বিভাগের আর্কাইভঃ জীবন

টুকরো আমি

riaaa অনেকগুলো ছবি, অনেক গুলো দিন, অনেকগুলো সময় শুধু তোমাকে ঘিরে। যা শুধু আমার। যা কেউ নিতে পারবে না। জানি না এইসব মুহূর্ত তোমারও ছিলো কিনা। আমি কিন্তু মুহূর্তেই বাঁচি।

একরাশ ভিজে হাওয়া পাতা উলটে দিয়ে গেলো মনের অতীত অ্যালবামের। কতকিছু ছিঁড়ে গেছে। ছিঁড়ে গেছে ছোটবেলার খাতা, ছিঁড়ে গেছে পুতুলের জামা, ছিঁড়ে গেছে সেইসব ডায়েরি, যেখানে লুকিয়ে ছিলো আমার ভালোবাসার কথারা। ছিঁড়ে গেছে আমাদের একান্ত সময়। তাদের সমাধিস্থ করার পরে ছিঁড়ে গেছি সেই অভিমানী আমি।

জানি না কেন তোমার দিকেই চোখ? জানি না কেনো তোমার মনেই মন? কেনো যে তোমায় ভেবে ভেজে চোখের কোন! কয়েক কোটি জন্ম হতেও রাজি, কোনো জন্মে একবার যদি ডাকো!

এক বুক ভালোবাসা রেখেছি, যা শুধু তোমাকেই দিয়েছি। তোমাকেই দিতে চাই। রাতের আকাশে তারা গোনার সঙ্গে সঙ্গে কোটি কোটি টুকরো হয়ে ছড়িয়ে পড়ে রূপকথা মন। খুঁজে বেড়ায় কিছু অর্থহীন বেঁচে থাকার রসদ।

—————-
আঁকা: Ritika Dasgupta

আমাদের বেড়াল আমাদের মতো হয়নি

আঠাশ (ক)
বাবার ঘরে ঢুকতেই হাতে একখানা থিন বিস্কুট আর ঠোঁটে আঙুল দিয়ে চুপ থাকার ইশারা। চাঁদ দেখল, তর্জনীর সমান্তরালে বাবার দু’গালে জলের দুটো সোঁতা। মা গাইছে “যে জানে না পথ কাঁদাও তারে”। কোন পথ? ফস ক’রে মনে পড়ে, গত বছর রেশনবাড়ির রথের মেলাতে সে দু’ থেকে আড়াই মিনিট হারিয়ে গেছিল।

রাস্তা ভিড়ের মধ্যে ব্যক্তির পা থেকে মাথায় উঠে আসে, অথবা যে-কোনও জমায়েতই প্রথমে আহার করে সড়কটিকে। মানুষ মূলত অচেনা ব’লে মানুষের ভেতর দিয়ে খুঁজতে গেলে নিজের বাড়ির দিশা আর পাওয়া হয় না। তখন কান্না আসে শিথিলতার মতো। একটু কেঁদে নিই, পরে নয় আবার খুঁজব। বাবার রোদনও গানের সঙ্গে ওই রকম একটা সমঝোতায় এসেছে মনে হল। নইলে, তার তো এতবড় হাঁ ক’রে মাটিতে গড়াগড়ি দিয়ে ছিরকুট্টি করার কথা। নাকি বাবাদের হৃদয়ব্যথা এরকমই হয়! চাঁদ বিস্কুট হাতে ব’সে থাকল কিশমিশের জন্যে, যদিও ধূপের ধোঁয়ার মতো ময়ানের মাখন-গন্ধটা তাকে অবশ ক’রে দিচ্ছে। ঝুঁকে বাবার মুখ পড়তে গেল “অংকবই নিয়ে আসব?” প্রশ্নসহ; কিন্তু মুড বদ্‌লে নির্মল এখন স্যাঁতসেতে চোখেই মুচকি হাসি দিচ্ছে। মায়ের নতুন গানে অনেক দুখদরদের কথা থাকার পরেও বাবার এত পুলক কীসের!

চাঁদ তো দ্যাখেনি, ভটচাজরা ছিল খুলনার ‘ধানি-পানি গিরোস্তো’, দক্ষিণ-এ মানে সুন্দরবনে তাদের বেশ কিছু ঘর প্রজা ও আবাদ। রানী রাসমণিরও জমি-জিরেত সে-আবাদের পাশে। এ-হেন ফ্যামিলিতে মেধাবী, সুপুরুষ কিন্তু অনভিলাষী ছোট ছেলেটা কাব্যতীর্থ পাশ ক’রে দৌলতপুর স্কুলে মাস্টারি জোটাতেই বাড়ির লোকজন তাকে সংসারী করতে ব্যস্ত হল। ঘটক খবর নিয়ে আসে — পালটি ঘর, সম্পন্ন পরিবার, সুন্দরী পাত্রী; কিন্তু নির্মলের এক কথা, পড়াশুনোর বাইরে অন্য কোনও ঝক্কিতে সে ঘাড় পাতবে না।

এর মধ্যে এক বর্ষাভোরে সেনহাটির লাগোয়া গ্রাম মহেশ্বরবাসা থেকে ননীবালা নামের বিধবা মহিলাটি এসে খুব করে ধরে বসলেন নির্মলের ঠাকুরদাকে। তার দুই মেয়ের বড়কে যদি একটিবার দেখে আসা হয়। মেয়ের বাবা ঝালকাঠির জমিদার ঘোষালের আসর-ম্যায়ফিলে বাঁশি বাজাত, হঠাৎ করে কালাজ্বরে মারা গেছে গতবছর। তারা নিতান্ত গরীব, দেওয়া-থোয়ার সামর্থ্য নেই, মেয়ে যে রূপবতী এমন দাবীও করছেন না, তবু…।

টালির চাল ফুটো হয়ে বৃষ্টিতে বিছানা ভেসে যাচ্ছে, এদিকে ঘরে ডুগি-তবলা, ফ্লুটবাঁশি… এক কোণে ছেঁড়া চাদরে জড়ানো একটা এস্রাজও। গান জানো, মা?

শ্যামরঙা রোগাসোগা মেয়েটা গেয়েছিল ‘দুঃখের বরষায় চক্ষের জল যেই নামল’। শেষ হতে সে মুখ-নিচু ব’সে, আর চোখের জলে ভেসে যাচ্ছে পাত্রের বাবা, ঠাকুরদা, দুই পিসি…গোটা শ্বশুরবাড়ি টিম। এরপর থেকে প্রতিদিন সন্ধেবেলা সেনহাটির সেই ভদ্রাসনে হাঁক পড়ত, কি ছোটবৌমা, আজ রবি ঘটকের গান শুনতি পাবো না বুঝি!

এ-বঙ্গে আসার পর নির্মল কাউকে না ব’লেক’য়ে একটা পুরোনো সিঙ্গল-রিড হারমোনিয়াম কিনে আনল। নয়ত কবেই তার বউ কলতলায় খ্যানখেনে চোপা করা মাথায় বড়িখোঁপা বাঙালি সামুরাই হয়ে যায়! পাত্রীদেখার দিনের মতো চায়ে অতটা চিনি মায়া এখন দেয় না, তেমনি তার সেই প্রথম শোনানো গানের লিকার, দুধ, খুশবু আরও টনকো হয়েছে গত তিরিশ বছরে।

নির্মল হাসবে না কেন?

আঠাশ (খ)
আসলে বাসুরই ভুল; শুরুতেই যাওয়া উচিত ছিল চাষিপাড়ার ডিরেকশানে, ধরো, ইসুবাটি কি কালিয়ানই। ওদিককার লোকজন সন্ধে একটু ডাগর হলেই খাওয়া-দাওয়া সারে, খুব ভোরে উঠে মাঠ নিড়োতে যেতে হবে না? অনেকটা হেঁটে যশোর রোড, তেঁতুলতলার ব্রিজ পার হয়ে বাসু এসে ঢুকল ইসুবাটির মুখে। তারপর একটা ঘনমতো বাঁশবাগান দেখে থলে উপুড়।

ফিরে আসার রাস্তায় নিজের পাদুটো আর টানতে পারছিল না তাকে। কিশমিশ কী করছে এখন ভরপুর ভয়ে স্ট্যাচু হয়ে থাকা গাছপালার অন্ধকারে? মিউ-মিউ ডেকে বেরিয়ে এসেছে রাস্তায়, গা ঘেঁষে হর্নের ধমক বাজিয়ে ছুটে যাচ্ছে টেম্পো বা সাইকেল? হয়ত কুকুরের দল সারারাত ওকে তাড়া করে মেরে ফেলতে চাইবে আর রেহাই পেলে কাল সকালে স্কুলের বাচ্চাদের হাতের টিপ-প্র্যাকটিস! কেন সে কিশমিশের জন্যে ভাইবোনের সঙ্গে গলা মেলাল না? নয় ঘরে ঢুকতে দিত না, ছুঁতোই না, শুধু খাবার বেড়ে দেওয়া কলতলার চাতালে। তবু চোখের সামনে থাকত তো বেড়ালটা! কত বড় জহ্লাদের মতো সে তাকে যমের মুখে ফেলে দিয়ে এসেছে।

মৈত্রী সংঘ পেরিয়ে আর একটা বাঁক, তার পরই নিজের পাড়ায় ঢুকে যাবে। মায়ের গলা প্রজাপতির মতো বাতাস সাঁতরে আসছে — ধন্য এ জাগরণ, ধন্য এ ক্রন্দন, ধন্য রে ধন্য। হঠাৎ…আরে, সামনে ওটা কী…কে ওটা…কিশমিশ না! বাসু ছুট্টে গিয়ে কোলে তুলে নিয়েছে—কীভাবে চিনে এলি এতদূর থেকে, আমি তো খেয়ালই করিনি… চল চল, মাকে সব বুঝিয়ে বলব। কিন্তু কিশমিশ কেমন ছটফট করছে কোলের মধ্যে; ওহ নামবি, হিসু করবি বুঝি? বাসুদেব ওকে রেখে দিচ্ছে মাটিতে। আর তখুনি সেই বেড়াল লাফ দিয়ে উঠে গেল চণ্ডীবাবুস্যারের বাগানঘেরা বাড়ির ছ’ফুট পাঁচিলে। তখন অর্ধেক চাঁদ মাথার ওপর বিচারকের আসনে, জ্যোৎস্নায় গোটা পৃথিবী ধোয়ামোছা পুজোমণ্ডপ। আর পাঁচিল থেকে ঘাড় ঘুরিয়ে তার দিকে ভীষণ এক অচেনা চোখে তাকিয়ে আছে কিশমিশ! ঘাবড়ে গিয়ে যেই অল্প একটু হাত বাড়াবে, চটাং ক’রে লাফ দিল ওই অতোটা উঁচু থেকে, বাগানের ভেতর। কিচ্ছু বুঝতে পারছিল না বাসু। অপেক্ষা করল… অপেক্ষা করল, তারপর “কোথায় গেলি, ফিরে আয় লক্ষ্মীটি, তোকে আর কোনওদিন ফেলে আসব না, মা ষষ্ঠীর দিব্যি”। ডাকতে ডাকতে তার গলা থ’কে যাচ্ছে, বাতাসে নামা কদমরেণুর মতো হিমে ভিজে যাচ্ছে কথাগুলো।

চাঁদের আলো ঠিকরোনো বাগানের কলাপাতা শুধু মাথা নাড়ছিল — না, না, না…।

.
(শেষ)

ছবি স্মৃতি

out.dtttt ছবিটি আমারই, ক্লাস নাইনে ওঠার পর তোলা হয়েছিলো। নবম শ্রেণীতে উঠলেই বোর্ডে নাম রেজিষ্ট্রেশন করতে হয়, তখন পাসপোর্ট সাইজ ছবি লাগে। খুব তড়িঘড়ি করে ছবিটি তুলতে হয়েছিলো। মার মা আমাদের ছবি তোলাতে ডি আই টি মার্কেটের প্রিন্স স্টুডিওতে নিয়ে যেতো।

সেদিন প্রিন্স স্টুডিওতে আমাকে নিয়ে যাওয়ার কেউ ছিলো না। মায়ের কথামতো আমি একা একাই চলে গেছিলাম ‘নাজ’ স্টুডিওতে। যদিও নাজ স্টুডিওতে যাওয়ার ইচ্ছে ছিলো না। কারণ আমরা জানতাম, নাজ স্টুডিওতে ভালো ছবি তোলে না। আমার বাবা নিজের পাসপোর্টের জন্য ছবি তুলতে মা’কে কিছুই না বলে মাতবরি করে নাজ স্টুডিওতে গিয়েছিলো। বাবার ছবি দেখে আমরা বাবার সামনে তো কিছু বলিনি, আড়ালে হাসতে হাসতে শেষ। পুরা বাংলা সিনেমার ভিলেন তুলিপের মতো লাগছিলো।

সেই আমাকেই কিনা যেতে হলো ‘নাজ’ স্টুডিওতে!

