ইলহাম এর সকল পোস্ট

আলাপন – ৯

আলাপন – ৯

কঃ এটা কত সাল?
খঃ জানি না
কঃ আমিওতো জানি না
খঃ কেউ জানে না
কঃ তাহলে সবাই জানে টা কি?
খঃ সর্বশেষ সাংবিধানিক আইন সংশোধন এর পর থেকে সবাই সব কিছু বাদ দিয়ে তাদের সন্তান কি করে মানুষ হবে এটা নিয়েই ব্যাস্ত, কত সাল চলছে এটা নিয়ে কারও মাথা ঘামানোর সময় নেই
কঃ সর্বশেষ সংশোধনীতে কি বলা হয়েছে?
খঃ আপনি জানেন না?
কঃ না তো!
খঃ তাহলে শুনুন যা লেখা আছে আমি হুবহু বলছি, “আজ হতে ১৭ বছর ১১ মাস ২৯ দিন থেকে সব ধরণের শিশু ও কিশোর-কিশোরীর অপরাধের দায়ে দণ্ডিত হইবেন অপরাধীর পিতা-মাতা এবং শিক্ষক এবং অপরাধী তার কৃত অপরাধের দায়ে দণ্ডিত হবে না।”
কঃ তাই নাকি?
খঃ আরও আছে
কঃ কি?
খঃ “আজ হতে ১৮ বছর পর থেকে অনিদৃষ্ট সময়ের জন্য যে কোনও ব্যাক্তির অপরাধের দায়ে দণ্ডিত হবেন অপরাধীর পিতা-মাতা-শিক্ষক (জীবিত থাকলে) এবং দণ্ডিত হবেন ক্ষমতাসীন সরকার এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। উক্ত অপরাধীকে কেবল মাত্র নজর-বন্দী করে রাখা হবে। নজর-বন্দীর সময়-সীমা অপরাধের ধরণ অনুযায়ী নির্ধারণ করা হবে।”
কঃ বলেন কি? এটা কি করে করলো?
খঃ “গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সাংবিধানিক আইন এর ৭৯, ৮০ অনুচ্ছেদ এর ২য় পরিচ্ছেদ অনুযায়ী ইহা কার্যকরী করা হলো”
কঃ এটা কত তম সংশোধনী?
খঃ এটা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সাংবিধানিক আইনের ১০০০ তম সংশোধনী
কঃ আপনার কয়টা সন্তান?
খঃ ধুরু ভাই! সন্তান আইবো কোথ্যাইকা? এই আইনের পর আমি বিয়াই করি নাই, অনেকেই বিয়া না করার সিদ্ধান্ত নিসে
কঃ ভাই! অনেক দিন পর বিদেশ থেকে এলাম বিয়া করার জন্য, দশ বছরের প্রেম, এখন আর বিয়া করবো না, আবার টিকিট কেটে বিদেশ চলে যাবো
খঃ গেলে যান!
কঃ কিন্তু ভাই! মেয়েটাকে যে আমি অনেক ভালোবাসি! কি যে করি? মেয়েটাকে সাথে বিদেশ নিয়েই বিয়ে করবো
খঃ মনে হয় না লাভ হবে
কঃ কেন?
খঃ সব দেশ এখন বাংলাদেশ এর এই আইন সংযুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে
কঃ আশেপাশে ভাল হাসপাতাল আছে?
খঃ হ্যাঁ আছে, কি হইছে?
কঃ মাথা চক্কর দিতে শুরু করছে, চোখে ঝাপসা দেখতে পাচ্ছি, আমাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে চলেন ভাই! আর সিন্থিয়াকে একটু খবর দেন
খঃ সিন্থিয়া কে?
কঃ দশ বছর যে মেয়েটি আমার জন্য অপেক্ষায় আছে …

আলো নেভানো যায় না

আলো নেভানো যায় না

যদি কেউ একবার ভাবেন – তিনি কবি।
ঠিক ঐ মুহুর্তেই তিনি ঢুকে পড়েন এক সমীকরণে
কখনো বা সে সমীকরণ হয়ে উঠতে পারে এক জটিল সমীকরণ।

সেই সমীকরণের মান বের করতে গিয়ে কখনো তিনি ক্লান্ত হয়ে যেতে পারেন
হয়তো তিনি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন তিনি আর কবি হতে চান না
কিন্তু! তিনি পিছু ফিরতে গিয়ে দ্যাখেন – পিছু ফেরার পথ নেই।

একবার এই সমীকরণে ঢুকে গেলে পিছু ফেরার পথ যে আর থাকে না!
সেখানে থাকে কবিতার এক অদৃশ্য শক্তি
হ্যাঁ! কবিতার এক অদৃশ্য শক্তি তাঁকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে
সে শক্তি ভেংগে বেরিয়ে আসার সাধ্য কার?
সে শক্তি তাঁকে একদিন কবি বানিয়েই ছাড়ে।

কবিতার শক্তি?

অক্ষশক্তি! মিত্রশক্তি!! পরাশক্তি!!!
এবং সমস্ত শক্তির অপ-ব্যাবহার
কেবল কবিতার অদৃশ্য সেই শক্তি
তচনচ করে ভেঙ্গে করে চুরমার!

বাংলার এক মহাণ কবি একটি কবিতা আবৃত্তি করেছিলেন
উনিশ্য একাত্তর সালের সাতই মার্চে
সাত কোটি মানুষের হৃদয় স্পর্শ করেছিল সেই কবিতার শক্তি
মানুষের মননে জাগ্রত হয়েছিল এক দুর্বার অদম্য সাহসী শক্তি

কবিতার সেই অদৃশ্য শক্তি সঞ্চিত হয়ে
পরিনত হয়েছিল এক প্রলয়ংকারী মহাশক্তি
মাথা নত করতে বাধ্য হয়েছিল সেই বর্বর অপশক্তি
সেই মহাণ কবি’র আলোয় আমরা পেয়েছি আজ আলোকিত স্বাধীনতা।

আমরা জানি, সেই মহাণ কবি’র আলো নিভিয়ে দেয়া হয়েছিল
কিন্তু সেখানে যে দুটি জ্বলন্ত অঙ্গার ছিল তা তারা নাভাতে পারে নি।

