নিতাই বাবু এর সকল পোস্ট

নিতাই বাবু সম্পর্কে

নিতাই বাবু ২০১৫ সালে তিনি শখের বশে একটা ব্লগে রেজিষ্ট্রেশন করে লেখালেখি শুরু করেন।তিনি লিখতেন নারায়ণগঞ্জ শহরের কথা। লিখতেন নগরবাসীর কথা। একসময় ২০১৭ সালে সেই ব্লগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ব্লগ কর্তৃক ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জনাব সাঈদ খোকন সাহেবের হাত থেকে ২০১৬ সালের সেরা লেখক সম্মাননা গ্রহণ করেন। সাথে নগর কথক উপাধিও পেয়ে যান। এরপর সেই ব্লগে লেখালেখির পাশাপাশি ২০১৮ সালের জুলাই মাসে তিনি শব্দনীড় ব্লগে রেজিষ্ট্রেশন করেন। শব্দনীড় ব্লগে উনার প্রথম লেখা "আমি রাত জাগা পাখি" শিরোনামে একটা কবিতা। তিনি চাকরির পাশাপাশি অবসর সময়ে লেখালেখি পছন্দ করেন এবং নিয়মিত শব্দনীড় ব্লগে লিখে যাচ্ছেন।

আমার পরিচয় আমি মানুষ!

অনেক সময় আমাকে অনেক লোকে বলে, ‘বাবু মুসলমান হয়ে যান’। আপনাদের এটা একটা ধর্ম হলো? কী যে করেন আপনারা? বুঝি না!’ এসব কথা শুনে আমি মনে মনে বলি, ‘আমিও তো দাদা কিছুই বুঝি না। না বোঝার কারণেই শুধু ভাবি। ভাবতেই থাকি। আসলে কি আমি হিন্দু? নাকি মুসলমান? না-কি ইহুদি খ্রিস্টান? কিন্তু বাবা এবং মাকে দেখেছি দেবমূর্তি পূজা করতে। তাঁদের দেখায় আমিও দেবমূর্তিতে পূজা দেই। আচ্ছা, আমি যদি অন্য ধর্মের সমাজে বড় হতাম? তখন আমি কি দেবমূর্তিতে পূজা দিতাম? এখন তো ইচ্ছে করলে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে পারি। খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করতে পারি। বৌদ্ধ ধর্মও গ্রহণ করতে নিষেধ নেই। যদি ধর্মান্তরিত হই, তাহলে কি আমার মনুষ্যত্ব জীবনের সব ঠিক হয়ে যাবে?

এসব নিয়ে আমি অনেকসময় নীরবে বসে একা একাই ভাবি। ভাবি আমার জন্ম মৃত্যু আর ধর্ম নিয়ে। এসব নিয়ে শুধু আমি কেন, আমার মত এমন ভাবনা মনে হয় অনেকেই ভেবে থাকেন। তবে কে কেমনভাবে ভাবছেন, তা আমার জানা নেই। আমি ভাবছি এই নশ্বর ভবসংসারে আসার আগের অবস্থা থেকে শুরু করে মৃত্যুর পর পর্যন্ত। যখন আমি মাতৃগর্ভে আসার আগে কেমন ছিলাম, তখন আমার অবস্থা আর ধর্ম কী ছিল? যখন মা বাবার আনন্দের ফসল হয়ে মাতৃগর্ভে ছিলাম, তখন আমার অবস্থা কেমন ছিল এবং ধর্মটাই বা কী ছিল?

আর আমি যদি না আসতাম, তাহলে আমার বাবা কে, আর আমার মা-ই-বা কে হতেন? আমার মা কে, আর বাবাই বা কে? তাঁদের পরিচয়ই বা কী থাকতো? মাতৃগর্ভে থাকতেই যদি আমার বাবা মারা যেতেন, আর ভূমিষ্ঠ হবার পরপরই যদি আমার মায়ের মৃত্যু হতো? আর যদি আমার কোনও ভাই-বোন না থাকতো? আত্মীয়স্বজনও যদি না থাকতো? আমার পরিচয় এবং আমার ধর্মীয় পরিচয়ই বা কী হতো? আমার নামও কী বর্তমান নাম হতো? নাকি অন্য নাম হতো? আমার ধর্মীয় পরিচয় কি হিন্দু থাকতো? নাকি ইসলাম নাহয় বৌদ্ধ খ্রিস্টান হতো? এসব প্রশ্নের উত্তর মেলাতে গেলেই মাথা ঘুরে। আবার খুবই সহজ মনে হয়।

সহজ হলো এভাবে, যেমন: আমি মাতৃগর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হবার পর যদি কোনও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী আমাকে লালন-পালন করে তাঁদের পরিচয়ে বড় করতো? তাহলে সোজা কথায় আমার নাম হতো মিস্টার হেমিলটন। আর ধর্মীয় পরিচয় হতো খ্রিস্টান। তখন আমি ছোটবেলা থেকেই খ্রিস্টান ধর্মের কিতাব বাইবেল পড়তাম। গির্জায় যেতাম। খ্রিস্টান ধর্মীয় আচার আচরণে বড় হতাম। তাঁদের ধর্মীয় নিয়ম-কানুন মেনে চলতাম। এখন যেমন সনাতন ধর্মের নিয়মকানুন মেনে চলি, তখন মানতে হতো খ্রিস্টান ধর্মীয় নিয়ম-কানুন। তাহলে এখানে দেখা যায় ধর্ম কোনও ব্যাপার না। জন্ম এবং কর্মই বাধ্যবাধকতা। জন্ম আমার যেখানেই হোক না কেন, কর্ম দিয়েই আমার পরিচয়–আমি একজন মানুষ।

আর যদি কোনও ইসলাম ধর্মাবলম্বী আমাকে তাঁদের পরিচয়ে, তাঁদের সন্তান মনে করে লালন-পালন করে বড় করতো, তাহলে আমার নাম হতো হালিম, নাহয় ডালিম। তখন আমি ছোটবেলা থেকে মক্তবে যেতাম। আরবি শিক্ষা বই বা কুরআন পড়তাম। মসজিদে যেতাম। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতাম। রমজান মাসে রোজা রাখতাম। ঈদুল ফিতরের দিনে ঈদগাহে যেতাম।ঈদের নামাজ আদায় করতাম। ঈদুল আজহায় পশু কুরবানী করতাম। এখন যেমন পূজা করি। মন্দিরে গিয়ে দেবমূর্তিতে প্রণাম করি। সকাল সন্ধ্যা ঘরে বা মন্দিরে প্রার্থনা করি। হরিনাম জপ করি। রামায়ণ পাঠ করি। গ্রন্থ পাঠ করি। গীতা পাঠ করি। এখানেও দেখা যায় ধর্ম কোনও ব্যাপার না। জন্ম এবং কর্মই বড় ব্যাপার। তাহলে বোঝা যায়, জন্ম আমার যেখানেই হোক-না-কেন, কর্ম দিয়েই আমার পরিচয়– আমি একজন মানুষ।

আমি ছোটবেলা থেকে যদি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সমাজে বড় হতাম বা ইহুদি সমাজে বড় হতাম, তাহলে তাঁদের ধর্মীয় নিয়ম-কানুন মেনেই আমি চলতাম। বৌদ্ধ মন্দিরে যেতাম। ত্রিপিটক পাট করতাম। ইহুদিদের ধর্মীয় কিতাব পড়তাম, শিখতাম। এখানেও একইরকম অবস্থার সৃষ্টি। এরকম হতো না, যদি আমি জানতাম আমার জন্ম হিন্দু ধর্মে। কিন্তু আমি তো জানি না আমার জন্মের ঠিকানা। তাহলে ধর্ম দিয়ে আর কী হবে? আমি যেই ধর্মে জন্মগ্রহণ করেছি, সেই ধর্মে কি আমি বড় হয়েছি? আমি বড় হয়েছি ইহুদিদের ঘরে। আমি বুঝের হয়েছি মুসলমানদের ঘরে। আমি লালিত পালিত হয়েছি খ্রিস্টানের ঘরে। তাহলে ধর্ম নিয়ে এতো ভেদ-বিচার কেন?

আর মানুষের প্রতি এতো ঘৃণা কেন? সে হিন্দু। সে মুসলমান। সে খ্রিস্টান। সে বৌদ্ধ। সে ইহুদি। সে ডোম। সে চাঁড়াল। সে ধোপা। সে নাপিত। সে কুলু। এমন বৈষম্য কেন? আর ধর্ম নিয়েই বা এতো বাহাদুরি কেন, হীনমন্যতা কেন? আমি একজন মানুষ হয়ে আরেকজন মানুষকে ঘৃণাই বা করছি কেন? অন্য ধর্মের প্রতি আমার এতো ঘৃণা কেন? এটাই কি আমার ধর্ম? উত্তর আসে এটা আমার ধর্ম না। আমার ধর্ম হোক মানুষের ধর্ম। মানবতার ধর্ম। ধর্ম দিয়ে তো মানুষ চেনা যায় না। কর্মতেই মানুষ চেনা যায়। তাই জন্ম যেই ধর্মেই হোক-না-কেন, আমার কর্ম দিয়েই পরিচয়–আমি একজন মানুষ।

মহেশখালী থেকে মাকে চিঠি

পরম পূজণীয় মা, পত্রের প্রথমে আপনি আমার ভক্তিপূর্ণ প্রণাম গ্রহণ করবেন। বাবাকে আমার প্রণাম জানাবেন। বড় দাদাকেও আমার প্রণাম জানাবেন। সাথে জানাবেন বাসার সকলকে শ্রেণিবিশেষ আমার প্রণাম ও স্নেহাশিস। আশা করি দয়াময়ের অশেষ কৃপায় বাসার সকলকে নিয়ে একপ্রকার ভালো আছেন। ভালো থাকার জন্য মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে সবসময় প্রার্থনা করি। আপনাদের সকলের আশীর্বাদে আমিও একপ্রকার ভালো আছি।

