জসীম উদ্দীন মুহম্মদ এর সকল পোস্ট

একটি খড়কুটো মার্কা কবিতা

গতকাল একটা কবিতা লিখেছিলাম
আজও একটা কবিতা লেখার কথা ভাবছি
তবে কি আমিও সেলিব্রিটি হতে যাচ্ছি?

একদিন সুর আর অ-সুরের মাঝামাঝি
রাত্রিকে পদ্মফুল হতে দেখেছিলাম….
অতঃপর গতকাল গেলো, আজ গেলো,
আগামীকালও হয়ত যাবে
আমি কি এমনি বর্বর দিন চেয়েছিলাম…?

অধুনা আমি মাটি দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে
আকাশ দিয়ে উড়ে বেড়াই
তবুও মনের খড়কুটোদের কথা কাউকে
বলি না,
বেশি বমি পেলে কেবল কবিতার বুকে
চালান করে দিই..
অতঃপর কালো চশমা পরে ভাবতে থাকি
এই তো… কী মজা! আমি আর নেই.!!!

স হ চ র

আঙুলের গিঁটে আকাশ গুনছি
পেছন থেকে শার্টের কলার টেনে ধরে আছে
আমার জ্যামের শহর
বরুণের চায়ের স্টলের ভিন্ন স্বাদ
হুডতোলা রিকশার রোজনামচা
সেইসাথে কদাচিৎ
দু’একটি শিরোনামহীন পাখির ডাক!

আমি সত্যি জানিনা
এদের সাথে আমার অথবা আমার সাথে
এদের সম্পর্কের কার্যকারণ!
তবু জীবনের নুক্যাম্পে এরাই আমার
নৈমিত্তিক সহচর!

আমি জানি সবকিছু থেকে পালিয়ে বাঁচা যায়
কেবল ভালোবাসা থেকে নয়!
অথচ সেই ভালোবাসার মর্যাদা আমার
কাছে এখন বেদুইন উড়ুক্কু পাখির মতোন!
যে হামেশাই আমার
আবার কখনো আমার নয়!!

কিছু না বলা কথার আস্ফালন

কিছু না বলা কথার আস্ফালন

খুব ইচ্ছা হয় কবিতায় কিছু কথা খোলাখুলি বলি…
পারিনা। পারতে পারতেও হেরে যাই।
দৃশ্য এবং অদৃশ্যের ভয় এসে কলম নিয়ে যায়!

তবুও আহত এবং বন্দি বিড়ালের মতো মিউমিউ
থেমে নেই, থেমে নেই জন্মান্ধের মতো পথচলা;
তবে কি বাকি কথা আর কোনোদিন হবে না বলা?

প্রতিশোধ

প্রতিশোধ

একটা সময় কিছু কবিতা গল্প হতো, উপন্যাস হতো
এখন আর কোনো কিছুই হয় না…..
বড়জোর কড়া নিরাপত্তায় নিরাকপড়া আকাশ হয়!

অথবা নিছক কিছু আগুনের ফুলকি হয়
যারা কোনো এক দুঃস্বপ্নের রাতের জিন্দালাশের মতো
না শুয়ে থাকে আর না দাঁড়িয়ে থাকে!

তবুও আমি আচানক স্বপ্নের ঘোর কাটাতে পারিনা
মানুষের মতো মেরুদণ্ড সোজা রেখে দাঁড়াতে পারিনা
যে অন্ধ কোনোকিছু না দেখেও সবকিছু দেখে
আমিও সেই অন্ধের মতো সুস্পষ্ট সবকিছু দেখি!

তবুও আমি চাই রাতের পর যেভাবে দিন জেগে উঠে
দিনের পর যেভাবে রাত জেগে উঠে
তেমনি জেগে উঠুক বোধ সর্বস্ব কিছু কিছু নির্বোধ,
তা না হলে…. পরিশেষে আমার নির্লিপ্ত কবিতারাও
একদিন নিবেই নিবে জলজ্যান্ত চরম প্রতিশোধ….!!

একজন বৃদ্ধরাত্রির গল্প

একজন বৃদ্ধরাত্রির গল্প

রাত তখনো বুড়ো হয়নি
আমি তাকিয়ে আছি এক চিলতে আকাশ
যেখানে নক্ষত্রের ফুল ফুটে, আচমকা ঘটে
আবেগিক উল্কার প্রকাশ!

