রোখশানা রফিক এর সকল পোস্ট

রোখশানা রফিক সম্পর্কে

I'm a mom, teacher, designer, poet, social worker, own home maker, a visionary dreamer.

বৃদ্ধাঙ্গুল-কাঁচকলা

চোরাই মালের মতো কিছু সুখ নিয়ে জাবর কাটি একলা সময়ে। অর্বাচীনেরা জেনে গেলেই বিপত্তি। তারা সুখ খোঁজে অপরের হতাশা, গ্লানি, ক্লিন্ন জীবনকথায় নিজ পেয়ালা ভরে নিয়ে, একঘেয়ে গৃহকোণে বিকেলের চায়ের চুমুক আলস্য তৃপ্তিতে।

অতঃপর প্রকাশ্যে বলি, হে মদিনাবাসী, sos জানাই সকলের মনের টরেটক্কায়। বড় প্রয়োজন আজ তোমাদের পোক্ত কাঁধে মাথা রেখে অশ্রুক্ষরণ, সকাল-সন্ধ্যে কেরাণীগিরীর কর্পোরেট জীবনে চালু এটি এম লালনোট, দু’একটি রান-সিনা ছোঁয়া লংড্রাইভ, রেস্তোরার স্যুপে ডোবা পুঁইশাক ডগা-চিংড়ীর পেলব দেহ।

তারপর একদলা থু থু গিলে ফেলে মনে মনে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে বলি…”শাআআলা, সুখ কি তোর বাপের ঘরের সম্পত্তি, যে তোর ঐসব নেকু নেকু ভন্ডামির পুকুরে সাঁতার কাটে আজীবন?”

মোহনার বেলা

পিছু ফিরে চাইবো না
যাবার বেলায়, মন তবু
বারেবার ফিরে ফিরে চাবে
তোমার চোখের পানে।
সুখের হাসিটি জড়িয়ে
মুখে, খুব করে কেঁদে নেবো
বুকে আঁধার ঘনিয়ে এলে।

তারপর একদিন ফুরোবে
চোখের জল। পলি জমে
যাবে আমাদের স্মৃতির উপর।
সুফলা মাটির মতোন
ফলবে ফসল আমাদের
উপকূলে। পাল তুলে নাওয়ে
উজান বেয়ে দু’জনেই একা
ফিরে যাবো বারেবার আমাদের
ফেলে আসা মোহনার অন্তমিলে।

ফাগুন বেলা

একমুঠো ফাগুন হাতে
তুমি এসে দাঁড়ালে
দুয়ারে আমার।
চমকে চেয়ে দেখি
একি খুঁজেছি যারে আমি
গাঙের জোয়ার-ভাটায়,
অমাবস্যায়, চাঁদের প্রহরে।

জানি দেরী হয়ে গেছে ঢের,
প্রাচীন পৃথিবীর বুকে আরো
সুপ্রাচীন আমাদের বয়সের ভার।
ক্ষয় হতে হতে ঝরে গেছে আমাদের
অর্বাচীন স্বপগুলো। ক্লেদাক্ত মন
জাপটে ধরে বেড়ে উঠেছে
হতাশার পরগাছা ডালপালা
বিষাদ বাগানে।

তবু আজ তুমি এলে
হঠাত করেই ফাগুনের
অবেলায়, সব কৃষ্ণচূড়া
যেন রঙ ছড়িয়ে হেসে
গেলো সবুজ বনান্তের
টিয়েরঙা দুপুরে।

হাওয়া ঘর

হাওয়ায় বেঁধেছি ঘর,
নড়বড়ে খুটি তার,
টালমাটাল এলোমেলো
বাতাসে যখন তখন।
প্রখর গ্রীষ্মতাপে, সজল বরষায়,
হিমহিম শীতের প্রকোপে
কেঁপে কেঁপে খসে পড়ে
নোনাধরা পলেস্তারা তার।

মায়ার কাদামাটিতে লেপা
শীতল মেঝেতে গড়াগড়ি
খায় অপার শান্তিসুখ।
সান্ধ্য আলোয় দূর
আকাশের তারাগুলো
মিটিমিটি আলো দেয়
চাঁদের চাঁদোয়ায়।

তবু হে উদাস পবন,
তুমি এসে ছিড়েখুঁড়ে
ফেলো আমার পাঁজরে
বোনা ছাউনি কেন
অবুঝের মতোন?

