রোখশানা রফিক এর সকল পোস্ট

রোখশানা রফিক সম্পর্কে

I'm a mom, teacher, designer, poet, social worker, own home maker, a visionary dreamer.

কবিতা

2964

বৃন্ত থেকে একটি
কুঁড়ি ঝরে গেলে
গাছের আরও
পুষ্পদল মেলে।
কিন্তু তা বলে
ঝরে যাওয়া
ফুলের ব্যথা
মেটেনা কোনো কালে।

এরা বন্ধু হয়ে ঝরে যায়,
এরা ভালোবেসে সরে যায়,
এরা ঘর বেঁধে দলে পায়,
এতে এরা খুব ভালো পায়।

আমার মনের অপার করুণা,
সব ঝরে যাওয়া পুষ্পে বোনা,
এসব মূর্খের তরে, অন্য কারো না!

কবিতা

2951

জীবন আর মৃত্যুর মাঝখানে
ঝুলে আছি হসন্ত, দাঁড়ি-কমা না।
হয়নি করা জীবনের লেনাদেনা,
ওপারের জীবন সেও অচেনা।

আঁজলায় জল নিতে গেলে,
গলে পড়ে আঙুলের ফাঁকতালে।
মেঠো বাউলের একতারা হলে,
ঘরের মায়া পিছু টান ফেলে।

মুহূর্ত গুলো ঠিকই যায় চলে,
জীবন্ত বেঁচে আছি নাকি আমি
বেঁচে আছি মৃতদের মিছিলে?
এতোসব হিসাব নিলে কি আর
বহতা জীবনের অংক মেলে?

স্বপ্নের মুঠো মুঠো ফুল

জীবন আমাকে ছেড়ে গেছে
এক প্রত্যুষে, তবু টুকরো টুকরো
জীবন খুঁজে পাই নিত্যদিন।
বেদেনীর ঝুড়িতে লুকানো লাল-নীল
ডোরাকাটা সাপের মতোন
হঠাৎ উঁকি দেয় দুঃখ-সুখের
রেশমী কিংখাব।

না দেখা স্বপ্নগুলো বাতাসে
ফিসফাস কথা কয়, আমি আলতো
মুঠোয় ধরতে গেলে রোদের ফুল হয়ে
তারা চুঁইয়ে পড়ে মাটির কোলে।
বিকেলের স্নিগ্ধ আসমানে তারা
টালমাটাল ঘুড়ি হয়ে ওড়ে অন্য
কারো আকাশে। রাত্রি গভীর হলে
আমাকে ছোটায় নীহারিকা থেকে
নীহারিকা পুঞ্জে।

গলে পড়ে যায়, ভেঙে চুরচুর,
পুড়ে হয় ছারখার, ভিজে
জেরবার। তবু বেয়াড়া স্বপ্নগুলো
আরো জোরেশোরে এঁটে বসে,
আমার সজল আঁখিপল্লবে
যখন তখন।

জানালার ঝাউগাছটি

অপরূপ দেহভঙ্গিমায় সারাদিন দুলে দুলে
বাতাসের কানে কানে কথা কয় জানালার ঝাউগাছটি। পাখিরা তার ডালে ডালে উড়ে উড়ে ঘুরে বেড়ায়। পড়া ভুলে একটি বালক নির্নি্মেষ তাকিয়ে রয় তার দিকে।
প্রখর সূ্র্যালোকেও কিছু অন্ধকার লেগে রয় তার পাতার ফাঁকে ফাঁকে। যেন অজানালো্কের কোন্ এক আলো আঁধারির রহস্য খেলা করে।

কাজের অবসরে এই ঝাউগাছের দিকে
মাঝে মাঝে তাকিয়ে থেকে মন এক অনাবিল প্রশান্তিতে ভরে উঠে। হে বনঝাউ, তোমার পেছনে দাড়িয়ে
থাকা নীল আকাশ যেন তোমার অবয়ব বুকে ধারণ করে আরো বেশী নীল হয়ে উঠে। তোমার বহু বছরের বেড়ে ওঠার স্বাক্ষী এই আকাশ।

ছোট্ট চারাগাছ থেকে জীবন শুরু করে আজ তুমি পূর্ণ যুবতী এক বৃক্ষ। তোমার পাতার গোলাকার বিস্তার থেকে হঠাৎ বেড়ে ওঠা দুটি বিশালাকার ডাল যেন কোন
অপরূপা পরীর মেলে দেয়া দুটি ডানা।
তোমার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে
কেবলই মনে হয়—–তো্মার-আমার এই জীবন যেন অসীম অনন্ত, মহাকালের বিলীন গতিতে যেন কোনদিন শেষ হয়ে যাবার নয়, যেন ধরনীর বুকে চির যৌবনা।

