মুরুব্বী এর সকল পোস্ট

মুরুব্বী সম্পর্কে

আমি আজাদ কাশ্মীর জামান। আছি মুরুব্বী নামের অন্তরালে। কবিতা পড়ি, কবিতা লিখার চেষ্টা করি। ভেতরে আছে বাউল মন। খুঁজে ফিরি তাকে। জানা হয়নি এখনো। ঘুরতে ঘুরতে আজ পৃথিবীর স্বর্গে। এখানেই পরিচয় হয়েছিলো, কবিতা পাগল এক মানুষের সংগে। নাম জিয়া রায়হান। যার কিছু শব্দকথা, এ্যাতোদিন ভরেছে আমার পাতা। উথাল পাথাল হাওয়া, হৃদয়ে জাগালো দোলা পেলাম কিছু সমমনা মানুষের দ্যাখা। দিনভর আর রাতভর শুধু কবিতায় গেলো বেলা। সব ছেড়েছি- সব পেয়েছি- ভুলতে পারিনি শুধু কবিতার অশ্রুসজল চোখ। ভালো লাগা থেকেই দু’ একটা শব্দ সাজাবার চেষ্টা করি। মাতাল বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে মাটির কলসে, তবলার ধ্বণী তুলে গাইতে পারি বেসুরো গান- সুর নামের অন্তরালে। ভালোলাগে পোষা কবুতরের পালক ললাটে ছোঁয়াতে। ফুল থেকে রং নিয়ে, খেলি হোলিখেলা, হৃদয়ের উঠোনে। আজ তারি ধমকে এলাম স্বরূপে- স্বকথায় ভরাবো পাতা।   hits counter

৩০ বছরের সৌদি আরব

রবার্ট লেসির ইনসাইড দ্য কিংডম: কিংস, ক্লারিক্স, মডার্নিস্ট, টেররিস্ট অ্যান্ড দ্য স্ট্রাগল ফর সৌদি অ্যারাবিয়া বইটির এই আলোচনাটি দ্য ইকোনোমিস্ট-এর ১০ অক্টোবর ২০০৯ সংখ্যা থেকে অনূদিত হলো…

haj

দ্য কিংডম, সৌদি আরব নিয়ে লেখা তাঁর প্রথম বই প্রকাশের ২৫ বছর পর রবার্ট লেসি বইটির দ্বিতীয় পর্ব লেখার জন্য আবার গিয়েছিলেন সেখানে। তিনি এবার তিন বছর সেখানে ছিলেন এবং কোনো ধরনের অতিরঞ্জন ছাড়াই বলা যায়, রাজপুরুষ থেকে অতিসাধারণ, ব্লগার থেকে ব্যবসায়ী—প্রায় সব শ্রেণীর সব ধরনের মানুষের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। এবারের বইটি আগেরটি থেকে অনেক গোছানো, সমৃদ্ধ সুবিবেচনা প্রসূত ও জমজমাট।

বিগত ৩০ বছরের সৌদি আরব তাঁর এবারের বইয়ের মূল প্রতিপাদ্য। অর্থাৎ গতবার যেখানে শেষ করেছিলেন এবার শুরু করেছেন ঠিক সেখান থেকেই। এই সময়ের মধ্যে সৌদি আরবকে বেশ কিছু সমস্যার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও এর ফলাফল মোকাবিলা করতে হয়েছে। যার প্রথমটি হলো ১৯৭৯-এর বিপর্যয়। প্রতিবেশী দেশ ইরানে ইসলামি বিপ্লবের মাধ্যমে শাহ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর জুহায়মান নামক এক জঙ্গি নেতার নেতৃত্বে একদল সশস্ত্র লোক মক্কার কাবা ঘর অবরুদ্ধ করে এবং মুসলিম ত্রাতার আগমন বার্তা ঘোষণা করে। সেইসঙ্গে আফগানিস্তানে সোভিয়েত বিপর্যয় সারা বিশ্বেই মুসলিম জঙ্গিবাদের অপ্রতিরোধ্য উত্থান ত্বরান্বিত করে।

Saudi-Arabia-Military

আশির দশক ছিল বিপর্যয়ের দশক। এরপর পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে মোড় নেয়। ১৯৯০ সালের গ্রীষ্মে ইরাকের কুয়েত আক্রমণের পর সৌদিরাজ ফাহাদ বাধ্য হন পাঁচ লাখ পরধর্মী সেনাকে (বেশির ভাগই মার্কিন) আরব ভূমিতে আমন্ত্রণ জানাতে। এটা শুধু ওসামা বিন লাদেনের ভেতরেই বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেনি বরং এই বিরূপতা সমগ্র পবিত্র আরব ভূমিতে পঙ্গপালের মতো ছড়িয়ে পড়ে। সৌদি ইসলামপন্থীরা এটাকে বিবেচনা করে সাম্রাজ্যবাদী তৎপরতার অংশ হিসেবে। এই ঘটনা সৌদি রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে এক ভয়াবহ ও তীব্র জিগীষার সৃষ্টি করে। এরই ফলাফল লাদেন ও তাঁর বাহিনীর উত্থান যার ভয়ংকরতম পরিণতি হচ্ছে ৯/১১।
আর কোনো বইয়েই সৌদি আরবের সঙ্গে জঙ্গিবাদ ও আল-কায়েদার এই পারস্পরিক যোগসূত্রটুকু এত বিশ্বাসযোগ্যভাবে উপস্থাপিত হয়নি। বস্তুত তিনি মনে করেন সৌদি যোগসাজশ ছাড়া ৯/১১-এর ঘটনা ঘটা একেবারেই অসম্ভব।

এসব বিষয় নিয়ে কম আলোচনা হয়নি। অন্যদের সঙ্গে জনাব লেসির পার্থক্য হচ্ছে তিনি এখানে সৌদি আরবের মানুষের প্রত্যক্ষ জবান ব্যবহার করেছেন, তাদের অন্তর্মুখীনতা ও স্বভাবসুলভ গুটিয়ে থাকা মনোবৃত্তি সত্ত্বেও। ব্যবচ্ছেদ করেছেন তাদের স্বভাবের গভীরে প্রোথিত অসহিষ্ণুতাকে। তারা বর্ণনা করেছেন মহানবী টেলিভিশন (শয়তানের কারখানা), ফুটবল (খেলোয়াড়রা হাফপ্যান্ট পরলে সেটা অবৈধ) কিংবা ব্যাংক নোটের (যেহেতু সেখানে বাদশাহ এর ছবি আছে তাই পুত্তলিকতাদুষ্ট) অনুমোদন দিয়েছেন কিনা সে ব্যাপারে জুহায়মান ও তার অনুসারিরা (এক অর্থে যাদের আল-কায়েদার পূর্বসূরি বলা যায়) কীভাবে দীর্ঘ বাহাসে লিপ্ত হতো। মনসুর আল নোগাইদান, একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা, তাঁর জবানিতে জানা যায়, ছোটবেলায় কীভাবে তাঁকে একটি ভিডিওর দোকানে আগুন ধরিয়ে দিতে বাধ্য করা হয়েছিল; কীভাবে তাঁর বন্ধুদের নাজেহাল হতে হয়েছিল সাবলীলভাবে কোরআন না পড়তে পারার কারণে।

জনাব লেসি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষিকা ও কলামিস্টের সঙ্গে কথা বলেছেন। রাষ্ট্রীয় গোপন পুলিশ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সরঙ্গ সম্পৃক্ত থাকার অহেতুক সন্দেহে যাকে তিন মাস সবকিছু থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখে। একটি চাঞ্চল্যকর তথ্যও দিয়েছেন লেসি। দেশান্তরে নির্বাসিত সংখ্যালঘু শিয়া সম্প্রদায়ের (যাদের বিধর্মী এবং ইরানের চর হিসেবে অপদস্থ করা হয়) নিজ ভূমিতে ফেরার জন্য বাদশাহ ফাহাদের সঙ্গে দরকষাকষির দীর্ঘ ইতিহাস তিনি উন্মোচন করেছেন সাবলীলভাবে। নারী-পুরুষের অসাম্য ও পরস্পর বিরোধিতাকে তিনি সৌদি সমাজের মূল দ্বন্দ্ব বলে উল্লেখ করেছেন। সৌদি নারীদের অসহায়ত্ব ও একাকীত্বের ছবি আঁকতে গিয়ে তিনি দেখিয়েছেন সৌদি পুরুষদের উদাসীনতা ও খামখেয়ালি মনোভাবের কারণে অনেক নারী সমলৈঙ্গিক সঙ্গপ্রিয়তা এমনকি সমকামে আসক্ত হয়ে পড়ছে।

05.-Saudi-women-drive
ইনসাইড দ্য কিংডম বইটিতে লেখক বর্তমান শাসক বাদশাহ আব্দুল্লাহর ঘরোয়া ও সাধারণ জীবনযাপনের চিত্র তুলে ধরেছেন। তাঁর মধ্যে আমরা বাগানবাড়িতে নাতিদের সঙ্গে সাঁতার কেটে কিংবা ঘোড়ার গায়ে হাত বুলিয়ে সময় কাটানো একজন সাধারণ আরবের প্রতিকৃতি দেখতে পাই। সেই সঙ্গে তাঁকে সংস্কারপন্থীও মনে হয়েছে, যিনি কিনা শিক্ষা ও সামাজিক ক্ষেত্রে সত্যিকারের পরিবর্তন চান; চান ওয়াহাবিবাদের অনমনীয় সুতোগুলোকে আরেকটু আলগা করে দিতে। বাদশাহ আব্দুল্লাহর প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া সত্ত্বেও তিনি জানিয়েছেন এসব কাজ সুষ্ঠুভাবে শেষ করা একজন অশীতিপর ব্যক্তির জন্য মুশকিলই বটে। সেইসঙ্গে অবশ্য আমাদের এটাও মনে করিয়ে দিয়েছেন, সত্যিকারের সদিচ্ছাই পারে যেকোনো ধরনের প্রতিকূলতা দূর করতে।

চিন্তাকর্ষক এ বইটিতে একটি বড় ধরনের অসম্পূর্ণতা রয়েছে। বুঝদার একজন লোক হওয়া সত্ত্বেও রাজনৈতিক বিশ্লেষণে তাঁকে অতটা পরিপক্ক কিংবা সুবিবেচক মনে হয়নি। তিনি শুধু চরমপন্থীদের সঙ্গে সৌদি রাজবংশের দ্বন্দ্বের একরৈখিক গ্রাফই আঁকতে পেরেছেন। শুধু আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী ইরানের মোকাবিলাতেই নয়, নিজেদের তখ্ত নিরাপদ রাখার জন্যও সৌদি রাজবংশ ধর্মকে কতভাবে ব্যবহার করেছে সেই জটিল সমীকরণ তাঁর দৃষ্টি এড়িয়ে গেছে।
দিন এবং রাতকে কিভাবে বিভেদ করেছে।

soudi.jpg
alfaisaliah1

জলের সন্ত্রাস

zol3

চারিদিকে জল যার সে আর কোথায় যাবে এই
অবেলায়, শ্রাবণের নিরুক্ত সন্ধ্যায় ? নিঃশ্বাসের
মত নিঃশব্দ, নির্জন পায়ে কারা যেন, জেনে নেই,
প্রতি রাতে এসে হানা দেয় পৌরাণিক বিশ্বাসের।

মন্দিরে মন্দিরে ! তবু একদিন শেষ সাহসের
কনিষ্ঠ আঙুল ধরে ও- পাড়ার ধ্রুপদী যুবক
কৌতূহলের কামড়ে সুন্দর, দুর্বোধ্য সিন্দুকের
নিভৃত অন্তরে উঁকি দিয়ে দেখেছিল কুরুবক।

ফুলের পাঁপড়ি মেলে দেবার নিমগ্ন ইতিহাস
আর আরক্ত রহস্য ভূতগ্রস্ত বোধের বিদ্যুতে
এবং বিস্ময়ে। রক্তকণিকার তুমুল সন্ত্রাস
বিপুল ধ্বসিয়ে দেয় সংবিধান। অচ্যুতে- অচ্ছুতে।

এক পাত্রে পান করে কোজাগরী রাত্রির গোপন
নির্যাস। শিল্পের মত অনিন্দিত, অব্যর্থ মুখোশে
নিজেকে আড়াল করে সন্তর্পণে জানি না কখন
আমিও চেয়েছি দেখে নিতে জীবনে জীবন ঘষে।

একান্তে জ্বালান যায় কি না নতুন আগুন কিছু
পুরোনো এ- পৃথিবীর সম্মোহনী সুড়ঙ্গের আর্দ্র
আবহাওয়ার বিপক্ষে। কিন্তু আঁকা- বাঁকা- উঁচু- নীচু
পথ পাড়ি দিয়ে পরিণামে দেখি মাঘ নয়, ভাদ্র।

বিশাল শীতল থাবা রৌদ্রদগ্ধ প্রাঙ্গনে প্রাঙ্গনে
ব্যাকুল বিস্তার করে আছে। বর্গী লুটেরার দল
লুটে নেয় ঐতিহ্যের তোরঙ্গ। প্রমার আবাহনে
আমার মননে শুধু ফণা তোলে নঞর্থক জল।

zol1

অক্ষিরসে তুমি নেই

অকস্মাৎ যেন খুলে গেলো আগলের ঝাঁপ
থাকে শুধু মারণ উদ্ভাস আকাশ- পাতাল।
ব্যাকরণে অনুক্ত সূত্রের তীক্ষ্ণ ফলা ছিন্ন করে