মা, আপনার বারণ থাকা সত্ত্বেও চিটাগাং এসে মনে হয় বিপদেই পড়েছি! এখানে আমরা তিনজন যে-কাজের জন্য এসেছিলাম, সেই কাজে আমাদের না নিয়ে অন্য এক কঠিন কাজ আমাদের দেওয়া হয়েছে। প্রথম দিন সকালবেলা যখন কোমড়ে গামছা বেঁধে কাজে যাই, তখন কী কাজ আমাদের করতে হবে, সাব-কন্ট্রাক্টর আমাদের বুঝিয়ে দেয়। কাজটা হলো, পাহাড়ের নিচে থেকে উপরে বালু উঠাতে হবে। ঐ কাজে শুধু আমরা তিনজনই নয়, আরও অনেক লেবারই ছিল। সেখানকার লেবাররা সে কাজ দিব্যি করেও যাচ্ছিল। তা দেখে আমরা তিনজনই মনে করেছিলাম এ-কাজ করা কোনও ব্যাপারই না! কিন্তু মা, সে-কাজ আমরা করতে পারিনি। করতে পারিনি এইজন্য যে, উঁচু পাহাড়ের নিচ থেকে বালুর টোকরি মাথায় নিয়ে পাহাড়ের উপরে উঠার মতো সাধ্য আমাদের তিনজনের মধ্যে কারোর ছিল না।

যখন বালুর ভর্তি টোকরি মাথায় নিয়ে পাহাড়ের আঁকাবাঁকা পথ বেয়ে উপরে উঠতে লাগলাম, তখন আর পারছিলাম না। তবুও অনেক কষ্ট করে দু’এক ঘণ্টা বালুর টোকরি মাথায় নিয়ে পাহাড়ের সাথে যুদ্ধ করেছিলাম। এরপর হঠাৎ করে মাঝপথেই থেমে গেলাম। বালু ভর্তি টোকরি মাথায় নিয়ে আর ঠিক গন্তব্যে পৌঁছাতে পারিনি। আমিও পারিনি, আমার সাথে দু’জনও পারেনি। এমন কঠিন কাজ না পারার কারণে পাহাড়ের আঁকাবাঁকা পথের মাঝে বসেই কাঁদতে লাগলাম। আমার কান্না দেখে আমার সাথে আসা দু’জনও কাঁদতে লাগলো। আমাদের কান্না দেখে সাব-কন্ট্রাক্টর তাঁর অফিসে ডেকে নিয়ে বসতে দিলো। আমরা বসলাম। সাব-কন্ট্রাক্টর জিজ্ঞেস করলো, ‘এখানে এ-কাজ আমরা করতে পারবো কি না’। আমরা সাব-কন্ট্রাক্টরের প্রশ্নের উত্তরে বললাম, ‘না’। এরপর সাব-কন্ট্রাক্টর আমাদের পাহাড়ের উপরে অন্য এক কাজ করতে বললেন। সে কাজটা ছিল হাল্কা-পাতলা। এভাবে সেই পাহাড়ের সপ্তাহখানেক কাজ করেছিলাম।

তারপর আমাদের নিয়ে যাওয়া হয় কক্সবাজার সংলগ্ন মহেশখালী। সর্বপ্রথম এখানেই আমাদের আনার কথা ছিল। কিন্তু যেকোনো কারণে দু’এক দিনের জন্য আমাদের রাখা হয় চিটাগং বায়োজিদ বোস্তামি মাজার সংলগ্ন এক পাহাড়ে। সেখানে এক বিত্তশালীর বাংলো নির্মাণ হচ্ছিল। সেই বাংলো তৈরির কন্ট্রাক্ট পেয়েছিল, আমাদের যিনি চিটাগং নিয়ে এসেছেন, তিনি। কিন্তু আমাদের সাথে কথা হয়েছিল, মহেশখালী রাস্তা নির্মাণের কাজের কথা। কন্ট্রাক্টরের সাথে আমাদের কথা ছিল দৈনিক মজুরি ১২ টাকা। তা তো আপনিও জানতেন। এখানে আসার আগে যা আপনাকে জানিয়ে ছিলাম। শেষতক আমাদের মহেশখালীতেই আনা হলো। চিটাগং আসার আগে ভেবেছিলাম এই ১২টাকা থেকে ৫টাকা নিজের খরচ হলেও, বাদবাকি ৭টাকা আপনার কাছে পাঠাবো। যা আপনাকেও বলে এসেছিলাম। এখন আমরা কক্সবাজার সংলগ্ন মহেশখালীতে আছি। এখানে আমাদের কাজ হলো রাস্তা নির্মাণ করার কাজ।

মা, কক্সবাজার সংলগ্ন মহেশখালী। খুবই সুন্দর জায়গা। ছোট একটা দ্বীপ। যার লম্বায় ১৩ মাইল। পাশে ৬মাইল। একদিকে বঙ্গোপসাগর, আর বাকি তিনদিকে সাগরের শাখা প্রশাখা। এর মাঝেই মহেশখালী। চারদিকে পাহাড়। এখনকার মানুষের ভাষা আমাদের নারায়ণগঞ্জের মতো নয়। এঁরা কীভাবে যে কথা বলে, ওঁদের কথা কিছুই বোঝা যায় না। তবে মা, ওঁরা বাংলায় কথা বলে। কথা বলার সময়, একটু নাকে জোর দিয়ে ‘ন’ শব্দ বেশি বলে। ওঁদের আচার-আচরণ ভালো। ঢাকাইয়া মানুষের গন্ধ পেলে, ওঁরা খুবই আদর সমাদর করে। এই মহেশখালীতে আমাদের হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেক লোক আছে। এখানে আদিনাথ মন্দির নামে একটি বিখ্যাত মন্দিরও আছে। আছে মগ জাতীয় বার্মিজ জনগোষ্ঠীও। সেখানকার মানুষ বার্মিজদের বলে মগ জাতি। সব মিলিয়ে মহেশখালী দ্বীপ খুবই সুন্দর জায়গা। কিন্তু এতো সুন্দর জায়গা, তবু্ও ভালো লাগে না। এর কারণ শুধু একটাই, সেটা হলো টাকা। টাকা নেই তো কিছুই নেই। এই টাকার জন্য নারায়ণগঞ্জ থেকে এখানে ছুটে এসেছি।

মহেশখালী বাজার থেকে নতুন বাজারের দূরত্ব প্রায় ১৩ মাইল। এই ১৩ মাইল রাস্তা সিসি ঢালাই হবে। এই রাস্তা ঢালাই করা কাজেই আমরা এখানে এসেছি। আমাদের সাথে সেখানকার আরও বেশ কয়েকজন লেবার আছে। এখানে আমরা তিনজন থাকছি এক সরকারি পরিত্যক্ত গোডাউনে। নিজেরাই কোনরকম রান্না-বান্না করে খাচ্ছিলাম। কাজও করছিলাম।

কিন্তু মা, এখানে প্রতিদিন বৃষ্টি হয়। বৃষ্টির কারণে প্রতিদিন কাজ হয় না। কাজ নেই তো মজুরি নেই। আমাদের কন্ট্রাক্টর থাকে চিটাগং শহরে। তিনি সপ্তাহে একবার আসে। সপ্তাহে যার যে-ক’দিন কাজ হয়, সেই হিসাব করে যার যার পাওনা বুঝিয়ে দিয়ে আবার চলে যায় কন্ট্রাক্টরের গন্তব্যে। কাজের মজুরি ছাড়া বাড়তি কোনও টাকা দেয় না। সারা সপ্তাহে কাজ হয় তিন থেকে চারদিন। এ-দিয়ে নিজের খাওয়া চলে না।

দুই তিনদিনের কাজের মজুরি দিয়ে সারা সপ্তাহ চলতে খুবই কষ্ট হয়। তাই সেখানকার এক লোক মারফত লবণের মিলে যোগাযোগ করে, আমরা তিনজনই দৈনিক ২৫টাকা মজুরিতে একটা কাজ নিয়েছি। এই কাজটাও রাস্তার ঢালাই কাজের চেয়ে আরও কষ্টকর! লবণের কাজ, মা। সারা শরীরে ঘা হয়ে যায়। এখানেও সারা সপ্তাহ কাজ করতে পারছি না। বর্তমানে আমার সমস্ত শরীরে ঘা হয়ে গেছে, মা। কাজে যাবার আগে সারা শরীরে পান খাওয়ার খয়র মেখে কাজে যোগদান করি। শুধু আমিই না মা, আমার মতো সবাই খয়র মেখে কাজ কাজ করে। তবুও শরীরে ঘা হয়ে যায়। শরীরের ঘা’র যন্ত্রণায় কাজ করতে পারছি না।

চিটাগাং আসার সময় যে-সব পড়ার বইগুলো আমি সাথে এনেছিলাম, শত কষ্টের মাঝেও পড়ি। আশা আছে আর ক’দিন কষ্ট করে ভাড়ার টাকা যোগাড় করে নারায়ণগঞ্জ ফিরে আসবো। কারণ, আমার ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হবার আর মাসেক তিনমাস বাকি। আমি কিন্তু পরীক্ষা শুরু হবার হিসাব মনে রেখেছি। আপনার আশীর্বাদ থাকলে এই সময়ের আগেই আমি আপনার বুকে ফিরে আসবো, মা। আমি পরীক্ষা দিবো। পাস করবা। আমার এই চিঠি হাতে পেয়ে আপনি চোখের জল ফেলবেন না। যদি চোখের জল ফেলেন, তাহলে আমার জন্য হবে অমঙ্গল। আপনি শুধু আমার জন্য আশীর্বাদ করবেন। যাতে আমি সুন্দরভাবে সুস্থ শরীর নিয়ে বাসায় ফিরে আপনার শ্রীচরণে প্রণাম করতে পারি।

আর কী লিখবো মা, লেখার আরও অনেক ছিল। তবু্ও লিখলাম না, আপনার কষ্ট হবে বলে। আরও কষ্ট হবে বাবার, বড় দাদা-সহ বাসার সকলের। তাই আর বেশিকিছু লিখলাম না, মা। পরিশেষে বাসার সকলের জন্য মঙ্গল কামনা করে এখানেই শেষ করছি।

ইতি,
আপনার আদরের ছোট ছেলে অভাগা।
কক্সবাজার সংলগ্ন মহেশখালী থেকে।

ফেসবুকে সম্পর্ক সেটিং নেই কেন? থাকলে ভালো হতো!

