আন্‌ওয়ার এম হুসাইন এর সকল পোস্ট

আন্‌ওয়ার এম হুসাইন সম্পর্কে

শ্লোগান দেয়া মিছিলগুলো আমাকে খুব মোহন করে ডেকেছিল

ভারতে হিন্দুত্ববাদ-বিরোধী সিনিয়র সাংবাদিককে গুলি করে হত্যা

ভারতের এক সিনিয়র সাংবাদিক গৌরী লঙ্কেশকে মঙ্গলবার রাতে ব্যাঙ্গালোরে তাঁর বাড়ির সামনেই গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
গৌরী লঙ্কেশ ঘোষিতভাবেই হিন্দু দক্ষিণপন্থীদের সমালোচক ছিলেন তাঁর লেখার মাধ্যমে।
ব্যাঙ্গালোরের পুলিশ কমিশনার সুনীল কুমার বিবিসিকে জানিয়েছেন, “মঙ্গলবার রাতে যখন তিনি বাড়ি ফিরছিলেন, তখন বাড়ির ঠিক সামনেই গুলি চালানো হয়। ঠিক কী কারণে এই হামলা হয়েছে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।”
এক পুলিশ আধিকারিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, “গৌরী যখন বাড়ির দরজা খুলছিলেন, ঠিক সেই সময়েই বুকে সরাসরি দুটো আর মাথায় একটা গুলি করা হয়।”
চল্লিশ বছর আগে তাঁর বাবা যে ‘লঙ্কেশ পত্রিকে’ শুরু করেছিলেন, মিজ লঙ্কেশ সেটির সম্পাদক ছিলেন।
গৌরী লঙ্কেশ তাঁর পত্রিকার মাধ্যমে ‘কমিউনাল হারমনি ফোরাম’ নামে একটি গোষ্ঠীকে ক্রমাগত উৎসাহ দিয়ে গেছেন, যেখানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সপক্ষে এবং দক্ষিণপন্থী হিন্দুত্ববাদের বিপক্ষে মতামত প্রকাশ করা হয়।
তাঁর পত্রিকায় ২০০৮ সালে ছাপা কয়েকটি লেখার জন্য মানহানির মামলা করেছিলেন বিজেপি-র সংসদ সদস্য প্রহ্লাদ যোশী।
সেই মামলায় তিনি দোষী সাব্যস্ত হন ও ছয় মাসের জেল হয়। সম্প্রতি তিনি জামিনে মুক্তি পেয়েছিলেন।

মিজ লঙ্কেশের হত্যার সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে আরও দুই যুক্তিবাদী ও হিন্দুত্ববাদ-বিরোধী লেখক এম এম কালবুর্গি ও ডঃ পানসারির হত্যার ঘটনার সঙ্গে।
মিজ লঙ্কেশের মতাদর্শের সঙ্গে ওই দুই যুক্তিবাদীর মতামতের সম্পূর্ণ মিল ছিল।
এই সিনিয়র সাংবাদিকের হত্যার পরে সামাজিক মাধ্যমে মতামত জানাতে শুরু করেছেন বিশিষ্টজনেরা।
কবি জাভেদ আখতার লিখেছেন, “দাভোলকর, পানসারে, কালবুর্গি, এবং এখন গৌরী লঙ্কেশ। যদি পর পর একই ধরণের মানুষ নিহত হতে থাকেন, তাহলে হত্যাকারীরা কারা?”
অভিনেত্রী রেণুকা সাহানে টুইট করেছেন, “আরেকজন যুক্তিবাদী কণ্ঠ রোধ করে দেওয়া হল, আততায়ীদের চিহ্নিত করা যায় নি। গৌরী লঙ্কেশ, দাভোলকর, কালবুর্গি, পানসারে – কারা মারল এদের সবাইকে?”

সূত্রঃ বিবিসি বাংলা

আসুন নজরুল সঙ্গীত শুনি

কোন কথা নয়, সরাসরি গানে

করুন কেন অরুন আঁখিঃ

পরদেশী মেঘ যাওরে ফিরেঃ

যেদিন লব বিদায় ধরা ছাড়িঃ

আকাশে আজ ছড়িয়ে দিলামঃ

আমি জানি তব মনঃ

জনম জনম তব তরেঃ

আজো ফোটেনি কুঞ্জে মম কুসুমঃ

করুন কেন অরুন আঁখি (খিলখিল কাজীর কন্ঠে)ঃ

আড্ডা হল, হল আরো অনেক কিছুই

বহু দিন আড্ডা দিইনি এমন জমজমাট। যদিও আড্ডার স্থান ছিল টিএসসি, শেষ মুহুর্তে আমরা সবাই টিএসসি থেকে চলে যাই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। ঘাসের উপর বসেছি বহুদিন হয়ে গেল। সেই কবেকার পরে আবার আমরা গতকাল বসলাম ঘাসের ডগায়। হিমালয় থেকে বঙ্গোপসাগরে যাওয়ার পথে পথে কতদিক দিক থেকে আমরা কত দিকে যে আমরা চলে গেলাম। অনেকদিনের জমানো অনেক কথার ঝাঁপি খুলে ধরি আমরা সবাই। মনের দুয়ার খুলে দিয়েছিলেন আমাদের কবি মোকসেদুল ইসলাম, চারু মান্নান। আর তাদের সাথে সাথে কবি আনিসুর রহমান। ব্যক্তিগত, অব্যক্তিগত, সামাজিক রাজনৈতিক আলাপে আমরা কই থেকে কই কই হারিয়ে গেলাম, সেটা যারা না উপস্থিত ছিলেন তাদের বুঝিয়ে বলা যাবে না।

আলোচনায় এলো প্রকাশক আর প্রকাশনা, এলো সাম্প্রতিক বন্যা, এলো শব্দনীড়। আমাদের সাহিত্যে প্রকাশকদের ভূমিকা কতটুকু, লেখক প্রকাশকদের সম্পর্ক, সাহিত্য ও ব্যবসা এইসব আলোচনা হল। কবি মোকসেদুলের সাম্প্রতিক প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ অদ্ভুত মানুষগুলো নিয়ে আলোচনা হল অনেক। তেমনি আলোচনা হলো আনু আনোয়ারের গল্প নিয়ে, লেখালেখি নিয়ে। আনু আনোয়ার আলোচনা করলেন জাদুবাস্তবাদ ও বাংলাসাহিত্যে জাদুবাস্তববাদের প্রয়োগ নিয়ে। আলোচনায় এলেন গ্যাব্রিয়েলা গার্সিয়া মার্কেজ। বন্যা ও ত্রাণকার্যক্রম নিয়ে আলোচনা করলেন চারুমান্নান।

আড্ডা শেষে আমরা কিছু সিদ্ধান্তও নিইঃ

১। আমরা প্রতি মাসের শেষ শুক্রবারে মিলিত হব এই আড্ডায়।
২। আমরা একটা লিটল ম্যাগ নিয়ে আসতে চাই। সেই নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে সেপ্টেম্বরের আড্ডা।

আমাদের আড্ডা যেন শেষ হতেই চায় না, কিন্তু সোহরাওয়ার্দীতে সাতটার পরে থাকার নিয়ম নেই। তাই সেখান থেকে আমরা দলবেঁধে চলে গেলাম হাকিম চত্বরে। হাকিম চত্ব্বর থেকে সবাই যে যার মত চলে যাই।

যারা আসেননি বা আসতে পারেননি নিঃসন্দেহে অনেক মিস করেছেন। পরবর্তী আড্ডার আমন্ত্রন জানিয়ে আজ শেষ করছি।

বন্যা ও কোরবানীঃ বাস্তব সম্মত ও মানবিক চিন্তা করুন

আমাদের সস্তা চিন্তা-ভাবনার সর্বশেষ উদাহরণ হল কোরবানীর সাথে বন্যাকে টেনে নিয়ে আসা। সস্তা ও অগভীর ভাবনায় নিজেকে আলোচনায় আনার প্রচেষ্টা এই দেশে হর হামেশা হয়ে থাকে, সুতরাং এইটা নতুন কিছু নয়। কিন্তু এই সমস্ত ভাবনা প্রকাশের মাধ্যমে চিন্তার দৈন্যতা ও মনের সংকীর্নতা প্রকাশ হয়ে পড়ে। আমাদের দেশে লোকসংখ্যার আধিক্যের কারনে যেকোন মত যাহির করলে তা নিয়ে লাফালাফি করার জন্য আরো দু একজন সংকীর্নমনাকে খুব সহজেই পাওয়া যায়।

সমাজের ও ব্যক্তির অপ্রয়োজনীয় কোনকিছুই এই বন্যার কারনে বন্ধ হয়নি। কোটি টাকা খরচ করে বিয়ের – জন্মদিনের প্রোগ্রাম, বিলাসী রেস্তোরাঁয় আয়েশী খানাপিনা কোনকিছুই বন্ধ হয়নি। বন্ধ হয়নি শপিং মলগুলোতে অপ্রয়োজনীয় বিলাসী শপিং। আধুনিক পুঁজিবাদী সমাজে অপচয় করাকে স্ট্যাটাস হিসেবে গন্য করা হয়। যার যত অপচয়ের ক্ষমতা আছে সে তত বেশি উপরের শ্রেনীর। পুঁজিবাদে অপচয় এমনই সংক্রামক এবং এতবেশি আচরিত হয় যে একসময় এই অপচয়কে আর অপচয় মনে হবে না, মনে হবে এটাই প্রয়োজন। যাই হোক, আমাদের দৈনন্দিন এইসমস্ত অপচয় কিন্তু আমাদের সস্তা চিন্তাধারীমাথাগুলোর চোখে পড়ে না। তাই তাদের আহবান কখনোই বলে না, নিজেদের অপচয় হতে কিছু বাঁচিয়ে সেটা বন্যার্তদের দান করুন।

