নিতাই বাবু এর সকল পোস্ট

নিতাই বাবু সম্পর্কে

নিতাই বাবু ২০১৫ সালে তিনি শখের বশে একটা ব্লগে রেজিষ্ট্রেশন করে লেখালেখি শুরু করেন।তিনি লিখতেন নারায়ণগঞ্জ শহরের কথা। লিখতেন নগরবাসীর কথা। একসময় ২০১৭ সালে সেই ব্লগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ব্লগ কর্তৃক ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জনাব সাঈদ খোকন সাহেবের হাত থেকে ২০১৬ সালের সেরা লেখক সম্মাননা গ্রহণ করেন। সাথে নগর কথক উপাধিও পেয়ে যান। এরপর সেই ব্লগে লেখালেখির পাশাপাশি ২০১৮ সালের জুলাই মাসে তিনি শব্দনীড় ব্লগে রেজিষ্ট্রেশন করেন। শব্দনীড় ব্লগে উনার প্রথম লেখা "আমি রাত জাগা পাখি" শিরোনামে একটা কবিতা। তিনি চাকরির পাশাপাশি অবসর সময়ে লেখালেখি পছন্দ করেন এবং নিয়মিত শব্দনীড় ব্লগে লিখে যাচ্ছেন।

অশান্তির ফুটপাত

28887

ফুটপাত,
কিছুতেই কমছে না হকারদের উৎপাত
এতে শত উন্নয়ন-ই হয়ে যাচ্ছে ধূলিসাৎ,
পথচারীদের মাথায় পড়ছে বজ্রপাত
ফুটপাতের কারণেই যানজটের সূত্রপাত!

ফুটপাত,
শহরের রাস্তা মাত্র কয়েক হাত
তারমধ্যে অর্ধেক রাস্তাই ফুটপাত,
সরাতে গেলে পেটে লাগে আঘাত
কেউ বলে গরিবের উপর কষাঘাত!

ফুটপাত,
তাহলে কীভাবে হবে মুক্ত ফুটপাত?
যদি না থাকে বিশিষ্টজনের দৃষ্টিপাত,
শহরের উন্নয়ন সৌন্দর্য সবই ধূলিসাৎ
নির্বিঘ্নে হাঁটার বিঘ্ন ঘটাচ্ছে ফুটপাত।

.
ছবি নারায়ণগঞ্জ কালীর বাজার সংলগ্ন নারায়ণগঞ্জ হাইস্কুল ও নারায়ণগঞ্জ কলেজ’র সামনে থেকে।

কবির মন

289

কবির মন, শুধু ভাবে কী যে লিখি এখন
কারণে আর অকারণ, রাতদিন যখন-তখন,
বিচলিত কবির মন, কী লিখবে যে কখন
ঘুমহীন চোখে, কবি ভাবে বসে সর্বক্ষণ!

কবির মন, স্রষ্টার সৃষ্টি নিয়ে ভাবে
কীভাবে হয়েছিল শুরু, শেষ হবে কীভাবে?
কী কথা ছিলো, আর কী করছি ভবে
যখন যাবো চলে, তখন কী হবে?

কবির মন, ভাবে সুন্দর কেন প্রকৃতি
বিশাল এই পৃথিবী, গোলাকার তার আকৃতি,
সাগর-নদী, বন-জঙ্গল, ফল-মূল প্রবৃত্তি
পাহাড়-পর্বত, আকাশ-বাতাস, বসুমতী!

কবির মন, ভাবনা পাখিরা কেন গায়
কষ্ট ওদের, বাসাটা যখন ঝড়ে উড়ে যায়,
শত কষ্ট ভুলে গিয়ে আবার বাসা বানায়
সারাদিন উড়ে বেড়ায়, নীড়ে ফিরে সন্ধ্যায়!

কবির মন, ভাবনা দেশ জাতি ও ধর্ম
সকলেই তো ধর্মানুরাগী, তবু কেন অপকর্ম?
বিভিন্ন দেশ, বিভিন্ন জাতি, বিভিন্ন ধর্ম
দোষের কী? ধর্মানুসারীরা জানে ধর্মের মর্ম!

কবির মন, জীবের জীবন নিয়ে ভাবে
পৃথিবীতে কি করে চলছে, কে কীভাবে?
কেউ খাচ্ছে, কেউ মরছে, চলছে এভাবে
তবুও থামেনি সময়, সময় এভাবেই যাবে!

একটু ফিরে চাও

2878

ডাক বাক্সগুলো কেঁদে বলে
হে পথিক একটু ফিরে চাও,
আমি এখন কর্মহীন বেকার
আমার বাক্সে চিঠি দাও।

আমি ছিলাম খুবই ব্যস্ত
তোমাদের সেবায় নিয়োজিত,
আধুনিক প্রযুক্তির যুগে
আমি হলাম এখন অবহেলিত!

একসময় যখন ছিলো না
এই আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি,
আমাকে ছাড়া তোমাদের কেউ
হতোনা পেতও না কখনো মুক্তি!

তোমাদের দেওয়া চিঠি
কাঁধে নিয়ে কতোনা হেঁটেছি,
হাঁটতে হাঁটতে হয়েছি ক্লান্ত
তবুও তোমাদের চিঠি পৌঁছিয়েছি।

একসময় চিঠির আশায়
থাকতো সবাই পথ চেয়ে,
কতোনা পেতো আনন্দ
ঐ চিঠিখানা হাতে পেয়ে।

একসময় আমার ছিলো
কতো আদর, কদর, সুনাম,
এখন আমি থাকি অযত্নে
আমার নেই এখন সম্মান!

মনে পড়ে সেসময়কার
অনেক স্মৃতি, অনেক কথা,
সময়মতো চিঠি না পেলে
অনেকেরই হতো মাথাব্যথা!

প্রবাস থেকে কতো মানুষ
চিঠি পাঠাতো প্রিয়জনের কাছে,
চিঠির খামে ভরে পাঠাতো ছবি
তার মা-বাবার কাছে।

এখন আর পাঠায় না কেউ
চিঠি ও ছবি চিঠির খামে ভরে,
টাকা পাঠাতে পোস্ট অফিসে
থাকেনা কেউ লাইন ধরে।

আগে ছিলাম শুধু আমিই
তোমাদের একমাত্র ভরসা,
তথ্য-প্রযুক্তির এই যুগে
কেউ করোনা আমার আশা।

তাই আমি এখন অপদার্থ বেকার,
সময় কাটে ঘুমিয়ে ঝিমিয়ে,
প্লিজ! আমাকে দাও চিঠি
আমি দিবো চিঠি পৌঁছিয়ে।

.
ছবি চার বছর আগের তোলা।

স্বপ্নের পদ্মাসেতু

2877

পদ্মায় জেগে উঠেছে বাংলাদেশে স্বপ্নের পদ্মাসেতু,
বিশ্ববাসীর মাথায় আঘাত হেনেছে যেন ধূমকেতু!

বিশ্বব্যাংক বলছে, ‘হায় হায় শেষপর্যন্ত এ কী হলো’!
মুজিব কন্যার প্রচেষ্টায় পদ্মাসেতু হয়েই গেলো?

এই হচ্ছে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা,
আমরা বীর বাঙালি রুখবো আসুক যত ঝামেলা।

শত বাধা অতিক্রম করে পদ্মাসেতু উদ্বোধনের অপেক্ষায়,
২৫ জুন শুভ উদ্বোধন, জাতি আছে বসে দেখার আশায়!
………….

পদ্মা সেতুর উদ্বোধন

289

এসে গেলো ২৫ শে জুন
পদ্মা সেতুর শুভ উদ্বোধন,
শেখ হাসিনার উন্নয়ন
বাঙালির স্বপ্ন পূরণ!

নারায়ণগঞ্জের আঞ্চলিক ভাষায় লেখা

2882

কই যাইতাম?

পারিনা বউয়ের কথা সইতাম, পারিনা মরতাম,
পারিনা সংসার হালাইয়া দূরে গিয়া থাকতাম।
অহন কী করতাম? পারিনা কারো কাছে কইতাম,
না পারি কামাইতাম, না পারি কারো কাছে চাইতাম!

বাজারে দেহি, মাইনসে মাছ-মাংস করে দরদাম,
আমারঅ মনডায় কয় সামনে যাইয়া জাগাইতাম!
জিগাই না ঢরে, যাই হুটকি আলু বাইগুন কিনতাম,
বেশি টেকা থাকলে, মাছ কিন্না বাইত যাইতাম।

আমরা গরিব মানুষ, মনডায় চায় কতকিছু খাইতাম,
পারিনা দামের লাইগা, দাম কম অইলে পারতাম!
পারিনা খাইতাম, পারিনা পোলাপাইনেরে পড়াইতাম,
পারিনা হেগো বই খাতা-কলমের খরচ সামলাইতাম।

দেশে অহনকা চাইল ডাল হগলকিছুর বেশি দাম!
কামাই রোজগার কম, পারিনা সংসার চালাইতাম।
ঘরে গেলে বউ ঝিয়েরা করে ঘ্যানঘ্যান হামতাম,
মনে মনে কই, কী করতাম! আমি কই যাইতাম?