এখন রাত বেশ পেকে গেছে
আমার আশেপাশে ঘুরছে কয়েকটি ধুমকেতুর লেজ
আমার কিছু চুলেও রাত্রির মতো পাক ধরেছে
ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় ক্রমশ ঢালু পথে হয়েছে অথবা হচ্ছে সতেজ!

এখন রাত্রি পচে দুর্গন্ধ ছুটেছে
আমিও গুনছি অপেক্ষার ভোরে হাজারো পাহাড়
কেউ কি আমায় বলতে পারবে..?
পাঁচদিন হয় যে বৃদ্ধরাত্রিটি জামতলা মোড়ের
খোলা রাস্তায়
তার কপালে কেনো নেই আহার…???

কতোবার ভেবেছি…. কবিতাটির নাম দেবো
একটি রাত্রির তিনটি গল্প
একটি রাত্রির তিনটি প্রহরই আমাকে বলে গেছে
পঁচা কবি, তোমার জ্ঞান, বুদ্ধি বড়োই অল্প ..!!!

চলছে লড়াই চলবে

চলছে লড়াই চলবে

এই যে সেই আমি… এখনও বেশ ঠিকে আছি
এক লড়াই থেকে আরেক লড়াই
এক প্রেক্ষাগৃহ থেকে আরেক প্রেক্ষাপটের বড়াই ….
চলছে…….. তো চলছেই…!!

আমার সাথে আমার লড়াই, জ্বরের সাথে আমার
নিরীহ শরীরের লড়াই
হাঁচির সাথে নাক, মুখ, হাতের আঙুলের লড়াই
এছাড়াও অদৃশ্য বেশ কিছু বালাইয়ের সাথে অদৃশ্য
প্রতিষেধকের সুতীব্র, সুতীক্ষ্ম লড়াই!

এরা সবাই হরহামেশাই আমার উপর খবরদারি করে
অথচ…. কে, কাকে, বুঝাতে যাবে কার পিছে?
যে আমার নিজেরই কোনো খবর জানা নেই
যে আমার আপাদমস্তক বলে তেমন কিছু নেই
সেই আমাকে ঘিরে এতো খবরদারির কি আছে?

তবুও…আমি ভগ্নাংশের চেয়ে বড় বেশি কম নই
লড়াইয়ের নাম করে কেবল কড়াইয়ের খবর লই!!

শকুন

কতোদিন অকর্মা যায়, কতোরাতও শেয়াল,
কুকুরে মিলেমিশে গিলে খায়….
সে আর আসে না!
অথচ জলের পিঁড়িটা অনেকদিন হয় খালি যায়
তবে কি সেও….
দামের উনুনে চড়ে জল থেকে দুইবিঘত
উপরে ঘুমায়?

তবুও যার আসার কথা আসন্ন এই আষাঢ়ে….
সে আর আসেনা!
কম করে হলেও আমি তার অপেক্ষায় আছি
হাজার খানেক দুর্বৃত্ত প্রহর;
সেকি তবে ভুলে গেছে আমার মতো কোনো
একটি নগদ অথবা বাকি চটজলদি জলের শহর?

আগেকার দিনে আর কেউ আসুক, না আসুক……
পাওয়া যেতো সিঁথিপথে কিছু উকুন,
তবে কি ওরাই এখন প্লাস্টিক সার্জারির বদান্যতায়
নতুন নাম পরিগ্রহ করে অধুনার শকুন….??

না রাত না দিন

না রাত না দিন

কিছুদিন হয়……
আহ্নিকগতি, বার্ষিকগতির কিছুই ঠাহর পাচ্ছি না
রাতকে দিন মনে হয়
দিনকে মনে হয় রাত,
কেউ বলতে পারো,
কোথায় গেলো আমার আমকুড়ানো প্রভাত……?

সবাই জানে……
দাবানলে বন পোড়ে, শহর পোড়ে, নগর পোড়ে
আমি বলি, মন কি পোড়ে না?
যেদিন থেকে সাগর পোড়ে নদী হয়েছে
নদী পোড়ে খাল হয়েছে
খাল পোড়ে আকাল হয়েছে…সেদিন থেকে আমিও
আর সিনান করিনা!