আমাদের দেশে ৭৫% লোক শুধুমাত্র কোরবানীর সময়ে গোশ্ত খেতে পায়। ( কয়েক বছর আগের পত্রিকার রিপোর্ট, অনলাইনে সার্চ দিলে পেতেও পারেন।) এই পুষ্টিহীনতার দেশে কোরবানীর সময়ে নিম্ন আয়ের লোকজনের কিছুটা হলেও আমিষের স্বাধ মিটে।

সারা দেশে কোরবানীর হাটে বেচার জন্য প্রচুর গরু পালিত হয়। সেই গরুগুলো পালে সমাজের প্রান্তিক লোকজনই। তারা এই সময়ে কিছু পূঁজিপাট্টা সংগ্রহ করে আরো ভাল কিছু করতে চায়। হয়ত এই টাকা দিয়েই সে ছেলেমেয়েকে স্কুলে পড়াতে চায়, বউ সন্তানের কাপড় চোপড়ের ব্যাবস্থা করে। অথবা নিজের অবস্থানের সামান্য পরিবর্তনে আরো বেশি কিছু করতে চায়।

দেশের যে বিস্তীর্ন অঞ্চল মহাপ্লাবনে ডুবে আছে সেইসব অঞ্চলেও প্রচুর লোকজন গবাদি পশু পেলে-পুষে বড় করেছেন কোরবানীর হাটে বিক্রির জন্য। আপনি যদি কোরবানী বন্ধ করেন এই সব প্রান্তিক বন্যার্ত মানুষের কি হবে সেটা ভেবে দেখেছেন?

বন্যার্তদের দান করা জন্য কোন অজুহাত দরকার হয় না। আপনি আপনার সর্বস্ব দিয়ে দেন। আপনাকে দেখে আরো লোকজন উৎসাহিত হবে। কিন্তু কোরবানী বন্ধ করে দান করব এই ধরনের ভাঁড়ামি এবং হিপোক্রেসী করা থেকে বিরত থাকুন। যারা বলে কোরবানী বন্ধ করে দান করব প্রকৃত অর্থে তারা কোরবানীই দেয় না অর্থাৎ কোরবানীর মানে তারা বুঝে না। কোরবানী তাদের কাছে ত্যাগ নয় তাদের কাছে ভোগ। তাই এত সহজে তারা কোরবানী বন্ধের কথা বলতে পারে।

আমাদের মত দুর্নীতিপ্রবন দেশে সরকারী বেসরকারী ত্রাণ কি পরিমান দুর্নীতি হয় তা কল্পনা অনুমান করা কঠিন নয়। প্রাকৃতিক দূর্যোগ আমাদের অনেক দায়িত্বশীলের কাছে আশীর্বাদ বয়ে নিয়ে আসে। ত্রাণ ব্যবস্থা যাতে দুর্নীতি মুক্ত হয়, সেই দিকে দৃষ্টি দেয়া আমাদের নাগরিক কর্তব্য। সেদিকে সজাগ দৃষ্টি দেয়া উচিত। দুর্নীতিমুক্ত উপায়ে কিভাবে ত্রাণ বিতরণ সম্ভব সেদিকে বরং আমাদের খেয়াল করা উচিত।

আপনি কোরবানী বন্ধ না করে কোরবানীর মাংস, চামড়া বন্যার্তদের জন্য পাঠিয়ে দিন। কোরবানীর পশু বন্যার্তদের থেকে ক্রয় করুন। বাস্তব সম্মত ও মানবিক চিন্তা করুন। হিপোক্রেট ও সস্তা লোকজনের কথায় বিভ্রান্ত হবেন না।

শব্দনীড় আড্ডা

আপনারা সবাই জানেন আড্ডা দেয়ার আহবানে গত ১২ আগস্ট ২০১৭ তারিখে একটা পোস্ট দিয়েছি। তাতে সাড়া মিলেছে প্রচুর। অনেকে মন্তব্যের মাধ্যমে সাড়া দিয়েছেন। অনেকে ইনবক্স করেছেন। ফোন করেছেন কেউ কেউ। আমি অভিভূত। বুঝা যাচ্ছে আড্ডায় আগ্রহীদের উৎসাহ চরম। সকলের এই উৎসাহ ও উদ্দীপনার প্রেক্ষিতে আগামী ২৫ আগস্ট, ২০১৭ (শুক্রবার) বিকেল ৪:৩০ এ শব্দনীড় আড্ডার সময় চূড়ান্ত করা হয়েছে। সবাই মিলিত হব টিএসসি, ঢাবি তে। আড্ডায় স্বরচিত কবিতা/গল্প পাঠ করা হবে। একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হবে।
অংশগ্রহণকারীগণ কবিতা/গল্প/প্রবন্ধের উপর আলোচনা করবেন।

আপনার ব্যস্ত সময়ে ক্যালেন্ডার মার্ক করে রাখতে পারেন এই তথ্যগুলোঃ
শব্দনীড় আড্ডা
তারিখঃ ২৫ আগস্ট ২০১৭
সময়ঃ ৪ঃ ৩০ মিনিট
স্থানঃ টিএসসি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
যোগাযোগের জন্যঃ
আনু আনোয়ার ০১৭১১৬৩৭৮১১
মোকসেদুল ইসলাম ০১৫১৬৭৭৫৪০৪
আনিসুর রহমান ০১৭৬৬৬৯৮১৫২

সকলের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ আমাদের বন্ধুত্বকে দৃঢ়তর করবে এটাই প্রত্যাশা।

আসুন সবাই মিলিত হই কোথাও


শব্দনীড় বন্ধুরা। আমরা যারা শব্দনীড়ে ব্লগিং চর্চা করি তাদের একটা গেট টুগেদার এর ব্যবস্থা হলে কেমন হয়? পরিচিত হবো, কথা বলবো, আমরা আড্ডা দেবো।

আমরা অনেকেই অনেককে চিনি না জানি না। ব্লগের বাইরে আমাদের কোন সম্পর্ক নাই। তাই আমাদের ব্লগীয় সম্পর্কটাকে আরো গভীর, বন্ধুত্বের ছায়া আরো নিবিড় করার লক্ষ্যে আসুন সবাই কোথাও মিলিত হই।

সম্মতিক্রমে ঢাকার কোন এক জায়গায় আমরা মিলিত হতে পারি। যেমন, ঢাকা ইউনিভার্সিটির টিএসসি বা হাতির ঝিল অথবা এরকম সুয়্যেটাবল অন্য কোথাও।

তাই সব সম্মানিত ব্লগারদের অনুরোধ করব আপনার যারা থাকতে আগ্রহী নিজেদের মোবাইল নাম্বার মন্তব্যের মাধ্যমে জানান। আপনারা কোন ভেনু যদি প্রস্তাব করতে চান তাও করতে পারেন।

আশাকরি আপনাদের সকলের অংশগ্রহণে কোন একটা সপ্তাহান্তে (Weekend) আমরা নিজেরা নিজেদের মাঝে ভাব বিনিময়ের সুযোগ তৈরী করতে পারব।

বৃষ্টির দিনের কৌতুক

১।
নদীর দিকে যাওয়ার পথে বকের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল কচ্ছপের। জানতে চাইল বক, কোথায় যাচ্ছ?
কচ্ছপ বলল, নদীতে। কী গরমটাই না পড়েছে দেখেছ? ভাবছি নদীর পানিতে শরীরটা জুড়িয়ে আসি।
বক বলল, এখন তো গ্রীষ্মকাল। এক ফোঁটা পানি নেই নদীতে। এখন গিয়ে কী করবে?
কচ্ছপ হাসতে হাসতে জবাব দিল, আমি যেতে যেতেই বৃষ্টির দিন চলে আসবে।

২।
গ্রামের ছোট্ট এক ক্লাব ঘরে বসে তাস পেটাচ্ছে কয়েকজন। একজন উঠে বলল:
—এক মিনিট! ছোট কাজ সেরে আসি।
—সে ফিরে এলে দেখা গেল, তার সারা পোশাকে পানির ছিটা। সবাই জিজ্ঞেস করল:
—বাইরে বৃষ্টি?
সে বলল:
—না, প্রচণ্ড বাতাস!

৩।
এক বৃষ্টির দিনে মালিক তার কাজের লোককে বলছে-
মালিক : রহিম, বাগানে পানি দিতে যা।
কাজের লোক : হুজুর আজকে তো বৃষ্টি হচ্ছে।
মালিক : বৃষ্টি হলে ছাতা নিয়ে যা!

