কবি শঙ্খ ঘোষের কবিতার
সিওর শট ছিলেন মহর্ষি বানজারা
কিন্তু সেটা আলটপকা ফসকে যাওয়ায়
এখন তিনি “মহাপ্রভু” হয়ে পথে পথে চোখের জলে
“শঙ্খমালিকা শঙ্খমালিকা ” করে ডিগবাজি খেয়ে যান
পথের লোকেরা খেলা হচ্ছে ভেবে রাখা টুপিতে পয়সা ফেলেন |
ইন্দ্রাণী সরকার এর সকল পোস্ট
তোমার বসে থাকা
“তোমার বসে থাকা”
শুকনো পাতার মধ্যে তোমার বসে থাকা
টুপটাপ শব্দে খসে পড়ে এক একটা পাতা
তোমার চুলে লেগে থাকে উদাসীন মায়া
সৃষ্টি ভেসে যায় দিগন্ত ছাড়িয়ে সুদূর নীলিমায়।
গানের সুরে ভেসে যায় সারা চরাচর বিশ্বনিখিল
সেই সুরের আবছা আবেশে ভরে থাকে মন
একদিন তুমি পাখা মেলে উড়ে যাবে বহুদূর
শুধু রঙগুলো লেগে যাবে দু’ চোখের পাতায়।
ছলাকলা প্রেম
তুমি জেনে রেখো, সে তুমি যেই হও না কেন
যে আসল মানুষগুলি নিজের বেশে
কোনো স্বার্থ ছাড়া এখানে এসে দাঁড়ায়
আমি তাদেরই সবচেয়ে আপন বলে মানি |
তুমি হলেও তাই মানতে খালি স্বীকার যাও না
নিজে ছলনায় বাঁচো কোনো দায়িত্ব ছাড়া
কাকতাড়ুয়া হয়ে ভলোবাসাকে হেয় করে,
তাই অন্যদেরও একই চোখে দেখো |
এতই শক্ত ইগো ভাঙে তবু মচকায় না
বন্ধুকে নিজের বৃত্তের বাইরে রেখে ছলাকলা প্রেম ||
মনের কথা তোমাকে
তোমায় পেয়ে কাশের বনে লাগলো ঢেউ
তোমায় পেয়ে মনের কথা জানলো কেউ।
তোমায় পেয়ে রামধনু ওই আকাশ রাঙে
তোমায় পেয়ে জলপ্রপাত নদীতে ভাঙে।
হয়ত বা তুমি আমায় কবে ভুলেই যাবে
হয়ত বা মনে পড়বে না আর আমার কথা।
হয়ত বা তুমি অনেক দূরেই চলে যাবে
হয়ত বা তুমি ফিরবে না আর কভু হেথা।
কিন্তু আমি শুধু তোমায় ভালোবাসি
এই কথাটি বলতে আমি আবার চাই।
নিঃঝুম রাতে আপন মনে যখন হাঁটি
মনের মাঝে তোমায় তখন খুঁজে পাই।
সুন্দরের প্রকাশ
কোনো কোনো দিন সকালটাকে মনে হয় আশ্চর্য্য সুন্দর !
চারিদিকে অদ্ভুত প্রশান্তি আর স্বর্গীয় নীরবতা।
ঝিলে শ্বেতপদ্মের পাপড়ি ধীরে ধীরে হয় উন্মোচিত
ঘাসে ঘাসে শিশিরের মুক্ত এখনো কুয়াশায় ঘেরা,
জারুল ফুলের বেগুনি রঙে বাহারী পাঁচিল,
দুটো একটা শালিক আর চড়ুই খুঁটে খুঁটে খায়।
দুরের পাহাড় বিমূর্ত শিল্পের কারুকাজ নিয়ে
আপন মহিমায় ভোরের আলোকে জানায় সম্ভাষণ।
আজ এই বাসন্তিক মেঘের শুভ্রতায় শেষ হয়
গতকালের শীত – উপন্যাসের রাত্রি।
উড়াল
একদিন তোকে উড়াল দিয়ে নিয়ে যাব
পাতার ওপর দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময়
তোর পা কেটে রক্ত বেরিয়ে এল দু’ ফোঁটা,
আমার চোখেও জল এল তুই দেখিস নি ?
