল বাংলাদেশ আঁতেল পরিষদ ও সম্মিলিত ঢংস্কৃতিক জোট এক বিবৃতিতে তাকে শহীদ বুদ্ধিজীবী গোরস্থানে দাফনের দাবী জানিয়েছে।

পরীক্ষা

একাডেমিক পরীক্ষা হলে তিন ধরনের পরীক্ষার্থী থাকে।
এক, যারা পুরো বই পড়ে পরীক্ষা দিতে আসে না। শুধু মাত্র সাজেশনের উপরে ভরসা করে।
দুই, যারা সম্পূর্ণ বই পড়ে পরীক্ষা দিতে আসে। কিন্তু সঠিক উত্তর দিতে বার বার গুলিয়ে ফেলে।
তিন, যারা সম্পূর্ণ বই ও রেফারেন্স পড়ে আসে এবং সঠিক উত্তর লেখে।
পরীক্ষা হলে এই তৃতীয় শ্রেণির পরীক্ষার্থী কখনই দশ পনের শতাংশের বেশি হয় না। তাই একাডেমিক পরীক্ষায় কখনই কোন ছাত্রছাত্রীকে খুব কম বা ফেল করার মত প্রশ্ন অনুযায়ী নম্বর দেওয়া উচিত নয়। আর প্রশ্ন যেন মোটামুটি সহজ ও প্রাঞ্জল হয়। ঘোরানো প্যাঁচানো প্রশ্ন না করাই উচিত। যেখানে এই নম্বরের উপর ভিত্তি করে কোন শিক্ষার্থী তার ভবিষ্যৎ গড়ে। যার পাওয়া উচিত সে যেন সর্বোচ্চ নম্বর পায়।
তাহলে সেই পরীক্ষার্থীর মধ্যে ব্যক্তি কনফিডেনস গড়ে উঠবে। ভবিষ্যতে সে অনেক বড় কিছু করতে পারবে।
যদি সে একটু কঠিন ঘোরানো প্যাঁচানো প্রশ্নের জন্য ভালো নম্বর না পায় তাহলে ভবিষ্যতে আরো ভালো কিছু পড়ার সুযোগ সে পাবে না। দেখা গেছে, এ রকম বহু ছাত্রছাত্রী আছে যারা দশম দ্বাদশে ভালো নম্বর পায় নি কিন্ত যাই হোক করে ভালো কিছু পড়াশুনা করার সুযোগ পেয়ে গেল। তারপর সেই ছাত্রছাত্রী বিশ্ব জয় করেছে। এবং সব দিক দিয়ে সেরা হয়েছে।
কোন ছাত্রছাত্রী যদি এই একাডেমিক নম্বরের জন্য কোন ভালো সুযোগে থেকে বঞ্চিত হয়ে যায় তাহলে তার চেয়ে দুর্ভাগ্যের আর কিছু হতে পারে না।
সহজ করে বলা যায় একবার জয়েন্টে সাফল্য পাওয়া অনেক ছাত্রছাত্রী একাডেমিক পরীক্ষায় দু একটা বিষয় অনুপাতে ৭৫ শতাংশ নম্বর পায় নি ফলে সে সারা জীবনের জন্য ডাক্তারি বা ইঞ্জিনিয়ারিং-এ পড়া থেকে বঞ্চিত হয়ে গেল। সেইসব ছাত্রছাত্রী খারাপ পরীক্ষার্থী তা কিন্তু বলা যায় না। বরং বলা যেতে পারে সেবার প্রশ্নপত্র ঘুরিয়ে প্যাঁচিয়ে কঠিন করে করা হয়েছিল। মোট পরীক্ষার্থীর প্রায় ২০/২৫ শতাংশ ছাত্রছাত্রী প্রায় প্রতি বছর এই রকম অবস্থার মধ্যে পড়ে।
মনে রাখতে হবে, শুধুমাত্র একাডেমিক নম্বরের উপর ভিত্তি করে কোন কাজ পাওয়া সম্ভব নয়। বরং একাডেমিক পরীক্ষার নম্বরের উপর ভিত্তি করে কাজ পাওয়া যাবে এরকম বৃত্তিমূলক পড়াশুনা করতে পারে। যা সম্পূর্ণরূপে অন্যধারার পড়াশুনা। তাই একাডেমিক পরীক্ষায় কঠিন ঘোরানো প্যাঁচানো প্রশ্ন করা উচিত নয়।