আমার ছবি দেখে হাসার বদলে রাগে জেদে আমি নাঁকি কান্না শুরু করেছিলাম। “আমার চেহারা এইরকম না। আমার এই ছবি চাই না” — বলে রাগে গনগন করছিলাম। মা তারপর সান্ত্বনা দিয়েছিল, আরে এই ছবি তো রেজিস্ট্রেশন ফর্মে লাগবে, তোর বাবার মতো এই ছবি তো পাসপোর্টে দিতাম না। তোর পাসপোর্টের ছবি প্রিন্স স্টুডিওতে গিয়ে তুলিস।

আজ ছবিটা দেখে হিসেব করলাম, প্রায় চুয়াল্লিশ বছর আগের ছবি! অথচ মনে হয় সেদিন। ছবির সাথে আমার চেহারার মিল না থাকলেও বাম চোখের তিলটা ঠিকই দেখা যাচ্ছে। আর মাথা ভর্তি চুলের চিহ্ন!

পরনে ছিলো পলিয়েস্টার কাপড় দিয়ে তৈরি জামা, দুর্গাপূজার সময় কাদির মামার কাছ থেকে স্পেশাল অর্ডার দিয়ে বানানো। জামাটার ছিলো ঘটি হাতা, আর কোটের মতো কলার।

( কাদির মামাঃ আমার মামার বন্ধু, সেই হিসেবে আমাদের মামা।
কাদির মামা পাড়ার একমাত্র দর্জি, যাঁর আলাদা দোকান ঘর ছিলো না। রাস্তার ধারেই নিজের ঘর। সেই ঘরের জানালা ঘেঁষে পা মেশিন বসানো ছিল। স্কুলে আসা যাওয়ার পথে দেখতাম, কাদির মামা ঘট ঘট করে রাজ্যের জামা প্যান্ট সেলাই করছে, আর ঘরে কাদির মামার বউ, বাচ্চারা যার যার কাজ করছে। )

চুয়াল্লিশ বছর পেরিয়ে গেছে, স্কুলে যাওয়ার পথটা আছে তবে বদলে গেছে।
কাদির মামা বেঁচে আছেন কিনা জানি না, তবে কাদির মামার সেই রাস্তার ধারে টিনের ঘরটা নেই, ঘরের চিহ্নও নেই।
রাস্তার দুই পাশে এতো বড়ো বড়ো দালান, ফ্ল্যাট বাড়ি উঠে গেছে, কাদির মামার ঘরটা ঠিক কোন্ জায়গায় ছিলো, সেই নিশানাও হারিয়ে গেছে!

১৫টি উদ্ধৃতি

১৫টি উদ্ধৃতি। পালন ও অভ্যাস তৈরি করার মাধ্যমে যেভাবে বদলে যাওয়া জীবনের নতুন করে পরিবর্তন আনা সম্ভব।

১. “জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাফল্যটি আপনি কী অর্জন করেছেন তা নয়, তবে আপনি এই প্রক্রিয়ায় কে হয়ে উঠছেন।” আপনার চরিত্রই আপনাকে সংজ্ঞায়িত করে, আপনার কৃতিত্ব নয়। নিজের সেরা সংস্করণ হওয়ার দিকে মনোনিবেশ করুন, এবং সাফল্য অনুসরণ করবে।

২. “সাফল্য চূড়ান্ত নয়, ব্যর্থতা মারাত্মক নয়: এটি চালিয়ে যাওয়ার সাহসই গুরুত্বপূর্ণ।” আপনি যতবারই ব্যর্থ হন না কেন, ফিরে পেতে এবং আবার চেষ্টা করতে কখনই দেরি হয় না। একমাত্র জিনিস যা সত্যই গুরুত্বপূর্ণ তা হল চেষ্টা করা ধৈর্যের ক্ষেত্রে বিরম্বিত না হওয়া আর আপনার সাহসী চিন্তিত মনের অসীম স্থিতিস্থাপকতা।

৩. “আপনি সামনের দিকে তাকিয়ে থাকা বিন্দুগুলিকে সংযুক্ত করতে পারবেন না; আপনি কেবল পিছনের দিকে তাকিয়েই তাদের সংযোগ করতে পারেন। তাই আপনাকে বিশ্বাস করতে হবে যে বিন্দুগুলি আপনার ভবিষ্যতে সংযোগ করবে।” এই চলমান যাত্রা বিশ্বাস করুন, এবং বিশ্বাস করুন যে সবকিছু একটি কারণেই ঘটে চলেছে। তবেই আপনার অতীত অভিজ্ঞতা সব একত্রিত হয়ে আপনি আজকের মানুষটি গঠন করবে।

৪. “সুখ তৈরি করা কিছু নয়। এটি আপনার নিজের কাজ থেকে আসে।” আপনার চাহিদা আপনার মনের স্থিতিস্থাপকতা ও আপনার মত অন্য কেউ গুরুত্বপূর্ণ ভাবা আপনি একমাত্র যিনি আপনার নিজের সুখ তৈরি করতে পারেন। আপনার জীবনের নিয়ন্ত্রণ নিন এবং আপনার পছন্দ মতো জীবনযাপন করার জন্য আপনার ভেতরের প্রয়োজনীয় পরিবর্তনগুলি করুন।

৫. “মহান কাজ করার একমাত্র উপায় হল আপনি যা করেন তা ভালবাসা আপনার কাজের মত ঠিক অন্যের কাজকেও অগ্রাহ্য না করে গুরুত্ব দেওয়া।” আপনার আবেগকে অনুসরণ করুন, এবং সাফল্য স্বাভাবিকভাবেই আসবে। এমন ক্যারিয়ারের জন্য স্থির হবেন না যা আপনি উপভোগ করেন না কিংবা যা আপনার কখনোই কাজে আসবেনা।

৬. “বিশ্বাস করুন আপনি পারবেন এবং আপনি সেখানে অর্ধেক হয়ে গেছেন।” আপনার মানসিকতা সবকিছু। নিজেকে বিশ্বাস করুন, এবং আপনি সবকিছু করতে পারেন এই বিশ্বাসের ফটো থাকুন এটাই একমাত্র আপনাকে পূর্ণতা দেয়ার জন্য শক্তিশালী বার্তা।

৭. “কারো সাথে সাথে আপনার ভবিষ্যত ভবিষ্যদ্বাণী করার সর্বোত্তম উপায় হল এটি তৈরি করা যা আপনি করতে আগ্রহী এবং প্রশংসনীয়।” এই বিষয়টি নিয়ে কোন হেঁয়ালি নয় আপনার কাছে সুযোগ আসার জন্য অপেক্ষা করবেন না। কোন সুযোগকেই অবহেলায় ফেলে দেবেন না সুযোগ ইগনোর করা মানে আপনি আপনার জায়গা থেকে পিছিয়ে যাওয়া- তাই যখন যতটুকু সময় পান পদক্ষেপ গ্রহণ করে এবং জিনিসগুলি ঘটানোর মাধ্যমে আপনার নিজের ভবিষ্যত তৈরি করুন।

৮. “সাফল্য হল ব্যর্থতা থেকে ব্যর্থতার দিকে হোঁচট খাচ্ছে উদ্যম না হারিয়ে।” শেখার প্রক্রিয়ার একটি স্বাভাবিক অংশ হিসাবে ব্যর্থতাকে আলিঙ্গন করুন এবং আবেগ এবং সংকল্পের সাথে এগিয়ে যান।

৯. “মন্দের জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় একমাত্র জিনিস হল ভাল মানুষদের কিছুই না করা।” যা করা সহজ কাজ না হলেও যা সঠিক তার জন্য দাঁড়াতে ভয় পাবেন না। আপনার কর্ম সর্বদা অন্যদের থেকে একটি পার্থক্য করতে পারে।

১০. “আপনি যে শটগুলি নেন না তার 100% মিস করেন।” ঝুঁকি নিন এবং সুযোগ গ্রহণ করুন। আপনি চেষ্টা না করলে কি ঘটতে পারে তা আপনি কখনই জানেন না।

১১. “পরিবর্তনের রহস্য হল আপনার সমস্ত শক্তিকে পুরোনোর সাথে লড়াইয়ে নয়, নতুনকে গড়ে তোলার দিকে মনোনিবেশ করা।” অতীত নিয়ে চিন্তা করবেন না বা যা পরিবর্তন করা যাবে না তা পরিবর্তন করার চেষ্টা করবেন না। পরিবর্তে, একটি ভাল ভবিষ্যত তৈরিতে আপনার শক্তিকে ফোকাস করুন।

১২. “সাফল্য হল আপনি কতটা উঁচুতে উঠেছেন তা নয়, বরং আপনি কীভাবে বিশ্বে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আনবেন।” আপনার চারপাশের বিশ্বে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে আপনার সাফল্য ব্যবহার করুন। ফিরিয়ে দিন এবং অন্যদের জীবনে পরিবর্তন আনুন।

১৩. “আমাদের আগামীকালের উপলব্ধির একমাত্র সীমা হবে আমাদের আজকের সন্দেহ।” আত্ম-সন্দেহ আপনাকে আটকে রাখতে দেবেন না। নিজেকে এবং আপনার সম্ভাবনা বিশ্বাস।

১৪. “নিজেকে খুঁজে পাওয়ার সর্বোত্তম উপায় হল অন্যের সেবায় নিজেকে হারিয়ে ফেলা।” অন্যদের সেবা করা আপনার জীবনের উদ্দেশ্য এবং অর্থ দিতে পারে। যাদের প্রয়োজন তাদের সাহায্য করুন আপনি কি করছেন সেটির জাজমেন্ট আপনাকে করতে হবেনা আপনি কি করছেন সেটিই গুরুত্বপূর্ণ ব্যতিক্রমী কি করা যায় এ বিষয়টি গুরুত্বের সাথে লক্ষ্য করুন অবশেষে সবার থেকে আপনার একটি পার্থক্য করার উপায় সন্ধান করুন।

১৫. “জীবন হল ১০% যা আপনার সাথে ঘটে এবং ৯০% হল আপনি এতে কীভাবে প্রতিক্রিয়া করেন।” আপনি আপনার সাথে ঘটে যাওয়া সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না, তবে আপনি কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে পারেন তা আপনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। ইতিবাচকতা এবং স্থিতিস্থাপকতার সাথে প্রতিক্রিয়া বেছে নিন।

টুকটাক রমযান ৪

আজ ২৪ রমযান। আগামী সপ্তাহে আজকের দিনে হয়তো ঈদ পালন করব। দুর্বার গতিতে রোযা চলে গেল ভালো করে ধরতে পারলাম না। জানি না এবারের রোযায় আল্লাহর আদেশ কতটুকু পালিত হয়েছে। জানি না আন্তরিক মনে আল্লাহর কাছে নিজেকে সমর্পণ করতে পেরেছি কিনা, আল্লাহ ভালো জানেন।