জরাজীর্ণ মোহ আমার।

আর সুখ শীতের কুণ্ডলী ধোঁয়া ছেড়ে
ফাল্গুন- বিকেল, দেখো, হিলহিলে সরীসৃপ
প্রজ্ঞা নিয়ে অস্তিত্বের একান্ত চাতালে প্রথম
জন্মের শেষ চিহ্ন রেখে যায় …

শোন, কান পেতে বধির হয়ে শোন-
পরিশুদ্ধ ঘন্টা ঐ বেজে চলে নিরন্তর …
কালের বিবস্ত্র বক্ষ দীর্ণ করে সেই ধ্বনি
ক্রমাগত কাবু করে যাবতীয় স্বরের বৈভব।

অক্ষিরসে তুমি নেই …

স্বপ্নদ্রষ্টা ভ্রান্ত বিশ্লেষণে নিজেই যেন আজ
নিজস্ব গরলে দ্রবীভূত। তাই ল্যাবরেটরির
অম্ল- ক্ষার- রসায়নে সোমত্ত সনেটদ্বয়
বিভ্রমে আকণ্ঠ ডুবে থাকে। সমস্ত ঋণের দায়
একাকী আমার শুধু, তুমি নির্দ্বিধায় নগ্ন সুখে
যত খুশি পান করো পাঁচতারা হোটেলের বারে।

কারণ অক্ষিরসে তুমি আর নেই।

রবীন্দ্রনাথের চির সবুজ অনুভূতি …

dfeec62e4b

হে বন্ধু, সবার চেয়ে চিনি তোমাকেই
এ কথায় পূর্ণ সত্য নেই।
চিনি আমি সংসারের শত সহস্রেরে
কাজের বা অকাজের ঘেরে
নির্দিষ্ট সীমায় যারা স্পষ্ট হয়ে জাগে,
প্রত্যহের ব্যবহারে লাগে,
প্রাপ্য যাহা হাতে দেয় তাই,
দানা যাহা তাহা নাহি পাই।

অনন্তের সমুদ্রমন্হনে
গভীর রহস্য হতে তুমি এলে আমার জীবনে।
উঠিয়াছ অতলের অস্পষ্টতাখানি
আপনার চারিদিকে টানি।
নীহারিকা রহে যথা কেন্দ্রে তার নক্ষত্রেরে ঘেরি,
জোতির্ময় বাষ্পমাঝে দূ্র বিন্দু তারাটিরে হেরি।
তোমা-মাঝে শিল্পী তার রেখে গেছে তর্জনীর মানা,
সব নহে জানা।
সৌন্দর্যের যে- পাহারা জাগিয়া রয়েছে অন্তঃপুরে
সে আমারে নিত্য রাখে দূ্রে।

httpv://www.youtube.com/watch?v=hhcDCoOPtmw

একটি দুপুর

paaaaaaaaaaayt

একটি দুপুর দীর্ঘ থাবার প্রতীক
উত্তরে আর দক্ষিণে গরমিল
একটি দুপুর সন্তাপে অস্থির
গ্রন্থি বিহীন অনুষ্টুপের মাত্রা।

সূর্যের কাছে নতজানু সাদা অভ্র
একাকী ঘুঘুর কন্ঠে মূর্ত বোধ
দিগন্ত জোড়া অবরোধ শাসনের
অভিযোগমালা তবুও দুর্নিরীক্ষ।

একটি দুপুর দুঃস্বপ্নের আততি
ঘুম- ভাঙ্গা রোদে ঝিম- ধরা সিম্ফনি
প্রতি মুহূর্ত কোমলে- কঠিনে গড়া
উষ্ণতা তার আত্যন্তিক সঙ্গী।

নিস্তরঙ্গ জনপদ খাঁখাঁ মিছিল
দোকানে দোকানে শূন্যতা খেলা করে
একটি ছবির ভেতরে আরেক ছবি
যতিচিহ্নর পরে জেগে থাকে শিল্প।

একটি দুপুর অর্থমুক্ত কবিতা
গুণীর সরোদে আঙুলের শেষ টোকা
বাস্তব জুড়ে কুয়াশার ক্যামোফ্লেজ
একটি দুপুর গাঢ় সূর্যরাগে অন্ধ।

erttttt

নিরাপত্তা, নীলিমা, জীবনানন্দ …

76b7b4f34c11c2f0d2871b42432c5600

বেইজিং গিয়ে বলা বাহুল্য চীনের প্রাচীরে গিয়েছি। সিঁড়ি বেয়ে উঠেছি ওপরে, দিগন্তে তাকিয়ে দেখেছি মাইলের পর মাইল বিখ্যাত সেই গ্রেট ওয়াল; মানুষের তৈরি পৃথিবীর একমাত্র স্থাপত্য যা নাকি মহাশূন্য থেকে দেখা যায়। পাহাড়ের গায়ে রেখার মতো মিলিয়ে যাওয়া দেয়ালটি দেখে ভাবছিলাম হাজার মানুষের, শত বছরের এই শ্রমের পেছনে মূল ভাবনা হচ্ছে নিরাপত্তা, সিকিউরিটি। সম্রাট তাঁর রাজ্যকে শত্রু থেকে নিরাপদ রাখতে চেয়েছেন।

আজকের রাষ্ট্রপ্রধানেরা নিজেদের নিরাপদ করতে অস্ত্রভান্ডারে অস্ত্র মজুদ করেন, পরমাণু বোমা বানান। আর সাধারণ মানুষ নিজেদের নিরাপদ রাখতে ব্যাংক ব্যালান্স বাড়ায়, বাড়ি বানায়, জমি কেনে। একটা নিরাপদ ঘেরের মধ্যে নিজেদের সুস্থির মতো বসাতে প্রাণাতিপাত করে মানুষ। এই সেন্স অব সিকিউরিটি প্রায় প্রবৃত্তির মতো তাড়িত করে মানুষকে।

কিন্তু সবাইকে নয়। জগতে এমন মানুষও আছেন, যাঁরা তাঁদের চারপাশে নিরাপত্তার ওই প্রাচীর বানানোর কোনো তাগিদ বোধ করেন না। অরক্ষিত হয়ে ঘুরে বেড়ান। ট্রাম এসে চাপা দেয় তাঁদের। যেমন দিয়েছিল জীবনানন্দ দাশকে। প্রথম আলোতে সম্প্রতি প্রকাশিত জীবনানন্দের ঘনিষ্ঠজন ভূমেন্দ্র গুহের সাক্ষাৎকার পড়তে গিয়ে চীনের প্রাচীরে দাঁড়িয়ে নিরাপত্তা নিয়ে আমার ভাবনাটি মনে পড়ছিল। মৃত্যুর পর তাঁর শব দেখার জন্য যখন বুদ্ধদেব, অচিন্ত্য, সজনীকান্তসহ সব বিখ্যাত লেখকেরা এসেছেন, দেখে অবাক হয়েছেন তাঁর স্ত্রী।

ভুমেন্দ্রকে বলছেন−’তাহলে কি তোমার দাদা বড় লেখক ছিলেন?’ তারপর বললেন−’তোমার দাদা বাংলা সাহিত্যকে নিশ্চয় অনেক দানও করে গেলেন। কিন্তু আমার জন্য কী রেখে গেলেন বলো তো?’ মোক্ষম প্রশ্ন।

একজন স্ত্রীর পক্ষে এক’শ দশ ভাগ জরুরী প্রশ্ন। স্বামী-স্ত্রীর ভাবনার যদি অসেতুসম্ভব দুরত্ব থাকে তাহলে তো বটেই, দুরত্ব না থাকলেও এ প্রশ্ন খারিজ হয় না। সংসারকে নিরাপদ করার জন্য কী রেখে গেছেন জীবনানন্দ? ব্যাংকে টাকা, বাড়ি অথবা এক টুকরো জমি? কিচ্ছু না।

রেখে গেছেন কী সব ধুসর পান্ডুলিপি। ও দিয়ে আধা কেজি আলুও পাওয়া যাবে না। ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে নয়, তাঁর মন ঘুরে বেড়িয়েছে অশোকের, বিম্বিসার জগতে। সারা কলকাতা হেঁটে বেড়িয়েছেন তিনি, প্রায়শই একা। প্রায় সারা রাত হেঁটে রাত সাড়ে তিনটার দিকে বাসায় ফিরেছেন। আলুর দাম থেকে মনকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া, কিংবা বলা যায় অন্যমনস্ক হওয়াই যার পেশাগত কাজ, তাঁকে নিয়ে সংসারের বিপদ, নিজের বিপদ, আশপাশের মানুষের বিপদ। এ ধরনের মানুষের পক্ষে সংসার করতে যাওয়াই এক বিপদ। তবু তাঁরা করেন। হয়তো সামাজিকতার চাপে কিংবা হয়তো খানিকটা লোভে পড়েও। তারপর পরিবার-বন্ধুজনের সাঁড়াশির নিচে পড়েন। তখন হয়তো কিছু বলার থাকে না তাঁর।

রাতে হয়তো চুপি চুপি আলো জ্বালিয়ে লেখেন−’মেয়েটির প্রাণ একটি একাকী কুকুরের মত যেন, শুকনো পাতার পেছনে ছোটে, প্রজাপতি দেখে ঘেউ ঘেউ করে, আকাশের নিস্তব্ধ চাঁদ দেখে বিড়ম্বিত হয়ে ফেরে।…মানুষের আশা, প্রেম, ঘৃণা, মৃত্যুর জগৎ তৈরী হচ্ছে, ভেঙ্গে যাচ্ছে কিন্তু তার জীবনে কোন নির্দেশ নেই।’

জীবনে কার কী নির্দেশ আছে, এ নিয়ে রাতে বসে যতই তিনি ভাবুন না কেন, সকালে উঠে ঠিকই তাঁকে আলু কিনতে যেতে হয়। কবিতা, গল্প লেখা−বাউলরা যেমন বলেছেন, একধরনের বাতাসে গেরো দেওয়ার মতো কাজ, তার চেয়ে আলু কেনা কম কঠিন কাজ নয়। তার ওপর এ তো চালু কথা যে সংসার আলুতে চলে, কবিতায় নয়।

যাঁরা চৌকস তাঁরা আলু এবং কবিতা দুটোরই ব্যবস্থা করতে পারেন। জীবনানন্দ এই দুয়ের ফেরে পড়ে সারা রাত পথে পথে হেঁটেছেন। সবার মন যখন বাজারে, বোনাসে; তাঁর মন তখন অন্যখানে, হয়তো শালিখের হলুদ ঠ্যাংয়ের দিকে। এ ধরনের অন্যমনস্ক মানুষ না সংসারকে নিরাপদ করতে পারেন, না নিজেকে।

একবার মংপুতে রবীন্দ্রনাথ খোলা আকাশের নিচে বসে আছেন ইজিচেয়ারে, তাঁর ঘাড় বেয়ে একটা বিষাক্ত পোকা উঠছে। দুর থেকে দেখে মৈত্রেয়ী দেবী ছুটে এসে ফেলে দিলেন পোকাটাকে। বললেন−’এত অন্যমনস্ক থাকেন কী করে?’ আমাদের স্মরণ রাখা ভালো, রবীন্দ্রনাথ মৃদু হেসে বলেছিলেন−’আমার যা কিছু হয়েছে তা ঐ অন্যমনস্কতাটুকুর জন্যই।’

জীবনানন্দের রূপসী বাংলার কবিতাগুলো যখন পড়ি, যার নাম তিনি নিজে দিয়েছিলেন ‘বাংলার ত্রস্ত নীলিমা’, তখন মনে হয় তিনি যেন একটা অতিকায় প্রাচীরই তৈরি করতে বসেছিলেন, চীনের প্রাচীরের মতোই।

গত শতাব্দীর মাঝামাঝি যখন তিনি নগরায়ণকে ধেয়ে আসতে দেখছিলেন, তখন সেই প্রবল দানবের হাত থেকে এই নীলিমাকে, যা ভূমেন্দ্র বলছেন−তখন ভীত, ত্রস্ত হয়ে কাঁপছে, তাকে বাঁচাতে গিয়ে অক্ষরের পর অক্ষর সাজিয়ে বানাতে বসলেন একটা কবিতার প্রাচীর। নিজের নয়, সংসারের নয়, একটা বিধ্বস্ত নীলিমার নিরাপত্তার কথা ভেবে ঘুমাতে পারলেন না তিনি।

কোনো উপযোগিতা নেই আজ, তবু লাখ লাখ মানুষ যেমন পৃথিবীর পিঠের ওপর সস্থির একটি রেখার মতো দাঁড়িয়ে থাকা আশ্চর্য চীনের প্রাচীর দেখতে যায়, তেমনি বহু শতাব্দী পর যখন এই বাংলার আকাশে আর কোনো শিমুল তুলো ওড়াউড়ি করবে না, অশ্বত্থের পাতার ফাঁকে আর কোনো পেঁচা বসে থাকবে না, খড়ের গাদার ওপর জমে থাকবে না ভোরের শিশির, তখন মানুষ খুলে বসবে এই অন্যমনস্ক কবির ‘রূপসী বাংলা’, অক্ষরে বন্দী করে রাখা এই আশ্চর্য জনপদের অনুপুঙ্খ ছবি দেখে বিষ্মিত হয়ে থাকবে তারা।

