জসীম উদ্দীন মুহম্মদ এর সকল পোস্ট

কুরবানি

বনের পশু কুরবানি দাও
মনের পশু ফাঁকি
সেই পশুটার কুরবানি চাই
মানবো না আর বাকি!

অনেক দামি গাড়ি চড়
বাড়ি শতো শতো
পশুর মতো হাম্বা হাম্বা
করবে আর কতো!

নিজেই কেবল মানুষ বড়
অন্যেরা সব ছাগল
নিজের কথাই আসল কথা
বাকিরা সব পাগল!

জনম ভরে যতো মানুষে
করেছো তুমি হয়রানি
আজ হয়ে যাক সেই পশুটার
কুরবানি ভাই কুরবানি!!

পারলাম কই…?

আজ সারাদিনই দৌড়ের জল দেখেছি
যে জল তাপস-তাপসীর ঘুম ভাঙাতে পারলেও
আমাদের ভাঙায়নি; ভাঙাতে পারেনি!
এখন জলে আছি নাকি ডাঙায় আছি সে বোধও নেই
আমরা আগেও মনে-মননে-মগজে যেমন ছিলাম
এখনও আছি ঠিক ঠিক সেই…!!

অনেকদিন আগেই এসব নপুংসক কবিতার নিকুচি
করতে চেয়েছি, মূণ্ডুপাত করতে চেয়েছি…
কিন্তু পারলাম কই…?
যে প্রজন্মের হাতে কেবলই বই থাকার কথা বই
সেই প্রজন্মও এখন কেবলই আধুনিক জলের মতো
ডিজিটালের সই!!
যে কথাটি কবিতায় বারংবার বলতে চেয়েছি
সে কথাটি বলতে পারলাম কই..বলতে পারলাম কই.?

অফনেটে কতোকিছু ভাবি….
এই বুঝি জলের দুয়ারে দুয়ারে মানবতা এলো
ছেলেটি মোবাইল ছুঁড়ে ফেলে বই হাতে নিলো!!

আজকাল জল লুকানোর যেমন কোনো জায়গা নেই
আমার চারাগাছ বেদনাও ঠিক সেই; কতো ভাবি
রাত পোহালেই দিন আসবে…
ঘুটঘুটে অন্ধকারগুলো তখন পালিয়ে বাঁচতে চাইবে;
অথচ সবকিছুই মিছে হল
সত্যি কেবল নদী ভাঙন, জলের ভেতর জল
আমার বুকের গভীরে লুকানো গলিত দুঃখের অনল!!

পালানোর কোনো পথ নাই

ভালোবাসার নামে আজকাল কোনোকিছু আর নাজায়েজ নেই
এই যেমন তেমন কবিতা, গল্প, নাটক কিংবা নাটিকা
বিশ্বাস পাস্তুরিত হওয়ার আগেই মাটি পুড়ে যায়
পুড়ে যায় আকাশগঙ্গা…….
নক্ষত্ররাত চন্দ্রবিন্দুর মতো পাহাড়িকায় এসে কেঁদে
কুটে আগুন হয়
এরপর আর পালানোর কোনো পথ খুঁজে পায় না!

পৃথিবীর সমস্ত দেনা নিমিষেই মাটি হয় অংকুরোদগম
আহাজারিগুলো জমাট বাঁধে নিরেট চক্রবৃদ্ধিহার
পরিশেষে কিছু দহনবায়ু পরিযায়ী হয় বন্ধ্যা সড়ক
লাওয়ারিশ কিছু কুকুরছানা ঘেউ ঘেউ করে নাজাতের
আশায়
তবুও কিছু সমৃদ্ধ আতশবাজি কেবল সম্মুখ সমুদ্রের ফেনা বাড়ায়…..!!

