ট্যাগ আর্কাইভঃ সাঈদ এর অণুগল্প

মোচড়

চৈত্র মাস। সন্ধ্যা। চারপাশ হঠাত কালো হয়ে এলো। মেঘ আর বাতাস। হাটবার। বাসিতের দোকানে রজ্জব মাস্টার বসে চুক চুক করে চা খাচ্ছেন। আর আনমনে জোড়া ইলিশ দোলাচ্ছেন। লোভ সামলাতে না পেরে জিজ্ঞেস করলাম-
: মাস্টর, ইলিশ দুইটা কত দিয়ি কিনলা?
: তেরশো টাকা, ফরমালিন নাই, ফ্রেশ ফিশ।
: হে: হে: রাতে ফরমালিন ছাড়া ইলিশ নিলে ভুতেরা হামলা করিতে পারে।
: হা: হা: হা: জোড়া তালদিঘীর মাঠ দিয়িতো যাবো, দেখি কোন ভুতের পুত সামনে আসে!
: তা যা বলিছো মাস্টর।

আমার বাড়ি রজ্জব মাস্টারের বাড়ির পাশেই। তেমন দেখাসাক্ষাত নাই। বৃষ্টি মাথায় নিয়েই দুজন বাড়ির পথে হাটছি। সিগারেট ভাগাভাগি করে খাচ্ছি। লজ্জার মাথা খেয়ে বললাম-
: মাস্টর, উচিত দাম দেই, একটা ইলিশ দাও। এমন তাজা ইলিশ পাওয়া যায় না। খাটি পদ্মার ইলিশ। ভেজাল নাই।
: কি যে কও! যুদ্ধ করি মাছ দুটা কিনেছি। কাল দুপুরে দাওয়াত খেয়ে যেও।

এরপর আর কথা চলেনা। দুজন মিলে হাটছি। রজ্জব মাস্টারের বাড়ির মোড় হতে বিদায় নিবো। হাত মিলানোর জন্য বাড়ালাম। রজ্জব মাস্টর হাত বাড়াতে গিয়ে অবাক। তার হাতে শুধু রশি ঝুলছে। ইলিশ মাছের নামগন্ধ নাই। তাজ্জব ব্যাপার, আচানক কান্ড।

আমি আর কি করি! নিজের লোভ সামলাতে না পারার জন্য ক্ষমা চাইলাম। পকেট থেকে তেরশো টাকা আর মামদো ভুতের ভিজিটিং কার্ডটা রজ্জব মাস্টারের হাতে দিলাম। কিন্তু মাস্টর কিছুতেই বিশ্বাস করতে চাইছেন না যে আমি ভুত। তার সে কী বকাঝকা, কান মোচড়ানো। অবস্থা বেগতিক দেখে তাকে তালগাছের আগায় তুলে আমি পুরানো বটগাছের পাতার আড়ালে গা ঢাকা দিলাম। মানুষদের বিশ্বাস করতে নেই, বলা যায় না, দুটো ইলিশমাছের জন্য না আবার আমাকে খুন করে বসে।

গুডমর্নিং পোস্ট: লেজানুভূতি

এক যে ছিল রাণী। তিনি কুকুর পুষতে ভালোবাসেন। ঈশপের গল্পের পশুপাখির মত তার পোষা কুকুরগুলো কথা বলতে পারতো। কুকুরগুলো কি না রাণীর খুব আদরের তাই তিনি তাদের মন্ত্রী করে নিলেন।

শোষক রাণী জানেন কপট ভালোবাসা দিয়ে কুকুর পোষা যায়, প্রজা পোষা যায়না। প্রজারা কুকুর নয় যে রাণী শোষণ করলেও মুখ বুঝে সহ্য করবে, রাণীর মিষ্টি মিষ্টি মিথ্যে কথায় খুশীতে লেজ নাড়াবে। প্রজাদের লেজ নেই, তেজ আছে। তাদের শাসন করতে হয় ভয় দেখিয়ে। রাণী প্রজাদের ভয় দেখানোর ব্যবস্থা করলেন-
রাণী: দেশ জঙ্গীতে ভরে গেছে, আমিই তোমাদের রক্ষা করব।

রাণীর সাথে এক ধাপ এগিয়ে গলা মিলালো পোষা কুকুরের দল-
ইনু: দেশ জঙ্গীতে ভরে গেছে, রাণীমা ছাড়া উপায় নাই… উপায় নাই…
মিনু: দেশ জঙ্গীতে ভরে গেছে, রাণীমা ছাড়া উপায় নাই.. উপায় নাই…
হানু: দেশ জঙ্গীতে ভরে গেছে, রাণীমা ছাড়া উপায় নাই.. উপায় নাই…
হামু: দেশ জঙ্গীতে ভরে গেছে, রাণীমা ছাড়া উপায় নাই.. উপায় নাই…
নাসু: দেশ জঙ্গীতে ভরে গেছে, রাণীমা ছাড়া উপায় নাই.. উপায় নাই..