৪।
একদিন বৃষ্টি হচ্ছিলো। ঝিরিঝির বৃষ্টিতে প্রেমিক-প্রেমিকা ঘুড়তে বেরিয়েছে।
ট্যাক্সি ক্যাব ভাড়া নিয়ে ঘুড়ছে লাভ বার্ডস। ট্যাক্সি নিজ গতিতে চলছে। কিন্তু হঠৎ ট্যাক্সি আস্তে চলতে লাগলো !
প্রেমিক ট্যাক্সি ড্রাইভারের কাছে জানতে চাইলো
প্রমিক : হঠৎ আস্তে চালানোর কারন কী?
ড্রাইভার : আপুমণি যে বললেন আস্তে…আস্তে…আস্তে…

৫।
বর্ষা কাল, অহরহই বৃষ্টি হয়। তখন অনেক রাত, বাইরে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে। অনেকক্ষন বৃষ্টি হওয়ায় রাস্তা ঘাটে প্রচুর পানি জমে আছে। এর ভিতর আমাদের পলাশ ভাই চিৎকার করে কেদে কেদে বলছে, কে আছো ভাই? একটু ধাক্কা দাও।
তানিয়া তার স্বামী রাশেদকে ডেকে তুলে বললো- “আমার মনে হয় তোমার যাওয়া উচিত।”
– কিন্তু বাইরে অনেক বৃষ্টি। রাস্তায় অনেক কাদা। :-<
– তোমার গত বছরের কাহিনী মনে নাই?
– আছে মনে আছে। কিন্তু এই ব্যাটার গলা শুনে ত মনে হচ্ছে পুরা মাতাল।
– তোমার গলা শুনে সেদিন কি অন্যরা মাতাল ভাবে নি?
গত বছর তানিয়ার বাচ্চা হবে। রাতের বেলা হাসপাতালে নিয়ে যাবে। সেদিনও এমন বৃষ্টি হচ্ছে। রাস্তাঘাট ভেসে যাচ্ছিল। তাদের গাড়িটা আটকা পড়ে গিয়েছিল কাদায়। অনেকক্ষন ঠেলে ঠুলেও রাশেদ গাড়িটা গর্ত থেকে বের করতে পারছিল না। এদিকে বউয়ের বাচ্চা প্রসবের সময় হয়ে যাচ্ছে। বার বার ধাক্কা মারছিল। কিন্তু গাড়িটা বের করে আনতে পারছিল না। একসময় হতাশায় সে চিৎকার করে কাদা শুরু করেছিল । ধাক্কা দাও। কেউ একজন এসে ধাক্কা দাও। আশেপাশের বাসা থেকে দুইজন সহৃদয় মানুষ বের হয়ে এসেছিল। নিজেরা ভিজে, কাদায় মাখামাখি হয়ে গাড়িটা বের করে দিয়েছিল ধাক্কা মেরে। আর সেদিন রাতেই তাদের ফুটফুটে একটা মেয়ে হয়েছিল।
আজকে, বছরখানেক পর, আরেক বৃষ্টির দিনে এক লোক চিৎকার করে বলছে, ধাক্কা দাও। আমাকে ধাক্কা দাও।
রাশেদ বের হয়ে আসল। রাস্তার পাশের লাইটগুলাও নিভে আছে কেন জানি। বেশ অন্ধকার। কিছুই দেখা যাচ্ছে না। শুধু চিৎকার শোনা যাচ্ছে, ধাক্কা দাও।
রাশেদ বলল, ভাই আপনি কই?
– এদিকে আসেন।
রাশেদ সামনে এগিয়ে যায়।
– বাগানের ভিতর আসেন।
রাশেদ বাগানে ঢুকে পড়ে। ভাই, আপনাকে দেখছি না তো।
– ভাই, টবগুলার পাশে আসেন।
রাশেদ টবের পাশে এসে দাঁড়ায়।
– ভাই, আপনার মত মানুষ হয় না। আসেন, একটু ধাক্কা দেন তো। অনেকক্ষন ধরে দোলনায় বসে আছি। এত ডাকছি, কেউ ধাক্কা দিতে আসে না।

পুনশ্চঃ সবগুলা কৌতুক আমি গতকাল রাতে ঘুমের মধ্যে লিখছি। দুনিয়ার মানুষ বেজায় ভাল। আমার কৌতুক গুলাম আমারে না জিগায়া বছরের পর বছর ধইরা এখানে সেখানে ছড়ায়া ছিটায়া রাখছে।

বিশিষ্ট লেখক খালিদ উমর চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত

শব্দনীড়ের বিশিষ্টজন, ব্লগার ও কথাশিল্পী খালিদ উমর দ্বিতীয়বারের মত চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত। বর্তমানে তিনি নিজ বাসায় চিকিৎসাধীন আছেন। খালিদ উমর শব্দনীড়ের মহাপ্রাণ ব্লগারদের একজন। এই ব্লগের সূচনাথেকেই এখানে প্রকাশিত হয়েছে উপন্যাস, ছোটগল্প, প্রবন্ধ, অজস্র কবিতা ও গান। এছাড়া তিনি নানা সময়ে আমাদের জন্য শব্দনীড় রঙ্গমঞ্চ – এইসব দিনরাত্রি নামে ধারাবাহিক চালু রেখেছিলেন।
বর্তমানে তাঁর অসুস্থ্যতার জন্য সিরিজটি বন্ধ আছে।

সবাই আমাদের এই প্রিয় ব্লগারের জন্য দোয়া করবেন। মহান রব্বুলআলামীন যেন ওনাকে দ্রুত সুস্থতা দান করেন।

খালিদ উমরের ব্লগ

হুমায়ূন আড্ডা

হুমায়ূন কিংবদন্তী লেখক। তাঁর ভক্ত যেমন অজস্র তেমনি সমালোচকও কম না। ভক্ত হোক আর সমালোচক হোক সবাই তাঁর পাঠক। না পড়লে সমালোচনা করব ক্যামনে? আজ তাঁর মৃত্যু বার্ষিকী। শব্দনীড়ের পক্ষ থেকে হুমায়ূনকে অন্যভাবে স্মরণ করতে চাই। আসুন তাঁকে নিয়ে আড্ডা দিই।

১। তাঁর কোন বইটি ভাল লাগে তা লিখুন। কোন গল্প বা উপন্যাসের বিশেষ উক্তি যদি পছন্দ হয়ে থাকে সেটা উল্লেখ করুন। ভাললাগাগুলো কেন ভাল লাগে সেটাও বলতে ভুলবেন না।
২। হিমু ও মিসির আলী নিয়েও আলোচনা করি। কার কাকে বেশি ভাল লাগে?হিমু না মিসির আলী?
৩। কথা চলুক তাঁর চলচ্ছিত্র ও নাটক নিয়েও। আলোচনায় আসুক বাকের ভাই।
৪। বারবার পড়া কোন গল্প বা উপন্যাস যদি থাকে সেই নিয়েও কথা বলি।
৫। আলোচনা চলুক ব্যক্তি হুমায়ূনকে নিয়েও। তাঁর ব্যক্তি জীবন, বিভিন্ন সাক্ষাৎকার।
৬। তাঁর বইয়ের সমালোচনাও করতে পারেন। বুঝিয়ে বলুন কেন আপনি হুমায়ূনের লেখার কঠোর সমালোচক।
৭। বিভিন্ন ইস্যুতে তাঁর যে দৃষ্টিভঙ্গি ছিল সেগুলো নিয়ে আলোকপাত করা যায়।
৮। কারো যদি হুমায়ূনের সাথে ব্যক্তিগত কোন স্মৃতি থাকে সেটাও জানতে চাই।
৯। সর্বশেষ হুমায়ূনের পড়া বই নিয়েও কথা বলতে পারেন। অথবা এই মুহূর্তে যদি কোন বই পড়ছেন সেটাও আলাদের জানান।
এক কথায় হুমায়ূনকে নিয়ে আমরা কথা বলতে চাই। মনখুলে যে কোন কথা, যে কোন আলোচনা। তো আসুন শুরুকরি হুমায়ূনকে নিয়ে আজকের আড্ডাবাজি।

আল মাহমুদের কবিতা

কবিতা এমন

কবিতা তো কৈশোরের স্মৃতি। সে তো ভেসে ওঠা ম্লান
আমার মায়ের মুখ; নিম ডালে বসে থাকা হলুদ পাখিটি
পাতার আগুন ঘিরে রাতজাগা ভাই-বোন
আব্বার ফিরে আসা, সাইকেলের ঘন্টাধ্বনি–রাবেয়া রাবেয়া–
আমার মায়ের নামে খুলে যাওয়া দক্ষিণের ভেজানো কপাট!