সেই কান্নার জলগুলো বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ে
অন্ধকারের প্রয়োজনে একটা পর্দা চাঁদকে
আড়াল করেছিল, জলের দাগ লেগে তাতে
অজস্র ছিদ্র তারার মত ফুটে ফুটে ওঠে।
রূপকথার ছড়া … ঠাকুরমার ঝুলি
স্বপ্ন-নীল ও স্বপ্ন-নীল
চোখের মাঝে অতল ঝিল,
ডুবকি দিয়ে ঝিলের মাঝে
রাজার কুমার মুক্ত খোঁজে।
চাঁদের আলো উছলে পড়ে
ঝিলের ‘পরে আলস ভরে,
রাজার কুমার হন্যে হয়ে
মুক্ত খোঁজে দুহাত দিয়ে।
হঠাৎ পেয়ে মুক্ত – ছোঁয়া
রাজকুমারের অবাক হওয়া,
অবাক চোখ তুললো যখন
সামনে দেখে দাঁড়িয়ে জীবন,
বাড়ায়ে হাত সে হাস্যমুখী
খুশির আলোয় ভাসছে আঁখি।
মুক্ত লুকোনো তারই চোখে
কুমার হল অবাক দেখে,
ভালোবাসার মুক্ত ভরা
সেই চোখে সে পড়ল ধরা।
মনের মিলন সুখ আলাপন
স্বপ্নে ভরে দোঁহার জীবন,
ঝুলির মুখ এবার বন্ধ হল
ঠাকুরমা তুমি ঘরে চল।
অপরাহ্ন বেলা থেকে রাত্রির আভাষিত আগমন
কোন কোন দিন পথ চলতে চলতে আকাশের দিকে তাকাই যখন দেখি অস্তগামী সুর্য্যের আলো ঝর্ণার মত ঝরে পড়ছে মেঘের ফাঁক দিয়ে। নীল আকাশের উপর সাদা মেঘেরা দাঁড়ি কেটে আকাশের বুকে তাদের ভালোবাসা এঁকে দিয়েছে। সুর্য্যের আলো কিছুটা ম্রিয়মাণ। গাছের উপর মেঘেদের সান্ধ্যকালীন ছায়া। দূরে নদীর জল একটু কালচে রঙের ঢেউয়ের দোলায় যেন শিউরে উঠছে। পাশেই বড় বড় গাছগুলো হাওয়ার দোলায় তাদের পাতাগুলিকে খুশিতে ছন্দিল ভঙ্গিমায় নড়েচড়ে বেড়ানোর অবাধ স্বাধীনতা দিয়েছে। অদ্ভুত এক ভালোলাগায় মন ভরে যায়। প্রকৃতির এই নানা সময়ে নানা রূপের পরিবেশে মন হয়ে যায় ধীর, স্থির, শান্ত ও সমাহিত।
রাতের রহস্যময়তা যেন পদ্মের পাপড়ি মেলার মত ধীরে ধীরে উন্মোচিত হয়। আকাশের গভীরে সূর্যাস্তের অন্তিম কমলা ভাঙা রঙ, নদীর জলে ঘনীভূত কালো ছায়ার সমাবেশ, রাতের আকাশে অল্প আলোয় পাখিদের শেষ উড়ে যাওয়া, পাহাড়ের কোলে অন্ধকারের প্রশান্তি, চন্দ্রমার ধীর গতিতে ক্রমশ: প্রকাশ আধারের বুক চিরে মেঘেদের পালক সরিয়ে আর সব শেষে অগুন্তি রূপালী তারকাদের আকশের জমিনে ফুটে ওঠা এই এক এক দৃশ্যের মহিমা মনকে মুগ্ধ, বিবশ ও ধ্যানস্থ করে দেয়।
কবিতা (২)
এক আশ্চর্য আলোকিত পথ
সামনে অপেক্ষারত,
আমি পা দুটো বাড়িয়ে দিই।
হেঁটে যাই একাকী আনমনে
এক গোলার্ধ থেকে অন্য
গোলার্ধে অমৃতের সন্ধানে।
বিগত কাল দিলনা কিছুই
শুধু একমুঠো অপমান
তুলে দিয়েছে হাতের পাতায়।
তারই মাঝে কিছু সুখ, প্রেম প্রীতি
আর কিছু মুহূর্ত প্রাপ্তিস্বরূপ
ফ্রেমে বাঁধা জীবনের সম্পদ।
সবই যেন অন্ত:সারশূন্য বিলাসিতা
তাৎক্ষণিক ভাবের প্রকাশ
মুহূর্তে মিলিয়ে যাওয়া আবেগ।
কবিতা (১)
না হয় আকাশে আজ পূর্ণিমা থাকবে
আরও শুধু একটু বেশিক্ষণ !
কখন আসবে তুমি চাঁদনী পসর রাতে,
হাতে নিয়ে আমার জীবন মরণ।
সন্ধ্যাতারায় জ্যোছনা মাখা ছিলো,
কিন্তু ওই মুখটা ত’ আর নেই।
পূর্নিমা চাঁদের সাথে বন্ধুত্ব ছিলো
মনের কথা থাকল মনেতেই।
কাল যখন না বলে বিদায় নিলে
দিলে না একটুও যে সাড়া।
চোখ আমার গাঢ় হয়ে নেমেছিল
ভোরের গভীর ঘন কুয়াশারা।
অনেক কথাই জমিয়ে রাখা আছে
তোমাকে যা বলতে আমি চাই।
সামনে এলে শুধু অবাক চেয়ে থাকি
বলা হয়না আর যে কোন কিছুই।
তবে কী সব আমার মনের ভুল ?
তুমি নামক কেউই ছিল না ?