রাণী আর পোষা কুকুরদের দিন সুখেই কাটছিল। হঠাত এক বড় রাজ্যের রাজা বললেন “জঙ্গীদের আমরা মেরে দিব- ভয় পেওনা।” রাণী জানেন ঐ রাজা শুধু জঙ্গীই মারবে না, তাকেও ক্ষমতা থেকে তাড়াবে। তাই রাণী ভোল পাল্টালেন-
: এই রাজ্যে জঙ্গী নাই, যারা বলে জঙ্গী আছে তারা সবাই দুষ্ট লোক।

রাণীর থেকে এক ধাপ এগিয়ে গলা মিলালো পোষা কুকুরের দল-
ইনু: দেশে কোন জঙ্গী নেই। যারা বলে জঙ্গী আছে তারা সবাই কুত্তার বাচ্চা…
মিনু: দেশে কোন জঙ্গী নেই। যারা বলে জঙ্গী আছে তারা সবাই কুত্তার বাচ্চা…
হানু: দেশে কোন জঙ্গী নেই। যারা বলে জঙ্গী আছে তারা সবাই কুত্তার বাচ্চা…
হামু: দেশে কোন জঙ্গী নেই। যারা বলে জঙ্গী আছে তারা সবাই কুত্তার বাচ্চা…
নাসু: দেশে কোন জঙ্গী নেই। যারা বলে জঙ্গী আছে তারা সবাই কুত্তার বাচ্চা…

কুকুরদের চিৎকারে অতিষ্ঠ প্রজারা ভেবে পাচ্ছেনা রাণী পোষা কুকুরগুলোকে থামতে বলছেন না কেন। কুকুরগুলো তো রাণীকেই “কুত্তার বাচ্চা” বলে গাল দিচ্ছে। কারণ জঙ্গী থাকার কথা রাণী সব থেকে বেশী বলেছেন।

রাণীর কি আর এতকিছু ভাবার সময় আছে! পোষা কুকুরদের চিৎকার শুনে তিনি নিশ্চিন্ত হন। প্রবল আনন্দের একটা অনুভূতি মাথা হতে মেরুদন্ড বেয়ে নামে। মেরুদন্ডের নিম্নপ্রান্তে পরম আনন্দের তীব্র অনুভূতি জমে জমে ছন্দে ছন্দে দোলা খায়। সেই দোলায় দোলায়িত হয় কুকুর পুষতে পুষতে, কুকুরদের সাথে থাকতে থাকতে রাণীর বেড়ে ওঠা লেজ।

ফাও

ইন দ্য ইয়ার অফ টু থাওযেন্ড ফৌর, আমাগো জাহিদ দিপার প্রেমে হাবুডুবু খাইতাছে। সপ্তায় দুই দিন ঢাকার থেকা একশো কিলোমিটার দূরে দিপাগো শহরে যায়। রিকশায় ঘুরে। কথা কয়। রেস্টুরেন্টে খায়। প্রত্যেক রাইতে ৩টা ৪টা পর্যন্ত কুটুর-কুটুর কথা তো আছেই।

টু থাওযেন্ড ফাইভের সেপ্টেম্বর থেকা জাহিদ দিপারে বিয়া করনের চাপ দিতে শুরু করলো। মধুমধু গলায় দিনে রাইতে চৌদ্দবার কইরা কইতে শুরু করলো- “জানু, প্রস্তাব দিয়া আম্মারে পাঠাই। তোমার ফ্যামিলি রাজি না হইলে ডাইরেক্ট কোর্ট ম্যারেজ করুম। আমার ফ্যামিলিতে প্রব্লেম নাই।” দিপা খালি কয়, ‘জানটুশ, একটু অপেক্ষা করো। আমি বাবাকে ম্যানেজ করার চেষ্টা করছি।”

টু থাওযেন্ড সিক্সের মাঝামাঝি পর্যন্ত দিপা ফ্যামিলিরে ম্যানেজ করতে পারলো না। জাহিদ আর দেরী করতে চায় না। বিভিন্ন আচেনা নাম্বার থেকা মোবাইলে ফোন কইরা প্রায়ই দিপার নামে উলটাপালটা কথা কয়। দিপারে জিগাইলে কসম কাইটা অস্বীকার করে। জাহিদের চাপাচাপিতে দিপা কোর্ট ম্যারেজে রাজী হইলো। ডিসিশন ফাইনাল। সংসার শুরুর আগে দুইজন মিলা ফার্নিচার পছন্দ করল। দিপার পছন্দে খাট আর সোফাসেট বানাইতে দিলো। জাহিদ বাড়ীওয়ালারে পামপট্টি মাইরা চাইরতালার ফ্ল্যাটের ভাড়াটিয়ারে দুইমাসের মধ্যে বিদায়ের ব্যাবস্থা করলো। ফ্ল্যাট খালি হওনের পনেরো দিন পরে বিয়া।

এক বিষ্যুদবারে জাহিদের অফিসে এক লোক আইসা হাজির। দিপার ব্যাপারে গোপনে কিছু কইতে চায়। জাহিদ হাসতে হাসতে কইলো- “ভাই, দিপার যদি চাইর বছর আগে একটা বিয়া হয়া থাকে আর দশটা বাচ্চাও থাকে তবেও তারে বিয়া করুম।” লোকটা কয়, “বেশ ভালো কথা। তবে বিয়ের আগে এই মেমোরী কার্ডের ভিডিওগুলি দেইখেন। কিছু জানতে হইলে ফোন দিয়েন। এই কাগজে নাম্বার আছে।”