.
ছবি নিজের তোলা।

তালের শাঁস

28725

স্বাদের তাল,
তালের মৌসুম হলো বর্ষাকাল
রসে তাড়ি হচ্ছে বহুকাল
তাড়ি খেয়ে হয় মাতাল!

স্বাদের তাল,
কেটে বেচে কচি তাল
সুস্বাদু শাঁস দামও আজকাল
শক্ত হলেই হয় তালবেতাল।

তালের স্বাদ,
তাল গুলিয়ে খেতে স্বাদ
সাথে মুড়ি আরও স্বাদ
বেশি লবণে পুরোটাই বাদ!

তালের স্বাদ,
তাল গুলিয়ে ভাজা বড়া
যার নাম তালের বড়া
ভাজা যদি হয় কড়া
খুবই সুস্বাদু তালের বড়া!

.
ছবিতে বিক্রেতা মো: সজীব। গোদনাইল, রসূলবাগ।

বিশ্ব বাবা দিবসে বাবা তোমায় স্মরণ করি

28896

বাবা আমার বাবা,
তোমাকে ভালবাসার জন্য, তোমাকে কাছে পাবার জন্য, তোমাকে স্মরণ করার জন্যই আজকের এই “বিশ্ব বাবা দিবস”।

তুমি আমার জন্মদাতা। তুমি যদি বাবা জন্ম না দিতে, তবে তো এই সুন্দর পৃথিবীতে আমার আসা হতো না ৷ তুমিই বাবা আমার সৃষ্টির একমাত্র উৎস্য ৷ সৃষ্টিকর্তা আমাকে সৃষ্টি করেছে শর্ত জুরে দিয়ে। সেই শর্ত মেনে সৃষ্টিকর্তার উপসনা করতে হবে। সদা সত্যকথা বলতে হবে। মানুষ হয়ে মানুষের উপকার করতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। আর সৃষ্টিকর্তার শর্ত না মানলে আমি হয়ে যাই পাপিষ্ঠ! সেই পাপের হবে বিচার।

আর তুমি বাবা আমাকে জন্ম দিয়েছ নিঃশর্ত ভাবে। দিয়েছিলে শুধু উপদেশ। আমার জন্মের প্রতি তোমার কোন শর্তই ছিল না বাবা৷ তোমার কারণে আজ আমি এই সুন্দর পৃথিবীতে জন্মেছি। এই সুন্দর পৃথিবীতে আসতে পেরেছি৷ সেই ছোট্ট শিশু থেকে এখন অনেক বড় হয়েছি। বর্তমানে কমবেশি সবই আছে আমার। শুধু তুমি নেই। তুমি নেই বলে আজ আমি বড়’ই এতিম বাবা।

তুমিতো ছিলে আমার বটবৃক্ষের ছায়া৷ সেই সুশীতল ছায়াতলে থাকতাম নির্বিঘ্নে নিরাপদে। এখন তুমি পরলোকে। তবু মনে হয় তুমি আছো ইহলোকে। আছো আমার অন্তরের মণিকোঠায়৷ দুচোখ বুঝলেই তোমায় দেখতে পাই আমার আমার মনের টেলিভিশনের পর্দায়৷ তোমাকে বাবা সব চাইতে বেশি মনে পড়ে তখন, যখন এই পৃথিবীর সব মানুষের বাবাকে ভালবাসার জন্য একটি দিবস পালন করে। সেই দিনটি পালিত হয় প্রতিবছর জুন মাসের তৃতীয় রবিবার। তোমাকেই স্মরণে রাখার জন্য এই দিবসটির নাম হয়, “বিশ্ব বাবা দিবস”৷

বাবা,
বছরের এই দিনে তোমায় ভীষণ মনে পড়ে। তোমাকে গভীরভাবে স্মরণ করি। এ শুধু আমি কেন বাবা ? এই পৃথিবীর সকল সন্তানেরা এই দিনটিকে তোমার মতো প্রিয় বাবার জন্য সব দিন থেকে আলাদা করে নিয়েছে৷ এই দিনটি হলো, জুন মাসের তৃতীয় রবিবার, “বিশ্ব বাবা দিবস” ২০২২ ইংরেজি।

বিশ্ব বাবা দিবসের ইতিহাস:
ইতিহাসে জানা যায়, ১৯০৮ সালে প্রথম বাবা দিবস উদযাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল৷ যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার ফেয়ারমন্টে এক গির্জায় এই দিনটি প্রথম পালিত হয় ৷ আবার সনোরা স্মার্ট ডড নামের ওয়াশিংটনের এক ভদ্রমহিলার মাথায়ও বাবা দিবসের আইডিয়া আসে ১৯০৯ সালে। ভার্জিনিয়ার বাবা দিবসের কথা তিনি একেবারেই জানতেন না। ডড এই আইডিয়াটা পান গির্জার এক পুরোহিতের বক্তব্য থেকে৷ সেই পুরোহিত আবার মা’কে নিয়েও অনেক ভালো ভালো কথা বলছিলেন৷ তখন উনার তার মনে হয়েছিল, তাহলে বাবাদের নিয়েও তো কিছু করা দরকার৷

ডড আবার তার বাবাকে খুব ভালবাসেন৷ এর পর তিনি সম্পূর্ণ নিজ উদ্যোগেই পরের বছর অর্থাৎ, ১৯শে জুন ১৯১০ সাল থেকে “বাবা দিবস” পালন করা শুরু করেন। অবশেষে ১৯৬৬ সালে প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি জনসন পিতৃ দিবসকে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করেন৷

সেই থেকেই প্রতি বছর জুন মাসের তৃতীয় রবিবার সারা বিশ্বে এই দিনটাকে “বিশ্ব বাবা দিবস” হিসাবে পালন করে আসছে৷ আমাদের বাংলাদেশেও যথাযথ মর্যাদায় এই দিনটিকে পালন করা হয়৷ পৃথিবীর সকল মানুষের সাথে একাত্মতা পোষণ করে আমিও স্মরণ করি আমার জন্মদাতা বাবাকে।

পরিশেষে:
বিশ্ব বাবা দিবসে পৃথিবীর সকল বাবাদের প্রতি অবিরাম ভালোবাসা ও ভক্তিপূর্ণ শ্রদ্ধা জানিয়ে একটা কথাই বলবো যে, যাদের বাবা এবং মা এখনো জীবিত আছে, আপনারা বাবা এবং মায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন৷ বাবা মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা-ভালবাসা মানেই হলো, পরম করুণাময়ের প্রতি শ্রদ্ধা-ভালবাসা।

১৯/০৬/২০২২ইং, রবিবার। বিশ্ব বাবা দিবস।

বাদাম বিক্রি করে লেখাপড়া করেও হেরে গিয়েছি অভাবের কাছে

28593a দেশ স্বাধীন হবার আরও অনেক আগে থেকে আমার বাবা নারায়ণগঞ্জ সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন চিত্তরঞ্জন কটন মিলের আউট অফ সাইট ক্যালেন্ডারে চাকরি করতেন। ১৯৭৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে একদিন দুপুরবেলা চিত্তরঞ্জন কটন মেলে আউট অফ সাইটক্যালেন্ডার মেশিনের আমার বাবার বাম হাতের চারটে আঙুল থেঁতলে যায়। তারপর থেকে বাবার হাতের অবস্থা দিন-দিন খারাপ হতে থকে।

আমার মা আর আমি একদিন পর-পর বাবাকে নিয়ে চিত্তরঞ্জন কটন মিলের অফিসের সামনে ফকির মিসকিনের মতো বসে থাকতাম, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাহায্যে বাবার ঔষধ কেনার টাকার জন্য। দুই-তিন দিন ঘুরা-ঘুরির পর একদিন তাঁদের দয়া হতো, নাহয় আরও দুই-তিন গিয়ে অফিসের সামনে ভিক্ষুকদের মতো বসে থাকতে হতো। মাস শেষে মূলবেতন পাওয়া যেতো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দয়ার উপর নির্ভর করে। তাও মিলের সব শ্রমিকদের বেতনের পরই পাওয়া যেতো।

একারণে আমাদের সংসারে তখন নতুন করে দেখা দিলো ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ। সংসার চলতো একমাত্র বড় দাদার বেতনে। তখন বড়দাদা যেই টাকা বেতন পেতো, সেই টাকায় আমাদের ৯ সদস্যের সংসার ১৫ দিনও চলার মতো ছিল না। দোকান বাকি জমতে জমতে একসময় গলা সমান গয়ে গেলো। এর সাথে শেষ হয়ে যাবার উপক্রম হলো আমার লেখাপড়া। বাবা অ্যাক্সিডেন্ট হওয়ার পর থেকে আমার স্কুলে যাওয়াও আগের চেয়ে কমে গেলো। সপ্তাহে দুইদিন স্কুলে গেলে বাকি চারদিন স্কুলে থাকতাম অনুপস্থিত। বাসায়ও বই নিয়ে কখনো পড়তে বসতাম, সময়তে পড়তাম না। বাবার অসুস্থতার কারণে পড়তে বসতে মনও চাইতো না।

