রিয়া রিয়া এর সকল পোস্ট

শরণাং গত

জানি আমার অনন্ত অপেক্ষা তোমার জন্য। পৃথিবীর বুক থেকে একদিন, জলছবি জমা হতে থাকে আর অভিমানের হাতে হাত রেখে নিশ্চুপে গুটিয়ে নিই নিজেকে। চার দেওয়ালের কোনে,জমে চলে আজন্ম অনুভূতি, রাত কেড়ে রাত নেমে আসে। ফাগুনের ফাগের আগুনে কে আর ঝাঁপ দিয়েছে আমার মতো? অসংখ্য অবজ্ঞার পরে,পড়ে থাকে নির্ভার আলো। সব ঘুম কেড়ে নিয়ে চলে গেছে রাজকীয় সে।

কোন এক কোনে দেখা গোধূলির আলোয় কেউ বলেছিল হাত দেখে, “হাতের রেখাগুলো বহুত খারাপ আছে রে, কখনোই কারো ভালবাসা পাবি না তুই বেটি “। কেউ আসবেনা জেনেও, তবুও আমি অপেক্ষার করি। অপেক্ষা করি তোমার ঠোঁটের স্বাদে। অপেক্ষা করি সবুজ সকালের, অপেক্ষা করি তোমার চোখের ছায়ার। তুমি কি অপেক্ষা কর না আমার জন্য? একেবারেই কর না? না? এক-দুই-তিন- করে দিন যায় আর আমার অপেক্ষার দিনগুলো কাটে এক একটা বছরের মতোই। বলেছিলাম তুমি ছাড়া আমার অত্যাচার কেউ সহ্য করবে না। বলেছিলাম বড্ডো অভিমানি কিন্তু আমি।বলেছিলাম তোমার হাতের আমায় দিলাম আদর করে রেখো। কথা দিয়েছিলে, এই হাত কখনোই ছাড়বেনা। কথা দিয়েছিলে এভাবেই ভালোবাসবে? কথা তো দেয়, কথাই তো ভাঙে। আমি আমার সর্বস্ব দিয়েই ভালোবেসেছি তোমায় , ভালোবাসার অধিকার বোধ থেকেই অভিমান আসে। হয়তো ভুল ছিলাম আমি, অভিমান করার অধিকার আমার ছিলো না। ক্ষমা চেয়েও, নতজানু হয়েছি বারবার তোমার কাছে একটু ভালবাসা পাবার আশায়। কিন্তু যার জীবন মরুভূমির মতো তাকে মরুদ্যানের স্বপ্নের বিলাসিতায় মানায় না।

জীবনের পর জীবন জন্ম নেবো, জন্মের পর জন্ম মৃত্যু, পৃথিবীর আবর্তে লাগবে জলছাপ, তবুও আমার অনন্ত অপেক্ষা তোমার জন্য। অপেক্ষার নীলরঙ বিষে চুঁয়ে যায় বুক। এক বুক হাহাকার মরুভূমি নিয়ে, একরাশ অভিমান পাহাড় গড়ে, দুই চোখ জমা জলে মাটি কেটে আর আট সাগরের জল চোখে নিয়ে, আমি অপেক্ষা করি। জানি অভিমান ভাঙানোর জন্য তুমি নেই। তুমি আসবেনা। কত নিষ্ঠুর তুমি। মাঝে মাঝে সব কিছু দুলে যায়, নড়ে যায়, ভেসে যায়। মিশে যায় শরীর অনন্ত অপেক্ষার বুকে। দিকভ্রষ্ট হলে নাকি? নতুন বসন্ত-চোখের অনাবিল ইশারায়? তবে কি আমাকে এতদিন যা বলেছিলে সব মিথ্যে ছিলো? আমি তো বিশ্বাস করেছি অন্ধের মতোই। ভালোবেসেছি আমার সর্বস্ব দিয়ে।

ছোট্ট একটা ভুলের এতোবড় শাস্তি! এতো নিষ্ঠুর তুমি? যাকে সত্যিই কেউ ভালবাসে তাকে কি কঠিন শাস্তি দেওয়া যায়? তোমার আমার মাঝে, বড্ডো ভিড় জমে গেছে অবহেলার, তোমার অবহেলায় আমার বিসর্জন। আগুন রোদের মাঝে বাইরে যাই, কেউ জানেনা,প্রচন্ড জ্বরের ঘোরে দেখি,কাছে এসে হাত ধরেছ তুমি। আমার নিবিড়ভাবে ছুঁয়ে আছো তুমি। হঠাৎ ঘোর ভাঙে। বুকের ভিতর উপচে ওঠে সমুদ্র, ঢেউ এর মাথায় ঢেউ ভাঙে তুফান। ঝড় উঠল মন গুঁড়ো গুঁড়ো করে। মাথার ভিতর গর্জে ওঠে সাপ, অভিশাপে ছাই হয়ে যায় শরীর, আগুন নয়, দাবানলের মতো সব কিছু নিঃশেষ হোক আজ। শেষ হয়ে যাক আমার এই অভিশপ্ত জীবন।

