মোঃ খালিদ উমর এর সকল পোস্ট

মোঃ খালিদ উমর সম্পর্কে

কুয়াশা ঢাকা মানুষের মন বুঝতে চেষ্টা করি কিন্তু পারিনা!

নেভিগেশন ইকুইপমেন্ট-GPS


GPS

GPS (Global plotting system) নিয়ে বলার মত বিশেষ কিছু নেই কারন আজকাল আপনার পকেটে মোবাইল ফোনেই রয়েছে এই সুবিধা। সাগরে যে GPS ব্যবহার হয় তা প্রায় একই ধরনের তবে সাগরে জাহাজের গতি/দিক ইত্যাদিও দেখিয়ে দেয় এবং আপনি কোথা থেকে কোথায় যাবেন তা একে বলে দিলে সেই আপনাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবে এবং ঝর-বাতাস বা ঢেউ এর জন্য আপনার দিক পরিবর্তন হয়ে গেলে সে আপনাকে জানিয়ে দিবে “তুমি দিক হারিয়ে ফেলেছ”।
কত সহজ আজকালের নেভিগেশন তাই না?
আগামীর বিষয়ঃ Chart Plotter, এতক্ষণ সঙ্গে থাকুন ভাল থাকুন।

নেভিগেশন ইকুইপমেন্ট-SART


SART-Transmitting component.

SART থেকে সংকেত স্যাটালাইতে চলে যাচ্ছে এবং সেখান থেকে ফিরে আসছে।

Radar এ সংকেত গ্রহন।

SART সংকেত প্রেরন ও গ্রহন প্রক্রিয়া।

SART সংকেত প্রেরন ও গ্রহন প্রক্রিয়া।

SART (Search and rescue transponder) একটি অনুসন্ধান এবং রেসকিউ ট্রান্সপন্ডার ইলেকট্রনিক ডিভাইস যা জাহাজ কোন বিপদে পরলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিকটবর্তী কোন জাহাজ বা স্থল স্টেশনের রাডারের জন্য সংকেত প্রেরন করে এবং রাডার সেই সংকেত গ্রহন করে যে জাহাজ থেকে সংকেত প্রেরন করা হয়েছে তার অবস্থান নিশ্চিত করে সাহায্যের জন্য ছুটে যায়। SART ট্রান্সপন্ডার দুর্ঘটনায় কবলিত জাহাজ অনুসন্ধান বা জাহাজ থেকে নামানো liferaft এর অবস্থান খুজে পেতে ব্যবহৃত হয়। এর মাধ্যমে প্রেরিত সংকেত সরাসরি স্যাটালাইটে চলে যায় এবং সেখান থেকে স্থল স্টেশনের রাডারে ধরা পরে।
IMO (International Maritime Organization) এর নির্দেশ মোতাবেক GRT (gross registered tonnage) 500 টন এর অধিক সমস্ত GMDSS জাহাযে কমপক্ষে একটি SART বহন করতে হবে।
আগামীতে GPS নিয়ে আলাপ হবে এতক্ষণ একটু বিশ্রাম নিয়ে নিন। ধন্যবাদ!

নেভিগেশন ইকুইপমেন্ট-AIS


AIS Transmitting component


Transmitting and receiving system via satellite.


Transmitting and receiving system via satellite.

AIS (Automatic identification system) এমন একটি ইকুইপমেন্ট যা দিয়ে সমুদ্রে চলমান বা জেটিতে অবস্থিত যে কোন জাহাজের অবস্থান বা পজিশন/ গতি/দিক এবং জাহাজের সমস্ত বিবরন জানা যায়। জাহাজটি কোন বন্দর ছেড়ে এসেছে , কোন বন্দরে যাচ্ছে সে কত ডিগ্রি কোর্সে কত গতিতে চলছে সব কিছুই দেখা যায় এমনকি আপনি ঘরে বসে প্রশান্ত মহা সাগর দিয়ে আমেরিকা বা জাপানের পথে চলমান জাহাজের অবস্থা দেখতে পাবেন আপনার হাতের মোবাইল ফোনে।

জাহাজটি কোন বন্দর থেকে লোড নিয়ে ফেয়ারওয়ে বয়া অতিক্রম করে তার সকল বিবরন এবং সে কোন বন্দরে যাচ্ছে, সে আনুমানিক কবে পৌঁছাবে সেই সব তথ্য দিয়ে দিলে তা সরাসরি স্যাটালাইটের মাধ্যমে পৃথিবীতে ছড়িয়ে দেয়। Marine tracker বা এমন আরও অনেক app আছে যা আপনার মোবাইলে ইনস্টল করে জাহাজের অবস্থান ছবি সহ দেখতে পারেন। আশে পাশের সকল জাহাজ বা স্থল স্টেশন থেকেও জাহাজের IMO নাম্বার বা নাম দিয়ে সার্চ করলেই পাবেন।
আজ এই পর্যন্তই, আগামীতে কী নিয়ে বলব?

