ট্যাগ আর্কাইভঃ দাউদ এর কবিতা

আগুন

17445

আগুন
দ্বিগুণ উসকে দিয়ে
নেমে আছ হংসমিথুন জলে।

পাথর গলে নামে লাভা স্রোত
প্লাবনপীড়িত আমি করিনি প্রতিরোধ!

যত ইচ্ছে আসুক লম্ফন
তবুও তো; পতিত করার জন্য
দিতে হবে মন্ত্র সূত্রের চুম্বন।

বিমগ্ন অমিত সুখ

123047963_3

তার এক লহমায় নিবিষ্ট আমার সমগ্র জীবন
যার এক এক হাসিতে নিরাময় আমার জরা ভীষণ।
সেই রমণীর চোখের জলে আমার বুকে নামে বাণ উথাল পাতাল
তার একটি চুম্বনে বেঁচে রই আমি প্রাণান্ত প্রেম, অনন্ত কাল।
ওরে… ঝড়ো হাওয়া
ওর কাছে কি আছে তোর আসা যাওয়া?
ওরে নিপুণ পূর্ণিমার উদ্যান
আমার হয়ে তারে দিস অমর্ত্যালোকের সন্ধান।
ঘাস ফুলের নরম ঠোঁটে পৌঁছে দিস প্রসন্ন চুম্বন
হাসিতে যেন তার নিদ্রা টুটে ;
ওরে হেমলক আমার হয়ে দিয়ে আসিস অঞ্জলি ভরা আলিঙ্গন।
হ্যাঁ- রে… ময়না
খবর আনিস নি কেন? নাকি, প্রেয়সী আমার কথা কয় না?
জোছনা তো লজ্জায় ডুবেছে
এতো টা রূপসী প্রিয়তমা আমার, মেঘের আড়ালে চাঁদও লুকিয়েছে।
তার এক আঁচলে ছায়াচ্ছন্ন খরাময় পৃথিবীর বুক
একটি আলিঙ্গনে মোহাচ্ছন্ন সমগ্র জীবন আমার, বিমগ্ন অমিত সুখ!

মৃত্যু!

মৃত্যু!
সে তো একটা পর্দা মাত্র, যার
এপার- ওপারের মধ্যে দূরত্ব হচ্ছে একটি মাত্র নিঃশ্বাস!
প্রত্যেকের জীবনে এটি একবারই আসবে,
আপনি চাইলেই এর স্বাদ দুবার পেতে পারবেন না;
সুতরাং সবার উচিত
একে তৃপ্তির সাথে গ্রহণ করার জন্য নিজেকে তৈরি করা। যেন বলতে পারি
আহ… তৃপ্তি…
যাচ্ছি চির পূর্ণিমার দেশে…

স্বাধীনতা যার নাম

nosha-202

এক মুঠো মাটি আলিঙ্গন করি বুকে তুলে
এক মুঠো স্বপ্ন বপন করি হৃদয়ের চাতালে।
সোনা রোদ্দুর উজ্জ্বল সকালে
এক বিন্দু শিশির ছুঁই রুক্ষ আঙ্গুলে;অরণ্যেক প্রহেলিকায়
নির্মল সজীবতায় হেসে উঠে লাল সবুজের পতাকা,
– এই টুকু প্রশান্তির নামই স্বাধীনতা!
এই টুকু ভালোবাসারই কাঙাল বাংলার আমজনতা।

ফাগুনের তপ্ত দুপুরে-
বুকের বোতাম খুলে দাঁড়াই দখিনা বারান্দায়,
নদীর জলে স্নান সেরে ফেরার পথে
রমণীর দল হাসির ছলে ঝেড়ে ফেলে মনের গ্লানি;
স্নিগ্ধ পবিত্রতায় জননীর কোলে ঘুমিয়ে পড়ে নিশ্চিন্ত শিশু
এই টুকু বিশ্বাসের নামই স্বাধীনতা
এই টুকু চাওয়া পাওয়ার কাঙাল বাংলার আমজনতা।