ভিডিও দেইখা জাহিদ বেদিশা। একবার চিন্তা করলো বিষ খায়া মইরা যাইবো। আবার ভাবলো কার জন্য মরবো! দিপারে মাইরা ফালাইলে পৈশাচিক শান্তি পাইতো। ওর মাথার ভিতরে দুই বার্নারের বিশটা গ্যাসের চুলা দাউদাউ জ্বলতাছে।

জাহিদ বহুতদিন বাদে বারে গেল। লম্বা সময় ধইরা পাঁচ পেগ ভদকা খাইল। মাথা কিছুটা ঠান্ডা হইলো। রিকশায় কইরা বাসায় ফিরনের সময় কলিজায় কামড় দিল- দিপারে কি কেউ ব্ল্যাকমেইল করতাছে! রাইতে দিপারে ফোন দিল-
: জানু, তুমি সত্য কইরা কও কারো সাথে তোমার ফিজিক্যাল এফেয়ার আছে?
: হঠাত, এসব জিজ্ঞেস করছো কেন!
: আইজ একটা মেমোরী কার্ড পাইছি। মেয়েটার চেহারা তোমার মত। তোমার শরীর এখনও খুইলা দেখি নাই। তাই বুঝতাছি না এইটা তুমি না অন্যকেউ।
এইবার দিপা কাইন্দা দেয়, কয়- “জাহিদ, ওরা ব্ল্যাকমেইল করছে। আমাকে রেপ করার সিন মোবাইলে রেকর্ড করেছিল। ভিডিও ফিরিয়ে দিবে বলে দুই দিন ডেকে নিয়ে আবার রেপ করে, মোবাইলে ভিডিও করে। এখন ব্ল্যাকমেইল করে প্রায়ই আমাকে ডাকে আর…” দিপা কথা শেষ করতে পারে না। জাহিদের মাথায় আগুন চইড়া যায়- “এতদিন আমারে কও নাই ক্যান! কাইন্দো না। জানোয়ারগো মাটিতে পুইতা ফালামু- খোদার কসম।”

ইন দিস সিচ্যুয়েশন, জাহিদ পুরা পাগলা কুত্তা। ক্যারাবেরা দুই বন্ধুর কাছে হেল্প চায়। দিপার কাহিনী শুননের ইচ্ছা জানায়া ঐ লোকরে দাওয়াত দিয়া ঢাকায় আনে। মিরপুরের এক আন্ডার কন্সট্রাকশন বিল্ডিংয়ের ছয়তালায় পাঠার মত গলায় দড়ি দিয়া বান্দে। হারামজাদা ডরে প্যান্টে ছোট আর বড় কাম দুইটাই একলগে কইরা দেয়। তারে লেংটা কইরা ভিডিও করে। তারপর বারো ঘন্টার মধ্যে দিপার সব ভিডিও ফিরত দিতে বলে। ১মিনিট বেশী লাগলে লেংটা ভিডিও ইউটিউবে ছাইড়া দিবে আর পোস্টার ছাপায়া জেলা শহরের দেয়াল ভইরা দেওনের হুমকী দেয়। হুমকীতে কাম হয়, লোকটা সকল ভিডিও ফিরায়া দেয়।

বিয়ার আর একমাসের মত বাকী। সারা রাইত দুইজনে মোবাইলে বাকুম বাকুম করছে। সকালে জাহিদ এসএমএস পাইলো- “জানটুশ, মোবাইল নষ্ট। ফোন বন্ধ পেলে টেনশন করো না। টেক কেয়ার উম্মম্মম্মা।”

জাহিদ তিন দিন ধইরা সমানে দশ মিনিট পর পর ফোন দিয়া যাইতাছে। দিপার ফোন বন্ধ। সে ছটফটায়। চিন্তায় মইরা যাওনের দশা। চাইর দিনের মাথায় মোবাইল চালু পায়-
: হ্যালো, কে বলছেন?
: জানু, আমি জাহিদ। ঠান্ডা লাগাইছো কেমনে! গলা এমন কেন?
: আমার ভয়েস এমনই। আপনি কাকে চাচ্ছেন?
: দিপা, রাগ করো কেন!
: হি:হি:হি:হি: আমি দিপা না। আমি দিপার ছোট বোন রিপা।
: দিপা কোথায়! দিপাকে দাও।
: দিপা আপ্পিকে দেয়া যাবেনা।
: কেন?
: দিপা আপ্পি গতকাল রাতের ফ্ল্যাইটে আমেরিকা গেছেন, শিকাগো সিটিতে দুলাভায়ের কাছে।

মধুসূদনের বাপ

তিন পেগ হুইস্কি গিলে সোমনাথবাবু মোবাইলে ফোন করলেন-
: হ্যালো, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলছেন?
: না, রং নাম্বার।
: আপনি কি শিওর রং নম্বর?
: শিওর, আমি কামাল চৌধুরী।

সোমনাথবাবু আরও দু’পেগ পেটে চালান দিলেন। একটা সিগারেট ধরালেন, লম্বা টান দিয়ে কল করলেন-
: হ্যালো, এটা কি শান্তি নিকেতন?
: না।
: এটা জড়সাকোর ঠাকুর বাড়ি?
: না, এটা ঠাকুর বাড়ি নয়।
: সে যাক, আপনি কি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলছেন?
: না, আমি কামাল চৌধুরী বলছি।

সোমনাথবাবু ফোন কেটে দিলেন। পেটে আরো দু’পেগ চালান দিয়েই কল করলেন-
: হ্যালো, এটা কি শিলাইদহ কুঠিবাড়ি?
: না।
: এটা কি পদ্মার বোট?
: না।
: বাই দ্যা ওয়ে- আপনি কি রবীন্দ্রনাথ বলছেন?
: না, আমি কামাল চৌধুরী বলছি। আপনি আবার ফোন করেছেন?