স্কুলে না গিয়ে সারাদিন থাকতে হতো বাবার সাথে, আর মিলের ডেলি কাজ পাবার আশায়। একদিন কাজ পেতাম, দুইদিন বসা থাকতাম। এভাবে কেটে গেলো কয়েকমাস। এভাবে আমার কিছুতেই মন ভালো লাগছিল না। তখন সংসারের অভাব আর বাবার হাতের ব্যথার ডাক-চিৎকারে আমার ঘরেই থাকতে মন চাইতো না।

একদিন একটা চুক্তি কাজ পেলাম। কাজটা হলো মাটি কাটার কাজ। আমরা ছিলাম ছয়-সাত জন। দুইদিন মাটি কাটার কাজ করে ৩৫টাকা হাতে পেলাম। সেই টাকা পেয়ে সাথের একজনের সাথে আলাপ করলাম, ‘নারায়ণগঞ্জ থেকে কাঁচা বাদাম এনে বাসায় ভেজে বিকাল বিকাল মিলের গেইটে বসে বিক্রি করলে কেমন হয়!’ লোকটা বললো, ”ভালোই তো হবে। বাদামে লাভ আছে! করতে পারলে ভালো হবে।”

এর পরদিন আমি ৩৫ টাকা সাথে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে নারায়ণগঞ্জ গেলাম কাঁচা বাদাম আনতে। ২০ টাকা দিয়ে ৪ সের কাঁচা বাদাম কিনলাম। ছোট দাঁড়িপাল্লা-সহ প্রয়োজনীয় বাটখারাও কিনে আনলাম। মাকে বললাম, বাদামগুলো ভেজে দিতে। আমার মা তো আগেই মূড়ি ভাজার ওস্তাদ ছিলেন। তাই কীভাবে বাদাম ভাজতে হবে, তা আর মাকে কিছুই বলতে হয়নি। মা বালুর সাহায্যে খুব সুন্দরভাবে বাদাম গুলো ভাজলেন। আমি পরদিন বিকালবেলা একটা মুড়ির টিনে করে বাদাম নিয়ে মিলের গেইটে গিয়ে বসলাম, বিক্রি করার জন্য।

সেসময় আদর্শ কটন মিলের গেইটের সামনে আর কেউ বাদাম বিক্রি করতো না। গেইটের সামনে আমিই ছিলাম একমাত্র বাদামওয়ালা। মায়ের হাতে ভাজা বাদাম গুলো ১০ টাকা সের দামে, আধা ছটাক, এক ছটাক, আধা পোয়া, একপোয়া করে মুহূর্তে সব বাদাম শেষ করে ফেললাম। লাভ হলো ১০-১২ টাকার মতো। পরদিন সকালে আবার কাঁচা বাদাম আনতে চলে গেলাম নারায়ণগঞ্জ। এদিন কাঁচা বাদাম আনলাম ৫ সের। সেগুলো ভেজে আগের দিনের মতো বিকালবেলা আবার মিল গেইটের সামনে গিয়ে বসলাম। এদিনও সব বাদাম বিক্রি করলাম।

এভাবে প্রতিদিন সকালবেলা আমি নারায়ণগঞ্জ পায়ে হেঁটে যেতাম, আবার বাদাম মাথায় করে পায়ে হেঁটে বাসায় আসতাম। আমার এরকম কষ্ট দেখে একদিন আমার বড়দাদা আমাকে ৫০ টাকা হাতে দিলেন, বেশি করে বাদাম আনার জন্য। যাতে প্রতিদিন নারায়ণগঞ্জ যেতে না হয়। তা-ই করলাম। বড় দাদার দেওয়া ৫০টাকা আর আমার কাছে থাকা কিছু টাকা নিয়ে নারায়ণগঞ্জ থেকে একসাথে ২০ সের (আধা মণ) কাঁচা বাদাম কিনে আনলাম। এতে অন্তত ৫/৬ দিন নারায়ণগঞ্জ যাওয়া-আসার ভেজাল শেষ করলাম।

প্রতিদিন ৪-৫ সের বাদাম মিল গেইটে নগদে বাকিতে মিলিয়ে বিক্রি করতাম। বিক্রি করে যা পেতাম, সব মায়ের কাছে এনে দিতাম। লাভের টাকা থেকে মা কিছু সংসারেও খরচ করতো। টুকটাক বাবার ঔষধ কিনে আনতো। মায়ের পান-সুপারি আনতো। আমি মাঝে-মধ্যে স্কুলে যাওয়া সময় আমাকেও চার আনা, আট আনা দিতো। সেসময় এভাবেই চলতে থাকলো আমাদের দুর্ভিক্ষের সংসার।

তখন আমাদের দুর্ভিক্ষপীড়িত সংসারের দায়িত্ব যেন বড় দাদার সাথে আমার উপরেও বর্তাল। আমি তখন মাঝে-মধ্যে স্কুলে যেতাম। বাবাকে নিয়ে চিত্তরঞ্জন কটন মিলেও যাতাম। আবার প্রতিদিন বিকালবেলা শ্রমিকদের ছুটি হবার আগেই মিল গেইটে বাদামের টিন নিয়ে বসে থাকতাম। বাদাম বিক্রি শেষে আবার সময়তে সন্ধ্যার পর ওই ডেলি লেবারদের সাথেও কাজ করতাম। তবু্ও আমরা দুই ভাই-সহ আমাদের ৯ সদস্যের সংসারে অসুস্থ বাবাকে নিয়ে কোনো-কোনো সময় দিন রাতে কিম্বা সকালে দুপুরে না খেয়েই থাকতাম। তবুও লেখাপড়া চালিয়ে যাবার ইচ্ছেটা মনের ভেতরের পুষিয়ে রাখতাম। কিন্তু না পারিনি। অভাব অনটনের কাছে আমি হেরেই গেলাম।

স্ত্রী বন্দনা

285a

স্ত্রী:
স্ত্রী হলো একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারী। আর নারী হল পৃথিবীর সকল নারীপুরুষের মায়ের জাতি। প্রাপ্তবয়স্ক একজন পুরুষের সাথে যার যার ধর্মমতে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবার পর আমাদের দেশীয় ভাষায় তাঁদেরই বলা হয় স্ত্রী। কিন্তু এঁরা মায়ের জাতি নারী। যৌবনকালে এঁরা কারো-না-কারোর স্ত্রী হয়।

ভুমিকা:
এঁদের ভূমিকা আদিকাল থেকেই পুরুষতান্ত্রিক সমাজে অপরিসীম। কিন্তু আগেকার সময়ে আমাদের এই মা জাতিকে গৃহপালিত জীব এবং পুরুষের দাসত্ব হিসেবে বিবেচনা করা হতো। কোনও কোনও দেশে নারীদের নিলামেও বেচাকেনা করতে দেখা যেত। বর্তমান সভ্যজগতে এখন আর সে রকম কিছু চোখে পড়ে না।

এখন মায়ের জাতি নারীগণ সেসব বাঁধা অতিক্রম করে নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে শিখেছে। প্রাচীনকাল হতে এযাবৎকাল পর্যন্ত অনেক নারীর বীরত্বের কথাও ইতিহাসে লেখা রয়েছে। ইতিহাসে লেখা রয়েছে যুদ্ধক্ষেত্রে নারীদের অগ্রণী ভূমিকার কথা। সাহসের সাথে রাজ্য পরিচালনায় অনেক নারীদের অনেক ইতিহাসও রয়েছে। বর্তমানে আমাদের এই দেশটাও পরিচালনা করছেন মায়ের জাতি এক নারী। সাথে রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত রয়েছেন অনেক নারী। এঁরাও কারো-না-কারো সহধর্মিণী (স্ত্রী) হয়ে ছিলেন বা আছেন। বলা যায় বর্তমান সভ্যজগতে মায়ের জাতি নারীদের এখন জয়জয়কার সময়। তবুও অনেক স্থানে অনেক পুরুষেরা নারীদের দাসী হিসেবেই মনে করে, এবং আমাদের দেশসহ অনেক দেশের অনেক স্থানে তাঁদের প্রাপ্য অধিকার থেকেও বঞ্চিত করা হচ্ছে। এমনকী মিথ্যে অপবাদ আর কলঙ্কের বোঝা মাথায় দিয়ে সংসার থেকেও বিতাড়িত করা হচ্ছে।

আকৃতি:
মা জাতি নারীদের আকৃতি সাধারণত পুরুষ থেকে একটু খাটো। চেহারায় থাকে মায়াবী মায়াবী ভাব। এঁদের পোষাক পুরুষের মতন নয়। এঁরা সালোয়ার কামিজ ও শাড়ি পড়তে বেশি পছন্দ করে। কেউ কেউ আবার এই সভ্যসমাজে পুরুষের মতন শার্ট-প্যান্ট পড়ে।অনেক সময় রাস্তাঘাটে যুবতি মেয়েদের হাফপ্যান্ট পড়েও ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়।

