সাইদুর রহমান এর সকল পোস্ট

সাইদুর রহমান সম্পর্কে

এ যাবত ২টি কাব্যগ্রন্থ (একক) এবং যৌথ ১৬টি কবিতা ও গল্পের বই প্রকাশিত হয়েছে।

শেখ মুজিবের জন্মদিনে

144868

তুমি যে মোদের জাতির জনক
তোমার জন্ম দিন,
রইবে গো তুমি হৃদয়ে সতত
মুছবে না কোনোদিন।

শিমুল পলাশে লাল চারিদিক
সেজেছে তাই যে ধরা,
জন্মদিনেতে প্রকৃতিও যেনো
রঙিন আবিরে ভরা।

দেশের সেবায় ছেলেবেলা থেকে
ছিলে গরিবের পাশে,
দিন মজুর বা গাঁয়ের কৃষাণ
আজো আনন্দে হাসে।

পাক সেনাদের নির্মমতায়
হারিয়েছি শত প্রাণ,
তুমি না হলে যে মুক্ত হতো না
সোনার এদেশখান।

সতেরো মার্চে এসেছিলে তুমি
এই পৃথিবীর বুকে,
তাই যে আমরা স্বাধীন আজকে
আছি গো পরম সুখে।

সোনার হরিণ

মনটা আমার ভাজা ভাজা
একটু শান্তি চাই,
সোনার হরিণ খুঁজে বেড়াই
কোথায় তারি ঠাঁই ?

চলার পথে কাঁটা অনেক
খন্দ ভরা পথ,
বাধার পাহাড় থামায় গতি
ধুঁকছে জীবন রথ।

শান্তির খোঁজে ভাবি কত
পাইনি তবু হায়!
হরিণটাকে চাই ধরতে
ভাসিয়ে ভাঙা নায়।

সবই তবে ইচ্ছে প্রভুর
তাঁর কথাতেই সব,
সকল সময় থাকলে অটল
পূর্ণ করেন রব।

ধর্মপথে রত থেকে
কর্ম করে যাও,
দয়াল প্রভু দিবেন যাহা
হাতটি পেতে নাও।

ঘড়ির মতো চলো

টিক টিক করে চলে ঘড়ি বড়ো সচল থাকে
সময় বলে ঘণ্টায় ঘণ্টায় টুং টাং করে ডাকে;
ক’জন বোঝে তার মানেটা বোঝে জ্ঞানীলোকে
ঘড়ির মনে নেই গো মায়া কাঁদে না যে শোকে।

জীবনঘড়ি থামে যদিও কাঁটা কই তার থামে ?
ক্লান্তি নেই তার দিনে-রাতে শ্রমে নাহি ঘামে;
ঘড়ির কাছে শিখতে পারি সদাই কর্ম করো
প্ররিশ্রমী হও সকলে জীবন তেমন গড়ো।

প্রতিদিনই সূর্য যেমন উঠে আকাশ বুকে
ঝড় বাদলে কখনো কি উদয়ন তার রুখে?
সময়ের কাজ সময়ে যে করে সে রয় ভালো
ছাত্রাবস্থায় যে মন লাগায় হৃদে জ্বলে আলো।

ঘুমিয়ে যে থাকে সদা কপাল তার যে মন্দ
অবিরাম শ্রম ভরিয়ে দেয় জীবনে সুখ ছন্দ;
সময় মত এগিয়ে যাও সত্যপথটি ধরে
নিয়মনীতি মেনে চললে জীবনে সুখ ভরে।

একবার তবে সময় গেলে ফিরে নাকো কভু
ঝড়ঝাপটা যতই আসুক চলতে হবে তবু;
ঘড়ি যেন সেই কথাটি বারে বারে বলে
তবেই জেনো মানবজীবন ভরে খুশির ঢলে।

নবীজির শিক্ষা

ওগো নবী তব ছবি মনোকোণে রাখি
সদা তাই ক্ষণ পাই হৃদে মোরা ডাকি;
তুমি আলো হৃদে জ্বালো প্রতি দিন-রাত
আমি ভাবি তুমি চাবি আছো মোর সাথ।

স্বপ্নে আঁকি তুমি সাকি সদা থেকো মনে
তব তুল নহে ভুল কেবা এ কাননে ?
তুমি যদি নিরবধি মোর সনে থাকো
ভুল কভু নাহি তবু মন্দ হবে নাকো।

