ট্যাগ আর্কাইভঃ ইসিয়াকের কবিতা

সোনার ছেলে

একটা সোনার ছোট্ট ছেলে জন্ম নিলো এই দিনে,
ধীরে ধীরে জায়গা হলো তার, কোটি জনতার মনে।

সেই ছেলেটি জন্মেছিলো টুঙ্গিপাড়া গ্রামে।
তার আগমনে যেন মুক্তির বার্তা, এলো ধরাধামে।

অন্তরটি তাহার বিশাল বড়ো,অনেক দয়া মায়া,
সব মায়ের চোখে দেখতে পায় সে, নিজ মায়েরই ছায়া।

দেশের মানুষ মুক্তি চায় ,পায়না কোন দিশা।
একদিন তার নির্দেশনায় কাটলো অমানিশা।

বজ্র কণ্ঠের যাদুতে তার হ্যামিলনের বাঁশি,
তার স্পর্শে দুঃখী বাঙালির, ফুটলো মুখে হাসি।

ছেলে তো নয় হিরের টুকরো দেশবাসী তা জানে।
তাকে সবাই বঙ্গবন্ধু ডাকে, জাতির পিতা মানে ।

হাজার শতাব্দী চিরঅমর রবে তার মৃত্যুহীন প্রাণ,
সে যে আমাদের প্রাণাধিক প্রিয় শেখ মুজিবুর রহমান।

করোনা, করোনা, ধরলে কিন্তু ছাড়বে না

বাঙালি বড় আজব জাতি,
সবটাতে তার বড্ড মাতামাতি।
এজন্যে তাদের হুজুগে বলে,
নিত্য আবেগে সদা ভেসে চলে।

হঠাৎ আজব এক রোগ এলো,
চিকিৎসাহীন রোগে মৃত্যু হলো।
ভয়ে সবাই আতঙ্কিত হয়,
উপায় খোঁজে, বাঁচার উপায়।

শুধু বাঙালির কোন ভয় নাই,
ঈশ্বর ভরসায় স্বান্তনা খুঁজে পায়।
ঝড়ে বক মরে, ফকিরে লাফায়,
দোয়া তাবিজে নাকি করোনা পালায়!

করোনা নাকি খুব জাত চেনে,
মুসলিমদের নাকি সে গুরু মানে।
মুর্খ লোকেদের অলীক ভরসা,
কোথায় পায় এত সাহস সহসা!

দলে দলে লোক ওয়াজ শুনতে যায়,
বাড়িতে বাড়িতে ডিজে পার্টি দেয়।
বিয়েবাড়িতে চলে দারুন হৈচৈ মজা,
একই আচরণে চলে রাজা সহ প্রজা।

মন্ত্রী মশাইগণ বেজায় সাহসী,
চিন্তা নাই কোন সদা হাসিখুশি।
চলছে ইশকুল, কলেজ পুরোদমে,
পড়তেই হবে ,টানলেও যমে!

কোন কিছুতেই নেই কোন মানা,
দেশটা যে বড্ড দলকানা।
হবে না তাদের ই কোন ক্ষতি,
ইমানদার হলে তবে মুক্তি।

হায় করোনা হায় করোনা,
ধরলে তো কাউরে ছাড়েনা।
এটুকু বোধ কবে হবে?
হাজার মৃত্যুর দামে যখন মূল্য দেবে?

অধরা

একদিন তুমি বললে,
আমায় নিয়ে একটা কবিতা লিখতে পারো?
আমি বলেছিলাম, তোমার পুরো অবয়বই তো একটা মস্ত কবিতা।
মেয়েটি হেসে বলেছিলো, না সেটা না,
তুমি আমায় নিয়ে, আমার অনুভুতি নিয়ে,
তোমায় আমার ভালো লাগা নিয়ে একটা কবিতা লিখে দেখাও,
তবেই আমি তোমার হবো।
আমার অবয়ব তো বিধাতার লেখা কবিতা।
যা তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন নিজের অপূর্ব সৃষ্টি কর্মে।
সেই থেকে আমি শুধু তোমায় দেখি,
আর চোখ মেলে তাকিয়ে থাকি,
কি অপরূপ তুমি!
কবিতারা আসে কিন্তু আমি ধরতে পানি না।
আর দিনশেষে,
কিছুতেই তোমাকে নিজের করে পাওয়া হয়ে ওঠে না।
তুমি বরাবরই থেকে যাও অধরা।