তাই একজন কবি
হোক সে যতোই নগণ্য
তাঁকে অসম্মান করা ঠিক নয়
কারণ তাঁর সাথে থাকে কবিতার এক অদম্য অদৃশ্য মহাশক্তি।

যদি কখনো দ্যাখো আলোর চমক
কোনও এক নগণ্য কবি’র মাঝে
হয়তো সে আলো হতেও পারে সুর্যসম যা সে নিজে জ্বলে তুলতে পারছে না
তবে তোমার আলো থেকে একটু আলো দিয়ে তা জ্বেলে দিও।

একটি মোমবাতির আলো থেকে হাজার মোমবাতি জ্বলে উঠলে
সেই মোমবাতির আলো কি কমে যায়?
বরং হাজারো আলোর সমন্বয়ে তৈরী হয় এক তীব্র ঝকমকে আলোর ঝংকার!
যে আলোয় আলোকিত হয় সমাজের সকল অন্ধকার আর কালো অধ্যায়
ভেংগে পড়ে অন্যায় অবিচার আর জুলুমের সব অবকাঠামো গুলো।

সব কবিই এক একটি চোখ জুড়ানো এক অদ্ভুত প্রস্ফুটিত ফুল
ফুলের মাঝে থাকে মধু – থাকে বিষও
যে ভ্রমর মধু চিনতে ভুল করে
সে বিষ পান করে পরাস্থ হয় নিজের কাছে।

তাই কোনও কবিকে অসম্মান করা ঠিক নয়
তাঁর ভেতরের আলোটুকু জ্বলাতে না পারলেও
অন্তত তা নিভিয়ে দেয়া ঠিক নয়।

যদিওবা আলোটুকু নিভিয়ে দিতে চেষ্টা করা হয়
তবে জেনে রেখো – সেখানে দু চারটা জ্বলন্ত অঙ্গার থেকেই যায়
আস্তে আস্তে সব কয়লা আবার জ্বলন্ত অঙ্গার হয়ে একদিন ধপ করে আলো জ্বলে উঠবেই
আস্তে আস্তে একদিন হঠাত সেই আলোর এক মহা-বিস্ফোরণ ঘটবেই।

ভোরের স্নিগ্ধ আলো

ভোরের স্নিগ্ধ আলো

কে কবে পাগল বললো
চরিত্রহীন বা ফ্রট বললো
বিশ্বাস অবিশ্বাস বা সন্দেহ সংশয়ের কালি মারল
ধুত!

রাতে প্রাণভরে ঘুম দেই
পৃথিবীর রঙ সাদা হয়ে উঠলে
ভোরের স্নিগ্ধ নরম আলোতে দেখি নতুন স্বপ্ন!

গতোকাল কে কি বলেছিল
আরে ধুত! ভাগ তোরা!

ভোরের স্নিগ্ধ নরম আলোতে
যে নতুন স্বপ্ন দেখতে জানে
তাঁর কাছে এসব অবান্তর কালিমা’র কোনও মুল্য আছে কি?

আমার প্রথম উপন্যাস ‘আলাপন’ প্রকাশিত হচ্ছে

এ প্রজন্মের নতুন মুখ, কবি আশফাকুর তাসবীর’ এর প্রথম উপন্যাস ‘আলাপন‘ প্রকাশিত হচ্ছে নোলক প্রকাশন থেকে।

সবাইকে আন্তরিক অভিনন্দন নোলকের পক্ষ থেকে।

নন্দিনী খান
নোলক প্রকাশন

প্রচ্ছদশিল্পী
আর. করিম
__________

জীবন থেকে নেয়া : সে কেমন মানুষ !!

দেড় কেজি গরুর গোস আর দুটো পেপার কিনে বাড়ি ফিরছিল। বাসার গেটে আসতেই এক লোক আল্লাহ! বলে ডেকে উঠলো। লোকটি রিক্সা থেকে তাকিয়ে দেখলো এক অন্ধ মানুষ হেঁটে যাচ্ছে। লোকটি রিক্সায় থাকা গোস এবং পেপার ভুলে গিয়ে রিক্সাওয়ালাকে দ্রুত বিদায় করে সেই অন্ধ লোকের পিছু নিলো। দ্রুত হেঁটে গিয়ে অন্ধ লোকের হাতে কিছু টাকা দিয়ে বাসায় গিয়ে মনে পড়লো গোসের কথা। সে মনে মনে হাসতে লাগলো আর বললো, “এতো ছোট পরীক্ষা নিলে আমি সেই পরীক্ষা দিতে রাজি আছি কিন্তু কোনও বড় পরীক্ষা নিওনা।”

স্ত্রী জিজ্ঞেস করলো, গোস কোথায়?
যা সত্য সে তাই বললো।
স্ত্রী বললো, “তোমার মতো মানুষ আবার কবি হবে? এতো আত্মভোলা মানুষ আমি দেখিনি।”

সে আবার হাসি দিয়ে বললো, “কাল ২ কেজি এনে দিবো। রিক্সাওয়ালারাতো গরুর গোস খুব একটা খেতে পায় না।”

স্ত্রী রেগে গিয়ে বললো, “আজ সাড়ে সাতশ টাকা নষ্ট করেছ, কাল আবার ২ কেজি কিনে এক হাজার নষ্ট হবে।”

লোকটি কোনও কথা না বলে জুম্মার নামাজের জন্য নিচে নামলো। গেট থেকে বের হতেই রিক্সাওয়ালাটি ডাক দিয়ে বললো, “এক পেসেঞ্জার নিয়ে গেসিলাম, আমি আপনার গোস দেখিনি কিন্তু পেসেঞ্জার বললো, এই গোসের থলি সরাও না হলে আমি তোমার রিকশায় উঠবো না, তারপর আমি রিকশার সিটের ভেতর ওটা রেখে পেসেঞ্জার কে নামিয়ে দিয়ে আপনার বাসার সামনে বসে আছি।”

লোকটি আবার মনে মনে হাসলো আর রিক্সাওয়ালাকে এবার একশ টাকা দিলো।

মা তোমাকে আজও খুঁজি

মা তোমাকে আজও খুঁজি

তুমি কি হাস্যোজ্জ্বল পঁচিশোর্ধ কোনও মহিলা
যার এক বছরের একটি শিশু রয়েছে?
নাকি তুমি ত্রিশ বছরের কোনও এক রাহিলা
যাঁর কেজি টুতে পড়ুয়া একটি সন্তান রয়েছে?