মরুদেশে রাজ বেশে এলে তুমি যবে
ফুল ফুটে কালি টুটে খুশি হলো সবে;
দুষ্ট মনে ক্ষণে ক্ষণে আলো জ্বলে তাই
মন্দ প্রথা ছিলো তথা কিছু আজ নাই।

তুমি সেরা ছায়া ঘেরা শান্তির বাহক
মিথ্যে যতো হলো গত তুমি যে ধারক;
সে দূরান্তে মরু প্রান্তে মুখে তব নাম
ছায়াতলে এলো দলে যারা ছিলো বাম।

সৃষ্টিকুল নহে ভুল সব কিছু তাঁরি
যদি পাপ লাগে তাপ সাজা হবে ভারি;
শিষ্টাচার সে সবার হতে হবে ভালো
তাই যেনো সবে মেনো জ্বলে হৃদে আলো।

এই পৃথিবী কার

gggt

যেই ধরাতে আমরা থাকি
ধরিত্রীটি কার ?
এ পৃথিবীর আকাশ মাটি
সব কিছুই তাঁর।

ওই যে দেখো গগন তলে
উড়ছে কতো পাখি,
ওদের ভাষা ক’জন বুঝে
কী বলে সদা ডাকি ?

লক্ষ প্রাণী এই ভবেতে
কে পাঠালেন ভবে ?
কিসের লাগি মোদের আসা
চিনতে তাঁকে হবে।

সকাল সাঁজে মাথা ঠেকাই
আমরা যার তরে,
তাঁর কী ঠেকা গ্রাহ্য করি
না করি কিছু ডরে।

তিনি মহান তাঁর দয়াতে
রই গো ভালো যাতে,
এই জীবন বা সে মরণ
সবই তাঁর হাতে।

গাছের পাতা জপে তসবি
আমরা কোন ছার,
তাঁরে চিনতে চেষ্টা নাই
অতো ক্ষমতা যার।

মাত্রাবিন্যাসঃ মাত্রবৃত্ত : ৫+৫ / ৫+২

বাংলা ভাষা

index

ভিন্ন ভাষায় সুখ যে পাই না
মায়ের ভাষায় সুখ,
নিজের ভাষায় কথা বললে
গর্বে ভরে বুক।

বাংলা করতে রাষ্ট্র ভাষা
গেলো কতো জান,
অন্য ভাষায় কথা শুনলে
দুঃখে ভরে প্রাণ।

তাই এসো গো বাংলা বলে
মিটাই মোদের আশ,
বাংলা আমার মায়ের বুলি
বাংলা মোদের শ্বাস।

বলো বাংলা সবাই ওগো
বাংলায় গাও সে গান,
শস্য শ্যামল বাংলায় ফলে
সোনার ফসল ধান।

যেই আসে ওই ফেব্রুয়ারী
করি আহবান,
মাতৃভাষার নিই যে শপথ
রাখবো ভাষার মান।

.
স্বরবৃত্তঃ ৪+৪ / ৪+১

শুভ নববর্ষ

নববর্ষ ২০২১

ঘুরতে ঘুরতে একুশ এলো
আবার তবে মোদের দ্বারে,
বরণ করো, সবাই দেখি
সালটি এবার কি দেয় কারে ?

দেখো সবে নতুন সুরুজ
নীল আকাশে ওই যে দূরে,
আজ যে তারি মিঠা রোদে
ভরেছে জগ উজ্জ্বল নূরে।

প্রেম প্রীতিতে ভরো সবে
গরীব দুখী সবার তরে,
কেউ যেন আর রয় না দুখী
মহামারির ভয়াল ডরে।

গত সালের কতো অসুর
কষ্ট দিলো সকল মনে,
এ সাল যেন কাটে ভালো
আনন্দ দেয় সর্ব জনে।

প্রভুর কাছে দোয়া মাগি
থাকি সবাই আরো ভালো,
সব হৃদয়ে জন্মুক অনেক
ভালোবাসা ও প্রেম আলো।

মাত্রাবিন্যাসঃ স্বরবৃত্তঃ ৪+৪ / ৪+৪

সৃষ্টির সেরা মানুষ

images

জগৎ ভূমে মানব জাতি
সৃষ্টির সেরা তারা,
স্বভাব গুণে জ্ঞান গরিমায়
প্রভুর দৃষ্টি কাড়া।