তথ্যঋণঃ শাহাদুজ্জামান। কথাসাহিত্যিক। শিক্ষক ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়।
পদ্মা পাড়ের মানুষ থেকে শেয়ার করা হলো।

0202039154d89d102b64dd6f84c2c99d

স্মরণ: কবি শামসুর রাহমান এবং সাতটি কবিতা

SamsurRahman0817a আজ নাগরিক কবি শামসুর রাহমান এর ৭ম প্রয়াণ দিবস। শামসুর রাহমান বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগে দুই বাংলায় তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব ও জনপ্রিয়তা প্রতিষ্ঠিত। তিনি একজন নাগরিক কবি ছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ওপর লিখিত তাঁর দুটি কবিতা খুবই জনপ্রিয়। জন্ম : অক্টোবর ২৩, ১৯২৯। মৃত্যু : আগস্ট ১৭, ২০০৬। শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি তার অমর কীর্তি। জানাই শ্রদ্ধাঞ্জলী।

জন্ম : নানাবাড়িতে। বাবা মুখলেসুর রহমান চৌধুরী ও মা আমেনা বেগম। পিতার বাড়ি নরসিংদী জেলার রায়পুরায় পাড়াতলী গ্রামে। কবিরা ভাই বোন ১৩ জন। কবি ৪র্থ। পুরোনো ঢাকার পোগোজ স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন ১৯৪৫ সালে। ১৯৪৭ সালে ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজ থেকে আই এ পাশ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিষয়ে ভর্তি হন এবং তিন বছর নিয়মিত ক্লাসও করেছিলেন সেখানে। শেষ পর্যন্ত আর মূল পরীক্ষা দেননি। পাসকোর্সে বিএ পাশ করে তিনি ইংরেজি সাহিত্যে এম এ (প্রিলিমিনারি) পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করলেও শেষ পর্বের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেননি।

পেশা : শামসুর রাহমান পেশায় সাংবাদিক ছিলেন। সাংবাদিক হিসেবে ১৯৫৭ সালে কর্মজীবন শুরু করেন দৈনিক মর্ণিং নিউজ-এ। ১৯৫৭ সাল থেকে ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত রেডিও পাকিস্তানের অনুষ্ঠান প্রযোজক ছিলেন। এরপর তিনি আবার ফিরে আসেন তার পুরানো কর্মস্থল দৈনিক মর্ণিং নিউজ-এ। তিনি সেখানে ১৯৬০ সাল থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত সহযোগী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। নভেম্বর, ১৯৬৪ থেকে শুরু করে সরকারি দৈনিক দৈনিক পাকিস্তান এর সহকারী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন ১৯৭৭ এর জানুয়ারি পর্যন্ত (স্বাধীনতা উত্তর দৈনিক বাংলা)। ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি দৈনিক বাংলা ও সাপ্তাহিক বিচিত্রার সম্পাদক নিযুক্ত হন। ১৯৮৭ তে সামরিক সরকারের শাসনামলে তাঁকে পদত্যাগ বাধ্য করা হয়। অতঃপর তিনি অধুনা নামীয় মাসিক সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

সাহিত্যধারা : বিংশ শতকের তিরিশের দশকের পাঁচ মহান কবির পর তিনিই আধুনিক বাংলা কবিতার প্রধান পুরুষ হিসেবে প্রসিদ্ধ। কেবল বাংলাদেশের কবি আল মাহমুদ এবং পশ্চিমবঙ্গের কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় বিংশ শতকের শেষার্ধে তুলনীয় কাব্যপ্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন বলে ধারণা করা হয়। আধুনিক কবিতার সাথে পরিচয় ও আন্তর্জাতিক-আধুনিক চেতনার উন্মেষ ঘটে ১৯৪৯-এ, এবং তার প্রথম প্রকাশিত কবিতা ১৯৪৯ মুদ্রিত হয় সাপ্তাহিক সোনার বাংলা পত্রিকায়। শামসুর রাহমান বিভিন্ন পত্রিকায় সম্পাদকীয় ও উপসম্পাদকীয় লিখতে গিয়ে নানা ছন্দনাম নিয়েছেন তিনি যেগুলো হচ্ছে: সিন্দবাদ, চক্ষুষ্মান, লিপিকার, নেপথ্যে, জনান্তিকে, মৈনাক। পাকিস্তান সরকারের আমলে কলকাতার একটি সাহিত্য পত্রিকায় মজলুম আদিব (বিপন্ন লেখক) নামে কবিতা ছাপা হয় যা দিয়েছিলেন বাংলা সাহিত্যের বিশিষ্ট সমালোচক আবু সায়ীদ আইয়ুব। ব্যক্তিগত জীবন : ১৯৫৫ সালের ৮ই জুলাই শামসুর রাহমান জোহরা বেগমকে বিয়ে করেন। কবির তিন ছেলে ও দুই মেয়ে। তাদের নাম সুমায়রা আমিন, ফাইয়াজ রাহমান, ফাওজিয়া সাবেরিন, ওয়াহিদুর রাহমান মতিন ও শেবা রাহমান।

প্রতিবাদী কবি : শামসুর রাহমান স্বৈরশাসক আইয়ুব খানকে বিদ্রুপ করে ১৯৫৮ সালে সিকান্দার আবু জাফর সম্পাদিত সমকাল (পত্রিকা) পত্রিকায় লেখেন ‘হাতির শুঁড়’ নামক কবিতা। বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমান যখন কারাগারে তখন তাঁকে উদ্দেশ্য করে লেখেন অসাধারণ কবিতা ‘টেলেমেকাস’ (১৯৬৬ বা ১৯৬৭ সালে)। ১৯৬৭ সালের ২২ জুন পাকিস্তানের তৎকালীন তথ্যমন্ত্রী রেডিও পাকিস্তানে রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্প্রচার নিষিদ্ধ করলে শামসুর রাহমান তখন সরকার নিয়ন্ত্রিত পত্রিকা দৈনিক পাকিস্তান-এ কর্মরত থাকা অবস্থায় পেশাগত অনিশ্চয়তার তোয়াক্কা না করে রবীন্দ্র সঙ্গীতের পক্ষে বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন যাতে আরো স্বাক্ষর করেছিলেন হাসান হাফিজুর রহমান, আহমেদ হুমায়ুন, ফজল শাহাবুদ্দীন। ১৯৬৮ সালের দিকে পাকিস্তানের সব ভাষার জন্য অভিন্ন রোমান হরফ চালু করার প্রস্তাব করেন আইয়ুব খান যার প্রতিবাদে আগস্টে ৪১ জন কবি, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক ও সংস্কৃতিকর্মী এর বিরুদ্ধে বিবৃতি দেন যাদের একজন ছিলেন শামসুর রাহমানও। কবি ক্ষুদ্ধ হয়ে লেখেন মর্মস্পর্শী কবিতা ‘বর্ণমালা, আমার দুঃখিনী বর্ণমালা’। ১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারি গুলিস্তানে একটি মিছিলের সামনে একটি লাঠিতে শহীদ আসাদের রক্তাক্ত শার্ট দিয়ে বানানো পতাকা দেখে মানসিকভাবে মারাত্মক আলোড়িত হন এবং তিনি লিখেন ‘আসাদের শার্ট’ কবিতাটি। ১৯৭০ সালের ২৮ নভেম্বর ঘূর্ণিদুর্গত দক্ষিণাঞ্চলের লাখ লাখ মানুষের দুঃখ-দুর্দশায় ও মৃত্যুতে কাতর কবি লেখেন ‘আসুন আমরা আজ ও একজন জেলে’ নামক কবিতা। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পরিবার নিয়ে চলে যান নরসিংদীর পাড়াতলী গ্রামে। এপ্রিলের প্রথম দিকে তিনি লেখেন যুদ্ধের ধ্বংসলীলায় আক্রান্ত ও বেদনা মথিত কবিতা ‘স্বাধীনতা তুমি’ ও ‘তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা’। শামসুর রাহমান ১৯৮৭ সালে এরশাদের স্বৈরশাসনের প্রতিবাদে দৈনিক বাংলার প্রধান সম্পাদকের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। ১৯৮৭ থেকে পরবর্তী চার বছরের তিনি প্রথম বছরে ‘শৃঙ্খল মুক্তির কবিতা’, দ্বিতীয় বছরে ‘স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে কবিতা’, তৃতীয় বছরে ‘সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে কবিতা’ এবং চতুর্থ বছরে ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কবিতা’ লেখেন। ১৯৯১ সালে এরশাদের পতনের পর লেখেন ‘গণতন্ত্রের পক্ষে কবিতা’। অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও জনমানুষের প্রতি অপরিসীম দরদ তাঁর চেতনায় প্রবাহিত ছিল। শামসুর রাহমানের বিরুদ্ধে বারবার বিতর্ক তুলেছে কূপমণ্ডুক মৌলবাদীরা। তাঁকে হত্যার জন্য বাসায় হামলা করেছে। এতকিছুর পরও কবি তাঁর বিশ্বাসের জায়গায় ছিলেন অনড়।

মৃত্যু : কবি শামসুর রাহমান ২০০৬ সালের ১৭ই আগস্ট বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬ টা বেজে ৩৫ মিনিটে ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর ইচ্ছানুযায়ী ঢাকাস্থ বনানী কবরস্থানে তাঁর মায়ের কবরে তাঁকে সমাধিস্থ করা হয়। জীবদ্দশায় তিনি পেয়েছেন অসংখ্য ভক্ত এবং মানুষের ভালোবাসা। পেয়েছেন আদমজী সাহিত্য পুরস্কার, বাংলা একাডেমী পুরস্কার, একুশে পদক, নাসির উদ্দিন স্বর্ণপদক, জীবনানন্দ পুরস্কার, আবুল মনসুর আহমেদ স্মৃতি পুরস্কার, মিতসুবিসি পুরস্কার (সাংবাদিকতার জন্য), স্বাধীনতা পদক এবং আনন্দ পুরস্কার। ভারতের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় এবং রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কবিকে সম্মান সূচক ডি.লিট উপাধিতে ভূষিত করে।

আজ ৭ম প্রয়াণ দিবসে তাঁরই সাতটি লিখা শেয়ার করছি।

বাইবেলের কালো অক্ষরগুলো

জো, তুমি আমাকে চিনবে না। আমি তোমারই মতো
একজন কালো মানুষ গলার সবচেয়ে
উঁচু পর্দায় গাইছি সেতুবন্ধের গান, যে গানে
তোমার দিলখোলা সুরও লাগছে।

জো, যখন ওরা তোমার চামড়ায় জ্বালা-ধরানো
সপাং সপাং চাবুক মারে আর
হো হো করে হেসে ওঠে,
যখন ওরা বুটজুতোমোড়া পায়ে মারে তোমাকে,
তখন ধূলায় মুখ থুবড়ে পড়ে মানবতা।
জো, যখন ওরা তোমাকে
হাত পা বেঁধে নির্জন রাস্তায় গার্বেজ ক্যানের পাশে
ফেলে রাখে, তখন ক্ষ্যাপাটে অন্ধকারে
ভবিষ্যৎ কাতরাতে থাকে
গা’ ঝাড়া দিয়ে ওঠার জন্যে।
যদিও আমি তোমাকে কখনো দেখিনি জো,
তবু বাইবেলের কালো অক্ষরের মতো তোমার দুফোঁটা চোখ
তোমার বেদনার্ত মুখ বারংবার
ভেসে ওঠে আমার হৃদয়ে, তোমার বেদনা
এশিয়া, আফ্রিকা আর লাতিন আমেরিকায় ব্যাপ্ত, জো।
___________________________________________