ফেসবুকে Sing Up (সাইন আপ) করার সময় ফেসবুক কর্তৃপক্ষ অনেকগুলো অপশন রেখেছে। যেমন–প্রথম নাম (নামের প্রথম শব্দ) শেষ নাম (নামের শেষ শব্দ) সময়তে মাধ্যম নামও সংযোজন করতে হয়। দিতে হয় ফোন নাম্বার বা ই-মেইল এড্রেস। বয়স কত, তাও দিতে হয়। পাসওয়ার্ড কনফার্ম করতে হয়। সবকিছু ঠিকঠাক হলে, ছবি আপলোড নিজের ইচ্ছার উপর ফেসবুক ছেড়ে দেয়। হয়ে গেল ফেসবুকে রেজিস্ট্রেশন করা বা একাউন্ট খোলা বা আইডি খোলা। এরপর আসে প্রোফাইল সেটিং। প্রোফাইল সেটিঙে অনেকগুলো অপশন থাকে। শিক্ষাগত যোগ্যতা, স্কুল-কলেজের নাম ও লোকেশন, বৈবাহিক সম্পর্কিত বর্ণনা সহ অনেক অনেক অপশন। তাও নিজের ইচ্ছার উপর থাকে। তাই কেউ সম্পাদন করে, কেউ করে না। শুরু হয় বন্ধু বেছে নেওয়ার পালা। যাকে রিকুয়েস্ট পাঠাচ্ছে, সে ইচ্ছে করলে একসেপ্ট করতে পারে, না-ও করতে পারে। কিন্তু দুঃখের বিষয় দুঃখের সাথে বলতে হয়, ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট প্রেরণ অথবা গ্রহণ করার ক্ষেত্রে কোনও Relationship setting (সম্পর্ক সেটিং) অপশন রাখা হয়নি। যার কারণে অনেকসময় নিজের অজান্তে লজ্জা পেতে হয়। আফসোস এখানেই!

আমার ফ্রেন্ড লিস্টে আমার বংশগত অনেক আত্মীয়স্বজন আছে। মেয়ের বাড়ির সম্পর্কিত আছে। আরও আছে শ্বশুর বাড়ির সম্পর্কিত অনেকেই। কিন্তু আমার ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজনকে তো কেউ চেনে? এই বন্ধুটি আমার কী হয়, ওই বন্ধুটি আমার কী হয়? মনে হয় কেউ কারোর সম্পর্ক নিয়ে বেশি একটা ভাবেও না! তবে কে কার সম্পর্কে কী হয়, জানা থাকলে কি ভালো হয় না? মনে হয় ভালোই হতো। ভালো হতো এই কারণে যে, আমার সাথে কার কী সম্পর্ক, তা অন্যসব বন্ধুরা বলতে পারতো। আমিও অন্যসব বন্ধুদের ফ্রেন্ড লিস্টে থাকা বন্ধুদের সঙ্গে কে কার কীরকম ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এবং আমার সাথে তাঁদের কী সম্পর্ক হতে পারে তা জানতে পারতাম। কিন্তু ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট বা একসেপ্টে Relationship setting (সম্পর্ক সেটিং) না থাকার কারণে তা আর জানা সম্ভব হচ্ছে না। যার কারণে অনেক সময় অনেকের পোস্টে মন্তব্য দিতে গিয়ে বেধে যায় খটকা।

সে-দিন এক বন্ধুর প্রেমময় এক পোস্টে মন্তব্য করে পড়েছি বিপাকে। বন্ধুটি শুধু ফেসবুক বন্ধুই নয়, বন্ধুটি ছিল ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ের মধ্যে একজন। সম্পর্কে ছিল ভাতিজা। প্রেমময় পোস্টে লেখা ছিল, “প্রথম দেখার পর থেকে তোমাকে শুধুই মনে পড়ে।” আমি লাইক ♥ দিয়ে মন্তব্যে লিখলাম, “দেখা হলে বুকে টেনে নিয়েন দাদা।” কিছুক্ষণ পরই মেসেজ। কাকা কেমন আছেন? অবাক হলাম! কিছুক্ষণ আগে তো উনার পোস্টে মন্তব্য করেছি দাদা সম্বোধন করে। এখন উনার মেসেজ বার্তায় আমাকে সম্বোধন করছে কাকা বলে। রাগ হলাম। আবার ভাবতেও লাগলাম! আচ্ছা, এতে ভাবার বিষয় নয় কি? অবশ্যই ভাবার বিষয় এবং লজ্জারও বিষয়। তারপরও কী আর করা! নিজের লজ্জার মাথা খেয়ে কিছুক্ষণ পর ভেবেচিন্তে রিপ্লাই করলাম, ‘ভালো আছি। তো আপনি কেমন আছেন?’ উত্তর পেলাম, আমিও ভালো আছি। কাকা, আমি আপনার ভাতিজা এমুক।”

এতক্ষণে চিনেছি আমার এক ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের ভাতিজা। তবে ফেসবুক প্রোফাইল ছবিটা ছিল তাল গাছের। আর নামটা ছিল ছদ্মনাম, “আগাছা”। তাহলে চিনবো কেমন করে? চিনতে না পেরেই তো ওঁর পোস্টের মন্তব্যে বন্ধু-বান্ধবের পোস্টের মত মন্তব্য করেছিলাম। এখন নিজের কাছে খুবই লজ্জাবোধ হচ্ছে। ফের ওঁর ওই পোস্টে গিয়ে মন্তব্য সম্পাদন করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তা আর করতে পারিনি। ভাতিজাও লজ্জায় পড়ে ওঁর করা পোস্ট মুছে ফেলেছে। এরপর একদিন ঐ ভাতিজার সাথে দেখা। ভাতিজাকে দেখেই আমি চিনতে পেরেছি। কিন্তু কিছুই বলছিলাম না। ভাতিজা আমাকে দেখে লজ্জায় মাথা নিচু করে অন্যদিকে কেটে গেল।

আমার ফেসবুক ফ্রেন্ড লিস্টে শুধু ও-ই নয়, ওঁর মতো এমন ভাতিজা আমার ফ্রেন্ড লিস্টে আরও কয়েকজন আছে। ওঁরা আমাকে খুবই সম্মান করে। ফেসবুকে সময় সময় ওঁরা ওঁদের মনের কথা লিখে পোস্ট করে। কেউ ভালোবাসার কথা লিখে পোস্ট করে, “আজ তোমাকে খুবই মনে পড়ছে প্রিয়ে”। ওঁদের সেই মাখামাখি পোস্টগুলো আমার চোখে পড়লে আমি যেমন লজ্জা পেয়ে থাকি, ওঁরাও মনে হয় তেমনই লজ্জা পায়। সে-কারণে আমি নিজে থেকে আমার অনেক ঘনিষ্ঠ কনিষ্ঠ ভাই ভাতিজাকে ব্লক করে রেখেছি। যাতে ওঁরা আমার করা পোস্টগুলো না দেখে, ওঁদের মনের কথা ভালোবাসার কথার পোস্টও আমি যেন না দেখি। শরম লাগে। লজ্জা লাগে। ব্লক করে রেখেছি বলে খারাপও লাগে। তারপরও তা-ই করতে বাধ্য হয়েছি। আমার বক্তব্য হলো, ওঁদের প্রেম ভালোবাসার কথা আমি কেন জানবে? ওঁদের টেম্পোরারি প্রেমিকার ছবি আমি কেন দেখবো? তাই নিজে থেকেই ওঁদের ব্লক করে রেখেছি, যাতে ওঁরা আমার সামনা-সামনি হলে লজ্জা না পায়। ওঁদের দেখলে আমিও যাতে লজ্জায় না পরি। ফেসবুক ফ্রেন্ড লিস্ট থেকে ব্লক করার উদ্দেশ্য হলো এটাই।

ব্লক করার দরকারই ছিল না। যদি রিকুয়েস্ট একসেপ্টের বেলায় Relationship setting (সম্পর্ক সেটিং) অপশান থাকতো। তাহলে রিকুয়েস্ট একসেপ্ট করার সময়ই দেখতে পেতাম, রিকুয়েস্ট প্রেরণকারী আমার সম্পর্কে কী হয়। তখন আমি ওঁদের রিকুয়েস্ট একসেপ্ট করতাম, নাহয় করতাম না। ওঁরা ওঁদেরভাবে থাকতো, আমি আমার ভাব নিয়ে থাকতাম। কিন্তু তা আর আপোষে বুঝে শুনে হচ্ছে না। ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট একসেন্ট করার পর আবার ব্লক করে রাখতে হচ্ছে।