নেভিগেশন ইকুইপমেন্ট-SAT-C


SAT-C

SAT-C বা স্যাটেলাইট কমিউনিকেশন হল একটি মোবাইল ফোন স্টেশন (MES) এবং ল্যান্ড আর্থ স্টেশন (LES) এর মধ্যে কাজ করে এমন টেলিযোগাযোগ কোম্পানী Inmarsat দ্বারা পরিচালিত একটি দ্বিপথ, প্যাকেট ডেটা সার্ভিস। এটি দিয়ে voice বা mail, image ইত্যাদি গভীর সমুদ্রে চলমান জাহাজ-অফিস-জাহাজে – ট্রান্সফার করা যায় তবে আমাদের নিকটবর্তি স্টেশন সিঙ্গাপুরে অবস্থিত স্টেশন এই ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রন করে এবং এদেরকে প্রতি বছর একটা নির্দিষ্ট ফি দিতে হয়। ছবিতে দেখতে পাচ্ছেন এতে কম্পিউটারের মত কী-বোর্ড এবং প্রিন্টার রয়েছে।
মাধ্যম? অবশ্যই স্যাটেলাইট! এর এন্টিনা ব্রিজের ভিতরে বা বাইরে যে কোন স্থানেই স্থাপন করা যায়।
জানুয়ারী 1991-এ প্রাক-পরীক্ষামূলক ট্রায়ালের একটি নির্দিষ্ট সময়ের পরে এটি সম্পূর্ণরূপে কার্যকরী হয়ে ওঠে।

আগামীতে নিয়ে আসব GPS, এতক্ষণে আপনারা একটু চা-বিস্কুট বা ইলিশ পোলাও খেয়ে আসতে পারেন।

নেভিগেশন ইকুইপমেন্ট-RADAR


RADAR

Radar Screen

Radar Antenna
RADAR একটি সনাক্তকরণ ব্যবস্থা যা রেঞ্জ, কোণ বা বস্তুর বেগ নির্ধারণ করতে রেডিও তরঙ্গ ব্যবহার করে। এটি বিমান, জাহাজ, মহাকাশযান, ইত্যাদির চারপাশে যা যা রয়েছে তা দেখাতে বা সনাক্ত করতে ব্যবহার করা হয়। উপরে দেখছে চলমান একটি radar, মাঝে দেখছে radar এর মনিটরে যা দেখাচ্ছে এবং দেখছেন radar এর antenna যা ব্রিজের উপরে মাস্তুলের সঙ্গে লাগান থাকে। র‍্যডার বিভিন্ন রেঞ্জ এর হয়ে থাকে ১০- ১০০ মাইল বা তার চেয়ে বেশী বা কমও হতে পারে। নির্ভর করে আপনার জাহাজ কত বড় এবং কোন পথে যাতায়াত করে। এটি একটি নির্ভরযোগ্য এবং অতি প্রয়োজনীয় ইকুইপমেন্ট। বিভিন্ন ধরনের বিভিন্ন মাপের র‍্যাডার আছে। সামুদ্রিক জাহাজ, উড়োজাহাজ, এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল বা স্থল ঘাটি যে কোন স্থানেই এর ব্যবহার বিস্তৃত। এটি ব্যবহারে স্যাটালাইটের সাহায্য প্রয়োজন হয়না সে নিজেই একটি ফ্রিকুয়েন্সি তৈরী করে। এর ট্রান্সমিটিং ব্যবস্থা একটি প্রতিধ্বনি তঐরি করে এবং এর সামনে বা আশেপাশে চতুর্দিকে ছড়িয়ে দেয় এবং সেখানে বাধা পায় সেখান থেকেই সেই ইকো বা প্রতিধ্বনি ফিরে আসে। যেখান থেকে ফিরে এসেছে তার একটা দুরত্ব নিরূপন ব্যবস্থাই একে কর্মক্ষম করে।
আগামীতে লিখব SAT-C নিয়ে, এতক্ষন আপনারা এই শব্দনীড়ের অন্যান্ন লেখা পড়ে দেখুন আর ইচ্ছেমত মতামত দিতে থাকুন। ধন্যবাদ।

নেভিগেশন ইকুইপমেন্ট-NAVTEX


Navtex

Navigational Telex একটি আন্তর্জাতিক স্বয়ংক্রিয় ফ্রিকোয়েন্সির মাধ্যম সরাসরি-প্রিন্টিং সার্ভিস যা ন্যাভিগেশন এবং আবহাওয়ার সতর্কবার্তা এবং পূর্বাভাস প্রদানের পাশাপাশি জাহাজের কাছে জরুরি সামুদ্রিক নিরাপত্তার তথ্য প্রেরন করে। আবার এইসকল তথ্য মনিটরেও দেখা যায়। আপনি জাহাজের ব্রিজে (যেখান থেকে জাহাজ পরিচালন করে) থাকুন বা না থাকুন এটি আপনার জন্য সতর্ক বার্তা বা তথ্য নিজেই প্রিন্ট করে রাখবে। ব্রিজে এসে তথ্য দেখে জেনে নিবেন আপনার যাত্রা পথে কোন সমস্যা আছে কিনা। মাধ্যম? অবশ্যই satellite! স্যাটালাইট এসে গভীর সমুদ্রে আমাদের জাহাজ চালনা অত্যন্ত সহজ ও নিরাপদ করে দিয়েছে।
আগামীতে লিখব Radar নিয়ে, একটু অপেক্ষা করুন please।

জীবনের অনু পরমানু-২

অনেক দিনের লালিত স্বপ্ন ছিল কিছু লেখা লেখি করব কিংবা গঠন মূলক কিছু করব। বিশেষ করে যখন একটা বৃটিশ কোম্পানির জাহাজে ডেক ক্যাডেট হিসেবে জয়েন করে হুট করে একেবারে বাংলাদেশের বাইরে এক দেশের বন্দর ছেড়ে আর এক দেশে যেতাম, আসা যাওয়ায় পথে সমুদ্রের নানা রূপ কখনও রুদ্র আবার কখনও শান্ত রূপ দেখতাম, ঢেউ এর তান্ডব, উদাসী বালুকাবেলার সম্মোহনী রূপ দেখতাম, আবার এই বালিয়ারীতে নানা রঙ এর, নানা বর্ণের মানুষের আনন্দ উচ্ছাস দেখতাম। ওদিকে আবার নানা শহরের বিচিত্র মানুষের আনাগোনা রঙ ঢং দেখতাম সেই তখন থেকে।

