ট্যাগ আর্কাইভঃ ইসিয়াকের কবিতা

মধুরিমাঃ ভালো থেকো

কেমন আছো প্রিয়তমা স্বেচ্ছা বন্দী জীবনে?
ঠিকঠাক আছো তো নিয়মে?

আমি কিন্তু ভালো আছি, নতুন জীবনাচরণে,
এখন তো ঘরে বসেই থাকি।
যদিও মাঝে মাঝে তোমার কথা ভাবি।
তোমাকে না বদলালেও অন্য অনেক অভ্যাস
আমি বদলে নিয়েছি, সময়ের প্রয়োজনে।
তবে কখনো কখনো সিগারেটের নেশাটা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে,
তুমি যাকে সতীন বলতে ভালোবাসতে !
তুমি ছেড়ে গেলেও তোমার সতীন আমাকে ছেড়ে যায়নি কখনো।

আর কি করি?
গান শুনি। মুভি দেখি।
ছবি আঁকি মাঝে মাঝে।
আচ্ছা তোমার ওই গালের তিলটা ঠিকঠাক আছে তো।

একটা কথা তো বলাই হলো না,
তুমি না আমায় কবি রুপে দেখতে ভালো বাসতে!
আমি তোমায় নিয়ে ভাবতে ভাবতে,
তোমার আমার সম্পর্ক নিয়ে লিখতে লিখতে ,
কবিতার মতো কিছু একটা লিখে ফেলছি।
ফুরসত পেলে অবশ্যই শোনাবো তোমাকে।
হতে পারে সেটা করোনা মুক্ত পৃথিবীর বিজয় উৎসবে।
ততোদিন খুব করে ভালো থাকা চাই কিন্তু।

মাঝে মাঝে মন খারাপ হলেও ,
এখন আমার সময় কাটে বিশ্রাম নিয়ে,
বিশ্রামেও ক্লান্তি আসে আজকাল!

এই প্রথম বুঝলাম না পাওয়ার আনন্দেই মজা বেশি।
যেমন তোমাকে হারিয়ে আমি……

ও হ্যাঁ তোমাকে তো বলাই হয়নি,আমি দারুণ রান্না শিখেছি।
ঠিক তোমার মতো করে।
মাটন কষা, ছোট মাছ চচ্চড়ি,
সেই সাথে প্লেইন পোলাও।
জানি শুনলে তোমার জিভে জল এসে যাবে।
দেখা হবে যখন, খাওয়াবো, কথা দিলাম।
মুক্ত পৃথিবীতে আবার আমরা প্রেম করে বেড়াবো।
সব ভুলগুলো শুধরে নেবো।
তখন কিন্তু না বলতে পারবে না।
ভালো থেকো মধুরিমা।

শুধরে দেবো ভুল

তোমার চোখে যত অভিমান
ধুয়ে দিয়ে যাক বৃষ্টি।
কান্না গুলো ধুয়ে মুছে যাক
ভালোবাসা হোক সৃষ্টি।

চিত্ত চায় তোমার উপর
বৃষ্টি হয়ে ঝরতে।
বারেবারে তোমার প্রেমে
প্রণয়ী হয়ে মরতে।

রাত বিরেতে ইচ্ছে করে
তোমাকে ভেজাই।
তোমার প্রেমে ভালোবাসার
বৃষ্টি হয়ে যাই।

প্রিয় তুমি হও তবে
আষাঢ়ের কদম ফুল।
জল জোছনায় ঝরে ঝরে
শুধরে দেবো ভুল।

প্রশান্তির বৃষ্টি নামুক

এমন সকাল আসেনি আগে,
খুশির দিনে নীরবতা।
পৃথিবী জুড়ে শুধুই আহাজারি,
বাঁচার আকুলতা।
এমন সময় আসেনি আগে
জীবনের নাই দাম।
মহা দুর্যোগের এই দুর্দিনে
কত চেনা মুখ হারালাম।
আলোর দিন আসবেই একদিন
কাটবে অমানিশা।
কত চেনা মুখ হারিয়ে তবে
পাবো সে পথের দিশা?
অনেক হয়েছে এবার তবে
মৃত্যুর মিছিল থামুক।
অশুভকে হারিয়ে শুভ জিতে যাক
প্রশান্তির বৃষ্টি নামুক।

শুভ নববর্ষের দিনে

[১]
শুভ নববর্ষের দিনে, নিপাত যাক,
দূর হোক অশুভ শক্তি।
সকল অকল্যাণ দূর হয়ে,
মানবজাতি পাক মুক্তি।