হয়তো অনেকেই বলতে পারে যে, তাহলে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট করার সময় কীভাবে করলেন? আর করার পর কীভাবে জানলেন যে, রিকুয়েস্ট প্রেরণকারী আপনার ছোটভাই কিম্বা ভাতিজা?’ তাহলে বলতে হয় কীভাবে রিকুয়েস্ট একসেপ্ট করেছি। ফেসবুকে একাউন্ট খোলার পর অনেকেই নিজের আসল ছবিটা প্রোফাইলে আপলোড করে না। অনেকেরই প্রোফাইল ছবি থাকে ভুয়া ছবি। হয়তো কলা গাছের ছবি, নাহয় আম গাছের ছবি, নাহয় তাল গাছের ছবি। নামও থাকে ছদ্মনাম, পরগাছা নাহয় আগাছা অথবা বাগিচা। তাহলে কীভাবে বোঝা যায় রিকুয়েস্ট প্রেরণকারী আমার ঘনিষ্ঠ পরিচিত ভাই- ভাতিজা? বোঝা বড় মুশকিল! আবার ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট একসেপ্ট না করলেও, অনেকে অহংকারী মনে করে থাকে। তাই ভুল করেই অনেক পরিচিত ভাই ভাতিজাদের রিকুয়েস্ট একসেপ্ট করে ফেলা হয়। পর মুহূর্তে মন্তব্যের ছোট বক্সে উপরোল্লিখিত মন্তব্যের মতো আহাম্মক সাজতে হয়। মন্তব্য করে লজ্জা পেতে হয়। এরপর মেসেঞ্জারের মেসেজের মাধ্যমে জানতে হয় বা জানানো হয়, কাকা আমি এমুকে বা ওমুকে। নাম তপন, নাহয় স্বপন। তখন আর কী করা যায়? নিরুপায় হয়ে বাধ্যতামূলক ফ্রেন্ড লিস্টে রাখা হয়। নাহয় ব্লকে ফেলা হয়।

তাই বলছিলাম কি, ফেসবুকে এই ঝামেলা এড়ানোর জন্য Relationship setting (সম্পর্ক সেটিং) থাকলে মনে হয় ভালো হতো। যেমন–যাকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠানো হচ্ছে, তাঁর সাথে রিকুয়েস্ট পাঠানো ব্যক্তি সাথে সম্পর্ক কী? এরপর যিনি রিকুয়েস্ট গ্রহণ করবেন, তিনি রিকুয়েস্ট পাঠানো ব্যক্তির সম্পর্কিত তথ্যটি সঠিক কিনা তা বিবেচনায় নিতে পারবেন। যদি রিকুয়েস্ট প্রেরণকারী সম্পর্ক Mother চিহ্নিত করে, রিকুয়েস্ট গ্রহণকারীও চিহ্নিত করতে হবে Boy অথবা son-এ। তাই এখানে এই শব্দগুলো রাখা যেতে পারে যেমন–Mother, father, brother, wife, Husband, sister, Boy, son, uncle, aunt, grandfather, Grandma’ ইত্যাদি সহ আরও অনেক সম্পর্ক। আর নিজ প্রোফাইল ভাষা সেটিং তো আছেই। বাংলা হলে বাংলা, ইংরেজি হলে ইংরেজি।

এসব সম্পর্কিত অপশনগুলো যদি দেওয়া থাকতো, তবে আমার ছেলে যদি আমাকে রিকুয়েস্ট পাঠাতো, আমি ইচ্ছে করলে একসেপ্ট করতাম, নাহয় বাদ দিতাম। বাদ দিতাম শরম এড়ানোর জন্য। বাদ দিতাম এই কারণে, ছেলেকে ছেলেরটা নিয়ে থাকতে দেওয়া। আর আমি থাকি আমার ভাবেই। এ ছাড়াও আমার ছেলে যদি আমার এক বন্ধুকে রিকুয়েস্ট পাঠাতো, আমার বন্ধুটি অনায়াসে চিনে নিতে পারতো যে রিকুয়েস্ট প্রেরণকারী এক বন্ধুর ছেলে কিম্বা মেয়ে। তাহলে রিকুয়েস্ট গ্রহণকারীও বন্ধুর পরিচিতদের সেই সম্পর্কিত অপশনেই রেখে দিতে পারতো। কিন্তু দুঃখের বিষয় ওইসব অপশন ফেসবুকে নেই বা থাকবেও না। আছে শুধু Friend ফ্রেন্ড। মানে সবাই ফ্রেন্ড।

তাই এখন বাপও ছেলের বন্ধু, ছেলেও বাপের বন্ধু। মা ছেলের বন্ধু, ছেলেও মায়ের বন্ধু। চাচা ভাতিজার বন্ধু, ভাতিজাও চাচার বন্ধু। মোটকথা সবাই সবার বন্ধু। আর আমরা যাঁরা ফেসবুকে আছি, আমাদের উঠতি বয়সের ভাই ভাতিজারা প্রেমিকার গলা জাবড়ানো ছবি দেখে লাইক/কমেন্ট করতে থাকি। যেমন: আমি আমার এক আদরের ভাতিজাকে ব্লক করে দিয়েছি, শরম থেকে রক্ষা পাবার জন্য। তবে ফেসবুক কর্তৃপক্ষকে অজস্র ধন্যবাদ জানাচ্ছি, এ-কারণে যে, ফেসবুকে কেউ কারোর ছোট বড় নয়, সবাই সবার সমান। মানে ফেসবুকে সবার সমান অধিকার। সবাই সবার বন্ধু। ছেলেও তো বাপের বন্ধুর মতোই হয়ে থাকে। জিন্দাবাদ ফেসবুক বন্ধুগণ। জিন্দাবাদ ফেসবুক। জয়তু ফেসবুক।

খোদার আন্দাজ আছে!

এক খোদা প্রেমী পাগল খোদার খোঁজে বের হলেন। পাগলের বিশ্বাস মহান সৃষ্টিকর্তা এই পৃথিবী নামক গ্রহটির যেকোনো এক জায়গা বসে পৃথিবীর সবকিছু পরিচালনা করছেন। তাঁকে যদি খোঁজার মত খুঁজতে পারি, তাহলে হয়তো তাঁকে খুঁজে পাওয়া যাবে। খুঁজে পাওয়া গেলেই আমার এতো বছরের আরাধনার দেনা-পাওনা বুঝে নিতে পারবো। পাগল বলে, ‘তাঁর সাথে আমার অনেক বোঝাপড়া আছে। আছে চাওয়া-পাওয়া। আমি আমার সংসার ছেড়ে খেয়ে-না-খেয়ে তাঁর আরাধনা করছি, অথচ তাঁর কোনও দেখা পাচ্ছি না। সাড়াশব্দও পাচ্ছি না। আমি তাঁর পাগল। তাঁকে না পাওয়া পর্যন্ত আমি থামবো না। তাই এই লোকালয়ে বসে আর তাঁর আরাধনা করবো না। চলে যাবো এক গহীন জঙ্গলে। যেখানে মানুষের সাড়াশব্দ নেই, সেখানে।’

এই বলেই খোদা প্রেমী পাগল বের হলেন খোদার আরাধনা করে খোদাকে খুঁজে পাবার উদ্দেশ্যে। রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। হাঁটতে হাঁটতে অনেক পথ হেঁটেছে। পাগলের শরীর এখন প্রায় অবসন্ন। হাঁটতে আর পারছে না। পাগলের পা চলছে না। পানির পিপাসাও পেয়েছে অনেক। সামনে এক ডোবা থেকে কচুরিপানা ছাপ করে পানি পান করে রাস্তার পাশেই বসে রইলো। রাস্তার পাশেই সেখানকার এক লোক লাউ গাছ রোপণ করে ঝাঁকা দিয়ে রেখেছিল। সেই লাউ গাছের ঝাঁকায় কয়েকটা লাউ ধরেছে। ঝাঁকার নিচে বড়বড় কয়েকটা লাউ দেখে খোদা প্রেমী পাগল ভাবতে লাগলো।

পাগল মনে মনে ভাবছে, আমি কার ধ্যান করছি? যাঁর ধ্যান করছি, তাঁর তো কোনও আন্দাজই নেই! আমি যাঁর খুঁজে বের হয়েছি, তাঁর এমন কাণ্ড? এমন চিকণ গাছের ডগার মাঝে কত বড় ফল দিয়ে রেখেছে সে? এটা কি মানা যায়? পাগল নিজে নিজেকেই প্রশ্ন করলো। কিন্তু এর উত্তর মেলাতে পারেনি। অনেকক্ষণ চুপ করে বসে থেকে আবার হাঁটতে শুরু করলো।

খোদা প্রেমী পাগল ভাবছে আর হাঁটছে। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হতে আর কিছু সময় বাকি আছে। রাত হয়ে গেলে কোথায় যাবে, এ নিয়েও পাগল ভাবছে। এক বট গাছের নিচে বসলো। তখন ছিল বট ফলের সিজন। অনেক বড় বট গাছ। পুরো গাছেই লাল লাল বট ফল। পাতায় পাতায় বট ফলে ছেয়ে গেছে। অনেক পাখিরা সন্ধ্যায় বাসায় ফেরার আগে এই গাছে বসে আড্ডা দেয়। পাখিরা বট গাছের ডালে বসে গল্প করে। একে অপরের সাথে সুখদুঃখের কথা শেয়ার করে। কেউ মনের আনন্দে গান গায়। কেউ নাচে। কেউ বট গাছে জন্মানো বট ফল ঠুকরিয়ে খায়। নিচে বসে খোদা প্রেমী পাগল তা দেখে হাসে। খোদা প্রেমী পাগল পাখিদের এমন অনন্দ উল্লাস দেখে সকালের দেখা লাউয়ের কথা ভুলে যায়।

