মুহাম্মদ দিলওয়ার হুসাইন এর সকল পোস্ট

স্বপ্নের সরোবরে-

অবেলায় নামে ঘনঘোর বরষা, ছুঁয়ে যায় হিজল তমালের ডাল
সন্ধ্যের অবকাশে ক্লান্ত দেহ মনে নেমে আসে ভীষন্নতার ঢল
নিশ্চুপ চারিধার, বিজলি বাতিটাও নিভে যায়; ডেকে আনে আঁধার
আমি হারিয়ে যাই তোমার মাঝে, তখন হয়তো মধ্যরাতের দ্বিপ্রহর।

যন্ত্রের শহরের বিষাদময় প্রহসন্ন প্রহর ধূসর হয় স্বপ্ন বাসরে
আমি সাঁতার কেটে যাই বিশুদ্ধ প্রেমের স্বচ্ছ সরোবরে
নির্মিলিত শ্বেত পদ্মের মত ভেসে বেড়াও ছড়িয়ে আলোর দ্যুতি
আমি হারাই তোমাতে; তোমাতে দেখি রাশিরাশি স্বপ্নের বিস্তৃতি।

তোমার মাঝে দেখি আমি ট্রয় নগরীর হেলেনের প্রতিকৃতি
কখনো ভেসে ভেসে আস তুমি হয়ে কৃষ্ণকুমারির প্রতিচ্ছবি
কখনো অমৃত সুধা হাতে পতিব্রতা রমণী রূপে অবতীর্ণ হও ধরাধামে
আমার ভুবনে বেজে ওঠে সুরলহরি; মহা-আনন্দের সকাশে।

স্বপ্নের মাঝে রচি স্বপ্নের বসতি, স্বপ্নের মাঝে দেখি চিত্তসুখ
হোক না মিথ্যের আবাহন, হোক আকাশ কসুম প্রেয়সির মুখ
যন্ত্রের কোলাহলে কোন এক বিষন্নপ্রহরে অবসাদের অন্দরে
স্বপ্নে, হারাতে দোষ কী! আত্মহননের বস্তুবিলাসের কন্দরে।

প্রতীতি

কতদিন দেখা হয়না তোমার সে দুটো চোখ
কখনো ম্রিয়মান; কখনো আবার অভিমানী মুখ
সময়ের সীমা লঙ্ঘন করে পাড়ি দিতাম নিয়ে অসময়ের ভেলা
উজানের না’য়ে ফিরে আসতে সাঙ্গ করে খেলা।

কখনো বৃক্ষ হয়ে শুধু দেখে যেতে আমার অনিয়মের খেলা
আবার কখনো অচেনা বালিকার মত মুখ ফিরিয়ে নিতে থাকতো না কিছু বলা
কখনো অঝোর ধারার বৃষ্টির মাঝে ছুটেছি যেন দিয়ে গোল্লাছুট
জীবন নিয়ে খেলেছি এক্কা দোক্কা কানামাছি খেলা; বড়ই অদ্ভুদ!

জীবন বাজী রেখে ছুটতাম লাগামহীন অশ্বপদে
কখনো নিষ্প্রাণ উপলখন্ড হয়ে পড়ে থাকতাম পথের ধারে
জীবন যৌবন আমৃত্যুতে যেন ছিলো একই আরাধনা
ঐ দুটি চোখ থেকে যেন বিচ্যুত না হই; ছিল আজন্ম সাধনা।

কোথায় আজ সে তেপান্তরের মাঠ, কোথায় বালুকা বেলা
স্মৃতি হয়ে শুধু মাঝে মাঝে দিয়ে যায় নাড়া, নিঃসঙ্গতার খেলা
আমার মাঝে আমি হারিয়ে যাই, ডুব দেই জগৎ মায়াজালে
হয়তো কোন এক সন্ধ্যার অবকাশে আবার দেখিবো তব মুখখানি বিষাদের নোনাজলে।