সারবাঁধা শামুক সারঙ, ওরাও ওরাংওটাং হতে চায়
এই শতাব্দীর কাছ ঘেঁষে মুখস্ত পড়ে থাকে কাঁঁচবালি
হৃদয়, ভালোবাসারা ছাইপাঁশের মতোন বাতাসি হয়
কেউ কেউ নাগাল পায়
আর কেউ কেউ পায় না!

গম্ভীরাটা অনেককাল গম্ভীর হয়ে আছে মাকুর প্রদেশ
সুর ছাপিয়ে ছাপিয়ে এখন সুরা-ই সুরাটের সম্রাট
সবাই ছেঁড়া দ্বীপে নঞর্থক ভালোবাসার খুঁজে আসে
খুঁজলি-প্যাচরা ওরা যেভাবে পড়ে থাকে সেভাবেই
পড়ে আছে এই করোনার কাল…
উঠতির জলের ব্যাঙের মতোন ওরাও এখন লাফায় নারীর মুখের ঝাল!

এতোকিছুর পরেও জীবন থেকে যারা পালিয়ে বাঁচতে চান, কাপুরুষ তো সেই; আরে সাহেব.. মোদ্দাকথা
পালাবেন কোথায়.. নদীঘাট, লঞ্চঘাট রেলস্টেশন, বাস স্টেশন..? ঠাঁই নাই.. ঠাঁই নাই…
কোথাও পালানোর কোনো পথ নাই.. কোনোপথ নাই !!

মিছে জলের চাষ

জীবন এখন যাত্রীবিহীন ট্রেন, কেবলই অঙ্গভঙ্গি
স্বরসঙ্গতি, স্বরলোপ কিংবা অপিনিহিতি
তবুও কিছুতেই থেমে নেই ছেঁড়া আর জোড়া;
তবুও যেজন.. কিছুতেই থামে না যোজন যোজন
তাকেই আমরা বলি প্রিয়তমা জীবনচোরা..!!

আমি ভাবি আশেক আর মাশুক মধ্যরাতের চাঁদ;
প্রেমপত্র লিখতে লিখতে যে চিনেছে আদমসুরত
সুরতহাল রিপোর্ট ছাড়াই ইশতেহার ঘোষণা করা যায়
যত পারিস কাঁদ.. ওরে যত পারিস কাঁদ!!

যতোই যাচ্ছে কাল, কেবলই বাড়ছে ভেজাল…
কেবলই বাড়ছে আকাল…
বলতে পারো ষষ্ঠইন্দ্রিয়, এরপর আর কি হবে..?
তবে কি একদিন দূর্বাঘাসকে বলতে হবে বাঁশ
সমস্ত জোগাড়যন্ত্র কেবলই করবে মিছে জলের চাষ?

নির্লজ্জ

জলও এখন নির্লজ্জ….
মানুষ বোঝে না, মানুষের ঘরবাড়ি চিনে না
এমনকি রান্নার উনুন, শোবার খাট তাও না!

তবুও আশার প্রদীপ আছে…
বানভাসিদের চোখের জল আর বুকের বল,
ওরা মরলেও কোনোদিন হারবে না
ওরা যেন হারতে জানেই না!

কিছুটা রক্ষা করেছে পয়মন্ত করোনা…!
এখন আর সাক্ষাৎ যমদূত জলের কথা
কেউ ভাবে না; সবাই সবার মতো আছে,
ইয়া নাফসি.. ইয়া নাফসি জপতে জপতে
যতোদিন বাঁচে…!!

মশা

কেউ জানে না..
জাগ দেওয়া রাত কোনদিন ভোর হবে
বাজারে এখনও ঠাসাঠাসি.. জীবন্ত আর মৃত!

আজকাল দৈনিক কাগজ আর পড়ি না
শুনেছি ওদেরও নাকি পড়িমরি হাল
আর কিছু হোক কিংবা না হোক… কেউ কেউ
প্রচ্ছদ বন্দি করে রাখছে এই করোনার কাল!