পাগল এখন গাছের উপরের দিকে পাখিদের অানন্দ উল্লাসই বসে বসে দেখছে। এমন সময় একটা পাখি বট ফলে ঠোকর দিতেই, বট ফলটা ছিটকে পড়ে নিচে বসা পাগলের নাকের ডগায়। গাছের উপর থেকে বটফলটা পাগলের নাকের ডগায় পড়ার সাথে সাথে পাগল নিজের নাক ধরে আহাম্মকের মতো অবাক হয়ে গেল। এখন পাগলের সকালের কথা মনে পড়ে গেল। সকালে সেসময় আমি বলেছিলাম খোদার আন্দাজ বলতে কিছু নেই, এখানে দেখছি খোদার আন্দাজ ঠিকই আছে। ঐ চিকণ গাছের ডগায় বড় ফল দিয়ে খোদা প্রমাণ করেছে যে, যার যতটুকু প্রাপ্য, তাঁর ততটুকু পাওয়া উচিৎ। আজ যদি এই বড় গাছটায় ঐ চিকণ গাছের বড় ফলটা থাকতো, তাহলে এখন আমার অবস্থাটা কেমন হতো? নির্ঘাত মৃত্যু থেকে রেহাই ছিল না। মহান সৃষ্টিকর্তার ঠিকই আন্দাজ আছে। তিনি যা করে জীবের মঙ্গলের জন্যই করে থাকেন। এই বলেই খোদা প্রেমী পাগল মহান সৃষ্টিকর্তার খোঁজে আবার হাঁটতে শুরু করলেন।

রাজনীতি মানে দমননীতি

ছাত্রলীগে ছাত্র কোথায়?
সবাই দেখি বুড়ো বুড়ো,
এই বয়সে কি ছাত্র হয়?
ছাত্র, দেখতে হবে হিরো!
হিরো তো নেই ছাত্রলীগে
সবাই চল্লিশের উপরে,
এটা কী করে হয় ছাত্রলীগ?
ভাবতে গেলে মাথা ঘুরে!

যুবক কোথায় যুবলীগে?
যা করছে তাঁরা যুগে যুগে,
যুবকের বংশ নেই যুবলীগে
এগুলো নাচে রাষ্ট্রীয় হুজুগে।
ওরে মারে তাঁরে মারে
নিজের নামে সম্পদ করে,
ক্লাবে ক্লাবে ক্যাসিনো গড়ে
শেষমেশ ওঁরা ধরাও পড়ে।

শ্রমিকলীগে নেই তো শ্রমিক
সবাই হলেন দামী বণিক,
নামধারী নেতা দলের প্রতীক
লুটে নিচ্ছে কোটির অধিক।
শ্রমিকলীগ নেতার শ্রমিকেরা
পরিশ্রম করে হচ্ছে দিশেহারা,
শ্রমিকের পাওনা খাচ্ছে তাঁরা
বাংলার শ্রমিক হচ্ছে সর্বহারা।

কৃষকলীগে কৃষক কোথায়?
পালালো নাকি ডোবা নালায়?
কৃষক থাকবে তো জমিজমায়
কৃষকলীগ নেতারা থাকে অট্টালিকায়।
কৃষক মরে জমি চাষে
কৃষক নেতা ঘুরে রাজা সেজে,
কৃষকের ভর্তুকি নিজের কাজে
লাগাচ্ছে নেতায় সকাল সাজে।

এই হচ্ছে দেশের রাজনীতি
নিজের সম্পদ গড়ার মূলনীতি।

বাংলার বাঁশ

বাংলার বাঁশ, তোমাকে নমস্কার
তুমি সোনার বাংলার অহংকার
তোমাকে কেউ করে না তিরস্কার
তুমি আমাদের জন্য স্রষ্টার পুরস্কার।

তুমি আছো বাংলার বন জঙ্গলে
তুমি আছো বাংলার মঙ্গল অমঙ্গলে
তুনি আছো রাজনীতিতে কলেকৌশলে
তুমি আছো অর্থনীতির জাঁতাকলে।

বাংলার বাঁশ, তুমি বাংলার মান
তুমি বাঙালি জাতির মানসম্মান
তুমি ঠিকাদারদের অর্থের জোগান
তুমি বাঁশ কবরে শ্মশানে সমানসমান।

বাংলার বাঁশ, তুমি শত্রু মোকাবিলায়
তুমি বাঁশ বড়লোকদের অট্টালিকায়
তুমি বাঁশ বাংলার ডোবা নালায়
তুমি বাঁশ খেয়াঘাটে মাঝির নৌকায়।

বাংলার বাঁশ, তোমাকে মানুষে জ্বালায়
তুমি বাঁশ বাংলার পাড়া মহল্লায়
বাঁশ দেখিয়ে হিসাব নেয় কড়ায়গণ্ডায়
তুমি থাকো মানুষের কথায় কথায়।

বাঁশ, তুমি এখন রাষ্ট্রের হাতে
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে,
দিচ্ছে বাঁশ লীগে লীগে ক্যাসিনোতে
ছাড় পাবেন না আর কেউ তাতে।

শান্তির খোঁজে

শান্তি নেই ধনে মনে
কোথাও নেই শান্তি,
এখানে খুঁজি সেখানে খুঁজি
সবখানেই চলছে অশান্তি।

শান্তি খুঁজি ঘরে বাইরে
কবরস্থানে আর গোরস্থানে,
শান্তি খুঁজি কর্মস্থলে
খুঁজি মন্দিরে শ্মশানে।

কেউ বলে গয়াতে শান্তি
কেউ বলে কাশিতে,
কেউ বলে মথুরায় শান্তি
কেউ বলে গঙ্গানদীতে।

নেই শান্তি কোথাও নেই
ঘুরেছি বনে বনে,
পাইনি শান্তি এই জীবনে
আমার পাপের কারণে।

তবু খঁজি শান্তি আমি
সকাল দুপুর রাতে,
মনে মনে ভাবি আমি
শান্তি নাই মৃত্যুতে।

মৃত্যুর পরে হবে বিচার
হবে পাপের সাজা,
রেহাই নাই রেহাই নাই
হোক সে বড় রাজা।

শান্তি আছে সৎ কর্মে
অসৎ কর্মে অশান্তি,
শান্তি খুঁজে পাই আমি
সৎকাজে হয় শান্তি।

বই কেনার টাকা দিয়ে সিনেমা দেখা অতঃপর সাজা ভোগ করা

বই কেনার টাকা দিয়ে সিনেমা দেখা, অতঃপর সাজা ভোগ করে জীবন যাওয়ার পালা। ঘটনাটা ঘটলো নিজের ভুলের কারণে। তার মানে হলে, শয়তান কাঁধে চাপলে যায় হয়, নিজের ভাগ্যে তা-ই হয়েছিল। একসময় সপ্তম শ্রেণির বাৎসরিক পরীক্ষায় শুরু হলো। ছেঁড়া খাতা আর ভাঙা কলম দিয়ে পরীক্ষা দিয়ে টেনেটুনে পাস করে ফেললাম। অষ্টম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হলাম। রোল নং আগে যেখানে ছিল ৮, সেখানে হয়েছে ১০। রোল নম্বর দেখেই মনটা খারাপ হয়ে গেল। বাংলা, অঙ্ক, সমাজ বিজ্ঞানে যা-ই ছিলাম, ইংরেজিতে ছিলাম কাঁচা। ইংরেজিতে আর পাকতে পারিনি সংসারের অভাবের কারণে। এর ফলস্বরূপ রোল নম্বর ১০ হয়ে গেল। তখনকার সময়ে জিপিএ প্লাস মাইনাস ছিল না। ছিল ডিভিশন। ফার্স্ট ডিভিশন, সেকেন্ড ডিভিশন, থার্ড ডিভিশন। আর এখনকার ভিশন হলো, জিপিএ প্লাস, মাইনাস, স্টার মার্ক, গোল্ডেন মার্ক-সহ আরও অনেককিছু।

তো আমার রোল নম্বর পিছিয়ে যাবার আরও অনেক কারণ ছিল। সেই কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম কারণ হলো, দারিদ্রতা। স্কুলে যাবার তেমন কোনও ভালো জামা ছিল না। মাসের পর মাস স্কুলে যেতাম খালি পায়ে। পায়ের স্যান্ডেল ছিল না। বছর শুরুতে নতুন বই তো কপালে জুটতোই না। পরীক্ষায় পাস করে উপর ক্লাসে ওঠা এমন ছাত্রদের কাছ থেকে পুরাতন বই কিনে পড়া হতো। আমার সাথের অনেকেই ভালো মাস্টারের কাছে প্রাইভেট পড়তো। বর্তমানে যাকে বলে কোচিং। এই কোচিং বানিজ্য আগে ছিল না। কোচিঙের নামও কেউ শুনেনি। স্কুলে মাস্টার কর্তৃক ব্যাচ নামের শিক্ষাব্যবস্থাও ছিল না। সেসময় শিক্ষকরা এমন ব্যবসা করতোও না। তাঁরা শিক্ষকরা প্রাইভেট পড়াতো। প্রাইভেট মানে, একজন শিক্ষকের কাছে বা শিক্ষকের বাড়িতে গিয়ে পড়ার নাম প্রাইভেট। আবার অনেক শিক্ষক ছাত্র-ছাত্রীদের বাড়িতে এসে পড়াতো। কিন্তু আমার কপালে প্রাইভেট পড়া জুটেনি। অর্থভাবে প্রাইভেট পড়ার ইচ্ছেও তখন ছিল না।