অব্যক্ত শব্দ

কী অবলীলায় বলে যাও ভালোবাসি, ভালোবাসি
নিস্তব্দ আকাশে সেদিন এক বর্ণিল আলোয় দেখেছি প্রদীপ্ত জ্যোতি
প্রকৃতির শুনসান নীরবতার মাঝে হঠাৎ হর্ষধ্বনি মৌমাছির গুঞ্জন
তুমি সেদিন বিজয়ীর বেশে প্রেয়সির কপোল ছুঁয়ে করে নিলে বরণ।

তোমার দীক্ষায় পথ হেঁটেছি বহুদূর, পাড়ি দিয়েছি তেপান্তরের মাঠ
অমাবস্যার রাতে শূন্যহাতে রচেছি বাণী চরণ, কেটেছে নির্ঘুম রাত
ঝড়ের রাতে একা পাড়ি দিয়েছি অপার সমুদ্র পথ, ছিলেম অবিচল
ভয়ের গল্প শুনিনি কভু, যাত্রাপথে থমকে দাঁড়াইনি তাই; ছিলো মনোবল।

দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে বিজয়ীর বেশে ঘুরেছি দেশ-দেশান্তর
তপ্ত মরুর বুকে ক্যাকটাসের বেশে কাটিয়ে দিতে পারি জন্মান্তর
কুজ্ঝটিকার ঘন কুয়াশার মাঝে ওম পেতে হইনি কভু পথের কাঙাল
জীবন সংগ্রামের অনন্ত যাত্রায় শেষ পথিকের সাথে দেখবে রয়েছি সচল।

পারিনি তবু আজও তোমার দীক্ষা মন্ত্র সপাঠে কী করে করি উচ্চারণ
ভালোবাসি ভালোবাসি; তোমায় নিয়ে বেঁচে থাকবো জীবন-যৌবন
শুদ্ধ উচ্চারণ অশুদ্ধ হয়ে যায়, দেহ মন হয়ে পড়ে হিম শীতল
সুগম হয়ে যায় দুর্গম; সামনে শুধু দেখি অপার সমুদ্র অতল।

অভিধানের এমন শব্দ পাইনি খুঁজে যা করিনি উচ্চারণ
ভালোবাসি ওগো প্রেয়সি; ভালোবাসে কেটে যাক বিনিদ্র জীবন
কথাটি আজো হয়নি বলা, হবেনা বলা , কঠিন শব্দের খাঁচায় বন্দি সব
না বলে যদি কেটে যায় বেলা; যাক না কেটে, হোক এক মিথ্যে উৎসব।

সঙ্গীহীন বিহঙ্গ সুখ-

নির্ঝর তার বিগলিত অশ্রুতে নির্ভার হয়ে যায় নিমিষে
স্রোতস্বিনী দুকূল ভাসিয়ে নিয়ে চলে রিক্ততার চিহ্ন মুছে দিতে
নীলাম্বরী কালো মেঘে জমে থাকা কষ্টগুলো ছুড়ে ফেলে দেয় ভূমিতে
শ্যামলিমা বেঁচে থাকে সে কষ্টগুলো বুকে নিয়ে বসুন্ধরার দহন সহিতে।

সন্ধ্যার আলো-আঁধারে নিঃসঙ্গতার প্রতীকরূপে আমি দেখিনি হুতোম প্যাঁচার শৈশব
দেখিছি তার নির্ভার জীবনে বিমুগ্ধ স্বাধীনতার অবারিত এক উৎসব,
সুদর্শণ বেরিয়ছে পথে আনন্দ কোলাহলে সন্ন্যাসী হয়ে ছুটে চলে মুক্ত আকাশে
আমিতো দেখিনি তারে সঙ্গীর পাছে পাছে মিথ্যে স্বপ্নের উনুনে দগ্ধ হতে।