অনেকদিন এই স্বপ্ন লালন করলেও তখন কিন্তু লেখার সুযোগ পাইনি! সুযোগ পেলাম বা বাস্তবায়ন শুরু করলাম যখন আটলান্টিকের দ্বিপ বৃটেনের জীবন কাটাতে শুরু করলাম তখন। হাতে প্রচুর সময় ছিল। সাথে ছিল চারিদিকে সবুজ আর সবুজের সমারোহ আর ছিল তুষার ঝরার স্বপ্নীল মোহনীয় পরিবেশ।
এদিকে লিখে ফেললাম ৫/৭টি গ্রন্থ। গল্প, গীতকবিতা, উপন্যাস এবং নানা কিছু আবোল তাবোল।

দেশে ফিরে এসে এর মধ্যে থেকে কয়েকটা গ্রন্থ আকারে নিজের গাইটের টাকা খরচ করে কয়েকটা বই মেলায় প্রকাশ করলাম।

স্বপ্নের ধারা বদলে গেল সময়ের চাহিদা/ইচ্ছার বহুরূপী চাহিদা/ মনের সুপ্ত বাসনার কারণে। শুধু শুধু বই গুলি ঘরের কোণে ফেলে রেখে কি হবে? কে জানবে এই কাহিনীর কথা, আমার এত বছরের সঞ্চিত তিলে তিলে জমানো অভিজ্ঞতা সবাইকে না জানালে এটা কি ব্যর্থ হয়ে অন্ধকার বাক্সের ভিতর বা বইয়ের শোকেসের ভিতরে শুধু গুমরে কেদে এক সময় উই পোকার খাদ্যে পরিণত হবে? এখন মনে হচ্ছে দুইটা উপন্যাস “মম চিত্তে নিতি নৃত্যে” নিটোল এক প্রেমের কাহিনী এবং “নক্ষত্রের গোধূলি” পৃথিবীর ৫টা মহাদেশের পটভূমিকায় নানা শ্রেনীর চরিত্র এসেছে এই উপন্যাসে। এই কাহিনী দুইটি নিয়ে মনে একটা বাসনা জন্মাতে চাইছে নাটক বা সিনেমা করতে পারলে মানুষের মনে সাহিত্যের একটা নতুন দিগন্ত ছড়িয়ে দেয়া যেতো। মানুষ ভ্রমন কাহিনীর ছলে সামাজিক নিত্য ঘটা কাহিনীর সাথে আবার নতুন করে জেনে নেয়ার প্রচেষ্টা হতে পারে। মনে মনে নায়িকা এবং নায়কের চেহারাও একে রেখেছি। কিন্তু নিরালায় একা একা বসে বসে ভাবি এত টাকা কোথায় পাব?? এই একটা প্রশ্নের জন্যেই মনটা থাকে বিষণ্ন।

জীবনের অনু পরমানু-১

আমিতো ভালই ছিলাম, উচু দেয়ালের পাশে দিয়ে হেটে যাবার সময় আশেপাশের ইট জড় করে তার ওপরে উঠে দেখার চেষ্টা করতা ওপাশে কি আছে দেখতে। সেই দিনগুলি কি নেহায়েত খারাপ ছিল?
তারপর একদিন বাবা ইস্কুলে নিয়ে রেখে আসলেন। এক গাদা বই খাতা পেন্সিল ইত্যাদি কিনে দিলেন। সকাল সন্ধ্যা সময় করে পড়াতে বসতেন। পড়তাম লিখতাম আবার পরদিন ইসকুল যেতাম। ইসকুলে বন্ধুদের সাথে গল্প করতাম, মার্বেল খেলতাম, খেলার তালিকায় ডাঙ্গগুলিও ছিল। খেলতাম আর ইচ্ছে ডানা মেলে উড়ে যেতাম ময়ূরপঙ্খি চেপে। বেশ চলছিল।