সোমনাথবাবু আট পেগের বেশি খান না, মাতাল হয়ে যান। খুব সময় নিয়ে শেষ পেগটা গিললেন। একটা সিগারেট ধরিয়ে আয়েশ করে টানলেন। আত্নবিশ্বাসের সাথে কল দিলেন-
: হ্যালো, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলছেন?
: না, আমি কামাল চৌধুরী বলছি।
: আপনি নিশ্চিত যে আপনি রবীন্দ্রনাথ নন?
: হান্ড্রেড পারসেন্ট শিওর।

সোমনাথবাবু ফোনের লাইন না কেটেই টেবিলের অপর পাশে বসা লোকটার উপর ঝাপিয়ে পরলেন। তার কলার টেনে ধরলেন-
: তিন পেগ মাল খেয়ে সেই কখন আমি মধুসূদন হয়ে গেলাম আর আট পেগ গিলেও তুমি রবীন্দ্রনাথ হতে পারছো না! ফোন দিলেই ধরে বলছ -আমি কামাল। ভন্ডামি করো!
: দেখ মধুসূদন, বারবার বলছি আমি কামাল চৌধুরী। আমার কলার ছাড়, ভালো হবে না কিন্তু।
: ধুস শালা, কামালের গুষ্টি কিলাই। তুমি আজ রবীন্দ্রনাথ না হলে মদের বিল দিবে কে? মধুসূদনের বাপ!

আকর্ষণীয় অফার

রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন, এনজিওসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সভা, সমাবেশ, সেমিনার ও অন্যান্য অনুষ্ঠানে চাহিদা অনুযায়ী সার্টিফিকেটপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সরবরাহ করি। গ্রাহকের চাহিদা ও রুচি অনুযায়ী বিশেষজ্ঞ দ্বারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচনা করানোর সুব্যাবস্থা আছে। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের তথ্যের পক্ষে, বিপক্ষে ও বিতর্কিত বক্তব্য প্রদানের জন্য ইতিহাসবিদ, বুদ্ধিজীবী, রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ব ভাড়া দেই।

বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস ও ভাষা শহীদ দিবসের অনুষ্ঠানের জন্য আজই যোগাযোগ করুন। ডিসেম্বর, ফেব্রুয়ারী ও মার্চ মাস ব্যাতীত বছরের অন্যান্য সময়ে ২৫% ছাড়।

চেতনা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড
(একটি মুক্তিযুদ্ধ ও ইতিহাস ক্রয়-বিক্রয়-সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান)

হটলাইন: ৭৪১****, ৮৭৬****, ০১৭১১****

অংক

দক্ষিণা পেতে হলে দক্ষিণে যেতে হবে। শেফালী দক্ষিণে হাটা দেয়। তরুপতি ঘোষদের বাড়ি। ছানা মাখন মিষ্টান্নে ছড়াছড়ি। দশ কদম দূরে মোল্লা বাড়ি। ইব্রাহিম মোল্লার দাপটে খান খান উজানপুর গ্রাম। শেফালী দুই দিন খায় নাই। গঞ্জে ঘন ঘন পুলিশের রেইড পরে। জঙ্গি আর বিপ্লবীদের খুঁজে। সেই থেকে আর কাষ্টমার আসেনা। শরীর আরাম পায়, কিন্তু ক্ষিধায় পেট কামড়ায়।

শেফালী ঘোষদের বাড়িতে ভাত খায়। ইব্রাহিম শেখের বড় বেটি এলমুনিয়ামের পোড়া থালায় মাছের বাসি সালূন আর ভাত দেয়, হাতে গুঁজে দেয় কড়া কড়া দশটাকার নোট। মজু চাকলাদারের বউ জানেনা স্বামীর শরীরের মানচিত্র শেফালীর জানা। সে তাকে একটা পুরান কাপড় দেয় সাথে কাজ করে খা্ওয়ার ফ্রি উপদেশ।

শেফালী গঞ্জের দিকে হাটে। চাতলার মাঠ পেরিয়ে বাসক তলায় বসে জিরোয় আর ভাবে, দান করে অশেষ পূণ্য তারা পেল। সে পেল ক্ষিধায় পেট কামড়ানির নিদান। ক্লাশ টুয়ে অংকে ফেল করা শেফালী বুঝতে পারেনা ঈশ্বর কি ক্লাশ ওয়ানে অংকে পাশ করেছিল!