পাথার ছুটে চলে সীমাহীন দিগন্ত পাড়ি দিয়ে গন্তব্য অশেষ
ছুটে চলে বল্গা হরিণ, মায়া হরিণীর সঙ্গ ছেড়ে; দেখিনিতো কোন ক্লান্তি ক্লেশ
ধুমকেতু ছুটে আসে সঙ্গীর দহনজ্বালা থেকে মুক্তি পেতে; হয়তো হয়ে যায় নিঃশেষ
বিরামহীন জীবনে ছুটে চলার আনন্দে বিহঙ্গ হবো সর্বশেষ।

কোন এক রাতের আঁধারে বেরিয়ে এসো বিহঙ্গ হতে মুক্ত আকাশে
আমারে খুঁজে পাবে তুমি বৈশাখের ঝড়ো হাওয়ায় একখন্ড ছেঁড়ার পাতার মাঝে
উত্তর থেকে দক্ষিণে কিংবা ঘূর্ণিহাওয়ার তালে মুক্ত আকাশে গান রচে যাই স্বাধীন আবেশে
কোথাও উড়ে যেতে বারণ নেই; বেরিয়ে আসতে পার যদি মায়ার বাঁধন ছেড়ে সন্ন্যাসী বেশে।

প্রকৃতির প্রতিচ্ছবি মম-

স্বর্ণালু আজ কেন সেজেছে জানিস?-তোর ভালোবাসা পেতে!
ভোরের শিশির ফোটায় মুক্তো ঝরে,
হিজল তমাল ডালে ডাকছে কাকাতুয়া কোন এক অবেলায়
আয় ফিরে আয়; রাঙাবো আজ অপরিমেয় ভালোবাসায়।

সন্ধ্যে হলে আবিরের রাগে সুর তোলে জোনাকি মেয়ে
পথিক তোকে যে বড্ড ভালোবাসি, চেয়ে কি দেখেছিস পাছে!
লজ্জাবতী লতা নুয়ে পড়ে তোর পরশ পেয়ে
যদি চলে যাস নির্লজ্জ ভেবে; এ ভয় নিরন্তর অন্তরে জাগে।

দখিনা সমীরণে জানিস কেন এত শীতলতা?
তোর অধর ছুঁয়ে যাবার যে তার বড্ড নেশা।
অঝোর ধারায় কেন নামে বারি, বলতে পারিস কভু?
ভালোবাসা যে পায়নি সে; বিসর্জনে বলে যায় তবু।

মাঠে মাঠে কৃষাণির ছেলে গান রচে যায় মধুর কোলাহলে
তবু প্রকৃতি ঝিমিয়ে পড়ে শীতের আগমনী বার্তা আসছে বলে;
আমিও যে প্রকৃতির ছবি; রাঙাই নিজেকে প্রকৃতির রঙে
তোর ভালোবাসা না পেয়ে আমিও যে রিক্ত হয়ে পড়ি কুয়াশার উত্তরীতলে।

প্রতীক্ষা সে সকালের জন্য-

আমার বুকের ভেতর কিছু অদম্য শব্দ ঘুরে ফিরে নৃত্য করে অবিরত
ঘর বসতির জন্য নিরাপদ আস্তানা খুঁজে বেড়ায় প্রতিনিয়ত
আমার অবহেলা আছে হয়তো তাদের প্রতি
কিংবা অর্বাচীন মনে করে উদাসীন হই; ভাবি নিয়ে রীতি-নীতি।

জ্যোৎস্নার আলোয় মুখখানি আলোকিত হয়েছিলো কি না জানিনে
শ্বেতরাঙা কাশফুলে পুলক অনুভব করেছি হৃদয় গহীনে
শিশিরস্নাত শীতের সকালে পথ হেটেছি বহুদূর
দিগন্ত ছায়ায় মেলেছি দুটি হাত শূন্যের ওপর।

