বিভাগের আর্কাইভঃ জীবন

দেয়ালা

কে ককন কিভাবে কার মাথায় কিলিয়ে কাঁঠাল পাকিয়ে খাবে কিম্বা কার নখ বড় হলো, কার বউ অবলিক বর রোজকার একঘেয়ে ঘষা ছেড়ে তৃতীয় লিঙ্গের সঙ্গে লিঙ্গরাজ টেম্পল বেড়াতে গেল ফুরফুরে অফারের ডিও মেখে, এসব বিন্তিরিং সাবজেক্টে আমার এক্টুও দিলচসপি নেই। ফেস্বুকে যখন এসচিলুম তখন ছাতার মাতা এই সমাজ জালের গাঁটে গাঁটে কি চক্কর না জেনেই এসচি ওই যে ঠ্যালার নাম গঙ্গারাম পোবাদের ঘিজতাঘিজাং নাছোড় নাচের হুজুগে। এক্টু এক্টু করে শিকলুম হ্যানা সন্ধি ত্যানা বিচ্ছেদ। আর দেকলুম কি তুখোর সব কলমবাজ থুক্কু মাউস কিম্বা আঙুলবাজ! দেকতেই রহ্ গিয়া। জীবনে যাদের এক্কলম লেকা নাকউঁচু পত্রিকায় ছাপা হয়নি কিম্বা হবেও না, তাদের লেকা দেকলে মুক হাঁ হয়ে থাকতেই থাকবে, বন্ধ হবেনা। কি দারুণ লেকে গো! আত্মজীবনী লিকচে, তো নিজের গায়ে চিমটি কেটে দেকচি, এত ফাস্টোকেলাস তরতরে ভাবনা কলকেতার এ ওয়ান ম্যাগাজিনেও পাব কিনা সন্দ।

গপ্পো লিকচে কয়েকজন বেশ ভালো। আর এন্তার কিলবিলে হিলহিলে কবিতা থেকে এক্কান ছাকনিতে ছেঁকে পড়, দেকবে বেশকিচু কবিতা অম্বুজা সিমেন্টের জোড়কেও টক্কর দেবে। তবে হ্যাঁ, তুমি যদি ভালোটুকু ছেড়ে হাবিজাবি হাতপাকানো গুলোকেই ফেস্বুকীয়ান লেকা বল, তাইলে রকবাজি স্টপ। দেক, যকন এত ভালো আচে, তাদের ছেড়ে ভ্যানতারাং ড্রেন তোলা মাল দেকতে পাল্লুম না। সময় আচে, সময়ের ফুটো আচে, আরাচে দুই সময়ের টেক্টনিক প্লেটে ইয়াব্বড় কিলবিলে ফাটল। ওই দুম্বো ফাঁকে পা ফাঁসলেই মুস্কিল। চ্যাটিংস্যাটিং আর দিন্রাত লাল লাল টমেটো মার্কা টিন হার্টের গুডিগুডি মর্ণিং নাইট ছেড়ে এবেলা কিচু পড়ে নাও দিকি! না পল্লেও ক্ষতি নেই কারো, কিন্তু ওই গুজব ছড়ানোর নাটমন্দিরি পিএনপিসি কোরোনা। কে ককন খ্যাঁক্কোরে কাম্রে দেবে বলা যায়!
এবার তা’লে বুজলে তো ভালো না’লে চলুক যেইসি আপকি মর্জি।

জুকুদা ঝিন্নাবাদ! ফেস্বুকদা অমর রহে!

অর্থনৈতিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠায় যাকাতের গুরুত্ব

নিঃসন্দেহে ইসলাম একটি বিশ্বজনীন শান্তি ও প্রগতির জীবন ব্যবস্থা। আর এই ইসলাম পাঁচটি মৌলিক ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। এই ভিত্তি সমূহ যথাক্রমে কালেমা, নামাজ, রোজা, হজ্ব এবং যাকাত। এদের যে কোনো একটি অস্বীকারকারী কাফির এবং যিনি অস্বীকার করেন না; কিন্তু প্রতিপালনও করেন না… তিনি ফাসিক। তাই উপরোক্ত পাঁচটি মৌলিক ইবাদত যথাযথভাবে পালন করা প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর উপর ফরজ বা অত্যাবশ্যক। ইসলামের এই মৌল ভিত্তির মধ্যে যাকাত অন্যতম। ইসলামে যাকাত প্রদান ফরজ। কারণ যাকাত প্রদানের মাধ্যমে সমাজে ধনী-দরিদ্রের ভেদাভেদ দূর হওয়ার পাশাপাশি বৈষম্যহীন একটি অর্থনৈতিক রাষ্ট্র বিনির্মাণ করা সম্ভব।

যাকাত আরবি শব্দ। যার আভিধানিক অর্থ হলো- পবিত্রতা, পরিচ্ছন্নতা, বৃদ্ধি পাওয়া ইত্যাদি। যাকাত সম্পদকে পবিত্র করে এবং বিভিন্ন ক্ষতি ও কৃপণতা থেকে মানুষকে হেফাজত করে। ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায়, কোনো ব্যক্তির কাছে যদি সংসারের যাবতীয় খরচাদি মেটানোর পর নিসাব পরিমাণ সম্পদ বছর শেষে উদ্ধৃত থাকে, তাহলে তাকে উদ্ধৃত সম্পদের শতকরা ২.৫% আল্লাহকে তায়া’লা নির্ধারিত আটটি খাতে প্রদান করাকে যাকাত বলে। বলা বাহুল্য যে, যাকাত একটি আর্থিক ইবাদত। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, নিসাব পরিমাণ মাল হল, সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ অথবা বায়ান্ন তোলা রৌপ্য অথবা সমপরিমাণ অর্থ।

যাকাতের ইতিহাসঃ সৃষ্টির সূচনা থেকেই ইসলামে যাকাতের বিধান প্রচলিত ছিল। কারণ মহান রাব্বুল আলামীন যখন পৃথিবীকে বসবাসের উপযোগী হিসেবে তৈরি করেন, ঠিক সেই সময় থেকেই দুনিয়াতে ধনী ও দরিদ্র এ দুই শ্রেণির মানুষ বসবাস করে আসছে। আল্লাহ তাঁর বান্দাদের অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করার পাশাপাশি তাদের পরীক্ষার জন্য যাকাত প্রদানে উৎসাহিত করেছেন। তাই যাকাতের গুরুত্ব অপরিসীম। এ পর্যায়ে বিভিন্ন যুগে যাকাত প্রদানের ইতিহাস সম্পর্কে জানবো, হযরত ইবরাহীম (আ.) এর যুগে যাকাতের বিধান সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘আমি তাদের ইমাম (নেতা) বানিয়েছি। যাতে তারা তাঁর নির্দেশনা মতো আমার বিধান অনুযায়ী চলে এবং আমার জন্য ভালো ভালো কাজ স্বরূপ নামায কায়েম ও যাকাত প্রদান করে। বস্তুত তারাই ইবাদতকারী ছিল।” হজরত ইসমাইল আ. সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘স্বরণ করুন, ইসমাইল আ. এর কিতাবের কথা। নিশ্চয়ই তিনি ওয়াদা সত্য প্রমাণকারী ছিল এবং তিনি নবি-রাসুল। তিনি তার জনগণকে নামাজ পড়ার ও যাকাত দেওয়ার নির্দেশ দিতেন। আর তিনি আল্লাহর কাছে পছন্দনীয় ও সন্তুষ্টিপ্রাপ্ত’।

বনী ইসরাইলদের যুগে যাকাতের চুক্তি বর্ণনা প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর স্বরণ করুন আমরা যখন বনী ইসরাইলের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি নিলাম এই বলে যে, তোমরা আল্লাহ ছাড়া আর কারো বন্দেগী করবে না। পিতামাতার সাথে সদ্ব্যবহার করবে। নামায কায়েম করবে ও যাকাত আদায় করবে। হযরত ঈসা (আ.) যাকাত ও নামায সম্পর্কে অসিয়ত করে বলেন, “আল্লাহ তায়ালা আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন নামায ও যাকাত আদায় করতে।

পরবর্তীতে হযরত মোহাম্মদ (স) এর উপর যাকাত প্রদান ফরজ করা হয়েছে। মক্কায় অবতীর্ণ কুরআনের আয়াতসমূহের প্রায় সকল অবস্থায়ই দরিদ্রদের দুঃখ মোচনের আহবান জানানো হয়েছে। আর যারা যাকাত দেয় না তাদের তিরস্কার করা হয়েছে। তবে ইসলামের প্রাথমিক অবস্থায় মুসলমানদের উপর যাকাত ফরয ছিল না। তবে পরবর্তীতে তা ফরজ করা হয়। পবিত্র কুরআন মাজিদের মোট ১৮টি সূরার ২৯ আয়াতে যাকাত শব্দটির ব্যবহার দেখা যায়। তন্মধ্যে ৯টি সুরা মাক্কী আর ৯টি মাদানী।

সুরা আল হজ্জ এ আল্লাহ যাকাতকে ফরজ ঘোষণা করে বলেন, ‘আল্লাহ অবশ্যই তাকে সাহায্য করেন, যে আল্লাহকে সাহায্য করে। নিশ্চয় আল্লাহ শক্তিমান, পরাক্রমশালী। তারা এমন যাদেরকে আমি যমীনে ক্ষমতা দান করলে তারা সালাত কায়েম করবে যাকাত দেবে এবং সৎকাজের আদেশ দেবে ও অসৎকাজ থেকে নিষেধ করে।’

যাকাতের বিধানঃ তবে যাকাত সকলের উপর ফরজ নয়। স্বাধীন, প্রাপ্তবয়স্ক ও সম্পদশালী মুসলমানদের উপরই কেবল যাকাত ফরয। এক্ষেত্রে কিছু শর্ত রয়েছে-

১. নেসাব পরিমাণ মালের মালিক হওয়া। অর্থাৎ সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ, বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপা, কিংবা সমপরিমাণ মূল্যের নগদ টাকা বা ব্যবসার মালের মালিক হওয়া।
২. মুসলমান হওয়া। কাফেরের উপর যাকাত ফরজ নয়।
৩. বালেগ হওয়া। নাবালেগের উপর যাকাত ফরজ নয়।
৪. জ্ঞানী ও বিবেক সম্পন্ন হওয়া। সর্বদা যে পাগল থাকে তার নেসাব পরিমাণ মাল থাকলেও তার উপর যাকাত ফরজ নয়।
৫. নেসাব পরিমাণ মালের উপর এক বছর অতিবাহিত হওয়া।
৬. মাল বর্ধনশীল হওয়া।
৭. স্বাধীন বা মুক্ত হওয়া। দাস-দাসীর উপর যাকাত ফরজ নয়।
৮. মালের উপর পূর্ণ মালিকানা সাবিত থাকা। অসম্পূর্ণ মালিকানার উপর যাকাত ফরজ হয় না।
৯. নেসাব পরিমাণ মাল নিত্য প্রয়োজনীয় সম্পদের অতিরিক্ত হওয়া।
যাকাতের খাতঃ নির্ধারিত খাতে যথাযথ ভাবে যাকাত প্রদান না করলে, তা আদায় হয় না। যাকাতের খাত নির্ধারণ স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা করেছেন। সূরা তওবায় যাকাতের আটটি খাতের কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, “যাকাত তো সেসব লোকেরই জন্য- যারা অভাবগ্রস্ত, নিতান্ত নিঃস্ব, যারা তা সংগ্রহ করে আনে, যাদের অন্তরসমূহকে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করা হয়, ক্রীতদাস মুক্তির ক্ষেত্রে, ঋণগ্রস্তদের জন্য, আল্লাহর পথে এবং মুসাফিরদের জন্য। এটা আল্লাহর নির্ধারিত বিধান। আর আল্লাহ পাক সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।”

উক্ত আয়াতের আলোকে আটটি খাতে যাকাত বন্টন করার কথা বলা হয়েছে। তা হলো- ১. ফকির (যার নিতান্ত সামান্য পাথেয় আছে), ২. মিসকিন (যার কিছুই নেই), ৩. যাকাত সংগ্রহের কার্যে নিয়োজিত ব্যক্তি (তার পারিশ্রমিক অনুযায়ী), ৪. দ্বীন ইসলামের প্রতি চিত্তাকর্ষণে কোনো অমুসলিম কিংবা ইসলামে অটল রাখার্থে নও মুসলিম, ৫. দাসদাসীর মুক্তি, ৬. ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির ঋণমুক্তি, ৭. একান্ত ও শরিয়ত সম্মত আল্লাহর পথে যুদ্ধের ক্ষেত্রে এবং ৮. রিক্তহস্ত মুসাফির।