ভাবসাব মোটেই সুবিধাজনক নয়
গতি কিংবা অধোঃগতি
সন্ধি অথবা দুরভিসন্ধি
চালিয়ে যাও অথবা চালিয়ে নাও অভিসন্ধি
যতদিন পাখিটা খাঁচায় আছে বন্দী!

অনেকেরই খাওয়া নেই, দাওয়া নেই বেহাল দশা
তবুও…
আপাদমস্তক রক্ত চুষে খাচ্ছে কিছু সুন্দরী মশা!!

দাঁড়কাক

ক’দিন ধরেই ভাবছি…
কেনো আর কবিতা, কেনো শব্দের ট্যারাচোখ?
যেখানে দাঁড়কাক চেটেপুটে খাচ্ছে মোহনভোগ!

তবুও তথাকথিত কিছু ইতর-ভদ্র আঁকছে
একের পর এক সম্পাদ্য, ওদের কাছে ভব্য, অভব্য
বলে কিছু নেই; নগদান বহিই আসল প্রতিপাদ্য!

তবুও ওরা শক্তি আর সাহসে পরাক্রমশালী
তা সত্ত্বেও ওরা আসলে নিতান্তই নিয়ত কাঁঁচবালি,
আজকে যে বিশাল মহীরুহ, বিত্তশালী তালগাছ
আগামীকাল…
সেও হতে পারে কারো শালা আর কারো শালি!!

এ কেমন জীবন…?

কুসুম .. এখন আর জানতে ইচ্ছে করে না তুমি কেমন আছো? অন্য সবকিছুর মতোন হয়ত ভালো থাকার সংজ্ঞারাও এখন জীবন থেকে পালিয়ে বাঁচতে চায়; পালিয়ে বাঁচতে চায় কিতাবী কথা, বিষবৃক্ষের ভেতরে লুকিয়ে থাকা সকল ব্যথা! তবুও এই রোদ এই বৃষ্টির ভেতর লুকোনো কষ্টদের প্রবৃদ্ধি একেবারেই আলাদা, আলাদা!

জানো কুসুম… দিনদুপুরে কষ্ট লুকানো কতোটা কঠিন?
বাতাসের বেড়া ভেঙে ভেঙে প্রতিদিন কতো পাখি উড়ে
আকাশের শামিয়ানা ছিঁড়ে ছিঁড়ে কতো না বৃষ্টি ঝরে
তবুও এখন কষ্ট লুকানো যেনো আমার প্রতিদিনের রুটিন!

জানো কুসুম….
কিছু কষ্ট কে তুলোর পেঁজার মতোন উড়িয়ে উড়িয়ে নিতে চাই বহুদুর
নিয়ে যেতে চাই রুপকথার মতো তেরনদী, সাতসমুদ্দুর
কিন্তু কষ্টেরা কিছুতেই কোনোকিছু আমলে নেয় না… নিতে চায় না; সমুদ্রের ফেনার মতোন ওরাও যেনো বারবার ফিরে ফিরে আসা সিঁধেল চোর
ঠিক ঠিক এসে হাজির হয় অদ্ভুত ডানকানা ভোর!

আরও কিছু স্টক কষ্ট আছে আসমানের… নীল
ওরাও কি কোনো একদিন হতে পারে না গাঙচিল?
তবুও নি:শব্দে হৃদয়ের কপাট রেখেছি কতোদিন খুলে
বলতে পারো কুসুম…
তবুও আজব কষ্টেরা কেনো আমাকে যায় না ভুলে..?

আচ্ছা কুসুম…
তোমার কি মনে আছে ডাকসই, ডাংগুলি, বউচি খেলার দিন?
জানো.. এখনো ওরা হররোজ তাড়া করে আমায়….
ওরা কেবলই বাড়িয়ে নিতে চায় সেইসব সূর্যমনের ঋণ?