তবে ইংরেজিতে খুবই কাঁচা ছিলাম বলে, বাসার পাশে থাকা এক ভদ্রলোককে মাঝে মাঝে বিরক্ত করতাম। সম্মানিত ভদ্রলোক তখনকার সময়ে বিএ পাস করা লোক। পুলিশে একটা চাকরি নেওয়ার জন্য বড় ভাইয়ের কাছে আসা। আসা মানে বড় ভাইয়ের বাসায় থাকতো। বড় ভাইয়ের নাম, সুভাষ। ভদ্রলোকের নাম ছিল, শ্রীবাস। আমি ভদ্রলোককে শীবাস দাদা বলেই ডাকতাম। শ্রীবাস দাদার বড়ভাই থাকতো নারায়ণগঞ্জ বন্দর থানাধীন আদর্শ কটন মিল অভ্যন্তরে। সেই সুবাদে তিনিও মিল অভ্যন্তরে বড় ভাইয়ের বাসায় থাকতো। আমরাও থাকতাম আমার বড় দাদার চাকরির সুবাদে, মিলের শ্রমিক কোয়ার্টারে। শ্রীবাস দাদা আমাকে সুন্দরভাবে ইংরেজি বুঝিয়ে দিতেন। তখনকার সময়ে এভাবেই চলছিল আমার লেখাপড়া।

তারপরও সপ্তম শ্রেণির বাৎসরিক পরীক্ষায় টেনেটুনে পাস করে ফেললাম। পাস করেও শুরু হলো আরেক জ্বালা। জ্বালা মানে অষ্টম শ্রেণির বই নেই। অনেক খোঁজা-খুঁজির পর, একজনের কাছে কয়েকটা ছেঁড়া-ফাঁড়া বই পেলাম। কিন্তু অষ্টম শ্রেণীর পুরো সেট পাইনি। যা পেয়েছি তার সাথে দু’একটা মেইন বই আর ক’টা নোটবই হলেই আমার হয়ে যায়। কিন্তু মা-বাবা এবং বড়দা’র কাছে বই কেনার মত টাকা হচ্ছে না, যতক্ষণ পর্যন্ত মিলের বেতন না হচ্ছে। মিলের শ্রমিকদের বেতন হবার বাকি আরও ১০দিন। সেই অপেক্ষায় থেকেই যে কয়টা বই ছিল, তা নিয়েই স্কুলে আসা-যাওয়া শুরু করলাম।

তখন বছর বছর ভর্তির ঝামেলা ছিল না। একবার ক্লাস ওয়ানে ভর্তি হলে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত এক ভর্তিতেই হয়ে যেতো। পঞ্চম শ্রেণি পাস করে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হতে পারলেই, একেবারে দশম শ্রেণি পর্যন্ত চলতো। এরমধ্যে দিতে হতো শুধু মাসিক বেতন বাবদ সীমিত কিছু টাকা। আর এখনকার সময়ে সরকারি বেসরকারি যে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বছর বছর ভর্তি দিতে দিতে ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবকদের নাভিশ্বাস দীর্ঘশ্বাস উঠে যায়। তবুও অভিভাবকগণ নিরুপায় হয়ে যার যার সন্তানদের লেখাপড়া করাতে বাধ্য। যাক সে কথা। নিজের কথায় আসা যাক!

নিজের কথা হলো, বড় দাদার বেতন হবে। বাবার বেতন হবে। কিছু নতুন বই কেনা হবে। যদি সম্ভব হয় তো সাথে নতুন জামা-প্যান্টও হতে পারে। এসব আশা নিয়েই স্কুলে যেতাম, আসতাম। স্কুলে গেলে সাথের বন্ধুদের নতুন বইগুলো হাত বুলিয়ে দেখতাম। পড়তাম। কোত্থেকে, কোন লাইব্রেরি থেকে কেনা হয়েছে, জিজ্ঞেস করতাম। মনে মনে বলতাম, ‘দাদার বেতন হলে আমারও নতুন বই হবে’। এভাবে নিজের মনটাকে শান্তনা দিতে দিতে একসময় মিলে শ্রমিকদের বেতন হলো। বড়দা বেতন পেলেন। বাবা বেতন পেলেন। কিন্তু আমার বই কিনে দেওয়ার কোনও নামগন্ধ নেই! মাকে বলে-কয়ে ম্যানেজ করলাম। মা বড় দাদার কাছ থেকে দশ টাকা, আর বাবার কাছ থেকে নিলেন দশ টাকা। এই বিশ টাকাই ছিল আমাদের সংসারের বাড়তি একটা খরচ। তাও আমার লেখাপড়ার জন্যই বাড়তি ঝামেলাটা। তখনকার সময়ে বিশ টাকার অনেক মূল্য! অনেক দাম! তারপরও মায়ের চেষ্টার বিনিয়ে বিশ টাকা হাতে পেলাম। বই কিনতে হবে নারায়ণগঞ্জ শহর থেকে।

সেসময় প্রতি রবিবার সপ্তাহিক ছুটির দিন ছিল। কিন্তু মার্কেট বন্ধ থাকতো প্রতি শুক্রবার অর্ধেক বেলা। কোনও কোনও দোকানপাট শুক্রবারে সারা দিনই বন্ধ থাকতো। বিশেষ করে লাইব্রেরিগুলো বন্ধ থাকতো। তা আর আমার জানা ছিল না। আমি বিশ টাকা নিয়ে মনের আনন্দে শুক্রবার দুপুরের পরপর নারায়ণগঞ্জ শহরের উদ্দেশ্যে পায়ে হেঁটে রওনা হলাম, বই কেনার জন্য। নারায়ণগঞ্জ শহরে কালীর বাজার ঘুরে দেখলাম, সব লাইব্রেরি বন্ধ। গেলাম ডি.আই.টি মার্কেট। সেখানেও বইয়ের দোকান বন্ধ। গেলাম টানবাজার। সেখানেও কোনও লাইব্রেরি খোলা পেলাম না। পড়লাম বিপাকে। নিজেই নিজেকে বললাম, ‘এতো কষ্ট করে প্রায় সাড়ে তিন মাইল পথ হেঁটে শহরে এসেও খালি হাতে আমাকে বাসায় ফিরতে হচ্ছে! আবার হয়তো আমাকে আগামীকাল আসতে হচ্ছে।’ এই বলে নিজের মনটাকে শান্তনা দিয়ে খালি খালি হাঁটতে লাগলাম।

হাঁটতে হাঁটতে একটু সামনে গিয়ে দেখি লোকে লোকারণ্য। সময়টা তখন মনে হয় ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দের মাঝামাঝি সময় ছিল। তখন ছিল বাংলা চলচ্চিত্রের জয় জয়কার সময়। লোকের ভীড় সিনেমা হলের সামনে। সিনেমা হলের নাম, আশা আর মাশার। একসাথে দুটি সিনেমা হল। উপরে মাশার। নিচে আশা। আশা সিনেমা হলে চলছে, তখনকার সময়ে অর্ধ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ‘দি রেইন’ ছায়াছবি। যেই ছায়াছবির সংলাপ রেডিওতে দিনরাত শুনতাম, সেই ছায়াছবি এখানে চলছে? ছায়াছবির পোস্টার দেখে অবাক হয়ে গেলাম। লোভেও পড়ে গেলাম। বই কেনার কথা মুহূর্তে ভুলে গেলাম। সিনেমা হলের ভেতরে পেলাম। কিন্তু টিকেট কাউন্টারের সামনে আর এগুতে পারলাম না। মনটা আনচান আনচান শুরু করে দিলো।

এই জীবনে আর কখনো একা একা সিনেমা হলে ছবি দেখিনি। অনেক আগে নিজেদের বাড়ি থাকতে আমার বড় মামার সহায়তায় মায়ের সাথে বসে সিনেমা হলে ছায়াছবি দেখেছিলাম। সেই দেখা ছিল নোয়াখালীর চৌমুহনী টাউনে দর্পণ সিনেমা হলে। ছায়াছবির নাম ছিল, ‘মানুষের মন’। আর এখন আমি এক সিনেমা হলের সামনে দাঁড়ানো। সাথে আছে বিশ টাকা। তাও বই কেনার টাকা। তা থাকুক! বই যখন পাইনি, তখন সিনেমা দেখেই বাসায় যাবো। এমন চিন্তাভাবনা মাথায় নিয়েই ব্ল্যাকারদের কাছ থেকে সেকেন্ড ক্লাসের একটা টিকেট কিনে ফেললাম। টিকেটের দাম মাত্র পাঁচ টাকা। যদি টিকেট কাউন্টার থেকে কিনতে পারতাম, তাহলে আড়াই টাকা দিয়েই কিনতে পারতাম। কিন্তু অনেক লোকের সমাগমের কারণে তা আর হয়নি। শেষতক আড়াই টাকার টিকেট ব্ল্যাকে পাঁচ টাকা দিয়ে কিনতে হলো। কিনলামও। বইয়ের কথা ভুলে সিনেমা দেখলাম। বিরতির সময় সিনেমা হল থেকে বের হয়ে তিন চার টাকা খরচও করে ফেললাম। সিনেমা দেখে বাসায় ফিরলাম রাত ৮টায়।