স্বাধীনতা তুমি

স্বাধীনতা তুমি
রবিঠাকুরের অজর কবিতা, অবিনাশী গান।
স্বাধীনতা তুমি
কাজী নজরুল ঝাঁকড়া চুলের বাবরি দোলানো
মহান পুরুষ, সৃষ্টিসুখের উল্লাসে কাঁপা-
স্বাধীনতা তুমি
শহীদ মিনারে অমর একুশে ফেব্রুয়ারির উজ্জ্বল সভা
স্বাধীনতা তুমি
পতাকা-শোভিত শ্লোগান-মুখর ঝাঁঝালো মিছিল।
স্বাধীনতা তুমি
ফসলের মাঠে কৃষকের হাসি।
স্বাধীনতা তুমি
রোদেলা দুপুরে মধ্যপুকুরে গ্রাম্য মেয়ের অবাধ সাঁতার।
স্বাধীনতা তুমি
মজুর যুবার রোদে ঝলসিত দক্ষ বাহুর গ্রন্থিল পেশী।
স্বাধীনতা তুমি
অন্ধকারের খাঁ খাঁ সীমান্তে মুক্তিসেনার চোখের ঝিলিক।
স্বাধীনতা তুমি
বটের ছায়ায় তরুণ মেধাবী শিক্ষার্থীর
শানিত কথার ঝলসানি-লাগা সতেজ ভাষণ।
স্বাধীনতা তুমি
চা-খানায় আর মাঠে-ময়দানে ঝোড়ো সংলাপ।
স্বাধীনতা তুমি
কালবোশেখীর দিগন্তজোড়া মত্ত ঝাপটা।
স্বাধীনতা তুমি
শ্রাবণে অকূল মেঘনার বুক
স্বাধীনতা তুমি পিতার কোমল জায়নামাজের উদার জমিন।
স্বাধীনতা তুমি
উঠানে ছড়ানো মায়ের শুভ্র শাড়ির কাঁপন।
স্বাধীনতা তুমি
বোনের হাতের নম্র পাতায় মেহেদীর রঙ।
স্বাধীনতা তুমি বন্ধুর হাতে তারার মতন জ্বলজ্বলে এক রাঙা পোস্টার।
স্বাধীনতা তুমি
গৃহিণীর ঘন খোলা কালো চুল,
হাওয়ায় হাওয়ায় বুনো উদ্দাম।
স্বাধীনতা তুমি
খোকার গায়ের রঙিন কোর্তা,
খুকীর অমন তুলতুলে গালে
রৌদ্রের খেলা।
স্বাধীনতা তুমি
বাগানের ঘর, কোকিলের গান,
বয়েসী বটের ঝিলিমিলি পাতা,
যেমন ইচ্ছে লেখার আমার কবিতার খাতা।
________________________________

বর্ণমালা, আমার দুঃখিনী বর্ণমালা

নক্ষত্রপুঞ্জের মতো জলজ্বলে পতাকা উড়িয়ে আছো আমার সত্তায়।
মমতা নামের প্রুত প্রদেশের শ্যামলিমা তোমাকে নিবিড়
ঘিরে রয় সর্বদাই। কালো রাত পোহানোর পরের প্রহরে
শিউলিশৈশবে ‘পাখী সব করে রব’ ব’লে মদনমোহন
তর্কালঙ্কার কী ধীরোদাত্ত স্বরে প্রত্যহ দিতেন ডাক। তুমি আর আমি,
অবিচ্ছিন্ন পরস্পর মমতায় লীন,
ঘুরেছি কাননে তাঁ নেচে নেচে, যেখানে কুসুম-কলি সবই
ফোটে, জোটে অলি ঋতুর সংকেতে।

আজন্ম আমার সাথী তুমি,
আমাকে স্বপ্নের সেতু দিয়েছিলে গ’ড়ে পলে পলে,
তাইতো ত্রিলোক আজ সুনন্দ জাহাজ হয়ে ভেড়ে
আমারই বন্দরে।
_____________________________________

একটি কবিতার জন্য

বৃক্ষের নিকটে গিয়ে বলি ;
দয়াবান বৃক্ষ তুমি একটি কবিতা দিতে পারো ?
বৃক্ষ বলে আমার বাকল ফুঁড়ে আমার মজ্জায়
যদি মিশে যেতে পারো, তবে
হয়তো বা পেয়ে যাবে একটি কবিতা !

জীর্ণ দেয়ালের কানে বলি ;
দেয়াল আমাকে তুমি একটি কবিতা দিতে পারো ?
পুরোনো দেয়াল বলে শ্যাওলা-ঢাকা স্বরে,
এই ইঁট সুরকির ভেতর যদি নিজেকে গুঁড়িয়ে দাও, তবে
হয়তো বা পেয়ে যাবে একটি কবিতা !

একজন বৃদেধের নিকট গিয়ে বলি, নতজানু,
হে প্রাচীন দয়া ক’রে দেবেন কি একটি কবিতা ?
স্তব্ ধতার পর্দা ছিঁড়ে বেজে ওঠে প্রাজ্ঞ কণ্ঠে – যদি
আমার মুখের রেখাবলী
তুলে নিতে পারো
নিজের মুখাবয়বে, তবে
হয়তো বা পেয়ে যাবে একটি কবিতা।

কেবল কয়েক ছত্র কবিতার জন্যে
এই বৃক্ষ, জরাজীর্ণ দেয়াল এবং
বৃদ্ধের সম্মুখে নতজানু আমি থাকবো কতোকাল ?
বলো কতোকাল ?
__________________________________

তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা

তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা,
তোমাকে পাওয়ার জন্যে
আর কতবার ভাসতে হবে রক্তগঙ্গায় ?
আর কতবার দেখতে হবে খাণ্ডবদাহন ?

তুমি আসবে ব’লে, হে স্বাধীনতা,
সাকিনা বিবির কপাল ভাঙলো,
সিঁথির সিঁদুর গেল হরিদাসীর।
তুমি আসবে ব’লে, হে স্বাধীনতা,
শহরের বুকে জলপাইয়ের রঙের ট্যাঙ্ক এলো
দানবের মত চিৎকার করতে করতে
তুমি আসবে ব’লে, হে স্বাধীনতা,
ছাত্রাবাস বস্তি উজাড হলো। রিকয়েললেস রাইফেল
আর মেশিনগান খই ফোটালো যত্রতত্র।
তুমি আসবে ব’লে, ছাই হলো গ্রামের পর গ্রাম।
তুমি আসবে ব’লে, বিধ্বস্ত পাডায় প্রভূর বাস্তুভিটার
ভগ্নস্তূপে দাঁডিয়ে একটানা আর্তনাদ করলো একটা কুকুর।
তুমি আসবে ব’লে, হে স্বাধীনতা,
অবুঝ শিশু হামাগুডি দিলো পিতামাতার লাশের উপর।

তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা, তোমাকে পাওয়ার জন্যে
আর কতবার ভাসতে হবে রক্তগঙ্গায় ?
আর কতবার দেখতে হবে খাণ্ডবদাহন ?
স্বাধীনতা, তোমার জন্যে এক থুত্থুরে বুডো
উদাস দাওয়ায় ব’সে আছেন – তাঁর চোখের নিচে অপরাহ্ণের
দুর্বল আলোর ঝিলিক, বাতাসে নডছে চুল।
স্বাধীনতা, তোমার জন্যে
মোল্লাবাডির এক বিধবা দাঁডিয়ে আছে
নডবডে খুঁটি ধ’রে দগ্ধ ঘরের।

স্বাধীনতা, তোমার জন্যে
হাড্ডিসার এক অনাথ কিশোরী শূন্য থালা হাতে
বসে আছে পথের ধারে।
তোমার জন্যে,
সগীর আলী, শাহবাজপুরের সেই জোয়ান কৃষক,
কেষ্ট দাস, জেলেপাডার সবচেয়ে সাহসী লোকটা,
মতলব মিয়া, মেঘনা নদীর দক্ষ মাঝি,
গাজী গাজী ব’লে নৌকা চালায় উদ্দান ঝডে
রুস্তম শেখ, ঢাকার রিকশাওয়ালা, যার ফুসফুস
এখন পোকার দখলে
আর রাইফেল কাঁধে বনে জঙ্গলে ঘুডে বেডানো
সেই তেজী তরুণ যার পদভারে
একটি নতুন পৃথিবীর জন্ম হ’তে চলেছে –
সবাই অধীর প্রতীক্ষা করছে তোমার জন্যে, হে স্বাধীনতা।

পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে জ্বলন্ত
ঘোষণার ধ্বনিপ্রতিধ্বনি তুলে,
মতুন নিশান উডিয়ে, দামামা বাজিয়ে দিগ্বিদিক
এই বাংলায়
তোমাকেই আসতে হবে, হে স্বাধীনতা।
______________________________

অভিশাপ দিচ্ছি

আজ এখানে দাড়িয়ে এই রক্ত গোধূলিতে
অভিশাপ দিচ্ছি।
আমাদের বুকের ভেতর যারা ভয়ানক কৃষ্ঞপক্ষ
দিয়েছিলো সেঁটে,
মগজের কোষে কোষে যারা
পুতেছিলো আমাদেরই আপনজনের লাশ
দগ্ধ, রক্তাপ্লুত,

যারা গনহত্যা
করেছে শহরে গ্রামে টিলায় নদীতে ক্ষেত ও খামারে
আমি অভিশাপ দিচ্ছি নেকড়ের চেয়েও অধিক
পশু সেই সব পশুদের।

ফায়ারিং স্কোয়াডে ওদের
সারিবদ্ধ দাঁড়
করিয়ে নিমিষে ঝা ঝা বুলেটের বৃষ্টি
ঝরালেই সব চুকে বুকে যাবে তা আমি মানি না।
হত্যাকে উতসব ভেবে যারা পার্কে মাঠে
ক্যাম্পাসে বাজারে
বিষাক্ত গ্যাসের মতো মৃত্যুর বীভতস গন্ধ দিয়েছে
ছড়িয়ে,
আমি তো তাদের জন্য অমন সহজ মৃত্যু করি না
কামনা।
আমাকে করেছে বাধ্য যারা
আমার জনক জননীর রক্তে পা ডুবিয়ে দ্রুত
সিড়ি ভেন্গে যেতে আসতে
নদীতে আর বনবাদাড়ে শয্যা পেতে নিতে
অভিশাপ দিচ্ছি আজ সেইখানে দজ্জালদের।
___________________________________

আসাদের শার্ট

গুচ্ছ গুচ্ছ রক্তকরবীর মতো কিংবা সূর্যাস্তের
জ্বলন্ত মেঘের মতো আসাদের শার্ট
উড়ছে হাওয়ায় নীলিমায় ।

বোন তার ভায়ের অম্লান শার্টে দিয়েছে লাগিয়ে
নক্ষত্রের মতো কিছু বোতাম কখনো
হৃদয়ের সোনালী তন্তুর সূক্ষতায়
বর্ষীয়সী জননী সে-শার্ট
উঠোনের রৌদ্রে দিয়েছেন মেলে কতদিন স্নেহের বিন্যাসে ।

ডালীম গাছের মৃদু ছায়া আর রোদ্দুর- শেভিত
মায়ের উঠোন ছেড়ে এখন সে-শার্ট
শহরের প্রধান সড়কে
কারখানার চিমনি-চূড়োয়
গমগমে এভেন্যুর আনাচে কানাচে
উড়ছে, উড়ছে অবিরাম
আমাদের হৃদয়ের রৌদ্র-ঝলসিত প্রতিধ্বনিময় মাঠে,
চৈতন্যের প্রতিটি মোর্চায় ।

আমাদের দুর্বলতা, ভীরুতা কলুষ আর লজ্জা
সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখন্ড বস্ত্র মানবিক ;
আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা ।
_____________________________________

তথ্য সূত্র: বাংলা উইকিপিডিয়া।
প্রদায়ক এর ফেসবুক যোগাযোগ : আজাদ কাশ্মীর জামান।

কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য এর জন্মদিন এ বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি

734377_569240303137283_740797596_n

আজ কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য এর জন্মদিন।
সুকান্ত ভট্টাচার্য এর জন্ম : ১৫ই আগস্ট ১৯২৬। মৃত্যু : ১৩ই মে, ১৯৪৭।
বাংলা সাহিত্যের মার্কসবাদী ভাব ধারায় বিশ্বাসী এবং প্রগতিশীল চেতনার অধিকারী তরুণ কবি।

আজ যদি তিনি আমাদের মাঝে জীবিত থাকতেন তবে তাঁর বয়স হতো অনেক কিন্তু তিনি যে প্রৌঢ়ত্বের কবি নন। আমরা মনে করি কবি তিনি আঠারোর। অবাধ্য, স্পর্ধিত, দুর্যোগ প্রতিপালিত আঠারোর দীপ্ত জয় ঘোষণা তিনি নিজেই করে গেছেন তাঁর কবিতায়। আঠারো তিনি পার হয়েছিলেন, মারা গেছেন একুশে, কিন্তু আঠারো অক্ষয় হয়ে আছে তাঁর বক্তব্যে, ভাষায়, ছন্দস্পন্দে, উপমায়। তারুণ্যের মধ্যে গুণ আছে কিন্তু ঋণও আছে এক প্রকারের। তারুণ্য চপল হতে জানে, সে হতে পারে বুদ্ধিতে অপরিণত, আবেগে অশিক্ষিত। কিন্তু সুকান্তের তারুণ্যে গুণ আছে, ঋণ নেই। তাঁর মধ্যে তারুণ্যের উদ্দীপনা ও উত্তেজনা আছে কিন্তু উদ্দীপনা ও উত্তেজনাকে তিনি কাব্যের শৃঙ্খলার ভেতর রেখেছেন। যেমন রেখেছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম, আরো অনেক বেশি সময় নিয়ে, আরো অনেক অধিক সংখ্যক কবিতায়।

রবীন্দ্রোত্তর বাংলা সাহিত্যের একটি অবিস্মরণীয় নাম সুকান্ত ভট্টাচার্য। দাদামশাই সতীশচন্দ্র ভট্টাচার্যের ৮২ নং মহিম হালদার স্ট্রিটের বাড়ির দোতলায় একটি ছোট্ট ঘরে জন্মগ্রহন করেন সুকান্ত। ১৯২৬ সালের ১৫ই আগস্ট বাংলা ১৩৩৩ সালের ৩০ শ্রাবণ। পিতা নিবারণ ভট্টাচার্যের দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী সুনীতি দেবীর দ্বিতীয় পুত্র তিনি। জেঠতুতো দিদি রাণীদি নাম রাখের সুকান্ত, ‘রমলা’ খ্যাত সাহিত্যিক মনীন্দ্রলাল বসুর গল্প ‘সুকান্ত’-এর নামে। বাগবাজারের নিবেদিতা লেনের বাড়ির একান্নবর্তী পরিবারে কাটে তাঁর ছেলেবেলা। এরপর সেই বাড়ি ছেড়ে আসা হয় বেলেঘাটার ৩৮ নং হরমোহন ঘোষ লেনে।