তুমি কি পঞ্চাশোর্ধ কোনও
কাঁচাপাকা চুলের মোটা ফ্রেমের চশমা পরিহিতা?
নাকি তুমি ষাট-উর্ধ্ব কোনও
বৃদ্ধা যিনি নাতির দুষ্টুমির খেলায় পরাজিতা?

তুমি কি বলতে পারো, মা-সন্তানের সম্পর্ক কেমন হয়?
বন্ধুর মতো? বান্ধবীর মতো?
নাকি রাগী ভয়ঙ্করের মতো?
নাকি সে আজীবন নিঃস্বার্থ নিরন্তর ভালবেসেই যায়?

মা যখন সন্তানের ভালবাসায় অন্ধ
কেমন সে ভালবাসার মাত্রা ও ছন্দ?
কেমন সে মমতার গড়ন এবং ধরন?

মা’এর অকাল মৃত্যুতে পায় নি যে সন্তান এ নিখাঁদ ভালোবাসা
সে কি কখনো বুঝবে ভালোবাসা কাকে বলে?
তাকে ভালোবেসে যে মেয়েটি দীর্ঘদিন পথ চেয়ে আছে
সে কি মেয়েটিকে কাছে টেনে নেবে বুকে তুলে?

বন্ধুর বাড়িতে কিংবা কোনও গাড়ীতে
রিক্সায়, রাস্তায় কিংবা কোনও গলিতে
শপিং-মল, হোটেল বা কোনও অনুষ্ঠানে
ভিডিও, সিনেমা বা হারানো দিনের গানে
দুপুর, সন্ধ্যা অথবা প্রভাতে
লোকালয়, অফিস বা আদালতে
কোনও বয়ষ্ক মহিলাকে দেখলে
কেন আমার হৃদয় কেঁপে কেঁপে দোলে?

যদি চোখ পড়ে যায় চোখে
কেন ভেতরটা ওঠে আঁতকে?

তুমি কি বলতে পারো, মায়ের আদরে কী করে ঘুম আসে?
তুমি কি বলতে পারো, মায়ের জন্যে কি করে কান্না আসে?

তুমি কি বলবে আমায়, মায়ের আঁচল মানে কি?
তুমি কি বলবে আমায়, মা’ ডাকে কেমন শান্তি?
মা’ কাঁদলে আসে কি বুকে কোনও অশান্তি?
বুকে জড়িয়ে ধরলে বুক শীতল হয় নাকি?

ফিরে আসে মুহুর্ত’রা

ফিরে আসে মুহুর্ত’রা

মুহূর্ত’রা এখন তোমার
তৈরি থেকো যে কোনও সময়ে
আসবে ডাক ঝাঁপিয়ে পড়ার।

যুগে যুগে ঘুরে ঘুরে
সভ্যতার সীমানা পারিয়ে
অসভ্যদের হিংস্র থাবাগুলো যখন
মনুষ্যত্বের গলা চেপে ধরে
এ মুহূর্ত’রা তখন আসে ফিরে বারে বারে।

সতেরশো উনো নব্বইয়ের এর ১৭ জুনে
এ মুহূর্ত’রা নেমে এসেছিলো বুর্জোয়াদের বিরুদ্ধে
প্যারিসের টেনিস কোর্টে।

লাখ লাখ সাধারণ মানুষ সেদিন ঝাঁপিয়ে পড়ে
“স্বাধীনতা-সমতা-ভ্রাতৃত্ব অথবা মৃত্যু”
এই শপথ গ্রহণ করে
নিক্ষেপ করেছিলো বুর্জোয়াদের
উড়িয়ে নিয়ে সমুদ্র তটে।

আঠারো-শো ছিয়াশি সালের পহেলা মে’র দিনে
সকল শ্রমিকদের জীবিকার উৎসে আঘাত হেনে
চলছিল যখন এমনই এক জটিল ষড়যন্ত্র
শ্রমিক হবে “মেশিনের মতো উৎপাদন-যন্ত্র।”

ঠিক তখনই এই মুহূর্ত’রা নেমে এসেছিলো
শিকাগোর হে-মার্কেট স্কয়ারে,
হাজারো শ্রমিক সেদিন ঝাঁপিয়ে পড়ে
চক্রান্তকারীদের টুটি চেপে ধরে
ভেঙ্গে চুড়ে তচনছ করে দিয়েছিলো ষড়যন্ত্রের সমস্ত চাবি-কাঠি
ষড়যন্ত্রকারীরা হয়েছিল ধুলিস্ম্যাত!
মিশে হয়ে গিয়েছিল কালের গর্ভে বিলুপ্ত কাদা-মাটি।

উন্নিশ্য বাহান্ন সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি ঐ দিনে
মুখ থেকে মায়ের ভাষা কেড়ে নেওয়ার জন্যে
চলছিলো যখন ষড়যন্ত্র!
এ মুহূর্ত’রা ঠিক তখনই নেমে এসেছিল
বাংলা ভাষাকে করতে স্বতন্ত্র।

ঝাঁপিয়ে পড়েছিল সেদিন আম-জনতারা মা’এর ভাষাকে বাঁচাতে
ঝাঁপিয়ে পড়েছিল রফিক-বরকত-সালাম’রা মা’কে বুকে আগলে রাখতে!
স্তব্ধ করেছিল ষড়যন্ত্রের সবকটি যন্ত্র
ভেঙেছিল সেই যন্ত্রের সকল মূলমন্ত্র।

এ মুহূর্ত’রা ঘনীভূত হচ্ছে আবার!
তৈরি থেকো যে কোনও সময়ে
আসবে ডাক ঝাঁপিয়ে পড়ার।

উন্নিশ্য একাত্তর সালের পঁচিশে মার্চের রাত্রে
বাংলাদেশের অস্তিত্ব বিলীন করার
এক জঘন্য কালো ইতিহাস রচনার স্বার্থে
যখন বর্বর বাহিনীরা নেমেছিলো!

