বিভাগের আর্কাইভঃ সাহিত্য

টক বক বক

খট খট

১৫ কোটি খেলোয়াড়
খেলছে সময়ের সেকেন্ডে হরদম!
স্লোগানে মুখরিত চোখ মুখ দাঁত
এমন কি হাত পা ভেসে যাচ্ছে-
জলশুকনো মাঠ ঘাট; মেঘশুকনো
ভেজা বৃষ্টিতে খেলা হবে! খেলা, দম দম;
অথচ গাঁয়ে পারের খেলোয়াড় দাঁড়িয়ে
দেখছে শুধু মায়ের শূন্য আচল
আউশ ধানের নবান্ন উঠান আর জ্যৈষ্ঠের
গন্ধ বাতাস উড়ে- হাতের তর্জনী ভার
যত ভাজ ঠোঁটের আড়াল
খেলা হবে! খেলা, খট খট, টক বক বক।

০১ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৯, ১৫ মে ২৩

চলনবিল

সূর্য কি পোড়ে! সূর্য পোড়ায়
তুমিও পোড়াও তবু কেন যে পুড়ি না!
এ পোড়া দেশ শুধু গল্প শোনায়
আগুনের নদী ঘেরে সামুদ্র সময়।

আসলে সেই কথাগুলো বলা হয়ে ওঠে না, যে গুলো স্বপ্নের মধ্যেও অলিগলি সাঁতরায়। দিন ওঠে, দিন নামে। মানুষের হাতে পায়ে শাখা প্রশাখা। অহংকার কিম্বা নমনীয়তার বৃত্ত ছাড়িয়ে মাটির ভেতর থেকে ছলকায় বিগত গরমের ঘাম, রক্ত, কান্নার শহীদ ইতিহাস। চোখের আড়ালে জমা হয় আশ্চর্য এক হ্রদের গভীর তলদেশে। একসময়ে হ্রদের বহির্গন্ডী উপচে গেলে বাষ্প হয় প্রাচীন পুরাতত্ব।

আসলে কথাগুলো কথা থাকে না চিরকাল। না বলা কথাদের গায়ে জমে যায় অনড় সবুজ শ্যাওলা। রোদ্দুর আছড়ায়, বৃষ্টি অসময়ের নোনা গন্ধ ভাসিয়ে ভঙ্গুর করে দেয় কখনোই না জন্মানো ভ্রুণ শব্দদের। বিরল প্রজাতির ঈগল হয়ে যায় না বলা কথারা। পূর্বী সমুদ্রের ওপরে ঝুলে থাকা বাষ্পের ঝুন্ড আচমকা আকাশ বাইসন হয়ে আছড়ে পড়ে মুখ আর মুখোশের যান্ত্রিক সভ্যতার অ্যাসফল্টের রাস্তায়, মধ্যযুগীয় বাড়ির বদ্ধ উঠানে, মেকি রেস্তোরাঁর রোমান্টিক টেবল্ ল্যাম্পশেডে।

কোনো শুরু ছিল না, তাই শেষও হয় নি
বিকার ছিল না, তাই নির্বিকার হওয়ার প্রশ্নও তোলেনি কেউ;
নিশ্ছিদ্র অন্ধকার কিম্বা ফুটফুটে আলো
মেরুর বরফজ্বলন শেষে ছিল না কোথাও,
এক অলীক ব্রহ্মের রূপক ঘিরে রেখেছিল আব্রহ্মস্তম্ব;
ছিল শুধু সুখ আর শোকের কল্পিত মন্ড।

নির্বিকল্প সমাধির গভীরে হারিয়ে যায় কোনো একলা মাঠকোঠা ঘর। সুখ আর সুখের বৃত্তান্তের ঘনিষ্ঠ আলাপচারিতায় উঠে আসে অনিবার্য শৈশবের ফেলে আসা আঁচড়। আস্তে আস্তে সুখের স্মৃতিকণা জমতে জমতে জন্ম নেয় রাজৈশ্বর্যের আলো ঠিকরানো টাইটানিক। আলোর সঞ্চয় পূর্ণ হলে আচমকা মহা বিস্ফোরণ।