তবুও বলা চলে আমি বেশ আছি.. নিয়ত লাঞ্চনা আর
গঞ্জনা, আজ একটি বদনা কিনতে ভুলে গিয়েছিলাম বলে সেকি উত্তাপ…!
উত্তাল সাগরের তুমুল গর্জন আর সেকি বেরহম ঢেউ
আমি তো বাক, অবাক, হতবাক হয়ে দেখি আমার সংগে নাই আর কেউ;
আমি জানি, আমার টুনটুনি মনে নেই কোনো পাপ
বলতে পারো কুসুম….
তবুও কোনো বারবার ফিরে আসে পরিতাপ, সন্তাপ, মনস্তাপ?

জানো, আমার কেবলই মনে হয়.. এ কেমন জীবন?
এ কেমন সুখের উল্লম্ফন…? তবুও…..
আমি চাই আমার কষ্টেরা খুউব খুউব সুখে থাকুক
মৌসুমী বায়ুর মতো হাতড়াতে হাতড়াতে হলেও সুখে বাঁচুক…
আমি না হয় তোমার স্মৃতির পাঁজরে বুঁদ হয়ে থাকবো
আমি না হয় তৃষ্ণার্ত চাতকের মতো প্রতিনিয়ত কষ্টের নীলছবি আঁকবো!!

বিষণ্নতার খেরোখাতা

বিষণ্নতার পাতা উল্টাতেই দেখি…
ওখানে কিছু নেংটি ইঁদুর, তেলাপোকা, টিকটিকির বাস
তবে কি আমি
এভাবেই ওদের চাষ করে এসেছি বারোমাস?
পানিবন্দি ঘরে থাকতে থাকতে ওদেরও এখন নাভিশ্বাস
কেউ কেউ মুখ থুবড়ে পড়ে আছে, আর কেউ কেউ
মৃগী রোগীর মতোন করছে হাঁসফাঁস!
আমিও কম না রাজহাঁস না হলেও পাতিহাঁস
কালের কলমে লিখে রাখছি বিষণ্নতার ইতিহাস!

অতঃপর আরও কিছু পাতা উল্টাতেই দেখি…
বুভুক্ষু কিছু কুনোব্যাঙ, মশা আর মাছি
বিষণ্নতার খেরোখাতাটার এখানে-সেখানে চলছে ওদের
দিগম্বর নাচানাচি; আমি হাসবো না কাঁদবো ভাবতে ভাবতেই বুলেটের মতো নাক ছিঁড়ে বেরিয়ে এলো…
একজোড়া হাঁচি!!
ভাবলাম এই লড়াইয়ে আপাতত আমি জিতে গেছি
ভাঙাশামুক অথবা মৃতপ্রায় ঝিনুক;
কে জানতো.. একটু পরেই আসল শিকারী বের আসবে
হাতে উদ্যত তীর ধনুক!!

অতঃপর আমি আরও কিছু পাতা উল্টাতেই দেখি…
রথি.. মহারতি; তার একহাতে দুরন্ত, দুর্বার চাবুক
আরেক হাতে আশা…
আমি কাঁপতে কাঁপতে জিজ্ঞেস করলাম, কে তুমি?
দরাজ কন্ঠে সে বললো, আমি আর কেউ নই…
আমি তোমার….
আমি তোমার….
কবিতার খাতার মতোন ছুঁড়ে ফেলা অপাংক্তেয় ভালোবাসা!!

প্রতিপাদ্য

আজ কোনো কবিতা নেই, নিয়ত আর নিয়তির
মধ্যবর্তী কিছু অনুসংগ আছে!
মুখের লাগাম ছিঁড়ে বলতে পারি না বোধ আর শোধ
তবুও কিছু ছন্নছাড়া ছিন্নপাতা দিতে চায় প্রবোধ!

ইদানিং হটলাইনে কতোকিছু ঘটে পোয়া অথবা
পোয়াতি, কতোদিন ভেবেছি…. আর নয় লাবণ্য
কবিতা লেখার এখানেই ইতি!
পারলাম কই..?
ওগো প্রাণের সই..!