মিলিটারীর কালো বুট যখন গলা চেপে ধরে
বেয়োনেট দিয়ে অন্তঃসত্তা মা’এর পেট ফুঁড়ে দিয়েছিলো!
হিন্দু না মুসলিম দেখার জন্য যখন
আমার বাবা, চাচা, মামাদের উলঙ্গ করেছিলো!
আমার মা-বোন-দিদিদের ইজ্জৎ চিন্ন ভিন্ন করে
যখন একের পর এক ধর্ষনের উল্লাসে ফেঁটে পড়েছিলো!
আকাশে বাতাসে যখন মানুষের আর্তনাদ! হাহাকার!! চিৎকার!!!
গগন ভেদ করে পৃথিবী কেঁপে উঠেছিলো!
ঠিক তখনই এ মুহূর্ত’রা নেমে এসেছিলো বাংলার ঘরে ঘরে।

বাংলাদেশের মানচিত্র রক্ষার দৃঢ় সংকল্প নিয়ে
সকল বাঙালী একসাথে ঝাঁপিয়ে পড়ে
নারী-পুরুষ-যুবক-বৃদ্ধ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে
রুখে দিয়েছিলো সেই আগ্রাসীদের!
পরাস্থ করে দিয়েছিলো সেই হানাদার বর্বর বাহিনীদের।

উন্নিশ্য সাতাশি সালের ১০ই জুনে
যখন মাথাচাড়া দিয়েছিলো স্বৈরাচারের আস্ফালন
ঠিক তখনই নেমে এসেছিল এ মুহূর্ত’রা ঘটাতে তাদের পদস্খলন।

বুকে-পিঠে স্লোগান লিখে লিখে
খালি গায়ে খালি পায়ে!
ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো জনতা’রা
সূদীপ্ত সুদৃঢ় পায়ে পায়ে।

থামিয়ে দিয়েছিলো বুলেটের গতি
নিরস্ত্র হাতে প্রশস্ত বুক পেতে দিয়ে!
অশান্ত জনতার ঢেউ শান্ত হয়েছিলো
সমূলে স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়ে দিয়ে।

দুই হাজার বারো সালের তিরিশে জানুয়ারীর ঐ দিনে
মুদ্রা শোষকেরা যখন এ দেশের মধ্যবিত্ত মানুষদের
জীবনের সমস্ত জমানো সঞ্চয়টুকু শুষে নিচ্ছিলো!
ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো সেদিন গোপীবাগের লিয়াকত আলী।
স্তব্ধ করেছিলো মুদ্রা-শোষকদের জিহ্বা আর কন্ঠনালী।।

এ মুহুর্ত’রা নেমে আসে যুগে যুগে ফিরে ফিরে!
রক্তচোষা রাক্ষসেরা যখন
সমাজের রক্ত শুষে শুষে ভক্ষণ করে!
সত্য ন্যায়ের বলিষ্ঠ কণ্ঠ খাঁমছে ধরে!
রক্তের হলিখেলার আনন্দ উল্লাসে ফেটে করে!
তর্জন গর্জন হুঙ্কার করে!
ঠিক তখনই এ মুহূর্ত’রা নেমে আসে।

নেমে আসে তারা সভ্যতার সীমানা পেরিয়ে
নেমে এসে তারা অসভ্যতাকে দেয় হটিয়ে।

মুহূর্ত’রা এখন ঘনীভূত হচ্ছে আবার!
তৈরি থেকো যে কোনও সময়ে
আসবে ডাক ঝাঁপিয়ে পড়ার।

আকাশে বাতাসে এ মুহুর্ত’দের দেখা যাচ্ছে আবার!
তৈরী থেকো যে কোনও সময়ে আসবে ডাক
নিষ্পেষিত মানুষের কান্না থামাবার!!!

জানার আগ্রহ …

জানার আগ্রহঃ

যারা আল্লাহ বা স্রষ্টা বিশ্বাসী নন তাদের মাঝে যদি এমন কেউ থেকে থাকেন যার নিম্নলিখিত অভিজ্ঞতা আছে তাহলে তার কাছে একটি প্রশ্ন রাখা যেতে পারে। প্রশ্নটি নিম্ন লিখিত ঘটনা বর্ণনার পর করা হলো।

ঘটনাঃ
যাত্রীবাহী বিশাল জাহাজে যাচ্ছেন। প্রশান্ত থেকে আটলান্টিকে ঢুকছেন। যদিও পূর্বেই সতর্ক করা হয়েছিল ১০ নম্বর মহা-বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলে হয়েছে এবং সকল যাত্রীবাহী এবং পণ্যবাহী জাহাজ যেন সমুদ্র উপকূলে অবস্থান নেয়।

কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আপনার জাহাজের ক্যাপ্টেন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে উপকূলে জাহাজটি নিয়ে যেতে সক্ষম হন নি।

আপনি প্রশান্ত আর আটলান্টিকের মাঝামাঝি। তখন দুপুর ১২টা। মুহুর্তেই সুর্য উধাও! ঘন কালো অন্ধকারে আকাশ ছেয়ে দুপুর ১২টা হয়ে গেল রাত ১২টা! ঝড়ের গতি এই মুহুর্তে ২০০ মাইলের কাছাকাছি! সাগরের ঢেউ আপনার দশতলাসম উঁচু জাহাজের ছাদের উপর দিয়ে আছড়ে পড়ছে।

ক্যাপ্টেন সাহেব ঢেউয়ের অভিমূখে ঢেউয়ের বিরুদ্ধে জাহাজ চালাচ্ছে নিজে এবং সবাইকে বাঁচানোর জন্য। আপনার মনে হচ্ছে জাহাজটি মুহুর্তেই ১ মাইল সাগরের নিচে চলে যাচ্ছে আবার মুহুর্তেই ১ মাইল উপরে উঠে যাচ্ছে।

অবশেষে অনেক চেষ্টা করেও ক্যাপ্টেন সাহেব যখন বুঝলেন এ জাহাজ রক্ষা করা তার পক্ষে সম্ভব নয়।

