ট্যাগ আর্কাইভঃ দাউদ এর কবিতা

হোক বিবেকের পুনরুদ্ধার

শব্দের পর শব্দ প্রসব হয় কাব্যবতী কলমে
নবজাতক শিশুর মত নিষ্পাপ মনে-বদনে।
অজস্র শব্দ
অজস্র শিশু!
এরাই একদিন সামিল হবে বিক্ষুব্ধ জনতার মিছিলে
দ্রোহের আগুনে এরাই এক দিন হবে অধীর; সন্তপ্ত বীর!

পৃথিবীর রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবাহিত পরকীয়ার বিষ বন্দনা
মস্তিস্কের অসুস্থ ডেনড্রাইটে পরজীবী চক্রের আনাগোনা।
কলঙ্কের কালিমা মাখা বিদঘুটে মুখ গুলো যন্ত্রণায় কাতর,
যতক্ষণে একটি কবিতা জন্ম লয়; ততক্ষণে ভাঙ্গে শত শত ঘর!

এই আমরা কি নিয়ে আছি?
জবাব দেবে কি, আমাদের সন্তানেরা কি নিয়ে বাঁচে?
পেশাদার সুশীলেরা বসে থাকে মুখে কুলুপ এঁটে
…… তারপর জানলাম অসুখের মহামারী ছাড়েনি তাদের
মোটা আস্তরের মেকআপে ঢাকা জঘন্য চেহারা, মুখে সস্তা বাণীর ফুলঝুরি
মুহুর্মুহু করতালিতেও চাপা থাকে না গগন বিদারী আত্মার আহাজারি।

কবিতার প্রতিটি শব্দের মত-
সহস্র শিশুরা তীর বিদ্ধ জখম বুকে নিয়ে প্রস্তুত হচ্ছে ,
প্রস্তুত হচ্ছে বিপর্যস্ত বিবেকের সূর্যমুখ পুনরুদ্ধারের
যতক্ষণে একটি হৃদয় উদ্ভাসিত হবে মানবিক প্রেমে
ততক্ষণে একটি কবিতা জন্ম নেবে নব উদ্যোমে।

অভাব নাই

আজকাল আমাদের
অনেক কিছুর অভাব নাই,
প্রথমত কোন নেতার অভাব নাই,
নেতার সাথে পাতি নেতা, চামচা-
দালালের অভাব নাই,
বড় বড় জ্বালাময়ী ভাষণ আর
গলাবাজির অভাব নাই
গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল
ফতোয়াবাজের অভাব নাই,
ধর্মবাজের অভাব নাই
চোর বাটপারের অভাব নাই,
খুন -ধর্ষণ লুটতরাজের অভাব নাই,
অন্যায়কে উস্কে দাতার অভাব নাই,
সামনে এক পেছনের আরেক
কথা বলার দ্বিমুখী সাপের অভাব নাই,
অপমৃত্যুর অভাব নাই,
গুম,খুনে অভাব নাই,
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি; ভেজাল দ্রব্যের অভাব নাই,
আছে বনখেকো, জনখেকো, গম ,চিনি, তেল, পেয়াজ খেকো
যোগ হয়েছে কয়লা খেকো, ময়লা খেকো
অভাব নাই
লাজ শরমের বালাই নাই
মানুষের কাছে মানুষের পরোয়া নাই
বেপরোয়া যান চালকের অভাব নাই
সড়ক দুর্ঘটনার অভাব নাই,
সে দুর্ঘটনার পক্ষে সাফাই গাইবার মতো
দালালের অভাব নাই!
আবার সেই দালালের চামচারও অভাব নাই!!

অভাব নাই অপকর্মের,
অভাব নাই অপশিল্প-অপসংস্কৃতির
অভাব নাই অপশিক্ষার!
অভাব নাই শিশু মৃত্যুর!
অভাব নাই অপচিকিৎসার!
অভাব নাই জন্তু জানোয়ার
আর
হায়েনার থাবার
অভাব নাই মদ গাঁজা হেরোইন ইয়াবার!
অভাব নাই নেকাবের আড়ালে নগ্ন কারবার!
অভাব নাই অপবিচারের
আদালত, উচ্চ আদালত, পাড়া মহল্লার আচারের!
অভাব নাই অভাবের- মীরজাফরী স্বভাবের
আকামের অভাব নাই
চোর ডাকাত দুর্নীতিবাজ সুখের অভাব নাই তাদের
মানুষ মরিলেও চলছে তাদের রাজ!