কবিতা তো ফিরে যাওয়া পার হয়ে হাঁটুজল নদী
কুয়াশায়-ঢাকা-পথ, ভোরের আজান কিম্বা নাড়ার দহন
পিঠার পেটের ভাগে ফুলে ওঠা তিলের সৌরভ
মাছের আঁশটে গন্ধ, উঠানে ছড়ানো জাল আর
বাঁশঝাড়ে ঘাসে ঢাকা দাদার কবর।

কবিতা তো ছেচল্লিশে বেড়ে ওঠা অসুখী কিশোর
ইস্কুল পালানো সভা, স্বাধীনতা, মিছিল, নিশান
চতুর্দিকে হতবাক দাঙ্গার আগুনে
নিঃস্ব হয়ে ফিরে আসা অগ্রজের কাতর বর্ণনা।

কবিতা চরের পাখি, কুড়ানো হাঁসের ডিম, গন্ধভরা ঘাস
ম্লান মুখ বউটির দড়ি ছেঁড়া হারানো বাছুর
গোপন চিঠির প্যাডে নীল খামে সাজানো অক্ষর
কবিতা তো মক্তবের মেয়ে চুলখোলা আয়েশা আক্তার।

জেল গেটে দেখা

সেলের তালা খোলা মাত্রই এক টুকরো রোদ এসে পড়লো ঘরের মধ্যে
আজ তুমি আসবে ।
সারা ঘরে আনন্দের শিহরণ খেলছে । যদিও উত্তরের বাতাস
হাড়েঁ কাঁপন ধরিয়ে দিয়ে বইছে , তবু আমি ঠান্ডা পানিতে
হাত মুখ ধুয়ে নিলাম। পাহারাদার সেন্ট্রিকে ডেকে বললাম,
আজ তুমি আসবে । সেন্ট্রি হাসতে হাসতে আমার সিগ্রেটে
আগুন ধরিয়ে দিল । বলল , বারান্দায় হেটেঁ ভুক বাড়িয়ে নিন
দেখবেন , বাড়ী থেকে মজাদার খাবার আসবে ।

দেখো , সবাই প্রথমে খাবারের কথা ভাবে ।
আমি জানি বাইরে এখন আকাল চলছে । ক্ষুধার্ত মানুষ
হন্যে হয়ে শহরের দিকে ছুটে আসছে । সংবাদপত্রগুলোও
না বলে পারছে না যে এ অকল্পনীয় ।
রাস্তায় রাস্তায় অনাহারী শিশুদের মৃতদেহের ছবি দেখে
আমি কতদিন আমার কারাকক্ষের লোহার জালি
চেপে ধরেছি ।
হায় স্বাধীনতা , অভুক্তদের রাজত্ব কায়েম করতেই কি আমরা
সর্বস্ব ত্যাগ করেছিলাম ।
আর আমাকে ওরা রেখেছে বন্দুক আর বিচারালয়ের মাঝামাঝি
যেখানে মানুষের আত্মা শুকিয়ে যায় । যাতে
আমি আমরা উৎস খুঁজে না পাই ।
কিন্তু তুমি তো জানো কবিদের উৎস কি ? আমি পাষাণ কারার
চৌহদ্দিতে আমার ফোয়ারাকে ফিরিয়ে আনি ।
শত দুর্দৈবের মধ্যেও আমরা যেমন আমাদের উৎসকে
জাগিয়ে রাখতাম ।
চড়ুই পাখির চিৎকারে বন্দীদের ঘুম ভাঙছে ।
আমি বারান্দা ছেড়ে বাগানে নামলাম।
এক চিলতে বাগান
ভেজা পাতার পানিতে আমার চটি আর পাজামা ভিজিয়ে
চন্দ্রমল্লিকার ঝোপ থেকে একগোছা শাদা আর হলুদ ফুল তুললাম ।
বাতাসে মাথা নাড়িয়ে লাল ডালিয়া গাছ আমাকে ডাকলো ।
তারপর গেলাম গোলাপের কাছে ।
জেলখানার গোলাপ , তবু কি সুন্দর গন্ধ !
আমার সহবন্দীরা কেউ ফুল ছিড়েঁ না , ছিঁড়তেও দেয় না
কিন্তু আমি তোমার জন্য তোড়া বাঁধলাম ।
আজ আর সময় কাটতে চায়না । দাড়ি কাটলাম । বই নিয়ে
নাড়াচাড়া করলাম । ওদিকে দেয়ালের ওপাশে শহর জেগে উঠছে ।
গাড়ীর ভেঁপু রিক্সার ঘন্টাধ্বনি কানে আসছে ।
চকের হোটেলগুলোতে নিশ্চয়ই এখন মাংসের কড়াই ফুটছে ।
আর মজাদার ঝোল ঢেলে দেওয়া হচ্ছে
গরীব খদ্দেরদের পাতে পাতে ।
না বাইরে এখন আকাল । মানুষ কি খেতে পায় ?
দিনমজুরদের পাত কি এখন আর নেহারির ঝোলে ভরে ওঠে ?
অথচ একটা অতিকায় দেয়াল কত ব্যবধানই না আনতে পারে ।
আ , পাখিরা কত স্বাধীন । কেমন অবলীলায় দেয়াল পেরিয়ে যাচ্ছে
জীবনে এই প্রথম আমি চড়ুই পাখির সৌভাগ্যে কাতর হলাম ।
আমাদের শহর নিশ্চয়ই এখন ভিখিরিতে ভরে গেছে ।
সারাদিন ভিক্ষুকের স্রোত সামাল দিতে হয় ।
আমি কতবার তোমাকে বলেছি , দেখো
মুষ্টি ভিক্ষায় দারিদ্র্য দূর হয় না ।
এর অন্য ব্যবস্হা দরকার , দরকার সামাজিক ন্যায়ের ।
দুঃখের শিকড় উপড়ে ফেলতে হবে ।
আ , যদি আমার কথা বুঝতে ।
প্রিয়তমা আমার ,
তোমার পবিত্র নাম নিয়ে আজ সূর্য উদিত হয়েছে । আর
উষ্ণ অধীর রশ্মির ফলা গারদের শিকের ওপর পিছলে যাচ্ছে ।
দেয়ালের ওপাশ থেকে ঘুমভাঙ্গা মানুষের কোলাহল ।
যারা অধিক রাতে ঘুমোয় আর জাগে সকলের আগে ।
যারা ঠেলে ।
চালায় ।
হানে ।
ঘোরায় ।
ওড়ায় ।
পেড়ায় ।
আর হাত মুঠো করে এগিয়ে যায় ।
সভ্যতার তলদেশে যাদের ঘামের অমোঘ নদী ।
কোনদিন শুকোয় না । শোনো , তাদের কলরব ।
বন্দীরা জেগে উঠছে । পাশের সেলে কাশির শব্দ
আমি ঘরে ঘরে তোমার না ঘোষণা করলাম
বললাম , আজ বারোটায় আমার ‘দেখা’ ।
খুশীতে সকলেই বিছানায় উঠে বসলো ।
সকলেরই আশা তুমি কোন না কোন সংবাদ নিয়ে আসবে ।
যেন তুমি সংবাদপত্র ! যেন তুমি
আজ সকালের কাড়জের প্রধান শিরোনামশিরা !
সূর্য যখন অদৃশ্য রশ্মিমালায় আমাকে দোলাতে দোলাতে
মাঝ আকাশে টেনে আনলো
ঠিক তখুনি তুমি এলে ।
জেলগেটে পৌছেঁ দেখলাম , তুমি টিফিন কেরিয়ার সামনে নিয়ে
চুপচাপ বসে আছো ।
হাসলে , ম্লান , সচ্ছল ।
কোনো কুশল প্রশ্ন হলো না ।
সাক্ষাৎকারের চেয়ারে বসা মাত্রই তুমি খাবার দিতে শুরু করলে ।
মাছের কিমার একটা বল গড়িয়ে দিয়ে জানালে ,
আবরা ধরপাকড় শুরু হয়েছে ।
আমি মাথা নাড়লাম ।
মাগুর মাছের ঝোল ছড়িয়ে দিতে দিতে কানের কাছে মুখ আনলে ,
অমুক বিপ্লবী আর নেই
আমি মাথা নামালাম । বললে , ভেবোনা ,
আমরা সইতে পারবো । আল্লাহ , আমাদের শক্তি দিন ।
তারপর আমরা পরস্পরকে দেখতে লাগলাম ।
যতক্ষণ না পাহারাদারদের বুটের শব্দ এসে আমাদের
মাঝখানে থামলো ।

সোনালী কাবিন

সোনার দিনার নেই, দেনমোহর চেয়ো না হরিনী
যদি নাও, দিতে পারি কাবিনবিহীন হাত দু’টি,
আত্মবিক্রয়ের স্বর্ণ কোনকালে সঞ্চয় করিনি
আহত বিক্ষত করে চারদিকে চতুর ভ্রুকুটি;
ভালোবাসা দাও যদি আমি দেব আমার চুম্ব্ন,
ছলনা জানিনা বলে আর কোন ব্যবসা শিখিনি;
দেহ দিলে দেহ পাবে, দেহের অধিক মূলধন
আমার তো নেই সখি, যেই পণ্যে অলঙ্কার কিনি ।
বিবসন হও যদি দেখতে পাবে আমাকে সরল
পৌরুষ আবৃত করে জলপাইর পাতাও থাকবে না;
তুমি যদি খাও তবে আমাকেও দিও সেই ফল
জ্ঞানে ও অজ্ঞানে দোঁহে পরস্পর হব চিরচেনা
পরাজিত নই নারী, পরাজিত হয়না কবিরা;
দারুণ আহত বটে আর্ত আজ শিরা-উপশিরা ।