গোধূলি বিকেলে ধরা তলে অপরূপ রঙের বিভা
বিহঙ্গের ডানায় মুক্ত ভালোবাসার উন্মুক্ত প্রভা,
দামাল ছেলের দল নৃত্য করে ঘুড়ি উড়ানো উৎসবে;
এই টুকু সুখের নামই স্বাধীনতা
এই টুকু স্বপ্নেরই কাঙাল বাংলার আমজনতা।

মর্মে মর্মে ধ্বনিত হয় আজানের শাশ্বত সুর
পরম সমর্পণে মূর্ছিত হয় শঙ্খ, কাঁসার বাদ্য মধুর
আত্মার গহীনে নিমগ্ন ধ্যানে উচ্চারিত বুদ্ধের মর্ম বানী
খৃষ্টের স্মরণে উদ্বেলিত হৃদয় আঁকে মমতার বেষ্টনী
এই টুকু উদারতার নামই স্বাধীনতা
এই টুকু চাওয়া পাওয়ার কাঙাল বাংলার আমজনতা।

হে বসন্ত হও অনন্ত !

হে বসন্ত হও অনন্ত
সূর্যের ডানায় উড়ে বেড়াও আদিগন্ত পথ
দীপালির গ্রীবায়- কাঁচা দুষ্টুমিতে
ছুঁইয়ে দাও তোমার প্রাণবন্ত পেখম
অনুপম লজ্জারা পালিয়ে যাক আমার প্রিয়তমার ওষ্ঠ থেকে…

তেপান্তরের মাঠ ছুঁইয়ে আয়ুষ্মান করে দাও
বিস্তীর্ণ শস্য ক্ষেত। গুন গুন গুঞ্জরনে উঠে আসুক মৌমাছিরা
প্রাণান্ত উল্লাসে ছুটে আসুক কৃষাণীর দল, হোক পাগল পারা
হে বসন্ত! হও অনন্ত
নৃত্যরত প্রজাপতিরা আয়ুষ্মান হোক, হোক চিরন্ত
উদ্বেলিত কোকিলের কণ্ঠে বাজুক প্রাগৈতিহাসিক সুর;
জীবন্ত কোন গান
আমার প্রিয়তমার চোখে জল আসুক প্রেমময় মধুর।

ওগো বসন্ত! হও চিরন্ত।
হও উচ্ছল
শিকার মগ্ন মাছরাঙ্গার ঠোঁটে… যৌবন প্রাপ্ত;
চকিত চঞ্চল হও
ঝলমলে উজ্জ্বল দীঘির জলে টলমলে পদ্মফুলে,
নীল আরশিতে ভেসে থাকা মেঘের মখমলে।
হও উতলা
আমার প্রিয়তমার ঘন কালো কোঁকড়ানো চুলে, আঁচলে।

মৌ চাক

প্রায় প্রতিদিন লোভ লাগে
মৌ চাকে
হস্তক্ষেপ করে চমকে দিই নৈসর্গের উদ্যান!
সর্বদা মিসমিস করা ছোঁয়ার স্নায়ু,
অহর্নিশ
জাগিয়ে রাখে অন্তস্থ নির্বাণ
আস্ত পাহাড় টলিয়ে দেয়ার উত্তেজনায়।…
তোমাকে দেখি
অনুপম উৎকর্ষে- গানে ও গমনে,
মনোরম বাগানের স্ফুটিত ফুলের সুষমায়।
আমারও মনে উৎফুল্ল জাগে
চরম!
লোভ লাগে টাটকা মধু সূদনে
একবার আপাদমস্তক মাতাল হই!
চমকে ঠমকে হই ব্যতিব্যস্ত,
বুকে জোনাকির গুঞ্জন
রেখে
ভোমরার মত মুখর হই… আস্ত মৌ চাকে!!