স্মরণে- নিঃস্ব আমি

স্মরণে- নিঃস্ব আমি

পাতা ঝরার শব্দ নিয়ে যে কবিতা লিখার কথা ছিলো-
হৃদয়ের রক্তপাতে শব্দে সেটি ঢেকে গেছে,
আত্মার স্পন্দনে যে সুর বুনার কথা
বিরহের ক্রন্দনে সে সুর হারিয়ে গেছে; সোনালু
লতায় যে মকুট বুনার কথা-
জ্বলে গেছে সেই অরণ্য! আছে শুধু নিষ্প্রাণ ইচ্ছেটা

উজানের স্রোতে আজ সেই ইচ্ছা টুকু দিলাম ভেসে
এবার মুক্ত হও তুমিও
ভালোবাসার অলিখিত চুক্তিনামা, কিংবা
জীবনের অনাদায়ী স্বপ্নের নীল দীর্ঘশ্বাস!
কিছুই তোমাকে পিছু ডাকবেনা-

সামনে এগিয়ে চলা প্রতিটি কদম
তোমাকে স্মরণ করিয়ে দেবে আমার নিঃস্ব জীবন।

মৃত্যু তেড়ে আসছে এই দিকে

মৃত্যু তেড়ে আসছে এই দিকে

তুমি ভালো থেকো
ভালো থাকার সমস্ত উপকরণ থাকুক তোমার,
আমার সারি বদ্ধ কষ্ট গুলো স্পর্শ না করুক
তুমি সযত্নে নিজেকে আগলে রেখো;

তুমি তৃপ্ত হও
তৃপ্তির যাবতীয় আয়োজন সু সম্পন্ন হোক।
আমার ক্ষত বিক্ষত-
বুকের দগদগে গা তোমাকে মর্মাহত না করুক;
তুমি মুখ ফিরিয়ে রাখো!

অসূয়া চোখে দেখিনি তোমাকে
অশুচ হাতে ছুঁইনি
ফণীমনসার নীল বিষে নিজেকে তৃপ্ত করেছি
ঐ দেখো……
মৃত্যু তেড়ে আসছে এই দিকে!

এবার রুখবে কে?
বাধ্যগত প্রস্থান থেকে

তুমি ভালো থেকো, ভালোর দেয়ালে নিজেকে আগলে রেখো।

এপার-

2448267

এপার–

অতল ছুঁয়েছে জল।
বাঁধ ভেঙ্গেছে পূর্ণিমা চাঁদ
ভেসে গেছে গুপ্ত চর,
কুসুমিত মখমল।

ওপার–

অহম ভোগাচ্ছে তোমায়
মন পোড়াচ্ছে মন।

দা উ দু ল ই স লা ম।

শিক্ষানবিশ

এই
মুখরমাঘে
চলো- সমর মুক্ত হই, নিসর্গ যাপনে!
হিমাবেগে তীর্থ হই যুক্তমনে
শীতল নয়নে
শিখি বরফের সূত্র, জমাট বাঁধা শিলা কাহিনী…
নির্মল, নিরাসক্ত, পরম ভাষায়
চলো মাঘের গল্প বুনি। আর
শিশিরে ভেজা শস্য প্রকল্পের মোহিনী আলে
চলো
দেখি-উর্ণজালের লাবনী সংসার!…
মিহি রোদ্দুরে, ধ্রুপদী চাতালে, কলিকা করবীনে
এখনো রয়েছে সুষমা রাতের প্রভাব
ওমের ভূমিকা;
হলুদ চাদরে মধুমাখা ভ্রমরের গুঞ্জন!
চলো শিখি-
নদীর কৌমার্যে
শ্যাওলা ঢাকা নির্জন বাঁকে তরঙ্গের মন্থন…
দ্যাখো,
জাদুকরী মোহ
রসের কলসে মধুর বশে
মাঘের অতিথি পাখীর আহরণ,
তপ্ত আবেগে
গুপ্ত মদনে
এসো মুক্ত করি জড়যুক্ত যৌবন!
চলো চিনি সিক্ত সুখ…শিখি শৌর্যের সাধন।

দাউদুল ইসলাম
৫.১.১৮
Image: collect form Google

অবীক্ষন

ডুবে যাওয়া পরুষ টি ফিরে আসেনি
মহাকালের গর্ভে লীন হওয়া এক মলিন রাত থেকে
দীঘল কালো চুলের গন্ধ মাখা রমণীয়া রাত, স্রোতস্বিনী
নদীর কলকল ধ্বনি, সোঁদা রহস্যময়ী শরীর বাঁকে যে ডুবেছিলো
সে আর পুনোর্বার আসেনি ফিরে; তাকে আর কখন কোথাও যায় নি দেখা
আমাকে অনেকেই জিজ্ঞেস করে, খবর জানতে চায় তার-
রেখে যাওয়া কবিতার খাতা, সন্ধ্যা পূজার আসরে ধূপছায়ার নীরব স্রোতা;
অনেকেই জানতে চায় কোথায় সে?
আমি বরাবরই নিরুত্তর থেকেছি, শুধু নির্লিপ্ত চোখে চেয়ে থেকেছি আকাশের দিকে…
এ ছাড়া আমার তো কিছুই করার নাই! কারণ কেউ না দেখুক আমি ত দেখি-
চন্দ্র মল্লিকার প্রতিটি স্ফুটনে জোনাকির ঘুম, তপ্ত দহনে শৌর্যের চুম্বন
এখনো সে হাঁটছে হিজলের ছায়ায় শঙ্খ শালিকের পথ ধরে
উদাসী নয়নে ভাবনার পেখম মেলে এখনো সে খুঁজছে কবিতার চরণ!

তোমরা তো তাকে কখনোই দেখো নি
যদিও সে তোমাদের চোখের সামনে, দুয়ারে দুয়ারে ঘুরত সারাক্ষণ।

দা উ দু ল ই স লা ম