অর্থনৈতিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠায় যাকাতের গুরুত্বঃ
ইসলামে যাকাতের গুরুত্ব ও ফজিলত অপরিসীম। যেকোন সময়ের থেকে রমজান মাসে যাকাত আদায়ের গুরুত্ব আরও বেশি। কেননা এ সময় আল্লাহ বান্দার প্রত্যেকটি নেক আমলের সাওয়াব সত্তর গুণ বা আল্লাহ চাইলে অগণিত হারে বাড়িয়ে দিতে পারেন। আমাদের অনেকের ধারণা, যাকাত গরীবদের জন্য ধনীদের একটি দয়া বা অনুগ্রহ। কিন্তু মোটেই তা নয়। বরং যাকাত গরিবের অধিকার। সূরা আয যারিয়াতে আল্লাহ বলেন: ‘তাদের অর্থাৎ ধনীদের ধন-সম্পদে অবশ্যই দরিদ্র ও বঞ্চিতদের অধিকার রয়েছে।” মূলত যাকাত প্রদান না করলে সম্পদ পবিত্র হবে না, পরিশুদ্ধ হবে না। নিজের সম্পদে অন্যের হক থেকে যাবে। ফলশ্রুতিতে সম্পদ অপবিত্র হবে।

মহান আল্লাহ তায়ালা মানব জাতি কে অর্থনৈতিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার জন্য যাকাত প্রদানের তাগিদ দিয়েছেন। কারণ যাকাত প্রদানের মাধ্যমে সমাজে ধনী এবং গরীবের মধ্যে ভেদাভেদ দূর হবে। যথাযথ ভাবে যাকাত আদায় না করলে ধনী ব্যক্তি আরও ধনী এবং গরীব আরও গরীব হতে থাকবে। ফলে মানুষের অর্থনৈতিক ভারসাম্য বিনষ্ট হবে। সমাজে শান্তি ও সম্প্রতি নষ্ট হয়ে বিশৃঙ্খলা বেড়ে যাবে। নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস তার এক গবেষণা পত্রে দেখিয়েছেন, যদি বাংলাদেশের মালে নিসাব পরিমাণ সম্পদ আছে, এমন সকল ব্যক্তি যথার্থ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে যাকাত প্রদান করেন; তাহলে মাত্র সাড়ে সাত বছর পরে এদেশে যাকাত নেওয়ার মতো একজন লোকও অবশিষ্ট থাকবে না।

তাই পরকালের কঠিন শাস্তি থেকে মুক্তি ও এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় যথাযথভাবে যাকাত আদায় করা জরুরি। একইভাবে রাষ্ট্রীয়ভাবে যাকাত আদায়ের পাশাপাশি অন্যকে যাকাত দানে উৎসাহিত করা আমাদের সবার দায়িত্ব। কারণ যাকাত আদায়ের মাধ্যমেই কেবল অর্থনৈতিক বৈষম্যহীন একটি সমাজ বিনির্মাণ সম্ভব।
—————-

হিন্দু বিয়েতে সাত পাক ঘোরার মাহাত্ম্য

dfgh

বিবাহের মূল মন্ত্র যা স্বামী স্ত্রীরা প্রতিজ্ঞা করে থাকে :
“যদেতত্ হৃদয়ং তব তদস্তু হৃদয়ং মম।
যদিদং হৃদয়ং মম, তদস্তু হৃদয়ং তব।।”
—তোমার এই হৃদয় আমার হোক আমার এইহৃদয় তোমার হোক।

সাত পাক ঘোরার মাহাত্ম্য:
হিন্দু বিয়েতে সাত পাক ঘোরার সময়ে অনেক মন্ত্র পড়া হয়, বর-কনে পুরোহিত মহাশয়ের বলে দেওয়া মন্ত্র অনেক সময়েই না বুঝেই বলতে থাকেন। কিন্তু প্রতিটি মন্ত্রের এক একটি অর্থ রয়েছে যা বিয়ের পরের জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তা হলে দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক সাত পাকের মাহাত্ম্য !

প্রথম প্রতিশ্রুতি- পবিত্র অগ্নির সামনে দাঁড়িয়ে বর, কনেকে কথা দেন যে বিয়ের দিন থেকে কনের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব তাঁর। অগ্নি এবং অন্যান্য দেবদেবীর আশীর্বাদে যাতে কোনওদিনই নব-দম্পতির অন্ন-বস্ত্রের অভাব না হয় সেই দায়িত্ব বর নেন। উত্তরে কনে প্রতিজ্ঞা করেন যে সংসারের সুখের জন্য খুটিনাটি বিষয়ও তিনি নজরে রাখবেন। অর্থাৎ প্রথমে বর তাঁর বউ এবং তাঁর ভাবী সন্তানদের যত্ন নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। বিনিময়ে কনেও প্রতিশ্রুতি দেন যে তিনি তাঁর স্বামী এবং তাঁর পরিবারের যত্ন নেবেন।

দ্বিতীয় প্রতিশ্রুতি- সাত পাকের দ্বিতীয় পাক ঘোরার সময়ে বর-কনে একে অন্যকে প্রতিজ্ঞা করেন যে তাঁরা জীবনের সব ওঠাপড়ায় একে অন্যের সঙ্গে থাকবেন। বর কনেকে বলেন যদি কখনও কোনও বিপদ আসে, তা হলে তিনি তাঁর স্ত্রী-সন্তানদের রক্ষা করবেন। আবার উত্তর কনে বরকে কথা দেন যে, সব সময় তিনি তাঁর স্বামীকে সাহস ও শক্তি যোগাবেন। অর্থাৎ এবার বর প্রতিশ্রুতি দেন যে তিনি তাঁর স্ত্রীকে সবরকম পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করবেন। বিনিময়ে কনেও প্রতিশ্রুতি দেন যে তিনি স্বামীর সবরকম যন্ত্রণায় পাশে থাকবেন।

তৃতীয় প্রতিশ্রতি- তৃতীয় পাকে বর এবং কনে একে অন্যের পার্থিব সুখের দিকে নজর দেবেন বলে প্রতিজ্ঞা করেন। তবে একইসঙ্গে আবার আধ্যাত্মিক পথেও হাঁটবেন বলেও একে অপরকে কথা দেন। অর্থাৎ এবার বর প্রতিশ্রুতি দেন যে তিনি তাঁর পরিবারের জন্য রোজগার করবেন এবং তাঁদের দেখভাল করবেন। একই প্রতিশ্রুতি এবার কনেও করেন।

চতুর্থ প্রতিশ্রুতি- সাত পাকের চতুর্থ পাক ঘোরার সময়ে বর কনেকে কথা দেন যে সর্বাঙ্গে তিনি তাঁর স্ত্রীয়ের সম্মান রক্ষা করবেন এবং কনে বরের কাছে প্রতিজ্ঞা করেন যে সারাজীবন তিনি তাঁর স্বামীকে ভালবাসবেন, অন্য সব পুরুষরা তাঁর কাছে গৌন। অর্থাৎ স্ত্রীর কাছে তাঁর পরিবারের সমস্ত দায়িত্ব তুলে দেওয়া এবং একইসঙ্গে স্ত্রীর সমস্ত মতামতকে গুরুত্ব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন বর। স্ত্রী তাঁর সমস্ত দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করার প্রতিশ্রুতি দেন।

পঞ্চম প্রতিশ্রুতি- একে অন্যকে সব সময় ভালবাসা এবং সম্মান করার প্রতিজ্ঞা হয় সাত পাকের পঞ্চম পাকটিতে। বর-কনে একসঙ্গে দেবদেবীর কাছে প্রার্থনা করেন যাতে তাঁদের সংসার আনন্দে ও সমৃদ্ধিতে পূর্ণ হয়ে ওঠে, তাঁদের সন্তান/রা যেন সুস্থ থাকে। বর এবং কনে একে অপরের সবচেয়ে কাছের বন্ধু হয়ে ওঠার অঙ্গিকারও করেন। অর্থাৎ যে কোনও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে স্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করার প্রতিশ্রুতি দেন বর। স্বামীকে সমর্থন করার প্রতিশ্রুতি দেন স্ত্রী।

ষষ্ঠ প্রতিশ্রুতি- ষষ্ঠ পাক নেওয়ার সময়ে সারা জীবন একে অপরের প্রতি সত্য থাকবেন – এই প্রতিজ্ঞাই করেন বর এবং কনে। অর্থাৎ স্ত্রীর প্রতি সত্য থাকার প্রতিশ্রুতি দেন স্বামী। স্ত্রীও স্বামীর প্রতি সত্য থাকার প্রতিশ্রুতি দেন।

সপ্তম প্রতিশ্রুতি- সাত পাকের শেষ পাকটি নেওয়ার সময়ে বর বলেন, এখন থেকে আমরা স্বামী-স্ত্রী হলাম। এখন থেকে আমরা এক। কনেও তাতে সহমত দেন। অর্থাৎ শুধু স্বামী হিসেবেই নয়, বন্ধু হিসেবেও সারাজীবন স্ত্রীর সঙ্গে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন বর। বিনিময়ে স্ত্রীও স্বামীর সঙ্গে জাবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত থাকার প্রতিশ্রুতি দেন।

এই প্রতিশ্রুতিগুলো পরস্পরের প্রতি বহন করতে হয় বলেই হিন্দু বিয়ের শাস্ত্রীয় নাম হলো ‘বিবাহ’, অর্থাৎ ‘বিশেষভাবে বহন করা’। তাই হিন্দু বিয়ে মানেই আজীবনের সুরক্ষা ও অবিচ্ছেদ্য সুখ-শান্তির প্রতিশ্রুতি।

.
নিতাই বাবু
১৩/৪/২০২৩ইং।
ছবি ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ।

জিততে গেলে হেরে যাব

দুই
শিউলি ফাঁক খুঁজছিল। আড্ডা ভেঙে ননীবালা খোপের ঘরে গিয়ে পানের ডাবর খুলতেই সে গায়ে গা ঠেসিয়ে বসেছে :
— ও দিদ্‌মা, স্যানাটির সেনগুপ্তরা আমাগো আত্মীয় না?
বুড়ি ভুরু কোঁচকায়।
— টোরে টোইছে টেডা?
— মা তো চাপে গেল। সাজে-র মুখি শুনিছিলাম।

সাজে মানে সেজোপিসিমা কুন্তলা; বরফের মতো গায়ের রঙ, অখণ্ড সুন্দরী, জেদি মহিলাটি। নির্মলের চার বোনের মধ্যে মেজোজনের বাচ্চা বিয়োতে গিয়ে গোবিন্দপ্রাপ্তি হলে জামাইবাড়ি থেকে পরের মেয়েটিকে চাওয়া হয় এবং বাণীনাথ জামা থেকে টোকা মেরে পিঁপড়ে ফেলার মতো সে-প্রস্তাব বাতিল করেন। কিন্তু সেজো জানায়, বিয়ে করলে ওখানেই করবে। তার বোনপোকে তার মতো কেউ ভালোবাসতে পারবে নাকি!