কবিতার রঙ্গমঞ্চ

– আপনার পেশা কি? মানে আপনি কি করেন?
প্রশ্নের উত্তর দিতে চায় নি কবি। উল্টে কবি সম্মেলন মঞ্চে কবিতা পড়ে শোনাল – দুমুঠো ফুটিয়ে খাব। এক পৃথিবী লিখব। সবার হৃদয়ে আকাশ আঁকব।
কবিতা পড়া শেষ করে আর আমার কাছে এসে বসল না। তাই তার পাশে এক সুন্দরী মহিলা কবি বসেছিলেন তিনিও ধীর পদক্ষেপে তার সিট ছেড়ে উঠে গেলেন।
সেখানে কবির পাশে আর সিট ফাঁকা নেই। কবি তিনিকে দেখে পাশের ভদ্রলোককে কিসব বললেন। তাতে ভদ্রলোক তিনিকে দেখে কবিকে বললেন – শিওর। আসুন। বসুন।
ভদ্রলোক উঠে এদিক ওদিক তাকিয়ে সিট খুঁজতে লাগলেন। আমি হাতছানি দিয়ে ডাকলাম। ভদ্রলোক এসে আমার পাশে বসলেন । বললেন – ধন্যবাদ।
আমি হেসে জিজ্ঞেস করলাম – আপনি কি করেন?
– আমি শিক্ষক।
– কবি নন?
ভদ্রলোক হো হো করে হেসে ফেলল। শব্দ একটু জোরে হয়ে গেল। তাই লজ্জা পেয়ে বললেন – কবি সম্মেলনে এসেছি তাই কবি তো অবশ্যই। শুধু কবিতা লেখা বা গল্প লেখার পেশা, অনেকটা জীবনকে ফাঁকি দেওয়ার মত। তবে আমি শিক্ষকতা করি। আর অবসরে এসব চর্চা করি।
আমি মনে জোর পেলাম। বললাম – আপনার সঙ্গে আমার জমবে। তার মানে কবিতা গল্প লেখার জন্য আপনি আপনার কর্মকুশলতায় কোন ফাঁকি দেন নি। তাই তো?
ভদ্রলোক আমার দিকে তাকালেন। বললেন – তা কী করে হয়? আমি শিক্ষকতায় ফাঁকি দিলে আগামী শিক্ষা সমাজ ফাঁকিতে পড়বে। কিন্তু ছাত্রছাত্রী ঠিক তার পড়াশুনা করে নেবে। তাই প্রশাসন পদ্ধতি চাইবে আর শিক্ষক নিয়োগ করে কি হবে?
আমি কবির সাথে হাত মেলালাম। সামনে বসা নিজেদের মধ্যে প্রায় মুখে মুখ লাগিয়ে গল্প করা সেই কবি ও কবিনীকে দেখিয়ে বললাম – ওই দেখুন, কবি ও তার উদ্দেশ্য। কিছু শুনছে কী?
আমার পাশে বসা কবিও হাসলেন। বললেন – আমিও তাই ভাবি কতভাবে কবিতা লেখা হয়।
– তাই তো। এবার শোনা যাক কবিতার রঙ্গমঞ্চের কিছু কবিতা।

শেয়াল ও বুদ্ধিজীবী

একবার এক বুদ্ধিজীবী বনের পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন। পথে একদল শেয়ালের সাথে উনার দেখা হয়ে গেল। এত শেয়াল দেখে তিনি ভয় পেয়ে গেলেন। তিনি দৌড়ে পালাবেন কিনা সেটা ভাবতে ভাবতে দেখলেন, সে পথ নাই। পেছনের দিকেও আরো একপাল এসে হাজির হয়েছে। এত শেয়াল দেখে তাঁর ভিরমি খাওয়ার উপক্রম। তিনি ঠিক কোন দিকে দৌড় দিবেন সে সিদ্ধান্ত নিতে নিতে তারা তাঁকে চারদিকে ঘিরে দাঁড়াল। এই প্রেক্ষিতে কি করনীয় সেটা নির্ধারণে তিনি তাঁর উৎকৃষ্ট মগজ হাতড়ে কোন উপায় বের করতে পারলেন না। ভয়ে নিজের চোখ বন্ধ করে নিজেক শেয়ালের পালের হাতে সমর্পণ করে দিলেন।

দীর্ঘক্ষণ চক্ষু বন্ধ রাখার পরে দেখলেন নিজের উপর কোন ধরনের আক্রমন এমন কি আঁচড়েরও আভাস পাওয়া গেল না। তখন তিনি চোখ খুললেন। খুলে দেখলেন, সব শেয়াল সামনের ডান পা কপালে তুলে তাঁকে স্যালুট দিচ্ছে। তাদের মধ্যে নেতা শেয়ালটি সামনে এসে বলল, হে মহাজন, আপনি আমাদের সালাম গ্রহন করুন।
আমরা শেয়াল নিখিল বাংলার
সকলেই আপনার ফলোয়ার
বাকী শেয়ালগুলা বলল, হুক্কা হুয়া, হুক্কা হুয়া, হুক্কা হুয়া।
শেয়ালদের ধ্বনিতে আকাশ বাতাস বন বাঁদাড় মুখরিত হল। মাননীয় বুদ্ধিজীবির দেহে প্রাণ আসল। তিনি হাত তুলে তাদের সালাম গ্রহন করলেন।

সহসা, এক শেয়াল চিৎকার দিয়ে উঠল। বাঘ, বাঘ আসছে বাঘ। সাবধান! সাবধান!! শেয়ালগুলো সব এদিক সেদিক পালাতে লাগল। এদিকে বুদ্ধিজীবী সাহেব মরিয়া হয়ে বললেন, আমাকে রেখে যেওনা। প্লিজ।‘
শেয়ালনেতা, দাঁড়িয়ে বলল, হুজুর একটা কাজ করুন, আপনি সমস্ত কাপড় চোপড় খুলে দাঁড়িয়ে থাকুন। ভাল হয় যদি, ন্যাংটা হয়ে গাছের ডালে ঝুলে থাকেন। বাঘেরা ন্যাংটা মানুষ দেখেনি কোনদিন। সে আপনাকে ভূত ভেবে আর কিছু করবে না। বলে সেও লুকিয়ে গেল।