[২]
এসেছে আবার নতুন একটি দিন,
নতুন আলোর প্রভাত।
পৃথিবীর অসুখের এই দুর্দিনে,
অবদমিত হোক অশুভের যত আঘাত।
একদিন ঠিক ফিরবে কোলাহল,
সারা পৃথিবী জুড়ে।
ততদিন অবধি এসো হে নবীন,
মানবতার তরে যাই লড়ে।
গাই সাম্যের গান, এসো মিলে
মিশে চলি ,এই মহাদুর্যোগ, দুর্দিনে।
এসো শপথ নেই, নববর্ষের দিনে,
মানবতার কল্যাণে।
মানবজাতি আবার সহাবস্থানে যাক,
ফিরে পাক উচ্ছলতা।
আলোয় আলোয় ভরে উঠুক পৃথিবী,
নব নবীনের কথকতা।

নজরবন্দী

যখন সময় ছিল দেখার,
করেছি অবহেলা।
অসময়ে এখন আবেগ বেশি,
মন উতলা।
এখন বুঝি সহজপ্রাপ্য যা কিছু,
তার নেই কোন দাম।
বড় আদরের মানিক রতন,
অবহেলায় হারালাম।
দিয়েছি কত আঘাত জ্বালা,
করেছি বদনাম।
মনপাখি তুমি ভালো থেকো ,
ভুলে থেকো অপমান।
গৃহবন্দী এখন করোনার খেয়ালে,
হয়েছি নজরবন্দী।
তাই বুঝি এই অনুশোচনা এলো,
মন চাইছে সন্ধি।

সংশয়

আমের বনে দোলা দিলো,
কৃষ্ণচূড়ায় ফাগুন।
তোমার প্রেমের মাতাল হাওয়ায়,
মনে লাগে আগুন।

গুন করেছো কি দিয়ে গো,
কোন সে জাদুটোনা।
তোমায় ছাড়া দিন কাটে না,
হৃদয় আনমোনা।

শীতল দিনে খোলস ছেড়ে,
উষ্ণতার লোভে।
তোমায় ছোঁয়ার নেশায় বিভোর,
ভাবনা ভেবে ভেবে।

মন মঞ্জরিত, উথাল পাতাল
হাওয়া বয়ে যায়।
নতুন প্রেমের নতুন প্রকাশ
বিকাশ হতে চায়।

কি যে জ্বালা! এলো এ কোন
অমানিশার ঘোর।
দিনগুলি যায় তবু ও তো ,
কাটে না প্রহর।

কোয়রেন্টাইনের দিনগুলিতে,
বড্ড ভাবনা হয়।
আঁধার শেষে আলোর দিনে
পাবে তো তোমায়?

পারবো কি আবার হাত ধরতে
পাশাপাশি চলতে ?
নাকি করোনার ভয়ে দুর থেকে
হবে কথা বলতে?

মধুরিমাঃ আইসোলেশনের দিনগুলোতে তোমায় মনে পড়ে

জীবনের চলতি পথে,
অনেকগুলো কান্না একসাথে
জড়ো হয়ে বেদনা ও অভিমানের সৃষ্টি হলো।

তিমির রাত্রি ঘন ঘোর আঁধার,
শ্বাসরোধ হয়ে আসা সময়।

তবুও কি তুমি ফিরবে না মধুরিমা?
আসবেনা খোঁজ নিতে একবার,
দেখবে না চোখের দেখা?

মেয়েদের এতো বেশি নির্দয় হতে নেই প্রিয়তমা।

জানি পৃথিবী ভর্তি অক্সিজেন।
শুধু আমার জন্য বিধাতার বরাদ্দকৃত
অক্সিজেনটুকু ফুরিয়ে আসছে দ্রুত।
জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে,
যদি একবার মুখখানি দেখতে পেতাম তোমার!

আইসোলেশনের বড্ড যন্ত্রণাময় দিনগুলোতে
তোমাকেই খুঁজে ফেরে মন বারে বার।
চলে যাবার আগে হয়তো দেখা হবে না আর,
হবে না কোন কথা,
শুধু জানিয়ে গেলাম আমার এ অসহায় হাহাকার।

খুকুর কষ্ট

কুট কুট কুট পিঁপড়া কাটে,
পিঁপড়ার নাই ভয়।
কাটুস কুটুস কাটুস কুটুস,
সদা ব্যস্ত রয়।

গুণ গুণা গুন অলি ওড়ে,
গায় যে সুখের গান।
উত্তর পাড়ার বৌ,ঝিরা ধরে
ঢেঁকি পাড়ানি গান।

