রোখশানা রফিক এর সকল পোস্ট

রোখশানা রফিক সম্পর্কে

I'm a mom, teacher, designer, poet, social worker, own home maker, a visionary dreamer.

বেদনার্ত বর্ণমালা আমার

যখনই মিছিলে মিছিলে দৃশ্যমান তোমার মুষ্টিবদ্ধ হাত দৃপ্ত শ্লোগান,
দুরুদুরু কাঁপে মন অামার তোমারে
হারাবার না লেখা রক্ত ইশতেহারে।

৫২’র সেই একুশে তারিখে
ফাগুনের রৌদ্র ঝরা অাগুনবেলায়,
ঝাঁঝরা বুকে যাদের পরিধেয় হয়েছিলো রক্তিম লাল পলাশের প্রাতে,
কোনো এক প্রিয়া চুপিসারে
তার কতো বেদনা সয়েছিলো বলো মেহেদী রঞ্জিত হাতে?

মনে হয়, যুগে যুগে জনমে জনমে
এই তোমারেই হারাই আমি পথের শেষে,
শুধু এই জনমেই নিও অঞ্জলি তুমি
কাছে এসে ভালোবেসে।
কেন, কেন বলো মৃতুছায়া বারেবার
কেড়ে নেবে আমার প্রিয়রে বাংলার বুকে,
দ্যাখোনা চেয়ে বর্ণমালা আমার শোকে মূহ্যমান আজ দারুণ অসুখে ???

মন খারাপের দিনে

কান্নার রঙ ধুয়ে গেলে
পড়ে থাকে কিছু বেদনা।
তারা বড় ব্যথা দেয় প্রাণে।
মিছে মনে হয় চেনা চারপাশ।

এযেন এক মুহুর্মুহু জ্বলতে
থাকা অগ্নিবলয়, লাভার বিচ্ছুরণে
পুড়ে যাওয়া সবুজ গ্রামের প্রেতাত্মা। যেখানে প্রেম ছিলো,
ছিলো জলের নহরের মতোন
অনিবার সুখের ধারা, হাসিমুখ ছবি।

সন্ধ্যা ফুরোলে তারা যেন
ডুবে যায় আঁধারের সাথে দিনের
আলোর মতোন। কিছু চুপচাপ
ধুলো শুধু পড়ে থাকে অনাহুত
এক অচেনা পথের ধারে।

রাত্রির রূপ

আমার সুখ প্রহরের পাখি ডেকে ওঠে কুহুস্বরে নিদ্রাহীন নিশীথরাতে। স্ব্প্নভঙ্গের হতাশা কুরে কুরে খায় হৃদয়নীল বেদনা তাহার। ঝরে পড়ে ঘন তমসা রাত্রির ভরাট স্তন থেকে।

কার যেন ঘুম ভেঙ্গে যায় তিনপহরের ধবল জ্যোৎস্নার ডাকে। হাতছানি দেয় কুয়াশায় মোড়া সুপারীর বন। ডেকে নেয় প্রেতযোনী তন্দ্রার গভীরে।

ঘুম ঘুম চেয়ে দেখি নিশীথিনীর মায়াবী স্বরূপ। অনুভবে সেতারের সুর ঝংকৃ্ত অনুরণন। মিছে আমি খুঁজে বেড়াই আমার আমিকে রাত্রির কোমল রূপের ভান্ডারে।

জলরঙ

জলরঙে আমি সুখ আঁকি,
ধুয়ে যায় তা বৃষ্টিতে।
কিছু তার তবু লেগে থাকে
চোখের ক্যানভাস দৃষ্টিতে।

সুখ ঝরে যাওয়ার পরে
অবশিষ্ট থাকে যেটুকু
সুখের মতো রঙ,
সে ও কম নয়
সাজাতে জীবন
ছবির মতোন।

ভালো থাকা অভ্যাস এক,
যদি থাকো ভালো অবিরত।
দুঃখটাকে মুছে দিলে ইরেজারে,
সাধ্য কি তার তোমার মনে
এঁকে দেয় বেদনার মতো
কোনো এক ক্ষত।

মহাকাল

পাখির ডানায় সন্ধ্যা নামে নিষিদ্ধ রাত্রির ইশারায়, জামের ডালে হুতোম প্যাঁচা ঝিমায় ধ্যানমগ্ন চোখে। উড়ুক্কু মাছের পাখনায় চাঁদের আলো চিকচিক ঝলকায়। রূপালী চাঁদের বুকে গ্রহন লেগেছে মহাকালের।

আমি আর মহাকাল হাত ধরে হাটি পাশাপাশি। ফিসফিস ঘুমপাড়ানী সুরে সে আমার কানে কানে কয়… “যখন যাবার হবে সময়, তখন পিছু ফিরে দেখে নিও একবার জীবনের সাতরং। ফুরিয়ে যাবে তুমি, আর আমি অন্তহীন।”