গতকাল বাংলা বছরের প্রথম দিন ছিল। আজ থেকে অনেক বছর আগে বাংলা ১৩৮৯ সালে বছরের প্রথম দিনে ‘বৈশাখী’ নামে ক্ষুদ্র এক সংকলন সম্পাদনা করেছিলাম। তখন আমার বয়স ১৩। এই সংকলনের কোন অস্তিত্ব এখন অবশিষ্ট নেই। ১৩৯০ অর্থাৎ ১৯৮৪ সালের ভয়াবহ বন্যায় মৌলভীবাজার শহর তলিয়ে গেলে অনেক কিছুর সাথে ‘বৈশাখী’ও তলিয়ে যায়।

৮৪ বন্যার পরে ‘বৈশাখী’ না করতে পারলেও ‘ষড়ঋতু’ নামে আরেকটা ছড়া সংকলন সম্পাদনা করতাম। ‘ষড়ঋতু’ বেশ কয়েক সংখ্যা প্রকাশ করেছিলাম। ঋতু বৈচিত্রের দেশ বাংলাদেশ, এই সংকলনে বিভিন্ন ঋতুকে চিহ্নিত করে ছড়া ছাপা হতো। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কিশোর ছড়াকাররা লিখতেন। পত্র যোগাযোগে সারাদেশের ছড়াকারদের সাথে একটা সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। এখন কুড়িগ্রাম হাতের মুঠোয় থাকলেও তখনকার সময়ে কুড়িগ্রামের ছড়াকারের কাছে পৌঁছাতে কমপক্ষে এক মাস লেগে যেত। তবু চেষ্টার কমতি না দিয়ে আমরা পৌঁছাতাম। ষড়ঋতু সেই সময় বেশ জনপ্রিয় ছড়া সংকলন ছিল। ‘ষড়ঋতু’র দুই এক কপি এখনো অবশিষ্ট আছে।

আমাদের কৈশোরে পাড়ায় পাড়ায় সাহিত্য সাংস্কৃতিক কিংবা ক্রীড়া সংগঠন ছিল। আমরা ছিলাম এসব সংগঠনের নিবেদিত প্রাণ কর্মী। স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস, বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে আমরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করতাম। দিনের গাম্ভীর্য বজায় রেখে নিজেদের মত আনন্দ ফুর্তি করতাম। আমরা প্রতিবছর দিবস ভিত্তিক সংকলন করতাম, স্থানীয় লেখকদের সাথে অন্যান্য জেলা কিংবা রাজধানীর লেখকদের লেখা ছাপতাম। একটা সংকলন কিংবা একটা অনুষ্ঠানের জন্য সেই বয়সে যে দৌড়ঝাঁপ করতাম এখন এসব স্বপ্নের মত মনে হয়। সেই বয়সে অফুরন্ত শক্তি ছিল, প্রাণ প্রাচুর্যে ভরপুর সেই কৈশোর আর ফিরে আসবে না। নতুন একটা দেশকে নিজেদের মতো সাজাবো বলে আমরা কষ্ট করতাম, কিন্তু কষ্ট কি কোনদিন কষ্ট মনে করতাম না।

এখনকার কী অবস্থা বলতে পারবো না। এখনকার কিশোর আমাদের মত রাত জেগে প্রেসে বসে থাকে কিনা জানি না। শহীদ দিবসের ভোরে নগ্ন পায়ে শহীদ মিনারের দিকে হেঁটে যাওয়ার ব্যাকুলতা তার আছে কিনা জানিনা।

কৈশোরে আমরা স্বপ্নের ঘোরে ছিলাম। ঘুম থেকে জেগেও স্বপ্নের ধারাবাহিকতা রক্ষা করেছি। দেশ স্বপ্নে নয় বাস্তবে পেয়েছি, দেশকে নিয়ে স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত করাই আমাদের ব্রত ছিল।
গতকাল ছিল বাংলা বছরের প্রথম দিন। প্রথম দিনকে ধরব বলে সেহরি খেয়ে বিছানায় যেতে ইচ্ছে হলো না। ভোরের আলোর সাথে সাথে পড়লাম…

নমো নমো নম, সুন্দরী মম জননী বঙ্গভূমি
গঙ্গার তীর, স্নিগ্ধ-সমীর, জীবন জুড়ালে তুমি|
অবারিত মাঠ, গগনললাট চুমে তব পদধূলি-
ছায়াসুনিবিড় শান্তির নীড় ছোটো ছোটো গ্রামগুলি|
পল্লবঘন আম্রকানন, রাখালের খেলাগেহ-
স্তব্ধ অতল দিঘি-কালো জল নিশীথ শীতলস্নেহ
বুক-ভরা-মধু বঙ্গের বধূ জল লয়ে যায় ঘরে-
মা বলিতে প্রান করে আনচান, চোখে আসে জল ভর।

দেখলাম আমার চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে, চেষ্টা করেও কান্না চেপে রাখতে পারছি না। হায় প্রবাস জীবন…

গরিবের পহেলা বৈশাখ

poh

কতো বৈশাখ আসে কতো বৈশাখ যে যায়,
পহেলা বৈশাখে ধনীরা ভালো খাবার খায়।
জানেন, পহেলা বৈশাখে গরিবরা কী খায়?
বারোমাস যা খায়, তা-ই খেয়ে বৈশাখ কাটায়!

যাদের আছে প্রচুর তারা খায় পান্তা-ইলিশ,
মোদের মতো গরিবেরা খায় পান্তা-কাঁচামরিচ।
অনেকেই খায় কোরমা পোলাও মাছ মাংস,
এই দুর্মূল্যের বাজারে গরিবরা হচ্ছে ধ্বংস!

বৈশাখের কতো আয়োজন নাচ-গানে ভরপুর,
গরিবের বারোমাসই দুঃখ অভাব হয়না তো দূর!
বৈশাখে ধনীর দুলাল পরে নতুন জামা-কাপড়,
গরিবের নতুন একটা জামা মানে মরণকামড়!

তবুও গরিবদের প্রার্থনা বৈশাখ আসুক বারবার,
হয়তো আগামী বৈশাখে ভালো কিছু হবে তার।
এবার নাহয় বৈশাখে অনন্দ-উল্লাস করুক ধনীরা,
পরের বৈশাখে গরিবেরা আনন্দে হবো দিশেহারা।

.
সবাইকে পহেলা বৈশাখের আন্তরিক শুভেচ্ছা!
শুভেচ্ছান্তে: নিতাই বাবু
১৪/৪/২০২৩ইং,
পহেলা বৈশাখ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ।

মৃত্যুর কোলে

mmc

শিশু কালটাই ছিলো ভালো
থাকতাম মায়ের কোলে,
ছিলো না কোনও ভাবনা চিন্তা
থাকতাম হেসে খেলে।

যখন একটু হাঁটতে শিখলাম
হাঁটি হাঁটি পায়ে,
দুষ্টুমি-টা বেজায় বাড়লো
সারা পাড়া গাঁয়ে।

আরেকটু যখন বড় হলাম
তরতাজা এক কিশোর,
তখন কী-আর থাকতাম বাড়ি
মাঠেই হতো ভোর।

কিশোর থেকে যুবক যখন
যৌবন দেখা দিলো,
যৌবনের আগুনে জ্বলে পুড়ে
সব হলো এলোমেলো।

জীবনসঙ্গী ঘরসংসার সবই হলো
হলো সন্তানাদি কতো,
হোঁচট খেলাম বার্ধক্যের টানে
জন্মদানকারী মা-বাবার মতো।

অবশেষে মায়ামমতা ছিন্ন করে
থাকলাম মৃত্যুর কোলে,
মৃত্যুই আমায় নিয়ে গেলো
ঐ পরপারে চলে।

.
নিতাই বাবু
১১/০৪/২০২৩ইং।

আমাদের বেড়াল আমাদের মতো হয়নি

আঠাশ (ক)
আকাশ থেকে টাঙানো ছায়ার কুচি দেওয়া ফুল সাইজ বিকেল, সেই চাঁদোয়ার নীচে হারমোনিয়াম বেজে উঠল। কলোনির বাচ্চারা ডিঙি পেড়ে জানলা দিয়ে তাকিয়ে খিকখিক ক’রে হেসে পালাচ্ছে — এমা এত বড় কাকিমা গান গায়! মায়ের মুখোমুখি বিভোর শিউলি; পাশে চাঁদ বেলোর ফুটোয় পায়ের আঙুল ঢুকিয়ে দিচ্ছে আর ততবার মাথায় হালকা চাঁটি সঞ্জুর। ননীবালা ঘরে ঢুকে চৌকাঠের কাছে করজোড়ে বসে পড়ল। তাই দেখে নাতিনাতনির হাসি — হিন্দি সিনেমার গান শুনলেও দিদ্‌মা হাতজোড় ক’রে দেয়।

সংগীত, ঈশ্বর, মৃত স্বামী — তিনটির ‘পরে ভক্তি ননীবালা এই প্রার্থনাভঙ্গির ভেতর দিয়ে একজোটে প্রকাশ করে। পাশের ঘরে চায়ে চুমুক দিতে দিতে নির্মল ভাবছিল শ্বশুর জানকী চাটুজ্জের কথা। যত রকম সুষিরযন্ত্র, সবই নাকি বাজাতে পারতেন ভদ্রলোক। বাঁশিজানকীর বাজনা শুনে কেঁদেছে এমন মানুষ পূর্ববঙ্গে অবিরল। আর তার মেয়ের ঠোঁটের বদলে গলায় লেগেছে সুর।

‘প্রভু আমার প্রিয় আমার’ দিয়ে মায়ার শুভ মহরত, হারমোনিয়ামে কন্ঠ মিশে কাঠের উনুনের ধোঁয়ার মতো ভরিয়ে দিল ঘর। কথাসুরের চাপ বাড়তে বাড়তে ‘মুক্তি আমার বন্ধনডোর’-এ বাড়ির দেয়াল ধপাধপ মাটিতে লুটোচ্ছে, সন্ধের বাতাসপথে নির্মল হাঁটতে লাগল ‘দুঃখসুখের চরম’-এর ভেতর দিয়ে। ‘চরম’ শব্দে ধানিধা-র তিরতিরিয়ে কেঁপে ওঠা এই সংগীতপরিধির শ্রেষ্ঠ বক্রতল, অন্তরার পরে গান থেমে গেলেও ক্ষতি ছিল না।

নির্মল রবীন্দ্রসংগীতের কোল ঘেঁষে বসেনি কোনও দিন। অল্প বয়েসে জমিদারবাড়িতে ওস্তাদের কাছে তালবাদনে দীক্ষার পর অপরিসীম ঝালমশলা-পছন্দ মানুষের মতো সুর আর লয় যত গুরুপাক, ততই ফুর্তি তার। অথচ রবি ঠাকুরের খেয়ালআশ্রিত গানে তানালাপ নেই, ধ্রুপদাঙ্গের গানে বাঁটের কৌশল মার গেছে। রাগসংগীতের পর নির্মলের চরাবরা ছিল কাঙাল ফিকিরচাঁদের বাউল, কালী মির্জার টপ্পা, গোবিন্দ অধিকারীর পদাবলী, মধু কান-এর ঢপ কীর্তন বা মনোমোহন বসুর পাঁচালীগানে। গীতিকবিদের ঘনিষ্ঠ সেই জনসংখ্যাও দিন দিন ক্ষয়ে আসছে।