মা জাতি নারীদের মাথায় লম্বা চুল থাকে। মাথার চুলকে তাঁরা জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসে। তবে বর্তমান ডিজিটাল যুগে কিছু-কিছু নারীরা বিদেশীদের মতন মাথার চুল কেটে ছোট করে রাখে। এটা একপ্রকার আধুনিক ফ্যাশন। এঁদের শত সাংসারিক কাজে ব্যস্ত থাকার পরও সেজেগুজে থাকতে বেশি পছন্দ করে। মা জাতি নারীদের নাক ও কান ফোঁড়ানো থাকে। উঠতি বয়সেই এঁদের নাক-কান ফোঁড়ানো হয়। সেই ফোঁড় দিয়ে তাঁরা সোনা অথবা রূপার তৈরীকৃত জিনিস ঝুলিয়ে রাখে। নাকে রাখে নাকফুল, আর কানে ঝুলিয়ে রাখে কানের দুল। মাথার লম্বা চুলে ক্লিপ, ব্যান্ড ব্যবহার করে। অনেকে মাথার লম্বা চুল খোপায় বেঁধে রাখে।

স্বভাব ও প্রকৃতি:
মায়ের জাতি নারীদের কথায় থাকে মধুমাখা। কণ্ঠে থাকে সুমধুর কোকিলের মতো সুর। অনেক নারীদের গলার সুর থাকে উচ্চস্বর। ওইসব উচ্চস্বর শুনলে অনেক সময় অনেক পুরুষের মাথা এমনিতেই গরম হয়ে যায়। আবার কিছু কিছু নারীদের কথা শুনতে হুবহু পুরুষের গলার স্বরের মতন। তবুও এঁরা আমাদের মায়ের জাতি স্ত্রী (নারী)। লজ্জাই তাঁদের একমাত্র সম্বল। কথায় আছে, ‘লজ্জা নারীর ভূষণ।’ এই লজ্জা যেন মা জাতির কাছে এক অলংকার স্বরূপ। কিছু ব্যতিক্রম থাকা সত্ত্বেও বলবো, নারীর লাজুক বৈশিষ্ট্যতা একমাত্র বাঙালি নারীর মধ্যেই বেশি দেখা যায়।

উপকারিতা:
মা জাতি স্ত্রী (নারী) সব দুঃখকষ্ট নীরবে সয়ে যায়। তাঁরা পুরুষের শত অত্যাচার সয়ে-সয়ে নিজের গর্ভজাত সন্তান ও স্বামীর সংসার আগলে রাখার চেষ্টা করে। নিজে না খেয়ে থেকেও স্বামী-সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দেয়। আমাদের সমাজে অনেক নারীকে শত কাজ আর শত দুঃখকষ্টের মাঝেও, স্বামী-সন্তান, ঘর-সংসার দেখভাল করতে দেখা যায়। এমন কর্তব্য পালনে কোনোরকম কমতি দেখা যায় না। জ্ঞানীগুণীদের মতে এসব নারীই হচ্ছে, আমাদের সমাজের জন্য মহান সৃষ্টিকর্তার সেরা উপহার।

অপকারক:
সময়-সময় এর উপকারের বিপরীতে অপকারও দেখা যায়। দেখা যায়, অনেক মায়ের জাতি স্ত্রী (নারী)’রা থাকে নিজের সুখ আর স্বার্থ আদায়ের ধান্ধায়। নিজের সুখের কথা ভেবে সোনার সংসারে অনেক সময় আগুন জ্বালিয়ে দেয়। একজন পুরুষের সহধর্মিণী হয়েও পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে। পরপুরুষের প্রেমের টানে নিজের গর্ভজাত সন্তানাদি ছেড়ে অন্যের ঘরে চলে যায়। অনেক সময় পরকীয়ার মরণব্যাধির কারণে অনেক স্থানে খুনখারাপি হয়ে থাকে। আবার অনেক স্ত্রী স্বামীকে গৃহপালিত প্রাণী হিসেবেও মনে করে। (যেমন আগেকার সময়ে স্বামীরা স্ত্রীর গলায় রশি বেঁধে রাখতো, ঠিক তেমনভাবে এ যুগের কিছু কিছু নারীরাও নিজের স্বামীর গলায় রশি বেঁধে রাখতে চায়)। তাঁরা নিজের বিবাহিত স্বামীকে যখন-তখন আদেশ উপদেশ দিয়ে থাকে। যাকে বলা হয় হুকুম।

এইরূপ হুকুমের হেরফের কিছু হলেই, সংসারে লেগে যায় আগুন। শুরু হয় ভাংচুর, সাংসারিক কাজে অনীহা, সন্তানের প্রতি অবহেলা, শ্বশুর-শ্বাশুরির প্রতি করা হয় চরম বেয়াদবি। এসবের মূল কারণ হল, স্বামী থেকে নিজেকে বুদ্ধিমান মনে করা। এসব (স্ত্রী) নারীরা তাদের বিবাহিত স্বামীকে হুকুমের গোলাম হিসেবেই বেশি গণ্য করে থাকে। তাদের কাছে মনে হয় যে, এই স্বামী নামের প্রাণীগুলোকে যে-ভাবে খুশি সে-ভাবেই পোষ মানানো সম্ভব। এইরূপ অতি কুবুদ্ধি পূর্ণ স্ত্রীদের জ্ঞানী গুণীজন এই সমাজের ঝঞ্ঝাট মনে করে থাকে।

কারণঃ এরূপ নারীদের এরকম ব্যাবহারের ফলে স্বামী নামের একজন পুরুষ মানুষের সুন্দর মন-মানসিকতা নষ্ট হয়ে চরিত্রবান থেকে দুশ্চরিত্রবান লম্পট সেজে সমাজের আরও দশজনের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আবার কোনোকোনো পুরুষ নিজের বিবাহিত স্ত্রীর জ্বালা-যন্ত্রণা সহ্য করে ঠিক একটা গৃহপালিত পশুর মতনই সংসার জীবন চালিয়ে যায়। আবার কোনোকোনো জেদী পুরুষ ঐরকম স্ত্রীদের রাখে প্রহার ও মাইরের উপর।

অবহেলিত স্ত্রী (নারী):
বলা যায় বর্তমান সভ্যজগতে মায়ের জাতি নারীদের এখন জয়জয়কার সময়। তবুও অনেক স্থানে অনেক পুরুষেরা স্ত্রীদের দাসী হিসেবেই মনে করে থাকে। আমাদের দেশসহ অনেক দেশের অনেক স্থানে তাঁদের প্রাপ্য অধিকার থেকেও বঞ্চিত করা হয়। মাঝে-মাঝে যৌতুক আদায়ের জন্য অসহায় স্ত্রীদের ওপর সাঁড়াশি অভিযানও চালানো হয়। যৌতুক দিতে স্ত্রীর পরিবার থেকে অপারগতা প্রকাশে সইতে হয় নানারকম নির্যাতন। লোভী পুরুষেরা যৌতুক আদায়ে ব্যর্থ হয়ে, এক সময় মিথ্যে অপবাদ দিতে শুরু করে। এর ফলস্বরূপ অবলা নারীকে কলঙ্কের বোঝা মাথায় দিয়ে সংসার থেকেও বিতাড়িত করা হয়। এমনকি অনেক সময় অনেক স্থানে কাপুরুষ নামের জানোয়ারগুলো যৌতুক আদায়ে ব্যর্থ হয়ে অবলা নারীদের নির্মমভাবে মেরেও ফেলে। কেউ এর সঠিক বিচার পায়, কেউ আবার পায়ও না। তবু থেমে নেই আমার মায়ের জাতি নারীদের পথচলা আর সংসার গড়া।

উপসংহার:
নারী বলতে পৃথিবীর অন্যতম প্রাণী মানুষের স্ত্রী-বাচকতা নির্দেশক রূপটিকে বোঝানো হলেও, সময় সময় এই স্ত্রীর (নারী) কারণেই অনেক সোনার সংসার ধ্বংস হয়ে যায়। মুহূর্তেই তছনছ হয়ে যায় কাঁচের স্বর্গ। তবুও এঁরা আমার মায়ের জাতি। শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় তাঁদের নিয়ে সংসার গড়ি, সমাজ গড়ি।

দ্রষ্টব্য: এখানে মায়ের জাতি নারীকে ছোট করে দেখা হয়নি। ভুল হলে পোস্ট খানা মুছে ফেলার সিদ্ধান্ত নিতে পারি।

ছবিতে আমার সহধর্মিণী।

দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতিতে উন্নয়ন বিসর্জন

2821a

নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দুর্মূল্যের কথা করেছি শ্রবণ
দাম বেড়েছে চাল ডাল তেল মরিচ আলু পটল লবণ,
রোজগার তো বাড়েইনি খরচ বেড়েছে দ্বিগুণ এখন।
দিনমজুররা সীমিত মজুরিতে খেতেও পাচ্ছে না তেমন।

বড়লোকরা তো টেরই পায় না, তারা করে নিত্য ভ্রমণ
কেউ যায় সিঙ্গাপুর, কেউ আমেরিকা, কেউ যায় লন্ডন,
দ্রব্যাদির দাম যতই বাড়ুক, তারা করে রাজকীয় ভোজন
ইলিশ মাছ ভাজা, রুই মাছের ঝোল, মাংসও থাকে কমন।

দুর্মূল্যের জাঁতা কলে মরছে দেশের যতো গরিব জনগণ
নুন আনতে ফুরোয় পান্তা, দেখা যায় গ্রাম শহরে এমন,
আগে গরিবেরা খেতো আটার রুটি ধনীরা হাসতো তখন
সেই আটা গরিবের হাত ছাড়া, ধনীরাই খায় যখনতখন।

দুর্মূল্যের বাজারে সবকিছু বদলে হয়েছে পরিবর্তন
গরিবের ফুটপাতে ভিড় জমায় শহরের নামি মহাজন,
রিকশাওয়ালাকে ছোটলোক বলতো কতো বিশিষ্টজন
এখন তারাই চশমা পরে রিকশা চালায় রাত হয় যখন।

ডাস্টবিনে ফেলা পচা খবর খেয়ে যারা বাঁচাতো জীবন
সেই ডাস্টবিনে খাবার না পেয়ে হচ্ছে অনেকেরই মরণ,
৭৪-এর দুর্ভিক্ষে আটার জাউ গরিবরা করেছিল ভক্ষণ
দুর্মূল্যের এই নীরব দুর্ভিক্ষে না খেয়ে মরছে কতোজন?