পেন্ডুলাম

index

এক মহামারীর মড়ক পেরুনো
সকালে ঈদ এলো
আমাদের উঠোনে।
এক ঝাঁক স্বজন হারানোর ব্যথা মাটি চাপা দিয়ে মন
তুই চল ঈদগাহ ময়দানে।

আজকের ঝলোমল আলো
আঁধারের ইশারা বয়ে আনে। কর্মহীন শ্রমিকের ঘরে না ফোটা দু’মুঠো অন্নে, কৃষকের ঘাম ঝরানো
না বিকোনো পণ্যে,
বুকভরে শেষ নিঃশ্বাসটুকু
নেবার কাতরতায় দুর্মূল্য হাহাকারের অক্সিজেনে,
তালগোলে মিশে থাকা
কোর্মা-পোলাও আঘ্রাণে, আমরা ক্রেতা আজ হতাশার বিপনি বিতানে।

এই আছি শ্যামল মাটির মায়ার টানে, এই নেই যেন
আর পৃথিবীর কোথাও কোনোখানে, বিরামহীন পেন্ডুলামের মতোন দুলছি
সবাই, জীবন আর মৃত্যুর ঠিক মাঝখানে।

পালাবদল

মানুষকে ভালোবাসতে গিয়ে
যখন নিজেকে নিঃস্ব করে তুলি,
ঠিক তখনি তারা নিজেকে দেবতা ভেবে,
নিজের উচ্চতার চেয়ে উঁচু হতে গিয়ে,
হুড়মুড় করে ভেঙে খানখান হয়ে পড়ে।

আমি তখন লজ্জায় মাটিতে মিশে
যেতে যেতে, অযত্নে পড়ে থাকা এক
বীজের থেকে অংকুরিত হয়ে,
মহীরুহের সতেজ ডালপালা
মেলে দেই পাখিদের জন্য।

পাখিরা আমায় আকাশ ভাবে, ফুলে ফলে ভরা কানন ভেবে জড়িয়ে দেয় নিঃসীম
মায়ায়। সেই মানুষ গুলি এবার আমায় আরাধ্য ভাবে, স্তুতি গান করে প্রতি
জ্যোৎস্নায়।

কিন্তু হায়, তোমার আকাশে যাকে অজস্র তারার মাঝেও দাওনি ঠাঁঁই, অন্যের আকাশ থেকে তার পূর্ণিমা আলো চুরি করে নিতে চাও বলো কোন দুঃসাহসে?

কুরবানী

ku

এই মহামারীর ভয়াল দিনে-
তোমার ফ্রীজের এককোনা
নয় রইলো এবার একটু খালি,
খালি পেটের একটি মানুষ
তা দিয়ে মাংস-ভাত খেলো
ক’দিন পেটপুরে এক থালি।

ইব্রাহিমের পুত্র ইসমাঈল
যখন গিয়েছিলো কুরবানীর
প্রথম ছুরির তলে,
ডীপফ্রীজের নামখানি কেউ
শুনেছিলো সেই কালে?
তাহলে কুরবানী দিয়ে
সেটি ভরে রাখা আজ,
জায়েজ করে নিলে তুমি
কোন ফতোয়ার বলে?

মিসকিন আর প্রতিবেশীদের
হক পূরণের পরে, বুক ফাটে
তবু মুখ ফুটে চায় না, এমন
কাউকে ভেবে নিতে পারো
যদি “আপন” বলে, বিলিয়ে
দিও তোমার ভাগের কিছুটা
তাকে ডেকে নিয়ে নিরলে।

তার খালি পাত ভরে উঠুক
ক’দিন তোমার ভাগের গোশে,
মরমি কবি ভেবে দেখে বলে,
তাতে কিন্তু অশেষ পূন্য মেলে!

কবিতা

23014_n

রাত্রির চেয়ে নিঃশব্দ
কিছু সময় আসে,
তখন কথারা চুপিসারে
ঝরে যায় গাছের পাতার
মতোন, কেউ তা শোনে না।

এসব ঝরে যাওয়া
কথাগুলো একা কাঁদে
খুব আনমনে, যেন কেউ
জানতে না পারে, বুঝতে
না পারে কোনোভাবে।

জীবনের ঘূর্ণিপাকে
যার যার না বলা কথারা
ঘুরপাক খায় অবিরত,
তারপর একদিন তারা
স্থির হয়ে বসে, তাহাদের
সমাধিফলকের এপিটাফে।

ফাগুন এসে ফিরে গেলো

547292

ফাগুন এসে ফিরে গেলো,
মধুপের গুঞ্জন, প্রজাপতি রং,
ডানা মেলা পাখি বসন্ত বউরি,
এলোচুলে সুবেশী নারী, খোঁপায় গাঁদা,
ক্যাম্পাসে হাঁটা, ধুলো উড়া মেলায়
বিকেলের আড্ডা জমজমাট,
আকাশে চিকন একফালি চাঁদ,
মেঘেদের লুকোচুরি, কবিতার পংক্তিমালা।
সব সব সব বৃথা পন্ড হলো,
তুমি ফিরে আসোনি বলে।
তাই ফিরে গেলো,
বনে বনে ফাগুন
এসে ফিরে গেলো।