দু হাত একত্র করে মহাকাশ উচ্চারণ করে ওহম্! গ্যালাক্সি থেকে অন্য গ্যালাক্সিতে উড়ে যায় শান্তির সাদা পতাকা –

প্রকৃতি রজঃস্বলা হয়…
প্রকৃতি শান্ত হয়…

বংশীবাদকগণ

পৃথিবী আপাতত বেঁচে থাক অন্ধ হয়ে। চলো, আলোর
আয়োজনে আমরা পূরণ করি তরুপ্রতিম সবুজের ছায়া।
তারপর বিলিয়ে দিই, এইসব পূরণ ও প্রমাণ। যারা নিতে
চাইবে – তাদের হাতেই তুলে দেবো দুপুর, দীনতা ও দ্রোহ।

অন্ধত্বের দ্বিতীয় অভিষেক সেরে যারা আমূল গৃহহীন, তাদেরকে
দেখিয়ে যাই ভাঙনের অষ্টম পয়ার। আবার ভাঙুক। গড়ে তোলার
প্রয়োজন নেই আজ। গহীনে হারিয়ে যাওয়া নদীর কঙ্কাল খুঁজে
একদিন আমরাও ডুবুরি হবো – কথা তো এমনই ছিল ! তাহলে
আজ ভয়ের সন্ধ্যা কেন ছানি পাতে আমাদের চোখে ! জলান্তরে
কেন হারিয়ে যায় জলের যৌবন !

পৃথিবী বেঁচে থাক প্রায়শ্চিত্তের সিঁড়ি হয়ে। সেই সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে
সারি সারি বংশীবাদক বাজাক শুশ্রূষার সুর। কষ্টেরা কাছে নেই, –
না থাক। স্রোতপর্বের প্রতিটি অণুতে, আমরা রেখে যাবো স্বপ্নের
ঋতুচন্দন। অবশেষে যারা অন্ধত্ব নিয়ে বেঁচে থাকবে, তারাই পাবে
এই রঙের বিষাদ। চতুর চক্ষুগুলো খুঁজে কিছুই পাবে না।

ইচ্ছে করে সবুজের বুকে হারিয়ে যাই

ttyu

এই যন্ত্র শহর ছেড়ে পালাই ইচ্ছে
ইচ্ছে করে কোনো এক সবুজ প্রান্তরে মন হারাই;
নিঃশ্বাসে নেই শুদ্ধ হাওয়া;
বন্ধ চোখে কিছু শান্তি করি জমা মনের গহীনে।

কালো ধোঁয়ার শহর, জ্যামের ভিতর সময়ের হাহাকার
এসব ছেড়ে যেতে ইচ্ছে দূর কোথাও সবুজ অরণ্যে
যেখানে পাখিদের কলরব আর প্রজাপতির উড়াউড়ি
সেখানে দু’দন্ড শান্তি করতে চাই আহরণ।

এখানে যায় না দেখা খোলা আকাশ
উঁচু প্রাসাদ ছুঁতে যায় আকাশের মেঘ
এখানে বৈদ্যুতিক তারের বেড়াজালে বন্দি সব মুগ্ধতা
আমি সবুজে রাখতে চাই চোখ এবেলা।

যেখানে নিরিবিলি, নিস্তব্ধ দিনের বুকে ঘুঘু ডাকে
সেখানে সবুজে সবুজে ছাওয়া বনভূমি
সেখানেই মন চায় উড়ে বেড়াই
কিছু মুগ্ধতা নিয়ে ফিরে আসি নীড়ে ইচ্ছে।

ইচ্ছে করে সবুজ সারি সারি গাছের ছায়াপথে হাঁটি
শুকনো পাতার মর্মর সুর তুলে পায়ে
চলে যাই দূর হতে বহুদূর, কিছু ফুরফুরে সময় পেতে ইচ্ছে মনে
ইচ্ছে তাই ছুটে যাই
সবুজ কোনো বন প্রান্তরে।

.
(ক্যানন ৬০০ডি, জিন্দাপার্ক, নারায়নগঞ্জ)