কে জানে না,
জবাব দেওয়ার চেয়ে প্রশ্ন করাই অতি সহজ কাজ,
ঘরপোড়া
গরুর মতো আমারও আজ…… নাই কোনো লাজ!

তবুও আমি চাই আরও একটি কলি ফুল হউক…
আরো একটি নিষ্ফলা ভোরের নির্বিবাদ প্রসব হউক.!

একটি সার্থক কবিতার খোঁজে

একটি সার্থক কবিতার খোঁজে

একটি সার্থক কবিতা বারবার হাত ফসকে বেরিয়ে যায়
তার যেনো মাছির মতো মাথার চারপাশে চোখ
সেই থেকে আমার কেবলই ধুঁকছে শুন্যতাঘেরা এ বুক!

এমনি
আরো কতোকিছু আমার থেকে পালিয়ে বেড়ায় রোজ
তবুও তার মতো কেউ নেয় না, আমার এতো খোঁজ!!

আমিও তার এমনি এক নাছোড় ভালোবাসার খদ্দর…
মিনি বিড়ালের মতো মিয়াও মিয়াও শব্দে খুঁজে ফিরি
তার আলতো হাতের আদর!
তবুও সে যেনো যেনতেন কেউ নয়
আমিও আকাশ পানে চেয়ে থাকি, কদাচিৎ যদি সে
আমার হয়!

তবে কি আমি যথার্থ ভালোবাসতে পারিনি এখনো তারে
তবে কি এখনো নিতম্বের মতো পিছমোড়া ভালোবেসে
যাবে সে আমারে…??

রোদ

রোদ

সারাদিন কতো রকমের রোদ উঠে…..রোদ
সুবোধ রোদ
কুবোধ রোদ
অবোধ রোদ
প্রবোধ রোদ….. আরো কতো যে কী!

এতোসব আচানক আচানক রোদের মাঝে
কড়া হোক
মিঠে হোক
তিতো হোক
সুগন্ধ হোক
দুর্গন্ধ হোক
বাস্তবতার রোদই উঠে সবচেয়ে বেশি,
হাঙরের মতো মুখ হা করে কেবল সে-ই
নিষ্ঠুর বলে,
আমি তোমাকে বড়ো বেশি ভালোবাসি.!!

খয়রাতি ভাবনার কবিতা

খয়রাতি ভাবনার কবিতা

অনেকদিন পর কিছু খয়রাতি ভাবনা আজ
পোয়াতি হতে হতে পোয়াবারো হয়েছে;
আমিও নাদান, আকাশমুখ হতে মাথা নোয়াইনি!

যেখানে সত্যেরা একপায়ে দাঁড়িয়ে থাকে
সেখানে আমার আঁতুড় ঘরে জন্মানো ল্যাংড়া
কবিতার কথা কে শোনবে?
তেল দিতে দিতে আমাদের অভ্যাস ইদানিং
এমন বদভ্যাস হয়েছে, পাত্র-অপাত্র বুঝেনা;
হাঁড়িতে ঘি আছে নাকি গোবর আছে তাও
দেখে না!

না-পাকদণ্ডী যখন লেজেগোবরে হয়, তখনও
আমলার কামলা হওয়ার মনোবৃত্তির নিবৃত্তি হয়না;
তখনও বুঝতে চায় না….
কেবল চুলপোড়া ঢেঁকুর গভীর সমুদ্রের ক্লেদান্ত
ঢেউয়ের মতো তেড়ে তেড়ে ডাকছে কাছে;
আসন্ন ঢেউয়ের পাহাড় সমান উচ্চতা রোধ
করতে পারে, এমন খেমতা কি নাবালক তেলের আছে?

প্রশ্ন

ইদানিং মন আর মননের পার্থক্য বুঝিনা
মাটিতে না আকাশে…..
কোথায় পা ফেলছি — তাও বুঝতে পারিনা!

অচেনা কিছু শব্দেরা দৈবাৎ আমার হয়
চিরচেনা পংক্তিগুলো যেনো আজকাল
আমার নয়!
সাপের পাঁচ পা
ব্যাঙের সর্দি………মাঝেমাঝে ওরাই কেবল
শাপেবর হয়!