বেঁচে আছি প্রতিদিন

183_o

এখনো/
আঁতুড় ঘরের গন্ধ গায়ে/
এখনো / মধুর স্বরে ডাকে/ মায়ে/
এখনো কেঁদে উঠি/ একাকী/
আলগা হলে / মায়ের বুক /
আসলে/
এখনো আছি/ ছোট্ট সেই পীযুষ টি/
বাবা মায়ের দাউদ/
কখনো/
উদাসী/ কখনো হাসি মুখ/
এখনো /রক্ত-ঘাম /ঝরায় /
অশ্রুত প্রার্থনায় /
চায়/ আমারই সুখ/…
দেখতে দেখতে/ কেটে গেছে/ তিন যুগ/
বসন্ত/
ঝরেছে রঙ্গও বরষ/
অনন্ত শিশিরে/ ডুবে গেছে/ হলুদ প্রান্তর/ সবুজ জমিন/…
জানিনি/ বড় হতে/
রূঢ় হতে/
বড়লোকি ধরতে/ হীরে জহরতে/ ধনে দৌলতে/
পারিনি/
যেতে / গূঢ় হতে নিগূঢ়ে/
হৃদয়/ মন/
দুমড়ে মুচড়ে/ যেতে পারিনি গড্ডালিকায়/ বহতা স্রোতে/
কেবল টিকে আছি/
ডালে-ভাতে/
মায়ের বুকে/ এক রত্তি সুখে/…
আর
কিছুই নেই আমার/ সত্যি নেই/
কবিতার মত/ আকড়ে আছি/ মাটির সোঁদা মায়ায়/
বেঁচে আছি/ প্রতিদিন…/

যে কোন সংজ্ঞাই নিরর্থক এখন

57_n

যে কোন সংজ্ঞাই নিরর্থক এখন
অস্তিত্ব হীন প্রেমে কেটে যায় রাত নির্ঘুম নির্মমে।
অজর নয়নে অনর্থক অশ্রুর বিসর্জন, মাঘের হিমে
অবসিত যৌবন; নির্বিশেষে হয়ে গেছে চেতনা লুণ্ঠন!
যদিও তুমি আচ্ছন্ন শীতনিদ্রায় পুরুষালী ওমে
তবু চিত্ত তোমার অশান্ত ঢের, অবিশুদ্ধ কামে!

অস্বীকার করতে পারো?
যখন তুষারের বুকে লুণ্ঠন হচ্ছিলো আমার গচ্ছিত প্রেম
হিম নয়, আদিম সত্তা তোমাকে কাঁপিয়ে মারছিলো;
রক্তে ধুঁকছিল আফিমের নেশা, হু হু করে তুষার ঝড়ে
ডুবে যাচ্ছিলো তোমার সুডোল স্তন, বুকের উপত্যকা,নিতম্বের শাখা…
তখন আমার সত্তা জুড়ে কবিতার জোরদার আন্দোলন
মরণ পণ লড়াই করে তোমাকে করেছে উদ্ধার!!

যতবার প্রত্যাশা করেছো তারো বেশী দিয়েছি বলিদান
ফণীমনসার বিষ ঠাসা বনফুলের জন্য ধ্বংস করেছ গোলাপের বাগান।
কোন দস্যুতায় টলিনি আমি এক রত্তি, সারা জীবন ভর
অবলার লীলা খেলে গেছে চতুর বাজিকর! অন্তরাত্মা রেখেছি সুমহান
যদিও তুমি অবলীলায় হত্যা করেছো আমার পবিত্র প্রাণ।

সচক্ষে দেখেছ সব! স্ব আত্মায় করেছ অনুভব!
এত কিছুর পরও আজো ছুটছো পথচ্যুত হরিণের মত
আমাকে বধির করে লোকসমক্ষে অন্ধের মতন করছো পরকীয় চুম্বন!
বেশ করেছ-
পৃথিবী দেখুক সভ্যতার আগুনে স্তম্ভিত বাস্তবতা
মিথ্যার প্রয়োজনে নত হয়েছে আজ সত্যের উঁচু মাথা।