ক্যাপ্টেন সাহেব তখন মাইকে আল্লাহর নাম নিয়ে যাত্রীদের উদ্দেশ্যে বললেন, “এই পরিস্থিতিতে আমার পক্ষে এই জাহাজ রক্ষা করা সম্ভব নয়, আমরা এই পৃথিবীতে আজীবনের জন্য আসি নি। দুই দিন আগে আর পরে আমরা সবাই এক দিন এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবো। তাই হয়তো আর দু চার মিনিটের মধ্যে আমাদের সবার মৃত্যু ঘটবে। সবাই তওবা পড়ে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হউন।
তবে এই পৃথিবীতে একজন সৃষ্টি-কর্তা আছেন। তিনি চাইলে আমাদের বাঁচাতে পারেন। তাই আপনারা নিজ নিজ ধর্মের ঈশ্বরের কাছে ক্ষমা প্রার্থনায় নিমগ্ন থাকুন।”

সাথে সাথেই মুসলিমরা আল্লাহ কে ডাকতে লাগলেন। হিন্দুরা শ্রীকৃষ্ণের মাধ্যমে বিষ্ণুদেবকে ডাকতে লাগলেন। খৃষ্টিয়ানরা ঈশ্বর এবং ঈশ্বর-পুত্র যীশুর স্মরণাপন্ন হলেন। ইহুদীরা টেন কমান্ডমেন্ট এর কিছু ভুল করেছে কিনা তার জন্য ক্ষমা চাইতে লাগলেন। বৌদ্ধরা চার সত্যের আলোকে কোনও ভুল করে থাকলে তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছেন।

আপনিও এখানে আছেন কিন্তু আপনি যেহেতু আল্লাহ বা ঈশ্বর বিশ্বাস করেন না তাহলে আপনার কাছে একটি প্রশ্ন রাখা যেতে পারে, এখন আপনি কি করবেন?

……/ধ্যান-আত্মা

একটি মহাকাব্য লিখবো বলে

একটি মহাকাব্য লিখবো বলে

বিমূর্ত এক ঘোর অন্ধকারে
হেঁটেছি আমি পঁয়ত্রিশ বছর ধরে
একটি হৃদয়ের আশ্রয় পাইনি বলে
যে হৃদয় এ হৃদয়ের কথা বলে

যে চোখ এ চোখে দৃষ্টি দিলে
বুঝে নেবে কি ব্যাথা এ অশ্রু জলে
এ জল কেন যে জ্বলে পুড়ে জ্বলে?
এ হৃদয় কেন যে অন্তর দহনে জ্বলে?

দেখেছিলাম তারে এক কবিতার আসরে
দিয়েছিল উকি অযুত প্রেম আধো-আলো আঁধারে
পেরিয়ে আসা তিন যুগ অন্ধকারে
অংশুক জাগে নিমগ্ন মধ্য রাত-দুপুরে

দেখেছিলাম সেই রাতে আমি তারে এ মন প্রাণ ভরে
চেয়েছিলাম আমি দু চোখে তাই তার বারে বারে
পঁয়ত্রিশ বছরেও আসেনি যে ভালোবাসা
তার সে চাহনিতে ছিল সেই মায়াবী আশা

তুলেছে সে এ হৃদয়ে এক অদ্ভুত ঝড়ো হাওয়া
যে ঝড়ে গেছে উড়ে সব অবহেলা আর না পাওয়া
পঁয়ত্রিশ বছরের প্রেমহীন ক্ষত জ্বালা যন্ত্রণা
গেছে উড়ে নিরবে নিভৃতের অশ্রু ব্যাথা বোবা-কান্না

জেনেছিল কি সে এ হৃদয়ের কথা?
বুঝেছিল কি সে চোখের ভাষা?

হয়তো তুলেছে ঝড় তার মনে অন্যজন আরেক জন
জানে কি সে তার তরে কাঁদে এ হৃদয় মন সারাক্ষণ?

চাই শুধু একটি বার মুখোমুখি বসবার সাথে তার
তিন যুগের কথা যে আছে জমে তার সাথে বলবার

বসবে কি সে একান্ত নিবিড়ে শুধু আমার পাশে!
নীল সমুদ্র যেখানে মিশে গেছে নীল আকাশে!

একটি বার শুধু মেশাবো আমার অশ্রু জল তার জলে
জলে জল মিলিয়ে জ্বলে পুড়ে জ্বলে জ্বলে
একটি অবিনশ্বর মহাকাব্য লিখবো বলে।।

দ্যা আর্থল্যান্ড

দ্যা আর্থল্যান্ড …

ঐ যে!
আমি শুনতে পাচ্ছি সেই শব্দ!

কান পেতে রেখো
যে রাতে চাঁদ নেই চারিদিকে শুধু নিস্তব্ধ
শুনতে পাবে তুমিও সেই শিহরণ জাগা শব্দ!

এটা বিগ-ব্যাং বিস্ফোরণের শব্দ নয়
কিংবা এটা কোনও এয়ার প্লেন দ্বারা
ওয়ার্ল্ড ট্রেড-সেন্টার ধ্বংসের শব্দও নয়!

এটা কোনও ধনীর দুলালের হ্যামার গাড়ী
স্টার্ট দেবার শব্দ নয়
কিংবা এটা কোনও ভিক্ষুকের থালায়
কয়েন পড়ার শব্দও নয়!

এটা ফ্যানের তীব্র বাতাসে পেপারের পাতা
এলোমেলো হওয়ার শব্দ নয়
কিংবা শার্ট ইন করার সময়
হঠাৎ কোনও বোতাম খুলে পড়ারও শব্দ নয়!

ঐ যে!
আমি শুনতে পাচ্ছি সেই শব্দ!

আমি শুনতে পাচ্ছি
পৃথিবীর মানচিত্র থেকে
সমস্ত সীমারেখা মুছে যাবার শব্দ!