মানবতা আছে যাদের
মানুষ তাদের বলি,
খোদার তরে সদাই ব্রত
নিজেকে দেয় বলী।

এ দুনিয়ায় জীবের শ্রেষ্ঠ
মানুষ সভ্য জাতি,
জীব জানোয়ার যত আরো
নেই হৃদয়ে বাতি।

বিবেক শুধু যারা মানব
তাদের মাঝে আছে,
উদার ওই যে আকাশ যেমন
ধর্ম নিয়ে বাঁচে।

তাই যে সদা সত্য কর্মে
জীবনখানি গড়ো,
মানুষ তুমি মানুষ রহো
ধর্ম কর্ম করো।

মাত্রাবিন্যাসঃ স্বরবৃত্তঃ ৪+৪ / ৪+২

করোনাকালের কবিতা: চার

tled-1-226

মানুষ জন বন্দী এবার

মানুষ জন বন্দী এবার
সাজা পাচ্ছে নির্মমতার
কি অপূর্ব বৈচিত্র্য তার
সর্বত্রই তবু দুষণে ভার।

মানুষ জন বন্দী এবার
দুষণে বেহাল মৃত্তিকার
ধ্বংস করেছি জলাধার
মুক্ত বায়ু পাই না আর।

মানুষ জন বন্দী এবার
প্রকৃতি হয়ে গেছে দুর্বার
শব্দদূষণ কম বেশুমার
বায়ুদূষণও কোথা আর।

মানুষ জন বন্দী এবার
খাবে বনানী সাধ্য কার
নিসর্গ সেজেছে আবার
বন্দ কর যুদ্ধ করোনার।

নিয়তির খেলা

যারা চলে গেছে আর ফিরবে না কভু
এ রীতি এ দুনিয়ায় দিয়েছেন প্রভু।
যতোই সে ডাকাডাকি শুনে না সে কানে
ভালোবাসা প্রীতি তারে আর নাহি টানে।

তুমি কাটাও সময় আজি মহা সুখে
ভাবো আর তুমে ছোবে না কখনো দুখে।
নিয়তির এ খেলা গো ফুরায় নিমিষে
দুখেরা আসে হেসেই যায় শেষে পিষে।

এ জীবনে যৌবন সে টিকে অল্প ক্ষণ
জীবনে আর ফিরে কি সে অমূল্য ধন ?
ধন সম্পদ সবই যদি কভু যায়
আর যে ফিরে না তবে এ জনমে হায়।

নিয়তির খেলা যেনো বড়োই নিঠুর
আবেগের দাম নাই রয় ব্যথাতুর।
যদি প্রসন্ন সে প্রভু কাটে কালো রাত
কষ্টের শেষে দেখে সে সুন্দর প্রভাত।

জীবনে সময় খেলে নিদারুণ খেলা
যারা না দিয়ে গো মূল্য তার করে হেলা;
হারিয়ে সবি কাটায় ব্যথিত জীবন
সয়ে যেতে হয় সদা যন্ত্রণা পীড়ন।

মাত্রাবিন্যাসঃ অক্ষরবৃত্তঃ ৮+৬

দু’দিনের মেহমান

1430236672.

মেহমান যেই আসে বাড়ি
দু’দিন থেকে যায়,
আমরা তেমন এলাম ভবে
অল্প ক্ষণের হায়।
আসা যাওয়ার এই খেলাটি
সে অনন্ত কাল,
এসেছি তাই ফিরতে হবে
এ দুনিয়ার চাল।
সত্য নিয়ে চলো সবাই
ধরো সত্য পথ,
কে জানে গো কখন তবে
থামবে জীবন রথ।
পুরনো যায় নতুন আসে
জেনো সর্বক্ষণ,
হৃদয় মাঝে সত্য ও প্রেম
শুধু অক্ষয় ধন।
নশ্বর জগে মরে না তা
সদা টিকে রয়,
যতো সৃষ্টি এই জগতে
সবই হবে ক্ষয়।

মাত্রাবিন্যাসঃ স্বরবৃত্তঃ ৪+৪+৪+১

হেমন্ত আগমনে

542a-Pic-4

শরৎ গিয়ে হেমন্ত’তে
গাছের সরু ডালে ডালে,
পাখিরা সব মধুর সুরে
গান ধরেছে তালে তালে।

ফিঙে নাচে ক্ষেতের আলে
পুলক জাগে চাষির মনে,
ধানের আঁটি মাথায় নিয়ে
মুচকি হাসে ক্ষণে ক্ষণে।