মন্ত্রী বলে প্রতিদিন তিনবেলা মাংস খেতে পারে প্রতিজন
সরেজমিনে দেখা যায় দুবেলা ভাতই পায় না মানুষজন,
দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতিতে কচুরিপানা খেতে দিচ্ছে ভাষণ
সয়াবিনের পরিবর্তে বাদাম তেল খেতেও বলছে এমন।

কিন্তু হায়! এসব কি পারা যায়? হে রাষ্ট্রীয় গুণীজন
সিন্ডিকেট রুখতে হবে রাষ্ট্রের ক্ষমতায় আছেন যতক্ষণ,
একদিকে দুর্ভিক্ষের হাতছানি অন্যদিকে হচ্ছে উন্নয়ন
দ্রব্যমূল্যের দাম কমাতে না পারলে শত উন্নয়ন বিসর্জন।

.
ছবি: নিজ এলাকার এক দরিদ্র পরিবার।
বি:দ্র: লেখার সাথে মেলাতে এই ছবিটি আপলোড করেছি মাত্র। কিন্তু লেখার সাথে ছবিটির কোনও সম্পর্ক নেই।

কর্ম দোষে ভাগ্যের অবনতি

1522

সৎ কর্মে ভাগ্য ফিরে হয় ভাগ্যবান
অসৎ কর্মে দুঃখ-কষ্ট হয় কতো অপমান
স্রষ্টা দিয়েছে দৃষ্টি বিবেক বুদ্ধি জ্ঞান
সেই জ্ঞান বিলিয়ে দিয়ে হও বুদ্ধিমান।

মনে নেই ভক্তি মুখে হরিনাম ভগবান
মিছে ভক্তি মেলে না মুক্তি দূষিত প্রাণ
শত কষ্টেও যদি গাহে স্রষ্টার গুনগান
স্রষ্টা বলে তুমিই পাবে বিস্তর সম্মান।

কেউ সৎ কর্মে করে বড় গাফলতি
আবার কেউ অসৎ পথে করে মাতামাতি
দুঃখ এলে ভাগ্যকে বলে এটাই নিয়তি
আসলে কর্ম দোষেই হয় ভাগ্যের অবনতি।

সন্ধ্যা লগনে

28113a

সূর্য ডুবুডুবু সন্ধ্যার আগমন
মানুষজন করছে গৃহে গমন
পাখিরাও করছে চেষ্টা এমন
ফিরবে নীড়ে পৌঁছবে কখন।

সূর্য ডুবুডুবু সন্ধ্যা লগন
নীরব নিঃশব্দ নেই মানুষজন
খেয়াঘাটে খেয়ানৌকা বাঁধা তখন
কখন ঘটবে যাত্রীর আগমণ?

মাঝির পকেটে নেই আনা
দাঁড়িয়ে নৌকায় চোখ টানাটানা
উঠবে যাত্রী পাবে কিছু আনা
ফিরবে বাড়ি নিয়ে ষোলোআনা।

.
২৩/০৫/২০২২ইং।
ছবি নিজের তোলা।

পাঁচ বালতি জমি

2817s

পাঁচ বালতি জমি আমার
পরের বাড়ি থাকি,
জমিতে করেছি ফুলের চাষ
ধান থাকলো বাকি।

আস্তেধীরে চাষ করবো সব
আলু পটল বেগুন,
এসবের নাকি ফলন ভালো
দামেও চড়া দ্বিগুণ।

পাঁচ বালতি জমিতে আমার
তুলসী দেখায় শোভা,
তুলসী লাগে দেব পূজায়
ফুলও লাগে জবা।

একটা গাছে ফুটেছে রক্তজবা
আর একটায় কামিনী,
তা দেখে বাড়ির সবাই খুশি
খুশি মোর অর্ধাঙ্গিনী।

.
ছবি নিজের মোবাইলে তোলা।

জীবন থাকতেও ফেসবুক মৃত্যুর পরও ফেসবুক

download (1)

লেখার শিরোনাম দেখে হয়তো অনেকেই ভাবছেন, “জীবন থাকতেও ফেসবুক, মৃত্যুর পরও ফেসবুক”, তা কী করে হয়? হ্যা, সত্যি তা-ই হয়! কীভাবে হতে পারে তা নিজে ভাবার আগে দয়া করে আমার আজকের এই লেখাটা মনোযোগ সহকারে পুরোটা পড়ুন, তা হলেই আপনারা ক্লিয়ার হয়ে যাবেন। তো চলুন, শুরু করা যাক!

বন্ধুরা, বর্তমানে ফেসবুকে একটা আইডি নেই এমন মানুষ কিন্তু খুঁজে পাওয়া যাবে না৷ স্কুলের ছাত্র হোক, কলেজের ছাত্র হোক, চাকরিজীবী হোক যেকোনো পেশার লোকেই হোক-না-কেন, ফেসবুকে একটা আইডি সবারই চাই চাই ৷ এমনকি লেখাপড়া না জানা অনেক লোকেও কিন্তু বর্তমানে ফেসবুকে পারদর্শী হয়ে উঠছে৷ তা কি আমি মিথ্যে বলছি? মোটেই না। যা বলছি, তা একশো-তে-একশো সত্য এবং বাস্তব!

আমার দেখা এমন লোক আছে নিজের নাম লেখতে কলম ভাঙে চারটে! ওই লোকও বর্তমানে ফেসবুক ব্যবহারকারী। তা-ও আবার তার ফ্রেন্ড লিস্টে হাজার চারেক ফ্রেন্ড! ওইসব ফেসবুক ব্যবহারকারীদের কাছে জানতে চাইলাম, “কীভাবে মেসেজ দিন? কীভাবে আপনার অনুভূতি গুলো বন্ধুদের জানান? কীভাবে অন্যের একটা ছবির উপর মন্তব্য করেন”? উত্তরঃ পেলাম, “আরে বাবু এটা কোনও ব্যাপারই না! শুধু nice, good, goodmorning, fine এইসব লেখাগুলো অন্য কারোর মন্তব্য থেকে কপি করে এনে পেস্ট করলেই তো হয়ে যায়। আর কীলাগে বাবু”? উল্টা আমাকেই প্রশ্ন করে!

আবার কাউকে যদি জিজ্ঞেস করি, –’আচ্ছা, আপনি ফেসবুকে এতো ঘনঘন পোস্ট করেন কেন’? উত্তর আসে, “ভাল্লাগে না! একেবারেই ভাল্লাগে না! মোবাইল চালু থাকলে হাত শুধু ফেসবুক অ্যাপটাতে চলে যায়। আর খালি হাতে ফেসবুকে ঢুকবো, তা কী করে হয়? তাই খালি হাতে না ঢুকে একটা পোস্ট করেই ফেসবুকে টু মারি”!
–আচ্ছা, সারাদিনে আপনার ১০-১২ পোস্ট দেখতে আর পড়তে আপনার বন্ধুদের বিরক্তিকর ভাব আসে না?
উত্তর আসে, “তা জানি না”!
–আপনি আপনার ফ্রেন্ড লিস্টে থাকা কতজন বন্ধুর পোস্টে লাইক/কমেন্ট করেন?
উত্তর আসে, ‘আমিতো দাদা সময়ই পাই না। খানিক পর পর নিজের পোস্ট দেখতে দেখতেই তো সময় শেষ হয়ে যায়। পরেরটা কী দেখার আর সময় থাকে”?

এসব শুনে আমি অবাক না হয়ে পারলাম না! আর আমি অবাক বা হতভম্ব হলেও তাদের কিছুই যায় আসবে না, এটাও বাস্তব কথা। আরও বাস্তব কথা হলো, ডিজিটাল যুগে তো সবারই ডিজিটালি হওয়া দরকার আছে। তা-ই নয় কি?