বুকের ভিতর অনেক খানি আতর রেখেছি তোমার জন্য। পরের জন্মে যদি ফেরো সবটুকু তোমায় দেবো। বলেছিলাম জন্মের পর জন্ম শুধু মাত্র তোমায় ছুঁয়ে থাকব প্রিয় মন। জানি তুমি ভালো বাসোনি। ভালো বাসনা। তবু কেনো তোমার দিকেই চোখ? তবু কেনো তোমার মনেই মন? তবু কেনো তোমায় ভেবে ভেজে চোখের কোল? কয়েক কোটি জন্ম হতেও রাজি, ভুল করেও পর-জন্মে আবার যদি ডাকো! কোটি জন্ম লক্ষ জন্ম ছটফটে যন্ত্রণায়,হাজার জন্ম পাপস্খলন শেষে, শতেক জন্মে তোমাতেই শরণাং গত! সেইদিন গ্রহণ করবে আমায়?

এ জন্মটা তবে এ ভাবেই না হয় কাটুক।

অনুরাগ

জীবনের মানে, অভিমানে, যুদ্ধে ও গানে চলতে ফিরতে বিশেষজ্ঞই হয়ে গেছি। যখন কেউ তাদের সমস্যা নিয়ে কথা বলে, খুব তাড়াতাড়ি সমস্যার সমাধানের উপায় বলে দিই। তারা গল্প শেষে যাবার সময় বলে,

তোর ঘরে বুঝি সুখ ধরেনা ?
ভীষন সুখী তুই তাই না!

আমি হেসে হাওয়ায় উড়িয়ে দিই তাদের কথা।
তারাও বুঝে নেয় আমার সুখের রোমাঞ্চতা।

একা একেবারে একা যখন ভাবি, সুখ কি আমার ছিলো নাকি? নীল আকাশে উড়তে গিয়ে ডানা ভেঙ্গে ঝাপটানো, প্রতিটি পথের বাঁকে হোচট খাওয়া, ভালো মন্দের দাঁড়ি পাল্লায় হেরে যাওয়া। আমি মনে মনে এই দৃশ্য গুলোর ছবি এঁকে বৃষ্টির জলে ভাসিয়ে দিই।

কেউ বলেছিল, আমিই ভালবাসা,
মিথ্যে দেখানো স্বপ্ন, মিথ্যে আশা।

পারিজাতের আভা তোর ঠোঁটে!
কাজল কালো মেঘ তোর চুলে!
চোখের গভীরে সাগর লুকিয়ে রাখা
আহা, কত নিখুঁত তুই !

বড্ড বলতে ইচ্ছে করে চিৎকার করে, আজকাল বড় বেশি বদলে গেছি জানিস ? আয়নাও দেখিনা এখন। তোর দেখানো স্বপ্ন, সেসব মিথ্যে, বুঝে গেছি জানিস, আর তোকে বিশ্বাস করার মতো ভুল হবেনা।

কে যেনো বলেছিল আমাকে ধারণ করতে পারবে।
তার বুকের একটা কুঠুরিতে আমাকে আশ্রয় দিতে পারবে! আর আমি সত্যি ভেবে উড়াল দিতে চেয়েছিলাম নীলে। সে যখন গভীর ভাবে আমার দিকে চেয়ে থাকতো, আমি অভিনয়কে ভালবাসা ভেবেছিলাম! কি বোকা আমি তাই না?

এখন তাই কেউ সুখে আছি বললেই হেসেই উড়িয়ে দিই।

youtu.be/EWkRWN4CjY4

বিয়াত্রিচের প্রেম

বিয়াত্রিচের প্রেম

দাঁড়াও কিছুক্ষণ, এই নাও ছুরি,
উপড়ে ফেলো আমার হৃদয়, এক আঘাতই।
নিস্তব্ধ অন্ধকার রাতে একা একা তারাদের
আনাগোনা দেখতে দেখতে ক্লান্ত দুচোখ!

বৃষ্টি ভেজা পায়ে দৌড়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে,
বুঝলাম পায়ের লিগামেন্টের অবাধ্যতা।
তখন অস্ফুটে তীব্র যন্ত্রণা বেরিয়ে এলো মুখে

প্রথম যন্ত্রণা চিৎকার ছিলো জন্মচমকে,
দ্বিতীয় ছিলো আমার প্রসববেদনায়

আর তৃতীয়টি..
তোমাকে ছুঁতে না পারার।

২.
আর কোনও দিন আসবো না
তোমার কাছে এই প্রণয়প্রার্থী হাত
জানু পেতে থাকবো না কোনও
ছায়াদীঘল চোখে, তোমার অপেক্ষায়।
রাতের নিঃসঙ্গ লাইটপোস্টের কাছে
আর তোমার কথা বলবো না। যেসব,
গোপন অনুভবের ইতিবৃত্ত আঁকা হয়েছিল
কথামালায়, ছায়াহত আজ সব।
তোমার বিরহ শোকে মুহ্যমান তারা।
বিসর্জনের সময়ে, অকালবোধনে,
যে-আত্মহত্যার চিরকুট লেখা হয়েছিল
বিফল মৃত্যুর আগে- বালিশের তলায় রেখে
প্রতিদিন দিব্যি বেঁচে থাকি।

৩.
তারপর একদিন সব অর্গল মুক্ত হবে,
সবার অলক্ষে হারিয়ে যাব কোন অরণ্যের দিকে।
আমাকে খুঁজবে না কেউ জানি,মেঘেরা বৃষ্টিভেজা
পাতার আয়নায় দেখবে আমার প্রতিবিম্ব।
প্রতিটি ভাবনা থেকে বের হবে মাটির আতর।
তারপর ছড়িয়ে যাবে ঘাসে ও আকাশে।

স্বাধীনতা

স্বাধীনতা তুমি নিয়ন আলো
জমাট অন্ধকারে
তবু ফুটপাতে শুয়ে নগ্ন শিশু
দিন কাটে অনাহারে।

স্বাধীনতা তুমি বৃদ্ধাবাসের
নিয়ন আলো, স্বপ্নবাড়ি
নিয়ম গড়ছে, ভাঙছে নিয়ম
জীবনের কারবারি।

স্বাধীনতা তুমি কৃষকের
ঘাম ঝরানো শ্রম
তিনটে রঙের জয় পতাকায়
আহা! আনন্দ আশ্রম!

স্বাধীনতা তুমি অমর প্রেম
ছন্দ ভরা গান
একসূত্রে বেঁধে রেখো
শতকোটি প্রাণ!
****

স্বপ্ন বিলাস

স্বপ্নে কতকিছুই দেখতাম –
ময়ূরপঙ্খী রং এর মেঘের ফুল,
ঘাস ফড়িঙ এর সাথে গোল্লাছুট খেলা,
রং বেরং এর প্রজাপতিদের ডানায় চড়ে
ফুলের পরাগ মেখে একাকার হয়ে যাওয়া।
বিসমিল্লার সানাই, পক্ষীরাজ ঘোড়া।

কত কিছু ভরে নিতে চেয়েছিলাম হাতের মুঠোয় ,
এক আকাশ তারার কুচি,
মাটির উঠোন, সন্ধ্যা প্রদীপ, ভালোবাসা, সম্মান, বিশ্বাসের সাথে তোমার হাতে হাত রেখে চলতে।
ভোরের নরম রোদের সাথে লুকোচুরির খেলায়,
সাথে নিতে চেয়েছিলাম শুধুই তোমায়।

এখন সব রূপকথা চুপকথা হয়ে গেছে।
তলিয়ে গেছে সব গভীর থেকে গভীরে।
উথাল পাথাল দখিন হাওয়ায় ভাসেনা আমার ঘর।
জীবন তুমি শুধুই আগুনে পুড়িয়েছ আমাকে।
নিঃসঙ্গতা আমারই মতো গুনগুন
করে আমার কাছে সারাক্ষণ।

স্বপ্ন বারবার ভুল বুঝে দুরে চলে যেতে চেয়েছ।
বলতে পারিনি আমি,বোঝাতে পারিনি আমি,
আমার ব্যর্থতা মাথা কেটে রাখতে পারিনি
ভালোবাসার প্রমাণ হিসেবে তোমার পায়ের কাছে।
কালের চক্রে রক্তাক্ত মনকে লুকিয়েছি আজও।

মনের খুব কোণে একটাই গোপন ইচ্ছে লালন করি মৃত্যু একদিন আমাকে বিশ্বাস করে ভালোবেসে
তার বুকে জড়িয়ে নেবেই।
শান্তি ফিরে পাবো আগুনের চুল্লিতে,
ভালোবেসে, বিশ্বাসে, চিরদিনের মতো।

গোধূলির ধুলো

বিকেলে জানলার ফ্রেমে চোখ রেখে ইলেকট্রিকের তার গুলোকে দেখছিলাম। সুখে, দুঃখে, সারাক্ষণ একে অপরকে ছুঁয়ে আছে। একে অপরের হাত ধরে চলে গেছে বহুদূর। এ যেন এক অদ্ভুত প্রেম। একে অপরের সাথে সহমরণে যাবার অঙ্গীকার বদ্ধ। চোখ গেলো একটি কাক সংসারের দিকে পাশের বাড়ীর গাছে বাসা ওদের। মা কাক, বাবা কাক আর ওদের আদরের ছোট্ট কাক ছানা। ছোটো সংসার সুখী সংসার।

এদিকে বিকেল ভেঙ্গে সন্ধ্যে নেমে আসছে, প্রবাহিত মেঘেরা রং বদলাচ্ছে। হাওয়াদের সাথে খুনসুটি করে সেরে নিচ্ছে প্রীতি বিনিময়।

ঘর ছেড়ে যেসব পাখিরা খাবারের সন্ধানে চলে গিয়েছিল বহুদূর, তারা তাদের ডানায় গোধূলির রং নিয়ে ঘরে ফিরছে প্রিয়তমাকে রাঙিয়ে দেবে বলে। আর আমি এইসব দেখতে দেখতে হারিয়ে যাচ্ছিলাম সেই গোল্লাছুটের মাঠে। ফড়িং, জোনাকিদের সাথে খেলা করার দিনগুলোতে। অতীত মগ্ন হচ্ছিলাম আমি। মনে পড়ছিল সন্ধ্যে বেলায় মায়ের ডাক ঘরে ফেরার জন্য। সবাইকে দিনের শেষে বুঝি ঘরে ফিরতেই হয়? আর যাদের মা ডাকে না তারা কি হারিয়ে যায় গোধূলির ধুলোয়?
দিনের শেষে নিজের ঘরে ফিরতে অনেক আলোকবর্ষ পেরিয়ে গেছে অনায়াসে। মহাশূন্যতার মতো শূন্যতা গ্রাস করে মাঝে মাঝে। নিজের ধ্বনিই প্রতিধ্বনি হয়ে বার বার ফিরে আসে সেই অতীতদিন গুলো থেকে। এখন আর মায়ের ঘরে ফেরার ডাক কানে আসে না।

আকাশে তারাদের আনাগোনা শুরু হয়েছে, একে অপরের কুশল সংবাদ জেনে নিচ্ছে। আজকে আমার ঘরে জ্বেলেছি মিথ্যে মিথ্যে নিয়ন আলো। মনখারাপের ভেলায় চড়ে বেহুলা একাই ভেসে যাচ্ছে মান্দাসে। আমিও আজ ভেসে যাচ্ছি বহুদূরে অনন্ত বিস্তারে, সমস্ত মাধ্যাকর্ষণ ছিন্ন করে।

একলা যাপন

এই সময়টা আমার জন্য নয়
এখনও আসেনি সেই আকাঙ্খিত সময়
তাই আজও হারিয়ে যাইনি বেয়াড়া স্রোতে।
সত্যিই হারাইনি!

হারাতে চেয়েছিলাম একবিন্দু আলোর মাঝে,
হারাতে চেয়েছিলাম বিশাল সমুদ্রে
এককণা ধবধবে সাদা নুড়ি হয়ে।
সত্যিই হারাতে চেয়েছিলাম!

ভালবাসতে চেয়েছিলাম গভীরভাবে,
চেয়েছিলাম উজ্জ্বলতম নক্ষত্রের মতো
শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ প্রেমের উপাখ্যান হতে।
চেয়েছিলাম,
সত্যিই চেয়েছিলাম!

তাই আজও একাই হেঁটে যাই
আঁধার থেকে অন্ধকারে।
.
____________
রিয়া রিয়া চক্রবর্তী।

বৃষ্টি

বৃষ্টি এসো, এদিকে এসো,
ওদিকে যত ঈর্ষার কাতর মুখ।
ওই প্রাচীন পুকুর পাড়ে,
জ্যোৎস্না গায়ে মাখো।
কৃষ্ণচূড়া, বকুল, হাস্নুহানার গন্ধ নিয়ে,
কান পেতে –

হাজার বছরের পৃথিবীর জন্ম কথা শোনো।

সবাইকে বন্ধু দিবসের শুভেচ্ছা

“Don’t walk behind me; I may not lead. Don’t walk in front of me; I may not follow. Just walk beside me and be my friend.”
– Albert Camus.

আজ বন্ধু দিবস। আমাদের সময়ে অবশ্য এতো দিবস ছিলো না। আজ একটু ছোটবেলায় ফিরে যাই। আমাদের ছোটবেলায় রোজই মাঠে দাপাদাপি, রোজই নিজের বাড়ির গাছে উঠে কপিগিরি। সুতরাং রোজই আমাদের বন্ধু দিবস ছিলো। তারপর যখন একটু বড় হলাম মানে এইট নাইনে উঠলাম মাঠে খেলা, গাছে ওঠা বন্ধ হয়ে গেলো। সেই শূন্যস্থান পূর্ণ করতে এলো নানাবিধ গল্পের বই। রাস্তায় বেরোলে পাড়ার বন্ধুরা বলে – ওই কোথায় যাচ্ছিস? আর অন্য পাড়ার ছেলেরা বাঁকা চোখে তাকায়। তখন ছিলো পৃথিবীতে চিঠির যুগ। ল্যান্ডফোন ছিলো তবে বড়দের অধিকারে।

একদিন বিকেলে আমি আর আমার এক বন্ধু বাড়ির সামনেই হাঁটছিলাম। হঠাৎই দুটো রাজপুত্তুর এসে একটা চিঠি ফেলে গেলো আমাদের সামনে। আর আমি তো চিরকেলে আগমার্কা ক্যাবলা, বন্ধুকে বললাম ওটা তোর জন্য। সে চোখ পাকিয়ে বললো – “ওরে গাধা, আমি ছেলে আর ছেলেরা মেয়েদের চিঠি দেয়, এটা তোর জন্য”। খেয়াল করিনি আমাদের পেছনে আমার মা আর কাকিও হাঁটছিলেন, তাদের ইভিনিং ওয়াক এর সময়। কি লেখা আছে, কিই লেখা আছে, এইসব এক ঝুড়ি কৌতুহল নিয়ে যখন চিঠিটি তুলে খুলতে যাবো। সেটা পড়তে না দিয়েই মা এসে হাত থেকে চিঠিটি নিয়ে নিলেন। কি আর হলো, ওই গোপন কথাটি আর গোপনে রইলো না। মা আর কাকি পড়লো চিঠিটা। মা একবার বলে ওঠে – “দেখেছো কয়েকটি বাংলা বাক্য লিখতে গিয়ে কতো বানান ভুল! এইবার কাকির পালা – “দেখেছেন মেজদি ভালবাসি তে আবার ঈ কার দিয়েছে! হয়ে গেলো! এইসব শুনে আমার হবো হবো প্রেম, কৌতুহল সঅঅঅঅঅব জলে।

এক রবিবার, মাংস ভাত খেয়ে জমিয়ে পড়বো বলে একটা গল্পের বই নিয়ে খাটে বসেছি। আমাদের ছোটবেলায় বাড়ির মুরগির মাংস আসতো না। মাংস মানেই মাটন। নিউ মার্কেটের কোনো এক দোকান থেকে আনা হতো। আর গল্পের বইটি ছিলো, নারায়ণ সান্যালের রূপমঞ্জরি। বাবার গল্পের বইয়ের ভাণ্ডার ছিলো সেখান থেকেই তুলে আনা। তখন বাবার বইতে হাত দেওয়ার অধিকার জন্মেছে। আগে ছিলো না। বইটা পড়ার মধ্যেই দাদু এলেন আমার কাছে।

আমার দাদু যাকে আমি পৃথিবীতে সবথেকে বেশি ভালোবাসতাম। ছ ‘মাস বয়স থেকে আমি দাদুর কাছেই থেকেছি। হাঁটতে শিখেছি দাদুর হাত ধরে, প্রথম স্কুলে ভর্তি দাদুর হাত ধরে। সেই দাদু আমার গল্পের বই পড়ার মাঝে এলেন। আমার পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে তিনি বললেন – “বড়দিদি, যখনই কোনো সম্পর্কের দিকে হাত বাড়াবে, আগে ভালো করে জেনে নেবে যে তুমি সেই সম্পর্ক সাথে নিয়ে চলতে পারবে কিনা। এখন তুমি বড় হয়েছো, তাই তোমাকে বলাই যায়। জানবে সম্পর্ক যাপন করতে আমাদের অনেক জন্ম কম পড়ে। একটা সম্পর্ক তৈরী করতে অনেক দিন, অনেক বছর লেগে যায়। আর ভাঙতে মাত্র কয়েকটি শব্দ।”

দাদুর দিকে তাকিয়ে বললাম, এতো কঠিন সম্পর্ক যাপন? দাদু বললেন “কঠিন নয়, তবে সব সম্পর্ককে যথাযথ সম্মান করবে। আর জানবে প্রতিটি সম্পর্কের একটা expiry date থাকে। সেটা তিনদিনের হতে পারে, তিন মাসের, তিন বছরের আবার তিরিশ বছরের হতে পারে। আমাদের সাথে সম্পর্ক আমাদের মৃত্যুর সাথে সাথেই থেমে যাবে। আর বন্ধুদের সাথে হয়তো মাঝ রাস্তায়। এইটুকু জায়গা রেখো, যাতে অনেক দিন পরে কোনো বন্ধুর সাথে দেখা হলে যাতে বলতে পারো – কি রে কেমন আছিস? সব ভালো তো? আর খেয়াল রেখো বড়দিদি, তোমার দ্বারা কোনো মানুষ, কোনো বন্ধু যাতে আঘাত না পায়।” আমি বললাম মনে রাখবো দাদু। কিন্তু দাদু আমি যদি বন্ধুর দ্বারা আঘাত পাই তাহলে। দাদু উত্তরে বললেন, যে আঘাত দেবে সে কখনোই বন্ধু হবে না। আর আমাদের প্রতিটি চোখের জলের হিসেবে প্রকৃতি ঠিক সময়মতো ফিরিয়ে দেয়।”

আজ বন্ধু দিন। ভালো খারাপ অনেক স্মৃতি ভীড় জমাচ্ছে মনে। আঘাত পেয়েছি, মানুষ চিনেছি। নিজেকে আরও গুটিয়ে নিয়েছি। বিশ্বাস, অবিশ্বাসের পাহাড় জমেছে। তবুও আমি ভালো থাকি, মন খুলে হাসতে পারি কান্না লুকিয়ে। আর ওই আগমার্কা…. হু হু … আজও মুখোশকে বন্ধু ভেবে ভুল করি।

আজ আবার মনে করি রবীন্দ্রনাথের সেই বিখ্যাত বাণী –
“বন্ধুত্ব বলিতে তিনটি পদার্থ বুঝায়। দুই জন ব্যক্তি ও একটি জগৎ। অর্থাৎ দুই জনে সহযোগী হইয়া জগতের কাজ সম্পন্ন করা। আর, প্রেম বলিলে দুই জন ব্যক্তি মাত্র বুঝায়, আর জগৎ নাই। দুই জনেই দুই জনের জগৎ। অতএব বন্ধুত্ব অর্থে দুই এবং তিন, প্রেম অর্থে এক এবং দুই। ইহা ছাড়াও প্রেমের চাইতে বন্ধুত্বের স্হায়ীত্ব বেশী কেননা একটা কথা আছে “প্রেম মন্দির ও বন্ধুত্ব বাসস্থান”, মন্দির হইতে যখন দেবতা চলিয়া যায় তখন সে আর বাসস্থানের কাজে লাগিতে পারে না, কিন্তু বাসস্থানে দেবতা প্রতিষ্ঠা করা যায়।

সবাইকে বন্ধু দিবসের শুভেচ্ছা…

ভালোবাসি – ২

আকাশ ছেঁচা বৃষ্টি চাই
তোমার আমার মাঝে
ভেসে যাবে বিশ্ব চরাচর

একটা ভীষণ ঝড় চাই
ঝড়ে আড়াল থাকবে না
উড়ে যাবে অহংকার, অভিমান।

হঠাৎ মেঘের ডাকে
চমকে উঠবো আর
দৌড়ে যাবো তোমার কাছে

মিশে যাবো রন্ধ্রে রন্ধ্রে
আহ্লাদে কেঁপে উঠবে পৃথিবী
লজ্জায় উছলে উঠবে নদী।

আমার একটা তুমি চাই
ছোট যতো ভুল এড়িয়ে
বুকে জড়িয়ে নিয়ে বলবে –
ভালোবাসি!

____________
রিয়া রিয়া চক্রবর্তী।

বর্ষা বিলাস – ৪

বর্ষা বিলাস

গজলটা টা আমার খুবি প্রিয় কিছু গজলের মধ্যে একটা। একসময় বৃষ্টিতে ছাদে উঠে ভিজতাম। এখন আর ভেজা হয় না আগের মতো। আর বৃষ্টিও আর আগের মতো আমায় কাছে ডেকে না। অভিমানে অনেকটাই দূরে চলে গেছে। এখন যদিও সবদিনগুলো একই রকম কাটে, সেই থোর বড়ি খাড়া আর খাড়া বড়ি থোর। গ্রীষ্মের কাঠ ফাটা রোদ, বর্ষার ঝড় বৃষ্টি আর শীতের হাড় কাঁপানো ঠাণ্ডা একই রকম যায়। সেই দিনগুলো আজও খুব মিস করি। আজকাল যখন রাতের বেলায় বৃষ্টি হলে, জানালার ধারে বসে বৃষ্টি দেখি। কখনো আবার একা একা বৃষ্টিতে রাতের অন্ধকারে ঘরে আবছা আলোয় গজল শোনা গুলাম আলি কিংবা জগজিৎ সিং।

“ইয়ে দৌলত ভি লে লো শহরত ভি লে লো
ভালে ছিন লো মুঝসে মেরি জাবানী
মগর মুঝকো লৌটা দে
বচপন কার শাওন ওহ
কাগজ কি কাস্তি ওহ বারিস কা পানী।”

রাতের হাজার তারাদের বুকে লুকিয়ে সারারাত বৃষ্টি রিমঝিম। খুব ভোরে ঘুম ভেঙে শুনি তখনও বৃষ্টির টুপটাপ। বিছানায় শুয়েই তাকিয়ে আছি জানলার বাইরে। ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টিতে ভিজতে চাইতো মন তোর সাথে। কাপাসিয়া মেঘের চোখে কাজলের ঘনঘটা।

এমন বৃষ্টি স্নাত স্নিগ্ধ সকালেও অস্থির লাগে কারো? উঠে পরলাম চটপট। মনে হয় যেন কতকিছু করার ছিলো, করা হয়নি কখনো, অনেক স্বপ্ন ছিলো যা অধরাই রয়ে গেছে, অনেক চাওয়া ছিলো যেগুলো অর্জনের জন্য প্রচেষ্টাও করতে পারা যায়নি! আয়নায় তাকিয়ে সদ্য ঘুম থেকে ওঠা মুখ দেখে আবিষ্কার করলাম কপালে দুটো ব্রণ জ্বলজ্বল করছে। হয়তো কোনো খুচরো পাপের ফল। ভোরের আলো যেমন সুন্দর, যেমনই তাতে আছে নতুন করে আশায় বুক বাঁধার স্বস্তি, তেমনি আছে অস্থির এক ভালোলাগা। পৃথিবীর এমন ভোরগুলো ভীষণ সুন্দর। এক অদ্ভুত সুন্দর, স্নিগ্ধ। মোতির দানার মতো টিপটিপ করে পাতায় পাতায় ঝরে পড়ছে বৃষ্টি।

জানলা খুলে দিয়ে বুকে ভরে নেবো ভিজে মাটির আতর। ভীষণ ইচ্ছে ছিলো তোর সাথে বৃষ্টি ভেজার। তোর সাথে কবিতা যাপনের, তোর সাথে গানের, তোর সাথে রঙ তুলি ক্যানভাসের। ইচ্ছেরা থাকে ইচ্ছে হয়েই। ‘কেউ কথা রাখে না, কেউ কথা রাখে নি’। একা একা কত কি যে ভাবি, এমন অনেক অর্থহীন লেখা, দিনলিপি, রোজনামচা, বিচ্ছিন্ন আবেগের টুকরো কথা, কত্তো কি। এইসব মিলেমিশে একটাই আরাধনা তৈরি করে হৃদয়ে। তোর বুকে মাথা রেখে বাঁচতে চায় অবুঝ মন।

এখন আমি বদলে গেছি অনেক। দায়িত্ব বেড়েছে অনেক বেশি। বলেছিলাম একদিন ঠিকই মুছে যাবো তোর জীবন থেকে, মন থেকে। আমাকে তখন আর মনেই পড়বে না। হয়তো আমার জন্য চোখের কোণে একটুও জলও আসবে না যেদিন আমি হারিয়ে যাবো এই পৃথিবী থেকে। অবহেলার নৌকোয় ভাসতে ভাসতে মেঘেরা হয়তো সেদিন অঝোর ধারায় ধুইয়ে দেবে আমার যত অপমান, অভিমান!

“তখন আমায় নাইবা মনে রাখলে,
তারার পানে চেয়ে চেয়ে
নাইবা আমায় ডাকলে।”

____________
রিয়া রিয়া চক্রবর্তী।

মুহূর্তেরা

আঘাত পেলে হৃৎপিণ্ডের কিছুফোঁটা
রক্তের ধার দেয় দু’ চোখকে
রক্তের রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় জল
গড়িয়ে পরে হিমালয় থেকে সাগরে।
**
সকালবেলায় খবরের কাগজেই
অফিসের মাছের ঝোল ভাত
পাড়ার জঞ্জাল সাফাইয়ে কুকুরের লাশ
জীবন এখন দুটাকায় বিক্রি হয়।
**
সহজ সরল গ্রামেও এখন
আণবিক বোমার আতুর ঘর
সভ্যতার রকেট মঙ্গল গ্রহে
আমলাশোল এখনো ধুঁকছে।
**
ঘুমপাড়ানির গানে জেলের নিরাপত্তা
রাস্তায় বাসন ধুতে ব্যাস্ত শিশুদিবস
নতুন নতুন শিল্প শিলান্যাসে

মুখ থুবড়ে পড়ছে জয় পতাকা।

অবুঝ স্বপ্ন

স্বপ্নগুলো আজকাল আসে না আর,
রাতজাগা চোখের পাতার নিচে কালচে দাগ।
রোজকার কাজ- অবসরে- ভীড়ে-
ব্যস্ত থাকি রোজনামচায় সূচীপত্র ধরে
কলের মানুষ হয়ে।

অবাক হয়ে চেয়ে থাকি
মিলিয়ে যাওয়া বিশ্বাসটুকুর দিকে।
আলো রঙ স্বচ্ছ করে ভালোবেসে
ভয়ানক দোষ করে ফেলি।

একদিন স্তুতিতে ভাসিয়ে তারপর
নির্বিকারে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে,

শুনানি হয়ে যায় এক তরফা –
বিচার শেষ!

__________
রিয়া চক্রবর্তী।

(প্রেমিকের নাম আগুন বই থেকে একটা কবিতা)

তুমি ও আমি

তুমি ও আমি

তখন তোমার কেউ ছিলো না
আমিও ছিলাম একা।
হঠাৎ করে পথের বাঁকে
তোমার আমার দেখা।

তোমার দুহাত ঋদ্ধ এখন
আমিও পরিপূর্ণ,
তোমার আকাশ ঝকঝকে নীল
আমার আকাশ শূন্য।

তোমার এখন ঝলমলে রোদ
আমার শ্রাবণ চোখ
যুদ্ধে আমি পরাজিত
তবু তোমার ভালো হোক।

আমার এ পথ কণ্টক ময়
তোমার পথ হোক শুদ্ধ।
আমার জীবন ইতিহাসে
শুধু রক্তবিহীন যুদ্ধ।।

জীবন যেমন

জীবন যেমন

হঠাৎ সেদিন পথের বাঁকে, কি জানি কার ডাকে, পেছনে ফিরে খুঁজে পেলাম নিজেকে। অনেক আলোর দিনেও, সেই বৃষ্টি ভেজা পাতার গন্ধ-ছায়ায় নিজেকেই খুঁজি। সেদিনেও গুঁড়ো গুঁড়ো বৃষ্টিরা এসে জল-চোখে চোখ মিলিয়েছে। দৃষ্টির এতটুকু আকাশ, চাইতে গিয়ে গুটিয়ে গিয়েছি নিজের কোলের ভিতরে। রাতের পর রাত নিজের কোলে কোল পেতে ঘুম পাড়াই আমি। অগুন্তি তারার গাঢ় পর্দার ওদিকে আস্তে আস্তে বড় হয় রাত। একটু একটু করে নীল রঙা রাতভোর। আর একটু একটু করে রোদ পেয়ে মুছে যাস তুই। এখন আমি একাই চলি। নিজেই নিজেকে ভালোবাসি। এখনও আমি নদী খুঁজি রোজ। নদী খুঁজি রোজ, চুপি চুপি আনমনে, শহরের পথে পথে, মনে মনে, বিসর্জনের সময় এসেছে বোধে-অবোধে। তোকে কি চেয়েছে কেউ? বা আমি? পাঁজরের খাঁচার একটা একটা করে আগল উপড়ে নিচ্ছি রোজ। আর একটু একটু করে তোকে রোজ ভাসিয়ে দিচ্ছি জলে। জানি তোকে দু’হাত দিয়ে আগলে রেখেছে সকলে, জানি তোর অনেকেই আছে। আমার কিন্তু শুধু ছিলিস তুই।

তবু কেউ জানবে না, এখন, ঠিক এই সব মুহূর্তেরা বড় বেশি নিঃসঙ্কোচে নিঃসঙ্গ। নিজেকেই বলি “একলা হবি সই?” হাতের মুঠি খুলে গেলো হঠাৎ হাওয়ার টানে। এলোমেলো এক পলকে সব বোঝাবুঝি। আঙুলের আলগা হলো ফাঁক। একে একে চলে গেলি তুই, এক পা এক পা করে; তোর শেষ আকারটুকু মিশে গেলো ছায়াপথে। অনেকক্ষণ তারপর থেকে, হঠাৎ একা হয়ে যাওয়া। হয়তো কিছুক্ষণ আগলে রেখেছিলি, কিছু মুহূর্ত দিয়ে ছিলিস উপহার। আমি যে মুহূর্তেই বাঁচি। এখন এই চাঁদ-রঙা সন্ধ্যেতে, প্রতিটা কোণে, মনের প্রতিটা আলপথে, ছাদের সেই সব কার্ণিশের আনাচে কানাচে, ছলছলে আর্শীতে, অপলকে চেয়ে থেকেছি, যদি পাই তোকে। তুই নেই। এখন অনেকখানি কাজ জড়ো হয়ে গেছে শুধু। যে শব্দেরা কোথায় উড়ে গেছিলো তোর ডানা হয়ে, আজ তারা হাওয়া পথে ফিরে এসে ঘিরে আছে আমায়। হাঁটু দুটো বুকের কাছে নিয়ে এসে মাথা রেখে জড়িয়ে নিয়েছি নিজেকে, আচমকা নিজের কাছে বড় বেশি বেআব্রু আমি। তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করি রক্তক্ষরণ। ফোঁটা ফোঁটা লবণাক্ত হয় যখন সময়, ‘অস্ফুটে বোলে ফেলা স্বীকারক্তি’ কেউ হতে পারে না, তোর মতো। কেউ নেই তোর মতো। তবু জানি, আমি বেঁচে থাকি। এ এক অন্যরকম বাঁচা, অন্য জীবন, তবু আমি বাঁচি। জীবনের প্রতি এ আমার অন্তহীন সন্ন্যাস।