বঙ্গবাসীর পুস্তক প্রীতি

সকল বঙ্গবাসী কবি বলিয়া অত্যন্ত দক্ষতার সহিত নিজেদের পরিচিত করিয়াছেন এমনকি তাহাদের কেও কেও কবিদের কাকের সহিত গণনা করিতেও কুণ্ঠা বোধ করেন নাই। তবে একথা সত্য যে এই বঙ্গ কবিই একদিন বিশ্বখ্যাত নোবেল পুরস্কার আয়ত্ত করিয়া সকল বঙ্গবাসীকে কবির আসনে বসাইয়া দিয়াছেন। ইহাতে সকলের মনে কবি হইবার বাসনা অত্যন্ত প্রকট রূপে দেখা দিয়াছে এমন করিয়া ভাবিলে দোষের কিছু দেখা যায় না।
একজন কবি বা লেখক কিংবা ঔপন্যাসিক যাহাই বলেন না কেন তিনি লিখতে বসিবার পূর্বে বহুকাল ধরিয়া ভাবিতে থাকেন। ভাবনার বৃক্ষ যখন কিছুটা বিস্তৃত হয় তখন তিনি হাতে কলম ধরিয়া কাগজ পত্র লইয়া বসেন। আজকাল অবশ্য কাওকে কালি কলম বা কাগজের বোঝা বহন করিতে হয় না কেবল একখানা কম্পিউটার হইলেই কর্ম সম্পাদন করা অতি সহজ। ইহা যশবান বৈজ্ঞানিক বৃন্দের কর্মফল বলিয়া তাহাদের অন্তত এক কুড়ি ধন্যবাদ জানান উচিত।
আচ্ছা ঠিক আছে ধন্যবাদ ইত্যাদি পরে দিলেও তেমন ক্ষতি হইবে না এই সময় যাহা বলিতেছিলাম, লেখক মহাশয় লিখিতে বসিলেন। ঘণ্টা, দিন মাস, বছর ব্যাপিয়া লিখিয়া এবং অন্তত দুই কুড়ি দফায় পাঠ করিয়া (এডিট) অবশেষে একখানা গ্রন্থ রচনা করিলেন এবং যেহেতু আজকালের পুস্তক প্রকাশক অত্যন্ত বুদ্ধিমান বলিয়া নিজের টাকা খরচ করিয়া লেখকের হাবিজাবি লেখা প্রকাশ করিতে চাহেন না বলিয়া শতেক পুস্তক প্রকাশকের দুয়ারে ঘুরিয়া ঘর্মাক্ত হইয়া নিজ গাঁইটের টাকা খরচ করিয়া সত্যি সত্যি এক খানা গ্রন্থ ছাপাইয়া ফেলিলেন। নিজের লেখা গ্রন্থখানা সুন্দর ছবিওলা মলাটের ভিতরে ছাপার অক্ষরে দেখিয়া যারপরনাই পুলকিত হইলেন।
লেখক মহাশয় পুলকিত হইলে কি হইবে তাহার পুস্তকের প্রতি কাহারো কোন আগ্রহ নাই কারণ সকলেই জানে এই গদাধর মিয়া বা মশাই আবার কি লিখিতে জানে? ইহার লেখা মূল্য দিয়া ক্রয় করা মানেই হইল স্বেচ্ছায় নিজ পকেটের টাকা গঙ্গায় ফেলিয়া দেওয়া। আচ্ছা বলুন তো আজকাল কি আর এইরূপ আহাম্মক দেখা যায়?
লেখক মিয়া একে বলে ওকে বলে জান আমার লেখা একটি বই ছাপা হইয়াছে, দেখ কি সুন্দর তাই না?
বাহ! বেশ সুন্দরতো আমাকে একটা সৌজন্য কপি দিয়ে দাও তাহলে! তুমি একান্ত ঘনিষ্ঠ বন্ধুজন তাই একটা সৌজন্য কপি আমার অধিকার!
ইহা শুনিয়া লেখকের লেখার ইচ্ছা কর্পূরের মত সপ্ত আকাশে উড়িয়া গেল কিন্তু বন্ধু জনের সৌজন্য কপি না দেয়ার মত ক্ষমতা অবশিষ্ট রহিল না। ওদিকে বন্ধু জন উক্ত সৌজন্য কপি বগলদাবা করিয়া বাড়িতে লইয়া গেল এবং যথারীতি বসার ঘরের তাকে সাজাইয়া রাখিল। কিছুদিন পর লেখক বন্ধু জিজ্ঞাসা করিল
ওহে বন্ধু আমার পুস্তক খানা পাঠ করিয়া তোমার অনুভূতি কেমন হইল?
হা হা আমি অত্যন্ত মনযোগ দিয়াই পাঠ করিয়াছি কিন্তু বন্ধু তোমার হাত এখনও ঠাকুর মশাইর মত পাকিয়া উঠেনি!

পানি কম পান করলে ব্লাড সুগার বাড়ে

পানি পান করলে ব্লাড সুগার বা রক্তে চিনি কমতে পারে এমন কেউ বললে হয়তবা অনেকেই বিশ্বাস করতে পারবেন না। কিন্তু বিশেষজ্ঞগণ সম্প্রতি এক গবেষণা রিপোর্টে এমনই দাবি করেছেন। শুধু তাই নয়, গবেষকগণ বলছেন, যারা প্রতিদিন ১৬ আউন্স বা তার চেয়ে কম পানি পান করে (দুই কাপ) তাদের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি যারা স্বাভাবিক পানি পান করে তাদের চেয়ে শতকরা ৩০ ভাগ বেশি। আর কেনইবা পানি পানের সঙ্গে ডায়াবেটিসের সংশ্রব খুঁজে পেয়েছেন তারও ব্যাখ্যা দিয়েছেন গবেষকগণ।

এক গবেষণা রিপোর্টে বলা হয়, ভ্যাসোপ্রেসিন নামক এক ধরনের হরমোন শরীরের হাইড্রেশন নিয়ন্ত্রণ করে। যদি প্রতিদিন কম পানি পান করা হয় বা কোনো ব্যক্তির যদি পানি শূন্যতা বা ডিহাইড্রেশন হয় তাহলে রক্তে ভ্যাসোপ্রেসিন হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায় যা লিভারকে অধিক সুগার তৈরিতে উদ্বুদ্ধ করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিদিন মহিলাদের অন্তত ৬-৮ গ্লাস পানি পান করা উচিত। আর পুরুষদের এর চেয়ে খানিকটা বেশি পানি পান করা ভালো। তবে পানির পাশাপাশি তাজা ফলের রস পানেও কোনো ক্ষতি নেই। তবে যাদের প্রচুর পানি খাওয়ার অভ্যাস নেই তারা প্রতিবার আহারের পূর্বে অন্তত এক গ্লাস পানি পান করতে পারেন। এমনটি পরামর্শ দিয়েছেন দ্য একাডেমী অব নিউট্রিশন অ্যান্ড ডায়েটিকস-এর মুখপাত্র কনস্ট্যান্স ব্রাউন বিগস।