হ্যা, তাই দেখা যায় মানুষের জীবনের একটা বড় অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে বর্তমান যুগের বিশ্ববিখ্যাত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এই ফেসবুক। শুধু মানুষের জীবনের বড় অংশই নয়, ফেসবুক এককথায় একরকম জাতির মেরুদণ্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেননা, ফেসবুকের একটা স্ট্যাটাস বা পোস্টকে কেন্দ্র করে যখন সারাদেশে হুলস্থুল লেগে যায়, তখন স্বয়ং রাষ্ট্রের সিংহাসনও যেন কেঁপে ওঠে। ওই কাঁপনে সারাদেশ অনেকদিন পর্যন্ত কাঁপতে থাকে। তাই বর্তমান সরকার এই বিশ্ববিখ্যাত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে কে কোন ধরনের স্ট্যাটাস বা পোস্ট করে, সেদিকে খুব গুরুত্বের সাথে নজর রাখতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছে। এখন কেউ একটা পোস্ট করে গুজব রটাবেন? তাহলে কিন্তু সাথে সাথেই খবর হয়ে যাবে! তাই বর্তমান বিশ্বের এই ফেসবুককে বলছি, জাতির মেরুদণ্ড।

কিন্তু আজ থেকে ১০/১২ বছর আগে এই ফেসবুক এদেশে মেরুদণ্ডহীন অবস্থাতেই ছিলো। তখন যে কারোই একটা গুজবের স্ট্যাটাস বা পোস্টে দেশটাকে এতটা কাঁপাতে পারেনি। এখনকার মতো ফেসবুক তখন এতটা জনপ্রিয়ও ছিলো না। আমি ২০১১-১২ সালের কথা বলছি! তখন খুব কম মানুষই ফেসবুক ব্যবহার করতো। যদিও আমাদের দেশে ফেসবুক নোট চালু হয়, ২০০৬ সালের আগষ্টের ২২ তারিখ। যা ছিলো মূলত একটি সামাজিক যোগাযোগ রক্ষার প্লাটফর্ম মাত্র। এর পর থেকে ধীরেসুস্থে বাংলার মানুষের কাছে ফেসবুক জনপ্রিয় হতে সময় লেগেছিল কিছু বছর। ফেসবুক এদেশে জনপ্রিয়তার শীর্ষে উঠতে শুরু করেছিল তখন, যখন বাটন মোবাইলের পাশাপাশি এ্যানড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম টাচ্ মোবাইল এদেশের বাজার আসে।

অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম টাচ্ মোবাইল বাজারে আসার আগে এদেশে ফেসবুকের পথচলা যেমন ছিলো কচ্ছপগতি, তেমনই ছিলো অনেক মানুষের কাছে অপছন্দের। তখন এদেশের অনেক কবি সাহিত্যিক ফেসবুকের নামও শুনতে পারতো না। শুধু কবি সাহিত্যিকই নয়, তখন অনেক শিক্ষিত মানুষের কাছেই ফেসবুক ছিলো অপছন্দের। ২০০৬ সাল থেকে দিন আর মাস ও বছর যতো গড়িয়েছে, ফেসবুক সব পেশার মানুষের কাছে পছন্দের হয়ে ততো পৌঁছেছে। এখন কবিদের কবিতার আসর, আর সাহিত্যিকদের সাহিত্য চর্চার পেইজের অভাব নেই। এমনও কবি সাহিত্যিক আছে, তারা সারা দিনরাত শুধু ফেসবুক নিয়েই পড়ে থাকে। এই অবস্থা কিন্তু কবি সাহিত্যিকের বেলাতেই নয়, এ অবস্থা সকল ফেসবুক ব্যবহারকারীদের মধ্যেই লক্ষণীয়। এর কারণ হলো, বর্তমানে দেশের সিংহভাগ মানুষের কাছেই ফেসবুক খুবই জনপ্রিয় ও খুবই পছন্দের, তাই।

বর্তমানে এই ফেসবুককে অনেকে নিজের ব্যক্তিগত ডায়েরি হিসেবেও ব্যবহার করে থাকে। তাই আমাদের বাংলাদেশে বিশ্ববিখ্যাত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এই ফেসবুকের এখন জয়জয়কার অবস্থা। ফেসবুক ছাড়া এখন বেশিরভাগ মানুষের জীবন চলে না। জীবন যেভাবেই চলুক-না-কেন জীবনের সাথে একটা ফেসবুক আইডি থাকলে অনেকেরই মনটা অনেক ভালো লাগে বলে জানা যায়।

আর ভালো তো লাগবেই। বর্তমানের মতো ফেসবুকে আগে এতকিছু ছিলো না। দিন যত যাচ্ছে, ফেসবুক মানুষের সুবিধার্থে, মানুষের কল্যাণে, মানুষের ভালো লাগার জন্য আরও অনেক সিস্টেম চালু করছে। ভালো লাগার কারণ আরও আছে। বর্তমানে ফেসবুকে ব্যবসা বাণিজ্য, খবর, বিনোদন, অনলাইন কেনাবেচা, মেসেজ আদান-প্রদান, হিন্দুদের রামায়ণ, গীতা পাঠ, মহাভারতের বাণী, পবিত্র বাইবেলের বাণী, মুসলমানদের পবিত্র কুরআন পাঠ সবই আছে। তাই অনেক মানুষ সকালে ঘুম থেকে উঠেই ঘুমঘুম চোখে আগেই ফেসবুকে একটু টু মেরে নেয়। তারপর সকালের নাস্তা খাওয়া। এরপর সারাদিনের জন্য ঘাপটি মেরে বসে ফেসবুকে। চলে রাতদুপুর পর্যন্ত।

বর্তমানে কাউকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় যে, “আপনি ফেসবুকে কী করেন”? উত্তর আসবে এরকম, “আরে ভাই, এই ফেসবুক পাইয়া খবরের কাগজ কেনা ছাইড়া দিছি। আজকাল খবরের কাগজে খবর নাই। খালি খালি অ্যাডভ্রাইজ। আর বেশিরভাগ বাসি খবর! মানে আগের দিনের খবর পরেরদিন। আর ফেসবুকে টাটকা খবর পাওয়া যায় ভাই”।

আসলেও তো সত্যি! ফেসবুকের খবর কিন্তু টাটকা খবরই! যেমন: মহল্লার খবর, দেশের খবর, কালোবাজারি খবর, নিজ এলাকার বিয়ের খবর, জন্মদিনের খবর, জন্মদানের খবর, হানিমুনের খবর, ভ্রমণের খবর, মৃত্যুর খবর, নিজ ঘরের খবর, সকালে খাবারের খবর, দুপুরের খাবারের খবর, রাতে শোবার খবর, মার খাওয়ার খবর, মার দেয়ার খবর-সহ আরও অনেক টাটকা খবরই পাওয়া যায়।

শুধু খবরই না, বর্তমানে ফেসবুকে খবর, বিনোদনের পাশাপাশি সাহায্য চাওয়া, স্বজনদের সন্ধান করা,পাত্র-পাত্রী খোঁজ করা, ডাক্তারি পরামর্শ গ্রহণ করা, রাষ্ট্রনায়কদের সাথে যোগাযোগ করা, এলাকাভিত্তিক দলীয় কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া, পছন্দের নেতাদের গুনগান গাওয়া, মিথ্যার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া, দুর্নীতিবাজদের সমালোচনা করা, প্রশ্নপত্র ফাঁস করা, যেকোনো নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাওয়া-সহ আরও কতো কী! মোট কথা জীবন মরণ, ধর্মকর্ম, প্রেম-ভালবাসা, চোর ধরা ডাকাত ধরা, গোমড়ফাঁস করা-সহ এই ফেসবুক যেন এক মহাকিতাবে পরিণত হয়েছে ৷ যেমন পুরোটা ফেসবুকে চলছে তুমুল প্রতিযোগিতা।

এমন প্রতিযোগিতামূলক ফেসবুকে অনেক সময় দেখা যায় লাইকের প্রতিযোগিতা। এই লাইক প্রতিযোগিতায় যুবতী মেয়েরাই সবচাইতে এগিয়ে থাকে বেশি! এই প্রতিযোগিতায় আরো অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা। তাদের আইডি বা পেইজে দেখা যায় লাইকের পাহাড় তৈরি হয়। এছাড়াও প্রতিযোগিতায় আছে সুপারস্টার, মডেলতারকা, অভিনেতা, অভিনেত্রী, লেখক/লেখিকারাও। লাইক প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে নেই ফেসবুক প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জুকারবার্গ নিজেও ৷

মার্ক জুকারবার্গের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছিল সেই ৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৪ সাল থেকে। আজও তিনি থেমে নেই৷ যদিও প্রথম প্রথম এই ফেসবুক ছিলো শুধু একে অপরের সাথে সহজে যোগাযোগ কারা। তা-ও ছিলো শুধু আমেরিকায় বসবাসকারীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ। এরপর বিশ্বের সব দেশের মানুষের সুবিধার কথা মাথায় রেখে ২০০৫ সাল থেকে আস্তেধীরে অদ্য পর্যন্ত সারা বিশ্বেই ফেসবুকের পদচারণা৷ তাই আগের চেয়ে আরও দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে এই ফেসবুক। তবুও থামছেন না মার্ক জুকারবার্গের প্রতিযোগিতা।