পৃথিবীতে রাশি রাশি খোলামকুচির মতো মৃত্যু দেখেছে মানুষ, তার হাত-চোখ-কলজে-ফুসফুসের অধিক প্রিয়জনেরা চলে গেছে শ্মশানে-কবরে, তবু সে নিজের তিমির, নিজের নীরবতা, নিজের চিত্রার্পিত, নিজের গুহাবাস হয়ে কাটিয়ে গেছে আরও কত যুগ! অপরিণত মৃত্যুগুলো পরস্পর মিশে গিয়ে এক একটা প্রাণকে যেন পাথরের পরমায়ু দান ক’রে যায়।

কুন্তলাও বিয়ের পাঁচ বছরের মধ্যে মা শীতলার কৃপায় স্বামীসন্তান হারিয়ে সিদ্ধান্তপাড়ায় ফিরে এল। এবার প্রথম গল্পের হাত থেকে ব্যাটন নিয়ে দ্বিতীয় আখ্যান ছুটতে শুরু করবে। হঠাৎ জানাজানি, বাণীনাথের বড় মেয়ে আভাময়ীর ছেলে ঋজু প্রেমে পড়েছে অব্রাহ্মণ, দু’বছরের বড়, বিধবা মল্লিকার। দামড়া নাতির পিঠে খান তিন কচার ডাল ভাঙার পরেও পথে আনতে না-পেরে বাণীনাথ তাকে ত্যাজ্য করলেন। সেটা উনিশ শো বেয়াল্লিশ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছে জোর কদমে। বছরের শুরুতেই জাপান বার্মা আক্রমণ করেছে আর পাঁচ লাখ বার্মিজ শরণার্থী একটু ক’রে ভরিয়ে তুলছে ভারতবর্ষ, যেমন ১৯৪০ সাল থেকে প্রতি বছর বাংলার তিন লক্ষ টন চালের শূন্যতা বার্মা রাইস পূরণ করত। ১৯৪২-এর মার্চে জাপান রেঙ্গুন কবজা করে নেওয়ায় সেই আমদানি বন্ধ। আগের মাসে জাপান ব্রিটিশদের থেকে সিঙ্গাপুর কেড়ে নিয়েছে। আর, মার্চেই সার সার নিপ্পনি যুদ্ধজাহাজ উড়িষ্যা-মাদ্রাজের উপকূল ধ’রে এগোচ্ছে দেখে তারা বাংলা আক্রমণ করবে এই ভয়ে ইংরেজ সরকার ‘ডিনায়াল পলিসি’ ঘোষণা ক’রে দিল।

এদিকে, বাড়িখেদা হওয়ার পর ঋজুর আস্তানা সিদ্ধান্তপাড়া থেকে সিকি মাইলটাক দূরে চন্দনীমহল। গ্রামের শিকদার পরিবার কবেই ম’রেছেড়ে গেছে, পোড়ো বাড়িটার জঙ্গল সাফ ক’রে ব্লিচিং ছড়িয়ে গোটা তিনেক সাপ মেরে দুটো গিরগিটিকে বন্ধু পাতিয়ে সে থাকে। থাকে রাতের ঘুমটুকুর নিমিত্ত। গত সপ্তাহে আইএ পরীক্ষার রেজাল্ট বেরোলে দেখা গেল ঋজু গোটা খুলনা জেলায় প্রথম। জেলাবৃত্তি তো পাবেই, তাকে সদর থেকে ডাক পাঠিয়েছেন অবিনাশচন্দ্র ঘোষ — খুলনা জেলা স্কুলের অধ্যক্ষ এবং ‘জ্ঞানাঞ্জন সমিতি’র সভাপতি। আগামী মাসে সমিতি ঋজুকে সম্বর্ধনা দেবে একগুচ্ছ বই, মিষ্টি আর ফুলের মালায়। তখন কথায় কথায় যেই জানা গেল বাড়ি থেকে উচ্ছেদের পর ছেলেটার থাকাখাওয়ার ঠিক নেই, অবিনাশবাবু চিঠি লিখে ঋজুর হাতেই পাঠালেন তার ভায়রার কাছে, কাটানীপাড়ায় — যুবকটিকে মাসিক আট টাকা বেতনে তোমার দুই যমজ সন্তানের গৃহশিক্ষক রাখিয়ো।

প্রতিদিন বিকেলবেলা কুন্তলা থালায় ভাত বেড়ে বোনপোর বাউন্ডুলে-আবাসে পৌঁছে যায়। ঘরে খাবারটা থালাচাপা দিয়ে মশারির চারকোনা বেঁধে একটা হারিকেন জ্বালিয়ে রেখে আসে। বাণীনাথ অনেক ধমকেছেন, কথা না শোনায় সেই কবে থেকে মেজোমেয়ের সঙ্গে তার আড়ি। এছাড়া ভটচাজবাড়ি থেকে নিয়মিত দুবেলা গাল পড়ে সেনগুপ্তদের উদ্দেশ্যে। কোনও দুপুরে চন্দনীমহলের বকুলতলায় ঋজু-মলিকে কথা বলতে দেখা গেলে, কোনও বিকেলে দুজনকে দিঘলিয়ার হাটে গরুর গাড়ির পেছনে ঠ্যাং দুলিয়ে বসতে শোনা গেলে তিরস্কার পালটে যায় অভিশাপ-প্রদানে : আমার ছেলেডার জীবন নষ্ট করিছিস, মুখি রক্ত উঠে মরবি সবাই। তোগো জন্যি চোখের জল ফেলারও লোক থাকপে না।

এভাবে একদিন পরিত্রাহি চিৎকার রাস্তার ওপার থেকে… বিভাময়ী ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড়ে গিয়ে দ্যাখে, নার্সিং স্কুল থেকে ফেরা, খাতার পৃষ্ঠার মতো রোগা মেয়েটাকে মা টানতে টানতে রান্নাঘরে এনে এক হাতে মাটিতে মুখ খুঁসে ধরেছে, অন্য মুঠোয় খাঁড়া অথবা আঁশবঁটি। সেদিন সন্তানহত্যার পাপ থেকে বেঁচে গেল মলির মা, তাকে নির্বংশ হওয়ার শাপ দেওয়া মহিলাকে জড়িয়ে হাউহাউ কাঁদতে থাকল।

তিন
সরকারি ‘প্রত্যাখ্যান নীতি’ লাগু হতেই রুক্ষ হাওয়ায় যেমন দীঘির পদ্মপাতার তেলতেলে ওপরপিঠ উলটে গিয়ে শিরাজালে ভরা ফ্যাকাশে নিম্নতল দেখা যায়, গ্রামজীবনের শান্ত নকশার নীচে তার চিরবহমান ক্ষিদের ছবিটা ফুটে উঠেছে। জাপানি সৈন্য বাংলায় ঢুকলে যাতে খেতে না পায় — বাখরগঞ্জ, খুলনা আর মেদিনীপুরের সমুদ্রবন্দর থেকে তিরিশ হাজার টন চাল তুলে উত্তরবঙ্গে পাঠিয়ে দিল সরকার। তারপরেও বাতাসে ফিসফিসানি পাক খায় : আমাদের সেনারা চারদিকে মজুত চাল নষ্ট করে বেড়াচ্ছে; পূর্ববঙ্গের তিনটে নদীবন্দরে রাখা আরও হাজার টন শস্যকে দেওয়া হয়েছে জলকবর। অথচ দেশের খবরের কাগজগুলোয় এ-সংবাদ নেই, রেডিয়ো নিউজ টুঁ শব্দও করছিল না। ঋজু বিএ-তে ব্রজরাজ কলেজে ভর্তি হয়েছে ব’লে এখন মাসের অর্ধেক অবিনাশ ঘোষের বাড়িতে কাটায়। একদিন ভোরে অবিনাশবাবু তাকে সমিতির দশবারোটা ছেলের সঙ্গে পাঠিয়ে দিলেন রূপসা-ঘাট। সেখানে পৌঁছে দেখা গেল, নদীর চরে পাহাড় সমান উঁচু চালের বস্তার লাটে চারপাঁচটা পুলিশ আর ক’জন মজুর বড় বড় টিন থেকে কেরোসিন ঢালছে।

দেখে চোখ জ্বালা ক’রে ওঠে ঋজুর। পূর্ববঙ্গে নীচু বর্ণ আর নীচু অর্থের মানুষ একটা অফুরন্ত অর্ধাহার-অনাহারের কুয়োর ভেতরে সার্কাস-খেলোয়াড়ের মতো গোল-গোল ঘুরে যাচ্ছে। অন্নাভাবে থাকে ব’লেই এদের মধ্যে নষ্ট খাবার খাওয়া আর পেটের রোগ বাধানোর হিড়িক। সাধে কি মেঝেয় পড়া পাতের ভাত খুঁটে না খেলে আমাদের মা লক্ষ্মী রুষ্ট হন!

সেই মুহূর্তে সমিতির এক যুবক তাকে রূপসাচর থেকে চলে যেতে বলছিল, অবিনাশকাকুর তেমনই নির্দেশ। ঋজু মাথা নাড়িয়ে ফিরে আসতে আসতে ওয়্যারহাউজের ভাঙা দেয়ালের পেছনে লুকোলো। সঙ্গীরা এগিয়ে গেছে বালিতে উলটে থাকা একটা বাতিল কন্টেনারের দিকে। তারপর হঠাৎ ওই লোহার খাঁচার পেট থেকে কাঁড়ি কাঁড়ি পাথর ছুঁড়তে লাগল পুলিশগুলোকে। তাদের ‘বন্দে মাতরম’ স্লোগান উৎকট বাতাসে ভাঙা ভাঙা রামধনুর মতো এদিক-সেদিক ছিটকে যাচ্ছিল। ঋজু একলাফে বেরিয়ে এসে বন্ধুদের সঙ্গে খোয়া ছোঁড়ায় হাত লাগিয়েছে। পুলিশ তখন ধন্দে — চালের বস্তায় আগুন লাগাবে না ধাওয়া দেবে কংগ্রেসিদের? আসলে ওটা ছকবাজি, সেই ফাঁকে যে ক’জন স্টিমার-প্যাসেঞ্জার এত সময় ঋজুদের পেছনে বাঁধের ওপর দাঁড়িয়ে ছিল, হুড়মুড়িয়ে ধেয়ে আসছে। পালা, শিগগির পালা!

ছুটতে ছুটতে ছেলের দল চক্রাখালি পার হয়, গজালমারি ফুঁড়ে বেরিয়ে যায় একবারও পেছনে না তাকিয়ে। পেটমোটা গোয়েন্দা পুলিশের ঝাঁক কোথায় হারিয়ে গেছে… তারপরেও ঋজুরা দৌড়োতে থাকে — ডোবায় হাত-জাল ছোঁড়া জেলের গা ঘেঁষে, সদরমুখো সবজিবোঝাই ভ্যানরিকশাকে হারিয়ে… যেন এক গুচ্ছ অ্যাথলিট অলিম্পিকের প্র্যাকটিসে নেমেছে। ঋজু যত হাঁপায় তত হালকা হয় মাথা — অবিনাশবাবুর ওকে ব্রজরাজ কলেজে ভর্তি করানো, বিশেষ বিশেষ বই পড়তে দেওয়া, ইংরেজদের অত্যাচারের গল্প শুনিয়ে সেটা ইংরাজিতে রিপোর্টের ঢংয়ে লিখতে বলা… সবই কোনও ভারি রাগের শুরুতে স্বরপরিচয়ের মতো না? ভাবতে গিয়ে আর একখানা মুখ মনে আসে — নাকের দুপাশে তীক্ষ্ণ পেনসিলে আঁকা গাঢ় লাফ লাইন, অথচ দুঠোঁটের আংটায় ছোট্ট টিপতালা।

অবিনাশকাকু বলেছে, ইংরেজদের আসল উদ্দেশ্য জাপানিদের মারা নয়, দেশে দুর্ভিক্ষ ডেকে এনে বাংলা আর বাঙালির মাজা ভেঙে দেওয়া। এমন মন্বন্তরের ঋতুতেই প্রেম হল ঋজু-মল্লিকার?