সংগৃহীতঃ
লেখক : চুলপড়া, এলার্জি, চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ
http://www.ittefaq.com.bd/life-style/2016/12/15/95716.html

গোলাপ ফুলের ভেষজ গুণ

গোলাপ ফুল সবজি বা ফলের ক্যাটাগরিতে পড়েনা। কিন্তু এটি বিভিন্ন ধরণের রান্নায় বিশেষ করে মিষ্টি জাতীয় খাবার তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।

এছাড়াও ব্যথা সারাতে, বমি বমি ভাব, অবসাদ ভালো করতে সাহায্য করে গোলাপ ফুল। কারণ এতে এস্ট্রিঞ্জেন্ট ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান থাকে। সৌন্দর্য থেকে শুরু করে প্রাচীনকাল থেকেই স্বাস্থ্য সচেতনায় গোলাপের চর্চা হচ্ছে। বিশ্বের অনেক দেশেই গোলাপ ফুল খাওয়ার প্রচলন রয়েছে। গোলাপের পাঁপড়ি হোক বা কুঁড়ি-সবই খাদ্য গুণে ভরপুর।

গোলাপের পাঁপড়িতে ৯৫% পানি আছে। তাই এর ক্যালোরি কাউন্ট অত্যন্ত কম। এছাড়া এতে রয়েছে ভিটামিন সি। প্রাচীনকালে চীনদেশে বদহজমের সমস্যায় গোলাপের পাঁপড়ি খাওয়া হত। নারীদের ঋতু সমস্যাতেও গোলাপের পাঁপড়ি উপকারী।

গোলাপের মনমাতানো গন্ধ অ্যারোমা থেরাপির কাজ করে। গোলাপ ফুল খেলে শরীর ভেতর থেকে তরতাজা মনে হবে।

সংগৃহীতঃ ইত্তেফাক/সালেহ্
অনলাইন ডেস্ক: ০৪ মার্চ, ২০১৭ ইং ১০:৪৮ মিঃ

আমার ছেলেবেলার ঈদ


একটু ছোট্ট ভুমিকাঃ জীবনে যে কত দেশের কত শহরে ঈদ করেছি সে অনেকের কাছে বিস্ময় বলে মনে হবে। এর মধ্যে একটা মজার ঘটনা বলি। ঈদের আগের দিন জাহাজ দুবাই এসেছে, গেটের বাইরে এসে দেখি কাছেই ঈদ গাহ। বন্ধুরা সিদ্ধান্ত নিলাম কাল তা হলে এখানে ঈদের নামাজ পড়ব। সকালে উঠে যথারীতি গোসল করে কাপড় চোপর পরে চলে এলাম মাঠে কিন্তু কোন প্রাণীর চিহ্ন নেই, নেই, নেই! কি ব্যাপার? অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে মহসীন বলল চল গেটের সিকিউরিটিকে জিজ্ঞেস করে দেখি কখন জামাত হবে। সিকিউরিটি বির দর্পে জানাল আরে তোমরা কোন দেশ থেকে এসেছ? জামাত তো ফজরের নামাজের পরেই হয়ে গেছে এখানে ঈদের নামাজ পড়তে চাইলে কোরবানির ঈদ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে যাও যাও জাহাজে ফিরে যাও। সবাই মনে একটু দুঃখ নিয়ে জাহাজে ফিরে এসেছিলাম। এছাড়া করাচী, বাহরাইন, ইরান, অক্সফোর্ড, গ্লস্টার, বার্মিংহাম, লেস্টার, লন্ডন, কার্ডিফ, নিউক্যাসেল, চট্টগ্রাম, খুলনা, মংলা, ঢাকা অন্তত এই শহর গুলিতে ঈদ করেছি বলে মনে পরছে।

আমার ছেলেবেলার সব ঈদ নির্দিষ্ট কোন শহর বা এলাকায় কাটেনি। বাবা সরকারি চাকরি করতেন বলে তাকে বিভিন্ন সময় দেশে বিদেশের নানা জায়গায় থাকতে হয়েছে। এই সুবাদে মানিকগঞ্জের ঝিটকার পাশে আমাদের নিজ গ্রামে নিজ বংশের আত্মীয় স্বজনের সাথে এবং ধামরাইর পাশেই নানা বাড়িতেও কয়েক বার ঈদ করার সুযোগ পেয়েছি।
তখনকার ঈদ এবং আজকালের ঈদের মধ্যে কোথায় যেন একটু ভিন্নতা লক্ষ করি। তখন ছিল নিছক অনাবিল আনন্দের ঈদ আর আজকাল কেমন যেন পোশাকি একটা অনুষ্ঠানের মত মনে হয়। তখন আমরা যে আনন্দ পেয়েছি তা আজ কাল ছেলে মেয়েরা পায় কিনা বলতে পারব না। তবে এমনও হতে পারে যে আজকাল ঈদের বা অন্য যে কোন আনন্দের সংজ্ঞাও বদলে গেছে।