পারিজাতের পাপড়ি খসে পড়ে
গোলাপের গায়ে বিন্দু অশ্রুকণা।
আমি ও সখা
কোন এক সোনালী দুপুরে আমি শ্বেতপদ্ম
তোমায় ডেকে নিয়েছিলাম পদ্মপাতা হয়ে
আমায় ভাসিয়ে রাখতে, এই ডুবন্ত আমিকে।
তুমি হাজার পাতা হয়ে আমায় ভাসিয়ে দিলে
কবিতার ঝিলে কি পরম আদরে ভালোবেসে।
কোনো এক মেঘলা সকালে আমি আহত পাখি
তোমায় ডেকে নিয়েছিলাম আমায় উড়িয়ে দিতে।
তুমি গাছের ছায়া হয়ে আমায় ঢেকে দিয়েছিলে,
তুমি পাতা হয়ে ঔষধি নির্যাস সিঞ্চন করেছিলে
আমার ক্ষতকে শুশ্রূষায় নিরাময় করে আবার
ঐ নীল আকাশে মুক্ত বিহঙ্গ হয়ে ফিরিয়ে দিতে।
তাই আমি পদ্ম হয়ে ভাসি তোমার কবিতার ঝিলে,
তাই আমি পাখি হয়ে উড়ি তোমার মনের আকাশে
ওগো সখা, আমার চিরসখা ভালোবাসা কাকে বলে
শুধু নীরবে মনের গহীনে আমায় রেখে শিখিয়েছ
দিনদিন প্রতিদিন চিরদিন বিনা স্বার্থে ভালোবেসে।
শিলালিপি
ভালো আছি কথাটা বলা যত সোজা
আসলে থাকাটা ততই দুরূহ ;
আলোকবর্ষ মাড়িয়ে মৃত্যু উপত্যকা
ক্রমশ: ঘনীভূত হয়ে আসে।
অস্তিত্বহীনতার অস্তিত্বে রচিত হয়
কুয়াশাঘন মিথ্যের বেড়াজাল ;
অবিন্যস্ত কিছু খোলা পাতায়
তাও মুদ্রিত থাকে প্রাচীন শিলালিপি।
পর্যবেক্ষণ ২
আহা তাহার উদ্ভাবনী শক্তি
পাশে তাহার বামা আদি মূর্তি
কেউ বা কোলে কেউ বা পাশে
কেউ বা মাথায় চড়ে
বন্ধ দ্বারে উঁকি মেরে হাতের লকীর পড়ে
নজর কড়া এই দিকেতেই
বৌয়ের তাতে বিকার নেই
চড়লে শুধু বিকট টান
ময়ূরী বৌয়ের তটস্থ জান।
গবলিনী কবিতা
জোছনার মুখ গবলিনের মত বেঁকে থাকে
হাত নিশপিসে চুরিবিদ্যায়
অন্যের কলম চালিয়ে কবিতার নৈবেদ্য সাজায়
রোদ্দুরে আচার দেবে বলে
কপালটা ফুলতে ফুলতে ক্রমশ:
গাছে গিয়ে আটকে যায়
পাঁজর বেঁকিয়ে পায়ের নূপুর বাঁধতে গিয়ে দেখে
খরগোশে চুরি করে নিয়ে গেছে ।
ফর্ম্যালিনে কলম ভিজিয়ে ন্যাকড়ায় মোছে
ফের কবিতা চুরি করে মুন্ডছেদের জন্য
পাবলো নেরুদার কবিতা অনুবাদ: দূরে যেও না
দূরে যেও না, এমন কি এক দিনের জন্যও নয়
কারণ আমি জানি না কি করে বোঝাই যে
একটা দিনও আমার কাছে অনেক লম্বা মনে হয়,
আর মনে হয় আমি যেন জনশূন্য স্টেশনে তোমার জন্য
একা অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে, সব ট্রেন অন্যত্র ঘুমিয়ে আছে।
আমায় ছেড়ে যেও না, এমন কি এক ঘন্টার জন্যেও…
কারণ একটু কষ্টও যে অসম্ভব যন্ত্রণা দেয়,
দাবানলের আগুন যেন ক্রমশঃ আমার দিকে ধেয়ে আসে
আমার লুপ্ত হৃদয়কে অবরুদ্ধ করতে |
তোমার ছায়া ঐ সমুদ্রতীরে যেন কখনো মিলিয়ে না যায়;
তোমার চোখের পলক যেন না কাঁপে ঐ সুদূর শূন্যতায়।
আমায় ছেড়ে যেও না এক মুহুর্তের জন্যও প্রিয়তম আমার,
কারণ ঐ এক মুহূর্তেই তুমি অনেক দূর চলে যাবে আর
আমি হতভম্বের মত সারা পৃথিবী ঘুরে বেড়াব আর
জিজ্ঞাসা করে বেড়াব তুমি কখন ফিরে আসবে ?
তুমি কি এভাবে আমায় ফেলে যাবে শেষ হয়ে যাবার জন্য ?
A translation from Pablo Neruda’s “Do not go far off.”