পিতা তোমার জন্মদিনে জানাই শুভেচ্ছা

কার ডাকেতে টগবগিয়ে উঠলো আমার বাংলাদেশ,
কার ডাকেতে রক্ত দিয়ে মুক্ত হলো স্বদেশ।

কার ডাকেতে সমবেত হয়েছিলো দীপ্ত তরুণেরা,
কার ডাকেতে দ্বিধা ভূলে একত্রিত তারা।

কার ডাকেতে অসাম্প্রদায়িক হলো গোটা বাংলাদেশ।
কার ডাকেতে স্বপ্ন দেখলো প্রাণ প্রিয় স্বদেশ।

কার ডাকেতে সোনার রবি ছড়ালো দীপ্ত তেজের আলো,
কার ডাকেতে সকল বিভেদ ভুলে মন্দ হয় যে ভালো।

কার ডাকেতে রক্তে আগুন জ্বলেছে বারবার,
কার ডাকেতে পরাধীনতার শিকল ভেঙেছে দুর্বার।

কার ডাকেতে মুক্তি মিলল শোষণ বঞ্চনার।
কার ডাকেতে স্বাধীনতা হলো একান্ত আপনার।

সে আমাদের বঙ্গবন্ধু সে আমার জাতির নেতা,
সে আমাদের প্রাণাধিক প্রিয় আপন জাতির পিতা।

নেতা নেতা সবার নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান,
জাতি কখনো ভুলবে না তোমায়, তোমার নিঃস্বার্থ অবদান।

নেতা তোমার শতবর্ষের জন্মদিনে অনেক শুভেচ্ছা।
জাতি আবার একত্রিত হোক এই রইলো ইচ্ছা।

আকাশ বোঝে মনের কথা

হাজার মানুষের ভীড়ে,
কেউ কেউ একেবারে একলা একা।
সেই মানুষটির খোঁজ কেউ কি রাখে?
জানতে চায় কি তার মনের খবর?

যার যায় সেই জানে, হারানোর বেদনা।
খুঁজে ফেরে পিছনের দিনগুলি।
প্রিয় মানুষের আলিঙ্গন, সুখ, সোহাগ ও ভালোবাসা।
সেই মানুষটির দুঃখ ভরা জীবনের গল্প
শুধু আকাশ বুঝি মাঝে মাঝে শোনে, বোঝে তাকে।

তাই সে ক্ষণে ক্ষণে হয়তো রং বদলায়
সুখ দুঃখের ভাগী হতে।
তাই আকাশ কখনো রোদ হয়ে হাসে খিল খিল।
বরষা হয়ে ঝরে সমবেদনায় দিন ভর ঝরঝর।

যে যার মতো


আকাশ জু‌ড়ে মেঘ ক‌রে‌ছে,
আঁধারে গে‌ছে ছে‌য়ে।
একলা একা ব‌সে আ‌ছে,
অনাথ ছোট্ট মে‌য়ে।

ছুট লাগা‌লো যত মানুষ,
যে যার বা‌ড়ির পা‌নে।
আপনজ‌নের কা‌ছে ছো‌টে,
আপন মায়ার টা‌নে।

মা বাবা নাই ছোট্ট খুকির,
নেইতো বাড়ি ঘর।
ঘরে চলো, বিপদ এলো,
নেই কেউ বলার তার।

হঠাৎ খুকি ভয় পেলো খুব
বাতাস উঠলো জোরে।
ছুটলো বনের পশুপাখিও,
সবাই তখন ঘরে।

খুকি কাঁপে থরথরিয়ে,
ভয়ানক বাতাস বয়।
ভয়ের মাঝে ছোট্ট খুকির,
দিক হারিয়ে যায়।

হুড়মুড়িয়ে টিন যে ওড়ে,
ভাঙে গাছের ডাল।
বাতাসের ধাক্কাতে খুকি,
বড্ড নাজেহাল।

ছোট্ট খুকি পড়ে গেলো,
ভয়ে দিলো চিৎকার।
ঝড়ের কালে যে যার মতো,
কেউ নেই দেখার তার।

অনেক কষ্টে ছোট্ট খুকি,
উঠলো আবার ঠেলে।
বুঝলো সে একলা একা,
কেউ নেবেনা কোলে।

এবার খুকি হাঁটলো সোজা,
কাক ভিজে বৃষ্টিতে।
আশ্রয়ের খোঁজে নিজেই নিজে,
হাঁটলো অজানার পথে।

