মুহাম্মদ দিলওয়ার হুসাইন এর সকল পোস্ট

অদৃশ্য প্রেম

ভাবনার পশ্চাতে রয়ে যায় জীবনের ইতিহাস
সেটি কাব্য নয়, নাটক কিংবা নয় উপন্যাস
অপ্রকাশিত ভাষা ঘুমরে মরে রচে অন্তর্দহন
তাইতো কবি নীরব, বসে আছে দেবী মন্দিরে হয়ে নির্জন।

যে ভাষার ঘূর্ণিঝড়ে থরোথরো কাঁপে হৃদয়ের দেয়ালে
তার অনুরণনে হতে তুমি পুলকিত দেখেতিস যদি চেয়ে
পারেনি কবি রচিতে ভাষা চরণ বেদনায় হয়েছে নীল
তাইতো তুমি কবি হৃদয়ের তাজমহল ছুঁতে পারনি হয়ে উচ্ছ্বল।

দিনের আলো নিভে গেলে সন্ধ্যার আয়োজনে ম্লান হয় কবি মুখ
আঁধারের মাঝেও কবি খুঁজে ফেরে চিরচেনা তোমারি মুখ
জগত যেখানে মধুর সম্ভাষণে বাহারি রঙের বহিরাবরণে মাতে অহর্নিশ
কবি সেখানে নীরব, অন্তর্মুখী ভাবনার মাঝে করে বসবাস।

জ্বালাতে পারেনি কবি আলোকশিখা, রঙের ফানুস
রচিতে পারেনি মরীচিকার পদ্মকানন, হয়ে অনিমেষ
কবি রচেছে মহাকাব্য ভালোবাসার হৃদমন্দিরে
পায়নি আলো জগত মাঝে কী করে তুমি তারে ভালবাসিবে।

অব্যক্ত ভালোবাসা কেঁদে মরে ধোঁয়ার আঁধারে
কখনো সরল কখনো গরল, স্বপ্ন দেখে মিথ্যে আশ্বাসে।

স্বপ্নের কারিগর

আমি তোমার থেকে আলাদা মেধা ও মননে…
কোন অসাধারণ গুণে কিংবা কোন বিশেষত্বে নয়,
কুজ্ঝটিকা বুননে হয়তো আমার বিশেষত্ব আছে
প্রতিরাতে তোমাদের সুখ নিদ্রায় আমি পাহারা দেই রাতের
জোনাকি মেয়েদের সাথে, অরণ্যের আঁধারে
কথা হয় নীরবে নিভৃতে আমার স্বপ্নের সাথে
বাহারি রঙের স্বপ্ন; পাখা মেলে অসীম আকাশে
আমি উড়ে বেড়াই, সীমান্তের ওপারে আকাশের নীলিমায়।
যা কখনো দেখনি তুমি, দেখবেওনা কখনো
আমি ভেসে বেড়াই মেঘের ভেলায়, শুভ্রতার স্বপ্নমায়ায়
আমার স্বপ্ন জালে ধরা পড়ে অসসীমতা সসীম হয়ে,
আমার স্বপ্ন প্লাবনে ভেসে যায়, তোমাদের যত বিদ্বেষ
আমি হই সমাসীন, তোমার কাঙ্ক্ষিত হৃদপিণ্ডের দেয়ালে।
প্রভাতের আগমনে তোমাদের উজ্জ্বীবতার মাঝে–
আমার স্বপ্নেরা হারিয়ে ফেলে খেই
আমি অপেক্ষা করি আরেকটি রাতের, নব স্বপ্ন বুননে।

( জীবনের অধিকাংশ সম্পর্ক-ই অমিমাংসিত থেকে যায়, ভাষা খুঁজে পায়না।)

অমিমাংসিত সম্পর্কঃ ০১

কচি কিশলয় দুর্বাঘাসে পরিণত হবার আগেই
প্রেমে পড়ে দখিনা সমীরণের,
জীবন যৌবন সমর্পিত করার মানসে স্বপ্ন রচে নিরন্তর
কঠিন দাবদাহের মাঝেও খুঁজে শান্তির পরশ
হিমশীতল ভোররাত্রির কুজ্ঝটিকায় ভুলেনা পথের ঠিকানা
শীতের আধিক্য বেড়ে গেলে নুয়ে পড়ে বটে
ভুলেনা তবু বসন্ত বায়ুর মধুর আলিঙ্গন।
বসন্তের পরে গ্রীষ্ম বর্ষা শরত হেমন্ত শেষে শীতে ধরণী কাঁপে থরথর
কচি কিশলয়ের সেই প্রতীক্ষার ঘটেনা অবসান
বর্ষ পরিক্রমায় জীবনে নেমে আসে ধূসরতা
বলা হয়নি তবু দখিনা সমীরণ, ভালোবাসি তোমায়
অমিমাংসিত থেকে যায় সম্পর্কের আদি অন্ত।

