রোখশানা রফিক এর সকল পোস্ট

রোখশানা রফিক সম্পর্কে

I'm a mom, teacher, designer, poet, social worker, own home maker, a visionary dreamer.

পরবাসী মন

পাখি দুপুরে আমি
ঘুমাই নিরলস,
স্বপ্নার্ত, বেদনাহীন।
কিছু মেঘ এসে বাসা বোনে
আমার বারান্দার কার্ণিশে,
তারা অশ্রু ঝরায় চুপচাপ,
টুপটাপ। আড়মোড়া ভাঙে
আকাশ নীল রঙ ঝরিয়ে।

পাখি একা ফিরে যায় অরণ্যে,
আমার মনটাকে চঞ্চুতে গেঁথে
নিয়ে। ফুল ঝরে যায় তার
পাখনার ঝাপটায়।

দূর পাহাড়ে নীড় বেঁধে
আমার মনটাকে পোষে
সে পাখি পালকের ওমে।
আমি বসে থাকি আনমনা
তার আসার আশায় পথ চেয়ে।

ভোরের হুইসেল

ঝিম ধরে আছে সময়ের ট্রেন।
ছু৳ছি সবাই , কিন্তু যাচ্ছি না কোথাও।
অবিরাম ঝরে পড়ে ভোরের কুয়াশা
দিকশূন্যপুরের স্টেশন এ।

দূরে শোনা যায় অনাগত দিনের হুইসেল।
চোখে তারে যায় নাকো দেখা।
কেবলি শঙ্কা-ভয় ঠাঁই করে নেয়
হৃদয়ের ফাঁকা প্ল্যাটফর্মে।

তবু হৃদয়ের ‘পরে রেখে আলগোছে
হৃদয়ে জমানো ব্যথা, খুব নিঃশ্চুপে
পার হতে হয় জীবনপুর জংশন।
থেমে থাকে নাকো,
ট্রেন চলে যায় বহুদূরে।

দূরের যাত্রী

আমি নাহয় বেঁধেছি
পথের ঠিকানা
বহুদূর দিগন্ত পেরিয়ে
সে কোন নিরুদ্দেশে।
তুমিও চাওনি কখনো
বাঁধতে নিবিড় আলিঙ্গন
ভীরু বাহুপাশে।

একা হেঁটে গেছি,
একা ক্ষয়ে ক্ষয়ে
একা ঝরে গেছি,
ভোরের মৃদু হাওয়ায়
ঝরা বকুলের মতো।
প্রখর রৌদ্রতাপে পুড়ে
গেছে বুকের কুসুমিত
শতদল। তবু কিছু সৌরভ
রেখেছি লুকিয়ে শুকনো
কুঁড়ির ভাঁজে।

চৈত্রের ঘূর্ণি বাতাস
হাহাকারে কেঁদে গেছে
ঝরা ফুলেদের হাওয়ায়
উড়িয়ে। আমি ভেসে
গেছি সে তাণ্ডবে,
তুমি মগ্ন ছিলে আতশবাজির
চোখ ধাঁধানো উল্লাস উৎসবে।

আমার আমি

আমার আমি কখনোই
আমাকে একা করে দেয়
না, একলা লাগা সময়েও
ছায়া হয়ে থাকে পাশে,
সুর হয়ে গুনগুন গায়
কর্ণকুহরে, ব্যথা হয়ে
বাজে কবিতা প্রহরে।

আর আর লোক ঘৃণা করে,
ঈষৎ ঈর্ষা, বহু মান-অভিমান,
কপটতা আছে, আছে ছলচাতুরী,
মিছেমিছি বন্ধু সাজার ভান ভণিতা।

তারচেয়ে আমার আমিটা
ঘুমপাড়ানিয়া গান নিঝুম রাতের,
জোছনায় বাসর জাগে নিজেরই সাথে, লক্ষ্মী পেঁচা হয়ে সন্ধ্যা নামায়
আমার কুটিরের চালে, কোমল হাতে কুড়োয় ভোরের শেফালী।

একা নির্জনে তোমাদের হাহুতাশ
শুনে অট্টহাসি হাসে আমার আমি,
অযাচিত অন্ধকারে হাতড়ে ফেরো
যখন তোমরা তোমাদের নিজস্ব
তুমিকে ছেড়ে পরদেশী মেঘের দুয়ারে।

দূরের ছায়া

টিপটিপ বৃষ্টির
এই রাতের কামনায়,
আমি আনমনা দূরের ছায়ায়।
তবু আছি বেশ ডুবে সে ভাবনায়।

খুব সুরেলা এক নদীর মতোন
গান বাজে এ রাতে লাল টালিছাদে,
টিনের চেয়ে মোলায়েম ছন্দ তার।
তুমি কান পাতো, ঠিকই পাবে ঘ্রাণ,
এ মধুছন্দ, যতো দূরে রও আজ।