তখন মাননীয় বুদ্ধীজীবি মহাশয় আর কি করবেন, কাপড়-চোপড় সব খুলে সম্পূর্ন নগ্ন হয়ে আদি ও আসল চর্ম সম্বল করে গাছের ডালে ঝুলে পড়লেন।

পাশের গাছে দুষ্ট বান্দরেরা তখন হাসতে লাগল।

KB-01- 00 - Copy

অধিবর্ষের আদি-অন্ত

অধিবর্ষ বা লিপইয়ার
Leap year

২০২০ সালটা হবে লিপইয়ার।
সাধারণ সৌর বছর গুলি ৩৬৫ দিনে হয়ে থাকে, কিন্তু লিপইয়ার হয় ৩৬৬দিন। ফেব্রুয়ারি মাস সাধারণত ২৮ দিনে হলেও লিপইয়ারের এই অতিরিক্ত ১দিন ফেব্রুয়ারি মাসে যোগ করে ২৯দিনে ফেব্রুয়ারি মাস গোনা হয়।

বর্তমানে আমরা যেই ক্যালেন্ডার ব্যবহার কি সেটি হচ্ছে গ্রেগরীয় ক্যালেন্ডার। এই ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ৪ বছর পর পর ফেব্রুয়ারি মাসে অতিরিক্ত ১টি দিন যোগ করে আমরা তাকে অধিবর্ষ বা লিপইয়ার বলি।

কিন্তু কেন এই লিপইয়ার?

আমরা হিসাব করি ৩৬৫ দিনে এক বছর অর্থাৎ পৃথিবী সূর্যের চার দিকে একবার ঘুরে আসে ৩৬৫ দিনে। কিন্তু বছরের প্রকৃত দৈর্ঘ্য হল ৩৬৫ দিন ৫ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট ৪৬ সেকেন্ড , অর্থাৎ পৃথিবীর এই সময়টুকু লাগে সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করতে। তাহলে দেখা যাচ্ছে প্রতি বছর আমরা ৫ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট ৪৬ সেকেন্ড সময় পিছিয়ে যাচ্ছি হিসেবে না ধরার দরুন। ফলে ৪ বছর পরে এই বাদ যাওয়া সময়টুকু দাঁড়ায় ২৩ ঘণ্টা ১৫ মিনিট ৪ সেকেন্ড বা প্রায় ২৪ ঘণ্টা। এই প্রায় ২৪ ঘণ্টাকে সমন্বয় করার জন্যই লিপইয়ারের আবিষ্কার।

লিপইয়ারের প্রচলন।

খ্রিষ্টপূর্ব ১৫০ সালের পূর্বে ধরে নেয়া হয়েছিল ৩৬৫ দিন ৬ ঘণ্টায় ১ সৌর-বছর হয়। গ্রীক জ্যোতির্বিদ হিপার্কাস খুব বেশী সম্ভব খ্রিষ্টপূর্ব ১৫০ সালের দিকে ত্রিকোণমিতির সাহায্যে বের করেন পৃথিবী ৩৬৫ দিন ৫ ঘণ্টা ৫৫ মিনিট ১২ সেকেন্ডে সময়ে সূর্যকে একবার ঘুরে আসে।

খ্রিষ্টপূর্ব ৪৬ সালে রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজার এবং তার সহকারী জ্যোতির্বিদ সোসিজেনিস ৩৬৫ দিনে এক বছর হবে এবং প্রতি ৪ বছরে ১ দিন যোগ করে ৩৬৬ দিনে বছর গণনা হবে বলে নতুন গণনা পদ্ধতি শুরু করেন। সেটাই আজকের এই লিপইয়ার।

বেচারা ফেব্রুয়ারি

তখনকার নিয়মানুযায়ী বছরের ৭টি মাস হত ৩০ দিনে আর বাকি ৫টি মাস হত ৩১ দিনে। জুলিয়াস সিজার তৎকালীন পঞ্চম মাস কুইন্টালিসকে নিজের নামানুসারে জুলিয়াস নাম দেন, সেইটাই আজকের সপ্তম মাস জুলাই।

জুলিয়াস সিজার তখনকার প্রচলিত মাসের ক্রম পরিবর্তন করে তৎকালীন একাদশ মাস জানুয়ারিয়াস থেকে বছর গণনা শুরু করে। পরবর্তী রোমান সম্রাট অগাস্টাস পূর্ববর্তী ষষ্ঠ মাস সেক্সটিলিস এর নাম পাল্টে রাখেন অগাস্ট।

দুই রোমান সম্রাটই নিজেদের নামের মাস দুটিকে ৩১ দিন করে বরাদ্দ দেন । দুঃখজনক ভাবে এই দুটি দিনই দুই সম্রাট কেটে নেন বেচারা ফেব্রুয়ারির কোঠা থেকে, ফলে ফেব্রুয়ারির ৩০ দিনের দৌড় গিয়ে থেমে যায় ২৮ দিনে। এই জন্যই বেচারা ফেব্রুয়ারির প্রতি দয়া দেখিয়ে লিপইয়ারের অতিরিক্ত ১টি দিন গিয়ে তার ভাগ্যে জোটে।