নিঃশর্ত শিরোনাম

কাঁচাবাজার গলি পেরোয়ে কয়েকটা দোকান।
চা দোকান ঘেঁষে-বনবাস নিচ্ছে
শত চুমুক, চা কাপের ভেতরে অশ্লীল শব্দ
কাঠগোলাপের মতো হাসি। তখনো মনে হয় নি,
কারোর আয়ুর গন্ধ আর টেনশন
এক সঙে মিশে যাচ্ছে। ফুঁয়ের বাহাসে…

দরদাম করতে করতে বেরোয়ে আসে
জাপানি গাছের পাতায় একটা দুপুর,
শরীরের ভাঁজ খুলে পথে-হাঁটে, গানগুলো;
সকল বাচ্চাদের ইশকুলে বয়ে যায়
সেসব প্রহর। আর আলো থেকে ভেসে আসছে,
সফর-ঋতু মুখ, টুপ করে নিঃশর্ত হেসে ওঠে
এক স্বচ্ছজল দৃশ্য, নিশ্চয়ই স্পন্দনের ওপর
যে প্রথম স্বাধীনতা জীবিত হয়, তা-ই শিরোনাম!

জীবনাবাস

ssdf

বসে আছি
জীবনাবাসে
কেউ কেউ চলে গেছে
কিছু শুকনো ফুল আটি বাঁধা পড়ে আছে কবরের পাশে।
সময় আছে
শেষ সেকেন্ডের জন্য বারবার কব্জি ঘুরে
মিথ্যা অবকাশে!..
ঢ’লে পড়া সূর্যের কাছে
অনর্থক উজান
কহিছে কথা ব্যাকুল দরিয়া
অকূল সাতারে হাঁপাচ্ছে লখিন্দর প্রাণ!

মা

664

মা-কে নিয়ে অত বাহুল্য নেই আমার
মা তো মা-ই
সাদা শাড়ী আর অল্প ঘোমটা টানা
সাদা সাদা হাতে হলুদের দাগ
শরীরটা মসলাগন্ধ
সদ্য জন্মানো মেয়ের গায়ে মায়ের বাস
মা আর এমন কি?
মা তো মা-ই।

মা-কে মনে পড়ে
মা’কে ভীষন মনে পড়ে যায়
বাজার থেকে খোলসে মাছ এলে
কিংবা ঈদের সকালে
লাজুক হাসিতে নতুন কাপড়ে
আটপৌরে মা কেমন একদিনের রানী!
অথচ প্রতিদিনের মা
ঘরোয়া মা—সাধারণ, অতি সাধারণ
অনাড়ম্বর মা, প্রয়োজনের সিকি আধুলি
মা তো মা-ই।

মা-কে মনে পড়ে, আবার পড়েও না
নিজের প্রয়োজন ছাড়া খুব তো চিনিনি তাকে
সার্টিফিকেট পরীক্ষার রাতগুলোতে
জেগে থাকা মা
এখনো কেন তেমনি জেগে থাকে?
বোঝে না কেন কতটা অচেনা সে?
না খেয়ে খাবার এগিয়ে দেয়া মা
নিজের অস্তিত্ব বিলীন করা মা
গোপনে নিজের মনকে লুকিয়ে রাখা মা
মা তো মা-ই।

মা-টা বোকা ভারী
প্রতিদান না পেয়েও ভালবাসে
অকারন শংকায় কাঁদে, আমি হাসলে হাসে
তবু আজ মা’কে দেখিনা
শুধু আকাশ বাতাস ঘিরে থাকে যে মুখ
যার নিঃশ্বাসে মিশে আছি
অতি সাধারন কেউ
সমগ্র অস্তিত্ব জুড়ে করে বসবাস
আলাদা করে ভাববার নেই প্রয়োজন
মা তো আসলে মা-ই
এর কমও নয়, বেশীও না
মা মা-ই।

যতদূরে যাই

যতদূরে যাই মেঠো পথ ধরে
তুমি থাকো জোনাকির আলো হয়ে,
হারাবার কোন ভয় নেই ওরে
তোমার কাছে আঁধার যায় ক্ষয়ে।

যতদূরে যাই খরস্রোতা নদীর সাথে
তুমি থাকো শুশকের মত চারপাশে,
ডুববো না কখনো ডেউয়ের সংঘাতে
ভেসে থাকি তোমার দেহের উদ্ভাসে।

যতদূরে যাই পাখিদের ডানায় উড়ে
অলিন্দের রক্তস্রোতে তুমি আছো দুর্জয়,
তোমারে পাবো কোন সোনালি ভোরে
হৃদয়ে জাগিবে যখন প্রেম জ্যোতির্ময়।

মনে হয়

nita

মানি লোকের মান বড়
বড় তার সম্মান,
অজ্ঞানী বোঝে না মানসম্মান
যতই হোক অপমান।

বিদ্বান লোকের জ্ঞান বেশি
বিদ্যা করে দান,
মুর্খ লোক বোঝে বেশি
বলে সে কে বিদ্বান?