কি এক অজানা দুঃখ ভর করে মনে। আহা ! যদি হতে পারতুম চন্দ্রিমা রাতের স্নিগ্ধ ছোঁয়া পৃথিবীর চোখের পাতায়। থাকতো না ফুরিয়ে যাবার ভয় অবেলায় অবহেলায়।

রোদেলা উড়াল

এইতো ভাসিয়ে দিলাম
সী-গাল ডানার রোদ্দুর দিনে মন আমার। তুমি ঝিনুক কুড়োনো ছলে
তুলে নিও প্রিয় হৃৎপাঁজরে।

হারাবার সুখে মগ্ন একান্ত আমি,
ঠাঁই নেই মেঘকালো বিরহবেলার
আজ এই ক্ষনে।

তবু ভুলে যদি ভুল অভিমানে
ভুলে থাকো, জেনো রোদ পিয়াসী
সিম্ফনি সুর বেজে বেজে ফিরে যাবে তোমার অগোছালো আনমনা রাত্রি প্রহর শিয়রে কেঁদে।

তপ্ত কপোলে ক্লিন্ন রোগশয্যায়
যদি রাখি হাত বড় করুণ এক
মায়াবতী সন্ধ্যায়, তবুও কি ফেরাবে আমায় অবহেলা মাখা তীক্ষ্ণ শরের
সহেনা যাতনা মাখা একলা লাগা অন্তরের অন্তঃপুরে?

গল্প

কাছে আসার গল্পটা
ছিলো মায়াবী,
দূরে যাবার গল্পটাও
দারুণ। মাঝখানে আটকে গেছে
কিছু অলীক সময়ের ভ্রুণ।

সে এক সুগন্ধি দিন ছিলো,
রাতগুলো তারায় ভরা,
মাঝনদীতে জোয়ার ছিলো,
প্রেম ছিলো বাঁধন হারা।

এখন ফুরালো বেলা,
উজান-ভাটির খেলা,
তুমি যাও যেদিক পানে,
আমি বিপরীতে যাই,
মরণ যমুনা তবু একই দিকে
যেখানে সকলেই নাও ভেড়াই।

কি চাহ হে বিষাদ?

আমাকে থামিয়ে দিতে চাও, হে বিষাদ?
বুকে আমার অতলান্তিক ঢেউ,
চোখে নিযুত স্বপ্নসম্ভার,
প্রাণে সবুজের বসতি।
তুমি কি করে পারবে
থামাতে এ অশ্বের
দুর্বার গতি?

প্রকৃতি মাতা আমার,
পিতা এ বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড।
হাতে নিয়ে জয়ের মাল্য
জন্মেছি আমি ধরণীর বুকে।

আমাকে থামাতে চেও না,
হে বিষাদ। হতাশায় থমকে
যাবে তুমি, যদি গ্রহণের কাল
ছায়ায় ঢেকে দিতে চাও
এমন অমিত সূর্যালোকের প্রভা।

নতুন বছর

সোনাঝরা পথের মতোন
সমুখ জুড়ে আছে নতুন লগন,
কুঁড়ি যেমন প্রস্ফুটিত ফুলের বনে,
তেমনি নতুন বছর যাক সাফল্যের বীজ বুনে।

জানুয়ারীর হিম হিম দিন কাটে
ভাপা পিঠা রোদ মাখা বারান্দায়,
ফেব্রুয়ারি হয় রঙিন বইমেলা আর
একুশে প্রভাতফেরীর নগ্নপদ আঙিনায়।

মার্চ-এপ্রিলের ঘামঝরা দিনে,
কালবোশেখী আসে রুদ্র প্রহর গুনে।
মে-জুন জুড়ে থাকে ফলের মেলা,
আম-জাম-কাঁঠালের ছুটির খেলা।

জুলাই-আগষ্টে দিন বরষা ঘন,
সেপ্টেম্বর-অক্টোবরেও
সে রেশ রয়ে যায় যেন।
নভেম্বর-ডিসেম্বরে শীতের আগমনী,
নতুন বছর আসে নিয়ে সাজানো মালাখানি।

শুভেচ্ছা স্বাগতম ২০২০,
সবার মনে আশার আলো
তুই জ্বেলে দিস।

সময়ের আঁচড়

যেন বহুযুগের ওপার হতে
ভেসে এলো তোমার কণ্ঠস্বর বিকেলের টেলিফোনে। বয়স বেড়েছে ঢেড় দু’জনের,
কালো চুলে লুকোচুরি খেলে রূপোলী প্রজাপতি।
অনামিকা সাজেনি আংটির আড়ম্বরে, বরং স্টেন্টের গহনায় সেজেছে কোমল হৃৎপিণ্ড।