আরও কিছু সমস্যা

সম্রাট জুলিয়াস সিজার এর তৈরি এই লিপইয়ারও কিন্তু সময়ের সমস্যা পুরোপুরি দূর করতে পারেনি, কারণ সেখানে ৩৬৫ দিন ৬ ঘণ্টায় এক সাধারণ সৌর-বছর ধরেছিলেন আর প্রতি চার বছর পরপর ৬×৪ = ২৪ ঘণ্টা বাড়িয়ে ৩৬৬ দিনে লিপইয়ার ধরেছিলেন। ফলে প্রতি বছরেই অতিরিক্ত কয়েক মিনিট যোগ হতে থাকে।

পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরী দেখেন যে ৩৬৫ দিনে বছর ধরলে চার বছরে ২৩ ঘণ্টা ১৫ মিনিট ৪ সেকেন্ড সময় অতিরিক্ত থেকে যায়, আবার ১ দিন বাড়ালেও কিছুটা অতিরিক্ত বাড়ানো হয়।

তিনি হিসাব করে দেখলেন যে ৪০০ বছরে মোট ৯৬ দিন ২১ ঘণ্টা ৫ মিনিট ৪০ সেকেন্ড বাড়ানো দরকার, কিন্তু ৪ দিয়ে বিভাজ্য সাল গুলিকে লিপইয়ার ধরলে দিনের সংখ্যা হয় ১০০টি। দেখা যাচ্ছে ৪০০ বছরে ১০০টি লিপইয়ার না হয়ে ৯৭টি লিপইয়ার হলেই সমস্যা অনেকটাই কাটিয়ে উঠা যায়। তাই তিনি ঠিক করলেন যে সমস্ত সাল গুলি ১০০ দিয়ে বিভাজ্য হবে সেগুলিকে লিপইয়ার হতে হলে অবশ্যই ৪০০ দিয়েও বিভাজ্য হতে হবে। এই হিসাব অনুযায়ী ২১০০, ২২০০, ২৩০০ সাল লিপইয়ার হবে না তবে ২৪০০ সাল লিপইয়ার হবে ।

১৫৮২ খ্রিষ্টাব্দে পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরী হিসাব করে দেখলেন যে, সম্রাট জুলিয়াস সিজারের ক্যালেন্ডারে চলতে চলতে সূর্যের সাথে সঠিক সময় না মানায় আমরা প্রায় ১০ দিন এগিয়ে আছি। তাই তিনি সূর্যের সাথে প্রকৃত সামঞ্জস্য আনার জন্য ক্যালেন্ডার থেকে ১০ দিন বাদ দেওয়ার প্রস্তাব করেন । কিন্তু তার সেই প্রস্তাব তখন আমলে আনা হয় না, পরবর্তীতে ১৭৫২ সালে যখন ইংল্যান্ডে ক্যালেন্ডার সংশোধন করা হয় ততদিনে ১০ দিনের জায়গায় ১১ দিন বাদ দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। ফলে ১৭৫২ খ্রিষ্টাব্দে ২রা সেপ্টেম্বরের পরে ১১ দিন বাদ দিয়ে সরাসরি ১৪ সেপ্টেম্বরে চলে যেতে হয়। আর রাশিয়াতে এই সংস্কার করা হয় গত শতকে ১৩ দিন বাদ দিয়ে ।

কিন্তু এখানেই হিসাবের শেষ নয়।
উপরের হিসাবে ৪০০ বছরে মোট ৯৬ দিন ২১ ঘণ্টা ৫ মিনিট ৪০ সেকেন্ড এর বদলে আমরা বাড়িয়েছি ৯৭ দিন। তাহলে ৪০০ বছরে ২ ঘণ্টা ৫৪ মিনিট ২০ সেকেন্ড ঘাটতি রয়ে যায়। এই হিসাবে প্রতি ৩৩০৫ বছরে ১ দিন কম পড়েগ্রেগরীর সংস্কার ১৬০০ সাল থেকে কার্যকর ধরে ৪৯০৫ সালে ১ দিন পুরো হয়ে যাবে। এই ১ দিনকে সমন্বয় করতে ৪৯০৪ অথবা ৪৯০৮ সালকে নন-লিপইয়ার ধরতে হবে । যদি ৪৯০৪ সালের লিপইয়ার বাদ দেওয়া হয় তবে ৪৮৯৬ সালের পর লিপইয়ার হবে ১২ বছর পর ৪৯০৮ সালে।

তাহলে দেখা যাচ্ছে লিপইয়ারের ২টি সূত্র রয়েছে।
১। যে সালগুলি ৪ দ্বারা বিভাজ্য হবে সেগুলি লিপইয়ার।
২। যে সমস্ত সাল গুলি ১০০ দিয়ে বিভাজ্য হবে সেগুলিকে লিপইয়ার হতে হলে অবশ্যই ৪০০ দিয়েও বিভাজ্য হতে হবে।

সৌজন্য সংখ্যা ও আলোচনা (পাঠ্যসূচি বহির্ভূত পাঠ)

সৌজন্য সংখ্যা ও আলোচনা
(পাঠ্যসূচি বহির্ভূত পাঠ)