মায়া গাইতে গাইতে আবার ঘুরল পূজাপর্যায়ে — চারিদিকে দেখ চাহি হৃদয় প্রসারি। স্থায়ীটুকু শুনেই নির্মল বুঝেছে, মালকোষে ‘লাগি মোরে ঠুমক পলঙ্গনা, রীন নদিয়া ধরতী রণমোহি’ ভেঙে তৈরি এ-গান। শুধু রবীন্দ্রনাথ কোমল রে আর কড়ি মা লাগানোয় ‘আনন্দধারা’ মিশ্র-মালকোষে গিয়ে দাঁড়াল। মায়া পণ্ডিতি জানে না, তার গলা এক দীর্ঘ কবিতা যার মর্মকথা বীভৎস ভালো টোনাল কোয়ালিটি; এমন ওজনদার অথচ মিছরি অথচ জিভে লেগে থাকা ইনোসেন্স তুমি কোনও তালিমে হাসিল করতে পারো না। গায়কের বৈশিষ্ট্য বলতে গিয়ে শার্ঙ্গদেবের সংগীতরত্নাকর লিখছে, ‘হৃদ্যশব্দঃ সুশারীরো গ্রহমোক্ষবিচক্ষণঃ’; গায়কের প্রথম গুণটাই হতে হবে হৃদ্যশব্দ — মনোহর কন্ঠের অধিকার। আর সব শেষে লাগবে ‘সুসম্প্রদায়ো গীতজ্ঞৈর্গীয়তে গায়নাগ্রণীঃ’, মানে উত্তম গুরুপরম্পরা। আজকাল যতই গুরু আর ঘরানা নিয়ে মাতামাতি হোক, দেখা যাচ্ছে সাতশো বছর আগে শিল্পীর স্বশিক্ষা আর প্রতিভার ওপরেই ভরসা রাখা হতো বেশি। কিন্তু কলকাতার লোকজন কাঁচা, জ্যান্ত, এখনও-লাফাচ্ছে অনুভূতি গানে বসায় না; শিল্পীরা রবীন্দ্রসংগীত গায় হাঁমুখ না খুলে। নির্মলের আবার সংগীতরত্নাকর মনে পড়ল — গায়কের প্রথম দোষ হল ‘সংদষ্ট’, দাঁত চেপে গান।

আঠাশ (খ)
ফাঁকা রেলস্টেশনে একটা হৃদপিণ্ড-বসানো থলে হাতে দাঁড়িয়েছিল বাসু।

— তোমাগো বিড়েল অ্যাক্কেবারে তোমাগো মতোই হইছে, সেই রকম পাকা চোর আর নেমোখারাম!
এটা মা।
কিশমিশ আগে থেকেই কর্তৃপক্ষের কুনজরে ছিল, শিকে লুটপাট ক’রে দু’পিস মাংস খেয়ে নেওয়াটা তার খুব কৌশলগত ভুল হয়ে গেছে।

বাসু হয়ত শিউলি-চাঁদের মতো বিল্লিপাগল নয়, তবু একটা দুপুর বেড়াল দেখেই কাটিয়ে দিতে পারে। চান না করেও ওরা কেমন ডালিয়া ফুলের মতো ঝকঝকে আর পিঠে একটু হাত ছুঁইয়েছ কি গলায় গার্গল করার শব্দ। মুখের দিকে ঠায় তাকিয়ে এমন বসে থাকবে, এতবার মিউ মিউ ডাকবে যে সন্দেহই থাকে না তোমার দেওয়া মাছের কাঁটাটা, পাঁউরুটির টুকরোটা, এমনকি সকালের মুড়ির বাটি থেকে মেঝেয় ছড়ানো মুড়িগুলো তাড়া করে খেতে পারছে বলেই ও বেঁচে আছে। আশ্রিতকে ত্যাগ করা ঘোর অন্যায় — এটা বাবার উক্তি।
আর কিশমিশই তো তাদের একমাত্র আশ্রিত।

ব্যাগের হ্যান্ডেল একটু ফাঁক ক’রে তাকায় বাসু — নিশ্চিন্তে শুয়ে থাবা চেটে যাচ্ছে! এবার সে ডাউন বনগাঁ-য় উঠে পরের স্টেশন বামনগাছি আসতেই ব্যাগ থেকে বার ক’রে কোলে নেবে কিশমিশকে। ট্রেন স্টেশান যেই ছেড়েছে, আস্তে করে নামিয়ে দেবে প্ল্যাটফর্মে। “কী হল বাসুদাদা, তুমি নামবে না” — কিশমিশ ছুটছে ট্রেনের পাশে-পাশে। তারপর যখন টের পেল সামথিং ইজ মেছো, মারল একটা প্রাণপণ ঝপাং। কিন্তু রানিং করা তো শেখেনি, উঠেই ডিগবাজি খেল, মাথা ঠুকে গেল গাড়ির লোহার দেয়ালে। তক্ষুনি কোলে তুলে নিয়েছে বাসু। কিশমিশ গোল শুঁয়োপোকার মতো চার হাতপায়ে বাসুর ডান কবজি পেঁচিয়ে ধরে আছে — “আবার ফেলে দেবে না তো”!

আঠাশ (ক)
মায়ার গলায় ব’সে থাকা দীর্ঘ কবিতার দ্বিতীয় গুণ তার অসহ্য নরমতা। সারাক্ষণ সংসার দাবড়ে রাখা মহিলা একটা সুর উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে ধানের ছড়ার মতো নুয়ে পড়ে কীভাবে? নির্মল ভাবে, রমণে আর সংগীতে ফনফনে লম্বা মায়া যেন কুঞ্জরাস্য — পেশিময় অথচ তুলতুলে! যেভাবে রেওয়াজ চাও, এক-ডাকে সাড়া দেবে।

শিউলির স্কুলে অ্যানুয়াল ফাংশান আছে, তার বায়না মেনে মায়া ধরল ‘ওরা অকারণে চঞ্চল’। ওমনি চাঁদের “আমিও এই গানটা পারি” ব’লে বেসুরো বেহেড চিৎকার। ভটচাজবাড়ির সবার গলায় সুর আছে, শুধু এ-ছেলেটা হল “রাজু পোড়া বাজু”। শ্লোকের মানে বোঝে না চাঁদ; যেমন ওকে ছোঁড়া আর একটা ঢিল “গলা নেই গান গায় মনের আনন্দে, বউ নেই শ্বশুরবাড়ি যায় পূর্বের সম্বন্ধে”-র দ্বিতীয় অংশ রহস্যগল্পের মতো ঠ্যাকে। পুব দিকের সঙ্গে সূর্য ওঠার সম্বন্ধ আছে, কিন্তু বউ কোথায় গেল? কলোনিতে বিভাসকাকুর বউ বিন্দুকাকিমা পালিয়ে গেছে, সে সারাদিন মদ খেয়ে টাকাপয়সা এদিকসেদিক হারিয়ে ফেলে। তাছাড়া এই কলোনির কেউ শ্বশুরবাড়ি যায় চাঁদ শোনেনি, সবার শ্বশুরই নিরুদ্দেশ।

তখন মায়া গলা তুলে নির্মলকে বলল, শুনতিছেন, শয়তানডারে এট্টু আপনার কাছে ডাকেন না! গাতি দেচ্ছে না যে। এবং তখুনি ছেলের দিকে ফিরে: ওই যে বাবা ডাকিছে, ওঘরে যাও।
— কই, আমি তো শুনতি পালাম না!
— তুই শুনতি পাস? তুই কানপচা কালা না? ব’লে শিউলি তার বাঁকানের কাছে নাক নিয়ে যাওয়ার উপক্রম করেই মুখ সরিয়ে আনে :
— বাবা রে, কী গন্দো!
এইভাবে সাজানো চিত্রনাট্যের শিকার চাঁদ নির্মলের ঘরে উঠে যেতেই মায়া আবার জলে খেলা করা মাছের মতো পেছল, প্রশমিত, রহস্যবর্ণ। সঞ্জুর মনে হয় মনোহারি জিনিস বেচা ফেরিওলার হাতে যেমন কাচ লাগানো সুটকেস থাকে, মায়ের হারমোনিয়ামও ঢাকনা খুলে এক-একটা গয়না বের করে আনছে। এবার ছাই রঙের কারুকাজ করা আংটিটা তোলা হল : ‘আমার জ্বলেনি আলো অন্ধকারে’।

আঠাশ (খ)
‘মিশন পণ্ডশ্রম’ সেরে উলটো দিকের ট্রেন ধরে ফিরে এল বাসু। স্টেশানে নেমে হাঁটা দিল নিবাধুই স্কুল ছাড়িয়ে চড়কপাড়ার ওপাশটায়। মা কাল রাতে বুঝিয়েছে, চাঁদের সর্দিকাশির অসুখ বেড়াল ঘাঁটলে কোনওদিন সারবে না। তাছাড়া কিশমিশ তো মেনি, একটু বড় হলেই ছ’মাস অন্তর সংসার বাড়াতে থাকবে। তার চেয়ে এখন পার কর।
শুনে চাঁদের সে কী রাগ! বাবার সিগারেটের ধোঁয়াতেও তো আমার টান বেড়ে যায়, তাহলে বাবাকে পার করছ না কেন? ছ’বছরের ছেলের আস্পদ্দা দেখলে ভয় লাগে। বড় হয়ে খুনি-ডাকাত হবে, কুষ্ঠি কি আর ভুল লেখে কখনও!
—- বাবারে তাড়ালি খাবি কী? তাছাড়া, মানুষ আর বিড়েলের বাচ্চা এক হলো!
— ইশকুলে লেখাদিদিমনি বলেছে, বিজ্ঞানী জগদীশ বসু আবিষ্কার করেন, উদ্ভিদেরও প্রাণ আছে। তার মানে মানুষ-বেড়াল-গাছপালা সব এক।

এদেশিদের পাড়া জোড়াবটতলা পৌঁছে দেখা গেল, মোড়ের মাথায় চায়ের দোকান জমজমাট, কিন্তু সামনের কাঁচা রাস্তার অনেকখানি অন্ধকারে ডুবুডুবু। সেই ভুতুড়ে ঘুপচিতে ঢুকে বাসু যেই ব্যাগ থেকে নামিয়েছে কিশমিশকে, কোত্থেকে টর্চের আলো — “কী হচ্ছে এখানে?” পেটমোটা লোকটার গায়ে কঠিন সেন্টের গন্ধ: “এ-পাড়ায় অলরেডি ছত্রিশটি ষষ্ঠীর বাহন। আমি নয়ন মুখার্জি, নাট্যকার, পাক্কা খবর রেখেছি, সামনের ফাল্গুনেই আমরা হাফ সেঞ্চুরি ক্রস করে যাব। কিন্তু বে-আইনি ভাবে তো জনসংখ্যা বাড়াতে দেওয়া যায় না, বাবুসোনা! পাসপোর্ট নেই, ভিসা নেই, মানে পিয়োর অনুপ্রবেশ। সোজা তুলে নিয়ে চলে যাও।“

.
(পরের বার শেষ)

এপ্রিলের ফুল

এপ্রিল এলেই মনে হয় জন্ম নেবার এখনই সময়
এক নারীর প্রসব সুখে লু্কনো অসুখ
লিকলিকে হাতে স্পষ্ট শিশুর উল্লাস
মনে পড়ে যায়, এপ্রিল আমার জন্মমাস।

কবে যেন মা বলেছিল, যুদ্ধের দিনে জন্ম বলেই
অমনিতর খাপছাড়া তলোয়ার আমি
চশমাটা হাতে নিলে কেবলি দু’টো গোল্লা দেখি, ফ্রেম আঁটা
অথচ নাকি দেহধারনকালে আমার চোখ ছিল বাদামী।

পিতা আর ফেরেননি যুদ্ধক্ষেত্র থেকে
শোনা হয়নি, ‘আয় খুকু আয়’ বলে কোনো ডাক
তবু এপ্রিল এলেই তেজী এই পুরুষের শার্ট চেপে ধরি আর বলি,
যুদ্ধে যাবি না ছেলে, খবরদার।