মারী ও মড়কের শেষে

মারী ও মড়কের তাণ্ডব শেষে
আমাদের দেখা হোক নিরালায়,
শ্বেতশুভ্র গোলাপগুচ্ছ হাতে
তুমি হেঁটে এসো আমার আঙিনায়।

সাথে এনো কিছু শীতল হাওয়ার
প্রাণ জুড়ানো অপার্থিব অনুভব।
চোখে বয়ে এনো প্রেমের কবিতা,
অক্ষরহীন ভাষার তুমুল বৈভব।

দু’বাহুতে এনো উদ্দাম আশ্বাস,
দু’জনে মিশে যেতে একই চেতনায়।
বুকে বয়ে এনো একরাশ আশা,
মুখোমুখি বসে কথা হবে দু’জনায়।

কণ্ঠে এনো সুধা, নীলমণি ফুলহার,
শিবের মতোন সব বিষ নিতে শুষে।
দু’পায়ে জড়িয়ে শিশিরের মৃদু মায়া
সবুজ কোমল সকালের ঘাসে ঘাসে।

আমি বসে রবো পথ চেয়ে একা
আগামীর এমনি দিনের আশায়,
কুঁড়ির না ফোটা ফুলেরা সেদিন
ফুটবে সজীব সুন্দর ভালোবাসায়।

কান্নার ঢেউ

আহা, এই দিনযাপনের গ্লানি
নিশিদিন আমারে ক্লান্ত করে।
আমারেই করে ক্লান্ত? নাকি
তোমারেও কলহ-কলরব শেষে
নিশীথের নিদ্রার কোলে আত্মসমর্পণের মুহূর্ত কালে
ছুঁয়ে যায় বিষাদ বেদনায়?

বুনো ঘাসগুলো আমার
পেছনে বাড়িতে বেড়ে ওঠে
অগোছালো হলুদ ফুলের বাসর শয্যায়। দুলে দুলে আনমনে তারা
দোল খায় মৃদু বাতাসের দোলনায়।
এই প্রগাঢ় শান্তি অাহা! মায়ার মতোন লেগে থাকে চোখে।

তবু হাওয়া বয় হু হু দীর্ঘশ্বাসে
প্রাঙ্গণে মোর ফোটা ফুলেদের ঝরিয়ে দারুণ দাপটে। তবু এই
কান্নার ঢেউ অাছড়ে পড়ে সাগর বেলায় তোমারে না পাবার আজন্ম
সঞ্চিত প্রগাঢ় স্তিমিত দুঃখ বিলাসে।

কবিতা ছুঁয়েছে যাকে

কবিতা ছুঁয়েছে যাকে
তার আর ঘর থাকেনা,
নিজেরই কাছে অচেনা
মনে হতে থাকে চেনা
ঘরদোর। প্রিয়মুখগুলো
ধরা দেয় আগন্তুক এর
মতোন অচেনা আবেগ
স্রোতে।

সময় আর সময়ে থাকেনা
তার। অতীত এসে বাসা বাঁধে
বর্তমানে, ভবিষ্যৎ কাঁপে অতীত
ভুলের চাপে, বর্তমান লুকোচুরি খেলে
বিষণ্ন কুয়াশার আলোআঁধারীতে।

কবিতা ছুঁয়েছে যাকে তার বড়
ভুল হয়ে যায় চেনাপথ চিনে নিতে।
চোখে রুমাল বাঁধা এক উন্মত্ত ষাঁড়ের
মতোন জীবন ঘোরায় তাকে গোলোক
ধাঁধায়। প্রেম চেনে না তাকে, সুখ-সমৃদ্ধি
সাফল্য-সন্তাপ সবই ছেড়ে যায় তাকে
একে একে। যেমন মৃতকে কবরে রেখে
আমরা সবাই ফিরে আসি পায়ে পায়ে।

অনন্ত প্রেম

রাত বাড়লেই কুকুরগুলি
ঝগড়ায় মেতে ওঠে,
দিন গড়ালে মানুষগুলি মন্থর।
তারপর দিন চলে যায় একে একে।

তোমরা তাকে বয়স বলো,
আমার-তোমার-পৃথিবীর-ব্রক্ষান্ডের।
অথচ শূন্য থেকে শুরু সবকিছু,
শুন্যেই শেষ। মাঝখানটায় হিসেব।

তাই শুরু কিংবা শেষ বলে
কিছু নেই তোমার-আমার মাঝে।
যেখানে তোমায় ফেলে এসেছি,
ঠিক সেখানটাতেই শুরু আমার
আর তোমার অনন্ত প্রেমের।

আড়াল

“ভালো আছি” বললেই
ভালো থাকা যায়না রে মন।
যখন ভাবনারা টুপটাপ ঝরে পড়ে,
স্বপ্নগুলো রয়ে যায় অধরা,
না বলা কথা আর হয়না
বলা জনমে জনমে।

তখনও পাখির পালকের মতোন
ভেসে ভেসে
ভালো থাকো তুমি মন?
কাহারে বোঝাও সেকথা?

কিছু বেদনা পাঁক খায় বুকের মোচড়ে,
চোখে ফুটে ওঠে কিছু যন্ত্রণা।
ওষ্ঠে তখনও হাসির সুধা মেখে
কারে কি বলো গোপনে তুমি সখা?

প্রাণের পরে প্রাণ রেখে
জেনেছি যে কথা,
কোনো ধোঁয়াশাই তারে
করেনি আড়াল,
তোমারই বোঝা হয়ে
ওঠে নাই জানি তা।

তবু আমাকেই কেন বোঝাতে
চাও বলো তুমি সেই মিথ্যা?