জলরঙে ছবি এঁকেছি পাথারের ওপারে কোন নির্জন দ্বীপে
যেখানে বসতি রচেনি কেউ, জলছবির রঙে রাঙাতে নিজেকে
ধূসর স্বপ্ন হাতছানি দিয়ে ডাকছে নিয়ে যাও আমায়; নব অরুণ আলোতে
আমিও বৃক্ষ হবো! লোকালয়ে বসতি হবে কিরণময় জ্যোতিতে।

অদম্য শব্দেরা ধূসর হয়নি, অম্লান আজো বাসর রচিতে
ক্ষীণকায় মনোমন্দিরে আমি পারিনি তাদের রৌদ্রস্নানে স্থান করে দিতে
ক্ষমো, তব যাচিত শব্দ অযাচিতের প্রসব বেদনায়
হয়তো কোন এক নব অরোণাদয়ে দেখবে নিজেদের এই বসুন্ধরায়।

শ্বেতস্বপ্ন

শ্বেতস্বপ্নের ধূসর রাজ্যে কাশফুল হাওয়ায় ওড়ে
শিশিরস্নাত নরম আলোয় পদ্মবনে নীল পতঙ্গ বাসর রচে
জোনাকিরা যায় হারিয়ে হাঁড় কাপানো শীতের আগে
মাঠে থাকে শেয়াল কুকুর কুয়াশার চাদর গায়ে জড়িয়ে।

শ্বেতস্বপ্ন মলিন হলে অসূর নৃত্য সুযোগ পাবে
জাগো তবে নীলকমলেরা মাতৃভূমি পাহারা দিতে
ফুলের মাঝে কীট থাকে তাই, ফুলের চাষ কি বন্ধ হবে!
নীলকমলেরা হারিয়ে গেলে অসূর নৃত্যে তোমার আমার মৃত্যু হবে।

শ্বেতস্বপ্নের ক্যানভাসেতে ছবি আঁকবো দেশ প্রেমের
শ্বেতস্বপ্ন ধূসর করতে দেবনা আর হায়েনাদের
পদ্মবনে থাকে যদি কীট, মুক্ত করবো সদলবলে
নীলকমলেরা ওঠ জেগে; মানব মুক্তির দীক্ষা দিতে।

সম্প্রীতির এই স্বাধীন দেশে মুক্ত বুদ্ধির চর্চা হবে
স্বাধীনতার বীজমন্ত্রে দীক্ষা নিতে রইবোনা আর পিছু হটে
রফিক সফিক সালামেরা ডাক দিয়ে যায় মুক্তির মিছিল রাজপথে
আজও যেন ডাক দিয়ে যায়, সাম্যের গানের মূর্তপ্রতীক স্বাধীনতার স্বপ্ন পুরুষ মুজিব কন্ঠে।

ভয়

ইদানিং বড্ড ভয় ভয় করে আমার
চলতে ভয়, বলতে ভয়, নেই অকুতোভয় স্বাধীনতার
দেখার ভয়, সাক্ষ্য দেবার ভয়, মৃত্যুর ভয়; ভয় আর শুধু ভয়
হিংস্র দাবানলে যেন পুড়ছে আমার সভ্যতা! ধাওয়া করছে অস্বাভাবিক মৃত্যুর ভয়।

স্ত্রীকে নিয়ে ভয়, সন্তানকে নিয়ে ভয়, আমার স্বাধীনতার জন্য ভয়
নিজের ভেতর জেগে ওঠা অজানা ভয়; জীবন হয়ে ওঠেছে বিষাদময়
পাড়া প্রতিবেশির জন্য ভয়, সমাজের জন্য ভয়, মাতৃভূমির জন্য ভয়
শ্যামলিমার বুকে অসময়ে হিংস্রতার আস্ফালনের ভয়, জন্ম নিচ্ছে শত শত ভয়।

ভয় হয় আতিকুলের মতো ভ্যান চালকদের জন্য;
যারা স্বপ্ন দেখে রক্তবিকিয়ে সন্তানের উচ্চশিক্ষায় হতে অনন্য,
ভয় হয় বিপথগামী তরুণ সমাজের জন্য-
যারা বাবার ঘামের বিনিময়ে উপার্জিত অর্থে ভোগ করে কর্মে লিপ্ত হয় জঘন্য।