( জীবনের অধিকাংশ সম্পর্ক-ই অমিমাংসিত থেকে যায়।)

বেলা শেষে…

আঁধারের গভীরতা ভালোবাসি তবু
সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত যদিও সময়টুকু পাইনি কভু
আলো আঁধারি খেলা খেলেছি সময় ছিল অবিরত
প্রতীক্ষা অপেক্ষা শব্দ দুটি আমার বেশ পরিচিত।

নীড় হারা পাখির আত্মনাদে অভ্যস্থ হয়ে পড়েছি কখনো
পদ্মার বুকে হারিয়ে যাওয়া বসত বাড়ি দেখেছি শতশত
তোমার নাতিদীর্ঘ আলাপচারিতায় আমি ডুব দেই ভূমধ্য সাগরে
লৌহমানব হতে চেয়েছি ডুবে যেতে যেতে।

চেতনা আমার বর্ণহীন
আকুলতায় আমি অশ্রুহীন
প্রবল বর্ষণের মাঝেও আমি রক্তচোষা রোদ দেখি
শীতের ওম নিতে গিয়ে আমি ঘামের স্রোতে ভাসি।

সাগরের তলদেশে বসতি নিয়েও আমি গলগণ্ড রোগে ভোগী
চন্দ্রিমা উদ্যানে আমি কাল অমাবস্যার রুপ দেখেছি
আমি আসলে যা দেখেছি —
তোমার দেখার ঠিক উল্টো রূপটি।

তুমি যা পেয়েছ
আমি তার উল্টোটি
আসলে আমি যা দিয়েছি
ভোগ না করেই দিয়েছি।

আমি গরল পিয়ে–
অমৃত সুধাটি তোমার জন্য রেখে দিয়েছি
অমাবস্যা বুকে নিয়ে প্রভাত বয়ে এনেছি
তুমি তিলোত্তমা হবে বলেই তো সব সয়ে নিয়েছি।

যমদূতের ঘন্টা ধ্বনি যেন শুনি এখন অতি নীরবে
বেলা বয়ে গেল; যাক না কী আছে তাতে!!

একটি মাত্র জীবন

স্বপ্ন দেখি, আঁধার রাতের হতে আলোক শিখা
যে আলোতে আলোহীনে দেখবে পথের দিশা।
একটি মাত্র জীবন সবার; সুযোগ পাবে একটি বারে
হাত মেলাতে এসো সবে; জাতির তরে কিছু করবো বলে।

বিদায় চাইনা ধরার মাঝে, চতুষ্পদী প্রাণী যেমন
আসবো যাব, খেলবো সবই; লক্ষ্যহীন এই জীবন,
এমন জীবন চাইনা আমি, মৃত্যুর পরে শূণ্য ঝুলি পড়ে রবে
খুঁজে পাবেনা এমন কিছু; তারা আমায় স্মরণ করতে।

একটি মাত্র জীবন যখন, কাজে লাগাও এখনই সবে
মরণেও বেঁচে রবে; সব মানুষের অন্তরেতে।।

শুধু তোমার জন্যে…

তোমার চোখে যখন সরিষাভোর
আমি তখন স্বপ্নে বিভোর
লাঙ্গুলে অগ্নি মশাল;
অশ্রুতে তোমার নোনাজল।

জ্বেলেছি বহ্নিশিখা
যাক দূর হয়ে যাক যত অমানিশা
তিমির রাতে খুঁজে নেবো পথের দিশা
নব কিরণ নিয়ে আসুক নতুন দিনের বারতা।

সন্ন্যাসিভাব হোক তিরোভাব
তোমার স্বপ্নের সরোবরে হোক নব দিগন্তের আভির্ভাব
জ্বেলেছি আলো; অগ্নিস্নানে পুড়ে যাক যত কালো
রাঙা প্রভাতে কুড়িয়ে নাও; সমাজের যত ভালো।

অন্তিম ইচ্ছা—

তুমিই যদি হও কবিতার একমাত্র মধ্যমনি
কবিতা হয়ে পড়ে ক্ষীণ থেকে ক্ষীণকায়
অন্তরালে চলে যায় পৃথিবীর সব রঙ –
অবারিত সবুজ মাঠ
সোনালি ধানের ক্ষেতে কৃষকের হাসি
অসীম আকাশে নীলিমার হাতছানি
সব ভুলে যাই; সব!