বিকিকিনি

যখন সময় বেচে ক্লান্তি কিনি,
প্রেম দিয়ে কিনি বেদনা,
তখন জীবন ভারী মনে হয়,
যেন বোঝার উপর আঁটি
শক্ত পোক্ত লোহায় বোনা।

কখনো জীবন করে প্রহসন,
আমি যেন তার ছুঁড়ে ফেলা খেলনা,
বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতোন
দুঃখ নেমে আসে, আসে যাতনা।

তবুও ভালোবাসতেই হয়
জীবনের শত রঙচঙ,
সে আমারে চায় নাকো,
আমি তারে খুব করে চাই,
যেন আমি এক খেলো-প্রহসন।

ঘরে ফেরা

ভাঙা কাঁচের টুকরোর মতোন
একটা চাপাকান্না গিলে ফেলছি
আজকাল কফির কাপে প্রাতঃরাশে।
হৃদয়ের পাশে পড়ে থাকে ধু ধু একা দিন।

গাছেরা পাতা ঝরিয়ে নতুন পত্রপল্লবে
শোভিত, কনকনে শীত মুছে
গিয়ে এলো কোকিল ডাকার দিন।
ঘরছেড়ে যে গেলো, সে তো আর
ভুলেও এলোনা ফিরে।

দিন গড়িয়ে বিকেল নেমে আসে
মৃদু হাওয়া ছড়িয়ে। দিন পেরিয়ে
যায়, সূর্যটা ভোলে না নিত্য তার
আঁধার ঘরে ফিরে যেতে।

দূরের বাঁশী

দূরে থাকা সুর
বাঁশীর টানে হৃদয় মাঝে রয় জড়ানো,
কাছে থাকা বড়ই খোলামেলা,
তাই দূরের বাঁশী হয়ে ভালো আছি জেনো।

প্রার্থনায় দু’হাত তুলে
চাইতে পারি অকাতরে,
হাত বাড়িয়ে খুঁজতে পারি
ঘুমের ঘোরে সকাতরে।

দূরে থাকা সুর করুণ-মধুর
বাজতে থাকে বুকের মাঝে,
কাছে এলে প্রাত্যহিকতায়
সস্তা ঠেকে সব সকাল-সাঁঝে।

নদীর মতো দুঃখ

হারানো নদীর মতোই
হারিয়ে যাওয়া মানুষ
কিছু কিছু চিহ্ন
ফেলে যায় পিছে।
হয়তো নামের সাথে
জুড়ে থাকে নাম,
খামের ভাঁজে ভাঁজে
কিছু স্মৃতি পড়ে থাকে
আলগোছে গোপনে।

মোমদানীতে আধা জ্বলা
পোড়া মনের টুকরো,
এক আধটা এলোমেলো
পোশাকে ভুল করে ফেলে
যাওয়া প্রিয় সুগন্ধির ঘ্রাণ।
ফুরিয়ে যাওয়া লাইটারের
নীচে জমা সামান্য পেট্রোল।

কতো কিছু রয়ে যায় পিছে!
কতো সত্য হয়ে যায় মিছে।
শুধু যে যায়, সে চলেই যায়,
ফেরেনা কখনো আর কোনো
অবাধ্য মায়ার পিছুটানে।

হারানো চিঠির খামে

কতো কতোবার মোবাইলে ফুটিয়ে তুলি
তোমার দূরালাপনী নং।
ছোট্ট একটা দীর্ঘশ্বাস লুকিয়ে
ইরেজ বাটনে মুছে ফেলি আবার।
জমে থাকা অভিমান পাহাড় সমান
বাঁধা হয়ে পথ আটকে দাঁড়ায়।
ডিঙোতে পারিনা, এগুতে পারিনা
সে বাঁধা ঠেলে ঠেলে।

প্রিয় গানগুলি শুনিনা আর,
তবু মনে মনে গুনগুন অদৃশ্য সরোদে
বেজে যায় তার সুর। জোছনা মাতাল
তিথিতে পুকুরের জল উথলে ওঠা দেখিনা।
তার সাথে সাথে চোখের নদী
জোয়ারে ভেসে যাবে বলে।

বেঁধেছি বাঁধ দুয়ারে, খিল আটা মন।
হারিয়ে ফেলা চাবির গোছায়
গাঁথা হারানো সে মন।
তবু ধুলোয় লুটানো আঁচলে
লিখা হয় যার নাম, সেই নামে আজ
আমের মুকুলে ভ্রমরের পাখায় লিখে দিই
গোটা এক জীবনের খাম।

বাসন্তী দিনের গান

এলোমেলো কিছু হাওয়া
ঘূর্ণিপাকে ঝরাপাতা
উড়ায় ক্যালেন্ডারে।
কুহু রব শুনে যারে
খোঁজে মন অজানায়,
তার বাস মনের গভীরে।

কতো জনে সেজে ওঠে
প্রকৃতির মতো বাসন্তী
সাজ সম্ভারে। কাহারে
হারায়ে কবির জগতে
হাহাকার ওঠে অন্তরে?

জানে সেই জন,
আমি জানি সেকথা
নয়কো মুখ ফুটে বলিবারে।
গোপন ব্যথার মতোই গোপন
থাকে প্রকাশিত হৃদ মাঝারে।