ভয় হয় আমার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত হবার
ভয় হয় দেশ প্রেমের মিথ্যে অভিনয়ে অসাধুদের সুবিধা লুটে নেবার
ভয় হয় কিছু কুলাঙ্গারে র আস্ফালনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস হারাবার
ভয় হয় মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসীদের বিভক্ত হবার।

যারা হিংস্রতার জন্ম দেয় তারা কারো মিত্র নয়
যারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে দেয়, তারা কারো বন্ধু নয়;
আসুন সম্প্রীতির বন্ধনে মানবতার বিজয় নিশান উড়িয়ে
আমরা হবো অমর; উচ্চারিত হোক এক দীপ্ত অহংকারে।

স্বীকারোক্তি

তোকে নিয়ে ইদানিং আমি বেশ গর্ববোধ করি
তুই আমাকে ছেড়ে গিয়ে এক মস্ত উপকার করেছিস!
তোকে নিয়ে আমার ভাবনার অন্ত্য ছিলোনা
তোকে নিয়ে আমি যে স্বপ্নে কল্পনার জাল বুনতাম
তা রচনার সাধ্য ছিলোনা কোন কালে!
তোকে জয় করে নিতে পারলে আজ নিজেকে বড্ড অপরাধী মনে হতো
চাল নেই, চুলো নেই, মাথা গুজার ঠাঁই নেই, নেই নেই কিছুই নেই
ছিলো শুধু এক ভাবনার জগৎ, আকাশ কুসুম কল্পনা।

বলতে পারিস হয়তো তোর চেয়ে বেশ সুখেই আছি
নেই পিছুটান, কর্মক্লান্ত পথিকের স্বপ্নের অবসান
বেশ ভালোই আছি। চাহিদার চেয়ে বেশ ভালো যোগান পাচ্ছি
পথ চলতে সাহস পাচ্ছি। পেছন থেকে ডাক শুনতে পাইনে
অন্ন চাই, বস্র চাই, সুখের নীড়ের জন্য একটি আলিশান ফ্লাট চাই
প্রতিবেশীর চেয়ে সবসময় ভালো থাকতে চাই, এমন তাগাদা নেই!
নির্ভার জীবনে আজ বেশ ভালোই আছি।

পদানত না হয়ে ছড়িয়ে দাও আলোরদ্যূতি

কথা হয় নিশিরাতের জ্যেৎস্নার সাথে
যখন সাগর উত্তাল হয়ে ওঠে অশান্ত ঢেউয়ের আলিঙ্গনে
প্রেম নির্বাসিত মনে ছন্দ বুনে অমরত্ব লাভের নেশায়
বন্ধুরূপে আত্মা হয় বিগলিত মহীরূপী বৃক্ষছায়ায়।

আমি সেই প্রতারক প্রেমিকের কথা বলছি
যে দ্রোহের আগুনে প্রজ্জ্বলিত না হয়ে ম্রিয়মান হয় হতাশায়
বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেয় প্রেয়সির তুলতুলে কপোলে পদানত সৈনিক বেশে
প্রেমের ব্যর্থ আস্ফালনে যবনিকাপাত হয় এক প্রেমিক পুরুষের।

জ্যেৎস্নারাতের কোমল পরশ ছেড়ে বেরিয়ে এসো হে প্রেমিকপুরুষ
অমাবস্যারও রূপ আছে রঙ আছে, আছে এক অন্ধকার আত্মার বিলাসবেশ
তোমার ভালোবাসা পেলে, অন্ধকাররাতেও জ্বলবে আলো জ্যোতিময় তারায়
হিরণ্ময়দ্যুতি ছড়াতে বলছি শুধু, অন্ধকার আত্মায় সমর্পন করতে বলিনি তোমায়।