তবুও আমি নাছোড় বাগবিধির কথা ভাবি
একবার পোড়ামন মননে জমা দিই
আরেকবার ছেঁড়ামননে মন চালান দিই
তখন আর ওরা কেউ আমার কথা ভাবে না…!!

তাহলে কি আমিও শেষপ্রশ্নটি উচ্ছিষ্টের মতো
ভালোবাসার চোরাকুঠুরীতে জমা দেবো?
নাকি নিজেকে চেনার মিশনে আরও কিছুটা
নাবালক সময় মহাকালের থেকে ধার নেবো?

অনাগত আলো অথবা আলেয়া

অনাগত আলো অথবা আলেয়া

বারান্দার লিকলিকে জিহ্বায় সজারুর মতোন
সাটানো আছে
অনাগত কালের কিছু জ্যান্তছবি….
ওরা মূক, মাটির মতোন হাঁটে
ওরা একহারা গড়নের দোভাষী….ওরা পৃথিবীর
সাড়ে তিন হাজার মাতৃভাষায় সব্যসাচী!

তবুও ওরা কিছু মানুষের মন পড়তে পারেনা
আলো না আলেয়া কিছুতেই ধরতে পারেনা
শুধু ওদের কিছু দীর্ঘশ্বাসের বান নেহায়েত ছুটে
পালায়, একগ্রহের পানশালা থেকে অন্যগ্রহের
ধর্মশালায়!

অতঃপর গালি খাওয়া অবাধ্য কিশোরের মতোন
ঘোৎ ঘোৎ করে
অথবা
পোড়খাওয়া পঙ্গু বৃদ্ধের মতোন ধুঁকে ধুঁকে মরে….
তবুও ভাঙে না.. সরলরেখায় চলে
তবুও ওরা স্বচ্ছ আলোর কথা বলে!

তবে কি ওরাই অন্ধকার রজনীর মতোন বিবক্ষ?
নাকি
আমরাই কাপালিক,
সভ্যতার নাম করে বিবস্র করে চলছি অক্ষের পর
অক্ষ???

সেই হলো কবিতা

সেই হলো কবিতা

কলমের নিব ঘষে যে পাখি বের হয়ে আসে….
পতপত করে ওড়ে যায় সাদা কাগজের গায়
গায়ের জোরে হয়ত কামড় বসায় কোনো না
কোনো কোরা, আনকোরা পত্রিকার পায়…!
হয়ত ছাতাও বিস্তার করে বৈসাবি রোদের মাথায়!

আমার কাছে কেনো জানি কেবলই মনে হয়…
সে আর যা-ই হোক…. সে কবিতা নয়;
বরং যে পাখি হাজার প্রচেষ্টাতেও উড়তে পারে না,
শরমেই মরে থাকে লাল দালানের বন্দি বাঁদর
মেহনতিরে দিতে পারে না একচিমটি বুনোআদর
ছুঁয়ে দিতে পারে না কোনোএক ভোরের সবিতা,
কেবল ধুঁকে ধুঁকে মরে পড়ে থাকে হৃদয় কাবায়
আমার মতে, সেই হলো কবিতা. সেই কবিতা!!

বিবিধ কাম আর প্রেমের গল্প

কড়কড়ে রোদের সাথে আচানক ঝুপঝাপ বৃষ্টির
ঘাত, প্রতিঘাত, সংঘাত চলছে তো চলছেই….
এ যেনো এক প্রাগৈতিহাসিক ইঁদুর মারার গল্প!

অথচ কে জানে না
জান থাকলে…… তবেই না জাহান!

মাঝেমাঝে বিবিধ কাম আর নানাবিধ প্রেম-অপ্রেম
আমাকেও আচ্ছন্ন করে…..
মেঘাচ্ছন্ন
মোহাচ্ছন্ন
বেদনাচ্ছন্ন!

তবুও জাতের হিসেব বড়ো কুটিল, বড়ো জটিল…
অজাত
কুজাত
বেজাত
আমলে না নিলে আসমুদ্রহিমাচলও কিছুই না….
আর আমলে নিলে
ভাংগা খাটের তলাও দৈবাৎ সাক্ষাৎ আগরতলা!