.
(চলছে)

অবশ্যই ভেজাল ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে

sha ২৪টি উদৃতি অনুসরণ করলে আপনার ক্ষতি না হলেও অনেকাংশে উপকৃত হতে পারেন ঠেকে শেখা জীবনের শিক্ষা থেকে যেভাবে আপনি আপনার ভবিষ্যৎ কে গড়ে তোলার চেষ্টা করেন তেমনিভাবে শিক্ষার মান উন্নয়নের মাধ্যমে আপনার ভবিষ্যৎ করতে পারেন কিন্তু সেই শিক্ষা ব্যবস্থায় যদি জালিয়াতি থাকে তাহলে পুরো দেশ অচল হয়ে যাবে। তাহলে চলুন শিক্ষা কিভাবে আপনার শরীরের মেরুদণ্ড হতে পারে তা দেখা যাক।

৮২০. “শিক্ষা হল একটি সমৃদ্ধশালী সমাজের ভিত্তি। যখন আমরা শিক্ষায় বিনিয়োগ করি, তখন আমরা ভবিষ্যতে বিনিয়োগ করি, ব্যক্তিদের সফলতা ও বিশ্বে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও দক্ষতা দিয়ে ক্ষমতায়ন করি।”

৮২১. “উদ্ভাবন হল অগ্রগতির ইঞ্জিন, আমাদেরকে এগিয়ে নিয়ে যায় এবং প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করে৷ আমরা যখন উদ্ভাবনকে আলিঙ্গন করি, তখন আমরা শিল্পকে রূপান্তরিত করতে পারি, জীবনকে উন্নত করতে পারি এবং বিশ্বকে একটি ভালো জায়গা করে তুলতে পারি৷”

৮২২. “বৈচিত্র্য একটি শক্তি, দুর্বলতা নয়। যখন আমরা বৈচিত্র্যকে আলিঙ্গন করি, তখন আমরা সৃজনশীলতা, উদ্ভাবন এবং বোঝাপড়াকে উৎসাহিত করতে পারি এবং সবার জন্য একটি আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং ন্যায়সঙ্গত সমাজ গড়ে তুলতে পারি।”

৮২৩. “নেতৃত্ব ক্ষমতা বা কর্তৃত্ব সম্পর্কে নয়, বরং অন্যদের সেবা করা এবং তাদের পূর্ণ সম্ভাবনায় পৌঁছানোর জন্য তাদের অনুপ্রাণিত করা। যখন আমরা সত্যিকারের নেতৃত্ব গড়ে তুলি, তখন আমরা আরও ন্যায্য এবং সহানুভূতিশীল বিশ্ব তৈরি করতে পারি।”

৮২৪. “দয়া হল ভালোর জন্য একটি শক্তিশালী শক্তি, এমনকি সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতিতেও রূপান্তর করতে সক্ষম। যখন আমরা দয়ার অনুশীলন করি, তখন আমরা ইতিবাচকতা এবং সহানুভূতির একটি প্রবল প্রভাব তৈরি করতে পারি, যা বিশ্বকে একটি উজ্জ্বল এবং আরও প্রেমময় স্থান করে তোলে।”

৮২৫. “ক্ষমা ক্ষতিকারক আচরণকে ভুলে যাওয়া বা ক্ষমা করার বিষয়ে নয়, বরং বিরক্তি এবং ক্রোধের বোঝা থেকে নিজেদেরকে মুক্ত করার বিষয়ে। যখন আমরা ক্ষমার চাষ করি, তখন আমরা নিজেদেরকে এবং অন্যদের নিরাময় করতে পারি এবং একটি আরও শান্তিপূর্ণ এবং সুরেলা বিশ্ব তৈরি করতে পারি।”

৮২৬. শিক্ষা হলো সমৃদ্ধশালী সমাজ গঠনের জন্য মূল ভিত্তি আপনি এই গঠন প্রক্রিয়ার মধ্যে যখন ভেজাল ঢোকাবেন তখন সেই শিক্ষা মেরুদণ্ডহীন হয়ে পড়বে আর শিক্ষাকে যদি মেরুদণ্ডহীন করা হয় তাহলে এই দেশটাকে পরবর্তী প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে অতিব কৌশলীদের হাত থেকে কোনভাবেই রক্ষা করা সম্ভব হবে না।। আর তারা ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য দিনের পর দিন নিপীড়িত মানুষের প্রতি জুলুম অত্যাচার চালাতেই থাকবে।

৮২৭. “শিক্ষা হল একটি সমৃদ্ধ সমাজের ভিত্তি, যার ভিত্তির উপর আমরা আমাদের ভবিষ্যত গড়ে তুলি। কিন্তু সেই ভিত্তি যখন ভেজাল দিয়ে কলঙ্কিত হয়, তখন শিক্ষার সারমর্ম মেরুদন্ডহীন হয়ে যায়। এটি কী হওয়া উচিত তার একটি নিছক ছায়া হয়ে দাঁড়ায়, সমর্থন করতে অক্ষম। আমাদের আশা এবং স্বপ্নের ওজন।

৮২৯. একটি মেরুদন্ডহীন শিক্ষা ব্যবস্থা একটি বিপজ্জনক জিনিস, কারণ এটি আমাদের সমাজকে সুপার স্ট্র্যাটেজিস্টদের ষড়যন্ত্রের জন্য দুর্বল করে দেয় যারা যেকোনো মূল্যে তাদের ক্ষমতা বজায় রাখতে চায়। একটি শক্তিশালী ও প্রাণবন্ত শিক্ষাব্যবস্থা না থাকলে, নিপীড়িতরা নিপীড়িত হতেই থাকবে এবং শক্তিশালীরা দুর্বলদের উপর কর্তৃত্ব বজায় রাখতে থাকবে।

৮৩০. আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে মেরুদণ্ডহীন হতে দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। আমাদের অবশ্যই ভেজাল ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে এবং আমাদের সন্তানরা যাতে সম্ভাব্য সর্বোত্তম শিক্ষা পায় তা নিশ্চিত করার জন্য আমাদের যথাসাধ্য করতে হবে। শুধুমাত্র এটি করার মাধ্যমে আমরা এমন একটি সমাজ গড়তে আশা করতে পারি যা শক্তিশালী, ন্যায়পরায়ণ এবং সমৃদ্ধশালী, যা ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে সক্ষম।

৮৩১. আসুন আমরা ভুলে যাই না যে শিক্ষা কেবল শেষ করার উপায় নয়, প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার। এই অধিকার রক্ষা করার জন্য, এটিকে লালন-পালন করার জন্য এবং যারা আমাদের পরে আসবে তাদের কাছে এটি প্রদান করার জন্য আমরা নিজেদের এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে ঋণী। শিক্ষার জন্য শুধু একটি নির্মাণ প্রক্রিয়া নয়; এটা আমাদের মানবতার সারমর্ম।”

৮৩২. “শিক্ষা হল মহান সমতা, কিন্তু যখন এটি ভেজাল হয়, তখন এটি বৈষম্যকে স্থায়ী করে এবং আমাদের সমাজের সবচেয়ে দুর্বল সদস্যদের একটি অসুবিধায় ফেলে।”

৮৩৩. “শিক্ষার অখণ্ডতা সমাজের অগ্রগতির জন্য অপরিহার্য; যখন এটি আপস করা হয়, তখন আমরা নিজেদের এবং আমাদের সন্তানদের জন্য ভবিষ্যতের কল্পনা করি।”

৮৩৪. “শিক্ষা বাণিজ্যের পণ্য নয়, তবে একটি ২. অত্যাবশ্যক মানবাধিকার যা সর্বদা রক্ষা এবং সমুন্নত রাখতে হবে।”

৮৩৫. “শিক্ষায় ভেজাল শিক্ষার সারমর্মকে ক্ষুণ্ণ করে, যা পরিবর্তন ও অগ্রগতির জন্য একটি শক্তিশালী শক্তি হতে পারে তার একটি ফাঁপা শেল আমাদের রেখে দেয়।”

৮৩৬. “যখন আমরা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় দুর্নীতির অনুপ্রবেশের অনুমতি দেই, তখন আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের আস্থার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করি এবং তাদের সুযোগগুলো কেড়ে নিই যেগুলো তাদের হওয়া উচিত।”

৮৩৭. “একটি মেরুদণ্ডহীন শিক্ষা ব্যবস্থা হল অজ্ঞতা এবং উদাসীনতার একটি প্রজনন ক্ষেত্র, যা ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তিদের দায়মুক্তির সাথে জনসাধারণকে নিয়ন্ত্রণ করতে এবং নিয়ন্ত্রণ করতে দেয়।”

৮৩৮. “শিক্ষায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই আমাদের সমাজের আত্মার জন্য একটি লড়াই, এবং এটি জয় করার জন্য আমাদের দৃঢ় সংকল্পে আমাদের কখনোই হাল ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়।”

৮৩৯. “শিক্ষা হল সেই ভিত্তি যার উপর আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ গড়ে তুলি, এবং এই ভিত্তিটি শক্তিশালী, বিশুদ্ধ এবং দুর্নীতিমুক্ত তা নিশ্চিত করা আমাদের উপর নির্ভর করে।”

৮৪০. “শিক্ষার প্রকৃত মূল্য আমরা এটি থেকে ব্যক্তিগতভাবে কী অর্জন করতে পারি তার মধ্যে নয়, বরং আমরা আমাদের সম্প্রদায় এবং বৃহত্তরভাবে বিশ্বকে কী ফিরিয়ে দিতে পারি।”

৮৪১. “যখন আমরা শিক্ষায় বিনিয়োগ করি, আমরা ভবিষ্যতে বিনিয়োগ করি; যখন আমরা দুর্নীতিকে বৃদ্ধি পেতে দেই, তখন আমরা নিজেদের ধ্বংসের বীজ বপন করি।”

৪৪২. শিক্ষা হলো আপনার শরীরের মেরুদন্ড যা সুন্দরভাবে বেঁচে থাকতে সহায়তা করে শিক্ষা আপনার সেই মেরুদণ্ডকে শক্ত করার জন্য উৎস যোগায় এবং আপনার শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য। মেরুদণ্ডকে শক্ত করুন মেরুদণ্ড সুস্থ রাখার আপনার পরিবারে শিক্ষার চাষাবাদ করুন মনে রাখবেন শিক্ষা ছাড়া সমাজ সংসার রাষ্ট্র সবকিছু সবকিছু অচল। শিক্ষার মাঝে বেঁচে থাকার অসংখ্য উৎস রয়েছে প্রেরণা রয়েছে প্রাপ্তি রয়েছে সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে শুধু আপনাকে অনুভব করতে হবে আপনার কোন প্রেরণা কন প্রাপ্তি আর কি উৎস আপনার অন্তরকে দোলা দেয় তা ৬ নাম্বার শ্রবণেন্দ্রিয় দিয়ে বুঝে ওঠার চেষ্টা করুন নয় তবে চেষ্টা দ্বারা একটি ধাপ এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা শক্তিশালী করে।

৮৪৩. শিক্ষাই একটি সমৃদ্ধ সমাজ গড়ার মূল ভিত্তি যখন আপনি এই নির্মাণ প্রক্রিয়ায় ভেজাল চালু করবেন তখন সেই শিক্ষা মেরুদণ্ডহীন হয়ে যাবে এবং শিক্ষাকে মেরুদণ্ডহীন করা হলে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য সুপার স্ট্রাটেজিস্টদের হাত থেকে এই দেশকে রক্ষা করা সম্ভব হবে না। . আর তারা তাদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য দিনের পর দিন নির্যাতিত মানুষের উপর অত্যাচার চালিয়ে যাবে।
মেরুদণ্ডহীন শিক্ষা ব্যবস্থা।

৮৪৪. “শিক্ষা হল একটি সমৃদ্ধ সমাজের ভিত্তি, যে ভিত্তির উপর আমরা আমাদের ভবিষ্যত গড়ে তুলি। কিন্তু সেই ভিত্তি যখন ভেজাল দিয়ে কলঙ্কিত হয়, তখন শিক্ষার সারমর্ম মেরুদন্ডহীন হয়ে যায়। এটি কী হওয়া উচিত তার একটি নিছক ছায়া হয়ে দাঁড়ায়, সমর্থন করতে অক্ষম। আমাদের আশা এবং স্বপ্নের ওজন।

একটি মেরুদণ্ডহীন শিক্ষা ব্যবস্থা একটি বিপজ্জনক জিনিস, কারণ এটি আমাদের সমাজকে সুপার স্ট্র্যাটেজিস্টদের ষড়যন্ত্রের জন্য দুর্বল করে দেয় যারা যেকোনো মূল্যে তাদের ক্ষমতা বজায় রাখতে চায়। একটি শক্তিশালী ও প্রাণবন্ত শিক্ষাব্যবস্থা না থাকলে, নিপীড়িতরা নিপীড়িত হতেই থাকবে এবং শক্তিশালীরা দুর্বলদের উপর কর্তৃত্ব বজায় রাখতে থাকবে।

আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে মেরুদণ্ডহীন হতে দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। আমাদের অবশ্যই ভেজাল ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে এবং আমাদের সন্তানরা যাতে সম্ভাব্য সর্বোত্তম শিক্ষা পায় তা নিশ্চিত করার জন্য আমাদের যথাসাধ্য করতে হবে। শুধুমাত্র এটি করার মাধ্যমে আমরা এমন একটি সমাজ গড়তে আশা করতে পারি যা শক্তিশালী, ন্যায়পরায়ণ এবং সমৃদ্ধশালী, যা ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে সক্ষম।

আসুন আমরা ভুলে যাই না যে শিক্ষা কেবল শেষ করার উপায় নয়, প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার। এই অধিকার রক্ষা করার জন্য, এটিকে লালন-পালন করার জন্য এবং যারা আমাদের পরে আসবে তাদের কাছে এটি প্রদান করার জন্য আমরা নিজেদের এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে ঋণী। শিক্ষার জন্য শুধু একটি নির্মাণ প্রক্রিয়া নয়; এটা আমাদের মানবতার সারমর্ম।”

কোথায় আসল ঠিকানা?

yuio

আসলে ভবে যেতে হবে
থাকেনা কেউ ভবে,
আমারও একদিন যেতে হবে
যেদিন সময় হবে।

গায়ের চামড়ায় ভাজ পড়েছে
চোখে দেখি কম,
এই বুঝি হচ্ছে মরণ
পিছু ধরছে যম।

দেহের শক্তি মনের বল
কার থাকে কতক্ষণ,
স্বার্থের টানে এসব ভুলে
গড়ছি সম্পদ সর্বক্ষণ।

কার সম্পদ কোথায় থাকবে
মৃত্যুর পরে অজানা,
নিশ্বাস যেদিন হবে বন্ধ
শ্মশান গোরস্থানই ঠিকানা।

.
নিতাই বাবু
১৭/০৪/২০২৩ইং।

ঈদের আনন্দ সবার জন্য

ggy

ঈদ বুঝি গেলো গত হয়ে
অনেকে করছে খেয়ে দেয়ে,
কেউ করছে আনন্দে ঈদ
কেউ রয়েছে না খেয়ে।

কারোর ঘরের পোলাও মাংস
রাস্তায় ফেলে দিচ্ছে ঢেলে,
কেউবা আবার কুড়িয়ে এনে
খাচ্ছে চোখের পানি ফেলে।

ঈদ উদযাপন করছে কেউ
নতুন জামা কাপড় পরে,
কেউ করছে ঈদ উদযাপন
ছেড়া ময়লা বস্ত্র পরে।

তবুও সবাই করছে ঈদ
বাকি রইলো না কারোর,
আসবে আবার খুশির ঈদ
রাখবে কি তাদের খবর?