এক সাদা ঘোড়া অবসরে হাঁটতে হাঁটতে অনেক দূর চলে এলো। অন্য গ্রাম। সরু পথ দিয়ে আস্তে আস্তে হেঁটে পুকুরের পাঁশে বাঁশঝাড়ের পার হলো। সেখানে চারপাশ খোলা এক ছোট্ট ঘর। মিঠেল দুপুর। আচমকা হিমেল বাতাস। সেই ঘরের নিমছায়ায় একটি ঘোড়া কচিঘাস চাবায়। তার গায়ের রং তেল চকচকে খয়েরি-কালো। সাদা ঘোড়া চমকে উঠল। হায় এত সুন্দর একজন রয়েছে, আর সে জানে না! সে পায়ে পায়ে কাছে গিয়ে বলল, –

‘কী করো সুন্দরী?’
‘কেন ঘাস খাই।’
‘তাই তো…তাই তো! তা তুমি আজ আউটিং-এ যাওনি?’
‘মালিকের ভাব এসেছে। কবিতা লিখছে।’
‘তোমার মালিকও কবিতা লেখে?’
‘তিনি এই জেলার বিখ্যাত কবি। তোমার মালিক কী করে?’
‘তিনি গরুর দালাল। তিনি গ্রাম থেকে গরু কেনেন, শহরের বাজারে বেচেন। মাঝে মধ্যে তিনি কবিতা পড়েন এবং লেখেন।’
‘তার কাছে আমার মালিকের কাব্য আছে?’
‘সেইটা আবার কী?’
‘বই গো বই। আইসো তোমারে বই চিনাইয়া দি।’

সাদা ঘোড়া কালো ঘোড়ার কাছে গেল। কালো ঘোড়া একমুঠো ঘাস মুখে নিয়ে জোড়া পায়ে জোর লাথি ছুড়ল। সাদা ঘোড়া ছিটকে পুকুরে পড়ে গেল।

‘বন্ধু ইহাকে সৌজন্য সংখ্যা কহে।’
‘হাঁ হাঁ বুঝেছি। নিশ্চয়ই আলোচনা লিখিব আমি।’

অতপর সাদা ঘোড়া পুকুর হতে উঠে গা-ঝাড়া দিয়ে হাঁটতে শুরু করল।

(গুলতাপ্পি)

VF -7- - Copy

ভূত ফুল

ভূতের নাম শুনলেই কেমন কেমন লাগে।
বিশেষ করে রাতের বেলা হঠাত বিদ্যুৎ না থাকলে অন্ধকারে বা মোমের লালচে আলোয় বসে ভূতের গল্প শুরু হলেতো কথাই নেই। ভূত বলে কিছু নেই এ কথা সত্য, কিন্তু ভূতের ভয় আছে ষোল আনাই।
তবে এখানে ভয়ের কিছু নেই। আজকের বিষয় ভূত নয়, বরং ভূত ফুল

কিছু বিশেষ ধরনের ফুলকে ইংরেজিতে Ghost Flower বা বাংলায় ভূত ফুল বলা হয়। যদিও ভূতের সাথে এই সমস্ত ফুলের কোন সম্পর্ক নেই। বরং এই সমস্ত ফুলের বেশ কিছু ভেজষ গুণাগুণ রয়েছে। নিচে সেই সমস্ত ভূত ফুলের ছবি রইলো।

১।
Common name : Rosy Ghost Orchid, Rose Epipogium

Botanical name : Epipogium roseum
Family : Orchidaceae (Orchid family)
Synonyms : Epipogium indicum, Limodorum roseum

২।
Common name : Holy Ghost Orchid, Dove Orchid

Botanical name : Peristeria elata
Family : Orchidaceae (Orchid family)

৩।
Common name : Magenta Ghost Flower

Botanical name : Christisonia tubulosa
Family : Orobanchaceae (Broomrape family)

৪।
Common name : Forest Ghost Flower

Botanical name : Aeginetia indica
Family : Orobanchaceae (Broomrape family)

৫।
Common name : Yellow Ghost Orchid, Mountain Pauper Orchid, , Yellow Claw Orchid, Pauper orchid

Botanical name : Aphyllorchis montana
Family : Orchidaceae (Orchid family)
Synonyms : Aphyllorchis prainii, Aphyllorchis odoardii, Aphyllorchis unguiculata

৬।
Common name: Yellow Ghost Flower

Botanical name : Aeginetia pedunculata
Family : Orobanchaceae (Broomrape family)
Synonyms : Aeginetia acaulis, Aeginetia saccharicola

৭।
Common name : Indian Pipe, Ghost Flower, Ghost Flower

Botanical name : Monotropa uniflora
Family : Ericaceae (Blueberry family)

বি.দ্র. প্রতিটি ছবি নেট থেকে সংগ্রহীত

MS-09- (24) - Copy

৯ ঘরের জাদুবর্গ বা ম্যাজিক স্কয়ারা তৈরির কৌশল

জাদুবর্গ বা ম্যাজিক স্কয়ারা


১ থেকে ৯ পর্যন্ত সংখ্যাগুলি দিয়ে এমন একটি জাদুবর্গ তৈরি করা হয় যার যেকোনো কলাম বা সারির সংখ্যা তিনটির যোগফল হয় ১৫।
এই জাদু বর্গটি দেখেনি এমন লোক খুঁজে পাওয়া ভার। আর আমরা অনেকেই হয়তো বার বার চেষ্টা করেছি এটি মিলাতে। কেউ কেউ সফল হয়েছি, কেউ বা হইনি। যারা সফল হয়েছেন তাদের জানাই অভিনন্দন। আর যারা সফল হননি তাদের জন্য এই টপিক। একবার শুধু চোখ বুলিয়ে যান, দেখবেন আর কখনো ভুলবেননা এই নিয়ম। তাহলে নিচের ছবিগুলিতে দেখুন এবার, কি করে তৈরি করবেন ৩x৩ এর জাদুবর্গ।