হাত বেয়ে উঠে এসো হে পানোখী, পাটিতে আমার
এবার গোটাও ফণা কালো লেখা লিখো না হৃদয়ে;
প্রবল ছোবলে তুমি যতটুকু ঢালো অন্ধকার
তার চেয়ে নীল আমি অহরহ দংশনের ভয়ে ।
এ কোন কলার ছলে ধরে আছো নীলাম্বর শাড়ি
দরবিগলিত হয়ে ছলকে যায় রাত্রির বরণ,
মনে হয় ডাক দিলে সে-তিমিরে ঝাঁপ দিতে পারি
আচঁল বিছিয়ে যদি তুলে নাও আমার মরণ ।
বুকের ওপরে মৃদু কম্পমান নখবিলেখনে
লিখতে কি দেবে নাম অনুজ্জ্বল উপাধিবিহীন ?
শরমিন্দা হলে তুমি ক্ষান্তিহীন সজল চুম্বনে
মুছে দেবো আদ্যক্ষর রক্তবর্ণ অনার্য প্রাচীন ।
বাঙালী কৌমের কেলি কল্লোলিত কর কলাবতী
জানতো না যা বাৎ‌সায়ন, আর যত আর্যের যুবতী ।

ঘুরিয়ে গলার বাঁক ওঠো বুনো হংসিনী আমার
পালক উদাম করে দাও উষ্ণ অঙ্গের আরাম,
নিসর্গ নমিত করে যায় দিন, পুলকের দ্বার
মুক্ত করে দেবে এই শব্দবিদ কোবিদের নাম ।
কক্কর শব্দের শর আরণ্যক আত্মার আদেশ
আঠারোটি ডাক দেয় কান পেতে শোনো অষ্টাদশী,
আঙুলে লুলিত করো বন্ধবেণী, সাপিনী বিশেষ
সুনীল চাদরে এসো দুই তৃষ্ণা নগ্ন হয়ে বসি ।
ক্ষুধার্ত নদীর মতো তীব্র দু’টি জলের আওয়াজে-
তুলে মিশে যাই চলো অকর্ষিত উপত্যকায়,
চরের মাটির মতো খুলে দাও শরীরের ভাঁজ
উগোল মাছের মাংস তৃপ্ত হোক তোমার কাদায়,
ঠোঁটের এ-লাক্ষারসে সিক্ত করে নর্ম কারুকাজ
দ্রুত ডুবে যাই এসো ঘূর্ণমান রক্তের ধাঁধায় ।


আমার ঘরের পাশে ফেটেছে কি কার্পাশের ফল্ ?
গলায় গুঞ্জার মালা পরো বালা, প্রাণের শবরী,
কোথায় রেখেছো বলো মহুয়ার মাটির বোতল
নিয়ে এসো চন্দ্রলোকে তৃপ্ত হয়ে আচমন করি ।
ব্যাধের আদিম সাজে কে বলে তোমাকে চিনবো না
নিষাদ কি কোনদিন পক্ষিণীর গোত্র ভুল করে ?
প্রকৃতির ছদ্মবেশ যে-মন্ত্রেই খুলে দেন খনা
একই জাদু আছে জেনো কবিদের আত্মার ভিতরে ।
নিসর্গের গ্রন্থ থেকে, আশৈশব শিখেছি এ-পড়া
প্রেমকেও ভেদ করে সর্বভেদী সবুজের মূল,
চিরস্থায়ী লোকালয় কোনো যুগে হয়নি তো গড়া
পারেনি ঈজিপ্ট, গ্রীস, সেরাসিন শিল্পির আঙুল ।
কালের রেঁদার টানে সর্বশিল্প করে থর থর
কষ্টকর তার চেয়ে নয় মেয়ে কবির অধর ।

এক বোকা বাবার গল্প শোন

খুব তাড়াহুড়া করে বাসায় ফেরে রাশিদুল। দরজায় খুলতেই ঝাঁপিয়ে পড়ে জারা। দুহাতে বাবাকে জড়িয়ে বুকে মাথা গেঁথে দেয়। মা এসে জিজ্ঞেস করে এত দেরী করেছ কেন? মেয়ে দুহাতে বাবার বুকে থাপ্পড় দিতে থাকে। বাবার চশমা ধরে টানাটানি করে। মেয়েকে নিয়ে রাশিদুল ফ্যানের নিচে বসে। বাসের ভীড়ের ধাক্কাধাক্কিতে গা ঘেমে নেয়ে একাকার। শুধু ঘামাঘামি হলে হত, তুমি দাঁড়িয়ে আছ শতেক ধাক্কা সহ্য কর। শতেক জন এসে পা মাড়িয়ে দিয়ে যাবে। কিছু বলাও যাবে না। কেউ কেউ বলে। এই নিয়ে ঝগড়া শুরু হয়। মাঝে মাঝে হাতাহাতিও হয়। আসলে কারোই দোষ নাই। সবার মেজাজ খারাপ থাকে। লেগে যায়। কন্ডাক্টর এসে বারবার ভাড়া চেয়ে বিরক্ত করে। আর বসে থাকলে দেখা যাবে আরেকজনের পশ্চাদ্দেশ তোমার মুখের উপর কিংবা তার দুই রানের মাঝামাঝি পয়েন্টটা তোমার গায়ে এমনভাবে সেট করে রেখেছে তোমার বমি পাচ্ছে কিন্তু তোমার কিছু করার নাই। ঐ লোকটারও দোষ নাই। তার পিছনে এমন ঠাসাঠাসি অবস্থা তার নিজের জান ত্রাহি ত্রাহি করছে। সারাদিনের অফিসের শেষে এই সমস্ত ধাক্কাধাক্কি ঘষাঘষি পার করে বাসায় এলে মেয়েটা যখন নাকের ফুটোয় দুই আঙুল ঢুকিয়ে দেয় কিংবা চুল ধরে টানা করে তখন রাশিদুলের আর কিছু মনে থাকে না। মেয়ের এখনো কথা ফোটেনি। বায়না ধরতে পারে না। রাগ করতে পারে না। অভিমান করে না। একটু উঁ আঁ আর নাচানাচিতেই রাশিদুলের মনে হয় কত সুখের জীবন। মেয়ের মা চা এনে দেয়। মেয়েকে সাবধানে ধরে চায়ে চুমুক দেয়। উড়ুৎ উড়ুৎ করে চা খায়। এই নিয়ে জারার মা কত হাসাহাসি করে, তবু এই অভ্যাস যায় না তার। কিন্তু আজকে চা ঠাণ্ডা হয়ে যায়, রাশিদুলের খেয়াল থাকে না। উড়ুৎ উড়ুৎ করার দরকার পড়ে না। মেয়েকে বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে, আরো জোরে জড়িয়ে ধরে। বউ রান্নাঘর থেকে এসে জিজ্ঞেস করে ‘কি হইছে তোমার? শরীর খারাপ?’

না শরীর খারাপ না। শরীর তার খারাপ করে না। কিন্তু আজকে জারাকে দেখলেই তার –, তার কি—-? কি, সেটা সে নিজেই বুঝতে পারে না। কিছু একটা করা দরকার? কি করবে? তার কি করার আছে। এই শহরে দেড় কোটি মানুষের ভীড়ে সে কি? খড়কুটা; একটা ধূলিকণা মাত্র। জারা এখন বাবার গায়ে হিসু করে দিয়েছে। জারার হিসুতে ধূলিকণা ধুয়ে যায় না। জমাট বাঁধে। জারার হিসু পরিষ্কার করার কথা মনে থাকে না। বউ এসে জারাকে নিয়ে যায়। কিন্তু জারা রাশিদুলের মনের ভেতর বেড়ে উঠে বড় হয়ে যায়। জারার চারিদিকে কিলবিল করে ভাইরাস। দৈত্যের মত সে ভাইরাস শুঁড় বাঁকিয়ে বাকিয়ে এগিয়ে আসে। অসহায় জারা আর্ত চিৎকার করে।বাবা! বাবা!! আকাশ বাতাস ভারী হয়ে আসে চিৎকারে। মেয়ের চিৎকারে রাশিদুল কি করে? রাশিদুলের হাতে কোন ভ্যাকসিন নাই। রাশিদুল হাতড়ায়, খালি হাতড়ায়, ভ্যাকসিনের খোঁজে। ভ্যাকসিন পায় না। পায় মোবাইল। মোবাইল হাতে নিয়ে ফেসবুকে ঢুকে। মেসেজ দেয় সবাইকে যে আছে যেখানে। সবাইকে সে রিকোয়েস্ট করে,

আগামি শুক্রবার (০৪/০৫/২০১৭) সকাল ৯ টা থেকে ৯.৩০ পর্যন্ত আমি একজন নাগরিক ও একজন পিতা হিসেবে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে দাড়াতে চাই, হযরত আলি আর আয়শার হত্যাকারিদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবিতে , যারা হযরত আলি আর আয়শা হত্যার বিচার চান আশা করি আপনাদের ও সাথে পাব”।

শুক্রবার সকালে, কেউ আসেনি, কেউ আসে না, কেউ না।
শুধু রাশিদুল একা দাঁড়িয়ে থাকে, একা। হাতে তার মত একা একটা প্ল্যাকার্ড, বিষণ্ণ ও বিপ্লবী।

বাড়ির সবাই কাজে ব্যস্ত। ছোট বউয়ের খালি কোন কাজ নেই। এদিকে যায় সেদিকে যায়, কি করে ভেবে পায় না। আশে পাসের মানুষ ভাবে ঢঙী মাইয়ার ঢঙ দেখে আর বাঁচি না, ননদ শাশুড়ি খাইটা মরে, আর তিনি উলালে বেড়ান। কোন কাজ কাম না পেয়ে শেষ মেস ছোট বউ ভাঁড়ার ঘরে গিয়ে চাল আর ডাল বের করল। সেটা একসাথে মেশাল। এবার বসে বসে চাল ডাল আলাদা করতে লাগল। আশে পাসের মানুষ দেখল, বউটা কত কাজের।