অচেনা অদ্ভূত এক শব্দ
ছিন্ন ভিন্ন করে দিচ্ছে পৃথিবীর সব সীমা রেখার চিত্র
চিহ্ন রাখছে বিশ্বময় চিহ্নিত করে শুধু একটি দেশের মানচিত্র

শুনতে পাচ্ছি নির্মাণ হচ্ছে শত শত এয়ার-পোর্ট
আর সবাই ফেলে দিচ্ছে তাদের সব পাসপোর্ট

শুনতে পাচ্ছি!
ভেঙ্গে যাচ্ছে সব অন্যায় প্রতিবন্ধকতা
বাতিল হচ্ছে সব পেশী শক্তির পাশবিকতা

ভেঙ্গে যাচ্ছে সব ভিসা প্রসেস
শুরু হয়ে যাচ্ছে সব দেশে সবার প্রবেশ

শোনা যাচ্ছে!
পৃথিবী জুড়ে শুধু একটি দেশের ডিম্যান্ড
দেশটির নাম শোনা হচ্ছে “দ্যা আর্থল্যান্ড”

ঐ যে শোনা যাচ্ছে!
মানবতাবার পায়ের আওয়াজ
আসছে ওরা “দ্যা আর্থল্যান্ডে”
শোনা যাচ্ছে সেই কুচকাওয়াজ

ঐ যে!
শোনা যাচ্ছে!
সেই শব্দ ঐ দূর বাতাসে
শিক্ষা-চিকিৎসার খরচ নেই
এবং ঔষধের খরচও নেই
শুধু আছে মানবতন্ত্র সেই দেশে

মিশে গেছে সবাই এক নিবিড় ভালবাসার বন্ধনে
চুরি হয়ে যাওয়া বিশ্বাস গুলো ফিরে আসে সেখানে

ঘৃণা-অপমান-অবহেলা গুলো ফিরে আসে সম্মান-শ্রদ্ধা হয়ে অকপটে
ঝরে পড়া অশ্রু গুলো ফিরে আসে স্নেহ মমতায় মুখে মুখে হাসি ফোটাতে

এক সুতোয় হচ্ছে গাথা হৃদ্যতায় ভালোবাসায়
সকল মানুষের একই প্রাণ
আনন্দ-সুখ আর উল্লাসের ঐকতান
একসাথে গাইছে সবাই মানবতার জয়-গান

ঐ যে শোনা যাচ্ছে!
সেই শব্দ! সেই সাউন্ড!
পৃথিবী জুড়ে শুধু একটি দেশের ডিম্যান্ড
দেশটির নাম শোনা যাচ্ছে “দ্যা আর্থল্যান্ড”।

প্রতিটি সমস্যাই আবর্জনার মতো

প্রতিটি সমস্যাই আবর্জনার মতো

এক কৃষকের একটা গাধা ছিল। গাধাটা একদিন অগভীর কুয়ায় পড়লো। কিন্তু কুয়াটার গভীরতা গাধার উচ্চতা থেকে বেশি হওয়াতে অবলা প্রাণীটি উঠে আসতে পারছিল না।

গাধার ত্রাহি চিৎকারে কৃষক এবং আশপাশের মানুষ ছুটে আসল। কিন্তু ওরাও বুঝে উঠতে পারল না কী করবে। ঘণ্টাখানেক নানাভাবে চেষ্টা করার পরও যখন গাধাকে উপরে তুলে আনা গেল না, কৃষক তখন চিন্তা করল, কুয়াটা আগে থেকেই বিপজ্জনক। বেশ কয়েকটি বাচ্চা কুয়াতে পড়ে বারবার আহত হয়েছে। কুয়াটা এমনিতেই ভরাট করতে হবে, তার উপর গাধাটা অনেক বুড়ো এবং দুর্বল হয়ে গেছে। তাই কৃষক সিদ্ধান্ত নিল গাধাসহ কুয়াটি ভরাট করে ফেলবে।

কৃষক সবাইকে ডাক দিয়ে হেল্প করতে বলল। সবাই হাতে বেলচা এবং কোদাল নিয়ে পাশ থেকে মাটি কেটে কুয়াতে ফেলতে লাগল। কিছু মাটির দলা গিয়ে গাধাটির উপরেও পড়ল। ওদের মাটি ফেলা দেখে গাধাটি বুঝতে পারল কি ঘটতে চলেছে, প্রাণী টি ভয়ে-দুঃখে নিরবে কাঁদতে লাগল।

কিছুক্ষণ মাটি ফেলার পরে সবাই হঠাৎ চমকে গেল, কারণ গাধাটি অদ্ভুত একটা কাণ্ড করে বসেছে। সবাই যখন গাধার উপরে মাটি ফেলছে, গাধাটি তখন গা-ঝাড়া দিয়ে মাটি নিচে ফেলে দিচ্ছে এবং এক-পা, এক-পা করে ভরাট হওয়া জায়গাতে অবস্থান নিচ্ছে।

সবাই এবার দ্রুত গাধার উপরে মাটি ফেলতে শুরু করল, গাধাটিও তত দ্রুত মাটি গায়ের ওপর থেকে ঝেড়ে ফেলে ভরাট হওয়া জায়গাতে এসে দাঁড়ায়। এভাবে কিছুক্ষণ মাটি ফেলার পর সবাই অবাক হয়ে লক্ষ্য করল কুয়াটি প্রায় ভর্তি হয়ে গেছে, অবশেষে গাধা কুয়া থেকে বেরিয়ে আসলো।

…জীবনে চলার পথে এমন অসংখ্য কুয়াতে আপনি পড়বেন, যা থেকে উঠে আসার মতো সক্ষমতা হয়তো আপনার থাকবে না।

আশপাশের মানুষগুলো আপনাকে টেনে তোলার পরিবর্তে আপনাকে আরো ডুবিয়ে দিতে চাইবে। কিন্তু এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে আপনাকে ওই গাধাটির মতই গা-থেকে আবর্জনাগুলো একটু একটু করে ঝাড়া দিয়ে ফেলতে হবে যতক্ষণ না ওই আবর্জনাতে কুয়াটা পূর্ণ হয়ে যায়।