তখন আমার বাবা এমন কোন চাকরী করতেন না যে তিনি প্রতি ঈদেই নতুন জামা কাপড় দিতে পেরেছেন। পুরনো যা আছে দেখেছি মা তাই সুন্দর করে ধুয়ে কয়লার ইস্ত্রি দিয়ে ইস্ত্রি করে তুলে রাখতেন নামাজ পরতে যাবার সময় গায়ে দেবার জন্য। এবং এ নিয়ে আমাদের কখনো মাথা ঘামাতে হবে এমন করে ভাবতে শিখিনি। শীত কালে ঈদ হলে সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখতাম গোসলের জন্য মা পানি গরম করে রেখেছেন। আগেই কিনে আনা সুগন্ধি সাবান নিয়ে বাবা আমাদের ভাই বোনদের একে একে নিয়ে বাথ রুমে ঢুকতেন আর ডলে ডলে গরম পানি সুগন্ধি সাবান দিয়ে গোসল করিয়ে দিতেন। গোসল হলে মা আবার ওই সব কাপড় গায়ে দিয়ে আতর মেখে দিতেন।
ওই সময়ে আমাদের ঈদের আনন্দ শুরু হতো রোজার শুরু যেদিন হতো সে দিন থেকেই। বাড়িতে মায়ের কোন সাহায্যকারী ছিল না এমনকি আমার কোন বড় বোনও ছিল না তাই মাকে সাহায্য করতে হতো আমাকেই। অন্যান্য ভাই বোনেরা বেশ ছোটই ছিল।

তখন আবার এখনকার মত চাকুরী জীবী দের উৎসব ভাতা বলে কিছু ছিল না যা দিয়ে ঈদের বাড়তি খরচ মেটাতে পারতেন। তখন যা পেতেন তা হচ্ছে যে মাসে ঈদ হচ্ছে সেই মাসের বা তার পরের মাসের অগ্রিম বেতন। যাই হোক বাবাকে দেখেছি যে বছর আমাদের জন্য নতুন জামা জুতা কিনবেন তখন দাম বেড়ে যাবার আগেই রোজার শুরুতে আমাদের সাথে নিয়ে বাজার থেকে কাপড় কিনে আনতেন আর তাই কেটে মা নিজে সেলাই করে নিতেন। মেশিনে সুতা লাগিয়ে দেয়া বা কোন সেলাই ভুল হলে তা খুলে দেয়ার কাজটা মা আমাকে দিয়েই করাতেন। ফলে যা হবার তাই হোল। আমি নিজেও এক সময় মার মত কেমন করে যেন কাপড় চোপর কাটি কুটি থেকে সেলাই করা সব শিখে ফেললাম। মা যখন ফিতা ধরে গায়ের মাপ নিতেন তখন থেকেই নতুন কাপড়ের গন্ধ মাখা একটা রোমাঞ্চ অনুভব করেছি। আবার কিছুটা সেলাই করে গায়ের সাথে মিলিয়ে মা দেখে নিতেন সেই তখন থেকেই অস্থিরতায় থাকতাম কখন সেলাই শেষ হয়ে জামাটা আমার গায়ে লেগে যাবে। যে দিন মায়ের সেলাই, বোতাম লাগান, বোতামের ঘর কাটা সব শেষ করে গায়ে দিয়ে পরখ করতেন ঈশ তখন যে কি আনন্দ পেতাম তা আজ এই বার্ধক্যের প্রথম প্রান্তে এসে এখনও ভুলতে পারি না। সেলাইর প্রতিটা ফোঁড়ে মায়ের স্নেহ আর যত্নের ছোঁয়ার কি কোন তুলনা হয়? মায়ের নিজে সদ্য তৈরি করা জামা বা প্যান্ট ঠিক ভাবে গায়ে লেগে গেছে দেখে মায়ের মুখের মধুর তৃপ্তি মাখা মৃদু হাসিটা আজও ভুলতে পারি না।

মার ঐ শিক্ষা থেকে আমিও আমার মেয়েদের জন্য এই ব্যবস্থা করেছি। আমার স্ত্রীও এমনি করে নিজের সন্তানদের জন্য নিজে হাতে পোষাক বানিয়ে দিত যখন ওরা ছোট ছিল। কাপড় সেলাই হলে তাতে নানা রকম হাতে কাজ করা এমব্রয়ডারি বা ফেব্রিক পেইন্ট দিয়ে আবার এক ধাপ সাজ সজ্জা দেখতে বেশ লাগত। সেই রেশ ধরে আমার মেয়েরা সেদিন বলছিল আব্বু যতই যা কিনে দাও না কেন সেই যে তুমি আর মা মিলে আমাদের জামা কাপড় বানিয়ে দিতে সে গুলি গায়ে দিয়ে যে আনন্দ পেতাম আজকাল এত দামের এই সব কাপড় গায়ে দিয়েও আর তেমন আনন্দ লাগে না। মেঝ মেয়ের এই কথা শুনে বড় এবং ছোট মেয়ে এক সাথে তাল মিলিয়ে বলে উঠেছিল হ্যাঁ আব্বু মেঝ ঠিক বলেছে!! শুনে কেন যেন আমার চোখ দুটি ভিজে এসেছিল সাথে সাথে ওদের তিন বোনকেই বুকে জড়িয়ে নিয়েছিলাম।
আজকাল দেখি যুগের পরিবর্তনে বাবা মা ছেলে মেয়েদের সাথে নিয়ে তৈরি পোষাকের দোকান ঘুরে ঘুরে নামি দামি কোম্পানির লেবেল আটা পছন্দের কাপড় বেছে চড়া দামে কিনছে। এতে আর যাই হোক মায়ের ছোঁয়া মাখা মমতার স্পর্শ কি পায় আজকের এই ছেলে মেয়েরা? আনন্দের প্রথম পশলার ঘাটতি তো এখানেই থেকে যাচ্ছে। এ কথা ভাবার সুযোগ কি হয় যে ঈদের আনন্দের প্রথম অনুভব মায়ের স্পর্শ আমার সাথেই আমার গায়ে লেগে রয়েছে? নাকি দামী ফ্যাশন কোম্পানির লেবেল লাগানো পোষাক মায়ের বিকল্প স্বাদ দিতে পেরেছে জানি না।