এপ্রিল শেষতক দুর্বিনীত বর্ধাপণ দিনের অপর নাম
প্রতি মূহুর্তেই জন্ম নেবার, আঁতুরঘরের গন্ধ শোঁকার অদম্য সময়
এ মাসেই বাকিংহাম প্যালেস ঠিকরে আলো চমকায়
এপ্রিল বড় অদ্ভুত মাস, এলিয়টের ক্রুয়েলেস্ট মান্থ; আমার জন্মমাস।

ট্রেজার!

riiitu

অনেক কাল আগলে রেখেছি তিন কন্যার স্কুল কলেজ ইউনিভার্সিটি লাইফে জেতা রাশি রাশি ট্রফি মেডেল সার্টিফিকেট। তিন কন্যারই একাডেমিক শিক্ষা জীবন আপাতত শেষ, এবার তাদের যত অর্জন সবই প্রত্যেকের নামে নামে র‍্যাপ আপ করা শুরু করেছি। বাড়ির বিভিন্ন স্পটে সাজানো ছিলো ট্রফিগুলো, বিভিন্ন কক্ষে যখন যেখানে পা দেবো মেয়েদের সাফল্যের স্বীকৃতি যেনো আমার চোখে পড়ে।

আজ সকালে যখন আমার বুক শেলফে সাজানো ঝকঝকে ট্রফিগুলো সরিয়ে আনছিলাম, এক কোণে পুরানো কালচে রঙের একটা ট্রফির দিকে নজর চলে গেলো। কালচে হয়ে যাওয়া ট্রফিটা আমার, বাংলাদেশে মায়ের কাছে ছিলো। দশ বছর আগে মা মারা গেলো, আমার ট্রফির গুরুত্ব ফুরিয়ে গেলো। মা চলে যাওয়ার পর আমি ট্রফিটা সাথে করে এনেছিলাম।

কারণ এই ট্রফির গুরুত্ব আর কেউ বুঝবে না, আমার বাবাও না। আমার বাবা শুধু একাডেমিক সার্টিফিকেটের গুরুত্ব দিতো, নাচ গান খেলাধূলা অভিনয় নিয়ে মাথা ঘামাতো না। ট্রফিটা মিসিসিপিতে এনে আমার উত্তম এবং কন্যাদের দেখিয়েছিলাম। তখন মিথীলা ছোটো, ট্রফির গুরুত্ব বুঝে ওঠেনি। মেয়েরা নিজেদের ট্রফিই ঠিক করে রাখে না, মায়ের ট্রফি নিয়ে আর কতটুকু উৎসাহ দেখাবে! তবে মুখে ওয়াও বলে এপ্রিসিয়েট করেছিলো।আমিও ট্রফিটা বুক শেলফের এক কোণে রেখে দিয়েছিলাম।

আজ কত কথা মনে পড়ছে। ছোট্টো বাড়ির চারদিকে স্মৃতির পাহাড় জমেছে। আজকাল নির্মোহ হতে চাইছি। স্মৃতি টিতি জমিয়ে রাখলে নির্মোহ হওয়া যাবে না। ঘরবাড়ি থেকে অতিরিক্ত জিনিস সরিয়ে ফেলতে চাইছি, আমার এই কাজে মিথীলা খুব হেল্প করছে। আমার এই ছোটো কন্যাটি একটু অন্যরকম, আধুনিক যুগের হয়েও পুরানোকে অস্বীকার করে না। বুড়ো মানুষ, ছেঁড়া কাঁথা, ঝাপসা হয়ে যাওয়া ছবি থেকে শুরু করে বাঙালির ডাল ভাত মাছ সুক্তো শাক সবই অন্তর দিয়ে গ্রহণ করার চেষ্টা করে।

এইজন্য আমি মিথীলার সাথে অনেক গল্প করি, আমার অনেক অনুভূতি শেয়ার করি, আমার ব্যথা বেদনা আনন্দ পাওয়া না পাওয়ার গল্প সবই শেয়ার করি। আমার নিত্য দিনের কাজে মিথীলা নিজ থেকে হেল্প করে। আমার পায়ে ব্যথা, গায়ে ব্যথা হলে ও অস্থির হয়ে যায় কিভাবে আমার ব্যথা কমাবে! রাবারের ফিতা বেঁধে আমার পায়ের এক্সারসাইজ করতে দিয়েছে থেরাপিস্ট, লেটেক্সে আমার কঠিন এলার্জি। থেরাপিস্টের দেয়া ফিতা পায়ে বাঁধলেই আমার সারা শরীরে চুলকানি শুরু হয়।

মিথীলা ছবি দেখে দেখে রাবারের ফিতে ছাড়াই আমার পায়ের এক্সারসাইজ করিয়ে দেয়। আমি আর্জেন্টিনার পাঁড় সাপোর্টার, মিথীলা ব্রাজিলের সাপোর্টার। প্রথম খেলাতেই আর্জেন্টিনা হেরে গেছে। আমার উত্তম কুমার অলরেডি বলছে, ধুর! ধুর! মিথীলা জানে, আমার মন খুব খারাপ হয়ে গেছে, তাছাড়া ফেসবুকে ব্রাজিল সমর্থকদের ট্রল সহ্য করতে পারবো না। সাথে সাথে ও বসে গেলো ক্যালকুলেশন করতে। যেদিন আর্জেন্টিনা হারলো, সেদিনই ও বললো, ” মা, চিন্তা করো না। এখনও আর্জেন্টিনার চান্স আছে। যদি পোল্যান্ড আর মেক্সিকোর খেলা ড্র হয়, তবেই আর্জেন্টিনার পথ সহজ হয়ে যাবে। এবং আমি উইশ করি, পোল্যান্ড মেক্সিকো খেলা ড্র হবে”!
এবং সত্যি সত্যি পোল্যান্ড মেক্সিকো খেলা ড্র হলো!

ট্রফিটা হাতে নিলাম, মিথীলার সবে ঘুম ভেঙেছে। চাকরি শুরু করার আগে ইচ্ছেমতো ঘুমিয়ে নিচ্ছে। মিথীলা চোখ মেলেই দেখে আমি ওদের ট্রফি গুছাচ্ছি।
“মা, আমাকে ডাকোনি কেন? তুমি একা ঘর পরিষ্কার শুরু করেছো” বলে সে তড়বড় করে বিছানা থেকে নামার চেষ্টা করলো। আমার হাতে ধরা ট্রফির গায়ে লেখা সমস্ত লেখা কালচে হয়ে গেছে। বুঝতে পারছিলাম না, ট্রফিটা কত আগের! এটা কি স্কুলে পেয়েছিলাম না-কি ইউনিভার্সিটিতে! টিস্যু পেপার দিয়ে ঘষে ঘষে মুছলাম ট্রফিটা। এক পিঠে লেখা, নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার নাম।
ততক্ষণে মিথীলার চোখ পড়েছে ট্রফিটার দিকে। জানতে চাইলো, কিসের ট্রফি।
বললাম, ইউনিভার্সিটির বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় পাওয়া। এবং এই ট্রফিটা পেয়েছিলাম, ‘তিন পায়ে দৌড়’ রেইসে দ্বিতীয় পুরস্কার হিসেবে।

বাসায় যখন ট্রফি আনলাম, মায়ের মুখে সে কি হাসি! সেই ট্রফিটাই মা যত্ন করে রেখে দিয়েছিলো তাঁর ট্রেজার বক্সে! পরের বছর প্রথম পুরস্কার পেয়েছিলাম ‘যেমন খুশী সাজো’ ইভেন্টে। অই ইভেন্টের ট্রফিটা মনে হয় হারিয়ে গেছে! মিথীলা অবাক হয়ে গেলো! ” মা, তুমি ইউনিভার্সিটিতে খেলাধূলা করতে? তুমি দৌড়াতে? কমপিটিশনেও পার্টিসিপেট করেছো, ট্রফি জিতেছো! আমি তো কিছুই জানি না। তুমি কখনো বলোনি কেন?
বললাম, ইউনিভার্সিটি কেন, আমি তো স্কুলেও ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় পার্টিসিপেট করতাম, পুরষ্কারও পেয়েছি। শুধু তো খেলাধুলা নয়, আমি ইন্টার স্কুল, ইন্টার কলেজ প্রবন্ধ লেখা প্রতিযোগিতা, বক্তৃতা প্রতিযোগিতা, বিজ্ঞান মেলা সবকিছুতে পার্টিসিপেট করেছি এবং প্রায় সবগুলোতে প্রথম পুরষ্কার পেয়েছি।

মিথীলা তখনও অবাক।
বললাম, আমার গান শেখার খুব শখ ছিলো। গান শেখার সুযোগ পেলে গানেও পুরষ্কার পেতাম। গান না শিখেই আমি সুর তাল লয় ঠিক রেখে গান গাইতাম। যখন টিচার্স ট্রেনিং কলেজে বি এড করি, তখন কলেজের সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় কবিতা আবৃত্তি করে প্রথম স্থান পেয়েছি, খালি গলায় গান গেয়ে দ্বিতীয় স্থান পেয়েছি।
মিথীলা অবাক।

*** বললাম, আমাদের দেশে মেয়েরা যতই টেলেন্টেড হোক, বিয়ের পর তার টেলেন্ট রান্নাঘরের ভাতের হাঁড়িতে মিশে যায়। আর সেই মেয়ের স্বামী যদি বড়ো কোনো বৃক্ষ হয়, তাহলে সেই মেয়ের টেলেন্ট তার স্বামী বৃক্ষের ছায়ায় ঢাকা পড়ে যায়!***

জানো মিথীলা, এই যে তোমাদের এতো টেলেন্ট, বলতে গেলে তোমরা তিনজনই মাল্টি টেলেন্টেড। নাচ গান আবৃত্তি আর্ট রাইটিং স্পীচ –সবকিছুতেই তোমাদের দখল আছে, তোমাদের পারফরম্যান্স দেখে সবাই ওয়াও ওয়াও বলে। আর প্রশ্ন করে, এমন অজ পাঁড়াগাঁয়ে থেকেও কোথা থেকে তোমরা এত দিকে সমৃদ্ধ হলে! প্রশ্ন শুনে আমি অবাক হই না। শুধু মনে মনে আমার স্কুল কলেজ ইউনিভার্সিটির সময়ে ফিরে দেখি, উত্তর পেয়ে যাই।
এই যে তুমি বাংলায় কথা বলো, বাংলা পড়তে চেষ্টা করো, এটাও তো তোমার এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটি যা তুমি আমার কাছ থেকে পেয়েছো।

মিশা কোথাও নাচ শিখেনি, অথচ দেখো মিশা কতো ভালো নাচ করে। ও এখন নাচের ট্রেইনার হিসেবেও কাজ করে। জানো, আমার খুব মনে পড়ে ছোটোবেলার কথা। আমাকে তো দিদা স্কুল আর ঘরের বাইরে কোথাও যেতে দিতো না। ছুটির দিনে সবাই যখন বাইরে চলে যেতো আমি কি করতাম জানো! আলনা থেকে দিদার শাড়ি নিয়ে পরতাম, এরপর একা ঘরে টিভিতে দেখা নায়িকাদের মতো অভিনয় করে গান গাইতাম, গানের সাথে নাচতাম। শাড়িও পরতাম নাচের মেয়েদের মতো করে। এবং আমি জানি, আমি খুব ভালো নাচতাম। লেখাপড়ার চেয়েও আমার ভালো লাগতো গান গাইতে, নাচতে, আয়নায় তাকিয়ে নায়িকাদের মতো অভিনয় করতে।
এখন মনে হয়, মিশা আমার ভেতর ঘুমিয়ে থাকা নাচের স্কিল পেয়েছে। আমি খুব পরিশ্রম করেছি তোমাদের এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটিগুলো এক্সপোজ করার কাজে,
আমার বাবা মায়ের বোধ হয় সেই সুযোগ ছিলো না আমার সুপ্ত প্রতিভাকে প্রকাশ হতে দেয়া।