আসি শুধু নিঃশেষ হতে

হৃদয়ের জমিন ক্ষয়ে গেছে তোমার ক্যাকটাস ভালোবাসায়
শেষ রক্ত কণিকা বিলিয়ে দিয়েছি তোমার সতেজতায়
আমি সিঃস্ব থেকে নিঃস্বতর হয়ে পড়েছি অদম্য মোহে
রিক্ততার মাঝে স্বপ্নের পালক উড়িয়েছি মুক্ত আকাশে।

সনাতনধারার ভালোবাসা মোহ ভঙ্গের যবনিকাপাতে
আমি খেই হারিয়ে ফেলেছি গিরিসম অগ্যূৎপাতে
নীলিমার মাঝে আত্মবিসর্জনে উন্মাতাল দিনগুলো আজো মনে পড়ে
ভাবি, কেন ক্যাকটাসের আঘাতেও আত্মসংযম আসেনি মম অন্তরে!

ভাবনার অন্ত্যহীন ধূসর জগতে পাখা মেলে শঙ্খচিল
আমি আজো খুঁজে ফিরি ক্যাকটাস ভালোবাসার স্বপ্নিল
বিগলিত স্বপ্নের মাঝে ক্ষয়ে যাওয় হৃদয়ের জমিনে
আজো থরোথরো কাঁপে কচি কিশোলয়; মৃদু হাওয়ার তানে ।

স্বপ্ন পিপাসু স্বপ্ন বুনি ক্ষয়ে যাওয়া স্বপ্ন মন্দিরে
গহীন অরণ্যে পথ খুঁজি পথ হারাবার ছলে অন্ধকারে
নিঃশেষ ভালোবাসা দিয়েছি উজাড় করে নিঃশেষ হবার তরে
আমি বারবার আসি ফিরে ফিরে; বারংবার নিঃশেষ হবো বলে।

অত্যুজ্জ্বল স্বপ্ন

আমার ভাগ্যাকাশে ভালোবাসার চাঁদ দেখা দেয় গভীর নিশিতে
ওষ্ঠাগত জীবন সন্ধিক্ষণে রুধিরধারা প্রবাহিত হয় অতি নিঃশব্দে
প্রাণান্তকর জীবন সংগ্রামে ক্লান্তপ্রাণ হয়ে বৈঠা ভাসিয়ে দেই মধ্য সাগরে
ভেসে আসে তখন দূর হতে ইথারের তরঙ্গের সাথে আনন্দের বার্তা নব অরুণোদয়ে।

ঝড়ের সাথে তাল মেলাতে পারিনি নাকি চাইনি এপ্রশ্ন আজ অবান্তর
নিঃশব্দ ঝড় সশব্দ ঝড়ের চেয়ে কম শক্তি নিয়ে আসেনি ধরাদামে হয়ে মুখর
উন্মাদনার বজ্র হাতে সমাসীন হয়না কোন পথচারী, তাই এত ভয়
করুণ চোখের চাহনি যে ভয়ঙ্কর, তড়িতের চেয়েও দ্রুতময়।

সততার বিজয় ডঙ্কা বেজে ওঠুক রজনীর শেষ প্রহরে
ক্লান্ত পথিক রাতের আঁধারে বরণ করে নেবে তোমায় নিঃশব্দ ভালোবেসে
নিখাত ভালোবাসার মাঝে ম্রিয়মান স্বপ্ন অত্যুজ্বল স্বপ্নাকাশে
রচিতে বাসর অনন্ত পথের যাত্রী হয়ে আমি পাড়ি দেব আজ তারাদের দেশে।

“নিঃশব্দ প্রেম”

ঢাকায় একুশের বই মেলায় প্রকাশিত হতে যাচ্ছে কাব্যগ্রন্থ “নিঃশব্দ প্রেম“।
বইটি প্রকাশ করছেন : স্বনামধন্য প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান- “জলছবি”।