ফেসবুক নির্মাতার প্রতিযোগিতা দেখে ফেসবুক ব্যবহারকারীরাও কিন্তু থেমে নেই। সমান তালে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের প্রতিযোগিতাও চলছে। প্রতিযোগী বৃদ্ধ হোক আর শিশুই হোক, ফেসবুকে প্রতিযোগিতা চলছে, চলবেই। এই প্রতিযোগিতার অবসান ঘটবে তখন, যখন একজন ফেসবুক ব্যবহারকারীর বয়স বেড়ে একেবারে খনখনে বুড়ো হয়ে যাবো। তাহলে বলতে পারেন, ফেসবুকেরও তো বয়স বাড়ছে, বুড়ো হচ্ছে! হ্যাঁ ফেসবুকেরও বয়স বাড়ছে ঠিক! কীভাবে বয়স বাড়ছে, তার একটা হিসাব কষা দরকার।

হিসাব হলো, ধরা যাক শুরু থেকে যারা ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট খুলেছিলো তাদের এখন বয়স প্রায়ই চল্লিশের কোঠায়। বর্তমানে সারাবিশ্বের কোটি কোটি মানুষ ফেসবুকে আছেন। তবে একটু চিন্তা করলে দেখা যায়, এখন থেকে একজন মানুষের ৮০ বছর বয়স হলে জন্মলগ্ন থেকে ফেসবুকের বয়স তখন কত হবে? হিসাব কষে দেখা যায় ৯৮ বছরের উপরে ফেসবুকর বয়স হয়ে যায়৷ বর্তমান যুগে এই দুনিয়ায় ৯৮ বছর খুব কম মানুষ’ই বেঁচে থাকে৷

এখন মনে করুন ফেসবুকে থাকাকালীন সময়ে যদি কারোর মৃত্যু হয়, তাহলে এই মৃতব্যক্তির ফেসবুক অ্যাকাউন্টটার অবস্থা কী হবে? মৃত্যু ব্যক্তির অ্যাকাউন্ট বা আইডিটা কী বেঁচে থাকলো? নিশ্চয় না! এককথায় ব্যবহারকারীর অ্যাকাউন্টটাও কিন্তু মৃত্যুবরণ করলো! তাহলে কী হলো? তাহলে তো হয়ে গেলো ফেসবুকে তার একটি ‘সমাধি’ বা ‘করব’।

কবর হয়ে থাকার কারণও আছে। এর মূলকারণ হলো এই জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক স্বইচ্ছায় কারোর প্রোফাইল মুছে ফেলতে নারাজ। তা ব্যবহারকারী মৃত্যুবরণ করলেও। এই ফেসবুক ওয়েবসাইটি সকল ব্যবহারকারীর প্রোফাইল সন্মান রক্ষার্থে চিরদিন স্মৃতি করে করে রাখতে চায়।

যদি তা-ই হয়, তাহলে আমি নিজেওতো একজন নিয়মিত ফেসবুক ব্যবহারকারী। আমারও তো একদিন মৃত্যু হবে। কারণ আমি মহান স্রষ্টার সৃষ্টি জীব। জীবের মৃত্যুই নিশ্চিত। যখন ওপারের ডাক আসবে, এই পৃথিবীর সবকিছু ফেলে আমাকে পরপারে যেতেই হবে। আমার মৃত্যুর পর আমার যা-কিছু থাকবে, তা কেউ-না-কেউ ভোগদখল করবে। কিন্তু আমার স্বাদের ফেসবুক আইডি খানা কেউ ভোগদখল করতে পারবে না। ফেসবুক কর্তৃপক্ষও তাদের স্বইচ্ছায় আমার ফেসবুক এ্যাকাউন্ট মুছে ফেলবে না। কাজেই আমার মৃত্যুর পর আমার আত্মীয়স্বজনরা শবদেহ দাহ করতে নিয়ে যাবে, নারায়ণগঞ্জ মাসদাইর পৌর শ্মশানে। সেখানে পুরোহিতের মন্ত্র পাঠে আমার শবদেহ মহা ধুমধামে আগুনে সূচিত করবে। তারপর হয়তো বছরে একবার নিজের ঘনিষ্ঠ কোনও সজন শ্মশানে গিয়ে আমার স্মরণের প্রদীপ জ্বালাবে। আর এই বিশ্ববিখ্যাত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক আমার আইডি টার অবস্থা কী হবে, তা একটু ভেবে দেখলে বোঝা যায়।

বোঝা যায় যে, আমার মৃত্যুর পর বিশ্ববিখ্যাত ফেসবুক আমার আইডি খানা বর্তমানে যেমন আছে, ঠিক সেভাবেই রেখে দিবে। কিন্তু আমিতো নেই! তাহলে? তাহলে আমার মৃত্যুর পর এই পৃথিবীর একটা জায়গায় আমার সমাধি তো আগেই হয়েছিল। তারপরও বিশ্ববিখ্যাত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও আমার আইডি খানা সমাধি বা করব হয়ে থাকবে। এতে কোনও ভুল নেই। কাজেই আমার জীবন থাকতেও ফেসবুক থাকবে, আমার মৃত্যুর পরও আমি ফেসবুকে থেকেই যাচ্ছি। জয় ✌ ফেসবুক। জয় ✌ হোক বিশ্ববিখ্যাত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের। জয় ✌ হোক সকল ফেসবুক ব্যবহারকারীদের।

বি: দ্র: আমার এই লেখাতে ফেসবুক এবং ফেসবুক ব্যবহারকারীদের ছোট করা হয়নি। বরং ফেসবুক নির্মাতা-সহ বিশ্বের সকল দেশের ফেসবুক ব্যবহারকারীদের সম্মান দেখানো হয়েছে। কাজেই পুরো লেখা না পড়ে কেউ বিদ্রুপ মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকবেন বলে আশা করি।

ছবি সংগ্রহ ইন্টারনেট থেকে।

আমরা কি খোদাদ্রোহী নমরুদ?

IMG_220a

অনেক সময় দেখা যায় আমরা অনেকেই নিজেকে বীরপুরুষ, সিংহপুরুষ বলে দাবিও করে থাকি। কিন্তু যতই বীরপুরুষ আর সিংহপুরুষই হই-না-কেন, আমরা সবাই মহান সৃষ্টিকর্তার পরে দুই রকমের বীরের কাছে সবসময়ই পরাস্ত। একটি হলো প্রাকৃতিক মৌসুমি বীর ‘শীত’। অপরটি হলো মশা বা মশক। তো মৌসুমি বীর শীত নিয়ে নাহয় অন্যদিন আলোচনা করবো। আজকে আলোচনা করছি মশা নিয়ে।

‘মশা’ হলো মহান স্রষ্টার সৃষ্টি এক ক্ষুদ্র প্রাণী। যার নাম ‘মশা’। এই মশাকে মহান স্রষ্টার নিজস্ব সৈনিকও বলা হয়। কেননা, খোদাদ্রোহী নমরুদকে ধ্বংস করার জন্যই নাকি এই ক্ষুদ্র প্রাণী মশার সৃষ্টি। যা ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়।

নমরুদ ছিলেন একসময়ের অত্যাচারী বাদশাহ। যিনি নিজেকে স্রষ্টা দাবি করতে পছন্দ করতেন। কিন্তু বাধ সাধে হযরত ইব্রাহিম (আ.)। যিনি ছিলেন মহান স্রষ্টার অনুসারী। নমরুদ তার মুল্লুকে থাকা জনসাধারণকে ভয়ভীতি দেখিয়ে আর অত্যাচার নির্যাতন করে নিজেকে একটু গুছিয়ে আনতে পারলেও, হযরত ইব্রাহিম (আ.)-কে কিছুতেই বশে আনতে পারছিলেন না। হযরত ইব্রাহিম (আ.)-ছিলেন একনিষ্ঠ খোদা প্রেমী বা খোদা ভক্ত। এটা কিছুতেই অত্যাচারী নমরুদ সহ্য করতে পারছিলেন না। একবার হযরত ইব্রাহিম (আ.)-কে শাস্তিমূলক আগুনের কুণ্ডলীতেও ফেলেছিলেন, এই অত্যাচারী নমরুদ। কিন্তু মহান স্রষ্টার অশেষ কৃপায় আগুনের কুণ্ডলী থেকে হযরত ইব্রাহিম (আ.) অক্ষত অবস্থায় বেরিয়ে আসেন। এতে অত্যাচারী নমরুদ হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এর উপর আরও জ্বালাময়ী হয়ে উঠেন। তখন খোদা প্রেমী হযরত ইব্রাহিম (আ.)-কে প্রস্তাব দেন। প্রস্তাব হলো, খোদার সাথে যুদ্ধ করার ইচ্ছা প্রকাশ।

শেষপর্যন্ত তা-ই হলো। যুদ্ধের দিনক্ষণ ঠিক হলো। হযরত ইব্রাহিম (আ.)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, “তোমার খোদা থাকে কোথায়”?
হযরত ইব্রাহিম (আ.) বললেন, “আমার খোদা আসমানে থাকে”।
তারপর অত্যাচারী নমরুদ শয়তানের পরামর্শ নিয়ে আকাশে উঠার বুদ্ধি বের করলো। অবশ্য এর আগে অনেক উঁচু এক মিনার তৈরি করেছিলেন, নমরুদ। মিনারের উঁচু মাথায় উঠে আকাশের কূলকিনারা না পেয়ে সেই চেষ্টা বাতিল করে। একসময় নমরুদ কর্তৃক মিনারটিও ভেঙে পড়ে, মহান সৃষ্টিকর্তার ইশারায়। এবার শুরু হলো অত্যাচারী খোদাদ্রোহী নমরুদের ভিন্নরকম শয়তানি বুদ্ধি!