তৈরি হয়ে গেলো আপনার ৩x৩ এর জাদুবর্গ।
এই একটা জাদুবর্গ ব্যবহার করে আপনি আরো আনেকগুলি জাদুবর্গ তৈরি করতে পারবেন। সামান্য বুদ্ধি খাটান।

আশাকরি ৩x৩ এর জাদুবর্গ তৈরি করতে আপনাদের আর কারো কোনো সমস্যা হবে না।

আজ এখানে দেখলেন কি করে তৈরি করতে হয় ৩x৩ এর জাদুবর্গ।
আগামীতে আরো বড় জাদুবর্গ তৈরির কৌশল নিয়ে হাজির হবো। ততো দিন ভালো থাকবেন সকলে।

10 T Bhoromon Chitro_06_ (13)

বারবিকিউ ইন কামিনী ঘাট (তৃতীয় অংশ)

বারবিকিউ ইন কামিনী ঘাট এর প্রথম দুই পর্বের পরে আজ ৩য় পর্ব। গত দুই পর্বের মতো এই পর্বেও ছবির সাথে ক্যাপশন দিয়েই দেখানো হয়েছে অনেক কষ্টে ভেজা মাটিতে আগুন জ্বালানোর পরে কি করে আস্ত খাসীটিকে বারবিকিউ শিকে ঢুকিয়ে গুনা দিয়ে বেঁধে আগুনে চড়ানো হয়েছে। ভিজে কাঠে আগুন ধরেছে, সেই সাথে পেটে খিদের আগুন জ্বলছে তখনও না খেয়ে থাকা কজনের। ছবিতে দেখুন সেই সব কাহিনী……

১।

২।

৩।

৪।

৫।

৬।

৭।

৮।

৯।

আজ তবে এটুকুই রইলো……

2018-November-Calendar

ক্যালেন্ডারের খেলা

ক্যালেন্ডারের যেকোনে একটি মাস নিন।
যে কলামে ৪টি তারিখ আছে তা যোগ করে আমাকে যোগফল বলুন, তাহলেই আমি বলে দিতে পারবো কোন সংখ্যা ৪টি আপনি যোগ করেছেন।
এটা বলার জন্য কোন সালের কোন মাসের ক্যালেন্ডার নিয়েছেন তা আমাকে জানানোর দরকার নেই।

ব্যাখ্যাঃ ধরি আপনার তারিখ চারটির যোগফল (৫+১২+১৯+২৬)=৬২

আপনার প্রথম তারিখটি হবে :
(যোগফল – ৪২) ÷ ৪
= (৬২ – ৪২) ÷ ৪
= ২০ ÷ ৪
=

আপনার ২য় তারিখটি হবে :
৫+৭ = ১২

আপনার ৩য় তারিখটি হবে :
১২+৭ = ১৯

আপনার ৪র্থ তারিখটি হবে :
১৯+৭ = ২৬

এবার আপনি চেষ্টা করে দেখুন।

KB-01- 00

কড়ায়-গণ্ডায় হিসাব

ইহা একটি অকেজো জ্ঞান
জ্বি, আজ আপনাদের সামনে একটি অকেজো জ্ঞানকেই হাজির করছি। কেন বলছি অকেজো জ্ঞান? কারণ আজ যে বিষয়টি আপনাদের সামনে হাজির করবো তার প্রচলন অনেক অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। ফলে এটা জেনে কখনোই কোনো কাজে লাগাতে পারবেন না, আর তাই যে জ্ঞান কোনো কাজে লাগেনা তাকে তো অকেজো জ্ঞানই বলে!! তাহলে শুরু করা যাক:

আমরা জানি-
৪ আনা = ২৫ পয়সা।
৮ আনা = ৫০ পয়সা।
১৬ আনা = ১০০ পয়সা বা ১ টাকা।
১ টাকা = ১০০ পয়সা।
কিন্তু এই “আনার” আগের হিবাসগুলি কি কি?

আমরা মাঝে মাঝেই বলতে শুনি –
– “তোমার কথার দু আনা দামও নেই।”
– “তোমার কানা কড়ি মূল্য নেই।”
– “পাই পয়সার হিসাব চাই।”
– “আমার হিসাব কড়ায়-গণ্ডায় বুঝে নিবো।”

ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু কথা হচ্ছে টাকা, আনা, পাই, কড়ি, গণ্ডা ইত্যাদির মূল্যমান বা হিসাব পদ্ধতি সম্পর্কে আমাদের কতোটা ধারনা আছে!!!