সুকান্ত তাঁর সংগ্রামী চিন্তাধারার প্রতিফলন ঘটিয়েছিলেন তাঁর অবিস্মরণীয় সাহিত্য-সৃষ্টির মাধ্যমে। দেশের মানুষকে বিদেশী শাসনের বিরূদ্ধে উৎসাহিত করেছিলেন তাঁর লেখনীর দ্বারা। বিদ্রোহী কবি সুকান্ত গেয়েছিলেন জীবনের জয়গান। গোলাম কুদ্দুস সম্পাদিত ‘একসূত্রে’ সংকলনে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল সুকান্তের ‘জনযুদ্ধের গান’, বাংলা ১৩৫১ সালের মন্বন্তর-এর ফলশ্রুতি হল ‘আকাল’ নামক কবিতা সংকলন। সাথে সাথে তাঁর রাজনৈতিক কর্মী জীবনে তিনি সারা বাংলার কিশোরদের নিয়ে তৈরি করেছিলেন ‘কিশোর বাহিনী’।

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের কবিতায় আমরা যে ভবিষ্যৎ কবির সন্ধান পাই
তাই মূর্ত হয় সুকান্তের মাধ্যমে –
“এসো কবি অখ্যাতজনের
নির্বাক মনের।
মর্মের বেদনা যত করিয়ো উদ্ধার”।

বিশ্বকবির এই দায়িত্ব পালনে ব্রতী সুকান্ত লিখলেন-
“যে শিশু ভূমিষ্ট হল আজ রাত্রে
তার মুখে খবর পেলুমঃ
সে পেয়েছে ছাড়পত্র এক,
নতুন বিশ্বের দ্বারে তাই ব্যক্ত করে অধিকার
জন্মমাত্র সুতীব্র চিৎকারে”

অথবা

“এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি-
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার”

সুকান্তের সমস্ত জীবনটাই ছিল কবিতার সাথে একাত্ম। তাঁর আগুন-ঝরানো কলমে ফুটে ওঠে বিদ্রোহের গান-
“আমার দিন পঞ্জিকায় আসন্ন হোক
বিস্ফোরণের চরম, পবিত্র তিথি”
তাঁর বিদ্রোহ সকল মানুষের জন্য, জীবনের জন্য –
“হে সূর্য।
তুমি আমাদের স্যাঁতসেতে ভিজে ঘরে
উত্তাপ আর আলো দিও,
আর উত্তাপ দিও
রাস্তার ধারের ঐ উলঙ্গ ছেলেটাকে”।

1184904_10200960823921298_229026701_n জনগণের কবি সুকান্তের সমাজ-সচেতনতা, দৃষ্টিভঙ্গি ও সাহসী কলমে তাঁর শক্তির প্রকাশের সাথে যদি যুক্ত হত তাঁর বয়সের পূর্ণতা ও অভিজ্ঞতা, তাহলে বাংলা সাহিত্য জগৎ বৃহৎ ক্ষেত্রে পূর্ণতা লাভ করতে পারতো। তা সত্ত্বেও সুকান্ত তাঁর অপরিণত যৌবনেই এমন কবিতা লিখে গেছেন যা সুপরিণত এবং এই সকল রচনার মাধ্যমেই তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন।

রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ‘যে আছে মাটির কাছাকাছি, সে কবির বাণী লাগি কান পেতে আছি’। সুকান্ত ছিলেন সেই মাটির কবি, তাই তাঁর কবিতা আমাদের হৃদয়ের এত কাছাকাছি। পার্টি ও সংগঠনের কাজে অত্যাধিক পরিশ্রমের ফলে দুরারোগ্য ক্ষয়রোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি ১৯৪৭ সালের ১৩ মে কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন। জন্মদিনে আমাদের এই প্রিয় কবিকে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি।

তথ্য সূত্র এবং শব্দ বিন্যাসের পূর্ণ কৃতিত্ব : রিয়া দাশগুপ্তা।

শুভ জন্মদিন … এবিএম শিবলী সাইক্লোন

birthday_casd

আমার দিনলিপি

ব্যস্ত আমার দিনলিপিতে সময় কোথায় পাই,
চলছি আমি সময় স্রোতে থামার সুযোগ নাই

বিশ্ব ঘড়ির কাঁটার সাথে বাঁধা আছে দম,
করতে হবে অনেক কিছু সময় অনেক কম।

কি পেয়েছি, পাইনি কি বা সেসব হিসাব রেখে,
জীবন খাতায় জমলো কি আজ সে টুকু লই দেখে।

কুড়িয়ে নিলাম অভিজ্ঞতা দিয়েও গেলাম কিছু,
চলছে সময়, চলছি আমি ফিরিনা ভাই পিছু।
birthday_124-2-1
shiblybirth

137616406534374অন্বেষণ: বে নি আ স হ ক লা

যদি আকাশের একটুকু নীল আনতে পারতাম,
দেখতাম সেই রং কি কষ্টের নীল কিনা …
আচ্ছা কষ্টের রং কি আসলেই নীল ?
কেন সবাই কষ্টের রং কে নীল বলে ?
কষ্ট হলে নাকি হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়,
সেটা কি নীল রক্তক্ষরণ ??

ইচ্ছে করে ওই সাদা পায়রার কাছ থেকে
একটু সাদা রং চেয়ে নেই,
শুভ্রতার রং, শান্তির রং,
খুঁজে ফিরি কোথায় সেই শান্তি
যা ওই সাদা সুভ্রতে লুকিয়ে আছে।

0935329_n 25fbf2f4 মাটির কোলে পরম সুখে ঘুমিয়ে থাকা ধান-বীজেরা অঙ্কুরিত। জেগে উঠে এক নতুন স্বপ্ন নিয়ে, ভোরের আলোর সাথে কথা বলে চুপি চুপি। দেখে আর দেখায় এক সোনালি ভবিষ্যৎ; আমি চেয়ে থাকি সেই ভবিষ্যৎ পানে, এক সুন্দর আলোর রেখার জন্মলগ্নে। আমি দেখেছি এক সোনালি বিন্দুকে পরিণতি পেতে, সেই স্বপ্নের আলোর রেখায় যার সাথে তালে তাল মিলিয়ে ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে আমার ভাবনার সবুজ ডালপালাগুলো। আমার চারিদিকে তাই সবুজ এক পৃথিবী আলোকিত হতে থাকে, আমি ছুঁতে চাই সেই সবুজকে হেসে ওঠা অঙ্কুরিত ধান বীজের সবুজ। প্রিয় ব্লগার সাইক্লোন। আজ তাঁর শুভ জন্মদিন। আসুন জানাই আমাদের প্রিয় ভালোবাসা এবং অভিনন্দন।

happybirthdayblueflash
312hpdsga
raa

birthday cake ity
special cake
happ866
zia6
zia8
zia9zia9zia9zia9zia9zia9zia9zia9zia9
101010101010101010101010101010

জীবনের কর্মে এবং সাফল্যে থাকুন বেঁচে। আমাদের সকলের শুভেচ্ছা ভালোবাসা সর্বোপরি শুভকামনা সব সময়ে থাকবে আপনার জন্য। শুভ হোক ব্লগিং।

ফেসবুক লিঙ্ক : আজাদ কাশ্মীর জামান।

“শব্দনীড় নবীন বরণ সংখ্যা ২০১৩” (পরিমার্জিত সংস্করণ )

প্রিয় শব্দনীড় এ প্রতিদিন নতুন নতুন ব্লগার ব্লগে নিবন্ধন করছেন এবং লিখা পোস্ট করছেন। দিনের পর দিন শব্দনীড় পরিবারের সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের স্বপ্নগুলো আরো বড় হচ্ছে। আমরা যেন ক্রমাগত সাহসী হয়ে উঠছি। দিনদিন প্রতিদিন। শিখছি। পড়ছি। একে অপরকে জানছি।

ব্লগে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন আয়োজন করা হয়। লিখা পাঠানোর প্রতিযোগিতা, আড্ডা, পরামর্শ। ব্লগারদের লিখা নিয়ে প্রকাশিত হয় ই-বুক বা ই-ম্যাগাজিন। যেখানে নতুন পুরোনো সকলের সম উচ্ছাসে উদ্ভাসিত হয় প্রযুক্তির আরো একটি দিক। ব্লগের লিখা পরের পাতায় চলে যায়। খুঁজে বের করতে হয়। সেখানে একটি ই-ম্যাগাজিন বুক শেলফে রাখা অলঙ্কারের মতো। উপহার দেবার মতো।

কলেজ জীবনের নবীনবরণ অনুষ্ঠানের কথা কি মনে পড়ে? ভুলে যাবার কথা নয়।
শব্দনীড় এগিয়ে যাবে তার আপন গতিতে। কেননা যেখানে ব্লগাররাই ব্লগের প্রাণ।

… তো আসুন হয়ে যাক ব্লগীয় নবীনবরণ উৎসব

ই-ম্যাগাজিনঃ শব্দনীড় নবীনবরণ লিখা দিন। এমন একটি পোস্ট প্রকাশ করেছিলাম এই শিরোনাম এ। সময়টা ছিলো ৩১শে জানুয়ারী ২০১৩ইং। তারপর অনেকটা সময় পেরিয়ে গেছে। ফেব্রুয়ারী থেকে শুরু হলো দেশে অস্থির একটি সময়। কোন কিছুই যেন এগুতে চাইলো না। অপেক্ষা করতে হলো অনেকটা সময়। অনেকেই জানতে চেয়েছেন কতদূর কি হলো। সদুত্তর করতে পারি নি। আমরা সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়লাম নৈমিত্তিক সব কাজে। দায় ভারের একটা বেদনা বোধ নিয়ে বিষয়টি প্রায় ভুলেই যাচ্ছিলাম। ঠিক এই সময়ে শব্দনীড় সুহৃদ সকাল রয় এগিয়ে এলেন। বাড়িয়ে দিলেন হাত সহযোগিতার।

প্রাথমিক ভাবে সকাল রয় সম্পন্ন করলেন। কারিগরের প্রতিটি সৃষ্টি এক বৈঠকে কখনই পূর্ণতা পায় না। রয়ে যায় ত্রুটি। আরো পরিচ্ছন্ন করবার ইচ্ছে তাগিদ। সত্য স্রষ্টাকে বাঁধ ভাঙ্গা অপেক্ষা করতে হয় মানসম্মত কিছু উপহারের। অপেক্ষা করতে হয় দিনের পর দিন। এরই মাঝে এগিয়ে এলেন শব্দনীড় এর অহংকার সুমন আহমেদ। ব্যক্তিজীবনে অতিব্যস্ত এই মানুষটি অঙ্গ সৌষ্ঠবে ই-বুকটি’র ০১ থেকে ১২তম পাতা’র নতুন আঙ্গিক দেবার প্রয়োজনে। যথেষ্ট পরিশ্রম দিলেন ঈদ এবং তার পরের দিন। যেন সম্পূর্ণ হলো একটি মহা অধ্যায়। অতৃপ্তি থেকে তৃপ্তি।

এখন আমি বলতে পারি, যে চেতনা আর রুচি বোধের স্বপ্ন নিয়ে একটি নান্দনিক ই-বুক এর স্বপ্ন আমরা দেখেছিলাম; তার পূর্ণতা পেলো আজ। কাজের ক্ষেত্রে সমমনা মানুষের কতটা প্রয়োজন তা যিনি জানেন তিনি ই জানেন। সুমন আহমেদ বদলে ফেললেন ইন্টারফেস। অশেষ কৃতজ্ঞতা। এই একটি মানুষের ভিতর আমি দেখেছি এক আকাশ সম্ভাবনা। যিনি রূপ থেকে রূপান্তর করে ফেলেন নিমিষে। নান্দনিক সৃষ্টিতে যার জুড়ি মেলা ভার। তাঁর জন্য শব্দনীড় সম্মান।

পরিশেষে সফল হলো। তৈরী হলো এবং মুক্তি পেলো একটি ই-বুক। আমাদের স্বপ্ন এবং ভালোবাসার একটি সংখ্যা। শব্দনীড় নবীন বরণ সংখ্যা। আজ পবিত্র ঈদের দিন সংখ্যাটি প্রকাশ করতে পেরে আনন্দ অনুভব করছি। সংখ্যাটি তৈরীতে যারা সময় দিলেন তাঁদের সবাইকে কৃতজ্ঞতা এবং ধন্যবাদ।

সংখ্যা সমন্বয়ক : আজাদ কাশ্মীর জামান।
মূল পরিকল্পনা : মোক্তাদির রশিদ আদর।
প্রচ্ছদ পরিকল্পনা ও অলংকরণ : সুমন আহমেদ।
ই-বুক সহযোগিতা এবং পৃষ্ঠা অলংকরণ : সকাল রয়।