এর পর আসছি খাবার দাবারে। রোজার শুরু থেকেই মাকে দেখতাম সামান্য একটু করে ময়দা মেখে হাতে নিয়ে চিমটি কেটে দুই আঙ্গুলে ডলে জিরার আকারে এক রকম সেমাই বানাতেন আমাদের মানিকগঞ্জের ভাষায় এই সেমাইর নাম যবদানা। অবসরে বেশ কয়েক দিন ধরে বানিয়ে জমা করে রোদে শুকিয়ে কাচের বয়াম ভরে রেখে দিতেন। ঈদের দিন সকালে এই যবদানা ঘিয়ে একটু ভেজে সেমাইর মত কি করে যেন রান্না করতেন আমার খুবই প্রিয় সেমাই ছিল এটা। সারা রোজা ভরে পাড়া প্রতিবেশীদের বাড়িতে ইফতার বিলি করতেন আর সেই ইফতার সাজান খঞ্চা বা ট্রে সুন্দর মায়ের হাতে কাজ করা একটা পর্দা দিয়ে ঢেকে আমার হাতে দিয়ে বলে দিতেন যা এটা ওদের বাড়ি দিয়ে আয়। এ ভাবে এক এক করে এলাকার প্রতিটা বাড়িতেই দেয়া হতো। মাঝে মাঝে এর মধ্যে আমার বিশেষ বন্ধুর বাড়িতে আগে বা একটু বিশেষ আয়োজন করে দেয়ার জন্য আমি আবার বায়না ধরতাম। আবার ওই সব বাড়ি থেকেও একেক দিন বা কোন দিন এক সাথে কয়েক বাড়ি থেকেও ইফতার আসত।

আবার বাবার কলিগ বা বন্ধুদের বাবা ইফতার করার জন্য দাওয়াত করতেন তাদের বাড়ি যেতাম। আমাদের বাসায় ও তারা আসতেন। এই দিন গুলিতে ছিল আনন্দের আর এক মাত্রা। তবে একটু দূরে কোথাও হলে তারাবীর নামাজে উপস্থিত থাকতে পারবেন না বলে বাবা দূরে কোথাও যেতে চাইতেন না।
রোজার শেষ দিনে ইফতারি করেই বের হতাম বাসার বাইরে বন্ধুদের সাথে চাঁদ দেখতে। চাঁদ দেখা গেলে সে কি আনন্দ চিৎকার! চিৎকার করতে করতেই বাসায় আসতাম, “মা মা চাঁদ দেখেছি, কাল ঈদ হবে” কই দেখি বলে মা বাবাও বের হতেন। চাঁদ দেখেই বাবা ব্যাগ নিয়ে বের হতেন বাজারে সাথে আমার হাত ধরে নিয়ে যেতেন। মাংস, চাউল, সেমাই, বাদাম ইত্যাদি নানা কিছু যা যা মা একটা লিস্টে লিখে দিয়েছেন তাই দেখে লিস্টের সাথে মিলিয়ে বাবা এক এক করে কিনে নিতেন। ফিরে এসে দেখতাম সারা মহল্লায় মশলা বাটার ধুম। তখন আবার এখনকার মত ঘরে ঘরে ফ্রিজ নামক ঠাণ্ডা আলমারি ছিল না। আদা, রসুন সহ নানা মশলার গন্ধে বাসায় ঈদ শুরু হয়ে যেত এখন থেকেই। অনেক রাত অবধি মা নানা পদ রান্না করে রাখতেন। আমিও পাশে বসে থাকতাম। মা কে এটা ওটা এগিয়ে দিতাম কিংবা অন্তত ছোট ভাই বোনকে সামলাতাম। সে যে কি আনন্দ তা কি আর শুধু ভাষায় প্রকাশ করা যায়? এ যে শুধুই অনুভবের, একান্ত হৃদয়ের গভীরের অনুভূতি। হাসিতে উজ্জ্বল মায়ের মুখে বিন্দু বিন্দু ঘামের ঝিলি মিলি কি আর কিছুতে পাওয়া যায়? সে যে এক স্বর্গীয় আনন্দ।

ঈদের সকালে সেমাই, ক্ষীর বা পায়েস বা ফিরনি আর গোরুর মাংস এবং খিচুড়ি, নামাজ পরে এসে দেখতাম মা সব রান্না বান্না শেষ করে গোসল করে নতুন শাড়ী থাকলে তাই পরে থাকতেন। এসেই আগে মায়ের পা ছুঁয়ে সালাম করে বাবাকে সালাম করতাম পরে বাবার সাথে ভাইয়ের সাথে কোলা কুলি। এবার বাবা কিছু টাকা দিতেন সারা দিন ধরে ইচ্ছে মত খরচ করার জন্য। নামাজের মাঠে সবার সাথেই কোলাকুলি করে এসেছি।