যেখানে আছে গরিব দুঃখী
সুখ নাই যাদের ঘরে,
তাদের খবর যদি রাখো
ঈদ আনন্দে উঠবে ভরে!

.
নিতাই বাবু
পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর
২২/০৪/২০২৩ইং।

মৃত্যু বুঝি আসে!

ghj

মৃত্যু এখন আমাদের দলে হানা দিতে শুরু করেছে। মৃত্যু এলে মরে যেতে হয়। যদি কখনো সুযোগ না পাই, কয়েকটা কথা এখানেই বলে রাখি। আমি সাধারণত জেনে বুঝে ইচ্ছে করে কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করি না, কারো মনে আঘাত দেয়ার সুযোগ খুঁজি না, মনের অজান্তেও কারো ক্ষতি করি না।

হ্যাঁ মতে না মিললে একটু ঝাঁজিয়ে উঠি, অভিমান করি, দুই দিন গাল ফুলিয়ে রাখি। তারপরেও আমার আচরণে, কথায় কেউ কেউ নিশ্চয়ই মনে ব্যথা পায়। আমি যদি বুঝতে পারি আমার উপর কারো অভিমান হয়েছে অথবা আমার কোনো কথায় আহত হয়েছে, আমি অনুতপ্ত হই, তার কাছে ক্ষমা চেয়ে নেই। আমি তো দেবী নই, শয়তানও নই। রক্ত মাংসে তৈরি মানুষ। অসৎ নই ঠিক, তার পরেও কাজে কথায় ভুল ভ্রান্তি তো হয়ই।

ফেসবুকে সম মানসিকতার নারী পুরুষ কয়েকজন মিলে আমাদের একটা বন্ধু পরিবার গড়ে উঠেছে। সেই পরিবারে বয়সে আমার চেয়ে বড়ো সদস্য আছেন, বয়সে আমার চেয়ে অনেক ছোটো সদস্য আছে, আর আমরা কাছাকাছি বয়সীরা তো আছিই। ২০১৯ সালে দেশে যাওয়ার পর আমাদের দলের প্রায় সকলের সাথেই দেখা হয়েছে, আড্ডা হয়েছে।

কয়েক মাস পর সেই দল থেকে প্রথম চলে গেলেন মাসুদ করিম ভাই। মাসুদ করিম ভাই চলে যাওয়ায় ধাক্কা খেয়েছি প্রচন্ড, কারণ আমেরিকা ফিরে আসার দিন মাসুদ ভাই খুব করে চাইছিলেন আমার সাথে একটু দেখা করার জন্য। আমেরিকা ফেরার দিন আমি এমনিতেই মানসিকভাবে কাতর থাকি, তাই মাসুদ ভাইয়ের সাথে বাইরে কোথাও বসে চা খাওয়ার চিন্তাই করিনি। মাসুদ ভাই হাল ছাড়েননি, তিনি রাত বারোটার সময় এয়ারপোর্টে গিয়ে আমার সাথে দেখা করতে চাইলেন। উনার এই আকুলতার প্রতি আমি সম্মান দেখাতে পারিনি। বরং রাত বারোটায় উনি এয়ারপোর্টে এসে আবার বাসায় ফিরতে উনার কষ্ট হবে ভেবেছিলাম, তাই উনাকে এয়ারপোর্টে আসতে মানা করেছি।

তার কয়েকমাস পরেই মাসুদ ভাই মারা যান। মাসুদ ভাইয়ের মৃত্যু সংবাদ শুনে মর্মাহত হওয়ার পাশাপাশি খুব গ্লানি বোধ হয়েছিলো। মাসুদ ভাই কি মৃত্যুর গন্ধ টের পেয়েছিলেন, তাই কি শেষবার দেখা করতে চেয়েছিলেন! আহারে, আমার ব্যবহারে উনি নিশ্চয়ই কষ্ট পেয়েছিলেন। এরপর সব কিছু মোটামুটি ঠিক চলছিল। করোনা এসেই আবার সব লন্ডভন্ড করে দিলো।
আমার আর দেশে যাওয়া হলো না।
২০২২ পর্যন্ত আমাদের দলের সকলেই ভালো ছিলো, কেউ কেউ করোনা আক্রান্ত হয়েও ফাইট দিয়ে সুস্থ হয়ে গেছে।

২০২৩ চলে এলো, চার বছর পেরিয়ে গেছে দেশে যাইনি। এত লম্বা সময় দেশে না যাওয়ার রেকর্ড আমার নেই। বাবাকে দেখতে যেতাম, ২০২০ সালে বাবা চলে যাওয়ার পর কি তবে আমার দেশে যাওয়ার তাড়া কমে গেছে? না, তা নয়। দেশে আমি এমনিতেই যাই, দেশে আমার ভালো লাগে, ধূলা বালি মশা মাছির সাথেই তো বড়ো হয়েছি, তাই ধূলা বালি, রাস্তা ভর্তি গিজগিজ করা মানুষেই আমি অভ্যস্ত। মাত্রই ভাবছিলাম আবার দেশে যাওয়ার কথা। সবার সাথে দেখা হবে, আড্ডা হবে। এবার আর কারো মনে ব্যথা দেয়ার মতো কাজ করবো না। সবাই মিলে মাসুদ ভাইয়ের জন্য একটু প্রার্থনা করবো।

শফি আজিম ভাই, আখতার ভাই, জাহিদ ভাই, ইদু ভাই, আতাউর ভাই, সুজিত দাদা প্রমুখ সকলেই আমার বন্ধু হিতাকাঙ্ক্ষী পরমাত্মীয়। কত দিন উনাদের সাথে দেখা হয় না, মেসেঞ্জারে মাঝে মধ্যে কথা হয়। এবার দেশে গেলে প্রত্যেকের বাড়িতে আমি নিজে গিয়ে দেখা করবো, আড্ডা দেবো।

ওমা, জানুয়ারির ১০ তারিখে আমার অতি প্রিয়জন ছোটো মেসোর মৃত্যুসংবাদ হজম করতে পারিনি, ১১ তারিখেই হাসপাতাল থেকে শফি ভাইয়ের স্ট্যাটাস, উনি হাসপাতালে।
অথচ আগের দিনই আমাকে উনি মেসোর মৃত্যুতে সমবেদনা জানিয়েছেন!

ইনবক্সে মেসেজ দিলাম, দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুন, দেশে এসে জমিয়ে আড্ডা দেবো। শফি ভাই সাথে সাথে আমার কমেন্টে লাভ ইমো দিয়ে উত্তরে লিখলেন, হৃদযন্ত্র বিকল হতে হতে এই যাত্রায় বেঁচে গেছি রে দিদি।

সেই শফি ভাই ১৫ তারিখে মারা গেলেন। শফি ভাইয়ের মৃত্যু সংবাদে ইদু ভাই শোক প্রকাশ করে কমেন্ট দিলেন। আতাউর ভাই গত পরশু দিনের আগের দিন ইদু ভাইয়ের বাসায় গেছেন, গল্পগুজব করেছেন৷ চা খেয়ে ফেরার সময় ইদু ভাই নিজেই আতাউর ভাইয়ের সাথে সেলফি তুললেন। তার পরদিন আতাউর ভাই শুনলেন, ইদু ভাই হাসপাতালের আইসিইউতে। আর আজ ইদু ভাইও চলে গেলেন।

এবার আমার ভয় করছে। মৃত্যু আমাদের দলের সীমানা চিনে ফেলেছে। হাতের কাছে যাকে পাবে, খপ করে ধরবে আর ঝোলার ভেতর ভরবে। এখন আর মৃত্যু সংবাদে আশ্চর্য হবো না। মৃত্যুকে আমার বেজায় ভয়, মৃত্যু থেকে পালিয়ে থাকতে চাই, তারপরেও জানি, মৃত্যু একদিন আমায় ঠিকই ধরে ফেলবে।

মৃত্যু যখন আমায় ধরে ফেলবে তখন তো কারো কাছে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগও দিবে না! তাই এখানেই আজ আমি তাদের কাছে ক্ষমা চাইছি, আমার অনিচ্ছাকৃত ভুলে, আচরণে, কথায় যারা মনে ব্যথা পেয়েছেন।

আপনাদের ক্ষমা আমার মনের শক্তি। আগে ভাগেই সকলের কাছে ক্ষমা চাইছি কারণ মৃত্যু যখন আমায় ধরবে, আমি যেনো নির্ভয়ে হাসিমুখে মৃত্যুর মুখোমুখি হতে পারি।

r:ঈদ মোবারক

ঈদ আনন্দের দিন, খুশির দিন, উৎসবের দিন। ঈদ আমাদের জন্য বয়ে আনে অনাবিল আনন্দ, খুশির বারতা। ঈদের গুরুত্ব আমাদের কাছে যেমন ধর্মীয় তেমনি সামাজিক। প্রতি বছরই ঈদ আসে নতুনের মত। এক মাস সিয়াম সাধনা শেষে খুশীর সওগাত পবিত্র ঈদুল ফিতর। জাতীয় কবি কাজী নজরুল তার কবিতায় লিখেছেন, ‘রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ। আপনাকে তুই বিলিয়ে দে, শোন আসমানী তাগিদ।’ আনন্দের সওগাত নিয়ে আসা পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আমরা ঈদ উৎসবে মিলিত হই সকল ভেদাভেদ ভুলে। চাওয়া পাওয়ার হিসাব না মিলিয়ে এক কাতারে সামিল হই। বুঝি মানুষ মানুষের জন্য।

পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে শব্দনীড় এ আমার সকল সহব্লগার, বন্ধু, শুভানুধ্যায়ী, সবাইকে জানাই ঈদ মোবারক ও আন্তরিক শুভেচ্ছা। যে যেখানে আছেন সবাই ভালো থাকুন নিরাপদে থাকুন। আমাদের জন্য দোয়া করবেন। ঈদ মোবারক।

টুকটাক রমযান … শেষ পর্ব

প্রথমেই আল্লাহর কাছে অশেষ শুকরিয়া। আল্লাহ তাঁর অনুগ্রহে এক মাসের সিয়ামের শেষে ঈদ উদযাপনের সুযোগ দিয়েছেন। করুণাময় আল্লাহ তাঁর করুণাতে জগৎবাসীকে সিক্ত করেছেন। সৃষ্টির প্রতি দয়া দেখিয়েছেন। তাঁর দয়ায় আমরা পরিশুদ্ধতা লাভে সক্ষম হয়েছি। যাবতীয় এবাদত তাঁর উদ্দেশ্যে। আল্লাহ আমাদের এবাদত কবুল করুন। আমিন।