ভুলে যাই উদার হতে মানব প্রেমে
ভুলে সংসারে আরও অনেক কিছু আছে
ভুলে যাই আমি যে শুধু আমার নয়, সমাজের প্রতি আমি দায়ী!
আত্মাকে সঁপি শুধু তোমারি প্রেমে।

ভুলে যাই সাগরের অথৈ জলরাশির ডাক;
ভালোবাসায় ভরিয়ে দিতে জগত সংসার,
হতে পারিনা গিরির মতো শান্ত, উদার কিংবা দৃঢ়চেতা
তোমার কারণে আমার প্রেম রূপ নেয় সংকীর্ণ থেকে সংকীর্ণতায়।

আমি হবো না, হবোনা লীন ব্যক্তি প্রেমে
তোমাদের মাঝে বাঁচতে চাই, তোমাদের হয়ে।।

অনুভূতি—

অযুত নিযুত তারার মাঝে নিমিষেই
খুঁজে নিতে পারি সন্ধ্যাতারা;
ধরে নিলে কি করে তবে—
হারাবে তুমি দৃষ্টি সীমার ওপারে!

তোমার ঘ্রান জানিয়ে দেয় তোমার উপস্থিতি
ত্রিশ ডিগ্রি কোনিক রেখার চাহনি;
মুখোশের আড়ালে তেজদীপ্ত অবয়ব
বিটপীর সবচে কচি ডালের মত দেহখানি,
কি করে লুকোবে; আমার দৃষ্টি সীমার দেয়াল পেরিয়ে!

যখন বুঝি হৃদকম্পন শতক করছে ছুঁইছুঁই
বাতাসে এমন ঘ্রান বয়ে বেড়াচ্ছে; যা নাসিকা রন্ধে আগে কখনো প্রবেশ করেনি,
রবি হয়েছে নিরুত্তাপ অথচ বেড়ে যাচ্ছে আলোর উজ্জলতা,
কিংবা যখন দেখি এক সুক্ষ কোন থেকে এক আলোক রেখা—
সকল গতি পেছনে ফেলে আমার হৃদপিণ্ডের দেয়াল ভেদ করে;তুলেছে ঘুর্নিঝড়—
তখনই বুঝে নিই, তুমি অবতীর্ণ হয়েছ এই লোকালয়ে।।

কবিতার একাল-সেকাল

শ্বেত শাড়িতে কবিতা আজ তোমায় বড্ড বেমানান লাগে
তোমার প্রেমে আমরা এতোই বিগলিত কখন যে খসে পড়েছে—
শাখা সিঁদুর চোখেই পড়েনি কারোরই!
খুলে নিয়েছে একে একে সব অলংকার; হয়ে পড়ছ নিরাভরণ
তবু আমরা আজ কবি; কুড়াই হাততালি
না পেলে বাহবা! মনঃক্ষুণ্ণ হই বেশ।

কবিতা, তোমার বাসর সাজাতে একদা কবি গলদ্ঘর্ম হয়ে তুলেছিল নাভিশ্বাস
কাটিয়ে নির্ঘুম রাত স্বপ্ন-আলোকিত দিবসে এঁকেছিল কুজ্ঝতিকা
তুমি আজ বাঁধন মুক্ত; তাই যাই পাই, তাই দিয়ে বুনি তোমার দেহখানি
আর ভাবি নিরাভরণেও তো তোমায় লাগে বেশ মনোহারিণী।

তোমায় লভিতে কতো কবি হয়েছিল সংসার বিবাগী
অরণ্যের মাঝে সঁপেছিল জীবন যৌবন সবই
ধ্যানে মজেছিল তপস্বী যেমন; ছুঁয়েছিল সাধনার উচ্চ শিখর
তবুও তুমি যেন থেকে যেতে অধরা; কবি তাই সংজ্ঞাহীন।

প্রসব বেদনায় বিদীর্ণ কবি; রচেছিল যে কবিতা
যুগযুগান্তর কালের তরিতে তা আজো টিকে আছে স্বমহিমায়।।