ছোট্ট একটা তালিকা দেখুন – এই তালিকার সাথে আবার উপরের বর্তমানে প্রচলিত হিসাবের মূল্যমান মিলানোর চেষ্টা করবেন না। এই তালিকাটি হচ্ছে সেই আদিকালে ব্যবহৃত আমাদের আদি বাংলার মূদ্রামূল্য বিন্যাস। সেই আদিকালে আমাদের দেশের মুদ্রাবিভাজন ছিলো নিম্ন রূপ-

২ অর্দ্ধ-পয়সা বা ৩ পাই = ১ পয়সা।
২ পয়সা বা ৬ পাই = ১ ডাবল পয়সা।
৪ পয়সা বা ২ ডাবল পয়সা = ১ আনা।
২ আনা বা ৪ ডাবল পয়সা = ১ দুয়ানি।
৪ আনা বা ২ দুয়ানি = ১ সিকি।
২ সিকি বা ৪ দুয়ানি = ১ আধুলি।
২ আধুলি বা ৪ সিকি বা ১৬ আনা = ১ টাকা।
১৬ টাকা = ১ মোহর।

এখানে বলে রাখা ভালো …
* অর্দ্ধ-পয়সা, পাই, পয়সা ও ডাবল পয়সা এই চারটি ছিল তাম্রমুদ্রা।
* দুয়ানি, সিকি, আধুলি ও টাকা ছিল রৌপ্যমুদ্রা।
* মোহর ছিল স্বর্ণমুদ্রা।
এগুলি সবই অতীত। বর্তমানের সাথে মিলানোর অপচেষ্টা না করাই ভালো।

এই তিন ধরনের তাম্রমুদ্রা, রৌপ্যমুদ্রা ও স্বর্ণমুদ্রা ছাড়াও কড়ির ব্যবহার মুদ্রা হিসেবে প্রচলন ছিল। যেমন-
* ৪ কড়া = ১ গণ্ডা
* ৫ গণ্ডা = ১ বুড়ি বা পয়সা।
* ৪ বুড়ি বা পয়সা = ১ পণ বা আনা।
* ৪ পণ বা আনা = ১ চৌক।
* ৪ চৌক বা ১৬ পণ = ১ টাকা বা কাহন।

ধরুন আপনি যদি বলেন “আমার হিসাব কড়ায়-গণ্ডায় বুঝিয়ে দাও।” তাহলে বিষয়টি হচ্ছে ১ টাকার (১৬×৪×৫×৪) = ১২৮০ ভাগের এক ভাগ পর্যন্ত নিখুঁতভাবে আপনাকে বুঝিয়ে দেয়ার কথা বলছেন।

যাই হোক কড়ায়-গণ্ডায় বুঝে নেয়ার চেয়েও যদি আরো বেশি নিখুঁত ভাবে বুঝে নেয়ার ইচ্ছে থাকে তাহলে তার ব্যবস্থাও ছিল সেই যুগে।

২০ বিন্দু = ১ ঘূণ
১৬ ঘূণ = ১ তিল
২০ তিল = ১ কাক
৪ কাক = ১ কড়া

আবার অন্য আরেকটি মূলমানও ছিলো-
৩ যব = ১ দন্তী
৩ দন্তী = ১ ক্রান্তি
৩ ক্রান্তি = ১ কড়া।

তাছাড়া আরো একটি ক্ষুদ্র মূল্যমাণ ছিলো এমন
৩২০ রেণু = ৭দ্বীপ = ৫ তাল = ১ কড়া।

এবার শেষ করবো এই অকেজো জ্ঞানের প্যাচাল। এই পুরো লেখাটির সমস্তু তথ্য নিয়েছি পঞ্চানন ঘোষের লেখা “শুভঙ্করী” বইটি থেকে
তাই কৃতজ্ঞতা স্বরূপ একটি শুভঙ্করের মূদ্রাবিভাজন সম্পর্কিত আর্য্যা দিয়ে শেষ করছি।

“চারি কাকে বটৈক জানি, তিন ক্রান্তি বট বাখানি।
নবদন্তী করিয়া সার, সাতাইশ যবে বট বিচার।
আশি তিলে বটঙ্কর, লেখার গুরু শুভঙ্কর।।”

ভালো থাকবেন সকলে।

25591792_1745115755538726_4156128952430206254_n - Copy

বারবিকিউ ইন কামিনী ঘাট (দ্বিতীয় অংশ)

কামিনী ঘাটে যাব আমরা বারবিকিউ করতে।
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আমরা কেউই চিনি না কামিনী ঘাটে যাবার পথের হদিস। জানি না কি করে কামিনী ঘাটে যেতে হবে।
তবুও ইকবাল ভাইকে বারবার কল করে আর পথে দেখা হওয়া জেলেদের জিজ্ঞাসা করতে করতে এক সময় ঠিকই পৌঁছে যাই কামিনী ঘাট। ততক্ষণে অবশ্য দুপুর গড়িয়ে গেছে।
ট্রলার থেকে নেমেই আমরা কয়েকজন লেগে পড়ি আগুন জ্বালাবার কাজে, বাকিরা বসে যায় দুপুরের খানা খেতে। ভেজা মাটিতে কত কষ্ট করে যে আগুন ধরিয়েছি…

আজ কাহিনীর দ্বিতীয় অংশে তারই কয়েকটা ছবি দেখুন “বারবিকিউ ইন কামিনী ঘাট (প্রথম অংশ)” এরই মত উইথ ক্যাপশন।

আগামী পর্বে বাকি অংশ দেখার নিমন্ত্রণ রইলো।

25591792_1745115755538726_4156128952430206254_n - Copy

বারবিকিউ ইন কামিনী ঘাট (প্রথম অংশ)