এবারের রোজা খুবই আনন্দে কেটেছে। সিয়ামের প্রচেষ্টাকে আল্লাহ অত্যন্ত সহজ করে দিয়েছেন। ক্ষুধা, তৃষ্ণা তেমনভাবে অনুভূত হয়নি। দিনগুলি মৃদু ছিল। নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া। সবচেয়ে আনন্দের বিষয় হচ্ছে কাজের পরিবেশ। পুরো একমাসই কাজে কেটেছে কিন্তু কাজের চাপ কোন ভাবেই অনুভূত হয়নি। সহকর্মী যারা ছিল খুবই আন্তরিক ছিল, মানবিক প্রাণে আমাদের প্রতি সহমর্মিতা দেখিয়েছে।

আমি যে শিফটে কাজ করি; আমাদের ম্যানেজার, শিফট ম্যানেজার, সেকশন ম্যানেজার, সুপারভাইজার, লাইন ম্যানেজার, টিম লিডার প্রত্যেকে আমাদের দিকে বাড়তি নজর দিয়েছে। রোযা পালনে কোনভাবে যাতে ব্যাঘাত না ঘটে সে ব্যাপারে সচেষ্ট থেকেছে। বারবার আমাদের সুবিধা, অসুবিধার খবর নিয়েছে। পর্যাপ্ত বিরতি নিতে আমাদের কোন অসুবিধা হয়নি।

এই প্রথম রমযান মাসে বিধর্মীদের সাথে কাজ করেছি কিন্তু মনে হয়নি আমি কোন বিজাতীয় পরিবেশে কাজ করছি। মনে হয়েছে সম ধর্মের, সম প্রাণের মানুষ একে অন্যের প্রতি সহানুভূতিশীল। যদিও আমি মুসলমান ধর্মাবলম্বী; তবে অন্যান্য ধর্মের মানবিক আচরণ আমার মন ছুঁয়ে গেছে। মনে হয়েছে আমরা প্রত্যেকে এক মানব ধর্মের অন্তর্ভুক্ত। আমরা ধর্মে, গোত্রে বিভক্ত হলেও মানবতার প্রশ্নে আমরা এক। মহামানবের সাগর তীরে আর্য, অনার্য, হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান সবাই এক। এক স্রষ্টার সৃষ্টি। মানবতা আমাদের একমাত্র ধর্ম।

আজ ঈদ। এমন আনন্দের ঈদ দীর্ঘদিন উদযাপন করিনি। আজ সত্যিই মনের ভিতরে আনন্দের উদগীরণ হচ্ছে। সত্যিই মনে হচ্ছে মানব জন্ম খুব আনন্দের।

আমি আমার ঈদানন্দ প্রত্যেক সহকর্মী, প্রত্যেক ম্যানেজমেন্ট সদস্যদের সাথে ভাগ করে নিচ্ছি। অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। দীর্ঘ একমাস তাঁরা যেভাবে মানবিক হাত, মানবিক হৃদয়ের পরিচয় দেখিয়েছে আমার মনে তা দীর্ঘস্থায়ী ছাপ রাখবে। তাঁদের এই আচরণ মানুষকে নতুন করে চেনার সুযোগ দিয়েছে।

জগতের আলো-অন্ধকারে আমরা প্রত্যেকে ভুল করি, ভুল ভাবি। ভালোভাবেই কোন কিছু জানার পূর্বেই সিদ্ধান্ত নিয়ে নেই। এবারের রোজা আমাকে কিছু মাত্রায় হলেও মানবিক পুনঃপাঠের সুযোগ দিয়েছে, এই পাঠ পরবর্তী জীবনে অনেক কিছু ভাবতে সাহায্য করবে বলে আশাবাদী।

আমি আজকের ঈদে প্রত্যেকের প্রতি মানবিকতা দেখানোর আহ্বান জানাচ্ছি। হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খ্রিস্টান এক স্রষ্টার সৃষ্টি। আমাদের মাঝে কোন ভেদাভেদ নেই। ধর্মবিশ্বাসে ভিন্নতা থাকলেও মানবিকতায় আমরা এক সারিতে থাকি। রক্তের রঙে যেখানে ভিন্নতা থাকে না মানবিকতার রঙেও আমরা কোন ভিন্নতা রাখবো না। ঈদ মোবারক।

জিততে গেলে হেরে যাব

এক
— ও মা, আজকে আমাদের গল্পটা করো না!
— এখন হাত আট্‌কা। অপ্‌সার হই, দুফোরব্যালা খায়ে উঠে করবানে।

মা-দিদিমা একটা নতুন ঠাকুরমার ঝুলি বুনেছে ঠোঁট দিয়ে, সে নিয়তিবৃক্ষের ডালে দোল খায়। ভেতরটা ভাঙা বাসার রূপকথায় ভর্তি; কিন্তু যে-জীবনে প্রাণে বাঁচাটাই হুররে, খেতে পাওয়াই ভি-সাইন, সেখানে দু’চারটে তছনছ-কে কপালে হাতের ঘা মেরে ভুলে যাওয়াই মঙ্গল।

— আমাদের বাড়ি ধরো এক বিঘে জমির ওপরে একতলা, তাতে চারটে ছাদওলা পাকা ঘর, লাল শানমেঝে। পেছনে পুকুর, বারদুয়োরে বেল আর জগ্‌ডুমুর গাছ। ডেয়োঁ পিঁপড়ে বেল খেয়ে যায়। ভিটের বাঁদিকে সেনগুপ্ত বাড়ি; সাবিত্রী, মালতী, মল্লিকা, রেবা, শিপ্রা এই রকম আটটা মেয়ে তাদের। এক মেয়ের বিয়ে দিতে দিতে আর এক মেয়ের বিয়ের বয়েস পার হয়, তার ওপর মল্লিকা শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার তিন মাসের মাথায় সিঁদুর মুছে ফেরত এল।

মা ছোট্ট কাশি দিয়ে প্রসঙ্গ পালটায় : — বাড়িতে নাটমন্দির আছে, দোল-দুর্গোৎসব হয়, কালীপুজো মানে শ্যামাকালী, লক্ষ্মী, সরস্বতী, ব্রত, ষষ্ঠী, সত্যনারায়ণ ইস্তক। তোমার বাবাই করেন; উনি দক্ষিণের আবাদে গেলে তখন জ্যাঠামশাই।

— পুজো হয় বলছ কেন, বলো আগে হতো।
— একই কথা। মোটে দশ-এগারো বছর বন্ধ, ফিরে গেলে আবার সব ধুমধাম ক’রে চালু হবে, বাড়ি বিনিময় ক’রে তো আসিনি তোমার কাকাপিসির মতো।

— হ্যাঁ যাও, তোমারে বাড়ি খাওয়ায় দেবেনে। অনামী পপাটি ঘোষণা ক’রে সরকার সেখেনে কবে জাতভাইগো বসায় দেছে।
ননীবালা মেয়েকে স্বপ্নের চিড়িয়াখানা থেকে বের ক’রে আনতে চায়। মায়া ছেলেমেয়ে নিয়ে ইন্ডিয়ায় চলে আসার পর ফাঁকা বাড়িতে নিজের নিঃশ্বাসের শব্দে নিজেরই ভয় লাগত নির্মলের। যাতে গোপালসেবাটুকু বন্ধ না হয়, শ্রীফলতলা গ্রামের কিঙ্কর চক্রবর্তীকে সপরিবারে বাড়িতে রেখে টিনের স্যুটকেসে খানকয়েক বই নিয়ে সে বেনাপোল সীমান্ত অতিক্রম করে। বছর দুই পরে কিঙ্করকে দ্যাখা গেল বসিরহাটে, অগ্রদানী বামুন এ-বঙ্গে এসে মাছের ব্যবসায় লেগে গেছে।

এমনভাবে কত-যে পরিবার ছিঁড়েছুটে গেল; শিক্ষিত লোকেরা তবু চিঠিপত্র লিখে আত্মীয়দের একত্র করার উপায় খুঁজত, নিরক্ষর মানুষের আপনার জন ফিরে পেতে দশ-বিশ বছর পার।
— বাগেরহাটে-বাড়ি তোদের এক পিসির (আপন পিসি না) বিয়ে হয়েছিল মোল্লারহাট। মুসলমান এলাকা, দেশ স্বাধীন হতে না হতে তারা হিন্দুবাড়ি থেকে মেয়ে তুলে আনতে লাগল। একদিন দুদিন রাখে, তারপর ফেরত দিয়ে যায়। জবা তখন নতুন বউ, তার শ্বশুরবাড়ির সবাই — কাউকে কোনও খবর না — রাতারাতি পালিয়ে হিন্দুস্তানে চলে এল। তারও এক যুগ পরে তোদের বাবা অগ্রদ্বীপের মেলায় গেছে, হঠাৎ এক মেয়েছেলে এসে, বলা নেই কওয়া নেই, হাত ধ’রে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছে! বউটার দশ-এগারোর বাচ্চা মেয়ে দেখেশুনে খুবই বিরক্ত; বাবাকে এসে বলছে, তুমি মাকে আর মেলায় এনো না। ততক্ষণে বাবা-মা সেই অপরিচিতের পায়ে ঢিপঢিপ প্রণাম।

অবশেষে নির্মল জবাকে সঙ্গে ক’রে এল বারাসাতে, খুড়তুতো ভাইয়ের কাছে। মেয়েকে জড়িয়ে ধরে বৈদ্যনাথের সে-হাপুস কান্না যদি দেখতে!

চাঁদ হঠাৎ বলে, বদ্যিনাথকাকু তখন খালি গায়ে একটা নীল রঙের লুঙি প’রে ছিল না? আর জবাদিদি ঘোমটা দিয়ে ছিল?
— তুই কী ক’রে জানবি? তোর তো জন্মই হয়নি!
— আমি সব দেখতে পাই। সেদিন বর্ষাকাল, রাস্তায় কাদা ছিল, বাবা একবার পিছল খেয়ে পড়ে গেছিল বারাসাত স্টেশানে।
— পাগলের ছাতা! দোল পূর্ণিমার পরের কৃষ্ণা একাদশীতে গোপীনাথের মেলা, তখন বৃষ্টি কোথায়?
— হইছিল, তোমার মনে নেই।

বাসুর কিন্তু দাঙ্গার স্মৃতি ফটফটে পরিষ্কার।
— মা, তোমার খেয়াল আছে, একবার সন্ধেবেলা ভৈরবের ওপারে হিন্দুপাড়ায় বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিচ্ছিল মুসলমানেরা, আকাশ পুরো লাল, তারপর নদী পার হয়ে সেনহাটিতে এসে পড়ল মশাল হাতে পঁচিশ-তিরিশ জন লোক, আমরা একটা জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে পালাচ্ছিলাম, শিউলি তোমার কোলে, এক মিঞাভাইয়ের বাড়ি গিয়ে লুকিয়ে থাকলাম সারা রাত। ওরা কী যেন খেতে দিয়েছিল?

সঞ্জুর অতীতও জাগ্রত হয় তখন।
মুসলমানরা তারপর আক্রমণ করল আমাদের। মিঞাভাইয়ের দুই ছেলে সারা রাত বন্দুকের গুলি ছুঁড়তে লাগল।

মায়া হেসে ফ্যালে :
— এত কিছু হয়নি। তোর বাবা গেছিল যশোরে, ন’-মামার বাড়ি। সন্ধেবেলা আমি রান্নাঘরে, হঠাৎ মনোজ ঘটকের ছেলে এসে বলে, বৌদি খবর পালাম আজ হিন্দুপাড়া লুঠ করবে ওরা। রায়েট বেধে যেতে পারে। এই গোনে বাচ্চাদের নিয়ে লালু মিঞার বাড়ি যেয়ে ওঠো। লালু আড়তদার, খুলনা ব্যবসায়ী ইউনিয়ানের কী বলে… সহ-সভাপতি। কড়াইতে যেমন তরকারি তেমনি প’ড়ে থাকল, বাড়ি হাট ক’রে খোলা, যেয়ে দেখি আমাদের মতো প্রায় একশোজন, বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে বসে আছে। লালুর ছেলে ব’লে গেল আপনারা নিশ্চিন্তে থাকেন, তামার টাটে গুড় আর বস্তায় চিঁড়ে রেখে গেলাম। জল দিলি তো ছোঁবেন না, ঘরের পেছনে টিউকল, হাত-কোশ ক’রে খেয়ে আসবেন।

— তারপর কী হল?
— আর কী হবে! সিদ্ধান্তপাড়ার লোকজন সজাগ হয়ে গেছে বুঝে মোল্লারা আর এগোল না। আমরাও সারা রাত্তির না ঘুমিয়ে সকালবেলা বাড়ি ফিরে রান্নাবান্না আদাড়ে ফেলে আসলাম।

চাঁদ বলল, উঁহু মুড়িচিঁড়ে খেতে দেয়নি। দিয়েছিল … সে ঠোঁট সুঁচোলো ক’রে ঘরের ছাদের দিকে তাকিয়ে থাকে … চা আর সন্দেশ।
— হ্যাঁ, তুই অন্তরীক্ষ থেকে দেখেছিলি তো!