যখনই সমস্যা এসে আপনার শরীর এবং মনের উপরে চেপে বসবে, প্রতিবার একটু একটু করে ঝাড়া দিয়ে সরিয়ে দিবেন। তারপর মাথা উঁচু করে একটু আগে ঝেড়ে ফেলে দেওয়া সমস্যার উপরে গিয়ে দাঁড়াবেন।

প্রতিটি সমস্যা-ই আবর্জনার মতো। আপনি থেমে থাকলে আবর্জনার পাহাড় এসে আপনাকে জীবন্ত কবর দিয়ে দেবে। তাই কখনোই হাল ছাড়বেন না। থেমে থাকবেন না।

#সংগৃহিত।

ব্যাস্ততা এবং ল্যাপটপের ধীর গতি

আজ সকালে অনেক দূর গিয়েছিলাম ব্যাক্তিগত কাজে। ফিরেছি রাত ৯টায়।
তারপর একটি কবিতা আবৃত্তির ডিরেকশনের কাজ করলাম ভোর ৪ টা পর্যন্ত।
এদিকে ল্যাপটপে ইদানীং ঝামেলা হচ্ছে, ধীর গতিতে কাজ করছে তাই এতো সময় লাগলো।
অবশ্য ঈ স্ক্যান সরিয়ে ঈ সেট আন্টি ভাইরাস নিয়েছি।
কাল দুপুর ২টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত একটি সাহিত্য আসরে থাকবো।
দস্যু ভাইয়ের পদ্ম ফুলের পোষ্ট পর্যন্ত পড়া আছে বাকিগুলো আমার হিসেব করা আছে।
কাল রাতেই বাকি সব পোষ্ট পড়ে নেবো। একদিনে ১৫ টার বেশী পোষ্ট আসে না।
আজ এবং আগামীকাল শব্দনীড়ে থাকতে পারছি না বলে আন্তরিক ভাবে দুঃক্ষিত!

এখনও কারো পোষ্টে যান নি

আজ কবিতা বা গল্প নয় একটি ভিন্ন বিষয়ে আলোকপাত করতে চাই। আমাদের মাঝে ভুলবোঝা-বুঝি না হওয়ার প্রয়াসে এই লিখা। শব্দনীড়ে আমি নতুন তাই এখানকার প্রতিটি অপশন ক্লিক করে দেখতে গিয়ে একটি বিষয় চোখে পড়েছে তাই শেয়ার করছি।

শব্দনীড়ে কিছু কবি/লেখক আছেন যাঁদের ব্লগে গেলে “কোথায় ঘুরে এলেন” নামক স্থানে দ্যাখা যায় “এখনও কারও পোষ্টে যান নি“।
স্বাভাবিক ভাবেই বিভিন্ন প্রশ্ন জাগতে পারেঃ

১) কেনো অন্যের পোষ্ট পড়েন না?
২) অন্যের লেখাকে কি গুরুত্ব দেন না?
৩) তাহলে কি উনারা অহঙ্কারী?

অথবা আরও অন্য কিছু।

ব্যাপারটি আমার কাছে তেমন কিছুই মনে হয় নি বরং মনে হয়েছে ভিন্ন কিছু যা পজিটিভ বটে! আমি নতুন হিসেবে এটা আমার চোখে একটু ভিন্ন মনে হতে পারে কিন্তু পুরাতন হয়তো অনেকেই ব্যাপারটা জেনে থাকবেন আমি এখন যেটা বলবো।

তার আগে উপরোক্ত প্রশ্নের উত্তরগু্লো দেয়া যাকঃ
১) সবার পোষ্ট পড়েন
২) অবশ্যই যথাযথ গুরুত্ব দেন
৩) না। উনারা মোটেই অহংকারী নন

আমার কাছে মনে হয়েছে উনারা প্রত্যেকের লিখাই পড়ে থাকেন তবে লগ আউট করে অফ লাইনে পড়েন। যেহেতু অফ লাইনে পড়েন এবং তা আপনাকে বুঝতে দিতে চান না তাই লিখিত মন্তব্যও করতে পারেন না তবে উনারা লেখা পড়েই বুঝতে পারেন তাই মন্তব্য উনাদের মনের মাঝেই থেকে যায়। হয়তো এটা উনাদের একটা কৌশল (ধনাত্মক বটে) যা আপাতত আমার পক্ষে বোঝা সম্ভব হয় নি। আমার কাছে আরও মনে হয়েছে উনারা যথেষ্ট গুণী কবি ও লেখক।

আমি আগেই বলে নিয়েছি, উনারা যে অফ লাইনে পড়েন তা অনেকেই হয়তো জেনে থাকতে পারেন। কারও পোষ্টে যাক বা না যাক, মন্তব্য করুক বা না করুক। লেখক হিসেবে অন্য কোনও কবি/লেখক কে হালকা ভাবে নেয়ার অবকাশ থাকা কাম্য নয়!

শুভকামনা ও শুভেচ্ছা শব্দনীড়ের সবাইকে।

ফিরে আসে মুহূর্ত’রা

মুহূর্ত’রা এখন তোমার
তৈরি থেকো যে কোনও সময়ে
আসবে ডাক ঝাঁপিয়ে পড়ার

যুগে যুগে ঘুরে ঘুরে
সভ্যতার সীমানা পারিয়ে
অসভ্যদের হিংস্র থাবাগুলো যখন
মনুষ্যত্বের গলা চেপে ধরে
এ মুহূর্ত’রা তখন ফিরে আসে বারে বারে

মুহূর্ত’রা এখন তোমার
তৈরি থেকো
নিষ্পেষিত মানুষের কান্না থামাবার

সতেরশো উনো নব্বইয়ের এর ১৭ জুন
এ মুহূর্ত’রা বুর্জোয়াদের বিরুদ্ধে নেমে এসেছিলো
প্যারিসের টেনিস কোর্টে,
লাখ লাখ সাধারণ মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়েছি্লো
“স্বাধীনতা-সমতা-ভ্রাতৃত্ব অথবা মৃত্যু”
এই শপথ গ্রহণ করেছিলো
আর বুর্জোয়াদের উচ্ছেদ করে দিয়েছিলো