লেজাতংক

সিনিয়র সচিব জায়েদুল তরফদার চোধুরী প্রচন্ড অস্বস্তিবোধ করছেন। মন্ত্রী মহোদয়ের সভাপতিত্বে রুদ্ধদ্বার বৈঠক চলছে। বৈঠকে পৌনে ছয় হাজার কোটি টাকার প্রকল্প চূড়ান্ত হবে। রাজপরিবার উপঢৌকন বাবদ প্রকল্প ব্যয়ের কত পার্সেন্ট পাবে, কোন কোম্পানীকে কত টাকার কাজ দেয়া হবে, সংশ্লিষ্ট অন্যরা কত পার্সেন্টেজ পাবে, নিজেদের একাউন্টে কত টাকা ঢুকবে- এমন স্পর্শকাতর সব ভাগাভাগির বিষয়েও সিদ্ধান্ত হবে। অথচ তিনি স্বস্তি পাচ্ছেন না, সদ্য গজানো লেজটা শার্টের ভিতর দিয়ে সামনে এসে প্রথম শ্রেণির গেজেটেড ভুঁড়িতে সুরসুরি দিচ্ছে।

অবস্থা ক্রমশ শোচনীয় হয়ে উঠছে। লেজের আচরণে ‘মাথার ঘায়ে কুত্তা পাগল’ অবস্থা। কিছুতেই স্বাধীনচেতা বেয়াড়া লেজকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না। অবশেষে লেজকে শিক্ষা দিতে শেষপ্রান্তের চুলগুচ্ছ ধরে সপাটে টান দিলেন। কয়েকটা চুল ছিড়ে হাতে চলে এলো। চুলগুলো ফাইলের উপরে রাখলেন, লক্ষ্য করলেন প্রতিটা চুলে নির্দেশনা লেখা রয়েছে। তিনি বিষ্ময়ে একটা করে চুল চোখের সামনে ধরে জোড়ে জোড়ে পড়তে লাগলেন রাণীমাতা ৫%, রাজপুত্র ১০%, মন্ত্রী মহোদয় ৩%, সচিব ২%, যেমনে খুশী তেমনি লুট ৩০%। পড়া শেষে বিষ্মিত দৃষ্টিতে দেখলেন সকলে যার যার লেজ নিয়ে ব্যস্ত। মন্ত্রী মহোদয় নিজের হৃষ্টপুষ্ট লেজকে হাতপাখা বানিয়ে বাতাস করছেন আর বেসুরো গলায় গাইছেন “আমরা সবাই শান্তশিষ্ট লেজনিষ্ঠ ভদ্রলোক..।” বাকীদের কেউ লেজ দিয়ে ঘাম মুছছেন, কেউ কান চুলকাচ্ছেন, কেউ আবার লেজের কেশগুচ্ছে চিরুনী দিয়ে ব্যাকব্রাশ করছেন। এক সচিবালয় সুন্দরী লেজের চুলকে পাফ বানিয়ে মুখে পাউডার ঘষছিলেন। সুন্দরী তার দিকে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে ইংগীতপূর্ণ হাসি দিতেই তিনি বিষম খেলেন এবং বুঝতে পারলেন স্বপ্ন দেখছেন।

জাদরেল সিনিয়র সচিব জায়েদুল তরফদার চৌধুরী ঘুম থেকে জাগার চেষ্টা করছেন। কিন্তু কিছুতেই ঘুম ভাঙছে না। নিরীহ লেজটা দীর্ঘ হচ্ছে… সাপের মত অষ্টেপৃষ্ঠে পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে গলার কাছে উঠে আসছে …

মাছি

– লোকটা নির্ঘাত সন্ত্রাসী ছিলো..
– জংগীও হতে পারে..
– আমার মনে হয় সাধারণ লোক..
– চেহারা দেখে মনে হচ্ছে নাস্তিক…
– কি যে বলেন! আমি নিশ্চিত প্রগতিশীল…
– ফজরের নামাজ পড়ে মনে হয় বাড়ি ফিরছিল…
– আরে ভাই ছিনতায়ের ঘটনা, এটা ছিনতায়ের স্পট…
– হতে পারে, আবার ছিনতায়ের ভাগাভাগি নিয়ে নিজেদের মধ্যেও হতে পারে, বুঝলেন কিনা…
– ধ্যাত, কি যে বলেন! এটা নতুন তরিকার ক্রস ফায়ার…
– না, শত্রুতা করে মেরেছে, প্রতিপক্ষের হাতে প্রতিহিংসার খুন…
– একসিডেন্টও হতে পারে। শেষ রাতে চাপা দিয়ে পালিয়েছে…
– এখনো পুলিশ আসে নাই! কি যে হলো দেশটার…
– দেশটার আবার কি হবে! আপনি আমিতো দিব্যি বেচে আছি…

লাশটা রাস্তায় পরে আছে। আধখোলা চোখ। রক্তে সয়লাব, চটচটে। হলুদ মগজ বেরিয়ে আছে। একপাল মাছির ভনভনানী। লাশ ঘিরে উতসুক জনতা। প্রতিদিন মৃত্যু দেখতে দেখতে অপরের মৃত্যু এখন আর এদের স্পর্শ করেনা। বেচে থাকার পরম তৃপ্তি ও স্বস্তিতে লাশ ঘিরে তারাও মাছির মত মূখর হয় ভনভনানীতে, মগ্ন হয় ভনভনে।