যে শিক্ষিত হয় অহংকারী
রোগে শোকে মরে,
যে অশিক্ষিত হয় দয়ালু
সবাই সম্মান করে।

অহংকারীর অহংকার অলংকার স্বরূপ
অহংকারই সম্বল তার,
নিরহংকারীর সহ্য-ধৈর্য অনেক বেশি
নতশিরে প্রার্থনা স্রষ্টার।

সবিনয় নিবেদন এবং আখ্যান

সবিনয় নিবেদন
একা করে দাও,
আমাকে ভাববার সময় দিও না
সুযোগ পেলে আমি কামড় দেব
আমি কাঁধে চেপে বসব
তুমি নিজেকে বাঁচাও
আমাকে একা করে দিয়ে যাও।

পায়ের নীচে দ্যাখো কত্তো পাথর
আমার টালমাটাল, দিশেহারা অবস্থান
তুমি সুখি হও দেখে,
সুখি হও ভেবে যে আমি ভাল নেই
আমাকে দয়া করো না
ছুঁড়ে ফেলে দাও দূরে।

তোমায় কষ্ট দিয়েছিলাম
তুমি ছিঁড়ে গিয়েছিলে কাগজ হয়ে
আবার জোড়া দিতে গিয়ে
বুঝেছিলাম, কষ্ট কত কষ্টের
সাহসী হয়ে একা করে দিলে
তবে আর ফিরে তাকিয়ো না।

আমাকে আবার একা করে দাও
এতটাই একা—
যেন তোমায় আরো বেশি করে ভাবি,
আরো ভালবাসি
আমায় দয়া ক’রো না
শুধু একা করে দাও, একা।
________________________

আখ্যান
মধুর সে ভ্রমণকালে তুমি কোথায় ছিলে?
এ তবে অন্তর্গত সেই ভাষা
কিছু তথ্য, কিছু অনৈতিক আদান-প্রদান।
মঞ্জুর করো প্রেম….

শালীন যত ভঙ্গী কামনায় পাল্টে দেয়া যায়
ইজি গোয়িং বলে চীৎকার না হয় করলে
বদলানো যাবে না নেশার কোকেন।
মঞ্জুর করো বাসনা….

তোমার চোখ থেকে লাফিয়ে নামা
হলদে বাঘের শীৎকারে
লোভের কথাই লেখা হয়ে গেল মনে
না-মঞ্জুর করে দিলাম নিজের তৃপ্তি।

গরিমা

dau

তিমিরাবৃত্ত আত্মা
কুয়াশা ভেজা লজ্জাবতী ফুল, সিক্ত লতা
ছুয়ে দিলে
চুকে যায় গরিমা, আরক্ত ঠোঁটে ঝেঁকে বসে
রুক্ষ দিনের রূঢ়তা!..

ফিরি
হারনো দিনের গানে
অশ্রুত মনে নেমে আসে অলকানন্দা..

বিবর্ণ রং জমে আছে আকাশে

chh

মন যখন বিমর্ষ আকাশও তখন দেখি বিবর্ণ
কত যে স্বপ্ন নিমেষেই হয়ে যায় চূর্ণ
আকাশে তাকিয়ে রবের কাছে করি প্রার্থনা
যে বা যারা দেয় মানুষকে দুঃখ
প্রকৃতি থাকে ছাড়তো না।

মনের মাঝে রোজ রোজ বিতৃষ্ণা পুষে
আমি ভেসে যাই বিষাদে কোন সে দুষে
অযথাই কেউ মনের কোণে জমায় ঘৃণা
আমার কী এখানে আর শান্তি মিলবে না