আত্মবিশ্বাস


প্রত্যেক ভালোবাসাতে,
শেষটা কি হবে কেউ জানেনা।
তবে ভালোবাসাবাসিতে মনের জোর রাখতে হয়।
ভালোবাসায় পুরাদস্তুর সৎ থাকা চাই,
লক্ষ ও ঠিক রাখা চাই।
তবেই ভালোবাসা জিতে নেওয়া যায়।

বায়বীয় ভালোবাসা

এলোমেলো আলোতে ভাসিয়ে দিলাম প্রেম।
তুমি হাত বাড়িয়ে তুলে নিও,
আমার প্রেমের ছোঁয়াটুকু,
কোমল মমতায়।
আর স্বপ্নগুলো মিলিয়ে নিও জলের মুকুরে।

টলটলে ছায়ার মাঝে ফুটবে ঠিকই হাসি,
তোমার অপরূপ মুখখানিতে।
আমি জলের স্রোতে দেখে নেব তোমার সন্তুষ্টি।
তুমি উষ্ণ স্পর্শের সুগন্ধ মিশিয়ে দিও তাতে,
আমি মন ভরে তুলে নেব গভীর নিঃশ্বাস মেশানো
ভালোবাসার স্পর্শটুকু তোমার,
বহু দূর থেকে।

প্লিজ


ফোনটা রেখোনা …………প্লিজ।
একা বসে আছি তোমারই অপেক্ষায়,
আর নিজেকে সামলাতে পারছিনা কিছুতেই
জানো কিনা জানিনা.
বোঝ কিনা বুঝিনা।
আমি সত্যি আর পারছিনা প্রিয়তমা।
আমার ঘেটে যাওয়া জীবনটাতে তোমাকে না পেলে,
কোন কাজে মন বসবেনা কিছুতেই।
তিন সত্যি বলছি।
বিশ্বাস করো প্লিজ।
একবার তোমার ঠিকানাটা দাও নাগো জান।
ঠিক দেখো এক গোছা ফুল নিয়ে হাজির হবো
তোমার ব্যলকনিতে।
অন লাইন প্রেমে আর পোষাচ্ছেনা কিছুতেই।
এই ভিডিও চ্যাটিং,
অডিও প্রেমালাপ আর ভালো লাগছেনা সোনা।
এবার একটু হাত ধরাধরি হলে বেশ হয়।
কিম্বা বৃষ্টি ভেজা দিনে ঠোঁটে ঠোঁট রাখতে ইচ্ছা হয়।
দাও নাগো তোমার ঠিকানা।
একটু অফ লাইন প্রেম করি, প্লিজ।

কুটুস পুটুস [শিশুতোষ ছড়া]


এক যে ছিলো কুটুস পুটুস,
কুটুস গেলো হাটে।
কুটুস ফেরার আশায় আশায় ,
পুটুসের বেলা কাটে।
বেলা গেলো সন্ধ্যা হলো,
কুটুস এলো না ফিরে।
নানা চিন্তায় পুটুসের,
গেলো মাথা ধরে।
কুটুস পুটুসের দুই খোকা,
নাম আটুল বাটুল।
বাবার শোকে রাগে দুঃখে
বাধালো ভীষণ গোল।
কোঁদোনা গো আঁটুল সোনা।
কেঁদোনা গো বাটুল।
কুটুস হয়তো গুম হয়েছে,
নয়তো তুলেছে পটল।
তাইনা শুনে আটুল চেঁচায়,
চেঁচায় জোরে বাটুল।
শোকে দুঃখে রাগের মাথায়
পুটুস ছেড়ে চুল।
এমন সময় কুটুস ফেরে
দু হাত ভরা বাজার।
কান্না থামিয়ে মা ছেলে তিনে
হাসছে হাজার হাজার।

চক্র


গাছে গাছে ফোটে ফুল,
ফুল ছড়ায় সুবাস।
ভালো দেখায় সব ফুল,
নানা রূপের প্রকাশ।

মধু লোভী মৌমাছি,
উড়ে আসে ফুলে।
ফুল হতে ফলের,
রহস্য এর মূলে।

গায় পাখী পিউ পিউ,
খাবে পাকা ফল সে।
আহারে নেই মানা,
এবেলায় নয় আলসে।

রবি দেয় আলো বেশ,
বনে বনে লাগে দোল।
খাদ্য ও খাদকের
রকমারী শোরগোল।

আলো চায় ঘাস লতা,
ফড়িং ঘাস লতা খায়।
সেই ফড়িং ব্যাঙের খাদ্য,
সাপের প্রিয় ব্যাঙ চায়।