একটা সময় ছিলো এই কণ্ঠস্বরে বয়ে যেতো
সাত সাগরের ঢেউ, আমার উপকূলে তারা আছড়ে
পড়তো ফেনিল উচ্ছ্বাসে। সেসব স্তিমিত আজ, ক্লান্তি জমেছে বুড়োটে গলার ভাঁজে।

সময় সকলি কেড়ে নেয় আমাদের,
শুধু কেড়ে নিতে পারেনা চোখের কোণজুড়ে
হাসির প্রলেপ আর হৃদয়ের বাঁধভাঙা কোলাহল।

ভুল

ভুল
——
তোমার আঙিনায় বৃষ্টি এলে, আমার রৌদ্রদিন ভিজে যায় ঝরোঝরো বাদলায়। হিম হিম এক হাওয়া নেমে আসে কোন সুদূর অনন্ত থেকে। হলুদিয়া পাখিটির ভেজা পালক কাঁপে থরথর থরথর।

চোখ ডুবে যায় অকাল প্লাবনে। মন ভেঙে যায় ঘোর তুফানে। ঝরোঝরো ঝরে যায়, ঝরে যায় কামিনী-কেয়া।

চায়ের কাপের উষ্ণ ধোঁয়ায় সন্ধ্যা ঘনালে আকাশ প্রাঙ্গনে, ঝিকিমিকি তারারা বলে ওঠে, বৃষ্টিদিন কোথা? এ যে প্রশান্ত পারের শরতের পাতাঝরা চাঁদনী রূপের পসরা। ভুল ছিলো তবে ভাবনা আমার সকলি কেবল ?

আড়াল

কে তুমি কথা কও
আমার বুকের মাঝে
বসে সকাল-সাঁঝে?
কে তুমি আড়ালে থাকো?

আমি সুর সাধি,
আমি গান বাঁধি,
ইশারায় তোমারে
চেয়ে। কুয়াশা নদীতে
পড়ে নাকো ধরা, অলখে
হৃদয়ে যায় সে নেয়ে।

কতোদিন আর রবে সে
আড়ালে, খুঁজে খুঁজে প্রাণ
উন্মুখ। চোখের সায়রে চোখ
পড়ে গেলে, বোঝা হয়ে যাবে
আমাদের লুকানো যতো দুখ।

নেশাঘোর

কোন কোন কোকিল
বসন্ত এসে যাবার
আগেই ডেকে ওঠে।
কিছু ফুল আঁধারেও ফোটে।
তেমনি মানুষও কখনো কখনো
তিমিরের নেশায় শুধুই ছোটে।

তার ভালো লাগে না
দিবালোক, ভালো লাগে না সঙ্গীত,
না কাব্যকলা, না নৃত্য ঝঙ্কার।
শুধু মারণ নেশা তাকে টেনে নেয়
প্রতি সন্ধ্যায় আহুতি দিতে নিজেরে।

ক্ষয়ে যায় হৃৎপিণ্ড তাহার,
ক্ষয় হয় মন, চিন্তা-চেতনা,
আঁধার ভালোবেসে আঁধারের
বুকে জাগে মরণ ভালোবেসে
সে যে।

স্বপ্ন

তুমি জেগে আছো জানলে
আমার ঘুম হয় ভালো, ভাবি
আমাকেই ভেবে জেগে আছো।
তুমি যদি বিরহ যাপনে মগ্ন,
আমি মাতি সুখোল্লাসে।

তুমি বৃষ্টিতে ভিজলে ভাবি
লুকিয়ে চোখের জল আমাকেই আঁকো।
তুমি চন্দ্রাহত হলে বুঝি অমাবস্যা আঁধারে
এ মুখ যাবে না দেখা তাই তো স্বপ্নে মাতো।

আত্মরতিতে মগ্ন যখন তুমি,
আমি জানি কারে তুমি ভাবো।
এতোসব জেনে হয় যদি কিছু হোক,
সুখী হবো যদি ফুটপাত জনারণ্যে
একদিন এই হাত ধরে হাঁটো।

বিরহ-বাসিনী

ভালোবেসে নাহয় দুঃখ
পেলাম অকারণে আমি,
তাই বলে কি দেবতা
আমার ধুলিতে যাবে নামি?

বিরহ তবু সয়,
জ্বালা কন্টকময়,
প্রতিদানে কিছু চাইনি।
তুমি থেকো আকাশচারী
আমি রবো ধরাতল বাসিনী।

কাঁটা তবু সয়,
হোক ব্যথাময়,
করুণা কখনো চাইনি।
তুমি অবহেলা ভরে
এর চেয়ে বেশি কিছু
কখনো আমায় দাওনি।