**আজ আমাকে দেখলে কেউ বলবে না, আমিও বাবা মায়ের মাল্টি টেলেন্টেড মেয়ে ছিলাম।**
ভাগ্যিস আমার মা এই ট্রফিটা কোনোমতে তার ট্রেজার বক্সে আগলে রেখেছিলো! নাহলে তো আমার সকল এচিভমেন্ট স্মৃতির আড়ালে চলে যেতো। প্রমাণ ছাড়া আমি তো তোমাদের বলতেই পারতাম না আমার এচিভমেন্টের কথা! মিথীলা বলে, মা তুমি এখনও মাল্টি টেলেন্টেড আছো। পাপার শেডে তুমি কভারড না। এখনও তুমি কত কাজ করো, সেভেনটিন ইয়ারস তুমি ওয়ালমার্টে সাকসেসফুল্লি চাকরি করেছো, রিটায়ার করার পরেও এখনও ম্যানেজার তোমাকে আবার ফিরে যেতে বলে।

তুমি ব্লগার, তুমি রাইটার, তুমি ভালো ফেসবুকার, তুমি দারুণ কুক, এত কিছু সামলে তুমি একজন পারফেক্ট হোম মেকার। কালচে হয়ে যাওয়া ট্রফিটা কোথায় রাখা যায় ভাবছিলাম। মিথীলা বললো, এই ট্রফিটা তুমি আমাদের ট্রফির সাথে রাখো। এতোদিন দিদা তোমার ট্রফিটা যত্ন করেছে, এখন আমরা তোমার ট্রফিটা যত্ন করবো। মা আর মেয়েদের ট্রফি এক সাথে থাকবে, আমরা যত্নে রাখবো।
এটা আমাদের প্লেজেন্ট ডিউটি।

ব্যাখ্যা বিষয়ক বচনপঞ্জিকা

তুমি অনেক কিছুই ব্যাখ্যা করতে পারো।

‘জল’কে কেউ কেউ কেন ‘পানি’ বলে,
‘গোরস্থান’ কে ‘কবরস্থান’- কিংবা ‘খোদা হাফেজ’কে ‘আল্লাহ হাফেজ’। কেন কেউ
কেউ মাঝে মাঝে ‘তস্কর’ কে ‘লস্কর’ বানিয়ে বাজারে সেরে নিতে পারে মামুলি
বেচাকেনা। ‘বাতাসা’ খেতে গিয়ে যারা ‘বাতাস’ খেয়ে তৃপ্ত হয়ে নগরে ফিরেছিল
আমি তাদের গন্তব্য চিনি। জানি কীভাবে তারা সেরে নিয়েছে মাটির সাথে শেষ
মোলাকাত। কাদায় পা ডুবে যেতে পারে-এই ভয়ে যারা কাঁধে তুলে নিয়েছে পা,
আমি তাদেরকে প্রতিবন্ধী বলতেই পারি। অথবা পাঠশালায় গিয়েও যারা পড়েনি
চন্দ্র-সূর্যের জন্মইতিহাস, তাদেরকে বলতেই পারি অন্ধ। আমি তোমাকে আপাতত
‘ব্যাখ্যক’ হিসেবেই অভিহিত করতে চাই। কারণ এ পেশায় আমাদের কিছু সুদক্ষ
তালিবাজ প্রয়োজন।

সম্পর্ক নাকি অভিনয়

একটা সম্পর্ক সুন্দর ভাবে চিরকাল অটুট রাখার উপায় কি হতে পারে?
১. প্রতারণা ২. অভিনয় ৩. টাকা ৪. অত্যাচার ৫. বিশ্বাসঘাতকতা ৬. নির্দিষ্ট সময় শেষে পৃথককতা ৭. আর কি হতে পারে…

যা খুঁজে বেড়াচ্ছেন….
১. বিশ্বাস ২. বন্ধুত্ব ৩. ভালোবাসা ৪. সম্মান করা ৫. আস্থা রাখা

যা হয়,
রাগান্বিত বা উত্তেজিত হলে এই সবই ফুড়ুৎ।

হাজার মানুষের ভালোবাসার সম্পর্কের উক্তি দিয়েও সম্পর্ক ঠিকে না কারণ এগুলো সবাই অন্যকে দেখানোর জন্য পড়ে বা বলে কিন্তু কেউ ধারণ করে না।

আসলে সঠিক উপায় টা কি ধর্মীয় বিশ্বাস নাকি অভিনয়? যেখানে আমাদের সময়ে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা খুবই দরকার না হলে পৃথিবীটা দুর্গন্ধে ভরে যাবে…

আদরের পুসি ও হিন্দুধর্মে বিড়াল সমাচার

n01

ছোটবেলা থেকেই কুকুর, বিড়াল, গরু-ছাগল ভালোবেসে আসছি। এই ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত নয়, ঘরের জায়-জিনিস নষ্ট করে ফেলা ইঁদুরও। সময় সময় দুপুরে আর রাতে ভাত খেতে বসলে নিজে খাবার মুখে দেয়ার আগে ঘরের ইঁদুরের জন্য একমুঠো ভাত এক কোণে রেখে দিই। রাতে সবাই ঘুমিয়ে থাকলে ওই একমুঠো ভাত ঘরে উত্তাপ করা ইঁদুরগুলো মিলেমিশে সাবাড় করে ফেলে। আবার রাস্তার একটা কুকুর সামনে আসলে ওকে কিছু খাবার কিনে দিই, কুকুরটা মনের আনন্দে লেজ নেড়ে খায়। একটা বিড়াল সামনে আসলে ওকেও খাওয়াতে মন চায়। কারোর গরু-ছাগল দেখলে সামনে গিয়ে আদর করি, মাথায় হাত বুলিয়ে দিই। কিন্তু দুঃখের কথা হলো মনের ভেতরে এসব পশু-পাখির বিস্তর ভালোবাসা থাকলেও নিজের বাড়ি-ঘর না থাকার কারণে মনের শখ মনে ভেতর রেখেই চলতে হয়। তারপরও মাঝেমাঝে শত ঝামেলা উপেক্ষা করে ভাড়া বাসায় কুকুর-বিড়াল পুষতে থাকি।

এইতো কয়েক বছর আগে ২০১৬ সালে শখের বশে একটা কুকুর ছানা বাসায় নিয়ে গিয়েছিলাম, ওটাকে পুষবো বলে। কুকুর ছানাটির নামও রেখেছিলাম “ধলু”। কিন্তু নিজের ধর্ম হিন্দু বলে কথা। কুকুর ছানাটি বাসায় নেয়ার পর নিজের সহধর্মিণীর সাথে লেগে গেলো কথা কাটাকাটি, আর হট্টগোল! ছিছিছি, রামরাম, হায় ভগবান হায় ভগবান! তারপরও দমে যাইনি। শেষমেশ ভাড়া বাড়ির আরও আরও ভাড়াটিয়াদের নানা কথা সহ্য করতে না পেরে ধলুকে আর নিজের কাছে রাখতে পারিনি। শেষাবধি ৭দিন পর ধলুকে ধলুর মায়ের কাছেই পৌঁছে দিতে হয়েছিল। তারপর ধলু একসময় অনেক বড় হয়ে গেলেও ওর প্রতি আমার ৭ দিনের ভালোবাসা কিছুতেই ধলু ভুলতে পারেনি। দিনরাত ধলুর ডিউটি ছিলো আমার দেখাশোনা। এভাবে কেটে গেলো প্রায় চারবছর।

n02
আমার আদরের কুকুর ‘ধলু’ এখন পরপারে।

একদিন আমি আমার এক আত্মীয়ের বাড়ি সপরিবারে বেড়াতে গেলে সেখানে থাকতে হয় ১৫ দিন। এই দিনেক ১৫ দিনই ধলু আমাকে না দেখে খাওয়া-পিনা বাদ দিয়ে শুধু আমার আশায় রাস্তার দিকে চেয়ে থাকতো। এই ১৫ দিন ধলুকে অনেক মানুষে অনেক খাবার কিনে দিয়েছিল। কিন্তু ধলু কারোর কিছুই মুখে দেয়নি। অবশেষে ধলু না খেয়ে থাকতে থাকতেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। তারপর চিত্তরঞ্জন গুদারা ঘাটের কিছু মাঝি মিলেমিশে ধলুকে শীতলক্ষ্যার মাঝ নদীতে ফেলে দেয়। আমি আত্মীয়ের বাড়ি থেকে এসে ধলুকে দেখতে গুদারা ঘাট গেলে ধলুর মৃত্যুর খবর শুনে রীতিমতো কেঁদেই ফেললাম। তারপর দুচোখের জল ফেলতে ফেলতে বাসায় ফিরে যাই। সেই শোকে আর কখনো কুকুর বিড়াল পুষবো না বলে মনস্থির করি। কিন্তু না পারলাম না। ইদানীং আমাকে একটা বিড়াল ছানার প্রেমে পড়তেই হয়েছে।

গত কয়েক মাস আগে বিড়াল ছানাটি আমার বাসায় ঢোকে। তখন রাত নয়টা। আমিও কর্ম ডিউটি শেষ করে বাসায় ফিরি। বাসায় ফিরে দেখি বাসার সামনে আমার সহধর্মিণী-সহ ভাড়া থাকা বাড়ির আরও আরও মহিলারা জড়ো হয়ে আছে। তা দেখে আমি একটু তাড়াতাড়ি করেই বাসার সামনে গেলাম। বাসার সামনে গিয়ে আমার গিন্নীকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘ঘটনা কী?’
বললো, “দেহ না বিলাইর বাচ্চাটা খালি আমগো বাসায় ঢুকে। এডারে খেদাইয়া দিলেও যায় না, আবার মে মে কইরা বাসায় ঢুকে। এডারে ধইরা বাড়ির বাইরে দিয়া আহ।”
আমি আমার সহধর্মিণী বা গিন্নীর কথায় কান না দিয়ে বিড়াল ছানাটিকে কোলে তুলে নিয়ে বাইর থেকে ঘরের ভেতর চলে গেলাম। তা দেখে আমার গিন্নী তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠে বললো, “হায় ভগবান, কারে কি কইলাম? হেরে কইলাম বাইরে নিয়া ছাইড়া দিতে, আর হে কোলে তুইলা ঘরে আনছে।”
আমি গিন্নীর কথার উত্তর না দিয়ে বিড়াল ছানাটিকে বললাম, ‘আমিতো তোমাকেই খুঁজতেছিলাম। গত রাতে আমি তোমারে স্বপ্নে দেখছি।’
আমার এই কথা শুনে আমার ধার্মিক গিন্নী সামনে এসে বললো, “হাচাই কইছ? হাচাই স্বপ্নে দেখছ?”
বললাম, ‘মিথ্যা কিছু বলিনাই। যা সত্য তা-ই বলছি। ও আজ থেকে আমার ঘরেই থাকবে। যার যার ভাগ্যে যা আছে তা-ই হয়। আমি খাইলে, ও-ও খাবে।’
এসব বলার পর আমার গিন্নী আর কোনকিছু না বলে শুধু বললো, “হাগলে মুতলে আমি ছাপ করতে পারুম না। ওইসব তোমারই করন লাগবো। বুইঝা নিয়েন।”
বললাম, ‘আচ্ছা ঠিক আছে। ওর যা যার করা লাগে, আমি নিজেই করবো। এটার জন্য তোমার কিছু ভাবতে হবে না। তুমি নিশ্চিন্তায় থাকতে পার।’

n03

তারপর দিন বিড়াল ছানাটির কি নাম রাখা যায়, তা নিয়ে গিন্নীর সাথে বৈঠক করলাম। আমি নাম রাখতে চেয়েছিলাম কুকুর ধলুর নামের সাথে মিলিয়ে ‘ধলি’। আমার গিন্নী ভেটো দিয়ে সেই নাম ক্যান্সেল করে গিন্নী আর আমার বড় নাতিন দুইজনে মিলে নাম রাখলো, ‘পুসি’।
বৈঠকে সেই নামই পাস হলো। সেই থেকে বিড়াল ছানাটি ভাড়া বাড়ির সবার কাছে এখন পুসি নামে বেশ পরিচিত। এর চারদিন পর একদিন আচমকা ‘পুসি’ বিছানায় পায়খানা করে ফেলে। এই পায়খানা নিয়ে ঘটে গেলো তেলেসমাতি কারবার। পায়খানা পরিস্কার করা নিয়ে কথা কাটাকাটি, রাগারাগি, লাফালাফি-সহ আরও অনেককিছু। শেষাবধি আমার ধার্মিকের সহধর্মিণী নিজেই ‘পুসি’র পায়খানা পরিস্কার করে বিছানার চাঁদর ধুয়ে দেয়। কিন্তু গিন্নির মনের ভেতরে থেকে যায় ভীষণ ক্ষোভ। সেই ক্ষোভ কাজে লাগায় পরদিন রাতে।