মেলোডি অফ অক্টোবর রেইন

index

💦💦💦💦💦
চাঁদ মুছে যায়
বৃষ্টি ধারায়,
পাখিদের ডানা
হয়ে আসে ভার।
এসবের কারণ বুঝি,
বুঝি না কেবল
মন খারাপের মানে।
মন তুমি উদাস কেন
মধুর বাদল দিনে?
কে ছিলো তোমার?
কে নেই আর?
কবে কার কথা ভেবে
বেঁধেছিলে ফুলহার?
এমন তো কোনো
পদধ্বনি তুমি
শোনো নি মনের মাঝে।
তবু বৃষ্টিতে রিনিঝিনি ব্যথা
কেন মনো মাঝে বাজে?

দ্বন্দ্ব

আয়াতের মতো পবিত্র
স্মৃতিতে বসতি তোমার।
পথঘাট ভুলে যাই আজকাল,
বেভুলে ফেলে আসি বাজার।
শুধু তোমার নামে গাঁথা মালা
জলে ভাসাতে গিয়েও
থাকে তোরঙ্গে তোলা।

তুমি ভুলেছো সহজেই
ভালোবাসো নাই বলে,
আমার কাছে তবে অমোচনীয়
হয়ে কেন এমন ধরা দিলে?
ভুলে গিয়ে খুব ভালো আছো বুঝি?
ভাবছো আমি আছি মন্দ?!
মধুর যাপন স্মরণে মধুরতর হয়,
একথা বুঝলেই থাকবেনা মনে দ্বন্দ্ব।

ছল

মনে রাখো নাই যদি,
তাহলে ও চোখ কেন
আমারই কথা বলে?
মেঘের আড়ালে চাঁদ
ঢেকে গেলে জোছনা
দেখার ছলে?

“মনে নাই আর” বলে
কাহারে বোঝাও? নিজেকেই
নাকি আমারে? আমি কেন তবে
আমাকেই পাই তোমার যাপিত
প্রহরে?

খুব করে হাসি, খুব করে
কাঁদি, এ প্রহসন দেখে তোমার।
আসলে চোখে চোখে জেনে
গেছি আমি, যে কথা ছিলো
জানিবার!

হিসেবী সময়

হায় প্রেম! তোমার চোখের দিকে চেয়ে,
আজো কাঁদি বসে আমি একা।
সন্ধ্যানদী ফিরে যায়
রাতের মোহনায় আমার ছেঁড়া
স্বপ্ন বয়ে নিয়ে।

তারপর নিশুতি চরাচর আমার
চোখের দিকে চেয়ে জাগে রাত।
ভোরের আলো ফোটে
প্রদোষবেলার পাখির কলতানে।
আবারো হিসেব গুনে গুনে
আঙুলের কড়ে বুঝে নিতে হয়,
একা বয়ে যেতে হয় নদীটির
জীবনের বিকিকিনি হাটের দোকানে।

না বলা কথা

আমি কাহারে কি যেন
বলিতে চাই! সে কথা থাকে
চোখে, মনের গভীরে,
বুকের গোপন ভাঁজে।

কিছু বলি তার আনমনে,
কিছু শোনাই মেঘ পাখিদের,
কিছু দিয়ে গাঁথি মালা গল্পের।
তবু ফুরোয় না!

এরা রয়ে যায় না বলা কথা হয়ে,
না পাওয়া স্বপ্ন হয়ে, না দেখা
ভোর হয়ে। তবু ঘুরেফিরে কি কথা
যেন আমি কাহারে বলিতে চাই!
কাহারে বলিতে চাই সে কথা আমি?
আমি নিজেও কি তা জানি ছাই!

তুমি এলে

তুমি এলে সন্ধ্যা মাড়ায়ে
তারার ঝিলিক নিয়ে,
রাতের দীর্ঘশ্বাস কামিনী সুবাস
এলোচুলে জড়ায়ে।

তুমি এলে শান্ত শ্রাবন বেলায়
কোমল বাতাস হয়ে,
লজ্জাবতী কুঁড়ির মতো
নরম আলো ছড়ায়ে।

তুমি এলে ঘুমে নিঝুম
নকশী কাঁথা আদর নিয়ে,
জল ছলছল চোখে
মেঘলা দিনের মতো গেলে বয়ে।

তুমি এলে অপার আকাশে
একবুক শান্তি হয়ে,
তুমি এলে হৃদয় মাঝে
কিংশুক হাসি ছুঁয়ে।