রতি অথবা দুগ্ধবতী আনমনে নিকাশ ঘরে যায়
কেবল জনা কয়েক পাঠক আছেন, যারা পড়ে শোনায়
কবিতার রায়!
তবুও আমি পিথাগোরাসের দুর্লভ উপপাদ্য
প্রতিপাদ স্থান… যতই হোক মুশকিল আসান
শব্দের তরীতেই খুঁজে চলেছি কিছু বিপন্ন প্রতিপাদ্য!
——————————————-

পানকৌড়ি ডুব

অনেকদিন বালিহাঁস দেখি না
দেখি না পানকৌড়ি ডুব
জল ছাড়াই ডুবে ডুবে জল খেতে
কেবল মানুষ পারে খুব!

নিজেকে আমি মানুষ বলি না
বলি বড়জোর চার আনা
চোখ দিয়েছিলেন বিধাতা বটে
তবুও আমি হলাম কানা!

সবকিছু দেখি তবু কিছু দেখি না
আমি এক মস্তবড় গাধা
প্রেমে পড়তে পড়তে ঠকে বুঝেছি
ঠিক বলেছিলেন দাদা…!!

আমার লেখা উপন্যাস “ভণ্ড”

♦ জলছ‌বি প্রকাশ‌নের ৭০০ নম্বর স্টলে পাওয়া যা‌চ্ছে আমার লেখা উপন্যাস ভণ্ড। সুপ্রিয় সহকর্মী, আপনি যে শ্রেণির পাঠকই হউন না কেন আশাকরি ভণ্ড আপনাকে ছুঁয়ে দিবেই।

ফ্ল্যাপঃ
———
#জসীম_উদ্দীন_মুহম্মদ বিশিষ্ট কবি ও কথাসাহিত্যিক জসীম উদ্দীন মুহম্মদ সম্পর্কে নতুন করে বলার কিছুই নেই। বোদ্ধা কবি হিসাবে তিনি সমধিক পরিচিত হলেও তিনি একজন অত্যন্ত বড় মাপের লেখক। যাঁর লেখা কবিতা,গল্প ও প্রবন্ধ নিয়মিত জাতীয় পত্র-পত্রিকাতে প্রকাশিত হয়।

“ভণ্ড” উপন্যাসের নায়ক অচল একজন রহস্য যুবক। বিশেষ পরিস্থিতিতে মুখে যা বলেন বাস্তবেও তাই হয়ে যায়! বইটি পড়তে পড়তে আমি যেন ভিন্ন এক জগতে প্রবেশ করেছিলাম। বলা চলে ভণ্ডতে বুঁদ হয়েছিলাম। উপন্যাসের নায়ক মহামতি অচল নিজেকে দাবি করেন ২৫% মানুষ আর অবশিষ্ট ৭৫% পশু। তিনি মানুষ হতে চান। ১০০% মানুষ। কিন্তু কেন এবং কীভাবে মানুষ হবেন? সুগভীর জীবন দর্শনের এইসব প্রশ্নের জবাব লেখক দিয়েছেন অত্যন্ত প্রাঞ্জল এবং সাহসী উচ্চারণে।
আমরা কেউ কেউ মানুষ আর কেউ কেউ জানোয়ার! পশু প্রবৃত্তিকে খুন করে মানুষ হওয়ার এই মিশন দিয়েই সৃষ্টিকর্তা সকল মানুষকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। সাকসেসফুল হলে আলোর উপর আলো আর না হলে অন্ধকারের উপর অন্ধকার।