পর্দার আড়ালে যক্ষের হাসি

271777

নেড়ি কুকুর গুলো গুহা থেকে বেরিয়ে আসে
সন্ধ্যার পিছু পিছু,
তেড়ে আসে পিশাচ অন্ধকার
আর
নগ্নতার জঘন্য উত্থান!…
দেহবৃত্তির জমকালো প্রদর্শনী ঘিরে বিচ্ছিন্ন সভ্যতার তথাকথিত সুশীলেরা ভুলে যায় দিব্যজ্ঞান!
গলির মুখে দিনের উচ্ছিষ্ট স্তূপ-
নির্বাণ আগুনের মত লেকলেকিয়ে উঠে নিবিষ্ট ক্ষুধা!
তারপর সারারাতের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই… দ্বিধা -নির্দ্বিধার
চড়াই উৎরাই ফেরিয়ে ফের ডুবে যায় অনিশ্চয়তার আবক্ষে;
পর্দার আড়ালে যক্ষের হাসি,
ঘাপটি মেরে বসে থাকে সুযোগের অপেক্ষায়।

অর্ঘ উৎসর্গীত তোমার নামে

15621757_143808_n

তুমি বা তোমার স্বত্তা সে দিনেই মারা গেছে
যে দিন ভাদ্রমাসি কুকুরের মত কুঁই কুঁই করে
নির্লজ্জ প্রথায় ধর্না দিয়েছ প্রাক্তন প্রেমিকের কাছে।
বিধ্বস্ত চিত্তে যেখান থেকে তোমাকে প্রথম উদ্ধার করি-
পোড়া বাড়ীর পিছে
জং ধরা পরিত্যক্ত গাড়ীতে
আজো পড়ে আছে তোমার ছেঁড়া শাড়ী, ভাঙ্গা চুড়ি!

আলো আঁধারির ছায়া জুড়ে আজো লেপ্টে আছে
তোমার কুজো শরীর! যেমন টি তোমাকে আবিস্কার করেছিলাম
বেদনা লুব্ধ হামগুড়ি থেকে শিরদাড় সোজা করে দাঁড়ানোর জন্য-
ভাবিনি-
ভাবিনি তুমি পূনর্বার পেতে চাইবে ডমুর ফুলের স্বাদ!
বারংবার হোঁচট খাওয়া অলীক অহংকারে ডুবে যাবে,
হতে চাইবে ফের বিনগ্ন সহবতের জৈববাদী উন্মাদ !

শঙ্খধ্বনির পবিত্র আহ্বানে
সমুদ্র তটের নিস্পাপ বাতাসে বুক ভরা নিশ্বাস নিতে নিতে
আত্মিক পদাবলীর যে কবিতা নির্মিত হয়েছিলো-
তুমি জানতে সেই অর্ঘ উৎসর্গীত তোমার নামে;
অথচ একবার ও কাঁপলোনা সেই হাত, যে হাতে
শিশির প্রাতে
ভেজা ঘাস ফুলের আমূল বিশ্বাস ভেঙ্গে চূর্ণ করতে!

আমি বরাবরই নিভৃতচারী মানুষ!
কর্তৃত্ব কিংবা বাহাবা পাবার তাড়না আমাকে কোনদিন স্পর্শ করেনি।
ক্ষুধামত্ত শকুনের মত তোমাকে খামচে ধরে রাখার চিন্তা ছিলোনা কভু!
বড় জোর হতে চেয়েছি- মদিরাক্ষী বিচরনে জোছনা রাতের সহচর
পূর্ণীমা মোহনে প্রভু ভক্তি কবিতা অথবা গানে
চাইলে সৃষ্টি হতো অবিশ্রান্তির যুগলনৃত্য!
তোমাকে পাবার বা হারাবার মাঝে অমর হতে পারতো এই টুকু সত্য।।