সে যাই হোক, মায়ের বোনা ঠাকুরমার ঝুলি বড্ড সাদা-সাদা। বরং মনিদার কাহিনিতে একদিকে নদীর আকাশ ন্যাড়াপোড়ার রাতের মতো আগুনের স্ফুলিঙ্গ ওগরাচ্ছে, আর একদিকে অনেক বাচ্চা বালক ধ্রুব-র আদলে ‘হা-কৃষ্ণ হা-কৃষ্ণ’ ক’রে ছুটছে জঙ্গলের ভেতর দিয়ে।

ছুটতে ছুটতে তারা কলোনির পঞ্চু, ছোটবাবু, বাবলা, খোকোন, কানু হয়ে গেল।
— এ চাঁদ, মাঠে যাবি না?
— মা, এখন আর আমাদের গল্প করবে না কিন্তু। আমি খেলে আসি, তারপর।

.
(শুরু হল)

বিশ্বাস করার আগে, সাবধানে যাচাই করে নিন

১. “কিছু শব্দের উত্থান বা ধ্বংস করার ক্ষমতা রয়েছে। সেগুলিকে বুদ্ধিমানের সাথে চয়ন করুন, কারণ তারা আপনার ভাগ্যকে রূপ দেবে।”

২. “অহংকার আপনার বন্ধু নহে অহংকার উগ্রতা, আপনার ভালো সময় ও জীবনের শত্রু, তারা কখনোই আপনার সুসময় সামনে আসতে দেবেনা অপরদিকে নম্রতা সাফল্যের চাবিকাঠি।”

৩. “আপনার কর্মগুলি আপনার চরিত্রকে সংজ্ঞায়িত করে। তাই আপনার পথ অন্যের প্রতি সদয় হতে বেছে নিন, মহৎ হতে বেছে নিন, আরও ভাল হতে বেছে নিন এটাই জীবনকে পূর্ণতা দেবে পরিশুদ্ধ করবে।”

৪. “সাফল্যের রাস্তা নম্রতা, সহানুভূতি এবং কঠোর পরিশ্রমের দ্বারা প্রশস্ত হয়।”

৫. “মহানতার যাত্রা বাধা দিয়ে পরিপূর্ণ, কিন্তু যারা তাদের ব্যর্থতাকে আলিঙ্গন করে তারাই শিখরে পৌঁছাতে পারে।”

৬. “কারুর কর্মের শক্তিকে কখনই অবমূল্যায়ন করা যায় না। সেগুলিকে সাবধানে বেছে নিন, কারণ তারা অনন্তকাল ধরে আলো জ্বালাতে পারে তারা আপনার বা আপনার ভবিষ্যৎ সময়ে মুল্যায়িত হবে।”

৭. “সত্যিকারের শক্তি অন্যদের ছোট করার মধ্যে নয়, বরং তাদের উপরে তোলা এবং তাদের নিজেদের সেরা হওয়ার ক্ষমতায়ানের মধ্যে রয়েছে।”

৮. “অহংকার সাময়িক গৌরব আনতে পারে, কিন্তু নম্রতা অনন্ত সম্মান আনে।”

৯. “আত্ম-উন্নতির যাত্রা একটি একক পদক্ষেপ দিয়ে শুরু হয়। আজই সেই পদক্ষেপ নিন এবং আপনার কর্মগুলি আপনার পক্ষে কথা বলুক।”

১০.”অন্ধ বিশ্বাস একটি মানসিক ব্যাধি, এবং এর আঁকড়ে ভয়ঙ্কর প্রতারণা এবং চার্লাটানদের গল্প লুকিয়ে থাকে। তাই, কোনো কিছুকে বিশ্বাস করার আগে বা অন্ধভাবে বিশ্বাস করার আগে, সাবধানে যাচাই করে নিন।”

পবিত্র রাতের প্রার্থনা

আজ সেই মহামান্বিত রাত হতে পারে। লাইলাতুল কদর। কুরআনের বর্ণনা অনুসারে এই রাত হাজার মাসের চেয়ে উত্তম, অর্থাৎ এক রাতের ইবাদত হাজার মাসের ইবাদতের সমতুল্য হবে।

প্রিয় ভাই, বন্ধু আল্লাহর কাছে নিজেকে সমর্পণের এই সুযোগ কিছুতেই হারাবেন না। পরিশুদ্ধ মনে আল্লাহর সামনে হাজির হন আল্লাহ নিশ্চয়ই আপনাকে কবুল করবেন।

আমি অতি নাদান এক বান্দা। জুতোয় লেগে থাকা ধূলিকণার চেয়েও নগণ্য। আল্লাহর করুণা ভিক্ষার যোগ্যতাও হারিয়েছি, তবু তাঁর কাছে ভিক্ষার হাত উঠিয়েছি। আল্লাহ চাইলে পৃথিবী পরিমাণ গুনাহ মাফ করে দিতে পারেন। আল্লাহ বলেছেন কোন বান্দা যেন তাঁর রহমত থেকে বঞ্চিত হয়েছে মনে না করে। যে খাস দিলে আল্লাহর কাছে ফিরে আসে আল্লাহ তাকে কোনভাবেই বঞ্চিত করেন না। আমি আল্লাহর রহমতে বিশ্বাসী, নিশ্চয়ই আল্লাহ তার বান্দাকে করুণা করবেন।

পবিত্র রাতের উসিলায় নতুন করে শুরু করার সুযোগ দিবেন। হে আল্লাহ ঘোর পাপী এক বান্দা তোমার কাছে ফিরবার আকুলতা দেখাচ্ছে, তুমি তাকে কবুল কর।

ভাই, বন্ধু আমার জীবন হচ্ছে পাপের খনি। আপনাদের ভাই বন্ধু হওয়ার যোগ্যতা আমার কোনদিন ছিল না। কাঁধের ফেরেশতারা কোনদিন ভালো কিছু লিখেছে বলে মনে হয় না। জীবনের চলাফেরায় আপনাদের অনেকের সাথেই ভুল বুঝাবুঝি মন কষাকষি হয়েছে। আপনাদের অনেকের সাথেই জেনে না জেনে অন্যায় করেছি। সম্মুখে সদালাপ আড়ালে গীবত করেছি।

আল্লাহ বলেছেন গীবত হচ্ছে মৃত ভাইয়ের মাংস ভক্ষণ, আমার কৃত সর্বপ্রকার অন্যায় থেকে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আল্লাহর ওয়াস্তে আপনারাও আমাকে ক্ষমা করে দিবেন। আল্লাহর হক চাইলে আল্লাহ ক্ষমা করতে পারেন কিন্তু বান্দার হক বান্দা ক্ষমা না করলে আল্লাহ ক্ষমা করতে রাজি হন না। আমি অনেক সময় জেনে না জেনে বুঝে না বুঝে অহেতুক নাক গলিয়েছি। যে বিষয় আমি সংশ্লিষ্ট নয় সে বিষয়েও পান্ডিত্য দেখানোর চেষ্টা করেছি। জ্ঞাতে, অজ্ঞাতে অনেকের মনে কষ্ট দিয়েছি, নিজেকে বড় করে দেখাতে গিয়ে অন্যকে ছোট করার ধৃষ্টতা দেখিয়েছি।

অনুশোচনার আগুনে মানুষই পরিশুদ্ধ হয়। আমি আজ অনুতপ্ত। আল্লাহর দোহাই আমার প্রতি কোন রাগ, বিরাগ রাখবেন না। আপনাদের মহত্ব দিয়ে আমাকে ক্ষমা করে দিবেন। আমি জুতোয় লেগে থাকা ধূলিকণা, আপনাদের ক্ষমায় আমার মুক্তি লাভ ঘটতে পারে। আল্লাহ আমার আপনার সবার প্রতি উদার হোন। আপনাদের মনে আমার জন্য সামান্য করুণা জাগ্রুক করুন। আপনারা আমাকে ক্ষমা করতে সক্ষম হোন।

পবিত্র রাত্রির দোহাই গীবতের ভয়াবহ পাপ থেকে আল্লাহ সবাইকে হেফাজত করুন। আমিন।

কবিতায় নতুন ধারাঃ স্বপ্ন নয় বাস্তবতা

আমার কাছে কবিতার চেয়ে লাবণ্যময় তেমন কিছুই নেই। আমি সুদীর্ঘ দিন যাবত কবিতার সাথে আছি। কবিতা আমাকে হাসায়…. কবিতা আমাকে কাঁদায়… কবিতা আমাকে সজীবতা দেয়, প্রাণের পরশ দেয়।

কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে, এখন কবিতার আগের সেই জৌলুশ আর নেই। পাঠক কবিতা পড়েন না, পড়তে চান না। কেন পড়েন না…. এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন! এর কারণ হল, কিছু কবি আধুনিকতার নাম করে কবিতার বারোটা বাজিয়ে দিয়েছেন। তারা শব্দের জোড়াতালি দিয়ে এমন সব কবিতা লিখেন, যার পাঠোদ্ধার বা মর্ম হয়ত কবি নিজেই জানেন না! আর পাঠক কীভাবে এই কবিতা পড়ে আনন্দ লাভ করবেন? তারচেয়ে বরং কবিতা না পড়াই অনেক অনেক ভালো। এটাই হলো বাস্তবতা। এই যখন অবস্থা তখন প্রিয়কবি ফাহিম ফিরোজ কবিতাকে ভিন্নতর কিছু প্রচেষ্টা করছেন। কবিতাকে আবার সম্মানিত পাঠকের হৃদয়ের কাছাকাছি নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। আর এই চেষ্টার নাম হল, নতুন ধারা।

বাংলা আমাদের মাতৃভাষা, প্রাণের ভাষা। এই ভাষায় আমরা কথা বলি, ভাব প্রকাশ করি। এই ভাষাতেই আমাদের হাসি, আমাদের কান্না, আমাদের সাহিত্য সাধনা। তাই আমরা অত্যন্ত গৌরব এবং অহংকারের সাথে বলি, বাংলা ভাষা আমাদের প্রাণের চেয়েও প্রিয়। কারণ এই ভাষার জন্য আমরা রক্ত দিয়েছি, জীবন দিয়েছি। আর আমাদের বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস হাজার বছরের অধিক পুরানো। এই সুদীর্ঘ ইতিহাসের পেছনে প্রভাব বিস্তার করে আছে সংস্কৃত, উর্দু, ফার্সি, পর্তুগীজ, আরবি এবং ইংরেজি অনেক শব্দমালা।

সরাসরি অথবা পারিভাষিক ভাবে এই শব্দ কে আমরা স্বাগত জানিয়েছি। এমনকি এখনও চলছে। মূলত একটি ভাষায় অন্য একটি ভাষার শব্দের এই আত্মীকরণ রোধ করা একটি কঠিন কাজ। ফলশ্রুতিতে চেতনে হোক কিংবা অবচেতনে হোক আমরা তাদের উপস্থিতি মেনে নিয়েছি অথবা মেনে নিতে বাধ্য হয়েছি। আলোচনার স্বার্থেই এই প্রসঙ্গটি উল্লেখ করেছি। অন্যথায় নতুন ধারার আলোচনা অসম্পূর্ণ থাকবে বলে আমার ধারণা।

জ্বী… আমরা কবিতায় নতুন ধারার কথা বলছি। কবিতায় নতুন ধারা নিঃসন্দেহে একটি আধুনিক চেতনার নাম। একটি বিপ্লবের নাম। স্বাদে, গন্ধে ভরপুর অপূর্ব একটি ব্যঞ্জনার নাম। আর যার হাত ধরে নতুন ধারার সাহিত্য, নতুন ধারার কবিতা আজ কোনো স্বপ্ন নয়; নিতান্ত বাস্তবতা… তিনি হলেন সাহিত্যে নতুন ধারা সৃষ্টির সার্থক রূপকার প্রিয়কবি ফাহিম ফিরোজ।