তুমি নেই বলে এই ক্ষন সুমধুর,
বিরহবিধুর সুর তুলে এই মনে।
পাশে থাকলেই চায়ের চুলোয়
ফুটন্ত মেজাজ ঢেকে দিত একে
প্রাত্যহিক গ্লানিমাখা আত্মহননে।

( আসলেই টিপটিপ বৃষ্টি এখন আমার টালির ছাদে )

ভুলের ফসল

চোখের পলকে কিছু ভুল
লেগে থাকে। কিছু ভাবনারা
রাত্রি জাগে আমার।
কিছু ফুল ফোটে
তুমি আর কারো
খোঁপায় পড়াবে বলে।
কিছু কথা আমূল ছুরি হয়ে
বিঁধে থাকে বুকে।

কথাগুলো ফুল হয়,
ভুলগুলো মেলে দেয়
শতদলের পাপড়ি।
কিছু তার ঝরে পড়ে
শিশিরের মতো টুপটাপ।

তবু খুব ভালোবাসি
এই ভুলের ফসল।
ফুলগুলো কোঁচড়ে
নিই তুলে। খুব করে
চাই, আসছে জনমে
এমন একটি ভুলের
ফসলে ভরে যাক
আমার শস্য ভাণ্ডার।

শুকতারা

ফুলের মেলায় রঙের খেলায়
হারায় যদি মন, ভ্রমর যদি
চাঁপার বনে ছড়ায় গুঞ্জরণ।
সবুজ পাতার মুখর হাসি
যদি হাওয়ায় কাঁপন তোলে,
যদি জুঁই, চামেলী, মল্লিকাদল
মন্দ মধুর দোলে।

উদাস সুরে রাতপাখি গায়
ঘুমভাঙ্গানি গান,
মেঘের বুকে লুটিয়ে পড়ে
চাঁদের অভিমান।
দু’চোখ যদি জলে ভরে
কান্নামদির রাতে,
বুঝে নিও ভাবছি তোমায়
সেই শুকতারা প্রভাতে।।

হাওয়ার গান

চঞ্চল চড়ুইয়ের ঝাঁক
যখন দলবেঁধে নেমে আসে
বৃক্ষশাখায় তাহাদের
দোল খাওয়া নীড়ে,
নীল আকাশ
সন্ধ্যার লালিমায়
ফিকে হয়ে যায়
আজান ধ্বনিতে।

হাওয়াগুলো আলতো
ছুঁয়ে যায় গাছেদের শরীর,
হিম হিম কুয়াশার মৃদু আভাস
ফিসফিসিয়ে বলে
শীতের আগমনী গাঁথা।

সেসময় নির্জনে বসে
দিগন্তে চোখ মেলে
আমি ফিরে আসি আমাতে,
তোমাকে সঁপে দেয়া আমার
কিছু সঙ্গোপন ভালোবাসা,
হাওয়ায় হাওয়ায় মুঠো মুঠো
ছড়িয়ে।

তাল-বেতাল

সুদে-আসলে পাওনাটা
বুঝে নিতে গিয়ে,
তুমি হারিয়ে ফেলেছো
নিজ অস্তিত্বই,
বাঁচার মতো বেঁচে
থাকা চাই, নাহলে
ঝঞ্ঝাট লাগে যে সবই।

ভাঙতে পারি হঠাৎ ঝড়ে,
মচকাবার মানুষ নই।
উড়াতে না পারি ইচ্ছে ঘুড়ি,
ফানুস কিছু স্বপ্নে উড়াবোই।

আমার সুরে এসো না মেলাতে,
তোমার বেসুরো সুরের তাল।
তালেগোলে অন্তঃমিলে
বরবাদ হবে সব গোলমাল।

অসীম অনুভব

ধ্যানমগ্ন কিছু অনুভবে
রফরফ ঘোড়ার গতিতে
মন আমার অসীমে ধায়।
কি যে বিপুল দুঃখ রাশি
বুকে বয়ে নিয়ে চঞ্চলা
পৃথিবী হায় একা পথ
চলে নিরাশায়!