দাউদের কাব্যময় উচ্ছ্বাস : দেবী ও কবি ৩৫

debi o kobi

কবি,
তোমাকে পেয়েছি আমার আজন্ম তপস্যায়,
পেয়েছি জীবনের ঘোর অমানিশায় নিভু নিভু যখন জীর্ণ প্রদীপ;
তোমাকে পেয়েছি প্রাণের বিদীর্ণ চাতালে যখন বুভুক্ষুর আর্তনাদ
যখন বিদগ্ধ শ্মশানে পোড়মাটি ভেদ করে জেগে উঠল প্রেতাত্মা
দিগন্ত ছেদ করে যখন অবিরত বজ্রনিনাদ হলো উন্মাদ! তখন-
তুমি বিষাদের ক্লেদে ঢেলে দিলে শীতল জলের আস্ফালন।
তোমাকে ফিরিয়ে দেয়ার স্পর্ধা ছিলোনা কবি
ভয় ছিলো !
আশঙ্কা ছিলো, মোহও
বিবর্জিত জীবনের নির্বাসিত প্রাণের চৌকাঠে তুমি এলে
উজ্জ্বল দীপাবলির মত; আমি আমার রমণীয় স্বপ্নে ফিরে এলাম
পদ্ম-কমল দোলা। ভরা জ্যোৎস্নার রাতে সারিন্দার সুরে মত্ত হলাম।
তোমার কবিতার যতি চিহ্নের মতো অর্থময় প্রতিটি স্পন্দন
আমার জানা হতোনা, উৎকণ্ঠিত বুকের বিষক্রিয়ায় মরতাম ধুকে ধুকে।
দেখো কবি,
দেখো এখানে সবুজের কোলে গোধূলির বর্ণীল হামাগুড়ি
অথচ! আলোর বুক ছিরে খানিক পরেই নামবে আঁধার
তবুও সহবাসের মৃদঙ্গ তালে তরঙ্গ নৃত্যের ঝংকার
মৃন্ময় পুতুলের মুখে স্ফুটিত অম্লান হাসির অহংকার!

জীবন মন যৌবন

5_xlarge

এ জীবন মন যৌবন, এই বলিদান
নিঃস্বার্থ অগ্নিমান; এই পোড়া প্রাণ, নির্মোহের গান,
এই দুর্দশা-হতাশা এই আশা ভালোবাসা প্রতীক্ষমাণ তপস্যা;
বহমান স্রোত নির্বোধ বিসর্জন!

এই মনুষ্যত্ব বিকৃত, এই কবিত্ব, পরুষত্ব!..
এই জলাঞ্জলি অগত্য আঁধারে-
উলঙ্গ কোলাকোলি!
সেই বাদ- বিবাদ,
জীবনের বাদে আবাদে
নিঃসঙ্গ বিষাদ
নব নব রূপে
সেই তেঁতো স্বাদ!…
মরি-মরি
সব জেনে- হই উন্মাদ!
এই লীলা
নির্লজ্জ ছলাকলা
ক্ষুধার জ্বালা
দ্বিধা নির্দ্বিধার উতলা রাত
উর্মিলা বুকে সন্তপ্ত হাত!

এই জোয়ার
বাঁধ ভাঙ্গা
প্রেম হীন… স্রেফ কামনার অঙ্গার
সেই লুটপাট
তাসের ঘর। অদুরা সংসার!…
কান্নার সুরে বিষের বাঁশি
পদপৃষ্ঠ শান্তি! নির্মম ফাঁসি!!
এই সত্য
সেই নেপথ্য
মরণ গ্রাসী
উলঙ্গ নৃত্যের উন্মত্ত হাসি
নির্বোধ মন
নিঃশেষ…
সযতন শশী,
ক্লেশ- অক্লেশ
পুলক তিলক… স্মৃতি -বিস্মৃতি।

ক্লান্ত
অবিশ্রান্ত এই আমি-
বুকে ধরে অজস্র আঘাত,
বীভৎস মুখে
তিমির রাত্রি
….. অস্তগামী চাঁদ।

জিজ্ঞেস করো

hirakli

তুমি তোমার কোঁকড়ানো চুলকেই জিজ্ঞেস করো,
জিজ্ঞেস করো- তার ঢেউর বাঁকে আমার কতখানি প্রেম!
ললাটের ঐ তিল টাকে জিজ্ঞেস করো
কতটা ঐশ্বরিক চুম্বনে আমি নিবেদন করেছি প্রাণের আকুতি;
অবিশ্রান্তির নৈবদ্যে সারা রাতের মন্ত্র জপ,
তুমি তোমার বুকে হাত চেপে দেখো- কত খানি ভালোবাসায়
বিন্দু বিন্দু করে গড়েছি আমার মনের মন্দির!