রিকশাওয়ালাকে ভাই বলার মহাঅপরাধে নায়ক অচলের ২য় প্রেমিকা কামের দেবী আফ্রোদিতি খ্যাত শিখা যেমন তাকে চিরদিনের মতো ছেড়ে যায়; তেমনি তাকে ছেড়ে যায় আজন্মের প্রেমিকা নীলাদ্রি, ৩য় প্রেমিকা সুবর্ণা এবং নাবালিকা প্রেমিকা আঁচল। এদের কারো সাথেই অচল অন্যায়ভাবে আপোষরফা করেননি। নিজের চরিত্র এবং ব্যক্তিত্ব একবিন্দু বেহাত হতে দেননি। এভাবেই অচল প্রতিনিয়ত মানুষ হওয়ার রেটিং পয়েন্ট বাড়িয়ে নিয়েছেন। তাঁর কল্পিত ১০০% মানুষ হওয়ার দৌড়ে পরীক্ষার পর পরীক্ষা দিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত অচল কি ১০০% মানুষ হতে পেরেছিলেন?
সুপ্রিয় পাঠিক, উপন্যাসটি কালজয়ী হবেই; এটা আমার দৃঢ় বিশ্বাস।।
“ভণ্ড” পড়ুন ; নিজেও অচলের মতোন নান্দনিক ভণ্ড হউন!!
জালাল উদ্দীন মুহম্মদ
বিশিষ্ট কবি এবং কথাসাহিত্যিক।

============================

ইসরাফিলের দ্বিতীয় শিংগা

লক্কড় ঝক্কড় বাসে বসে আকাশ-পাতাল করি
চারপাশে নিরবচ্ছিন্ন কুয়াশার ঢাল
তবে কি এমনি করেই কেটে যাবে
আমার প্রিয় পৃথিবীর তাবত ভালোবাসার কাল?

হিম হওয়া হাতের আঙুলে মুদ্রিত হয়
পুঁটিমাছের প্রাণ, খড়ের গাদায় লেপ্টে থাকে
চকাচকির গান;
তবুও ইসরাফিলের দ্বিতীয় শিংগায় টনক নড়ে
মুখোমুখি দাঁড়াবার!
অথচ আজও জানার ফুরসত হয়নি কে আমার
অথবা আমিই বা কার?

তবুও প্রদীপের তেলেসমাতি থেমে নেই
থেমে নেই জীবন সমুদ্রের অলিখিত অধিকার
অথচ আমরা সবাই জানি,
প্রদীপের নিচে কেবল অন্ধকার আর অন্ধকার!

কাপুরুষ একটা!!!

আজকাল নিজেকে ছাড়া.কোনোকিছুতেই
না বলি না, বলা চলে বলতে পারি না
কেনো জানি না, বলতে সাহস পাই না..!!

হিমালয়ে উঠতে যেমন সাহস লাগে
তেমনি না বলতেও বুকে হিম্মত লাগে
সাহস কিংবা দুঃসাহস কোনোটাই আমার নেই;
তাই নিজেকেই নিজে বলি..
হে কাপুরুষ পিক!! তোকে ধিক ধিক ধিক !!

আজ জন্মেছি বলেই হয়তো বা …
আত্ম-সমালোচনায় গাঁটছাট বেঁধে নেমেছি
বাপ-দাদার ভিটেমাটি, জলের ঘটি!
কালই যে আবার পুরাতন জন্ম বেছে নেবো না
বিড়ালের মতো গুটিসুটি!
এর কোনো গ্যারান্টি আমার কাছে নেই;
তারচেয়ে বরং চলুক.. চলতে থাকুক
না জল, না কাদার লুটোপুটি……..!!

যদি

আর কিছু পাই না জীবন নিয়েই ভাবি
ওরা এখন ছিটানো ছিঁচকে জলের মতোন
কখনো উর্ধ্বমুখী
আবার কখনো নিম্নমুখী!
আমিও কম না….
ঝড় আর ঝর যা-কিছুই হোক নিয়ত সুখী!

তবুও
কোনো কোনো পদ আর পদভারে কাঁপে
আকাশ; চিকন সুতোয় তৈরি হয় নদী
আমরা কেউ জানি, আর কেউ জানি না
আমরা মানুষেরা কেবলই যদি আর যদি!