এদিকে আমার ফিরতে দেরি হওয়ায় মা খুব টেনশন করছে। এমনকি কান্নাকাটিও হচ্ছে। আমাকে খোঁজার জন্য বড় দাদা নারায়ণগঞ্জ যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এমন সময় আমি বান্দা ভয়ে ভয়ে বাসার সামনে হাজির হলাম। সাথে বই নেই। অথচ টাকা আছে মাত্র দশ টাকা। মা জিজ্ঞেস করলেন, ‘কোথায় গিয়েছিলি?’ গিয়েছিলাম তো বই কেনার জন্যই। মায়ের প্রশ্ন,‘বই কোথায়?’ আজ তো শুক্রবার, তাই বইয়ের দোকান বন্ধ। কালকে আবার যেতে হবে, বললাম মাকে। ‘টাকা কোথায়?’ আমি চুপ করে আছি। বড় দাদা বুঝতে পেরেছে, ঘটনাটা কী ঘটেছে। ওমনি আমার পকেট তল্লাশি শুরু হয়ে গেল। পকেটে পেলো দশ টাকা। আনা হলো মোটা রশি, আর পেয়ারা গাছের শুকনো ডালা। এরপর তো শুরু হয়ে গেল রিমান্ড। যেই রিমান্ড আমাকে দেওয়া হয়েছিল, সেই কঠিন রিমান্ড মনে হয় পুলিশেরা গুরুতর অপরাধীকেও দেয় না। এরপরও ছিল সারা রাতের জন্য শাস্তি। যেই শাস্তি আমাকে দেওয়া হয়েছিল, সেটা আর লেখায় প্রকাশ করলাম না। প্রিয় পাঠকবৃন্দ এমনিতেই বুঝে নিতে পারছে বলে মনে হয়।

সেই সাজা ভোগ করে আর কখনো পড়ালেখার জন্য বড় দাদার টাকা নেইনি। বাবার টাকা দিয়ে সিনেমা দেখিনি। এমনকি মায়ের কাছ থেকে চেয়ে নিয়েও কখনো বাজে কোন খরচ করিনি। যা করেছি নিজের কামাই রোজগারের টাকা দিয়ে। এরপর থেকে লেখাপড়া করেছি নিজে কাজ করে। স্কুল থেকে বাসায় ফিরে বিকেলের অবশিষ্ট সময়টুকু বাদাম বিক্রি করে শেষ করেছি। রবিবার স্কুল বন্ধের দিনে আদর্শ কটন মিলে রাজ যোগালি কাজ করেছি। মজুরি যা পেয়েছি তা দিয়ে বই খাতা কলম-সহ স্কুলের মাসিক বেতনের খরচ জুগিয়েছি। তারপরও বেশি অগ্রসর হতে পারিনি। কিন্তু সবকিছুই মনে রাখতে পেরেছি।

সেসব কথা আর স্মৃতি মনে রাখতে পেরেছি বলেই, আজ শব্দনীড়ের মাধ্যমে পাঠককুলে শেয়ার করতে পেরেছি। আজ প্রায় বুড়ো হয়ে গেছি। মা, বাবা, বড় দাদা, বড় বোনদের স্বর্গে পাঠিয়েছি। আজ আমার গুরুজন বলতে দুই বড় বোন ছাড়া কেউ নেই। তাও তাঁরা পরের ঘরে। কিন্তু সেসব কথা আর স্মৃতি এখনো মনে পড়ে। খুব মনে পড়ে।

চাঁদ সুরুজ

সূর্যের দিকে চেয়ে দেখি
সূর্য দিচ্ছে আলো,
আলো দিচ্ছে সে সমানভাবে
করছে না মুখ কালো।

আমরা মানুষ হয়ে বেহুঁশ
করছি কতো অহংকার,
ও-কে দিবো না তাকে দিবো
করছি কতো তিরস্কার।

কে পাপী কে নেকী
কে পাবে কম কে বেশি,
সেই হিসাব করেন না সূর্য
শুধু আলো দিয়েই সে খুশি!

চাঁদের দিকে তাকিয়ে দেখি
ছড়িয়ে দেয় জোৎস্না,
চাঁদের জায়গায় হলে মানুষ
এভাবে আর হতনা।

সবার জন্য চাঁদ সুরুজ
নাইত তাদের মান,
আমরা মানুষ হিংসায় মরি
ভাবি শুধু মানসম্মান।

আমরা মানুষ জীবের সেরা
হিংসায় অন্তর কালা,
জাত বেজাতের হিসাব-নিকাশ
করছি সারা বেলা।

অভাগার স্বপ্নের সমাধি

অভাগার জন্ম অভাবের সময়। অভাবের সময় জন্ম হয়েছে বলেই তাঁর নাম রাখা হয় অভাগা। অভাগা মাতৃগর্ভ থেকে ভূমিষ্ট হওয়ার পরপর দেশে চরম অভাব দেখা দেয়। এরপর থেকে অভাগা অভাবের মাঝেই বড় হয়ে উঠে। অভাগার জন্ম তারিখ মায়ের মুখে শোনা। মা বলতেন, ‘তোর জন্মটাও ছিল শনিবার। লোকে বলে এই বারটি নাকি শনিতে ঘেরা। শনিবারে জন্ম নিলে নাকি কপালে শনি লেগেই থাকে।’ মায়ের মুখে এসব কথা শুনে অভাগা মন খারাপ করে বাড়ি থেকে মাঠে চলে যেত। ভাবতো! চিন্তা করতো নিজের কপালে নিজেই থাপ্পড় মারতো! এতকিছুর পরও অভাগা নিজের জন্ম তারিখটা মনের ডায়েরিতে লিখে রেখেছিল। তারিখ ছিল ১৯৬৩ ইং ৮ই জুন শনিবার। বর্তমানে এই দিনটিই অভাগার জন্মদিন হিসাবে মনের ডায়েরিতে লিপিবদ্ধ করা। যাকে বলে শুভ জন্মদিন। কিন্তু অভাগার জীবনে জন্মদিন কখনো পালন করে দেখেনি। করতেও পারেনি।

অনেক সময় অভাগা মনে মনে বলে, ‘অভাব যার বারোমাস তাঁর আবার কিসের জন্মদিন? এমনিতেই অভাগার সংসারে নুন আনতে যার পান্তা ফুরায়, তার উপর আবার জন্মদিন!’ মানুষের জীবনে নাকি সুখের একটা সময় থাকে। সেই সময়টা হলো যুবককালে কামাই রোজগার, নাহয় বিয়ে। বিয়ে করে অনেকেই সুখ করে। সুখে থাকে। শান্তিতে থাকে। আবার অনেকেই সুখী থেকে দুখি হয়। সংসারে জ্বালা বাড়ে। অশান্তি বাড়ে। স্ত্রীর জ্বালায় আত্মহত্যা করে। কেউ আবার ঘর ছেড়ে নিরুদ্দেশ হয়। যাকে বলে বিয়ে। যাকে বলে সংসার!

অভাগার জীবনে অভাগার মত অনেক অভাবি মানুষ দেখেছে। যাঁদের অবস্থা ছিল অভাগাদের সংসারের অভাবের চেয়ে বেশি অভাব। সেসব ঘরের ছেলে-পেলেরা বড় হয়ে বিয়ে-সাদী করার পর বিত্তশালী বনে গিয়েছে। কিন্তু অভাগার জীবন থেকে অভাব আর শেষ হয়নি। মা-বাবা স্বর্গে পাড়ি জমিয়েছে। বিয়ে করেছে। ছেলে হয়েছে। মেয়ে হয়েছে। কষ্টে-সৃষ্টে মেয়েকে বিয়েও দিয়েছে। অভাব রয়েই গেছে। অভাব যেন অভাগার জীবনসঙ্গী। মানে জীবন যতদিন থাকবে, অভাবও ততদিন থাকবে। তাই অভাব নিয়ে অভাগা এখন আর বেশিকিছু ভাবে না। শত অভাবের মাঝেও অভাগার মন খারাপ হয় না।

অভাগার মন খারাপ হয় তখন, যখন কারোর বাড়িতে জন্মদিনের আয়োজন দেখে। অভাগার জীবনের এতোটি বছর গত হয়ে গেল, অথচ কোনদিন জন্মদিন পালন করতে পারেনি। নিজের জন্মদিন তো দূরের কথা, ছেলে-মেয়ের জন্মদিনও পালন করেনি। এই ডিজিটাল যুগে জন্মদিন কীভাবে পালিত হয়, আর কেন-ই-বা পালন করে তা অভাগা বুঝে। কেউ নাম ফুটায়। কেউ জন্মদিন নিয়ে ব্যবসা করে। কেউ জন্মদিনের অনুষ্ঠান করে মানুষের কাছে পরিচিত হয়। তা করুক! তাতে অভাগার কিছু আসে যায় না। অভাগার দিনও থেমে থাকছে না। একভাবে-না-একভাবে অভাগার দিন যাচ্ছেই। অভাগার দিনগুলো আরও অন্যান্য দিনের মত অতিবাহিত হচ্ছে। সুখে থাকুক আর দুখে থাকুক, একভাবে-না-একভাবে দিন-মাস-বছর অতিবাহিত হচ্ছে। এদিকে মেয়ে বিয়ে দেওয়ার পর অভাগার একমাত্র ছেলেটাও দিনদিন বড় হচ্ছে। ছেলেটাই অভাগার একমাত্র আশা-ভরসা। অভাগার দুই ভাই। বড় ভাইয়ের ছেলে নেই বলেই বংশের বলতে অভাগার ছেলেটাই। অভাগার মৃত্যুর পর ছেলেটা মাসে নাহয় বছরে একবার হলেও অভাগার সমাধিতে প্রদীপ জ্বালাবে।