নীল ক্যানভাস

2876_n

একবার একটা নীল ক্যানভাস বানিয়েছিলাম
সাদা মেঘের ভেলা ভাসাবো বলে
রঙের ডানায় স্বপ্ন ছড়াবো বলে হাতে নিয়েছিলাম
রং তুলি-
তারপর……
কতো আঁকা আঁকি; পাখি, ফুল, নদী…
জোনাকি রাত, নিঝুম প্রকৃতি, ঘন আঁধার বন বীথী
কতো কি আঁকলাম! শুধু আঁকা হয়নি স্বপ্নের সেই ভেলা
তোমাকে আঁকতে গিয়ে চিনেছি রং, তুলি, ক্যানভাস
বিষাদে ছুঁয়ে যাওয়া ধূসর বিকেল; অন্তিম আকাশ
বুকের গহীনে টাইফুনের উন্মত্ত তোলপাড়, অরোধ্য জলোচ্ছ্বাস!
চিনেছি এই শহর অলি গলি, নিদ্রা-ছুট নবজাতকের কান্নার সুর
দূর দূর করে তাড়িয়ে দেয়া নিগৃহীত মানুষের দীর্ঘশ্বাস!
বীভৎস সব রঙ
বিষাদে ডুবে থাকা তুলি, পড়ে থাকে ঘরের কোনে
জানিনা কবে হবে ইচ্ছের পুনর্জন্ম
নাকি তার আগেই নিঃশেষ হয়ে যাবে শিল্পের জীবন!

নির্বাসনের প্রচ্ছদ

04379_n

নির্জন প্রবাল দ্বীপের একাকী অধিবাসিনী
ব্যবচ্ছেদের সব টুকু অভিমান নিজের মধ্যে আগলে রেখে
যে দিন চলে গেলে নির্বাসনে, আমার কি সাধ্য ছিলো
তোমাকে আটকে রাখার-
নিশিক্লান্ত প্রহরের বিনিদ্র চাতক আমি
ভোরের শিশির জব্ধ তৃণের মত
অশ্রু সজলতা বিনে-
কি আর আছে আমার?
তোমার মনস্পুত কথা মালার অন্তরালে
পুঁতে রাখি স্মৃতি আপ্লুত দুঃখি পদাবলি, মতান্তরের স্লোক;
হা ভুক শকুনের শূন্য চোখ
নিন্দুকের নজরদারি ফাঁকি দিয়ে
আজো ডুবে থাকি তোমার নিকুঞ্জ প্রেমে।
হায় নিশি জাগা শরীরের আত্মবলি দান
গ্রীষ্মের ঠা ঠা রোদ্দুরে অপেক্ষমান
ঘামার্ত পৌরুষ
হায় ঝড়োন্মাদ সন্ধ্যা
প্রেমান্ধ হৃদয়ের মনিবন্ধে অগ্নিমান প্রমত্তা
সব কিছু বিপন্ন করে তুমি নিমগ্ন হয়ছো একাকৃত্বে!
যন্ত্রনার চিত্তে বুকে আমার নির্বান শ্মশান,
বিষ পানে তুমি নীল
আকণ্ঠ বেদনা;
স্বেচ্ছায় জড়িয়ে নিলে কষ্টের উজান
বিধ্বংসী লীলায় ভেসে গেলো আমার স্বপ্নের অমর্ত্য উদ্যান।
মৃত প্রজাপতির মত বীভৎস মুখ
জল অরৈন্য পেরিয়ে আহত পাখা!
কিছুই আর-
অবশিষ্ট নেই আমার
মৃত্যু আসে যদি
আসুক
এই আমি পা বাড়ালাম তোমার পানে
তাতে যদি অবসান হয় ইচ্ছের নির্বাসনের…।