সেই বউ এখন কোথায়?
বাংলাএকাডেমীতে।

ব্যাকরণ ভাষা তৈয়ার করে না। ভাষা ব্যকরণ তৈরি করে। ভাষার মধ্যে সহজাত যে শৃংখলা থাকে সেটার প্রাতিষ্ঠানিক বা লিখিত রূপ হল ব্যকরণ। তাই ব্যকরণ নিরপেক্ষ ও নৈর্ব্যত্তিক। কিন্তু ভাষার নিজস্ব গতি আছে। সে গতিপথ ভাষা নিজেই ঠিক করে নেয়। ব্যাকরণের কিংবা কোন একাডেমীর দেখানো পথে হাঁটা ভাষা পছন্দ করে না।

ভাষার উপর এ ধরনের আরোপিত বিষয় হল এক ধরনের ফ্যাসিবাদ। বিদেশী শব্দ উচ্চারণে দীর্ঘ ঈ দরকার হয় না এই ধরনের কথাবার্তা কূপমণ্ডূকতা প্রকাশ করে। সে কূপমণ্ডূকতা যখন আপনার আমার উপর চাপিয়ে দেখা হবে সেটা হল ফ্যাসিবাদী মনোভাবের বহিপ্রকাশ।

সহীহ আধুনিক রোজার সহজ তরিকা

রোজার ইতিহাস গুরুত্ব ইত্যাদি নিয়ে মওলানা সাহেবদের দিনরাত সবক শুনতে শুনতে যারা বিরক্ত হয়ে উঠেছেন অথবা বিরক্ত হওয়ার মত শোনার সময় যাদের নাই তাদের জন্য আমার সাড়া এই কিছু তরিকা আছে যাতে করে আপনি আধুনিক কায়দায় সহি রোজা রাখতে পারবেন।

সেহরির কমপক্ষে এক ঘন্টা আগে উঠবেন। উঠেই ফেসবকে লগইন করুন। সেহরি বিষয়ক স্ট্যাটাস দিন। বিশেষ কোন বান্ধবী/ বান্ধব যদি থাকে তাকে জাগিয়ে দিন। জাগিয়ে দিয়ে ঘন্টা খানেক কথা বলুন। রোজা রেখে খালি পেটে দিনের বেলা কথা বলে আরাম নেই। তাই এই সময়টি কাজে লাগান। ফজরের আগে রোজা শুরু হয় না। সুতরাং এই সময় মনের দুয়ার, মুখের লাগাম সব খুলে কথা বলুন। সব থেকে ভাল হয় সারারাত না ঘুমালে। রাতের খাবার খেয়ি ফোনালাপ শুরু করুন। নতুন নতুন বান্ধবী খুঁজে বের করুন। তাদের ইফতারির দাওয়াত দিন। সেহরির দাওয়াতও দিতে পারেন। আধুনিক রোজা সংস্কৃতির বিশেষ অনুষঙ্গ সেহরি পার্টি। তাই সেহরি পার্টী আয়োজনে ভুলবেন না। ঘুমিয়ে পড়লে পার্টি মিস হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তাই রাতে ফেসবুক, সিনেমা, পার্টি এসবে ব্যস্ত থাকলে সেহরি পার্টীতে অংশগ্রহন সুনিশ্চিত। আধুনিক সহীহ রোজার তরিকায় সেহরি পার্টির স্থান অনেক উঁচুতে। সেহরিতে চিকেন ফ্রাই, লবস্টার, ম্যাগি নুডলস, হরলিক্স মিশ্রিত দুধ, বিফকারি রাখতে পারেন। সেহরি পার্টিতে সেলফি তুলতে কোন ভাবেই ভুলবেন না। পার্টির ফাঁকে ফাঁকে সেহরি পার্টির সেলফি ফেসবুকে আফডেট করুন। খাবার কতটুকু ইয়াম্মি ছিল সে স্ট্যাটাস দিতে ভুলবেন না। সিগারেটের অভ্যাস থাকলে শেষবারের মত সিগারেট খেয়ে নিন।

সেহরি পার্টি শেষে ঘুমিয়ে নিন। রোজার অজুহাতে বেশ একটু দেরিতে অফিসে যেতে পারেন। অফিস না থাকলে বারোটার আগে ঘুম থেকে উঠার দরকার নেই। বারোটায় ঘুম ভাঙলে সাথে উঠে পড়বেন না যেন, নিদেন পক্ষে একটা পর্যন্ত গড়াগড়ি দিন। উঠে গোসল সারুন। গোসল করে পাঞ্জাবি পরে মুখে রোজাদার রোজাদার ভাব নিয়ে বের হম। পকেটে একটা টুপি রাখতে ভুলবেন না। ইফতারির সময় কাজে লাগবে। বিভিন্ন মার্কেটে যান। বন্ধু বান্ধবিদের ফোন দিয়ে তাদেরকে আসতে বলুন। বিভিন্ন মার্কেটে ঘোরাঘুরি করে ক্ষুধা লেগে গেলে, কোন একটা ফুডকোর্টে বসে খেয়ে নিতে পারেন। আর সহ্য করতে পারলে ইফতার পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।

সেহরি পার্টি না থাকলে বাসায় জেগে থাকাই উত্তম। ছোট রাত, না ঘুমিয়ে একেবারে সেহরি খেয়ে ঘুমদিন। সেহরির সময় টিভি চ্যানেল গুলো একবার ঘুরে আসতে পারেন। বিরক্ত লাগলে দরকার নাই। ঘুমানোর আগে অবশ্যই বান্ধবী/ বান্ধবীদের সাথে ফোনালাপ সেরে নিবেন। এই সময় আলাপ না হলে বান্ধবী রাগ হতে পারে না। রোজা অবস্থায় কাউকে রাগানো বুদ্ধিমানের কাজ না। যাদের একাধিক বান্ধবী আছে তারা এই রাতকে কাজে লাগান। ইফতারের পরে, মাঝরাতে, সেহরির আগে-পরে এভাবে শিডিউল করে সকলের সাথে সদ্ভাব বজায় রাখুন। বাংলাদেশে পররাষ্ট্রনীতির মত সকলের সাথে বন্ধুত্ব কারো সাথে শত্রুতা নয় এই নিয়ম মেনে চলুন। তবে আপনার বান্ধবীর তালিকায় ভারতের মত কেউ থাকলে আপনাকে বিশেষ সাবধানে থাকতে হবে। এই ঈদে কাকে কি গিফট দিবেন সেটা ভেবে রাখুন। আপনি যদি বিশেষ চালাক প্রকৃতির হোন তাহলে কোন কোন গার্ল ফ্রেন্ডের কাছ থেকে গিফট আদায় করতে পারবেন। এমনকি আপনার গার্লফ্রেন্ড অন্য বয়ফ্রেন্ডের কাছ থেকে পাওয়া উপহার আপনার হাতে তুলে দিয়ে বলবে, এটা আমি শুধু তোমার জন্য নিজের হাতে কিনেছি (নিজের হাতে বানিয়েছিও বলে ফেলতে পারেন)। সবই নির্ভর করে আপনি তাদের কিভাবে ম্যানেজ করতে পারেন তার উপর।

আধুনিক রোজায় ফেসবুকের গুরুত্ব অপরিসীম। সেহরি পার্টি ইফতার পার্টি এসবের খবরা-খবর, সেলফি তো আছেই তাছেড়া এই মুমিন বান্দার জন্য কয়টা লাইক? আমীন না বলে যাবেন না কেউ, মুমীন বান্দারা শেয়ার করুন মার্কা প্রচুর স্ট্যাটাস, ছবি আসে। এইগুলোতে লাইক কমেন্ট শেয়ার করতে পারেন। নিজেও এসব পোস্ট দিতে পারেন। না হলে আপনি প্রকৃত রোজাদার ফেসবুকার না।
বিভিন্ন ব্যাংক, ফাইনান্সিয়াল প্রতিষ্ঠান ইফতারিতে বিশেষ সুবিধা দিচ্ছে। চেষ্টা করুন এর প্রত্যেকটী অফার গ্রহন করতে। ইফতারি বিষয়ক স্ট্যাটাসে অবশ্যই ইফতারির দাম লিখতে ভুলবেন না। কত দামী ইফতারি খেলেন তা জাতিকে জানানোর দরকার আছে। আর যেদিন ইফতার পার্টি থাকবেনা বাসায় জম্পেশ ইফতারির ব্যাবস্থা করুন। বিভিন্ন টিভিতে রান্নার অনুষ্ঠান দেখে দেখে ইফতারির আইটেম তৈরি করুন। ইফতারিতে গাজরের হালুয়া, ম্যাগি নুডলস, পুডিং, স্টার হালিম/মামা হালিম, ট্যাং/রুহ আফজা থাকা বাঞ্চনীয়। টিভি’র আজান শুনে ইফতার শুরু করুন। ইফতার এশার নামাজের আগে শেষ হওয়া সমীচীন নয়। ইফতারির সময় মাথায় টুপি থাকলে ভাল দেখাবে। মেয়েরা সারাদিন বেপর্দা ঘুরাঘুরি করলেও ইফতারির সময় মাথায় কাপড় দিন।