স্বজাতির ভুলে প্রতিশোধের মালা আমারই গলে—

দেবদারু তলায় প্রায় দেখা হতো এক বৈষ্ণবীর সনে
ব্রত ছিল তার মজিবেনা আর কোন পুরুষ প্রেমে;
ছিল এক বামন ঠাকুর; কেঁড়ে নিল তার সব জীবন-যৌবন
সে হতে বৈষ্ণবী; ঘুরে দেশে দেশে, নিয়ে সন্ন্যাসি মন।

ভাঙতে বৈষ্ণবীর ভ্রম, সেজেছিলাম সাধুজন
ব্রত নিয়েছিলাম কভু হানিবোনা আঘাত, হবো বিশ্বাসী জন
কাজে অকাজে ছুটে যেতাম দেবদারু তলে
প্রায়শ দেখা হয়ে যেত বৈষ্ণবীর সনে।

জানিনা কিসের ছলে, এ পথকেই সে নিল আপন করে
আমার আসতে হতো দেরি; তবু বৈষ্ণবী থাকতো অপেক্ষাতে,
যবে বৈষ্ণবী বুঝে নিয়েছে পুরোপুরি আমি মজেছি তার প্রেমে
তখনি কেটে পড়েছে; বামন ঠাকুরের প্রতিশোধ আমাকে দিয়ে নেবে বলে !

চাই কর্মময় জীবন

শরত প্রভাত; ভয়ংকর সুন্দরি মূর্তিতে রবির আবির্ভাব
দৃষ্টি প্রসারিত করেছি লুটে নিতে সুন্দর যথাসম্ভব,
বিপন্ন বিষাদে ছেয়ে গেছে চারদিক—
আমি যেন হামাগুড়ি দিতে লাগলাম হয়ে নবজাতক।

অথচ কাছে পেয়েও ছোঁয়া হলনা অধরা সুন্দর
তলিয়ে যাচ্ছি পাতালপুরীর অজানা গুহার অন্দর;
হয়তো এভাবে চলে যাব; দৃষ্টি সীমার ওপারে একদিন
মেলাতে বসেছি তাই হিসেবের খাতা, পাই যদি কিছু অমলিন।

হারিয়ে গেলেও মনে পড়ে যেত তোমার
হয়তো সুযোগ ছিল মরেও বেঁচে যাবার
মেতে ওঠতে পারতাম যদি; উল্লাসে দৃষ্টি সুখের
অধরাকে ধরে নিয়ে যদি দিতাম তোমায় উপহার।

সময় কেটেছে দারুন হেলায় আর খেলায়;
তাইতো তরী পৌছায়নি যাওয়ার কথা ছিল যেথায়,
কি করে করি আজ অমরত্বের আশা!
চেপে ধরেছে চারিদিক; ঢেকে দিচ্ছে সবই কুয়াশা।

নুয়ে পড়তে চাইনা আজ বয়সের ভারে,
সবার মাঝে বেঁচে থাকতে চাই, তোমাদের হয়ে;
যৌবন তো মানুষের বয়সে নয়; কর্মে
শুরু হোক কর্মের কোলাহল; যতদিন না যাই ওপারে।

অন্ধকার আত্মার পূজারি

অন্তরা কতো দিন আসিনা তোমার আঙিনায়
সময় যে ঘটেনা তা কিন্তু নয়—
ভেবেছিলাম ভাদ্রের অমাবস্যায় মিশে যাব অন্ধকারে
ছায়াহীন বিশুদ্ধ আঁধার; মেখে নেবো সারা অঙ্গে।

শ্বেত-শুভ্র মেঘের ভেলায় ভাসিনি কোনোদিন
খুজিনা তাই কোন এক পূর্ণিমা রজনী মন;
আলোআঁধারি প্রেমে বিশ্বাস করিনা
মধ্যপন্থা বলে কিছু আছে কিনা জানিনা।

তোমার অপেক্ষা এক পূর্ণিমা রাতের তরে
চাঁদ যখন মধ্য গগণে তখন আমি যাই চলে—
পৃথিবির পুর্ব অক্ষরেখায় যেথায় আকাশ ছেয়ে গেছে কালো মেঘে
আমি যে পূজারি অন্ধকার আত্মার, খুঁজে ফিরি তাই অন্ধকারে।

জীবন সন্ধিক্ষণে-

দিন দিন হয়ে পড়ছি ক্লান্ত প্রাণ এক
কুয়াশার উত্তরীতে ঢেকে যাচ্ছে চারদিক
আলো আর আঁধারে ডেকে আনে সাঝ
নিমিষেই অন্ধকার আত্মা পরিহার করে লাজ।