ঘটনাটা ঠিক রোজা শুরু হবার দুইমাস আগে। এই দিনগত রাত তখন প্রায় তিনটা। আমি তখন ঘুমে বিভোর। আমি পরম শান্তিতে যখন নাক টেনে ঘুমাচ্ছিলাম, আমার গিন্নী তখন ‘পুসি’কে ঘরের বাইর করতে প্রস্তুতি নিচ্ছিল। ‘পুসি’ তখন আমার পাশেই আমার মতো ঘুমে বিভোর। আমার গিন্নী মায়াদয়া ধূলিসাৎ করে ‘পুসি’কে টেনে নিয়ে ঘরের বাইরে ছেড়ে দিয়ে, ঘরের দরজা বন্ধ করে, বিছানায় এসে নিজের জায়গায় শুয়ে পড়ে। এর কিছুক্ষণ পর ঘরের দরজায় মানুষের দেয়া টোকা। দরজায় টোকা কে-না-কে দিয়ে মা মা বলে ডাকছে। আমার গিন্নী দরজায় টোকার শব্দ আর মা মা ডাক শুনতে পেয়ে হতভম্ব হয়ে ঘরের ভেতর থেকে বলছে, “এই তুমি কে? কিল্লাইগা মা মা কইয়া ডাকতাছ?”
ঘরের বাইর থেকে উত্তর এলো, ‘মা আমি তপন (মানে আমার মৃত ছেলে তপন)। বিড়ালডা কানতাছে। ওরে ঘরে লইয়া যাও।’ আমার গিন্নী নিজের মৃত ছেলের কণ্ঠস্বর শুনে আবারও জিজ্ঞেস করলো, “কেডা তুমি?” আবার উত্তর এলো, ‘মা আমি তপন। বিলাইর বাচ্চাডা ঘরে নিয়া যাও। ও খুব কানতাছে।’
আমার গিন্নী তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে উঠে ঘরের দরজা খুলে কাউকে দেখতে পেলো না। দেখল পুসি দরজার সামনে বসে বসে মে মে করছে। পুসি মে মে করতে করতে এক লাপে ঘরে ঢুকে গেলে আমার গিন্নী ঘরের দরজা বন্ধ করে দেয়। তারপর গিন্নী কাঁপতে কাঁপতে আমাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলে। আমি ঘুম থেকে জেগে দেখি আমার গিন্নী থরথর করে কাঁপছে! জিজ্ঞেস করলাম, ‘কি হয়েছে? কাঁপছো কেন?’
আমার গিন্নী কাঁপতে কাঁপতেই ঘটনার বিবরণ খুলে বললো। আমি শুনে বললাম, ‘তাহলে তুমি পুসি’কে ঘরের বাইরে এতো রাতে ছাড়লে কেন?’ প্রশ্নের উত্তর আর মিললো না। এরপর থেকে আমার গিন্নী অন্তত পুসি’কে নিয়ে আর কোনপ্রকার অভিযোগ করেনি। বরং সকাল-সন্ধ্যা পুসি’কে নিজের কোলে-কাঁখেই রাখে। সময়মতো খাওয়ায়, ঘুম পাড়ায়, আদরযত্নও ঠিকঠাকমত করতে থাকে।

n04
দোলপূর্ণিমার দিন পুসিকে নিয়ে বাড়ির সবাই রং খেলায় মেতে ওঠে।

এ-র মাঝে একদিন আমার বড় নাতিন পুসি’কে নিয়ে খেলতে থাকে। হঠাৎ মনেহয় পুসি’র অজান্তেই পুসি’র পায়ের নখের আঁচড় নাতিনের হাতে লাগে। সাথে সাথে নাতিনের হাত থেকে আঁচড়ের স্থান থেকে রক্ত বের হতে থাকে। আমি তখন আমার কর্ম ডিউটিতে ব্যস্ত! বাসায় এসে দেখি নাতিনের হাতের অবস্থা। গিন্নীও রেগে-মেগে অস্থির হয়ে বলতে লাগলো, “আমার নাতিনের যদি কিছু হয়, তাহলে বুঝে নিয়েন। তাড়াতাড়ি নাতিনকে নিয়ে হাসপাতালে যাও। জলাতঙ্ক ইনজেকশন দিয়া নিয়া আসো”। গিন্নীর রাগারাগি আমার আর সহ্য হলো না। সাথে সাথে ডাক্তারের পরামর্শ নিলাম। ডাক্তার বললো, ‘কিছুই হবে না ঠিক, কিন্তু মন থেকে তো আর ভয় দূর হবে না, দাদা। তাই হাসপাতাল থেকে জলাতঙ্ক রোগের ইনজেকশন দিয়ে আনেন।
তা-ই হলো। প্রায় ৬০০ টাকার মতো খরচ হলো। তারপর আর যাতে কেউ পুসি’র আঁচড় কামড়ের শিকার হয়ে জলাতঙ্ক আর ধনুষ্টংকার রোগ নিয়ে চিন্তিত না করে, তারজন্য পুসি’কে উপজেলা পশু হাসপাতাল থেকে জলাতঙ্ক, ধনুষ্টংকার প্রতিরোধক ইনজেকশন দিয়ে আনি।

এখন পুসি আগের চেয়ে অনেক বড় হয়েছে। পুসি এখন ঘরে মলমূত্রও ত্যাগ করে না। কোথায় করে তা-ও কেউ দেখে না। আমি দু-এক দিন ওর মলমূত্র ত্যাগ করার দৃশ্য দেখেছিলাম। এখন আর আমি নিজেও দেখি না। কিন্তু ওর মলমূত্র ত্যাগ করার সময় হলে ঘরের সবাই টের পেয়ে থাকি। ঘর বন্ধ থাকলে পুসি ঘরের বন্ধ দরজার সামনে গিয়ে মে মে করতে থাকে। দরজা খুলে দিলেই দে দৌড়। কাজ সেরে আবার নিজে নিজেই ঘরে ফিরে আসে।

আমি দুপুরের বাসায় গিয়ে যদি দেখি যে, পুসি ঘরে নেই। তারপর আমি পুসি পুসি বলে ডাকলেই পুসি যেখানেই থাকুক-না-কেন, আমার সামনে এসে হাজির হয়। রাতে পুসি আমার সাথেই ঘুমিয়ে থাকে। আমাকে ছাড়া অন্যকোনো জায়গায় পুসি রাতে ঘুমায় না। পুসি আমাদের মতো দিনে তিন-চার বেলা খায়। ওর খাবার হলো, মুরগির আঁতুড়ি-ভুঁজড়ি। পুসি’র জন্য এগুলো আমাকেই সংগ্রহ করে রাখতে হয়। আমি ডিউটি থেকে বাসায় আসতে পরিচিত মুরগির দোকান থেকে কেজি খানেক আঁতুড়ি নিয়ে আসি। এরপর ওই আঁতুড়িগুলো কেচি দিয়ে কুচিকুচি করে কেটে ফেলি। তারপর ঐগুলা ভালো করে ধুয়ে হালকা পানি আর অল্প লবণ দিয়ে সিদ্ধ করি। সিদ্ধ হয়ে গেলে পানি ছেঁকে কাটা আঁতুড়িগুলো ঠাণ্ডা করে পুসিকেও কিছু খেতে দিই, বাদবাকি সিদ্ধ আঁতুড়িগুলো ফ্রিজে রেখে দিই। তারপর থেকে পুসি’কে দিনে তিন-চারবার ওই আঁতুড়ি-ভুঁজড়িগোলো খেতে দিলে পুসি মনের আনন্দে লেজ নেড়ে পেটভরে খায়। তাছাড়াও ঘরে রান্না করা মাছ মাংস তো মাঝেমধ্যে থাকেই।

বর্তমানে এভাবেই চলছে পুসি’র দৈনন্দিন জীবন। পুসি’র বিরুদ্ধে এখন আর ঘরে বাইরে কারোর কোনও অভিযোগ নেই। পুসি এখন আমাদের ভাড়া বাড়ি-সহ আশেপাশে আরও বাড়ির সব ছেলে-বুড়োদের আদরের পুসি। যে-না-কেউ এখন পুসি’কে দেখলে কোলে নিতে চায়। আর বাড়ির ছোটছোট ছেলে-মেয়েদের তো খেলার বস্তু হয়ে উঠেছে, আমাদের আদরের পুসি। পুসি এখন মাঝেমধ্যে দু’একটা শিকারও করে দেখাচ্ছে।

ইদানীং পরপর দুটো ইঁদুরের বাচ্চা শিকার করে ফেলেছে। পুসি’র এই শিকার নিয়ে ঘরের গিন্নীর মাঝে একরকম তৎপরতাও দেখা দিয়েছে। এর কারণ হলো, পুসি’র আগমনের আগে ঘরে বাস করা ইঁদুরগুলোকে সকাল-বিকাল খাবার দিয়ে রাখতো। এর ফলস্বরূপ: ঘরে উৎপাত করা ইঁদুরগুলো ঘরের কোনও কাপড়চোপড় কেটে বিনাশ করতো না। এখন পুসি ঘরে থাকার কারণে ঘরের আনাচে-কানাচে লুকিয়ে থাকা ইঁদুরগুলো কোথায় যেন গা-ঢাকা দিয়েছে। তা নিয়ে গিন্নী অনেক সময় আক্ষেপ করে বলে, “আগে সবসময় ইন্দুর দেখা যাইত। অহনে পুসি আহনে ইন্দুর আর চোখে পড়ে না। এতগুলা ইন্দুর কই গেলোগা?”
আবার মাঝেমধ্যে পুসি’কে কোলে নিয়ে গিন্নী বলে, “পুসি ইন্দুরগুলা মারিস না। এগুলা ঘরের ক্ষতি করে না।”

গিন্নীর কথায় পুসি কি বুঝল আর কি না বুঝল জানিনা। তবে এপর্যন্ত আর ঘরের ইঁদুর পুসি’কে মারতে ধরতে দেখিনি। এমনিতেই পুসি অনেক কথাই বুঝে। যেমন কারোর ঘরে যেতে বারণ করলে পুসি আর সে ঘরে যায় না। আবার ধমক দিলে চুপ করে বসে থাকে। চোখ বড় করে ধমক দিলে দৌড়ে ঘরের খাটের নিচে গিয়ে পালায়। সময়-সময় পুসি আহ্লাদ করে গিন্নীর হাতে কামড় দিতে চাইলে, গিন্নী আস্তে করে থাপ্পড় মারলে দ্বিতীয়বার কামড়াতে চায় না। বাড়ির কাউকেও আঁচড় কামড় দেয় না। তবে ঘরে বাইরে দৌড়াদৌড়ি নাচানাচি একটু বেশি করে। সময়-সময় ঘরের তাকে থাকা ডিব্বা-ডাব্বি ফেলে দিয়ে খেলতে থাকে। তা দেখে গিন্নী পুসি’কে ধমক দেয়, মারতেও চায়। কিন্তু পুসি যত দুষ্টুমিই করে থাকুক-না-কেন পুসি-কে মারা যাবে না। এটা আমার বারণ আছে। এর কারণ হলো, পুসি হলো বিড়াল। আর বিড়াল হলো মা ষষ্ঠী দেবীর বাহন, তাই।