সারাদিনে শরীরে অনেক ধকল গেছে এবারে বিশ্রাম নিন, ফেসবুকে লগইন করুন।

আমাদের নজরুল ও আমরা

রবীন্দ্রনাথ রাত জেগে প্রার্থনা করতেন। তাঁর প্রার্থনা কক্ষে কারো অনুমতি ছিল না। এমনকি কবিপত্নীরও নয়। একদিন রাতের বেলা প্রার্থনার সময়ে ‘গুরুজী! গুরুজী!! বলে চিৎকার কতে করতে নজরুল রবি কক্ষে ঢুকে পড়েন। হতচকিত রবীন্দ্রনাথ বলেন কিরে অমন ষাঁড়ের মত চিৎকার করছিস কেন? (দুই কবির সম্পর্ক এমন সাবলীলই ছিল।) ‘আমি আপনাকে খুন করেছি গুরু!’ আমি আপনাকে খুন করেছি বলে নজরুল তখন বিদ্রোহী কবিতাটি দেখান। রবি ঠাকুর বলে হ্যাঁরে নুরু তুই আমাকে খুন করেছিস। নজরুলের বিভিন্ন জীবনী গ্রন্থে বিদ্রোহী কবিতার ইতিহাস এভাবে বর্ননা করা আছে। রবিন্দ্রনাথ নজরুল সম্পর্কে উচ্চ ধারনা পোষণ করতেন এবং এই নিয়ে রবীন্দ্র ভক্তরা কবির উপর নাখোশ হয়েছিলেন। পরবর্তীতে রবীন্দ্রনাথ নজরুল কে যখন বসন্ত নাটক উৎসর্গ করেন তখন কবিভক্তরা যে কি রকম চটে ছিলেন সে কাহিনী কম বেশি সবারই জানা। বসন্ত নাটকের উৎসর্গ নিয়ে জেলেও বেশ নাটকীয় ঘটনা ঘটে। এই খবরটি নিয়ে যিনি জেলে যান জেলার তাকে বেশ ভর্ৎসনা করেন এই বলে যে তিনি গিফট এবং ডেডিকেটেস এর পার্থক্য বুঝেন না। জেলার তাঁকে বার বার জিজ্ঞেস করেন, ডেডিকেটেড? ইয়ু মিন গিফট? জেলার সাহেব বিশ্বাসই করতে পারছিল না নজরুলকে উৎসর্গ করা হয়েছে। বড়জোর তাকে একটা বই উপহার দেয়া হতে পারে! জেলারকে তখন নিশ্চিত করা হয় গিফট নয় ডেডিকেটেড। বলা হয় ডেডিকেটেড টু নজরুল। হি ইজ আওয়ার গ্রেটেস্ট পোয়েট নেক্সট টু টেগোর। (এইখানে একটা বিষয় লক্ষনীয় নেক্সট টু টেগোর, আফটার টেগোর নয়) জেলার নজরুল কে গিয়ে খবর দেন এই বলে, ‘তুমি তো নোবেল পেয়ে গেলে ভায়া!’

নজরুল কি লিখেছেন কি করেছেন আমরা সবাই কম বেশি জানি। ছোটবেলা থেকে জেনে জেনে বড় হয়েছি। কিন্তু দুঃখের বিষয় নজরুলকে আমরা ধারন করি কম। মাঝে মাঝে আমার মনে আমরা বড় দূর্ভাগা জাতি। নজরুলের মত ব্যক্তিত্বকে ধারন করার সাধ্য আমাদের নেই। আমাদের মাঝে খুব বড় একটা প্রবণতা দেখা যায় যে নজরুলকে ছোট করে দেখার। হেয় করার। নজরুল হেয় করতে পারা, ছোট করা নজরুলের কবিতা নিয়ে হাস্যরস করলে নিজেকে কেমন যেন বুদ্ধিজীবি স্তরে পৌঁছানো যায়। নজরুল তো আন্ডার ম্যাট্রিক ছেলে। আমাদের বড় বড় ডিগ্রী আছে। সেরা ইয়ুনিভার্সিটির পিএইচডি আছে। বিদ্যার গৌরবে তখন নজরুলে কাজকে আর চোখে লাগে না। আমি এমনও দেখেছি নজরুলে ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক অথচ নজরুল সম্পর্কে তাঁর ধারনা তাচ্ছিল্য করার মত। নজরুল ইন্সটিটিউট যেহেতু সরকারী প্রতিষ্ঠান, এর প্রধানের পদটা গৌরবের ও আর্থিকভাবে লাভজনক। সুতরাং দু একটা পাবলিকেশন্স আছে, বুদ্ধিজীবী মহলে পরিচিতি আছে সরকারী আনুকল্য আছে। সেই সুবাধে নজরুলের ইন্সটিটিউটে মহাপরিচালক হয়ে গেলাম। এই সমস্ত পরিচালক মহাপরিচালকেরা নজরুল গবেষণা তো দূরে থাকুক নজরুল রচনাবলীও পড়েছে বলে আমার মনে হয় না।

নজরুলকে শুধু বিদ্রোহী কবি বলা আমার কাছে মনে হয় কবিকে খাট করা। নজরুলের একটি মাত্র পরিচয় বিদ্রোহী। কিন্তু তাঁর আর বাকী পরিচয়গুলো এর আডালে লুকিয়ে রাখাতো কবির প্রতি অবিচার। আমরা কবির রণতূর্যের কথা বলি কিন্তু বাঁকাবাশরীর কথা ভুলে যাই। নজরুলের মানবতা, সার্বজনীন ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী দর্শন, সাহিত্য সবচেয়ে বেশি অনালোচিত। নজরুল ভক্তদের দেখা যায় অতি আবেগে গদগদ হয়ে সাম্রাজ্যবাদ ও ব্রিটিশ বিরোধী কিছু আলোচনা, সাম্যবাদী কবিতার দু চার লাইন আওড়ে দায়ত্বি শেষ করতে।

আমাদের দেখার দরকার আছে সাংবাদিক নজরুল কেমন ছিলেন? বর্তমান সাংবাদিকদের জন্য নজরুলের সাংবাদিকতা কি দর্শন নিয়ে উপস্থিত হয়। আধুনিক গণমাধ্যমের এই ডামাডোলের যুগে দেখি মেরুদন্ডহীন সাংবাদিকতায় চারিদিক সয়লাব। অতি কথন, অতি আলোচনা, মিথ্যে আর অর্ধ সত্যের এই সাংবাদিকতায় লাল হলুদ নানা রঙে রঙিন। নজরুলের মত গণমানুষের সাংবাদিক আজকের মিডিয়া জগতে সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত। এর কারণকি এটাই আজকের গণ মানুষের সাথে যোগসম্পর্কহীন সাংবাদিকতা গণমানুষের নজরুলকে ধারণ করতে পারেনা? যাকে ধারণ করার শক্তি নেই তাকে উপেক্ষা করে নিজের অক্ষমতাকে ঢাকার ব্যর্থ চেষ্টা।

বাংলা সাহিত্য ছিল কলকাতার মধ্যবিত্তদের প্রতিচ্ছবি। কামার কুমোর ছুতোরের উপস্থিতি ছিলনা এখানে। মধ্যবিত্ত-উচ্চবিত্তের ছকে বাধা জীবনের ফ্রেম যেক বাংলা সাহিত্যের অলঙ্গনীয় গ্রামার হয়ে জেঁকে বসেছিল। নজরুল এসে প্রথা ভাঙলেন। আজকের দিনে এই কথা অনেক সাহিত্যমোদীর জানা নেই নজরুলই প্রথম কামার কুমোরের মুখের কথা অর্থাৎ আঞ্চলিক কথ্যভাষা সাহিত্যে ব্যাবহার করেছিলেন। বাংলাসাহিত্যের ইতিহাসে এ কিন্তু এক যুগান্তকারী ঘটনা। নজরুল পরবর্তী কোন কথা সাহিত্যেকের পক্ষে এই প্রবণতা এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হয় নি।

চলচ্চিত্রের সাথে নজরুলের যোগাযোগের কথা আমরা সবাই জানি। কিন্তু জানা পর্যন্তই। নজরুলের অভিনীত চলচ্চিত্র গুলো কোথায় আছে। তার পরিচালিত সুরাপিত চলচ্চিত্রগ গুলো আদৌ কোন আর্কাইভে আছে কিনা কে জানে? অন্তত কবির জন্ম মৃত্যু তিথিতে কি এই সব চলচ্চিত্র প্রদর্শিত আলোচিত হতে পারে না। বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল, বিএফডিসি, নজরুল ইনস্টিটিউট এই বিষয়ে কখনো কোন উদ্যোগ নিয়েছে বলে মনে পড়ে না।