ফুড়ুৎ ফুড়ুৎ চড়ুই নাচে,
এদিক ওদিক চায়।
ছোট্ট খুকু চড়ুইছানার,
পেছন পানে ধায়।

চলতে পথে ছোট্টখুকু
হোঁচট খেয়ে পড়ে।
পতন রোধে ভুল করে খুকু
খেজুর পাতা ধরে।

উফ মাগো মরে গেলাম
কি বিঁধলো হায়।
বিষম এক লম্বা কাটা,
খুকুর ফোটে পায়।

কিসের কাটা কিসের কাটা,
এযে খেজুর কাটা।
বিষম তার জ্বলুনি,
পা হলো আকাটা।

বদ্যি এলো ওঝা এলো,
নামলো না তো বিষ।
বিষম ব্যথায় খুকু কাঁদে,
কষ্ট অহর্নিশ।

দেখো আবার এমন কিছু করোনা নিজেই অপমানিত হও পাছে

লোকটি দুঃখী, হত দরিদ্র,
ঠিকমতো নাই চালচুলো।
অভাবে অনটনে কোনরকমে কাটে
গ্রীষ্ম, বর্ষা, শীতগুলো।

দরিদ্র লোকটি বোঝে না সবটুকু,
বোঝে সংসারের জ্বালা।
পেটের দায়ে পথে নামে,
নিয়ে তোমাদের অবহেলা।

তোমরা তো সুধীজন, বিবেকবান,
বোঝো কি দুঃখীর ব্যাথা।
দুঃখীরে তোমরা অপমানিত করো,
করো রস রসিকতা।

ভেবেছো কি এমন যদি হতো,
দুঃখীর স্থানে তোমার পিতা।
তখনও কি তুমি করতে এমন,
নিদারুণ রসিকতা।

দুঃখী তো বোঝে না ভাইরাস কি,
করোনা কোন সে জাতের বিষ।
না হয় তারে তুমি বুঝিয়ে দিতে,
এমন গ্লানি কেন তারে দিস!

দরিদ্ররাও মানুষ, মানুষের মর্যাদা,
দাবী রাখে তোমাদের কাছে।
দেখো আবার এমন কিছু করোনা
নিজেই অপমানিত হও পাছে।

২৬শে মার্চ স্বাধীনতা দিবস এলো

একটা ছেলে জন্মেছিলো টুঙ্গিপাড়া গ্রামে,
সেই ছেলেটি পরিচিত শেখ মুজিবুর রহমান নামে।

একটা ছেলে চেয়েছিলো বাংলার ভালো হোক,
সেই ছেলেটা সাধাসিধা নিপাট ভদ্রলোক।

একটা ছেলে দেশের তরে নিবেদিত প্রাণ,
সেই ছেলেটির মোহনবাঁশিতে ছড়ালো মুক্তির গান।

একটা ছেলের বক্তব্য শুনে শোষকেরা বসলো নড়েচড়ে,
সেই ছেলেকে ঠেকাতে তারা নানা ফন্দি করে।

একটা ছেলের নিজের দেশের ছিলো বড় সাধ
সেই সাধকে হায়েনারা বলল কঠিন অপরাধ।

একটা ছেলের ডাকেতে জনতা উঠলো জেগে,
সেই ছেলের আহ্বানে পাকসেনারা গেলো রেগে।

একটা ছেলে ২৫শে মার্চ রাতে কারাবন্দী হলো,
বন্দী হবার আগে সে স্বাধীনতার ডাক দিলো।

সেই রাতে পাকসেনারা দেশকে বানালো দোজখ,
চরম অত্যাচার খুনোখুনি, ভাঙলো মায়ের বুক।

সেই ছেলেটির অর্ন্তধানে বীর বাঙালী হলো ক্ষিপ্ত,
সম্মিলিত প্রাণপণ প্রচেষ্টায় দেশকে করলো রাহু মুক্ত।

নয়মাস পরে পূরণ হলো সেই ছেলেটির সাধ,
স্বাধীনতা মানে মুক্তি, সেটা নয়তো অপরাধ,

সেই ছেলেটি ও জনতার মিলিত সমন্বয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হলো,
তারই ধারাবাহিকতায় ২৬শে মার্চ স্বাধীনতা দিবস এলো।

চিরন্তন

চন্দ্রালোকের উত্তাপ ছিলো
তোমার ষোলোতে।
পঁচিশ হঠাৎ থমকে গেলো,
তোমার আমন্ত্রণে।
আচ্ছা তুমি খোলা চুলে এতো কেন স্বপ্নিল?
ঠোঁট দুটোতে রঙবিহীন,
তবু চরম অস্থির।
জলজোছনায় দেখা হতেই
বজ্র ঝড়ের আভাস।
ঠিক তখনই দিক হারালো
দুটো দীর্ঘশ্বাস।

মান অভিমানঃ কোয়ারেন্টাইনের দিনগুলিতে

বসন্ত এসে গেছে,
প্রকৃতি ভরে গেছে ফুলে।
তুমি আমি দূরে সরে গেছি,
দুজনের কিছুটা ভুলে।

আমি না হয় না বুঝে,
দিয়েছি তোমায় আঘাত।
তুমি কেন প্রতিশোধ নিতে,
দিলে পাল্টা আঘাত।

হয়তো কোনদিন দেখা হবে না
হবে না কোন কথা।
কোয়ারেন্টাইনের দিনগুলিতে
জানাই এ বারতা।

প্রিয় তুমি ভালো থেকো,
থেকো অতি সাবধানে।
চিরদিন তুমি রবে মোর,
মনের মধ্যিখানে।

পরকালের জীবন তোর আসল ঠিকানা

রঙের ঘুড়ি ছিড়বে যেদিন,
করবি তখন কি?
আসলে পরে মৃত্যু সমন
উপায় রবে কি?