মৃত্যুপাঠ

চড়া রোদ। এলোমেলো বাতাস। মফস্বলের মসজিদ। জুম্মার নামাজ শেষ। মসজিদের ছাদে সুনসান নীরবতা। এক অন্ধ ভিখারী। মলিন পোষাক। মোলায়েম গলায় দরদ দিয়ে গাইছে-
“ডাইনে মাটি বায়ে মাটি
নিচে মাটির বিছানা,
মাটির দেহে মাটি চাপা
কেউ’তো খবর নিবেনা…”

মগ্ন হয়ে শুনছি। চড়া রোদ -এলোমেলো বাতাস-সুনসান দুপুর- ভিখারীর গান সব মিলেমিশে একাকার। অদ্ভুত শুন্যতা আর হাহাকার। মনে হতে থাকে আসলে আমরা কেউ বেঁচে নেই। কোনকালে বেঁচে ছিলামনা। যে জীবনটা যাপন করছি তা অচেনা অন্যকারো জীবন। বহুকাল আগে আমরা মরে গেছি। এখন শুধু আনুষ্ঠানিক মৃত্যু আর দাফনের অপেক্ষা।

মসজিদের সুনসান ছাদে এক অন্ধ ভিখারী আমাকে মৃত্যুপাঠ শিখাচ্ছে। মৃত আমি বসে বসে পাঠ শিখছি, মৃত্যুপাঠ শিখছি।

দৈত্য

এক ছিল রাজা। এক ছিল রানী। আর ছিল রাজপুত্র। কিন্তু আলাদীনের প্রদীপটা পেল কাঠুরের পুত্র। প্রদীপে ঘষা দিতেই দৈত্য হাজির। কাঠুরে পুত্র দৈত্যর কাছে চাইল বাবার জন্য একটা নতুন কুঠার। রোদে বৃষ্টিতে মা’র রান্না করতে সমস্যা হয়। তাই মা’র জন্য রান্না ঘরের উপরে একটা চালা আর নিজের জন্য ছবি আকার খাতা। কাঠুরে পুত্রের ছবি আঁকার খাতার কথা পৌছে গেল রাজার কানে। সবাই বলল আলাদীনের প্রদীপের দৈত্য এই খাতা দিয়েছে। খাতার জন্য রাজপুত্রের সে কি কান্না। পেয়াদারা গিয়ে নিয়ে এলো প্রদীপ।

রাজা প্রদীপ ঘষলেন। রাণী প্রদীপ ঘষলেন। মন্ত্রী প্রদীপ ঘষলেন। রাজপুত্র প্রদীপ ঘষলেন। সবাই মিলে ঘষে ঘষে প্রদীপটাকেই ক্ষয় করে ফেলল। কিন্তু দৈত্য বের হল না। কারণ প্রদীপের ভিতরে দৈত্য থাকলে তো বের হবে! কাঠুরে পুত্র ছবির খাতায় যে প্রদীপ এঁকেছে সেটাই এখন দৈত্যর নতুন বাসা, সেই প্রদীপের ভিতরেই এখন দৈত্যটা থাকে।

সেই থেকে প্রদীপ ঘষলে আর দৈত্য বের হয়না।

আইনস্টাইন

ফ্রাংক মজুমদার সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ার। ভীষণ মেধাবী, সৃজনশীল। স্কুল জীবনে কবিতা লিখতেন। এখনও বেহালা বাজানো ধরে রেখেছেন। বন্ধুরা তাকে আইনস্টাইন বলে ডাকে।

তিনি যুগান্তকারী এক সফটওয়ার বানিয়েছেন। দশ বছরের নিরলস পরিশ্রমের ফল। এই সফটওয়ার ব্যাবহার করে খুব সহজে যে কেউ কালজয়ী লেখকের মত কবিতা, গল্প, গান, উপন্যাস লেখা সম্ভব।

সফটওয়ারটি মাত্র ছয়টি ধাপে কাজ করে-
প্রথম ধাপে নিজের নাম লিখতে হয়।
দ্বিতীয় ধাপে সংক্ষেপে নিজের মনের ভাব লিখতে হয়।
তৃতীয় ধাপে মেনু হতে অণুগল্প/ছোটগল্প/বড়্গল্প/উপন্যাস/গান হতে ক্যাটাগরী সিলেক্ট করতে হয়।
চতুর্থ ধাপে লিস্টের রোমান্টিক/ট্রাজেডি/স্যাটায়ার/কমেডি/এবাস্ট্রাক্ট/ফিকশন/থ্রিলার/সাইফাই হতে কাংখিত টাইপ সিলেক্ট করতে হয়।
পঞ্চম ধাপে শব্দ বা ফর্মা সংখ্যা সিলেক্ট করতে হয়।
ষষ্ট বা শেষ ধাপে ‘রাইট এজ (Write As)…’-এর মেনু হতে কোন কালজয়ী লেখকের মত লিখতে হবে তা সিলেক্ট করতে হবে। যেমন- প্রথম পাঁচটা ধাপ পূরণ করে ষষ্ট ধাপে রাইট এজ-এ রবীন্দ্রনাথ বা শেকসপিয়্যর বা মার্ক ট্যয়েন সিলেক্ট করলে ত্রিশ সেকেন্ড হতে পাঁচ মিনিটের মাঝে লেখা প্রস্তুত হবে। এই সফটওয়ার ব্যাবহার করে যে কেউ নিজের ইচ্ছে অনুযায়ী রবীন্দ্রনাথের মত ছোটগল্প, শেকসপিয়্যরের মত ট্রাজেডি বা জীবনানন্দের মত কবিতা লিখতে পারবে।