পুসি ঘরে আসার পর গিন্নীর ছিছিছি, রাম রাম, হায় ভগবান হায় ভগবান শব্দ শুনে আমি রীতিমতো একটু বিরক্ত হয়েছিলাম। তারপর নেট ঘেঁটে বিড়াল বিষয়ে একরকম তথ্য জোগাড় করলাম। তথ্য সংগ্রহ করে আমার গিন্নীর ছিছিছি, রাম রাম, হায় ভগবান হায় ভগবান বন্ধ করার জন্য মা ষষ্ঠী দেবী ও ষষ্ঠী দেবীর বাহন বিড়াল নিয়ে একটা কাহিনী আমার গিন্নীকে শোনালাম।

n05
ছবি ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ।

ষষ্ঠী দেবী ও ষষ্ঠী দেবীর বিড়াল কাহিনী নিম্নরূপ:
❝হিন্দু ঘরের মায়েদের বড়ো প্রিয় দেবী হলো, মা ষষ্ঠীদেবী। তিনি সারা বছর ঘরের ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের ভালো রাখেন। আর সেজন্য মায়েদের কাছে মা ষষ্ঠীর এতো কদর। শিশু জন্মানোর ষষ্ঠ দিনে মা ষষ্ঠীর পুজোর আয়োজন করা হয় গৃহস্থ বাড়িতে। পুজোর উপচারের মধ্যে আবশ্যিকভাবে থাকে দোয়াত-কলম। দিনের বেলায় পুরোহিত ষষ্ঠীপুজো করে চলে যান। আর এদিন স্বয়ং বিধাতা পুরুষ নাকি রাতের বেলায় অলক্ষ্যে এসে শিশুর কপালে লিখে দিয়ে যান তার ভূত-ভবিষ্যৎ।
এই মা ষষ্ঠীর বাহন হলো বিড়াল। ঘর থেকে বিড়াল যতই মাছ চুরি করে খেয়ে যাক, বিড়াল মারা যাবে না। কারণ, মা ষষ্ঠীর কোপ পড়বে। এতএব বিড়াল পাতের মাছ খেয়ে যাক্, অসুবিধে নেই।❞

বিড়াল নিয়ে আরেকটি বিধিনিষেধ আছে। বিড়াল রাস্তা পার হলে আর যাওয়া যাবে না, যতক্ষণ না কেউ এসে সে রাস্তা পেরোচ্ছে। কাজেই ট্র‍্যাফিক পুলিশ কোনো গাড়িকে থামাতে না পারলেও বিড়াল কিন্তু থামিয়ে দেয়।❞

❝ভারতীয় আয়ুর্বেদ মতে, আসলে মেয়েদের বাধক রোগের নাম হলো “ষষ্ঠী।”
আয়ুর্বেদ গ্রন্থ “বৈদ‍্যামৃত” অনুসারে— –
“নেত্রে হস্তে ভবেৎ জ্বালা কোনো চৈব বিশেষত:।
লালা সংযুক্ত রক্তঞ্চ ষষ্ঠী কা বাধক: স্মৃত:।
মানদ্বয়ং এয়ং বাপি ঋতুহীনা ভবেৎ যদি।
কৃশাঙ্গী ষষ্ঠীদোষেণ জায়তে ফলহীনতা।”
চোখে-হাতে জ্বালা, ঋতু: স্রাব অপরিস্কার, বাধক ব‍্যাধিগ্রস্থা সন্তানহীনা নারী ষষ্ঠীরোগিণী।
এর ওষুধ বলা হচ্ছে প্রাচীন কবিরাজী গ্রন্থ “ক্রিয়াকৌমুদী” -র পাতায়—
“পূটদগ্ধ মার্জারসস্থ মেষশৃঙ্গী বচা মধু।
ঘৃতেন সহ পাতব‍্যং শূলং বন্তি ঋতুদ্ভবং।”
অর্থাৎ, ধোঁয়ায় দগ্ধ বিড়ালের হাড়, মেষশৃঙ্গী, বচ ও মধু সমপরিমাণে নিয়ে ঘিয়ের সঙ্গে চেটে খেলে মেয়েদের ঋতুকালীন যন্ত্রণা দূর হয়।❞ ❝তথ্য সংগ্রহ ইন্টারনেট।❞

❝হোমিওপ্যাথি ওষুধ মেফাইটিস্ বিড়াল থেকেই তৈরি হয়, যা মেয়েলি রোগে ব‍্যবহৃত হয়।❞
❝তাছাড়া আয়ুর্বেদ মতে, বাধক ব‍্যাধিগ্রস্থা নারীদের বিড়াল স্পর্শ ফলদায়ক। এতে গর্ভাশয়ে আটকে থাকা ঋতু: স্রাব স্বাভাবিক হয়ে যায়।❞
❝ডিপথেরিয়া রোগ সৃষ্টি করলেও বিড়ালের মধ্যে রয়েছে নারীকে প্রজননক্ষম করে তোলার শক্তি।❞

এসবের জন্যই বিড়াল হয়ে গেছে মা ষষ্ঠীর বাহন‌। তাই হিন্দুদের বিশ্বাস বিড়াল গৃহস্থের বাড়ি বা ঘরে যতই উৎপাত করুক-না-কেন, বিড়ালকে আঘাত করা যাবে না। আর কোনও হিন্দু গৃহস্থের বাড়ি পালিত বিড়াল যদি মারা যায়, তাহলে সেই মৃত বিড়াল সাধু-বৈষ্ণব মারা গেলে যেভাবে সমাধিস্থ করা হয়, সেইভাবেই বিড়ালকে সমাধিস্থ বা কবরস্থ করতে হবে। এটা মা ষষ্ঠী দেবীর বাহন বিড়াল, তাই।

1680967908525
ছবি ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ।

হিন্দু ধর্মে জামাই ষষ্ঠী প্রসঙ্গ:
❝জামাই ষষ্ঠী প্রসঙ্গে একটি কাহিনিও প্রচলিত আছে, হিন্দু সমাজে। কথিত রয়েছে, এক গৃহবধূ স্বামী গৃহে নিজে মাছ চুরি করে খেয়ে বার বার দোষ দিতেন এক কালো বিড়ালের ওপর। এর প্রতিশোধ নিতে ছোট বউয়ের বাচ্চা হলেই ওই কালো বিড়ালটি তার সন্তান তুলে লুকিয়ে মা ষষ্ঠীর কাছে দিয়ে আসে। গৃহবধূ তা জানতে পেরে ষষ্ঠী দেবীর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে বলেন, সে আর কখনো বিড়ালকে মিথ্যা অপবাদ দিবেন না। গৃহবধূর সেই প্রার্থনা মা ষষ্ঠীদেবী শুনলেন। প্রার্থনা শুনে মা ষষ্ঠীদেবী দুই শর্তে তাকে ক্ষমা করেন বলে আশ্বাস দেন।
প্রথম শর্ত হলো, “শুক্ল ষষ্ঠীর দিনে তার পুজো করার আদেশ দেন তিনি।”
দ্বিতীয় শর্ত হলো, “বিড়ালকে তার বাহন হিসেবে সম্মান জানানোর কথা বলেন।”
তারপর ষষ্ঠী দেবীর আরাধনা শুরু করেন ওই গৃহবধূ৷ দেবী তুষ্ট হলে গহীন বনেই সে নিজের সন্তানকে ফিরে পায়। এই জন্যই ষষ্ঠী দেবীর অপর নাম হলো, “অরণ্যষষ্ঠী।”

অন্য দিকে মাছ চুরি করে খাওয়ার জন্য শ্বশুর-শাশুড়ি ওই গৃহবধূর পিতৃগৃহে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। তখন মেয়েকে দেখার জন্য ব্যাকুল মা-বাবা ষষ্ঠীপুজোর দিনে জামাইকে নিমন্ত্রণ জানান। ষষ্ঠী পুজোর দিনে স্বামীর সঙ্গে নিজের বাপের বাড়ি যান ওই মেয়েটি। তার পর থেকেই ষষ্ঠীপুজো পরিণত হয় জামাই ষষ্ঠীতে❞।

শব্দ শব্দের গঠন ও তার প্রসারিত বার্তা

শব্দ শুধু শব্দ নয় শব্দ কখনো কখনো জীবনকে বদলে দেয়। শব্দ থেকে বিন্যাসের মাধ্যমে কথার যে উপলব্ধি তা মানুষের মাঝে যখন চরম বার্তা পৌঁছে দেয় তখনই সেই শব্দ শব্দের গঠন ও তার প্রসারিত বার্তা দ্বারা মানুষ তার অন্ধকার পথকে আলোকিত করতে পারে।

তাই সেই শব্দ এবং শব্দ দিয়ে গঠিত ২০টি Quotes আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে।

১. জীবন ছোট, এটা গণনা করা কিন্তু জীবনের পথ পাহাড় বেষ্টিত উঁচুনীচু এখানে সবকিছুই ধীর, তবে স্বচ্ছতার জন্য সমতলকেই বেছে নিতে হবে যাতে পথটা সমান্তরাল হয়।

২. প্রেম জীবনের মুদ্রা। এঁকে কলঙ্কিত হতে দেওয়া যায়না। প্রেম ছাড়া মানুষ নিঃস্ব অসহায় এবং সবকিছুই অসম্ভব অসহ্য।

৩. আপনার কর্ম অনেকগুলো মানুষের জিম্মাদার অতএব কোন কর্মকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলবেন না অতএব অতএব জন্য কথা বলতে দিন।

৪. রাগের চেয়ে দয়া বেছে নিন। দয়া মানুষকে বেঁচে থাকার শিক্ষা দেয় মহৎ এবং ন্যায়পরায়ণ হওয়ার জন্য অনুড়িত করে।

৫. আপনি দেখতে চান পরিবর্তন। তাহলে আপনার দ্বারা পরিবর্তন সম্ভব। এর জন্য চাই উদ্যোগ, তাই যেকোনো প্রতিফলতা পেরিয়ে জয়ী হওয়া সম্ভব।

৬. আগামীকালের জন্য অপেক্ষা করবেন না, আজই কাজ করুন।
৭. প্রতিটি মুহূর্ত একটি উপহার, এটি লালন করুন।
৮. সরলতার সৌন্দর্যকে আলিঙ্গন করুন।
৯. ঝুঁকি নিন এবং ব্যর্থতা থেকে শিখুন।
১০. সাফল্য একটি যাত্রা, একটি গন্তব্য নয়।
১১. ছোট জিনিসের মধ্যে আনন্দ খুঁজুন।
১২. পরে নয় এই মুহূর্তে উপস্থিত থাকুন।
১৩. আপনার মনোভাব আপনার উচ্চতা নির্ধারণ করে।
১৪. জীবন সৃষ্টির বিষয়, অর্জন করা নয়।
১৫. বিনিময়ে কিছু আশা না করে দিন।
১৬. ক্ষমা করার শক্তি মুক্তি দেয়।
১৭. আপনার যা আছে তার জন্য কৃতজ্ঞ হন।

১৮. নিজেকে এবং আপনার স্বপ্নকে বিশ্বাস করুন আপনার জয়ী হওয়ার দাঁড় উন্মোচিত শতভাগ, উপলব্ধিটা হোক সৎ এবং অসৎ।

১৯. ক্ষোভ ধরে রাখার জন্য জীবন খুব ছোট একে গাঁয়ে মাখবেন না ক্ষোভ জীবনকে নষ্ট করে।

২০. উদ্দেশ্য এবং আবেগ একটি জীবন বাস তাই উদ্দেশ্যকে কদর করতে শিখুন আর আবেগকে কন্ট্রোল।