ছেলেটাকে নিয়ে অভাগার অনেক আশা। ছেলে এখন বড় হয়েছে। লেখা-পড়া করছে। একদিন ছেলেটা কামাই রোজগার করবে। চাকরি-বাকরি করবে। এসব আশা বুকে ধারণ করেই অভাগা ছেলে মুখপানে চেয়ে থাকে। ছেলে কলেজে ভর্তি হয়েছে। বাসা থেকে কলেজ প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে। ছেলের আসা-যাওয়ার গাড়ি ভাড়া লাগে। অভাগা তখন শহরে দিনমজুরের কাজ করে। কাজ শেষে বাসায় আসার সময় ছেলের পছন্দ করা খাবার কিনে আনে। নতুন টাকা হাতে পড়লে সেই টাকা অভাগা সহজে খরচ করে না। রেখে দেয় ছেলের জন্য। ছেলে প্রতিদিন কলেজে যাবার সময় গাড়ি ভাড়ার জন্য নতুন টাকা বের করে দেয়। অভাগার স্ত্রীও একটা প্রাইভেট ফ্যাক্টরিতে কাজ করে। সেও প্রতিমাসে বেতন পেয়ে ছেলের নানারকম চাহিদা মেটায়। ছেলেকে খুশি রাখার চেষ্টা স্বামী-স্ত্রীর এভাবেই চলছিল, দিনের পর দিন মাসের পর মাস।

কিন্তু সবার কপালে যে সুখ সয় না, তাও ঠিক! ছেলেকে মানুষ করতে এত রকমের চেষ্টার পরও অভাগার সব আশা আকাঙ্খা একদিন শেষ হয়ে গেল। তখন দুপুরের লাঞ্চের সময়। সেদিন অভাগা কাজে থেকে বাসায় আসতে একটু সময় লেগেছিল। এরমধ্যেই অভাগার বাসার সামনে লোকে লোকারণ্য। দূর থেকে বাসার সামনে অনেক লোকের জটলা দেখে অভাগার পা আর চলছিল না।

অভাগার এইরকম অবস্থা দেখে কয়েকজন মানুষ সামনে গিয়ে অভাগাকে ঝাপটে ধরলো। অভাগা জিজ্ঞেস করলো, আমার বাসার সামনে এতো মানুষ কেন? কী হয়েছে? আমার খোকা কোথায়? অভাগার জিজ্ঞাসার উত্তর আর কেউ দিচ্ছিল না। সবাই চুপ করে রইল। চুপ থাকার মাঝেই একজন কাঁদা কাঁদা স্বরে অভাগাকে বলল, ‘কাকা কাকী মাকে খবর দেন। তখন আর অভাগার বুঝতে অসুবিধা হলো না। অভাগা বুঝতে পেরেছে, শেষ বয়সে অভাগাকে দেখার মত আর কেউ রইল না। অভাগা অভাগাই রয়ে গেল। অভাগার সব স্বপ্ন, আশা, আকাঙ্ক্ষা ভেঙে গেল। শেষতক হয়ে গেল অভাগার স্বপ্নের সমাধি।

স্রষ্টা সত্য সৃষ্টি সত্য

সত্য আমার সৃষ্টিকর্তা
সত্য তাঁর সৃষ্টি,
সত্য আকাশ বাতাস
সত্য বজ্রপাত বৃষ্টি।

সত্য চন্দ্র সূর্য
সত্য গ্রহ নক্ষত্র,
সত্য নদী সাগর
সত্য স্রষ্টা সর্বত্র।

সত্য আমার মাতা-পিতা
সত্য আমার জন্ম,
সত্য আমার ধর্মগ্রন্থ
সত্য আমার ধর্ম।

সত্য গীতা রামায়ণ
সত্য বাইবেল কুরআন,
সত্য ত্রিপিটক বদ্ধুবচন
সত্য গোরস্থান শ্মশান।

সত্য উপসনা এবাদত
সত্য ঈদ রোজা,
সত্য কুরআনের আয়াত
সত্য দেব-দেবীর পূজা।

সত্য স্রষ্টার গাছ-গাছালি
সত্য বন জঙ্গল,
সত্য আলো আঁধার
সৎপথেই হয় মঙ্গল।

মিথ্যে সব মিথ্যে

কী হবে রাজটিকা দিয়ে?
যদি রাজাই হতে না পারলাম!
কী হবে রাজা হয়ে?
যদি প্রজার দুঃখ না বুঝলাম!
কী হবে মায়া কান্না করে?
যদি দুখির কান্না না থামাতে পারলাম!
কী হবে নেতা সেজে?
যদি জনতার কষ্ট না বুঝলাম!
কী হবে চিকিৎসক হয়ে?
যদি গরিবদের চিকিৎসা না করতে পারলাম!
কী হবে মালিক সেজে?
যদি শ্রমিকের ন্যায্য পাওনা না দিলাম!
কী হবে ক্ষমতা দিয়ে?
যদি নিজেই অপমানিত হলাম!
কী হবে ধনসম্পদ দিয়ে?
যদি সব ছেড়ে একদিন চলেই গেলাম!

মিথ্যে সব মিথ্যে সত্যি কিছুই নয়!

___________________
ছবি ১বং ঢাকেশ্বরী শ্মশানঘাট।

সূর্যকে করেছিলাম দুটি প্রশ্ন!

সূর্যকে করেছিলাম দুটি প্রশ্ন!

প্রশ্ন: তুমি বিরামহীনভাবে এই পৃথিবীর জন্য কেন আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে? আমাদের সমাজের আলোকিত মানুষগুলো তো মানুষের মাঝে আলো ছড়ায় না।

উত্তর: আমার জন্য এই পৃথিবী।
আর পৃথিবীর জন্য আমি।
আমাদের মহান স্রষ্টা নিরাকার।
তাই আমরা দুই, দু’য়েতে একাকার।
শুধু পৃথিবীর মাঝেই দেখি যত হাহাকার, অত্যাচার, অবিচার।
তা দেখে মহান স্রষ্টা হতবাক নির্বিকার!
জানি না তোমাদের মাঝে কিসের এতো অহংকার!

প্রশ্ন: তুমি কেন পাপী-তাপীদের মাঝে সমানভাবে তোমার আবির মাখা আলো বিতরণ করছো? আমাদের সমাজপতিরা তো তাঁদের ক্ষমতা বলে নিজেদেরই আখের গোছায়।

উত্তর: আমার কাজ আলো বিতরণ করা।
কে পাপী আর কে তাপী,
তার হিসাব না করা।
পাপ করবে যাঁরা,
সাজা পাবে তাঁরা।
পূণ্য করবে যাঁরা,
সুখ পাবে তাঁরা।
আমার কাজ সুষ্ঠু বিতরণ।
আমাদের মহান স্রষ্টা করেছে বারণ।
কোরো না কারোর অধিকার হরণ।
আর তোমারা জীবের সেরা মানুষ হয়েও করছো অসুরের রূপধারণ।
বুঝি না এর কী কারণ!

মানুষ বাড়ছে তো সবই বাড়ছে

মানুষ বাড়ছে তো সবই বাড়ছে

মানুষ বাড়ছে। বসতি বাড়ছে। ঘরভাড়া বাড়ছে। দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়ছে। গরিবের চোখের পানি ঝরছে।
রাস্তা-ঘাট বাড়ছে। যান্ত্রিক গাড়ি বাড়ছে। দুর্ঘটনা বাড়ছে। আহাজারি বাড়ছে। প্রিয়জন স্বজন হারাচ্ছে।
রাষ্ট্রে দুর্নীতি বাড়ছে। ক্ষমতার বাহাদুরি বাড়ছে। বিনা বিচারে হত্যা বাড়ছে। মা-বোনেরা ধর্ষিত হচ্ছে।
ছিনতাই বাড়ছে। খুন গুম বাড়ছে। রোগব্যাধি বাড়ছে। ডেঙ্গুর উপদ্রব বাড়ছে। গুজব ছড়াচ্ছে।
মাদক ব্যবসায়ী বাড়ছে। মাদকদ্রব্য বাড়ছে। মাদকাসক্ত বাড়ছে। অপহরণ বাড়ছে। তাজা প্রাণ ঝরছে।
শিক্ষার হার বাড়ছে। বখাটেপনা বাড়ছে। বলাৎকার বাড়ছে। ধর্ষণ বাড়ছে। শিক্ষালয়ে শিশুরা কাঁদছে।

চল চল কক্সবাজার টেকনাফে চল

চল চল চল!
কক্সবাজার টেকনাফে চল
উখিয়ায় উচ্ছৃঙ্খল রোহিঙ্গার দল
তাঁদের বেড়েছে বুঝি বাহুবল
করছে তাঁরা জবরদখল
চল রে চল রে চল
চল চল চল।

থাকার জায়গা ছিলো না যাঁদের
থাকতে দিয়েছি জায়গা তাঁদের
এখন উল্টো মারছে মোদের
কতই না শক্তি বেড়েছে তাঁদের
চল চল চল…

মিয়ানমার সরকার দিয়েছে তাড়া
তাঁরা রোহিঙ্গারা হলো সর্বহারা
আমরা তাঁদের দিয়েছি সাড়া
এখন আমাদেরই মারছে তাঁরা
চল চল চল…

বাংলার মানুষ দাও শ্লোগান
রোহিঙ্গাদের শিবির করবো শ্মশান
মুক্ত করবো উখিয়া কুতুপালং
ধ্বংস করবো ওঁদের বল
চল রে চল রে চল।
চল চল চল।

বি:দ্র: জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের রণসঙ্গীত দেখে নিজের লেখা।