নজরুলের আলোচনা যদি আমরা দু-চারটি কবিতা আর গানের মাঝে সীমবদ্ধ করে রাখি তাহলে আমরা নিজেদেরকেই বঞ্চিত করব। নজরুল যা করেছেন, যা দিয়ে গেছেন তা আমাদের জন্যই দিয়ে গেছেন। জীবন যাপনে চিন্তা চেতনায় নজরুল আমাদের জন্য বিপুল সম্ভাবনা তৈরি করে গেছেন তা আমরা ভুলে যাই। বাতাসের মাঝে থেকে আমরা যেমন ভুলে যাই আমরা বাতাসে ঢুবে আছি। অনেকের কাছে কথাটি অতি কথন মনে হবে। কিন্তু বাস্তবতা হল নজরুল ছিলেন উপেক্ষিতের ভাষা, ব্রাত্যজনের কবি। শুধুমাত্র গুটিকয়েক ব্রাহ্মনের হাতে বন্দী ভাষা ও সাহিত্যকে নজরুল মুক্তি দিয়েছিলেন। সেই মুক্তির স্বাধ আমরা আজ সকলেই ভোগ করি।

১৯২৯ সালের ১০ ডিসেম্বর কলকাতার এলবার্ট হলে বাঙালিদের পক্ষ থেকে কাজী নজরুল ইসলামকে এক বর্ণাঢ্য সংবর্ধনা দেয়া হয়। তখনই জাতির পক্ষ থেকে কবিকে বাঙালির জাতীয় কবি হিসেব অভিহিত করা হয়। তাতে সভাপতিত্ব করেন আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়, অভিনন্দনপত্র পাঠ করেন ব্যারিস্টার এস ওয়াজেদ আলী, শুভেচ্ছা ভাষণ দেন নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু এবং রায়বাহাদুর জলধর সেন। কবিকে সোনার দোয়াত-কলম উপহার দেয়া হয়। এই সংবর্ধনা সভায় প্রফুল্লচন্দ্র রায় বরেছিলেন, ‘আমার বিশ্বাস, নজরুল ইসরামের কবিতা পাঠে আমাদের ভাবী বংশধররা এক একটি অতি মানুষে পরিণত হইবে।’ আমরা অতি মানুষ হতে চাইনা। তাই নজরুলকে উপেক্ষা করি।

আমাদের সময় এসেছে মেরুদন্ড সোজা করে মানুষ হবার।

আমরা যদি না জাগি মা
কেমনে সকাল হবে?

নজরুল পাঠ

বাতায়ন পাশে গুবাক তরুর সারি

বিদায়, হে মোর বাতায়ন-পাশে নিশীথ জাগার সাথী !
ওগো বন্ধুরা, পান্ডুর হ’য়ে এল বিদায়ের রাতি !
আজ হ’তে হ’ল বন্ধ আমার জানালার ঝিলিমিলি,
আজ হ’তে হ’ল বন্ধ মোদের আলাপন নিরিবিলি ——

অস্ত-আকাশ-অলিন্দে তার শীর্ণ-কপোল রাখি’
কাঁদিতেছে চাঁদ, “মুসাফির জাগো, নিশি আর নাই বাকী |
নিশীথিনী যার দূর বন-ছায় তন্দ্রায় ঢুলু ঢুল্ ,
ফিরে ফিরে চায়, দু’-হাতে জড়ায় আঁধারের এলোচুল !”

চমকিয়া জাগি, ললাটে আমার কাহার নিশাস লাগে ?
কে করে ব্যজন তপ্ত ললাটে, কে মোর শিয়রে জাগে ?
জেগে দেখি, মোর বাতায়ন-পাশে জাগিছে স্বপনচারী
নিশীথ রাতের বন্ধু আমার গুবাক-তরুর সারি !

তোমাদের আর আমার আঁখির পল্লব-কম্পনে
সারা রাত মোরা ক’য়েছি যে কথা, বন্ধু পড়িছে মনে !
জাগিয়া একাকী জ্বালা ক’রে আঁখি আসিত যখন জল,
তোমাদের পাতা মনে হ’তে যেন সুশীতল করতল !

আমার প্রিয়ার !—- তোমার শাখার পল্লব-মর্মর
মনে হ’ত যেন তারি কন্ঠের আবেদন সকাতর |
তোমার পাতায় দেখেছি তাহারি আঁখির কাজল-লেখা,
তোমার দেহেরই মতন দীঘল তাহার দেহের রেখা |

তব ঝির্-ঝির্ মির্-মির্ যেন তারি কুন্ঠিত বাণী,
তোমার শাখায় ঝুলানো তারির সাড়ির আঁচল খানি !
. ——-তোমার পাখার হাওয়া
তারি অঙ্গুলি-পরশের মত নিবিড় আদর ছাওয়া !

ভাবিতে ভাবিতে ঢুলিয়া প’ড়েছি ঘুমের শ্রান্ত কোলে,
ঘুমায়ে স্বপন দেখেছি,—-তোমারি সুনীল ঝালর দোলে
তেমনি আমার শিথানের পাশে | দেখেছি স্বপনে , তুমি
গোপনে আসিয়া গিয়াছ আমার তপ্ত ললাট চুমি’ !

হয়ত স্বপনে বাড়ায়েছি হাত লইতে পরশখানি,
বাতায়নে ঠেকি’ ফিরিয়া এসেছে লইয়াছি লাজে টানি’ |
বন্ধু, এখন রুদ্ধ করিতে হইবে সে বাতায়ন !
ডাকে পথ, হাঁকে যাত্রীরা, “কর বিদায়ের আয়োজন !”

. ——–আজি বিদায়ের আগে
আমারে জানাতে তোমারে জানিতে কত কি যে সাধ জাগে !
মর্মের বাণী শুনি তব, শুধু মুখের ভাষায় কেন
জানিতে চায় ও বুকের ভাষারে লোভাতুর মন হেন !
জানি—–মুখে মুখে হবে না মোদের কোনোদিন জানাজানি,
বুকে বুকে শুধু বাজাইবে বীণা বেদনার বীণাপানি !

হয়ত তোমারে দেখিয়াছি, তুমি যাহা নও তাই ক’রে,
ক্ষতি কি তোমার, যদি গো আমার তাতেই হৃদয় ভরে ?
সুন্দর যদি করে গো তোমারে আমার আঁখির জল,
হারা-মোমতাজে ল’য়ে কারো প্রেম রচে যদি তাজ-ম’ল,
. ———–বল তাহে কার ক্ষতি ?
তোমাকরে লইয়া সাজাব না ঘর , সৃজিব অমরাবতী !——–

হয়ত তোমার শাখায় কখনো বসেনি আসিয়া শাখী,
তোমার কুঞ্জে পত্রকুঞ্জে কোকিল ওঠেনি ডাকি’ |
শূন্যের পানে তুলিয়া ধরিয়া পল্লব-আবেদন
জেগেছে নিশীথে জাগে নি ক’ সাথে খুলি’ কেহ বাতায়ন |
. ——সব আগে আমি আসি’
তোমারে চাহিয়া জেগেছি নিশীথ, গিয়াছে গো ভালবাসি’ !
তোমার পাতায় লিখিলাম আমি প্রথম প্রণয়-লেখা
এইটুকু হোক্ সান্ত্বনা মোর, হোক্ বা না হোক্ দেখা |——-

তোমাদের পানে চাহিয়া বন্ধু, আর আমি জাগিব না,
কোলাহল করি’ সারা দিনমান কারো ধ্যান ভাঙিব না |
. ——- নিশ্চল নিশ্চুপ
আপনার মনে পুড়িব একাকী গন্ধবিধূর ধূপ !——

শুধাইতে নাই, তবুও শুধাই আজিকে যাবার আগে—–
ঐ পল্লব-জাফ্ রি খুলিয়া তুমিও কি অনুরাগে
দেখেছ আমারে —-দেখিয়াছি যবে আমি বাতায়ন খুলি’ ?
হাওয়ায় না মোর অনুরাগে তব পাতা উঠিয়াছে দুলি’ ?

তোমার পাতার হরিৎ আঁচলে চাঁদিনী ঘুমাবে যবে,
মূর্চ্ছিতা হবে সুখের আবেশ,—-সে আলোর উত্সবে,
মনে কি পড়িবে এই ক্ষণিকের অতিথির কথা আর ?
তোমার নিশাস শূন্য এ ঘরে করিবে কি হাহাকার ?
চাঁদের আলোক বিস্বাদ কি গো লাগিবে সেদিন চোখে ?
খড়খড়ি খুলি’ চেয়ে রবে দূর অস্ত অলখ-লোকে ?
. ——–অথবা এমনি করি’
দাঁড়ায়ে রহিবে আপন ধেয়ানে সারা দিনমান ভরি’ ?

মলিন মাটীর বন্ধনে বাঁধা হায় অসহায় তরু,
পদতলে ধূলি, ঊর্ধ্বে তোমার শূন্য গগন-মরু |
দিবসে পুড়িছ রৌদ্রের দাহে, নিশীথে ভিজিছ হিমে,
কাঁদিবারও নাই শকতি, মৃত্যু-আফিমে পড়িছ ঝিমে !
তোমার দুঃখ তোমারেই যদি, বন্ধু ব্যথা না হানে,
কি হবে রিক্ত চিত্ত ভরিয়া আমার ব্যথার দানে !

*** *** *** ***

ভুল ক’রে কভু আসিলে স্মরণে অমনি তা যেয়ো ভুলি’
যদি ভুল ক’রে কখনো এ মোর বাতায়ন যায় খুলি’,
বন্ধ করিয়া দিও পুনঃ তায় !— তোমার জাফ্ রি-ফাঁকে
খুঁজো না তাহারে গগন-আঁধারে—-মাটিতে পেলে না যাকে !