রাখাল ছেলে চলছে ধেয়ে
বাজায় মিহি সুরে বাঁশি,
গোরুর গাড়ি ভাড়া করে
হেথা হোথা যায় গ্রামবাসী।

আমন ধানে যে ক্ষেত খলা
দেখায় যেনো সোনায় ভরা,
ঝকমক করে সোনালী রোদ
সেকি দৃশ্য আকুল করা।

দিনের শেষে আঁধার নামে
প্রদীপ জ্বলে ঘরে ঘরে,
আকাশ জুড়ে তারা ফোটে
ধরিত্রী যায় আলোয় ভরে।

মাত্রাবিন্যাসঃ স্বরবৃত্তঃ ৪+৪+৪+৪

নিয়তির ছল

পকেট হাতড়িয়ে পেলাম চকলেট
দিলেম গুজে কোমল হাতে;
পরনে শুধু ছেঁড়া ময়লা হাফপেন্ট
কাঁপছে শিশুটি অতি শীতে।
বাড়ির পাশে ঐ নীম গাছটির নীচে
আজকাল প্রায় দেখি ওকে;
ধুলোতে মাথার চুল সাদা হয়ে আছে
কত স্বপ্নও লুকিয়ে চোখে।
কোথায় আস্তানা তবে কিছুই জানি না
সে বাবা মা কোথায় বা তার;
হয়ত নীড় এই খোলা আকাশখানা
হই প্রশ্নবিদ্ধ বার বার।
রোজ সকালে দেখি ওকে ওখানে বসে
জিজ্ঞাসি, কই থাকিস রাতে ?
স্বপ্ন জমে আছে নীল চোখে শুধু হাসে
হয়েছে নির্বাক কষাঘাতে।
যেই দিলেম এক খণ্ড বস্ত্র পুরানা
শুষ্ক আঁখি ফেটে এলো জল;
লুটিয়ে পড়ে পায়ে খুশীতে আটখানা
ভাবি এই নিয়তির ছল !

আসা যাওয়া

majhe-520

নূতন কিশলয় জেগে উঠে সানন্দে
কুঁড়ির আগমনে পূর্ণ হয় শূন্যতা;
বকুল তলা যেন আমোদিত সুগন্ধে
ঝরিত পল্লবে নেমে আসে নীরবতা।

নব জাত এলে বৃদ্ধেরা নয় বিহ্বল
রীতি এই, পদার্পন পুনশ্চ প্রস্থান;
এ বেলা খিলখিল ও বেলা ছল ছল
জল ধারা প্রবাহিত যেথা শূন্য স্থান।

স্রোত লহরী ভাঙ্গবে আবার গড়বে
ভাসবে চর, তৈরি হবে নূতন ঘর;
কখনো বা হারবে পুনরায় লড়বে
সৃষ্টি ধর্ম এমনি, কিছু নয় নির্জর।

পান্থশালা পৃথিবী, এক বিরাম স্থল
জীর্ণ জড়তা ধুয়ে নিয়ত পরিমল।

চতুর্দশপদী কবিতা
রচনা: ২০১১

ধনী দরিদ্র

চাওয়া পাওয়ার নেই কোন শেষ
তোমার তো আছে বেশি
আরো পেলে আরো খুশি
ভাবো, আরো পেলে হতো বেশ।

ক্ষুধা আর দরিদ্রতা নিয়েই মানুষ
যে অসহায় হত দরিদ্র
যদিও নিতান্ত নম্র ভদ্র
জীবনে পায় শুধু দুঃখ, অসন্তোষ।

কার নয় অর্থ, বিত্তের প্রয়োজন
মিটাতে তাদের অভাব
কেহ বা খাটায় প্রভাব
তাই তো সমাজে এত বিভাজন।

যারা ধনী মিটে না চোখের ক্ষুধা
চিন্তা তাদের সারা ক্ষণ
পাবে কোথা আরো ধন
দীনের সম্বল কাড়তে নেই দ্বিধা।

ধনকুবের যারা নেই যে মানবতা
বিত্ত আর বৈভবে মোহ
বড় না হোক আর কেহ
ধনীই হয় ধনী ঘুচে না দরিদ্রতা।

বিত্তশালীরা যেন ঠিক অক্টোপাশ
নেই মায়া মমতা একটু
কাড়ে গরিবের সব টুকু
বুঝেই না বুভুক্ষু জনের দীর্ঘশ্বাস।

July 2,2020