বুদ্ধি হলো চারটে শকুনের সাথে একটি বাক্স রশি দিয়ে বাঁধবে। তারপর নমরুদ বাক্সে উঠবে। আর শকুনের মাথার সামনে একটুকরো করে গোসত ঝুলিয়ে দিবে। এতে শকুনগুলো গোসতের লোভে সামনে এগুতে থাকবে, আর বাক্স সহ নমরুদ আকাশে উঠতে থাকবে। আকাশে উঠে খোদার সাথে যুদ্ধ করে আসার সময় শকুনের মাথার সামনে থাকা গোসতের টুকরোগুলো আবার শকুনের পায়ের নিচে বেধে দিবে। এতে শকুনগুলো গোসতের লোভে বাক্স সহ নমরুদকে নিয়ে নিচে নামতে থাকবে। এই হলো অত্যাচারী বাদশা নমরুদের শয়তানি বুদ্ধি। এমন যাত্রাও নমরুদের বিফল হয়।

অবশ্য শকুনের সাথে বাক্স বেধে নমরুদ আকাশে ঠিকই উঠেছিল। খোদাকে উদ্দেশ্য করে তীরও নিক্ষেপ করেছিল। (এই তীর নিক্ষেপ করা নিয়েও একটা কাহিনী আছে, তা আরেকটা লেখায় প্রকাশ করবো।) খোদাকে উদ্দেশ্য করে নমরুদ আকাশের উপরে তীর নিক্ষেপ করে যখন খুশিতে হাহা করে হাসতে ছিলো, তখনও খোদা প্রেমী হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এর একই কথা, “আমার খোদাকে তুমি কোনও অবস্থাতেই মারতে পারবে না। আমার খোদা না থাকলে এই পৃথিবীর কিছুই থাকবে না। তুমিও না, আমিও না। চন্দ্রসূর্য, গ্রহতারকা, আকাশ বাতাস কিছুই থাকবে না।

কিন্তু অত্যাচারী নমরুদ হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এর কথায় বিশ্বাসী নয়! নমরুদ খোদার সাথে ভুমিতে সামনাসামনি যুদ্ধ করতে ইচ্ছুক। হযরত ইব্রাহিম (আ.)-কে জিজ্ঞেস করলো, “তোমার খোদার সৈন্য সংখ্যা কত? উত্তরে হযরত ইব্রাহিম (আ.) বললে, “তা আমার জানা নেই!”

তা জানা থাকুক আর না থাকুক, অত্যাচারী নমরুদ খোদার সাথে যুদ্ধ করবেই করবে।

এদিকে হযরত ইব্রাহিম (আ.) খোদার কাছে ফরিয়াদ করে বলতে লাগলো, “হে খোদা, তুমিই বলো–আমি এখন নমরুদকে কী বলতে পারি! নমরুদ তোমার সাথে যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে চায়”!
উত্তর এলো, “তুমি নমরুদকে বলো তাঁর সৈন্যদল নিয়ে তৈরি হতে। যুদ্ধ হবে খোলা মাঠে”।
তারিখও নির্ধারণ করা হলো।
একসময় অত্যাচারী নমরুদকে হযরত ইব্রাহিম (আ.)- বলে দিলে, “অমুক তারিখে আমার খোদা তোমার সাথে যুদ্ধ করবে। তা হবে বড় একটা খোলা মাঠে। তুমি তোমার সৈন্যদল নিয়ে তৈরি হও”।
অত্যাচারী নমরুদ হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এর মুখে এই কথা শুনে দিনতারিখমত তাঁর সৈন্যবাহিনী নিয়ে এক খোলা মাঠে গিয়ে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিলো।
হযরত ইব্রাহিম (আ.)-কে বললো, “তোমার খোদার সৈন্য কোথায়? তাড়াতাড়ি আসতে বলো। আমি এবং আমার লালিত সৈন্যদল তোমার খোদার সাথে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত হয়ে আছি”।
এমন সময় মাঠের চারদিক কালো অন্ধকার নেমে আসতে লাগলো। নমরুদ ভাবতে লাগলো, হয়ত আকাশে মেঘ জমেছে। কিন্তু না, এই অন্ধকার আকাশের মেঘ নয়!

কালো অন্ধকারের সাথে বিকট শোঁ শোঁ শব্দ শুরু হয়ে গেলো। নমরুদের সৈন্যদল চোখে কিছু দেখতে-না-দেখতেই শুরু হয়ে গেলো কোটিকোটি মশার আক্রমণ। অত্যাচারী নমরুদের লক্ষলক্ষ সৈন্যের নাক, কান দিয়ে মশা মস্তকে ঢুকতে লাগলো। এভাবে অত্যাচারী নমরুদের সৈন্যবাহিনীর মস্তকে মশা ঢুকে, সৈন্যদের মাথার মস্তক খেয়ে খালি করে ফেললো। অনেক সৈন্য মশার ভয়ে পালাতে শুরু করে দিল। কিছু সৈন্য নমরুদের আশপাশে অবস্থান করছিল। যেহেতু নমরুদ ছিলেন একজন বাদশাহ, তাই।

খোদার প্রেরিত সৈন্যদের কমান্ডার ছিলো এক লেংড়া মশা। কমান্ডার লেংড়া মশা নমরুদের নাক দিয়ে মস্তকে ঢুকে কামড়াতে লাগলো। একপর্যায়ে মশার কামড় সহ্য করতে না পেরে অত্যাচারী নমরুদ অবশিষ্ট সৈন্যদের হুকুম দিলেন, তার মাথায় আঘাত করতে। সৈন্যবাহিনী তাদের পায়ের জুতা দিয়ে নমরুদের মাথায় আঘাতের পর আঘাত করতে লাগলো। মাথায় জুতার আঘাতে নমরুদের একটু শান্তি পেতো। মাথায় আঘাত করা থেমে গেলেই নমরুদের অশান্তি শুরু হতো। শুরু হয় মস্তিষ্কে মশার কামড়ের তীব্র যন্ত্রণা। আবার শুরু হয় নমরুদের মাথায় সৈন্যদের পায়ের জুতার আঘাত। এভাবে একসময় অত্যাচারী নমরুদ কমান্ডার লেংড়া মশার কামড়ে আর তার নিজস্ব সৈন্যবাহিনীর জুতার আঘাতে মৃত্যুবরণ করে। মশার কামড় হলো অত্যাচারী খোদাদ্রোহী নমরুদের পাপের শাস্তি।

এখন কথা হলো, মহান সৃষ্টিকর্তা সত্যি সত্যি যদি অত্যাচারী খোদাদ্রোহী নমরুদকে খতম করার জন্যই মশা এই পৃথিবীতে পাঠিয়ে থাকে, তাহলে সেই মশা এখন আমাদের দিনরাত ২৪ ঘণ্টা আক্রমণ করছে কেন? এতে কী বোঝা যাচ্ছে? এতে বোঝা যাচ্ছে, বর্তমান বিশ্বের আমরা সকল মানুষই এখন খোদাদ্রোহী নমরুদ?

হ্যাঁ অবশ্যই অবশ্যই আমরা খোদাদ্রোহী নমরুদ! কারণ মহান সৃষ্টিকর্তা হয়তো আগেই জানতেন যে, এই নমরুদের মতো চলমান পৃথিবীতে আরও আরও নমরুদ পয়দা হবে। যার কারণে মহান সৃষ্টিকর্তা তাঁর সৃষ্টি মশার ডিউটি শেষ হবার পরও নমরুদ সম আমাদের জন্যই মশা এই পৃথিবীতে রেখে দিয়েছিল। যতদিন না আমরা সত্যিকারের মানুষ না হতো পারবো, ততদিন খোদার সৈনিক মশা আমাদের সেই খোদাদ্রোহী নমরুদ মনে করে আমাদের আক্রমণ করবেই। কারণ বর্তমানে আমরা ঐ নমরুদের চেয়েও কুখ্যাত নমরুদ।

বি:দ্র: লেখায় কোনও অসংগতি প্রকাশ পেলে সমালোচনা না করে মন্তব্যের বাক্সে গঠনমূলক মন্তব্যের মাধ্যমে জানালে কৃতার্থ থাকবো।

ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ।