রোখশানা রফিক এর সকল পোস্ট

রোখশানা রফিক সম্পর্কে

I'm a mom, teacher, designer, poet, social worker, own home maker, a visionary dreamer.

জয়-পরাজয়

আমি না হয় হেরেই গেলাম,
তোমার হলো জয়,
তোমার কথা ভেবেই না হয়
পরান হলো ক্ষয়।
আমি না হয় ঝরেই গেলাম,
তুমি ফোটা ফুল,
তোমার দেয়া দুখেই জেনো
হৃদয় হয় আকুল।

তোমার পথে আছে সাথী,
আমি না হয় একা,
জীবন নদীর ভুলের বাঁকে
তবুও হবে দেখা।
তো্মার হাতে না হয় গো্লাপ,
আমার শুধুই কাঁটা,
ভুলেই না হয় যেও তুমি
ক্ষনিক সাথে হাঁটা।

ভালো্বাসার খেলায় জেনো
জয়-পরাজয় আছেই আছে,
প্রনয় স্মৃ্তি বুকে নিয়ে
একলা মানুষ তবুও বাঁচে।।

বনলতা তুমি

বনলতা তুমি আর
থেকো নাকো আঁধারে,
একলা লাগা ঘোর আঁধারে।
কবেকার কোন্ কবি এক
এসে দু’দণ্ড শান্তি খুঁজে
নেবে বলে, তুমি থেকো না
তাকিয়ে অমন নির্নিমেষ
পথের দিকে আর তাকিয়ে।

সে কবি খুঁজেছে সুচেতনাকে,
সুরঞ্জনা, আকাশলীনা নারীকে।
তুমি কেন বসে রবে এক ঠাঁই
পাখির নীড়ের মতো চোখ তুলে
নাটোরের নিভৃত নিরালা কোড়কে?

ছিড়ে ফেলে কাব্য কমলিকার
সুবাসিত হার, আজ তুমি আড়াল
ছেড়ে এসো আলোকিত পথে।
পৃথিবীর পিপাসিত প্রাণের দু’দণ্ড
তৃষ্ণা মেটে আজো তোমারই হাতে।

থেকো নাকো বৃত্তবন্দী তুমি ধুসরিত বিদিশায়
অমন তমসা আঁধারে ঢাকা কবির মানসপটে।
এক আকাশ আলোকের নীচে তুমি খুঁজে নিও
বিজয়িনী বেশ যেথা আঁকা হয় তোমারই ললাটে।

প্রেম

প্রাত্যহিক যাপিত জীবনে
হঠাৎ প্রেম এসে চুপিচুপি
বলে কানে কানে, চলো যাই
জোছোনা রাতে তারার উঠোনে।
সাধ্য কি আমার ফেরাই তারে ?

একদিন গোপনে অশ্রু এসে
আসন নিল দুটি চোখের কোনে।
বলে গেলো সে, শেষ পর্যন্ত
আমিই রয়ে যাবো হৃদয় প্রাঙ্গনে।
ভুল কিছু বলেনি তো সে ?

তাই আজ অগোচরে বিরহ এসে
ভাসায় আমায় অকূল সাগরে।
সুরগুলো অশ্রু হয়ে পড়ে ঝরে
সঙ্গীহীন একলা রাতের বাসরে।

পথ ভোলা পথিক

একটি প্রজাপতি পথ ভুলে
এসে বসে তোমার চুলে,
একটা সকাল সোনালী আলোর
আভা নিয়ে খেলা করে তোমার গালে।
আমি অবাক চেয়ে থাকি
কবিতার ছন্দে অন্তঃমিলে।

বরষার প্রথম বৃষ্টিবিন্দু
তুমি ছুঁয়ে দিলে কোমল আঙুলে,
জোছনার ফুল যখন ফুটে ওঠে
নারকেল বীথিঘেরা তোমার চালে।
আমার মরণ হয় মনে মনে
বড় বেশি অকালে।

কাশফুল সাদা হয়ে ফুটে ওঠে
যখন তোমার সুনীল আঁচলে,
শরতের শিউলি ঝরে পড়ে
সাথে তোমার ভীরু স্বপ্ন দোলে।
আমি গৃহী হই আরবার
লোটাকম্বল ঝোলাঝুলি
নিরুদ্দেশের পথ ভুলে।

ব্যবধান

কবির ও বিষয় ভাবনা থাকে,
বাঁচতে হয় খেয়ে পড়ে।
নয়টা-পাঁচটার দৌড়ে ঊর্ধ্বশ্বাস
না ছুটলে তার চুলোতেও
জ্বলেনা আগুন।

কবিতা তার দগ্ধ হয়
সুখ্যাতির লোভে, প্রত্যাখ্যানের
ব্যথায় কিংবা ঈর্ষার নীল বিষে।
তার মিটারেও জ্বলে লালবাতি।
বৈষয়িক বিষয়-আশয় আঁকড়ে
ধরে দুটি হাত, পায়ে পড়ায়
লোহার শেকল নিত্য বেলা।

ধুলোমাখা পথে যেতে যেতে
তবু সে আকাশ দেখে, দেখে
বাতাসের লুটোপুটি খেলা
ফুটপাতে ওড়া বাসি
খবরের কাগজে।
বৃষ্টিতে নেয়ে সে খুঁজে নেয়
ফোটা ফোটা সুখের বিন্দু।

তোমরা যখন শুধুই
মুদ্রা গুনে চলো
মুদ্রাদোষের মতো,
পৃথিবীসম বিরাট ব্যবধানে
দাঁড়িয়ে সে তখন খুঁজে চলে,
একফোঁটা মানবতা তোমাদের
ঠুলি আঁটা লালসার লালায়
জারিত চোখের ভাঁজে।

ধুলিশয্যা

হতেই পারে এমন জেনো,
আমি মগ্ন ছিলেম তোমায়,
তোমার চোখে অন্য স্বপন।

স্বপনের ক্ষণ মেলে না
আসলে কারো সাথে
কোনো কালে আর কারো,
কিছু মেঘ তবু জমে থাকে
হৃদয়ে আকাশে, এ খেলায়
তুমি জিতে যাও বা হারো।

হার-জিত কি খুব বেশী কিছু
জীবন নাট্যের একাঙ্কিকায়?
সেই তো শেষে মাটির কোলে
আমি তোমাতেই মিশে যাই।

একা থাকা

এইতো বেশ শিখে গেছি
একা থাকা, একলা থাকা।
এতো বেশি একা হতে শিখে
গেছি আজ, তোমার জন্য ভাত
বেড়ে দিয়ে টুকটাক কথার মাঝেও
একা হতে জানি আমি।

যখন আকাশে মেঘ ঘনিয়ে আসে,
কার্নিশের চড়ুইগুলো পরস্পরের
গা ঘেঁষে রয়, গোলাপের পাপড়িগুলো
মিইয়ে যায় বৃষ্টির ফোঁটায়, বারান্দার টেবিলে
বসে মুখোমুখি তোমার পেয়ালায় ধোঁয়া ওঠা
গরম চা ঢালতে গিয়েও নিজেকে নিয়ে একা
থাকি আজ আমি।

একটা সময় স্বপ্ন ছিলো সবকিছু হোক “দুজনার”।
অবহেলার ধূলিঝড়ে চাপা পড়া সে স্বপ্নছবি আজ
আর আঁকি না আনমনে। আজ শিখে গেছি আমি,
দেয়াল জুড়ে থাকা যুগল ছবিতে কিংবা দেরাজের
আয়নায় দু’জন পাশাপাশি মানুষ আসলে থাকে
নিজেরই বুকের কাছে নিজের মতোই ভীষণ একা।

সূর্যস্নান

আজ আমার সূর্যস্নান,
দখিনা হাওয়ার রূপটান
অঙ্গে মেখে। প্রজাপতির পাখনায়
কাব্যকথার অলস দুপুর। ঘুম ঘুম
চোখে মেঠো দিনের প্রগাঢ় স্বপ্ন অঞ্জন।

যে আলোর স্পর্শে ফোটে গোলাপ-মল্লিকা,
সে আলোর কণা জীবনের স্পন্দন তুলে
ডেকে নিয়ে যায় আজ আমায়
অজানা বাঁশীর সুরে সুরে,
সেই সে তোমার রুদ্ধ দুয়ারে।

যেথা অভিমান ঘন লৌহ কপাট
ভুলে যায় আলো-ছায়া দিনের গান,
হারানো জং ধরা ঝরোকা কাঁটা
রূপোর চাবির গোছায়
নীলাম্বরী শাড়ির আঁচলে।

আঁধার

চুপ থেকে ভেবে সারা
তুমি জানতে চাইবে কারণটা।
অথচ তুমি খেয়াল করোনি তা।
এমনি করে কেউ কাউকে বুঝি,
আবার বুঝেও না বোঝার ভান করি।

দূরত্বের পরিখা
অযুত আলোকবর্ষ পরে পড়ে থাকে
আমাদের মাঝখানে। ডিঙোতে পারিনা।
গোলাপ থেকে তার সুবাসের আঙরাখা
খুলে নিলে, যেমন পড়ে থাকে অর্থহীন কিছু রঙ,
তেমনি আমার হৃদয় এক দাবানলে জ্বলে যাওয়া বন,
তোমার ঠোঁটের মৃদু উত্তাপ বিহনে।
অথবা ঢেউহীন এক নদী, অন্তঃসলিলা দুঃখের জল বয়ে।

তুমি চাইলে এ মনে বেজে যাবে
অজস্র এস্রাজ ঝংকার। অথবা ছেয়ে যাবে দিন
কালবোশেখীর হঠাৎ নেমে আসা আঁধারে।

ভোরের ডাকে চিঠি

শান্ত ধ্যানমগ্ন এক ভোরে তুমি দূরে চলে গেলে আমি একা বসে সকাল-সন্ধ্যা দিনযাপনের গ্লানি বয়ে চলি। দুঃখ-সুখের দোলায় কাটে দিনগুলি। তুমি ভালো আছো তো?

ভুলে থাকলেই যদি ভালো থাকা হয় তবে আমিও সুখে আছি। না পাওয়ার লম্বা ফর্দ নাইবা লিখি, যা পেয়েছি তাই বা কম কিসে? আমার একলা এক জীবন কেটে যাবে তোমার দেয়া গোপন দুঃখ-সুখের খেরোখাতায় হাসি-কান্নার হিসাব মেলাতেই। যাক না বয়ে এভাবেই দিনগুলি।

প্রত্যাশা

গাঢ় অভিমানটুকু লুকোবার মতো
প্রশস্থ- দৃঢ় – ঋজু একখানা কাঁধ,
পৃথিবীর প্রান্তরে শুধু বালিকার
এইটুকু ছিলো পাবার একান্ত সাধ।

প্রহসন হাসিতে আলোকিত সৌরকর দিন,
স্মিত মুখে কয়, “এ নয় সুরেলা বীণ, এ নয় ক্ষয়িষ্ণু চন্দ্রের মতো ক্ষীণ।”

নয়, নয়, এ অঞ্জলি ভরা তৃষ্ণাবারির জল,
এ নয় কৃষ্ণ কালো কেশসজ্জার রপসী ফুলদল,
নয় শাড়ী-গাড়ী-চুড়ি-চচ্চড়ি
গহনার বাক্সবন্দি কারুকৌশল,
নয় অগনিত মানুষের ভীড়ে ব্যাকুল সংখ্যাবৃদ্ধি রাত্রির কামনা ছল।
এ নয় ফিরে যাওয়া ভীরু দখিনা হাওয়া,
একা অবসরে নিজেকে
নিজেরই মতো করে পাওয়া।

চাঁদনী রাতের মতো গৃহত্যাগী বোধিসত্ত্বা ও যদি জোটে,
এক জীবনের এই একেলা
সোজন-বাদিয়া ঘাটে,
তবু যা ছিলো জীবনের কাছে চাওয়া,
সেই সে অধরা সোনামৃগ,
তারে যায়নাকো পাওয়া।

পঞ্চশরের প্রবল বেদনা যদি
করে তিলেতিলে ক্ষয়,
একা থাকবার দৃঢ় প্রত্যয়,
তবু সেই ভ্রম মৃদু হেসে কয়,
যা চেয়েছি জীবনের কাছে,
শুধু সেটুকুই পাবার নয়, নয়!?!

চোর-কাঁটা

কুয়াশা ঘেরা রাত ছিলো সেদিন। অস্পষ্ট চরাচর। হিম ঝরে পড়ছিলো আকাশের বুক চিরে। কান্না ছিলো চোখে আমার। তবু তুমি ফিরেও দেখোনি।

সুখের আলপথ মাড়িয়ে চলে গেলে একরাশ দুঃখ ছড়িয়ে। চোখের কোনে টলোমল জল আর বিদীর্ণ হৃদয় নিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম দুয়ারে। তবু বলতে পারিনি, ” যেও না আমাকে একলা এক দিগন্তের শূন্যতায় ফেলে”।

বলা হলো না আর। না বলা কথাটি কাঁটা হয়ে রক্ত ঝরায় আজো হৃদয়ে আমার।

আমার কৈশোর

খাঁ খাঁ বিরান মরুভূমি
একবুক তৃষ্ণা জাগে
হৃদয়ে আমার।
নির্মল কোনো ভোরে
শিউলি ফোটা শিশির ধোয়া
প্রাঙ্গণে যদি আবার হাঁটি
কোনো সকালে, তবে কি
ফিরে পাবো আমার সোনালি
কৈশোর?

হয়তো সে বসে আছে
আমারই অপেক্ষায়
ব্রক্ষ্মপুত্র নদের তীরে
বটের ছায়ায় পা ডুবিয়ে
শান্ত শীতল জলে। কিংবা
খোলা নীল আকাশের তলে
ডিঙি নাওয়ে বসে শাপলার ঝিলে।
অথবা আমের বোলের ঘ্রাণমাখা
ঝড়ে পাতা ঝরা স্নিগ্ধ বিকেলের কোলে।

প্রতি প্রত্যুষে জেগে উঠে
আমি খুঁজি তারে ইতিউতি।
লাউয়ের জাংলায়, সীমের মাচানে,
মটরশুঁটির ক্ষেতে, ব্যস্ত জনপদে,
সোডিয়াম আলোভেজা পথে ।
খুঁজে তারে পাইনা আর কোথাও,
যেন সে লুকিয়েছে পিতার গন্ধমাখা শীতের পশমি শালের উষ্ণতার আড়ালে।

গোপন চিঠির ভাঁজে

অরণ্য পথের মতো খুব অচেনা
হয়ে যাবো, চেনা নাম ধরে ডেকে ডেকে
পাবেনা সাড়া কেউ। বুনোফুল হবো
নাম না জানা পাহাড়ি ঢালে,
নিরিবিলি এক ঝর্ণার ধারে,
নীরবে ঝরে যাবো কোনো
মধ্য রজনীর কোলে।

মেঠো দিনের বাঁকে পায়ে চলা
পথ হবো অচেনা নুপূর সুরে।
কুয়াশা বিকেলে হবো শিরশিরে
হাওয়া, যেন ছুঁয়ে দিতে পারি
অবাধ্য আদরে তোমার ওই
অমল চিবুক প্রান্ত।

এতো সব হতে চেয়ে, কিছুই হওয়া
হয়ে উঠবেনা আর। শুধু ভুলে যাওয়া
নীল চিঠির খামে লুকোনো কান্না হয়ে
থমকে রবো কোনো এক সুগন্ধি ড্রয়ারে।

ছিন্নপত্র

দূর বহুদূর আরো আরো সুদূরের পথ পেরিয়ে এইখানে নিরজনে
ডাহুকের জল ছপছপ শাপলার রঙে মাতাল সময়ে থেমে গেছে আমাদের প্রেম। ছিন্নমূল গানের কলি পথশিশু যেন খুঁজে পেলো আকাশের নীচে ঝোড়োবৃষ্টি থমকে যাওয়া এক সুখনিদ্রার মিউজিক নোটেশন।

এখানে তুমি ছাড়া সময় বয়ে চলে
তুমিময় আলোর গতিতে আমাদের
চেনা গ্যালাক্সি পার হয়ে পড়শির পানে। ভুলে যাওয়ার সাঁড়াশী অভিযান তবু ওৎপেতে রয়, ঠিকানাহীন সারমেয় সন্তানের মতো
মৃত্যু-বিষ ইনজেকশনে কবে তুলে দেয়া যাবে অামাদের না লেখা ছিন্নপত্রগুলি দমকা হাওয়ার মিউনিসিপালিটি ট্রাকে?

সে চলুক তার মতো,
আমরা বাঁধা পড়ি অামাদের
প্রগাঢ় অালিঙ্গন অালাপনে।