ফ্রাংক সফটওয়ার দিয়ে বেশকিছু রবীন্দ্রসংগীত, হুমায়ুন আহমেদের নতুন তিনটা মিসির আলী বিষয়ক উপন্যাস আর জন কিটসের গোঁটা দশেক রোমান্টিক কবিতা লিখেছেন। প্রথম ধাপে তিনি নিজের নাম লিখেছিলেন- ফ্রাংক মজুমদার আইনস্টাইন। কিন্তু সফটওয়ার প্রতিবার তার নাম লিখছে ফ্রাংকেনস্টাইন। তিনি কোনভাবেই ফ্রাংকেনস্টাইন-কে ফ্রাংক মজুমদার আইনস্টাইন করতে পারছেন না।

পুনশ্চ: ফ্রাংকেনস্টাইন মানবসৃষ্ট এক দানব- যে তার মনিবকে বিনাশ করেছিল।

বিভ্রান্ত বিলাল

বিলাল আজ সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। যখন আদরে আদরে বড় করে তুুলেছিলেন, তমাল সাবধান করেছিল-“এত মায়া লাগাইস না, কষ্ট পাবি।” সাঈদ বলেছিল, “সুন্দরী, আপনাকে ফাঁকি দিয়ে প্রেম করে পালাবে।” এসবে বিলাল বিরক্ত হয়েছেন, পাত্তা দেন নাই।

আদর যত্ন আর ভালোবাসায় সুন্দরী দিনে দিনে সুন্দরীতমা হয়ে উঠেছে। সুন্দরীকে লক্ষ্য করে জানালায় ছোকরা হিরোদের আনা-গোনা বিলালের চোখ এড়ায়নি। কিন্তু সুন্দরীর প্রতি গাঢ় বিশ্বাসে চিড় ধরেনি। প্রতিদিনের মত এক সকালে ছাদে হাটতে গিয়ে সুন্দরী আর ঘরে ফিরে নাই।

বিলাল বুকের কষ্ট বুকে পুষেছেন। কতদিন জানালায় পথ চেয়ে থেকেছেন সুন্দরীর অপেক্ষায়- না, সে আসেনি। আজ সুন্দরী একা তার তিন সন্তানকে নিয়ে ফিরে এসেছে। বিলালের দৃষ্টিতে অপলক তাকিয়ে আছে। তিনি সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না কি করবেন- ঘরে জায়গা দিবেন না বিশ্বাসঘাতিনীকে বের করে দিবেন!

সুন্দরী নীরব। বিলাল শুনছেন সুন্দরীর নাদুস নুদুস তিন সন্তান বলছে “নানামনি.. ও নানামনি.. টিভি দেখবো, কার্টুন নেটওয়ার্ক চ্যানেলটা দাও.. ও নানামনি..” তিনি সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না, বিভ্রান্ত হয়ে ভাবছেন এরা কথা বলছে কিভাবে, বিড়ালের বাচ্চাগুলোর তো মিউমিউ করে ডাকার কথা..।

জাইত

মলম শাহের মন উদাস। দু:খে আলিঝালি। মতিজানের বুক ফাইট্টা যায়। চোখে পানি, মনের ভিতরে আকুলিবিকুলি। ছাওয়ালডা আইজ তার মায়ের কাছে যাবি।

একদিন ছাওয়ালডা নদীর ঘাটলায় ভাইস্যা আইছিল। দেহভর্তি বসন্তের গুঁটি- ছুইলেই সাক্ষাত মরণ। হায়! বাজা মতিজানের মায়ের মন। এতকিছু কি মানে! ছাওয়ালডারে মায়ের আদরে করে নিরাময়।

ছাওয়াল আপন মার কাছে ফিরা যায়। মরা মানিকরে জিন্দা পাইয়া মায়ে খুশীতে পেরেসান। ছাওয়ালরে জিগায়- ‘কে তোর মরা দেহে দিল পরাণ? সে কোন ভগবাইন?” ছাওয়াল কয়, “মা রে, তার নাম মতিজান। মলম শাহ’র বিবি।” মায়ের মাথায় আসমান ভাঙ্গি পরে। কাইন্দা কাইন্দা কয়- “যবন তোরে ছুইছে। তুই যবনের ঘরে থাকিছিস! খায়িছিস! হায় হায় ভগবাইন! তুই এখন কি জাইত!” ছাওয়াল কয়, “মারে আমি মানুষের জাইত।” মায়ে মানে না, কয়- “মানিক রে, তোরে ঘরে নিতে হবে পুরুত ঠাকুররে জিগায়া নিদান। বিনা নিদানে ঘরে লইলে আমারো জাত যাইবে চইলে।”

ছাওয়াল কয়, “মা রে, ছাওয়ালরে বুকে নিতে তুই চাইস পুরুত ঠাকুরের নিদান! তোর কাছে কে বড়- ধর্ম না সন্তান?” মায়ে পায়না জবাব। ছাওয়াল নিজের জাইত খুঁইজতে বিবাগী হয়।