তুমি কেন তবে
দুঃখ পুষে রাখো
মনের ছোট্ট ঘরে?
দিন চলে গেলে
দিবসের শেষে সব
ধুলো হয়ে রবে পড়ে।

ঠিকানা হারিয়ে খসে
পড়ে তারা বিপুল এ
মহাকাশে। আমাদের
সুখ দুখের গল্প
অতি ক্ষুদ্র তার
সকাশে।

নীলকমল

নীলকমল জলে দুঃখ ভাসানো
সজল মেঘের বেলা,
হরিদ্রা বনে তোমার সনে
প্রণয় মুখর খেলা।

কিছু অভিমান, কিছু কষ্ট-কাঁটায়
বেজে গেলে বাতাসের সুর,
খেয়ালী রাগে লিখে পাঠাবো
আদুরী কাব্যকথা নুপূর।

রোদে জলে পোড়া খাঁটি আনকোরা
মানুষ তো সোজা নও জানি,
তবু যদি না ভাঙে অভিমান ঘোর
গোধুলী আদরে রাঙাবো
সোনা রঙ মুখখানি।

মেঘস্নান

মেঘস্নানে এসো বালিকা তুমি
এসো বৃষ্টি নুপূর পায়ে,
এসো বিজলীর মনিহার পরে
জোছোনার শাড়ী গায়ে।
তারাদের ফুল খোঁপায় গুজে
চোখে আঁধারের কাজল,
দু’ফোটা অশ্রু চোখের কোলে
হৃদয় কুসুম কোমল।

জলছবি নদীর নাকছাবি পরে
ঝোড়ো বাতাসের উত্তরীয়,
গাঙের ঢেউ থেমে যায় যদি
কাছে তারে ডেকে নিও।
ডেকে নিও তুমি অশোকের বনে
কৃষ্ণপক্ষ রাতে,
ঘোর ভাঙ্গে যদি মুনিয়ার ডাকে
আজান ভোরের প্রাতে।

যদি নাই ডাকো একলাই যাবো
মেঘমল্লারে বেজে,
সে সুরের তানে উঠবে তুমিও
ফুলপল্লবে সেজে।।

স্বপ্নটা সত্যি ছিলো?

স্বপ্নে সেদিন ভোরবেলা
মা এলেন অনেক
দিনের পরে।
আগের মতোই টলটলে
মুখে মায়াবী সরল
চাহনি, আগলে আছে
অস্তিত্ব আমার।

বাবা যেন আশেপাশেই
আছেন, টের পেলাম তার
থাকাটা। আমি ছিলাম
ব্যস্তসমস্ত অকাজের
কোনো কাজে।

আমায় ডেকে ডেকে
ক্লান্ত হয়ে অবশেষে
মা চলে গেলেন।
কোথায় গেলেন?
অবাক হয়ে দেখলাম,
দূরত্বের বেড়াজাল পার
হয়েও তাকে দেখতে পাচ্ছি
অবিকল আমি।

অভিমানে ডুকরে বলি,
“আমাকে না নিয়ে
চলে গেলা মা তুমি?”
মৃদু হাসলেন জননী আমার।
তখুনি জেগে উঠে দেখি,
মন খারাপের রঙ নিয়ে
মেঘলা সকাল পড়ে
আছে আমারই পদপ্রান্তে।
________________

( দুদিন আগের স্বপ্নে এমনি করেই মা ছুঁয়ে গেলেন আমায়।)

এমনি এ মন

টিপটিপ বৃষ্টিদিন আজ ভেজা হাওয়ায়,
ঝোড়ো মন এলোমেলো লুটোপুটি খায়,
কাঁপে তিরতিরে আকাশ একেলা শীতশয্যায়।

এ আমি একাকীত্ব খুব ভালোবাসি বলে,
চেয়ে দেখি নাই, তুমি এলে নাকি চলে গেলে,
ভালো বেসেছিলে, নাকি মন নিয়ে খেলেছিলে?

এসবই খুব অবান্তর মনে হয় আজ জানো,
বিপনি বিতানে যেন কতো মন থরে থরে সাজানো।
তুলে নিতেই পারো কোনোটা তার খেলার ছলে,
হারাতেও পারো ইচ্ছে করেই হারাবার সাধ হলে।

দেখা হবে

তোমার চোখের গভীরে খেলা করে
চৈতালী রোদ নিঝুম দুপুর,
হৃদয়ে কলকল পদ্মার ঢেউ
গুনে গুনে ক্লান্ত আমি।
তবু এই প্রাণে অবিরত
কোলাহল যেন ফেনায়িত
সমুদ্র তরঙ্গ ঢেউ ভাঙ্গে
বালুকাবেলায়।

একদিন প্রেম জেগেছিলো তোমার
ওই মনে তৃ্তীয়া তিথির চাঁদের মতো,
তারপর ডুবে গেছে কৃষ্ণপক্ষ আঁধারে।
তবু হৃদয়ে আমার আশা জেগে রয়,
আবার পূ্র্ণিমা রাতে দু’জনার
হবে দেখা কোনো এক
শর কাশবন ঘেরা
নদীর কিনারে।

বুনবো কথার স্বপ্নজাল
একগোছা ঘাসফুল
খোঁপাতে পরায়ে,
বিরহ পাবে না ঠাঁই,
রইবে কিছুদূরে
থমকে দাঁড়ায়ে।