যার অক্লান্ত প্রচেষ্টায় নতুন ধারার কবিতা দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে। নতুন ধারার কবিতাকে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য তিনি ইতিমধ্যেই দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রোগ্রাম করার কথা ভাবছেন। আমরাও বিশ্বাস করি, নতুন ধারার কবিতা নিয়ে যতবেশি সম্ভব আলোচনা হবে, গঠন মূলক সমালোচনা হবে… নতুন ধারাও ততো বেশি সমৃদ্ধ এবং বিকশিত হবে। মূলতঃ নতুন ধারার কবিতার কাঠামোতে থাকবে শিথিলতা বা শৈথিল্য।

এবার আসা যাক, নতুন ধারার কবিতার ইশতেহার প্রসংগে। যে কোনো বিষয়ের সফলতার জন্য দরকার একটি রোড ম্যাপ। যথার্থ নির্দেশনা। নতুন ধারার সম্মানিত প্রতিষ্ঠাতা কবি ফাহিম ফিরোজ নতুন ধারার সারথিদের জন্য একটি ইশতেহার ঘোষণা করেছেন। বলা দরকার যে, বাংলা সাহিত্য জগতে এটাই প্রথম ইশতেহার। এই ইশতেহারে তিনি বলেছেন, “করোনায় যেভাবে বিশ্ব আজ দলিত-মথিত, দ্রুত পরিবর্তিত, মৃত্যু, আর্তনাদ, শোক, একাকিত্ব, সন্দেহ, খাদ্যাভাব, অর্থ সংকট, বেকারত্ব, জন্মহীনতা– অতীত বিশ্বে কখনো এমন ভয়ংকর চিত্রের মুখোমুখি হয়নি মনুষ্য সমাজ। কবে এই অতিমারীর মুণ্ড কাটা যাইবো, কেউ নিশ্চিত কইতে পারেনা। চারদিকে জীবাণু হাতিয়ারের ইংগিত। বিশ্ব জুড়ে লেখককুল তাদের সৃষ্টিতে অতিমারীজনিত বিষয়াদি অগ্রাধিকার দেবেন এডাই সত্য। আধুনিক বিশ্বের মৃত্যু ঘইটছে। নতুন বিশ্ব এখন প্রসারিত। সমস্ত কিছুই দ্রুত আদল বদলাচ্ছে। আধূনিকের মতো অভেদ্য কাব্য নয় এখন, কিঞ্চিত সহজবোধ্য, কবিতার কোনো অংশ কণা লইয়া দীঘল ভাবনার অবসর কম রৈবে। নন্দন তত্ত্ব অনেকাংশে শক্তি হারাবে। শিল্প, ছন্দ, অছন্দ রৈবে। উপমা, রুপকল্পে কাঠিন্য নয়, সহজ স্বাভাবিক রুপ রৈবে বা না থাইকলেও ক্ষতি নাই। কাব্য গঠনে শিথিলতা রৈবে।

যাহা আধুনিকে আছিলোনা। মানুষ মৃত্যু আতংকে কম বেশি ধর্মমুখী হবে। আধুনিকরা যাহা নিষিদ্ধ কৈরছিলো। আস্তিক – নাস্তিক রৈবে। পরিহার্য রাজনৈতিক কোন্দল। প্রকৃতি, বিয়ং (রহস্যময়তা), কল্পনা, অলৌকিকতা জরুরি। নতুন শব্দ খেইল, ভোগবিমুখতা, নির্জনতা থাকবে। অসাম্যতার মৃত্যু ঘটিবে। নয়া পৃথিবীর এগিয়ে যাবে প্রগতির চাকা ছুঁয়ে, সবুজ ও মৃত্তিকার মেলবন্ধনে। শুধু ইতিহাস ঐতিহ্য নয়, এবার পুরাকীর্তি গণ্য হবে অধিক। পুরাকীর্তি না থাইকলে সে ইতিহাস মিথ্যাময়।

অথচ আধুনিকতায় ইতিহাসকই কম হৈলেও গুরুত্ব দেয়া হৈছিলো। ১. আত্মীয় আর সম্পর্ক বাচক শব্দের নাম সহ প্রয়োগ অপরিহার্য। ২. জরুরি প্রমিত ভাষার লগে লোকাল ভাষার কোমল মিশ্রণ। এদুটো বৈশিষ্ট্য নতুন পৃথিবীর নতুন ধারায় কবিতায় অনস্বীকার্য। যাহা আধুনিকে দূরের কথা, হাজার বছরের অধিক জীর্ণ বাংলা কবিতায়ও ছিলো না। প্রথমটি কারো কবিতায় থাইকলেও তা বিচ্ছিন্ন ঘটনা মাত্র। কিন্তু নতুন ধারার কবিতায় সবার জন্য তা পিনাবদ্ধ। বহুরৈখিকতা আবশ্যক। আধুনিকের মতো শুধু মৌল নয়, গৌনদের কথাও কইবে। সমাজ কাঠামো নির্মাণে তাহাদের প্রভূত অবদান। ভালোবাসা, কাম, নারীর সৌন্দর্য ও ক্ষমতায়ন বৈধ। নতুন পৃথিবীতে সব কিছুই নবীকরণ। আধুনিকতার লগে যার দোস্তী ভাব নাই। করোনাকালীন সৃষ্ট সাহিত্যই বিশ্বে ‘নতুন ধারা’। এটা করোনাকালে ধূমকেতুর মত হঠাৎ, দৈবিক সৃষ্টি। কোনো বিবর্তন নয়। বিবর্তন ঘটে ধীরে। জয়তু নতুন ধারা।”

প্রিয় পাঠক, সত্যি কথা বলতে কী, ইশতিহারটি মনোযোগ দিয়ে কয়েকবার পাঠ করুন। আশাকরি তাহলে আপনি নিজেই নতুন ধারার সাহিত্য সম্পর্কে একটা সম্যক ধারণা পেয়ে যাবেন। মূলত নতুন ধারা হলো প্রাণ খুলে লেখার একটি প্ল্যাটফরম। চাষীরা যেমন মনের সমস্ত মাধুরি মিশিয়ে খেতে-খামারে যেমন খুশি চাষ করে থাকেন, আপনিও আমাদের নতুন ধারার সাহিত্যে যেমন খুশি মজা নিতে নিতে লিখতে পারবেন। স্বাধীন ভাবে শব্দ চয়নের অবারিত সুযোগ পাবেন।

প্রিয়বন্ধুরা, এবার আসুন নতুন ধারার কবিতা সম্পর্কে কিছুটা ধারণা নিতে চেষ্টা করি। নতুন ধারার মানে নতুন আনন্দ, চিন্তা-চেতনা, ভালো লাগা, মন্দলাগা এককথায় আমাদের নিত্যদিনের জীবনের টুকরো টুকরো ঘটনা থেকে শুরু করে সবধরণের সমস্যা একটি আনন্দঘন ভিন্ন মাত্রার কবিতার মাধ্যমে প্রকাশ করা।

বাংলাদেশ, পশ্চিম বাংলা সহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের বাংলাভাষী কবি এবং লেখকগণকে এই ধারায় ঐক্যবদ্ধ করাই ত আমাদের লক্ষ্য। এই ধারার কবিতার গঠন হবে সংক্ষিপ্ত, রস হবে প্রগাঢ়। যাতে কবিগণ থাকবে স্বাধীন। ইচ্ছেমতো প্রমিত শব্দের সাথে হারিয়ে যেতে থাকা আঞ্চলিক শব্দের ব্যবহার করতে পারবেন। আর পাঠকও সম্পূর্ণ কবিতা পড়ে রস আস্বাদন করতে পারবেন। এতে অহেতুক শব্দের বাড়াবাড়ি নেই। কঠিন কোনো বাক্য বিন্যাস নেই। কবিতার অর্থ বুঝতে পাঠককে গলদঘর্ম হতে হবে না। ডিকশনারি ঘাটতে হবে না। কবির ভালোবাসা ও বিশ্বাসে কবিতা চারাগাছ এর মতো বড় হবে। আসুন এই কথাগুলো মাথায় রেখে আমরা নতুন ধারায় কবিতা লিখি।

সম্মানিত পাঠক, এবার নতুন ধারার সম্মানিত প্রতিষ্ঠাতা কবি ফাহিম ফিরোজ এর কবিতা থেকে একটি উদাহরণ দেয়া যাক।

কবিতাঃ কাগজের ঘর/ ফাহিম ফিরোজ

মাথা ঝারা দিলেই কয়লা বের হয় নাকে-মুখে…
পা’র নখে, ঝোঁকে ঢুকে হিমবাদী হাওয়া
কান দিয়ে বের হয়। মাসি, আমি কী আছি রে!
রইছি রইছি ঠিক, টিক্ বিয়াইন?
রেডিমেট খাটের উচ্চতা নিয়ে নভো ছোঁয়া
মিছাই প্রয়াস! কই যামু, পাবো খোয়ানো অতীত? কইল কইল তাই অনীল চাকমা
বুঝোনা শেখ পো? শূন্যে কাগজের ঘরে থাকো
সালান্তর… কালান্তর!

নোট= রইছি- রয়েছি। মিছাই- মিথ্যাই, কইলো- বলল। শেখ পো- শেখের ছেলে। কই যামু- কই যাব।

নতুন ধারায় লেখা কী অসাধারণ একটি কবিতা। অযথা শব্দ চয়ন যেমন নেই, তেমনি প্রতিটি শব্দ মেদহীন। বাংলা ভাষার প্রমিত শব্দাবলীর সাথে আঞ্চলিক শব্দের কী অসাধারণ মেলবন্ধন। কবিতাটি পাঠক করলেই বুঝা যায়, ইহা কবির প্রাণের পরশ দিয়ে লেখা। উপমা, অলংকার, অনুপ্রাস এবং রূপকের নামে কবিতাকে দুর্বোধ্য করে তোলা হয়নি। একেবারেই সহজ-সরল এবং সকল শ্রেণির পাঠকের বোধগম্যর সীমার মধ্যে। এই ধরণের কবিতা নিঃসন্দেহে পাঠককে বেঁধে রাখবে বলে আমার গভীর বিশ্বাস।

তাই আমরা বলছি, নতুন ধারা কবিতার জগতে একটি বিপ্লব। দুর্বোধ্যতা এবং কাঠিন্যের জন্য যে পাঠক কবিতা পড়তে ভুলে গেছেন, কবিতার বই পড়তে ভুলে গেছেন…. আমার দৃঢ় বিশ্বাস নতুন ধারার কবিতা আবার সেই পাঠককে ফিরিয়ে আনবে। আর আমরাও ফিরে পাব কবিতার হারানো ঐতিহ্য। জয়তু নতুন ধারা।।
শেষ করছি নতুন ধারায় লেখা আমার একটি কবিতা দিয়ে—-

সুবাসিত আতর // জসীম উদ্দীন মুহম্মদ
———————
রাইত পোহালেই যে কবিতার প্রসব অইত জ্বর
সে-ই অহন আজিব আন্ধার রাইতের ঘর!
সখিনা তবুও রোজ রাইতে চিল্লাইতে চিল্লাইতে
কয়- “সবাই তরা সব্বাই সুখ নিবার চাস
দুঃখগুলো কেন আমার বাড়িত পড়ে রয়!

জানস, হামারও অনেক অনেক সুখ আছে
এই যেমনঃ দাঁত ব্যথার সুখ
মেরুদণ্ডের হাড্ডি ক্ষয়ে যাওয়ার সুখ
রোজ রাইতে একলা একলা থাকবার সুখ!

হুন, তবুও আমার কোনো দুখ নেই…
একদিন পাহাড় ছিলাম আর অহন পাথর
তোরা চোখ-মুখে মাইখ্যা নে সুবাসিত আতর!

.
————————–
লেখকঃ সহযোগী অধ্যাপক, সরকারি আনন্দ মোহন কলেজ, ময়মনসিংহ। 01712536755

নববর্ষ

images (1)

দেখতে দেখতে এ বছরও গড়িয়ে গেল
অর্জুন শালের অতিকায় শুকনো পাতা
গাছের মায়া ছেড়ে ভাসতে ভাসতে হাওয়ায়
লাল নীল সবুজ হলুদ গিরগিটি চোখের পাতায়
আলপনা দিল এবছর ভালো যাবে নিশ্চয়ই
ত্বক জ্বালিয়ে দেওয়া দাবদাহ লাইন দিল
খাসির মাংসখণ্ডের দোকানে

নতুন জামার অভাবে এক কুচি রুমালেও খুশি তিরতির
আড়াই হাজার কিলোমিটার দূর থেকে সমুদ্র ঢেউ
ফিসফিস বলে গেল ভালবাসি ভালবাসি