সময় থাকতে খুঁজে নে মন,
আপন পথের দিশা।
সময় গেলে হবেনা সাধন,
সামনে অমানিশা।

আল্লাহর নাম স্মরণ কর,
ওরে অবুঝ মন।
যখন তখন সাঙ্গ হবে,
তোর বিলাসী জীবন।

যতই তুই রঙ মাখিস,
যতই করিস পালিশ।
ঘুমাতে হবে ওই কবরে,
খাটবে না কোন নালিশ।

মৃত্যুর কথা বললে পরে
বড্ড গোস্সা তোর।
জানিস শুধু জেনে রাখিস,
শেষ ঠিকানা কবর।

সত্য কথনে গুসসা হবে,
দিবিরে তুই গালি।
নিজের পাপে নিজেরে তুই
করবি ফালি ফালি।

কার কি হবে যার পাপেতে
তারেই শুধু খাবে।
আল্লাহ আল্লাহ বলরে পাপী
আল্লাহ ই মুক্তি দেবে।

বারেবারে বলিসরে তুই
কি করেছি পাপ?
ফেরেশতারা শুনে হাসে,
দেয় অভিশাপ।

মানুষ মাত্রই পাপ তো আছে
জানা অজানা।
পরকালের জীবন তোর
আসল ঠিকানা।

আবার নিশ্চয় দেখা হবে একদিন

মনের মধ্যে তীব্র অভিমান পুষে।
ভেবেছিলাম কথা বলবো না আর,
দেখা তো দূরের কথা!
মুছে দিলাম যত তোমার আমার
অন্তর্জাল সংক্রান্ত কর্মকাণ্ড।
যতরকম যোগাযোগের উপায়।
যাক মুছে যাক চিরতরে।

কিন্তু আজ নিরালায় একাকী সময়ে,
কেন জানি,
তোমায় সান্নিধ্য ফিরে পেতে চাইছে এ মন।
বারবার মনের মাঝে এসে করছে ভীড়,
তুমি এবং তোমার ও মুখখানি…..
তোমার যত স্মৃতিও অতীত কার্যক্রম ।

তুমিও দেখি ভীষণ মান অভিমানে
এমুখো আর হওনি একবারো।
নাওনি কোন খোঁজ প্রিয়তমা।

লক ডাউনের জেরে,
কি আশ্চর্য
তুমি হারিয়ে গেছো হঠাৎ, এই চেনা শহরের মাঝে।

কেমন আছো তুমি? ভালো আছো তো?
জানতে ইচ্ছা হয় খুব করে।

ভালো থেকো প্রিয়তমা,সাবধানে থেকো।
নিজেকে দূরে রেখো করোনা ভাইরাস হতে।

একদিন নিশ্চয় মুক্তি মিলবে মানবতার এই মহা
বিপর্যয় থেকে।
আবার মানুষ ফিরে পাবে তার হারানো প্রাণচাঞ্চল্য।
তখন দেখা হবে কথা হবে আবার আগের মতো।
শুধু ভরসা রেখো।

ইরাবতীঃ দেখা হবে তোমায় আমায় হোম কোয়ারান্টাইন শেষে

ইরাবতী,
তোমার হৃদয় অরণ্যানীতে যদি গোলাপ হয়ে ফুটি।
তুমি কি সুবাস নেবে?
দেখবে কি আমায় ফিরে?

কিম্বা তোমার চায়ের পেয়ালাতে যদি,
উষ্ণ চা হই, তুমি কি চুমুক দেবে?

জানো কি না জানিনা,
তোমার সাথে আমার জল ছল ছল
সম্পর্ক করতে ইচ্ছা হয়।

দেখো দেখি কেমন সাঁতরে চলে যায় মাছ,
জলের ভাজে ভাজে,
আমি তেমনি জলডুব খেলতে চাই
তোমার সাথে সাথে
তুমি কি রাজি হবে?

দেখা হবে ঠিক, যদি রাজী থাকো।
হোম কোয়ারান্টাইন শেষে।
করোনা ভাইরাসকে নিশ্চয় জয় করবো অবশেষে।