ছাওয়াল নিজের জাইত খুইজে যায়। কিন্তুক জাইতরে খুইজে পায়না। এক এক রাইতে চাইন্দের থৈ থৈ রোশনায় দুনিয়া ভাসি যায়, ছাওয়াল দরাজ গলায় গায়ি ওঠে-
“সব লোকে কয় লালন কি জাইত সংসারে
লালন বইলে জাতের কি রুপ দেইখলাম না এই নজরে…”

আশীর্বাদ

তো ঘটনা ঘটলো ছয়মাস পরে। রাজাবাজার মোড়ে। রজ্জবের চায়ের দোকানের পিছনে- সিধু পোদ্দারের আড়াই তলা বাড়িতে।

সিধুর সুদের কারবার। টাকা পয়সা ভালই কামাইছে। গ্যাদাকালের বন্ধু মদনা মাছের ব্যাবসার লেগা সুদে টাকা নিছিল। টাকা শোধাইতে পারে নাই। চক্রবৃদ্ধি সুদে মদনা অহন সিধুর বাপ। পুরুতের মন্ত্রপাঠের জোড়ে সিধুকাকা মদনের মাইয়া কমলারাণীর স্বামী।

কমলার বয়স সতের। খাই খাই গতর। সিধু মিটফোর্ড থেকা ওষুধ কিনা খায়। কমলারে দিয়া মধু মালিশ করায়। কিন্তু কোনো কামে লাগে না। কমলা ঘুমায়, সিধুর যন্ত্রতো ঘুমায়াই থাকে- সিধু খালি হাশফাশ করে।

ওষুধ আর মালিশে সিধুর যন্ত্রের ঘুম ভাংগে নাই। দুই একবার আড়মোড়া ভাইংগা জাইগা উঠার সম্ভাবনা জাগায়া আরো গভীর ঘুমে ঘুমায়া গেছে। যন্ত্রের বদলে তার ধর্মবোধ জাগ্রত হয়া উঠছে। রাইতে সে জাইগা জাইগা মন্ত্রপাঠ করে। কমলা মুচকায়া মুচকায়া হাসে আর মোচড়ায়।

তো যেইটা কইতাছিলাম- ঘটনা ঘটল ছয়মাস পরে। কমলা নায়িকা মৌসুমির মতন মাথা ঘুরায়া পইরা গেল। সারাদিন ওয়াক ওয়াক কইরা বমি করনের চেষ্টা জারি রাখল। সিধু লক্ষন চিনে। প্রথমে রাগে খুন করনের চিন্তা করছিল। পরে ঘটনায় খুশী হয়া উঠল।

ছয়মাস পরের একদিনে পরপর কয়েকটা ঘটনা ঘইটা গেল। ভোরে রজ্জবের দোকানের পিছনে প্রদীপের ডেডবডি পাওয়া গেল। প্রদীপ সিধুর কারবারের হিসাব রাখত। মাষ্টার্স পাস কইরা চাকরী খুঁজতাছিল। কমলারে ‘কাকি কাকি’ কয়া ডাকত। সিধুর সামনেই রঙ্গরস করত। কমলাও কি গইলা গইলা যাইতো না! যাইতো হয়তো।

সিধু বাপ হওনের খুশীতে দুইটা দামি শাড়ি আর প্রদীপের মার্ডার হওনের খবর লয়া কমলার কাছে হাজির হইল। দুপুরে খায়া-দায়া দুই পাতিল দই সহযোগে মদনার বাড়িতে খুশীর খবর দিতে গেল। রাইতে ঘরে ফিরা দেখে কমলা নাই। দুই তালায় বড় বউ ফ্যাচফ্যাচায়া কানতাছে। কমলা কই জিগাইতেই ফ্যাচফ্যাচানি বাইরা যায়। গালি দিতে দিতে একটা কাগজ আগায়া দেয়- “বাবা, কমলারে নিয়া গেলাম। আমাদের খুঁইজো না। আমাদের ক্ষমা করো। তোমার নাতিরে আশীর্বাদ দিও।
ইতি
অশোক।”

কইতে ভুইলা গেছি- অশোক সিধুর তিন নম্বর পোলা।

স্বপ্ন

জোনাব আলী স্বপ্ন দেখছেন। তিনি কাঠের বিছানায় শুয়ে আছেন। তিনজন লোক তাকে গোছল করাচ্ছে। বাড়িতে কান্নার রোল। দশ বছর বয়সী ছোট মেয়েটা ঠোঁট টিপে কান্না চাপার চেষ্টা করছে। তিনি আর সহ্য করতে পারলেন না। ঘুম ভেঙ্গে গেল। তিনি শুনলেন বাড়িতে কান্নার রোল। বাতাসে আগরবাতির ঘ্রাণ। তিনি কাঠের বিছানায় শুয়ে আছেন। তিনজন লোক খুব যত্নের সাথে তাকে গোছল করাচ্ছে। তিনি প্রাণপণে তাদের থামতে বলছেন, ছোট মেয়েকে ডাকছেন কিন্তু কেউ শুনতে পাচ্ছেনা।