আঠারো-শো ছিয়াশি সালের ১লা মে
শ্রমিকদের যখন মেশিনের মতো উৎপাদন-যন্ত্র
বানানোর জন্য চলছি্লো ষড়যন্ত্র
এই মুহূর্ত’রা তখন নেমে এসেছিলো
শিকাগোর হে-মার্কেট স্কয়ারে,
হাজার হাজার শ্রমিক সেদিন ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো
আর ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়েছিলো সেই ষড়যন্ত্র

উনিশ্য বাহান্ন সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি
মায়ের ভাষা কেড়ে নেওয়ার জন্য
যখন ষড়যন্ত্র চলছিলো
এ মুহূর্ত’রা তখন নেমে এসেছিলো
রফিক- বরকত’রা সেদিন ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো
আর সমূলে নস্যাৎ করে দিয়েছিলো চক্রান্তকারীদের চক্রান্ত

এ মুহূর্ত’রা এখন তোমার
তৈরি থেকো যে কোনও সময়ে
আসবে ডাক ঝাঁপিয়ে পড়ার

উনিশ্য একাত্তর সালের ২৫শে মার্চ
বাংলাদেশের অস্তিত্ব বিলীন করার অপচেষ্টা চলছিলো
ঠিক তখনই এ মুহূর্ত’রা বাংলার ঘরে ঘরে নেমে এসেছিলো
সকল বাঙালী ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো
লাখ লাখ মানুষ শহীদ হয়েছিলো
আকাশে বাতাসে মানুষের আর্তনাদ গগন ভেদ করে ঝলসে উঠেছিলো
আর পরাস্থ করে দিয়েছিলো সেই বর্বর বাহিনীদের

উনিশ্য সাতাশি সালের ১০ই জুন
স্বৈরাচারের আস্ফালন যখন দিয়েছিলো মাথাচাড়া
আর তখনই নেমে এসেছিল এ মুহূর্ত’রা
খালি গায়ে বুকে-পিঠে স্লোগান লিখে
মুক্তিকামী জনতা ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো
আর স্বৈরাচারের নিপাত ঘটিয়ে ছেড়েছিলো

দুই হাজার বারো সালের ৩০ জানুয়ারি
মুদ্রা শোষকেরা যখন এ দেশের মধ্যবিত্ত মানুষের
জীবনের জমানো সবটুকু সঞ্চয় শুষে নিচ্ছিলো
গোপীবাগের লিয়াকত আলী সেদিন ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো
মুদ্রা শোষকদের পায়ঁতারা স্তব্ধ করে দিয়েছিলো

যুগে যুগে এ মুহূর্ত’রা আসে ফিরে ফিরে
রক্তচোষা রাক্ষসেরা যখন
সমাজের রক্ত শুষে শুষে ভক্ষণ করে!
সত্য ন্যায়ের বলিষ্ঠ কণ্ঠ খাঁমছে ধরে!
রক্তের হলিখেলা করে!
আর তর্জন গর্জন হুঙ্কার করে!
ঠিক তখনই এ মুহূর্ত’রা নেমে আসে
নেমে আসে তারা যুগে যুগে ফিরে ফিরে

মুহূর্ত’রা এখন তোমার
তৈরি থেকো যে কোনও সময়ে
আসবে ডাক ঝাঁপিয়ে পড়ার

সময়

যে সময় বয়ে যায় তা আসে কোথা হতে
কোথায় সে যায়
চলে গেছি বহুদুর আমি তা খুজতে খুজতে
সময় চলে যায়!

সময় হয়তো আছে পৃথিবীতে
যদি সে থাকে-থাকুক
আমাদের কি আসে যায়!

দেখেছিলাম সময়-তো বয়ে চলে যায় না!
দেখেছিলাম সে আছে স্থবির হয়ে
সেই কবে থেকে কেউ জানেনা

থাকনা সে স্থবির হয়ে
তার মাঝে। কেন আমরা তাকে
টেনে এনে ভাগ করলাম চব্বিশটা ভাগে?
অতঃপর একটা ঘড়ির ভেতর আটকে
কেন বন্দী করতে চাই তাকে?

পৃথিবীর আহ্নিক গতি দিন কে করে রাত
আর বার্ষিক গতি মাস কে করে বছর
তাতে সময়ের কি আসে যায়?

কেন আবার তাকে ষাট দিয়ে ভাগ
করে বানাই ঘন্টা,মিনিট বা সেকেন্ডের ঝাঁক?

সেকেন্ড মিনিট ঘন্টা চলে যাকনা!
মাস বছর যুগ চলে যেতে থাকনা!

ঘুরুক পৃথিবী নিজে কিংবা তার কক্ষপথে
ঘুরুক সুর্য নিজে কিংবা সবার সাথে
তাতে সময়ের কি আসে যায়
সময় কি তাতে বয়ে চলে যায়?

যেখানে সুর্য নেই -ঘড়ি নেই
চব্বিশ কিংবা ষাট ভাগ নেই
মহাশুন্য ছাড়িয়ে যেখানে আলো নেই
দিন-রাত মাস-বছর কিংবা কল্পনা-চেতনা নেই
সময় কি সেখানে নেই?

সময় বলে যদি কিছু থাকে-থাকুকনা ঠায় দাঁড়িয়ে
যার নিজের অস্তিত্ব নেই সে কি করে যাবে ফুড়িয়ে?

পরিবর্তন হয় সাগরের, পাহাড়ের আর সভ্যতার
ছন্দ আসে শহরের, জীবনের আর বিলাসিতার
জীবন আসে জীবন চলে যায়
তাতে সময়ের কি আসে যায়?

সময় যদি গিয়ে মিশে থাকে কালে
আর কাল যদি মিশে থাকে মহাকালে
তাহলে বিগব্যাং কিংবা মহাকালের আগে
সেই যে সময় শুরু হওয়ার আগে থেকে
যে সময়-শুন্যতা চলে এসেছিলো
সে সময়-শুন্যতা কত সময় ধরে ছি্লো?

সময় বলে যদি কিছু থাকে- থাকনা
কেন তাকে টেনে এনে বাধিয়েছি তালগোল
সময় যদি বয়েই যায়-যাকনা
কেন মানুষের আয়ুর হিসেব কষে করছি হট্টগোল?