বিবর্ণ মন আকাশে উড়ে যদি আসতো শুভ্র মেঘ
বাড়তো বুঝি বুকে সুখের বেগ
বেগ হারিয়ে চোখের কোণে জমাই জল
মন আকাশে কালো মেঘ হয়ে আছে অনুজ্জ্বল।

চাই সুখ আসুক ফিরে
ধরুক শান্তি আমায় ঘিরে
বেশী কিছু চাই না, আমার প্রাপ্তি যা তাতেই হতে চাই সুখী
এবেলা আল্লাহকে ডাকি হয়ে উর্ধ্বমুখী।

আকাশে যেমন পাখিরা করে উড়াউড়ি
মন আকাশেও উড়ুক তেমন রঙিন ঘুড়ি
নাটাই ছেড়া ঘুড়ি হয়ে চাই এবেলা
ভাসাতে চাই শূন্যে আমার জীবন ভেলা।

পাখির ডানায় ছেড়ে আসবো বিষাদ বোধ
দুঃখ পুড়াতে আসতো যদি চৈত্রের রোদ
মন পেতে বসে থাকবো সবুজ মাঠে
কড়া রোদ্দুর এসে বসুক আজ মনের হাঠে।

আকাশের মেঘে মেঘে কেটে যায় বেলা
বসে না আর হৃদয় জমিনে সুখের মেলা;
বেজার মুখে একাকি প্রহর কেটে যায় অবলীলায়
কিছু মেঘ মন উঠোনে মত্ত হোক কানামাছি খেলায়।

.
(স্যামসাং এস নাইন প্লাস, পীঁরেরগাঁও মিয়াবাড়ি চুনারুঘাট)

তারপর…

এই অন্ধকারে, আরও বহুদূর যাব, যাওয়া যাবে-
নির্ভয়ে ঠোঁটের কোণে শিস ওঠায়ে
শ্মশানের আচমকা প্রেতভয় একদম নিজ করে।

তারপর…
বিমুগ্ধ সাত নক্ষত্র ছুঁয়ে মৃত মানুষের অদৃশ্য ছায়া,
কিতাবের শিরোনাম শোনাবে। খুব নিকট হতে
শিশুদের কান্নায় মিলিয়ে যাবে দূরের হলুদ বাতি;
নির্জন নদীর সমুদ্র হারানোর গান-উড়ে আসবে
অথচ শোনা হবে না। কোনো মৌসুম সুর। কেবল
বনের বাতাস কয়েকটা কাশি তুলে হারায়ে যাবে
সেই যাবে, আর পালটাবে এক উন্মাদনা প্রোগাপাণ্ডা
এবং প্রবেশ করবে অচেনা সেইসব সমতল ভাঙা
পথের আবিস্কার, তখনি অভিভাবকের নিঃসঙ্গতা
রেখে যাব, এখানে। বাইসাইকেলের পেছনে। কারোর
মনে না আসুক, লোকটা সব অপেক্ষা নিয়ে গেল।

দুটি কবিতা

মৃত পাখির হাড় থেকে জন্ম নিয়েছিল যে পাথর

অলক্ষ্যেই অনেক কিছু আমার দেখা হয়ে যায়। মৃত পাখির হাড় থেকে
জন্ম নিয়েছিল যে পাথর তার উপর জন্মেছে একটি বৃক্ষ, সেই বৃক্ষে ফুটে
আছে একটি নামহীন ফুল। ফুলটি কী তবে সেই পাখির ডানাচিহ্ন! আর
বৃক্ষটি কী তবে পাখির সহদোরা! যে বিলে স্নান সারতো ঐ পাখি, সেই
চলনবিল কী তবে আমার লেখার খাতা! এমন অনেক ঘোরদৃশ্য দেখতে
দেখতে আমি ট্রেনে চেপে বসি। টিকিট চেকার এসে আমার টিকিট দেখতে
চান। টিকিট কাটি’নি আমি। দিইনি ট্রেনের ভাড়া।আমাকে সামনের স্টেশনেই
নেমে যাবার আদেশ জারি হয়। আমি কাঁধের ঝুলো’টি সামলাতে সামলাতে
নেমে পড়ার জন্য তৈরি হই। একজন কাগজ বিক্রেতা এসে আমার সামনে
দাঁড়ান। এবং বলতে থাকেন— নামবেন না বাবু! আপনার ভাড়াটা আমিই
দিয়ে দিচ্ছি…………
আমি ক্রমশ পাথর হতে থাকি। মনে হয়, মানবজনমের চেয়ে পাথরজনম
অনেক ভালো। পাথর অনেক কিছুই দেখতে পারে। মানুষ চেয়েও দেখে না।
#