যাদের লিখা এ্যালবাম বন্দী করা হলো :

প্রশ্নহীন স্মার্টদের বলছি : শঙ্খবীর
আমরা এবং তোমাদের পরিবর্তন : শঙ্খবীর

প্রবাসের দিনলিপি : তির্যক নীল
স্মৃতির অসুখ : তির্যক নীল

দায়ী কি অভাব নাকি স্বভাব : নিঃশব্দ যাত্রী
মাধবীলতার সাথে কথোপকথন : ফিদা
আমার কবিতা ভাবনা-২ : ফিদা
৪৮ : ফিদা

সীমা লঙ্ঘন : সেলিনা ইসলাম
শহর : তায়েবুল জিসান
প্রহরী : তায়েবুল জিসান

আমরা কি অপরাজনীতির কাছে হেরেই গেলাম : সাঈদ মোহাম্মদ ভাই
শ্বেত ময়ূরী প্রণরেনী : সাঈদ মোহাম্মদ ভাই
প্রবুদ্ধ সভ্যতা : সাঈদ মোহাম্মদ ভাই

কবি ও কবিতা : প্রলয় সাহা
মুখোমুখি : প্রলয় সাহা

উড়ো খবর : বনফুল
যমুনার পাশে : আলমগীর সরকার
দীঘির জলে পদ্মফুল : আলমগীর সরকার

মনে করিয়ে দেব : মোহাম্মদ আনু
আমরা কেবলি কবিতা খুঁজি : মেঘবালিকা
যুদ্ধজয়ী : মেঘবালিকা
সেই ফিঙ্গে পাখিটা : রাফি নিয়াজ

একদিন আমি : অজরখেচর
বাড়ি ফেরা : অজরখেচর
ভয় : অজরখেচর
ভালোবাসা কি জানে : নাহিদ ধ্রুব
ভালোবাসার দরদাম : আনু আনোয়ার
চুপচাপ : আনু আনোয়ার
মেঘের উপর বাড়ি-ফটোব্লগ : কামাল উদ্দিন

অন্ধকার সরণী ধরে শেষ হবে এ পথচলা : কায়েস সামী
অজানা প্রেমের বুক ফাটা কান্না : এম.এ. বাসেত
পুরোনা কান্নার জল আর একটি ডায়েরি : মুক্তিযোদ্ধা-১৩
মিথীলা ২ : আরাফ করিম
লিফটের সেই মেয়েটি : মিসবাহ মনজুর

অন্দরমহল : নৈসর্গিক নোমান
অচেনা বিছানায় চুরি সম্মান বা এই আমরা : মেংগো পিপোল
কয়েকজন নিশাচর মানুষের গল্প : বৈশাখী ঝড়
ঘটনাবিহনি একরাত্রি : কে এম রাকিব

নীরব যন্ত্রণা : সেলিনা ইসলাম
বৃষ্টিগ্রস্ত : সুপণ শাহরিয়ার
আমার প্রিয় জবার মতো মেয়ে : সীমান্ত প্রধান
দুর্বোধ্য সময়ে ওপারে : ছিন্নপত্র
ভুল : আযাহা সুলতান

মা এবং অনুভূতি : জেসমিন
অবনীর দুঃখ : রাজিব সরকার
দ্বিতীয় জীবন : অকৃতি শাপলা
সেমুলী : আমির হোসেন
ইচ্ছা পূরণের গল্প : সোহেল মাহামুদ
বনভোজন : ঘাসফুল

শুভেচ্ছা বাণী দিয়েছেন যারা : হরবোলা। রেজওয়ান তানিম। আমিন আহম্মদ। ফরিদুল আলম সুমন। ছন্দ হিন্দোল। দোয়েল। সকাল রয়। মুরুব্বী।

তালিকায় কারো নাম বাদ পড়লে পুনরায় সংশোধন করা যাবে। লিখক পাঠক এবং সম্মানিত সংগ্রাহক সবাইকে জানাচ্ছি প্রীতি এবং শুভেচ্ছা। শুভ ব্লগিং।

১১৬ পৃষ্ঠার ফাইল সাইজ : ৮.৫৯ মেগাবাইট। ডাউনলোড করুন লিঙ্ক থেকে।

শব্দনীড় নবীন বরণ সংখ্যা ২০১৩।

পোস্ট দাতার ফেসবুক লিঙ্ক : আজাদ কাশ্মীর জামান।

মাইক্রোসফট ওয়ার্ডের শর্টকাট চাবি

pccccccccc

পত্রিকায় পড়তাম কোন এক বিশেষ পণ্য আসছে যা দিয়ে সবই সম্ভব।
এক সময় দূর থেকে কম্পিউটার নামের জিনিসটাও দেখলাম।
দেখাই সার, নেড়ে দেখা হলোনা।
আজ ঘেটে দেখছি।

তবু মনে হলো, কিছুই জানা হলো না।
যতটুকু জানি ( এক সময় পড়েছিলাম )
শেয়ার করলাম।

মাইক্রোসফট ওয়ার্ডের শর্টকাট Key.

Alt+0131= ƒ (টাকা)
Alt+0165= ¥ (ইয়েন)
Alt+0177= ± (যোগবিয়োগ)
Alt+0215= × (গুণ)
Alt+Ctrl+T= ™ (ট্রেডমার্ক)
Alt+ Ctrl+R= ® (রেজিস্ট্রার্ড)
Alt+0163= £ (লীরা)
Alt+0128= € (পাউন্ড)
Alt+0247= ÷ (ভাগ)
Alt+248/0186= º (ফারেনহাইট)

Ctrl – A = সিলেক্ট অল।
Ctrl – B = টেক্সট বোল্ড।
Ctrl – C = কোন কিছু কপি করা।
Ctrl – D = ফন্ট পরিবর্তনের ডায়ালগ বক্স প্রদর্শন করা।
Ctrl – E = সেন্টার এলাইনমেন্ট করা।
Ctrl – F = কোন শব্দ খোঁজা বা প্রতিস্থাপন করা।
Ctrl – G = গো টু কমান্ড।
Ctrl – H = রিপ্লেস কমান্ড।
Ctrl – I = টেক্সট ইটালিক।
Ctrl – J = টেক্সট জাস্টিফায়েড এলাইনমেন্ট করা।
Ctrl – K = হাইপার লিংক তৈরী করা।
Ctrl – L = টেক্সট লেফট এলাইনমেন্ট করা।
Ctrl – M = ইনভেন্ট দেয়ার জন্য।
Ctrl – N = নতুন কোন ডকুমেন্ট খোলার জন্য।
Ctrl – O = পূর্বে তৈরী করা কোন ফাইল খোলার জন্য।
Ctrl – P = ডকুমেন্ট প্রিন্ট।
Ctrl – Q = প্যারাগ্রাফের মাঝে স্পেসিং করার জন্য।
Ctrl – R = টেক্সটকে রাইট এলাইনমেন্ট করা।
Ctrl – S = ফাইল সেভ।
Ctrl – T = ইনডেন্ট পরিবর্তন করার জন্য।
Ctrl – U = টেক্সট আন্ডারলাইন।
Ctrl – V = টেক্সট পেষ্ট করার জন্য।
Ctrl – W = ফাইল বন্ধ করার জন্য।
Ctrl – X = ডকুমেন্ট থেকে কিছু কাট্ করার জন্য।
Ctrl – Y = রিপিট করার জন্য।
Ctrl – Z = আনডু বা পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা।

(পূর্বে কেউ অত্র বিষয়ে পোষ্ট দিয়ে থাকলে, জানবেন আমি দেখি নাই।)

শিল্পীর জীবনে প্রেম …

Anindita-3

পৃথিবীর বিখ্যাত কবি সাহিত্যিক শিল্পীদের জীবনেও প্রেম এসেছে। আর এই প্রেমের পরশে তাঁরা পৃথিবীতে রেখে গেছেন মহৎ শিল্পকর্মের স্বাক্ষর। নিচে তাঁদের কয়েকজনের জীবনের প্রেম বিষয়ক ঘটনা; আসুন জেনে নেই-

benqt60_1303448010_3-dante-alighieri
দান্তে আলগিয়েরিঃ

মধ্যযুগের ইউরোপের ঘোরতর তমসার মধ্যে যিনি সর্বপ্রথম আলোকবর্তিকা নিয়ে এগিয়ে এলেন তিনি হচ্ছেন দান্তে। অবাক ব্যাপার, মাত্র নয় বছর বয়সে তিনি তার সমবয়সী বালিকা বিয়াত্রিচের প্রেমে পড়েন। বিয়াত্রিচের প্রতি তাঁর প্রবল আবেগ থেকে রচিত হয়েছে “Vita Nuova” বা “নব জীবন”। অথচ একথা অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে তিনি বিয়াত্রিচকে জীবনে মাত্র দুবার দেখেছেন। এবং এও সন্দেহজনক, বিয়াত্রিচ আদৌ তার আবেগ সম্পর্কে জেনেছেন কিনা। দান্তের এ প্রেম রক্ত মাংশের নয়, এ হচ্ছে ঐশ্বরিক। জীবনে তিনি বিয়াত্রিচকে পাননি। বিয়াত্রিচের বিয়ে হয় সাইমন নামে এক যুবকের সংগে এবং মাত্র চব্বিশ বছর বয়সে বিয়াত্রিচ মারা যান। প্রেয়সীর অকাল মৃত্যুই দান্তেকে মহৎ করে তোলে। তিনি লিখলেনঃ “That truly one may never think of her without a passion of exceeding love.” ( ভিটানোভা- ২৭ )

imagessss বিয়াত্রিচকে খুঁজে বেড়ালেন জীবনের ওপারে মরণে, লিখলেন ডিভাইন কমেডি এবং স্বর্গ থেকে বিয়াত্রিচ তাকে blessed life বা পূত জীবনের সন্ধান দিলেন।

keats-mini
কিটসঃ

ফ্যানি ব্রাউন নামের এক তরুণীর সংগে জটিল হৃদয়ঘটিত সম্পর্ক জন কিটস্ জড়িত হয়ে পড়েন। ফ্যানি যে সত্যি কিটস্ কে ভালোবাসতেন এতে সন্দেহের অবকাশ নেই। কিন্তু কিটস্ নিজেই সন্দেহ ও অবিশ্বাস থেকে জ্বলে পুড়ে মরেছেন। দারিদ্র্য, দুরাবস্থা এবং ভগ্নস্বাস্থ্য এইসব মিলে তার প্রেম একটি সুস্থ সবল গতিপথ খুঁজে পায়নি। কিটস্ এর শক্তি ও দূর্বলতার উৎস ছিলো তার প্রাণপ্রতিম ফ্যানি ব্রাউন। ফ্যানির প্রতি প্রেম থেকেই তিনি Lamia, The Nightingale, The Grecian Um ইত্যাদি বিখ্যাত কবিতা রচনা করেন। এই বিদগ্ধ কবি মাত্র ছাব্বিশ বছর বয়সে ক্ষয়রোগে আক্রান্ত হয়ে পৃথিবী ত্যাগ করেন। সবচাইতে মর্মাবিদারক হচ্ছে কিটস্ কে লেখা ফ্যানির শেষ চিঠি যা কিটসের মৃত্যু শয্যায় গিয়ে পৌঁছে এবং এবং এটা খোলার মতো শক্তিও তার ছিলো না। প্রথমে চিঠিটি তিনি তার কফিনে দিতে বলেন, পরে আবার নিষেধ করেন। শেষ পর্যন্ত চিঠিটি তার মৃতদেহের সংগে কফিনে দেয়া হয়।

b8274d56a6e01ec24a17c173d4064154
শেলীঃ

রোম্যান্টিক ভাবধারার এ কবির জীবনে প্রেমের বিষয়টা একটু অন্যরকম। তার প্রেম নির্দিষ্ট কোনো নারীর প্রতি সীমাবদ্ধ রাখেননি। তার জীবনে এসেছে হ্যারিয়েট, মেরী, ফ্যানি ও এলিয়েন। কিন্তু তাদের কাউকে নিয়ে তিনি কখনো পরিপূর্ণ ভাবে তৃপ্ত হতে পারেননি।

images
পের্ত্রাকঃ

ইটালীর কবি পের্ত্রাক তার প্রেমিকা লরাকে নিয়ে লিখলেন অপূর্ব সব সনেটগুচ্ছ। পৃথিবীর সাহিত্য পেলো কাব্যের এক নতুন আঙ্গিক।

