এখানে রাত্রির পর রোদ্দুর মাখা সোনালি সকাল,
দুয়ার পেরুলে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি হাওয়ায় চঞ্চল।
উঠোনে মাচার উপর শিম ফুলেদের কথকতা,
পৌষের কুয়াশায় উড়ে আসে ক্লান্ত বকের দল হিম সন্ধ্যায়।
এখানে দীঘির শ্যাওলা জলে হাঁসের তুমুল সাঁতার,
বিলের জলে জেগে উঠে শাপলার লাল সাদা মুখ তলে শালুক জমা।
এখানে বেগুনের নরোম পাতার ছাউনিতে বাঁধা টোনা-টুনির ছোট্ট সংসার,
তালের শক্ত পাতার তলে বাবুইয়ের অদ্ভুত কারুকাজ।
এখানে জোনাকিরা ঢেউয়ের মতো ভেসে বেড়ায় অন্ধকারে,
চাঁদের রাতে প্রাণ ফিরে পায় শেওড়া গাছে শাঁকচুন্নির গল্পেরা।
.
এখানে তপ্ত দুপুরে দেখা মেলে মাছরাঙার চৌকশ চোখ,
একই ফুলে বসে কালো ভ্রমর, মৌমাছি আর ধূসর ফড়িং।
চৈত্রের রোদে পথের ধারে জ্বলে উঠে সারি সারি ভাঁটফুল,
হিজল, অশথের পাতায় পাতায় লেগে থাকে শিশিরের চুমু।
কদমের হলুদ বুকে ঝরা বৃষ্টির বসবাস আষাঢ়ের দিনে,
এখানে সাদা মেঘের মতো শরতের কাশফুল হাওয়ায় মাতাল।
বটের ছায়ার তলে জমে উঠে ক্লান্ত দেহের সাজানো বিশ্রাম,
এখানে মাটির গন্ধে উল্লাসে ভরে যায় দেহের সবকটি কোষ।
এখানে নীল আকাশের তলে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জমি উৎকর্ষতায়,
এখানে দরিদ্র কৃষকের ভালোবাসায় বাঁচে ফসলের প্রাণ।
তুমি যাও পৃথিবীর আর সব দেশে, পাবেনা এইসব, সবুজ আঁচলের মাঠ,
এমন মায়ের মতো করে পাবেনা তুমি বাংলার মাটির আদর।।
.
১৯/০৪/২০২০
#StayAtHome #StaySafe
ট্যাগ আর্কাইভঃ প্রকৃতির কবিতা
চক্র
গাছে গাছে ফোটে ফুল,
ফুল ছড়ায় সুবাস।
ভালো দেখায় সব ফুল,
নানা রূপের প্রকাশ।
মধু লোভী মৌমাছি,
উড়ে আসে ফুলে।
ফুল হতে ফলের,
রহস্য এর মূলে।
গায় পাখী পিউ পিউ,
খাবে পাকা ফল সে।
আহারে নেই মানা,
এবেলায় নয় আলসে।
রবি দেয় আলো বেশ,
বনে বনে লাগে দোল।
খাদ্য ও খাদকের
রকমারী শোরগোল।
আলো চায় ঘাস লতা,
ফড়িং ঘাস লতা খায়।
সেই ফড়িং ব্যাঙের খাদ্য,
সাপের প্রিয় ব্যাঙ চায়।
সাপ ধরে খায়, ঈগল পাখি,
ঈগল শিকার করে মানুষ।
শক্তি প্রবাহের প্রক্রিয়ায়
সবাই অনিবার্য, নাই হুশ।
যদি বাঁচে প্রাণি ও গাছ,
তবে বাঁচবে প্রতিবেশ।
নইলে ক্রমে ক্রমে
ধ্বংস হবে পরিবেশ।
প্রকৃতি ও প্রণয়
প্রমত্ত অলিকুল গুঞ্জরিছে কুঞ্জবনে।
সৌহার্দ্যে অনবরত।
সকল নবীন পাতা ফুল,
থমকিয়া চমকিয়া দেখিছে তাহা, প্রকৃতিতে।
নিলাজ দৃষ্টি লইয়া উন্নত চাহনিতে,
অনুষ্ঠিত নানা মান অভিমান পর্ব সকল।
জড়াইয়া লইবার বাসনায় বাসর সোহাগে,
নিজস্ব জীবন চক্রের অর্ন্তভুক্তিতে।
সজনের পাতা ঝরা দিন
সজনের পাতা ঝরা দিন
সজনের পাতা ঝরা দিন
পৌষের সকাল ঘাসের ডগায়; শিশিরের ফোটা
কুয়াশায় ঢাকা লাউফুলে ফড়িং এর ডানা ভেজা।
মাকড়ষা জাল বুনে
টোপ ফেলেছে শিশির ঘ্রাণে ; পোকামাকড় ভেজা জালে
গেঁথে থাকে শীতের কাঁপনে।
উত্তরের ক্ষেপ শীতল বায়ু
তির তির করে কাঁপে, ঘাসের ডগায় শিশির ফোটা
সজনে ডালে ডানা ঝাপটায় তিলা ঘুঘুজোড়া।
মেঠো পথের ধুলো ভিজে সারা
মাদার ফুলের লাল পাঁপড়ি; দুর্বাঘাসে পরে রয় অভিমানে
আগাছার ঝাড়ে বুনো শিউলি ঝরে থাকে।
কুয়াশার চাদরে সন্ধ্যাবতী গাঁও
সন্ধ্যাবতীর গা ঘেঁসা খালের টলটলে জল। সন্ধ্যাবতীর জলছবি ভাসে। কুয়াশা রাঙা সকালে শিশিরের ঘ্রাণ। খেজুরের শীতল রসে ঠোঁট ভেজায় লালঝুটির বুলবুলি। মৌমাছিরা গান গায় গুন গুন করে। একঝাঁক চড়ুই পালক ফুলিয়ে, শিশির ভেজা উঠানে কিচির মিচিরে মাতে। একদল হাস শিশির মাখা খালে জলে ভাসে। মৃদু হাওয়ায় জলের কাঁপন। মৃদু ঢেউ যেন জলের মৌনতা ভাঙ্গে। কুয়াশার চাদরে সন্ধ্যাবতী গাঁও, কাঞ্চজঙ্ঘার আবির বিলায়।
কুয়াশায় পৌষ শিশির
কুয়াশায় পৌষ শিশির
উঠান ভিজে যায় পুঁই মাচা ভিজে সারা।
ডালিম ডালে টোনাটুনির বাসা
আমলকির ঝির ঝিরে পাতা ঝরে
কইতরের বাগবাগুম ডাক ভাের সকালে।
কুয়াশার আবির মাখা পথে
পথিক যায় হেঁটে ক্ষেতের আইল পথে
পথিকের পা ভিজে শিশিরে।
খেজুর গাছে হাঁড়ি ভরা কাঁচারস
মিষ্টি রসে চুমুকের নেশা শৈশবে
কোজাগরি চাঁদের কুয়াশার আলো
কাঁচা রসের ক্ষিরে কৈশর ছিপ ফেলে।
১৪২৪/৪ পৌষ/শীতকাল।