শম্বুক মায়ায় আমি প্রবেশ করি ভেতর থেকে আরও ভেতরে
নীলিমার আবরণে হারিয়ে যাই সহসা শুন্যে—
বিদীর্ণ হয় চঞ্চল; সকল কর্মকোলাহল
দিনে দিনে ক্ষয়ে যায় আয়ু; আমি হতবিহ্বল।

একদা বুনেছিলাম স্বপ্ন রঙিন—
তারা কিছু দেখেছে আলো, আর কিছু মলিন;
খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে আজ করি জীবনের হিসেব-নিকেশ
অপূর্ণতার মাত্রায় আমি যেন হয়ে যাই নিঃশেষ।

অলসতার দেবীর মোহে কাটিয়েছি সকাল-সাঝ
জীবন সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আজ মাথায় পড়ছে বাজ,
ভাবি এখন শুধু যদি ফিরে পেতাম সেই জীবন-যৌবন
অবহেলায় আর কাটতোনা কোন ক্ষণ; হয়ে অবচেতন।।

বিচিত্র পৃথিবী

উপভোগ করেছি বিচিত্র এই পৃথিবী
তবু হইনি কভু বৈচিত্র্যগামী—
দেখেছি অবারিত ফসলের মাঠ, কৃষকের মুখে হাসি
আবার দেখেছি ধুধু বালুচর; চৌছির মাঠে সেই কৃষকের আহাজারি।

দেখেছি কাননে কুসুম কলি ফোটে আছে থরে বিথরে
পল্লীবালা রচিছে মধুর গীত; ফুলের মালা গলে পরে
আবার দেখেছি সেই পল্লীবালার অকাল সমাধি
সৃজন পতন চলে যেন এই পৃথিবীতে নিরবধি।

নবীন কিশোর রচে চলেছে যেন প্রেমের সরবোর
কত কোলাহল, কত হাসিখুশি; বাজিছে আনন্দ ঝংকার,
আবার দেখেছি নিমিষে হচ্ছে ম্লান, উত্থিত যত কলরব
প্রেমিক বর মরছে ধুকেধুকে; চারিধার করে নিরব।

বিজ্ঞান দিয়েছে বেগ, মাতিছে সবাই সৃষ্টি সুখের উল্লাসে
পৃথিবী আজ হাতের মুঠোয়; নয় কেউ আজ দূরে,
নবীন বৈমানিক ঘরে ফিরেছে পৃথিবী প্রদক্ষিন করে
আবার দেখেছি হাইড্রোজেন বোমার আঘাতে মানব সভ্যতা ধ্বংসের পথে।

কবি রচেছে কবি গান হয়ে তব বন্দনায় পঞ্চমুখ
তুমিই মহান তুমিই মহিম; দেখা মেলাভার কোন এক নিন্দুক,
আবার তারই মুখে শুনি নিন্দার বাণী; হয়তো বাতাস এখনো বদলায়নি দিক
বিচিত্র এই পৃথিবী তাই হয়ে যাই আমি নির্বাক।

দেখেছি কত বঙ্গ ললনা প্রেম দিয়েছে অকাতরে বিলিয়ে
জাত কুল সবই দিয়েছে বিসর্জন; তাজমহল রচিতে
স্বর্গীয় প্রেম যেন আজ নেমে এসেছে এই পৃথিবীতে
আবার দেখেছি সেই প্রেয়সি ভুলেছে অতীত; দেখেছি অন্য রূপে।

বিচিত্র এই পৃথিবীর যেন রঙ বদলায় ক্ষণে ক্ষণে
কখনো কালবৈশাখী, কখনো আবার অঝোর ধারায় বৃষ্টি নামে
কখনো হিম শীতল, কখনো দাবদাহ;আবার দখিনা সমীরণ বহে
আমি আছি তবু হয়ে নিথর; পারিনে রঙ বদলাতে।

বন্ধু ডাকছি তোমায়_

বন্ধু কি তুই যাবি আমার সনে—
শাকের করাত পার হবি তুই; ভর দিয়ে আমার বুকে
হৃদ পিণ্ডের প্রতিটি প্রকোষ্ট খুলে দেবে দ্বার
যেথায় খুশি; থাকবি সেথায় নিয়ে অধিকার।

বন্ধুরে তুই আয় ছুটে আয় করি আলিঙ্গন
থাকবেনা আর জাত ভেদাভেদ, হিন্দু–মুসলমান;
বন্ধুর চেয়ে বড়, কোন পরিচয়; জানা হয়নি আর
কেউ থাকবেনা পেছনে পড়ে, কেউ হবেনা পর।।