Futurist_Mayakovsky.jpg
মায়াকোভস্কিঃ

রাশিয়ান বিপ্লবের কবি মায়াকোভস্কি বিপ্লবের শেষে পারি থেকে প্রেম বিষয়ে চিঠি লিখলেন। প্রেমে ব্যর্থ হয়ে তিনি নিজেকে অত্যন্ত অসহায় বোধ করতে লাগলেন এবং জীবনের অর্থহীনতা থেকে গুলি করে আত্মহত্যা করলেন।

rabi12913
রবীন্দ্রনাথঃ

বিশ্ববরেণ্য কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যে কতো বড় মাপের প্রেমিক কবি ছিলেন তা আমাদের সবারই জানা। “ভালোবেসে সখি নিভৃতে যতনে, আমার নামটি লিখো তোমার, মনেরও মন্দিরে” আবার “সখি ভালোবাসা কারে কয়” এইসব পঙক্তি উঁচু মাপের প্রেমিক মন না থাকলে লেখা যায়না। যৌবনের সূচনায় কাদম্বরী দেবীকে, যৌবনের শেষে মৃণালিনী দেবীকে হারিয়ে তিনি হয়েছেন বিচলিত। আবার কেউ কেউ মনে করেন আর্জেন্টাইন মহিলা ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর সংগে তাঁর প্রেমের সম্পর্ক ছিলো। ১৯২৪ সালে তিনি পেরুর স্বাধীনতার শতবার্ষিকী অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য দক্ষিণ আমেরিকা ভ্রমণ করেন এবং সেই সময় আর্জেন্টিনায় ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর অতিথি হন। আর এ জন্যই কি তিনি লিখেছেন- “আমি চিনি গো চিনি তোমারে ওগো বিদেশিনী”।

image_387_66229
নজরুলঃ

বাংলা সাহিত্যে ধূমকেতুর মতো যার আবির্ভাব সেই নজরুলের জীবনেও বিভিন্ন সময়ে প্রেম এসেছে। নার্গিস ছিল নজরুলের জীবনের প্রথম নারী। কিন্তু কোন এক অজ্ঞাত কারণে বাসর ঘরেই তাঁদের সম্পর্কের বিচ্ছেদ ঘটে। তাই নার্গিসকে কবি কোনদিন ভুলতে পারেননি। এরপর উদ্ভ্রান্ত নজরুল তরুণী প্রমিলার প্রতি আকৃষ্ট হলেন। প্রমিলার প্রতি প্রেম থেকে তিনি “বিজয়িনী” কবিতাটি রচনা করেন। আবার দেখা যায় ১৯২৮ সালের দিকে তিনি ইডেন কলেজের অধ্যাপিকা ফজিলাতুন্নেসার প্রতি গভীর ভাবে আকৃষ্ট হয়ে পড়েন। কিন্তু তাঁর সেই প্রণয় ব্যর্থ হয়। দুঃখ দিয়েই যার জীবন গড়া সেই দুখু মিয়া জীবনের বেশীরভাগ সময়ই দারিদ্রের মাঝে দিন কাটিয়েছেন। তবু প্রেমের মধ্যে তিনি খুঁজে পেতে চেয়েছিলেন জীবনের শান্তনা।

Vidyapati_image 1
বিদ্যাপতিঃ

এক গরীব কবি। বিদ্যাপতি পঞ্চদশ শতকের মৈথিল কবি। বঙ্গদেশে তাঁর প্রচলিত পদাবলীর ভাষা ব্রজবুলি। কথিত আছে যে পরমপুরুষ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু নিত্য তাঁর রচনা গাইতে ভালবাসতেন। অনেক বাঙালী কবি এই ভাষায় কবিতা রচনা করেছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ভানুসিংহের পদাবলীতে’ আমরা এই ভাষার ব্যবহার দেখতে পাই। বাঙালীরা চর্যাগীতির ভাষা থেকে এই ব্রজবুলীকে অনেক সহজে বুঝতে পারেন। এই কারণেই বিদ্যাপতিকে বাঙালী কবিদের অন্যতম হিসেবেই গণ্য করা হয়। তাঁর পদাবলী ছন্দ, আলংকারিক নৈপুণ্য ও গভীর হৃদয়াবেগে সমৃদ্ধ। প্রেম ও ভক্তি তাঁর কবিতায় প্রধান হয়ে উঠেছে। যিনি রাজদরবারে শুধু দূর থেকে মিথিলার রাণী, লছমা দেবীকে শিকের আড়াল থেকে দেখেই তৃপ্ত হয়েছেন। আর না পাওয়ার বেদনা থেকেই তিনি লিখেছেন-
“মাহ ভাদর ভরা বাদর
শূন্য মন্দির মোর।”

final chandidas-01
চন্ডীদাসঃ

ব্রাহ্মণ চন্ডীদাস অন্তজ রাণীর মধ্যেই রাধাকে অনুভব করেছিলেন। তাঁর রাধা তো পৌরাণিক রাধা নয়। তাঁর বাঁধা হচ্ছে এক অন্যজ শ্রেণীর নারী, সামাজিক বিধি নিষেধের টানাপোড়নে যাকে পাওয়া সম্ভব নয়। তাই তাঁর রাণী রূপ পেয়েছে রাধার মধ্যে আর তাঁর পদাবলীর আবেগ হয়ে উঠেছে এত নিবিড় এতো অন্তরঙ্গ।

1150514372_lensblogd
মোৎসার্টঃ

সুরের রাজা মোৎসার্টের কথা কে না জানে। প্রথমে তিনি আলোয়সিয়া ওয়েবারের প্রেমে পড়েন। কিন্তু এই তরুণী তাঁকে ঠকিয়ে অন্যজনকে বিয়ে করেন। পরে অবশ্য তিনি আলোয়সিয়ার ছোট বোন কে ভালোবেসে বিয়ে করেন। এই মহান সুর সাধক যাঁকে মৃত্যুর অনতি পূর্বেও সুখ মরীচিকার মতো ছলনা করেছে। অভাব তাঁকে সারাটা জীবন তাড়া করেছে। মাত্র পয়ত্রিশ বছর বয়সে তিনি মারা যান। প্রেয়সী কন্সটান্সের প্রতি সুগভীর ভালোবাসা থেকেই তিনি “The marriage of Figaro” নামে একটি অপেরা রচনা করেন।

Botapone-copy
বেটোফেনঃ

জার্মানীর রাইনল্যান্ডে জন্মগ্রহণকারী বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সুরকার বেটোফেন ছিলেন আজীবন অকৃতদার। তিনি জীবনে বহু নারীর সান্নিধ্যে এসেছেন। কিন্তু এদের কারো সংগেই তাঁর আন্তরিক ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি। তাঁর মৃত্যুর পর টেবিলের উপর একটি প্রেমপত্র পাওয়া যায়। নারী সম্পর্কে তাঁর ধারণা অনেক উঁচু ছিলো। জীবনের শেষের দিকে বধির হয়ে যাওয়া এই অমর শিল্পী তাঁর বিখ্যাত সঙ্গীত “Leonore” –এ নারীকে মহিমামন্ডিত করে দেখেছেন।

vangog
ভ্যান গঁগঃ

বাউন্ডুলে ভবঘুরে পাগলাটে ও অস্থির চিত্ত ডাচ চিত্রশিল্পী ভিনসেন্ট ভ্যান গঁগ তাঁর নয় বছরের শিল্পী জীবনে যা করে গেছেন তা শিল্পের ইতিহাসে অক্ষয়। এই পোষ্ট ইম্প্রেশনিষ্ট শিল্পীর জীবনে অনেক বারই প্রেম এসেছে এবং তা সবই বিচিত্র ধরণের । প্রথম যৌবনে তিনি অন্যত্র বাগদত্তা উরসুলা নামের এক মেয়ের প্রেমে পড়েন। অনেক চেষ্টা এবং অপমানিত হয়েও তিনি এখানে ব্যর্থ হন। এরপর কি নামে এক বিধবা মহিলার প্রেমে পড়েন। সেখানে তিনি তাঁর প্রেমের স্বাক্ষর সরূপ ডান হাত মোমবাতিতে পুড়িয়ে ফেলেন। তবুও বিধি বাম। এরপর ক্রিস্তিন নামের পাঁচ সন্তানের জননী যে রাস্তায় পতিতাবৃত্তি করে বেড়াতো তার প্রেমে পড়েন। কিন্তু সামাজিক বিধি নিষেধের জন্য সে প্রেমও ব্যর্থ হয়। ভ্যান গঁগ তাঁর সারাটি জীবনই চরম অর্থকষ্টে দিন কাটিয়েছেন। বউ পালবার সামর্থ তাঁর ছিলো না। বৈচিত্রের জন্য তিনি ছুটে যেতেন নিষিদ্ধ পল্লীতে। সেখানে রেসেল নামে এক তরুণী পতিতার সংগে তাঁর সখ্য গড়ে ওঠে। কিন্তু ধূর্ত রেসেল শিল্পীর কোনো টাকা নেই শুনে তাঁর কান দুটোর একটা চায়। ভ্যান গঁগের কান দেখতে খুব সুন্দর ছিলো। যৌবনের এই ব্যর্থ প্রেমিক একদিন সত্যিই একটি কান কেটে তাঁর প্রেমের উপহার স্বরূপ রেসেলকে দেয়। জীবনের এক পর্যায়ে ভ্যান গগ পুরো উন্মাদ হয়ে গিয়েছিলেন। জীবন সমুদ্রে ব্যর্থ নাবিক এই শিল্পী একদিন রিভলভার দিয়ে আত্মহত্যা করলেন। বেঁচে থাকতে এই মহান শিল্পীর মূল্যায়ন পৃথিবীবাসী করতে পারেনি। পোস্ট ভালো লাগা মন্দ লাগা পাঠকের বিচার্য। রেটিং করুন

ফেসবুক লিঙ্ক : আজাদ কাশ্মীর জামান।

অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের জন্মদিন আজ

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ (২৫শে জুলাই, ১৯৪০) বাংলাদেশের বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী একজন সমাজসংস্কারক। তিনি মূলত শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক। তিনি ষাট দশকের একজন প্রতিশ্রুতিময় কবি হিসেবে পরিচিত। সে সময় সমালোচক এবং সাহিত্য সম্পাদক হিসাবেও তিনি অনবদ্য অবদান রেখেছিলেন। কিন্তু ধীরে ধীরে তাঁর সাহিত্য প্রতিভার স্ফূরণ স্তিমিত হয়ে আসে। তবে আত্মজীবনীসহ নানাবিধ লেখালেখির মধ্য দিয়ে আজো তিনি স্বীয় লেখক পরিচিত বহাল রেখেছেন। তিনি একজন সুবক্তা। ১৯৭০ দশকে টিভি উপস্থাপক হিসাবে বিশেষ জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। জীবনের শ্রেষ্ঠ কীর্তি বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র যা ত্রিশ বছর ধরে বাংলাদেশে আলোকিত মানুষ তৈরীর কাজে নিয়োজিত রয়েছে।

জন্ম : আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ ১৯৩৯ সালে কলকাতার পার্ক সার্কাসে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈত্রিক নিবাস বাগেরহাট জিলার কচুয়া থানার অন্তর্গত কামারগাতি গ্রামে। তাঁর পিতা আযীমউদ্দিন আহমদ ছিলেন একজন স্বনামধন্য শিক্ষক। পিতার শিক্ষক হিসেবে অসামান্য সাফল্য ও জনপ্রিয়তা শৈশবেই তাকে শিক্ষকতা পেশার প্রতি আকৃষ্ট করে।

শিক্ষাজীবন :
মাধ্যমিক – পাবনা জিলা স্কুল(১৯৫৫)
উচ্চমাধ্যমিক – প্রফুল্লচন্দ্র কলেজ,বাগেরহাট(১৯৫৭)
স্নাতক – সম্মান (বাংলা), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৬০)
স্নাতকোত্তর – এম.এ (বাংলা), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৬১)।

কর্মজীবন : শিক্ষক হিসেবে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ জনপ্রিয়তার সর্বোচ্চ শিখর স্পর্শ করেছেন। অধ্যাপক হিসেবে তাঁর খ্যাতি কিংবদন্তিতুল্য। তিনি শিক্ষকতা জীবন শুরু করেন ১৯৬১ সালে, মুন্সীগঞ্জ হরগঙ্গা কলেজে খণ্ডকালীন প্রভাষক হিসেবে। পরবর্তীতে তিনি কিছুকাল সিলেট মহিলা কলেজে শিক্ষকতা করেন। ১৯৬২ সালের পহেলা এপ্রিল তিনি রাজশাহী কলেজে প্রভাষক হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে সরকারি চাকরিজীবন শুরু করেন। সেখানে পাঁচ মাস শিক্ষকতা করার পর তিনি ঢাকায় ইন্টারমিডিয়েট টেকনিক্যাল কলেজে যোগ দেন (বর্তমানে ঢাকা বিজ্ঞান কলেজ)। এই কলেজে তিনি দু’ বছর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় তাঁর বয়স ছিল মাত্র তেইশ। এরপর তিনি বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কলেজ ঢাকা কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ জালালউদ্দিন আহমেদের আমন্ত্রণে সেখানে যোগদান করেন। ঢাকা কলেজেই তিনি তাঁর শিক্ষকতা জীবনের স্বর্ণযুগ অতিবাহিত করেন। সে সময় ঢাকা কলেজ ছিল দেশসেরা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মিলনস্থল। অধ্যাপক আবু সায়ীদ যখন ঢাকা কলেজে যোগ দেন তখন কলেজের বাংলা বিভাগের প্রধান ছিলেন বাংলা সাহিত্যের শক্তিমান কথাসাহিত্যিক ও গদ্য লেখক শওকত ওসমান৷ ঢাকা কলেজের শিক্ষকতা জীবন তিনি অত্যন্ত উপভোগ করতেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেন,