.
স্যাটেলাইট, ছায়া হয়ে থাকো

মনে আনন্দ এলে আমি মাঝে মাঝে অজান্তেই
‘জয় বাংলা’ বলে ফেলি। একদিন নিউইয়র্কের ব্রায়ান্ট পার্কে বসে এমনটি
বলার পর বেশ বিপাকেই পড়েছিলাম।
পাশের চেয়ারে বসা তরুণ জানতে চেয়েছিলেন- ‘আর ইউ ওকে!’
তিনি ভেবেছিলেন, আমি নিজের সাথেই
কথা বলছি।

একই অবস্থা হয়েছিল লন্ডনেও। গতবছর,
ট্রাফালগার স্কোয়ারে দাঁড়িয়ে জয় বাংলা
বলে উচ্চস্বরে শ্লোগান দেয়ার পর-
আমার দিকে তেড়ে এসেছিলেন এক বাঁশিওয়ালা
তার অভিযোগ ছিল, আমি তার সুরধ্যানে
ব্যাঘাত ঘটিয়েছি।

আমি এভাবেই আত্মালাপ করে করে দেশে বিদেশে,
শুনিয়েছি ৩২ নম্বরে নেমে আসা কালোরাতের
বিষাদগল্প। এভাবেই পঙক্তি লিখেছি
শেখ মুজিবের নামে।
৮৯ এর এক দুপুরে জাতিসংঘ চত্বরে
‘জয় বঙ্গবন্ধু’ বলে যে শ্লোগান দিয়েছিলাম,
তা পৌঁছেছিল স্বৈরশাসকের তখত পর্যন্ত।
আমার সতীর্থরা, তেমন স্মৃতি এখনও
মনে করিয়ে দেন। তারা আরও বলেন-
এই জাতিসংঘের পুষ্পবিতানেই একদিন
জনকের ছায়া পড়েছিল।

আমি এখনও সেই পদরেখা খুঁজি।
আজ ১১ মে ২০১৮ এর এক সূর্যময় বিকেলে
ফ্লোরিডার আকাশ থেকে যে স্যাটেলাইট’টি
উড়ে গেল, অথবা আমাদের একগুচ্ছ স্বপ্ন
ছড়িয়ে দিল আকাশে-
সেখানেও উজ্জ্বল হয়ে থাকলো জনকের
শক্তিছায়া,
‘আমি যদি হুকুম দিবার না ও পারি’….
বলে তিনি যে সাহস জাগিয়েছিলেন প্রজন্মের
প্রাণে প্রাণে, সেই প্রজন্মই আজ আবার বললো, ‘জয় বাংলা’
বিশ্ববাসী দেখলো, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ এখন এয়ারস্পেসে,
নিজেদের সাকিন করে নিয়েছে।
#

ছন্ন ছড়া

সবার যখন মত্ত ছুটি
আমি তখন ঘাস্কাটায়,
সবার যখন ব্যস্ত কাজ
আমি তখন রাস্তা পা য়।

কারো পকেট ভর্তি হলেও
চোখ থেকে যায় টাঁকশালে,
দু টাকাতেই আমীর আমি
জলসা বসে জঙ্গলে।

একটুখানি নাম ছড়ালেই
প্রাসাদ গড়ে অহংকারী,
চালচুলোহীন বেবাক হাসি
এপার ওপার আমার বাড়ি।

এমনই থাক মেট্রোমানুষ
কিম্বা গঞ্জ ব্যবসাদার,
মাঠ ও গ্রামীণ আদিবাসী
সোজাসাপটা পগাড়পার।

কাব্য কিম্বা গান্ধীছাপে
ঝুঁকছে মানুষ দিন ও রাত,
এই আছি বেশ তোয়াক্কাহীন
মানুষ ছুঁয়ে হাতে হাত।