নামাজ সেরে এসে আবার পোলাও মাংস খেয়ে বের হতাম মহল্লায় সব বাসায় চাচীদেরকে সালাম করতে। সেখানেও কিছু খেতে হতো। সারাটা দিনই বন্ধুদের সাথে ঘোরাঘুরি এটা ওটা দেখা। দিনের শেষে ক্লান্ত হয়ে চোখে ঘুমের রেশ নিয়ে বাসায় ফিরে এলে মায়ের এক পশলা মিষ্টি বকুনি হজম করে বাথরুমে ভরা বালতিতে দাঁড়িয়ে হাত মুখ ধুয়ে এসে মায়ের আচল দিয়ে হাত মুখ মুছতাম। মা আবার আর এক দফা বকে রাতের খাবার আয়োজন করতেন রাতে সাধারণত বিরিয়ানি হতো।
সারা দিন বাসায় কে এলো বা মা বাবা কোথায় গেছেন কিছুই জানতাম না। বাবা, ছোট ভাই বোন সবাই মিলে খেয়ে দেয়ে সাথে সাথেই এত কাঙ্ক্ষিত মহা আনন্দের ঈদের সমাপ্তি ঘটিয়ে বিছানায় শুয়ে পরতাম। সারা দিনের ফিরিস্তি ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পরতাম কিছুই টের পেতাম না। আজ ভাবি আহা অমন ঈদ যদি আমাদের ছেলে মেয়েরা দেখতে পেত!

ঈদ শপিং


নিউ মার্কেট আর গাউসিয়াতে চলছে কেনা কাটা
দেশটি জুরে কোথাও আর নেই যে কোন ফাকা।
এখান থেকে ওখানেতে চলছে ছোটাছুটি
কোন বাজারে পাবে পোশাক হবে মোটামুটি।

দামে কম লাগবে ভাল দেখতে হবে খাসা
পড়শিরা সব বলবে ভাল এইতো এখন আশা।
চমকে দেব নতুন কাপড় নতুন ডিজাইন
হাল ফ্যাশনের ছড়াছড়ি কোনটা হবে ফাইন।

এখানে নয় ওখানে চল গিন্নী ধরে বায়না
হাটা হাটি ঘোরা ঘুরি আর যে দেহে সয় না।
ভিউ প্যালেসে এসে বধূ শাড়ি নিয়ে হাতে
দাম শুধাল দোকানীরে আমায় নিয়ে সাথে।

ষাট হাজারে দিতে পারি, প্যাকেট করব নাকি
এটাই আসল বেনারসি আর যে সকল মেকি।
দামটি শুনে আঁতকে উঠি, একি হলো হায়
পকেট কখন উবে গেছে প্রাণটা বুঝি যায়!

গিন্নী আমার অতি ভাল সাহস করে বলি তারে
চটপটি আর ফুচকা খেয়ে এবার চল ঘরে।
কালকে তোমায় শাড়ি দেব, আর যা আছে কিছু
কেন তুমি মিছে আমায় মন ভুলিয়ে আনলে পিছু?

কেমন করে বলি তাকে পকেট আমার ফাঁকা
কোথা থেকে পাব এখন এত গুলি টাকা?
চুপটি করে বসে আছি মাথায় দিয়ে হাত
বুঝতে তিনি চায়না মোটে কোন অজুহাত।

চারিদিকে লাল নীল জ্বলছে বাতির বাহার
এবার বুঝি ভাঙবে আমার এত দিনের সংসার।

ঈদের বাজার


একটা মোটে গিন্নী আমার বড়ই হৃদয়বান
এবার ঈদে শাড়ি না পেলে করবে সে জান কোরবান।
ইফতারির পরে সেদিন এগিয়ে দিল এক লিস্টি
ভাবলাম বুঝি কিনতে আমায় বলবে কিছু মিষ্টি।

পড়ে দেখে প্রাণটা আমার চাইল, ছেড়ে যেতে খাঁচা
মনে বলে পরেছিস ফান্দে এবার, জানটা এখন বাঁচা।
ফর্দে লেখা চারটা শাড়ি তার দুইটা বেনারসি
একটা হলো জামদানী আর একটা আনারসি।

জুতা স্যান্ডেল লাগবে কতেক মার্কা হবে বাটা
আরাম আয়েস সবই হবে থাকবে সুখে পা’টা।
তার সাথে থকবে সব ম্যাচিং করা হাতের চুরি
কানের দুল আর মালা মিলবে না তার জুরি।

নেইল পালিশ, লিপস্টিক আর চোখের কাল কাজল
সাজব আমি থাকবে লোকে, মেলে চোখটি সজল।
একটু পরে মেয়েরা সব দল বেধে এল বাবার কাছে
এসেই দেখে বাবার পাশে চুপটি করে মা বসে আছে।

মায়ের মত ভবটি ধরে বলল হেসে হেসে
কিচ্ছুটি আর যায়না পাওয়া এই পোরার দেশে।
ইদের পোশাক কিনতে আমরা যাব সিঙ্গাপুরে
ইচ্ছে যদি কর তুমি যেতে পার এক মজার টুরে।

বললাম আমি হতাশ হয়ে লাগবে কত টাকা
জীবন আমার নর বড়ে নেই যে চলার চাকা!
টাকা অতি তুচ্ছ ব্যাপার, লিখে দাও একটা চেক
দশ নয়ত বিশ লাখের মাঝেই সব,
মানিয়ে নেব বেশ।