“ছেলে বেলায়, স্কুল থেকে কলেজে উঠে, অর্থনীতির বইয়ে পড়েছিলাম কেন একজন শিল্পপতি, কন্ট্রাক্টর বা ব্যাবসায়ী প্রতিষ্ঠানের নির্বাহীর চেয়ে একজন শিক্ষকের বেতন কম৷ যুক্তি হিসেবে সেখানে বলা ছিল একজন শিক্ষকের জীবন কাটে মার্জিত, পরিশীলিত পরিবেশে, বৈদগ্ধময় ব্যক্তিদের সাহচর্যে, উচ্চতর জীবনচর্চার অবকাশময় আনন্দে৷ জীবনের সেই মর্যাদা, তৃপ্তি বা শান্তি ঐ ব্যাবসায়ী বা নির্বাহীর জীবনে নেই৷ এই বাড়তি প্রাপ্তির মূল্য দিতে শিক্ষকের আয় তাদের তুলনায় হয় কম৷ ঢাকা কলেজের শিক্ষকতায় ঐ তৃপ্তি আমার এত অপরিমেয় হয়েছিল যে কেবল বেতন কম হওয়া নয়, আমার জন্য হয়ত বেতন না-থাকাই উচিত হত৷ এই পাওয়া যে কতটা তা বুঝেছিলাম কিছুদিনের জন্য অন্য কলেজে গিয়ে।”

তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করবার সুযোগ পেয়েছিলেন, কিন্তু ঢাকা কলেজে প্রাণবন্ত, সপ্রতিভ, উজ্জ্বল ছাত্রদের পড়ানোর তৃপ্তি, শিক্ষক-জীবনের অনির্বচনীয়তম আস্বাদ ছেড়ে তিনি যেতে চাননি ৷ তাঁর মতে, “বাংলা বিভাগে যোগদান করাটা আমার কাছে সবচেয়ে ভালো ছাত্রদের ছেড়ে সবচেয়ে খারাপ ছাত্রদের পড়াতে যাওয়ার মত মনে হয়েছে।”

অধ্যাপক আবু সায়ীদ কখনোই ক্লাসে রোলকল করতেন না। রোলকলকে তার কাছে মনে হতো সময়ের অপব্যয়৷ তাই বছরের পয়লা ক্লসেই ঘোষণা করে দিতেন রোলকল না করার। তিনি বলেন, “অনিচ্ছুক হৃদয়কে ক্লাশে জোর করে বসিয়ে রেখে কী করব? আমার চ্যালেঞ্জ ছিল এক ধাপ বেশি: কেবল শিক্ষক হওয়া নয়, সব ছাত্রের হৃদয়ের কাছে পৌঁছানো, সব ছাত্রের হৃদয়কে আপ্লুত করা।” ক্লাসের সেরা ছাত্রটাকে পড়ানোর চেষ্টা করার চেয়ে তিনি পড়াতে চেষ্টা করতেন ক্লাশের সবচেয়ে বোকা ছাত্রটাকে৷ সারাক্ষণ তাকেই বোঝাবার চেষ্টা করতেন, কেননা তার বোঝা মানে ক্লাসের বাকি সবার বোঝা।

ষাটের দশকের সাহিত্য আন্দোলন : ষাটের দশকে বাংলাদেশে যে নতুন ধারার সাহিত্য আন্দোলন হয়, তিনি ছিলেন তাঁর নেতৃত্বে। সাহিত্য পত্রিকা কণ্ঠস্বর সম্পাদনার মাধ্যমে সেকালের নবীন সাহিত্য যাত্রাকে তিনি নেতৃত্ব ও দিকনির্দেশনা দিয়ে সংহত ও বেগবান করে রেখেছিলেন এক দশক ধরে। বাংলাদেশে টেলিভিশনের সূচনালগ্ন থেকে মনস্বী, রুচিমান ও বিনোদন-সক্ষম ব্যক্তিত্ব হিসেবে আবির্ভুত হন আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। টেলিভিশনের বিনোদন এবং শিক্ষামূলক অনুষ্ঠানের উপস্থাপনায় তিনি পথিকৃৎ ও অন্যতম সফল ব্যক্তিত্ব।

বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র : আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের ব্যক্তিত্বের প্রায় সবগুলো দিক সমন্বিত হয়েছে তাঁর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সংগঠক সত্তায়। তিনি অনুভব করেছেন যে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে আমাদের প্রয়োজন অসংখ্য উচ্চায়ত মানুষ। আলোকিত মানুষ চাই– সারা দেশে এই আন্দোলনের অগ্রযাত্রী হিসেবে প্রায় তিন দশক ধরে তিনি রয়েছেন সংগ্রামশীল। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র গড়ে উঠেছে একটু একটু করে, অনেক দিনে। এই দীর্ঘ সময়ে বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাতের মুখে নানা উত্থান পতনের মধ্য দিয়ে তাঁকে এগোতে হয়েছে।

বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের জন্ম ১৯৭৮ সালে। মূলতঃ দেশের আদর্শগত অবক্ষয় দেখে তা থেকে উত্তরণের জন্যে অধ্যাপক সায়ীদ এই প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।
এ প্রসঙ্গে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন:
“দেশের এই সার্বিক অবক্ষয় এবং সম্ভাবনা হীনতার ভেতর সীমিত সংখ্যায় হলেও যাতে শিক্ষিত ও উচ্চ মূল্যবোধসম্পন্ন আত্মোৎসর্গিত এবং পরিপূর্ণ মানুষ বিকশিত হওয়ার পরিবেশ উপহার দেয়া যায়, সেই উদ্দেশ্য নিয়েই আমরা বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র গড়ে তুলতে চেষ্টা করছি। একজন মানুষ যাতে জ্ঞানের বিভিন্ন শাখার অধ্যয়ন, মূল্যবোধের চর্চা এবং মানবসভ্যতার যা-কিছু শ্রেয় ও মহান তার ভেতর দিয়ে পরিপূর্ণ মনুষ্যত্ব সম্পন্ন হয়ে বেড়ে উঠতে পারে- আমরা এখানে সেই পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাই। কাজেই আমাদের এই প্রতিষ্ঠানটি একটি প্রাণহীন, কৃত্রিম, গতানুগতিক প্রতিষ্ঠান নয়; এটি একটি সর্বাঙ্গীণ জীবন-পরিবেশ।”

pic3.jpg প্রথমদিকে তার তত্ত্বাবধানে মাত্র পঁচিশ জন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী বিশ্বের মহান সাহিত্য কর্মগুলো পড়তে ও সেগুলোর উপর আলোচনা করা শুরু করে। ধীরে ধীরে এই পাঠচক্রে স্কুল-কলেজ ও সাধারণ মানুষদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই পাঠচক্র গুলোতে বাংলা ও বিশ্ব সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ বইগুলোর পঠন এবং সেগুলোর ওপর প্রাণবন্ত আলোচনা করা হয়। বর্তমানে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ৫০০টি শাখা দেশের মোট ৫৪টি জেলায় তাদের কর্মকাণ্ড বিস্তৃত করেছে এবং এর সাথে যুক্ত আছেন বহু স্বেচ্ছাসেবী কর্মী।

বাংলাদেশে পাঠাগারের অপ্রতুলতা অনুধাবন করে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ১৯৯৮ সালে ভ্রাম্যমান লাইব্রেরি কার্যক্রম আরম্ভ করে। নরওয়েজিয় সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত এই কার্যক্রমে বই-ভর্তি একটি বাস পাঠকের দুয়ারে গিয়ে হাজির হয়। প্রথমদিকে ঢাকায় কার্যক্রমটি ঢাকায় আরম্ভ হলেও আজ তা বাংলাদেশের অধিকাংশ জেলায় বিস্তৃত হয়েছে।

সাহিত্য : তরুণ বয়সে তিনি কবিতা ও কল্পকাহিনী লিখতেন। ১৯৬০ সালের সাহিত্য আন্দোলনে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। অধ্যাপক সায়ীদ বহু প্রবন্ধ, উপন্যাস ও কবিতা লিখেছেন। প্রবন্ধ : সংগঠন ও বাঙালি। পুরস্কার : অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ ২০০৫ সালে একুশে পদক পান। ২০০৪ সালে তিনি র‌্যামন মাগাসেসে পুরস্কার অর্জন করেন। ২০১২ সালে প্রবন্ধে বাংলা একাডেমী পুরস্কার পান। তথ্য সূত্র : অর্ন্তজাল এবং বাংলা উইকিপিডিয়া।

শুভ জন্মদিন … আফরোজা হক

birthday_casd

543a
birthday_124-2-1
J2_W

1374afrozaউজ্জ্বল আঁধারের উপাখ্যান

তোমাকে মুখস্থ করে নিয়েছি।
না দেখেও বলে দিতে পারি
অনামিকার জড়ুল, গলার ডানপাশের তিল আর
কপালে ফুটে থাকা জন্ম-চিহ্নের উপাখ্যান।
বাতাসের গোপন কোঁচড় থেকে
অনায়াসে নিতে পারি তুলে
তোমার বৈশাখী-ঝড়, শ্রাবণের ঘ্রাণ।
আঁধারে প্রদীপ ঢেকে পেরুতে পারি
রাতের গোলাপ ক্ষেত,অন্দরমহল,
তোমার অরণ্যভূমি, মহুয়ার বন।

উজ্জ্বল আঁধারে এসো, কী হবে আলো দিয়ে আর!
তোমাকে মুখস্থ করে নিয়েছি।
কী এসে যায়, থাকলো কি না থাকলো
জ্যোতির্ময়ী চোখেরা আমার!

0935329_n ছোটবেলায় কলাপাতার ছাউনি আর বেড়া দিয়ে খেলাঘর বানাতাম। সেই ঘরে পুতুল-কন্যা আর পুতুল-পুত্র থাকতো, আমি তাদের মা। পুতুলের বিয়েতে রান্না হতো পিঁপড়ের মাটির পোলাও , কচুরিপানার মাছ, কলাপাতার ডাটির গরুর মাংস, কাদা মাটির হরেক রকম পিঠা আর জামরুল ফুলের সেমাই। যা ইচ্ছে তাই দিয়ে সেখানে পৃথিবীর দুর্লভতম খাবারটিও রান্না করা যেতো। সেই খেলা ঘরে ছিলো না কোনো বেঁধে দেওয়া নিয়ম, ছিলো না বাধ্য-বাধকতা। ছিলো কেবল “যেমন ইচ্ছে সাজাবার” অপার স্বাধীনতা। যতই দিন গেলো, বড় হলাম, আমার খেলাঘর-আমার পুতুলেরা-পিঁপড়ের মাটির পোলাও চাল ক্রমশঃ দূরে সরে গলো। এক সময় খেলাঘর হারিয়েই গেলো। কিন্তু এই বড় আমি-র ভেতরে লুকিয়ে রয়ে গেলো সেই ছোট আমি। তার ছোট হৃদয় এখনও খুঁজে ফেরে খেলাঘরের প্রশান্তি। সময় বদলের সাথে বদলেছে খেলাঘরের সকল উপকরণও। ব্লগ আমার খেলাঘর। এখানে আমি খুঁজতে আসি আমার বিবর্তিত ছেলেবেলা আর ইচ্ছের স্বাধীনতা। প্রিয় ব্লগার আফরোজা হক। আজ তাঁর শুভ জন্মদিনে জানাই প্রিয় অভিনন্দন।

happybirthdayblueflash
312hpdsga
raa

birthday cake ity
special cake
happ866
zia6
zia8
zia9zia9zia9zia9zia9zia9zia9zia9zia9
101010101010101010101010101010

জীবনের কর্মে এবং সাফল্যে থাকুন বেঁচে। আমাদের সকলের শুভেচ্ছা ভালোবাসা সর্বোপরি শুভকামনা সব সময়ে থাকবে আপনার জন্য। শুভ হোক ব্লগিং।

ফেসবুক লিঙ্ক : আজাদ কাশ্মীর জামান।

একটি বিকেল …

ekti bekel.jpg

একটি বিকেল অনুভবে নুয়ে পড়ে
মগবাজারের রেলক্রসিংয়ের কাছে
থমকে দাঁড়ায় বিস্মরণের ট্রেন
মনে পড়ে গত রাত্রির ব্যাকুলতা।

ডাবল ডেকারে ব্যস্ততা ছুটে চলে
নুলো ভিখিরিরা বিধাতার নাম জপে
মার্সিডিজের ফুয়েলে ঘামের ফোঁটা
একটি বিকেল কমলা রঙের স্মৃতি।

বাসস্টপে কখনও ছিলে না জানি
কেউ কোনদিন কথার গোলাম নয়
গোপনে সোনার ডিম পাড়ে সাহেবেরা
বিবির বিছানা বিকল্পে বেদখল।

একটি বিকেল শ্রান্ত ঘুমের নেশা
খেয়াঘাট থেকে অবিরাম ডাকে মাঝি
ওড়ে স্বপ্নেরা, ওড়ে রূপকথা, ওড়ে…
নীরব গল্প ফেটে ঝরে নির্যাস।

মফস্বলের সৌরভ ভেসে আসে
ঝরোকায় ধরা দেয় এসে নীলাকাশ
একটি বিকেল রেলগাড়ি হয়ে ছোটে
বিয়ারের ক্যানে বেজে ওঠে হুইসেল।

aadaaaaaaaar

ফেসবুক লিঙ্ক : আজাদ কাশ্মীর জামান।