প্রবাসে থেকে দেশের বই মেলায় বই প্রকাশ করা সত্যিই দুরূহ ব্যাপার। এই কঠিন কাজটি সহজ করে দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের অগ্রজ সুহৃদ ও গণ মাধ্যম কর্মী “সিস নিউজ” অনলাইন পত্রিকার সম্পাদক জনাব আল মামুন। সার্বক্ষণিক অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন সুহৃদ আজাদ কাশ্মীর জামান ভাই।

বইটির সফল প্রকাশনায় অগ্রজ, অনুজ, শুভানুধ্যায়ী, বন্ধু সবার সুদৃষ্টি প্রত্যাশী।

যাযাবর স্বপ্ন

যাযাবর স্বপ্নের নিত্য আনোগোনা চলে আমার আঙ্গিনায়
প্রতিদিন এক একটি দিগন্ত রেখা ছুঁয়ে স্বপ্নবিলাসী মন ছুটে যায়
হরেক রকম স্বাদে আমি রচে যাই তোমার আগমনী গান মধুর প্রতীক্ষায়
স্বপ্ন বাসরে স্বপ্নে হারাই, স্বপ্ন রচি বারোমাস কোন এক শুভ দিনের অপেক্ষায়।

দিন দিনান্তে মধুর অবকাশে যাযাবর স্বপ্নেরা আসে নব উদ্যমে
আমি হারাই কোন এক নীলাম্বরীর অন্ধ মোহে অসীমে
ভেসে যাই হাওয়ার ভেলায়; শূণ্যের মাঝে হই লীন
নীলাম্বরী যেন ডাকছে আমায়; স্বপ্ন যেন অমলিন।

যাযাবর স্বপ্নের খোঁজে সন্ন্যাসী মন ছুটে চলে নিরন্তর
আকাশের ওপারে কোন এক আকাশে খুঁজি স্বপ্নবাসর
পাথারের গভীরে সুপ্তির মাঝে যে স্বপ্ন লুকিয়ে থাকে-
স্বপ্নেরা আমায় নিয়ে সেথায় মানেনা বারণ অজানা শঙ্কাতে!

স্বপ্নের মাঝে বাঁচি স্বপ্নের ছবি আঁকি স্বপ্ন দেখি বারোমাস
স্বপ্নে হারাই, স্বপ্নেই গড়ি তাজমহল; স্বপ্নেই দেখি সুখের আশ
স্বপ্ন ভেঙে গেলে ডুবে যাই অথৈ সাগরে, নিমজ্জিত হই আঁধারে
নব রঙে ফের স্বপ্নেরা আসে আমার সলিল সমাধি থেকে উত্তরণে।

বিজয়ের মাসে

বিপন্ন কোন এক বিকেলের গল্প নয় আজ
জাগ্রত জনতার মুখোরিত শ্লোগানে হবে উৎসবের রাজ
হন্তারকের বারুদে বন্দুকে আর লাঞ্ছিত হবেনা রাজপথ
বিশ্বদরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার নিতে হবে বিজয়ের শপথ।

গাইবো এবার সাম্যের গান, মুক্তির মিছিলে উড়ছে বিজয় নিশান
চারিদিকে আনন্দ কোলাহল মর্তে স্বর্গধারা প্রবাহমান
আনন্দের বন্যায় ভেসে চলছি, সমুদ্রে এসেছে যৌবন
বিজয়ের মাসে তাই চাইনা সান্ত্রী কাপুরুষের ব্যর্থ আস্ফালন ।

সন্তান হারানো মায়ের মুখেও আজ বিজয়ের হাসি থাকুক অম্লান
প্রিয়জনের শোকে নিথর প্রিয়তমার হৃদয়পটে ভেসে উঠুক রক্ত পতাকার সম্মান
স্বাধীন দেশের রক্ত পতাকা ছিনিয়ে এনেছে যারা; বিনম্র শ্রদ্ধায় নত করি শির
বিজয়ের মাসে বিজয়ী বেশে; মুক্তির মিছিলে, বুকে আছে চেতনা তোমার।