সাপ ধরে খায়, ঈগল পাখি,
ঈগল শিকার করে মানুষ।
শক্তি প্রবাহের প্রক্রিয়ায়
সবাই অনিবার্য, নাই হুশ।

যদি বাঁচে প্রাণি ও গাছ,
তবে বাঁচবে প্রতিবেশ।
নইলে ক্রমে ক্রমে
ধ্বংস হবে পরিবেশ।

পরস্ত্রী

একটু নিজের মতো করে ভালোবাসবো বলে,
তোমায় ডেকেছিলাম এই বসন্তদিনে।
মধুরতম কোকিলের কুহু কুহু ডাক,
ঝরাপাতাদের গান,
রোদ বাতাসের খেলা।
এই বিমোহিত ক্ষণে, তুমি এলে।
তবে শঙ্কিত পায়ে।
কেন এত দ্বিধা?
কিসের এত ভয়?
এত স্বতঃফুর্ত তুমি
এমন কুণ্ঠিত হলে কেমনে?
তোমার মুখ আমার চোখ চাইতেই,
আমি শোকাহত হলাম এক নিমেষে!
একি!
তোমার চোখে মুখে অন্যের সোহাগের চিহ্ণ!
তুমি কবে কবে পরস্ত্রী হয়ে গেলে প্রিয়তমা।

স্বপ্নের রাজকন্যা

এ্যাঁই মেয়ে, শোন মেয়ে!
তুমি কি এসেছিলে আমার স্বপ্নে?
দিয়েছিলে কি মৃদু টোকা ,
মনের দরজায়?
একেবারে অবিকল
সেই মুখ, সেই চোখ, সেই হাসি!
এতটা মিল কি করে হয়!
যাকে দেখেছি আমি গতরাতে।
বলো না মেয়ে,
তুমি কি এসেছিলে আমার স্বপ্নে?

বিনম্র শ্রদ্ধা

ভায়ের রক্তে পেলাম ভাষা,
মায়ের শপথে মুক্তি।
বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে, এদেশ আমার
বাংলা আমার শক্তি।

মনের কথা, মনের মতো।
করবে বলে প্রকাশ।
বুকের তাজা রক্তে এলো,
ছাত্র জনতার ইতিহাস।

সেই ইতিহাসের পথটি ধরে,
ফুল সহযোগে গাই শোক গীতি।
নয়কো করুণা নয়কো দয়া।
এটাই শ্রদ্ধা জানানোর রীতি।

একুশ আমার ভালোবাসায়,
ফেব্রুয়ারী অমর গান।
একুশ আমার চেতনায়,
সদা জাগ্রত দীপ্ত প্রাণ।

ভাষা শহীদেরা আমার ভাই ছিলো,
ছিলো মায়ের স্নেহের ধন।
ভাষার তরে কোল খালি হলো,
পাথর চাপা মায়ের প্রাণ।

বিনিময় মূল্য চায়নি তারা,
চায়নি অনেক নাম ও খ্যাতি।
ছিলো নিঃস্বার্থ দেশপ্রেমিক তারা,
রইলো বিনম্র শ্রদ্ধা তাদের প্রতি।

ছলনা

বুকের মাঝে সুখ অসুখে
তোমার বসবাস।
বিনা কাজে বইলো বেলা,
সাড়ে সর্বনাশ।

ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরে,
কথা চলে কি?
এই যুগের প্রেম পিরীতি
পুরাটাই ফাঁকি।

এক হাত বাড়াও তুমি,
আরেকটি রাখো খুলে।
সবই আমি বুঝতে পারি,
দেখি দু’চোখ মেলে।

কত আর লুকাবে তুমি,
তোমার ছলনা।
প্রেম তো নয় ,সময় কাটানো,
বুঝিগো ললনা।

আমিও এখন সময় করে,
হাতটা ধরি ঠিকই!
অন্য হাতটা অন্য কারো পানে
ঠিকই বাড়িয়ে রাখি!