২৮/০৮/২০১৩ইং আমরা ক’জন মিলে আয়োজন করেছিলাম একটি জল ভ্রমণের। আয়োজক ছিলাম আমরা ৫ বন্ধু আর ইনভাইটেট ছিল আরো ৮ জন। এক দিন আগেই একটি বোট ভাড়া করে রেখেছিলাম আমরা। ২৭ তারিখ বিকল থেকেই সমস্ত বাজার শেষ করে ফেলি শুধু সালাদের উপকরণটা বাদে। আয়োজন ছিল খুবই সাদা-সিধা সাদা ভাত, ডাল, আলু ভর্তা, ধনেপাতা ভর্তা, শুটকি ভর্তা, মুরগির সাদা ঝাল মাংস

প্রোগ্রামটা ছিল এমন –
সকালে হোটেলে নাস্তা করে সাঁতারকুল থেকে উঠবো বোটে সকাল ১০টা মধ্যে।
নাগরির কাছে কামিনী ঘাটে এক বড় ভাইয়ের খামারে গিয়ে দুপুরের খাবার শেষ করবো।
সেখানেই দুপুরের পর থেকে আস্ত একটা খাসি বারবিকিউ করা হবে।
সেই সাথে ১০টা মুরগিও নেয়া হয়েছে বারবিকিউ করার জন্য।
নানা ধরনের পানিয় নেয়া হয়েছে পর্যাপ্ত, যে যত খুশী পান করতে পারবেন এটা মাথায় রেখে।
সন্ধ্যার আগে আগে আবার উঠে পরবো বোটে, রাতের ১২টা পর্যন্ত ঘুরবো বোট নিয়েই।

সেই কাহিনীর প্রথম অংশ আজ দেখবেন ছবিতে।


বি.দ্র. বিড়ি ও নানা ধরনের পানিয় স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর।

বি.দ্র. ছবিগুলি আমার তোলা নয়।
২০১৩ সালের ভ্রমণ, লেখাটাও তখনকারই, এখানে নতুন করে শেয়ার করলাম।
চলবে……

KB-01- 00

খনার বচন – ৩

খনা ও খনার বচন সম্পর্কে আমাদের সকলেরই কম বেশী ধারণা আছে। খনার বচন মূলত কৃষিতত্ত্বভিত্তিক ছড়া। আনুমানিক ৮ম থেকে ১২শ শতাব্দীর মধ্যে রচিত। অনেকেই ধারনা করেন এগুলি কোন একক ব্যাক্তির লেখা নয়, বরং বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জনের বলা বা লেখাগুলি খনার নামে প্রচলিত হয়েছে। যাইহোক, এই বিতর্কে না যাই।

আমাদের পরিচিতো অনেক খনার বচন আছে, সেখান থেকে কিছু কিছু বচন এখানে শেয়ার করবো ব্যাখ্যা সহ।

১। খনা ডেকে বলে যান
রোদে ধান ছায়ায় পান

ব্যাখ্যা : পান লাগাতে হয় ছায়াতে, আর ধান লাগাতে হয় রোদে।

২। সমানে সমানে দোস্তি
সমানে সমানে কুস্তি।


ব্যাখ্যা : সমান সমান না হলে কোন কিছুই জমে না।

৩। এক পুরুষে রোপে তাল,
অন্য পুরুষে করে পাল।
তারপর যে সে খাবে,
তিন পুরুষে ফল পাবে।


ব্যাখ্যা : তাল গাছে প্রথম ফলন আসতে কমপক্ষে ১২ বছর সময় লাগে। দীর্ঘ এই সময়ের জন্যই এই ভাবে বলা।

৪। নিত্যি নিত্যি ফল খাও,
বদ্যি বাড়ি নাহি যাও।


ব্যাখ্যা : প্রতিদিন ফল খেলে শরীর ভালো থাকে।

৫। দিনের মেঘে ধান,
রাতের মেঘে পান।


ব্যাখ্যা : দিনে বেলা বৃষ্টি হলে ধানের জন্য ভালো, আর রাতের বৃষ্টি পানের জন্য ভালো।।

৬। জৈষ্ঠতে তারা ফুটে,
তবে জানবে বর্ষা বটে।


ব্যাখ্যা : এটা দিয়ে কি বুঝানো হয়েছে আমি বুঝতে পারি নি।

৭। যদি বর্ষে মাঘের শেষ,
ধন্য রাজার পূণ্য দেশ।


ব্যাখ্যা : মাঘ মাসের শেষে বৃষ্টি হলে ফলন ভালো হয়।

৮। সাত হাতে, তিন বিঘাতে
কলা লাগাবে মায়ে পুতে।
কলা লাগিয়ে না কাটবে পাত,
তাতেই কাপড় তাতেই ভাত।


ব্যাখ্যা : নির্দিষ্ট দূরত্বে কলাগাছ লাগালে তাতে ফলন ভালো হয়।

৯। লাঙ্গলে না খুঁড়লে মাটি,
মই না দিলে পরিপাটি
ফসল হয় না, কান্নাকাটি।


ব্যাখ্যা : ঠিকমত চাষ না করলে ভালো ফসল পাওয়া যায় না।

১০। সবলা গরু সুজন পুত
রাখতে পারে খেতের জুত।


ব্যাখ্যা : ভাল গরু থাকলে আর চাষে ছেলের সাহায্য পেলে কৃষকের কোন সমস্যা থাকে না।

বি.দ্র. ছবি গুলি নেট থেকে সংগ্রহীত।